বাংলা বাণী
ঢাকাঃ ১৮ই আগস্ট, রোববার, ১লা ভাদ্র, ১৩৮১
রিলিফ কাজের সততার উদাহরণ চাই
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে গতকাল ৫০ লাখ ৫০ হাজার টাকা গৃহ নির্মাণ খাতে ব্যয় করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের বন্যা দুর্গত মানুষের মাঝে এই টাকা বন্টন করা হবে। গৃহনির্মাণ মন্ত্রীসহ এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য সর্বমোট ১ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা দান করা হয়েছে। এছাড়া ত্রাণ হিসেবে প্রাপ্ত ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের কাপড়-চোপড়, ওষুধ ,বিস্কুট, পাউরুটি প্রভৃতি দুর্গতদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ইতিপূর্বে বন্যার্তদের জন্য বীজ ধান ও চারা ক্রয়ের জন্য ৩৬ লাখ টাকা, কাপড় ক্রয়ের জন্য ২১ লাখ ১০ হাজার টাকা ও অন্যান্য রিলিফ তৎপরতার জন্য ২ লাখ ৫০হাজার টাকা মঞ্জুর করা হয়েছিল। গতকালের অন্যান্য একটি সংবাদে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির বিভিন্ন ত্রাণ তৎপরতা সম্পর্কেও একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। তারা এক উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শিশু খাদ্য বিতরণ করেছেন বলে জানিয়েছেন। বস্তুত বন্যার কারণে যে বিরাট পরিমাণ ক্ষতি সাধিত হয়েছে সে তুলনায় উল্লেখিত পরিমাণ সাহায্য অত্যন্ত কম। তবু এটাকে আমরা প্রাথমিক সাহায্য হিসেবে মনে করতে পারি। কর্তৃপক্ষ তার ক্ষমতা অনুযায়ী এবং পাওয়া সাহায্যের পরিমাণ থেকে আরও ত্রাণকার্য পরিচালনা করবেন। কিন্তু এই ত্রাণকার্য যথাযথ পরিচালনার ব্যাপারে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। বন্যাদুর্গত ছিন্নমূল মানুষের অনেক আশঙ্কাও সন্দেহ রয়েছে। গতকাল প্রকাশিত গ্রাম বাংলার একটি সংবাদে হবিগঞ্জ বানিয়াচং থানায় ‘রিলিফ চোর ধরা পড়ে ও শাস্তি পেল না কেন’ এই প্রতিবেদনে একটি খবর ছাপা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে যে, বানিয়াচং থানার সি,ও অফিসের জৈনক কর্মকর্তা ও একজন সরকারি রিলিফের গম চুরি করেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কারসাজিতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। মুন্সীগঞ্জের অন্য একটি সংবাদ প্রকাশ, মুন্সীগঞ্জের বাজারে নাকি রিলিফের গুড়া দুধ বিক্রি হচ্ছে। মহাকুমার জন্য বরাদ্দ যে ৭৫০ ব্যাগ দুধ ছিল তার সঠিক বিতরণ হয়নি। কালোবাজারে একব্যাগ দুধ একশত টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ধরনের রিলিভ দ্রব্য চুরির জানা-অজানা সংবাদ ই সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত দেশে বহুদলীয় কাজ হয়েছে-আর সে কাজে বহু ঘাপলাও হয়েছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেই কাজের দুর্নাম রয়েছে। বন্যার কারণে দেশে আবার কাজ শুরু করা হয়েছে, ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। কর্তৃপক্ষ তার আন্তরিকতা নিয়ে দুস্থ মানুষের সেবা করতে প্রবৃত্ত হবেন আর সেই কাজের দায়িত্ব যাদের উপরে থাকবে তারা স্বার্থান্বেষী হয়ে কাজ করবেন এটা অনবরত চলতে পারে না। দেশের সাধারণ মানুষের ধারণা রিলিফের কাজ যারা করছেন তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। এটা সকল ক্ষেত্রে সত্য না হলেও মানুষের মাঝে বদ্ধমূল এই ধারণা অত্যন্ত মারাত্মক এবং ক্ষতিকর। সরকার যদি রিলিফ কাজে অন্যায়কারীদেরকে অত্যন্ত উদাহরণ মূলক শাস্তি প্রদান করেন তাহলে মানুষের মনের বদ্ধমূল ধারণার পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে। নইলে সকল দোষ সরকারকেই বহন করতে হবে। রিলিফ দেওয়ার জন্য সরকার যে পরিমাণ মন্ডলী দিয়েছেন তার যথার্থ ব্যবহার ও আসল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে তা ব্যয়িত হোক-এটাই আমরা চাই। সরকারও তার নিশ্চয়তা প্রদান করবেন আমরা বিশ্বাস রাখি।
রেশনে অনিয়মিত পণ্য সরবরাহ
ঢাকার বিধিবদ্ধ রেশনিং এলাকার অধিকাংশ দোকানে গত সপ্তাহে চাল দেয়া হয়নি। নয়া পল্টন, ফকিরাপুল, আরামবাগ, মতিঝিল, মালিবাগ, মগবাজার, আজিমপুর এবং পুরনো ঢাকার অধিকাংশ দোকানের কার্ডধারীরা গত সপ্তাহে রেশনের চাল পাননি বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে প্রকাশ। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ফকিরাপুল ও মালিবাগের কয়েকটি রেশন দোকান কারণ সেগুলোতে সপ্তাহের প্রথম দু’দিন চাল দেওয়া হয়েছিল। কয়েকজন রেশন মালিকের বক্তব্য তুলে ধরে রিপোর্টার লিখেছেন, পুরো বরাদ্দের আংশিক যা পাওয়া গিয়েছিল, প্রথম দু’দিনেই তার শেষ হয়ে গেছে। বোঝা যাচ্ছে, রিপোর্টার ওই সমস্ত কথা লিখেছেন, যে গুটিকয়েক দোকানে প্রথম দুদিন চাল সরবরাহ করা হয়েছিল। খাদ্য দপ্তরের সেক্রেটারির বরাত দিয়ে তিনি লিখেছেন, গত সপ্তাহে পুরো চাল দেওয়া সম্ভব হয়নি, তবে আংশিকভাবে সরবরাহ দেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যে চাল সংগ্রহ করা হয়েছে যানবাহনের সংকটের দরুন তা সময় মত আনা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া গত ক’দিন বাহাদুরাবাদ ফেরি বন্ধ থাকায় চাল সরবরাহের ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। অন্যান্য স্থানীয় যানবাহন চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসছে। এতে চাল সরবরাহ বিঘ্ন সৃষ্টি হবে না এবং পরিশেষে খাদ্য সচিব বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই রেশনের চাল বন্ধ করা হবে না।
কয়েকদিন আগে খাদ্য মন্ত্রী জনাব আব্দুল মমিন বলেছিলেন, দেশব্যাপী বিধিবদ্ধ রেশনিং এলাকায় বর্তমান ব্যবস্থার মত রেশন সরবরাহ করা হবে। এবং রেশনের মাল দেয়ার ব্যাপারে কোন ডিলার কোনরূপ অনিয়মানুবর্তিতা দেখালে সরকার তার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সাম্প্রতিক বন্যার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা সচেতন। এবং আমরা একথাও জানি যে, যানবাহন চলাচলের অভাবজনিত অসুবিধাটাই সর্বাপেক্ষা মারাত্মক। তবুও আমাদের কিছু বক্তব্য এসে যায় এবং তা হল, খাদ্য সচিবের উল্লেখিত আংশিক বা তাদের সবটাই কি জনসাধারণ পেয়েছে? আমরা বারংবার একই কথা বলে এসেছে যে, কোনো কোনো অসুবিধার জন্য মাঝেমধ্যে রেশনের মাল সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু জনসাধারণের জন্য বরাদ্দকৃত রেশ
নের মালের সিংহভাগ যে ভুয়া রেশন কার্ডধারী ও টাউট সম্প্রদায় সপ্তাহের প্রথমেই তুলে নিয়ে যায়, সে ব্যাপারে এযাবত কোন সক্রিয় ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এসব ভুয়া রেশন কার্ডধারী ওঠার শ্রেণি সপ্তাহের শুরুতে লাইনের প্রথম দিকে এসে সারিবদ্ধ হয় এবং তারাই তা পর্যায়ক্রমে তুলে নিয়ে যায়। সাধারণমানুষ লাইনের পেছন থেকে সারাদিন দাঁড়িয়েও এক ছটাক মাল পায় না এবং এ ঘটনা প্রতিটি মহল্লার প্রতিটি লোক জানে। তারা এই ভাবে রেশনের মাল তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী লোকের কাছে অথবা বাজারে নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে দেয়।
খাদ্য দপ্তরের কাছে আমাদের আরো কিছু প্রশ্ন আছে। গত সপ্তাহে যারা চাল পাননি তাদের কে কি বর্তমান অথবা আগামি যেকোনো সপ্তাহে তাদের বরাদ্দের অংশ দেওয়া হবে? দীর্ঘদিন থেকে আমরা দেখে আসছি, যদি কোন কার্ডধারী কোন সপ্তাহে তার জন্য বরাদ্দকৃত রেশনের মাল তুলতে না পারেন অথবা রেশন দোকানের মালের অভাবে তাকে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়, তাহলে পরবর্তী সপ্তাহে তার পূর্বেকার অংশ দিয়ে দেওয়া হয়। অবসরে আসন দোকানদারদের কারসাজিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে। আমরা খাদ্য বিভাগের কাছে অনুরোধ জানাব সরকারের ওই প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী জানো পরবর্তী সপ্তাহে গত সপ্তাহের না পাওয়ার পুরোপুরিই সরবরাহ করা হয় এবং তা কার্যকর করতে যথাবিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। শুধুমাত্র রাজধানী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা প্রসঙ্গেই আমাদের এ বক্তব্য নয়, দূরাঞ্চলে যেখানে রেশনিং প্রথা চালু রয়েছে সে সমস্ত এলাকার সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি। খাদ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, যে ভাবেই হোক রেশনিং এলাকাগুলোতে সব রেশনের মাল নিয়মমতো সরবরাহ করা হবে। এখন বন্যার পানি ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে এবং যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। সুতরাং বিধিবদ্ধ রেশনিং এলাকায় প্রতিটি লোকেই যাতে সময় মতো তাদের জন্য বরাদ্দকৃত অংশ পুরোপুরিই লাভ করতে পারে খাদ্য দপ্তরের কাছে সেটাই আমাদের ঐকান্তিক আবেদন।
কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক