অপারেশন টাওয়ার হােটেল
বীর মুক্তিযোেদ্ধারা আমাদের অহংকার। যুগ যুগ ধরে আমরা তাঁদের গৌবর গাঁথা। স্মরণ করে তাঁদের নামে গাইব। আর বাঙলার জারজ, কুলাঙ্গার সন্তান, পাকবাহিনীর দোষর আল বদর, রাজাকার, আল শামসের সদস্যদের নামে থু থু ছিটাব। পাকবাহিনীর দোষররা বাঙলা মায়ের কলঙ্ক। যুগ যুগ ধরে বাঙালি জাতি তাদের নামের ওপর ঘৃণার বারুদ ছড়াবে। ১৯৭১ সালে নভেম্বর মাস। গেরিলা যুদ্ধের তীব্রতা মােটামুটি চোখে পড়ার মতাে। আল শামস বাহিনীর কুখ্যাত হামিদুল কবির চৌধুরী খােকা জামাল খান টাওয়ার হােটেলে আল শামস বাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপন করেছে। তার অত্যাচারে শহরের মানুষ অতিষ্ঠ। আগ্রাবাদ অঞ্চলে তখন মুক্তিযােদ্ধাদের এক বিরাট বেইজ গড়ে উঠেছে। বেইজের অমল মিত্র, ফখরুল আহসান মনি আগ্রাবাদ সিজিএস কলােনীর একজনকে তাদের দলে নিয়ে আসেন। তরুণটির নাম হাবিবুর রহমান খান। তখন তিনি চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ছিলেন। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময় তিনি জেসিসি’র ট্রেনিং লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসে দু’মাসের অস্ত্র ট্রেনিং লাভ করেন। কলেজিয়েট স্কুলের ছিল একটি সুশিক্ষিত জে. সিসিদল। সে দলের তরুণরা বিশেষভাবে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। সে বছর ৪৭টি কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশের সদস্যদের জেসিসি প্রশিক্ষণ হয়। তাঁদের দল ৪৭টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। পরে হাবিবুর রহমান খান এসএসসি পরীক্ষা পাস করে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ইউওটিসি’র ট্রেনিং লাভ করেন। ফখরুল আহসান মনি ও অমল মিত্র তাঁকে পেয়ে স্থানীয় তরুণ প্রায় ৩০/৪০ জনকে তিনি প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রাথমিকভাবে যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত করে তােলেন। এ ছাড়াও হাবিবুর রহমান খান গােয়েন্দার কাজ করেছেন।
তিনি থাকতেন আগ্রাবাদ সিজি কলােনীতে। এখানে আবাস ছিল অনেক অবাঙালির। তার পিতা ছিলেন সরকারী বড় কর্তা। সে সূত্রে অবাঙালিরাও তাকে সম্মান করত। তাদের বাসায় তার যাতায়াত ছিল। তারাই অনেক সময় হাবিবকে পাকবাহিনী, আল বদর, আল শামসের পরবর্তী কর্মকান্ড সম্বন্ধে বলত। অবাঙালিদের নিকট থেকে তথ্য পেয়ে হাবিব এ সব তথ্য মুক্তিযােদ্ধাদের নিকট পৌছে দিত। মুক্তিযােদ্ধারাও বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের নাস্তানাবুদ করে দিত। নভেম্বরের এক সকাল। প্রায় ১১টা হবে। হাবিবুর রহমান খান ও আনিস দু’জন মুক্তিযােদ্ধা ঠিক করলেন জামাল খানের চেরাগী পাহাড়ের মােড়ে আল শামসের সদর দপ্তরে আঘাত হানবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দু’জন যােদ্ধা একটি টেক্সীতে করে গিয়ে পৌছেন সেই হােটেল টাওয়ারের সামনে। তখন কক্ষের অভ্যন্তরে বসে আড্ডা মারছিল আল শামস বাহিনীর বেশ ক’জন সদস্য। হাবিবুর রহমান খান ও আনিস চোখের পলকে ঢুকে পড়েন টাওয়ার হােটেলের ভিতর। রাস্তায় তখন টেক্সী ষ্টার্ট দেওয়া অবস্থায় দাড়িয়ে। তারা দ্রুততার সাথে আড্ডারত আল শামস বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্য করে পরপর দু’জনে দুটো গ্রেনেড ছুঁড়ে মারেন। আর শামস বাহিনীর সদস্যরা কিছুই বুঝতে পারেনি। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই নির্বাক-স্থবির। বুঝে উঠার পূর্বেই হাবিবুর রহমান খান ও আনিছ টেক্সীতে উঠে চলে আসেন। টাওয়ার হােটেলের অপারেশনে আহত হয়েছে প্রায় ২০ জন। নিহতের খবর সংগ্রহ করা যায়নি। যুদ্ধের সময় হাবিবুর রহমান খান ও কাজী আসিফ ৫০ সি সি হােভা মটর সাইকেলে করে পুরাে শহরে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রচার পত্র বিলি করেছেন কৌশলে। হাবিবুর রহমান খান ও আনিস দু’জনই ডাক্তার। তৎকালীন সময়ে তারা ছিলেন সাংস্কৃতিক কাজের সাথেও জড়িত । (সূত্র : রণাঙ্গনে সূর্য সৈনিক, সাখাওয়াত হােসেন মজনু)
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত