মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীর তালিকা
১.
মার্চ ১ : ইয়াহিয়া কর্তৃক জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা। শেখ মুজিব কর্তৃক একে ষড়যন্ত্র্র আখ্যা দান এবং ৩ মার্চ দেশের সর্বত্র হরতাল আহ্বান।
২.
মার্চ ১ : গভর্নর আহসান পদচ্যূত। লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খানের পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ।
৩.
মার্চ ২ : শেখ মুজিব প্রেসিডেন্টের সংসদ স্থগিরে সিদ্ধান্ত না মানার ঘোষণা এবং ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে গণজমায়েতের আহ্বান।
৪.
মার্চ ২ : পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকায় হরতাল পালিত। ঢাকা বিমান বন্দরে সামরিক বাহিনীর প্রবেশকে বাঁধা ও সেনাবাহিনীর গুলিতে দু’জন নিহত। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৩ মার্চ থেকে ৬ মার্চ দেশব্যাপী হরতালের কর্মসূচী অপরিবর্তিত।
৫.
মার্চ ২ : সামরিক সরকার সংবাদপত্রের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে নতুন আদেশ জারি।
৬.
মার্চ ৩ : সারাদেশে পুর্ণ হরতাল পালিত। সেনাবাহিনীর গুলিতে চট্টগ্রামে বহু লোক হতাহত। শেখ মুজিব অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক। সামরিক সরকারের কার্ফু জারি।
৭.
মার্চ ৩ : প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক ১০ মার্চ জাতীয় পরিষদের নেতাদের বৈঠক আহ্বান। শেখ মুজিব কর্তৃক ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত।
৮.
মার্চ ৪ : জনসাধারণের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষে শতাধিক লোক হতাহত। ঢাকাসহ পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান প্রধান নগরে কার্ফু জারি।
৯.
মার্চ ৪ : নূরুল আমিন কর্তৃক ইয়াহিয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত। সামরিক বাহিনী ব্যারাকে না ফিরলে তাদের প্রতিহত করা হবে বলে মুজিবের ঘোষণা এবং স্টেট ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে হরতাল চলাকালে শুধু বেতন দেয়ার জন্য দু’ঘন্টা খোলা রাখার জন্য নির্দেশ দান।
১০.
মার্চ ৫ : ঢাকা ও টঙ্গীতে বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর গুলিবর্ষণে শতাধিক লোক নিহত এবং আরো বহু সংখ্যক লোক আহত।
১১.
মার্চ ৫ : ইয়াহিয়ার সঙ্গে ভুট্টোর আলোচনা।
১২.
মার্চ ৬ : ইয়াহিয়া কর্তৃক বেতার ভাষণ এবং ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান।
১৩.
মার্চ ৬ : সামরিক জান্তা পূর্ব পাকিস্তানে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করছে বলে আওয়ামী লীগের অভিযোগ।
১৪.
মার্চ ৬ : ভুট্টোর পিপলস্ পার্টির অধিবেশনে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন।
১৫.
মার্চ ৬ : ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙ্গে কয়েদীরা পালাবার সময় রক্ষীদের গুলিতে ৭ জন নিহত এবং ৩০ জন আহত।
১৬.
মার্চ ৬ : জেনারেল টিক্কা খান একই সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্বে নিযুক্তি।
১৭.
মার্চ ৭ : রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং নিম্নলিখিত চারটি শর্ত আরোপ;
ক. সামরিক আইন প্রত্যাহার,
খ. জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর,
গ. সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে ফেরত নেয়া এবং
ঘ. গণহত্যা সম্পর্কে তদন্ত।
শর্ত চারটি পূরণ করা হলে আওয়ামী লীগ অধিবেশনে যোগ দেবে কিনা তা বিবেচনা করবে বলে তিনি জানান।
১৮.
মার্চ ৭ : ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির টিক্কা খানের শপথ গ্রহণের অস্বীকৃতি।
১৯.
মার্চ ৮ : দেশব্যাপী অহিংস আন্দোলন শুরু। কালো পতাকা উত্তোলন, সংগ্রাম কমিটি গঠন। সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পশ্চিমের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ।
২০.
মার্চ ৮ : ঢাকা হাইকোর্টের সব বিচারপতি কর্তৃক টিক্কা খানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনায় অস্বীকৃতি।
২১.
মার্চ ৯ : মওলানা ভাসানীর উদাত্ত আহ্বান-‘পূর্ব বাংলার স্বাধীন স্বীকার করিয়া লও।’ ভাসানীর ১৪ দফার ভিত্তিতে আন্দোলনের ডাক।
২২.
মার্চ ৯ : পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অফিসারদের পরিবারবর্গের পশ্চিম পাকিস্তানে প্রেরণ শুরু।
২৩.
মার্চ ১০ : সরকার এক ঘোষণামতে সাম্প্রতিক বিভিন্ন সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি নিহত।
২৪.
মার্চ ১১ : জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্টের কাছে সাড়ে সাত কোটি মানুষের মানবিক অধিকার আদায়ের স্বপক্ষে সমর্থন দান করার জন্য মুজিবের আহ্বান।
২৫.
মার্চ ১২ : এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আজগর খান শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনা শেষে করাচীতে বলেন, পূর্ব-পশ্চিমের ক্ষীয়মান সম্পর্কের শেষ সংলাপ হচ্ছেন শেখ মুজিব। তিনি ঢাকায় কোথাও পাকিস্তানের পতাকা দেখেন নি বলে জানান।
২৬.
মার্চ ১৩ : রাজবন্দীদের মুক্ত করার জন্য মওলানা ভাসানীর ‘জেল ভাঙ্গা’ আন্দোলনের ডাক।
মার্চ ১৩ : ইয়াহিয়া কর্তৃক লাহোরে সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান। ঢাকায় বৈঠক হলে তাতে যোগ দেবেন বলে শেখ মুজিবের সম্মতি।
২৭.
মার্চ ১৪ : সামরিক আইন লংঘন করে মিছিল, সভা। বেসামরিক প্রশাসন পশ্চিম পাকিস্তানী নীতি অনুযায়ী কাজ করা থেকে বিরত থাকা শুরু করে।
২৮.
মার্চ ১৫ : আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাবিতে শেখ মুজিবের বাংলাদেশের শাসন নিজ হাতে নেবেন বলে ঘোষণা দান এবং কাজ-কর্ম পরিচালনার জন্য ৩৫টি বিধি। মাত্র দু’টি ব্যাংকে সরকারকে দেয় কর প্রদানের নির্দেশ।
২৯.
মার্চ ১৫ : সামরিক প্রহরায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঢাকা আগমন। ২৩ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবার ঘোষণা।
৩০.
মার্চ ১৬ : শেখ মুজিবের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রথম দফায় আড়াই ঘন্টা বৈঠক।
৩১.
মার্চ ১৬ : চীন থেকে আমদানীকৃত সমরাস্ত্রবাহী জাহাজের মাল খালাসে চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীদের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন।
৩২.
মার্চ ১৬ : স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের বিবৃতি : ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। ইয়াহিয়া খানকে অবশ্যই এসব সৈন্য ফিরিয়ে নিতে হবে।’
৩৩.
মার্চ ১৭ : দ্বিতীয় দফায় মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক। সাংবাদিকদের কাছে মুজিবের মন্তব্য : ‘বৈঠক চলবে।’
৩৪.
মার্চ ১৭ : কোন্ অবস্থার প্রেক্ষিতে ২ মার্চ হতে ৯ মার্চ পর্যন্ত বেসামরিক প্রশাসনকে সাহায্য করার জন্য সামরিক বাহিনী তলব করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে তদন্ত করার জন্য সামরিক কর্তৃপক্ষের কমিশন নিয়োগ।
৩৫.
মার্চ ১৮ : তাঁর মূল দাবি না মেনে একটি ধাপ্পা দেয়ার প্রচেষ্টা বলে সামরিক সরকার কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিশনকে শেখ মুজিবের প্রত্যাখ্যান এবং তদন্তের জন্য মুজিবের আলাদা কমিশন নিয়োগ।
৩৬.
মার্চ ১৮ : পশ্চিম পাকিস্তানী নেতা ওয়ালী খান-মুজিব বৈঠক। অপর পশ্চিমা নেতা জুলফিকার আলী ভুটোর ঢাকা আগমনে অসম্মতি জ্ঞাপন।
৩৭.
মার্চ ১৯ : শেখ মুজিব-ইয়াহিয়ার মধ্যে পুনরায় ৯০ মিনিট স্থানীয় আলোচনা। পরে ইয়াহিয়ার উপদেষ্টা ও মুজিবের উপদেষ্টা তাজউদ্দীন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ড. কামালের মধ্যে ২ ঘন্টাব্যাপী আলোচনা।
৩৮.
মার্চ ১৯ : জয়দেবপুরে প্রবল গণপ্রতিরোধের মুখে সেনাবাহিনীর গুলিতে আনুমানিক ১৫০ জন হতাহত।
৩৯.
মার্চ ২০ : ২ ঘন্টা ১৫ মিনিট স্থায়ী মুজিব-ইয়াহিয়ার বৈঠক। প্রথমবারের এ বৈঠকে উভয় পক্ষের উপদেষ্টাগণের আলোচনায় অংশ গ্রহণ।
৪০.
মার্চ ২০ : পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েকজন জাতীয় পরিষদ সদস্যের ঢাকা আগমন।
৪১.
মার্চ ২১ : ভুট্টোর ঢাকা আগমন এবং ইয়াহিয়ার খানের সঙ্গে ২ ঘন্টা স্থায়ী বৈঠক।
৪২.
মার্চ ২১ : ৭০ মিনিট স্থায়ী মুজিব-ইয়াহিয়ার অনির্ধারিত আলোচনা।
৪৩.
মার্চ ২২ : দেশের অধিকাংশ সংবাদপত্রে ‘বাংলার স্বাধিকার’ শীর্ষক ক্রোড়পত্র এবং বাংলাদেশের মানচিত্র প্রকাশ।
৪৪.
মার্চ ২২ : ৭৫ মিনিট স্থায়ী মুজিব-ইয়াহিয়া-ভুট্টোর বৈঠক।
৪৫.
মার্চ ২২ : প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক পুনরায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা।
৪৬.
মার্চ ২৩ : পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে ‘প্রতিরোধ দিবস’ উদযাপন।
৪৭.
মার্চ ২৩ : পল্টন ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানের পর বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের অভিবাদন গ্রহণ।
৪৮.
মার্চ ২৩ : ছাত্ররা চীনা দূতাবাস থেকে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন। অন্যান্য দূতাবাসে এদিন পাকিস্তানের পতাকার অনুপস্থিতি।
৪৯.
মার্চ ২৩ : ইয়াহিয়া কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত বেতার ভাষণ বাতিল। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের দু’দফায় বৈঠক।
৫০.
মার্চ ২৪ : আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের পুনরায় উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক। পশ্চিমা নেতাদের ঢাকা ত্যাগ।
৫১.
মার্চ ২৪ : চট্টগ্রামের সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে অপসারণ এবং ব্রিগেডিয়ার আনসারীর ঐ পদে নিয়োগ।
৫২.
মার্চ ২৪ : এম.ভি. সোয়াত থেকে অস্ত্র খালাস।
৫৩.
মার্চ ২৪ : পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন সেনা ইউনিটে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও খাদিম হোসেন রাজা কর্তৃক হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনা হস্তান্তর।
৫৪.
মার্চ ২৫ : সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর গোপনে ঢাকা ত্যাগ।
৫৫.
মার্চ ২৫ : চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র খালাসে শ্রমিক-জনতা বাঁধা দিলে সামরিক বাহিনীর গুলিতে ১১০ জন নিহত। ঘটনার প্রতিবাদে ২৭ মার্চ মুজিবের ধর্মঘট আহ্বান।
৫৬.
মার্চ ২৫ : রাত ১১টায় ঢাকার লাখ লাখ ঘুমন্ত মানুষের ওপর পরিকল্পিত গণহত্যা শুরু।
৫৭.
মার্চ ২৬ : ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণে শেখ মুজিবকে দেশদ্রোহী ঘোষণা।
৫৮.
মার্চ ২৭ : ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী লোকসভায় বাংলাদেশের জনগণের প্রতি নৈতিক সমর্থন জ্ঞাপন।
৫৯.
মার্চ ৩০ : বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভাইসচ্যান্সেলর ও সেন্ট ক্যাথারিন কলেজ ইংল্যান্ডের অধ্যক্ষ লর্ড এলেন বুলকেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এবং গণহত্যার সংবাদ জ্ঞাপন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছে গণহত্যা বন্ধ করার জন্য তাঁকে টেলিগ্রাম করারও অনুরোধ। বিচারপতি চৌধুরীর অনুরোধে কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিজ এসোসিয়েশনের গণহত্যা বন্ধ করার জন্য ইয়াহিয়াকে টেলিগ্রাম।
৬০.
মার্চ ৩০ : বৃটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিংকের প্রত্যক্ষ দেখা ২৫ মার্চ ’৭১-এর রাতে হত্যাযজ্ঞের ওপর প্রতিবেদন ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় প্রকাশিত। বৃটিশ জনসাধারণ ও বুদ্ধিজীবীমহলের বাংলাদেশের মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ।
৬১.
মার্চ ৩১ : নয়াদিল্লীতে ভারতীয় পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতি তাঁর নিজের, ভারতীয় জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে একাত্মতা ও সংহতি ঘোষণা।
৬২.
এপ্রিল ৩ : সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ইয়াহিয়ার প্রতি বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ করার এবং রাজনৈতিক সুরাহা করার আহ্বান। বিশ্ব শান্তি কমিটির জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান।
৬৩.
এপ্রিল ৪ : অধ্যাপক গোলাম আযম টিক্কা খানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশপূর্বক দেশের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা।
৬৪.
এপ্রিল ৬ : দিল্লীস্থ পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত দু’জন বাঙালী কূটনীতিক খান মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন ও আমজাদুল হকের পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদান।
৬৫.
এপ্রিল ৬ : সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য ভারতকে উস্কে দিচ্ছেন বলে ইয়াহিয়ার অভিযোগ।
৬৬.
এপ্রিল ৭ : মার্কিন সিনেটর ও হার্বাডের অর্থনীতিকগণ কর্তৃক বাংলাদেশ পাকিস্তানী শাসকদের ক্রিয়াকান্ডের কঠোর সমালোচনা এবং পাকিস্তানে মার্কিন সাহায্য বন্ধের দাবি।
৬৭.
এপ্রিল ৭ : বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার ডগলাস হিউমের সঙ্গে সাক্ষাৎ পূর্বক বাংলাদেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা দান এবং গণহত্যা বন্ধের জন্য পাকিস্তান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বৃটিশ সরকারকে অনুরোধ।
৬৮.
এপ্রিল ৯ : অধ্যাপক গোলাম আযমের টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও ছাত্র ও যুব সমাজের সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক বাহিনী গঠনের প্রস্তাব (পরে এই বাহিনী রাজাকার বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে)।
৬৯.
এপ্রিল ৯ : শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহচরগণ যে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্বে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, নির্ভরযোগ্য সূত্রে সে সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে বলে ইসলামাবাদে ঘোষণা। ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি.এ. সিদ্দিকীর পরিচালনায় ঢাকায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে শপথ গ্রহণ।
৭০.
এপ্রিল ১০ : তাজউদ্দিন আহমেদের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠনের উল্লেখ। বিবৃতিতে অধ্যাপক মোঃ ইউসুফ আলীর শপথ করানোর দায়িত্ব ও ক্ষমতা পালনের উল্লেখ।
৭১.
এপ্রিল ১১ : মেজর জেনারেল নিয়াজীকে পদোন্নতি দিয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল করে পূর্বাঞ্চলের দায়িত্ব অর্পণ।
৭২.
এপ্রিল ১২ : বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার নাম ঘোষণা। রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, উপ-রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও সমন্বয় সাধন লক্ষ্যে অন্যান্য সদস্য খন্দকার মোশতাক আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামান।
৭৩.
এপ্রিল ১২ : চীনের ‘পিপলস্ ডেইলী’ পত্রিকাতে ইসলামাবাদের সামরিক জান্তাকে সমর্থন জানিয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশ।
৭৪.
এপ্রিল ১২ : আফগান কূটনৈতিক পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশে সামরিক তৎপরতা না চালানোর জন্য পাকিস্তানকে অনুরোধ।
৭৫.
এপ্রিল ১৩ : মুজিবনগর সরকারকে ৬ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রীসভার সদস্যদের নাম ও দপ্তর ঘোষণা।
৭৬.
এপ্রিল ১৭ : অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠিত।
৭৭.
এপ্রিল ১৭ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামান ও খন্দকার মোশতাক আহমেদ মন্ত্রীসভার সদস্য, এম.এ.জি. ওসমানী মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ও আব্দুর রব সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ করে সরকার গঠন।
৭৮.
এপ্রিল ১৮ : কলকাতাস্থ পাকিস্তান মিশনের সহকারী হাই কমিশনার হোসেন আলীসহ দূতাবাসের ১১ জন বাঙালী কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন। কলকাতার পাকিস্তান মিশনে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন।
৭৯.
এপ্রিল ২০ : গভর্নর ও সামরিক আইন প্রশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান কর্তৃক আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আবদুল মান্নান, তোফায়েল আহমেদ ও দি পিপলের সম্পাদক আবিদুর রহমানকে ২৬ এপ্রিল সকাল ৮টায় ঢাকার এক নম্বর সামরিক আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ।
৮০.
এপ্রিল ২১ : ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী কর্তৃক মুক্তাঞ্চল থেকে জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্ট, গণচীনের প্রেসিডেন্ট মাও সে তুং ও প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই, সোভিয়েত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভ, চেয়ারম্যান কোসিগিন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন, ফ্রান্সের পাম্পিডো, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ, যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট টিটো, মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত, আরব লীগের মহাসচিব আবদেল খালেক হাসুনা ও আরব ঐক্য সংস্থার মহাসচিব দায়লো টেলির কাছে প্রেরিত পৃথক পৃথক বার্তায় অবিলম্বে বাংলাদেশ গণহত্যা রোধ করার লক্ষ্যে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য আবেদন।
৮১.
এপ্রিল ২১ : নিউইয়র্কে বাঙালী কূটনীতিক এ. এইচ. মাহমুদের পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ।
৮২.
এপ্রিল ২২ : ইসলামী ছাত্র সংঘের মোমেনশাহী জেলা সভাপতি মোহাম্মদ আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে জামালপুরে ‘আল বদর’ বাহিনী গঠন।
৮৩.
এপ্রিল ২২ : মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী কর্তৃক এক বিবৃতিতে পূর্ব বাংলার মুক্তি সংগ্রাম পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নয় বলে দাবি।
৮৪.
এপ্রিল ২৩ : বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি নিয়োগ।
৮৫.
এপ্রিল ২৩ : মওলানা ভাসানী কর্তৃক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়াম্যান মাও সে তুং-এর প্রতি পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য না দেয়ার অনুরোধ।
৮৬.
এপ্রিল ২৩ : পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ২৫ এপ্রিল ১২টা থেকে কলকাতার পাকিস্তানী ডেপুটি হাই কমিশন বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত এবং একই সময়ে ঢাকার ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশন বন্ধ করে দেয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান।
৮৭.
এপ্রিল ২৪ : বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার আবেদন।
৮৮.
এপ্রিল ২৫ : ইংল্যান্ডের কভেট্রি শহরে প্রবাসী বাঙালীদের ঐতিহাসিক সমাবেশ। সমাবেশে দলমত নির্বিশেষে যুক্তরাজ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের এ্যাকশন কমিটি গঠন।
৮৯.
মে : মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব প্রকাশ।
৯০.
মে ৩ : ‘ঘ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক কর্তৃক নিম্নলিখিত ৭ জন ছাত্র নেতাকে ১০ মে সকাল ৮টার মধ্যে ঢাকার উপ-সামরিক আইন প্রশাসকের সামনে হাজির হবার নির্দেশ জারী :
১. ডাকসু’র সহ-সভাপতি আ.স.ম. আব্দুর রব,
২. ডাকসু’র সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন,
৩. ছাত্র লীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী,
৪. ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ,
৫. খায়রুল আলম খসরু,
৬. মোস্তফা মহসিন মন্টু ও
৭. সেলিম মহসীন।
৯১.
মে ৯ : ইংল্যান্ডের ব্র্যাডফোর্ডে ও বার্মিংহামে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি প্রবাসী বাঙালীদের সংহতি প্রকাশকের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সভা।
৯২.
মে ১০ : বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি দেশকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের পক্ষে দৃঢ় মত প্রকাশ।
৯৩.
মে ১৩ : সামরিক শাসনকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান কর্তৃক মুক্তিবাহিনীর সেনাপতি এম.এ.জি. ওসমানীকে ২০ মে সকাল ৮টায় ১ নং সামরিক আদালতে হাজির হতে নির্দেশ।
৯৪.
মে ১৪ : বৃটিশ পার্লামেন্টের সদস্য জন স্টোন হাউস, ব্রস ডগলাসম্যান ও পিটার সোবের সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টায় বৃটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ আলোচনার ব্যবস্থা ও অধিকাংশ সদস্য কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা বন্ধের লক্ষ্যে বৃটিশ সরকারকে চাপ প্রয়োগ করার জন্য আবেদন। দক্ষিণপন্থী নেতা স্যার জেবাল্ড বরো ও বামপন্থী নেতা ইয়া সিকার্ডো এন্ডু ফাইলন কর্তৃক বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ।
৯৫.
মে ২১ : জাতিসংঘের ইউনেস্কোর সভায় পাকিস্তান প্রতিনিধি কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তান মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে বলে স্বীকারোক্তি।
৯৬.
মে ২২ : ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে ও বেচলী শহরে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে প্রবাসী বাঙালীদের জনসভা।
৯৭.
মে ২৩ : ইংল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে বাঙালী ও বৃটিশদের সমন্বিত উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে এবং গণহত্যা বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানিয়ে সভা অনুষ্ঠিত।
৯৮.
মে ২৪ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীনতাকামী বাঙালীদের প্রথমবারের মত বড় ধরনের সভার আয়োজন।
৯৯.
মে ২৪ : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন ও সেই সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহযোগিতা ও সমর্থন প্রদানের আহ্বান।
১০০.
মে ২৪ : অস্থায়ী সরকারের মুখপাত্র কর্তৃক ইসলামাবাদ ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে নিম্নলিখিত শর্তে আলোচনা সম্ভব বলে জানান :
ক. ২৩ বৎসরের শোষণের ক্ষতিপূরণ পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে দেবে,
খ. বর্তমান যুদ্ধের জান-মালের ক্ষতিপূরণ,
গ. আন্তর্জাতিক আদালতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নুরেমবার্গ ট্রায়ালের অনুকরণে পাকিস্তানী যুদ্ধপরাধীদের জন্য একটি ট্রায়ালের দাবি এবং
ঘ. পূর্ব পাকিস্তান থেকে সমস্ত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অপসারণ।
১০১.
মে ২৪ : মশিউর রহমান (যাদু মিয়া) কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধ পরিত্যাগ ও ভারত থেকে প্রত্যাবর্তন পূর্বক পাকিস্তানী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ।
১০২.
মে ২৫ : বিশ্বখ্যাত বাঙালী স্থপতি এফ.আর. খান কর্তৃক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ স্টেটে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সবাইকে নিয়ে কমিটি গঠন।
১০৩.
মে ২৫ : ‘নিউইয়র্ক টাইমস্’-এ বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী প্রতিনিধি বিচারপতি চৌধুরীর একান্ত সাক্ষাৎকার। একই দিন জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক ও সংবাদ সংস্থাকে মুক্তিযুদ্ধ ও এর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিচারপতি চৌধুরীর ব্রিফ প্রদান।
১০৪.
মে ২৭ : মওলানা মান্নানের নেতৃত্বে মাদ্রাসা প্রতিনিধি দলের জেনারেল এ.এ.কে. নিয়াজীর সাথে সাক্ষাৎ ও এক খন্ড কোরান শরীফ উপহার।
১০৫.
মে ২৬, ২৭ ও ২৮ : বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি দলের বিচারপতি চৌধুরীর নেতৃত্বে লিবিয়া, মিশর, জর্ডান, ইরাক, ইরান, সিরিয়া, সৌদি আরব ও পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্রদূতদের সাথে সাক্ষাৎ।
১০৬.
মে ২৮ : মওলানা ইউসুফের নেতৃত্বে ৯৬ জন জামায়াতে ইসলামী কর্মী নিয়ে খুলনা আনসার ক্যাম্পে ‘রাজাকার বাহিনী’ গঠন।
১০৭.
মে ৩০ : বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটির উদ্যোগে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে বিশাল জনসভা। বৃটেনের সমস্ত প্রেস আর মিডিয়াগুলোর লিডিং নিউজ-‘বাংলাদেশ’।
১০৮.
জুন ৩ : পাকিস্তানী কর্মকান্ডের সমর্থনে পাকিস্তান বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের প্রেসিডেন্ট মহাথেরোর বিবৃতি দান।
১০৯.
জুন ৫ : ইংল্যান্ডের শেফিল্ড টাউন হলে বাঙালীদের সভায় ব্যাপক সংখ্যক বৃটিশ বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের উপস্থিতি, পাকিস্তানীদের সভা পন্ড করার চেষ্টা।
১১০.
জুন ৭ : গভর্নর টিক্কা খান কর্তৃক এক অধ্যাদেশ বলে ১৯৫৮ সালে আনসার এ্যাক্ট বাতিল ঘোষণা এবং রাজাকার এ্যাক্ট ’৭১ অধ্যাদেশ জারি।
১১১.
জুন ৮ : ঢাকার ১ নম্বর বিশেষ সামরিক আদালত কর্তৃক তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, তোফায়েল আহমেদ ও আবিদুর রহমানকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড প্রদান ও তাঁদের সম্পত্তির শতকরা ৫০ ভাগ বাজেয়াপ্ত ঘোষণা।
১১২.
জুন ১৩ : ইংল্যান্ডের লর্ডসে বাঙালী ও বৃটিশদের উদ্যোগে জনসভা। ব্যাপক সংখ্যক বুদ্ধিজীবী ও বৃটিশ নাগরিকদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি সংহতি প্রকাশ। ওয়ার্কার্স প্রেসের বাংলাদেশের গণহত্যার ওপর এক প্রকাশনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন।
১১৩.
জুন ১৯ : গোলাম আযম কর্তৃক ইয়াহিয়া খানের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা এবং নিজের ও তাঁর দলের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দান।
১১৪.
জুন ২১ : বিচারপতি চৌধুরীর নেদারল্যান্ড সফর। এ্যামস্টারডামে সাংবাদিক সম্মেলন এবং নেদারল্যান্ড টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার প্রদান।
১১৫.
জুন ২২ : নেদারল্যান্ড পার্লামেন্টের স্পীকার ও সদস্যদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের আলোচনা। নেদারল্যান্ডের অধিকাংশ পত্র-পত্রিকা কর্তৃক এই প্রতিনিধিদলকে একটি দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে মর্যাদা দান।
১১৬.
জুন ২৬ : লন্ডনের বেজ ওয়াটার শহরে স্বাধীনতার সমর্থনে বাঙালীদের জনসভায় বিশিষ্ট বৃটিশ নাগরিকদের অংশ গ্রহণ।
১১৭.
জুন ২৭ : বার্মিংহামে বাঙালীদের জনসভা। পাকিস্তানীদের বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটি আয়োজিত এই সভা পন্ড করার চেষ্টা।
১১৮.
জুলাই ২ : ইয়াহিয়া সরকার পুঁজিবাদ ও আমলাতন্ত্রের সমর্থনে পাকিস্তানে সামরিক শাসন স্থায়ী করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সাথে যে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তার স্বরূপ উদঘাটনের জন্য খান আবদুল গাফফার খানের পাকিস্তানের জনগণের প্রতি আহ্বান।
১১৯.
জুলাই ৬ : সংসদের ৩০০ শতের বেশি নির্বাচিত প্রতিনিধির মুক্তিযুদ্ধের প্রতি পুনরায় তাঁদের একাত্মতা ঘোষণা। সভায় নির্বাচিত প্রত্যেক এম.এন.এ. ও এম.পি.-র দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
১২০.
জুলাই ৯ : বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে ইসলামীকরণের ইসলামাবাদের নতুন পদক্ষেপ। ঢাকার রাস্তা, অলি-গলিকে পাকিস্তানী নেতাদের নামে পুনরায় নামকরণ। অধিকাংশ সাইনবোর্ডে উর্দুর ব্যবহার। বাংলাদেশের স্কুল-কলেজের পাঠ্য-পুস্তক ইসলামী শিক্ষার ভিত্তিতে নতুন করে রচনার প্রস্তুতি এবং এই খাতে কেন্দ্রীয় সরকারের ১.৪ কোটি টাকা বরাদ্দ।
১২১.
জুলাই ১১ : প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ কর্তৃক বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরে সেনাবাহিনীর সেক্টর কমান্ডারদের আনুষ্ঠানিক সম্মেলনের উদ্বোধন। তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রথম অধিবেশনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল রব ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে. খন্দকারকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যথাক্রমে চীফ অব স্টাফ ও ডেপুটি চীফ অব স্টাফ নিযুক্তি।
১২২.
জুলাই ১৮ : কলকাতার বাংলাদেশ মিশনের ৬৫ জন সদস্য হোসেন আলীর নেতৃত্বে সুইডিস সরকারের প্রতিনিধিকে জানান যে, তাঁরা পাকিস্তানে ফিরে যেতে চান না।
১২৩.
জুলাই ১৯ : ইয়াহিয়া খানের ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি। লন্ডন ফিনানসিয়াল টাইমসের প্রতিনিধিকে ইয়াহিয়া খান জানান যে, দেশদ্রোহিতার অপরাধে সামরিক আদালতে শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার হবে—এর শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড।
১২৪.
জুলাই ২৪ : ঢাকায় সামরিক কর্তৃপক্ষের ঘোষণা : আগামীকাল (২৫ জুলাই) বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দিন আহমেদ, আবদুল মান্নান ও দি পিপল সম্পাদক আবিদুর রহমানের সম্পত্তি প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি হবে।
১২৫.
জুলাই ২৬ : মুক্তিবাহিনীর কুমিল্লা শহরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অবস্থানের ওপর গোলা বর্ষণ। ন্যাপ প্রধান মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এক বিবৃতিতে বাম শক্তিসমূহকে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহণের আহ্বান। তিনি বলেন, ‘আমরা বাম-ডান কিংবা মধ্য, যে পন্থীই হই না কেন, আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত মাতৃভূমির স্বাধীনতা।’ তিনি বলেন, ‘কিছু লোক সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে আমাদের মধ্যে বিভেদের চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমাদের সবাইকে এ সব মীরজাফর সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।’
১২৬.
জুলাই ২৮ : গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধির কারণে ঢাকার সামরিক প্রশাসকের অফিস ক্যান্টনমেন্টের কাছে স্থানান্তরিত।
১২৭.
জুলাই ৩০ : ইয়াহিয়া খানের পূর্ব পাকিস্তান সফরের ঘোষণা। পাকিস্তানের সীমান্তে অনবরত ভারত বোমা বর্ষণ করছে—বিধায় ভারতের সাথে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী বলে বিধায় তাঁর মত প্রকাশ।
১২৮.
জুলাই ৩০ : ঢাকায় এক নম্বর সামরিক আদালত কর্তৃক বিশিষ্ট চলচ্চিত্র শিল্পী (চিত্র নায়িক) কবরী চৌধুরী ও কন্ঠশিল্পী আবদুল জব্বারকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এবং ছাত্রনেতা ও মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসীন মন্টু, কামরুল আনাম খান খসরু ও আবদুল গনি মনুকে ১৬ আগস্টের মধ্যে আদালতের সামনে হাজির হবার নির্দেশ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উপস্থিত না হলে তাঁদের অনুপস্থিতিতেই বিচার অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা।
১২৯.
আগস্ট ১ : আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সেক্রেটারী আমিনুল হক বাদশাকে ৬ আগস্ট বেলা ১০টার মধ্যে ঢাকার সামরিক আইন আদালতে হাজির হবার নির্দেশ, অন্যথায় তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার করা হবে বলো ঘোষণা।
১৩০.
আগস্ট ২ : ইয়াহিয়া খান কর্তৃক বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনীর শক্তি ও তৎপরতা বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে এর উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে বলে অঙ্গীকার।
১৩১.
আগস্ট ৩ : রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার করা হবে বলে টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ইয়াহিয়া খানের মন্তব্য।
১৩২.
আগস্ট ৪ : ভারত পাকিস্তান ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত—এই পুরোনো অভিযোগের ভিত্তিতে পাকিস্তান একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ। ১২৫ পৃষ্ঠায় এ শ্বেতপত্রে আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের একটি গোপন ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ।
১৩৩.
আগস্ট ৮ : ভারত সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর শেখ মুজিবের মুক্তির দাবি জানিয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বিশ্বের সকল রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের কাছে আবেদন।
১৩৪.
আগস্ট ৯ : ১১ আগস্ট থেকে গোপনে শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার শুরু হবে এই মর্মে এক সরকারী প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
১৩৫.
আগস্ট ৯ : ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন শান্তি, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তি সম্পাদন।
১৩৬.
আগস্ট : তৎকালীন ঢাকা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের লবিতে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের বোমা আক্রমণ।
১৩৭.
আগস্ট ১৭ : জেনেভাস্থ আন্তর্জাতিক আইন সমিতি কর্তৃক শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য ইয়াহিয়া খানের কাছে আবেদন।
১৩৮.
আগস্ট ১৯ : সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল টিক্কা খান কর্তৃক আওয়ামী লীগের ২৯ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যকে সামরিক আদালতের সামনে হাজির হবার নির্দেশ।
১৩৯.
আগস্ট ২০ : সামরিক আইন প্রশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান কর্তৃক ১৩ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যকে সামরিক আদালতের সামনে হাজির হবার নির্দেশ।
১৪০.
আগস্ট ২০ : হেলসিঙ্কি থেকে বিশ্ব শান্তি কাউন্সিল কর্তৃক শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য পাকিস্তান সরকারের কাছে আবেদন।
১৪১.
আগস্ট ২১ : পূর্ব পাকিস্তান সরকার কর্তৃক আনসার অধ্যাদেশ ১৯৪৮ বাতিল করে রাজাকার অধ্যাদেশ ১৯৭১ জারি।
১৪২.
আগস্ট ২৩ : ঢাকায় প্রাদেশিক সরকারের জনৈক মুখপাত্র বলেন, বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত সব সদস্যকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, ৮৮ জন এম.এন.এ ও ৯৪ জন এম.পি.এ.-এর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ফলে তাঁদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
১৪৩.
আগস্ট ৩০ : রাওয়ালপিন্ডি কাউন্সিল মুসলিম লীগের খাজা খয়রুদ্দিন ও মওলানা সফিকুল ইসলামের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ।
১৪৪.
আগস্ট ৩০ : দিল্লীতে বাংলাদেশ মিশনের উদ্বোধন।
১৪৫.
আগস্ট ৩১ : পরবর্তী দু’সপ্তাহের মধ্যে শেখ মুজিবের বিচার শুরু হবে এই মর্মে জাতিসংঘে পাকিস্তানী প্রতিনিধি আগা শাহীর উল্লেখ।
১৪৬.
আগস্ট ৩১ : ডা. এ.এম. মালিক ও লেফটেন্যান্ট আমীর আব্দুল্লাহ নিয়াজীর যথাক্রমে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্তি।
১৪৭.
সেপ্টেম্বর ১ : ঢাকার সামরিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিম্নলিখিত ৪ জন অধ্যাপক ও ১৩ জন সিএসপি অফিসারকে সামরিক কর্তৃক নিম্নলিখিত আদালতে হাজির হবার নির্দেশ।
১৪৮.
সেপ্টেম্বর ১ : প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ভারত-সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার চুক্তিকে স্বাগত ঘোষণা এবং এর ফলে দু’টি দেশের কাছ থেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আরো সহযোগিতা ও সমর্থনের আশা প্রকাশ। জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ফ্রান্সের ‘লাফিগারো’ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধির সাথে এক সাক্ষাৎকারে শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর তীব্র সমালোচনা ও বাংলাদেশের পাকিস্তানী বাহিনীর তৎপরতার যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ।
১৪৯.
সেপ্টেম্বর ২ : ৪৪ জন নিম্নলিখিত ইপিসিএস অফিসারকে সামরিক আদালতে হাজির হবার নির্দেশ : আলতাফ হোসেন খান, জিতেন্দ্র চক্রবর্তী, আলতাফ হোসেন, এ.কিউ.এম. কামরুল হুদা, আব্দুল মতিন সরকার, হেলাল উদ্দিন খান, আব্দুল লতিফ, আব্দুল হালিম, জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ক্ষিতীশ চন্দ্র কুন্ড, কাজী লুৎফুল হক, মাখন চন্দ্র মাঝি, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, আব্দুল কাদের মুন্সী, দ্বিজেন্দ্র নাথ বেপারী, মানিক লাল সমাদার, আফতাব উদ্দিন, কৃষানন্দ মোহন দাস, অমিয়াংশু সেন, মোঃ ইসহাক, মোঃ আব্দুল আলী, এ.কে.এম. রুহুল আমিন, ইয়াকুব শরীফ, চিত্তরঞ্জন চাকমা, প্রিয়দা রঞ্জন দাস, জ্ঞানরঞ্জন সাহা, অমরেন্দ্র মজুমদার, গোলাম আকবর, বিবেকানন্দ মজুমদার, দীপক কুমার সাহা, অনিলচন্দ্র সিংহ, সুবীর কুমার ভট্টাচার্য, আব্দুল লতিফ ভুঞা, এ.এইচ.এম. আব্দুল হাই, মোহাম্মদ আমানতউল্লাহ, রিয়াজুর রহমান, এ.এফ.এম. রমিজ উদ্দিন, জ্যোতি বিনোদ দাস, আজিজুর রহমান, বিভূতি ভূষণ বিশ্বাস, জিতেন্দ্র লাল দাস, খান আমির আলী, যোগেশচন্দ্র ভৌমিক ও জহিরুল ইসলাম ভুঞা।
১৫০.
সেপ্টেম্বর ৩ : ডা. এম.এ. মালিকের পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে শপথ গ্রহণ।
১৫১.
সেপ্টেম্বর ৩ : পূর্বাঞ্চলী কমান্ডার হিসেবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ.এ.কে. নিয়াজীর দায়িত্বভার গ্রহণ।
১৫২.
সেপ্টেম্বর ৪ : ইয়াহিয়া খান কর্তৃক সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা।
১৫৩.
সেপ্টেম্বর ৬ : আটচল্লিশ জন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যকে সামরিক আদালতে হাজির হবার নির্দেশ।
১৫৪.
সেপ্টেম্বর ৮ : পাকিস্তান সরকার কর্তৃক আওয়ামী লীগের ৭২ জন জাতীয় সংসদ সদস্যের সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের কথা ঘোষণা।
১৫৫.
সেপ্টেম্বর ১৩ : কুয়ালালামপুর কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী সমিতির বৈঠকে বৃটেনের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিঃ আর্থার বটমলীর শেখ মুজিবের মুক্তি দাবি।
১৫৬.
সেপ্টেম্বর ১৭ : গভর্নর ডা. এ.এম. মালিক কর্তৃক ১০ সদস্যবিশিষ্ট প্রাদেশিক মন্ত্রীসভার নাম ঘোষণা।
১৫৭.
সেপ্টেম্বর ২৮ : পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের ৮ জন অফিসারকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণার কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত।
১৫৮.
অক্টোবর ৩ : প্রাদেশিক পরিষদের ৮৮টি শূন্য আসনে ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ৭ জানুয়ারীর মধ্যে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা।
১৫৯.
অক্টোবর ৮ : ময়মনসিংহের এ.কে. মোশারফ হোসেন, এম.পি.এ., সিলেটের জসিম উদ্দিন আহমেদ ও কুমিল্লার এডভোকেট মুজিবুর রহমানের ডা. মালেক মন্ত্রীসভার সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ।
১৬০.
অক্টোবর ১২ : পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত এই মর্মে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণ।
১৬১.
অক্টোবর ১২ : ঢাকা সফররত পিপলস্ পার্টির প্রতিনিধি দলের সাথে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সাক্ষাৎ করে নিজেদের পি.পি.পি.-তে যোগদান ও পি.পি.পি.-র টিকেটে উপ-নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ। এঁরা হলেন, পি.পি.পি.’র সাবেক প্রাদেশিক প্রধান আব্দুস সালাম খান, কাইয়ুম লীগের কাজী কাদের, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের প্রাদেশিক প্রধান পীর মোহসীন উদ্দিন দুদু মিয়া, কনভেনশন লীগের হাসিম উদ্দিন, মস্কোপন্থী ন্যাপের আহমেদুল কবীর ও মিয়া মনসুর আলী ও ভাসানী ন্যাপের আনোয়ার জাহিদ।
১৬২.
অক্টোবর ১৩ : সাবেক প্রাদেশিক গভর্নর আবদুল মোনায়েম খান সন্ধ্যায় বনানীস্থ স্বীয় বাসভবনে গুলিবিদ্ধ। শেষ রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোনায়েম খানের মৃত্যু।
১৬৩.
অক্টোবর ১৬ : বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর ময়মনসিংহস্থ রোডের তালাবদ্ধ বাসভবনে অগ্নিসংযোগ। কাওরাইদ ও মশাখালীর মাঝে গেরিলা কর্তৃক একটি রেল সেতু উড়িয়ে দেবার ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল চলাচল স্থগিত।
১৬৪.
অক্টোবর ২০ : পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ৭৮টি আসনে উপ-নির্বাচনে ১৯২ জন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র দাখিল।
১৬৫.
অক্টোবর ২১ : পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের ১০৪টি শূন্য আসনে ৩১০ জন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র পেশ।
সিলেটের কমলগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, যশোর ও রংপুরে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ।
১৬৬.
অক্টোবর ২৪ : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন আদায়ের জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা, বৃটেন ও পশ্চিম জার্মানীর সফর।
১৬৭.
অক্টোবর ২৫ : নেপালে পাকিস্তানের দূতাবাসের কূটনীতিক মোস্তাফিজুর রহমানের বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ।
১৬৮.
অক্টোবর ২৭ : চট্টগ্রামে গেরিলাদের হাতে উপ-নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারী প্রার্থী ও কনভেনশন মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ বখতিয়ার নিহত। চট্টগ্রামে একটি চীনা রেস্তোরায় বোমা বিস্ফোরণে কয়েক ব্যক্তি আহত।
১৬৯.
অক্টোবর ২৮ : প্রদেশের আসন্ন উপ-নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে ৫০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এই মর্মে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা।
১৭০.
নভেম্বর ৩ : টোকিওতে পাকিস্তানের দূতাবাসের প্রেস এ্যাটাচী এস.এম. মাসুদ ও থার্ড সেক্রেটারী মোহাম্মদ আব্দুর রহিমের পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। সুইজারল্যান্ডে পাকিস্তানের চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স ওয়ালিয়ুর রহমানের বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা।
১৭১.
নভেম্বর ৪ : পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের উপ-নির্বাচনে ১০৮ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে এই মর্মে পাকিস্তান সরকারের ঘোষণা। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর ওয়াশিংটন সফর।
করাচীতে পি.পি.পি. প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো ও পি.ডি.পি. প্রধান নুরুল আমিনের মধ্যে একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছে জরুরী বার্তা প্রেরণ।
১৭২.
নভেম্বর ৪ : বৃটিশ পার্লামেন্ট অধিবেশনে শ্রমিক দলের প্রভাবশালী সদস্য মি. পিটার শোর এক হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ‘বৃটিশ সরকার যেভাবে আবার পাকিস্তানে সাহায্য দান করার পাঁয়তারা করছে তার পরিণতি শুভ হবে না। পাকিস্তানে আসল প্রয়োজন হচ্ছে একটি রাজনৈতিক সমাধান। আর এ ধরনের একটা সমাধান, যা পূর্ব বাংলার জনগণের জন্য গ্রহণযোগ্য হতে হবে।’
১৭৩.
নভেম্বর ৫ : প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান লাহোর সফরে আগমন করলে এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আজগর খান ও প্রখ্যাত কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজসহ ৪২ জন পাকিস্তানী রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক, লেখক, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ও ছাত্রনেতা এক যুক্ত বিবৃতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিদানের আহ্বান।
১৭৪.
নভেম্বর ৫ : পিপলস্ পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ব্যক্তিগত প্রতিনিধি হিসেবে চীন সরকারের সাথে আলোচনার জন্য পিকিং (বেইজিং) সফর। ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন ৮ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্য পাকিস্তান বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল এ. রহিম খান, সেনাবাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট গুল হাসান খান, নৌবাহিনীর চীফ অব স্টাফ রিয়ার এ্যাডমিরাল এ. রশীদ, পররাষ্ট্র সচিব সুলতান মোহাম্মদ খান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দু’জন ডিরেক্টর জেনারেল আফতার আহমদ খান ও তবারক হোসেন ও ডিরেক্টর আহমদ কেওয়াল। রাতে জনাব ভুট্টো ও চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই-এর আলোচনা বৈঠক।
১৭৫.
নভেম্বর ৮ : প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান সরকারের অর্থনৈতিক সমন্বয় ও বৈদেশিক সাহায্য বিভাগের যুগ্মসচিব এম.এ. রশীদ, পরিকল্পনা বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থনেতিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, নয়াদিল্লীস্থ পাকিস্তানী দূতাবাসের সহকারী প্রেস এ্যাটাচী আমজাদুল হক ও কলকাতাস্থ পাকিস্তান ডেপুটি হাই কমিশনার এম. হোসেন আলী, সহকারী প্রেস এ্যাটাচী মাকসুদ আলীকে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করার কারণে চাকুরী থেকে বহিষ্কার করেন।
১৭৬.
নভেম্বর ৯ : পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করেন, পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ৭৮টি শূন্য আসনের উপ-নির্বাচনে ৫৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত।
ঢাকায় বিশেষ সামরিক আদালত এক রায়ে ১৩ জন সিএসপি, ২৪ জন ইপিসিএস অফিসার ও ১৫ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের প্রত্যেকের ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ডসহ অর্ধেক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ।
১৭৭.
নভেম্বর ১০ : ১০৮টি জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নাম ঘোষণা।
১৭৮.
নভেম্বর ১৪ : পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়, গত ২৫ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়োজিত ৪ জন সিএসপি ও একজন ইপিসিএস অফিসারের মৃত্যু হয়েছে। এঁদের মধ্যে কুষ্টিয়ার ডিসি নাসিম ওয়াকার আহমেদ, ১৩ মার্চ, চুয়াডাঙ্গার এসডিও মোহাম্মদ নিসারুল হামিদ ১৬ এপ্রিল, সিরাজগঞ্জের এসডিও এ.কে. শামসুদ্দিন ২০ মে এবং যশোরের সাব-জজ মোজাফফর হোসেন (ইপিসিএস) ৩ সেপ্টেম্বর মারা যান।
১৭৯.
নভেম্বর ১৬ : মতিঝিল নটরডেম কলেজের দক্ষিণে সার্কুলার রোডস্থ ব্রিজের নীচে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুণ চিকিৎসক ডা. আজহারুল হক ও ডা. কবিরের লাশ উদ্ধার। তাঁদেরকে বাসভবন থেকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়।
১৮০.
নভেম্বর ১৮ : প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান কর্তৃক ফিলিপিনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত কে.কে. পন্নী, নয়াদিল্লীতে পাকিস্তানের কাউন্সিলর হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ও কাঠমুন্ডুতে সেকেন্ড সেক্রেটারী এ.এম. মোস্তাফিজুর রহমানকে চাকুরী থেকে বরখাস্তের নির্দেশ। কূটনীতিকবৃন্দ বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলে তাঁদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়।
১৮১.
নভেম্বর ২৭ : বৈদেশিক সচিব জনাব মাহবুব আলম চাষীকে অপসারণ করে রাষ্ট্রদূত জনাব আবুল ফতেহকে নয়া বৈদেশিক সচিব নিয়োগ।
১৮২.
নভেম্বর ৩০ : ২২ জন বাঙালী পুলিশ অফিসারকে ঢাকায় সামরিক আদালতে হাজির হবার নির্দেশ। রাওয়ালপিন্ডিতে এক সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সদস্য এবং রাজাকাররা পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য প্রাণ দিচ্ছে। আমরা এটা আমাদের কর্তব্য মনে করেই বিচ্ছিন্নতাবাদী (মুক্তিযোদ্ধা) ও রাষ্ট্রবিরোধী (আওয়ামী লীগ) লোকদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা দান করছি। যে সব দেশপ্রেমিক পূর্ব পাকিস্তানী দেশের অখন্ডতা রক্ষার জন্য কাজ করছেন তাঁদের উৎসাহ দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পূর্বাঞ্চল সফর করা উচিত।’
১৮৩.
ডিসেম্বর ৩ : বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কলকাতার গড়ের মাঠে বক্তৃতা। ভারতীয় যুদ্ধ জাহাজ আই.এন.এস. রাজপুত কর্তৃক পাকিস্তানী ডুবোজাহাজ পি.এম.এস. গাজী ধ্বংস।
১৮৪.
ডিসেম্বর ৪ : আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের যুদ্ধ ঘোষণা। বাংলাদেশ ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ কমান্ড গঠন ও মিত্রবাহিনী নাম গ্রহণ। নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে রাশিয়ার ভেটো প্রদান। ভারতীয় নৌ-বাহিনীর হামলায় পাকিস্তানী ডেস্ট্রয়ার ‘খাইবার’ ও ‘শাহজাহান’ করাচীর অদূরে ধ্বংস।
১৮৫.
ডিসেম্বর ৬ : ভারতের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরিা গান্ধী কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান। ভারত-পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন।
১৮৬.
ডিসেম্বর ৬ : ঢাকা বিমান বন্দর অকেজো হওয়ায় পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পাইলটগণের তৃতীয় দেশের সাহায্যে পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ।
১৮৭.
ডিসেম্বর ৭ : যশোর বিমান বন্দরের পতন। মিত্র বাহিনীর একযোগে যশোর শহরে প্রবেশ ও পাকিস্তানী বাহিনীর পলায়ন।
১৮৮.
ডিসেম্বর ৮ : বিভিন্ন সেক্টরে প্রচন্ড যুদ্ধ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর যশোরে অবস্থান। ভারতের চীফ অব স্টাফ জেনারেল মানেক শ কর্তৃক পূর্ব রণাঙ্গনে পাকিস্তানী সৈন্যদের আত্মসমর্পণের আহ্বান।
১৮৯.
ডিসেম্বর ৯ : চাঁদপুর ও দাউদকান্দিকে মুক্ত এলাকা ঘোষণা। পশ্চিম রণাঙ্গনে ভয়াবহ লড়াই।
১৯০.
ডিসেম্বর ১০ : মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ কমান্ড গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রচার ও মিত্রবাহিনী নামে পরিচিতি লাভ। যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ।
১৯১.
ডিসেম্বর ১১ : পাকিস্তানী মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী কর্তৃক জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল উথান্টের কাছে আত্মসমর্পণের জন্যে তারবার্তা প্রেরণ। ইয়াহিয়া খান কর্তৃক এই সংবাদের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন এবং জাতিসংঘে অবস্থানকারী প্রতিনিধি দলের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো কর্তৃক এই আবেদনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। বগুড়া ও ময়মনসিংহ এলাকা মুক্ত ঘোষণা।
১৯২.
ডিসেম্বর ১১ : ঢাকার অদূরে ভারতীয় বাহিনীর প্যারাসুটের মাধ্যমে কমান্ডো অবতরণ। রাজশাহী, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ মুক্ত ঘোষণা।
১৯৩.
ডিসেম্বর ১৩ : মিত্রবাহিনী কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা চতুর্দিক দিয়ে অবরুদ্ধ, আত্মসমর্পণ বাঞ্ছনীয় হবে—এই মর্মে জেনারেল মানেক শ কর্তৃক জেনারেল রাও ফরমানের কাছে বার্তা প্রেরণ।
১৯৪.
ডিসেম্বর ১৪ : ঢাকার গভর্নর ডা. আবদুল মালিকসহ উচ্চপদস্থ বেসামরিক কর্মচারীদের পদত্যাগ ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থিত আন্তর্জাতিক রেডক্রসের কাছে নিরাপত্তা দাবি। পাকিস্তানী বাহিনীর ৯৩ ইনফেন্ট্রি ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার কাদেরের ঢাকার অদূরে আত্মসমর্পণ।
১৯৫.
ডিসেম্বর ১৫ : হানাদার বাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী কর্তৃক জেনারেল মানেক শ-এর নিকট আত্মসমর্পণের স্বীকৃতি জানিয়ে তারবার্তা প্রেরণ এবং জেনারেল শ কর্তৃক ১৬ই ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের সময় নিধারণ।
১৯৬.
ডিসেম্বর ১৬ : ৪টা ৩১ মিনিটে মিত্রশক্তির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও ঐতিহাসিক দলিলে স্বাক্ষর।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান – এ.এস.এম. সামছুল আরেফিন