You dont have javascript enabled! Please enable it!
হরিনগর কৈখালী গানবােটের সাথে যুদ্ধ
হরিনগর কৈখালী এলাকায় পাক নৌবাহিনী নিয়মিত টহল বােট পাহারা দিত। কারণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্ত্র, গােলাবারুদ, যুদ্ধের আনুষঙ্গিক অতীব প্রয়ােজনীয় জিনিষপত্র মুক্তিবাহিনীর এই পথে নেয়াই ছিল সহজসাধ্য। তাই হানাদার পাকবাহিনী মুক্তিবাহিনীর এই পথ ব্যবহারে বাঁধা দিতে সদা প্রস্তুত থাকত। কারণে-অকারণে, সময়-অসময়ে তারা হানা দিত মুক্তিবাহিনীর সন্ধানে। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর বিচ্ছগুলাে কোনদিন গানবোেট বা টহল বােটগুলােকে বিনা বাধায় ছেড়ে দেয়নি। কোনকিছু করতে না পারলেও দমাদম কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে, মুক্তিবাহিনীর উপস্থিতি জানিয়ে দিয়ে চম্পট দিত। | গাজী নওয়াবদী ফকির, তার দু’ছেলে এবং তার এক মেয়েও মাঝে মধ্যে এই অপারেশনে যােগ দিত। নওয়াবদী ফকির মুক্তিবাহিনীর সর্বপ্রকার সাহায্য, পথ দেখান সহযােগীতা সব বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করত। তাই তিন তিনবার খানসেনার আর রাজাকারবাহিনী তার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। কিন্তু এসব অত্যাচারে নওয়াবদী ফকিরের পরিবার আরাে ত্যাগী ও সংগ্রামী ভূমিকা গ্রহণ করে। সবকিছু জেনে তারা মুক্তিবাহিনীর পাশে এসে দাঁড়ায়। একই কথা, একই লক্ষ্য এসব জালেমদের হাত থেকে বাংলাদেশের মুক্তি স্বাধীনতা। মুক্তিবাহিনীর যে কোন প্রয়ােজনে এই পরিবার ছিল বিশ্বস্ত বন্ধু। 
শ্রাবণ মাস। ঝুমঝুম বৃষ্টি। মুক্তিবাহিনী ওৎ পেতে বসে আছে শিকারের জন্য। পক্ষান্তরে হানাদারবাহিনীও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করছে কোথায় মুক্তিবাহিনীর অবস্থান। বিএসএফ-এর দূরবীনে ধরা পড়ে গেল দু’টো গানবােটের আগমণ, সাথে রয়েছে গােয়েন্দা গানবােট ছােটখাট অথচ অতি শক্তিশালী বাবর-১৪৪’। অন্যান্য গানবােটের চেয়ে বাবর’ এর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল যে, সে ডুব দিয়ে চলতে পারত। বিএসএফ মুক্তিবাহিনীকে সাবধান করে দিল। কিন্তু কমান্ডার বাশার ও সেলিম (বরিশাল) দুর্দমনীয় প্রতিজ্ঞা নিয়ে ওদেরকে হামলা করতে প্রস্তুত। সাথে নিল আবুল হােসেন, শামসুর রহমান, বরকত, নূর মােহাম্মদ, প্রমুখ দুঃসাহসী কয়েকজন গেরিলা যােদ্ধা। এই গানবােটের সাথে যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র বা তেমন সরঞ্জাম মুক্তিবাহিনীর হাতে নেই সত্য, কিন্তু তারা ওদের বুঝিয়ে দিতে চায় বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি। তাই এলএমজি নিয়ে পর পর কয়েকটা ব্রাশ ছেড়ে দেয় গানবােটের গায়ে ঠাস্ ঠাস্ করে। গানবােটের কোনই ক্ষতি হয়নি সত্য, কিন্তু মুক্তিবাহিনী তার প্রিয় স্বদেশ ভূমিকে রক্ষা করতে সদা জাগ্রত এ ধারণাটা তারা পেল। ওরাও চালায় ব্যাপক শেলিং। কিন্তু সবই বিফলে গেল, কারণ ততক্ষণে মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা পগার পার। ( সূত্র ও স্বাধীনতার দুর্জয় অভিযান, স, ম, বাবর আলী ।)

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!