নৌ-কমাণ্ডার প্রচণ্ড আঘাত
নেভাল কমাণ্ডের প্রচণ্ড অপ্রতিহত রয়েছে। আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে জল জাহাজগুলাে ধ্বংস হওয়ার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী বন্দর রক্ষার জন্য অতিমাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করে। পাকবাহিনীর সতর্কতা সত্ত্বেও গেরিলার সাফল্যের সাথে গ্রীক জাহাজ বার্মা জাদে’ ডুবিয়ে দিয়েছে। ঢাকা থেকে এপিপির রিপাের্টে প্রকাশ, চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে উপর্যুপরি বিস্ফোরণে নভেম্বরের ৩ তারিখে পাকিস্তানী তৈলবাহী জাহাজ মাহতাব জাভেদ’ ধ্বংস হয় ও ডুবে যায়। গেরিলাদের বারবার আক্রমণ ও বিস্ফোরণের ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলাে প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে। পাকিস্তানীদের মনােবল ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য এই আঘাত সুদূরপ্রসারী ফলাফল আনে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নৌ-বাহিনীর ফ্রগম্যান ও অন্যান্য কর্মীদের অবদানও বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। তারা সারাদেশে নদীবন্দরগুলােতে ব্যাপকভাবে তৎপরতা চালিয়ে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেয়। নৌ-বাহিনী সম্পর্কে বাংলার বাণীতে লেখা হয় ?
নৌ-বাহিনীর লােকদের নিয়ে একাত্তরের নভেম্বর মাসে নিয়মিত বাহিনীর অধীন নৌবাহিনী গঠন করা হয়। ৯ই নভেম্বর পাকবাহিনীর নিকট থেকে দখল করা ছােট আকারের ৬টি নৌ-যান নিয়ে প্রথম বঙ্গবন্ধু’ নৌ-বহরের উদ্বোধন করা হয়। এই বাহিনী দখলকৃত অঞ্চলের জলপথে কম্যাণ্ডে তৎপরতা চালাতে থাকে। বাংলার বাণী’র অপর এক নিবন্ধে অবসরপ্রাপ্ত মেজর রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, আগষ্ট মাসের দিকে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর এলাকায় সমুদ্রগামী জাহাজগুলাে ধ্বংস করবার জন্য মুক্তিবাহিনীর মধ্যে থেকে একদল গেরিলা ফ্রগম্যান তৈরি করা হয়। ১৬ই আগষ্ট এই মুক্তিসেনারা চট্টগ্রাম বন্দরে নােংগর করা এমভি আরমাদ ও এমভি আল আব্বাস নামক করাচী থেকে আগত অস্ত্রবাহী দুটো জাহাজ ‘লিমপেট মাইনের সাহায্য সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দেয়। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা ফ্রগম্যানদের এটাই ছিল প্রথম তৎপরতা। এরপর থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিক পর্যন্ত সময়ে এরা প্রায় ২১টি পাকিস্তানী ও বিদেশি জাহাজ বিনষ্ট করে ও ডুবিয়ে দেয়।” (সূত্র : মুক্তিযুদ্ধকালে প্রকাশিত বাংলাদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত)
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত