পাকিস্তান আন্দোলন | নইমুদ্দিন আহমদ
১
পূর্ব-কথা
কেন্দ্রীয়-পরিষদ নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের তৎকালীন সদস্য নাইমউদ্দিন আহমদ সাহেবের পাকিস্তান আন্দোলনের উপর লিখিত মূল্যবান ও তথ্য সম্বলিত এই গ্রন্থ খানি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ সালে। পাকিস্তান আন্দোলনে গ্রন্থখানির ভুমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এর দ্বিতীর সংস্করণ প্রকাশিত হয় প্রথম সংস্করণের এক বছর পর অর্থাৎ ১৯৪৬ সালে।
উপমহাদেশে পরাধীন মুসলমানদের স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ইতিহাস (১৯৪৫ সাল পর্যন্ত) সংক্ষেপে এ বইতে আলােচিত হয়েছে।
পাকিস্তান আন্দোলন এবং অখণ্ড জাতির অতীত ঐতিহ্যময় সংগ্রাম সম্পর্কে সাধারণভাবে জ্ঞান লাভের জন্য বর্তমান মুহূর্তে দুষ্প্রাপ্য এ গ্রন্থখানি অত্যন্ত সহায়ক হবে মনে করেই তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ করা হােল।
২
ভুমিকা
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ বর্তমানে অসম্ভব হয়ে উঠায়, মুসলিম জাতীয় স্বাধীনতার অমঙ্গলাকাঙ্খিগণ অল্প কিছুদিন হােতে পাকিস্তান-দাবী ফমূলার পার্শ্বদেশ আক্রমণ আরম্ভ করেছেন। এই পার্শ্ব আক্রমণের উদ্দেশ্যই হচ্ছে পাকিস্তান-ধাবীকে সমূলে নস্যাত করা। তারা পাকিস্তানের নামে জনসাধারণের সম্মুখে শত শত প্রস্তাব উত্থাপিত করেছেন ও করছেন, কিন্তু সরাসরি পাকিস্তান দাবী মেনে নিতে একেবারেই নারাজ। এই সমস্ত প্রস্তাবের উদ্দেশ্য ঠিক একই-পাকিস্তানের দাবীকে পেডো করা। জনকয়েক পাকিস্তান বাদীও এই ফন্দিজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন ; কাজেই আমরা পাকিস্তানের আসল মৰ্ম্ম, এর উৎপত্তি, প্রসার, বিভিন্নমুখী কারণসমূহ, বিশেষ করে পাকিস্তানের প্রকৃতরূপ এবং তার বদলে যে সমস্ত চোখ ধাধন প্রস্তাব ও প্রতারণামূলক যুক্তবাদ দাড় করা হয়েছে এমুহুর্তে তাদের স্বরূপ এবং ছদ্ম আবরণের মুখােস জনসাধারণের সম্মুখে খুলে ধরা কর্তব্য বলে মনে করি।
আচারীফৰ্মলা, গান্ধীৰ্মলা ও স্যার-তেজের ফর্মলা উল্লখিত প্রস্তাব গুলাের কয়েকটা। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় এই যে, মুসলিম জাতীয় জীবনের পুনঃভূদয়ের দিনে মুসলিম জনসাধারণ সাধারণভাবে এবং যুব সমাজ বিশেষভাবে যে সমস্ত সমস্যা তাদের সামনে দাঁড়ায় সেগুলো সম্বন্ধে ভীষণভাবে চিন্তা ও গবেষণা করা শুরু করেছেন। এই পুস্তকের উদ্দেশ্যই হােল পাকিস্তানপন্থী ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধবাদীদের উত্তেজনাহীন, নিরপেক্ষ, গভীর দৃষ্টিভঙ্গীর কাছে খােরাকের যােগাড় করে দেওয়া।
পাকিস্তান ভারতের জটিল রাজনীতি এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ দাবগুলাের একমাত্র বৈজ্ঞানিক সমাধান। এর বাস্তবতা স্বীকার করে জাতীয়তাবাদী
৩
নেতাদের অনেকেই খােলাখুলিভাবে এই দাবীর যৌক্তিকতাকে মেনে নিয়েছেন। মহাত্মাজীর সম্বন্ধেও ঠিক একই কথা খাটে। তিনিও অবশেষে পাকিস্তান দাবীর মূলনীতিকে মেনে নিয়েছেন; কিন্তু পররাষ্ট্রনীতি, দেশরক্ষা, আভ্যন্তরীণ যানবাহন, শুদ্ধ, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ধুয়া সমূহের আসর থেকে এখনও নিজকে সঠিকভাবে মুক্ত করতে পারেননি।
পাকিস্তান-আন্দোলন সংখ্যালঘিষ্ঠদের সাম্প্রদায়িক দাবী নয় -মুসলিম জাতীয় স্বাধীনতার দাবী। জটল রাজনৈতিক সমস্যা ভারতের স্বাধীনতার পক্ষে প্রবল অন্তরায় হয়ে পঁড়িয়েছে, অথচ সমাধানের বৈজ্ঞানিক কোন পথ বাহির না হওয়ায় অচল অবস্থা বেড়েই চলেছে। এই অচল অবস্থা নিয়ে এসেছে ভারতের হিন্দু-মুসলমানের উপর একটা একটানা বিপর্যয় -অনাহার, রােগ, মৃত্যু ! আমাদের মনে রাখতে হবে বিদেশী এসে আমাদের এই সমস্যার সমাধান করে দেবেনা, সমাধান আমাদেরই করতে হবে ; কংগ্রেস-লীগ মিলনের পথেই এটা সম্ভব। সেজন্যই কায়েদে আজম বলেছেন -“The only sanction which the Muslims and Hindus can forge is a united front”.
হিন্দু এবং মুসলমানগণ মিলিতভাবে একমাত্র যে অনুমােদনযােগ্য ও পালনযােগ্য নীতি গড়ে তুলতে পারে, তা হলে একটা সন্মিলিত ফ্রন্ট।’
পরস্পরের মতবাদকে শ্রদ্ধা করতেও আমাদের শিখতে হবে। একজন লােক পাকিস্তানবাদী তাই তার কথা শুনতে হবে না-এরূপ মনােভাব ঘৃণার্থ। প্রায় সহস্র বৎসর ধরে হিন্দু-মুসলিম এদুটে। জাতি পাশাপাশি বাস করে এসেছে, কিন্তু হিন্দু ভাইয়েরা মুসলিম ইতিহাস, দর্শন এবং তাদের উজ্জ্বলতম অতীত গৌরবের কথা জানবার চেষ্টা করেননি। একজন উচ্চশক্ষিত হিন্দুর জ্ঞানের বহর হজরত মোহাম্মদের (দঃ) জন্ম হােতে হঠাৎ বিন্ কাসেমে নেমে আসে, তারপর চলে সামাজ্যবাদী মােগল পাঠানদের যুগ। কিন্তু ষষ্ঠ হোতে দশম খৃষ্টাব্দের মধ্যভাগ পর্যন্ত ইসলাম সম্বন্ধে তাদের জ্ঞান-দরিয়া একেবারেই শূন্য।
হিন্দু ভাইদের কাছে আরজ, মুসলমানেরা যেমন হিন্দু সভ্যতার
৪
সমস্ত কিছু জানতে চেয়েছেন এবং জানতে পেরেছেন, তাদেরও সেই চেষ্টা করতে হবে। মুসলমানেরা অস্পৃশ্য আরও কত কি, কাজেই তাদের আবার উল্লেখযােগ্য কৃষ্টি, দর্শন এবং অতীত ইতিহাস কি আছে এই মনােভাব পরিত্যাগ করতেই হবে। তবেই তারা জানতে পারবেন ভারতীয় মুসলিম একটা সংখ্যালঘিষ্ঠ সম্প্রদায় নয়—একটা গৌরবান্বিত জাতি।
হিন্দু ভাইয়েরা ভাবেন ভারতের স্বাধীনতা-সংগ্রাম কেবল তাদেরই মৌসী স্বত্ব, হিন্দুরাই বৃটিশের দুশমন, মুসলমানেরা নয়। কিন্তু তাদের জানতে হবে বৃটশ মুসলিম জাতির যত বড় শত্রু, হিন্দু-ভারতের তত বড় শত্রু নয়। হিন্দু ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক চেতনা বৃটশেরই পরম দান। কিন্তু জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে মুসলমানদের অমুসলমান করে ভােলাই ছিল বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের সামনে প্রথম ও প্রধান প্রােগ্রাম।
মুসলিম তরুণদের কাছে নিবেদন, হিন্দুরা সমাধানের পথ হতে দূরে সরে আছেন বলেই আমাদের নিশ্চেষ্ট হয়ে থাকলে আর চলবে না। বৈপ্লবিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রােগ্রাম নিয়ে আমাদের কম’ক্ষেত্রে ঝাপিয়ে পড়তে হবে এবং লীগকে গড়ে তুলতে হবে জনসাধারণের প্রতিষ্ঠান করে। মন্ত্রিত্বের গদি আঁকড়িয়ে ধরে থাকবার জন্ম লীগ নয়, লীগ এসেছে-ক্ষুধার্তের মুখে অন্ন তুলে দিতে, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দিতে, রােগীর মুখে ঔষধ তুলে দিতে।
মুসলিম জনসাধারণের নিকট আবেদন—যাঁরা স্বার্থোদ্ধারের জন্য লীগে এসেছেন তাদের চিনে রাখুন, কেননা স্বার্থের দায়ে তারা যত রকমের পাপ করতে পারেন। এদের কার্যকলাপের জন্যই মুসলিম লীগকে আজ সমালোচনার সম্মুখীন হোতে হয়েছে। কেবল নিচিন দ্বন্দ্বে জয়লাভের জন্য লীগের সৃষ্টি হয়নি, জাতির মুক্তই তার চরম লক্ষ্য। কিন্তু যন্ত্রণা প্রপীড়িত মুসলিম জনসাধারণের সরল বিশ্বাস ও সমাজ ঐতির সুযােগ গ্রহণ করে জনকয়েক তথাকথিত নেতা নিজেদের কায়েমী স্বার্থোদ্বারের উদ্দেশ্যে আজ লীগের নেতা সেজে বসে আছেন। জন
৫
সাধারণের দৈনন্দিন দুঃখ-দুর্দশার সাথে এদের ঘনিষ্ঠ সংযােগ নেই বা কোনদিনই ছিল না। লীগকে সত্যিকারের শক্তিশালী করে তার আসল উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যে পৌঁছতে হেলে এই সমস্ত তথাকথিত নেতাদের কবল হােতে লীগকে মুক্ত করতেই হবে। লক্ষ লক্ষ লােক যখন খাদ্য ভাবে শৃগাল কুকুরের মত পথে পড়ে মারা গেছে, তখন দুর্ভিক্ষ প্রপীড়িত ভাইদের পাশে এসে এরা দাড়াননি; পক্ষান্তরে যুদ্ধের বাজারে সুবিধা। লব্ধ অর্থ দ্বারা জীবনকে পূর্ণমাত্রায় উপভােগ করছেন। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে লীগ পরিষদ দলের সদস্যদের রিলিফ তহবিলে ৫০০০ টাকা করে দেওয়ার কথা।
এই তথাকথিত নেতাদের নিকট প্রার্থনা, চটে গেলে চলবে না; তরুণেরা সমস্ত ভারতময় যে আবহাওয়ার সৃষ্টি করেছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। কালের পরিবর্তিত গতির সাথে অতীতে অনেকেই তাল মিলিয়ে চলতে পারেননি ; রাজনীতিরূপ রঙ্গশালা হােতে এই বেতালদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটা যেন তারা ভুলে না যান। তরুণদের অভিযান—“জিন্দাবাদ’।
৬
পাকিস্তান আন্দোলন
অদ্ভুত ধারণা
পাকিস্তান-দাবী ভারতের স্বাধীনতার অন্তরায় এরূপ একটা ধারণা একদল লোকের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছে। ফলে কাকের কান নেওয়ার মত তারা কাকের পেছনে ছুটেই চলেছেন, কানে হাত দিয়ে দেখবার অবকাশই পাচ্ছেন না যে কানদুটো ঠিক জায়গায় আছে কি না। কাকে কান নিয়ে পালায়নি একথাটা তাদের বলা যেমন মিথ্যা, পাকিস্তান ভারতের স্বাধীনতার অন্তরায় নয়, এ কথাটা তাদের নিকট ঠিক সমান মিথ্যা। বিচার বা মুক্তির কষ্টপাথরে পাকিস্তানদবীকে যাচাই করে নেওয়ার মত সাধারণ বা সর্বদেশীয় জ্ঞানী সম্মত বুদ্ধি তঁাদের নেই অথবা স্বার্থের সংঘাতে উত্তেজিত মস্তিষ্ক তাদের পাগল করে তুলেছে।
বর্তমানে এদেশে আমরা তিনদল লােকের সাক্ষাৎ পাই। প্রথম দলের মতে ভারতীয় দশ কোটি মুসলিম আজ কায়েদে আজমের নেতৃত্বে একই পতাকাতলে সঙ্গবদ্ধ হয়ে পাকিস্তান বা স্বাধীনতার দাবী জানাচ্ছে ও এ দাবী বৈজ্ঞানিক সত্য সুতরাং তাদের এদাবী মেনে নিতেই হবে। দ্বিতীয় দল ভাবেন ভারতীয় মুসলিমরা পাগল, দশকোটি পাগল পাকিস্তান অর্জনের জন্য চীৎকার আরম্ভ করেছে সুতরাং এটা তাদের দেওয়া উচিত। পাগলের দল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি বিপর্যয় দেখে আপনা হতেই পরে যুক্তরাষ্ট্রের শামিল হােতে চাইবে। তৃতীয় দল উগ্রপন্থী, মিথ্যাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলাই এদের স্বভাব। এদের মতে পাকিস্তানবাদীরা বৃটিশের গুপ্তচর ; কাজেই পাকিস্তানপন্থীদের মুখে যতদিন পর্যন্ত “প” শব্দ থাকবে ততদিন তাদের কথা শুনা বা পাকিস্তানের
৭
তাৎপৰ্য্য ও সারমর্ম বুঝতে যাওয়াই মহাপাপ। শেষােক্ত দুটো দলই প্রকৃতপক্ষে ভারতের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
তৃতীয় দলের জনৈক উচ্চশিক্ষিত লােকের কথা আমাদের বেশ মনে পড়ে। শামসুল হক সাহেব লিখিত “পাকিস্তান” বইটার কয়েকটা কপি আমাদের হাতে ছিল বলেই তিনি পাকিস্তান সম্বন্ধে আমাদের মতামত শুনতে নারাজ হন। তাঁর মতে লীগ বৃটশ সাহায্যপুষ্ট প্রতিষ্ঠান ; কিন্তু বর্তমানে উহা সামাজ্যবাদী বৃটশ শক্তির সাথে মােকাবেলা করবার পর্যায়ে উন্নীত হওয়ায় আজ তারা কমিউনিষ্টদের অর্থাদি দিয়ে সাহায্য করছেন।
অনেকে নিজেদের পূর্ব চিন্তাধারার ভিতর দিয়ে অথবা গােলামী মনােব নিয়ে পাকিস্তানের রূপকে দেখতে চান : এতেও খুব কম গােলমালের সৃষ্টি হয়নি। স্বার্থের দায়ে অনেকে আবার পাকিস্তান দাবীকে এমন ভাবে প্রচার করেন যে, এর গৃহীত হওয়ার আশাকেই অনেক দূরে ঠেলে দেন।
হিন্দুমুসলিম সম্বন্ধ
অতীত যুগের হিন্দু-মুসলিম ইতিহাস এবং পরস্পরের সম্বন্ধকে একটু ধীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যায়, হিন্দু-মুসলিম কৃষ্টির কোনটাই অন্যটার ভিতর প্রবেশ করে নিজ অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেনি। এই দুটো জাতি তাদের আপন আপন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও কৃষ্টিগত পৃথক অস্তিত্ব বজায় রেখেই চলেছে এবং পৃথক অস্তিত্ব বজায় রাখবার জন্য অতীতেও সজাগ ছিল। এর একমাত্র কারণ ইসলাম এবং হিন্দু ধর্মমত দুটো সম্পূর্ণ পৃথক, বিভিন্নমুখী ব্যবস্থাপত্র : যার জন্য একটা নিজ অস্তিত্ব হারিয়ে অন্যটার ভিতর প্রবেশ করতে পারেনি। পক্ষান্তরে শক, হন সবাই ভারতে এসে হিন্দুধর্ম-মত ও কৃষ্টির সাথে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। হিন্দু সমাজ-ব্যবস্থা দেশ, কাল এবং পাত্রের সঙ্কীর্ণ গণ্ডীতে আবদ্ধ, এটা স্বতঃসিদ্ধ এবং অনস্বীকার্য।
৮
ইসলাম একটা জীবনের পথ। প্রীতি, প্রেম ও মানবে মানবে সমতাই এর চরম আদর্শ। এটা এমন একটা সামাজিক পথ যা মানবের সাংসারিক সমস্ত দাবী দাঙ্গাকে মেনে নেয়। ইসলাম পৃথক অস্তিত্ব রাখে বটে, কিন্তু অন্যান্য সামাজিক কোডের ন্যয় সঙ্কীর্ণ নয় ; এর দরওয়াজা সব সময়েই সকলের জন্য উন্মুক্ত। ইসলাম গ্রহণ করলেই একজন লোকের জীবনে একটা মহাবিপ্লব সংঘটিত হয়, ফলে সে পায় সম্পূর্ণ পৃথক একটা নূতন জীবন, নূতন চরিত্র, নব নব অভ্যাস এবং পৃথক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী। ঐসলামিক দৃষ্টিভঙ্গী তার ভিতর এমন একটা পার্থক্য এনে দেয় যার জন্য বংশ, কুল, ভাষা ও সামাজিক আচার-বিচারের সংঙ্কীর্ণ বাঁধ অতিক্রম করে সে হয়ে যায় সম্পূর্ণ পৃথক একটা মানুষ। এই একই কারণে হিন্দু-মুসলিম যুগ যুগ ধরে এত নিকটে বাস করেও এতদুরে রয়ে গেছে।
সমস্ত সংস্কারমুক্ত, নিরপেক্ষ একজন বিদেশীর চোখে হিন্দু-মুসলিমদের দৈনন্দিন জীবন, পৃথক আচার-ব্যবহার, সভ্যতা ও কৃষ্টি ঠিক পৃথক ভাবেই দেখা যাবে। অথচ এই দুটো হিন্দু-মুসলিম হয়ত একই পল্লীতে, একই আবেষ্টনির ভিতর যুগ যুগ ধরে বসবাস করে এসেছে। জয়েন্ট পালিয়মেন্টারী কমিটির মত নির্ভরযােগ্য কমিটির রিপাের্টের কিয়দংশ আমরা উদ্ধত না করে পারলুম না।
“India is inhabited by many faces••••••••••••often as distinct from one another in origin, tradition and manner of life as are the nations of Europe. Two thirds of its inhabitants profess Hinduism in one form or another as their religion, ove: 77 millions ( now 100 ] are follo wers of Islam; and the difference between the two is not only of religion in the stricter ‘sense but also of law and culture. They may be said, indeed, to represent two distinct and seperate civilizations. Hinduism is distinguished by the pbenomenon of its caste, which is the basis of its religious aod social system:
৯
and, save in a very restricted field, remaios unaffected by contact with the philosophies of the west ; tbe religion of Islam, on the other hand, is based upon the conception of equality of man.”
“ভারতবর্ষ অনেক জাতির আবাসস্থল:••••••••••ইউরােপীয় জাতি গুলাের ন্যায় এদের একটা অন্যটা হােতে জন্মমূল আচার-বিচার, আদবকায়দা ইত্যাদি ব্যাপারে সম্পূর্ণ পৃথক। এর জনসমর ঔ অংশ বিভিন্নমুখী, শতধাবিভক্ত হিন্দু ধর্মের যে কোন একটা মেনে চলে। ৭ কোটি ৭ লক্ষ [ বর্তমানে ১০ কোটি } ভারতবাসী ইসলাম ধর্মাবলম্বী। এই দুটো জাতির পার্থক্য কেবল মাত্র ধর্মগত নয় বরং আইন ও কৃষ্টিগত। সত্য কথা বললে বলতে হয় – এরা দুটো সম্পূর্ণ পৃথক সভ্যতার অধিকারী। বর্ণ বিভেদই হ্যেল হিন্দুধর্মের পরিচয় এবং এটাই এর ধর্মীয় ও সামাজিক রীতি। ইউরােপীয় দর্শন ও সভ্যতার সংস্পর্শে এসেও সে নিজকে সম্পূর্ণরূপে অক্ষত রেখেছে ; পক্ষান্তরে মানবের সমতাই ইসলামের আদর্শ। উক্তিটা তিক্ত হােলেও অতি সত্য। বর্ণিত তৃতীয় পর্যায়ভুক্ত দল বলবেন—বৈদেশিকদের এই দায়িত্বহীন উক্তিগুলােই বিভেদের বীজ বপন করেছে। কাজেই কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা শ্বেতাঙ্গ হিউম যখন কংগ্রেসের পত্তন করেননি এবং লীগেরও যখন জন্ম হয়নি সেকালের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, জন ব্রাইট, কি বলেন দেখা যাক।
“It would be impossible to weld a vast and beterogeneous subcontinent like India into a single state and they should split it up into several hoinogeneous states.”
“এরূপ একটা বিশাল ও বিভিন্ন জাতি সমন্বিত উপমহাদেশকে পিটে পিটে জোড় দিয়ে একটা রাষ্ট্র গঠন অসম্ভব। এদেশকে কতকগুলো স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে বিভক্ত করে ফেলাই ভারতবাসীর কর্তব্য।” তিনি ১৮৫৮ সালে হাউস অব কমন্সে ঘােষণা করেন “How long does England propose to govern India ? Nobody can answer that question. But be it 50 or 100 ro 500 years,
১০
does any man with the smallest glimmering of Common sense believe that so great a country, with its 20 different nationalities and its 20 different languages, can ever be bound up and consolidated into one compact and enduring empire confine ? I believe such a thing to be utterly impossible.”
“ইংল্যান্ড আর কতদিন ভারতকে দাসত্ব শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখবে? কেউ হয়ত এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। বৃটিশ হয়ত ৫০, ১০০ অথবা আরও ৫co বৎসর ভারতকে দৃষ্টমুষ্টে শাসন করবে কিন্তু সামান্য জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিও বিশ্বাস করবেন যে, ২০ টা বিভিন্ন ভাষা সমন্বিত বিশটা বিশাল জাতিকে অখণ্ড ভারতের নামে বেঁধে রাখা চলবে না। আমি বিশ্বাস করি এই অপপ্রচেষ্টার সাথে বাস্তবের কোন সংশ্রব নেই।”
জাতীয় জাগরণ
সাম্রাজ্যবাদী বুর্জোয়া বৃটশের যথেচ্ছাচারিতা যতদিন পর্যন্ত ভারতকে দৃঢ়হস্তে শাসন করেছিল, ততদিন হিন্দু-মুসলিম বিভেদ খুব বেশী ঘােরাল হয়ে উঠেনি, অবশ্য সামান্য বিভেদ যে দেখা দেয়নি তা নয়। গভর্নমেন্ট পরিচালন ব্যাপারে ভারতবাসীর হাত তখন একেবারেই ছিল না বলেই পরাধীনতার জিঞ্জির পড়ে তারা বৃটিশ প্রভুর মন যােগাত। অবশ্য মুসলমানেরা জাতি হিসাবে সিপাহী বিদ্রোহ, ওহাবী-আন্দোলন, খিলাফত আন্দোলন, ইংরাজী শিক্ষা শরিয়তে হারাম, গভর্ণমেন্ট চাকুরী নিষিদ্ধ ইত্যাদি আন্দোলনের ভিতর দিয়ে চিরদিনই বৃটশের সাথে অসহযােগিতা করে এসেছেন। এই সমস্ত আন্দোলনের ভিতর দিয়ে সিরাজের জাতীয় ভাইয়ের নবাব পদলুব্ধ-মিরজাফরের ভুলের দক্ষিণাস্বরূপ আত্মাহুতি দিয়ে হৃত গৌরব ও স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। কাজেই স্বাধীনতাকামী মুসলমানেরা আন্দোলনের ফলে বৃটিশের কোপে পড়ে যখন ধন, জন ও জীবনকে বিলিয়ে দিতেছিলেন তখন জগতশেঠ, উমিচঁাদ ও
১১
রাজবল্লভের অর্থলোলুপ জাত-ভাইয়েরা বৃটশের সহযােগিতা করে মুসলমানদের হৃতসর্বস্ব দখল ও আত্মসাৎ করছিলেন।
| শিক্ষা বিস্তার এবং ক্রম’মান রাজনৈতিক চেতনা ক্রমশঃ একদল লােককে উদ্বেলিত করে তুলল এবং গভর্ণমেন্টও পূর্বের মুথেচ্ছাচারিতা কিয়দংশ কমিয়ে ভারতবাসীর হাতে সামান্য ক্ষমতা দিয়ে তাদের পূর্ণ সহযােগিতা কামনা করলেন ১৯১৮ সনের পর হাতে। ফলে উপস্থিত সুযােগ সুবিধাগুলো হিন্দুদের হাতে এসে পড়েছিল। এগুলো অধিকার করতে হিন্দু ভাইদের আত্মমর্যাদায় বাধেনি, আর বাধবেই বা কেন? হিন্দু ভারতের ইতিহাসটা ভূ পরিবর্তনের ইতিহাস মাত্র। সামান্য আর্থিক সুযােগ আদায় করতে গিয়ে তাদেরই পূর্ব পুরুষরা শক, ইন, মহম্মদ ঘােরী, মােগল, পাঠান এবং বৃটিশকে দাওয়াত করে এনে স্বদেশের রাজ তখত বিদেশীর হাতে তুলে দিয়ে ছল। এটাও একটা প্রভু পরিবর্তনের যুগ ছিল মাত্র, আর প্রভু পরিবর্তনে বেশ একটা আর্থিক সুযোেগ যে মেলেনি তা নয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়েও ভারতের পুরাণ ইতিহাসের পুরাবৃত্তি আমরা দেখেছি। ভারতের বিশিষ্ট জাতি নিজেদের নেতাকে জাপানে পাঠিয়ে বৈদেশিকদের সহায়তায় ভারতের স্বাধীনতা পেতে চেয়েছিলেন। এই জাতীয় ভাইদের ১০% জনই জাপানীদের পক্ষপাতী হয়ে উঠেছিলেন। এর দ্বারা ভারতের ইতিহাসের প্রভু পরিবর্তনেচ্ছাই প্রমাণিত হয়।’
| রাজ্যহারা, স্বাধীনতা ও ক্ষমতালুপ্ত মুসলিম জাতি নূতন প্রভু বা দাসত্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পূৰ্বেত পারেই নি ; ১৯১৮ সনের পরেও তাল মিলাতে তাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। বৃটিশের অধিনায়কত্ব হিন্দুদের সাহায্য করেছে এবং অন্যের পরিশ্রমলব্ধ দ্রব্যের উপর পোদ্দারী করতে শিখিয়েছে। এই অধিনায়কত্বের পরিপােষকতায় তারা যে কেবল গভর্নমেন্ট পদগুলো দখল করেছেন তাই নয় ; শিক্ষাবিভাগ, অর্থনৈতিক বিভাগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে একচেটিয়া মৌসী স্বত্ব স্থাপন করেছেন। পরাধীন হওয়ার পরও মুসলমানদের যে বিপুল জমি-জেরাত
১২
১৫ ছিল, কাওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত-প্রথা মুসলিমদের হাত হােতে তা ছিনিয়ে নিয়ে হিন্দুদের কানাকড়ির মূল্য দিয়েছিল—জ গ্রত মুসলিম তা ভালভাবেই উপলব্ধি করেছে। ফলতঃ ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত স্যার সাইদ আহমদের উপযুক্ত এবং যােগ অধিনায়কত্বে মুসলিম জাতির প্রথম প্রােগ্রাম ছিল বিদ্যার্জন। তিনি বিভিন্নমুখী, শতধাবিভক্ত, পৃথক পৃথক মতাবলম্বী মুসলিম সমাজকে চেয়েছিলেন একত্রিত করে ভবিষ্যৎ সমরের জন্য প্রস্তুত হােতে। এসময়ে মুসলিমদের জন্য যে কোন রকমের গণ-আন্দোলনকে তিনি ক্ষতিকর বলে মনে করতেন। বিশেষ করে দুর্বলচিত্ত, অত্যাচারিত, অবিচারে জর্জরিত এবং অশিক্ষিত মুসলমানদের নিয়ে সে সময় গণ-আন্দোলন করার অর্থই হােত মুসলিম ভারতের চিরসমাধি। কিছুদিন পর তারা উপলব্ধি করলেন যে, রাজনীতি ক্ষেত্রে শীঘ্ন নেমে না পড়লে তাদের অবস্থা জার্মানীর ভিতরের ইহুদীদের মতই হয়ে দাড়াবে।
সুতরাং এখন হতেই বেশ একটা ঘােড়দৌড় শুরু হয়ে যায় ; আর এর কারণই হচ্ছে গভর্ণমেন্ট প্রদত্ত নূতন শাসনতন্ত্রের এই সুযোেগ সুবিধা ও পূংস্কার গুলো। এসময় ভারতের গণজাগরণ তার শৈশব অবস্থায় ছিল। কাকুতি মিনতিই ছিল তখন ভারতের রাজনীতি এবং কোন একটা বি আইনে পরিণত হওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলাের উক্ত বিষয় আলােচনা করবার অধিকার লাভই ছিল আকাঙক্ষার বস্তু। সার্বভৌম রাজনৈতিক ক্ষমত। দেশীয় গভর্ণমেন্টের হাতে স্থানান্তরিত হয়ে আসবার আশা ছিল তখন কল্পনার সামগ্রী। দশম খষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারতীয় মুসলিম তার নিজস্ব ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং সামাজিক অস্তিত্বের বিষয়ে জাগ্রত ছিল। কিন্তু পরে শাসকের ভূমিকায় নামায় হয়ত তঁাদের জাতীয়তা এতটা প্রকট হয়ে উঠেনি। বৃটিশ রাজত্বের বুনিয়াদে এব; জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে হিন্দু ভাইদের অগ্রগতিতে তঁাদের হারান-স্মৃতি ফিরে আসে, কাজেই ধর্মীয় এবং সামাজিক পৃথক অস্তিত্ব রাজনীত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও দেখতে পান। এখন হােতে মুসলিম ভারত নিজেদের
১৩
সুস্পষ্ট বৃষ্টি ও সভ্যতা, ভাষা ও সাহিত্য, কারুশিল্প ও স্বপতিশির, নাম ও পদবী মূল্য ও সামঞ্জস্যের জ্ঞান আইনকানুন নৈতিক নিয়ম, আচারব্যবহার ও পঞ্জিকা, ইতিহাস ও ঐতিত ৰক্ষতা ও আশা-আকাঙ্খা এক কথায় জীবন সম্বন্ধে একটা বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গী সম্পন্ন জাতি বলে গভীরভাবে চিন্তা করতে শেখে। | এই অনুপ্রেরণাই আজ ভারতীয় মুসলিমদের আদর্শ এবং এরই পূর্ণরূপ পাকিস্তান দাবীর ভিতর দিয়ে ফুটে উঠেছে। মুসলিমরা চায়, ভারতের স্বাধীনতা যেন তাদের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ না করে; তারা চায় হিন্দু-মুসলিমের সম-স্বাধীনতা; কংগ্রেস কথিত অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতার নামে পরাধীনতার শৃঙ্খল পড়তে তারা নারাজ।
ক্রমান্নত দ্বন্দ্ব
কংগ্রেসের ন্যায় কাকুতি মিনতি জানানই ছিল সেকালের মুসলিম লীগের রাজনীতি। রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও নাগরিক সুখ সুবিধা আদায় ; মিউনিসিপ্যালিটি, জেলাবােড’ ও পরিষদসমূহে নিজেদের প্রতিনিধি প্রেরণ এবং বিভিন্ন জাতি, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের ভিতর সৌহাদ্যবদ্ধ’নই ছিল তখন তার আদর্শ। সদ্য জাগ্রত মুসলমানদের একটা প্রতিনিধিদল এসময় পৃথক নির্বাচন প্রথা প্রবর্তনের জন্য তদানীন্তন ভাইসরয় লড’ মিন্টোর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ দাবীর পেছনে এত শক্ত ঐতিহাসিক এবং অনিবার্য যুক্ত ছিল যে, এই দাবীকে কাষে পরিণত করা হয়। মনে । করুন মুসলিম জাতীয় জীবনের শক্ত বিহারের কোন এক মিঃ জাকারিয়া পাটন কর্পোরেশনের প্রথী হিসাবে দাঁড়ালেন। জাকারিয়া মুসলিম কিন্তু তাঁদের কারও সমর্থন তিনি পান না। হিন্দু কংগ্রেসের ভােটের জোরে তিনি কপোরেশনের মেয়র পর্যন্ত হয়ে গেলেন। কাজেই মুসলিমদের প্রকৃত প্রতিনিধি-বিহারের মুসলমানদের ১০০% ভােট পেয়েও জাকারিয়ার সাথে নির্বাচন দ্বন্দ্বে পরাজিত হোলেন। এখন জিজ্ঞাস্য মিঃ জাকারিয়া কি মুসলমানদের প্রতিনিধি ? নিজেদের জাতীয় ভবিষ্যৎ
১৪
জীবন নিজেদের হাতে গড়ে তুলবার দাবী ভারতীয় মুসলমানদের এই প্রথম। এখানেই মুসলিম জাতীয় স্বাধীনতার দাবী পাকিস্তানের বীজ প্রথম উপ্ত হয়।
পার্শ্ববর্তী হিন্দু ভাইদের উপর যতই তনুগ্রহ বর্ষণ হােতে থাকে এবং মুসলমানদের প্রতি তারা যতই আক্রমণাত্মক ভাব দেখাতে থাকেন, মুসলমানেরা ততই নিজেদের পৃথক অস্তিত্বের বিষয়ে সজাগ হয়ে উঠে। ক্রমান্বয়ে রাজশক্তি যতই দেশীয় লোকের হাতে স্থানান্তরিত হয়ে আসতে লাগল, ততই বিদেশগত সদ্যনূতন গণতান্ত্রিক গভর্ণমেন্ট বা সংখ্যাগরিষ্ঠ ধলের শাসন অথবা হিন্দুরাজের বুনিয়াদ গড়ে উঠতে থাকল। কাজেই গণতন্ত্রের নামে এতবড় একটা বিশাল মহাদেশে ১০ কোটি মুসলিম সমাজের উপর চিরদাসত্ব শৃঙ্খল গড়ে উঠতে থাকে।
গণতন্ত্রের নামে দশকোটি মুসলিম চিরসংখ্যালঘিষ্ঠে পর্যবসিত হবে এটা আবার কোনদেশীয় গণতন্ত্র ? পালিয়ামেন্টারী শাসনে সংখ্যালঘিষ্ঠদের জন্য আজ পর্যন্ত যে সমস্ত রক্ষাকবজের ব্যবস্থা করা হয়েছে বা প্রস্তাবাদি দেখা গেছে, তার সবগুলােই ভারতীয় রাজনীতিক্ষেত্রে অচল। বিভিন্ন জাতির আবাসস্থলে বিশেষ করে জাতিগুলো যখন নিজ নিজ দাবী ও অস্তিত্ব সম্বন্ধে সম্পূর্ণ সজাগ হয়ে উঠে, তখন সংখ্যাগরিষ্ঠদের শাসন অগণতান্ত্রিক ও অর্থশূন্য। বর্তমানকালীন গণতন্ত্র কেবল এক জাতির আবাসস্থলেই প্রযোজ্য ; কেননা সেখানে একদলের শাসন কোনকালেই স্থায়ী হয় না। ইংলণ্ডের আজকার শ্রমিকদল বা লিবারেলদল কালই অফিসে অভিষিক্ত হােত পারে, কিন্তু জার্মানীতে ইহুদীজাতির কোন দল থাকলে তা কোনদিনই সংখ্যাগরিষ্ঠ হােতে পারবে না। ঠিক একথাই ভারতীয় মুসলমানদের সম্বন্ধে খাটে। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের সংখ্যাগরিষ্ঠ গভর্ণমেন্টল কোনকালেই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলগুলাের উপর প্রভুত্ব করবার আশা পােষণ করে না। তারা ভাল করেই জানে যে, সংখ্যালঘিষ্ঠ দলগুলো হয়ত পরবর্তীদিন বা মুহুর্তেই গভর্ণমেন্ট পদে অভিষিক্ত হােতে পারে। পক্ষান্তরে সংখ্যালঘিষ্ঠ বল পর্যদস্ত বা ব্যর্থ সমস্ত
১৫
হয়ে ভাবতেও পারে না যে, চিরকালই গরিষ্ঠদলের শাসন কায়েম থাকবে। কাজেই এরা জাতির নিকট সুস্পষ্ট রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রােগ্রাম পেশ করে পরবর্তী নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলে পরিণত হবার চেষ্টা করবে। বিশেষ করে একজাতির আবাসভূমিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলাের ভিতর কোন মূখ্য পার্থক্য দেখা যায় না। সামান্য সামাজিক বা অর্থনৈতিক মতদ্বৈধতার উপর এই দল সমূহের ভিত্তি। এই মত দ্বৈধতার বিষয়গুলো ক্ষণস্থায়ী মাত্র। এই যে একলের সাথে অন্যদলের মতের অমিল এটা আক্রমণাত্মক নয়—গঠনমূলক। | জাতীয় দুদিনে সমস্ত দল দণ্ডায়মান হয় একই পতাকার নীচে। সুতরাং জাতির কত মঙ্গলাকাঙ্খী হিসাবে বিভিন্নদল বিভিন্নমত পােষণ করলেও তারা সবাই মিলে যে এক এবং সবাই যে দেশপ্রেমিক এটা উপলব্ধি করতে পারে। তারা জানেন স্বদেশপ্রিয়তা কোন একটা বিশিষ্ট দলের একচোয়। মৌরুসী স্বত্ব নয়। কিন্তু ভারতের অবস্থা ঠিক স্বতন্ত্র। .এখানে যারা চিরসংখ্যাগরিষ্ঠ এবং শিক্ষা-দীক্ষাও ব্যবসা বাণিজ্যে সুখ-সুবিধা পেয়েছেন তারা সংখ্যালঘিষ্ঠদের উপর চিরস্থায়ী প্রভুত্ব খাটাবার আশা প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাব পােষণ করে আসছেন। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠদের . বিরুদ্ধে সংখ্যালঘিষ্ঠদের আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধে সর্বদা লিপ্ত থাকতে বাধ্য হােতে হচ্ছে। সুতরাং যতদিন এই প্রধান ও প্রাথমিক সমস্যার সমাধান না হয় এবং চিরসংখ্যালঘিষ্ঠ মুসলমান জাতি পরিতৃপ্ত ও উদ্বেগশূণ্য
হয় বা পরস্পরের শক্তির সমতা উপলব্ধি না করে, ভারত ততদিন পরাধীনতার শৃঙ্খল পাশ কাটিয়ে উঠতে পারবে না।
পৃথক নিবৃচিন
যুক্তনির্বাচন প্রচলিত থাকলে মুসলিম জাতীয় জীবনের শত্রু, কতকগুলো সমাজদ্রোহী মিরজাফরই হিন্দুভোটের জোরে নির্বাচন যুদ্ধে জয়ী হবেন। মুসলিম জাতীয় জীবনের সাথে এই মিরজাফরদের কোন সম্পর্ক নেই বা কোনদিনই ছিল না। চিরকালই এরা মিঃ গান্ধী বা কংগ্রেসের
১৬
পদলেহন করে এসেছেন। এজন্যই মুসলমানেরা ৯০৫ সনে সর্বপ্রথম পৃথক নির্বানের দাবী জানায় ভারতীয় মুসলিদের পৃথক নির্বাচনের দাবী বৃটিশ গভর্ণমেন্ট ২৯০৯ সনে মেনে নেন। হিন্দু কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদকে ধ্বংসের জন্য মুসলিমরা পৃথক নির্বাচন চায়নি বরং মুসলিম সমাজের প্রকৃত বিশ্বাসভাজন প্রতিনিধি বিভিন্ন পরিষদ বা প্রতিষ্ঠান সমুহে পাঠাতে চেয়েছিল। প্রদেশগুলাের মধ্যে কেবল পাঞ্জ:বই ১৯০১ -সনে পৃথক নির্বাচন প্রথা গ্রহণ করেনি। ভারতের অদ্ভুত রাজনীতি হচ্ছে এই যে, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল হেতে হিন্দু পুঁতিনিধি এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলো হােতে মুসলিম প্রতিনিধিরা১০১ সনের পূর্ব পর্যন্ত নির্বাচিত হয়ে আসেন। সমস্ত ভারতে এ নিয়মের এতটুকু ব্যতিক্রমও আমরা দেখতে পাইনি। পাঞ্জাব এসময়ে পৃথক নির্বাচন প্রথা গ্রহণ না করলেও নিয়মের ব্যতিক্রম এখানেও দেখা যায় নি। কাজেই ভারতের মত জটিল রাজনীতি ক্ষেত্রে বিদেশাগত গণতন্ত্রের কানাকড়িরও মূল্য নেই জানতে হবে।
৯০১ সনের পৃথক নির্বাচনে মুসলিম জাতিকে তাদের বিশ্বাসভাজন কতকগুলো প্রতিনিধি পাঠানাের ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল মাত্র ; এতে হিন্দুকংগ্রেসের ন্যাশনালিজম’ বা জাতীয়তাবাদ খান খান হয়ে ভেঙ্গে পড়েনি। কেননা সাধারণ সিটগুলােতে নির্বাচিত হবার সুযােগ হিন্দু মুসলিম উভয়েরই ছিল। কিন্তু ১৯১৬ সনে লীগ কংগ্রেসের লাক্ষে প্যাক্টে কংগ্রেস সাধারণ আসনে মুসলিমদের নির্বাচিত হবার অধিকারকে নাকচ করে জাতীয়তাবাদকে ধূলিসাৎ করে দিল। বর্তমানে সকল হিন্দু নেতাই ঘােষণা করেছেন যে, এই জাতীয়তাবাদরূপ মৃত দানবটাকে বচিয়া তুলতে হােলে পৃথক নির্বাচন প্রথা উঠিয়ে দিতে হবে। সুতরাং হিন্দু কংগ্রেসই হাতেগড়া ন্যাশনালিজমের ধ্বংসের জন্য দায়ী-মুসলিমরা নয় /
পৃথক নির্বাচন প্রথার দোষত্রুট অন্বেষণে হিল কংগ্রেস পট, কিন্তু পৃথক . নির্বাচনের অনিবার্য কারণ সমহের বিষয়ে তাঁর গবেষণা করলে সংখ্যা লঘিষ্ঠেরা পরিতৃপ্ত হােতে পারত। এখনও বিশ্ববিদ্যালয়, শ্রমিক, ট্রেড
১৭
ইউনিয়ন প্রভৃতি অঞ্চলগুলােতে যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রচলিত আছে। এগুলােতে সংখ্যালঘিষ্ঠদের দাবী দাওয়া পূরণের চেষ্টা কি হিন্দু-কংগ্রেস করেছে ? বিশ্ববিদ্যালয় গুলােকেই ধরা যাক ; অন্তঃ ২০টা বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ৫ বার নির্বাচনে এই অঞ্চলগুলো হােতে একশত জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। এই একশত জনের মধ্যে মাত্র দুইজন প্রতিনিধি মুসলমান ঃফাজলী হােসাইন [ লাহাের বিশ্ববিদ্যালয়] ও মিঃ ফজলুর রহমান [ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ] এরাও ভাগ্যের জোরে এই বিশ্ববিদ্যালয় দুটো হােতে নির্বাচিত হয়ে যান। মিঃ ফাজলী হােসাইনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিন্দু ভদ্রলােকের নমিনেশন পত্র আইনতঃ নাকচ হয়ে যাওয়ায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু ছাত্ররা সময় মত নিজেদের নাম রেঞ্জেী করাতে পারেননি; কাজেই মুসলিম ভােট হিন্দু ভােট হােতে অনেক বেশী হয়ে দঁাড়ায়। | ব্যবসায়ীদের জন্য সমস্ত ভারতে প্রায় ৭০ টা আসন নির্ধারিত আছে ; কিন্তু এগুলােতে যুক্তনির্বাচন প্রথা প্রচলিত থাকায় সর্বভারতে একজন মুসলিম ব্যবসায়ীও এই সমস্ত কেন্দ্র হােতে নির্বাচিত হােতে পারেননি। এজন্যই এই সমস্ত কেন্দ্রে মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন করবার দাবী উঠেছে। যুক্ত নির্বাচনের এই অঞ্চলগুলো হােতে যােলট। আসন মুসলিমদের পাওয়া উচিত। পৃথক নির্বাচন প্রথা প্রবর্তিত না হােলে, এসমস্ত কেন্দ্র হােতে একজন মুসলিমও নির্বাচিত হােতে পারবেন না, এদিকে উগ্রমস্তিষ্ক কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ কি ফিরে দেখবেন ; না কেবল পৃথক নির্বাচন প্রথার ঘাড়ে সমস্ত দোষ চাপিয়ে বাগাড়ম্বরে ব্যস্ত থাকলেই চলবে?
লীগ-কংগ্রেস সম্বন্ধেৱ পটভূমি
হিন্দু মুসলিম ধস্তাধস্তির সুত্রপাত হয় পৃথক নির্বাচন প্রথা নিয়ে। দ্বিতীয়তঃ হিন্দুদের আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখে মুসলিমরা নিজেদের ভবিষ্যৎ জাতীয় জীবন সম্বন্ধে চিন্তিত হয়ে পড়েন। এই সত্যতার উপলব্ধি
১৮
করেই গােখেলের ন্যায় দুরদর্শী হিন্দু সমাজনায়ক ১৯০৭ সনে ঘােষণা
afecala -“Confronted by an overwbelming Hindu majority, Muslims are naturally afraid that release from the British yoke might in their case mean enslavement to the Hindus. Were the Hindus similarly situated az are the Muslims in regard to numbers and other things, would they not bave entertaioed similar misgivings?” | “হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতার মােকাবেলায় মুসলিমরা স্বভাবতঃই এই ভেবে ভীত যে, বৃটিশ শাসনপাশ কাটিয়ে উঠে তারা হয়ত হিন্দুদের বাসত্বশৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়বেন। মুসলিমরা সংখ্যালঘিষ্ঠতা এবং অন্যান্য ব্যাপারে যে অবস্থায় পড়েছেন, হিন্দুরা সে অবস্থায় পড়লে কি ঠিক সেইরূপই সন্দিগ্ধ হয়ে উঠত না।” স্বাধীনতাসংগ্রামে আত্মাহুতি দিতে মুসলিম-জাতি কোনদিনই পশ্চাদপদ নয়। কংগ্রেস সকলের নামে যে দাবী ইংরাজের কাছে করে, সে দাবী মুসলমানদের বেলায় মেনে নিতে নারাজ। লীগের ন্যায্যধাবী মেনে নেওয়ার ব্যাপারে কংগ্রেস অনেক পিছিয়ে গেছে। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের কবল হতে উভয়ের জাতীয় আবাসভূমি অধিকার করবার কঠিন সংগ্রামে লীগ দাবী করে, ডাকাতদের চুড়ান্ত আঘাত হানবার আগেই তার অংশ সাব্যস্ত করে দিতে হবে। মুসলিম জাতীয় প্রতিষ্ঠান তার ন্যায্য অংশ সম্বন্ধে নিশ্চিত হোতে চাচ্ছে মাত্র।
১১১০ হােতে ১৯১৫ পর্যন্ত স্বায়ত্তশাসন অর্জনের জন্য লীগ ও কংগ্রেস পাশাপাশি এসে পঁড়িয়েছিল। লীগ-কংগ্রেস মিলনই যে স্বাধীনতা অর্জনের একমাত্র উপায় এসত্যকে উভয় প্রতিষ্ঠানই তখন উপলব্ধি করেছিল । ১৯১৬ সনে অনুষ্ঠিত লীগ-কংগ্রেস প্যাক্টে হিন্দু-মুসলিম দুটো পৃথক জাতি এবং এদের দাবীগুলোও য়ে সম্পূর্ণ পৃথক ধরণের তা খােলাখল ভাবে মেনে নেওয়া হয়। মুসলিম এবং হিন্দুদের জন্য পৃথক নির্বাচন প্রথা কংগ্রেস কর্তৃক মেনে নেওয়াই এই প্যান্টের প্রধান শর্ত ছিল। মুসলিম লীগের তরফ হােতে
১৯
এই প্যাক্ট সম্পাদন করেন মুসলিম ভারতের অবিসংবাদিত নেতা কায়েদে আজম মােহাম্মদ আলি জিন্নাহ,। এরপর হােতে লীগ স্বায়ত্তশাসন অর্জনের জন্য এবং গভর্ণমেন্টের প্রত্যেক দপ্তরে মুসলমানদের ন্যায্যদাবী আদায়ের জন্য সচেষ্ট হয়ে উঠে। বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হয়েও মুসলিম ভারত নিজেদের এবীকে কতগুলো প্রস্তাবের ভিতর দিয়ে প্রকাশ করেন। এগুলােই কায়েদে আজমের চৌদফা’ বলে পরিচিত।
চৌদফার মধ্যে প্রধান দাবীগুলো প্রায় এরূপ ছিল :-(ক) ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন করে অবশিষ্ট এবং অতিরিক্ত ক্ষমতাগুলো প্রদেশ সমুহকে দিতে হবে এবং এই যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম প্রতিনিধি কমপক্ষে ৩৩৪ % থাকবে। (খ) মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলাের পরিষদ সমূহে মুসলিম সদস্য সংখ্যা যেন জোর করে সংখ্যালঘিষ্ঠ করা না হয়। (গ) মুসলিম সংখ্যালঘিষ্ঠ প্রদেশগুলােতে পৃথক-নির্বাচন প্রথা প্রচলিত করে সংখ্যালঘিষ্ঠ মুসলিম জাতির রক্ষাকবজের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিষদ সমূহে মুসলিমদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরক্ষিত থাকবে এবং মুসলিম বা অন্য কোনও সংখ্যালঘিষ্ঠদের স্বার্থহানি করে কেবল ভােটের জোরে কোন আইন পাশ করা চলবে না। সিন্ধুকে বােহে হােতে পৃথক করে একটা প্রদেশের সমপর্যায়ে উন্নীত করতে হবে। (ঘ) সিন্ধু, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানে অন্যান্য প্রদেশে প্রচলিত স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন করতে হবে। (ঙ) মুসলিমদের নিজস্ব আইন কানুন, কষ্ট দর্শন ও উদ্ব ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ১৯৩৫ সনের সংশােধিত আইনে এ দাবীগুলাের অধিকাংশকেই মেনে নেওয়া হয়; কিন্তু বাঙ্গালা, সিন্ধু, পাঞ্জাব ইত্যাদি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলাের পরিষদ সমহে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সদস্যসংখ্যাকে জোর করে সংখ্যালঘিষ্ঠে পরিণত করা হয়। এই দফাগুলো নিয়ে ধীরভাবে আলােচনা করলে বুঝা যাবে, ভারতীয় মুসলিম একটা পৃথক জাতি।
স্বায়ত্ব শাসনের যুগ
১৯৩৭ সনে প্রদেশগুলােতে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের রাজনীতিতে সাজসাজ রব পড়ে যায়। কংগ্রেস ১৮ কোটি
২০
হিন্দুর একচ্ছত্র প্রতিষ্ঠান হিসাবে হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ ছয়টাতে হিন্দুরাজ্য স্থাপন করে পূর্ণ স্বাধীনতার সুখস্বপ্ন দেখতে থাকে। কংগ্রেস মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলােতে উল্লেখযােগ্য কোন আসন দখল করতে পারেনি। ভারতীয় মুসলিমদের সামনে এসময় বিশিষ্ট কোন প্রােগ্রাম ছিলনা বলেই তারা বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছড়িয়ে ছিলেন। ভারতের মত জটিল রাজনীতিতে প্রচলিত গণতন্ত্রের কোন মূল্যই নেই; সেজন্যই আমরা দেখতে পাই, মুসলিমসংখ্যালঘিষ্ঠ প্রদেশগুলােতে লীগের বিরুদ্ধ বাদিগণ এবং হিন্দু সংখ্যালঘিষ্ঠ প্রদেশগুলো হােতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধ বাদিগণ প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে চলেছিলেন। নির্বাচন যুদ্ধের সমাপ্তির পর বর্ণ হিন্দু রাজনীতিবিদদের সংখ্যালঘিষ্ঠদের প্রতি যুদ্ধংদেহি চ্যালেঞ্জ এবং তাদের সাথে শিল্পপতি ও কোটিপতিদের অর্থবষ’ণ সহযােগিতায় কংগ্রেস একটা মদমত্ত হিন্দুদলে পরিণত হয়।
এখন হাতে সমস্ত অহিন্দুদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় জীবন বিধ্বস্ত করাই কংগ্রেসের প্রােগ্রাম হয়ে দঁাড়ায়। কংগ্রেস ও গভর্ণমেন্টের মধ্যে ‘ভদ্রলােকদের চুক্তিই [Gentlemen’s agreement] ক্ষমতামত্ত কংগ্রেসের কোপানলে ঘৃতাহুতি প্রদান করে। ফলে শাসনতন্ত্রে সংখ্যালঘিষ্ঠদের নিরাপত্তার জন্য যে রক্ষাকবজের ব্যবস্থা ছিল তা মিথ্যায় পর্যবসিত হয়। ভদ্রলােকদের এই চুক্তির জন্যই গভর্নর-জেনারেল মদমত্ত-কংগ্রেসের হাত হােতে অত্যাচারিত মুসলিমদের উদ্ধার করেননি।
কংগ্রেস-গভর্ণমেন্টের ২৭ মাসের এই জীবন মুসলিমদের উপর অত্যাচারের একটা ফিরিস্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। কংগ্রেসী মন্ত্রীমণ্ডলী গভর্ণমেন্টের সমস্তশক্তি মুসলিমদের রাজনৈতিক, কৃষ্টিগত, শিক্ষা সম্বন্ধীয় এবং অর্থনৈতিক জীবনকে পিষে মেরে ফেলবার জন্য ব্যবহার করেন। অনুন্নত হিন্দু জাতিগুলো সাধারণভাবে এবং মুসলিম জাতি বিশেষভাবে এই দাবানলের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন, কিন্তু মুসলিম ছাড়া অন্য কারও সােজাভাবে দাঁড়িয়ে এই অত্যাচারের বিরুদ্ধাচরণ করবার সাহস ছিল
বা আজও নেই। কাজেই সমস্ত মুসলিম ভারতে এমন এক আলােড়ন
২১
এলো, যাতে সমস্ত মুসলিম ভেদাভেদ ভুলে দাঁড়াল কায়েদে আজমের নেতৃত্বাধীনে, একই জাতীয় পতাকার নীচে। বর্তমান অবস্থায় তারা এমন একটা জাতির দাসত্ব শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে চাইলেন না, যাদের তারা দীর্ঘ আটশত বৎসর ধরে শাসন করে এসেছেন এবং যাদের জীবনের কোন ক্ষেত্রেই শ্রেষ্ঠতর বলে মানতে পারেননি।
জাতীয় জীবন
অবস্থার বিবর্তনে হিন্দু-মুসলিমকে একজাতীয়তার বন্ধনে আবদ্ধকারী শের শাহের জাতি তাদের ভাবভঙ্গী বদলাতে বাধ্য হন। এবং পরেও মিলনকামী মুসলিম জাতি নিজেদের অস্তিত্ব সম্পূর্ণ অটুট রেখে সম্মানজনক শর্তে আপােষ রফায় উপনীত হবার অনেক চেষ্টাই করেছে ; কিন্তু হিন্দু-বুর্জোয়া শ্রেণী প্রভাবান্বিত কংগ্রেসের অলীক একজাতীয়তাবাদের আড়ালে, হিন্দুরাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নই মুসলিমদের সমস্ত মহান চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। এ সময় দেশের রাজনৈতিক পটভূমি শীঘ্র শীঘ্ন বদলাতে থাকে এবং গভর্ণমেন্টের সমস্ত শক্তি ভারতবাসীর হাতে হস্তান্তরিত হয়ে আসবার দাবী প্রথম ও প্রধান হয়ে পঁাড়ায়। ঘটনার আবর্তন মুসলিমদের এই শিক্ষা দেয় যে, সম্মানজনক ও স্বাধীনভাবে বসবাস করতে হােলে নিজেদের সংখ্যালঘিষ্ঠ হিসাবে চিন্তা করলে চলবে না বরং একটা জাতি হিসাবে গণনা করার দাবী করতে হবে। একটা জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবার পথে যতগুলো উপাদানের দরকার, হিন্দু মুসলিমদের ভিতর সে সমস্ত উপাদানগুলাে বিভিন্নমুখী।
(অতীত ইতিহাসে বিশ্বাসবাদ, কৃষ্টিগত উত্তরাধিকার স্বত্ব, সাধারণ ভাষাবাব, জীবনের উদ্দেশ্যবাদ, সামাজিক রীতিনীতি, সাধারণ আইন কানুন, চারিত্রিক সজাগতা ও ভবিষ্যৎ আশা আকাঙ্খবাদের দিক দিয়ে মুসলিম অন্য সমস্ত ভারতবাসী হােতে পৃথক।) তারা নিজেদের জাতিগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মতবাদ কোন কারণেই কারও নিকট বিসর্জন দেননি বা দিতে পারেন না। ইউরােপীয় বা হিন্দু জ্ঞানে ধর্ম বলতে প্রকৃত পক্ষে স্বকীয় আত্মা
২২
এবং ভগবানের একেবারেই একটা নিজস্ব গোপন মিলনকে বুঝায়; সমাজ জীবনেব সাথে এই মিলনের বিশেষ কোন সম্বন্ধ নেই। পক্ষান্তরে পার্থিব, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনই ইসলামের চরম আদর্শস্থানীয় হওয়া চাই। এখানে ভগবানের সাথে একটা গােপন আলাপে চলবে নাসমাজগত আলাপ চালাতে হবে। জাতীয়তাবােধকে ভাষায় রূপ দেওয়া বড়ই কঠিন। ফরাসী দার্শনিক রেনানই বােধ হয় সবচেয়ে ভােলা করে জাতীয়তাবােধকে ভাষায় রূপ দিয়েছেন।
“A pation is a soul, a spiritual principle. Two thiogs, which are really one, constitute this soul, this spiritual principle. One is the past, the other is the present. One is the possession in common of a rich beritage of memories; the other is the present consent, the desire to live together, the will to realizo unimpaired heritage.” “একটা জাতি হল একটা আত্মা, একটা আধ্যাত্মিক নীতি। দুইটি বিষয় যা বাস্তবিকই এক, তাই এ আত্মাকে বা আধ্যাত্মিক নীতিকে গঠণ করে। একটা হল অতীত আর একটা হল বর্ধমান। একটা হল সাধারনভাবে মূল্যমান অতীত ঐতিহের স্মৃতি, আর একটি হল বর্তমানের সম্পতি-একত্রে বাস করবার এবং অতীতের অমলিন ঐতিকে উপলব্ধি করবার দৃঢ় ইচ্ছা।” এখন কে অস্বীকার করবেন যে, দশ.কোর্ট মুসলিম অতীত উজ্জ্বলতম ঐতিহাসিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পৃথক জাতীয়তাবাদের প্রেরণায় নিজেদের সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করবার আকাথায় উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে। একদল লােক অতীত আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ভবিষ্যৎ জীবন গঠন করবার জন্য উদ্বদ্ধ হয়ে উঠলে, তঁাদের এই অনুপ্রেরণাকে জাতীয় অনুপ্রেরণা বলা হয়। ইতিহাসে এমন অনেক নজিরই
জে পাওয়া যাবে যে, একদল লােক সংখ্যালঘিষ্ঠতার পর্যায়ে পড়ে অনেক দিন অত্যাচারিত হবার পর, জাতীয় চেতনা ফিরে পেয়েছে এবং পরে নিজেদের একটা বিশিষ্ট জাতি হিসেবে গড়ে তুলেছে।
জাতি গড়ে তুলতে ধর্ম, উদ্ভূতমূল, ভাষা, কৃষ্ট, প্রচলিত রীতিনীতি,
২৩
অর্থনৈতিক ও ভৌগােলিক উপাদান ইত্যাদি ফ্যাক্টরগুলো সাহায্য করে বটে ; কিন্তু এদের যে কোন একটাই অপরিহার্য [ determining factor] নয়। এই উপাদানগুলো অবশ্য একদল লােকের মিলনের পথে সহায়ক হয়। জাতীয়তাবাদ একটা জাতিকে দুটো বিভিন্নমুখী চেতনা প্রদান করে। কাজেই একদল লােককে তারা পার্শ্বে টেনে নেয় এবং অন্য দলকে দূরে ঠেলে দেয়। সত্যভাষী মাত্রেই হয়ত স্বীকার করবেন য়ে এরূপ একটা মনোেভাব এবং অনু• প্রেরণা হিন্দু মুসলিম প্রত্যেকেরই ভিতর আছে, যার জন্য প্রত্যেকে প্রত্যেককে দূরে ঠেলে দেয়। হিন্দু জাতীয় নেতারা একথা নিভীকভাবে বারবার ঘােষণা করেছেন, “হিন্দুস্তান হিন্দুদের মাতৃভূমি, অন্যকেহ কেবল হিন্দুদের সম্মতিতেই ভারতে বসবাস করতে পারবে। তারা ভারতে হিন্দুশাসন, হিন্দুরাজ এবং হিন্দুত্বের পূর্ণ বিকাশ চান। সংখ্যানুপাতের দিক দিয়ে ভারতের মুসলিমরা জার্মানীর ইহুদীদের মত, কাজেই হিন্দু শাসনে মুসলিমরা হিটলার শাসিত ইহুদীদের ভাগ্যে যা ঘটেছিল, তাছাড়া অন্য কিছু আশা করতে পারেন না। হিন্দু কংগ্রেসও ঠিক একই জিনিস চায় ; কাজেই কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ গােপন উদ্দেশ্যসিদ্ধি মানসে ইউরােপীয় রাজনীতি হােতে ধার করা কতগুলাে বাধা বুলি আওড়ান। তারা গণতন্ত্র, সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, জাতীয়তাবাদ, যুক্তনির্বাচন, পালিয়ামেন্টারী আইনকানুন, লােকায়ত্তর গভর্ণমেন্ট ইত্যাদি সম্বন্ধে খুব বড় বড় কথা বলে ভারতের নিজস্ব রাজনীতিকে ঘােলাটে করে তােলেন। কেননা এই সব ভিত্তির উপর যে শাসনতন্ত্র খাড়া হবে, তাতে চিরসংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরাজই গড়ে উঠবে, একথা তঁারা ভালকরেই জানেন। কংগ্রেসী মন্ত্রিত্বের আমলে এধারণা তাদের অন্তরে আরও বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছে। পক্ষান্তরে মুসলিমরা সমস্বাধীনতার ভিত্তিতে নিজ জাতীয় প্রতিভা ও সামর্থ অনুসারে নিজেদের জাতীয় জীবনকে গড়ে তুলতে চায়।
নিজেদের গড়ে তুলবাৱ অধিকার | জাতি হিসাবে মুসলমানেরা কি রকম শাসনতন্ত্রের অধীনে বাস করবে, তা ঠিক করবে তারাই। উন্নতজাতি হিসাবে বাঁচতে হলে ভারতীয়
২৪
অর্থনৈতিক ও ভৌগােলিক উপাদান ইত্যাদি ফ্যাক্টরগুলো সাহায্য করে বটে ; কিন্তু এদের যে কোন একটাই অপরিহার্য [ determining factor] নয়। এই উপাদানগুলো অবশ্য একদল লােকের মিলনের পথে সহায়ক হয়। জাতীয়তাবাদ একটা জাতিকে দুটো বিভিন্নমুখী চেতনা প্রদান করে। কাজেই একদল লােককে তারা পার্শ্বে টেনে নেয় এবং অন্য দলকে দূরে ঠেলে দেয়। সত্যভাষী মাত্রেই হয়ত স্বীকার করবেন য়ে এরূপ একটা মনোেভাব এবং অনু• প্রেরণা হিন্দু মুসলিম প্রত্যেকেরই ভিতর আছে, যার জন্য প্রত্যেকে প্রত্যেককে দূরে ঠেলে দেয়। হিন্দু জাতীয় নেতারা একথা নিভীকভাবে বারবার ঘােষণা করেছেন, “হিন্দুস্তান হিন্দুদের মাতৃভূমি, অন্যকেহ কেবল হিন্দুদের সম্মতিতেই ভারতে বসবাস করতে পারবে। তারা ভারতে হিন্দুশাসন, হিন্দুরাজ এবং হিন্দুত্বের পূর্ণ বিকাশ চান। সংখ্যানুপাতের দিক দিয়ে ভারতের মুসলিমরা জার্মানীর ইহুদীদের মত, কাজেই হিন্দু শাসনে মুসলিমরা হিটলার শাসিত ইহুদীদের ভাগ্যে যা ঘটেছিল, তাছাড়া অন্য কিছু আশা করতে পারেন না। হিন্দু কংগ্রেসও ঠিক একই জিনিস চায় ; কাজেই কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ গােপন উদ্দেশ্যসিদ্ধি মানসে ইউরােপীয় রাজনীতি হােতে ধার করা কতগুলাে বাধা বুলি আওড়ান। তারা গণতন্ত্র, সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, জাতীয়তাবাদ, যুক্তনির্বাচন, পালিয়ামেন্টারী আইনকানুন, লােকায়ত্তর গভর্ণমেন্ট ইত্যাদি সম্বন্ধে খুব বড় বড় কথা বলে ভারতের নিজস্ব রাজনীতিকে ঘােলাটে করে তােলেন। কেননা এই সব ভিত্তির উপর যে শাসনতন্ত্র খাড়া হবে, তাতে চিরসংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরাজই গড়ে উঠবে, একথা তঁারা ভালকরেই জানেন। কংগ্রেসী মন্ত্রিত্বের আমলে এধারণা তাদের অন্তরে আরও বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছে। পক্ষান্তরে মুসলিমরা সমস্বাধীনতার ভিত্তিতে নিজ জাতীয় প্রতিভা ও সামর্থ অনুসারে নিজেদের জাতীয় জীবনকে গড়ে তুলতে চায়।
নিজেদের গড়ে তুলবাৱ অধিকার
জাতি হিসাবে মুসলমানেরা কি রকম শাসনতন্ত্রের অধীনে বাস করবে, তা ঠিক করবে তারাই। উন্নতজাতি হিসাবে বাঁচতে হলে ভারতীয়
২৫
মুসলিমদের একটা জাতীয় আবাসভূমিরও দরকার। রাজনীতি সকলেই জানেন যে, কৃষ্টি ও রাজনৈতিক পৃথক অস্তিত্ব রাখতে হােলেই প্রকৃত রাজনৈতিক শক্তি চাই। আন্তর্জাতিক আইনের একটা বিধিবদ্ধ নিয়ম এই যে, ভৌগােলিকভাবে পরস্পর সংলগ্ন এলাকাগুলাের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই কেবল নিজেদের ভােটে ঠিক করবে যে, তারা পৃথক সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করবে, না পরস্পর আদান প্রদানের দ্বারা সমানাধিকার শর্তে কোন যুক্তরাষ্ট্রের শামিল হবে। এই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে National group বলা হয়।
অন্যান্য যে সমস্ত সংখ্যালঘিষ্ঠ দল বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ঐ এলাকায় থাকে, তাদের Sub-national group বলা হয়। এদল আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবী করতে পারে না; কিন্তু নীতিগত পূর্ণ রক্ষাকবজের দাবী করতে পারে। কোন লােকায়ত্তর গভর্ণমেন্ট শাসন ব্যাপারে সফলতা লাভ করে তখনই যখন সংখ্যালঘিষ্ঠ সম্প্রদায় অত্যাচারিত হচ্ছে এই অভিযােগ করবার যথেষ্ট কারণ পায় না। সুখের বিষয় ভারতের মত উপমহাদেশের সব জ য়গায় মুসলিমরা সংখ্যালঘিষ্ঠ হিসাবে ছড়িয়ে নেই ; বরং পূর্বে ও উত্তর পশ্চিম ভারতে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাবে বসবাস করছেন। এগুলােই তাদের জাতীর আবাসভূমি এবং এগুলােতেই তাঁরা নিজেদের আদর্শ জাতিরূপে গড়ে তুলবেন।
লিগের আদর্শ
নিজস্ব আদর্শ ও স্বাধীনতার পথ সামনে রেখে মুসলিম জাতি কি নীতি অবলম্বন করছেন, তা জানতে হােলে কায়েদে আজমের উক্তির পনরুল্লেখ করাই শ্রেয়ঃ। ১৯৪১ সনে লীগের মাদ্রাজ অধিবেশনে, তিনি ঘােষণা করেন ‘মুসলিম লীগের আদর্শ হচ্ছে এই যে, মুসলমানেরা, একটা স্বতন্ত্র জাতি। তাদের এই স্বাতন্ত্র্য এবং পৃথক অস্তিত্বকে অন্য কোন জাতির বৈশিষ্ট্যগুলাের ভিতর প্রবেশ করিয়ে মুসলিম জাতির স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে নষ্ট করার অপপ্রচেষ্টাকে ভীষণভাবে বাধা দেওয়া হবে আমর। এবিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং এতে যেন আমরা কোন রকমের ভুল না করি। সমতা, পরস্পর আদান-প্রদান এবং
২৬
পরস্পরের যুক্তি ও দাবীর পূর্ণ উপলব্ধি দ্বারা ভারতের বিভিন্ন জাতির ভিতর সৌহাদ্দ বদ্ধ নই আমাদের আদর্শ।•••••••••অন্যজাতির উপর প্রভুত্ব করবার আকাঙ্খা বিশেষভাবে পরিত্যাজ্য।” ভারতীয় জাতিগুলাে যতশীঘ এসত্যকে উপলব্ধি করে, ভারতের জটিল রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান তত শীঘ্রই হবে। এই নীতিকে সামনে রেখেই ১১৪০ সনে লাহাের অধিবেশনে লীগ পাকিস্তান প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং ১১৪১ সনে মাদ্রাজ অধিবেশনে এ প্রস্তাবকে জাতীয় বিশ্বাসের বস্তু বলে বরণ করে নেয়। লাহাের প্রস্তাব ঃ
(ক) ভৌগােলিক দিক হতে অবিচ্ছিন্ন এলাকাগুলােকে প্রয়ােজন অনুযায়ী আঞ্চলিক সীমানা বদলের দ্বারা এমন ভাবে বিভিন্ন এলাকায় বিভক্ত করতে হবে, যাতে যে সকল এলাকায় মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, যেমন ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম এবং পর্ব অঞ্চল, সে সব এলাকায় স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠন করতে হবে ; যে সব এলাকা নিয়ে এই রাষ্ট্রগুলো গঠিত হবে সেগুলো স্বায়ত্তশাসিত এবং সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন হবে।
| (খ) এসব অঞ্চলের সংখ্যালঘিষ্ঠদের সাথে পরামর্শ করে তাদের ধর্মগত, সংস্কতিগত, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থরক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে উপষক্ত, কার্যকরী রক্ষাকবজের সুনিবিষ্ট ব্যবস্থা করতে হবে।
(গ) ভারতের অন্যান্য অংশে যেখানে মুসলিমরা সংখ্যালঘিষ্ঠ সে সকল অঞ্চলে তাদের ও অন্যান্য সংখ্যালঘিষ্ঠদের সাথে পরামর্শ করে তাদের সকলের ধর্মগত, সংস্কৃতিগত, শাসনগত, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থরক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে উপযুক্ত, কার্যকরী ও আইনগত রক্ষাকবজের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকবে।
নিরপেক্ষ মনােভাব নিয়ে বিচার করলে দেখা যায়, লাহাের প্রস্তাব, ১৯২১ সনের কংগ্রেস প্রস্তাবের অনুরূপ একটা স্বাধীনতাকামী প্রস্তাব। প্রস্তাবে বণিত স্বাধীন রাষ্ট্রগুলো বৃটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই অর্জন করতে হবে। কাজেই মুসলিমদের স্বাধীনতার জন্য এ প্রস্তাব, বৃটশ শাসনের দাসত্বের
২৭
শৃঙ্খল ভেঙ্গে মুক্তি অর্জনের জন্য এ প্রস্তাব, হিন্দু সংখ্যাধিক্যের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এ প্রস্তাবটশ বেয়নেটের নীচে জীবম্ভত হয়ে বেঁচে থাকবার প্রস্তাব এটা নয়।
বৃটশজাতি কেবল মুসলিম-ভারত কেন, মুসলিম-জগতের যতবড় শত্রু ততবড় শত্রু আর কারও নয়। বিশ্ব মুসলিমদের ধন-সম্পত্তি, মান মর্যাদা, শিক্ষা-সভাতা সমস্ত তিলে তিলে লুটে নিয়ে এরা তাদেরকে অমানুষ করে তুলেছেন। দেশের মুসলিম নরনারী আজ এসত্যটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, স্বার্থের দায়ে ধীরে ধীরে মুসলিমদের অমুসলিম করে ভােলাই ছিল বৃটিশের মজ্জাগত উদ্দেশ্য এবং তঁাহাদের পােষিত এ আশা সাফল্য মতিও হয়েছিল।
মূল দাবী প্রথমে
স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ন্যায়পরায়ণতায় যদি কেবল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠানের একচেষ্টয়া অধিকার হয়ে থাকে, আর লীগ যদি কেবলমাত্র গোঁড়ামি, কুসংস্কার, অজ্ঞতা এবং অন্যায়মূলক আন্দোলনে পূর্ণ হয়, তবে পাকিস্তান আন্দোলনকে দশ কোটি মুসলিম স্বাধীনতা আন্দোলন বলে গ্রহণ করেছে, এ জীবন্ত সত্যকে অস্বীকার করতে হয়। পরস্পরের যুক্তবাদকে বুঝতে হবে, কেননা স্বাধীনতা লাভের যে প্রেরণা নিয়ে কংগ্রেস গর্ব করে—লীগের পাকিস্তানের পেছনে স্বাধীনতা লাভের সেই প্রেরণাই বর্তমান। পাকিস্তান রাষ্ট্র কিভাবে গঠিত ও পরিচালিত হবে এ সম্বন্ধে নেহেরুর ন্যায় জনকয়েক কায়েমী স্বার্থবাদী বুর্জোয়া প্রশ্ন তুলেছেন। | পাকিস্তান-দাবী সম্বন্ধে লীগের তরফ হােতে যতটুকু বলা হয়েছে, অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা সম্পর্কে কংগ্রেসের তরফ থেকে তার এক চতুর্থাংশও বলা হয়নি। পাকিস্তানবী সম্পর্কে বা পাকিস্তানের সীমানা, সম্বন্ধে কোন কিছুই অস্পষ্ট রাখা হয়নি। স্বাধীন ভারতের সামানা, সংখ্যালঘিষ্ঠদের অধিকার, দেশীয় ষ্টেগুলাের সার্বভৌমত্ব, ভারতের
২৮
ভবিষ্যৎ অর্থনীতি ও শাসনতন্ত্র সম্পর্কে কংগ্রেস আমাদের কোন স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেনি। পাকিস্তানের দাবী অবােধগম্য, অস্পষ্ট বা ভারতের স্বাধীনতার পরিপন্থী হিন্দু নেতৃবৃন্দের এসব প্রচারণার অর্থই হচ্ছে এ দাবীকে কোণঠাসা করা। শাসনতন্ত্র সম্বন্ধে আলােচনা বা আপােষরফা করবার সময় মূলনীতিকে ভিত্তি করেই আলাপ-আলােচনা চলতে থাকে এবং সেটারই মীমাংসা হয় প্রথমে। সূক্ষ দফাগুলােতে এসে বিশেষ বেগ পেতে হয় না, কিন্তু মূলনীতিকে মেনে না নেওয়া হলে মিলন অসম্ভব হয়ে পঁাড়ায়। গঠনতন্ত্র সম্পর্কে সামান্য জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিও জানেন যে কোন একটা জাতিকে বিশিষ্ট উপমহাদেশের কোন অংশ ছেড়ে দেবার বেলায় ভাগের দাবীটাই প্রথমেই মেনে নিতে হয়। এর পর মেনে নেওয়া দাবীকে কার্যকরী করবার কথা উঠে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটা পরিবারের ভিতর গৃহবিবাদ দেখা দিলে একটা চুক্তির ফলে মিলন হয়। নতুবা আদালত কর্তৃক সমস্ত সম্পত্তি বিভাগের চুড়ান্ত আদেশ দেওয়া হয়। এরপর ন্যায়ের ভিত্তিতে ভাগ বাটোয়ারার কাজ সমাধা করা হয়। অতীতে বিচ্ছেদ ও বিভাগের বেলায় ঠিক এই পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। আয়ারল্যাণ্ডের শাসনসংক্রান্ত গােলযােগের সময় বিচ্ছেদ ও বিভাগের ফর্মুলাকেই প্রথমে মেনে নেওয়া হয়েছিল। এই আপােষনাম মাত্র দশ লাইনে লেখা হয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী ব্রহ্মদেশ ও সিংহল সম্বন্ধেও ঠিক একই কথা খাটে। ভারতীয় মুসলিমদের বেলায়ও কেবল মেনে নেওয়া হোক “মুসলিম ভারত একটা জাতি।”
পাকিস্তান ও স্বাধীনতা | পাকিস্তান অর্জনের পূর্বে ভারতীয় স্বাধীনতার কথা একটা ধাধা মাত্র। একজন পাকিস্তানবাদী পাকিস্তানের কথা চিন্তা করবার সঙ্গে সঙ্গেই সর্ব ভারতের স্বাধীনতার বিষয়ে চিন্তা করেন। অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা অগ্রগণ্য এবং পাকিস্তান একটা দ্বিতীয় স্তরের বিচার্য বিষয়, একথা কেবল পাগলেই বলতে পারে। ভারতবাসী যদি একটা জাতিও
২৯
হােত, তবুও এই যুক্তিবাদ সংখ্যালঘিষ্ঠদের পরিতৃপ্ত করতে পারতনা ; কেননা স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মাহুতি দেওয়ার পর তাদের কিরূপ স্বাধীনতা বা মুখসুবিধা দেওয়া হবে তা বিশদভাবে জানবার আগে তারা সােজাসুজ স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ত না। পণ্ডিত নেহেরু অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা বা Elimination of foreign authority বলতে বা বুঝাতে চান আমরা স্বাধীনতার অর্থ তা করিনা।
স্বাধীনতা বলতে আমরা বুঝি এমন পরিবেষ্টনির দাসত্ব হেতে মুক্ত হওয়া, যা আমাদের উন্নতি ও বিকাশকে পদদলিত করে রাখে। কাজেই নিজেদের প্রতিভা ও সামর্থ্য অনুযায়ী আত্মবিকাশের পথকে আমরা স্বাধীনতা বলি। স্বাধীনতা সম্বন্ধে একটা বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গী না থাকলে বৈদেশিক শক্তির বিদায় নেওক্সর সঙ্গে সঙ্গেই ভারত রাষ্ট্রবিপ্লব ও অরাজকতার সম্মুখীন হবে। লীগ যদি কংগ্রেসের সাথে কোনচুক্ত না করেই Quit India এর ফাঁদে পা দেয়, তবে বৃটশ হয়ত তল্পিতল্পা নিয়ে চিরবিদায় নিবে ; কিন্তু দেশে কোন নির্দিষ্ট রাজশক্তি বা আইনকানুন থাকবেনা। এই সুযােগ নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিটলারী রাজত্ব শুরু করবে এবং ঘনঘন পশ্চিম দেশীয় গণতন্ত্রের দোহাই দিবে। ইতিমধ্যে মুসলিমরাও পাকিস্তান ঘোষণা করতে পারেন এবং তপশীলী-হিন্দু ও শিখেরা যে নিশ্চেষ্ঠ হয়ে বসে থাকবেনা এটাও ধ্রুবসত্য। ১৯৪২ সনের “ভারত ত্যাগ কর” ধুয়ার সাথে সাথে গান্ধীজী এসত্যকে উপলব্ধি করেই ঘােষণা করেছিলেন । Thus assuming that the British leaves there is no government and no constitution, British. or other. therefore there is no central Government. Militarily the most powerful party may set up its rule and impose it on India if the people submit, Muslims may declare Pakistan and nobody may resist them. Hindus may do likewise. Sikhs may set up their rule in territories inbabited by them. There is no end to the possibilities.”
ধরুন বৃটিশ চলে গেল। তখন বৃটিশ বা অন্যকোন সরকার অথবা
৩০
কোন শাসণতন্ত্র বা কোন কেন্দ্রীয় সরকারের অস্তিত্বও রইল না। এমন অবস্থায় সামরিক দিক দিয়ে সর্বদিক শক্তিশালী দল হয়ত তাদের শাসন কায়েম করতে পারে এবং জনসাধারণ মেনে নিলে সারা ভারতব্যাপী তা প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। মুসলমানগণ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কথা ঘােষনা করতে পারে এবং কেউ হয়ত তা রােধ নাও করতে পারে। হিন্দুরা তেমনি করতে পারে এবং শিখ অধুষিত এলাকায় ও অণুরূপ ঘটতে পারে। এরূপ আশংকার কোন শেষ নেই।’
অবশ্য পরে তিনি ভদ্রলােকের মত আশা পােষণ করেছেন যে, সমস্ত সম্প্রদায়ের লােক হয়ত বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একটা গভর্ণমেন্ট গঠনে সহায়তা করবে। পাগলেই কেবল এ আশা পােষণ করতে পারে, কেননা জটিল রাজনীতিক্ষেত্রে একটা স্থির সিদ্ধান্তে পৌছবার আগে বিভিন্ন রকমের মারপেচের খেলা হয়। দুর্ভাগা ভারতের লােক এতমূখ নয় যে, গান্ধীজী মাথায় হাত বুলিয়ে নরম কথায় সরল আশা পােষণ করলেই বিভিন্ন জাতি নিজ নিজ দাবী পরিত্যাগ করবে। যেখানে কোটি কোটি লােকের মন আর অদৃষ্ট নিয়ে খেলা সেখানে এত সরল আশা পােষণের কোন অর্থ হয় না। ভারত ত্যাগ কর” দাবী সাফল্য মণ্ডিত হােলে দেশ একটা ভীষণ অরাজকতার সম্মুখীন হবে জেনেও মহাত্মা গান্ধী লীগের সাথে কোন রকমের বুঝাপড়া না করেই প্রকাশ্য বিপ্লব শুরু করলেন। এই দাবীর ভিতরের স্বাধীনতার আকাঙ্খাকে আমরা (সাদর সম্ভাষণ জানাই, কিন্তু লীগকে কোণঠাসা করে সমস্ত শক্তি হাতকরার ষড়যন্ত্রকে আমরা ঘৃণা করি। সুতরাং Elimination of Foreign power এর কথা চিন্তা করার সাথে সাথেই বিধিবদ্ধ আইন কানুন, সংখ্যালঘিষ্ঠ জাতিগুলাের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা বা রক্ষাকবজ ও লােকায়ত্তর গভর্ণমেন্টের কথা চিন্তা করতে হবে।
| গান্ধীজী এ. দিক দিয়ে কংগ্রেসের তথাকথিত স্বাধীনতাকে মুসলিম সমাজের নিকট ব্যাখ্যা করবার চেষ্টাই করেননি। আমরা বিশ্বাস করি হিন্দুভারতের স্বাধীনতা না আসলে মুসলিম ভারতের স্বাধীনতাও আসতে
৩১
পারে না। সমান সমান বীর ভিত্তিতে অস্থায়ী সরকার গঠনে কায়েদে আজম কতবারই না আকুল আহ্বান জানিয়েছেন ; হিন্দু ভারতের তরফ হােতে কি এর যথেষ্ট সাড়া পাওয়া গিয়েছে ? ১৯৪২ সনে গান্ধীজী বলেছেন যে, বড়লাট কায়েদে আজমকে গভর্ণমেন্ট গঠন করতে আহ্বান করলে তাতে তার আপত্তি থাকবেইনা বরং পূর্ণ সমর্থন থাকবে। এগুলাে তার চাটুকতা ছাড়া আর কি হােতে পারে ? গান্ধী-গেন্ডার মােলাকাতের সময় গান্ধীজী দাবী করেন, এই গভর্ণমেন্টকে আইনসভার কাছে দায়ী থাকতে হবে। এর অর্থ হােল যে কোন একমের অস্থায়ী গভর্ণমেন্ট জিন্নাহ, গঠন করুননা কেন হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিষদ সুযােগ বুঝে একদিনেই তার জীবনের দফারফা করতে পারবে। পক্ষান্তরে গান্ধীজীর এই বাক্যে প্রতারিত হয়ে কায়েদে আজম হয়ত ভুল করে পাকিস্তানের দাবী ছেড়ে দিতেও পারেন, এ দুরভিসন্ধি গান্ধীজীর মনে ছিল। বিশেষ করে কংগ্রেস প্রস্তাবিত অস্থায়ী বা স্থায়ী সরকার গঠনে লীগ-প্রতিনিধিরা হিন্দু প্রধান আইনসভার হাতে বন্দী হয়ে পড়তেন। মিঃ ডি, এন, ব্যানার্জি বলেন, রাজনীতিতে গান্ধীজীর ধর্মাধমি একেবারেই অচল ; হিংসা বিদ্বেষ ও পরস্পরের জোর বুঝাবুঝিই রাজনীতির বাহন। কাজেই ভারতীয় জটল রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান কেবল পাকিস্তানের ভিতর দিয়েই হােতে পারে। সেজন্যই কায়েদে আজম ঘােষণা করেছেন
“Let us, therefore, live as good neighbours ; let the Hindus guard the south and western India and let the Muslims guard the North West and Eastern frontier. We will then stand together and say to the world ; Hands of India ; India for Indians.” “সুতরাং আমাদের প্রতিবেশীর ন্যায় সৌহাদের সাথে বসবাস করতে হবে। হিমুজাতি দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত এবং মুসলিমজাতি উত্তর-পশ্চিম ও পূর্ব ভারুতের পাহারায় নিযুক্ত থাকবে। তখনই আমরা একসঙ্গে সােজা হয়ে দাড়িয়ে বলৰ ভারত থেকে দূর হও, ভারত ভারতবাসীর।
৩২
সম স্বাধীনতা
পাকিস্তান শুধু কোট মুসলমানের স্বাধীনতার দাবী নয় বরং জাতিধর্ম নির্বিশেষে চল্লিশ কোটি মানুষের স্বাধীনতার সংগ্রাম। কায়েহে আজম বলেছেন;—“Pakistan principle is the only solution of the constitutional problems of India which means not only freedom of Muslims but of Hindus and other elements in the country too••••••when we declare that we will fight for Pakistan, die for Pakistan, and make every sacrifice for Pakistan, it is not merely for those zones where Muslims are in a majority but for the whole subcontinent of India. How can I get Pakistan unless the British Goveroment here is eliminated, and therefore, the more I fight for Pakistan, the more I am fighting for the whole of India’s freedom.”
“পাকিস্তান দাবী ভারতের জটিল রাজনৈতিক সমস্যার একমাত্র সমাধান। পাকিস্তান কেবল মাত্র মুসলমানদের স্বাধীনতা নিয়ে আসবে না বরং হিন্দু ইত্যাদি সমস্ত দলেরই স্বাধীনতার সওগাত বহন করে আনবে। যখন আমরা ঘােষণা করি আমরা পাকিস্তান অর্জনের জন্য সংগ্রাম করব, পাকিস্তানের জন্য মৃত্যু বরণ করব এবং আমাদের সর্বস্ব বিসর্জন দেব, তখন শুধুমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলাের জন্যই আমরা ঐ কথা বলি না, পরন্তু সমগ্র ভারত উপমহাদেশের জন্যই বলে থাকি। বৃটিশ সাম্রাজ্যের বুনিয়া ধ্বংস করতে না পারলে আমরা কিরূপে পাকিস্তান লাভ করব? অতএব যতই আমি পাকিস্তান অর্জনের জন্য সংগ্রাম করি, ততই সমগ্র ভারতের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করি।”
এখন দিবালােকের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে গেছে, পাকিস্তান আনবে হিন্দু-মুসলিম উভয়েরই স্বাধীনতা। পাকিস্তানের কল্পনায় মুসলিমরা যে স্বাধীনতার কথা চিন্তা করে, অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতার সাথে মলেই তার পার্থক্য রয়ে গিয়েছে। অখও-ভারতের ভিত্তিতে কংগ্রেস যে যুক্তরাষ্ট্রের কথা ভাবে, তার পরিণামই হােল হিন্দুরাজ। পাকিস্তানের স্বাধীনতাই
৩৩
ভারতের স্বাধীনতা, কিন্তু শব্দ দুটোকে ঘুরিয়ে যদি বলা হয়, অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতাই পাকিস্তানের স্বাধীনতা তবে ভীষণ ভুল করা হবে। | বৃশ গভর্ণমেন্ট পুনঃপুনঃ ঘােষণা করেছেন-“The whole field of constitutional reform and development is open and India can have her freedom under a constitution framed by agreement between the main elements of her population. His Majesty’s Government resolve neither to traosser their present responsibitities for the peace and welfa-e of India to any system of Government whose authority is directly denied by large and powerful elements in India’s national life nor to coerce such elements into submission to such a Government.”
‘‘শাসণতান্ত্রিক সংস্কার ও উন্নয়নের পুর্ণ ক্ষেত্র এখন মুক্ত। ভারতীয় জনসংখার প্রধান অংশগুলাের মধ্যে ঐক্যমতের ভিত্তিতে রচিত শাসণতন্ত্রের অধীনে ভারত তার স্বাধীনতা পেতে পারে। মহামান্য সরকারের সিদ্ধান্ত এই যে, ভারতের জাতীয় জীবনে বৃহৎ ও শক্তিশালী অংশগুলো কতৃক ভারতের শান্তি ও মঙ্গলের জন্য এমন কোন পদ্ধতির সরকারের সরসরি বিরােধীতা করলে মহামান্য বৃটিশ সরকার বর্তমান ক্ষমতা হস্তান্তরে ইচ্ছক নহেন অথবা এসব দলকে এরূপ সরকারকে মেনে নিতেও বাধ্য করা হবেনা।”
এই ঘােষণার প্রতি ভারতবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে কায়েদে আজম বলেছেন :-টশ স্বদেশে ও বিদেশে যে যুক্তি দেখিয়েছেন আমরা তা খণ্ডন করব না কেন? তাদের বলন আমরা ঐক্যবন্ধ হয়েছি, আমাদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর কর। একবাক্যে একই কতৃত্বের অধীনে এবং এদেশের সম্মিলিত নেতৃত্বে সংগ্রাম করবার সময় কেবল তখনই আসবে। আপনারা এরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করছেন না কেন ?”
লীগ কংগ্রেসের সম্মিলত নেতৃত্বই কেবল ভারতের স্বাধীনতা আনতে পারবে-অন্য কিছুই নয়। লীগ-কংগ্রেসের স্বাধীনতাকামী শক্তি এবং
৩৪
বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণের আন্তরিক অভিমতই আমাদের জয়যাত্রার পথে এগিয়ে দেবে। অহিংসার পথ অবলম্বন করে বৃটিশ বেয়ানটের ধাক্কা হােতে বাঁচা যায় বটে, কিন্তু হিংসা ছাড়া স্বাধীনতা কি কখনও এসেছে? অহিংসাররূপে হিংসারূপী যানব অবশ্য কংগ্রেসের রাজনীতিতে
প্রবল।
দায়ী কে?
সততা বা স্বার্থত্যাগের অভাব কংগ্রেসের ছিল না, উপযুক্ত নেতৃত্বও যথেষ্ট ছিল, কংগ্রেসকমিগণ অম্লানবদনে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝলেছেন অথচ ভারতের স্বাধীনতা এলনা কেন ? কংগ্রেসের ভ্রান্তপথ অবলম্বনই এর জন্য দায়ী। ভারতের বিভিন্ন সুবাগুলো চিরদিনই স্বাধীন ও সার্বভৌম থাকবার জন্য কেন্দ্রীয় গভর্ণমেন্টের সাথে লড়াই করে এসেছে। বৃটিশ গভর্ণমেন্ট ভারত সাম্রাজ্য স্থাপনের প্রারম্ভ হােতে গণতন্ত্র, সাম্য, স্বাধীনতা এই চাকচিক্যময় শব্দগুলো আওড়িয়ে এসেছে এবং কংগ্রেস এই বেড়াজালে পড়ে গিয়ে ভারতের দাসত্বের দিন ও ভারতবাসীর যন্ত্রণা বাড়িয়ে দিয়েছে। বৃটিশ ভালভাবেই জানে, মুসলিম জাতি যুক্তরাষ্ট্রের শামিল হােতে রাজী হয়ে কোনদিনই জাতীয় চির মরণ ডেকে আনবে না, কাজেই তারা হিমুদের শিক্ষা দেন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও সাম্যের কথা, আর মুসলিমদের বলেন-তােমরা রাজী না হলে কোন রকমের শাসনতন্ত্রই তোমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না।
একদিকে বৃটিশ নিজশক্তি অটুট রাখতে চাচ্ছে অন্যদিকে হিন্দুরা ভাবছেন অখণ্ড ভারতীয় শাসনতন্ত্রে হিয়াজ আপনা আপনি কায়েম হয়ে যাবে। ফল হচ্ছে মুসলিম ও তপশীলভুক্ত জাতি এই অখণ্ড ভারতীয় শাসনতন্ত্রের কাছে মাথা নােয়তে রাজী না হওয়ায় ভারতের অচল অবস্থা বেড়েই চলেছে। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র কুকুট ঘুরে একটা আখড়া হয়ে ওড়াবে, তখন জয়চন্দ্রের জাতভাইয়েরা জম্মভূমির স্বাধীনতাকে অন্যের হাতে তুলে দেবার জন্য হয়ত পূর্বদিকে ছুটবে।
৩৫
এরূপ স্বাধীনতা পাবার আশা ত কেউ করেন না। সুতরাং সংখ্যা লঘিষ্ঠদের উপর আধিপত্য করবার আশা না রেখে প্রকৃত স্বাধীনতার আকাথা যদি থাকে তবে পাকিস্তান হাবীকে মেনে নিতেই হবে। স্বাধীন পাকিস্তান ও স্বাধীন হিন্দুস্থানে বাইরের লােকের পােদ্দারী করবার কোন পথই খোলা থাকবেনা, অথবা একের উপর অন্যের হুকুমাত চালু করবার আকাঙ্খাও থাকবেনা। কাজেই সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব কলহ চিরদিনের মত মিটে যাবে। পাকিস্তান হাবী দুমুখী, এটা দুটো জাতির প্রতিই ন্যায় বিচার করে এবং বৃটশের হাত হােতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী করে।
হিন্দুদের তরফ থেকে কি এর উপযুক্ত সাড়া পাওয়া গিয়েছে। কেউ কেউ হয়ত সাড়া দিয়েছেন, কিন্তু তারা পাকিস্তান প্রস্তাবকে দেখছেন মুসলমানদের কিছু সুবিধা বা ঘুষ দিবার পক্ষ থেকে, এর পেছনে স্বাধীনতার আকাঙ্খা তারা দেখতে পাননি। পাকিস্তান, প্রস্তাব পাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রোল উঠান হােল ‘ভারত মাতা দ্বিধাবিভক্ত হােল, গােমাতা ধ্বংস হােল, ভারতমাতা কুচক্রীদের হাতে পড়ল, মধ্য এশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী মুসলিম ভারত আক্রমণ করতে এল ইত্যাদি।
কংগ্রেসের পুরােভাগে দুএকজন মুসলিমকে শিখণ্ডী রূপে দাড় করিয়ে প্রচার চলল, পাকিস্তানের দাবী অনৈসলামিক, অর্থনৈতিক কারণে অসম্ভব এবং সুখসুবিধা আদায়ের জন্য একটা দরকষাকষি মাত্র। যথেচ্ছাচায় আন্দোলনের পর মুসলিম জনমতকে ঠেকিয়ে রাখা যখন সম্ভবপর হােল না তখন পূরান যুক্তিবাদ ও গোনগুলো ছেড়ে দিয়ে তারা পাকিস্তানের সীমানা সম্বন্ধে বিভিন্ন যৌক্তিকতার অবতারণা করে যতটা সম্ভব বড় অংশ পাকিস্তান হােতে বের করে নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রকে পঙ্গ, ও দুর্বল করে দেবার ষড়যন্ত্রে মাতলেন।
| গান্ধী – জিন্নাহ, মিলনের পর দেশের জনমত অনেকটা মিলনের দিকেই চলেছিল, কিন্তু কংগ্রেন এবং গান্ধীজীর পরবর্তী কার্যাবলীর দিকে লক্ষ্য করে একটা নিরাশার ছায়া আমাদের মনের উপর এসে পড়েছে।
কংগ্রেস এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তখন মিঃ আবুল হাশেমের মত জনপন্থিগণকেও সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। এদের মজাগত
৩৬
স্বভাব হচ্ছে লীগকে জনসাধারণের চকে হেয় প্রতিপন্ন করা। কিন্তু মিঃ হাশেমের মত নবীন পন্থীদের সাহায্য করলে লীগের প্রভাব শতগুণ বেড়ে যাবে, এটাই এদের ভয়। সীমান্তে কংগ্রেস সরকার গঠন ব্যাপারে গান্ধীজী মুচকি মুচকি হাসলেন, কিন্তু হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে তিনি কি পন্থা অবলম্বন করেছেন? তিনি বলবেন চোরাই কারবার বন্ধের জন্য ব্যবস্থা, কিন্তু জনগণের দুর্ধিনের সময় মন্ত্রীত্ব গঠনের পূর্বেই ত স্যার নামে কংগ্রেসের নিকট বন্ধুত্বের হস্ত প্রসারিত করেছিলেন। কংগ্রেসের তরফ হােতে কি এই আকুল আহ্বানে সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। জনগণের দুর্দিনে দেশীয় জনপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করতে রাজী ন! হয়, তবে যে কোন মন্ত্রীমণ্ডলী ২৫/৩০টা বুজেরা সাবার হাতের পুতুল হয়ে দাঁড়াবেন।
পৃথিবীর জনমতকে ভুল বুঝাবার জন্য দু-একজন মুসলিমকে শিখণ্ডী সাজিয়ে কংগ্রেসের পুরােভাগে রাখার যুক্তিবাদকে আমরা কোনদিনই সমর্থন করি না। কংগ্রেস যদি খোলাখুলি ভাবে ঘােষণা করত যে এ শিখণ্ডীগুলো হিন্দু ভারতের মুকুটবিহীন রাজা এবং ভারতীয় হিন্দ, জাতি পুতুলের মত একের অঙ্গ লি হেলনে নাচতে থাকে তবে আমাদের বিশেষ কিছু বলবার থাকত না।
আমেরিকায় অবস্থান কালে বিজয়লক্ষী পণ্ডিত বদ্রনাৰে বােষণ। করেছিলেন, হিল, মুসলিম ভারতের নেতা গান্ধীজী এবং মওলানা আজাদ ভারতবর্ষের মত সংগ্রাম চালাচ্ছেন। মিথ্যার বেসাতি করা কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের মজ্বাগত স্বভাব এবং এদের আদর্শেরও কোন বালাই নেই। মওলানা সাহেব একজন বড়ম্বরের আলেম এ হিসাবে আমরা তাকে যথেষ্ট শদ্ধা করি, কিন্তু যে অবস্থায় তিনি কংগ্রেসের সভাপতি পদ বরণ করেছেন, তা ভেবে দেখলে আমাদের দুঃখ হয়।
মওলানা সাহেব যখন উদীয়মান অরুণ যুবক তখন একজন মহান নেতাকে কংগ্রেসের তরফ হােতে যে সমস্ত পদ বিয়ে সম্মানিত করবার অধিকার সেযুগে কংগ্রেসের ছিল তন্মধ্যে কলিকাতা কর্পোরেশনের
৩৭
মেয়র এবং বলীয় কংগ্রেস কমিটির সভাপতি পদ ছিল প্রধান। তাকে এদুটো পথই দিতে চাওয়া হয়েছিল কিন্তু তখন আত্মমর্যাদা সম্পর্কে তিনি পূর্ণভাবে সজাগ ছিলেন বলেই কংগ্রেসের এবান গ্রহণ করতে পারেন নি। তিনি উপলব্ধি করতেন, হিল, প্রতিষ্ঠান কংগ্রেসের সাথে তার মতানৈক্য ঘটলেই তারা যে কোন মুহুত্তে এবানকে ছিনিয়ে নিবে। কিয়ে যুগে তিনি সভাপতিপথ গ্রহণ করলেন সেযুগে তাঁকে কংগ্রেসের পুরােভাগে দাড় করান ছাড়া কংগ্রেসের অন্য কোন উপায় নেই। যবনিকার অন্তরালে হিন্দুরাজ প্রতিষ্ঠার যন্ত্রকে এ উপায়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে। কাজেই বর্তমান অবস্থায় সভাপতির পদ হোতে তাকে ঠেলে ফেলবার সাধ্য কংগ্রেসের নেই, পক্ষান্তরে পদের মােহই মওলানা সাহেবকে পেয়ে বসেছে। মুসলিম জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রেখে এই লােকটি গত ছয় বৎসর যাবৎ কংগ্রেস গদীতে বসে গান্ধীজীর অন্তর্বাণীর দ্বারা পরিচালিত হয়েছেন এবং বর্ণাশ্রমণহী গান্ধীজীর বন্দেমাতরম সন সেবাগ্রাম হােতে অনুপ্রেরণা পেয়ে এসেছেন। দুবৎসরের জন্য ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হবার সুযােগ খুব কম নেতাই পেয়েছেন, কিন্তু গত ছয় বৎসর ধরে তিনি এই পথ দখল করে বসে আছেন। এর পূর্বেও এক বৎসরের জন্য তিনি কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন, কিন্তু সে সময়ে দ্বিতীয় বৎসরের জন্য তিনি নির্বাচিত হন নাই কেন? আর বত্ত মানেই বা তাকে এপথে বহাল রাখা হচ্ছে কেন?
পাকিস্তানের দাবী স্পষ্ট
পাকিস্তানের মােদ্দা কথ! হোল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলােতে মুসলমানদের জাতীয় গভর্নমেন্ট গঠনের অধিকার। এ এলাকার বৈদেশিক সন্ধ, দেশরক্ষা, আভ্যন্তরীণ যানবাহন, শুল্ক, বাণিজ্য প্রভৃতির সুষ্ঠু ও সন্তে ষনক শাসন পরিচালনার ব্যবস্থা করবে এই পাকিস্তান সরকার। এ সমস্ত বিষয়গুলো যে কোন রাষ্ট্রের বুকের রক্তের শামিল, কাজেই পাকিস্তান রাষ্ট্র এগুলােকে কোন রকমের যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে ছেড়ে
৩৮
দিতে পারে না। কায়েদে আজম বলেছেন -We do not want in any circumstance; a constituticn of an All India characte: with one Government at the centre. We will never agree to that. If we once agree to that, let me tell you, the Muslims will be absolutely wiped out of existence.” | “আমরা কোন অবস্থাতেই সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার অধীনে থাকতে চাইনা। একটা সর্বভারতীয় গভর্ণমেন্ট আমরা কোনদিনই মেনে নিব না। আপনাদের সাবধান করে দিচ্ছি, যদি আমরা একবার এটা মেনেনি তবে ভারতের বুক হােতে মুসলিম চিরদিনের জন্য মুছে যাবে।” | পাকিস্তানের সম্মুখ যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে, কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ তাই মূলধাবীকে মেনে নিয়ে এর উপর প্রচ্ছন্ন আক্রমণ চালাচ্ছেন। আক্রমণের অস্ত্রস্বরূপ যে সমস্ত কল্পনা বা অলীকস্বপ্নের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে সেগুলো এরূপঃ-(ক) ভৌগােলিক অবস্থানের দিক দিয়ে ভারত অখও এবং ভূগােলকে উল্টান সম্ভব। (৭) ভারতের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে রে কোনও রকমের বক্তরাষ্টের প্রয়ােজন। (গ) কেন্দ্রীয় গভর্ণমেন্টকে সামান্য শক্তি দিয়ে প্রদেশগুলােকে অধিক এবং অবশিষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হােক (ঘ) প্রদেশগুলােকে ইউনিয়ন হােতে যে কোন মূহুত্তে স্বেচ্ছায় বেরিয়ে যাবার শক্তি দেওয়া হােক ইত্যাদি। শেষ দফা সম্বন্ধে বলা হয় এরূপ ইউনিয়নই পাকিস্তানের দাবী পূরণ করবে। এযুক্তি সর্বৈবভাবে মিথ্যা এবং কুহেলিকার অন্তরালে পাকিস্তান বীকে নস্যাত করার ষড়। মাত্র।
অখণ্ড ভাৱতর সুধপ।
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক এবং শাসনতান্ত্রিক অন্যান্য ব্যাপারে ভারত এক ও অবিভা, বিদেশীর চোখে বলো দিবার জন্য কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ এই অলীক কল্পনাক রং ফলিয়ে সময়ে অসময়ে প্রচারনা
৩৯
চালাচ্ছেন। এদেশে সর্বভারতীয় কেন্দ্রীয় গভর্ণমেন্ট কোনকালে ছিল না ; কারণ ভারতে কেবল এক জাতির অস্তিত্ব কোনদিনই ছিল না। সাম্রাজ্যবাদী মােগল এবং হি যুগে অবশ্য ভারতের অংশের উপর দুএকবার কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন দেখা যায়। এই বিশাল উপমহাদেশের বিভিন্ন অংশগুলো যতদিন কেন্দ্রীয় সাম্রাজ্যবাদের বিপুল শক্তির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাহস না করত, কেবল ততদিন মাত্ৰ অধীনতাপাশ অটুট রাখত। কেন্দ্রীয় গভর্ণমেন্টের আওতার বাইরে থাকবার একটা প্রবল আকাঙ্খা এ সুবাগুলাের চিরদিনই ছিল। কাজেই কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনপাশ যেমনিই দুর্বল হয়ে পড়ত বিভিন্ন সুবাগুলাে অমনি স্বাধীনতার নামে বিদ্রোহ ঘােষণা করত। একটা কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের দ্বাৰী ভারতীয় রাজনীতিতে নৃতন। ভারতের বর্তমান অসম্ভব অখণ্ডত্ব বৃটিশ বেয়নেটের জোরে সৃষ্টি করেছে-স্বাভাবিক নয়। সেজনাই কায়েদে আজম বলেছেন
• “British statesmen put out the plea of united India because they knew that was the only way by means of which they could prolong and continue their overlordship over the entire subcontinent of India. They encouraged the theory of united India knowing full well that the two would never agree. They are putting the two together so that they can play the role of arbitrator and meet out the kind of justice which the monkey dispensed to the two cats … … It is our enemies who have put us on this wrong road. It is the machinations of British statesmen who have put us on this wrong road of united India and one Central Governmet.”
| “বৃটিশ রাজনীতিবিদরা ভারতের অখণ্ডত্বের কথা জোর গলায় প্রচার করেন। কেননা কেবল এই পথ অবলম্বন করেই তারা এই বিশাল উপমহাদেশের উপর প্রভু অটুট রাখতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন।
৪০
এদুটো জাতি এ ভিত্তিতে কোনদিনই রাজী হবে না জেনেও তারা অখণ্ড ভারতের গুণকীর্তন করে চলেছেন। তারা এদের দুটোকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে বাইরের বিড়াল দুটোকে ন্যায়ের ভিত্তিতে পিষ্টক বিভাগ করে দেবার মত সালিশীমঞ্চের অভিনেতা সাজবার সুমােগ খুলছেন। আমাদের শত্রুরাই আমাদের বিপথে চালিয়েছে। বৃটিশ রাজনীতিবিদের এই জালিয়াতী বুদ্ধিই আমাদের বিভ্রান্ত করে যুক্ত ভারত এবং কেন্দ্রীয় সরকারৰূপ বিপর্যয়ের বিকে টেনে এনেছে।”
বাস্তব উপলব্ধি
পরস্পরের মতের অমিল চিরসত্য বলেই কি আমরা বন্ধুত্বের পথ খুজে বাহির করব না? স্বাধীনতাকামী প্রত্যেক ভারতবাসীর পূর্ণ আত্মবিশ্বাস এবং বিশুদ্ধ মন নিয়ে উল্লিখিত দ্বন্দ্ব গুলাের সম্মুখীন হওয়া উচিত। অনেকে ভাবেন জিন্নাহ, রাতারাতি স্বপ্ন দেখে পাকিস্তানের দাবী উত্থাপন করছেন। অনেকে বলেন বিশেষ কতগুলো সুবিধা অায় করে নিবার জন্য কায়েদে আজম কড়া হকি হেকেই চলেছেন। ভারতীয় মুসলিম জাতির কোন বীকে বটল মেনে নেবার আগে কংগ্রেস পত্ত। দিতেই চায় না। সিন্ধুকে পৃথক প্রদেশের পর্যায়ে উন্নীত করণ, পৃথক নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন ইত্যাদি সমস্ত ব্যাপারে মুসলিম জাতির ন্যায় ভাবীকে বৃটিশ সরকার মেনে নেওয়ার পরই কংগ্রেস মেনে নিয়েছে ; পূর্বের ন্যায় এতেও কংগ্রেসের বিশেষ কোন একটা বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গী বা শিক্ষা হয়েছে বলে আমরা মনে করি না।
| কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের অনেকে ভাবেন কায়েদে আলমের মধ্যে স্থায়ীত্ব বলে কোন কিছুই নেই ; আজ তিনি জাতীয়তাবাধী, কাল সাম্প্রদায়িক, এর পরদিন যুক্তরাষ্ট্রের পূজারী এবং শেষদিন পাকিস্তানের দাবীদার। কংগ্রেস-সীগ ইতিহাস মনােযােগ দিয়ে পড়ে দেখবার জন্য আমরা এই বন্ধুরে অনুরােধ করি। কংগ্রেসের পক্ষে পূর্ণ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখাও একদিন অসম্ভব ছিল। কাকুতি মিনতি হােতে আরম্ভ করে ১৯০৬ সনে
www.pathagar.com
৪১
স্বায়ত্তশাসন এবং ১৯৩০ সনে পূর্ণ স্বরাজকে কংগ্রেস চরম লক্ষ্য বলে গ্রহণ করে। তাই বলে কি বলতে হবে যে কংগ্রেস নেতৃম্বলের বৃদ্ধির স্থায়ীত্ব বলতে কিছুই নেই ? লীগও ধাপে ধাপে এগিয়ে পাকিস্তান পর্যন্ত এসেছে এবং পাকিস্তানই আজ লীগের চরম আদর্শ। সুতরাং এই দাবীর সাথে অসহযােগিতা বা বিরুদ্ধাচরণ করলে ভারতের স্বাধীনতার পরিপন্থী হওয়ার দোষে দোষী সাব্যস্ত হােতে হবে। সংখ্যালঘিষ্ঠ জাতি সংখ্যাগরিষ্ঠের অত্যাচার বা অবিচারের ভয় করলে সংখ্যাগরিষ্ঠদের অতীতের অনাচারই কি এজন্য মায়ী নয়। কংগ্রেস নেতৃত্বের ১৯৩৭ ও ১৯৪২ সনের ভুলই কি ভারতের সমস্ত মুসলিমকে একই নেতা এবং একই পতাকার তলে। শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে পাকিস্তানের দাবী করতে শিখায়নি?. এৰাস্তবকে উপলব্ধি করবার দিন এখন এসেছে ।
দুর। যুক্তরাষ্ট্র
বর্তমানে একটা আন্দোলন চালান হচ্ছে যে প্রদেশগুলিকে অতিরিক্ত : ও অবশিষ্ট শক্তি দিয়ে বা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দিয়ে অথবা স্বেচ্ছায় যে কোন মূহর্তে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যাবার শক্তি দিয়ে একটা দুব’ল কেন্দ্রীয় সরকার গঠনই পাকিস্তানের দাবী পূরণ করবে। প্রথমতঃ দুর্বল যুক্তরাষ্ট্র বলে কোন জিনিষের অস্তিত্ব রাজনীতিশাস্ত্রে নেই। অতীতের কনফেডারেশনগুলােও কালের গতিতে যুক্তরাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ যুক্তরাষ্ট্র হয় খুব শক্তিশালী হবে নচেৎ হবেই না। পৃথিবীর যুক্তরাষ্ট্র, ফেডারেশন, কনফেডারেশন ও ইউনিয়নগুলাের ইতিহাস দেখলে দেখা স্বাবে, এগুলো তিলে তিলে ইউনিটগুলাের জীবন মরণের উপাদানগুলােকে হাতিয়ে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বা কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের সাথে সাথেই, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, অবস্থার চাপে পড়ে কেন্দ্রীয় সরকার ইউনিটগুলাের সমস্ত, শক্তিকে কেড়ে নিতে বাধ্য হয়। পরে স্বরাখিতের ন্যায় দেখা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিপুল বহবলকে অস্বীকার করবার শক্তি ইউনিট সমূহের নেই।
৪২
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার দেশরক্ষা, বৈদেশিক সম্ব, রাজ, বাত, শুক এবং আবগারী ইত্যাদি বিভাগের পরিচালনা করবে। গণতন্ত্রের যুগে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই সরকার পরিচালনা করবেন। কাজেই গভর্ণমেন্টের প্রতােক বিভাগীয় দপ্তর হােতে তাদের আদর্শ, ভাবধারা এবং আকাঙ্খাই প্রচারিত হবে। হিন্দুই হবেন ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, পরিষদে তাকাই খাবেন ৭৫জন, বাকি থাকে আইন-কানুন আর গঠনতন্ত্রের কথা। কিন্তু যেখানে হিন্দু পরিষদ, হিন্দু প্রেসিডেন্ট সেখানে বিচার বিভাগের রূপটা আমরা ধারনা করে নিলেই পারি। হিন্দু-মুসলিম সংখ্যার অনুপাতে মুসলিম বিচারকের সংখ্যা ৩১ করা হবে না তাই বা কে জানে।
অতিরিক্ত ক্ষমতা | যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিটগুলোকে অতিরিক্ত বা অবশিষ্ট ক্ষমতা সমূহ দেবার প্রস্তাবনাও শুনা যাচ্ছে। এ ক্ষমতাগুলাে কোন, গভর্ণমেন্ট ভােগ করবেন এটা খুব বড় কথা নয়। রাষ্ট্রের প্রকৃত সার্বভৌমত্ব রয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। চুক্তি সম্পাদনের দ্বারা এ অধিকারগুলাে প্রাদেশিক সরকারকে দেওয়া হােলেও, এ ক্ষমতা কার্যে পরিণত করার সময় কেন্দ্রীয় সরকার বিপরীত কোনও পন্থা অবলম্বন করে প্রাদেশিক সরকারের ক্ষমতাকে নাকচ করে দিতে পারেন। কায়েদে আজম বলেছেনঃ. The centre can hold these units as connecting links more or less like a country council, or glorified municipali ties or feudatory states under the central Government.” আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জার্মানীর মত যুক্তরাষ্ট্রসমূহে ঠিক এই ব্যাপারই ঘটেছে। বিসমার্ক ও হিটলার শাসিত ফেডারেশনের ইতিহাস কেইবা না জানেন। স্বাধীন জার্মানীতে ইহুদীদের উপর অমানুষিক অত্যাচার করা হয়েছে। দাস প্রথা রহিত নিয়ে তুমুল আন্দোলন ও অস্তবিপ্লবের পর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিটগুলাের স্বেচ্ছায় ফেডারেশন হেতে বেরিয়ে যেয়ে পৃথক রাষ্ট, পনের শক্তিকে নাকচ করে
৪৩
দেওয়া হয়েছে। ভারতে জমিদারী প্রথা ও একচেটিয়া বাবসা বাণিজ্য মুহিত নিয়ে কি ঠিক একই পরিস্থিতির উদ্ভব হবে না? স্বেচ্ছায় যে কোন মুহর্তে যুক্তরাষ্ট্র হােতে বেরিয়ে যেতে পারবে এই শর্তেই মুসলিম জাতি যদি কেন্দ্রীয় যুক্তরাষ্ট্রে যােগ দেয় এবং পরে অত্যাচারিত হয়ে বেরিয়ে আসতে চায় তবে হিন্দু ইউনিটগুলাে কি তাদের ছেড়ে দিতে রাজী হবে? কংগ্রেসের মতে ভারতের ২০টা ইউনিটের মধ্যে ৫টা মুসলমান প্রধান। এই পাচটা ইউনিট অনেকদিন যুক্তরাষ্ট্রের শামিল থাকবার পর বেরিয়ে আসতে চাইলে হিন্দু প্রেসিডেন্ট পরিচালিত যুক্তরাষ্টের দেশ-রক্ষাবাহিনী ও বাকী ১৫টা ইউনিটের লাঠিয়াল পলি কি তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়বেনা? এই দোদণ্ড প্রতাপকে বাধা দেবার কোন অস্ত্র এই পাঁচটা ইউনিটের থাকবে? আভ্যন্তরীণ শান্তি রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট ইউনিটগুলাের স্থানীয় পুলিশের হাতে বংশদও তুলে দেবে। এই বংশদণ্ডগুলােই তখন মুসলিম ইউনিট গুলাের একমাত্র সম্বল হয়ে দাড়াবে।
এসমস্ত কারণেই আমরা যে কোন রকমের কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের বিরােধী। বিশেষতঃ পাকিস্তান অঞ্চল ‘কৃষি প্রধান, কাজেই ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প ও আর্থিক দিক দিয়ে হিন্দু অঞ্চল হােতে অনুন্নত। মুসলিম জাতি নওয়াব,স্যার ও নাইটদের পাশ কাটিয়ে উঠতে শীঘ্রই পারবে, কিন্তু হিন্দ, ভারত বিড়ল, গান্ধী, নেহেরু ইত্যাদি শিল্পপতি ও বুর্জোয়াদের পাশ মুক্ত হতে পাবে না। সুতরাং হিল সংখ্যাগরিষ্ঠ যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন প্লানিং মুসলিম অঞ্চলের ধনমাল লুটে খাবার জন্য হিন্দশিল্পপতি ও বুজে’মাদের সাহায্য করবেই।
ন্যাশন্যালিটিজ এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ
একটা নূতন প্রস্তাবকে বর্তমানে চাকচিক্যের সাথে প্রচার করা। হচ্ছে। সেটা হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন ন্যাশনালিটিজ গুলাের যুক্তরাষ্ট হােতে বাইরে থাকবার অধিকার। এই অলীক প্রস্তাবের সাথে লীগের পাকিস্তান দাবীর কোন সাবশ্য নেই, কংগ্রেস ন্যাশনালিটিজ; ইত্যাদি
৪৪
আছে বটে, কিন্তু এদের পূর্ণ স্বাধীনতার কথা কোন দিন ধারণা পারেনি। ক্রিপ মিশ্রনের সাথে সাথেই ভারতে এ প্রস্তাবে আমদানী করা হয়েছে।
ভারতের ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্র সম্পর্কে তিনি যে খসড়া প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন তাতে কংগ্রেসের প্রধান দাবী দুটোকেই মেনে নেওয়া হয়েছিল। ক) ভারতবাসী ইচ্ছা করলে বৃটিশ সাম্রাজ্যের আওতার বাইরে স্বাধীন ভারত গঠন করতে পারবে। (খ) ভাবী শাসনতন্ত্র রচনাকারী পরিষদে হিন্দুজাতি সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে। ভারতে পরােক্ষণ ভাবে হিন্দুরাজ্য প্রতিষ্ঠাই ছিল ক্রিপস, প্রস্তাবের উদ্দেশ্য। যুক্তরাষ্ট্র গঠনের পর একটা বা কতকগুলো প্রদেশকে যুক্তরাষ্ট হোতে বেরিয়ে গিয়ে পৃথক সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের ক্ষমতা অবশ্য প্রস্তাবের শেষাংশে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেরিয়ে যাবার যে জটিল-পন্থা বালান হয়েছিল তাকে শকুনি ও যুধিষ্ঠিরের পাশাখেলা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। এই ভাগ্য পরীক্ষায় শকুনি মামারাই যে জয়ী হােতেন তা দৃঢ় নিশ্চিত।
বৃটিশ ভারতের প্রদেশগুলাের বর্তমান সীমারেখা শাসনের সুবিধার জন্য করা হয়েছে – প্রাকৃতিক নয়। সুতরাং ন্যাশনালিটজের আত্মনিয়ন্ত্রণের কথা উঠলে, বর্তমান প্রদেশগুলো প্রাদেশিক সীমানা হিসাবে কোন দিনই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দাবী করতে পারে না। কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রগঠনের পর কোন প্রদেশ যুক্তরাষ্ট্র হােতে বেরিয়ে যেতে চাইলে উক্ত প্রাদেশিক পরিষদের ৬০% জনকে বেরিয়ে যাবার প্রস্তাব সমর্থন করতে হবে। বেরিয়ে যাবার প্রস্তাবকে ৫১ জনে সমর্থন করলে ভােট-ভােটর ব্যাপারকে দেশের পূর্ণ বয়স্কদের মধ্যে টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা সংখ্যালৰিষ্ঠদের থাকবে।
• আত্মনিয়ন্ত্রণের কথা বলতে গিয়ে গান্ধীজী Absolute ma ority-র কথা তুলেছেন। জিন্নাহ,-গান্ধী মিলনের সময় তিনি এর অর্থ করেছেন ৭৫% জন। গান্ধীজী ৭৫% এবং ক্রিপস, সাহেব ৬০% বলতে নির্দিষ্ট এলাকার সমস্ত পূর্ণ বয়স্কদের ৭৫% বা ৬০% বুঝিয়েছেন প্রদত্ত ভােটের
৪৫
৭৫ %বা ৬০% নয়। এখন জিজ্ঞাস্য ইংলণ্ডও আরিকার মত স্বাধীন দেশেও কি সকলে ভােটদানের অধিকারকে কার্যে পরিণত করেন ? ভারতের বিভিন্ন বৎসরের মােট ভােটার এবং প্রদত্ত ভােটের তুলনা করলে দেখা যাবে ভােটারদের ৪০% জনও নির্বাচন কেন্দ্রে উপস্থিত হন না। কাজেই প্রদত্ত ভােটের ৭৫% বা ৬০ বললেও তাদের ফমূলাগুলােতে কিছুটা আন্তরিকতা ছিল বলে বিশ্বাস করতে পারতাম। | যুক্তরাষ্ট্রে যোগ দেওয়া বা না দেওয়ার ব্যাপারে একটা প্রবেশের সমস্ত পূর্ণবয়স্কদের ভােটাধিকারের যুক্তিটা একেবারেই অদ্ভুত। আত্মনিয়ন্ত্রণের বাৰী কেবল একটা সংখ্যাগরিষ্ঠ National groupই করতে পারে। Sub.national group গুলো আত্মনিয়াণের কথা উঠাতে পারে না কেবল নীতিগত পূর্ণ রক্ষাকবজের দাবী করতে পারে এটা আমরা পূর্বেই বলেছি। কিন্তু ভারত যদি অখণ্ড এবং একাতির আবাসস্থল হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র হােতে কারও বেরিয়ে যাবার কোন প্রশ্নই উঠে না। কোন হিসাবে মুসলিমরা এ দাবী করবে? একটা রাষ্ট্র অতীতে যা স্বাধীন বা সার্বভৌম ছিল, তার যুক্তরাষ্ট্রে যােগ দেওয়ার বেলাতেই কেবল এ প্রশ্ন উঠে। সমস্ত সমস্যাটাকে ঘোলাটে করে তুলবার জন্যই কংগ্রেস কর্মীগণ secf ssion-এর কথা উঠান। কেননা প্রত্যেকটা ইউনিটকে স্বাধীন বা সার্বভৌম বলে ঘােষণা করবার পূর্বে পৃথিবীতে কোনদিনই কোন ফেডারেশনের পত্তন হয়নি।
ভারতীয় মুসলিমরা যদি একটা জাতি হয়। [ গান্ধীজীও পৃথক পরিবার হিসাবে মেনে নিয়েছেন। তবে জাতি হিসেবে কেবল তারাই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পাবে—হিমুর নয়। পাকিস্তানের দাবী মেনে নিজেই যে কোন এল বা জাতির সাথে হাত মিলিয়ে বটশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এসম্বন্ধে গান্ধী এবং হিন্দু-কংগ্রেসের ভাবগতি দেখে আমরা আশ্চৰ্যথিত না হয়ে পারিনা। বৃটিশ মুসলমানদের পৃথক জাতিত্বের পায়ে ফেলে, যখন তাদের জন্য একটা পৃথক যুক্তরাষ্ট্র গঠনের দাবী মেনে নিয়েছে গান্ধীজী কেবল তখনই মুসলিমদের একটা
৪৬
পৃথক পরিবার হিসাবে মেনে নিয়েছেন। মুসলিম জাতির বিভিন্ন বাৰীগুলাে মেনে নেওয়ার ব্যাপারে মনে হয় গান্ধীজী এবং কংগ্রেস যেন টশেরই ইঙ্গিতে পরিচালিত হচ্ছেন।
অস্থায়ী সৱকার | জিজ্ঞাসা করা হয় কায়েদে আজম অস্থায়ী সরকার গঠনের পূর্বেই পাকিস্তান হাবী মেনে নেওয়ার জ এত চাপ দেন কেন? বর্তমান যুদ্ধের প্রান্ত হােতেই এ সম্বন্ধে মুসলমানদের দাবী খােলসা করে বলা হয়েছে। লীগ মুসলিমদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে বর্তমান শাসন পদ্ধতিকে মেনে নিয়েই ভারতকে বহিঃত্রুর আক্রমণ ছােতে রক্ষা করবার জন্য ও ভারতের জনগণকে মহামারী ও দুর্ভিক্ষের কবল হতে মুক্ত করবার জন্য অন্যান্য লগুলাের সাথে হাত মিলিয়ে পর্ণ শাসনভার গ্রহণে বাজী ছিল। কি শত্ত ছিল সমান অধীকারের ভিত্তিতে যেন এ গভর্ণমেন্ট গঠন করা হয় এবং ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে পাকিস্তান দবীকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন বা কোণঠাসা করা না হয়। বৃটিশ সরকার ১১৪০ সনের প্রস্তাবনায় লীগের ন্যায় দাবীকে যে উপায়ে কোণঠাসা করতে থাকেন তাতে যে কোন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এরুপ প্রস্তাব মেনে নেওয়া অসম্ভব ছিল।
লীগ বাস্তব দৃষ্টিতে উপলব্ধি করেছিল যুদ্ধের ভিতর পূর্ণ শাসন সংস্কার সম্ভব নয়। কংগ্রেস-লীগ পরিচালিত ভারতে তখন একমাত্র কাজ ছিল বহিঃশত্রুকে বাধা দেওয়া। লীগ-কংগ্রেস মিলিত ফন্ট অব জনগণের মুখে খাবার তুলে দিতে পারত যদি পূর্ণ ও প্রকৃত ক্ষমতা এবং দায়িত্ব তাদের হাতে ছেড়ে দিতে গভর্ণমেন্ট রাজী হােত। কাজেই ভাতের এই দুর্দিনে অস্থায়ী সরকার গঠন ছাড়া অত কোন উপায়ই ছিল না। ভারতের এই দুর্দিনে যখন আত্মাহুতি দিবার দরকার পড়েছিল তখন সমতার ভিত্তি ছাড়া কোন জাতীয় প্রতিষ্ঠানই সরকার গঠনে রাজী হােতে পারে না। আমরা পূবেই বলেছি এক্ষেত্রে সমানাধিকার না পেলে কংগ্রেস তথা হিন্দ, প্রান আইন সভার হাতে লীগ প্রতিনিধিরা বশী হয়ে পড়তেন।
৪৭
বিশেষ করে একটা জাতির ভবিষ্ণুৎ আশা আকাঙ্খা শূন্যের ঘরে পড়বার ভয় থাকলে জানমাল ধ্বংশের মুখে এগিয়ে দিতে চায়
সুতরাং পাকিস্তানের মূলধাবীকে মেনে নেওয়া ছাড়া অ যে কোন উপায়েই মিলন অসম্ভব হােত। অস্থায়ী সরকার গঠনে লীগ সমপরিমাণ আসন কেন চেয়েছিল তার অন্যান্য কারণগুলো এরূপ (ক) মুসলমানেরা একটা জাতি সুতরাং জাতি হিসাবে তারা সমান অংশ দাবী করার অধিকারী। (খ) যুদ্ধ বা অন্যান্য জরুরী অবস্থার জন্য প্রধান দলগুলাের সমান অধিকারের ভিত্তিতেই সর্বদেশে অস্থায়ী গভর্নমেন্ট গঠিত হয়। (গ) ভারতের পূর্বপ্রান্তে জাপানী এবং উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে জামানী আক্রমণের সমস্ত বােঝা বইতে হােত মুসলিম জাতিকে। কাজেই যুদ্ধে তাদের দানটাই সব্বাপেক্ষা বেশী হােত। যুদ্ধের জন্য উদ্ভূত দুর্ভিক্ষ বা মহামারীপ অঞ্জ। পূর্ব বাঙ্গলার মুসলিমদের উপর দিয়ে কি বহে যায়নি। মুসলিমদের যদি বুকবার সুযােগ দেওয়া হােত যে গভর্ণমেন্ট ব্যাপারে তাদের সমান হাত থাকবে তবেই মুসলিম জাতি জান-মাল কোরবানের জন্য এগিয়ে আসত। (ঘ) ভারতের ভৰি গঠনত ব্যাপারে এই অস্থায়ী গভর্ণমেন্টের যথেষ্ট হত থাকত; কাজেই মুসলমানেরা সমানাধিকার না পেলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু পরিষ ভােটের জোরে মুসলমানদের ভবিষ্যৎ আশা আকাঙ্খার প্রতীক পাকিস্তান গঠনের চেষ্টাকেই বানচাল করে দিবার চেষ্টা করত।
ষড়যন্ত্র
কংগ্রেসের অসম্ভব হাবীগুলোর তােমােকই খটশ সরকারের গত কয়েক বৎসরের অনুসৃত রাজনীতি। দুটো বিশেষ বিশেষ ঘটনা একথার সত্যতা প্রমাণ করে। (ক) ভদ্রলােকদের চুক্তিরূপ তােষামােৰই কংগ্রেসকে মুসলিমদের উপর অত্যাচার করবার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিল। (খ) “ভারত ত্যাগ কর” বুলি উঠবে এ আলােড়নে ভীত হয়েই ক্রিপস, মিশন ভারতে প্রেরিত হয়েছিল। এ প্রস্তাবে ভারতকে বশ কমনওয়েলথ থেকে বেরিয়ে গিয়ে পৃথক সার্বভৌম রায়
৪৮
গঠন করবার অধিকার দেওয়া হয়েছিল এবং ভাবী গঠনতন্ত্র রচনা করবার ভারও ভারতবাসীর উপর দেওয়া হয়েছিল। কেবল তাই নয়, বরং মুসলিম ইত্যাদি সংখ্যালঘিষ্ঠদের উপর শাসন চালাবার ব্যবস্থাও এ লিলে করা হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস দাবীর হক চড়িয়ে ঘোষণা করল সে অবস্থাতেই সমস্ত ক্ষমতা তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। সরকার রাজী না হওয়ায় কংগ্রেস সংখ্যালঘিষ্ঠ জাতিগুলাের দিকে পিস্তল ধরে ঘোষণা করল “ভারত ত্যাগ কর”। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যাবার যে অংশটা ক্রিপস, প্রস্তাবে ছিল তা একট! ষড়যন্ত্র মাত্র। কংগ্রেস নেতাদের এ অংশটা বুবার সময় ক্রিপস, সাহেব খুব বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তানের দাবীকে খুব খারাপ চক্ষেই দেখেছিলেন তা তার কথাবার্তা থেকেই বেশ বােঝা যায়। ক্রিপস, প্রস্তাবকে নাকচ করে গান্ধীজী এবং হিন্দু-কংগ্রেস যে ভুল করেছে কিছু দিনের ভিতর তা আর পূর্ষণ করে নিতে পারবে না। স্বাধীনতার মামুতি গাজীজীর হাতের মুঠোর ভিতর এসে পড়েছিল, তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাই দেবী ক্ষোভ, অপমান এবং লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
যবনিকার অন্তরালে গান্ধী-আচাৱী। | ক্রিপস, প্রস্তাব সম্পর্কে কংগ্রেসের ভাবগতি দেখে আমরা বিস্মিত হয়ে গেছি। কংগ্রেস চিরদিনই নিজেকে অখণ্ড ভারতের একচ্ছত্র মুখপাত্র বলে প্রচার চালিয়ে এসেছে। গান্ধীজিন্নাহ, মিলনের পূর্ব পর্যন্ত কংগ্রেসী নেতৃবল লীগকে ‘ মুসলিম ভারতের একমাত্র মুখপাত্র বলে স্বীকার করতে রাজী হননি। কংগ্রেসের অবাস্তর দাবী অবশ্য দুনিয়ার নিকট দিবালােকের স্থায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। কংগ্রেসী নেতাদের গত কিছুদিনের ভাৰাৱা দেখে মনে হয় তারা যেন ভারতীয় ইউনিটগুলাের যুক্তরাষ্ট, হােতে বেরিয়ে আবার দাবী মেনে নিয়েছেন। কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের বিশ্বাসযােগ্য, কোন স্পষ্ট ঘােষণা এ সম্বন্ধে নেই, একটা অস্পষ্ট অংশ ক্রিপস, প্রস্তাব আলােচনায়রত ওয়াকিং কমিটির প্রস্তাবের মধ্যে পাওয়া যায়।
৪৯
এই প্রস্তাব পড়ে মনে হয় ভারতীয় মুসলিমদের অন্যায়, অমূলক ও একগুয়েমি বজায় রাখবার জন্যই যেন এ অংশটা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিম্নের পাঁচটা ঘটনা দেখে একজন নিরপেক্ষ লােকের মনে এ চিন্ত’ উঠে পড়বে যে এটা কংগ্রেসের একটা বড় রকমের চাল ছিল। (ক) মিঃ আচারী কতৃক সমধিত মুসলিমদের আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রস্তাবকে ভারতীয় কংগ্রেস কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে। একজন গেড়া কংগ্রেন-কমীর কৃত পাপস্খলনের জন্য ঐ একই কমিটি জগৎ নারায়ণের প্রস্তাব সর্বান্তঃকরণে গ্রহণ করেছে। (খ) মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলাের মুসলিমদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে
মেনে নেওয়ায় গােপাল আচারীর মত একনিষ্ট কংগ্রেস কর্মীকে চাপ দিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। (গ) পণ্ডিত নেহেরু, গান্ধীজী এবং অন্যান্য কংগ্রেস নেতৃত্ব বিভিন্ন ঘােষণায় পাকিস্তানের ভাবীকে প্রকাশ্যে নিন্দা করেছেন। (ঘ) পাকিস্তান সম্বন্ধে চিন্তা করাকে গান্ধীজী পিপ বলে ঘােষনা করেছে [ গান্ধীজিন্নাহ, মিলনের পূর্বে ] (ঙ) হিন্দুমুসলিম মিলনের পূর্বেই মুসলিম জাতির সাথে আপােষ বা আলাপ আলােচনা না চালিয়েই সমস্ত শক্তি কংগ্রেসের হাতে অপনের দাবী জানিয়ে কংগ্রেস যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। (চ) পণ্ডিত নেহেরু পাকিস্তান হাবীর বিরুদ্ধে বিষ উজিগরণ করে আমেরিকার একখানা মাসিক পত্রে একখানা পত্র লিখেছিলেন।
পরস্পর বিরোধী মত
কংগ্রেস অবলম্বিত পরস্পর বিরােধী মত দেখলে নিরপেক্ষ লােকদের মনে কি প্রশ্ন জাগে ? নিরপেক্ষ সমালােচকদের সুবিধার জয় পরস্পর বিরােধী প্রস্তাব দুটোকেই আমরা অবিকল উদ্ধত করে দিচ্ছি। | (ক) The Congress [ working Committee could not think in terms of compelling a territorial unit against its declared will to remain in the union. [ Delbi April 6, 1942.]
৫০
“কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি কোন আঞ্চলিক ইউনিটের বেষিত ইচ্ছার বিরুদ্ধে উক্ত ইউনিটকে সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অধীন করে রাখবার কথা চিন্তা করতেই পারে না।”
(*) The A. I, C. C. is of the opinion that any proposal to disintegrate India by giving liberty to any component state or territorial unit to secede from the Indian union or Federation will be highly detrimental to the best interests of the people of the different states and provinces and the Congress can not agree to any such proposal, [ Allahabad, May 1942. ]
‘নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির অবধারিত মত এই যে, কোন আঞ্চলিক ইউনিট অথবা অধীনস্থ ষ্টেটকে সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র অথবা ইউনিয়ন হেতে পৃথক হয়ে সার্বভৌম রাষ্ট্রগঠনের প্রস্তাব রা ভারত বিভাগ পরিকল্পনা বিভিন্ন ষ্টেট ও প্রবেশের জনস্বার্থেৱ সমূহ ক্ষতি সাধন করবে; সুতরাং কংগ্রেস কমিষ্ট অনুরূপ কোন প্রস্তাবেই সম্মতি দিতে পারে না।”
কংগ্রেন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাবটার কানাকড়িরও মূল্য নেই। দ্বিতীয়তঃ কংগ্রেস কমিটর এই একই সভ। মুসলিম জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের ভিত্তিতে লীন কংগ্রেস মিলনের আন্দোলন চালানাের জন্য আচারীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। গােপাল আচারীর এ সামান্য পাপকেও কংগ্রেস সহ করতে না পেরে প্রতিষ্ঠানের একটা দৃঢ়স্তম্ভ এবং গান্ধীজীর বিচার বুদ্ধির অধিষ্ঠাতা দেবকে কংগ্রেস দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
বিভিন্ন মুখী প্রচার
বন্ধু আচারীকে বনবাসে পাঠিয়েও গান্ধীজী পরিতৃপ্ত হতে পারলেন না, ভারতীয় হিন্দুদের মনে একটা ধর্মীয় বিভীষিকা বাধাবার জন্য ঘােষণা কলেন। কাকিস্তানের চিন্তা করাও মহাপাপ। তিনি crime শব্দ
৫১
ব্যবহার করলেও হয়ত পারতেন, কিন্তু তা না করে বললেন sin. এর অর্থ-হে হি, পাকিস্তান সম্বন্ধে তুমি যদি চিন্তাও কর তবে পরকালে তােমাকে তপ্ত নরকানলে পুড়তে হবে। অখণ্ড ভারত গান্ধীজীর অর্থাৎ হিন্দু ভারতের অবতারের বিশ্বাসের বস্তু। পণ্ডিত নেহেরু পাকিস্তানকে একটা চালবাজ [ Mockery ] মাত্র বললেন। ঘােষণা করলেন ভারতের স্বাধীনতা না আসা পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান বা অন্য কোন সাম্প্রদায়িকমূলক প্রশ্ন আলোচনা করবেন না। আন্তর্জাতিক রাজনীতিজ্ঞ পণ্ডিতজীর কি এতটুকুও জ্ঞান নেই বুঝতে হবে যে পাকিস্তান দাবী সাম্প্রদায়িক দাবী নয় বরং দশ কোটি মুসলিমের জাতীয় স্বাধীনতার দাবী।
জিপস, প্রস্তাবে কতগুলো প্রবেশকে কেন্দ্রীয় যুক্তরাষ্ট্র হোতে বেরিয়ে গিয়ে পৃথক সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল বলেই কংগ্রেস এ প্রস্তাবকে নাকচ করে। এই প্রচারনাই কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ আমেরিকায় করতে চেয়েছিলেন। পক্ষান্তরে গভর্ণর জেনেরেলের “ভেটো” বা অগ্রাহ করবার শক্তি এবং দেশরক্ষা ব্যাপারে প্রধান সেনাপতির সার্বভৌম ক্ষমতার জন্যই কংগ্রেস ক্রিপস প্রস্তাবকে নাকচ করেছে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ ভারতে এ প্রচারণাই চালিয়েছিলেন। সুতরাং স্বদেশে এবং বিদেশে তায়া ক্রিপস, প্রস্তাব নাকচ করবার ঠিক বিপরীত মখী দুটো কারণ বেখিয়েছেন। সম্রলােচকদের সুবিধার জন্য পণ্ডিতজীর ‘নিউইয়র্ক-টাইমসে লিখিত প্রবন্ধের কিয়দংশ আমরা উদ্ধত করে নিলুম
“Thirty years ago the British Government introduced the principle of seperate religious electorates in India, a fatal thing which has come in the way of development of political parties. Now they have tried to jotroduce the idea of partitioning India not only into two but possibly many parts. This was the one of the reasons which led to bitter resentment of the Cripps Proposal. The All India Congress could not agree to this.”
৫২
মুসলিমরা নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যেতে চাইবে এবং যাবেই পণ্ডিত জীর এযুক্তিকে না হয় মেনেই নিলাম; এতে ভারত বিভক্ত হবে সত্যই। কিন্তু তার many parts বলার উদ্দে কি? তবে কি শতকরা ছয়জন বর্ণ হিনু পরিচালিত কংগ্রেস এবং জনকয়েক পুজিবাদী হিন্দু শিল্পপতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে তপশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ সমূহ এবং শিখ অধুষিত অঞ্চলও এই জনকয়েকের চুষে খাওয়ার বাহন, সােনার পিজরা যুক্তরাষ্ট্র হােতে বেরিয়ে যেতে চাইবে?
হিংসার পূজারী।
সর্বশেষে নির্ভরযােগ্য কংগ্রেস রাজনীতি হল ১৯৪২ সনের, ৮ই আগষ্টের প্রস্তাব। এই প্রস্তাবে কংগ্রেস নিম্নলিখিত দাবীগুলো পেশ করে(ক) ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার কথা শীঘ্রই ঘোষণা করতে হবে। (খ) একটা অস্থায়ী গভর্ণমেন্ট গঠন করে সমস্ত শক্তি এই গভর্ণমেন্টের নিকট হস্তান্তর করতে হবে। (গ) ভারতের ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্র হবে। কিন্তু অতিরিক্ত ক্ষমতাগুলাে প্রদেশ সমূহের থাকবে। (ঘ) বৃটশ ভারত উপকূল পরিত্যাগ করে চলে যাবে। (ঙ) এই অস্থায়ী সরকার ভারতের ভাবী-শাসনতন্ত্র রচনা করবে। যদি এসমস্ত দাবী মেনে না নেওয়া হয় তবে গান্ধীজীর নেতৃত্বাধীনে কংগ্রেস গণবিপ্লব আরম্ভ করবে। পৃথক অস্তিত্ব বিশিষ্ট মুসলিম জাতির সমস্ত দাবীকে এ প্রস্তাবগুলোতে সম্যকভাবে অস্বীকার করা হয়। শুনে থাকি বিগত ২৪ বৎসর ধরে হিন্দু মুসলিম মিলনই আন্ধীজীর জীবনের ব্রত ছিল! এটা আনুষ্ঠানিক না হয়ে যদি তার সত্যি কায়ের মত হয় তবে কি তিনি মিলনের ভিতর দিয়ে মুসলিম জাতিকে কোণঠাসা করতে চেয়েছিলেন। তিনি যদি বলতে চান যে বৃটশের ভারত ত্যাগ করার পর হিমু মুসলিম সমস্যা মিটে যাবে তবে কি জানতে হবে যে তার গত ২৪ বৎসরের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে ? আগষ্ট বিদ্রোহ কংগ্রেস পরিচালিত কি না এ নিয়ে ঝগড়ার অবতারণা করতে চাইনে; কিন্তু এটা সত্য যে কংগ্রেস কীগণ যেতে বলগত একনায়কত্ব স্থাপন করতে চেয়ে
৫৩
ছিলেন ! এটাও দৃঢ় সত্য যে সমস্ত হিভাৱত যে কোন কারণেই হােক না কেন গান্ধীজীর অহিংসা মন্ত্রের সাথে অসহয়ােগিতা করতে চেয়েছিলেন।
ভৌগােলিক ঐক্যের ধূয়া
পাকিস্তানের বিরুদ্ধদীয়া এখন বলে বেড়াচ্ছেন ভারত ভৌগোলিক ভাবে অখণ্ড। তদানীন্তন বড়লাট লিলিথগো ভৌগােলিক ঐক্যের বলি সর্বপ্রথম ভারতে আমানী করেন। কংগ্রেস এই বুলিকে লুফে নিয়ে প্রচার আরম্ভ করে। ওয়াভেল সাহেব ভারতে পা দিয়েই আবার এই বিশ্বত বুলিকে বরণ করিয়ে দেন। এই বুলিটাই ব’মানে ভারতীয় রাজনীতিতে ভীষণ গতিতে ঘুরা আরম্ভ করেছে। সৈনিক লাট বলেন মানুষ ভূগােল পরিবর্তন করতে পারে না। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা দেখতে পাই, একটা রাষ্ট্র গঠন ব্যাপারে ভৌগােলিক ধয়। কোন দিনই প্রধান উপাদান হয়ে দাড়ায় ন। অনেক ক্ষেত্রে ভৌগােলিক উপাদানকে বার বিয়েও রাষ্ট্র গঠন করা হয়েছে। আবার অনেক সময় ভূগােলকে জাতীয়মূল, কৃষ্টি, অর্থনীতি ইত্যাদি উপাদানগুলাের অধীনস্থ একটা উপাদান স্বরূপ ধরা হয়েছে। জার্মানী-ফ্রান্স ও জার্মানী-রাশিয়ার প্রান্তদেশে কোন্ ভৌগােলিক পরিসীমাই বা আছে? ম্যাজিনটু ও কাজান লাইনতে’ এই সেদিনের তৈরী। যদি মনে করা হয় যেহেতু ভারত অবশিষ্ট এশিয়া হােতে পর্বতরাজি পরিবেষ্টত অবস্থায় পৃথক হয়ে একটা ভৌগােলিক ঐক্য গঠন করেছে সুতরাং পাকিস্তানের চিন্তা অবান্তর, তবে কাস্পিয়ান সাগর, উরালপর্বতমালা, বান্টিক ও ভূমধ্যসাগর পরিবেষ্টিত ইউরােপকেই বা কেন ভৌগোলিকভাবে অখণ্ড থেশ বলে মেনে নেওয়া হবেনা? কিন্তু সমস্ত ইউরােপে একটা রাষ্ট্র গঠনের কথা কেবল পাগলেই বতে পারে। এই একই ভৌগােলিক যুক্তির দিক দিয়ে সমস্ত রাশিয়া এবং ইউরােপকে মিলিয়েই বা একটা রাষ্ট্র গঠন করা যাবে না কেন? ইউরােপের অনেকগুলো স্বাধীন রাষ্ট্র বন, জন এবং আকারের দিক দিয়ে ভারতের অনেক গুলাে জেলার সমানও নয়। এ ব্যাপারে পর্তুগাল, হল্যাও, বেলজিয়াম,
৫৪
আয়ারল্যাণ্ড, সুইজারল্যাণ্ড ইত্যাদি রাষ্ট্রগুলোর নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশগুলাে যেভাবে পরস্পর সংলগ্ন, ইউরােপীয় স্বাধীন রাষ্ট্রগুলো তার চেয়ে আরও বিশেষভাবে সংলগ্ন। জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে ভারতের হিন্দু-মুসলিমের সম্বন্ধ তেল জলের সম্বন্ধের যায়। কিন্তু উল্লিখিত রাষ্ট্রগুলাের লােকের ধম, আদিম মূল, ভাষা, দৈনন্দিন জীবন যাত্রার প্রণালী, পােষাক পরিচ্ছদ, কৃষ্ট অনেকটা একরকমের হরেও কি তারা পরস্পর মিলিত হয়ে একটা সম্মিলিত সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করতে পেরেছে ? সুতরাং পৃথক হবার চেতনা” এই উপাদানটাই এদেরকে পৃথক পৃথক রাষ্ট্র গঠনে প্রলুব্ধ করেছে বলতে হবে। কাজেই ভৌগােলিক ঐক্য পৃথক জাতিত্বের ভিত্তিতে একটা সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের পথে অন্তরায় হয়ে দাড়ায় না। একইল লােক একই অনুপ্রেরণা, একই দৃষ্টিভঙ্গী এবং একই উচ্চাশা পােষণ করে একটা জাতি গঠনে এগিয়ে আসলে তার অপ্রতিহত গতির সামনে কোন বাজে ওজুহাতই টকতে পারেনা।
ভারত একটা বিশাল উপমহাদেশ এবং ভৌগােলিক ভাবেই কয়েক ভাগে বিভক্ত :-(ক) সিন্ধুর অববাহিকা অঞ্চল (খ) গঙ্গানদীর অব বাহিকা অঞ্চল (গ) দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চল (ঘ) পার্বত্য অঞ্চল (ঙ) সমুদ্রের উপকূল অঞ্চল। এই অঞ্চলগুলােকে আবার প্রাকৃতিক, কৃষ্টগত, অর্থনীতি এবং বিভিন্ন জাতীয় বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে বিভাগ করা যেতে পারে। এদিক দিয়েই ভারতের উত্তর পশ্চিম এবং পূর্বাংশকে মুসলিম জাতীয় আবাস ভূমি বলা হয়। সুতরাং ভৌগােলিক কারণ সমূহের দিক দিয়ে বিচার করলেও পাকিস্তান বীর সত্যতা উপলব্ধি করা যায়।
সাবভৌম রাষ্ট্রসমুহের পত্তন | যে ডায়েল গভর্নমেন্ট নিশ্চয়ই খুব ভাল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। কিন্তু যে ইউনিয়নের পেছনে একে অন্যকে দাবিয়ে রেখে শােষণ করবার প্রবল আকাক্ষা রাখে তাকে কোন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতিই গ্রহণ করতে পারে না। কোন জাতি নি দাবীকে অন্য জাতির নিকট বিলিয়ে দেবার
৫৫
জন্য একটা ইউনিয়নে ৰােগ দিতে পারে না। বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলোর সাবভৌমত্ব পাবার আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিষয় চিন্তা করার মানেই হোল জিন্নাহ, সাহেবের কথায় ঘােড়ার আগে গাড়ী জুড়ে দেওয়ার মত। বিশ্বে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের জন্য বিভিন্ন স্বাধীন রাষ্ট্রগুলাের সমন্বয়ে একটা ইউনিয়ন গঠনের প্রবাদ বাক্যটা শুনতে খুব ভাল। তাই বলে দুনিয়া ব্যাপী একটা ইউনিয়ন গঠন কি সম্ভবপর হয়েছে, না হবে? পৃথিবীর বাধীন রাষ্ট্রগুলোর একটাও কি এরূপ রাষ্ট্র গঠন করার প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিপন্ন রাষ্ট্রগুলোর হান স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই নাকি বড় বড় স্বাধীন রাষ্ট্রগুলো বর্তমান বিশ্বব্যাপী যুদ্ধে জানমাল কোরবান করে চলেছে। তবে ১০ কোটি মুসলমানের আশা আকাঙ্খা এবং স্বাধীনতার প্রতীক পাকিস্তান হাবীকে মেনে নেওয়াই কি গণতন্ত্রের পূজারীদের উচিত নয়।
ভবিষ্যতে দুনিয়াব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র গঠনের যে প্রস্তাব কংগ্রেস নিয়েছে তাতে কি ইউরােপ এবং আমেরিকার স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহের সার্বভৌমত্ব কেড়ে নেওয়া হবে ? সত্যিকার টেকসই যুক্তরাষ্ট্র তখনই গড়ে উঠবে যখন বিভিন্ন সার্বভৌম রাষ্ট্র পরস্পরের সহথােগিতায়, সমস্বার্থে, বন্ধুভাবে, একটা বিশেষ চুক্তির ফলে কতকগুলাে সাধারণ ক্ষমতা সকলের স্বার্থের জয় কোন একটা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ছেড়ে দিতে চাইবে।
ভারতের ঠিক এ সমস্যাই দেখা দিয়েছে। সুতরাং বিভিন্ন জাতীয়তার ভিত্তিতে প্রত্যেকটা ইউনিটকে আজ সাবভৌম বলে ঘােষণা করতে হবে। তারপর সমতার ভিত্তিতে পারস্পরিক চুক্তি দ্বারা ইউনিটগুলো বা যে কয়েকটা তাদের সমস্বার্থের বিষয়গুলাে একটা যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে ছেড়ে দিতে রাজী হবে কেবল তাদের নিয়েই একটা ইউনিয়ন গঠিত হবে। কিন্তু ১৯৩৫ সনের ভারত শাসন বিধান অথবা কংগ্রেসী বা ক্লিপস, প্রস্তাবে যে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলবার চেষ্টা করা হয়েছে তা হয়ে পড়বে হিন্দুয়াজ। ফলে মহারাষ্ট্র দেশ যেতে শিৰাজী, বাঙ্গালা হােতে সরফরাজ-ঈশা খাঁ, বিহার হােতে আলিবর্দী, রাজপুতনা হােতে রাণী
৫৬
মাথা উচু করে বলবেন-আমাদের নিজ নিজ জাতীয়
শাহ। ভারতের এই জটিল রাজনীতি উপলব্ধি করেই ম্যাজ ইয়েটস নামক জনৈক বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, দােষণা করেন।
“Let us put ourselves in Muslim slippers. We British would consider ourselves aggrived if some world improving superman or super Government were to decree that we should be ruled by an All-Europe Government [ No doubt with safeguards] with Teutons as the dominant race or Slavs if you prefer – because we are a minority in Europe.
Even if this super Government consisted of supermen of infinite strength and wisdom, we should submit to it only just so long as we had not the strength to throw of the shackles. And if the supermen showed sigas of doubting their own decision, yet continued to asseverate before the world that they had offered freedom to all Europe, that it was now incumbent on us to find a solution to the difficulty, we should reply as the Muslim League has–that such freedom was a farce.”
“মনে কর আমরা ঠিক মুসলিমদের পর্যায়ে উপনীত হয়েছি। যদি পৃথিবীর কোন মঙ্গলকামী জগদ্বিখ্যাত অতিমানব অথবা অতুলনীয় মহান সরকার ঘােষণা করেন যে, আমরা ইউরােলে সংখ্যালঘিষ্ঠ বলেই টিউটন অথবা ইচ্ছা করলে স্নাতনের অধিনায়কত্বে একটা সর্ব-ইউরােপীয় সরকার ধারা (
নিই রক্ষা করে সাথে) শাসিত হব তবে বটশ জাতি নিজেদের ভবিষ্যৎ ভেবে কি চিন্তিত হয়ে উঠবে না?
এই অতুলনীয় সরকার যদি অসীম বুদ্ধিমান এবং দেবকীয় চরিত্রের মহামানবনে দ্বারা গঠিত হয়, তবুও যতদিন আমরা এই সরকারকে কেড়ে ফেলবার শক্তি অর্জন না করব কেবল ততদিনই এর শাসন পাশ মেনে নিব। এই অতিমানবেরা তাদের অবধাৱিত সিদ্ধান্তকে কারও উপর অত্যাচার হবে মনে করে যদি বাবার সন্দেহ করতে থাকেন এবং মায়ের ভিত্তির উপর সরকার প্রতিষ্ঠিত বলেই তারা সর্ব ইউরােপকে সমস্বাধীনতা নিয়েছেন বলে
৫৭
ঘােষণা করেন, তবুও এই জটল সমস্যার সমাধানকয়ে ভারতীয় মুসলিম লীগের ন্যায় আমাদের (ইংরাজদের) ঘােষণা করা উচিত-এরূপ স্বাধীনতা মূল্যহীন।” | কানাডায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবর্তনের পর্ব ঠিক ভারতের মত জটল সমস্যাই দেখা দিয়েছিল। কাজেই দেশের মঙ্গলকাঙ্খিগণ সমস্ত ইউনিটগুলােকে সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে ঘােষণা করেন। এ সময় কোন ইউনিটকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে যােগ দেওয়ার জয় চাপ দেওয়া হয়নি। সুতরাং মাত্র ২৩টা ইউনিট নিয়ে যে যুক্তরাষ্ট্রের পত্তন হয়েছিল পরে সমস্ত ইউনিটগুলােই স্বেচ্ছায় ও নিজ নিজ স্বার্থে তার সঙ্গে যােগদান করেছে। ভারতের সমস্ত ইউনিটগুলােকে শর্তহীন ভাবে স্বাধীন এবং সার্বভৌম বলে ঘোষণা করলেই আমাদের এই অটল রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে।
অবান্তর জিনিষ
পাকিস্তানের বিরুদ্ধবাদীরা এই বীকে কুয়াসাময় করে তুলবার ও একটা শঠতাপূর্ণ প্রচ্ছন্ন আন্দোলন শুরু করেছেন। এই আন্দোলন দিয়ে লীগের মধ্যে ভাঙ্গন ধরাবার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা প্রশ্ন করছেন পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র ও গভর্ণমেন্ট কি ধরণের হবে। বর্তমান অবস্থায় এ প্রশ্ন তােলা অবান্তর। একই সময়ে, একই সঙ্গে বিভিন্ন ফ্রন্টে সৈন্য সাজিয়ে কোন সেনাপতি যদি যুদ্ধ করতে চান, তবে তার মত মূৰ সেনাপতি আর দ্বিতীয়টা নেই জানতে হবে। রাজনীতিরুপ যুদ্ধে নেমে মূল আদর্শ ও নীতি উপরেই যুদ্ধ চালাতে হবে। এখন পাকিস্তান ফ্রন্টেই আমাদের সমস্ত শক্তি নিয়ােগ করতে হবে; অন্যায় সমস্যাগুলো সম্বন্ধে অবগ আমাদের একটা আর্শগত দৃষ্টিভঙ্গী থাকবে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ পূৰ্ণৰূল দেবে পাকিস্তানের জনসাধারণ। গােলামী মন নিয়ে আমারে ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারীদের স্বাধীন পাকিস্তানের পূর্ণরূপ আমরা দিতে পারি না; আর দিতে চেষ্টা করলে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে। অতীত যুগের মহা
৫৮
মানবের স্থাপিত বর্ণভেদ, বর্ণাশ্রম ইত্যাদি প্রথা কি আমাদের স্বাধীনতার পথের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। সুতরাং একটা আদর্শবাদকে সামনে রেখেই আমাদের কাজ করে যেতে হবে। | আমাদের ধীরে ধীরে এগােতে হবে। প্রথমতঃ মুসলিম জাতির আত্মনিয়গুণের অধিকার লাভ, দ্বিতীয়তঃ পাকিস্তানের সীমানা নিদ্ধারণ, তৃতীয়তঃ শাসনতন্ত্র গঠনােদ্দেশ্যে একটা পরিষদ গঠন ; চতুর্থ হবে শাসনতন্ত্রের প্রচলন এবং তারপর আসবে হিন্দুস্থান ও পাকিস্তানের ভিতর সন্ধি ও সৌহাদ্দ পাপনের কথা। ভারতময় আমাদের এমন অবস্থার সৃষ্টি করতে হবে যেন বর্ণাম, বর্ণভেদ এবং বিলা ইত্যাদি বুর্জোয়াদের অত্যাচারে জর্জরিত হবার ভয়ে ভারতের দরিদ্র হিন্দু প্রধান অংশগুলােও নি হােতে পাকিস্তানে শামিল হোতে চায়। ইসলামের ইতিহাসে আমরা দেখেছি বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী অত্যাচারিত জনসাধারণ নিজেদের রাষ্ট্রের সাথে সমস্ত সম্বন্ধ কেটে দিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রের অধিনায়কত্ব মেনে নিয়েছে। ভারতীয় হিন্দুজাতি ভবিষ্যৎ একশত বৎসরেও গণতন্ত্র কায়েম করতে পারবে না। অনুষত মুসলিম জাতির জাতীয় প্রতিষ্ঠান মুসলিম লীগের তরুণ কর্মীরা গত এক বৎসর কাজ করেই নবাব, স্যার, নাইটদের কণ্ঠরােধ করতে পেরেছেন কিন্তু কংগ্রেস কীয়া গত ৫০ বৎসর ধরে কাজ করেও বিড়লা, গাড়ী, নেহেরু ইত্যাদি বুর্জোয়া ও শিল্পপতিদের কণ্ঠরােধ করতে পারেননি, যারা মাঝে মাঝে চেষ্টা করেছেন তাদের ভারতের রাজনীতি হােতে চির বিদায় নিতে হয়েছে।
কমিউনিষ্টরা বলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র গণতন্ত্রমূলক হবে এর প্রতিশ্রুতি কায়েদে আমকে দিতে হবে। এ সম্বন্ধে কায়েবে আজম কি বলেছেন 1931 81:-“The Pakistan Government will have the sanction of the mass of the population of Pakistan and will function with the will and sanction of the entire body of people in Pakistan irrespective of caste, creed or olour.” “পাকিস্তানের জনসাধারণই এই রাষ্ট্রের পেছনে থাকবে এবং জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছানুসারেই পাকিস্তান কাষ্ট্র পরিচালিত হবে।”
৫৯
পাকিস্তানের অর্থনীতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কামেল আজম ঘোষণা 69652 :-“I warn the landlords and capitalis’s who have swelled at our expense by a system which is vicious and wicked ; believe me, I have sen them. There are millions of our people getting hardly one meal, a day. Is this civi. lization ? Is this the aim of Pakistan ? If this is going to be the result of Pakistan I will not have it. If these landlords and capitalists are wise they will adjust themselves to the new and modern conditions of life. If they do not, we will not help them.” “যে সমস্ত জমিদার ও পুজিবাদী পাপময় দুষ্টবুদ্ধিদ্বারা প্ররােচিত হয়ে অবৈধ উপায়ে আমাদের শােষণ করে পুষ্ট হয়ে উঠেছে তাদের আমি সাবধান করে দিচ্ছি। বিশ্বাস করুন আমি এদের লক্ষ্য করেছি। আমাদের লক্ষ লক্ষ লােক দিনে কাচ একবার মাত্র খেয়ে দিন গুজরাণ করছে। এটাই কি সভ্যতা? পাকিস্তানের আদর্শ কি এই ? পাকিস্তানের ফল যদি এই হয় তবে এরূপ পাকিস্তান আমি চাইনা। এই জমির এবং পূজিবাদের যদি বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গী থাকে তবে তারা বর্তমান প্রচলিত অবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলবে। তারা যৰি এচেষ্টা না করে তবে আমরা তাদের সমুচিত শান্তি দেব।” কমিউনিষ্ট বন্ধুরা আর বেশী কি জানবার আশা করেন গণতন্ত্রের পূজারী জিন্নার কাছ হােতে? এখন কংগ্রেসের দিকে চেয়ে দেখা যাক ; কংগ্রেস প্রধান এবং প্রাচীন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হয়েও ভারতের সামনে অর্থনৈতিক কোন প্রােগ্রাম দেয়নি। গান্ধীজী বলেন চরকার কথা, তুলাের কথা, গৃহশিল্পের কথা; কিন্তু বিড়লা এও কোম্পানীর মাথায় হাত বুলাতেও কোন কসুর তিনি করেননি। কেননা কংগ্রেস, চালাবার খরচটা যােগান এই শিল্পপতিরা। কেবল কি তাই, পাকিস্তান বিরােধী প্রচার কার্য চালাবার জন্য কস্তুরাবাই তহবিলের টাকা যােগাবার বন্দোবস্তও করেন এরাই।
বিগত বিশ বৎসর হােতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির ১৫টা আসন দখল করে আছেন এই একই ঘরের পুজিবাদীরা। কমিউনিষ্ট বন্ধুদের জিজ্ঞাসা
৬০
করি বনিক এবং সর্বহারাদের মধ্যে গণবিপ্লব বাদ দিয়ে কোন চুক্তি কি হােতে পারে। বথা রক্তপাত, হত্যা, লুটপাট, গুণ্ডামী, রেল লাইন, পােষ্ট অফিস ইত্যাদি বিধ্বস্ত করা ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন্ রাজনৈতিক প্রােগ্রামই বা কংগ্রেস দিয়েছে। এদিক দিয়ে স্বাধীন অখণ্ড ভারতের প্রোগ্রাম হেতে স্বাধীন পাকিস্তানের প্রােগ্রাম বেশী খােলাখুলিভাবে জনসাধারণের নিকট উপস্থিত করা হয়েছে।
হিন্দুস্তানে মুসলমান
কথা উঠেছে পাকিস্তান হাবী মেনে নেয়া হােলেও সংখ্যালঘিষ্ঠতার প্রশ্ন ঠিক একই ভাবে রয়ে যাবে। কেননা পাকিস্তানে হিন্দু এবং হিন্দুস্তানে মুসলমানেরা সংখ্যালঘিষ্ঠ হবে। এ অবস্থা থাকবে বটে; কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার অপ হয়ে দাঁড়াবে। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানেরা ভারতের মােট জনসংখ্যার ২৬ , জনে পরিণত হবে। সুতরাং পাকিস্তানের ভিতর দিয়ে যে সুখ সুবিধা বা আত্মবিকাশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশের মুসলমানেরা আশা করে যুক্তরাষ্ট্রে শতকরা ৭৪ জন হিন্দুর চাপে পড়ে তা আশা করতে পারবে না। কিন্তু সার্বভৌম পাকিস্তানে সাড়ে সাত কোটি মুসলিম স্বাধীনতার মুক্ত হাওয়ায় বিচরণ করতে পারবে। ভারতের উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব প্রান্তে সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হওয়াতে Balance of power বা শক্তির সমতা হিন্দুস্তানের মুসলমানদের নিরাপত্তা প্রদান করবে। শিখণ্ডীরা হয়ত বলবেন প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের যুগে কংগ্রেস অত্যাচারে মুসলিম সংখ্যালঘিষ্ঠ প্রদেশগুলোর মুসলিমরা অর্জরিত হয়ে যখন ফরিরাই করছিল তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলাের মুসলিমরা তাদের সাহায্য করতে পারেনি। এর কারণ এই নয় যে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশের মুসলমানেরা এ সমস্ত অত্যাচার মনে অসমর্থ বা অক্ষম ছিল। সাম্রাজ্যবাদী বটল এবং তাদের সঙ্গে হিন্দু ভদ্রলোকের চুক্তিই কংগ্রেসকে মুসলিমদের উপর একটা একটানা অত্যাচার চালাবার সুযােগ দিয়েছিল।
পাকিস্তান সংগ্রামে মুসলিম সংখ্যালঘিষ্ঠ শেগুলাের মুসলানদের জনই বেশী। পাকিস্তান আন্দোলনে যারা কর্ণধার তারা সবাই পাকিস্তান
৬১
রাষ্ট্রের বাইরে পড়বেন ; তবে কি কারণে তারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের মুক্তির জন্য জেহাদ শুরু করেছেন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলাের মুসলিমরা যখন নেতৃত্ব নিয়ে মারামারি করছেন মুসলিম সংখ্যালঘিষ্ঠ প্রদেশের মুসলমানেরা তখন নেতৃত্বের মােহ ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তান সংগ্রামে আত্মাহুতি দিচ্ছেন। কংগ্রেস ও জমিয়তে ওলেমা মুসলিম সংখ্যালঘিষ্ঠ দেশগুলােতে লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচন যুদ্ধে নামতে সাহস পাচ্ছে না, অথচ এপ্রবেশগুলােতে অনেক আগেই নির্বাচন বােড় গঠন হয়েছে এবং নিবাচন তহবিলে লক্ষ লক্ষ টাকা উঠে গেছে। কিন্তু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রবেশ গুলােতে কোন সাড়া শব্দ নেই। পাকিস্তান গঠনের পর হিন্দুস্তানের মুসলিমরা যদি কোন সুবিধাই পাবে না তবে যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন করাই তাদের পক্ষে যুক্তিসঙ্গত। কেননা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হােলে হিন্দু-যুক্তরাষ্ট্রে তায়া ১% জনে পরিণত হবে; কিন্তু অখণ্ড ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানেরা ভারতের মােট জনসংখ্যার ২৬% জনে পরিণত হওয়ায় তাদের স্বার্থ বেশী রক্ষিত হওয়ারই কথা। পাকিস্তান এসে যদি তাদের অপকার করে তবে এ
বীকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য জেহা করে তারা নিজেদের চিরমরণ ডেকে আনছে কেন?
এর কারণ হচ্ছে এই যে পাকিস্তান হবে ভারতীয় মুসলিমদের জাতীয় আবাস ভূমি। হিন্দুস্তানে অবশ্য তারা পূর্ণ নাগরিক অধিকার পাবে। পক্ষান্তরে ভারতের দুহান্তে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র গঠিত হলে হিন্দৰা এদের উপর কোন অত্যাচার করতে পারবে না। ভারত পরাধীন বলেই দক্ষিণ আফ্রিকা তথাকার ভারতীয়দের উপর অত্যাচার করার সুযােগ পাচ্ছে। ভারত স্বাধীন হােলে ভারতীয়দের স্বার্থের ক্ষতিকর কোন আইন পাশ করবার পূর্বে তারা শতবার ভেবে দেখত। একজন ইংরাজ রাশিয়ায় বাস করলে রাশিয়ান গভর্ণমেন্ট তার বিরুদ্ধে ইচ্ছানুযায়ী কোন আইন পাশ করবার সাহস করবে না। কেননা এই লােকটার পেছনে ইংলতের সমস্ত রাজশক্তি বর্তমান।
এছাড়া পৃথিবীৱ জনমতের উপর আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস আছে। দুনিয়ার সব দেশের জনগণ একদিন স্বাধীনতা পাবেই ; একে ঠেকিয়ে রাখতে কেউ
৬২
পারবে না। দুনিয়ার জনমতের চাপেই হিন্দুস্তানের মুসলমানদের উপর কোন অত্যাচার হবে না। হিটলার ছোট ছােট রাষ্টগুলো আক্রমণ করেছিলেন কিন্তু বর্তমান যুগে জনমত দূর্বল হওয়া সত্বেও পৃথিবীর জনতই এ সমস্ত রাষ্ট্রগুলাের স্বাধীনতা এনে দেবে। পাকিস্তানের সাথে এ সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশগুলাের তুলনা করাই অন্যায়, তবুও এই দেশগুলাে কি নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষা করে চলতে পারেনি। পক্ষান্তরে জনমত কি এদের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্য করেনি ? কেউ হয়ত বলবেন এরাষ্ট্রগুলো দুর্বল বলেই বারবার আক্রান্ত হয়েছে। আমরা বলব বৃটশ সাম্রাজ্য বারবার আক্রান্ত হয়েছে, অনেক দেশ অনেক বৃটিশের হাতছাড়া হয়ে গেছে, জার্মানী রাশিয়াকে মস্কো পর্যন্ত হামলা করে নিয়ে গেছে, তাই বলে কি এ রাষ্টগুলো স্বাধীন থাকবে না ? | প্যান ইসলামিজমের ভ্রান্ত ধারণাই কি গান্ধীজীর মনে “শক্তিসমতার কারণ জন্মিয়ে বিয়ে মা নি ? গান্ধীজিন্নাহ, আলোচনার সময় তিনি বারবার কায়েদে আজমকে এসম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছেন। এ ছাড়াও হিন্দ, ভাইয়েরা কি এতই অদূরদর্শী হবেন যে মুসলমানদের উপর অত্যাচার করে নিজেদের রাষ্ট্রে কলহ, বিবাহ এবং বিদ্রোহের সুযােগ করে দেবেন। এর উপর শাসনতন্ত্রে সংখ্যালঘিষ্ঠদের জ রক্ষা কবজের ব্যবস্থা থাকবে।
সংখ্যালঘিষ্ঠদের উপর মুসলিম জাতি অতীতে যে স্থায় ব্যবহার করেছে ইতিহাস তার সাক্ষ্য দেয়। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলাের হিন্দ, ভাইয়েরা যে ভাল ব্যবহার পেয়েছেন হিন্দ, সংখ্যাগরিষ্ট প্রদেশের মুসলমানেরা তা পাননি। তাছাড়া মুসলিম দেশগুলাের মন্ত্ৰীমণ্ডলি গঠনমূলক কাজ করে অন্যান্য প্রদেশগুলো হােতে অনেক এগিয়েও গিয়েছেন। অবশ্য শিল্পপতি, মহাজন এবং বুর্জোয়াদের হাত হােতে অত্যাচারিত, কর ও আবওয়াবের ভারে জর্জরিত জনসাধারণকে বাঁচাতে গিয়ে মহাজনী আইন, শিক্ষা কর প্রচলন, আবওয়াব রহিত ইত্যাদি আইনগুলােকে যদি হিন্দ দের উপর জুলুম হয়েছে বলে ধরা হয় তবে এর উপর আমাদের কিছু বলার নেই। জাগ্রত জনগণ আজ চায় যে জমিদারী প্রথা তারা বহিত করবেই; এর ধারা হিন্দ জাতি ডুবল রােল যদি উঠে তবে উইক।
৬৩
আচারীর চুড়ান্ত দান।
ভারতীয় কংগ্রেস কমিটি কর্তৃক ইউনিট গুলাে যুক্তরাষ্ট্র হােত বেরিয়ে যাওয়ার অধিকারকে নাকচ করার পর Secession এর আর কোন অর্থই হয় না। মিঃ গান্ধীজী নিশ্চয়ই একথা ভালভাবে জানতেন। তবুও গান্ধীজীর আশীবাদ নিয়ে অক্লান্তকর্মী মিঃ আচারী একটা অভিনব ফমূলা নিয়ে রাজনীতি ক্ষেৱে আবির্ভূত হলেন। ফমূলার কোন রকমের পরিবর্তন বা পরিবদ্ধন করতে তিনি রাজী হননি। কেননা এটাই নাকি ছিল জাতীয়তাবাদীদের তরফ হােতে চুড়ান্ত ধান করেছে আজ ফমলাটাকে ওয়াকিং কমিটর সামনে পেশ করতে রাজী হােলেন, আচারী কিন্তু এতে নারাজ। এ ফমূলার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল কায়েদে আজম লীগ-কংগ্রেস মিলনের পক্ষপাতী নন জনসাধারণের মনে এরূপ একটা ধারণা জন্মিয়ে দিয়ে তার বিরুদ্ধে এক তরফা একট। প্রেস আক্রমণ শুরু করে দেওয়া। | গান্ধীজী এসময় জেলের বাইরে থেকে শত শত চিঠিপত্র আধান প্রধান করতে ছিলেন এবং অনুনয় বিনয় ও চাটুবাক্যে বড় লাটকে প্রতারিত করে বিবৃতি দিচ্ছিলেন। অথচ হিন্দু-মুসলিম মিলনের মত একটা জরুরী কাছে তিনি নিজে এগিয়ে না এসে একজন মধ্যস্থ লােক কেন ঠিক করেছিলেন? ১ই জুলাই পর্যন্ত গান্ধীজী পাকিস্তানের কথা চিন্তা করাকে গুৰুতর পাপ বলে বিশ্বাস করতেন এবং দিব্য চোখে অখণ্ড ভারত মাতাকে সামনেই হাজির দেখতে পেতেন। ১০ই জুলাই এমন কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হােল জানি না, গান্ধী-আচারী দুনিয়ার চোখে ধাধা লাগিয়ে দিয়ে ঘােষণা করলেন যে তারা মুসলিমদের পাকিস্তান বিয়ে ফেলেছেন। এবানকে গ্রহণ করবার শক্তি গণতন্ত্রের পূজারী জিন্নার একা ছিল না। ভীষণ উত্তেজনার দিনগুলো কেটে যাওয়ার পর যখন এ চুড়ান্ত হন সম্বন্ধে বিশেষ চিন্তা করে দেখবার সময় এল তখন দেখা গেল এটা একটা বড় রকমের চালবাজী।
দ্বিতীয়তঃ গান্ধীজী কোন সিদ্ধান্তে এসে পেছলে কংগ্রেস তা মেনে নেবেই বা কেন! অথচ জিন্নাহ, কোন আপােষ নামায় রাজী হােলে
৬৪
পাকিস্তান আন্দোলন সেটা মেনে চলা লীগের পক্ষে অপরিহার্য হয়ে পড়বে। অনেক হিন্দু নেতা গান্ধীজীর নিকট খােল। চিঠি লিখে তারা মুসলমানদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে মেনে নেওয়ার ক্ষমতাকে প্রশ্ন রয়েছেন। কিন্তু এটা কি বাস্তব সত্য? গান্ধীজীর ক্ষমতাকে প্রশ্ন করার শক্তি কি কংগ্রেস বা হিন্দু নেতৃবশের আছে। বিগত ১২/১৩ বৎসর হহতে তিনি কংগ্রেসের চার আনার সদস্যও নন। অথচ কংগ্রেসী আন্দোলন চালাবার সমস্ত ভার দেওয়া হয় তাকে। ১৯৩৭ সনের পর হােতে ভারতের রাজনীতিতে এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যাতে ছদ্মবেশে কংগ্রেসের আড়ালে থাকাই তার এবং কংগ্রেস উভয়ের পক্ষেই মঙ্গল। আলোচনা চালিয়ে সিদ্ধান্তে পৌছবেন তিনি। কাজেই যার সাথে আলােচনা চালালেন তিনি বাধা পড়ে গেলেন, কিন্তু কংগ্রেসের বাধা পড়বার কোন প্রশ্নই উঠে না। গান্ধীজী যদি দেখেন যে উপস্থিত সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের মানা উচিত নয় তখন অন্যদলের নেতাকে বলবেন ; ভাই আমি আর কি করব, কংগ্রেস এ শর্ত মানতে রাজী নয় আর আমিও কংগ্রেসের সদস্য নই।
আমরা জানি গান্ধীজী কংগ্রেসের ডিক্টেটার; তার অপরিসীম ক্ষমতাকে অস্বীকার করবার সাধ্য হিমুদের নেই। মিঃ ডি এন ব্যানাজির লিখিত ‘দি মডার্ণ রিভিউ’, এর প্রবন্ধগুলা পড়ে আমাদের মনে সন্দেহ জাগে, সত্যিইত গান্ধীজী কে যে সমস্ত আলােসন পরিচালন করেন তিনি? তবে কি বুঝতে হবে যে কংগ্রেন সভাপতি আন্দোলন পরিচালন করবার শক্তি নেই ? তবে কি তিনি খােবয় মাত্র। তিনি যদি এ দায়িত্ব নিজ স্কন্ধে নিতে না পারেন তবে এ গুরু দায়িত্ব পরিচালনা করবার ভার ওয়ার্কিং কমিটির উপর ছেড়ে দিলেই পারেন অথবা বেসরকারীভাবে গান্ধীজীর উপদেশ নিলেই পারেন। বাইরের লােক এসে সময়ে অসময়ে একটা হলকে পরিচালনা করবে এটা বিশ্বের রাজনীতিতে অভিনব ব্যাপার।
কিছুদিন পূর্বে গান্ধীজী নেহেরুকে তার উত্তরাধিকারীদের সােল, এঞ্জেলী দিয়ে একটা ঘােষণাবাণী প্রচার করেছেন। রাজতন্ত্রের যুগে?
৬৫
রাজপুত্রকে রাজার নিজ সম্পত্তি কংগ্রেসের উত্তরাধিকারী বলে ঘোষণা করে গান্ধীজী ঠিকই করেছেন। কংগ্রেসের নেতৃত্বের ব্যাপারে জনমত বা মােগ্যতা অপেক্ষা গান্ধীজীর সার্টিফিকেটের মূল্যই অধিক। গান্ধীজীর মােকাবেলায় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দের স্বাধীন সত্বা বলতে কিছু আছে কি (?) : গান্ধীজীর ইচ্ছায় ডিটো থিরে যাওয়াকেই তারা পরম সৌভাগ্য বলে মনে করেন। মিঃ সিতারামিয়ার পরামকে গাজীর নিজের পরাজয় বলে ঘোষণা করেন বলেই নির্বাচনের মাত্র তিনমাস পরে কংগ্রের মিঃ সুভাষ বােসকে তাড়িয়ে দেয়। আমাদের বিবেচনায় তাঁর ছদ্ম আবরণের আড়াল হােতে বেরিয়ে এসে কংগ্রেসের কর্মভার গ্রহণ করা উচিত। | আচারী ফমলায় প্রথম ফাটাতেই মুসলিমদের স্বাধীন হওয়ার আকাঙ্খাকে অবিশ্বাস করা হয়েছে। গান্ধী আগরী সেজাই কায়েবে আজমকে শপথ করে নেওয়াতে চাচ্ছেন যে লীগ স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেসের সহযােগিতা করবে। এ অফাতে Transitional period এর জ একটা সাময়িক অস্থায়ী সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে। মুসলিম লীগ সমান অধিকার না পেলে এ সরকার মুসলমানদের জন্য চির সত্বই নিয়ে আসবে। অথচ মৰলিমদের আত্মনিরণের দাবীকে এসরকার গঠনের পূর্ব মেনে নেওয়া হবে না। মুসলিমরা পাকিস্তান চায় কি না একে চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করবার জন্য গান্ধীজী ভােটাভুটর প্রশ্ন তুলেছেন। গাজীকে জিজ্ঞাসা করি ,টশ সরকার যদি তাকে বলেন যে ভারতবাসী স্বাধীনতা চায় কি না তা ভােটাভুটির দ্বারা প্রমাণ করতে হবে তবে কি তিনি এ প্রশ্নকে বাতুলের প্রস্তাব বলে উড়িয়ে দেবেন না।
মােটের উপর এ ফমূলায় মুসলমানদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকেও মেনে নেওয়া হয়নি। অবশ্য আত্মনিয়ন্ত্রণ পাওয়া এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পাওয়া দুটো সম্পূর্ণ পৃথক জিনিষ। গাভী-আচারী মুসলিমদের এবাৰীৰ চারধারে একটা আবরণের সৃষ্টি করে কতগুলো ভােট হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। নইলে আচারী নিম্নের ঘোষণ • বাণীই বা কেন করলেনঃ- It will be open to all parties to
৬৬
advocate their points of view before the plebiscite is held. কায়েদে আজম এদাবী মেনে নিলে টাকার জোরে মিরজাফর সৃষ্টি করে নিতে অবশ্য কংগ্রেসের বেগ পেতে হােত না। ভাঃ আম্বেদকার তাই বলেছেন “একটা ধানের চেয়ে বানের পেছনের আন্তরিকতাটাই প্রধান ‘:। তিনি আরও বলেছেন
“Mr Jinoab may. well ask Mr. Rajagopal Acharia if there was any truth in the disclosure made in his defamation case about his intention to offer Pakistan to Muslim and then to circumvent it by purchasing Muslims in Pakistan to negative the offer Mr. Gandhi will have to prove his sincerity bebind the offer and also guarantee that Hindus would not prevent Muslims. from giving a free vote.” | ‘মাদ্রাজ সানডে অবজারভারের বিরুদ্ধে আনীত মামলার শুনানীর সময় আচারীর ভিতরের সমস্ত গলং ফাস হয়ে যায়। বিশেষ করে মিঃ আচারীর সহকর্মী ও অন্যতম বন্ধু মিঃ গুণবদ্ধ’ন উল্লিখিত মামলার সাক্ষী রূপে য়ে বিবৃতি দেন তা এসত্যতাই প্রমাণ করে। তিনি বিবৃতি প্রসঙ্গে বলেন-আমি তাকে (আচারীকে) জিজ্ঞাসা করেছিলাম কংগ্রেস মুসলিমদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে নাকচ করার পরেও তিনি কেন পাকিস্তান বীকে সমর্থন করে চলেছেন। তিনি আশ্চৰ্যান্বিত হয়ে বলেন সম্বন্ধে আমার ঘােষণা সমূহকে বিশেষ মনযােগের সাথে আপনার পড়া উচিত। দেখতে পাবেন আমি যা বলতে চেয়েছি মিঃ জিন্নার স্কিম হােতে তা সম্পূর্ণ পৃথক। সােজাসুজি পাকিস্তান বীর বিরুদ্ধাচরণ করে কংগ্রেস একটা মস্তবড় ভূল করেছে। মিঃ জিন্নাহ, চেয়েছেন পাকিস্তানের মুসলিমরাই কেবল আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পাবে, আমি বলি পাকিস্তানের হিন্দু-মুসলিম উভয়েই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পাবে। পাঞ্জাব, সিন্ধু ও বাঙ্গলার অমুসলিমরা গণনায় সংখ্যালষ্ঠি হলেও অন্যান্য সমস্ত বিষয়ে ভীষণ শক্তিশালী। যদি তারা দেখতে পায় যে এ অঞ্চলগুলাে পৃথক হবার উপক্রম করেছে তখন
৬৭
কংগ্রেসের সাথে হাত মিলিয়ে এ সুযােগকে নস্যাত করে দেবে। পাকিতানবীকে বাধা দিলেই অধিকতর শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং বিভিন্ন মতাবলী মুসলমান এসে জিয়ার নেতৃত্বে আস্থাবান হয়ে পড়বে। কংগ্রেস এখানেই ভুল করেছে। আর আমি এ ভুলের সংশোন করছি মাত্র। জাতীয় গভর্ণমেট গঠন ব্যাপারে একবার কোন রকমে আমরা যদি লীগের সমর্থন পাই এবং কংগ্রেস হাতে ক্ষমতা পায় তখন এ গােলমালকে কেমন করে আমাদের সুযােগে লাগান বার দেখা যাবে। মিঃ গুন বন্ধনেয় বিবৃতিকে সাধারণের সুবিধার জন্য আমরা উদ্ধত করে দিলুম
“He said, you read my speeches on the subject more carefully and you will find that my scheme is different from Mr. Jionab’s Congress made a tactical mistake in openly opposing Pakistan. While Mr. Jindab wanted the issue to be ultimately determined by the Muslims alone of the territory concerned, I want all the people of the area, both Muslims and non Muslims. The don Muslims in the Punjab, Sind and Bengal may be numerically smaller but they are far too poworful apd once they saw the prospect of seperation being real they will combine with the Congrees to fail the referendum. By opposing the Pakistan demand, the demand will grow stonger and Muslims of all shades rally together under Mr. Jinnah’s banner. That is where the Congress made mistake, which I am trying to correct. Once we gucceed in getting cooperation of the other parties, particularly of the Muslim League to secure a national government, and. Congress is again in power, we shall know how to use the crisis to our advantage.’ | মিঃ আচাৰী এ সাক্ষীকে জেরা করতে পারতেন কি করেননি, সুতরাং মিঃ গুণবন অবিকল আচারীর কথাই বলে গেছেন। বাজাজীর এ মতামতকে গান্ধীজীও স্বণার চক্ষে দেখেছেন। গান্ধীজী ৮ই আগষ্টের ( 99 7699 :- Rajaji said to me I do not believe in
৬৮
Pakistan. But the Musalmans ask for it and it has become an absession with them. Why not say ‘yes’ to them just now? The same Mr. Jindah will later on realise the disadvantages of Pakistan and will love-go the demand. I said it is not fair to accept as true anything which I bold to be untrue and ask others to do in the belief that the demand will not be pressed when the time comes for setting it finally. I should not agree to it merely in order to placate Jinpah Sahib. Many friends have come and asked me to agree to it for the time being to placate Mr. Jindah and dispel his suspicions and see how be re-acts to it. If I hold the demand to be just 1 should concede it this very day.”
গান্ধী-জিন্নাহ, মিলনের সময় গান্ধীজী পাকিস্তান বীর মূলনীতিকে মেনে নিয়েছেন। এর পূর্বে কি তিনি পাকিস্তানের দাবীকে বুঝতে পারেননি। মা আচারীর এই ফাকিবাজিই শেষ পর্যন্ত তার উপর প্রভাব বিস্তার করেছে। তবে কি তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, পাকিস্তান বারীকে টর্পেডো করবার এটাই একমাত্র উপযুক্ত পথ? সুতরাং আমাদের মনে হচ্ছে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ প্রকাতে হত কিছুই বলন না কেন ছদ্মবেগে প্রতি পৰিক্ষেপে তারা হিন্দ রাজের কথাই চিন্তা করেন। ১৩ই জুলাই পাচগনিতে অবস্থানকালে প্রেস রিপােটাৱেরা গান্ধীজীকে জিজ্ঞাসা করেন যে তার বর্ত্তমান প্রস্তাব এবং ক্রিপস, প্রস্তাবে কোন সামঞ্জস্য আছে কি না? গান্ধীজী বলেন-My proposal is wholly different. The Cripps proposals were unacceptable to me for the simple reason thai they contemplated almost perpetual vivisection of India and would have created an effective barrier against Indian independence.”
উপরােক্ত বিভিন্ন কারণে গান্ধী-আচারীর সহৃদ্যতা সম্বন্ধে আমরা সন্দিহান হয়ে পড়েছি। পক্ষান্তরে তারা যদি সত্যিকার সমস্যা সমাধানের জন্ম এগিয়ে এসেছিলেন তৱে পাকিস্তান রাষ্ট্রকে প করে
৬৯
ফেলবার ষড়যন্ত্রই বা কেন করলেন? পাকিস্তানের ১০ কোটি মানবের পূর্ণ বিকাশের জয় এই উপমহাদেশের ৪ অংশ পাকিস্তানের ভিতর ফেলতে হবে। আচারী প্রস্তাবে সিন্ধু, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, অধ পাঞ্জাব এবং অধ’ বাঙ্গালাকে মিলিয়ে মুসলমানদের সমস্ত ভারতের ১ অংশ নিতে চাওয়া হয়েছিল মাত্র। আচারী প্লানে মুসলিমদের সম্প্রসারণের ভবিষ্যৎকে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। অথচ যে কোন রাষ্ট্রের জন্য সম্প্রসারণের স্থান খুবই জরুরী। পূর্ব বাঙ্গালার সম্প্রসারণের প্রশ্ন এখন দাঁড়িয়ে গেছে বলে আমাদের বিশ্বাস। পাঞ্জাব সম্বওে ঠিক একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয়তঃ শিল্পোন্নত পশ্চিম বাঙ্গালা, কলিকাতা বন্দর, বর্ধমানের কয়লা ইত্যাদি মূল্যবান দ্রব্য সমুহকে পাকিস্তান রাষ্ট্র হোতে খসিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র এ প্রস্তাব করা হয়েছিল।
আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবীকে সাব্যস্ত করবার জন্য কংগ্রেস হিন্দু-মুসলিম ভােটের কথা তুলেছে কে? তবে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ কি মনে করেন যে, যুক্ত ভােটাভুর কথা উঠলেই মুসলিম জাতি পাকিস্তান সম্বন্ধে দৃঢ়নিশ্চিত হবার জন্য পশ্চিম বাঙ্গালা এবং পূর্ব পাঞ্জাবকে আপনা আপনি পাকিস্তান হােত বাথ দিৰে। পশ্চিম বাঙ্গালা এবং পূর্ব পাঞ্জাব পাকিস্তানের শামিল হবে কিনা সেট! লীগের নিকট অবশ্য খুব বড় কথা নয় এবং লীগ তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদেরকে জোর করে পাকিস্তানের অন্তভূক্ত করতে চায় না। এজন্যই লাহাের প্রস্তাবে “পুনর্বণ্টন” কথাটার উল্লেখ আছে। অনেকগুলাে জেলা আছে যেখানে মুসলমানেরা সংখ্যালঘিষ্ঠ বটে কিন্তু অর্থনৈতিক ও অন্যান্য কারণবশতঃ সেগুলােকে নিজেদের স্বার্থেই পাকিস্তানের ভিতর আসতে বাধ্য হহতে হবে। কাজেই বমান বিভাগকে স্বাধীন পাকিস্তান গঠনের পূর্বেই বিহারের মধ্যে ফেলে দেয়ার চিন্তাকে কেবল উন্মই মনে স্থান দিতে পারে। একটা বটশ পত্রিকা এ সম্বন্ধে বলেছে :-while the Raja GopalAcharia plan concedes division, it is division with many limitations. The Muslims are to have those sections of India in which they have absolute majority determined
৭০
by a plebiscite, leaving the adjoining districts free to decide whether they adhere to the Hindu or to the Muslim Government. That would leave Pakistan like a moth-eaten patch-work quilt without even the threads to hold its seperate portions together.”
পৃথক হওয়া সাব্যস্ত হলেও বহির্বাণিজ্য, বৈদেশিক সম্বন্ধ, শুক্ত, দেশরক্ষা ইত্যাদি সমস্বার্থের বিষয়গুলাে পরিচালনার জন্য নাকি হিন্দুস্তান পাকিস্তানের মধ্যে একটা চুক্তি করতে হবে। তবে গান্ধী-আচারীর রাজনীতি সম্বন্ধে কি একটা সুস্পষ্ট জ্ঞান নেই জানতে হবে ? দুটো ৰাই গঠন হওয়ার পরই কেবল এ সমস্ত চুক্তি হােতে পারে, পূর্বে নয় । আর পূর্বেই যদি চুক্তি হয় তবে তারা উভয় রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ দ্বন্দ্বকে কি ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন । এ সন্ধির পেছনে কোন sanctionই বা
বে।
মিঃ আচারী ১৬ এবং ২৩শে জুলাই এর পর প্রেস রিপােটারদের 16619 :-“It was no small thing that I had offered. Mr. Jinnah had before him the maximum the Congress or nationalist India could agree to.” A 9181678 afarba 1 পরিবধন করতে মিঃ আচারী রাজী হননি। কাজেই তিনি কায়েরে আজষের দিকে পিস্তল রে বললেন হয় গ্রহণ নচেৎ নাকচ করুন। গান্ধীজিন্নাহ, আলোচনার সময় গাজী পাকিস্তানের নবী মেনে নিলেও বেশী কিছু লাভ হােত না। কেননা তিনি এতে কংগ্রেসকে রাজী করাতে পারলেও হিন্দু মহাসভাকে রাজী করাতে পারতেন না। কংগ্রেস বা লীগ ও মহাসর কোন রাজনৈতিক মূল্য নের না বুও গান্ধীস্ত্রী হত বলতেন “কংগ্রেস ত হিমুসলিম উভয় জাতিরই প্রতিষ্ঠান। ওদিকে হিশদের প্রকৃত জাতীয় প্রতিষ্ঠান হােল মহাসভা ওরা রাজী না হােলে আমি কি করতে পারি।” | গা-হি আলােচনার পর একটু বেকায়দায় পড়ে তিনি ঠিক এ কথাই বলেছিলেন-“r have not spoken as a Hindu. I have
৭১
spoken as an Indian first and an Indian last. My Hinduism is my own. I personally think it embraces all faiths. Therefore, I have no authority to speak as a representative of the Hindus.” গা-জিদাহ, মিলনের সময় মুসলিম জাতি বা মুসলিম সংবাৱপৱ সমূহ টু শট পর্যন্ত করেনি। তারা একটা সত্যিকার মিলন কামনা করেছিল; কিন্তু হিন্দ, জনসাধারণ ও শত শত হি সংবাদপত্র যেভাবে হৈ চৈ আরম্ভ করেছিল তা সত্যিই ঘৃণাহ। মুসলিম জাতি তাদের জাতীয় নেতাকে যেমন ভাবে বিশ্বাস করে চলেছিল হিন্দুতারত তাই করলে নেতারা একটা নিশ্চিত সিদ্ধান্তে এসে পৌছতে পারতেন। হিমু ভারতের
রুণ আলােলন দেখে গাধীজী আর বেশী দূর এগোতে সাহস করলেন না, মধ্য পথে রণে ভঙ্গ দিয়ে সরে পড়লেন।
অদীয় সম্মেলন গান্ধীজিলহ মিলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবার পর ভারতের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জয় নেমে এলেন রাজনৈতিক এতিম স্যার তেজ বাহাদুর সাক। অলীর লের নেতা হিসাবে সলেন আহ্বানের পূর্বে মুসলিম ভারতের নেতা কায়েদে আজম এবং হিন্দু ভারতের একচ্ছত্র অধিপতি গান্ধীজীর সাথে মােলাকাত করে এ সম্বন্ধে তাদের মতামত নেওয়া তার উচিত ছিল। সাঞ্জী তা না করে কেবল গান্ধীজীর আশীবাঁধ শিয়ে নিয়ে কাজে নেমে পড়লেন। তিনি স্বাদের সম্মেলনে আহবান করেন তারা সবাই হয় কংগ্রেস অথবা মহাসভায় অবিশ্বাসী নইলে সরকারের দালাল। একমিটিতে যে ২৩ জন মুসলিমকে নেওয়া হয়েছিল তাঁরাও সরকারের খেতাবধারী। কাজেই সাঙ্গী মুসলিম ভারতের জনমত সম্বন্ধে সম্পন অপরিচিত এবং অনভিজ্ঞ মুসলিম নিয়ে কংসের তল্পিবাহক হিসাবে গােপন উদ্দেশ্য সিদ্ধি মানসে রাজনীতিতে নেমে পড়লেন। ভারতের স্বাধীনতায় যে পথ এ গােলামের বাতলালেন তা মুসলিম ভারত দুরের কথা কি ভারতও মানতে পারেনি।
৭২
মাঝ থেকে রাজাজী বোষণা করলেন এ সম্মেলন যে রায়ই দিক না / কেন মুসলিয়ে তা মেনে নেওয়া উচিত। রাজাজীকে জিজ্ঞাসা করি একটা গঠনতন্ত্র সম্পূর্ণ ভাবে জানবার আগে তা মেনে নেওয়া কোন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কি সম্ভব? স্বভাবতই আমাদের সন্দেহ জেগেছিল । কংগ্রেসগােপন উদ্দেশ্য সিদ্ধি মানসেই এ দালালদের নিযুক্ত করেছিল। যে দু একটা মুসলিম প্রতিষ্ঠান একমিটির নিকট স্মারকলিপি পাঠিয়েছিল তারা পাকিস্তান দাবী মেনে নেওয়ার উপরই জোর দিয়েছিল। অন্যায় প্রভিষ্ঠানের স্বারকলিপি বা তাদের সারমর্ম সংবা পত্রগুলােতে বের করে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু এ গুলােকে জনসাধারণের সামনে ধরবার ভদ্রতাটও এ কমিটির নেই। কমিটির সারমর্ম প্রকাশিত হলে দেখা গেল, লীগকংগ্রেস যখন স্বাধীন পাকিস্তানের কথা ভাবছে, বিংশ শতাব্দীর এই বৃদ্ধের হল তখন বটশ বেয়নেটের আড়ালে ডোমিনিন অর্জনের কথা চিন্তা করছেন। লজ, অপমান এবং ক্ষোভে তিনি আজ পর্যন্ত তার সম্পর্ণ ফলাকে জনসাধারণের সামনে পেশ করতে সাহস করেননি। এ প্রস্তাবে মুসলিমদের ৪০% ভাগ, হিন্দুদের জন্য ৪৫% এবং অন্যান্য সংখ্যালঘিষ্ঠ বা অনুন্নত সম্প্রদায়গুলাের জন্য ২০% ভাগ আসন সংরক্ষিত করা হয়েছিল। প্রস্তাবের ভূমিকাতে বলা হয়েছিল। এ ফমূলা গ্রহণের পূবেই মুসলমানদের পাকিস্তান হাবী ত্যাগ করে যুক্ত নির্বাচন প্রথাকে মেনে নিতে হবে। জাগ্রত ভারত গােলামদের পরাধীন মনােভাব এবং মতামতকে গ্রহণ করতে পারেনি বলেই, এখানেই এ চেষ্টার পরিসমাপ্তি ঘটে।
লিয়াকত-দেশাই চুক্তি
শাপ্রুজী যখন ষড়যন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তখন কেন্দ্রীয় সরকার লীগকংগ্রেসের সম্মিলিত চেষ্টার ফলে বারবার পরাজয় বরণ করছিল। পুনঃ পুনঃ এ পরাজয়ের ফলে সাম্রাজ্যবাদী বৃটশকে পৃথিবীর স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের বিশেষ করে পৃথিবীর মুক্তিকামী জনগণের সমালােচনার সম্মুখীন হােতে হয়। সৌভাগ্যের বিষয় এই যে এ সময় কেন্দ্রীয় পরিষধের লীগ-কংগ্রেস দলে
৭৩
নেতারা অস্থায়ী সরকার গঠন সম্বন্ধে একটা স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হােতে সমর্থ হন। পৃথিবীর মুক্তিকামী জনমতের চাপেই বৃটিশ সিমলা সম্মেলন আহ্বান করে। বৃটিশের বিভেদ নীতির জন্যই অবশ্য সিমলা বৈঠক ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
লিয়াকত-দেশাই চুক্তির ভিত্তি ছিল লীগ-কংগ্রেস সমতা; কিন্তু ওয়াভেল পরিকল্পনার মূলে ছিল হিন্দু-মুসলিম সমতা। কংগ্রেস সহি লিয়াকত-দেশাই চুক্তির উপর জোর দিত তবে মিলনের সত্যই একটা পথ খুজে পাওয়া যেত এবং চাচি-ওয়াভেলের এ ভাওতাও পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হােত। কংগ্রেস বুঝল জিন্নাহ, সাহেব এর ভিতর দিয়ে দুই জাতিত্বের মতবাদকে মানিয়া নিচ্ছেন, সে জন্যই সিমলায় অবস্থান কালে মিঃ দেশাই এরূপ কোন চু জর কথা সব প্রথমে অস্বীকার করেনL
দেশাই-লিয়াকত চুক্তির একটা গােপনীয় কারণও ছিল। এ ব্যাপারটা কংগ্রেসের গত কয়েক মাসের কর্যকলাপ দেখে দিবালােকের ন্যায় পরিকার হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন জেলে থেকে কংগ্রেস কর্মীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন কিন্তু বেরিয়ে আসবার উপায় কি ? আগষ্ট বিদ্রোহের ভিতর দিয়ে তারা এতবড় গুরুতর অন্যায় ও ভুল করেছিলেন যে নিজেদের নিবেষি প্রমাণ করবার কোন উপার ছিল না; বরং নিজেদের বিবেকের নিকটেই এরা দােষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। একমাত্র লীগের সাথে আপােষ রফায় কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে রাজী হওয়ার দ্বারাই নেতৃত্বকে জেল হতে বের করে আনা সম্ভব ছিল। এরূপ গভর্ণমেন্ট গঠনের কথা পাকাপাকি হয়ে গেলে সল্লাপরামণ ও গভর্ণমেন্ট গঠনে সহােগিতা করবার জয় সরকার, কংগ্রেনীদের মুক্তি দিতে বাধ্য হহতেন। এই চুক্তির কারণেই ওয়াভেল রাজবন্দীদের মুক্ত করতে শুরু করেন। কাজেই দেশাইজীর চাল সাফল্য মণ্ডিত হওয়া মাত্র কংগ্রেসী নেতৃবৃন্দ চুক্তির কথা ভুলে গিয়ে সরকার গঠনে শীগকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্তে মেতে গেল। এ চুক্তির মধ্যে দেশাইজীর সহৃদ্যতার পরিচয় পাওয়া যায়নি বলেই কংগ্রেস সিমলা বৈঠকে স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে।
৭৪
িসমলা বৈঠক
সিমলা বৈঠকে কংগ্রেস বৃটিশ কুটনীতির নিকট সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়েছে। বঙ্গীয় প্রাদেশিক লীগের সম্পাদক মিঃ হাশেম বৃটিশ ফুটনীতির নিকট কংগ্রেসের চুড়ান্ত পরাজয়ের কথা উল্লেখ করে বলেছেন“আমর’ বৃটশ কটনীতির নিকট সম্পণভাবে পরাজিত হয়েছি। লীগকংগ্রেস আপোষের জন্য কংগ্রেস কায়েদে আজমের পরামর্শ গ্রহণ করলেই ভাল করত।” কংগ্রেস সন্সেনে প্রবঞ্চনার জালে জড়িয়ে পড়ল। কায়েদে আজম গান্ধীজীকে সম্মেলন হােতে বেরিয়ে এসে নিজেদের মধ্যে আপােষ করে মিলিত দাবী পেশ করবার জন্য মি পন্থের মধতার চেষ্টা করলেন। গান্ধীজী পরিচালিত কংগ্রেস তখন নিজেদের স্বাধীন সত্বাকে লিখরাে বা জগদীখাে’বু পায়ের নীচে বিলিয়ে দিয়েছিল। ওভেলের নিকট কংগ্রেসের আত্মসমর্পণের কথার উল্লেখ করে ভূতপূর্ব কংগ্রেসী মন্ত্রী মিঃ রমানাথন কিছুদিন আগে ঘােষণা করেছেন যে আগষ্ট প্রস্তাব গ্রহণ করে কংগ্রেস নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছে। তারা তাদের বিবেকের নিকট দায়ী হয়ে পড়েছিলেন বলেই গােলামী মনােভাব নিয়ে সিমলায় উপস্থিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয়তঃ পুণ’ আত্মসমর্পণ ছাড়া কংগ্রেসের অত্যন্তরও ছিল না। কেননা জাতীয় দিনে কংগ্রেস জনগণের সেবা করতে পারেনি বলেই জনগণ কংগ্রেসের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এই অবস্থার সাধারণ নির্বাচনের সম্মখীন হওয়া কংগ্রেসের পক্ষে অসম্ভব। সরকারীপৰে অভিষিক্ত হয়ে কংগ্রেস তাই বীরবেশে ভােটারদের সামনে উপস্থিত হতে চেয়েছিল। এই হীন উদেয় সিদ্ধি মানসে কংগ্রেস নি অথর্শ বিচ্যুত হয়েও ওভেলের পাতা ফাঁদে ধরা দিয়েছে। জাতীয় বীর কায়েদে আজম ওয়াভেল পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে দিয়ে ভারতের সম্মানকে অক্ষুন্ন রেখেছেন এবং জাতীয় কলঙ্ক শচন করেছেন।
সিমলার প্রত্যেকটা রাজনৈতিক মহলের বিশ্বাস মাওলানা আজাই এবং তার সাপােরাই লীগ-কংগ্রেস ফিনে পরিণী হয়ে পড়ার।
৭৫
এই মুসলিম কুইসলিংগুলােই লীগ-কংগ্রেস মিলনের পথে অন্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্মেলন ব্যথ হােক তৰু ভাল কিন্তু প্রস্তাবিত শাসন পরিষদের মুসলিম সদস্য সংখ্যার কিছুটা অংশ এর চাইই। মাওলানার এই একগুয়েমি কংগ্রেসী মহলেও বিশেষ বিরক্তির সঞ্চার করেছিল। পাঞ্জাও কায়েদে আজমের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করে সমভৱ সমাধান করতে চেয়েছিলেন। মওলানা তাকে পদত্যাগের হুমকি ধিরে মিলনের সমস্ত চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিলেন। মিলন না হােক সেটাও ভাল কিন্তু মওলানাকে হারান ৰাবে না; কেননা মুসলিম কওমের ভিতর হােতে এরূপ মিরজাফর বের করতে ভবিষ্যতে ভীষণ বেগ পেতে হবে।
ওয়াভেল পৰিকল্পনা ঘােষিত হওয়ার পর গান্ধীজী কংগ্রেস নেতাদের সিমলা সম্মেলনে যােগ দিতে নিষেধ করলেন। ভাবলেন হিন্দু-মুসলিম সমতা স্বীকার করে নেওয়ার অর্থই হচ্ছে দু’জাতিত্বের মতবাদকের করে নেওয়া। অন্যান্য কংগ্রেস নেতা কিন্তু লীগকে ক্ষৰ ৫ বার এরূপ সুবর্ণ সুযোগ ছাড়তে রাজী হেলেন ন’। কংগ্রেস নেতা প্রফেসর রঙ্গের বিবৃতিতে এ সত্যটাই ফুটে উঠেছে। তিনি বিবৃতি দান প্রসঙ্গে বলেন‘‘সিমলা বৈঠক ব্যর্থ হােক অথবা সফল হােক কংগ্রেস জিতবেই। কংগ্রেস ওয়াভেল পরিকল্পনাকে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করে লগ-বৃটিশ যােগ’যােগ নষ্ট করে দেবে। সন্মেলন ব্যর্থ হোলেও কয়েস এমন ব্যবস্থা করে রেখেছে যে সরকার লীগকেই এ ঐ দায়ী করবে। সম্মেলন সাফল্য মণ্ডিত হােলে ইউনিয়নিষ্টরে সহযােগিতায় কংগ্রেন লীগকেই জব্দ করবে। আমরা যদি ইউনিয়নিষ্টদের সহযােগিতা পাই তা হােলে লীগের কণ্ঠরােধ করা সহজ হবে। সরকারী পদগুলো আমরা অধিকার করব এবং ক্ষমতা হাতে পেলেই লীগকে প্রাণান্ত করে তুলব।”
কংগ্রেস নেতৃন্দের বক্ততার কথা উল্লেখ করে যখন তাকে দেখান হয় যে জীগকে উপেক্ষা করবার ইচ্ছা কংগ্রেসের নেই তখন তিনি বলেন“লীগের ঘাড়ে ব্যর্থতার দায়িত্ব চাপানাের জন্য ওটা কগ্রেসের একটা নিছক চাল মার।•• ফেলে আর রুশ সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে হাত মিলিয়েছি
৭৬
আর প্রদেশগুলােতে তাদেরই চেলাচামুণ্ডাদের সাথে হাত মিলাৰ এবং এই উপায়েই লীগকে খতম করব ।••••••সমস্ত কংগ্রেসীদের আজ বুঝতে হবে যে লীগই কংগ্রেসের প্রধান শত্রু এবং যেমন করেই হােক লীগকে মন করতে হবে।” .
‘ভারত ত্যাগ কর’ প্রস্তাব আজও বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে এবং এর একটা কম। কেটে নেওয়ার ক্ষমতা গান্ধীজীর বা কারও নেই। তবে কংগ্রেসীরা বৃটিশ শক্তিকে ভারতে কায়েম রাখার জন্য এত হীন মনােভাব নিয়ে ওয়াভেলের নিকট আত্মসমর্পণ কয়েছিল কেন? এ প্রস্তাব তথাকথিত স্বাধীন ভারতের কিছুই দিতে চাওয়া হয়নি বা স্বাধীন ভারতের নাম গন্ধও এ প্রস্তাবে ছিল না; অথচ ক্রিপস, প্রস্তাবে সব কিছুই দিতে চায়। হয়েছিল। তবে কংগ্রেস ক্রিপস, প্রস্তাব নাকচ কল কেন, কেনই বা ওরাভেল প্রস্তাব গ্রহণ করবার জয় লালায়িত হয়ে উঠেছিল ?
আমাদের মতে গান্ধীজীই প্রকৃতপক্ষে ভারতের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়ে ছেন। এখন যিনি হিন্দু কংগ্রেসের ডিক্টেটর সেজে সমস্ত আলােলন পরিচালনা করছেন, তিনিই হয়ত ঠিক পর মুহূর্তে বলবেন যে, কংগ্রেসের তরফ হােতে কথা বলবার ক্ষমতা তার নেই। অদ্ভুত গান্ধীজীর মনোভাব আরও অদ্ভুত। হিন্দু ভারতের নেতা হিসাবে তাকে সম্মেলনে আহ্বান করে গড় ওয়াভেল ঠিকই করেছিলেন। কিন্তু মৌলানা আজাদকে সম্মেলনে আমন্ত্রণের জয় গান্ধীজীর পীড়াপীড়ি এবং সম্মেলন হতে অনুপস্থিত থাকবার মতলব এই দুটো কারণেই সিমলা বৈঠক ব্যর্থ হয়েছে। মওলানা আজাদকে সম্মেলনে না পাঠিয়ে গান্ধীজীর উপায় ছিল না। কংগ্রেসের একচ্ছত্র নেতা হিসাবে গান্ধীজী সিমলা বৈঠকে যােগ দিলে দুনিয়া মনে করত, গান্ধীজীই আগষ্ট আন্দোলন পরিচালনা করবার ভার পেলেন এবং কংগ্রেসের একচ্ছত্র নেতা হিসাবে সিমলা বৈঠকে যােগদান করলেন, তবে মওলানা লােকটা আবার কে? অন্যদিকে লীগ-কংগ্রেস সমতায় মিটমাট হােলে জাতীয়তাবাদী মুসলমানদের রাজনৈতিক চির মরণ ঘটত। পক্ষান্তরে কংগ্রেসের জন্য নির্দিষ্ট ৫০%টা আসন হতে কয়েকটা
৭৭
আসন জাতীয়তাবাদী মুসলিমদের দিতে হােত। গান্ধীজীকে বাধ্য হয়ে এটা করতে হােত; কিন্তু হিন্দুভারত গান্ধীজীর এ অনাচার সহ্য করে নিতে রাজী ‘হােত না। বরং হিমুভারতের নিকট জবাবদিহির জ গান্ধীজীকে আসামীর কাটগড়ায় দাঁড়াতে হােত। কিন্তু মওলানা আজাদকে সম্মেলনে পাঠান হােলে তিনি নিজেদের রাজনৈতিক চিমরণ থেকে বাচার জন্য মুসলিমদের জন্য নির্দিষ্ট ৫০%টা আসন হোতে কয়েকটা খসিয়ে নেবার চেষ্টা করবেন এ বিশ্বাস গান্ধীজীর ছিল। এ সমস্ত বিপদ থেকে বাচাবার জন্যই তিনি মাওলানা আজাদকে সম্মেলনে আমন্ত্রণের জন্য ওয়াভেলের উপর চাপ দিতে থাকলেন।
ভারতীয় মুসলিমদের ধারণা-মুসলিম জাতির মত্যু পরােয়ানায় সই করবার জন্য গান্ধীজী মওলানাকে বছরের পর বছর ধরে কংগ্রেস গহীতে বসিয়ে রেখেছেন এবং কংগ্রেস হিন্দর জাতীয় প্রতিষ্ঠান জিন্নার দাবীকে ঘায়েল করবার জন্যই কংগ্রেস তাকে মাথার উপর তুলে ধরেছে। গান্ধীজী কিন্তু নাছোড়বান্দা, বড়লাটের উপদেষ্টা সেজে বসলেন। ইঙ্গ-কংগ্রেস ষড়যন্ত্রের ধারা উপলব্ধি করে কায়েদে আজমও বিচলিত হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু সম্মেলনে মােগ না দিলে তাকে সব দোষে দোষী করা হােত বলেই তিনি বৈঠকে যােগদান করেছিলেন। ঘটনার বিবর্তন দেখবার জন্য তিনি একটা নূতন পথ আবিষ্কার করলেন। সমস্ত হিন্দ-ভারত যখন ভিক্ষার পাত্র হাতে নিয়ে বড়লাটের দরবারে উপস্থিত হেলেন তখন তিনি ওয়াভেলকে জানালেন ওয়াকিং কমিটির মতামত না জেনে তিনি কিছুই করতে পারবেন না। লীগ ওয়াকিং কমিট বড়লাটের নিকট এই তিনটা দাবী পেশ করে –
(ক) লীগ ভারতীয় মুসলিমদের একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রস্তাবিত নৃতন শাসন পরিষদের সমস্ত মুসলমান সম্মথের মনােনয়ন করবে (সম্ভবতঃ লিয়াকত-দেশাই চুক্তি অনুসারে)।
(খ) লীগ জানতে চায় নূতন শাসন পরিষদের গঠন ও ক্ষমতা কি রকমের হবে এবং মুসলিমদের তুলনায় অন্যান্য সংখ্যালঘিষ্ঠদের কতজন প্রতিনিধি দেওয়া হবে।
৭৮
গ) হিন্দু, সংখ্যাগরি শাসন পরিষদের মতামত যদি মুসলিম জাতির স্বার্থের ক্ষতিকর হয় এবং মুসলিম স যদি একযােগে এই মতামতের বিরুদ্ধাচরণ করে তবে বড়লাট সংখ্যাগরিষ্ঠদের প্রস্তাবকে নাচক করে দিতে পারবেন এ প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
এদিকে ৪শ সরকাও চাননি যে লীগ-কংগ্রেস মিলিত হয়ে কেন্দ্রে এসে বসুক। কেননা লীগ-কংগ্রেস একবার মিলিত হতে পারলে ভারত হােতে তাদের খসে পড়তে হবে এটা বটশ সাম্রাজাবাদীরা ভাল করেই জানে। গোলমাল বাধিয়ে দেবার জন্যই ওয়াভেল লিয়াকত-দেশাই চুক্তিকে বাদ দিয়ে হিন্দ-মুসলিম সমতার কথা তুললেন। তিনি ভাল করেই জানতেন মুসলিম-হিন্দ, সমতার প্রশ্ন উঠলেই মওলানা কয়েকটা চাকুরী পাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করবেন, ফলেই বৈঠক বানচাল হয়ে যাবে। মওক্লান যখন চাকুরী পাওয়ার জন্য উৎসুক ওদিকে ওয়াভেল তখন নিজের একান্ত বশংবদ ইউনিয়নিষ্টদের একটা চাকুরী দিবার জ ভীষণ ব্যস্ত। সুতরাং পৃথিবীর মুক্তিকামী জনগণের চোখে বা লাগিয়ে দেবার জন্য এ প্রস্তাবটা বৃটিশের একটা চাল মার। কায়েরে আজ সম্মেলনকে বানচাল করে দিয়ে ভারতের জনগণের মহতী উপকার সাধন করেছেন। মিঃ রমানাথের ঘােষণায় এ সত্যটাই ফুটে উঠেছে।
ইসলাম ও মধ্যযুগীয় ভাবধাৱা
সিমলা সম্মেলনের ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়া হি নেতাদের ঘোষণার মধ্য দিয়ে ভীষণভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। বর্থতা উন্মাদনায় তারা ঘােষণা করেছেন লীগের দাবী অনৈক্যমূলক এবং মধ্যযুগীয় ভাবধারার উপর প্রতিষ্ঠিত। মধ্যযুগীয় ভাবধারা বলতে এরা বম ও রাজনীতির সংমিশ্রনকেই বুন। তাঁরা বলছেন জিনাহ মধ্যযুগীয় ভাবধারায় চিন্তা করেন সুতরাং তার রাজনীতি বর্তমান যুগীয় ভাষােরা বা গণতন্ত্র বিরােধী।
৭৯
ইসলামের পূজারী জিন্নাহ, কি সত্যই মধ্যযুগীয় ভাবধারার পরিপােষক? গান্ধীজী ও হিন্দুদের মত প্রাথৈতিহাসিক বনমূখীর ভাবধারার পরিপন্থী নয়। ইসলাম অন্য যমের মত গোঁড়ামির বাহন নয়। পণ্ডিতজী পরােক্ষভাবে ইসলামের উপর চাজ এনেছেন আর মওলানা আজাদ গৰী পেয়ে বিভাের হয়ে এই অবান্তর ঘোষণাকে মেনে নিয়েছেন। পণ্ডিতজী পশ্চিম কায়দায় শিক্ষিত, জাতি ও জাতি সম্বন্ধে তিনি যে ধারণা অর্জন করেছেন তা মধ্যযুগীয় ভাবধারারই নামান্তর। তার জানা উচিত কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়াশীল, ফ্যাসিষ্ট ঘেষা জাতীয়তাবাদের উচ্ছেদ করেই মানুষ আজ বিশ্বব্যাপী সংগ্রাম করছে। পণ্ডিতজী উচ্চশিক্ষিত, বনেদী ঘরের সন্তান, সােস্যালিষ্ট বলেও খ্যাতি আছে, কিন্তু গান্ধীজীর অন্তর্বাণীর নিকট তিনি আত্মসমপন করেন কেন? তাকে জিজ্ঞাসা করি অপশু ভারতের ভিত্তি কি গণতান্ত্রিক না ধনতন্ত্র বা তথা বিড়লা ইত্যাদি হিল, বুর্জোয়াদের শােষণবাদের উপর । টশ শ্রমিক প্রধান মন্ত্রী, ভণ্ড সােস্যালিষ্ট এটলীকে যারা চেনেন, পণ্ডিতজীকে চিনতে তার বেগ পেতে হবে না।
পণ্ডিতজী ইতিহাসও ভাল জানেন। তবে তিনি কি করে বললেন যে ক্যাথলিক, প্রােটেষ্টান্ট বা ইহুদী মেজরির কথা কেও শোনেনি। আইরিশ সমস্যা কানাডার-ফরাসী ইংরেজ সমস্যা ও রুজভেল্টানের ফিলিস্তিন-ইহী প্রীতি সমস্যাকে তা হলে কি বলা যাবে। তিনি তাঁর বরেণ্য নেতা রাষ্ট্রপতি আজাদকে ইসলাম, হিল, ও ষ্টান মতগুলাের পার্থক্য সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেইত পারতেন। ধর্ম এবং রাষ্ট্রকে মুসলিম জাতি কোনদিনই পৃথক করে দেখে না। পণ্ডিতজী নিশ্চয়ই জানেন, শুধু হিটলারই ইহুদীদের উপর অত্যাচার করেননি। তারা খষ্টানদের নিকটও চিরদিন বৃণিত ও অচ্ছুত রয়ে গেছে। | বর্ণাশ্রমের পূজারী ব্রাহ্মণ পণ্ডিতজীর পক্ষে জগতের সেরা খম ইসলামকে এভাবে উপহাস করা শােভা পায়না। আমরা ভেবে আশ্চর্যান্বিত হয়ে যাই ঠাকুজী তার মহান জাতীয়তাবাদের সাথে
৮০
বর্ণভেদ প্রথাকে কি করে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। পণ্ডিতজী জগতের চোখে ভেল্কি লাগিয়ে ঘােঙ্গ করেছেন ‘লীগের নীতি আন্ত পচা ও মধ্যযুগীয়, কিন্তু কংগ্রেসের রাজনীতি সপ্তটাটকা ও আধুনিক।” আমরা পণ্ডিতজীকে অনুরােধ করি তার বরেণ্য নেতা গান্ধীজীর দিকে তাকিয়ে খেতে-কম্বল, ললাটা, কৌপীন, অধনগ্ন, চরকা বর্ণাশ্রম আভ্যন্তরীণ অনুপ্রেরণা আরও কত কি! তার ধমনীতি ও রাজনীতি এক ও অভিন্ন এখানে কিন্তু নেহেরুঞ্জী সাড়াশব্দহীন। ভূতপূর্ব কংগ্রেসী মন্ত্রী মিঃ রমানাথন পণ্ডিতজীর এ বিবৃতির দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন। তিনি ঘােষণা করেছেন—“সিমলা সম্মেলনে ব্যর্থতার জন্য আমার দুঃখ নেই, পণ্ডিতজী বলেছেন এ ব্যর্থতার পেছনে রয়েছে মধ্যযুগীয় বক্ষণশীল মনােবৃত্তি ও আধুনিকতার মধ্যে সংঘাত। এ বিষয়ে তার সাথে আমি সম্পূর্ণ একত, দুঃখের বিষয় তিনি এ নীতি অনুধাবন করতে পারলেও তা ঠিক উল্টোভাবে আরােপ করেছেন। তিনি দাবী করেছেন কংগ্রেস আধুনিকতার প্রতীক, এই প্রসঙ্গে তিনি লীগ ও অনুরূপ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে মধ্যযুগীয় ভাবাপন্ন বলে বক্রোক্তি করেছেন। স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গী ও সংস্কারমুক্ত মনােবৃত্তির জন্য পণ্ডিতজীর আন্তর্জাতিক খ্যাতি আছে তিনি কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারেন যে বর্তমান কংগ্রেস সত্যিই আধুনিকতার প্রতীক? মহাত্মাজী কি আধুনিক? চরকা কি আধুনিক ? যে সব রাজনৈতিক নেতা মৌলানা বা পণ্ডিত খেতাব ধারণ করে গৌরব অনুভব করেন তাদের নেতৃত্ব কি আধুনিকতার পরিচায়ক? কংগ্রেসের তথাকথিত জাতীয় সঙ্গীত ‘বন্দে মাতরম’ দেবী দুর্গার স্তব ব্যতীত অন্য কিছুই নয়, এতে কি আধুনিকতার বিন্দুমাত্র ছাপ আছে ? কংগ্রেসী আর্শবাদের এই যে প্রকাশ এরদ্বারা এ সত্যটাই কি ফুটে উঠছে না যে কংগ্রেস শুধু মধ্যযুগের দিকেই পশ্চাদ্বর্তন করছে তাই নয়, বরং সে যুগে উলঙ্গ মানুষ বনে বনে ঘুরে বেড়াত, কোটরে বাস করত এবং কাঁচা মাংস ভক্ষণ করত সেই প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকার যুগের দিকেই ফিরে চলেছে।
৮১
আমি পণ্ডিতীকে একটা প্রশ্ন করব। এটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন নয়, কংগ্রেসী রাজনীতির সাথে এর গভীর সম্বন্ধ আছে। গান্ধীজী হুকুম জারী করেছেন যে প্রত্যেক কংগ্রেস সেবীকে খাদি প্রতিষ্ঠানের কর্মী হােতে হবে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ সূতাও কাটতে হবে। পণ্ডিতজীকে জিজ্ঞাসা করি তিনি কি এ হুকুম তামিল করে চরকা ঘুরাতে বসেন? আশা করি তিনি নিশ্চয়ই একাজ করেন। কুতরাং যখন তিনি চৰকা সমুখে বসেন, তখন তিনি নিজে মধ্যযুগীয় না আধুনিক। তার বিবেককে এ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবার জন্য আমি তাকে অনুরােধ জানাচ্ছি।
যে বর্ণাশ্রম ধর্ম অনুসারে জাতিভেদ প্রথা প্রবর্তিত হয়েছে গান্ধীজী তারই গোড়া সমর্থক। মহাত্মার নেতৃত্বে কংগ্রেস কয়েক শতাব্দী ন হােলেও কয়েক যুগ পশ্চাতে চলে গেছে। মহাত্মাজীর উপর অভ্রান্তত ও অতিমানবীয় গুণাবলীর আরােপ দ্বারা ধর্মীয় কুসংস্কারের ভিত্তিতে জনসাধারণের উপর প্রভাব বিস্তার করাই কংগ্রেসের অনুসৃত রাজ নীতি। এমতাবস্থায় মিঃ জিন্নাহ ও কংগ্রেস বিরোধী অন্যান্য নেতাদের সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন বলে নিলা করা কি কংগ্রেস সেবী দের মুখে শােভা পায়? কংগ্রেস রাজনীতিতে যমের আমদানী করে জনসাধারণের মধ্যে এরূপ ভাবধারার সৃষ্টি করেছে যে কংগ্রেসীদের পক্ষে ধর্মীয় ভাবধারার মারফত রাজনৈতিক কর্মতৎপতার পরিবেশ ব্যতীত অন্য কোন উপায় নেই।
যে সকল কংগ্রেস নেতা ধর্মের দোহাই দিয়ে উদ্দেশ্য সিছি করব: পক্ষপাতী মিঃ গিন্নাহ, তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে প্রমাণ করে দেখি দিয়েছেন যে তিনি অনুরূপ কাজ করতে সক্ষম। এটাই মিঃ জিয়া অনাতম শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব। পণ্ডিতজী এটা কেমন করে ভুলে গেলেন ? এইত সেদিনও মিঃ জিন্নাহ, কংগ্রেস পন্থী ছিলেন। গান্ধীজীর পক্ষপ। আশ্রিত মৌলানারাই তাকে কংগ্রেস হােতে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করেছেন।
৮২
যুক্ত নির্বাচনে অম্বেদকার ঘায়েল
যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মিঃ রমানাথন তাঁর উল্লিখিত বিবতির শেষাংশে বলেছেন পণ্ডিত নেহেরু যদি দক্ষিণ মূল্পকে আগমন করেন তবে তিনি ভীষণ সমস্যার সম্মুখীন হবেন। দেখতে পাবেন ইদানিং একজন ব্রাহ্মণও প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সভা নির্বাচিত হােতে পারেননি। এরপরও কোন স্বাক্ষণে নির্বাচিত হবার আশা নেই। এর জন্য তথাকথিত সাম্প্রদায়িকতাবাদীরা তিলমাত্ৰও দায়ী নন; দ্বায়ী সেই জাতীয়তাবাদীর দল যারা জাতীয়তার মুখোস পড়ে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা পােষণ করেন। পৃথক নির্বাচন হয়ত ক্ষতিকর বলে মনে হেতে পারে কিন্তু এটা কেবল কল্পনাতেই ক্ষতিকর-বাস্তবে নয়। মানুষ যেদিন হিংসা-দ্বেষ ভুলে যাবে, নদী যেদিন দুগ্ধ-মধুতে পূর্ণ হবে, তন্ত্র নির্বাচন কেবল সেদিনই ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হবে, তার পূর্বে নয়। কিন্তু বর্তমান বাস্তব ক্ষেত্রে অন্যায় এবং গহিত সামাজিক ব্যবস্থা যখন শ্রমিক, মধ্য ও নিম্ন শ্রেণীর জনসাধারণের সমাজ জীবনকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিচ্ছে, আর মুষ্টিমেয় সুবিধাবাদী বিড়লার দল এই সুযােগ নিয়ে দিন দিন ফেলে উঠছে তখন নিৰ্যাতিত, অত্যাচারিত ও অবিচারে জর্জরিত দুর্বলের একমাত্র আশ্রয় স্বতন্ত্র নির্বাচন। স্বতন্ত্র নির্বাচন মিঃ জিন্নার বাহুতে কেবল বল দিয়েই যায়নি, মুসলিমদের মুক্তি সম্ভাবনার নব সওগাত বয়ে এনেছে। পক্ষান্তরে রাজনীতি ক্ষেত্রে নীতি ও পরিকল্পনা বিসর্জন দিয়ে ব্যক্তি বিশেষকে উপাসনার বেদীতে বসিয়ে মহাত্মা গান্ধী যে বিরাট দল গঠন করেছেন সে দলের নির্যাতন হােত রক্ষা পাবার পথ উৎপীড়িত ও নির্যাতীত রাজনৈতিক দলগুলো জিরার স্বতন্ত্র নির্বাচনের ভিতরেই দেখতে পেয়েছে। পুণ চুক্তিদ্বারা ডাঃ আমেকারের কণ্ঠরােধ করা হয়েছে। স্বতন্ত্র নির্বাচন যদি তার দাবী পুনর্জীবিত করতে পারে তবে তা ভারতের রাজনীতিতে আরও এতটা শক্তিশালী প্রগতিপস্বী লেবু নবজীবনের
খােলস করবে। এ দল প্রতিক্রিয়াশীল খাবাকে পরাজিত
৮৩
করবেই। পণ্ডিত নেহেরুর সামনে এখন দুটো পথ খোলা আছে। দেশের বিরাগভাজন, আমার শূন্য সমাজ ব্যবস্থার উচ্ছে সান করবার জন্য যে সকল রাজনৈতিক দল বদ্ধপরিকর পণ্ডিতজী হয় সে দলে অংশ গ্রহণ করবেন নচেৎ গতানুগতিক দলের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গান্ধীজীর গদি লাভের আশায় মধ্যযুগীয় ব্যবস্থানুয়ায়ী বানপ্রস্থ গ্রহণ করবেন।” ভূতপূর্ব কংগ্রেনী মন্ত্রী মিঃ রমানাথন মমবেদনার তাড়ানাতেই এ সত্যকে এত উচু করে ধরবার সাহস করেছেন তার এ কামনা সার্থক থােক। তিনি স্বীকার করেছেন পৃথক নির্বাচন মুসলিমদের মুক্তি সম্ভাবনায় নব সওগাত বহন করে এনেছে। হিন্দ, ভারত, গান্ধীজীর ভারত এ সত্যকে আজ স্বীকার করে চলেছেন। যত শীঘ্র তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয় ভারতের পক্ষে ততই মঙ্গল।
স্বরূপে অত্র একাশ
মিথ্যার বেসাতি কর কংগ্রেসের চিরদিনের অভ্যাস। এ প্রচারণায় তারা অনেকটা সাফল্য মতিও হয়েছিলেন। ভারতের সমস্ত পুজিবাদীদের সমর্থন কংগ্রেসের পেছনে আছে বলেই তারা ইউরােপ, আমেরিকা প্রভৃতি দেশগুলোতে প্রচার কার্য চালাতে পারবেন। ভারতীয় হিল, সে এত প্রবল যে লীগ তথা মুসলিম জাতির ন্যায়সত দাবীকেও তারা প্রচারণার জোরে ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছেন। হিন্দ প্রেস সমস্ত সমস্যাকে এমন ভাবে প্রকাশ করে যার জন্য মুসলিম নেতৃবৃন্দকে পৃথিবীর জনমতের কাছে জবাবদিহির জন্য সর্বদাই প্রস্তুত থাকতে হয়। তারা প্রচার চালায় জিন্নাহ দায়িত্বজ্ঞানহীন, অবিবেচক, উদ্ধত প্রকৃতির, উষ্ম, বেয়াড়া এবং স্বাধীনতার পথে প্রতিবন্ধক স্বরূপ।
এত প্রচারণা চালিয়েও যখন জনমতকে ধােকা দেওয়া গেল না তখন তারা জিন্নর নেতৃত্বে অনাস্থা জ্ঞাপনের জন্য মুসলিমদের নিকট
৮৪
আকুল আহ্বান জানাচ্ছে। এরা মনে করে ভারতের তরুণ মুসলিম লীগ পন্থীরা জিন্নার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করবে। এ ধারণা কেবল উন্মাবেই করতে পারে। কেননা তরুণ লীগ কর্মীরা জিন্নাহর নেতৃত্ব এবং আদর্শে গভীরভাবে বিশ্বাসী। তারা মুসলিম লীগের বাণীকে ভারতীয় মুসলিমদের ঘরে ঘরে পৌছাতে চান বলেই লীগের ভিতরের চাকুরীর উমেধার স্বার্থবাদীদের সাথে এদের অন্ত দেখা দিয়েছে।
কংগ্রেসের মিথ্যা প্রচারণার সীমা কত উবে উঠেছে তা জানতে হােলে একবার আগষ্ট প্রস্তাবের বিষয় দিস্তা করতে হবে। কায়েবে আজম এ প্রস্তাবকে মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহ বলে ঘােষণা করেছিলেন। গান্ধীজী পরিচালিত কংগ্রেস নিজেদের ফ্যাসিষ্ট বিরােধী বলে যত প্রচারই করুন না কেন, মনে মনে তারা হিটলার তােজোকে সমর্থন করে চলেছিলেন। দ্বিতীয়তঃ যুদ্ধের সুষােগ নিয়ে বৃটিশকে কোণঠাসা করবার স্বপ্নও তারা দেখেছিলেন। তারা জাপানকে অভিনন্দন জানিয়ে, সালাম বুকে, দাওয়াত করে এনে রাজ-ততে বসাতে চেয়েছিলেন। গােপন অভিসন্ধি ছিল বৌদ্ধ ভাইয়াদের সহযােগিতায় তারা ভারতে অশােক রাজ্যের বুনিয়া কায়েম করতে পারবেন। বৃটশ গভর্ণমেন্ট তাদের এ সুখের আশাৰ ৰাৰ সাধল বলেই জনমতের কাছে গান্ধীজীকে আসামী শ্রেণীভুক্ত হােতে হােল।
এ অবস্থায় মিথ্যার বেসাতি করা ছাড়া গান্ধীজীর অন্য কোন উপায় ছিল । পত্রের পর পরে ঘােষণা করলেন কংগ্রেস বিদ্রোহ ঘােষণা করেনি বরং অসতর্কভাবে নেতৃবৃন্দকে বন্দী করে সরকার স্বেচ্ছাচারিতার নিশন দেখিয়েছেন। কিন্তু সত্য কোন দিনই চাপা পড়ে না, মিথ্যার জঞ্জাল হােতে সে কাপে একদিন ফুটে উঠবেই। পণ্ডিতজী জেল হােত বেরিয়ে ঘােষণা করলেন ১১৪২ সনে যা ঘটেছে তার জন্য আমি খুবই গর্বিত। আমার দেশবাসী যদি বৃটশ সরকারের কাছে আত্মসমপণ করত তবে তারা কাপুরুষতার পরিচয় দিত এবং যুগ যুগ ধরে আমরা যে শিক্ষা দিয়েছি তা নষ্ট হয়ে যেত। ঘরে বসে থেকে আগষ্ট আন্দোলনের
৮৫
দোষ ত্রুট ধরা খুবই সহজ, কিন্তু যারা এ আন্দোলনের বিরুদ্ধে সমালােচনা করেছেন তারা কাপুরুষের মত দেশবাসীকে ভুলপথে চালাতে চেষ্টা করছেন। আমি স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই যারা আগষ্ট হাঙ্গামায় যােগ দিয়েছিল তাদের আমি দোষ দিতে পারি না।•••••• ১৮৫৭ সনের বিদ্রোহের সাথেই ১৯৪২ সনের ঘটনার তুলনা হেতে পারে।” গাজীজী বার বার বলেছেন এ হাঙ্গামার জন্য কংগ্রেস দায়ী নয়। ডাঃ সীতায়ামিয়া তবে কেন অন্ধ সাকুলারের সমস্ত দায়িত্ব নিজ ঘড়ে নিয়ে ঘােষণা করলেন যে গান্ধীজীর অনুমতিতেই সমস্ত খবংসমূলক কাজ করা হয়েছিল? তিনি হাঙ্গামায় কংগ্রেসী দায়িত্ব সম্বন্ধে যে চাঞ্চল্যকর বিবৃতি দিয়েছেন তাতে সুস্পষ্টভাবে বুঝা গেছে যে হাঙ্গামার দায়িত্ব কংগ্রেস এড়িয়ে যেতে পারে না।
রেল লাইন তুলে ফেলা ইত্যাথি হিংসাত্মক ব্যাপারে গান্ধীজীর বিরােধ থাকলেও টেলিগ্রাম, টেলিফোনের তার কাটা ব্যাপারে গান্ধীজীর মোন সন্মতি ছিল সে কথা মিঃ সীতারামির বিবৃতিতে পরিষ্কার ভাবে জানা গেছে। সিরামিয়ার মতে টেলিগ্রামের তার কাটাকে অহিংস কার্যক্রমেয় পর্যায়ে ফেলা যায় না। এটা কি সত্য কথা, না নিজ বিবেকের সংগে প্রকাশ্য ষষন্ত্র ? মিঃ রমানাথন ডাঃ সীতারামিয়াকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে জানিয়েছেন “ রেল চলাচল বাবস্থার সাতে পরিচিত প্রত্যেক ব্যক্তিই জানেন যে রেল অপসারণ করার মত টেলিগ্রামের তার কাটলেও ট্রেন দুর্ঘটনার সম্ভাবনা যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। কাজেই অহিংস নীতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলেই টেলিগ্রামের তার কাটার ন্যায় হিংসাত্মক কাৰ্যকলাপকে গায়ের জোরে অহিংস কাজে পরিণত করা যায় না।•••••••••••• আমি ডাঃ পটুভীকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, তিনি বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের নিকট প্রমাণ করুণ যে টেলিগ্রামের তার কাটা অহিংস নীতির পরিপন্থী নয়।”
সত্যকে প্রকাশ করবার ইচ্ছা সীতারামিয়ার নিশ্চয়ই ছিল না; কিন্তু ৰক্ততা দেওয়ার সময় এ সত্য তার মুখ হাতে আকস্মিকভাবে বেরিয়ে যায়। সে জন্যই পরে তিনি আমতা আমতা করে প্রলাপ বকেছেন; কিন্তু সত্য
৮৬
প্রলাপ বাক্যের উদ্ধে’ উঠে কংগ্রেসের জোচ্চুরি জগতের নিকট প্রকাশ করে দিয়েছে। অবস্থার বিবর্তনে কংগ্রেসের আর কত মহিমাময় রূপই না জনসাধারণের নিকট প্রকাশিত হবে! গান্ধীজীও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পটুভীর বােণাবাণীকে নাকচ করতে চেয়েছেন; কিন্তু সত্যের উদ্ভাবিত রশ্নির কাছে মিথ্যার বেসাতি ম্লান হয়ে গেছে।
পুঠি মাছ তক সব দরজার কংগ্রেসীই সিমলা বৈঠকের ব্যর্থতার ভার চাপিয়ে দিচ্ছেন কায়েদে আজমের উপর। মিথ্যার ভারবাহী জাতীয়তাবাদী সংবাদপত্রগুলাে তার উপর মারমুখী হয়ে উঠেছে। কংগ্রেস আত্মসমপণ করে ভারতের স্বাধীনতাকামী জনগণের মর্যাদায় কঠোর আঘাত হেনেছে এদিকে এদের লক্ষ্য নেই। মওলানা সাহেবের বৃটিশ প্রীতি দেখে আমরাও আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেছি। জিন্নাহ, ওয়াভেল পত্রাবলী প্রকাশ করে কায়েদে আজম জনসাধারণকে সমস্ত ব্যাপার জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মওলানার সে সাহস নেই। এ চিঠিগুলােতে মুসলিম জাতির প্রতি তার বিশ্বঘাতকতার অনেক নমুনাই পাওয়া যাবে। দ্বিতীয়তঃ অনেক লােক কেই তিনি প্রস্তাবিত শাসন পরিষদে নেওয়ার জন্য আশা দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু ওয়াভেলের নিকট নাম পেশ করবার সময় এদের অনেকেরই নাম বাদ দেওয়া হয় ; পত্রগুলো প্রকাশিত হােলে অনেকটা মনােমালিন্যের সৃষ্টি হবে। ইঙ্গ-কংগ্রেস ষড়যন্ত্র না হােলে ওয়াভেলই বা কেন পত্রগুলো প্রকাশ করলেন না?
জিন্নাহ,- গান্ধী মিলনের সময় গান্ধীজী লীগকে মুসলিম ভারতের একচ্ছত্র প্রতিনিধি মূলক প্রতিষ্ঠান বলে মেনে নেন। কিন্তু যেমনই সিমলা বৈঠক বসল কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ অমনি আহরায়, জমিয়ত, মােমেন, লালকুর্তা, কৃষক ইত্যাদি ভুইফোড় প্রতিষ্ঠান রাতারাতি গড়ে নিলেন। কংগ্রেস মুসলিম জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করবার জন্যই চিরকালই এদের মারণাস্ত্ররূপে ব্যবহার করেছে। কংগ্রেস পুনরায় প্রচার শুরু করেছে মুসলিম লীগ সেট। আবার কিসের প্রতিষ্ঠান। কাজেই মুসলিম লীগ শ কোটি মুসলিমের জাতীয় প্রতিষ্ঠান কিনা আগামী নির্বাচনে এটা চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে
৮৭
দেওয়াটাই আজ ভারতীয় মুসলিমদের প্রধান কর্তব্য হয়ে দাড়িয়েছে। মুসলিম জাতির চির সমাধি রচনার জন্য দিকে দিকে শয়তানের উল্লাস দেখা যাচ্ছে ; উমিচাঁদের মন্ত্রণা ভবনে মিরজাফরের দল সমবেত হচ্ছে : আর ভারতের জগৎশেঠের জাত খাজাঞ্চীখানার সদর দরওয়াজা খুলে দিয়ে দুহাতে অর্থ বিতরণ শুরু করেছে, ক্লাইভদের মমতা মিরজাফরদের জন্য হঠাৎ উপচিয়ে পড়ছে। বর্তমান জমানার সিরাজের জাত ভাইয়েরা কিন্তু আজ সচকিত, জাগ্রত-পলাশীর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হােতে তারা নিশ্চয়ই দেবে না।
আত্মনিয়ন্ত্রণেৱ ভমিকায় কংগ্রেস
যে স্বাধীনতা লাভের জন্য কংগ্রেস বৃটিশ সরকারের দুয়ায়ে ধর্ণা দিচ্ছে মুসলিমদের বেলায় সেই স্বাধীনতার দাবী মেনে নিতে নারাজ। হিন্দ মুসলিম মিলিয়ে একটা জাতি একথা কেবল উন্মাবেই মনে স্থান দিতে পারে। হিমুসলিম এক জাতি নয় বলেই পাকিস্তানের দাবী ভারতীয় রাজনীতি ক্ষেত্রে প্রবল হয়ে দাড়িয়েছে। দু’শতাব্দীর ঘুমন্ত মুসলমান এ দাবীর মধ্য দিয়ে আজ আত্মচেতনা ফিরে পেয়েছে। কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের জাগ্রত জনমতকে উপলব্ধি করতে ত পারেনি বরং পণ্ডিতজী ঘােষণা করেছেন’We will crush all those who will oppose us.”নেহেরুর এ ঘােষণায় হিটলারের সেই নাৎসী মনােভাবেরই পরিচয় পাওয়া যায়। | পরস্পর বিরােধী মত অধ্যায়ে কংগ্রেসের বিল্পী ও এলাহাবাদ প্রস্তাব সম্পর্কে আমরা সামান্য আলােচনা করেছি। একই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরস্পর বিরােধী দুটো প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় মওলানা খুব বিপদে পড়ে যান। কাজেই সভাপতি হিসাবে রুলিং দিয়ে ঘোষণা করলেন [ যদিও তার এ আধিকার নেই) “It was made fully clear by Dr. Rajendra Prasad, Pandit Nehru and myself that no part of the Delhi:
৮৮
resolution bas in any way been affected or modified by subsequent resolution of the A.I.C.C.” এত বড় একজন মওলানাকে মিথ্যারূপ হীনকাৰ্য্যের প্রশ্রয় নিতে হয়েছে বলে আমরা সত্যিই দুঃখিত। মওলানার এ ঘােষণা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। মিঃ জগৎ নারায়ণ তার প্রস্তাবের উপর বক্ততা প্রসঙ্গে বলেন যে দিল্লী প্রস্তাবের কুখ্যাত অংশটাকে নাকচ করে দেবার জন্যই তিনি এ প্রস্তাব এনেছেন। সুতরাং প্রস্তাবকের মনােভাবকেই এখানে বিচার করে দেখতে হবে; কংগ্রেস কমিটি ১২-১৭ ভােটে প্রস্তাবটাকে গ্রহণ করেছিল। মওলানার স্মৃতি শক্তিরও বােধ হয় একটু অবনতি ঘটেছে। এ প্রস্তাব গ্রহণ করাতেও যদি ওয়ার্কিং কমিটির প্রভাব কায়েম থাকল তবে একনিষ্ঠ কর্মী আচারীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হহল কেন? অথচ ছদ্মবেশী মওলানা মুসলিম জনমতের ভরে এ প্রস্তাবকে বিভিন্ন ভাবে সুবিধানুয়ারী কাজে লাগিয়েছেন।
মওলানা আজাই এ অবস্থায় পাকিস্তান প্রশ্নের বিরুদ্ধে নির্বাচন যুদ্ধে নামতে সাহস পাচ্ছেন না। তার প্রভু গান্ধী, নেহেরু, প্যাটেল যখন এ প্রশ্নের বিরুদ্ধে নির্বাচনে নামতে ভয় পাচ্ছেন তখন এই অর্থ পুষ্ট দালালই বা সাহস করবেন কেন। যাদের অঙ্গলি হেলনে তিনি পরিচালিত হন সেই গান্ধী-আচারী যখন পাকিস্তান বীর মূলনীতিকে মেনে নিয়েছেন এই অর্থ লােলুপ নেতা তখনও পাকিস্তান দাবীকে আক্রমণ করে চলেছেন। কিন্তু যখন দেখলেন যে মােনাফেকদের নিয়েই নির্বাচন দ্বন্দ্বে নামতে হবে তখন পাকিস্তানের দাবীকে পরােক্ষভাবে মেনে নিলেন। কিন্তু মস্তিস্ক বিকৃতির জন্য এক ঘােষণার সাথে অন্য ঘােষণার তাল মিলাতে পারলেন না। তার পরস্পর বিরােধী বিবৃতি দুটো দেখলে মনে হয় তিনি যেন লীলা খেলা করে চলেছেন। তার বােষণা দুটোর কিয়দংশ সমালােচকদের সুবিধার জন্য আমরা উদ্ধত করে দিলুম।
(a) If a cosiderable part of a population of such a region are puslims their decision will be the decision of the area concerned… … … … the determination of their destinies
৮৯
rests with muslims themselves, without external compulsion. এ বিবৃতির দ্বারা বুঝা যায় যে পাকিস্তান অঞ্চলের মুসলিমরাই কেবল আত্বনিরণের অধিকার পাবে।
(b) It will be open to the representatives of such a upit in the Constituent Assembly to advance its claim and a decision on this should not rest on the majority vote of the Assembly but on the vote of the representatives in the assembly of the area concerned. এ বিষতিটা পূর্ব বিবৃতির সম্প বিরােধী। বাঙ্গালা পরিষদে মােট ২৫০ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ১১১ জন মুসলমান। পরিষদের ভোটের কথা উঠলে ১০১ জন অমুসলিমের ভােটের চাপে পড়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশের মুসলমানেরা কি পাকিস্তান পাবে না? সুস্পষ্ট রাজনৈতিক জ্ঞানের অভাবেই অবশ্য তার এ ভুলগুলো হয়েছে। সার প্যাটেল মওলানার পূর্ব বিবৃতিটার ও তার প্রতি মারমুখী হয়ে উঠেন এবং বিবৃতি দিয়ে মওলানাকে জানিয়ে দেন যে এ বিবৃতি দিয়ে তিনি কংগ্রেসের ঘােষিত নীতির বিরুদ্ধাচারণ করেছেন। তিনি বাষণা করেছেন “The resolution of August 8, 1942 went the furt kest limit. Every Congress man is bound by it. No Congress man can go further without Congress altering it.”
মওলানার শ্রীনগর ও রামগড়ের বিষতিগুলো খেয়ে আমরা আশাধিত হয়েছিলাম। কংগ্রেস মুসলমানদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার মেনে নেওয়া ত দূরের কথা ওয়ার্কিং কমিটি প্রস্তাব গ্রহণ করে জানিয়ে দিল “The congress cannot agree to any proposal to disintegrate India by giving liberty to any component state or territorial unit to secede from the India union or federation.” মওলানাজী অপমানিত হন তবুও ভাল কিন্তু গধী কায়েম রাখতেই হবে। প্রচার করলেন এটা প্রস্তাব নয় এটা ঘোষণা মাত্র। প্রস্তাব আকারে এটাকে গ্রহণ করলে কংগ্রেস কমিটির ভিতর দারুণ গােলয়ােগ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
৯০
মওলানার আত্মসম্মানে আঘাত না লাগলেও অক্লান্ত, বঁটি ও নীরব কমী ডাঃ আশরাফ এবং মিয়া এফতেখারুদিন কংগ্রেসের এই জঘন্য মনােভাবকে মানতে পারলেন না বলেই প্রস্তাব আনতে গিয়ে হাস্যাস্পদ হােলেন। গত বৎসরও যারা কংগ্রেসের মুকুট বিহীন রাজা ছিলেন তাদের বক্তৃতা শুনবার সাধারণ ভদ্রতাটুকুও কংগ্রেস কীৰ্বল হারিয়ে ফেলেন। অভদ্রোচিত এত বাধাসত্বেও ডাঃ আশরাফ বক্ততা দিয়ে চলেছিলেন। তিনি যখন ঘােষণা PC97 “The Congress message had not reached the muslims” তখন সভায় দারুণ হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।
এরপর প্যাটেল, নেহেরু ইত্যাদি নেতৃবৃন্দের বক্ততা মুসলিম জাতি এবং জাতীয় নেতাদের প্রতি একটা একটানা আক্রমণ ছাড়া আর কিছুই নয়। মিয়া সাহেব এবং ডাঃ আশয়াফ যখন কংগ্রেসের পেছনে মুসলিম জনসাধারণকে দেখতে পাচ্ছেন না নেহেরু তখন তাদেরকে দাওয়াত করেছেন তার প্রদেশে গিয়ে দেখবার জন্য যে মুসলিম জনসাধারণ আজও কংগ্রেসের পেছনে আছে। এরা আজ উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে মুসলিম জাতি কংগ্রেস বর্জন করেছে, কিন্তু পণ্ডিতজী এদের দৃষ্টিশক্তিকে ভাঁড়িয়ে কংগ্রেসে রাখতে চান। ডাঃ আশরাফ বারবার মুসলিমদের আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব আনতে যাচ্ছেন এবং মওলান। প্রস্তাব না আনবার জন্য বারবার কাকুতি মিনতি জানাচ্ছেন। শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত তিনি ডাঃ আশরাফকে জানান যে প্রস্তাব অগ্রাহ হােলে সমস্ত ভারতময় তার পদমর্যাদার লাঘব হবে। হােলও তাই, মুসলিম জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব ২৭১-৭ ভােটে পরাজিত হােল। আশ্চার্যের বিষয় এই যে প্রস্তাব সমর্থনকারী ৭ জন সভ্যই নাকি মুসলমান। ডাঃ আশরাফ নাছােড়বান্দা, বারবার মওলানাকে জানালেন যে তার প্রস্তাবের ভিত্তি মওলানায় শ্রীনগর ও রামগড়ের বক্ততার উপর স্থাপিত। এদের দুরবস্থা দেখে মওলানা সাহেবও বিচলিত হয়ে উঠেছিলেন কিন্তু উপায় কি? হয় ক্লাইভদের আদেশ পালন, না হয় গদিচ্যুতি। মওলানার মনােভাব দেখে পণ্ডিতজী তার খুব পুরাণ ক্ষতে আঘাত হানলেন।ঘােষণা করলেন “ভারত মাতার সুযােগ্য সন্তান আমাদের শ্রীনিল শ্ৰীযুত মওলানা
৯১
সাহেবকে জিন্নাহ, কতবারই না অপদস্থ করেছেন; আপনারা আজ এসব ভুলে জান ক্যনI”
যে দু একজন পদলােভী মিরজাফর এখনও লীগের বাইরে আছেন তাদের জ্ঞানােন্বয়ের জন্য ডাঃ আশরাফ এবং মিয়া সাহেবের বক্ততার কিয়দংশ
1991 ,Pla faca i “Freedos urge exists in Millions of people in the Indian states, in the Muslim majority areas of Sind, East Bengal and western Punjab. In these muslim majority areas, the Congress movement had not penetrated and it was the League that conveyed the message of freedom. Just think what it means to have thiee lakh members out of thirty lakhs population in Sind, Five lakh members in East Bengal and to have carried the torch of freedom into the dark Punjab. The League enrolled over thirty lakh members last year. This work of Muslim awakening bas naturally been followed by a demand for freedom in terms of their own understanding-a demand for the complete self determination of Muslim nationalities. Please do not forget that it is universal now among the Musalmans [ Ashraf].”
In this buge concourse of 25000, there are only a handsul of Muslims ( disturbances & howling ). Why is it that they are not with Congress ?… … … … … …Because the League represents the urge of the Muslims to freedom. The League has become the Congress of the Muslims. Unless we see this we cannot solve our problems. They want the completest right to be free in their majority areas. Let us recognise our mistakes, accept their demand and set the sears of the Muslims at rest. There is no other way out [ Mia Iftikhar Sabib ].”
বক্ততার জওয়াব দেবার সময় নেহেরু, প্যাটেল ইত্যাদি ফ্যাসিষ্টপন্থী নেতৃবৃন্দ তাদের অভদ্রোচিত ভাষায় আক্রমণ করেন। আমরা জানি কেহ
৯২
কংগ্রেস নেতৃবৃনের বিরুদ্ধত পােষণ করলেই তিনি হয়ে পড়েন অবিবেচক, অন্ধ, গর্বিত, স্বাধীনতার অন্তরায় আরও কত কি ? লীগে যােগ দিয়েছেন বলেই মিঃ কাইয়ুম ও মাখনলাল আজ দুর্বলচেতা এবং অবিবেচক হয়ে পড়েছেন, মুসলিমদের আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবী মেনে নিয়ে ছেন বলেই পাষী-গবীর ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী নেহেৰুৰ মতে ডাঃ আশরাফ এবং মিয়া এফতেখারুদ্দিন অন্ধ হয়ে গিয়েছেন। সমালােচকদের সুবিধার জন্য প্যাটেল ও নেহেরুর বহতার কিয়দংশ উদ্ধৃত করে দেওয়া (51a i “He said the League has become the Congress of the Muslims. I am afraid he is seeing through the telescope from the wing end… … The time has come now to declare that we shall fight the League and fight to the last… We will never negotiate with the Leagie, never. never. [ Nehru ].”
If the League is the Congress of the Muslims, then why are you [ Mea Saheb still here?••••••If Mia Saheb can not agree to this……it is better for him to leave the Congress and go into the League [ Patel ].”
মুসলিম জাতিকে ভারতের বুক হােতে মুছে ফেলবার জন্য কংগ্রেস আজ প্রকাশ্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। কাজেই যে কংগ্রেস একদিন ভারতবাসীকে বাধীনতার আকাঙ্খা ও উদ্দীপনা দিয়েছিল, যে কংগ্রেস পৃথিবীর জাগ্রত জনগণের মুক্তির বাণীকে সমর্থন করে চলেছিল, যে কংগ্রেস বিভিন্ন জাতি ও দেশের জনমত সম্বন্ধে সচেতন ছিল সেই কংগ্রেস আজ অধঃপতনের নিয়ে নেমে গিয়ে আর অগ্রসর হবার পথ পাচ্ছে না। পণ্ডিত নেহেরু মালয়, জাভা প্রভৃতি দেশসমূহের জনমতকে সমর্থন করে উচু গলায় চীৎকার করে আকাশ ফাটিয়ে তুলেছেন, কিন্তু স্বদেশী মুসলিম ভাইদের জনমত জানবার চেষ্টা করেননি বরং কতগুলো মুসলিম মিরজাফর ও কুইসলিং নিয়ে ছিলিমিনি খেলা আরম্ভ করেছেন। অন্যদিকে এশিয়া ফেডারেশনের কথা খুব জোরসােরেই ঘােষণা করে চলেছেন, কিন্তু কেন। তারা জানেন ভারতীয় মুসলিমদের চেপে পিষে মেরে ফেলতে পারলেই ভারতে হিয়া কাসেম
৯৩
হবে, তখন হিন্দুজের সাম্রাজ্যবাদিতাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে মালয়, বেণি, সুমা, ইন্দোচীন ইত্যাদি অনুন্নত দেশগুলো চাই। অনুন্নত বানিজদের প্রতি নেহেরুর জাতভাইদের অত্যাচারের কথা কেই বা না জানেন ? কংগ্রেস নেতৃত্ব অংশের কোন বালাই আছে বলে মনে হয়
তারা আজ নব নব রুপে আপ্রকাশ করছেন ; ভবিষ্যতে ‘কত রূপেই না তাদের দেখতে পাওয়া যাবে। বাপীর রূপ পরিবর্তনের
অন্ত নেই।
ভয় কোথায়?
পাকিস্তান-ভাবী ভারতীয় মুসলমানদের অন্তরের প্রতিধ্বনি-সুযােগ সুবিধা আষের জ দর কষাকষি নয়। অথচ সাম্রাজ্যবাদী বটশ গণতন্ত্র বিরােধী হিন্দু প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং মুষ্টিমেয় তথাকথিত স্বার্থবাদী মুসলিম নেতা এ দাবীর প্রতি এত মারমুখী হয়ে উঠেছেন কেন? পাকিস্তান ৰাৰীয়ে অনেকেই হয়ত এর প্রকৃত কারণ জানেন না।
ভেনীতিই হােল বৃটশের মজ্জাগত স্বভাব এবং এর বলেই তারা বুশ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রেখেছেন। স্বাধীন পাকিস্তান ও মুক্ত হিন্দুস্তানের ভিতর দিয়ে হিন্দু-মুসলিমদের ভিতর চিরস্থায়ী বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে ভারতে টিকে থাকা বটশের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ভারতে দুটো স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হােল তাদের যে কেবল ভারত হােতে বিধায় নিতে হবে তাই নয় বরং সুদূর মরক্কো হােতে ফিলিপাইন পর্যন্ত সমস্ত দেশ তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। আলজেরিয়া,টিউনিসিয়া,বিপণী, মরক্কো, ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া বােণিও, মাত্রা, ইদােনিশিয়া প্রভৃতি মুসলিম প্রধান দেশগুলােতে জেহাদের বহ্নি দাউ মাউ করে জ্বলে উঠেছে। ভূমধ্যসাগর ও সিঙ্গাপুর বিয়ে রাজনীতিতে দুটো মূল্যবান ঘাট। জগতে যে যুগে যে জাতি এদুটো বাটি উপর কতৃত্ব করেছেন তারাই সমস্ত পৃথিবীকে শাসন করেছেন। রােমান
৯৪
ফিনিসিয়ান, গ্রীক, ব্যাবিলােনিয়ান, মুসলিম ও বৃটিশ জাতির ইতিহাস এর সাক্ষ্য দেয়। এই ঘটিয়ের চতুম্পাখের আলজেরিয়া, টিউনিসিয়া, মরক্কো ত্রিপলি, মিশর, হেজাজ, ইরান, সিরিয়া, লেবানন, তুরস্ক পশ্চিম পাকিস্তান, পূর্ব পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইলােনেশিয়া, বণিও, সুমাত্রা, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রগুলাে স্বাধীনভাবে গড়ে উঠলে সম্মানজনক ভাবে এ অঞ্চল হােতে সরে পড়া ছাড়া বটশের অ কোন উপায় নেই। যে আগুন জ্বলে উঠেছে এর গতিরােধ করবার শক্তিও এদের নেই। ইংরেজ প্রফেসর জন কটম্যানের ঘোষণায় এ সত্যটাই ফুটে উঠেছে।
“The Islamic renaissance now in progress across the whole Middle East and North of Africa can be a powerful disruptive factor in international relations and the world order of the future ………… … There is… … … … possibilities, of the growth of greater Muhammadan states by the union of peighbouring Muhammadan Peoples.”
বটশ পালিমেন্টের সভা ডাচেস এথেলো বেষণা করেছেন“In view of the fact that such a federation (of Muslim Units) would include the bulk of the fighting races of India that it would control her most vulnerable frontier, and that beyond that frontier lies a continuous belt of Muslim states stretching to the Mediterranean, a greater political and military danger.”
হিন্দু ভারতের ভয় ভ্রান্ত ধারণা হতে উদ্ভত। তারা মনে করেন ভারতে পাকিস্তানের দাবী মেনে নেওয়া হলেই স্বাধীন হিন্দুস্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে। বিভিন্ন মুসলিম-রাষ্ট্র পরিবেষ্টিত হিন্দুস্তান যে কোন মুহুর্তে মুসলিমদের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে এটাই এদের ভর এবং এজন্যই তারা অন্যায়ভাবে পাকিস্তান আন্দোলনকে দমন করতে চাচ্ছেন। প্রফেসার গুলশন রায়ের নিম্নলিখিত ঘােষণায় পাকিস্তানের প্রতি হিন্দু মনােভাবের পূর্ণ অভিব্যক্তি হয়েছে –
৯৫
“It is well-knowo that all the strategic positions for the de!ence of India lie in these five …….. •••••••••provinces. Once an enemy crosses the Pabbi Hills near Lalamusa, he lias no patural obstacles to face him right up to Calcutta. We koow that the Muslims took more than 300 years to conquer the Punjab, but once they had become masters of the land of five rivers, the conquest of the rest of India was an easy job. Within ten years after the defeat of Prithviraj at Taiaori, the wbole Northern India, north of Vindhyachals was subdred and becar e a part of the muslim Empire. If a muslim federation ••• ••• ••• •• is established as is demanded by … … muslims the federal Government for the rest of India would not be north the paper on which its constitution may be drawn.”
মিঃ চিত্তরঞ্জন দাসের নিকট লিখিত একখানা পত্রে লালা লাজপত রায় ঠিক একই রকমের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন
We cannot ••• ••• rule Hindustan on British lines ••• I am not afraid of the seven croies of musalmans. But I think the seven crores in Hindustan plus the arred hosts of Afganistan, Central Asia, Arabia, resopotamia and Turkey will be irresistible… Are we then doomed ?!!
মুসলিম ষ্টেটগুলোর অধিপতি ও পাকিস্তান দাবীকে ভাল চক্ষে দেখেন বলে মনে হয় না। কারণ ভাওয়ালপুর, খয়েরপুর ও মালেরকোটলা এই তিনটা ষ্টেট বারে অন্য সমস্ত মুসলিম ষ্টেট পাকিস্তানের বাইরে পড়বে এবং এগুলো হিন্দুপ্রধান। স্বাধীন পাকিস্তান ও হিন্দুস্তান গঠিত হােলে এ সমস্ত ষ্টেটের হিন্দুরা একটা বিপ্লব করে এদের নিকট হােতে শাসনভার কেড়ে নিবে এটা সত্য এবং এখানেই এদেয় ভয়। কাজেই উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এই ষ্টেটগুলো হাতছাড়া হয়ে যাবার ভয়েই তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। তথাকথিত মুসলিম নেতাদের যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধাচরণ করছেন তরি নিছক নেতৃত্বের মােহেই করছেন।
৯৬
পরিশিষ্ট
ক্রিপস্ প্রস্তাব (auh, ৭৭)
ভারতের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যে সমস্ত আশা ভরসা দেওয়া হয়েছিল সে গুল। কবে কার্যকরী করা হবে সে সম্পর্কে ভারত এবং বৃটেনে সবিশেষ উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছে। মহামান্য সম্রাটের গভর্ণমেন্ট এটা বিবেচনা পর্ব ভারতে অবিলম্বে পর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের জন্য কি কি ব্যবস্থা অবলম্বন করা দরকার তা সুস্পষ্টভাবে নিদ্দেশ করতে মনস্থ করেছেন। মহামান্য সম্রাটের গভর্ণমেন্টের উদ্দেশ্য ভারতকে বৃটেন ও অন্যান্য ডােমিনিয়নের সাথে সম্পর্কিত একটা ডােমিনিয়নে পরিণত করা। অন্যান্য ডোমিনিয়নের ন্যায় ভারত, সম্রাটের প্রতি একক আনুগত্য স্বীকার করবে, কিন্তু সকল দিক দিয়ে বৃটেন ও ডােমিনিয়ন গুলাের সমকক্ষ হবে এবং আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ব্যাপারে কারও অধীন থাকবে না। অতএব মহামান্য সম্রাটের গভর্ণমেন্ট ঘােষণা করছেন ঃ| (ক) যুদ্ধ বিরতির অব্যবহিত পরেই নিম্নলিখিত উপায়ে ভারতের নূতন শাসন প্রণালী রচনা করবার জন্য একটা পরিষদ নির্বাচিত হবে।
(খ) নিম্নে বর্ণিত উপায়ে এই পরিষদে ভারতের রাজন্যবর্গ যেন যােগ দিতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হবে।
(গ) মহামান্য সম্রাটের গভর্ণমেন্ট এইভাবে রচিত নূতন শাসনতন্ত্র মেনে নিয়ে নিম্নোক্ত শর্তমতে কার্যকরী করবেন :
(১) বুট ভারতের কোন প্রদেশ যদি এই নবগঠিত শাসনতন্ত্র মেনে
নেয় এবং পূর্বের শাসনতান্ত্রিক অবয় থাকতে চায় তবে তার এ দাবী স্বীকার করে নেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে সেটা যদি নুতন শাসন ব্যবস্থার অধীনে আনতে চায় তবে সে ব্যবস্থাও করা হবে। মহামায়
৯৭
সম্রাটের গভর্ণমেই এই ধরণের প্রদেশগুলােকে নূতন শাসন ব্যবস্থা অনুযায়ী নবগঠিত ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় পূর্ণ শাসন ক্ষমতা দিবে।
(২) মহামাত সমাটের গভর্ণমেন্ট এবং শাসনতন্ত্র গঠনকারী পরিষদের মধ্যে একটা চুক্তি হবে। ভারতীয়দের নিকট পূর্ণ শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের ফলে যে সকল সমস্যায় উব হবে এই চুক্তির ফলে সেগুলোর মীমাংসা হবে। এই চুক্তি অনুযায়ী এবং মহামান্য সম্রাটের গভর্ণমেন্ট দায়িত্ব রক্ষার জন্য সংখ্যালঘিষ্ঠ সম্প্রদায়গুলোর স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে, কিন্তু ভবিষ্যৎ বান ভারতের সাথে বৃটিশ সায়াজ্যের অন্যান্য রাষ্ট্রের সম্পর্ক কিপ হবে এচুক্তিতে সে সম্পর্কে কোন প্রকার নিশে থাকবে না।
| ভারতের রাজন্যবর্গ নৃতন শাসন প্রণালী গ্রহণ করুন বা না করুন নূতন পরিস্থিতি অনুসারে তাদের সাথে বৃটিশ সম্রাটের যে সব চুক্তি আছে সেগুলাের সংশােধন করা হবে।
| (ঘ) ভারতের প্রধান প্রধান সম্প্রদায়ের নেতারা যদি অন্য কোন উপায় স্থির না করেন তবে নিম্নোক্ত উপায়ে নূতন শাসনত গঠনকারী পরিষদ গঠিত হবে । | যুদ্ধ বিরতির পরেই প্রাদেশিক নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে। তখন প্রাদেশিক নিম্ন পরিষদগুলাের সমস্ত প্রতিনিধিরা একটা নির্বাচন পরিষদ রূপে [ Electoral College আপেক্ষিক নির্বাচন প্রথা [ Proportional representation } অনুযায়ী ভারুতের ‘নৃতন শাসনতন্ত্র গঠনকারী পরিষ’ নির্বাচন করবে। এর সংখ্যা নির্বাচন পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১ হবে। ভারতীয় রাজন্যবর্গ ইচ্ছা করলে ষ্টেটের জনসংখ্যার অনুপাতে নিজ নিজ প্রতিনিধি নির্বচন করতে পারবেন। এই সমস্ত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা ও বৃটিশ ভারতীয় সদস্যদের ক্ষমতা একই রকমের হবে। | (ঙ) এই সঙ্কটকালে ভারতে যতদিন এই নুতন শাসন ব্যবস্থা কার্যকরী না হয় ততদিন মহামান্য সম্রাটের গভর্ণমেন্টের হাতেই দেশরক্ষা বিভাগের সকল কর্তৃত্ব থাকবে, কিন্তু সমস্ত অস্ত্রবল ও জনবল সংগঠনের
৯৮
কার্য ভারত গভর্ণমেন্টের দায়িত্ব ও ভারতীয় জনসাধারণের সহযােগিতায় সম্পন্ন হবে। মহামান্য সম্রাটের গভর্ণমেন্ট অবিলম্বে ভারতের প্রধান প্রধান সম্প্রদায়ের নেতাদের তাদের নিজেদের এবং মিত্রশক্তির মঙ্গলের উদ্দেশ্যে এই প্রস্তাব বিবেচনা করবার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। এই উপায়ে তারা | ভারতের নেতৃত্ব | ভারতের ভবিষ্যৎ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এমন একটা মহান এবং প্রয়োজনীয় কার্যে কার্যকরী সাহায্য ও সহযােগিতা দান করতে সক্ষম হবেন [১১০২)।
আচাৱী-ফরমুলা (এপ্রিল ৮, ৯৪৪) | (ক) স্বাধীন ভারতের শাসনতন্ত্র সম্পর্কে নিয়ে যে সকল শর্ত বর্ণিত হচ্ছে সেই সকল শর্তাধীনে মুসলিম লীগ ভারতীয় স্বাধীনতার দাবী সমর্থন করবে এবং স্থায়ী গভর্ণমেন্ট গঠিত না হওয়া পর্যন্ত একটা সামরিক গভর্ণমেন্ট গঠনে কংগ্রেসের সাথে সহয়ােগিতা করতে সম্মত থাকবে।
(খ) যুদ্ধের পর উত্তর-পশ্চিম ও পূর্ব ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পরস্পর সংলগ্ন অঞ্চলগুলো নির্ধারণের জ একটা কমিশন নিযুক্ত করা হবে। এইভাবে নির্ধারিত অঞ্চলগুলােতে পূর্ণ বয়স্কদের গণভােটের দ্বারা স্থির করা হবে যে এ অঞ্চল গুলাে হিন্দুস্তান হৈতে বিচ্ছি না সংশ্লিষ্ট থাকবে। এই অঞ্চলগুলো যদি স্থির করে যে তারা হিন্দুন হােতে স্বতন্ত্র হয়ে সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করবে তবে তাই হবে। সীমান্তের জেলাগুলােতে এ সিদ্ধান্ত প্রযুক্ত হবে না। তাদের হিন্দুস্তান বা পাকিস্তান যে কোন রাষ্ট্রের সাথে যােগদানের ক্ষমতা দেওয়া হবে। | (গ) গণভােট গ্রহণের পূর্বে সকল, ইলকে স্বাধীন মতামত জ্ঞাপনের সুযােগ দেওয়া হবে।
(ঘ) স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনই যদি স্থির হয় তা হলেও বাণিজ্য যানবাহন ও অন্যান্য প্রয়ােজনীয় বিষয়ে পারস্পরিক চুক্তি হবে।
৯৯
(ঙ) এক রাষ্ট্র হােতে অপর রাষ্ট্রে বসবাসের ফলে স্থানান্তর সর্ববেচ্ছাধীন।
(চ), ভারত শাসনের জন্য ফটেন সুখন পূর্ণ ক্ষমতা ও দায়িত্ব হস্তান্তর করবে কেবল মাত্র তখনই এ শর্তগুলাে কার্যকরী হবে [৮৪৪৪]।
গান্ধী-ফরমুলা (শে , ১৯৪১)
(ক) কংগ্রেস ও লীগ কতৃক অনুমােদিত একটা কমিশন সীমানা নির্বরণ করবে। নিধারিত অঞ্চলের অধিবাসীদের মতামত সেই অঞ্চলের পূর্ণ বয়স্কদের ভােরের বা অনুরুপ কোন উপায়ে জেনে নিতে হবে।
(খ) পৃথক হবার পক্ষে ভােট হেলে এটা অবধারিত হয়ে যাবে যে বৈদেশিক শাসনপাশ হতে ভারত মুক্ত হবার পর যত শীঘ্র সম্ভব এই সমস্ত অঞ্চলগুলো মিলিত হয়ে একটা পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করবে। সুতরাং ভারতবর্ষ দূটো স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়বে।
(গ) পৃথক দুবার জন্য একটা সন্ধিপত্র থাকবে। এতে পররাষ্ট্রনীতি, দেশরক্ষা, আভ্যন্তরীণ যানবাহন, , ব্যবসা বাণিজ্য এবং অনুরূপ বিষয় গুলাের স্পষ্ট এবং সন্তোষজনক শাসন পরিচালনায় ব্যবস্থা থাকবে, কারণ এসব বিষয়গুলো চুক্তিকারী পক্ষগুলাের ভিতর তখনও সমবার্থের বিষয়ব বলে পরিগণিত হবে।
(ঘ) দুটো রাষ্ট্রে সংখ্যালঘিষ্ঠদের অধিকার সংরক্ষণের শর্তও এই সন্ধিপত্রে থাকবে।
(ঙ) কংগ্রেস ও লীগ কর্তৃক এই চুক্তি গৃহিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই উভয় দল মিলিতভাবে ভারতের স্বাধীনতা অঙ্গনের অঙ্গ একটা কাৰসুচী গ্রহণ করবে (২৪-১-৪)। লিয়াকত-দেশাই চুক্তির শর্তাবলী (৭৭)।
(১) বর্তমান শাসন ব্যবস্থার কাঠামাের মধ্যেই কংগ্রেস ও লীগ নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর ভিত্তি করে একটা সাময়িক জাতীয় সরকার গঠন করতে সম্মত হচ্ছে –
১০০
(ক) নুতন এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে কংস ও লীগ উভয়েই সমান সংখ্যক আসন পাবে।
(খ) এইকালে প্রতিষ্ঠিত গণগে অনুমত সম্প্রদায় ও শিবের থাকে অবহেলা করা হবে না।
(গ) সামরিক সর্বাধিনায়ক (Commander-in-chief] এই কাউন্সিলের একন এ-অফিসিও সভ্য হবেন।
(২) নির্বাচিত আইন সভার অধিকাংশ সত্য যে প্রস্তাব সমর্থন করবেন না সেরূপ কোন প্রস্তাৰ এই এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল কার্যে পরিণত করবেন না।
(৩) গভর্ণমেন্ট গঠন করবার অব্যবহিত পরেই এই নৃতন সরকার গ্রেস ওয়ার্কিং কমিটয় বন্দী সভ্য ও অন্যান্য কংগ্রেসীদের মুক্তি দিবেন।
(৪) কেন্দ্রীয় গভর্নমেন্ট গঠিত হবার পর, বৰ্ত্তমানে যে মস্ত দেশে ১৩ বার প্রচলিত আছে সেই সমস্ত প্রবেশে লীগ-কংস যুক্ত মতি গঠিত হবে।
(৫)। উল্লিখিত নীতির উপর ভিত্তি করে বড় লাটকে ভারতে জৰু নূতন প্রস্তাৰ পেশ করতে বলা হবে [ ১৯৪৫ ]।
১০১
প্রথম বারের কথা
এই গ্রন্তে পাকিস্তান বাৰীৰ যৌক্তিকতাকে অতি সংক্ষেপে বােৰা চেষ্টা করা হয়েছে। আমি মা বলতে চেয়েছি তা ঠিক ভাবে বলা হয়েছে কিনা সে বিচারের ভার পাঠক মহােয়দের উপরই অপণ করা হােল। পাকিস্তান আন্দোলনে আমার এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা যদি এতটুকুও সহায়ক হয় তবে শ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব। বইখানাকে সুষ্ঠ, ও সুন্দর করে তুলবার জন্য আমার অন্যতম বন্ধু কথাশিল্পি মৌলভী মােহাম্মদ কাসেম সাহেব যে পরিশ্রম করেছেন ত ধন্যবাদ দিয়ে তার মহান প্রচেষ্টাকে ছোট্ট করে দিতে আমি চাই না।•••••••••
দ্বিতীয় বারের কথ:
অতি অল্প সময়ের মধ্যে এই বইখানার জনপ্রিয়তা আমাকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছে। দ্বিতীয় সংস্করণে পাঠক সমাজকে আমার অন্তরের কৃতজ্ঞতা জানাতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।
১০২
“আমি পণ্ডিত নেহেরুকে পাকিস্তান দাবী মেনে নিতে অনুরােগ করছি। তবেই বুঝতে পাবেন কে সর্বাপেক্ষা বেশী রক্ত দান করতে পারে। তারা নাকি পাকিস্তান জিনিষটা বুঝতে পারেননি। যদি বুঝতে না পেয়ে থাকেন তবে এর বিরােধিতা করছে। কেন? কিসেরই বা বিয়ােতি করছেন। একটা ১২১৩ বৎসর বয়স্ক মােসলেম
লকও পাকিস্তান বুঝতে পারে। আমি যখন মােসলেম বালকদের পাকিস্তান বলে চীৎকার করতে দেখি, তখন তাদের জিজ্ঞাসা করি পাকিস্তান কি? তারা সকলেই আমাকে সঠিক উত্তর বের। বিশ্বাস করুন আমি এতটুকুও অতিরঞ্জিত করছিনা। বালকেরাও যে বিষয়টা বুঝতে পারে এদেশের মহান নেতা, আন্তর্জাতিকতাবাদী পণ্ডিত নেহেরু সেটা বুঝতে পারেন না। এদিক ওদিক ঘুরে না বেড়িয়ে সােজ কথা বলুন না কেন?
—কায়েদে আজম