You dont have javascript enabled! Please enable it! কালাছড়া চা বাগান অপারেশন - সংগ্রামের নোটবুক
কালাছড়া চা বাগান অপারেশন
লেঃ হারুনর রশীদ কালাছড়া চা বাগান অপারেশন পরিচালনা করেন। এই চা বাগানটি এরপর সবসময় মুক্ত ছিল। এই মুক্তাঞ্চলটি বাংলাদেশের সেনাদের কাছে অতি প্রিয় ছিল, কারণ পরবর্তীকালে এই চা বাগানটি পাকসেনারা আর কখনই তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি। পাকসেনাদের একটি দল চা বাগানে অবস্থান করছে লেঃ হারুনর রশীদ এ খবর পেয়ে তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য লােক নিয়ােগ করেন। পাকবাহিনীর দুটি কোম্পানী ঐ বাগানে অবস্থান করছিল। লেঃ হারুনর রশীদের অধীনে দুটি কোম্পানী সৈন্য ছিল। নিয়মমাফিক পাকবাহিনীকে আক্রমণ করতে হলে দুটি ব্যাটালিয়ন দরকার। কিন্তু লেঃ হারুন সাহস করে প্রস্তুতি নিলেন। দুটি কোম্পানীর একটির কমাণ্ডার ছিলেন শহীদ হাবিলদার হালিম এবং অপর কোম্পানীর দায়িত্বে লেঃ হারুন নিজে ছিলেন। হারুনর রশীদই বলতে গেলে দুটি কোম্পানীর সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন। সেসময় অন্য কোন অফিসার না থাকায় হাবিলদার শহীদ হালিমকে একটি কোম্পানী পরিচালনার ভার দেয়া হয়।  একদিন রাতে মুক্তিযােদ্ধাদের দুটি কোম্পানী দুটি দলে ভাগ হয়ে পাকঅবস্থানের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মুক্তিযােদ্ধারা পাকঅবস্থানে আঘাত হানল। হাবিলদার হালিম যে কোম্পানী পরিচালনা করছিল ঐ কোম্পানীর একজন যােদ্ধা প্রথমেই শহীদ হওয়াতে তারা আর সামনে অগ্রসর হতে পারেনি।
কিন্তু লেঃ হারুনর রশীদ তাঁর কোম্পানী নিয়ে পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করে। এ আক্রমণে পাকবাহিনীর অনেক সৈন্য হতাহত হয়। শেষ পর্যন্ত পাকবাহিনীর কিছু সৈন্য বাঙ্কারে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযযাদ্ধারা বাঙ্কারে গ্রেনেড চার্জ করে অনেক পাকসেনাকে হত্যা করে। হাবিলদার হালিম তাঁর দলের একজন সেনা  শহীদ হওয়ার আর সামনে অগ্রসর হতে না পারায় লেঃ হারুনর রশীদ নিজের দখল করে শহীদ হালিমের লক্ষ্যস্থলে অবস্থানরত পাকবাহিনীকে আক্রমণ করে এবং তাদের পর্যদস্ত করে স্থানটি দখল করে নেয়। ঐ সংঘর্ষে পাকবাহিনীর কাছ থেকে মুক্তিযােদ্ধারা এলএমজিসহ একশ অস্ত্র উদ্ধার করে। এই সংঘর্ষে মুক্তিযােদ্ধাদের ৭ জন আহত ও দুজন শহীদ হয়। পাকবাহিনীর ২৭ জন সেনার মৃতদেহ পাওয়া যায়। যুদ্ধের পরদিন সকালে ঐ স্থানের সাধারণ নাগরিকরা ঐ সমস্ত পাকবাহিনীর মৃতদেহ বহন করে আনে। পরে তাদেরকে আমার তত্ত্বাবধানে দাফন করা হয়। (অক্টোবর মাসের শেষের দিকের ঘটনা।) (সূত্র : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র অষ্টম খণ্ড)

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত