You dont have javascript enabled! Please enable it!
১৪-৯-৭৩ দৈনিক ইত্তেফাক দালালীর দায়ে ২ ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পাবনা, ৫ই সেপ্টেম্বর ১নং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাননীয় শ্রীলাব্রত বড়ুয়া পাবনা পেলানপুর নিবাসী জনৈক আব্দুর বারেকের পুত্র এয়াকুব আলী এবং শাল গড়িয়া নিবাসী রাজাকার কমান্ডার ঘেটু ওরফে আঃ মাসুদকে বাংলাদেশ দণ্ড বিধি আইনের ৩৬৪ ধারা এবং ১৯৭২ সালের দালাল আইনের ১১ক মােতাবেক দোষী সাব্যস্ত করিয়া তাহাদের উভয়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়াছেন। উপরােক্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট উভয় আসামীকে ১৯৭২ সালের দালাল আইনে ৪র্থ অনুচ্ছেদে বর্ণিত (খ) উপধারা বলে দোষী সাব্যস্ত করেন। কিন্তু পূর্বে বর্ণিত ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন বলিয়া অত্র ধারায় আসামীদেরকে দোষী সাব্যস্ত করিয়াও কোন পৃথক দণ্ডাদেশ প্রদান করেন নাই।
আসামী রাজাকার কমান্ডার ঘেটু ওরফে আঃ মাসুদ আত্মগােপন করিয়া থাকায় তাহার অনুপস্থিতেই বিচার কার্য অনুষ্ঠিত হয় এবং মাননীয় বিচারক প্রদত্ত রায়ে এই মর্মে আদেশ প্রদান করিয়াছেন যে উক্ত পালাতক আসামী ঘেটু যেদিন ধরা পড়িবে সেই দিন হইতে তাহার বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ কার্যকারী হইবে। উক্ত মামলায় অপর দুই আসামী ইয়াকুবের পুত্রের বিরুদ্ধে আনিত অভিযােগ প্রমাণিত না হওয়ায় মাননীয় বিচারক তাহাদের বেকসুর খালাস প্রদান করিয়াছেন এবং তাহাদের বিরুদ্ধে আর কোন অভিযােগ না থাকিলে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ প্রদান করেন। মামলার বিবরণে প্রকাশ হানাদার পাক দখলী আমলে দালাল গর্ভনর মালেক মন্ত্রী সভার অন্যতম মন্ত্রী মাওলানা ইসহাক পাবনায় আগমন করিলে তাহার ভাষণের জন্য বিগত ১-১২-৭১ তারিখে পাবনা স্টেডিয়াম ময়দানে একটি জনসভা হইতে বিশিষ্ট আওয়ামীলীগ সদস্য ও মুক্তিবাহিনীর গােপন সংবাদদাতা পাবনা শহর নিবাসী এস্কেন্দার আলীকে রাজাকার কমান্ডার ঘেটু তারা ও ফেরু ধরে আনে এবং শান্তি কমিটির নেতা নুরু খন্দকার ও ইয়াকুব আলীর নিকট হস্তান্তর করে।

পরে জনসভা শেষ হবার পর একটি সামরিক ট্রাকে করিয়া এস্কেন্দার আলীকে পাবনার পাক সেনাদের প্রধান ঘাটি ওয়াপদা শিবিরে আনা হয়। নুরু খন্দকার ইয়াকুব আলী ও রাজাকার ঘেটু শিবিরে অবস্থানরত সামরিক অফিসারের নিকট এস্কেন্দার আলীকে হাজির করিয়া তাহাকে আওয়ামী লীগের কর্মী, আওয়ামী লীগ নেতার সাগরেছ মুক্তিবাহিনীর গােপন সংবাদদাতা ও বিশিষ্ট মুক্তিযােদ্ধা শহীদ রিদ্দিকের চাচা বলিয়া পরিচয় করিয়া দিলে হানাদার সামরিক অফিসার এস্কেন্দার আলীকে  গুলি করে হত্যার নির্দেশ প্রদান করে। অবশ্য বহু চেষ্টা তদবীরের পর শেষ পর্যন্ত। তাহার প্রাণ রক্ষা পায়। ইহার কয়েকদিন পর নুরু খন্দকার, ইয়াকুব আলী ও রাজাকার কমান্ডার ঘেটু তাহার বাড়ীতে আসিয়া তাহাকে হত্যার উদ্দেশ্যে। অপারেশন করিবার মতলব করিলে এস্কেন্দার আলী বহু কষ্টে প্রথমে চর ঘােষপুর পরে কুষ্টিয়ায় গিয়া প্রাণ রক্ষা করেন। সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন প্রধান বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর এড, গােলাম হাসনায়েন। ঘেটুর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সরকার নিয়ােজিত উকিল আব্দুর রহিম খান এবং অপর আসামী পক্ষে ছিলেন জনাব আব্দুস সবুর এবং আবুল কাশেম এডভােকেট।

সূত্রঃ সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ১৯৭১ -প্রত্যয় জসীম

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!