You dont have javascript enabled! Please enable it!
কুমিল্লা-নােয়াখালীতে সশস্ত্র প্রতিরােধ
সাক্ষাৎকার – মেজর গাফফার। ২১-৮-৭৩ আমি মনে করছিলােম কুমিল্লা ব্রিগেডের ইকবাল মােঃ শফি আমাদের ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টকে বিভক্ত এবং দুর্বল করে দিয়ে ধ্বংস করে দেবে। সেহেতু ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের তিনটি কোম্পানীকে বাইরে পাঠিয়ে সিলেটে অবস্থানরত ৩১তম পাঞ্জাব রেজিমেন্ট, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানরত ২৪তম ফ্রন্টিয়ার ফোর্স-এর ৩য় কমান্ডাে ব্যাটালিয়ন দিয়ে আক্রমণ ও ঘেরাও করিয়ে ধ্বংস করা হবে। ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্ট খুবই শক্তিশালী থাকায় তাদের বিভক্ত করে দিয়ে ধ্বংস করাই তারা শ্রেয় ভেবেছিল। তারা এ কাজ ভালভাবেই সম্পন্ন করেছিল, কিন্তু আল্লাহর রহমতে তাদের পরিকল্পনা সফল হয়নি। এ পরিস্থিতিতে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে গিয়ে অন্যান্য কোম্পানীর সাথে যােগ দেয়া শ্রেয় মনে করি। আমি ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম কমান্ড লেঃ কর্নেল খিজির হায়াতকে বুঝাতে থাকি ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়ে অন্যান্য কোম্পানীর সাথে মিলিত হবার জন্যে। তিনি খুব ভাল লােক ছিলেন এবং আমাকে খুব বিশ্বাস করতেন।
তিনি আমার কথায় কনভিন্সড হন এবং নির্দেশ নেবার জন্য ব্রিগেড কমান্ডারের কাছে যান। ব্রিগেড কমান্ডার তাঁকে তাঁর বাহিনী নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবার নির্দেশ দেন। লেঃ কর্নেল খিজির হায়াত ফোনে আমাকে ২৩শে মার্চের ১টার মধ্যে বাকি কোম্পানী নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবার জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। আমি দ্রুততার সঙ্গে ৩০টি ৩টনের গাড়িতে বেশি পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র এবং অতিরিক্ত লােক নিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত হই। আমি ১টা প্লাটুন জাঙ্গালীয়াতে রেখে যাই এবং আরেকটা প্লাটুনকে ভেতরে রেখে যাই ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানরত বাঙালি অফিসারদের পরিবার-পরিজনের প্রতি খেয়াল রাখার জন্য। আমরা আমাদের পরিজনকে নিরাপদ জায়গায় সরাতে পারিনি, কেননা এটা করলে আমাদের উপর তাদের সন্দেহ হত এবং আমাদের পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যেত। যাবার আগে ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিনের (বর্তমানে মেজর) সাথে কথা বলি এবং তাকে অনুরােধ করি আমাদের পরিবারগুলির প্রতি খেয়াল রাখার জন্য এবং পারলে নিরাপদ জায়গায় যেন সরিয়ে দেন। ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিনকে সে সময় চট্টগ্রামে নবম বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলী করা হয়েছিল। আমরা তাঁকে ক্যান্টনমেন্টে রেখে যাই। ২৭শে মার্চ শত্রুরা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আমাদের পরিবারদের গ্রেফতার করে এবং তাদের উপর অমানুষিক অত্যাচার চালায়। ১০ই ডিসেম্বরে মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট ঘিরে ফেললে শত্রুরা তাদের ছেড়ে দেয়। ২৮শে মার্চ ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমাদের সাথে এসে যােগ দেন।
৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জড়াে করার জন্য আমি লেঃ কর্নেল খিজির হায়াতকে নির্দেশ দেবার অনুরােধ করি। তিনি আমার কথামতাে সবাইকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে আসার নির্দেশ দেন। একমাত্র সমশেরনগরে অবস্থিত মেজর খালেদ মােশাররফের বাহিনী ছাড়া সবাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসে। ২৪শে মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এমসিএ জনাব লুফুল হাই আমার সঙ্গে দেখা করে জানতে চান আমরা কি করব। আমি তাঁকে বলি, ঠিক সময়ে আমরা আমাদের কর্তব্য সাধন করব।’ তিনি চলে যাবার পর আমাদের ব্যাটালিয়নের পাঞ্জাবী অফিসাররা এসে জিজ্ঞেস করে লুফুল হাই কেন এসেছিল? আমি তাদের বলি, সে আমার আত্মীয় এবং আমার সাথে এমনি দেখা করতে এসেছে। মিথ্যা বলে তাদের সন্দেহ দূর করি। আমি মেজর শাফায়াত জামিলকে সমস্ত পরিকল্পনার কথা বলি। সেভাবেই তিনি সমস্ত বাঙালি অফিসার, জেসিও এবং এন.সিও দের নিয়ে একটা সভা ডেকে বলেন, পরিস্থিতি খুব খারাপ—সেহেতু সবাইকে সজাগ এবং প্রস্তত থাকতে হবে। ২৫শে মার্চ রাতে আমি মেজর খালেদ মােশাররফের সাথে অয়ারলেসে কথা বলি এবং সমস্ত পরিস্থিতি সম্বন্ধে জানাই। তিনি বলেন, আমরা সমশেরনগর থেকে আজ রাতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পথে অগ্রসর হব এবং তােমরা যদি পার পাঞ্জাবী অফিসারদের গ্রেফতার কর।
রাত ২টার সময় লেঃ কর্নেল খিজির হায়াত খান, মেজর সাদেক নেওয়াজ, লেঃ আমজাদ সাইদ এবং অন্যান্য অবাঙালি সৈনিকদের গ্রেফতার করার পরিকল্পনা নিই। সে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, কেননা মেজর সাদেক নেওয়াজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সি এন্ড বি রেস্ট হাউসে আমার রুমে আমার পাশে ভর্তি করা একটা চাইনিজ স্টেনগান নিয়ে প্রস্তুত হয়ে বসে ছিল। ২৬শে মার্চ সকালে সভাকক্ষে সমস্ত অফিসারদের ১টা সভা ডাকা হয়। কিন্তু এর আগে ভাের সাড়ে চারটার সময় আমি অয়ারলেস সেটটি ধ্বংস করে দিই, কেননা এ অয়ারলেসের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাথে কুমিল্লা ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারের কথাবার্তা হত। সমস্ত টেলিফোন যােগাযােগও নষ্ট করে দেয়া হয়। আমাকে এটা করতে হয়েছিল, কেননা অয়ারলেস অপারেটরদের ৩ জনের মধ্যে ২জনই পাঞ্জাবী ছিল। অয়ারলেসের মাধ্যমে শেষ যােগাযোেগ করি মেজর খালেদ মােশাররফের সাথে। তাকে অনুরােধ করি অতি সত্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে আমাদের সাথে যােগ দেবার জন্য। আমরা সবাই তাঁবুতে এসে জড়াে হই। সাড়ে ৯টার সময় মেজর শাফায়াত, লেঃ কবির, লেঃ হারুন, আমি ও জেসিও’র তাঁবু ঘিরে ফেলি। আমরা বিদ্রোহ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করি এবং মেজর শাফায়াত জামিল তাঁদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমরা আর পাকিস্তানী সৈন্য নই, আমরা এখন বাংলাদেশ সরকারের সৈনিক । আপনারা আমাদের বন্দি। পালাবার চেষ্টা করবেন না, করলে মারা যাবেন। মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু ঘটে যায়। ২ জন পাকসেনাকে হত্যা ও ৩ জন পাকঅফিসারকে গ্রেফতার করে ২৬শে মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শত্রুদের হাত থেকে মুক্ত করি । মেজর খালেদ মােশাররফ এবং লেঃ মাহবুব রাত সাড়ে ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে পৌঁছেন। মেজর খালেদ মােশাররফের হাতে ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের নেতৃত্ব দেয়া হয়।
এরপর মেজর খালেদ আমাদের সবাইকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চারপাশে অবস্থান নিয়ে প্রতিরক্ষাব্যুহ্য গড়ার নির্দেশ দেন, কেননা, শত্রুরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া আক্রমণ করে আমাদের ধ্বংস করে দিতে পারে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমাদের হেডকোয়ার্টার করা হয়। আমাকে ১৮ জন সৈন্য নিয়ে থােকনঘাটে পাঠান হয়। ঢাকা থেকে ভীত সন্ত্রস্ত জনতা পালিয়ে আসতে থাকে। আমি ২ দিনের মধ্যে ২৫০ জন পলায়নপর পুলিশ, ইপিআর নিয়ে একটা কোম্পানী তৈরি করে ফেলি। তৃতীয় দিনে পাকবিমান বাহিনী ৪টা স্যাবর জেটের সাহায্যে আমার এলাকায় স্ট্রাফিং করতে থাকে। এতে আমার বাহিনীর ১জন শহীদ ও ১জন আহত হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় স্থলপথে কোন আক্রমণ তখনও শুরু হয়নি।
এক সপ্তাহের মধ্যে আমি আমার কোম্পানীকে ৩০৩ রাইফেলের দ্বারা সজ্জিত করে ফেলি। ৫ই এপ্রিল মেজর খালেদ মােশাররফ আমাকে আমার বাহিনী ক্যাপ্টেন মাহবুবের (পরে শহীদ হন) হাতে দিতে বলেন। তিনি ফ্রন্টিয়ার ফোর্স থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের সাথে যােগ দেন। তার হাতে দায়িত্ব দিয়ে আমি ৫ই এপ্রিল সকাল ৯টার সময় অস্থায়ী হেডকোয়ার্টার তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মেজর মােশারফের কাছে যাই । মেজর খালেদ মােশাররফ আমাকে বলেন, ৩১তম পাঞ্জাব রেজিমেন্ট সিলেট থেকে নদীপথে ভৈরব হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে আসছে। সেজন্য ৪র্থ বেঙ্গলের ১টা কোম্পানী নিয়ে আজবপুর ঘাটে পজিশন নিয়ে শত্রুর ব্রাহ্মণবাড়িয়া বা ঢাকা যাবার পথে বাধা দিতে হবে। সেইমতাে আমি তাড়াতাড়ি আজবপুর ঘাটে যাই এবং সন্ধ্যার মধ্যেই পজিশন নিয়ে নিই। এখানে এসে আমি ২য় বেঙ্গল-এর ক্যাপ্টেন নাসিমের (বর্তমানে লেঃ কর্নেল) সাথে যােগাযােগ করি, যিনি আশুগঞ্জ এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন। ২য় বেঙ্গল রেজিমেন্ট মেজর কাজী মােঃ শফিউল্লাহর নেতৃত্বের জয়দেবপুর ক্যান্টনমেন্টে বিদ্রোহ করে বেরিয়ে আসে। ময়মনসিংহ হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে তিনি আমাদের সাথে যােগ দেন। আমরা সে সময় বিরাট এলাকা কোম্পানীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে সিলেটের খােয়াই নদী পর্যন্ত শত্রুমুক্ত ও স্বাধীন রেখেছিলাম। ৭ই এপ্রিলে এক দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। আমি ভেবেছিলাম, শত্রুরা বড় নৌকা ও লঞ্চের সাহায্যে পালাবার চেষ্টা করবে। সেহেতু আমি সমস্ত নৌকা তল্লাশি করার নির্দেশ দিই অতি প্রত্যুষে ১টা মটর লঞ্চ আশুগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। আমি তাদের থামতে বলি।
লঞ্চটি না থেমে বরঞ্চ আরও দ্রুতগতিতে চলতে থাকে। ওর ভিতর পাঞ্চাবী সৈন্য আছে। ধরে নিয়ে আমরা এমএমজি ও ৭৫ এমএমআর-এর সাহায্যে গুলি ছুঁড়তে থাকি। লঞ্চটি থেমে যায় এবং আশ্চর্যের ব্যাপার লঞ্চটি বেসামরিক ব্যক্তিদের দ্বারা ভর্তি দেখলাম। একজন এতে আহত হয় ও তার প্রাথমিক চিকিৎসা করে সারেংকে সাবধান করে ছেড়ে দিই। এই সময় পাকবিমান আমাদের উপর অকস্মাৎ হামলা শুরু করে দেয়। ৩/৪ দিন পর ক্যাপ্টেন মতিন (বর্তমানে মেজর) ১টি কোম্পানী নিয়ে এসে আমাদের অব্যাহতি দেন। আমি আমার বাহিনী নিয়ে তেলিয়াপাড়া যাই। বিবিরবাজার যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। দু’দিন বিবির বাজারে অবস্থানের পর তৃতীয় দিনে ৪র্থ বেঙ্গলের ‘সি’ কোম্পানীকে নিয়ে মনতলি যাবার নির্দেশ দেন মেজর খালেদ মােশাররফ। ১৪ই এপ্রিল প্রথম সাফল্যজনক আক্রমণ চালাই শত্রুর বিরুদ্ধে। ঐদিন রাতে গঙ্গাসাগরে ৪টা প্লাটুন ও ১টা ৩ ইঞ্চি মর্টার সেকশনের সাহায্যে শত্রু অবস্থানকে ঘিরে আক্রমণ চালাই। মেজর খালেদ মােশাররফ মর্টার সেকশনে নিজে থেকে নেতৃত্ব দেন। তাঁর উপস্থিতি আমার সৈন্যদের মনােবল বাড়িয়ে তােলে। রাত ২টার সময় শত্রুদের উপর আক্রমণ চালিয়ে ৩১জন শত্রু সৈন্য ও ১৫/২০ জনকে আহত করি। আমরা সবাই নিরাপদে ফিরে আসি। ২জন সামান্য আহত হয়। চারদিন সেখানে অবস্থানের পর আমাকে কসবা-শালদা নদী এলাকায় যেতে বলা হয়। ১৮ই এপ্রিল আমি কসবার পথে রওনা হই এবং সেখানে ঘাঁটি গড়ে তুলি। গঙ্গাসাগরে শত্রুদের মার দেবার পর কসবা-শালদা নদীর গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছিল। আমার পৌছতে একটু দেরি হয়। এর আগেই শত্রুরা কসবা বাজার ও কসবা রেলওয়ে স্টেশনে ঘাঁটি গেড়ে ফেলেছে। আমি আমার ক্যাম্প ইয়াকুবপুর-জাতুমুরা এলাকায় স্থাপন করি। আমি রেকি করে বুঝতে পারি আমার অবস্থান খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই।
ভারতে আশ্রয় না নিয়ে নিজ অবস্থানে থেকে শত্রুদের গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকি। পাকসেনারা কসবা এসে নিরীহ জনসাধারনের উপর অত্যাচার, লুণ্ঠন, ধর্ষণ চালাতে থাকে। ইতিমধ্যে হাজার হাজার লােক পাকসেনাদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচবার জন্য সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যাচ্ছিল। ১৮ই এপ্রিল রাতেই আমি কসবা বাজার ও কসবা রেলওয়ে স্টেশন আক্রমণ করার পরিকল্পনা করি। ৩ ইঞ্চি মর্টারের সাহায্যে হঠাৎ করে শত্রুদের উপর আক্রমণ শুরু করে দিই। শত্রুরা যেহেতু প্রস্তুত ছিল না, সেহেতু তারা এ আক্রমণে হতচকিত হয়ে পড়ে। এ অপ্রত্যাশিত যুদ্ধ দেড় ঘণ্টা ধরে চলে এবং এর সাফল্য অপ্রত্যাশিত ছিল। শত্রুরা তখন পর্যন্ত কোন বাংকার তৈরি করেনি। ফলে তারা গাড়ি বােঝাই অস্ত্র ফেলে রেখে বাজারের কুঁড়েঘর এবং দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। রাত সাড়ে চারটায় আবার আক্রমণ করার সময় হিসাবে বেছে নিই। আমি একটা লম্বা গাছের উপরে উঠে শত্রুদের অবস্থান দেখে নিই এবং আমার সৈন্যদের প্লাটুনে ভাগ করে তিনদিক দিয়ে ঘিরে ফেলি। একটি মাত্র পথ শত্রুদের জন্য খােলা থাকে। ৩.৫ ইঞ্চি রকেট লাঞ্চার এবং ছােট অস্ত্র ও মর্টারের সাহায্যে শক্রদের উপর গােলাগুলি ছুঁড়তে। থাকি। এই গােলাবর্ষণের ফলে শত্রুদের ৭টা গাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। ৪৫/৫০ জন নিহত এবং ৭০/৮০ জন পাকসেনা আহত হয়। শত্রুরা এ আকস্মিক আক্রমণে পর্যুদস্ত হয়ে কসবা ছেড়ে আড়াআড়ি কুটির দিকে পালিয়ে যায় এবং সেখানে গিয়ে অবস্থান নেবার সময় তারা বিধ্বস্ত গাড়ি ও অনেক মৃহদেহ ফেলে রেখে যায়।
এ যুদ্ধ জয়ের ফলে আমাৰ স্টৈদের মনােবল অনেক বেড়ে যায়। কসবা নতুন বাজার দখল করার পর আমার হেডকোয়ার্টার কসবাতেই স্থাপন করি। অবশ্য আমি জানতাম, শত্রুরা কসবা দখল করার জন্য আবার বিপুল শক্তি সঞ্চয় করে আমাদের উপর আক্রমণ চালাবে। জুন মাসে মেজর খালেদের নির্দেশে মুন্সিরহাট, ফেনী, নােয়াখালী এলাকায় যাই। যাবার পূর্ব পর্যন্ত তারা কসবা দখল করতে সক্ষম হয়নি। এ ব্যাপক বিপর্যয়ের পর শত্রুসেনারা স্থানীয় দালালদের সহযােগিতা ছাড়া বাংকার থেকে বের হত না। ( সূত্র : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, নবম খণ্ড।)

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!