You dont have javascript enabled! Please enable it!
৬-১০-৭২ দৈনিক বাংলা ৩ জন আল বদরের মৃত্যুদণ্ড : ডক্টর আজাদ হত্যা মামলার রায়
গতকাল বৃহস্পতিবার বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. কে, এ. এম. আজাদের হত্যার সহযােগিতা করার দায়ে তিনজন আল বদরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই রায় দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের জজ সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। উপরােক্ত তিন জন হলেন আয়ুব আলী, মকবুল হােসেন ও জুবায়ের। প্রেসিডেন্ট দালাল আদেশ ও বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২ ও ১০৯ ধারা অনুযায়ী তাদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হলাে। বিজ্ঞ স্পেশাল জজ তার রায়ে উল্লেখ করেন যে, মামলার প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি ও সূত্রসমূহ তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিশ্লেষণ করেছেন এবং আসামীদের নির্দোষিতার দাবী তার সপক্ষে পেশ করা যুক্তিগুলাে তার কাছে দুর্বল মনে হয়েছে। সাম্প্রতিককালে চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলােচিত ডা. আজাদ হত্যা মামলায় বাদিপক্ষের অভিযােগ করা হয় যে, গত ১৫ই ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হবার আগে দিন সকালে ঢাকার আজিমপুরস্থ দায়রা শরীফের ভবন থেকে কয়েকজন আল বদরের লােক জোরপূর্বক ড. আজাদকে অপহরণ করে। উক্ত দায়রা শরীফের বাসিন্দা জুবায়ের আল বদর বাহিনীকে মরহুমের বাস ভবন দেখিয়ে দেয়। দেশ শত্রুমুক্ত হবার পর ১৮ই ডিসেম্বর রায়ের বাজার বধ্যভূমি থেকে ড, আজাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে আসামী মকবুল হােসেন ও আয়ুব আলীকে মুন্সিগঞ্জ গামী একটি লঞ্চ থেকে ধরে মুক্তি বাহিনীর কাছে সােপর্দ করা হয় ।
আসামী দুইজনকে আটক করেন ড. আজাদের প্রতিবেশী মুস্তাফিজুর রহমান। এই মােস্তাফিজুর রহমানের দুই ভাই মন্টু ও মতিকে আল বদর বাহিনী ঘটনার দিন একই সময়ে অপহরণ করে। মন্টু বদর বাহিনীর কর্তৃক নিহত হয়। মােট ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মাত্র ৩ জন সাক্ষ্য মকবুলের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন। মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করে বি স্পেশাল জজ তার রায়ে উল্লেখ করেন দখলদার পাকবাহিনীর সাথে যারা সহযােগিতা করেছে তাদের জন্য সরকার নতুন এই দালাল আদেশ জারী করেছেন। জনগণের প্রত্যশা দালালদের উপযুক্ত শাস্তি হােক। বিবাদী। পক্ষ ন্যায় বিচারে আবার প্রমাণিত হল অপরাধীদের সর্বোচ্চ শান্তি কাম্য। সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন স্পেশাল পিপি আবদুর রাজ্জাক খান। আসামী জোবায়ের মকবুল ও আয়ুব পক্ষে হাজির ছিলেন যথাক্রমে এড. মােঃ আজিজ, এ এম জোয়ারদার ও ফয়জুদ্দিন ভূইয়া পরিচালনা করেন। সংক্ষিপ্ত জীবনী : ড. আজাদ ছিলেন কুষ্টিয়া জেলার রামকৃষ্ণপুরের মৃত এম এ সােবহানের বড় ছেলে। তিনি ১৯৪৭ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৯৫৩ সালে এমএসসিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম পরে পাকিস্তানী বিমান বাহিনীতে যােগদান এবং ১৯৫৮ সালে চাকুরী ছেড়ে দেন। ১৯৬৪ সালে তিনি ম্যাক্রেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত গণিতে এমএসসি পাস এবং ১৯৬৮ সালে ঐ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট লাভ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৩৮ বছর।

সূত্রঃ সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ১৯৭১ -প্রত্যয় জসীম

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!