১-৭-৭৩ দৈনিক বাংলা মুনির চৌধুরী অপহরণ মামলায় দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মুনির চৌধুরীকে অপহরণ করার দায়ে দোষী সাবস্ত করে গতকাল শনিবার ঢাকার একটি স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল জামিল ওরফে জামাল এবং খালিদ আহমেদ নামক দুইজন আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। এই মামলায় অপর একজন আসামী পলাতক থাকায় পৃথকভাবে তার বিচার হইবে। ট্রাইব্যুনালের জজ জনাব এম, এ, গফুর আসামীদের দণ্ডাদেশ প্রদান করে উল্লেখ করেন যে বয়স কম বিবেচনা করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা গেল। মামলায় অভিযােগের বিরণে বলা হয় যে, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ আসামীরা অপর ৫ জন সহযােগী আলবদর ও রাজাকারকে সাথে করে ১২টার সময় অধ্যাপক মুনির চৌধুরীর বাড়ী সেন্ট্রাল রােডস্থ বাসভবনে আসে। এরা তদানীন্তন ইপিআরটিসির একটি গাড়ী নিয়ে এসেছিল। সে সময় শহরে কার্ফ ছিল। দরজা ধাক্কার শব্দে মরহুম চৌধুরীর ভাই শামসুল আজাদ দরজা খুলে দেয়। আসামীদের একজন জিজ্ঞাসা করে মুনির স্যার কোথায়। উনি বাড়ীতে আছেন জানার পর আল বদর বাহিনী মুনির চৌধুরীর নিকট যেয়ে বলে যে তাকে তাদের সাথে যেতে হবে।
উনি যেতে অস্বীকার করেন ও জিজ্ঞাসা করেন গ্রেফতারী পরােয়ানা আছে কি না। একজন আল। বদর দুষ্কৃতিকারী পিটে স্টেনগান ধরে বলপূর্বক তাকে গাড়ীতে উঠতে বাধ্য করে। এরপর অধ্যাপক মুনির চৌধুরীর আর কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি। জনাব শামসু আজাদের এজাহারের পর গােয়েন্দা পুলিশ আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। জনাব আজাদ আসামীদের সনাক্ত করেন। আসামীরা নিজেদের নির্দোষ বলে বর্ণনা করে যে, ঘটনার তিন মাস পরে পুলিশের পরামর্শে জনাব আজাদ তাদের সনাক্ত করেছেন। একজন ভীত সন্ত্রস্ত লােক এতদিন কারও চেহারা মনে রাখতে পারে না। মাননীয় জজ মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করে আসামীদের দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। সরকার পক্ষে স্পেশাল পিপি আবদুল মতিন ও আসামী পক্ষে সরকার নিযুক্ত কৌসুলি মােঃ হানিফ মামলা পরিচালনা করেন।
সূত্রঃ সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ১৯৭১ -প্রত্যয় জসীম