গলাচিপা আক্রমণ
৩/৪ দিন পরে ঠিক করলাম ওদের ঘাঁটি আক্রমণ করতে হবে। শওকতকে প্রধান করে জাহাঙ্গীর, মােস্তফা, হাবিবসহ ৩৫ জনের একটা দল পাঠালাম গলাচিপা আক্রমণ করতে। ওরা ঠিক পরিকল্পনা মতাে আক্রমণ করল। মারা গেল বিপক্ষের কয়েকজন। দিন শেষ হয়ে গেল। ওরা ফিরে এল শিবিরে। আবার পরিকল্পনা করল সেই রাতেই আক্রমণ করার। কিন্তু রাত আর আসতে পারল না। দুপুরের দিকে সদলবলে থানা ছেড়ে। পটুয়াখালীর দিকে চম্পট। খবরটা পেলাম রাতে। শওকত লাফিয়ে পড়ল। তখনই ১০জনের একটা দল নিয়ে সে চলে গেল গলাচিপায়। পরের দিন বাকী সকলকে নিয়ে আমিও গিয়ে পৌঁছলাম। পটুয়াখালী থেকে জাতিসংঘের একটা ছােট জাহাজে কয়েকজন বাঙালি পুলিশ দিয়ে মেজর ইয়ামিন একটা দল পাঠালেন পর্যবেক্ষণ করতে। অর্থাৎ গলাচিপার খবরাখবর সংগ্রহ করতে।
শব্দ শুনে রেডি হলাম। কিছুক্ষণ পরে চোখে পড়ল জাতিসংঘের জাহাজটা গলাচিপা বন্দরের দিকে এগিয়ে আসছে। আমরা ওৎ পেতে থাকলাম। আওতার মধ্যে আসার সাথে সাথে আক্রমণ চালালাম। প্রায় ১মাইল এলাকা নিয়ে আমরা পজিশন নিয়েছিলাম। বাঙালি পুলিশগুলাে তাদের হাতের অস্ত্রশস্ত্র সব নদীতে ফেলে দিল। শেষ পর্যন্ত কূলে ভিড়ল জাহাজটি। চেষ্টা করছিল কাটিয়ে যেতে কিন্তু পারল না। দখল করলাম জাহজটি। ওটার নাম ছিল বাট্রি-মেবি’। মালয়েশিয়ার লােক ছিল। তাদের কাছ থেকে আমাদের এয়ার ফোর্সের শাজাহান, মজিদ, মিজান শিখে নিল জাহাজটি চালাবার পদ্ধতি। মালয়েশিয়ানদের সসম্মানে জাহাজ থেকে উঠিয়ে যত্ন সহকারে তাদেরকে রাখলাম গলাচিপার একটা হােটেলে। জাহাজটাকে আমরা আমাদের যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করলাম। ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখ। হাতেম আলী, আলমগীর, আজাদ, বারেক, ওদের সকলের নিকট ব্যক্তিগত চিঠি পাঠালাম পটুয়াখালী আক্রমণ করার প্ল্যান দিয়ে।
ডিসেম্বরের ১০ তারিখ। রাত ১০ টার সময় বারেক তার দল নিয়ে পটুয়াখালীর উত্তর পার দিয়ে, আমি তােহলিয়া অর্থাৎ পটুয়াখালীর পূর্ব দিক দিয়ে, হাতেম আলী, আলমগীর দক্ষিণ দিক দিয়ে এবং আজাদ পটুয়াখালীর পশ্চিম পার দিয়ে আক্রমণ চালাবে। পাঁচ কমাণ্ডারের একটা বৈঠক আহ্বান করলাম বগাবন্দরে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বগাবন্দর বাউফল থানার অন্তর্গত এবং পঞ্চম আলীর দল বাউফল থানা দখল করে নিয়েছিল। তখন পর্যন্ত গলাচিপা, বাউফল, বামনা ও বেতাগী থানা মুক্তিবাহিনীর দখলে। (সূত্র : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দলিলপত্র অষ্টম খণ্ড।)
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত