১১-৭-৭২ দৈনিক পূর্বদেশ দু’জন রাজাকারের জরিমানাসহ সশ্রম কারাদণ্ড
যশাের ৯ই জুলাই। দালাল আইনে যশােরের ৪নং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল দু’জন রাজাকারকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচশ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরাে ছ’মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালের প্রধান ছিলেন যশােরের অতিরিক্ত দায়রা জজ জনাব আনােয়ার হােসেন সর্দার। দালাল আইনে যশােরের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এই প্রথম একটি মামলার বিচার করলেন। গত ৫ই জুলাই মামলার রায় প্রদান করা হয়। রায় প্রদানকালে আদালতে জনতার বিশেষ ভীড় ছিল। মামলার একজন আসামী খালাস পান। মামলার বিবরণে প্রকাশ, অভিযুক্ত আতিয়ার রহমান, মতিউর রহমান ও কাওসার আলী রাজাকার ছিলেন। তারা বাদী হারান সরকারের দুটি গবাদি পশু জোরপূর্বক নিয়ে যান। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা রাজাকারের পােশাক পরে সশস্ত্র অবস্থায় বাদী হারান সরকারের বাড়ীতে আসলে বাদী ভয় পেয়ে যান এবং বাড়ীর কাছে ঝােপে লুকিয়ে থাকেন। পরে ঝােপ থেকে ফিরে এসে তিনি দেখতে পান যে, তার দুটি গবাদিপশু নেই। আসামীরা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবী করেন। অভিযুক্ত আতিয়ার রহমান বলেন, তিনি কোন সময়ই রাজাকার ছিলেন না।
অপর দু’জন জানান যে, ঘটনার সময় তারা রাজাকার ছিলেন না। আদালত বাদী পক্ষের দু’জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ট্রাইব্যুনালের জজ তাঁর রায়ে বলেন যে, বাদী পক্ষ বিবাদীদের বিরুদ্ধে আনীত চুরির অভিযােগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ বাদী পক্ষের সাক্ষীদের ঘটনার সময় ঘটনার বিবরণ’ সম্পর্কিত সাক্ষ্য অসামঞ্জস্য ও অসংলগ্নতা পূর্ণ এবং পরস্পর বিরােধী হয়েছে। এছাড়া ঘটনা সম্পর্কে প্রত্যক্ষদশী কোন সাক্ষী নেই। সুতরাং বিবাদী দুটি গবাদিপশু চুরির অভিযােগে দোষী নন। তবে দালাল আদেশের অনুচ্ছেদ ১১ (সি) অনুযায়ী জজ অভিযুক্ত মতিউর রহমান ও কাওসার আলীকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং আতিয়ার রহমানকে বেকসুর খালাস দেন। ট্রাইব্যুনাল রাজাকার মতিউর রহমান এবং কাওসার কে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচশ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরাে দু’মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। বিশেষ সরকারি কৌসুলি এড, মােস্তাফিজুর রহমান মামলা পরিচালনা করেন। বিবাদী পক্ষে ছিলেন এড. নুরুল ইসলাম।
সূত্র : সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ১৯৭১ প্রত্যয় জসীমজাপ্রাপ্ত১৯৭১