You dont have javascript enabled! Please enable it!
বেলােনিয়ার পতন
 
বেলােনিয়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্যে একটি দু’ধারি তরােয়ালের মতাে কাজ করে। ওরা এ এলাকা ধরেও রাখতে পারছে না। আবার আমাদের হাতে ছেড়েও দিতে পারছে না। বেলােনিয়া মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমাদের হাতেই রয়েছে। ছাগলনাইয়া সংকীর্ণ ভূখন্ডের মাধ্যমে চট্রগ্রামকে বাংলাদেশের বাকি অংশের সাথে যুক্ত করেছে। এবং এ এলাকাটি বেলােনিয়ার প্রবেশপথ হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এপ্রিল থেকে ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম পাকিস্তানীদের বারংবার হামলা সত্ত্বেও ছাগলনাইয়াকে ধরে রেখেছে। অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রবাহিনী নিয়েও শত্রুবাহিনীকে প্রতিহত করেছে। কয়েকটি বড়াে ধরনের সংঘর্ষের পরে পাকিস্তানীরা ফেনীতে সরে যায়। এ সময়ে বেলােনিয়া সাব-সেক্টর প্রতিষ্ঠিত হয়। মেজর খালেদ ক্যাপ্টেন জাফর ইমামকে এর দায়িত্ব দেন। ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম, ৯ই মে তারিখে, উক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করে। অবশ্য জুন মাসে, এ সাব-সেক্টরের সার্বিক দায়িত্ব দেয়া হয় ক্যাপ্টেন আমিনুল হককে। অতঃপর বেলােনিয়া প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে পীরবক্সহাটকে আবর্তন করে। এ পরিস্থিতি চলাকালে লেঃ ইমামুজ্জামান তার পরিশ্রান্ত মুক্তিসেনা এবং ৪টি ৮১ মিলিমিটার মর্টার নিয়ে রাঙ্গামুড়ার দিক থেকে সীমান্ত পাড়ি দেয়। সেখানে ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের সাথে যােগ দিয়ে সে বেলােনিয়া যুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তানী শত্রুবাহিনী ফেনীতে সুদৃঢ় দুর্গ গড়ে তােলে। তাদের সামরিক প্রস্তুতি দেখে বােঝা যায় যে, বেলােনিয়া অভিযান আসন্ন হয়ে উঠেছে। ওরা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে।
ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম বেলােনিয়া নদী তীরে সৈন্য মােতায়েন করে। শক্তিশালী বাংকার ছাড়াও শেল-প্রুফ আশ্রয়স্থল নির্মিত হয়। অতীতের মতাে পাকিস্তানবাহিনী বেলােনিয়ার ব্যাপারে ভীষণ ক্ষুব্ধ। ওরা কখনাে বেলােনিয়া নদী পাড়ি দিতে পারেনি। যতােবার চেষ্টা করেছে ততােবারই বিরাট ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। তাদের হতাহতদের ক্ষেত্রে বেলােনিয়া ভীতিকর পর্যায়ে বিবেচিত। তাই এ সেক্টরে পাকিস্তানী সৈন্যদের বদলি তাদের মৃত্যুর সম্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করে। পাকিস্তানবাহিনীর কাছে বেলােনিয়া আত্মসম্মানবােধের বিষয় হয়ে যায়। মনােবল ফিরে পেতে চায় ওরা। তাই বেলােনিয়া অধিকার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে তাদের কাছে। সামরিক দিক থেকে তিন পাশে ভারত পরিবেষ্টিত এ স্থানটি তাদের জন্যে কল্যাণকর নয়। বেলােনিয়া এনক্লেড বা ছিটমহল হচ্ছে ৮ মাইল প্রশস্ত, ১৭ মাইল দীর্ঘ। পদাতিক সুবেদার মােজাফফরের নেতৃত্বে এক প্লাটুন ইপিআর কুষ্টিয়ার দিক থেকে পাকিস্তানী সৈন্যদেরকে হামলা করে। কিন্তু প্রবল শক্তির সামনে কাবু হয়ে পড়ে। পাকিস্তানী সৈন্যদল ভেড়ামারায় অগ্রসর হয়।কুষ্টিয়ার চারদিকে গড়ে তােলা রক্ষাব্যুহ ধ্বসে পড়ে। শত্রু সেনা। ১৫ই এপ্রিল কুষ্টিয়া শহরে প্রবেশ করে।  এ দিনই মেজর ওসমান চুয়াডাঙ্গা থেকে তার সদর দপ্তর মেহেরপুরে স্থানান্তর করেন। তিন দিন পরে আরাে পিছু সরে গিয়ে তিনি সীমান্ত পাড়ি দেন। (সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ, মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ, বীর উত্তম)

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!