২০-৪-৭৫ দৈনিক সংবাদ পাক দালালীর দায়ে দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
কুমিল্লা জেলার দায়রা জজ এবং ১নং বিশেষ আদালতের সভাপতি জনাব কায়সার। আলী সম্প্রতি দালালীর দায়ে দু’ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। মামলার বিবরণে প্রকাশ শহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদ তদানীন্তন পাকিস্তান আর্মির হাবিলদার এবং ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাক হানাদার বাহিনী বাঙ্গালীদের উপর ঝাপিয়ে পড়লে তিনি পালিয়ে এসে কিছু কাল বুড়িচং থানার আরাম আনন্দপুরস্থ তার নিজ বাড়ীতে অবস্থান করেন। পরে তিনি ভারতে চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন কিন্তু দৈহিক অপরাগতার দারুন তিনি আবার নিজ। বাড়ীতে ফিরে এসে লুকিয়ে থাকেন। ১৯৭১ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর কথিত বিবাদীদ্বয়। কয়েকজন রাজাকার নিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর লােকেরা রফিক উদ্দিনের বাড়া ঘেরাও করে এই বাড়ীর আব্দুর রশিদকে তার ঘর থেকে বের করে আনে। পরে বিবাদী দু’জনসহ পাকহানাদার বাহিনীর বর্বরেরা রফিক উদ্দিনের ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাকে বের করে এনে বিবাদী আবদুল হামিদের সম্মুখে একত্রিত করে। এখানে তাদের জিজ্ঞাসা ও মারধর করা হয় এবং পরে বুড়িচং থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বুড়িচং থানা তখন পাক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেদিন ১০/১১ টার দিকে আব্দুর রশিদকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং রফিক উদ্দিনকে পাকবাহিনীর লােকেরা অজানা স্থানের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তিনি আর ফিরে আসেননি।
দেশ স্বাধীন হবার পর জনাব রফিক উদ্দিনের স্ত্রী এ ব্যাপারে বুড়িচং থানায় একটি লিখিত এজাহার দিলে পুলিশ তদন্তক্রমে বিবাদী আবদুল হামিদ আজিজউল্লাহ ও আব্দুস সােবাহানের বিরুদ্ধে। চার্জসিট দাখিল করে। মামলা চলাকালীন বিবাদী আব্দুস সােবহানের মৃত্যুর ফলে তার অনুপস্থিতিতে মামলা চলে। মাননীয় আদালত সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের পর আসামী আব্দুল হামিদ ও আজিজ উল্লা উভয়কে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং উভয়ের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। উক্ত মামলায় সরকার পক্ষের মােট ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় এবং সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন সরকারি উকিল কাজী হাচিবুর রহমান, এড, আদালত বিবাদীদেরকে বাংলাদেশ ফৌজদারী দণ্ড বিধির ৩৬৪/৩৪ ধারার সাথে রাষ্ট্রপতির আদেশ ৮এর ১১ (এ) মতে দোষী সাব্যস্ত করেন। এবং উপরােক্ত কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন।
সূত্রঃ সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ১৯৭১ -প্রত্যয় জসীম