মুকসুদপুর থানার বামনডাঙ্গা বাজারের যুদ্ধ
মুক্তিফৌজ কমান্ডার আশরাফউজ্জামান কোহিনুরের দলের সাথে মুকসদপুর থানার বামনডাঙ্গা বাজারে ৯ই অক্টোবর দুপুর ১.৩০ মিনিটে পাকহানাদারবহিনীর এক রক্তক্ষয়ী সম্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। ঘটনার বিবরণ কোহিনুরের নিজের বর্ণনা মতে, সে মুক্তিফৌজ ক্যাম্প উজানী হতে প্রায় ৩০ জন মুক্তিযােদ্ধাসহ ঘটনার দিন বামনডাঙ্গা বাজারে সকালে এসে চা পান করছিল। কিন্তু স্থানীয় হানাদারবাহিনীর দালাল মারফত মুক্তিযােদ্ধাদের আগমণ বার্তা পূর্বেই দীগনগর-টেকের হাট পাকসেনা ক্যাম্পে পৌছে যায়। হানাদারবাহিনী পূর্ব পরিকল্পনা মতাে রাজাকারসহ প্রায় ২০০জন হঠাৎ এসে মুক্তিযােদ্ধাদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করে। কমান্ডার আশরাফউজ্জামান কোহিনুরও তার দল নিয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে ডিফেন্স নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করে। কিন্তু বেশি সংখ্যক পাকসেনাদের সাথে যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধারা বেশিক্ষণ টিকতে না পেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে পলায়ন করে।
আঃ কুদ্ছ নামে একজন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ হয়। সিরাজুল হক ও আবুল কালাম নামে দু’জন মুক্তিযােদ্ধা আহত হয়। দলীয় কমান্ডার কোহিনুর ঘাড়ে, ডান পায়ের আঙ্গুলে ও বুকের উপরে, ডান হাতের গােড়ায় তিনটি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক ভাবে আহত হয়। ফলে সে আর পালাতে পেরে ওখানেই থাকে। মুক্তিযােদ্ধাদের পলায়নের পর কোন পাল্টা গুলি না হওয়ায় পাকসেনা ও রাজাকাররা বিজয়ের বেশে স্বাভাবিক ভাবে বাম-ডাঙ্গা বাজারের উপর দিয়ে হেঁটে আসছিল কিন্তু আহত অবস্থায় মরিয়া হয়ে তার নিকট থাকা এলএমজি দিয়ে ব্রাশ ফায়ার অবিরাম ভাবে করতে থাকে। এই অপ্রত্যাশিত আক্রমণের জন্য পাকসেনারা মমাটেই প্রস্তুত ছিল না। ফলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে থাকে। কোহিনুরের বর্ণনানুযায়ী এই যুদ্ধে মেজর আতা খানসহ ৩৫জন পাকসেনা ও রাজাকার মারা যায়। মুক্তিযােদ্ধাদের নিকট ২টি এলএমজি, ২০টি রাইফেল, ৪টি ৭এমএম স্টেনগান ও ২টি বন্দুক ছিল। ভারী মেশিন গান, ২ ইঞ্চি মর্টার, এলএমজি, এসএমজি ও রাইফেল প্রভৃতি চাইনিজ হাতিয়ার পাকসেনারা এই যুদ্ধে ব্যবহার করে। ( সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর ফরিদপুর, মােঃ সােলায়মান আলী।)
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত