You dont have javascript enabled! Please enable it!
পাক দালাল কর্তৃক অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র
এদিকে থানা হতে অস্ত্র আনার পর নগরকান্দার কুখ্যাত পাকসেনাসহযােগী জাফর, তার ভাই থােকন প্রভৃতি স্বাধীনতা সংগ্রাম বিরােধী লােকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীদের উপর অত্যাধিক চাপ দিতে লাগল। তারা এ হুমকিও দিল যে, যদি থানায় সমস্ত অস্ত্র ফেরত না দাও, তাহলে ফরিদপুর থেকে মিলিটারী এনে ধরিয়ে দেব। আর ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেব। এতে আওয়ামী লীগ কর্মীরা ভয় পেয়ে আমার কাছে এসে সব ঘটনা জানাল। একদিনের কথা মনে পড়ে। সেদিন ছিল পুড়াপাড়ার হাট। জাফর, বেতালের মহিউদ্দিন তৎকালীন পিডিপির থানা সেক্রেটারী বেতালের খলিলুর রহমান প্রভৃতি লােকজন পুড়াপাড়া হতে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করে। ঐদিন আমি পুড়াপাড়া ছিলাম। আজিজ মােল্লাসহ দলের অন্যান্য লােকজন সবাই সেখানে ছিল । জাফরের এই ষড়যন্ত্রের কথা আমরা জানতে পারি। দেলােয়ার, আলতাফ, রশিদ, ওলিয়ার ও অন্যান মুক্তিবাহিনীর ছেলেদেরকে অস্ত্রসহ প্রস্তুত রাখা হল। জাফর কিছু সময় পর খলিলুর রহমান ও কয়েকজন দালালসহ দীপক রায়ের বাড়িতে এসে তাকে চাপ দিতে লাগল, তুমি মশাই সব জান। বল, অস্ত্র কোথায় আছে ? কিন্তু দীপক তাদেরকে কিছুই জানাল না। ওরা তখন ওখান থেকে চলে গেল। এদিকে আমরা সবাই যে কোন রকম আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত। দেলােয়ার ও আলতাফ আমাকে বলল, আপনি যদি হুকুম দেন তবে জাফরকে গুলি করে মেরে ফেলি। কিন্তু চিন্তা ভাবনা করে যখন আমি হুকুম দিলাম তখন আর ওরা গিয়ে তাদের ধরতে পারল না। পূর্বেই সে তার শ্বশুরবাড়ি দফা গ্রামে চলে যায়।
ওখানকার বেশ কিছু লােক আমাকে জানাল যে, যদি আপনি অস্ত্র নিয়ে অন্য কোথাও চলে না যান, তাহলে জাফর মিলিটারী এনে আমাদের এখানে জ্বালিয়ে দেবে। সুতরাং আমি পুড়াপাড়া অস্ত্র রাখা নিরাপদ মনে করলাম না। পরদিন সন্ধ্যায় ওলিয়ার, রশিদ, ফেলু, ছিদ্দিক, শাহজাহান মােল্লা ও আজিজ মােল্লাকে নিয়ে আমি পুড়াপাড়া গেলাম। মাজেদ মােল্লাকে দিয়ে একটা বড় নৌকা ঠিক করলাম। অস্ত্র নৌকায় বােঝাই করলাম। নৌকা সবেমাত্র ছেড়েছি এমন সময় নগরকান্দার মােকাররম মিঞা ও আব্দুর রহমান মােল্লা দৌড়ে এসে আমাকে বললেন, জাফর আমাদেরকে হুমকি দিয়েছে যে পুড়াপাড়া থেকে যদি অস্ত্র আজ রাতের ভেতর ফিরিয়ে না আনতে পারেন, তাহলে আগামী সকালে মিলিটারী দিয়ে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিব। আবার এও বলে দিয়েছে যে, যদি সােলায়মান আজ রাতে এসে বলতে পারে, যে অস্ত্র আমার নিকট আছে, তাহলে তাদের কোন আপত্তি নেই।’ আজিজ মােল্লা বললেন, দালালরা অস্ত্র হাত করার জন্য এই সব হুমকি দিচ্ছে, কিন্তু অস্ত্র কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না।
তিনি তাদেরকে অভয় দিয়ে বললেন, আপনাদের কোন ভয় নেই। আপনারা ফিরে গিয়ে বলেন, অস্ত্র ফিরিয়ে দেয়া হবে না এবং সােলায়মানও নগরকান্দা যাবে না। ঐদিন তারা দু’জন ফিরে গেলেন। আমরাও নৌকা ছেড়ে দিলাম। কাটা খালে পানি ছিল অল্প। অনেক কষ্টে রাত প্রায় ২টার সময় গজারিয়ার হাচন মােল্লার বাড়ির নিকটে পৌছলাম । হাচন মােল্লার দ্বিতল টিনের ঘরে অস্ত্র লুকিয়ে রাখব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। সবাইকে নৌকায় রেখে আমি ও আজিজ মােল্লা হাচন মােল্লার বাড়ি গেলাম। ঐ বাড়িতে একটা বাঘা কুকুর ছিল। আমাদের দেখে কুকুরটা ভীষণ ভাবে তেড়ে আসে। ভয় পাওয়ারই কথা। কিন্তু ভয় করলে চলবে কেন? অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর হাচন মােল্লার ঘুম ভাঙ্গল। সে আমাদের দেখে তাে অবাক। সব কিছু তাকে খুলে বললাম। অস্ত্র রাখতে সে রাজী হল। সবাই হাতে হাতে রাইফেল ও গুলির বাক্স নামিয়ে ভাল মতাে লুকিয়ে। রাখলাম। আমাদের প্রায় ১ঘন্টা সময় কাটল। কয়েকটি মাত্র রাইফেল আমাদের আত্মরক্ষার জন্য নিলাম। নগরকান্দা হতে অস্ত্র নিয়ে আসার পর বেশ কিছুদিন যাবৎ ওখানকার সংবাদ জানতাম । তাই খবরাখবর জানার জন্য কয়েকদিন পর রাতে মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ে নগরকান্দা ঘুরে আসি। তখন পর্যন্তও থানায় কোন পুলিশ ছিল না। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আমরা যে রাতে অস্ত্র সরিয়ে নিয়ে যাই ঐ রাতেই থানার সব পুলিশরা পালিয়ে যায়। ঐদিন অন্যান্য মুক্তিযােদ্ধাসহ শাহজাহান মােল্লাও সাথে ছিল।
(সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর ফরিদপুর, মােঃ সােলায়মান আলী)

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!