You dont have javascript enabled! Please enable it!
সম্মুখ সমরের আগে
মুক্তিযােদ্ধারা মূলত দুটি পদ্ধতিতে যুদ্ধ করতেন। এফএফ বা নিয়মিত বাহিনী। পাকসৈন্যের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ করতেন। তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সীমান্তবর্তী গ্রামের নির্দিষ্ট বাড়িতে শেলটার নিয়ে থাকতেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কোন স্বচ্ছল ব্যক্তির বাড়িতে এই শেলটার গড়ে তােলা হত। নিয়মিতবাহিনীর সদস্যরা সাধারণত খাকী পােষাক, বেল্ট, হেলমেট ও জুতা পরে যুদ্ধ করতেন। এদের অস্ত্র বলতে কিছু এলএমজি, এসএমজি, এসএল আর এবং থ্রী নট থ্রী রাইফেল। অপরদিকে গেরিলা মুক্তিযােদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে আত্মগােপন করে থাকতেন। তাঁদের কোন নির্দিষ্ট পােষাক ছিল না। সেই সময় গ্রুপ ভাগ করে মুক্তিযােদ্ধাদের বিভিন্ন অপারেশন পাঠানাে হত। অপারেশনের গুরুত্ব বিবেচনা করে গ্রুপের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হত। তারপর প্রয়ােজনীয় অস্ত্র ও গােলাবারুদ নিয়ে মুক্তিযােদ্ধারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে অর্পিত দ্বায়িত্ব পালন করতেন। তবে অর্পিত দ্বায়িত্বের কথা শুধুমাত্র গ্রুপ কমাণ্ডার কিংবা বড়জোর সহ-কমাণ্ডার জানতেন। অন্যান্যরা নির্দেশ পালন করতেন। অনেক সময় বিশেষ কোন উদ্দেশ্য ছাড়াও মুক্তিযােদ্ধারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছেন। আসলে অস্ত্র গােলাবারুদের সংকট কিংবা অন্য কোন প্রয়ােজন না থাকলে মুক্তিযােদ্ধারা ভারতের ক্যাম্পে ফিরতেন না। তাঁরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সীমান্তবর্তী শেলটারেই অবস্থান করতেন। 
হাসান, তারিক, থােকন, কিয়ামুদ্দিন, রবিউল, রওশন ও কাশেম ছিলেন গেরিলা বাহিনীর সদস্য। আফাজউদ্দিন এই গেরিলা বাহিনীর সদস্যদের সাথেই থাকতেন। বিভিন্ন সময়ে এঁরা বড় বড় অপারেশনে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু ৫ আগষ্ট ‘৭১-এর যে যুদ্ধে এই ৮ অকুতােভয় তরুণ শহীদ হলেন, আদৌ এরকম কোন যুদ্ধে হবার কথা ছিল না। ৫ই আগষ্টের যুদ্ধের কয়েকদিন আগে ভারতের কৃষ্ণনগর ক্যাম্পে মুক্তিযােদ্ধাদের একটি দল গঠন করা হয়। আগষ্টের প্রথমে দলটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। সেসময় তাদের বিশেষ কোন উদ্দেশ্য ছিল না। তবে সম্ভব হলে চুয়াডাঙ্গার গােকুলখালীতে অবস্থিত অস্থায়ী পাকক্যাম্প নষ্ট করা, চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর সড়কের দু’একটি ব্রীজ ভেঙ্গে পাকবাহিনীর অবাধ যাতায়াত বন্ধ করা এবং নীলমনিগঞ্জ বা তার পাশ্ববর্তী এলাকায় রেললাইন বিনষ্ট করে রেলযােগে পাকবাহিনীর সমরাস্ত্র পরিবহন ব্যহত করার উদ্দেশ্য ছিল। খােকন, কাশেম, রবিউল, রওশন, কিয়ামুদ্দিন, আফাজউদ্দিন, তারিক ও হাসান এই দলের সদস্য ছিলেন।
দলটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী যােবপুর (কেউ কেউ যাহাপুর বা জয়পুর বলে থাকেন) গ্রামের তৎকালীন এক ইউপি মেম্বারের বাড়িতে শেলটার নেন। সেই সময় মুক্তিযােদ্ধারা অনেকেই অসুস্থ ছিলেন, কাদা-পানিতে হাটাহাটি আর মাত্রাতিরিক্ত প্ররিশ্রমের কারণে কেউ পুরােপুরি সুস্থ ছিলেন। কারাে কারাে হাতে পায়ে ঘা-পাঁচড়া দেখা দিয়েছিল। এ কারণে মুক্তিযােদ্ধাদের গেরিলা কমাণ্ডার চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার বটিয়াপাড়া গ্রামের হাফিজুর রহমান জোয়াদ্দারের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযােদ্ধাদের আসার আগেই তার ৮ জন সহযােদ্ধা শহীদ হন। সেই সময় মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র খুব বেশি ছিল না। পাকবাহিনীর তুলনায় লােকবলও ছিল সীমিত, কিন্তু ছিল অসীম মনােবল, দৃঢ় প্রত্যয়, স্বাধীনতার অনির্বাণ শিখায় প্রজ্বলিত দেশপ্রেম, যাকে কোনদিন কোন অস্ত্রে ভেদ করা যায় না। তা হৃদয় থেকে উৎসারিত হয়ে বয়ে যায় অমরতার দিকে, তা চির অনিঃশেষ।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!