You dont have javascript enabled! Please enable it!
অপারেশন এভােজ ও মানা জাহাজ
পাকবাহিনীর তীক্ষ দৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়েছে নৌকমান্ডােরা। আপারেশন জ্যাকপট ও আপারেশন আউটার এংকরের পর পাকবাহিনী কর্ণফুলী ও বঙ্গোপসাগরে টহল বাড়িয়েছে। রাতে নদীর পানিকে দিনের মতাে করে রেখেছে। চারদিকে থেকে চার্জ লাইটের ফক ফকে আলােয় জোয়ার সৃষ্টি করে রেখেছে। এ ছাড়াও টহল দল প্রতি মিনিটে মিনিটে এদিক-ওদিক ঘুরে টহল দিয়ে চলছে। তাদের চোখকে ফাঁকি দেয়া চাট্টিখানি কথা নয়। দশজন নৌকমান্ডাে অপারেশনের দায়িত্ব নিয়ে এসেছে চট্টগ্রামে। তাঁরা হলেন ফারুখ-ই-আজম অধিনায়ক, আবু মুছা চৌধুরী, অনিল বরণ রায়, আব্দুর রশিদ, সেলিম বাঙালি, মনু, মনােজ কুমার দত্ত, তাহের ও আরাে দু’জন। শহরে এসে তাঁরা,ক’দিন কাটালেন। পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পর দলীয় অধিনায়ক ফারুক-ই-আজম ইষ্টার্ণ রিফাইনারীর টেকনিক্যাল ম্যানেজার আজিজুর রহমানের সহযােগিতায় রেকির কাজ শেষ করেন। রেকির কাজে আজিজুর রহমানের গাড়ি ব্যবহৃত হয়েছে রেকির সময় মিসেস আজিজুর রহমানও ছিলেন। মােহনার ঠিক কাছাকাছি কর্ণফুলিতে এভলােজ ও মানা জাহাজ দুটি নােঙ্গর অবস্থায় রয়েছে। রেকির কাজ শেষ করে দলীয় অধিনায়ক ফারুক-ই-আজমসহ বসেছেন ১০ জন নৌকমান্ডাে। সবাই এ অপারেশন যেতে চায়। কিন্তু জাহাজ দুটির অবস্থান এমন এক পর্যায়ে দু’জনের বেশি যাওয়া যাবে না। তারপরও সবাই গো ধরে বসেছে তারা এ  নদীতে সাঁতরাতে লাগলেন। পরে তারা দু’জন দু’জন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। আবু মুছ৷ চৌধুরী সাঁতরিয়ে চলে এলেন কর্ণফুলীর ওপাড়ে। প্রচন্ড বিস্ফোরণে জাহাজ দুটি বিস্ফোরিত হল। চোখের নিমেষে জাহাজ দুটি কর্ণফুলী মােহনায় ডুবে গেল।
আতংকিত হয়ে পাকবাহিনী এলােপাথাড়ি গুলি ছুড়তে লাগল। তারা পাগল হয়ে গেছে। বিপদ সংকেত সাইরেন বাজছে চারদিক থেকে। দু’জন নৌ কমান্ডাে তখন নিরাপদ স্থানে। এদিকে মনোেজ জেলেদের সহযােগিতায় সদরঘাট হয়ে শহরে এসে গেছেন। অন্যদিকে আবু মুছা চৌধুরী ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েন ধান ক্ষেতে। তখন প্রায় সকাল। জাহাজ বিস্ফোরণের শব্দ শুনে ক’জন রাজাকার এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করছিল। তারা দেখে আবু মুছা চৌধুরীকে। তখন তিনি কৌশলে চলে আসেন একটি মসজিদের নিকট। মসজিদের ঈমাম সাহেব আবু মুছাকে দেখে সন্দেহ করেন। আবু মুছা ঈমাম সাহেবকে সব খুলে বলেন। ঈমাম সাহেব তাকে তার বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন। কতক্ষণপর রাজাকার বাহিনী ঈমাম সাহেবের বাড়ি আসেন। ঈমাম সাহেবকে জিজ্ঞেস করেন এদিকে কোন লােক এসেছে কিনা?  ঈমাম সাহেব মিথ্যা কথা বলে তাদের বিরত করেন। এভাবে আবু মুছার প্রাণ রক্ষা হয়। ঈমাম সাহেব তাকে যত্ন সহকারে খাওয়ালেন এবং একজন পরিচিত সাম্পানওয়ালাকে দিয়ে তাঁকে শহরে পাঠিয়ে দেন। এ দিকে মনােজ কুমার দত্ত সাথী আবু মুছাকে না পেয়ে অন্য দিকে সাঁতরাতে থাকেন। তিনি গিয়ে ওঠেন এক জেলে পাড়ার কাছে। জেলেরা রাতে তাকে আশ্রয় দেয়। পরের দিন ভাের বেলায় জেলেরা মনােজকে জেলেদের পােশাকে শহরে পৌছে দেয়। নৌকামান্ডাের আপারেশনে যাওয়া অর্থই হচ্ছে নিশ্চিন্ত মৃত্যু। এ অপারেশন পরিকল্পনার সাথে ছিলেন নৌকমান্ডােবৃন্দ। জাহাজ দুটির পূর্ণ নাম এমভি এভােজ ও এমভি মানা। এভলােজ ও মানা অপারেশনের বীর নৌকমান্ডােরা কলকাতায় চলে যান। সেখানে বীরােচিত কাজের জন্য তাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। অপারেশনের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর ও কর্ণফুলীর মােহনা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। পাকবাহিনীর আর কোন জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি। ( সূত্র ও রণাঙ্গনে সূর্য সৈনিক, সাখাওয়াত হােসেন মজনু)

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!