You dont have javascript enabled! Please enable it! টেকেরহাটে পাকসেনাদের সহিত যুদ্ধ - সংগ্রামের নোটবুক
টেকেরহাটে পাকসেনাদের সহিত যুদ্ধ
পাকসেনারা নদীর দক্ষিণ পাড় দিয়ে ট্রেন্স তৈরি করে দিনের বেলায় ডিফেন্স নিয়ে থাকত। আর রাতে তারা সি এন্ড বি ডাকবাংলায় এসে রাত্রি যাপন করত। এখানে প্রায় ৬৫ জন পাকসেনা মজুবত বাংকারে ডিফেন্সে থাকত। ভারত থেকে প্রায় ৩০ জন এফএফ মুক্তিযােদ্ধার প্রথম ব্যাচ রাজৈর এলাকায় আসে। এই দলের কমান্ডার ছিল রাজৈর থানা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী শওকত আলী  
ও পটুয়াখালী থানার মুক্তিবাহিনীর অন্যান্য ছােট দলগুলিও আমার একক নেতৃত্ব মেনে নিয়ে কাজ করা শুরু করেছিল । হাবীব খেপুপাড়ার ছেলে। সে সকলের সামনে, তার পিছনে আমি, আমার পিছনে বাবুদা’। খেপুপাড়ায় কোনদিন যাইনি। হাবীব ছিল একমাত্র পথঘাট চেনা ছেলে। পুলের উপর উঠতে যাব, অমনি শত্রুপক্ষের পেট্রোল পার্টির সামনে পড়ে গেলাম। ওরা আমাদের উপরে গুলি করল। কিন্তু আমাদের কারও গায়ে গুলি লাগতে পারেনি। তারপরই আরম্ভ হল থানা থেকে গুলি করা। আমরা আর পুল পার হতে পারলাম না। ওদিকে আমাদের জাহাজ থেকে পরিকল্পনা কার্যকরী হবার আগে গােলাগুলির শব্দ পেয়ে ওরাও থানার দিকে গুলি ছুঁড়ল। আমরা সারারাত থানা ঘিরে রাখলাম। সকালে আমি চলে এলাম। শওকতের উপর সমস্ত ভার দিয়ে সমস্ত দল ওখান থেকে একটু দূরে সরিয়ে আনলাম। চলে এলাম বগাবন্দর। আমার সাথে আনলাম বাবুদা’, মাষ্টার সাহেব, লাতিফ, বাবুল , ফোরকান, দেলােয়ার এদের কয়েকজনকে। বগাবন্দর থেকে পাকজলযানের উপর আক্রমণ ও বাগা এসে পৌছলাম ৮ তারিখ রাত আটটার সময়। পটুয়াখালী থেকে বাগাতে টেলিফোন এল যে, পাকবাহিনী পালিয়ে যাচ্ছে।
বাগা তখন মুক্ত এলাকা। ওখানে পঞ্চম আলীর দলের ১৫/১৬ জনের ঘাঁটি ছিল। আমাকে পেয়ে ওরা খুশি হল। বাগা পােস্ট অফিসে গিয়ে পটুয়াখালীর সাথে যােগাযােগ করলাম। রাত নয়টার সময় দুটো লঞ্চে পাকজান্তার দল ও দালালদের দল পালিয়ে আসল পটুয়াখালী থেকে। কিন্তু তাদের যেতে হবে বগাবন্দরের নদী দিয়ে। বাউফলে ফোনে জানালাম সবকিছু। ফোন পেয়ে বাউফল থেকে একটা দল রওনা হল বাগার দিকে। দূরত্ব ৮ মাইল। পটুয়াখালী থেকে যথারীতি আমরা খবর পেতে থাকলাম। পটুয়াখালীর তখনকার ডিসি আবদুল আউয়ালের সাথে যােগাযােগ করলাম এবং খবরের সত্যতা প্রমাণ করলাম। আমরা ২০জনের মতাে লােক রাইফেল হাতে বগা নদীর কূলে পজিশন নিলাম। রাত দশটার সময় লঞ্চ দুটো আমাদের রেইঞ্জের মধ্যে এসে গেল। গুলি ছুঁড়লাম। ওরাও ছুঁড়ল। ৩/৪টা এলএমজির ব্রাশ। লঞ্চ দু’টো রাখতে পারলাম না। ফুল স্পীডে চালিয়ে রেঞ্জের বাইরে চলে গেল।
৯ তারিখ সকাল ৮ টার সময় ভারতীয় বিমান বােম্বিং করল পটুয়াখালীতে। আমরা পটুয়াখালী চলে গেলাম। খবর পেয়ে অন্যান্য দলের কিছু কিছু মুক্তিবাহিনী চলে এসেছিল। থানা, পুলিশ ক্যাম্প সব দখলে নিয়ে নিলাম এবং প্রত্যেক পজিশনে পয়েন্টে করে কড়া গার্ড মােতায়েন করালাম। ওদিকে শওকত পরের বারে খেপুপাড়া আক্রমণ করে এবং থানার সমস্ত অস্ত্রশস্ত্রসহ খেপুপাড়া থানা দখল করে নেয়। ৯ই ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা পটুয়াখালীর সমস্ত থানাসহ পটুয়াখালীকে মুক্ত এলাকা ঘােষণা করলাম। তখন আমার কমাণ্ডে প্রায় ১৫০০ মুক্তিবাহিনী। (সূত্র : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, অষ্টম খণ্ড।)

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত