You dont have javascript enabled! Please enable it!
কুমিল্লা ও নােয়াখালী জেলায়
সশস্ত্র প্রতিরােধের আরও বিবরণ বড়কামতার যুদ্ধ। বর্ডার পেরিয়ে আগরতলা এসে পৌছেছি। তারপর কটা দিন কেটে গেছে। মুক্তিবাহিনীর ভাইদের স্বচক্ষে দেখবার জন্য আর তাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা শােনার। জন্য আকুলি-বিকুলি করে মরছিলাম। কিন্তু আমাদের মতাে লােকদের পক্ষে এত তাড়াতাড়ি তাদের সন্ধান পাওয়া সহজ নয়। অবিরাম আগ্রহ দেখালে হয়ত বা সন্দেহভাজন হয়ে পড়ব। শুনলাম শহর থেকে মাইল পাঁচেক দূরে জি বি হাসপাতালে মুক্তিবাহিনীর দশবারাে জন আহত যােদ্ধা রয়েছে। সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করলে আমাদের মনের আশা মিটতে পারে। কিন্তু কাজটা কি এতই সহজ! আমরা যে পাকিস্তানের গােয়েন্দা বিভাগের লােক নই তারই বা প্রমাণ কি ? এখনকার অবস্থায় এই সন্দেহ তাে জাগতেই পারে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে নেমে দেখলাম, আমাদের খুব বেশি বেগ পেতে হল না। আমরা যে। পরিচয়সূত্রটুকু নিয়ে গিয়েছিলাম, তাতেই কাজটা সহজ হয়ে গেল। বেলা এগারােটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা তাদের মুখে তাদের নানা কাহিনী শুনলাম। আমার মনে হল তারা যেন প্রথমত কিছুটা আড়ষ্ট বােধ করছিল, পরে কথা বলাবলির মধ্য দিয়ে আমাদের সম্পর্কটা সহজ হয়ে গেল। সবশুদ্ধ চার জায়গার চারজন মুক্তিযােদ্ধার সঙ্গে আমরা আলাপ করেছি।
তিন জনের সাথে কথা শেষ করে চতুর্থ জনের সঙ্গে কথা শুরু করতেই চমকে উঠলাম। আমি প্রশ্ন করেছিলাম, আপনি কোন জায়গায় লড়াই করে জখম হয়েছেন। তিনি উত্তর দিলেন, সে জায়গার নাম বড়কামতা। এই কথা শােনার পর আমার চমকে ওঠার কথাই তাে। এই তাে মাত্র কদিন আগে বড়কামতায় এক রাত্রি যাপন করে এসেছি। সে কথা কি এখনই ভুলে যেতে পারি! বড়কামতা ? হ্যা, বড়কামতা। আমার মানসচক্ষে সেই স্বল্পভাষী যুবকটির মুখ ভেসে উঠছিল। আর স্মৃতিপটে ভেসে আসছিল স্খলিত কন্ঠে বৃদ্ধের সেই ব্যাকুল প্রার্থনা, দুর্গা, দুর্গা। তাহলে আমার সেই এক রাত্রির স্নেহ-ঘন আশ্রয় বড়কামতা গ্রামটিও যুদ্ধের আগুনে ছাই হয়ে গেছে ?
ওরা কোন তারিখে হামলা করেছিল আর সেই সময় আপনারাইবা সেখান থেকে কত দূরে ছিলেন? ওরা হামলা করেছিল ৩০শে এপ্রিল তারিখে। আমরা ২৫শে তারিখে প্রথম সেখানে যাই। তারপর থেকে সেখানেই ছিলাম। কি আশ্চর্য কাণ্ড, আর কি অদ্ভুত যােগাযােগ।। আমি খুব তাড়াতাড়ি মনে মনে হিসেব করে দেখলাম আমরা চার বন্ধু সেই ২৫শে এপ্রিল তারিখেই বড়কামতায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। এরাও আমাদের কাছাকাছি ছিলেন। কিন্তু আমরা বাইরের লােক, এদের কেমন করে জানব! আপনারা ক’জন ছিলেন?  আমরা মুক্তিবাহিনীর দশজন লােক সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু ঐ ক’টি দিনের মধ্যে ঐ অঞ্চলে আরও পাঁচজন লােককে ট্রেনিং দিয়ে আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত করে নিয়েছিলাম বলে আমাদের মুক্তিযােদ্ধাদের সংখ্যা দাঁড়াল পনের। এ কদিনে বড়কামতার লােকেরা আমাদের, নিজেদের আপনজনের মতাে গ্রহণ করে নিয়েছিল। আমরা সবাই মিলেমিশে সংসার করছিলাম। আমরা এখান থেকে, ওখান থেকে বড় বড় মাছ ধরে নিয়ে আসতাম। কখনাে তারা রান্না করতেন, কখনাে বা আমরা। কিন্তু খাবার বেলায় সবাই ভাগাভাগি করে খেতাম। কিসের হিন্দু আর কিসের মুসলমান, আমাদের জাত-পাতের বালাই ছিল না। উপর থেকে নির্দেশ পেয়ে আমরা ২৯শে এপ্রিল তারিখে চান্দিনার পূর্বদিকে ঢাকা কুমিল্লা সড়কে একটা পুল উড়িয়ে দিলাম। কদিন থেকেই চান্দিনা অঞ্চলে মিলিটারিরা বেশ তােড়জোড় চালাচ্ছে দেখতে পাচ্ছিলাম। কয়েকদিনের মধ্যে এরা একটা কিছু ঘটাবে সেটা মনে মনে অনুমান করেছিলাম। আমাদের এই ছােট দলটিও সেজন্য তৈরি ছিল। ওরা একটা কিছু অঘটন ঘটালে আমরাও একেবারে চুপ করে থাকব না। ওরা যাই মনে করে থাকুক না কেন, ব্যাপারটা একদম একতরফা হবে না।
২৯ তারিখে পুল উড়িয়ে দেবার পর ওরা কোথাও হামলা করবেই। কিন্তু ওদের সেই হামলাটা কোথায় হবে সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন। কিন্তু এ নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে হল না। ওরা পরদিন সকালবেলা চারখানা সৈন্যবােঝাই গাড়ি সাজিয়ে এই বড়কামতায় এসে হানা দিল। ওরা কি তবে সন্দেহ করতে পেরেছে যে, আমরা এখানে এসে আশ্রয় নিয়ে আছি? কিন্তু তখন বেশি ভাববার সময় ছিল ওরা প্রথমেই কতকগুলি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিল। ওদের সংখ্যা পঞ্চাশ থেকে ষাট। ইতিমধ্যে আমরা মুক্তিবাহিনীর যােদ্ধারা ওদের দৃষ্টির আড়ালে দাঁড়িয়ে নিজ নিজ পজিশন নিয়ে নিয়েছি। ওরা প্রথমেই কোন বাধা না পেয়ে নিশ্চিন্ত মনে তাদের ধ্বংসের কাজে এগিয়ে চলেছিল।  আমরা প্রথম সুযােগ পাওয়া মাত্র একই সঙ্গে চারটা গাড়ির উপর ব্রাশ করে চললাম। আমাদের মিলিটারি ভাষায় ব্রাশ’ কথার মানে একই সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গুলির পর গুলি চালিয়ে যাওয়া। থামিয়ে না দিলে এইভাবে ক্রমান্বয়ে গুলির পর গুলি চলতে থাকে। এই একটানা গুলিবর্ষণের ফলে সৈন্য বােঝাই চারটা গাড়িই লণ্ডভণ্ড হতে চলল। আমাদের এই প্রচণ্ড আক্রমণে শেষ পর্যন্ত ওরা সহ্য করতে না পেরে প্রাণ নিয়ে পালাল। ৩০শে এপ্রিলের যুদ্ধের এটা প্রথম পর্ব। এরপরই যে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে যাবে সেটা বুঝতে বেশি বুদ্ধির দরকার পরে না। এখান থেকে ক্যান্টনমেন্ট কতই বা দূর! কিন্তু দ্বিতীয় পর্বটা যে এত তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে যাবে তা আমরা ভাবতে পারিনি।
এর এক ঘণ্টা কি দেড় ঘণ্টা বাদেই ওরা সৈন্য বােঝাই গাড়ির মিছিল সাজিয়ে চলে এল। ওদের আঠারটা ট্রাক বিকট আওয়াজে পথঘাট কাঁপিয়ে এই পরাজয়ের প্রতিশােধ নিতে দ্রুতবেগে ছুটে আসছিল। অনুমানে বুঝলাম প্রতিপক্ষ দু’শ জনের কম হবে না। ওদের সঙ্গে মর্টার, মেশিনগান, রাইফেল কোন কিছুর অভাব ছিল না। ওরা এবার রীতিমত শিক্ষা দিয়ে যাবে। ওরা এসেই বেশ বড় একটা এলকাকে ঘেরাও করে ফেলল। আমাদের মুক্তিযােদ্ধাদের মধ্যে চারজন সেই ঘেরাও-এর মধ্যে আটকা পড়ে গেছে। আমাদের ঘেরাও-এর সুবিধা হচ্ছে এই যে, ওদের আমরা ভালভাবেই দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এতে সমস্ত লােকের ভীড়ে মুক্তিযােদ্ধারা কোথায় মিশে আছে এবং তারা কোথায় কোথায় পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে সম্পর্কে ওদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই।  বড়কামতা গ্রামের অধিবাসীদের মধ্যে বেশ বড় একটা অংশ বারুই বা বারুইজীবী শ্রেণীর লােক। সেজন্য গ্রামের এখানে-ওখানে বহু পানের বরােজ আছে। এই বরােজগুলাে সেদিন মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। এগুলির মধ্যে আশ্রয় নিয়ে তারা শত্রুদের বেছে তাক করে মারছিল।
একটা কথা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার, পাকসৈন্যদের বিরুদ্ধে শুধু যে আমরাই লড়াই করেছিলাম তা নয়, গ্রাম থেকে দলে দলে লােক এসে আমাদের সঙ্গে যােগ দিয়েছিল। দু’একশ লােক নয়, আমার মনে হয় তাদের সংখ্যা দু’তিন হাজারের কম হবে না। লােকগুলি ক্ষিপ্তের মতাে ছুটে আসছিল। তাদের হাতে লাঠিসােটা, বর্শা-বল্লম থেকে শুরু করে বন্ধুক পর্যন্ত। এই দুঃসাহসী লােকগুলি হাতিয়ার নিয়ে মর্টার আর মেশিনগানের বিরুদ্ধে লড়াই করার ঘটনায় স্বীকার করতেই হবে যে, তাদের এই উন্মাদনা আমাদের মধ্যে নতুন শক্তিও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে তুলেছিল। ওরা নানারকম জয়ধ্বনি আর বিকট গর্জন করতে করতে ছুটে আসছিল। সেই গর্জন শত্রুদের মনেও ভয়ের কাঁপন জাগিয়ে তুলেছিল। ওরা কেমন যে দিশাহারা হয়ে পড়েছিল। এ ধরনের ঘটনা যে ঘটতে পারে এটা আমরা কখনও আশা করতে পারিনি। অতি সাধারণ মানুষ যে দেশের ডাকে, স্বাধীনতার ডাকে এমন অসাধারণ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে, এমন অভিজ্ঞতা আমাদের আর কখনও হয়নি। এইভাবে ঘণ্টা দুই ধরে দু’পক্ষে যুদ্ধ চলল। আমরা নিরাপদ আশ্রয়ে দাড়িয়ে শত্রু সৈন্যদের তাক করে করে মারছিলাম। আর এই ক্ষিপ্ত জনতা তাদের যৎসামান্য হাতিয়ার নিয়ে তাদের পক্ষে যেটুকু সম্ভব তা করে চলেছিল। মর্টার গর্জন করছে, বােমা ফাটছে, মেশিনগান চলছে, গ্রামের পর গ্রাম আগুনে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে, কিন্তু ওরা যেন ভয় পাবার কথা ভুলেই গেছে। ভয় পেয়ে পালাবে দূরে থাক, ওদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এই দু’ঘণ্টার যুদ্ধে বহু সাধারণ মানুষ মারা গেছে। আমরা যে চারজন ঘেরাও-এর মধ্যে আটকে গেছি তাদের মধ্যে দু’জন জখম হয়েছে। কিন্তু পাকসৈন্যদের প্রচুর।
ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই দুঘণ্টার যুদ্ধ ওদের অনেক হিসেবই ভণ্ডুল করে দিয়েছে। হাজার হাজার সাধারণ মানুষের এই নির্ভীক ও মারমুখাে মূর্তি এবং তাদের মুহুর্মুহু গগনভেদী চিৎকারে ওরা কেমন যেন হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। এমন অভিজ্ঞতা ওদের কখনও হয়নি। এমন দৃশ্য আমরাও কোনদিন দেখিনি। | শেষ পর্যন্ত আমরাই সেদিন এই যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলাম। আমাদের সামান্য সংখ্যক মুক্তিযােদ্ধা সেদিন যে বীরতু ও রণচাতুর্য দেখিয়েছিল সে কথা হয়ত কেউ কোনদিন জানবে না। কিন্তু এই অঞ্চলের সাধারণ কৃষক-জনতা সেদিন যে শক্তি, সাহস আর দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছিল আর কেউ জানুক আর নাই জানুক, আমরা তা কোনদিন ভুলতে পারব না।
আমার কাছ থেকে বেশ কিছুটা সামনে তিনজন পাঞ্জাবী সৈন্য ওদের অজানা-অচেনা পথে ছুটে চলেছে। একমাত্র আমি ছাড়া ওরা যে আর কারও নজরে পড়েনি, এটা ওদের জানা নেই। কেমন করে জানবে? একবার মুখ ফিরিয়ে পেছন দিকে তাকাবার সাহস পর্যন্ত নেই। আমি সেই সুযােগটাকে ভালভাবেই কাজে লাগালাম। আমি পরপর গুলি করে একজন একজন করে ওদের তিনজনকেই ভূপাতিত করলাম। সামনে গিয়ে দেখলাম, ওদের তিনজনের মধ্যে একজন তখনও মরেনি। আমি এক গুলিতেই আমার সেই অসমাপ্ত কাজটিকে সমাপ্ত করে দিলাম। এর পরের কাজ এদের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে নেয়া। সেই অস্ত্র নিয়ে বীর জনতার হাতে তুলে দিলাম। এতক্ষণ বাদে আমার নজরে পড়ল যে, আমি নিজেও অক্ষত নই। এই যে, দেখুন, আমার হাতের এই জায়গায় একটা বুলেট বিদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু এতক্ষণ এত সমস্ত উত্তেজনাকর ঘটনার মধ্যে আমিও তা টের পাইনি। এরপর চিকিৎসার জন্য চলে এলাম হাসপাতালে।  যিনি এতক্ষণ এ কথা বলেছিলেন, তিনি বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন সুবেদার । এই পর্যন্ত বলে তিনি থামলেন। তার কথায় বুঝলাম বড়কামতার যুদ্ধের ঐখানেই পরিসমাপ্তি। কিন্তু আমার বােঝাটা যে কত বড় ভুল বােঝা, সেটা বুঝলাম আরও কয়েকদিন বাদে। এবারকার এই ‘পতন-অভ্যুদয় বন্ধুর পন্থায়’ চলতে চলতে কি আশ্চর্যভাবে আর কি অপ্রত্যাশিতভাবে কতরকম লােকের সঙ্গে যােগাযােগ হয়ে যাচ্ছে। একজনের মুখে শােনা অসম্পূর্ণ কাহিনী কি বিচিত্রভাবে আর একজন এসে সম্পূর্ণ করে দিয়ে যাচ্ছে।
এই তাে সেদিন হঠাৎ চান্দিনা কৃষক সমিতির আমার এক পরিচিত সহকর্মীর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। তার মুখে শুনলাম, এই বড়কামতার যুদ্ধে শুধু মুক্তিযােদ্ধারাই নয়, তারা নিজেরাও ভালভাবেই জড়িত ছিলেন। ৩০শে এপ্রিল তারিখে পাকিস্তানী সৈন্যরা যখন দ্বিতীয়বার বড়কামতা আক্রমণ করল তখন শুধু মুক্তিবাহিনীর যােদ্ধারাই তাদের সঙ্গে মােকাবিলা করেনি, বহু সাধারণ মানুষ সেদিন ছিল এ কথা আমরা সেই মুক্তিবাহিনীর যােদ্ধার মুখে আগেই শুনেছিলাম। আমাদের চান্দিনার সেই পরিচিত কৃষক কর্মীটির মুখে শুনলাম প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার কৃষক সেদিন এ লড়াইয়ে যােগ দিয়েছিল। পরদিন ১লা মে তারিখে গতদিনের পরাজয়ের ঝাল মেটাবার জন্য সকাল দশটায় প্রায় হাজারখানেক পাকসেনা পুনরায় এই অঞ্চলে আসে। গতদিনের অভিজ্ঞতা থেকে তাদের মনে এই ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল যে, এই এলাকায় মুক্তিবাহিনীর বেশ বড় রকমের ঘাঁটি রয়েছে। তাদের সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেবার সঙ্কল্প নিয়ে তারা বেশ বড়রকমের প্রস্তুতি নিয়ে এখানে হামলা করল। তারা চান্দিনার দু’মাইল পূর্বে কোরপাই থেকে আরম্ভ করে চান্দিনার এক মাইল পশ্চিমে হাটখােলা পর্যন্ত সমস্ত পাকারাস্তায় পজিশন নেয়। তাছাড়া কিছু দূরে দূরে মেশিগান ও কামান পেতে রাখে। তিন-চার’শ পাকসেনা বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ে এবং বাড়িগুলি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে থাকে। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর যােদ্ধারা তখন ঘটনাস্থল থেকে বহু দূরে সরে গিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে। হামলাকারীরা বুঝতে পারল যে, তাদের হাতের শিকার ফসকে গেছে। শেষপর্যন্ত চারদিককার গ্রামবাসীদের উপর মনের ঝাল মিটিয়ে এই রক্তখাদক মানুষ শিকারীর দল তাদের ক্যান্টনমেন্টে ফিরে গেল। (সূত্র : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, নবম খণ্ড।)

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত

 
error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!