You dont have javascript enabled! Please enable it!
নকসী আক্রমণ

নকসী বিওপিতে ৩রা আগষ্ট মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর একটি বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। মেজর আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে অস্টম ইষ্টবেঙ্গল এই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। ১লা আগষ্ট আমিন আহমেদ চৌধুরী সমস্ত সেকশন অধিনায়কদের নিয়ে ব্রিফিং করেলন। ১০৬ মিঃ মিঃ ৭৫ মিঃ মিঃ আর এর জন্য শালবনের আড়ালে বাংকার তৈরি করা হল। উত্তরে বিওপির চতুর্দিকে প্রায় ৬০০ গজ এলাকা জঙ্গল পরিস্কার করে সামনে পরিস্কার করে রেখেছিল। ২রা আগষ্ট বিকেলে জেড ফোর্স অধিনায়ক যুদ্ধ পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজ অবস্থান পরিদর্শন করেলেন। ৩রা আগষ্ট ১২ টায় এসেম্বলি এরিয়া থেকে এফইউপিতে মুক্তিযোেদ্ধারা পৌঁছে গেল। এফইউ পিতে অষ্টম ইষ্টবেঙ্গলের অধিনায়ক মেজর আমিন মিলিত হলেন। রাত ২-৪৫ মিনিটে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গে শত্রু গােলান্দাজ কামান থেকে গােলাবর্ষণ শুরু করল। মুক্তিবাহিনীর কামানও গর্জে উঠল। মুক্তিবাহিনীর সৈনিকেরা মাটিতে শুয়ে পড়ে। আমিন আহমেদ চৌধুরী চিৎকার করে সবাইকে অগ্রসর হতে আদেশ দেন। বামে হাবিলদার নাসির তার সেকশন নিয়ে ডানে অগ্রসর হতে থাকে। মুক্তিযােদ্ধাদের এই অটুট মনােবলে শত্রু সেনারা হতােদ্যম হয়ে পড়ে। আমিন আহমেদ চৌধুরী গর্জে উঠলেন, চার্জ’। সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিবাহিনী শত্রুর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এই সময়ে শত্রুর কামানের গােলা সামনে এসে পড়ল এবং আমিন আহমেদ চৌধুরীর ডান পায়ে একটি শেলের আঘাত লাগল। আমিন আহমেদ চৌধুরী আঘাত প্রাপ্ত অবস্থায় সামনে অগ্রসর হতে লাগলেন। শত্রুর মাইন বিস্ফোরণে অনেকেই আহত হলেন।

অনেকে কামানের গােলায় শহীদ হলেন। আমিন আহমেদ চৌধুরী মাটিতে পড়ে গিয়ে শত্রুকে গুলি করা অব্যাহত রাখেন। সাইড রােল করে যাওয়ার সময় একটা গুলি আমিন আহমদ চৌধুরীর ডান হাতের কনুই-এ লাগাল। তাঁর হাতের স্টেনগানটি ছিটকে পড়ে গেল। এক ঝাঁক গুলি এসে পাশের জমির আইলের ওপরে পড়ল। আমিন আহমেদ চৌধুরী সাইড রােল করে শালবন-এলাকার দিকে যেতে সচেষ্ট হন। মাত্র ৫০ গজ দূরে শত্রু সেনারা অবস্থান করছে। আমিন আহমেদ চৌধুরী আর্টিলারী শেলের সৃষ্টি মাটির গর্তে স্থান করে নেন। মৃত প্রায় আমিন আহমেদ চৌধুরী কর্দমাক্ত মাটির মধ্যে হেলমেট মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে রইলেন। এমন সময় শালবন থেকে কমাণ্ডিং অফিসারের কণ্ঠস্বর ভেসে এল, আমিন আস্তে আস্তে আসার চেষ্টা কর। কর্নেল জিয়ার নির্দেশে মেজর আমিন হাবিলদার তাহেরকে সঙ্গে করে আমিন আহমেদ চৌধুরীর খোজে বের হয়েছিলেন। মেজর আমিন ও হাবিলদার তাহের মেজর আমিন আহমেদ চৌধুরীর পা ধরে টানতে শুরু করলেন। লেঃ মােদাসের শালবন থেকে তাড়াতাড়ি করার জন্য চিৎকার করলেন। শত্রু সৈন্য তখন মাত্র বিশ পঁচিশ গজ পেছনে। শত্রুর প্রচণ্ড গােলন্দাজ বাহিনীর গােলাবর্ষণের মধ্যে ক্লান্ত মেজর আমিন আহত আহমেদ চৌধুরীকে নিয়ে নালায় পড়ে গেলেন। হাবিলদার তাহের মেজর আমিন আহমেদ চৌধুরীকে কাধে নামিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে এল। এই ভয়াবহ নকসী সংঘর্ষে আমিন আহমেদ চৌধুরী প্রাণে বেঁচে গেলেও ১২ জন সৈনিক শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে জেড ফোর্সের কামালপুর যুদ্ধ, বাহাদুরাবাদ আক্রমণ ও নকসী সংঘর্ষ বাঙালির অমিত তেজ ও প্রবল সাহসিকতা ও সুমহান দেশপেম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!