You dont have javascript enabled! Please enable it!
দিকনগর ব্রীজের যুদ্ধ
পাকহানাদার বাহিনীর একটি মজবুত ঘাঁটি ছিল দিকনগর ব্রীজ। ব্রীজে এবং ব্রীজের নিচ দিয়ে প্রবাহিত কুমার নদী নিয়ন্ত্রণে রাখাই ছিল পাকসেনাদের দায়িত্ব। মুক্তিযােদ্ধারা বহু দিনপূর্ব হতেই দিকনগর ব্রীজে অবস্থানরত পাকসেনাদের আক্রমণ করে ব্রীজে হানাদার বাহিনীর কবল হতে মুক্ত করার সংকল্প করে আসছিল। এই মর্মে একটা পরামর্শ সভা মুকসুদপুর থানা আওয়ামী লীগ নেতা বনগ্রামের আশরাফ (অণ্ড) আহ্বান করে। বনগ্রামে ভৌমিকদের দালানের ছাদে এই সভা ডিসেম্বরের ১০ তারিখে বসে। বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক নায়েক সুবেদার (পরে সুবেদার মেজর) মহিউদ্দীন মােল্লা, ইপিআরের সিলেটের জহিরুদ্দীন, তারা ফকির, লুৎফর রহমান, আঃ মাজেদ সর্দার প্রমুখ এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় দিকনগর ব্রীজের পাকসেনাদের উপর আক্রমণের তারিখ ১২ই ডিসেম্বর ঠিক করা হয়। ভাের ৪ ঘটিকায় প্রায় ৫০০ শত মুক্তিযােদ্ধা এই আক্রমণে অংশ গ্রহণ করে। দিকনগর ব্রীজের দুই পাশে মজবুত বাংকার করে ৭০জন পাকসেনা এবং ২০জন রাজাকার ছিল। রাজাকারদের কমান্ডার ছিল লােহাইড়ের তােফাজ্জেল হােসেন ওরফে তপু মিয়া। উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম দিক হতে আক্রমণ পরিচালনা করা হয়। এই যুদ্ধে প্রধান কমান্ডার ছিলেন মহিউদ্দীন মােল্লা (দুলালী বাড়ি) এবং সহকারী কমান্ডার ছিল জহিরুদ্দীন ও লুত্যর রহমান।
১৩ই ডিম্বের পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। ভাঙ্গা, রাজৈর, শিবচর ও নগরকান্দার বহু মুক্তিযােদ্ধা এই যুদ্ধ করে। যুদ্ধ চলাকালে মাইকে পাকসেনাদের লক্ষ্য করে বার বার এই মর্মে ঘােষণা দেওয়া হয় যে, তারা যদি আত্মসমর্পণ করে, তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এই ঘােষণায় আশ্বস্ত হয়ে পাকসেনারা সারেন্ডার করে। কিন্তু তপু মিয়া সারেন্ডার করবে না। এই যুদ্ধে প্রায় ৩০জন পাকসেনা এবং ১০ জন রাজাকার মারা যায়। অন্যদিকে কাসেম, হায়দার ও তাসলেম সিকদার নামে তিনজন মুক্তিবাহিনী শহীদ হয় এবং ছালাম, সােনা মিয়াসহ ২৫জন আহত হয়। আশরাফ, তারা ফকির প্রভৃতি আওয়ামী লীগ কর্মীরা বিভিন্ন গ্রাম হতে চাঁদা তুলে মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য রসদের ব্যবস্থা করেন।  দিকনগর যুদ্ধ শেষের দিকে যখন রাজাকার তপু মিয়া সারেন্ডার করছিল না এই অবস্থায় এলাকার হাজার হাজার কৌতূহলী জনতা চারদিকে ভিড় জমিয়ে ‘জয় বাংলা শ্লোগান দিচ্ছিল। অবশেষে তপু মিয়ার গুলি ফুরালে সে সারেন্ডার করে। তাকে জয় বাংলা  শ্লোগান দেওয়ার জন্য বার বার চাপ দেওয়া সত্ত্বেও জয় বাংলা বলেনি। মুক্তিযােদ্ধারা তাকে ধরে মুকসুদপুর থানায় নিয়ে নাক, কান, হাত কেটে লবণ মাখিয়ে শাস্তি দিয়ে মারে। স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধা সােহরাব আলী, এম এ মান্নান খান, লিয়াকত ও আতিয়ার রহমান খান প্রভৃতিও যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। ( সূত্র ও মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর ফরিদপুর, মােঃ সােলায়মান আলী।)

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!