You dont have javascript enabled! Please enable it!
খান্দার পাড় অপারেশন
তালমা অপারেশনের দুতিন দিন পর আজিজ মােল্লা মুক্তি বাহিনী নিয়ে খান্দারপাড় এলাকার কুখ্যাত পাকসেনা সহযােগী খালেক মুন্সীর বাড়ি অপারেশনে বের হন। তিনি উল্লেখিত গ্রামের নিকবর্তী এক গ্রামে অবস্থান করেন এবং খোজ নিয়ে বাড়িতে খালেক মুন্সীর অনুপস্থিতির বিষয় জানতে পারলেন। তাই তার ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি ঐ এলাকা হতে ফিরে না এসে, সাথে উক্ত এলাকার জাফরসহ কয়েকজন মুক্তিযোেদ্ধা রেখে বাকী সবাইকে বারিক হাবলদারের কমান্ডাে বাড়ি পাঠান। অতঃপর কয়েক দিন মুকসুদপুর থানায় আত্মগােপন করে জাফরের সহযােগিতায় সুযােগ মতাে খান্দার পাড় হাটের দিন সন্ধার পর খালেক মুন্সীর বাড়ি অপারেশন করেন। এই হামলায় যদিও খালেক মুন্সী পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করতে সক্ষম হয় তথাপি তার দু’জন ক্ষমতাশালী সহকারী মারা যায়। মুক্তিযােদ্ধারা তার বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এই অপারেশনে উল্লেখিত ব্যক্তি মারা না গেলেও যথেষ্ট উপকার রাত প্রায় এগারােটা বাজে। আজিজ মােল্লা সিন্ধিয়া ঘাটে গিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের কয়েক দলে বিভক্ত করে নির্ধারিত বিভিন্ন জায়গায় সবাইকে আক্রমণ পজিশনে বসান এবং নিজে মাইনারকান্দির একটি ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সব আক্রমণ লাইন ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকেন। এমন সময় হঠাৎ একটি ছেলেকে দারােগা অতর্কিত জাপটে ধরে।
মঞ্জু ছিল বেশ সাহসী এবং শক্তিশালী যুবক। সে কৌশলে রাইফেলের নাল দারােগার বুক লক্ষ করে ফায়ার দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ওখানে অন্যান্য মুক্তি যােদ্ধারাও ফায়ার শুরু করে। ফলে দারােগাসহ তার বাসার কয়েকজন নিহত হয়। এই ঘটনা যখন ঘটে, ঠিক তখনই আজিজ মােল্লা তার সঙ্গের ছেলেটিকে নিয়ে একটি আক্রমণ লাইনের দিকে যাচ্ছিলেন। তার হতে একটি টর্চলাইট ছিল। সম্মুখ মুক্তিযােদ্ধারা পেট্রোল পুলিশ ফাঁড়ির নিকট ফায়ার হয়। তখন তারা টর্চ লাইটের আলাের দিকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। আজিজ মােল্লার পায়ের উরুতে গুলি লাগলে তিনি শুয়ে পড়েন। সঙ্গের ছেলেটির বুকে গুলি লেগে ওখানেই মৃত্যু বরণ করে (ইন্না লিল্লাহে …রাজেউন)। আজিজ মােল্লার উরুতে গুলি লাগতেই তিনি শুয়ে অন্যান্য সবাইকে ডাক দেন। তার গলার স্বর শুনে সবাই চিনতে পারে। তারা তখন ফায়ার বন্ধ করে দৌড়ে এসে তাকে ধরে নৌকোয় ওঠান। হঠাৎ এই দুর্ঘটনা ঘটায় সবাই মর্মাহত হয়ে পড়ে। ফলে ঐদিন অপারেশন বন্ধ রেখে চান্দহাট ক্যাম্পে ফেরার জন্য রওয়ানা হয়। সিন্দিয়া ঘাট অপারেশন ঐদিন সম্পন্ন হলে জলবােটে অবস্থানরত তপু মিয়াসহ কয়েজন পাকসেনা সহযােগী হয়ত খতম হত। জল পুলিশেবােট আক্রমণ করলে দালালরা নদী সাঁতরিয়ে যাতে অপর পাড় দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য নদীর অপর পাড়ে লাঠিসহ কিছু লােক মােতায়েন ছিল। সুতরাং কেউ পালাতে পারত না। এই অপারেশনে আজিজ মােল্লার পায়ে গুলি লাগার সংবাদে পাকমিলিটারের মধ্যে গুজব রটেছিল যে, সিন্ধিয়া ঘাট আক্রমণ করার সময় কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধাসহ আজিজ মােল্লা মারা গেছেন। (সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর ফরিদপুর, মােঃ সােলায়মান আলী।)

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!