কসবা রণাঙ্গন
৯ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডে রয়েছেন ক্যাপ্টেন আইনুদ্দিন। এটি হচ্ছে ‘কে’ ফোর্স-এর অবিচ্ছেদ্য অংশ। গঙ্গাসাগর থেকে কসবা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা এই অপারেশেনের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু লাতুমুড়া এবং কসবা পাকিস্তানবাহিনীর আয়ত্তে থাকার ফলে এর কার্যক্রম বিশেষভাবে বিঘ্নিত হয়। খালেদ উক্ত এলাকা থেকে শত্রুদের বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত নেন। কসবা এবং লাতুমুড়া হারিয়ে যাবার ফলে ২ নম্বর সেক্টরের রণকৌশলে বিরাট বিপত্তি ঘটে। ৯ম ইস্ট বেঙ্গলের মাধ্যমে কসবা পুনরুদ্ধারের জন্যে মেজর খালেদ একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন। কসবায় পাকিস্তানীরা এক কোম্পানী সৈন্য পরিখার ভেতরে রেখেছে।
৯ম ইস্টবেঙ্গলের দু’কোম্পানী সৈন্যকে গােলন্দাজের ছত্রছায়ায় উত্তর ও দক্ষিণ থেকে দ্বিমুখী আক্রমণের দায়িত্ব দেয়া হয়। এ যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব মেজর খালেদ স্বয়ং গ্রহণ করেন। কসবার উত্তর এবং দক্ষিণে উচু এলাকায় ৯ম ইস্টবেঙ্গল ব্যুহ রচনা করে এবং শত্রুসৈন্যদের দিকে এগিয়ে যায়। পাকিস্তানীরাও আমাদের অগ্রসরমান সৈন্যদের দারুণ উৎসাহিত করে তােলে।
সহসা একটি গােলা এসে মেজর খালেদের সামনে পড়ে এবং এর একটি টুকরাে তার কপাল ভেদ করে মাথার ভিতরে ঢুকে যায়। এ হচ্ছে এক মারাত্মক আঘাত। মেজর খালেদ-এর নিথর দেহ মাটিতে পড়ে যায়। তৎক্ষণাৎ তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্যে আগরতলা নিয়ে যাওয়া হয়। মেজর খালেদের বেঁচে থাকার কথা নয়। এ ধরনের ভয়াবহ আঘাতের পরে কদাচিৎ কেউ বেঁচে থাকে না। কিন্তু প্রকৃতির এক অপরূপ খেয়ালে তিনি বেঁচে যান।
মেজর খালেদের প্রেরণা বৃথা যায়নি। আক্রমণকারী মুক্তিসেনার দল কসবা পুনর্দখল করে। পরবর্তী পর্যায়ে, নভেম্বরে , ৯ম ইস্টবেঙ্গল লাতুমুড়া থেকে পাকিস্তানী সৈন্যদের তাড়িয়ে দেয়। এ যুদ্ধে আমাদের তিনজন অফিসারসহ ৪০ জন মুক্তিসেনা নিহত হয়। আহত হয় ৬০ জন। ( সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ, মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ, বীর উত্তম ।)
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত