This is a temporary post for collecting data. Not for posting and not for publishing. Saved only as readable for the editors. Not clickable and not downloadable.
তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি ১৯৪৯-১৯৫০ ২য় খন্ড
সিমিন হোসেন রিমি
১ অক্টোবর ১৯৪৯, শনিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়লাম। শ্রীপুর বাজার থেকে ফেরার পথে সিরাজের বাবার সঙ্গে আমাদের দু’বার দেখা হল। আবহাওয়া : দুপুর ছাড়া দিন রাত বর্ষাক্রান্ত। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। ২ অক্টোবর ১৯৪৯, রবিবার খুব ভােরে উঠলাম। দুপুর বেলা আব্দুল খানের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। তরগাঁওয়ের রফি এল, দুপুরে ভাত খেয়ে বিকেলে চলে গেল। বিকেলে তফাজ্জলের বাবা। এসে তফাজ্জলকে নিয়ে গেল। রঙ্গ আজ রাতটা আমাদের বাড়িতে থাকল। আবহাওয়া ও উজ্জ্বলভাবে দিন শুরু হল। দিনের ৩/৪ অংশে উজ্জ্বল সূর্যালােক। তারপর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি। পরিষ্কার মেঘমুক্ত রাত। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। ৩ অক্টোবর ১৯৪৯, সােমবার খুব সকালে উঠলাম। সারাদিন বাড়িতে। সন্ধ্যায় আয়েত আলি শেখ এসে চলে গেল। আবহাওয়া ও রােদ ঝলমলে দিন। পরিষ্কার রাত। গরম আবহাওয়া।
৪ অক্টোবর ১৯৪৯, মঙ্গলবার খুব ভােরে উঠলাম। ঈদ-উল-আজহা। সাড়ে ১০টায় নামাজ পড়লাম। বেলা ২টার দিকে প্রচলিত মাঠে কোরবানি শুরু হল এবং বিকেল ৫টায় শেষ হল। ৩১টা গরু ও ৩টি ছাগল কোরবানি হল। ৩ গ্রামের একটা আনুষ্ঠানিক সভায় ইমামের জন্য গরু প্রতি ৪/- টাকা ধার্য হয়েছে। পশুর মালিকদের নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী জবেহ হল। সূর্যাস্তের আগে বাড়ি ফিরলাম। আবহাওয়া ও উজ্জ্বল সূর্যালােকের মধ্য দিয়ে দিনের সূত্রপাত এবং শেষপর্যন্ত তা অব্যাহত থাকল। রাত চন্দ্রালােকিত। কমবেশি গরম চারদিকে। ৫ অক্টোবর ১৯৪৯, বুধবার। সূর্য ওঠার কিছু পরে ঘুম থেকে উঠলাম। সিরাজের বাবা এল। সে নাস্তা করল এবং দুপুরে ভাত খেয়ে বিকেলে চলে গেল। সন্ধ্যায় পশ্চিমের রাস্তায় ওয়ারেস আলির সঙ্গে বসে রইলাম এবং রাত পর্যন্ত কথাবার্তা বললাম। এসময় করম আলি, আসুয়া এবং আরাে কয়েকজন আমাদের সাথে যােগ দিল। নিগুয়ারির মান্নাফ খান এলেন সন্ধ্যায়। ওয়ারেস আলি ও আসুয়া মান্নাফ খানের সঙ্গে রাতের খাবার খেল। মধ্যরাতের আগে ঘুমাতে যেতে পারলাম না। আবহাওয়া ঃ সারাদিন প্রবল সূর্যালােক। চাঁদ-তারায় ভরা উজ্জ্বল রাত। বেশ গরম। ৬ অক্টোবর ১৯৪৯, বৃহস্পতিবার খুব ভােরে উঠলাম। আজ দুপুরে মান্নাফ খান তরগাঁও চলে গেলেন। গিয়াস চৌধুরী ও রেহানউদ্দিন আজ সন্ধ্যায় এলেন এবং তাদের বন্দুক নিয়ে আমাদের বাড়ি থাকলেন। আবহাওয়া : সারাদিন ধরে তীব্র রেদি। সন্ধ্যায় ভারি বৃষ্টি হল। রাত মােটামুটি পরিষ্কার। আরামদায়ক পরিবেশ।
৭ অক্টোবর ১৯৪৯, শুক্রবার খুব সকালে উঠলাম। দুপুর বেলা গিয়াস বন্দুক নিয়ে কালবাড়ির মধ্য দিয়ে আমার সাথে এল এবং খাস কোট হয়ে ফিরল । জুম্মার সময়ে নারায়ণপুরের রুন্তু এল। দুপুরে খাবার খেয়ে বিকেলে ওরা সবাই চলে গেল। আজ সন্ধ্যায় তরগাঁও থেকে মান্নাফ খান ফিরে এলেন এবং থাকলেন। আবহাওয়া ও রৌদ্রময় দিন ও উজ্জ্বল রাত। ভ্যাপসা পরিবেশ।
৮ অক্টোবর ১৯৪১, শনিবার খুব সকালে ঘুম ভাঙ্গল। সকালে টাকার জন্যে আয়েত আলি শেখের বড় ছেলে এল, নাস্তার পর চলে গেল। আজ দুপুরে মান্নাফ খান বাড়ি চলে গেলেন। বিকেলে আব্দুল খানের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। আব্দুল মােড়ল ও কুদ্স উপস্থিত ছিল। তারা আকবর বেপারির মেয়েকে নিয়ে কথা বলছিল। আবহাওয়া ঃ দিনে প্রবল সূর্যালােক। সূর্যাস্তের সাথে সাথে আকাশ মেঘে হেয়ে গেল। কয়েক ফোটা বৃষ্টি পড়ল। রাতের বাকি অংশ মােটামুটি পরিষ্কার। সুন্দর আবহাওয়া। রাতে সিকিভাগ পশ্চিমে রংধনু দেখা দিল। ৯ অক্টোবর ১৯৪৯, ররিবার খুব সকালে উঠলাম । সকালের দিকে আকুর সাথে হুসেন এল। তার সাথে টাকার জন্যে রমজান মােড়লের কাছে গেলাম, কিন্তু কোনও কাজ হল না। হাটের সময় সিরাজের বাপ এসে চলে গেল। বিকেলে রাবিয়ার মা এল। সন্ধ্যার পর পর তফাজ্জল ও তার বাবা এল এবং রাতে থেকে গেল। আবহাওয়া : সারাদিন তীব্র রােদ। রাত চাঁদের আলােয় অতিমাত্রায় উজ্জ্বল। রাতের প্রথম ভাগ খুব গরম। ১০ অক্টোবর ১৯৪৯, সােমবার খুব সকালে উঠলাম। পুবের বিল থেকে হাজি বাড়ি ও আকবর বেপারির বাড়ি ঘুরে ফাত্তা টেক হয়ে ফিরলাম। দুপুরের খাবার খেলাম আব্দুল খানের বাড়িতে, পােলাও কোরমা দিয়ে। আজিজ খান ও আক্কাসের বাবাও খেল। তফাজ্জলের বাবা আজ সন্ধ্যায় চলে গেলেন। আবহাওয়া ও প্রখর সূর্যালােকিত দিন, রাতে উজ্জ্বল চন্দ্রালােক। বায়ুমন্ডল মহাদেশীয়। ১১ অক্টোবর ১৯৪৯, মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের ঠিক পরে ঘুম থেকে উঠলাম। সারাদিন বাড়িতেই কাটল। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক দিন ও রাত। পরিবেশ নাতিশীতােষ্ণ। ১২ অক্টোবর ১৯৪১, বুধবার খুব সকালে ঘুম ভাঙ্গল। সারাদিন বাড়িতেই রইলাম। সেকান্দারকে নিয়ে মফিজউদ্দিন বরমি বাজারে গেল। আবহাওয়া : দুপুরে প্রায় ২ ঘন্টা খুব বৃষ্টি হল। বিকেল থেকে সারারাতে বৃষ্টি হল না, তবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। শীতল আবহাওয়া। ১৩ অক্টোবর ১৯৪১, বৃহস্পতিবার খুব সকালে উঠলাম। তালুই সাহেব, সমির ও চাদ মিয়ার সঙ্গে আজ দুপুরে সিরাজের মা চলে। গেল। নবা হরিমােহন দাসের সঙ্গে তার মামলার বিষয়ে আমার সাথে কথা বলল। সে পেছনের ঘটনা এবং হাফিজ বেপারির যােগাযােগের ব্যাপারটা বর্ণনা। করল। তারপর দুপুরে ভাত খেয়ে চলে গেল। আবহাওয়া ও দুপুরে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল। তার আগে ও পরে পরিষ্কার দিন। রাতও পরিষ্কার পরিবেশ শীতল।
১৪ অক্টোবর ১৯৪৯, শুক্রবার খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেছি। মফিজউদ্দিন দিগধা হয়ে বরহর বন দেখতে গেল। জুম্মার নামাজের পর আবু মােড়ল আমার কাছে এল এবং তার পারিবারিক সমস্যার ব্যাপারে সমাধান চেয়ে আলাপ করল। আবহাওয়া ও দিনের অধিকাংশ সময় বৃষ্টি হল। এছাড়া মৃদু সূর্যালােক। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। ১৫ অক্টোবর ১৯৪৯, শনিবার খুব সকালে ঘুম ভাঙল। সারাদিন বাড়িতে । অধিকাংশ সময় কাটল সাইকেল মেরামত করে। আবহাওয়া ও ভাের হল মেঘলা আকাশ নিয়ে এবং সেটা অব্যাহত থাকল। রাতেও আকাশ খুব মেঘলা ছিল। দুপুর থেকে প্রায় ৩ ঘন্টা বৃষ্টি হয়েছে। রাতের পরবর্তী অংশও বৃষ্টিময়। বৃষ্টি চলতেই থাকল। ১৬ অক্টোবর ১৯৪১, রবিবার খুব সকালে উঠলাম। নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টির জন্য সারাদিন ঘরেই কাটল। বকর আলি বেপারি তার আউস ধানের খেত দেখিয়ে একটা ফরম পূরণের ব্যাপারে আমার সাথে পরামর্শ করতে এল এবং বিকেলে চলে গেল। আবহাওয়া ঃ সারা দিন রাত মেঘলা ও গুমােট। দিনের দুই চতুর্থাংশ থেকে অত্যধিক ও অব্যাহত বৃষ্টি। আকাশে মেঘের পরে মেঘ জমতে থাকল। আবহাওয়া শীতল। ১৭ অক্টোবর ১৯৪৯, সসামবার খুব সকালে উঠলাম। সকাল বেলা জবর আলির অনুরােধে ওয়ারেস আলির সঙ্গে জবর আলির বাড়িতে গেলাম। জবর আলি আমার, ওয়ারেস আলি, তাহের আলি, ফালু, সমিরের ছেলে টুক্কা, আহারুদ্দিন, সফরউদ্দিন, বরু, আবদুল আওয়াল ও অন্যান্যদের উপস্থিতিতে তার প্রথমা স্ত্রীকে তালাক দিল। বেলা দেড়টার দিকে আশরাফ আলি মৌলভীর নেতৃত্বে তালাকের পাট চুকে গেল।
১৩
তালাকনামা ও দেনমােহর প্রত্যাহারনামাতে উভয়পক্ষ ও সাক্ষিরা সই করল। মৌলভী আশরাফ আলি এগুলাে লিখে আগামী ররিবারের মধ্যে যথাযথভাবে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে হস্তান্তরিত করে দেবেন। আড়াইটায় বাড়ি ফিরে এলাম। ঢাকার আবদুল হাকিম ভাইসাহেব এলেন এবং আমাদের বাড়িতে দুপুরে খাবার খেলেন। সৈয়দপুরের আবদুল হাইয়ের ব্যাপারটা নিষ্পত্তি করার জন্যে তাকে অনুরােধ জানালাম। তিনি বিকেলে চলে গেলেন। আবহাওয়া : সারাদিন বিশেষ করে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি। মেঘলা অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশ। রাত অংশত পরিষ্কার। রাতে বৃষ্টি হয়নি। পরিবেশ সহনীয়। ১৮ অক্টোবর ১৯৪৯, মঙ্গলবার খুব সকালে উঠেছি। দুপুরে রফিক ও আজিজ মিয়া এল। প্রথম জন না খেয়ে চলে গেল, দ্বিতীয়জন গেল খাবার পর। আয়েত আলি শেখ দু’বার এল। প্রথমে দুপুর বেলা, শেষ বার বিকেলে। লুলু ও চেরাগ আলি মােড়লের সঙ্গে পশ্চিমের রাস্তায় দেখা হল। আবহাওয়া ও সূর্যের উজ্জ্বল আলাের মধ্য দিয়ে ভাের হল। দিন ও রাত পরিষ্কার। ১৯ অক্টোবর ১৯৪৯, বুধবার সূর্যোদয়ের সাথে ঘুম ভাঙল। সারাদিন বাড়ির মধ্যে। দুপুরে আবুদল হাকিম ভাইসাহেব খবর নিয়ে এলেন যে, মফিজউদ্দিন মাস্টার সাহেব খুব শীগগিরই আমাদের বাড়ি আসবেন। মফিজউদ্দিন বরমি বাজারে গেল। আবহাওয়া শুরু থেকে অর্ধেক বেলা আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। দিনের বাকি তিনচতুর্থাংশে প্রচন্ড ঝড়াে হাওয়াসহ সপ্তাহের প্রবলতম বর্ষণ হয়ে গেল। পরিবেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। রাত ভয়ংকর। তাপমাত্রা শীতল।
২০ অক্টোবর ১৯৪৯, বৃহস্পতিবার খুব সকালে উঠলাম। দুপুরে বন রক্ষক ইদ্রিস আলি এল, তারপর চলে গেল। রঙ্গু, আফসু, দফতুর সাথে দুপুরে নদীতে মাছ ধরতে গেলাম এবং সন্ধ্যায় ফিরলাম। আবহাওয়া ও আকাশ মেঘমুক্ত না হলেও দিনে বৃষ্টি হল না। রাতও প্রায় পরিষ্কার। তাপমাত্রা সহনীয়। ২১ অক্টোবর ১৯৪৯, শুক্রবার ঘুম থেকে উঠলাম খুব সকালে। দুপুরে সফি, সেকান্দার, শামসু, আফসু, দফতুর সাথে দরদরিয়া বাজার পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরলাম। মজিদ রাতে আমাদের বাড়িতে ভাত খেল। সে কুই মাছ নিয়ে এসেছিল। আবহাওয়া ও দিন ও রাত পুরােপুরি পরিষ্কার। রাতের শেষার্ধে শীতের ছোঁয়া পাওয়া গেল।
২২ অক্টোবর ১৯৪৯, শনিবার খুব সকালে উঠলাম। সারাদিন বাড়িতে কাটল। রেজিস্টার্ড কবলাগুলাে সংক্ষেপে কপি করলাম। বিকেলে আহমদ, সফি, মজি প্রমুখরা এলে তাদের নিয়ে পুকুর পাড়ে গিয়ে বসলাম। সন্ধ্যার পর বন্ধু, সফি, টুকু, সেকান্দার, লালু ও শামসুর সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতে দরদরিয়া বাজার পর্যন্ত গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক দিন ও রাত। পরিবেশ ঠান্ডা ও সহনীয়। ২৩ অক্টোবর ১৯৪৯, রবিবার সূর্যোদয়ের সাথে জাগলাম। বাঘিয়ার মােমিন এল, আয়েশ আলি ও আরেকজনকে সঙ্গে নিয়ে। তারা দুপুরে ভাত খেয়ে বিকেলে চলে গেল। সন্ধ্যায় গােসিঙ্গা গেলাম এবং জুনিয়র মাদ্রাসার হেড মাস্টার ও ফরেস্ট অফিসার এবং অন্যদের সঙ্গে ফরেস্ট অফিসারের ঘরে দেখা হল। ফরেস্ট
অফিসার আমাদের চা ও কলা খাওয়াল। অনেকক্ষণ কথাবার্তা হল। সন্ধ্যার পর ফিরলাম। হােসেন মৃধা রাতে আমাদের সাথে থেকে গেলেন। আবহাওয়া স্বাভাবিক দিন ও রাত। শীতের আমেজ মনােরম। ২৪ অক্টোবর ১৯৪৯, সােমবার উঠলাম খুব সকালে। খাবার খেয়ে দুপুরের আগেই হােসেন মৃধা চলে গেলেন। লালুর ভাই এল। গতরাতে তাদের বাড়িতে চুরি হয়েছে। সে দুপুরে খেয়ে বিকেলে চলে গেল। পুকুরের ওপার থেকে আজ বিকেলে বাঘ একটা ছাগল ধরে নিয়ে গেছে। আবহাওয়া ও দিন রাত স্বাভাবিক।
২৫ অক্টোবর ১৯৪৯, মঙ্গলবার গভীর রাতে উঠলাম। রাতের শেষ ভাগে সফি, টুকু, আফসু, দফতুদের সঙ্গে খালে মাছ ধরতে গেলাম এবং অনেক মাছ ধরে দুপুরে ফিরলাম। আব্দুল খানের সঙ্গে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কথা বললাম তার মরিচ খেতে। সেখানে চেরাগ আলি মােড়ল ও মহর আলির সঙ্গে দেখা হল। আবহাওয়া স্বাভাবিক দিন রাত। ২৬ অক্টোবর ১৯৪৯, বুধবার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে উঠলাম। দুপুরে চেরাগ আলি মােড়ল আমাদের বাড়িতে একটা সালিস বসাল তার বন্দুকের লাইসেন্সের ব্যাপারে ২২১/- টাকা আত্মসাতের অভিযােগে। রহম। আলির বক্তব্যে চেরাগ আলির অভিযােগ সত্য বলে মনে হয়। দেখা যায় যে, রহম আলি, মহর আলি ও টুকু মিয়া টাকাটা পকেটস্থ করার ষড়যন্ত্র করেছে। আগামীকাল দুপুরের মধ্যে রহম আলিকে টাকা ফেরত দিতে হবে, এই বলে। সতর্ক করে দিয়ে সন্ধ্যার আগে সালিস শেষ হয়। রহম আলি, তার ছেলে, নসর, জাফর আলি, রজব আলি, আহমদ, নবু, রাম কান্ত মন্ডল ও অন্যরা উপস্থিত ছিল। হােসেন মৃধাও ছিল। সন্ধ্যার পর চেরাগ আলি এল আকবর বেপারির কাছ থেকে এবং সংক্ষিপ্ত কথা সেরে চলে গেল। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক দিন এবং রাত। ২৭ অক্টোবর ১৯৪৯, বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের পরে উঠলাম। সারাদিন বাড়ির এলাকায় কাটল। মাটির গােয়ালঘর বানাবার ব্যবস্থা করলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক দিন। রাত মেঘলা, বাষ্পীয় এবং উষ্ণ।
২৮ অক্টোবর ১৯৪৯, শুক্রবার সূর্যোদয়ের সাথে ঘুম ভাঙ্গল। দুপুরের আগে হাজিবাড়ি ও বেপারি মাঠের আশপাশে ঘােরাফেরা করলাম। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুবের বনের আশে পাশে ঘুরলাম। আবহাওয়া : সারাদিন মােটামুটি স্বাভাবিক। বাতাসে জলীয় বাষ্প। মধ্যরাতের দিকে সামান্য বৃষ্টি। বাকি রাত পরিষ্কার। তাপমাত্রা নাতিশীতােষ্ণ। ২৯ অক্টোবর ১৯৪৯, শনিবার সূর্যোদয়ের আগে উঠলাম। দুপুরের আগে জহর আলি গাড়িয়ালের বাড়ি গেলাম। তারপর জহর আলির সঙ্গে দেখা করলাম এবং দুপুরের পর ফিরলাম। বিকেলে আবদুল মােড়লের ছেলে সিরাজ ও আহমদ আমাদের বাড়ি এল। তাদের সাথে সন্ধ্যা পর্যন্ত কথা বললাম। সেকান্দারকে একটা চিঠি দিয়ে নিগুয়ারি পাঠালাম। মফিজউদ্দিন ও সফি মহিষ নিয়ে শ্রীপুর বাজারে গেল। আবহাওয়া : অল্প বিস্তর স্বাভাবিক দিন এবং রাত। দুপুরের দিকে কয়েক ফোটা বৃষ্টি হল। আবহাওয়া নাতিশীতােষ্ণ।
৩০ অক্টোবর ১৯৪৯, রবিবার উঠলাম খুব সকালে। সিকিভাগ দিন চৌকিদার বাড়ি, মামদির বাড়ি, মুন্সি বাড়ি, নদী ও বেপারি বাড়ির আশেপাশে ঘুরে ফিরে এলাম। কোরবান আলি ও মােমিন দুপুরে এল এবং খাওয়া-দাওয়ার পর চলে গেল। অনেক রাত পর্যন্ত দলুর সাথে কথা বললাম। আবহাওয়া স্বাভাবিক দিনরাত। তাপমাত্রা নাতিশীতােষ্ণ। ৩১ অক্টোবর ১৯৪৯, সােমবার খুব সকালে উঠলাম। সারাদিন বাড়িতে কিছু না করে কাটিয়ে দিলাম। রঙ্গু তার গাড়ি ও বলদ জোড়া নিয়ে এসে দুপরে খেয়ে চলে গেল। আবহাওয়া ঃ সকালে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল। দিনের বাকি অংশ ও রাত ছিল পরিষ্কার। রাতে অপেক্ষাকৃত শীতল পরিবেশ। (১) পাটের দাম সর্বনিম্ন প্রতি মণ ৮/- টাকায় নেমে এসেছে, আর সর্বোচ্চ প্রতিমণ ১৬/- টাকা। সাধারণ দাম প্রতি মণ ১৩/- থেকে ১৪/টাকা। সেপ্টেম্বর শেষ সপ্তাহে স্টার্লিংয়ের দাম হ্রাস পাবার সময় ৩ দিন ব্যাংক বন্ধ থাকার সুযােগে এটা হয়েছে। এ রকম দাম অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল, তারপর পাটের দামের কিছুটা উর্ধগতি লক্ষিত হয়, সর্বনিম্ন প্রতি মণ ৮/- থেকে ১০/- টাকা আর সর্বোচ্চ প্রতি মণ ১৬/- থেকে ২৩/- টাকা। সাধারণ দাম প্রতি মণ মােটামুটি ১৭/- থেকে ১৮/- টাকা। এদামেই এখনও অনড় হয়ে আছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এ অবস্থার উন্নতির আশা নেই। পাট চাষিরা বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণী সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবার উপক্রম। এর তুলনায় অন্যান্য পণ্য বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেশ চড়া। অক্টোবরের শুরুতে চাল ও ধান যথাক্রমে প্রতি মণ ৩৫/- থেকে ৪০/টাকা এবং ২৬/- থেকে ২৮/- টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। পাটের দাম কমে যাওয়ায় ধান ও চালের বিক্রি খুব কম। কাজেই গুদামজাতকারীরা ধান প্রতিমন ২৩/- থেকে ২৪/- টাকায় কমিয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছে। এখন ধান প্রতি মণ সর্বনিম্ন ১৮/- থেকে ১৯/- টাকা এবং সর্বোচ্চ ২১/টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে অর্থাৎ প্রতি মণ ৪০/- টাকা (৩) ১৯৪৩-এর পর এটাই কৃষির ওপর কঠিনতম আঘাত। বিক্রিযােগ্য সমস্ত কৃষিপণ্যের দাম কম। গবাদি পশু স্বাভাবিক দামের একচতুর্থাংশেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। আমাদের এলাকার জমি বিক্রি হচ্ছে স্বাভাবিক দামের তিন চতুর্থাংশে, অন্যত্র দাম অর্ধেক । পাট ইতােমধ্যে সর্বনিম্ন দামে বিক্রি হচ্ছে।
১ নভেম্বর ১৯৪৯, মঙ্গলবার খুব সকালে উঠেছি। দুপুরে নদী থেকে ফিরে আকবর বেপারির বাড়ি গেলাম এবং প্রায় ১ ঘন্টা আলাপ করে ফিরে এলাম। দুপুরে নিগুয়ারি থেকে মেহমান আবুদল হামিদ, মান্নাফ ও রইসউদ্দিন খান এলেন। বিকেল বেলা ওদের সঙ্গেই ছিলাম। আবহাওয়া ও দিন এবং রাত স্বাভাবিক। শীতল তাপমাত্রা। ২ নভেম্বর ১৯৪৯, বুধবার খুব সকালে উঠলাম। মেহমানরা নাস্তা খেয়ে চলে গেলেন। আমি তাদেরকে খেয়াঘাট পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। ফেরার পথে দুপুরে মজিদ ও ওয়ারেস আলির বাড়ি গেলাম। ওয়ারেস আলির সাথে জেলা বাের্ডের রাস্তায় চৌকিদার বাড়িতে বসলাম। হাফিজ বেপারি তখন ঢাকা যাবার জন্যে ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিল। সৈয়দপুরের আবদুল হাই, কাগুর বাপ, ফালু, মজিদ, আকুর বাপ, আক্কাসিয়া ও অন্যরা এল এবং দিনের। তিন-চতুর্থাংশ পর্যন্ত কথাবার্তা হল। তারপর ফিরলাম। তরগাওয়ের রফি এসে দুপুরে ভাত খেয়ে চলে গেল। রাতে মজিদের বাড়িতে মিলাদ শরীফে গেলাম এবং মৌলভী, ওয়ারেস আলি ও অন্যান্যদের সাথে রাতের খাবার খেলাম। মধ্য রাতের দিকে মজিদ ও শিরু আমাকে বাড়ি পৌছে দিল।
আবহাওয়া ও দিন ও রাত স্বাভাবিক। শীতল রাত। ৩ নভেম্বর ১৯৪৯, বৃহস্পতিবার খুব সকালে ঘুম ভাঙল। সারাদিন বাড়িতে। হাকিম ভাইসাহেব বলেছিলেন, মফিজউদ্দিন মাস্টার সাহেব আজ আমার সাথে দেখা করতে আসবেন। কিন্তু এলেন না। আড়ালের মাস্টার যিনি কয়েক বছর আগে হাইলজোরে ছিলেন, আজ রাতে আমাদের বাড়িতে এলেন এবং থাকলেন। গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে তার সাথে আলাপ হল। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক দিন ও রাত। অত্যধিক ঠান্ডা। ৪ নডের ১৯৪৯, শুক্রবার ঢাকার পথে। খুব সকালে উঠলাম। নাস্তা খেয়ে আড়ালের মাস্টার চলে গেলেন। দুপুরে ঢাকা যাবার জন্যে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। সঙ্গে আগরতলা রাজ্যের একজন দ্রলােক এলেন। ট্রেন দেড় ঘন্টা লেট। সন্ধ্যার পর ঢাকা পৌছলাম। আবহাওয়া ঃ দিন ও রাত স্বাভাবিক। ৫ নভেম্বর ১৯৪৯, শনিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম, কিন্তু ক্লাস হল না। সকালে ১০টা পর্যন্ত আগরতলার ভদ্রলােকটির জন্যে ওষুধ কিনে সদরঘাট পর্যন্ত গেলাম এবং সাড়ে ১২টায় ট্রেন ধরার জন্যে তাকে ১১টায় স্টেশনে পাঠালাম। বিকেল ৪টার দিকে কামরুদ্দিন সাহেবের বাড়ি গেলাম এবং পাকিস্তান ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আলাপ করলাম। সন্ধ্যায় মুস্তাফা নূরউল ইসলাম আমাদের সাথে যােগ দিলেন। সাড়ে ৮টায় ফিরলাম। রাত ১১টা পর্যন্ত রুহুল আমিন তাদের আন্দোলন এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমাকে জানাল। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক দিন ও রাত। শীত সত্যিই শুরু হল। ৬ নভেম্বর ১৯৪৯, রবিবার উঠলাম সাড়ে ৬টার দিকে। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটল। ১১টা ও ১টার ক্লাসে গেলাম। সাড়ে ৪টায় জিন্দাবাহারে গেলাম, কামরুদ্দিন সাহেবকে পেলাম না। ইসলামপুর সদরঘাটে কিছু কেনাকাটা করে নবাবপুর হয়ে ফিরলাম। রাত ১১টার দিকে শুতে গেলাম। আবহাওয়া স্বাভাবিক। গতকাল থেকে ঠান্ডায় ভুগছি। ৭ নভেম্বর ১৯৪৯, সােমবার সকাল সাড়ে ৭টায় উঠলাম। ১২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১২টার ক্লাস করলাম। ৫টায় জালালের বাড়ি গেলাম তার সঙ্গে দেখা করতে, কিন্তু তাকে পেলাম। সন্ধ্যা ৭টায় হলে ফিরলাম। ১০টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। ৮ নভেম্বর ১৯৪৯, মঙ্গলবার সকাল ৮টায় উঠলাম। বিকেল সাড়ে ৩টায় জালালউদ্দিন ফকিরের সঙ্গে ৬৭ পুরানা পল্টন সিআইডি অফিসে দেখা করলাম এবং গােসিঙ্গা, রাজেন্দ্রপুর ও শ্রীপুর ফরেস্ট অফিসারের দুর্নীতির ব্যাপারে আলাপ করলাম। চা খাওয়ার পর সাড়ে ৪টায় ফিরলাম। সাড়ে ৫টায় সদরঘাটে একটা সভায় গেলাম এবং একটা সাংস্কৃতিক সংগঠন গঠনের ব্যাপারে আলাপ করলাম। ফজলুর রহমানকে সম্পাদক করা হল। অলি আহাদ, রুহুল আমিন, আউয়াল, এফ. রহমান ও অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। রাত ৮টায় সভা ত্যাগ করলাম। সাড়ে ৮টায় হলে ফিরলাম। শুতে গেলাম ১০টায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
৯ নভেম্বর ১৯৪৯, বুধবার সকাল ৮টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১২টায় ক্লাস হল। আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত হল অফিসে। ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত কমনরুমে। সন্ধ্যা ৭টায় জালালউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতে গেলাম এবং ফরেস্ট অফিসারদের ফাঁদে ফেলার সম্ভাব্য ব্যবস্থা করার ব্যাপারে কথা হল। রাত ৯টায় ফিরলাম। সাড়ে ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১০ নভেম্বর ১৯৪৯, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় উঠেছি। বেলা ১১টা ও ১২টার ক্লাসে গেলাম। ১টায় গেলাম রেজিষ্ট্রার অফিসে। বেলা আড়াইটায় তােয়াহা সাহেব আমার সঙ্গে হলে দেখা করলেন। বিষয় অলি আহাদের বিশ্ববিদ্যালয় বর্জন। পৌনে ৪টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। ডাঃ করিম কলকাতা থেকে ফিরেছেন। সন্ধ্যা ৬টায় হলে ফিরলাম। পথে হাই কোর্ট গেটের কাছে জলিলের সঙ্গে দেখা। অধ্যাপক লিউ (Lieu) চীনা যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমাদের অ্যাসেমব্লি হলে বক্তৃতা দিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ড. হালিম সভাপতিত্ব করলেন। উপস্থিতি ভাল। হাউস টিউটর এবং প্রভােস্টের সাথে রাত ৯টায় ড. করিমের অফিস কক্ষে চা খেলাম। ১১টায় শুতে গেলাম।
আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১১ নভেম্বর ১৯৪৯, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় উঠলাম। সারাদিন হলেই কাটল। সারা বিকেল অধ্যাপক লিউয়ের বক্তৃতার ওপর একটা রিপাের্টের খসড়া করলাম এবং মােশাররফ সাহেবের সঙ্গে সন্ধ্যা ৭টায় সেটা প্রভাস্টের বাড়িতে দিয়ে এলাম। রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত কমনরুমে কাটালাম। ১০টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১২ নভেম্বর ১৯৪৯, শনিবার ৭টায় উঠেছি। আজ কোনাে ক্লাস নেই। ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএস কার্ড ও স্টাইপেন্ড বিল করতে কেটে গেল। সারা বিকেলে হলে। ১০টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১৩ নভেম্বর ১৯৪৯, রবিবার সকাল ৭টায় উঠেছি। বেলা ১১টা ও ১টার ক্লাসে গেলাম। সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম. এম. ভট্টাচার্য ৩-১৫ মিনিট থেকে ৪-২০ মিনিট পর্যন্ত ৭২ নম্বর রুমে “ভারত ও পাকিস্তানে ইংরেজি ভাষার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বক্তৃতা দিলেন। করম আলির সঙ্গে শেখ আয়েত আলি আমার কাছে সকাল সাড়ে ৭টায় এলেন তার বন্দুকের লাইসেন্স করানাের জন্যে। আমি প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরােধ জানিয়ে সাদির মােক্তারের কাছে স্লিপ লিখে পাঠালাম। গফগাঁওয়ের আবদুল মতিন মীর সকাল সাড়ে ৮টায় আমার কাছে এলেন
২৫
এবং ১০টা পর্যন্ত কাঠ ও জ্বালানি ব্যবসা সম্পর্কে আলাপ করলেন। আমি তাকে খুঁটি ইত্যাদি দেখার জন্য আমাদের বাড়ি যাবার অনুরােধ জানালাম। তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে যাবার প্রতিশ্রুতি দিলেন। ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কমনরুমে কাটালাম। ১০টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১৪ নভেম্বর ১৯৪৯, সােমবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। ১টায় ক্লাসে গেলাম। বিকেলে এ, কাদিরের সঙ্গে চকে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপাট দেখতে গেলাম। দক্ষিণের কয়েকটি ছাড়া সার্কুলার রােডের মধ্যেকার সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নিশ্চিত বিরাট ক্ষতি। ফেরার পথে ১৫০ মােগলটুলিতে সালেহ, শওকত ও হযরত আলির সঙ্গে দেখা করলাম। ৭টায় হলে ফিরলাম । শুতে গেলাম ১০টায়। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। ১৫ নভেম্বর ১৯৪৯, মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৭টায় উঠেছি। ৮টার দিকে জালালউদ্দিনের সঙ্গে তার কোয়ার্টারে দেখা করলাম এবং গােসিঙ্গা ফরেস্ট অফিস সম্পর্কে আলাপ করলাম। আগামী মঙ্গলবার থেকে ফঁদপাতা পাটি কাজ শুরু করবে বলে তিনি আশ্বাস দিলেন। শাহাদ আলির সঙ্গে দেখা করলাম। সে স্ট্যাম্প পরিবর্তন করতে পারবে না। সকাল সাড়ে ৯টা ফিরলাম। বিকেল সাড়ে ৫টায় জালালের কাছে তার অফিসে বন কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ব্যাপারে ইংরেজিতে লিখিত একটা বিবৃতি পেশ করলাম। আজিজ মিয়াকে অনুরােধ করে শাহাদ আলির ভাইকে একটা স্লিপ দিয়ে পাঠালাম যাতে সে বিকেল ৫টায় তাদের ৩টা খুঁটি দিয়ে দেয়। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কমনরুমে কাটালাম।
১০টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১৬ নভেম্বর ১৯৪৯, বুধবার সকাল পৌনে ৭টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা এবং রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত পড়াশােনা করলাম। ১২টায় ক্লাসে গেলাম। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভলিবল এবং ব্যাডমিন্টন খেললাম। রাতে তােয়াহা সাহেব এলেন এবং তাদের অতিরিক্ত জমির ব্যাপারে আলাপ করলেন। শুতে গেলাম ১১টায়। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। ১৭ নভেম্বর ১৯৪৯, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় উঠলাম। ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত পড়াশােনা করলাম । বেলা ১১টা থেকে ৩টা ১০ মিনিট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১১টা ও ১২টা ১০ মিনিটের ক্লাসে যােগ দিলাম। বিকেল ৪টায় জালালের সঙ্গে তার অফিসে দেখা করলাম। পার্টি কাজের জন্যে প্রস্তুত। ফেরার পথে সন্ধ্যায় তােয়াহা সাহেব আমার সঙ্গে দেখা করলেন। শুতে গেলাম ১১টায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
১৮ নভেম্বর ১৯৪৯, শুক্রবার বাড়ির পথে। সকাল ৬টায় উঠেছি। ৮টা ২০ মিনিটের ট্রেনে বাড়ি রওনা হলাম। রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত আবদুল হাকিম আমার সঙ্গে ছিলেন। চাঁদপুর ইউনিয়নের এ. খালেক খানও ট্রেনে ছিলেন। শ্রীপুরে এ জব্বারের কাছে চা খাওয়ার পর সাহেব আলি বেপারি আমার সঙ্গে আমাদের বাড়ি পর্যন্ত এল। তিনি জমির ভাগাভাগি প্রশ্নে তাদের নিজেদের দ্বন্দ্বের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত বললেন। সন্ধ্যার পর নারায়ণপুর থেকে মফিজউদ্দিন ফিরল। তাকে বনের মামলার ব্যাপারে আমি যা করেছি সমস্ত কিছু বললাম। মঙ্গলবারের আগে সবকিছু প্রস্তুত রাখার জন্যে তাকে নির্দেশ দিলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। (১) জমিদারী উচ্ছেদ বিল বিবেচনার জন্যে পূর্ব বাংলার অ্যাসেমরি ১৪-১১ ৪৯ তারিখে বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হয়। (২) আম্বালা জেলে ১৫-১১-৪৯ তারিখে নাথুরাম গডসে এবং নারায়ণ আপতের ফাসি হয়েছে। (৩) এ বছরের বিশেষত্ব হচ্ছে, গ্রীষ্মের প্রথম থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে এবং অক্টোবরের শেষ নাগাদ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকল। এবার বর্ষা ও শীতকালের মধ্যে কোন বিরতি নেই। কার্যত ১ নভেম্বর থেকে শীতকাল এসে পড়ল । এই দ্রুত পরিবর্তন জনগণের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলেছে। ১৯ নভেম্বর ১৯৪৯, শনিবার ঢাকার পথে। সকাল ৬টার দিকে উঠেছি। সকালেই বাড়ি থেকে রওনা হলাম। গােসিঙ্গা ঘাটে দাগ ও মােহাম্মদ আমার সঙ্গে যােগ দিল। ওরা ঢাকা গিয়েছিল। পথে গােসিঙ্গা বন অফিসের একজন গার্ডের সঙ্গে দেখা হল। সে আমাকে জানাল যে, বিট অফিসার অসুস্থ এবং আগামীকালের মধ্যে তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। আমি এই কথা শুনে দাশুর কাছে মফিজউদ্দিনের জন্য একটা চিরকুট দিলাম যে, আমাদের পরিকল্পনা মঙ্গলবারের পরিবর্তে আগামী অন্য কোন তারিখে সরিয়ে নিতে ৯টা ৫ মিনিটের ট্রেন পেয়ে গেলাম। যথাসময়ে ট্রেন ঢাকা পেীছল। বেলা ১২টার ক্লাসে যােগ দিলাম। ৩টায় দুর্নীতি দমন অফিসে গেলাম এবং ডিএসপি ও জালালেরর সঙ্গে দেখা করলাম। বিট অফিসারের সেরে ওঠা পর্যন্ত তারিখ স্থগিত হয়ে গেল। ফেরার পথে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ডি.এফ.ও. মি. আলমের সঙ্গে তার অফিসে দেখা করলাম। ৫টায় হলে ফিরলাম।
রাত ৭টা থেকে ৮টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত কমনরুমে কাটালাম। ১০টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ২০ নভেম্বর ১৯৪১, রবিবার উঠেছি সকাল সাড়ে ৬টার দিকে। বেলা ১১টা ও ১২টার ক্লাসে গেলাম। ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস হল না। বিকেলে খন্দকার আর, হকের সঙ্গে তােয়াহা সাহেবের বাড়ি গেলাম। হল ম্যাগাজিন প্রকাশনার ব্যাপারে আলাপ করলাম। সন্ধ্যায় ফিরলাম। রাত সাড়ে ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত কমনরুমে। ১০টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ৫-১১-৪৯ তারিখ থেকে প্রচন্ড ঠান্ডায় ভুগছি। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে মা ও বুলবুল কয়েকদিন জ্বরে ভুগেছে।। ২১ নভেম্বর ১৯৪৯, সােমবার ৬টায় উঠেছি। দুপুর ১টা ও ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে যােগ দিলাম। ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ড. এস, এন, রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২ নং কক্ষে বক্তৃতা করলেন। বিকেলে ভলিবল খেললাম। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কমনরুমে। রাত ৮টায় সাবেত আলি মৌলভী মফিজউদ্দিনের লেখা একটা চিরকুট নিয়ে আমার কাছে এল। মফিজউদ্দিন জানিয়েছে, মঙ্গলবারে ফাদ পাতার জন্যে সবকিছু প্রস্তুত। ১১টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া স্বাভাবিক।
২২ নভেম্বর ১৯৪৯, মঙ্গলবার উঠেছি সকাল সাড়ে ৬টায়। সকাল ৮টায় সাবেত আলি মৌলভীর সাথে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলাম এবং মেডিকেল ছাত্র আবু সিদ্দিকের সহায়তায় তখনি আবদুল মােড়লের দুই ছেলেকেই ভর্তি করলাম। টান চৌরাপাড়ার ইয়াসিনের হাতে মফিজউদ্দিনকে লেখা একটা চিঠি পাঠালাম।। ডাঃ করিমের সঙ্গে সকাল ১০টায় হলে ফিরলাম। ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় অফিসে গিয়ে ২০০/- টাকার স্টাইপেন্ড নিলাম । ঢাকা হলের ক্লিয়ারেন্স সীল ছিল না, এই নিয়ে অনেক হয়রানির পর ৪র্থ কিস্তির ফি পরিশােধ করলাম। রেজিস্ট্রারের বিশেষ অনুমতি নিয়ে বিকেল ৪টায় এটি পরিশােধ করা হল। বিকেল সাড়ে ৪টায় হল অফিস থেকে আসাদুজ্জামানের জন্য ৩০/- টাকার কশন মানি তুললাম। ৫টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। তিনি বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তাই মাত্র ৫ মিনিট কথা হল। বিকেল সাড়ে ৫টায় জগন্নাথ কলেজে ডাঃ করিমের সঙ্গে দেখা করলাম এবং তাকে তােয়াহা সাহেবকে দেখার জন্যে পাঠালাম। তােয়াহা সাহেব মারাত্মক অসুস্থ। পাটুয়াটুলিতে গভঃ মুসলিম হাই স্কুলের সাবেক শরীর চর্চা শিক্ষক জনাব এফ, রহমান ভূইয়ার সঙ্গে দেখা হল। সদরঘাট ও নবাবপুরে কিছু কেনাকাটার পর রাত ৮টায় হলে ফিরলাম। ফেরার পথে হাসানের দরজায় নক করলাম। কিন্তু সে বাড়িতে নেই। ১০টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। ২৩ নভেম্বর ১৯৪৯, বুধবার উঠেছি সকাল ৬টায়। বেলা ১২টার ক্লাসে গেলাম । ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। ৭২নং কক্ষে ড. দাসগুপ্ত ৩টা ১৫ মিনিট থেকে ৪টা পর্যন্ত ভাষণ দিলেন। তিনি Devaluation সম্পর্কে বললেন। হাসানের কাছে গেলাম বিকেল সাড়ে ৫টায় এবং তাকে তার পাওনা ২১/টাকা দিলাম। সে আমাকে প্যারামাউন্টে চা এবং নাস্তা করাল। আমি তাদের কোয়াটারে চেরাগ আলি মােড়লকে শুয়ে থাকতে দেখলাম। আইউব আলি এসেছে। রাত সাড়ে ৭টায় হলে ফিরলাম। আমি হলে আসার পরপরই মােহসিন এল এবং চলেও গেল। ১০টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। শীতের তীব্রতা কম। ২৪ নভেম্বর ১৯৪৯, বৃহস্পতিবার বাড়ির পথে। সকাল ৬টায় উঠেছি। ৮টা ২০ মিনিটের ট্রেনে বাড়ি রওনা হলাম। সঙ্গে আসাদুজ্জামান। সে দুপুরে আমাদের বাড়িতে খেয়ে বিকেলে ওদের বাড়ির উদ্দেশে চলে গেল। সন্ধ্যায় বেপারি বাড়ি, হাজি বাড়ি হয়ে মাঠে এবং নদীর ধারে ঘােরাঘুরি করলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
২৫ নভেম্বর ১৯৪৯, শুক্রবার ঢাকার পথে। সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। দিনের প্রথম ভাগে আব্দুল খানের সঙ্গে তার বাড়ির সামনের মরিচের খেতে দেখা। দুপুরে সাহেব আলি দফাদার আমাদের বাড়িতে এসে আমার সঙ্গে দেখা করল। বেলা ১টার দিকে ক্রটিপূর্ণ সাইকেল যােগে বাড়ি থেকে শ্রীপুর রওনা হলাম। ৩টা ৫৫ মিনিটের ট্রেন ধরলাম। আব্বাস আলি মাঝি শ্রীপুর থেকে ট্রেনে আমার সঙ্গী হল। শ্রীপুরে জব্বার মিয়ার বাড়ি গেলাম। সে আমাকে চা খাওয়াল। ঢাকা স্টেশনে একজন পার্সেল ক্লাকের সঙ্গে আমার সঙ্গে পরিচয় হল তার নাম আবদুল আজিজ। সে আমাদের ইউনিয়নের সােহাগপুরের লােক। আমি এসে পৌছবার ঠিক পরপরই অলি আহাদ আমার সঙ্গে দেখা করল। শুতে গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
২৬ নভেম্বর ১৯৪৯, শনিবার উঠেছি সকাল সাড়ে ৬টার দিকে। বেলা ১২টার ক্লাস হল না। এস, লাইব্রেরির বই ফেরত দিলাম। দুর্নীতি দমন অফিসে গেলাম এবং দুপুর ২টায় জালালের সঙ্গে দেখা করলাম, মঙ্গলবারের জন্যে ব্যবস্থা করতে। আসার পথে প্রথম আনসার আলি এবং পরে হাফিজুদ্দিনের সঙ্গে দেখা হল। আইবি’র এস.আই. ছিল না। বিকেল ৪টায় মেরামতের জন্যে আমার সাইকেলটা মােগলটুলিতে আতাউর রহমানের দোকানে দিলাম। আগামী বুধবারে সাইকেলটা ডেলিভারি নিতে হায়দার সাহেবের সঙ্গে তার দোকানে দেখা হল। পথে ইবিআর আমিরউদ্দিন সাহেবের দেখা পেলাম। সদরঘাট-ইসলামপুরে কিছু কেনাকাটা করলাম এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হলে ফিরে এলাম। রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কমনরুমে। সাড়ে ১০টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ২৭ নভেম্বর ১৯৪৯, রবিবার সকাল ৬টায় উঠলাম। বেলা ১২টা ও ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় আবুদল মােড়লের ছেলেদের দেখতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত কমনরুমে। সন্ধ্যা সােয়া ৬টায় ডাঃ করিমের অভিষেক অনুষ্ঠানে যােগ দেয়ার কর্মসূচি বাতিল করলাম জালালের অপেক্ষায়, কিন্তু সে এল না। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া স্বাভাবিক। ঠান্ডা বাড়ছে। ২৮ নভেম্বর ১৯৪৯, সােমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উঠেছি। বেলা ১১টা, ১টা ও ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে দেখলাম মফিজউদ্দিন আমার অপেক্ষায় বসে আছে। ফরেস্টারের বিষয়ে তারিখ পরিবর্তন করতে হবে। বিকেল ৪টায় জালালের সঙ্গে তার অফিসে দেখা করলাম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা কিংবা শুক্রবার সকালে সময় ঠিক হল। ৫টায় সেখান থেকে বের হলাম। মফিজউদ্দিনের সঙ্গে স্টেশনে দেখা করলাম এবং তাকে সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানালাম। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং শনিবারের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সন্ধ্যায় লিলি কটেজের মজিদের সঙ্গে কথা বললাম। ১০টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ২১ নভেম্বর ১৯৪৯, মঙ্গলবার সকাল ৭টায় উঠেছি। আড়াইটায় একজন কনস্টেবলের সঙ্গে দুর্নীতি দমন অফিসে গেলাম। ডেপুটি এসপি-র সঙ্গে কথা বললাম। তিনি এই কাজের জন্য অফিস থেকে ৪০/টাকা নিলেন। বৃহস্পতিবারে দেখা করতে হবে। নবাবপুরে মােহসিনের সঙ্গে দেখা হল। তার জন্যে একটা এইচ, (হারকিউলিস) বাইক কিনলাম। নিজের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে সদরঘাট পর্যন্ত গেলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হলে ফিরলাম। রাত সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কমনরুমে কাটল। বিছানায় গেলাম ১০টায়। আবহাওয়া স্বাভাবিক। ৩০ নভেম্বর ১৯৪৯, বুধবার উঠেছি সকাল ৭টায় । বেলা ১২টার ক্লাসে যােগ দিলাম। ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। সন্ধ্যায় মেরামতের দোকান থেকে সাইকেল ডেলিভারি নিলাম। ছােটকাটরার। হুমায়ুন তাদের সঙ্গে থাকার জন্যে একজন অর্থনীতির ছাত্র দিতে অনুরােধ করল। আজ সন্ধ্যায় মেস কমিটি ফিস্টের আয়ােজন করেছে। অনুষ্ঠান সফল হল। প্রভােস্ট জনাব মেজবাউদ্দিন প্রমুখ খাবারের পর বক্তৃতা দিলেন।
আজ সন্ধ্যায় ডিসেম্বর মাসের জন্য একটি নতুন মেস কমিটি নির্বাচিত হল। ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। শীত কিছুটা কম।
৩৫
১ ডিসেম্বর ১৯৪৯, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। ১১টা ও ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে যােগ দিলাম। বিকেল সাড়ে ৩টায় দুর্নীতি দমন অফিসে। ডিএসপি-র দেখা পেলাম না। জালাল জানাল যে, তারা শুক্রবারে যেতে পারবে না। কাজেই আমার আজ। সন্ধ্যায় রওনা হবার কর্মসূচিটা বাদ দিতে হল । বিকেল ৪টায় এই অফিস থেকে বের হলাম। ঢাকা স্টেশনে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের অঞ্চলের যে কোন একজন লােকের সন্ধানে অপেক্ষা করলাম, কিন্তু কাউকে পেলাম না। ডিএফও-র সাথে স্টেশনে দেখা হল। তিনি শ্রীপুর যাচ্ছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হলে ফিরলাম। ১০টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ২ ডিসেম্বর ১৯৪৯, শুক্রবার বাড়ির পথে। সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। ১১টা ১০ মিনিটে জালালের সঙ্গে তার অফিসে দেখা করলাম। সবকিছু ঠিকঠাক। ডিএসপি আগামীকাল সকালে রওনা হবে। বেলা ১টা ৫ মিনিটের ট্রেনে বাড়ি রওনা হলাম। জালাল আমার সঙ্গে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত এল। শ্রীপুরে পৌছেই সেখানকার এ,এস,আই, কে ডিএসপি-র লেখা চিঠিটা দিলাম। শেষ বিকেলে বাড়ি পৌছলাম। জাহাদ আলি পন্ডিত চৌকিদার বাড়ি পর্যন্ত সঙ্গে এল। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ৩ ডিসেম্বর ১৯৪৯, শনিবার ৭টার দিকে উঠলাম। ডিএসপি মিস্টার সােবহান, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মিস্টার বি. আহমদ এবং একজন সাব ইন্সপেক্টর দুপুর ১২টার দিকে আমাদের বাড়িতে এলেন। তারা দুপুরের খাবার খেলেন। গােসিঙ্গার বিট অফিসার (বিনােদ বিহারী চৌধুরী) এবং ইদ্রিস গার্ডকে ফাঁদে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শ্রীপুরে পেমেন্ট করা হবে। ওয়াসিরউদ্দিনকে সেভাবে পাঠানাে হল। তারপর আড়াইটার দিকে আমি রওনা হলাম এবং এরপর ফাঁদ পাতা দল। সূর্যাস্তের প্রায় ৪৫ মিনিট আগে শ্রীপুর পৌছলাম। আকরামতউল্লাহকে সাক্ষি বানানাে হয় এবং শ্রীপুর ডিসপেনসারিতে সংশ্লিষ্ট লােকদের সঙ্গে টাকা লেনদেন হয়। এখানেই ট্র্যাপ পাটি তাদেরকে সামনা সামনি ঘিরে ফেলে। তাদের ৪০/- টাকা (ঘুষ) দেয়া হয়েছিল। বিট অফিসারকে মেডিকেল গ্রাউন্ডে জামিন দেয়া হয়, গার্ডের জামিন হয়নি। আমরা রাত ৮টার ট্রেনে ঢাকার পথে রওনা হলাম। রাত ১১টায় ঢাকা পৌছলাম। ১২টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ৪ ডিসেম্বর ১৯৪৯, রবিবার সকাল সাড়ে ৬টায় উঠলাম। নােমানি সাহেবের সাথে মেস কমিটির বৈঠক সকাল ৯টায়। জনাব আতাহারের পদত্যাগের ফলে আমাকে সেক্রেটারি বানানাে হল। বেলা ১২টা ও ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে গেলাম। গত রাতে সাবসিডিয়ারি-র রেজাল্ট বেরিয়েছে। আমি পাস করেছি। কামরুদ্দিন সাহেবের সাথে বিকেল সাড়ে ৪টায় তার বাসায় দেখা করলাম। সংক্ষেপে পূর্ব-বাংলার সংসদীয় রাজনীতির অবস্থা নিয়ে আলােচনা হল।
ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের ইলেকশন হবে। সন্ধ্যা ৭টায় ফিরলাম। বিছানায় গেলাম সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ৫ ডিসেম্বর ১৯৪৯, সােমবার সকাল ৭টায় উঠলাম। ৩টা ক্লাসের মধ্যে একটা ক্লাসে যােগ দিলাম, বেলা ২-২০ মিনিটে। বিকেল সাড়ে ৩টায় জালালের সাথে তার অফিসে দেখা করলাম। মামলার স্বার্থে রেঞ্জ অফিস থেকে ওয়াসিরউদ্দিনের আবেদনটা সংগ্রহ করার জন্যে তাকে পরামর্শ দিলাম। ৪টায় সেখান থেকে চলে এলাম। সাড়ে ৪টায় মােগলটুলিতে গেলাম এবং সাইকেলের রিংয়ে টেপ পেচিয়ে ঠিক করলাম। সন্ধ্যা ৬টায় ফিরে এলাম। সন্ধ্যা ৭টায় কার্জন হলে ইউনিভার্সিটি ইউনিয়ন আয়ােজিত নকল জাতিসংঘ (MOCK UNO) বিতর্কে যােগ দিলাম। বিতর্কের বিষয় পরাশক্তিগুলির ভিটো ক্ষমতা লােপ করা উচিৎ। এক একজন তার্কিক এক একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করল। রাত ১০টায় ফিরলাম। শুতে গেলাম ১২টায়। আবহাওয়া স্বাভাবিক। ৬ ডিসেম্বর ১৯৪৯, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় উঠলাম। সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ডিএইচ (ঢাকা হল)-এর জন্য বাজার করলাম। এর আগে আমি আউয়াল ও কে, জি, মাহবুবের সঙ্গে দেখা করে তাদেরকে স্ক্রিপ্টের ব্যাপারে মিটিংয়ের আয়ােজন করতে অনুরােধ করলাম। অলি আহাদ রাত ৮টায় স্ক্রিপ্টের বিষয়ে আমার সঙ্গে দেখা করল। ঢাকা হলের বৈঠকে যােগ দিলাম। ঢাকা হল কমিটি একযােগে পদত্যাগ করল। নতুন কমিটি গঠিত হল। মেসার্স মেসবাউদ্দিন ও নােমানি উপস্থিত ছিলেন। সভা ভাঙ্গল সাড়ে ৯টায়। ঘুমাতে গেলাম সাড়ে ১১টায়।
আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
৪০
৭ ডিসেম্বর ১৯৪৯, বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় উঠলাম। বেলা ১২টায় ক্লাসে যােগ দিলাম। ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। অলি আহাদের সঙ্গে জগন্নাথ কলেজে গেলাম এবং করিম, জি, এস, আনওয়ার প্রমুখের সঙ্গে স্ক্রিপ্ট প্রশ্নে কথা বললাম। বিকেল ৫টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম। সেখানে আউয়াল আমাদের সাথে যােগ দিল। সন্ধ্যা ৭টায় হলে ফিরলাম। মফিজউদ্দিন গােসিঙ্গা ফরেস্টারের মামলা সম্পর্কে কথা বলতে এসেছে। সে রাতে থাকল। তাকে প্রয়ােজনীয় নির্দেশাদি দিলাম। ১২টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ৮ ডিসেম্বর ১৯৪৯, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় উঠেছি। মফিজউদ্দিন সকাল সাড়ে ৭টায় বাড়ি রওনা হল। বেলা ১১টা ও ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে যােগ দিলাম। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে এ. ওয়াদুদ পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে ১টা ৫০ মিনিটে স্ক্রিপ্টের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রতিবাদ সভা হল এবং কমিটি গঠিত হল। বিকেল ৫টায় জালাল ও ডিএসপি জনাব সােবহানের সঙ্গে তাদের অফিসে দেখা করলাম। সন্ধ্যা ৬টায় হলে ফিরলাম। জনাব নােমানির সভাপতিত্বে রাত ৮টায় ঢাকা হলের মিটিং হল। ১১টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ৯ ডিসেম্বর ১৯৪৯, শুক্রবার পৌনে ৭টায় ঘুম ভাঙ্গল। সারাদিন হলেই কাটল। বিকেল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত কমনরুমে ছিলাম। গিয়াস ডাইসাহেব ও দুলু সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আমার রুমে এল দেখা করতে। এবং আমাকে জানাল যে, রাজেন্দ্রপুরের রেঞ্জার আমার লােকদের নারায়ণপুরে খুঁটির স্টকের অভিযােগে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। ১১টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। বি. দ্র. রাত ৮টায় ওয়াই, এস, আহমদের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। কিন্তু তার দেখা পেলাম না। ১০ ডিসেম্বর ১৯৪৯, শনিবার সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল ৮টায় জনাব মুকিতের সঙ্গে ফরেন্টারের মামলা এবং এর ফলে আমার অসুবিধার ব্যাপার নিয়ে তার বাড়িতে দেখা করলাম। সকাল সাড়ে ৯টায় জালালের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। রাজেন্দ্রপুরের রেঞ্জারের ক্ষতিকর কার্যকলাপ সম্পর্কে ডিএফও-র হেড ক্লার্কের সঙ্গে আলাপ করলাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় ডিআইজি-র সঙ্গে দেখা করলাম। আমি দুর্নীতি দমন কর্মচারিদের সাহায্য করেছিলাম এ কারণে বন বিভাগের কর্মচারিরা আমাকে শুধুমাত্র হয়রানি করার জন্য যে সব বদ মতলব এটেছে তা তাকে জানালাম। তিনি সাহায্য ও নিরাপত্তা দানের আশ্বাস দিলেন। ঢাকা স্টেশনে গেলাম এবং কাপাসিয়ার মনরউদ্দিন খলিফার মাধ্যমে আজিজ মিয়াকে একটি চিঠি। পাঠালাম। রাজেন্দ্রপুরের ফালু গার্ড সেখানে ছিল। রেঞ্জার যেন আমাকে অবৈধভাবে হয়রানি না করে সেটা রেঞ্জারকে জানিয়ে দেবার জন্যে গার্ডকে বললাম এবং আরাে বললাম, আমার বিরুদ্ধে তার কাছে যদি সত্যিকার কোন প্রমাণ থাকে তবে সে যেনাে মামলা করে। রাত ৯টায় জালালের সঙ্গে তার কোয়ার্টারে দেখা করলাম। গিয়াস ও দুলু সেখানে ছিল । গিয়াসকে বললাম আজিজ মিয়াকে বলতে যে, আমি যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে সে যেনাে সেভাবে কাজ করেন। ১০টা ১৫ মিনিটে ফিরলাম। শুতে গেলাম ১১টায় । আবহাওয়া স্বাভাবিক। ১১ ডিসেম্বর ১৯৪৯, রবিবার নারায়ণপুরের পথে।
সকাল ৭টায় উঠেছি। বেলা ১২টা ও ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে যােগ দিলাম । ফজলু নারায়ণপুর থেকে সংবাদ নিয়ে এল। জালালের সাথে কথা বলে ফজলুর সাথে সন্ধ্যা। সাড়ে ৬টার ট্রেনে নারায়ণপুর রওনা হলাম। রাত ১১টার দিকে আয়নুদ্দিন মিয়ার বাড়ি পৌছলাম। সেখানে রাতের খাবার খেলাম। ঘাটে এলাম। সারারাত জেগে রইলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১২ ডিসেম্বর ১৯৪৯, সােমবার গত রাত জেগেই ছিলাম। আয়নুদ্দিন মিয়ার সাথে সকাল ৯টার দিকে রশীদ সাহেবের কাছে গেলাম। সেখানে নাস্তার পর ১০টায় থানায় গেলাম এবং বন বিভাগের ব্যাপারে একটি লিখিত এজাহার দাখিল করলাম। সেখানে গােলমালের ব্যাপারটা বললাম। ১১টায় ফিরে এলাম। নারায়ণপুরে বাজারের সময় অন্তত ৫০ জনকে আসল সিল দেখালাম, যার ওপর সীজ হ্যামার’-এর দাগ রয়েছে। ফরেষ্ট অফিসের কেউ ঘাটে আসে। নি। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১৩ ডিসেম্বর ১৯৪৯, মঙ্গলবার খুব সকালে উঠেছি। সকাল ১০টায় কাপাসিয়ায় গেলাম এবং এজাহারের কপি সংযুক্ত করে ডিআইজি ও এসডিও (উত্তর)-এর নামে ২টি চিঠি পাঠালাম। থানা বাংলােয় এসডিও-র সঙ্গে দেখা করে আমার মামলার ব্যাপারে কথা বললাম। ১২টার দিকে ফিরলাম। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হযরত আলি ফরেস্টার এবং লাঠি ও ১টি বন্দুক হাতে ৪জন সশস্ত্র গার্ড আমার ঘাটে এল এবং আমাকে বলল তারা যে খুঁটিগুলাে সিজ করেছিল সেগুলাে নিয়ে যাবে। আমি প্রায় ৫০ জনের সামনে। ওদের সীজার লিস্ট দেখিয়ে নিয়ে যেতে অনুরােধ করলাম। কিছুক্ষণ বসে তারা চলে গেল।
সন্ধ্যায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম এবং দরদরিয়ায় আইউব আলি মিয়ার সাথে আমার মামলার ব্যাপারে কথা বললাম। সে আমাকে বাড়ি পৌছে দিল। আমার মামলার ব্যাপারে শােনার জন্যে রাতে গ্রামের প্রায় সবাই আমার সঙ্গে। দেখা করল। তারাও আমাকে জানাল যে, লাঠি ও বন্দুকওয়ালা ফরেস্ট গার্ড এবং অফিসাররা সবাইকে হুমকি দিয়েছে। ঘুমাতে গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া স্বাভাবিক। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৪৯, বুধবার খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলাম। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নারায়ণপুর ঘাটে এলাম। আমি এখানে পৌছানাের পর মফিজউদ্দিন গার্ড আমাকে একটা তথ্য দিল। আমাকে ঘাটে থাকতে অনুরােধ করেও ফরেস্টার হযরত আলি মিয়া এল না। আমি অপেক্ষা করলাম। বাড়ি ফেরার পথে আব্দুল খানের সঙ্গে দেখা হল। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। সপ্তাহের শুরু থেকে অত্যধিক ঠান্ডা পড়েছে। ১৫ ডিসেম্বর ১৯৪৯, বৃহস্পতিবার খুব সকালে উঠলাম। বিকেলে কাপাসিয়া থানায় গেলাম এবং ১৩-১২-৪৯ তারিখের ঘটনার ব্যাপারে ওসি-র সঙ্গে আলাপ করলাম। সন্ধ্যায় ফিরলাম। পথে পােস্ট মাস্টার মােস্তফার সঙ্গে কথা হল। ১০টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৪৯, শুক্রবার। খুব সকালে উঠলাম । বরহর ফরেস্ট পিটিশনের ব্যাপারে আবদুল হাকিম মামা আমার সঙ্গে ঘাটে দেখা করলেন। তাকে প্রয়ােজনীয় পরামর্শ দিলাম।
বাজারের দিন। লােকজনকে বিশেষ করে মােমিন, আবদুর রউফ মাস্টার প্রমুখকে খুঁটিগুলি দেখালাম যার ওপর সীজ হ্যামার সীল দেয়া হয়েছে। আফসু ও দফতু ঘাটে এল এবং দুপুরের খাবার খেল। ঘুমাতে গেলাম রাত ১০টার দিকে। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১৭ ডিসেম্বর ১৯৪৯, শনিবার ঢাকার পথে। ভাের ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠলাম। আলিমউদ্দিন নামে একটি বালকের সঙ্গে শ্রীপুর রওনা হলাম। সে আমাকে আকরামতউল্লাহ-র বাড়ি পৌঁছে দিল। সেখানে চা খেলাম এবং জনাব আকরামতউল্লাহসহ সকাল ৯টার ট্রেনে ঢাকা এলাম। ডিএসপি এবং অন্যদের সঙ্গে দেখা করলাম এবং আমার সমস্যা নিয়ে আলােচনা করলাম। বিকেল সাড়ে ৩টায় ডিএসপি-র গাড়িতে করে আদালতে গেলাম। ফরেস্টার ও গার্ডের জামিন বাতিল করালাম। তাদেরকে হাজতে পাঠিয়ে দেয়া হল। সন্ধ্যা ৭টায় জালালের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম এবং তাকে সবকিছু জানালাম। রাত ৯টায় হলে ফিরলাম। ১১টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১৮ ডিসেম্বর ১৯৪৯, রবিবার নারায়ণপুরের পথে। সকাল ৬টার দিকে উঠেছি। খুব সকালে সবরাতির কাছে একটা ছুটির দরখাস্ত দিলাম। হাসমতকে ৫/টাকা দিলাম এবং আশুকে দেবার জন্যে জনাব আসগর আলিকে ১০/- টাকা দিলাম। ৮টা ২০ মিনিটের ট্রেনে রওনা হলাম। ট্রেন প্রায় ২ ঘন্টা লেট। এস.আই. এ. এইচ. চৌধুরী আমার সঙ্গে জয়দেবপুর পর্যন্ত এলেন এবং মওলানা ওয়ারেস আলি এলেন শ্রীপুর পর্যন্ত। ১টার দিকে গােসিঙ্গা হয়ে নারায়ণপুর পৌছলাম। পথে আকরামতউল্লাহ, সাহেব আলি বেপারি, রুস্তম আলি আকন্দ প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। ডিআইজি অফিসের চিঠি নিয়ে বিকেলে থানায় গিয়ে ওসি-র সাথে আলােচনা করলাম। তার পরামর্শ আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হল এবং সে অনুযায়ী আমি ডিআইজি অফিস থেকে ফরােয়ার্ড করা আমার আবেদনপত্রটি প্রত্যাহার করতে রাজি হলাম। সন্ধ্যায় ফিরলাম। পথে জনাব আরিফ,মমতাজউদ্দিন প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। আজ সন্ধ্যায় নিগুয়ারি থেকে আজিজ মিয়ার বড় ভাই এল এবং রাতে। আমাদের সঙ্গে থাকল। রাত ৯টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া স্বাভাবিক। শীতের দাপট বাড়ছে। ১৯ ডিসেম্বর ১৯৪১, সােমবার সূর্য ওঠার সাথে ঘুম ভেঙ্গেছে। বেলা ১টায় বাড়ি ফিরে এলাম। এর আগে পিটিশনের ব্যাপারে ঘাটে হাকিম মিয়ার সঙ্গে কথা হল। আব্দুল খান ও মফিজউদ্দিন সেখানে গেল। তফাজ্জলের বাবা আমাদের বাড়ি ছিলেন। সন্ধ্যায় আব্দুল খানের সঙ্গে। হাইলজোরে ওয়াসিরুদ্দিনের বাড়িতে গেলাম। মামলার ব্যাপারে কথা বললাম। রাতের খাবার খেলাম এবং গভীর রাতে আব্দুল খান ও রজব। আলির সাথে বাড়ি ফিরলাম। আবহাওয়া স্বাভাবিক ২০ ডিসেম্বর ১৯৪৯, মঙ্গলবার খুব সকালে উঠলাম। সকালে ওয়ারেস আলি এসে আমাকে জানাল যে তারা সন্ধ্যায় সমবেত হবে। বিকেলে আব্দুল খানের সঙ্গে দেখা করলাম। দুপুরে বালাকুনার জামাত আলি ও করিম আমার সঙ্গে দেখা করল। হােসেন মৃধা দুপুরে আমাদের সঙ্গে খেল। সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে দরদরিয়ার সমস্ত লােক আমার সঙ্গে দেখা করল। তারা ডিএফও-র কাছে পেশ করার জন্যে একটা পিটিশন তৈরি করে সেটাতে স্বাক্ষর করেছে। হােসেন মৃধা ও রায়েদের একজন আমাদের বাড়িতে থাকল।
৫০
ঘুমাতে গেলাম মধ্যরাতে। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ভীষণ শীত। ২১ ডিসেম্বর ১৯৪৯, বুধবার খুব সকালে উঠলাম। দুপুরে হােসেন মৃধা ও মােসলেম উদ্দিন চলে গেল। বিকেলে দিগধা মাদ্রাসার এক সভায় যােগ দিলাম। হাফিজ বেপারি, মফিজউদ্দিন বিএ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যার পর নারায়ণপুর ঘাটে ফিরলাম। আজ সন্ধ্যায় আজিজ মিয়া বাড়ি গেল। ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ২২ ডিসেম্বর ১৯৪৯, বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের সময় ঘুম ভাঙ্গল। সারাদিন ঘাটে প্রায় বসেই কাটল। আজ সন্ধ্যায় আজিজ মিয়া বাড়ি থেকে ফিরল। আবদুল হালিম খান তাকে বলেছে যে, তিনি আগামীকাল আসবেন। শুতে গেলাম ৯টায়। আবাহাওয়া ও স্বাভাবিক, অত্যধিক ঠান্ডা। ২৩ ডিসেম্বর ১৯৪৯, শুক্রবার খুব সকালে উঠেছি। বিকেল ৫টার দিকে অন্য ৩জন লােকের সঙ্গে আবদুল হালিম খান এলেন। তাদের চা দেওয়া হল। আমরা সবাই রাতে দুলুর বাড়িতে গেলাম এবং রাতে সেখানেই থাকলাম। ঘুমাতে গেলাম ১১টার দিকে। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল।
২৪ ডিসেম্বর ১৯৪৯, শনিবার সকালে উঠেছি। নিগুয়ারির লােকজনের সঙ্গে নাস্তা করলাম। হালিম খানের কাছে সামাদ খান। ও সাত্তার খানের পুরাে ঘটনা বর্ণনা করলাম। তার নৌকা এলে আমি তাকে এক নৌকা বােঝাই খুঁটি দেবার প্রতিশ্রুতি দিলাম। সকাল ১০টার দিকে নারায়ণপুরে ফিরে গেলাম। সাড়ে ১০টার দিকে সিও বই নবায়নের আবেদনসহ আজিজ মিয়া ও ফজলুকে চাঁদপুরের ফরেস্টারের কাছে পাঠালাম। তারা দরখাস্তটি ফরেস্টারের কাছে কাপাসিয়ায় হস্তান্তর করেছে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বেলায়েত আলি মাস্টার সাহেবের বাড়িতে দুপুরের খাবার খেলাম। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফিরলাম। আবদুল হালিম খান আজ বিকেলে বাড়ি রওনা হয়েছেন। বেলা ১টার দিকে জালালউদ্দিন ফকির, পন্ডিতের বাপ, ফটিক ভাইসাহেব ঘাটে এসেছিলেন এবং তারপর চলে গেলেন। রাত ৯টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক, কুয়ান্ন সকাল। ২৫ ডিসেম্বর ১৯৪৯, রবিবার খুব সকালে উঠেছি। সকাল ১০টার দিকে গােসিঙ্গা মাদ্রাসার সভায় গেলাম। আমি সভাপতিত্ব করলাম। দুপুর ২টা নাগাদ সভার কাজ শেষ হল। পরবর্তী সভা ২-১-৫০ তারিখে। বাড়িতে গােসল ও ভাত খেয়ে বিকেল ৪টার দিকে নারায়ণপুর ঘাটে গেলাম। বিকেলে নারায়ণপুর প্রাইমারি স্কুল প্রাঙ্গণে একটা সভা হল। এখানে এ বছর থেকে একটি এম. ই. স্কুল চালু করার প্রয়ােজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে আমি বক্তৃতা করলাম। এ উদ্দেশ্যে একটা কমিটি গঠিত হল। মাগরিবের নামাজের সময় সভা শেষ হল। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
২৬ ডিসেম্বর ১৯৪৯, সােমবার ঢাকার পথে। খুব সকালে উঠেছি। ৬টার দিকে রাজেন্দ্রপুর হয়ে ঢাকা রওনা হলাম। বাহাদুরাবাদ ট্রেন ধরলাম। উমেশ বর্মণের ভাইও সঙ্গে ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা পৌছলাম । হলে এসে গােসল করে বেলা ১টায় ডিআইজি অফিসে গেলাম। ৭০/- টাকা নিলাম। আবুল হায়াত চৌধুরীর সঙ্গে তার সিদ্ধেশ্বরীর বাড়িতে দেখা করলাম। চা খেলাম। এস,আই, হাফিজউদ্দিন সেখানে ছিল। সাড়ে ৪টায় উঠলাম। ডেপুটি এস.পি.-র খোঁজ নিলাম, কিন্তু পেলাম না। সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সদরঘাটে কেনাকাটা করলাম। মর্ডান রেস্টুরেন্টে ভাত খেলাম। ইতােমধ্যে মান্নান খলিফার সঙ্গে আলাপ হল। সেখানে এ. হামিদ এমএসসি ও অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। হযরত আলি সাহেবও যােগ দিয়েছিলেন। ডাঃ করিম ও কামরুদ্দিন সাহেবের খোঁজ করলাম, কিন্তু তারা বাইরে ছিলেন। রাত সাড়ে ৯টায় হলে ফিরলাম।। শুতে গেলাম সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। ২৭ ডিসেম্বর ১৯৪৯, মঙ্গলবার উঠেছি ৭টায়। সকাল ১০টায় ফকির এ. মান্নানের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। তাকে ফরেস্টারের মামলার ঘটনা এবং এর ফলে আমার ওপর যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে তা সবিস্তারে জানালাম। আমাকে একটা ফরেষ্ট ম্যানুয়াল দেবার জন্যে তাকে অনুরােধ করলাম। সােয়া ১১টায় সেখান থেকে বের হলাম। বেলা পৌনে ১২টায় ডিএসপি জনাব সােবহানের সাথে তার বাসায় দেখা করলাম। ১টা পর্যন্ত কথা বললাম। তিনি ২৯-১২-৪৯ তারিখে আমাদের এলাকায় যাবার কর্মসূচি তৈরি করলেন। তােয়াহা সাহেবের সন্ধানে তার বাড়িতে গেলাম। কিন্তু তিনি বাসায় নেই। হাসনাতের সঙ্গে দেখা হল। বেলা আড়াইটায় কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায়। গেলাম। ডাঃ করিমের সাথে দুপুরের খাবার খেলাম। বিকেল ৫টায় জালালউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করলাম এবং তাকে ডিএসপি-র কর্মসূচি জানালাম। সন্ধ্যা ৭টায় কামরুদ্দিন সাহেবের দেয়া নৈশভােজে যােগ দিলাম। শামসুদ্দিন, বাগুই, করিম ও আরমানিটোলা স্কুলের আর একজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। ৯টায় হলে ফিরলাম। ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
২৮ ডিসেম্বর ১৯৪৯, বুধবার বাড়ির পথে। সকাল ৬টায় উঠলাম। ৮টা ২০ মিনিটের ট্রেনে বাড়ি রওনা হলাম। শ্রীপুরে আহমেদের সঙ্গে ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের নির্বাচন নিয়ে কথা হল । ওসি-কে দেবার জন্যে তাকে ডিএসপি-র একটা চিঠি হস্তান্তর করলাম। ১টার দিকে বাড়ি পৌছলাম। আগামীকাল সকাল ১০টায় আকরামতউল্লাহ সাহেবকে আমাদের বাড়িতে। আসার কথা জানিয়ে একটা চিঠি লিখে আফসু ও দফতুকে দিয়ে পাঠালাম। হাফিজ বেপারির কাছে আব্দুল খানকে পাঠানাে হল। সন্ধ্যায় ওয়ারেস আলি ও কাগুর বাপ আমার সঙ্গে দেখা করল। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। আজ (২৮.১২.৪৯) রাত সাড়ে ৮টায় আবদুল আজিজ খানের ছেলে আফতাবউদ্দিন মারা গেল। ২৯ ডিসেম্বর ১৯৪৯, বৃহস্পতিবার খুব সকালে উঠলাম। দুপুরের দিকে আজিজ খানের ছেলে আফতাবউদ্দিনের নামাজে জানাজায় যােগ দিলাম । বেলা ১টার দিকে এ. এইচ. চৌধুরীর সঙ্গে ডিএসপি আমাদের বাড়ি এসে পৌছলেন। খাওয়া-দাওয়ার পর তারা ফরেস্টারের মামলার সাক্ষ্য পরীক্ষা করলেন। ডিএসপি, এ. এইচ. চৌধুরী, আকরামতউল্লাহ সাহেব এবং আইউব আলি মিয়া দুপুরে খেলেন। সাক্ষ্য দেবার জন্য বহু লােক যারা যােগ দিয়েছিল তাদের মধ্যে হাফিজ বেপারিও উপস্থিত ছিল। ওয়ারেস আলির সঙ্গে ডিএসপি ঢাকার উদ্দেশে শ্রীপুর চলে গেলেন, আর এদিকে জনাব এ, এইচ, চৌধুরী রাতের জন্যে আমাদের বাড়িতে থেকে গেলেন। শুতে গেলাম রাত ৯টায় আবহাওয়া ও স্বাভাবিক, শীত অত্যধিক। ৩০ ডিসেম্বর ১৯৪৯, শুক্রবার খুব সকালে উঠলাম। সকাল বেলা আব্দুল খান, রজব আলি ও জব্বার এল । নাস্তার পর এ, এইচ, চৌধুরীর সাথে নারায়ণপুর ঘাটের উদ্দেশে রওনা হলাম এবং সাড়ে ১১টায় সেখানে পৌছলাম। আফসু ও দফতুও সঙ্গে ছিল । জনাব চৌধুরী সীজ হ্যামার চিহ্নিত খুঁটিগুলি দেখলেন এবং দুপুর ১টায় শ্রীপুর হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলেন। দেড়টার দিকে ডিস্ট্রিক্ট বোের্ড রােডে ওভারসিয়ার জনাব জব্বারের সঙ্গে দেখা হল। বিকেলে এম. ই. স্কুল শুরু করার ব্যাপারে আলােচনার জন্যে বাজারে ডাকা সভায় গেলাম। সভায় সভাপতিত্ব করলেন শাহাদ আলি সরকার। জনাব আরিফ উপস্থিত ছিলেন। নারায়ণপুরে এম. ই. স্কুলের প্রয়ােজনীয়তা ও সম্ভাবনা তুলে ধরে আমিও বক্তৃতা করলাম। পরবর্তী সভা বসবে ১-১-৫০। শুতে গেলাম ১০টায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
৩১ ডিসেম্বর ১৯৪৯, শনিবার খুব সকালে উঠেছি। সারাদিন ঘাটে। নিগুয়ারি ও নরসিংদীর লােকজন খুঁটিগুলি নদীতে টেনে নামাল। চাঁদপুরের ফরেস্টার প্রতিশ্রুতি অনুয়াযী পূর্বদিনের মতাে আজকেও ঘাটে এল না, আজ মেয়াদের শেষ দিন। শুতে গেলাম ৯টায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
(১) এ বছরের পহেলা বৈশাখ থেকে বর্ষাকালের ৩১-১০-৪৯ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন অব্যাহত বৃষ্টির পর আকস্মিকভাবে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় শাকশজী, মরিচ বিশেষ করে শীতের সব ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এবছর আগেভাগে শীতের প্রকোপ শুরু হয়ে যায় এবং গত বছরের তুলনায় শীতের দাপট অনেক বেশি। অসুখ-বিশুখ বিশেষ করে জ্বরের প্রকোপ বেশি ছিল। গত বছরের তুলনায় এবার চর্ম রােগ ব্যাপক হয়েছে। (৪) দু’মাস আগের তুলনায় এবছরের শেষে বিশেষ করে আমাদের।
এলাকার লােকজনের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক সহজতর হয়েছে। গত এক পক্ষকাল ধানের দাম ছিল গড়ে ১০/- থেকে ৮/- টাকা এবং চালের দাম ছিল ১৭/- থেকে ১৯/-টাকা। গত পক্ষে পাটের সর্বনিম্ন দাম ছিল প্রতিমণ ১৪/- টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৮/- থেকে ২৯/- টাকা। তবে প্রকৃত চাষিদের হাতে কোন পাট নেই। টাকার মূল্যমান অনেক বেড়ে গিয়েছে, এর ফলে প্রধানত প্রভাবিত হয়েছে সমাজের একটি ক্ষুদ্র অংশ ভূমি মালিক মধ্যবিত্ত শ্রেণী । জিনিসপত্রের দাম কম থাকায় শ্রমিক শ্রেণী উপকৃত হয়েছে। কাপড়ের দাম অনেক কমে গেছে। এবছর বিশেষ করে আমাদের অঞ্চলে মাছ খুব অপ্রতুল। | (৬) খুঁটি ও কাঠের বাজার খুব মন্দা, যা এ মওসুমে সাধারণত হয় না।
৫৬
১ জানুয়ারি ১৯৫০, রবিবার খুব সকালে উঠেছি। ইংরেজি কালপঞ্জি অনুযায়ী আজ নববর্ষ। নারায়ণপুরে এম, ই. স্কুল শুরু করার ব্যাপারে মৌলভি শাহাদ আলি সরকারের সভাপতিত্বে একটি সভায় যােগ দিলাম। ১৫জন সদস্যের কার্যকরি কমিটি গঠিত হল । চাঁদা প্রদানকারীদের একটি তালিকা তৈরি হল। ১০-১-৫০ তারিখ ক্লাস ফাইভে ভর্তির জন্য সময় নির্ধারিত হল। মাগরিবের সময় সভার কাজ শেষ হল। সন্ধ্যার পর মােমিনাসের লােক ও বেপারিদের মধ্যে এক বেপারির লাকড়ি চুরি নিয়ে ঝগড়া শুরু হল। এই ঝগড়া দুই পক্ষের মধ্যে আপােস নিস্পত্তির মাধ্যমে মিটে গেল। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
২ জানুয়ারি ১৯৫০, সােমবার সূর্য ওঠার আগেই উঠে পড়েছি। সি.ও, বই পুনঃনবায়নকল্পে আজিজ মিয়া ও আইনউদ্দিন মিয়াকে রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ অফিসে পাঠালাম। কিন্তু রেঞ্জার বইটির পুনঃনবায়নের বদলে ওদের কাছ থেকে বইটি নিয়ে নিল। সকাল ১১টায় গােসিঙ্গা জুনিয়র মাদ্রাসার সভায় যােগ দিলাম। সভা শুরু হল। বেলা ১২টায়। প্রধানত দানের মাধ্যমে প্রাপ্ত চাদার তালিকা তৈরি করা হল এবং বাজেটও তৈরি হল। ২টা ৩০ মিনিটে সভার কাজ শেষ হল। বিকেল ৪টার দিকে নারায়ণপুরে ফিরলাম। গােসল এবং দুপুরে খাওয়া হল। হুসেন মাস্টারের অনুরােধে সন্ধ্যায় বারেক মােল্লার সঙ্গে কাপাসিয়া হাই স্কুল কর্তৃপক্ষ ম্যাট্রিক পরীক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত যে ফি ছাত্রদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে সেই বিষয়ে কথা বললাম। বিকেলে এ. হাকিম আমার সঙ্গে দেখা করল। অনুমতি নেয়া হয়েছে। আনুমানিক ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া স্বাভাবিক। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। নাতিশীতােষ্ণ পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। ৩ জানুয়ারি ১৯৫০, মঙ্গলবার উঠেছি খুব সকালে। সাড়ে ১০টার দিকে রাজেন্দ্রপুর গেলাম। রেঞ্জার বা ডিএফও, কেউই উপস্থিত ছিলেন না। ফরেস্টার হযরত আলি এবং সিদ্দিক কথা বলল না। তখনি ফিরে এলাম। ১২টার দিকে কাপাসিয়া স্কুলে সহকারী হেড মাস্টার ললিত বাবু এবং জান। মাহমুদ মােল্লার সঙ্গে কথা বললাম। জান মাহমুদ আমাকে কাপাসিয়া বাজারে চা দিয়ে আপ্যায়িত করল। ২টার দিকে নারায়ণপুর ফিরলাম। খাবার পর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। সন্ধ্যায় কফিলউদ্দিন ও গােসিঙ্গা। বন অফিসে আসা একটি ছেলের সঙ্গে বাড়ি পৌছলাম। রাতে আবদুল হাকিম যােগ দিলেন এবং সবাই আমাদের বাড়িতে থাকলেন। ১১টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া স্বাভাবিক। ৪ জানুয়ারি ১৯৫০, বুধবার খুব সকালে উঠলাম। নাস্তা খেয়ে কফিলউদ্দিন চলে গেল। দুপুরে ইসব আলি মামা ও হাকিম মামা আমাদের সঙ্গে আমরাইদ ও বরহর বনের জমা হিসাব নিয়ে বসলেন। এক বসায় রাত ৯টায় দুটো বনের শেয়ার ঠিক হল ৯ আনা ও ৭ আনা। রাতের খাবার শেষে তারা চলে গেল।
রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া স্বাভাবিক। ৫ জানুয়ারি ১৯৫০, বৃহস্পতিবার উঠলাম খুব সকালে। সকাল ১০টায় শ্রীপুর গেলাম। সেখানে কালু মােড়লের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে ফরেস্টারের মামলা আপােসের অনুরােধ জানালেন। সামাদ খান আমার সঙ্গে দেখা করল। সালেহ মাহমুদ সাহেব অনুপস্থিত ছিল। সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ি ফিরলাম। ফেরার পথে ওয়ারেস আলি আমার সঙ্গে দেখা করল। পুরাে বিকেল বাড়িতেই কাটালাম। রাত ১০টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। শীতের তীব্রতা কম। ৬ জানুয়ারি ১৯৫০, শুক্রবার ঢাকার পথে। খুব সকালে উঠলাম। সকাল ১০টার দিকে নারায়ণপুর ঘাটে পৌছলাম । আজিজ মিয়াকে আফসু ও দফতুর ভর্তি এবং থাকবার বন্দোবস্ত করতে বললাম। দুপুর ১২টার দিকে বাড়ি ফিরলাম। আমি ফিরে আসার পর রায়েদ মইসন বাড়ির আসু ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে তার সীমানা বিরােধের ব্যাপারে আমার সঙ্গে দেখা করল। আমি তাকে ডিএফও এবং কনজার্ভেটরের সঙ্গে কথা বলতে বললাম। ৩টা ৫৫ মিনিটের ট্রেনে ঢাকা রওনা হলাম। শ্রীপুর পর্যন্ত সঙ্গে টুকু এল। ট্রেনের কামরায় মি. ওয়াজিউল্লাহ ছিলেন। তিনি ঢাকা পর্যন্ত এলেন। সন্ধ্যায় হলে পৌছুলাম। সাড়ে ১০টার দিকে শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ৭ জানুয়ারি ১৯৫০, শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় উঠলাম।
৬০
দুপুর ১২টায় ক্লাস করলাম। ২টায় তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা। বন এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার অসুবিধার কথা তাকে বললাম। বিকেল ৫টায় ডি.আই.জি, অফিসে গেলাম, কিন্তু সেখানে কাউকে পাওয়া গেল না। মি. সােবহানের খোঁজে পুলিশ অফিসে গেলাম, কিন্তু ইতােমধ্যে তিনি বেরিয়ে গেছেন। এস,এ, রহিম, সাদির প্রমুখদের সঙ্গে দেখা হল। ফজলুর নিয়ােগের বন্দোবস্ত করতে কুদরত আলিকে অনুরােধ জানালাম। সন্ধ্যাবেলায় মিস্টার সােবহানের বাড়ি গেলাম, কিন্তু তাকে পাওয়া গেল না। আসকরের সঙ্গে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত হাসনাতের বাড়িতে কথা বললাম। সাড়ে ৭টায় হলে ফিরলাম। রাত ১১টায় বিছানায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ৮ জানুয়ারি ১৯৫০, রবিবার সকাল সাড়ে ৬টায় উঠলাম। ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৩টা ১০ মিনিট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। বিকেল ৫টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। হায়দার সাহেব এবং একজন রেঞ্জার মালেক তার কাছে এল। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত কথা বলল। তারা হাফিজুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে চাইল, কিন্তু হাফিজুদ্দিনের দোকান বন্ধ ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে আটটায় হলে ফিরলাম। রাত ১১টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। ৯ জানুয়ারি ১৯৫০, সােমবার উঠেছি সকাল ৭টায়। দুপুর ১টায় ক্লাস করলাম । সাড়ে ৩টায় গেলাম ডি.আই.জি, অফিসে। সেখান থেকে বিকেল ৪টায় গেলাম ডি,এস,পি, অফিসে। আমার মজুত খুঁটির সাম্প্রতিক অবস্থা সম্পর্কে তাকে অবহিত করলাম। ৫টায় ঐ অফিস থেকে বের হলাম। বিকেলে এ, এইচ. চৌধুরীর বাসায় যাবার পথে তার সঙ্গেই দেখা হল। কথাবার্তা শেষে সন্ধ্যা ৬টায় হলে ফিরলাম।
রাত ১০টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। পুনশ্চঃ এর আগে সকাল ৯টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করে তাকে সব কথা বললাম। সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তার সঙ্গে আলােচনা হল। এরপর হাফিজউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে আমাকে একটা ফরেস্ট ম্যানুয়াল ও এ্যাক্ট দেবার জন্য তাকে অনুরােধ করলাম। সে দেবে। বলে কথা দিল। ১০ জানুয়ারি ১৯৫০, মঙ্গলবার উঠেছি সকাল ৭টায়। সি.ও, বই পুনঃনবায়নের জন্য ডি.এফ.ও.র কাছে একটি দরখাস্ত লিখে সেটা সাড়ে ১০টায় রমনা পােস্ট অফিস থেকে ডাক রেজিষ্ট্রি যােগে পােস্ট করলাম। এছাড়াও আরাে দুটি দরখাস্ত পােস্ট করলাম। একটি ডি.এফ.ও. কে প্রধান ডাকঘর থেকে পােস্টাল রেজিস্ট্রেশন যােগে, অন্যটি বাবু বাজার পােস্ট অফিস থেকে কনজারভেটরকে। কোর্ট প্রাঙ্গণে হাফিজ বেপারির সঙ্গে দেখা। বিকেল সাড়ে ৪টায় হাফিজ বেপারির সাথে তার বাড়িতে গেলাম। ড. রশীদ-এর সঙ্গে কথা বলে সন্ধ্যা। ৬টায় হলে ফিরলাম। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। দিনের দুই চতুর্থাংশ সময় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে রইল।
১১ জানুয়ারি ১৯৫০, বুধবার সকাল ৭টায় উঠেছি। ১২টায় ক্লাসে যােগ দিলাম। বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটল। বিকেল ৪টার দিকে তােয়াহা সাহেবের কাছে গেলাম, কিন্তু তিনি ছিলেন না। হাসনাতের ওখানে অলি আহাদের সঙ্গে দেখা। সে আমাকে এস, এম, হলে নিয়ে গেল, সেখানে বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তাদের হয়ে আমি হল নির্বাচনের মনােনয়নপত্রগুলাে নিরীক্ষা করলাম। হামিদ চৌধুরীর প্রার্থিতার ওপর মত বিরােধ প্রভােস্টকে জানিয়ে দেয়া হল। সাড়ে ৮ টায়। ফিরে এলাম।
রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। ১২ জানুয়ারি ১৯৫০, বৃহস্পতিবার উঠেছি সকাল ৭টায়। বেলা ১১টা ও দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। বিকেল ৪টায় তােয়াহা সাহেবের বাড়ি গেলাম । কিন্তু তাকে পেলাম না। এর আগে বেলা ১১টার দিকে আমার কাছে সামসু এসেছিল সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে তার ভর্তির জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে সে ২টা নাগাদ চলে গেল। বেলা ১টার দিকে মহসিন আমার সঙ্গে হলে দেখা করল। সাড়ে ৪টায় জিন্দাবাহার গেলাম । কিন্তু সেখানে কাউকে পেলাম না। তারপর হাফিজউদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে মাজহার আলির কাছ থেকে শুক্রবার কিংবা শনিবার ফরেষ্ট ম্যানুয়াল নিতে বললেন। এরপর হায়দার সাহেবের সঙ্গে তার দোকানে দেখা করলাম। বিকেল ৫টায় ডাক্তার এস, বকশ ও শফিউদ্দিনের সঙ্গে ভেটেনারি ডিপার্টমেন্টে দেখা করলাম। সােয়া ৬টা পর্যন্ত কথাবার্তা হল । সাড়ে ৬টায় হলে ফিরে এলাম। রাত সাড়ে ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১৩ জানুয়ারি ১৯৫০, শুক্রবার উঠেছি সকাল সাড়ে ৬টায়। সকাল ৯টায় হাসানের বাসায় গেলাম। সামসু এবং শাহাবুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে সেন্ট গ্রেগরিতে গেলাম সামসুর ভর্তির ব্যাপারে। সােয়া ১১টা পর্যন্ত মিস্টার রায় চৌধুরীর সঙ্গে কথা বললাম। ১১টা ২০ মিনিটে মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকে গেলাম এবং তােয়াহা সাহেবের ৩৫ টাকার চেকটি ক্যাশ করলাম। পৌনে ১২টায় কনজারভেটরের অফিসে গেলাম, কিন্তু সেখানে কাউকেই পেলাম না। দুপুর ১২টায় হলে ফিরে এলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে এফ, এইচ. এম. হল আর জগন্নাথ কলেজের মধ্যে ক্রিকেট ফাইনাল খেলা দেখলাম। ৬২-১৮৭ রানের ব্যাবধানে এফ, এইচ, এম, হল খেলায় হেরে গেল । জগন্নাথ কলেজ গেল বছরের ফাইনালের শীল্ড। জিতে নিল । ড. ওসমান গণি পুরস্কার বিতরণ করলেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে পােস্তা গেলাম । কিন্তু সেখানে। কাউকে না পাওয়ার কারণে কিছুই করা গেল না। নওয়াবপুর থেকে নারকেল তেল কিনে সাড়ে ৭টায় হলে ফিরে এলাম। রাত সাড়ে ৯টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১৪ জানুয়ারি ১৯৫০, শনিবার সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল ৮টায় বাবর আলি সাহেব হল ইউনিয়ন নির্বাচনের বিষয়ে কথা বললেন। ১০টায় তােয়াহা সাহেব এলেন, ফলে জিঞ্জিরায় যাওয়া হল না। বিকেল ৩টায় কনজারভেটরের অফিসে গেলাম। সেখানে মাজহার আলি, আবুল হুসেনের সঙ্গে দেখা হল। রেঞ্জার মানিকও সেখানে ছিলেন। বিকেল। ২টা পর্যন্ত কথা বলে বিদায় নিলাম। সাড়ে ৪টায় জিন্দাবাহার গেলাম। সন্ধ্যা ৬টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। অলি আহাদও সেখানে এসেছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হলে ফিরলাম। রাত ৯টায় শুতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১৫ জানুয়ারি ১৯৫০, রবিবার সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। ১২টায় ক্লাস করলাম। এন.ডব্লিউ.এফ.জি. (নর্থ ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স)এর গভর্নর সাহিবজাদা খুরশিদ-এর মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় অর্ধ দিবস ছুটি হয়ে গেল। বিকেল ৩টায় একটি সভার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে এস, এম, হল ছাত্রদের দুই দলের মধ্যে হল নির্বাচন নিয়ে সংঘর্ষ হল। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে। নারায়ণপুরের জামালউদ্দিন মাস্টার আমাকে আজিম মিয়ার একটি চিঠি দিল।
বিকেল ৫টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম এবং আমার অসুবিধাগুলাে | নিয়ে কথা বললাম। কিছু সময় পরে তােয়াহা সাহেবও আমাদের সাথে যােগ দিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৮টায় হলে ফিরে এলাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১৬ জানুয়ারি ১৯৫০, সােমবার উঠেছি সকাল সাড়ে ৬টায় । স্যার সলিমুল্লাহ দিবসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অর্ধ দিবস ছুটি। বেলা ১১টায় টিউটোরিয়াল ক্লাস করলাম না। সাড়ে ১২টায় আবুল হুসেনের কাছে গেলাম, কিন্তু তাকে পেলাম না। দুপুর ১টায় বার লাইব্রেরিতে ফকির এ. মান্নানের সঙ্গে দেখা করলাম এবং একই। সঙ্গে তার বাড়িতে গেলাম। বিকেল সােয়া ৪টা পর্যন্ত ভাওয়াল গড় (বন) এর সমস্যা নিয়ে তার সাথে কথাবার্তা হল। মৌলভি আফসার উদ্দিন ও আবদুল গফুর পন্ডিত ওখানে উপস্থিত ছিলেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় হলে ফিরে এলাম। সন্ধ্যাবেলা ডি.এস.পি, মিস্টার সােবহানের সাথে তার বাড়িতে দেখা করলাম। আবুল হুসেনকে খোঁজ করলাম, কিন্তু পেলাম না। মমতাজ সেখানে ছিল। আজ দুপুরে ফজলু এসেছে। বদিউরের সঙ্গে তাকে তার ভাইয়ের কাছে পাঠালাম। সন্ধ্যায় আহমদকে সঙ্গে নিয়ে সালেহ মােহাম্মদ মােড়ল তার নির্বাচন বিষয়ে আমার সঙ্গে হলে দেখা করল। ঘুমাতে গেলাম ১০টায়। আবহাওয়া ও রাতের শেষভাগ থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশা। রাতের এক চতুর্থাংশ সময় ফোটায় ফোটায় বৃষ্টি পড়েছিল। রাতে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। ১৭ জানুয়ারি ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। দুপুর ১২টায় এ. এইচ. চৌধুরীর সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় গেলাম, কিন্তু তিনি অফিসে। বেলা ১টায় তার সঙ্গে তার অফিসে দেখা করলাম এবং তাকে সাথে নিয়ে ডি,এস,পি, মিস্টার সােবহানের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমার ব্যাপারে কথা বলার জন্য মিস্টার চৌধুরীকে ডিওএফ-র কাছে পাঠালেন। মিস্টার চৌধুরী ডি.এফও,র কাছ থেকে কোনাে নিশ্চিত আশ্বাস ছাড়াই ফিরে এলেন। বিকেল ৪টায় জালালের সঙ্গে তার অফিসে দেখা করলাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় হলে ফিরে এলাম। ক্লার্ক পদে ফজলুর নিয়ােগের জন্য বিকেল সাড়ে ৫টায় বদিউরের সাথে তার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি রাজি হলেন। ফজলু আমার সঙ্গে এল এবং হলে রাত কাটাল। রাত ৮টায় হল সদস্যদের এক সভায় যােগ দিলাম। নির্বাচনের জন্য প্রার্থী মনােনীত করা হল। এরপর বাবর আলির নেতৃত্বাধীন ময়মনসিংহ গােষ্ঠীর সাথে সমঝােতায় আসার জন্য আমাদের রুমে একটি অনানুষ্ঠানিক জমায়েত হল। ঘুমাতে গেলাম প্রায় রাত ১২টার দিকে। আবহাওয়া ও দিনের এক চতুথাংশ সময় মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। এরপর স্বাভাবিক দিন ও রাত্রি। কম ঠান্ডা। ১৮ জানুয়ারি ১৯৫০, বুধবার উঠেছি সকাল ৭টায়। ৮টায় ফজলু বাড়ির পথে রওনা দিল। সকাল ৯টায় আবুল হুসেনের বাসায় গেলাম। কোনাে সাড়াশব্দ পেলাম না। তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। তারপর ১০টায় জালালউদ্দিনের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম। সােয়া ১০টায় হলে ফিরে এলাম। ১২টায় ক্লাস করলাম। সােয়া ১টায় কোর্টে গেলাম। ডিএসপি মিস্টার সােবহানের সঙ্গে দেখা করলাম। তারপর বার লাইব্রেরিতে গেলাম, সেখানে সর্বজনাব আতাউর রহমান, মানিক মিয়া, শামসুল হুদা, কামরুদ্দিন সাহেব প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। পৌনে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় অফিস থেকে নভেম্বর মাসের বৃত্তির টাকা তুললাম। আমার পুরনাে শিক্ষক মিস্টার শামসুল হুদার সঙ্গে দেখা করলাম। সাড়ে ৪টায় ডি.আই.জির সাথে তার রুমে দেখা করলাম এবং ডি.এফ,ওর কারণে আমার কি অবস্থা হয়েছে তা তাকে বললাম। বিকেল ৫টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কথা বললাম। ডাঃ মান্নানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। রাত ৯টায় ফিরলাম। রাত ১১টায় শয্যায় গেলাম। আবহাওয়া ঃ সকাল ১১টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশা। কম ঠান্ডা। ১৯ জানুয়ারি ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় উঠেছি। বেলা ১১টা ও দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। সকাল সাড়ে ৮টায় ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে জনাব আতাউর রহমান খানের বাসায় গিয়েছিলাম, ফিরেছি সাড়ে ১০টায়। সেখানে শওকত, হজরত আলি, শামসুল হুদা, এম. এ. রহিম প্রমুখরা উপস্থিত ছিল। বিকেল সাড়ে ৪টায় ফিরলাম। রাত ১১টায় শয্যায়। আবহাওয়া স্বাভাবিক। কম ঠান্ডা। ২০ জানুয়ারি ১৯৫০, শুক্রবার শ্রীপুরের পথে।। উঠেছি ভাের সাড়ে ৬টায়। সকাল ৮টা ২০ মিনিটের ট্রেনে আহমদকে নিয়ে শ্রীপুর রওয়ানা হলাম । শ্রীপুরের পথে ট্রেন সাড়ে তিন ঘন্টা লেট ছিল। দুপুর ১টায় শ্রীপুর পৌছলাম। ঢাকা স্টেশনে ডি.এফ.ও, এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হল। তারা মধুপুর বনে যাচ্ছেন। ট্রেন না আসা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে ডি.এফও,র সঙ্গে কথা বললাম। বিকেলে বাজারে সালেহ মােহাম্মদ মােড়ল, কালু মােড়ল, হেড মাস্টার এবং শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করলাম । রাতটা মােড়লদের বাড়িতেই কাটল। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
২১ জানুয়ারি ১৯৫০, শনিবার উঠেছি ভাের সাড়ে ৫টার দিকে। সকালের নাস্তার পর আহমদ, হাকিম ও অন্যান্যদের সাথে বাজারে গেলাম এবং মিছিলের জন্য পােস্টার তৈরি করলাম। দুপুরের খাবার খেয়ে সাড়ে ৩টার দিকে বাজারে এলাম। বাজার এলাকায় প্রচুর মিছিল বের করা হল। মমতাজউদ্দিন মােক্তার সাহেব বাজারে এসেছিলেন। সূর্যাস্তের পর সফি, রঙ্গু, ওয়ারেস আলি, আশরাফ আলি মৌলভী এবং অন্যান্য কয়েকজন সহ বাড়ি এলাম। বাড়ি পৌছলাম রাত প্রায় ১০টায়। আবহাওয়া স্বাভাবিক। দিনের বেলা দখিনা বাতাস বইছিল। ১৮.১.৫০ সকালে দবিরুল ইসলাম নিঃশর্ত মুক্তি লাভ করেছে। এর কিছু আগে আতাউর রহমান এবং একরামও মুক্তি পেয়েছে। ২২ জানুয়ারি ১৯৫০, রবিবার ভােড় সাড়ে ৫টার দিকে উঠেছি। ১২টার দিকে সাইকেলে শ্রীপুর রওয়ানা হলাম। পথে মনিরউদ্দিন ও আসমত আলি মােল্লা আমার সঙ্গে যােগ দিলেন। ৩টার দিকে শ্রীপুর পৌছুলাম। নওয়াব বাহাদুর, ফকির এ. মান্নান, মমতাজউদ্দিন মােক্তার পৌনে তিনটার ট্রেনে এসে পৌছুলেন। নওয়াব বাহাদুরের সভাপতিত্বে সভা শুরু হল বিকেল ৪টায়। সভায় প্রায় দু’হাজার লােক যােগ দিয়েছে। ফকির এ. মান্নান সাহেবের পর আমি মাগরিব পর্যন্ত বললাম। জনগণের দুঃখ-দুর্দশা এবং প্রতিনিধিদের সহানুভূতিহীন আচরণ সম্পর্কে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার ফলে আমি সভায় উপস্থিত জনগণের অনুভূতিকে ধরে রাখলাম। নওয়াব বাহাদুর প্রায় সাড়ে ৭টার দিকে তার সমাপনি বক্তৃতা দিয়ে সভার কাজ শেষ করলেন। সকালের দিকে আব্দুল খানের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করে তাকে ডি.এফ.ওর আশু আগমনের কথা জানালাম। রাত মােড়লের বাড়িতেই কাটালাম। রাত সাড়ে ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক।
২৩ জানুয়ারি ১৯৫০, সােমবার উঠেছি প্রায় সকাল সাড়ে ৬টায়। নাশতা শেষে সকাল ১০টায় বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। গােসিঙ্গা পর্যন্ত একই সার্কেলের পুলিশ ইন্সপেক্টরসহ এলাম। এরপর তিনি কাপাশিয়া থানায় চলে গেলেন। বিকেল ৩টায় জনসভায় যােগ দেয়ার জন্য গােসিঙ্গা গেলাম। একজন মৌলভী সাহেব মাগরিব পর্যন্ত বললেন। আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থা এবং ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের প্রার্থী নির্বাচনে জনগণের কর্তব্য সম্পর্কে মাগরিবের পর থেকে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত আমি বললাম। প্রায় পাঁচ শতাধিক লােকের উপস্থিতিতে বেশ ভাল জমায়েত হয়েছে। ওয়ারেস আলি, মফিজউদ্দিন, মজিদ প্রমুখ সহ বাড়ি ফিরলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। বি দ্র : আজ আফসু, দফতু ও আর একজনের খতনা হল। ২৪ জানুয়ারি ১৯৫০, মঙ্গলবার খুব সকালে উঠেছি। আব্দুল খান, ওয়ারেস আলি, সফিরুদ্দিন দফাদার, মজিদ প্রমুখরা সকালে এসে বেলা ১১টা পর্যন্ত কথা বলল। বেলা ৩টার দিকে নারায়ণপুর বাজারে গেলাম। পথে রশিদ ও অন্যান্যদের। সঙ্গে ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের নির্বাচন নিয়ে কথা হল। আজিজ মিয়াকে কিছু নির্দেশাদি দিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শ্রীপুর রওয়ানা হলাম এবং সেখানে সন্ধ্যায় পৌছলাম । মােড়লদের বাড়িতে রাত কাটালাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। তবে কয়েকদিন আগের চাইতে কিছুটা বেশি শীত। ২৫ জানুয়ারি ১৯৫০, বুধবার সকাল প্রায় সােয়া ৭টায় উঠেছি। উত্তর খামেরের দুলর বাপ রাতে এখানে ছিল। নাস্তার পর শ্রীপুর বাজারে পৌছলাম। ভাওয়াল স্টেটের ইন্সপেক্টর আমার সঙ্গে ধনাই বেপারির দোকানে বসল। হাকিম মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে সাইকেল চালিয়ে বরমির দিকে রওয়ানা হলাম। পথে রায়েদের শরাফতের সঙ্গে দেখা, সে বন বিভাগের সঙ্গে তার সীমানা নিয়ে কথা বলল। বরমিতে কাওরাইদ ইউনিয়ন বাের্ডের প্রেসিডেন্ট বােরহান, আবদুল হামিদ ভূঁইয়া এবং অন্যান্যদের সঙ্গে দেখা হল। পরে বন বিভাগের কর্মীদের মাধ্যমে হয়রানির সম্মুখীন হওয়ার বিষয়ে তাদের সাথে কথা বললাম। হুসেন আলি খান ও জামালউদ্দিন খানের সঙ্গে দেখা হল। জব্বার মিয়া ও হাকিম মিয়ার সাথে সূর্যাস্তের সময় শ্রীপুরে ফিরে এলাম। ফকির আব্দুল মান্নানের বরমিতে। আসার কথা ছিল, কিন্তু তিনি আসেননি। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। তীব্র শীত, শীতকালের শেষের আভাস।
২৬ জানুয়ারি ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে উঠেছি। দুপুর ২টায় হাকিম মিয়াকে সঙ্গে করে সাইকেলে চেপে রওয়ানা হলাম। কালু মােড়ল সহ অন্যান্য কর্মীরা ট্রাকে করে চলে গেল। নির্বাচন বিষয়ে বাজারে লােকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বললাম। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীপুরে ফিরে এলাম। রাতটা ওখানেই কাটালাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ২৭ জানুয়ারি ১৯৫০, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উঠেছি। দুপুর ২টায় হাকিম মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে সাইকেলে চেপে নারায়ণপুর বাজারের উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। গােসিঙ্গায় আবদুল আজিজের বাড়িতে থেমে তার সঙ্গে ভােটের অবস্থা নিয়ে কথা বললাম। বিকেল প্রায় ৪টায় নারায়ণপুর বাজারে পৌঁছলাম। উত্তর আমেরের মফিজ সন্ধ্যাবেলা আমার সঙ্গে দেখা করে মরিয়মের বিয়ের ব্যাপারে প্রস্তাব দিল । আইজুদ্দিন মিয়া, জামালউদ্দিন মাস্টার প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। হাকিম মিয়া ও রুস্তমকে সঙ্গে নিয়ে বুধাই বেপারির বাড়িতে রাত্রি যাপন করলাম। আবহাওয়া : অপরাহ্ন থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠল। রাতে মনে হল বৃষ্টি নামবে। কিন্তু ভােরের সাথে সব পরিষ্কার হয়ে গেল। ২৮ জানুয়ারি ১৯৫০, শনিবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে উঠেছি।
আজ ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের নির্বাচন। সকাল সাড়ে ৯টায় হাকিম মিয়াসহ গােসিঙ্গা নির্বাচনী কেন্দ্রে গেলাম। বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে ভােট শেষ হয়ে গেল। সূর্যাস্তের সময় শ্রীপুরে এলাম । এর আগে আব্দুল খান, রজব আলি এবং পরে ওয়ারেস আলি বন কর্মচারিদের ব্যাপারে আইয়ুব আলির তৎপরতা বিষয়ে আমার সাথে কথা বলল। আমি ওয়ারেস আলিকে হাফিজ বেপারি ও সাহেব আলির সঙ্গে যােগাযােগ করার পরামর্শ দিলাম। মােড়লদের বাড়িতে রাত কাটালাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। সকালে তীব্র শীত অনুভূত হল। ২৯ জানুয়ারি ১৯৫০, রবিবার সকাল ৭টায় উঠেছি। আহমদ ও হাকিম মিয়াকে সাথে নিয়ে উত্তর দিকের বাড়িতে বাড়িতে ভােটের প্রচারে বেরিয়ে পড়লাম। হাজি আবদুল্লাহ তার বাড়ি থেকে আমাদের সাথে যােগ দিল এবং গােনাঘাট নদী ও রেলসেতু পর্যন্ত গেলাম। রাত সাড়ে ১০টার দিকে শ্রীপুর ফিরে এলাম । রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া ও বিকেল থেকে আকাশে মেঘ জমছিল। রাত প্রায় ১০টার দিকে সব পরিষ্কার হয়ে গেল। ৩০ জানুয়ারি ১৯৫০, সােমবার সূর্যোদয়ের সাথে উঠেছি। হাকিম মিয়া ও আহমদকে সঙ্গে নিয়ে বিকেলে সাতখামাইর বাজারে গেলাম। এ অঞ্চলের লােকজনদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করলাম। আসমত আকন সেখানে ছিল। রাত প্রায় ৮টার দিকে মােড়লের বাড়িতে ফিরে এলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ৩১ জানুয়ারি ১৯৫০, মঙ্গলবার ভাের সাড়ে ৬টার দিকে উঠেছি।
ডিস্ট্রিক বাের্ডের নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ভােট দেয়ার দিন। সকাল পৌনে ৯টায় হাফিজ মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে বরমিতে পৌছলাম। নির্বাচন শুরু হল সকাল ৯টায়। ভােট শেষ হল বিকেল ৫টায়। বােরহান, মান্নান প্রমুখরা যথেষ্ট সাহায্য সহযােগিতা করল। সন্ধ্যা ৭টায় শ্রীপুর বাজারে ফিরে এলাম। আমরা ফিরতেই ইয়াদ আলি ডাক্তার ও মমতাজ মােক্তারকে শ্রীপুরে পাওয়া গেল। খবরে জানা গেল শ্রীপুর থানার সমস্ত ভােট কেন্দ্রে সালেহ মােহাম্মদ মােড়লের পক্ষে ভােট পড়েছে। মােড়ল বাড়িতেই রাত কাটলাম। বরহরের হাবিব আমাদের সঙ্গে থেকে গেল। আবহাওয়া ও রাতের অর্ধেক এবং দিনের বেলাটা স্বাভাবিক, বাকি রাত ঘন মেঘে ছাওয়া। (১) ২৮. ১. ৫০ ও ৩১. ১. ৫০ তারিখে ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের নির্বাচন হল। এর আগে হয়েছিল ১৯৪১ সালে। (২) ধানের মণ প্রতি গড়পড়তা দাম ৮/৯ টাকা। (৩) মাসের শুরু থেকেই কেরােসিনকে নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করা হয়েছিল। (৪) জ্বালানি কাঠের চাহিদা অসম্ভব বেড়েছে, কয়লার অভাবে অবশ্য প্রয়ােজনীয় সেবার ক্ষেত্রে যেমন রেল যােগাযােগ।
১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, বুধবার উঠেছি সকাল সাড়ে ৬টার দিকে। সকাল ১০টার ট্রেনের জন্য শ্রীপুর স্টেশনে গেলাম। এই ট্রেনে সালেহ আহমদ সাহেব কালিয়াকৈর থেকে ফিরলেন। অবস্থা অনুকূল। সালেহ আহমেদ মােড়লের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেলাম । খাসি জবাই করা হয়েছিল । বিকেল ৪টার ট্রেনে সালেহ আহমেদ সাহেব ঢাকা চলে গেলেন। আমি শেষ বিকেলে বাড়ি ফিরলাম। ওরারেস আলি সন্ধ্যাবেলা আমার কাছে এল। সে ফরেস্টারের ব্যাপারসহ আইয়ুব আলি মিয়ার কার্যকলাপ সম্পর্কে কথা বলল এবং আমার সঙ্গে রাতের খাবার খেল। এরপর চলে গেল। আবহাওয়া ও রাত থেকে সকাল পর্যন্ত আকাশ গভীরভাবে মেঘাছন্ন। সকাল ৯টা থেকে পরিষ্কার আকাশ। ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ঢাকার পথে। উঠেছি সকাল ৬টার দিকে। সকাল বেলা রজব আলি ও আব্দুল খান এসে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করল । আমি নদী পারের খেতগুলিতে গেলাম। বাড়ি ফেরার পথে মামদির বাড়ি হয়ে এলাম। সেখানে দুপুরে মেহমানির বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ঢাকায় যাবার জন্য দুপুর ১টার দিকে শ্রীপুর রওয়ানা হলাম। পথে শাহাদ আলি সরকারের বাড়িতে থামলাম। তারপর তরগাঁওয়ের বড় বুবু’র সাথে
তার মামাদের বাড়িতে দেখা করলাম। বিকেল ৩টায় শ্রীপুর পৌছলাম। ট্রেন একেবারে ঠিক সময়েই ছাড়ল। হাফিজ বেপারিও একই ট্রেনে ঢাকা যাবার জন্য রওনা হল। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পৌছলাম। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া স্বাভাবিক। রাত মেঘাচ্ছন্ন। মাঝ রাতে ঝড়াে হাওয়া উঠেছিল। এক পশলা বৃষ্টিও হল। আমি বাড়ি থাকার সময় মফিজউদ্দিন নারায়ণপুরের ছিল । ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় উঠেছি। ১২টায় বের হলাম। কামরুদ্দিন সাহেব ও আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে ইসলামপুর রােডে দেখা হল। তাদের সাথে কাদের সরদারের বাড়ি গেলাম। সেখানে এস, এ, রহিম ছিলেন। দুপুর ১টায় কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায় এলাম । সম্ভাব্য নির্বাচনী প্রভাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কথা বললাম। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কারকুন বাড়ি লেনে হাফিজ বেপারির বাড়ি এলাম। সে আমাকে তার লেভি সমস্যার কথা বলল। চা খাবার পর তাকে নিয়ে কফিলউদ্দিন চৌধুরীর বাড়ি গেলাম। কিন্তু তিনি বাইরে ছিলেন। সন্ধ্যা। ৬টার দিকে হাফিজ বেপারিকে ছেড়ে হলে ফিরে এলাম। রাত ৮টায় ফজলু এল। আধ ঘন্টা পর চলে গেল। রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া ও দিন ও রাতে স্বাভাবিক ছিল। ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, শনিবার সকাল পৌনে ৭টায় উঠেছি। সকাল ৮টায় কফিলউদ্দিন চৌধুরী সাহেবের বাড়ি গেলাম । হাফিজ বেপারি ও সাহেব আলি বেপারি এলেন পরে। চৌধুরী সাহেবের সাথে তাদের লেভি সম্পর্কিত বিষয়ে কথা বললাম। হলে ফিরলাম সাড়ে ৯টায়। দুপুর ১২টায় ক্লাস করলাম। দেড়টায় ডি.এফ.ওর অফিসে গেলাম। তিনি একটা মিটিংয়ে ছিলেন। আড়াইটায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কথা বললাম। সদরঘাটে কিছু কেনাকাটা করলাম। সালেহ আহমেদ মােড়ল সেখানে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। সন্ধ্যাবেলা হাফিজ বেপারির বাসায় গেলাম। ওদের সঙ্গে রাতের খাবার খেলাম। রাত ৯টায় হলে ফিরে এলাম । হাফিজ বেপারির ওখানে দরদরিয়ার কাগুর বাপ ছিল। রাত দশটায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক । পরিষ্কার আকাশ। তীব্র শীতের কামড়।
৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, রবিবার পৌনে ৭টার দিকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কফিলউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে কথা বললাম। তারপর লেভির নিয়ম ও আইন কানুনগুলাে (বই থেকে) পড়ে নিলাম । ৯টার দিকে হাফিজ বেপারি এল। সাড়ে ১০টায় ফিরে এলাম। দুপুর ১২টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে যােগ দিলাম। বিকেল ৩টায় মােহাম্মদ তােয়াহার ওখানে গেলাম। কিন্তু তাকে পেলাম না। আবুল হুসেনের বাড়ি গেলাম, তিনিও বাইরে। প্রায় আধা ঘন্টা ওয়াসিমুদ্দিনের সাথে কথা বললাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় রায় সাহেব বাজারে হামিদ মােক্তারের বাসায় গেলাম। আবুল হুসেন সেখানে ছিল। নােয়াব আলি ও তার দলবলও ওখানে ছিল। ওরা আমাকে চা-নাশতায় আপ্যায়িত করলেন। নােয়াব আলি ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের নির্বাচনে জিতেছেন। এ. রশিদ ও এম, এ, সামাদ এলেন বিকেলের দিকে। আবুল হুসেন খুব শীগগিরই এস, পারে অর্ডার আমাকে দেবেন বলে কথা দিলেন। সন্ধ্যা ৬টায় হলে ফিরলাম । আবহাওয়া স্বাভাবিক। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, সােমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উঠেছি। সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পড়াশােনা করলাম। দুপুর ১টা ও ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম।
সাড়ে ৩টার দিকে তােয়াহা সাহেবের ওখানে গেলাম। রফিক, হাসনাত প্রমুখের সঙ্গে চা খেলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হলে ফিরলাম। রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও গত রাত শেষে মেঘ জমতে শুরু করেছে। রাত ১০টা পর্যন্ত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া। অপরাহ্নে হঠাৎ কালাে মেঘে আকাশ ছেয়ে গেল। সাড়ে ৪টার দিকে বৃষ্টি শুরু হল, সঙ্গে শিলা আর প্রবল ঝড়াে বাতাস। বিকেল প্রায় ৫টা কি তারও বেশি সময় পর্যন্ত পূর্ণ তেজে চলল এমন অবস্থা। বেশ ভাল বৃষ্টিই হল । শিলাখন্ডগুলাে আকৃতিতে খুব একটা বড় না হলেও ক্ষতি করার জন্য যথেষ্টই বলতে হবে। ৬টা পর্যন্ত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি চলতেই থাকল। রাত মেঘা হয়ে রইল। আবহাওয়া বিষন্ন আর শীতল। বৃষ্টির মৌসুমের পর প্রথম ভাল বৃষ্টিপাত। চাষি সম্প্রদায়ের জন্য এই বৃষ্টি আর্শিবাদের মত, বিশেষ করে শীতের শস্য কলাই, মরিচ, তামাক ও অন্যান্য শাক-শবজির জন্য। যদিও শিলাবৃষ্টি আম ও লিচুর মুকুলের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, মঙ্গলবার উঠেছি সকাল সাড়ে ৬টার দিকে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পড়াশােনা করলাম। সকাল ১০টায় ডিষ্ট্রিক্ট বাের্ডের শ্রীপুর-কালিয়াকৈর নির্বাচনী এলাকার নির্বাচনের ভােট গণনা দেখতে কোর্টে গেলাম। গণনা শেষ হল দুপুর প্রায় ২টায় । ২৮ ভােটে ডাক্তার ইয়াদ আলিকে হারিয়ে সালেহ আহমেদ নির্বাচিত হলেন। সেখানে কামরুদ্দিন সাহেব, কফিলউদ্দিন চৌধুরী, এস, এ, রহিম, মুজিবুর রহমান প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। শ্রীপুর থেকে এ, হামিদ, সিরাজ, নাদু, কালু মােড়ল, হাসনাত প্রমুখেরা এসেছেন। সহিদ মােক্তার, মমতাজ মােক্তার, সাদির মােক্তার প্রমুখের সাথে কথা বললাম। প্রথমে চা এবং পরে সালেহ আহমেদ ও তার সহযােগিদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেলাম। বিকেল ৫টায় গেলাম ডি.এফ.ও. অফিসে। তিনি চট্টগ্রামে গেছেন। আগামীকাল ফিরবেন। সাড়ে ৫টায় হলে ফিরলাম। সন্ধ্যা ৬টায় স্টেশনে সালেহ আহমেদকে এই খবর দিলাম। বদিউর, সিদ্দিকউল্লাহ, লুৎফুল হককে নিয়ে নূরুল হকের দেয়া নৈশভােজে যােগ দিলাম। আওলাদ, শহীদুল্লাহ ও আসাদুজ্জামান আগে থেকেই ওখানে ছিল। খাওয়া দাওয়ার পর নূরুল হকের নববধু আমাদের সামনে এলেন ও কথা বার্তা বললেন। রাত সাড়ে ৮টায় হলে ফিরলাম। সন্ধ্যার আগে তফাজ্জলের বাবা মহি ও অন্যান্যদের নিয়ে এসেছিলেন। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া ঃ ১০টা অবধি ঘন কুয়াশা। বাকি দিন ও রাত পরিষ্কার। ঠান্ডা। ততটা নয়, যতটা হওয়া উচিৎ ছিল। ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, বুধবার পৌনে ৭টায় উঠেছি। পড়াশােনা হয়নি। সকাল সাড়ে ৯টায় তফাজ্জলের বাবাকে নিয়ে ডাঃ করিমের কাছে গেলাম। সেখানে মােতাহার ডাক্তার এলেন। কামরুদ্দিন সাহেবের সাথে কথা বললাম। তফাজ্জলের বাবার জন্য ডাঃ করিম ব্যবস্থাপত্র লিখে দিলেন। মােতাহার ডাক্তার ঔষধ কেনার জন্য ওদেরকে সাথে নিয়ে গেল। আমি সাড়ে ১১টায় হলে ফিরে এলাম। দুপুর ১২টায় ক্লাসে যােগ দিলাম। বেলা আড়াইটায় ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের ধামরাই-সাভার নির্বাচনী এলাকার নির্বাচনের ভােট গণনা দেখতে গেলাম। ভােট গণনা শেষ হল প্রায় সাড়ে ৭টায়। আতাউর রহমান সাহেবকে হারিয়ে আব্দুল মজিদ মাস্টার জিতে গেলেন। রাত সাড়ে ৮টায় হলে ফিরলাম। রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : সকাল ৯টা পর্যন্ত কুয়াশাবৃত্ত হয়ে রইল। বাকি দিন রাত আকাশ পরিষ্কার। ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উঠেছি। পড়াশােনা সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। বেলা ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। একবার সাড়ে ৪টার দিকে আবার ৫টায় ডি.এফ.ওর অফিসে গেলাম। কিন্তু তিনি উপর তলায় থাকায় তার সঙ্গে দেখা করা গেল না। বেলা পৌনে ৫টায় এস.আই. এ. এইচ, চৌধুরীর সঙ্গে কোর্টে দেখা করলাম। তার সঙ্গে চা। খেলাম। আমাদের সার্কেলের পুলিশ ইন্সপেক্টরের কাছে আরও.-র দেয়া রিপাের্টের কথা তাকে বললাম। বিকেল সােয়া ৫টায় ডি.আই.জি, অফিসে গিয়ে ডি,এস,পি, মিস্টার সােবহানের মার্জিনে মন্তব্যসহ এ. এইচ. চৌধুরীর পেশকৃত রিপাের্ট দেখলাম। ফেরার পথে প্রথমে আবুল হুসেন ও পরে জলিল ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করলাম। সন্ধ্যা ৬টায় হলে ফিরে এলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কমনরুমে কাটালাম। রাত ১০টায় শয্যায়। আবহাওয়া ও পরিষ্কার দিন। আবহাওয়ায় বসন্তের মৃদু স্পর্শ। রাতে আকাশে ঘন মেঘ ছেয়ে থাকার ফলে উষ্ণ পরিবেশ।
১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, শুক্রবার সকাল ৭টায় উঠেছি। পড়শােনা হয়নি। বেলা ১২টায় ডি.এফ.ওর অফিসে গেলাম। কিন্তু তিনি তার অফিস রুমে ছিলেন না। ছিলেন উপর তলায়। বেলা সােয়া ১২টায় স্টেশনে ফজলুর সঙ্গে দেখা করলাম এবং আজিজ মিয়ার কাছে কিছু নির্দেশ পৌছে দেয়ার জন্য তাকে বললাম। জালালও বাড়ি যাচ্ছে। বেলা ১টা থেকে ৬টা পর্যন্ত। নবাবপুর, সদরঘাট, পাটুয়াটুলি, ইসলামপুর, দিগবাজার, ইংলিশ রােড, চক প্রভৃতি এলাকা ঘুরে বেড়ালাম। হিন্দুদের ওপর কিছু মুসলমানদের ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করতে করতে। রাত কাটালাম কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায়। আবহাওয়া ও মধ্যদিন পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। দিনের তিন চতুর্থাংশ সময় এক পশলা বৃষ্টি হল। রাত থেকে জোরে বাতাস বইছে। বি. দ্র. স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মত ঢাকা আজ দুপুর ১২টা থেকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রত্যক্ষ করল। গত তিন/চার দিন ধরে কলকাতায় যে দাঙ্গা চলছিল এটা তারই ধারাবাহিকতার ফল। শরণার্থীরা বিশেষ করে বিহারীরা এই গােলযােগের জন্য দায়ী। স্থানীয় জনগণ যদিও এসবের বিপক্ষে নয়, তবে তারা উদাসীন। সন্ধ্যা পর্যন্ত অবিরাম লুট, হত্যা আর অগ্নিসংযােগ চলল। পুলিশ এসব বন্ধ। করার কোন চেষ্টাই করল না। অবাঙ্গালি পুলিশেরা বরং উৎসাহ যােগাচ্ছিল। পুরাে প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করল। সরকারের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভাের ৬টা পর্যন্ত কারফিউয়ের ঘােষণা দেয়া হলেও তা কার্যকর করা হল না। বর্তমান গােলযােগের উৎপত্তি নিহিত আছে ভারত ইউনিয়নের বিশেষ করে পশ্চিম বাংলার প্রতিপক্ষদের মধ্যে। মূলতঃ গত সপ্তাহে কলকাতায় মুসলমানদের উপর যা ঘটেছে এটা নিঃসন্দেহে তারই বহিঃপ্রকাশ। উদ্দেশ্যমূলক হলেও পূর্ব বাংলা অ্যাসেমব্লির। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এম.এল.এ.দের একটি অবিবেচক। পদক্ষেপ এই ঘটনাকে গুরুতর করে তােলে। সংসদের কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত এবং পূর্ব-বাংলার সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্য জাতিসংঘের কাছে আবেদন, এই প্রদেশের মুসলমানদের অসন্তুষ্ট করার জন্য যথেষ্ট ছিল। এম,এল,এ.দের এই পদক্ষেপগুলাে যতই সরল বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ নাগরিক অধিকার বােধ থেকেই উৎসারিত হােক না কেন এর বিরুদ্ধে অতি উদারপন্থীদের ঠিক সন্দেহ না হলেও অসন্তোষ ছিলই। এছাড়াও সচিবালয়ের কেরানিদের আরও একটি অপরিকল্পিত পদক্ষেপের ফলে বিস্ফোরণ উন্মুখ এক বারুদের স্তুপে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেয়া হল। যখন কেরানিরা ভারতীয় দূতাবাসের সামনে মিছিল করে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব সি, এস, সেনের কাছে তাদের অনুভূতি বর্ণনা করে ভারত প্রজাতন্ত্রের কাছ থেকে প্রশংসিত হয়। মি. এস, সেন আমাদের মুখ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠক। করছিলেন। শরণার্থীরা, বিশেষতঃ বিহারীরা যারা প্রতিশােধ নেয়ার জন্য সুযােগের অপেক্ষায় দিল, তারা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়। বেচারা কেরানিদের সাংবিধানিকভাবে পদক্ষেপ নেয়ার আন্তরিক ইচ্ছা মারমুখী জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। এই জনতা কেরানিদের চারপাশে জড়াে হয়েছিল এবং যাদের। অধিকাংশই ছিল শরণার্থী। দাঙ্গাকারীদের এই আক্রমণের ফলে প্রথমে আক্রান্ত হয় সংখ্যালঘুদের বিষয়-সম্পত্তি এবং তারপর ব্যক্তি। ক্রমবর্ধমানভাবে পূর্ণোদ্যমে হত্যাকান্ড চলতেই থাকল। দোকানপাট ইতােমধ্যেই লুষ্ঠিত হয়েছে। হিন্দুদের জীবনটাই দুস্কৃতিকারীদের মনােযােগের লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়েছে। কিছু পরিবার সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাপকসংখ্যক বিচ্ছিন্ন সহিংসতার ঘটনাও ঘটছে। চলন্ত ট্রেনের কামরায় নৃশংসভাবে হত্যার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। সরকার বিচ্ছিন্ন হিন্দু পরিবারগুলির জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে। প্রধান প্রধান সড়কগুলাে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। সান্ধ্য আইনের মেয়াদ বিকেল ৫টা থেকে বাড়িয়ে সকাল ৮টা পর্যন্ত করা হয়েছে । এত কিছু সত্বেও ডানে বামে চতুর্দিকে মানুষ নিধন চলছে। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের পক্ষে এবং দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দটি করছে না। ১০ তারিখ থেকে জীবনের উপর হামলা চলছে। দাঙ্গাকারী জনতার
৮০
১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, শনিবার সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। পড়াশােনা হয়নি। সকাল ৮টায় জিন্দাবাহার থেকে হলে ফিরেছি। দুপুর ১১টায় কে. সি. এম.। এর ক্লাসটি হয়নি। শান্তি রক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি সভা অনুষ্ঠিত হল। এই বিষয়ে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রায় কোন আগ্রহই দেখা গেল না। সাড়ে ৩টায় ডি,এফ,ওর অফিসে গেলাম। সাড়ে ৪টায় তার সঙ্গে দেখা হলে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কথা হল। আমাদের এলাকার জনগণের দেয়া অভিযােগের ভিত্তিতে তিনি তদন্ত করবেন বলে জানালেন। বিশেষতঃ সি,ও, বই। পুনঃনবায়নের ব্যাপারে ইজারাদারদের সমস্যার বিষয়টি তাকে অবহিত। করলে সে বিষয়গুলিও তিনি দেখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন। সন্ধ্যা ৬টায় হলে ফিরেছি। রাত ৮টায় বিছানায়। আবহাওয়া : সারাদিন প্রচন্ড বাতাস ছিল। দিন ও রাতের আকাশ পরিষ্কার। বাতাসের কারণে হুল ফোটানাে ঠান্ডা। এমনকি আজকের ঠান্ডা স্বাভাবিক। শীতকেও অতিক্রম করেছে। ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, রবিবার সকাল ৭টার দিকে উঠেছি। পড়াশােনা হয়নি। ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম, কিন্তু কোন ক্লাস হল না। দুপুর দেড়টায় শিক্ষক এবং ছাত্রদের একটি যৌথসভা হল। কাজী মােতাহার। হােসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় ড. শহীদুল্লাহ, ড, নূরুল হুদা এবং নাজমূল করিম, এ. কে. এম. মাহমুদ, কিবরিয়া, আব্দুল আউয়াল প্রমুখেরা বক্তব্য রাখলেন। শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষা এবং সংখ্যালঘুদের রক্ষার। সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা ছাড়াই বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সভা শেষ হল। আজ সারাদিন আর হলের বাইরে বের হইনি। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কমনরুমে কাটিয়েছি। রাতে জমিয়াতুল উলেমা প্রসঙ্গে মওলানা এ. মজিদের জন্য একটি বিবৃতি । তৈরি করলাম। ১১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া ও পরিষ্কার আকাশ, কিন্তু প্রচন্ড ঠান্ডা। এমনকি মধ্য দুপুরেও।
সূর্যের তাপ শীতের তীব্রতায় কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তাপমাত্রা অবশ্যই খুব কম। ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, সােমবার। সকাল সাড়ে ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর সাড়ে ৩টায় মওলানা এ. মজিদের সঙ্গে পাকিস্তান অবজারভার” অফিসে গেলাম এবং বিবৃতিটি মওলানা মজিদের নামে প্রকাশের জন্য। জহুরুল হক সাহেবের কাছে হস্তান্তর করলাম । ৪টায় সেখান থেকে বের হয়েছি। ফেরার পথে জিন্দাবাহারে গেলাম। কিন্তু কামরুদ্দিন সাহেবকে পেলাম না। পৌনে ৫টায় হলে ফিরেছি। সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কমনরুমে ছিলাম । রাত ১০টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও আকাশ পরিষ্কার। কিন্তু পুরাে দিন ও রাতভর প্রচন্ড ঠান্ডা। বসন্তের সূচনায় এমন তীব্র শীতের প্রকোপ বেশ ব্যতিক্রম। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, মঙ্গলবার বাড়ির পথে। সকাল পৌনে ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৮টা ২০ মিনিটের ট্রেনে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। শ্রীপুরে ডাক্তার, কম্পাউন্ডার, হেড মাস্টার, পশু চিকিৎসক প্রমুখ আমার সঙ্গে দেখা করল। জাহাদ আলি মােহরানকে সঙ্গে করে দুপুর সাড়ে ১২টায় বাড়ি পৌছেছি। বিকেলে হাজিবাড়ি ঘাটে গেলাম। সেখানে আমাদের জ্বালানি কাঠের নতুন মজুদ করা হয়েছে। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছি। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। হুল ফোটানাে ঠান্ডা। ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, বুধবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে আব্দুল খান, ওয়ারেস আলি, তুফানিয়া, চেরাগ আলি মােড়ল প্রমুখেরা এসেছিল। তাদের সঙ্গে আগামীকাল ডি.এফ.ওর আগমনের বিষয়ে আলােচনা করলাম। চেরাগ আলি মােড়ল শাহেদ আলির কাছে জমি বিক্রি করেছিল। এই জমির ব্যাপারে দুই জনের মধ্যে সালিসি করতে দুপুরে ভুলেশ্বরে গেলাম। বিকেলে হাজিবাড়ি ঘাটে গেলাম। সন্ধার পর ফিরেছি। আনসার ফরেস্টারদের বিষয়ে আইয়ুব আলির কর্মকান্ড সম্পর্কে বলল। মফিজউদ্দিন নারায়ণপুর থেকে ফিরেছে। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক এবং আগের মতই। বি. দ্র. আজিজ মিয়া এসেছিলেন এবং সি.ও. কে দেয়ার জন্য আমার লেখা দরখাস্ত নিলেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের ঠিক আগে ঘুম থেকে জেগেছি। আজ ডি.এফ.ওর আসার কথা থাকায় শরাফত, আসরউদ্দিন, ইসব আলি দফাদার, ইয়াসিন সরকার, রজব আলি, ওয়ারেস আলি, জবর আলি, আব্দুল খান এবং আরও অনেকে আমাদের বাড়িতে সমবেত হয়েছিলেন। কিন্তু ডি.এফ.ও, আসেননি। উল্লিখিতদের মধ্যে ২ জন দুপুরে আমার সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে বিকেলে চলে গেলেন। বিকেলে নদীর ধারে গিয়েছিলাম। আবহাওয়া স্বাভাবিক। শীতের তীব্রতা আগের কয়েক দিনের তুলনায় কিছুটা কম। ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, শুক্রবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে বাঘিয়ার দাগু এসেছিল মােমিনার টাকা-পয়সা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার জন্য। খাবার পর যে চলে গেলেন। বেপারি বাড়ির মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়লাম। আজ মজিদ এবং গিয়াসউদ্দিনের বিয়ের তারিখ ঠিক হল। বিয়ে উপলক্ষে দু’জনেই মেহমানদারির আয়ােজন করবে। ফিরে এসে আমাদের বাড়িতে রায়েদের নায়েবকে পেলাম। মামদির ছাড়া। বাকি সব খাজনা পরিশােধ করলাম । আজ দুপুরে খাবার সময় পাইনি।
৮৫
কালবাড়ির এবং লস্কর বেপারির এই দুটো দাওয়াতেও যেতে পারিনি। রাতে লস্কর বেপারিসহ আইস আলির বাড়িতে খেলাম । আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, শনিবার খুব ভােরে ঘুম থেকে উঠেছি। ৯টায় রায়েদের কাচারি ঘরে গিয়েছিলাম। সেখানে আসিরুদ্দিন মােল্লার সুপারিশ করা দরখাস্ত পেলাম। কাচারি ঘরে অনানুষ্ঠানিক মিটিং হল । স্থানীয় গণ্যমান্য মুসলিম ব্যক্তিবর্গ, আবিদ বেপারি, হাসেন মৃধা, নবার পালান, প্রমুখ সহ প্রায় ৪০ জন হিন্দু ও মুসলিম ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান গােলযােগ বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের অবস্থান এবং ঘটনার প্রকৃত অবস্থা ব্যাখ্যা করলাম। তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এখানে উপস্থিত সবাই। সরকারের পাশে থাকা এবং গােলযােগ বন্ধের শপথ করল। বেলা আড়াইটায় বরামার উদ্দেশে রওনা হলাম। বরামাতে হেডমাস্টার মফিজউদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। সেই সময় কাপাসিয়া থানার সেকেন্ড অফিসার একজন সশস্ত্র পুলিশ নিয়ে সেখানে হাজির হলেন। তিনি আমাদেরকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গেলেন। আমরা ঝেয়াদিতে ২টি ভৌমিক পরিবার এবং ৩টি শুক্লাদাস পরিবারকে অশেষ দুর্গতির মধ্যে দেখলাম। বাড়ি ঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ব্রজেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক সেকেন্ড অফিসারের কাছে এজাহার দিলেন। স্থানীয় মুসলমানরা তাদেরকে রক্ষা করেছে। মীর মােহাম্মদ নামে একজন গুন্ডাদের কার্যকলাপের প্রতিবাদ করতে গেলে গুন্ডাদের হাতে আহত হন। ঠিক সন্ধ্যায় সেকেন্ড অফিসার ও আমি মীর মােহাম্মদের বাড়িতে গেলাম। এরপর সঞ্জীব রায়ের বাড়ি হয়ে বরামাতে ফিরে এলাম। সঞ্জীব রায়ের বাড়ির পাশে ৪টি অগ্নিদগ্ধ বাড়ি দেখলাম। সেখানে কোন বাসিন্দা ছিল না। আমরা রাত সাড়ে ৮টায় বরামাতে সভা করলাম। সভায় অনেক লােক জড়াে হয়েছিল। শাহেদ আলি বেপারি, হুসেইন আলি খাঁ সহ আরও অনেকে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দাঙ্গার কারণে সর্বস্তরে যে ক্ষতিকর কার্যকলাপ সংঘটিত হয়েছে আমি তার উপর জোর দিয়ে দীর্ঘসময় ধরে বক্তব্য রাখলাম এবং শান্তির জন্য আবেদন, জানালাম। উপস্থিত সবাই সমস্বরে তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করবেন বলে শপথ উচ্চারণ করলেন। স্কুলের হেডমাস্টার, ইউনিয়ন বাের্ডের প্রেসিডেন্ট এবং স্থানীয় মুসলমানরা। রামার হিন্দু সম্প্রদায়ের লােকদের রক্ষা করেছে। রাতের খাবার শেষে
পুলিশের সেকেন্ড অফিসার হুসেইন খানের বাড়িতে গেলেন এবং আমরা। রাতে বরামাতে থেকে গেলাম। রাত প্রায় ১২টার দিকে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। প্রায় শীতহীন রাত। ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, রবিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ১১টায় হেডমাস্টার সাহেবের সঙ্গে নাস্তা করলাম। সকাল থেকে। সহকারী শিক্ষক দেবেন্দ্র বাবু সহ আরও বহু লােকের সঙ্গে কথা বললাম । বিশেষ করে বর্তমান অবস্থায় পাকিস্তানের জন্য শান্তি রক্ষা করা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, সে প্রসঙ্গে বললাম। সেকেন্ড অফিসারের সঙ্গে দেখা করার জন্য শাহেদ আলি বেপারি সকালে বমি গেছেন। আমি বেলা ২টার দিকে বাড়ি ফিরেছি। ফেরার পথে রামদারি মুচির ছেলেদের সঙ্গে দেখা। তাদের কাছ থেকে তাদের একটি বাড়ি লুট হওয়ার কথা শুনলাম। বিকেলে নদীর পাড়ে গেলাম । সেখানে করাতিরা আমাদের একটি কড়ই গাছ। কাটছিল। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলাম। সিরাজের বাবা এবং জাহুরা বিকেলে এসে ফিরে গেছেন। সিরাজের বাবা। আবার রাতে এসে আমার সঙ্গে একসাথে খেলেন এবং ১৮০ টাকা নিয়ে গেলেন। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক । সকালে কুয়াশা ছিল । শীত প্রায় নেই বললেই চলে।
২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, সসামবার সকাল সাড়ে ৬টা দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। নাস্তার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত হাজিবাড়ি ঘাটে ছিলাম। দুপুরে আজিজ মিয়ার সঙ্গে একসাথে খাবার পর বিকেলে হাফিজ বেপারির বাড়িতে গেলাম। পথে সেতুর উপর কালার বাপের সঙ্গে দেখা। সে সেতু মেরামত করছিল। তার সাথে শান্তি রক্ষার বিষয়ে কথা হল। সাহেব আলি। বেপারি বাড়িতে একা ছিলেন। তার সঙ্গে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের ইউনিয়নের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বললাম। আমার একমত হলাম যে, আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পর শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। নারায়ণপুর বনে লােকসানের কারণে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়েও তার সঙ্গে কথা বললাম। মুনশী বাড়ি এবং কালবাড়ি হয়ে সূর্যাস্তের পর বাড়ি ফিরলাম। আবহাওয়া ও দিন ও রাত স্বাভাবিক। বাতাসে বসন্তের আমেজ। প্রচন্ড রােদ এবং শীতহীন রাত। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে আব্দুল খানের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললাম। ৮টার দিকে সাইকেলে চড়ে নারায়ণপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। আব্দুল হাই, আইনুদ্দিন, আসর আলি মাস্টার, জামাল মাস্টার প্রমুখের সঙ্গে কথা বললাম। নতুন শুরু হওয়া এম, ই. স্কুলে গেলাম। এম, ই, স্কুলের জন্য একজন বেপারির কাছ থেকে ২৫ টাকা জরিমানা আদায় করা হল। এই বেপারি জ্বালানি কাঠের অসৎ ব্যবহার করেছিল। দুপুর ২টা দিকে বাড়ি ফিরলাম। এর আগে মাদ্রাসা নিয়ে আকরামতউল্লাহ সাহেবের সঙ্গে কথা হয়েছে। দু’জনেই একমত হলাম যে, বর্তমান অবস্থায় মাদ্রাসার কার্যক্রম অব্যহত রাখা অসম্ভব। বিকেল বেলা নদীর পাড়ে গেলাম এবং হাজিবাড়ি ঘাট হয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক দিন। গরম পরিবেশ। বসন্তের পরিপূর্ণ আমেজ। মধ্যরাতের পর এক পশলা বৃষ্টি হল। কেবল মাত্র মাটি ভিজেছে। ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, বুধবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে ঘুম থেকে উঠেছি।। সকাল ৮টার দিকে হাফিজ বেপারির বাড়ি গেলাম। দুই বেপারি এবং সাহেব আলি বাড়িতে ছিলেন। সেখান থেকে মমতাজের বাড়িতে গেলাম, কিন্তু তাকে পেলাম না। পথে ময়না মুনশী, নাসির প্রমুখের সঙ্গে কথা হল। সাহেব আলি বেপারি নিজে আমার দরখাস্তে লিখে দিলেন এবং হাফিজ ব্যাপারি তাতে স্বাক্ষর করলেন। ১১ টার দিকে বাড়ি ফিরেছি। দুপুর দেড়টার দিকে মজিদের আয়ােজিত মেহমানদারিতে গেলাম। প্রথম ব্যাচ খেতে বসতে না বসতেই বৃষ্টি শুরু হল। মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলে অতিথিরা প্রচন্ড ঝামেলার মধ্য দিয়ে খাওয়া শেষ করল। আমরা সবাই। দেরিতে ঘরের মধ্যে ব্যাচে ব্যাচে পরন্ত বিকেলে খেয়ে নিলাম। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছি। আবহাওয়া ও রাত থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। দুপুরে মেঘ গভীর হল এবং বেলা ২টার দিকে বৃষ্টি শুরু হল। প্রায় ১ ঘন্টা প্রচন্ড বৃষ্টির পর সন্ধ্যা পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হল। এই বৃষ্টি কৃষকদের জন্য এবং সার্বিকভাবে সমস্ত দেশের জন্য ভাল হবে। ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সাড়ে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে কাল বাড়ির দাওয়াতে গিয়েছিলাম। দুপুর দেড়টার দিকে খাওয়া দাওয়া করেছি। তফাজ্জলের বাবা আজ সন্ধ্যায় তার পরিবার নিয়ে বাড়ি চলে গেলেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হাকিম মিয়ার সঙ্গে গােসিঙ্গা গেলাম। নিয়ামতউল্লাহ সরকার আমাকে চা দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে হাকিম মিয়া এবং নিয়ামত সরকারের উপস্থিতিতে বন কর্মকর্তার কাছে তার অফিসে আমাদের বনের গাছ বিক্রি করার অনুমতি চেয়ে দরখাস্ত জমা দিলাম। তিনি আমাদেরকে চা খাওয়ালেন। সূর্যাস্তের সময় বাড়ি ফিরেছি। আবহাওয়া ঃ আজ সারাদিন সূর্য ওঠেনি । আকাশ সারাক্ষণ ঘন মেঘে ঢাকা। রাতে এক পশলা বৃষ্টি হল। ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, শুক্রবার ঢাকার পথে । খুব ভােরে ঘুম থেকে উঠেছি।
৯০
সকালে ইয়াসিন ভূইয়া এলেন আমাদের বিল মাপার জন্য। কিন্তু পরিমাপের চেইন পাওয়া গেল না। তাই আনুমানিক একটা পরিমাপ নেয়া হল। ওয়ারেস আলি, আমির এবং পরে লস্কর বেপারি ও আনসার উপস্থিত ছিল। রঙ্গু বিলের পরিমাপ নিল। দুপুরে বাড়িতে ফিরলাম। ঢাকায় যাবার জন্য দুপুর দেড়টার দিকে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা দিলাম। একজন কাঠের বেপারির সঙ্গে ৩টায় শ্রীপুর পৌঁছলাম। ট্রেন একেবারে সময়মত ছিল। সাড়ে ৫টায় ঢাকায় পৌঁছেছি। ঢাকায় আসার আগে মজিরউদ্দিন খানের সঙ্গে ঠিকাদারকে খুঁটি দেয়ার বিষয় নিয়ে কথা হল। আমাদের আলােচনার শেষের দিকে সােমেদ খান উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কমনরুমে ছিলাম। সাড়ে ৮টায় আশু আমার কাছে এল এবং হােসেইন খানের মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ের প্রসঙ্গে কথা বলল। আগামী ৬ মার্চ তার বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। রাত ১০টার দিকে বিছানায়। আবহাওয়া ও দুপুর দেড়টা পর্যন্ত আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। তারপর সূর্য উঠল। রাত পরিষ্কার। গত দিনের বৃষ্টির জন্য আবহাওয়া ঠান্ডা। ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, শনিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টায় ক্লাস করেছি। ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়েই ছিলাম। বিকেল ৪টায় জিন্দাবাহার গেলাম। সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে কথা বললাম। সেখানে ডাঃ করিমও উপস্থিত ছিল। রাত ৯টায় হলে ফিরেছি। ১১টায় বিছানায়। আবহাওয়া : স্বাভাবিক পরিবেশ। ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, রবিবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত পড়াশােনা করেছি। দুপুর ১২টার ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম। দুপুর একটায় এস.এম. হলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযােগিতা শুরু হবে, সেই কারণে ১২টা ৫০ মিনিটের ক্লাস বাতিল হয়ে গেল। ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এস, এম, হলের ক্রীড়া প্রতিযােগিতা দেখলাম। খেলার শেষ পর্যন্ত দেখা হয়নি। মীর্জা আমিনুল ইসলামের সঙ্গে এবং পরে বাহাউদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দীর্ঘসময় ধরে কথা হল। সােয়া ৪টায় হলে ফিরেছি। সাড়ে ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত হলের কমনরুমে। রাত ৯টায় বিছানায়। আবহাওয়া দিন ও রাত স্বাভাবিক। গত বৃষ্টির কারণে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ঠান্ডা রয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, সােমবার সাড়ে ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। পড়াশােনা হয়নি। এফ.এইচ.এম. হলের খেলা থাকায় আজ আমার কোন ক্লাস নেই । এফএইচ, এম, হলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযােগিতায় উপস্থিত ছিলাম। সাড়ে ১২টায় মাঠে গেলাম। আড়াইটা পর্যন্ত অতিথিদের ক্যাম্পে ভলান্টিয়ারের কাজ করেছি। জিমনেসিয়ামে অতিথি, সামরিক ব্যান্ড পার্টি, ভলান্টিয়ার প্রমুখের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হল। প্রায় সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এই সমস্ত কাজে ছিলাম। মাঠের আয়ােজন ও আপ্যায়নের সব ব্যবস্থাই সন্তোষজনক ছিল। মাঠ এবং সংলগ্ন এলাকা সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে হলে ফিরেছি। রাত সাড়ে ৯টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও দিন ও রাত স্বাভাবিক। উজ্জ্বল ও পরিষ্কার আকাশ। ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, মঙ্গলবার সাড়ে ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। পড়াশােনা হয়নি। সাড়ে ১২টায় তােপখানা রােডে গিয়ে সারাই করা জুতা নিলাম। সেখানে শহীদুল্লাহর সঙ্গে দেখা, সে আমাকে চা খাওয়াল। ৪টার দিকে ডি.এফ,ওর সঙ্গে দেখা করলাম। জানালেন, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি আমাদের এলাকায় যেতে পারেন। সাড়ে ৪টায় ডি.এস.পি. সােবহান সাহেবের সঙ্গে তার অফিসে দেখা করলাম। সেখানে রাজা মিয়া ছিলেন। সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে কথা হল। তারপর আমি চলে এলাম। নাসিরুদ্দিনের সহায়তায় ইসলামপুর থেকে একজোড়া জুতা এবং শার্টের কাপড় কিনলাম।
১ মার্চ ১৯৫০, বুধবার ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। পড়াশােনা হয়নি। ১২টায় ক্লাস করলাম। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। নিমতলি মেসে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় এক ঘন্টা কথা বললাম। সন্ধ্যায়। বাবুবাজারে কফিলউদ্দিনের কাছে গেলাম। সােয়া ৮টা পর্যন্ত তার সঙ্গে কথা হল। কফিলউদ্দিন বলল, তার বাবা আগামীকাল আসতে পারেন। পৌনে ৯টায় হলে ফিরেছি। আজ রাতে হলে ফিষ্ট ছিল। সাড়ে ৯টার দিকে ২য় ব্যাচের সঙ্গে খাবারে অংশ নিলাম। রাত ১১টায় বিছানায়। আবহাওয়া স্বাভাবিক। শীত প্রায় উধাও। ২ মার্চ ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠলাম। সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পড়াশােনা করলাম। ২টায় বিশ্ববিদ্যালয় গেলাম। বিশ্ববিদ্যালয় শান্তি কমিটির ডাকা মিটিংয়ে বেশ হৈ চৈ হল। সমান্তরাল একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ.ই.পি.এম,এস,এল, এবং ই.পি.এম.এস.এল, এই নতুন কমিটির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। ওয়াদুদ, মাহবুব, খালেক নেওয়াজ খান নেতৃত্বে. রয়েছেন। এ.ই.পি.এম.এস.এল,-য়ের কর্মীরা যেমন দলিল, কে, আহসানউল্লাহ প্রমুখ আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। সভায়।
তােয়াহা সাহেব সভাপতিত্ব করলেন। সাড়ে ৪টায় সভা থেকে ফিরেছি। ইসলামপুরে গিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু কেনাকাটা করলাম । ঠিক সন্ধ্যায় হুসেইন খানের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম। আমাদের ইউনিয়নের গােলমাল নিয়ে কথা হল । সাড়ে ৯টায় সেখান থেকে বের হয়েছি। কফিলউদ্দিন আমাকে চা-নাস্তা খাওয়াল। সাড়ে ১০টায় হলে ফিরলাম। রাত ১২টায় বিছানায়। আবহাওয়া স্বাভাবিক। উজ্জ্বল চন্দ্রালােকিত রাত। তাপমাত্রাও কম, সব মিলিয়ে অত্যন্ত সুন্দর। কোকিলের কুহু কুহু ডাক এবং এই ঋতুর অন্যান্য পাখির গান ঋতুর রানী নতুন বসন্তের আগমনী বার্তা ঘােষণা করছে। দিনের শুরুগুলাে অদ্ভুত সুন্দর।
৩ মার্চ ১৯৫০, শুক্রবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত পড়াশােনা করলাম। বেলা ৩টায় আশু আমাকে শহীদ মােক্তারের বাসায় নিয়ে গেল। সেখানে হুসেইন খান, কফিলুদ্দিন, জাফর মুনশী, বেলায়েত আলি মাস্টার উপস্থিত ছিলেন। আর বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। পাটুয়াটুলি থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে মাস্টার সাহেবের জন্য শাড়ি এবং অন্যান্য জিনিস কেনার পর তিনি চলে গেলেন। সন্ধ্যায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। সেখানে মমিন ছিল। উল্লেখযােগ্য কোন আলােচনা হয়নি। ডাঃ করিমের সাথে দেখা হল। ৭টায় হলে ফিরেছি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিছানায়। আবহাওয়া ও দিন এবং রাত উজ্জ্বল পরিষ্কার। মাঝ রাতে যথেষ্ট গরম। ৪ মার্চ ১৯৫০, শনিবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পড়াশােনা করেছি। প্রায় সারাদিন নিজের রুমে ছিলাম। পৌনে ৪টায় বাঘিয়ার বাবু এসেছিলেন। ৫টায় আর.এম.এস.এর বাক্সে একটা চিঠি ফেলতে স্টেশনে গেলাম এবং সাড়ে ৫টায় দেওয়ান বাজার থেকে শার্ট বুঝে নিয়ে হলে ফিরেছি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কমনরুমে ছিলাম।
সাড়ে ১০টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক, মনােরম পরিবেশ। ৫ মার্চ ১৯৫০, রবিবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পড়াশােনা করেছি। বেলা ৩টা বেজে ৭ মিনিটে ইরানের শাহ বিমানবন্দর থেকে গভর্নর হাউজে যাওয়ার পথে আমাদের হলের সামনের রাস্তা দিয়ে গেলেন। সাড়ে ৪টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কথা হল। হায়দার সাহেব, কবি মঈনুদ্দীন এবং এম, আই. চৌধুরী এই আলােচনায় অংশ নিয়েছেন। এর আগে ডাক বিভাগের কর্মচারিরা আগামী ১৭ই মার্চ পাঞ্জাবে যে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে সে প্রসঙ্গে আলােচনা করেছেন। রাত ৯টায় হলে ফিরেছি। ১১টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। বসন্তকাল। ৬ মার্চ ১৯৫০, সােমবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পড়াশােনা করেছি। দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম। বেলা পৌনে ২টায় আশু এসেছিল এবং আমাকে অনুরােধ করল তার বিয়েতে যাবার জন্য। কিন্তু আমি যেতে পারিনি। সাড়ে ৫টায় পুরানা পল্টন ক্রসিংয়ে আবুল হুসেনের সঙ্গে দেখা হল। তার সঙ্গে বন বিভাগের ম্যানুয়াল এবং নিয়মাবলি নিয়ে কথা বললাম। প্রিয়নাথ স্কুলের গেটে মােহাজিরিন কমিটির সদস্য আব্দুল গণি সরদারের সঙ্গে দেখা হল। তাকে বললাম, মহিলা শরণার্থীদের মধ্য থেকে অধ্যাপক এবং শিক্ষক খুঁজে বের করতে। তাকে আমার নাম ও ঠিকানা দিলাম । সাড়ে ৬টায় হলে ফিরেছি। সাড়ে ৮টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
৭ মার্চ ১৯৫০, মঙ্গলবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা, বিকেলে ৪টা থেকে ৫টা এবং রাতে ৮টা থেকে ১০ পর্যন্ত পড়াশােনা করেছি। দুপুর ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত হল অফিস এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। প্রায় সারাদিনই হল এলাকাতেই কাটল। সাড়ে ৫টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ঢাকা ক্লাবের সামনে টেনিস খেলা দেখলাম। রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ৮ মার্চ ১৯৫০, বুধবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পড়াশােনা করেছি। দুপুর ১২টার ক্লাস করেছি। সাড়ে ৩টায় ডি.এফ.ও.-র অফিসে গেলাম। হেড ক্লার্ক আমাকে জানাল যে, ডি.এফ.ও, হয়ত আগামীকাল সন্ধ্যায় অথবা শুক্রবার সকালে শ্রীপুর এলাকায় যেতে পারেন। বিকেল ৪টায় জালালের সঙ্গে তার অফিসে দেখা করলাম। পৌনে ৫টা পর্যন্ত তার সঙ্গে কথা বললাম। সােয়া ৫টায় জগন্নাথ কলেজের ক্রীড়া প্রতিযাগিতা দেখতে গেলাম। হালকা নাস্তা করে সাড়ে ৬টায় হলে ফিরেছি। এর আগে ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় অফিস থেকে জানুয়ারি মাসের বৃত্তির টাকা তুলেছি। মফিজউদ্দিন আজ বাড়ি থেকে এসেছে এবং রাতে সে হলেই থাকল। সাড়ে ১০টায় বিছানায় ।। আবহাওয়া স্বাভাবিক। চমঙ্কার নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। বি.দ্র. ঋতু পরিবর্তনের কারণে ৫/৩/৫০ তারিখ থেকে কাশি এবং শুকনাে ঠান্ডায় ভুগছি।
৯ মার্চ ১৯৫০, বৃহস্পতিবার বাড়ির পথে। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। পড়াশােনা হয়নি। মফিজউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মােগলটুলি এবং ইসলামপুর থেকে কেনাকটিা করলাম। ১টা ৫ মিনিটের ট্রেনে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। শাহেদ আলি মিয়া ট্রেনে আমাদের কামরায় ছিলেন। শ্রীপুরে হাসান মােড়লের সঙ্গে দেখা হল। এরপর ডিসপেনসারিতে ডাক্তার এবং তার সহকারীর সঙ্গে কথা বললাম। চা খেয়ে পৌনে ৪টায় সেখান থেকে বের হয়ে পড়ন্ত বিকেলে বাড়ি পৌছলাম। আফসু-দফতু বাড়ি এসেছে। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১০ মার্চ ১৯৫০, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে আব্দুল খান, আব্দুল মােড়ল, রজব আলি প্রমুখেরা বাড়িতে এসেছিলেন। আব্দুল খানের সঙ্গে আমাদের জমি বদল সংক্রান্ত বিষয়ে কথা হল। কিন্তু জমি বদলের বিষয়টি স্থির হয়নি, কারণ সেই সময়ে আইয়ুব আলি একজন বেপারিকে সাথে নিয়ে এসে খবর দিলেন যে, ডি.এফ.ও. আগামীকাল শ্রীপুরে আসছেন। আইয়ুব আলি একটি নােটিশও দেখালেন। দুপুরে উত্তরপাড়া মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়লাম এবং সবাইকে ডি.এফও,র আগমন সংবাদ জানালাম। বিভিন্ন দিকে লােক পাঠানাে হল। রাতে আমি নিজে ভুলেশ্বরের উত্তর এলাকায় গেলাম। এর আগে বিকেলে দেওনা বনে গিয়েছিলাম, সেখানে দেখলাম ১২টি একই। মাপের গাছ কেউ কেটে সরিয়ে ফেলেছে। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। একটুখানি শীত অনুভূত হচ্ছে।
১১ মার্চ ১৯৫০, শনিবার সকাল ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। বন কর্মচারিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযােগের উপর ডি.এফ.ও.-র নেয়া শুনানিতে উপস্থিত থাকার জন্য সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গােসিঙ্গা গেলাম। ডি.এফ.ও. বন কর্মচারিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তথ্য বের করলেন। আমি ডি.এফ.ও.-র সামনে বন কর্মচারিদের দেয়া উত্তরগুলাে লিপিবদ্ধ করলাম। শুনানি দুপুর প্রায় ২টা পর্যন্ত চলল। এই শুনানিতে গােসিঙ্গা এবং সিনগ্রী ইউনিয়ন বাের্ডের প্রেসিডেন্টসহ প্রচুর লােক উপস্থিত ছিল। আমার অভিযােগের প্রেক্ষিতে ডি.এফ.ও, তার আর.ও. এবং বিট অফিসার কে সংলগ্ন এলাকা এবং আমাদের দেওনা বনে তদন্তে পাঠালেন। বিট অফিসার দরদরিয়া ঘাটে গেলেন এবং একই মাপের গাছগুলাে দেখতে পেলেন। তিনি আইয়ুব আলির সি.ও, পরিদর্শনের সময় সীল সহ হাতুরি পেয়েছেন। এরপর ফরেস্টার হাজিবাড়ি ঘাট থেকে প্রায় বােঝাই করা কাঠের খুঁটি ভর্তি নৌকা গােসিঙ্গায় নিয়ে গেলেন। আমি রাতে বাড়ি ফিরেছি। রাতে জাবু, শাফু ও অন্যান্য এবং আক্কা বাড়িতে এসেছিল। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
১২ মার্চ ১৯৫০, রবিবার সকাল প্রায় সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৮টার দিকে গােসিঙ্গা বন অফিসে গেলাম। বন কর্মকর্তা জানালেন যে, তিনি আইয়ুব আলির বনের কাটা গাছগুলির নিদর্শন দেখতে যাবেন। সাড়ে ৯টায়। দিকে বাড়ি ফিরেছি। ১১টার দিকে বাঘিয়ার দাত এসেছিলেন। সে দুপুরে আমার সাথে খেয়ে বিকেলে চলে গেল। ৪টার দিকে গােসিঙ্গা বাজারে গেলাম। সেখানে নিয়ামতউল্লাহ সরকার, আকরামতউল্লাহ প্রমুখের সঙ্গে দেখা করলাম। জুনিয়র মাদ্রাসা চালাবার সমস্যা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হল। জুনিয়র। মাদ্রাসার হেড মাস্টারের উপস্থিতিতে বন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করলাম। রাতে বাড়ি ফিরেছি। আবহাওয়া স্বাভাবিক। ১৩ মার্চ ১৯৫০, সােমবার সাড়ে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৮টার দিকে সাইকেলে করে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। খেয়া ঘাটে হাফিজ বেপারি এবং হাকিম মিয়া আমার সঙ্গে যােগ দিলেন। হাফিজ বেপারি আমাকে কেসের বিষয়টি সমঝােতার মাধ্যমে নিস্পত্তি করার কথা ডি.এফ.ও.কে জানানাের জন্য বললেন। আমি তাদেরকে রেখে ডি.এফ.ও.র সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি ঠিক তখনই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হচ্ছিলেন। আমি তাকে হাফিজ বেপারির অনুরােধের বিষয়টি জানালাম। রেঞ্জারের রুমে গােসিঙ্গার রেঞ্জ অফিসার, বিট অফিসার, হাফিজ বেপারি এবং হাকিম মিয়ার সঙ্গে দেখা করলাম। রেঞ্জার আমাকে চা খাওয়ালেন। বন কর্মকর্তা কেসের নিস্পত্তি বিষয়ে কথা বললেন। হাকিম মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে সালেহ আহমেদ মােড়লের বাড়িতে দুপুরের খাবার খেলাম। শেষ বিকেলে বাড়িতে ফিরেছি। ফেরার পথে গােসিঙ্গার বন কর্মকর্তাও আমাদের সঙ্গে ফিরলেন। আইয়ুব আলি মিয়া সবদরকে পাঠিয়েছিলেন আমাকে গােসিঙ্গা যাওয়ার জন্য অনুরােধ জানিয়ে। আমি রাতে গেলাম না। রাত ১০টায় আইয়ুব আলি মিয়া আমাদের বাড়ির বাংলা ঘরে আমার সাথে দেখা করলেন। রুস্তম, হাকিম মিয়া, পরে ওয়ারেস আলি ও আব্দুল খান আমাদের সঙ্গে রাতের খাবার খেলেন। আবহাওয়া ও পরিষ্কার দিন। সারাদিন প্রচন্ড বাতাস। সূর্যাস্তের পর আকাশ মেঘে ঢেকে গেল এবং ঝড়াে বাতাস শুরু হল, কিন্তু কোন বৃষ্টি হল না। বি.দ্র, নিগুয়ারির তমিজউদ্দিন খান ১১/৩/৫০ তারিখ সন্ধ্যায় পরলােকগমন করেছেন। ১২/৩/৫০ তারিখে তার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ১৪ মার্চ ১৯৫০, মঙ্গলবার ঢাকার পথে। সকাল ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠলাম। ঢাকায় যাওয়ার জন্য সাড়ে ৭টায় শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। আইয়ুব আলি খেয়া ঘাটে বসে ছিলেন। তিনি আমাকে বন কর্মকর্তার কাছে নিয়ে গেলেন। আইয়ুব আলি মিয়া দোষী নয় এই মর্মে লিখে দেয়ার জন্য বন কর্মকর্তা আমাকে বারে বারে বললেন। আমি অস্বীকৃতি জানালাম। কারণ আমি সুনির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযােগ করিনি। ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার মুহুর্তে শ্রীপুরে পৌছলাম। সালেহ মােহাম্মদ মােড়ল, সাত্তার খান, আকরামতউল্লাহ প্রমুখেরা এই ট্রেনে ছিলেন। সাড়ে ১১টায় ঢাকা পৌছেছি। গােছল এবং খাবারের পর আশুর সঙ্গে পৌনে ২টায় কমরেড ব্যাংকে গেলাম এবং ১০০০ টাকা জমা দিলাম। ১৫০ মােগলটুলি হয়ে এস.ডি.ও. (এস) এর কোর্টে গেলাম ভাসানী সাহেবের কেসের শুনানি শােনার জন্য।
১০০
৫টার দিকে কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে জিন্দাবাহার গেলাম। ৯টা পর্যন্ত তার, সঙ্গে কথা বললাম। ডাঃ করিমের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে সাড়ে ১০টায়। হলে ফিরেছি। সাড়ে ১০টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। শীত নেই। হালকা বাতাসসহ চমৎকার আবহাওয়া। ১৫ মার্চ ১৯৫০, বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল স্কুলের পরীক্ষার পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করলাম। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে কথা বললাম। ডাঃ করিমের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে ১১টায় হলে ফিরেছি। তােয়াহা সাহেব সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে ছিলেন। হলে ফিরে দেখলাম আব্দুল খান আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। তার কাছ থেকে শুনলাম যে, রজব আলি এবং কয়লার বেপারিদের গােসিঙ্গার ফরেস্টার হয়রানি করছেন। রাত প্রায় ১টা পর্যন্ত তার সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বললাম। ১টায় ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১৬ মার্চ ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল স্কুলের পরীক্ষার পরিদর্শকের দায়িত্বে উপস্থিত ছিলাম। দায়িত্ব পালন শেষে ৬ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছি। কামরুদ্দিন সাহেব, ডাঃ করিম, তােয়াহা সাহেব এবং আমি অলি আহাদের সঙ্গে তার খরচে মায়া সিনেমা হলে শহর থেকে দূরে” ছবিটি দেখলাম। রাত ৯টায় হলে ফিরেছি। ১৯৪৫ সালের পর আজ প্রথমবার সিনেমা হলে ছবি দেখলাম। আব্দুল খান আমার কাছ থেকে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে নির্দেশ নিয়ে সকাল ৮টায় বাড়ি চলে গেছেন।
রাত ১০টায় বিছানায়। আবহাওয়া স্বাভাবিক। ১৭ মার্চ ১৯৫০, শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। রজব আলি একজন বেপারিকে সঙ্গে করে আমার কাছে এলেন। তাদের সঙ্গে আলােচনার পর ঠিক হল বিষয়টি বেপারিদের মহাজনকে জানানাে হবে। মহাজনদেরকে জানানাের উদ্দেশ্যে ওরা চলে গেল। সােয়া ৮টায় ডি.আই.জির, অফিসে গেলাম এবং আমার বিরুদ্ধে আর,ও.আর, এবং ডি.এফ.ওর পাঠানাে রিপাের্ট নিলাম। সকাল ৯টায় ডি.এফ.ওর সঙ্গে তার অফিসে দেখা করলাম । তিনি জানালেন যে, সাহেব আলি বেপারি তাকে মিলাদের দাওয়াত দিতে এসেছিলেন এবং বন থেকে। গাছ কেটে সরিয়ে ফেলার জন্য তিনি আমার বিরুদ্ধে অভিযােগ করেছেন। এ.সি.এফ. হামিদ সাহেব সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কথা বলে পৌনে ১১টায় হলে ফিরেছি। দুপুর ২টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। তার সাথে আমার বিরুদ্ধে পাঠানাে আর,ও.আর, এবং ডি.এফ.ও.র পাঠানাে রিপাের্ট বিষয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আলােচনা করলাম। রজব আলির কেস এবং এখন তার কি করা উচিত সে বিষয় নিয়েও তার সঙ্গে কথা বললাম। ব্রিটানিয়া সিনেমা হলে গিয়েছিলাম। কিন্তু ছবিটা আমাদের পছন্দমত না হওয়ায় রূপমহল সিনেমা হলে “নারীর রূপ” সিনেমা দেখলাম । কামরুদ্দিন সাহেব, তােয়াহা সাহেব, অলি আহাদ এবং ডাঃ করিম সঙ্গে ছিলেন। ফেরার পথে অর্ধেক পথ পর্যন্ত মহসিন আমার সঙ্গে এল। রাত ৯টায় হলে ফিরেছি। রাত সাড়ে ১১টায় বিছানায় । আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১৮ মার্চ ১৯৫০, শনিবার ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টার ক্লাসটি হয়নি। কার্জন হল থেকে মােক্তারি পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে সৈয়দপুরের আব্দুল হাই আমার সঙ্গে দেখা করল। রজব আলি এবং কয়লার বেপারির অপেক্ষায় প্রায় সারাদিনই রুমে ছিলাম। কিন্তু তারা আসেনি। রাত ১০টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। সহনীয় পরিবেশ। ১৯ মার্চ ১৯৫০, রবিবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৭টায় রজব আলি এবং আলেমউদ্দিন বেপারি এল। সাড়ে ৮টায় তাদেরকে কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে নিয়ে গেলাম এবং কামরুদ্দিন সাহেবকে সমস্ত কিছু বিস্তারিত জানালাম। সাড়ে ১১টায় হাফিজউদ্দিন সাহেবের সঙ্গে তার পরামর্শের জন্য দেখা করলাম। বেলা ৩টা পর্যন্ত তার সঙ্গে আলােচনা হল। রজব আলিদেরকে ঘটনাস্থলে যাবার পরামর্শ দিয়ে সােমবারের মধ্যে ফিরে আসতে বললাম। ডাঃ করিমের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেলাম। সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সালেহ এবং ডাঃ করিমের সঙ্গে কথা বললাম। এরপর রেল স্টেশনে গিয়ে আবার রজব আলি এবং আলেমউদ্দিন বেপারিকে শেষবারের মত তাদের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হলে ফিরলাম। রাত ৮টা ৩০মিনিটে বিছানায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। বিঃ দ্রঃ (১) জনাব লিয়াকত আলী খান বিশেষ করে এই প্রদেশের (পূর্ব বাংলার) শরণার্থীদের সমস্যা দেখতে ১৮.০৩.৫০ তারিখে ঢাকায় এসেছেন। (২) পরিবারসহ মীর লায়েক আলি তার গৃহবন্দি অবস্থা থেকে পালিয়ে করাচি পৌছেছেন (তিনি ৪,৩৫০ তারিখে পালিয়েছিলেন)। বর্তমানে প্রশাসনিক কাঠামাে সম্পূর্ণভাবে দূনীঘিস্থ। অফিসাররা নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থের জন্য পাকিস্তানের স্বার্থ বিকিয়ে দিতে দ্বিধাগ্রস্থ নয়। উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও এই সমস্ত অসৎ কার্যকলাপের সাথে জড়িত। সাধারণ মানুষ উচ্চ পর্যায়ে যেতে পারছে না। আর যারা পারছে তারা উচ্চ পর্যায়ের সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানের রক্ত শুষে খাচ্ছে। বন বিভাগ এমনই একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। হাতেগােণা গুটিকতক প্রভাবশালী গ্রামবাসী এই সমস্ত দুনীতিপরায়ণ কর্মচারিদের সাথে রয়েছে এবং দেশকে লুণ্ঠন করে চলেছে। যারাই দেশপ্রেমী তাদেরকেই ঠেলে দেয়া হচ্ছে এদের প্রতিহিংসার ফাঁদে । প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে মুখ খুলছে না। আর সাধারণ মানুষ পারছে না তাদের উপর। পরিকল্পিত অবিচারের কারণে।
১০৪
২০ মার্চ ১৯৫০, সােমবার সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। আগের কথা মত রজব আলি এবং আলেমউদ্দিন বেপারির আসার কথা। থাকায় পুরাে বিকেল হলে নিজের ঘরে কাটালাম। কিন্তু তারা এল না। সাড়ে ৫টায় তােয়াহা সাহেব এলেন। বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার সমস্যার বিষয়ে তার সঙ্গে আলাপ করলাম। তিনি ৭টার দিকে চলে গেলেন। রাত ৯টায় বিছানায় গেলাম। আশু রাত ১০টায় এল এবং চলে গেল। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। রাতে শীত অনুভূত হয়েছে। ২১ মার্চ ১৯৫০, মঙ্গলবার ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ১০টায় রজব আলি এবং বেপারিরা এসেছিলেন। ১১টার সময় তাদের সঙ্গে কোর্টে গেলাম। সাড়ে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত স্টেট ব্যাংকে নােট ভাঙ্গালাম। জহিরউদ্দিন এবং সামসুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। এবং তাদের সঙ্গে চা খেলাম। বন সংরক্ষণ অফিসে গেলাম। মাজহার আলির কাছ থেকে ফরেস্ট ম্যানুয়ালের ২টি কপি নিলাম। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত হাফিজউদ্দিন সাহেবের সঙ্গে কেস নিয়ে কথা বললাম। সম্ভাবনা ভাল নয়। তাই ভিন্ন পন্থা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নেয়া হল। তােয়াহা সাহেবকে নিয়ে সামসুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। এই বিষয়ে বি, এম, ইলিয়াস সাহেবের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হল। নাজিরাবাজার থেকে হালকা খাবার খেয়ে রাত ১১টায় হলে ফিরেছি। বেপারিরা আজ ড. বি. করিমের বারান্দায় রাত কাটাল। রাত ১টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও মেঘাচ্ছন্ন এবং গুমােট ।২২ মার্চ ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৮টায় সামসুদ্দিনের কাছে গেলাম। তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম এবং চা খেলাম। সাড়ে ৯টায় ডাঃ করিমের সঙ্গে পাটুয়াটুলি গেলাম। সামসুদ্দিন আমার সামনে বি, এম. ইলিয়াসের সঙ্গে কয়লার ঘটনা নিয়ে কথা বললেন। ডি.এফ.ও. বি, এম, ইলিয়াস সাহবেকে টেলিফোনে জানালেন, এ. সি.এফ. ঐদিনই এই বিষয় তদন্তের জন্য গেছেন। রজব আলি এবং দু’জন বেপারিকে সাক্ষি জোগাড় করার জন্য পাঠানাে হল। আমি বার লাইব্রেরির বারান্দায় আকবর বেপারিকে দেখলাম। আদম আলি সরকারের সঙ্গে দেখা হল। ৫টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে জিন্দাবাহার গেলাম। পথে সাত্তার খানের সঙ্গে দেখা হল। সন্ধ্যা ৭টায় হলে ফিরেছি। আলেমউদ্দিন বেপারি রাতে আমার রুমে ছিলেন। রাত সাড়ে ৮টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও গুমােট এবং মেঘাচ্ছন্ন। মনে হচ্ছে কাছাকাছি কোথাও বৃষ্টি হয়েছে। ২৩ মার্চ ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম। বিকেল ৪টায় মাজহার আলি সাহেবের অফিসে গিয়ে ফরেস্ট ম্যানুয়াল ২টি ফেরত দিলাম। সাড়ে ৫টায় তােয়াহা সাহেবের কাছে গেলাম। কালু সেখানে গেল। জলিল এল কিছু পরে। বাড়ির প্রসঙ্গে আলােচনা হল। রাত সাড়ে ৮টায় হলে ফিরলাম। রাত ২টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও গুমােট পরিবেশ। উষ্ণ এবং বৃষ্টির ভাব। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, বিশেষ করে রাতে। ২৪ মার্চ ১৯৫০, শুক্রবার বাড়ির পথে। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি।
সকাল ৮টা ২০ মিনিটের ট্রেনে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছি। কুদরতউল্লাহ এবং আহমেদ শ্রীপুর পর্যন্ত আমার সঙ্গে এলেন। ট্রেনের মধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি বৃদ্ধির ব্যাপার নিয়ে কথা বললাম। মনসুর আলি তিলকপুরী নামে একজন নিজেকে মুসলিম লীগ সংগঠক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি, হলের খরচ, শরণার্থী সমস্যা এবং স্কুলের রিকুইজিশন ইত্যাদি বিষয়ে আমার কাছ থেকে তথ্য নিলেন। শ্রীপুরে সালেহ আহমদের সঙ্গে দেখা করলাম। তারপর হােসেন মােড়ল, ইজ্জত আলি সরকারের সঙ্গে দেখা করলাম। তারা আমাকে বন কর্মচারি বিষয়ে আগামীকাল সন্ধ্যায় তাদের সঙ্গে দেখা করতে অনুরােধ করলেন। সালেহ আহমেদ মােড়লের দেয়া সাইকেলে দুপুর সাড়ে ১২টায় বাড়ি এলাম। নিগুয়ারির আব্দুল হামিদ খান, মান্নাফ খান ও আর একজন এবং রফিক আজিজ মিয়া, তফাজ্জলের বাবা নিগুয়ারি যাবার পথে দুপুর দেড়টায় আমাদের বাড়িতে থামলেন, দুপুরের খাবার খেলেন এবং চলে গেলেন। নারায়ণপুর ঘাটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে ফেলার কারণে সমস্ত কিছু নারায়ণপুর থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। বিকেলে ঠাকুরা বিলের আশেপাশে বেড়ালাম। সূর্যাস্তের পর আব্দুল খান, আব্দুল মােড়ল, রজব আলি প্রমুখেরা আমার সঙ্গে দেখা করলেন এবং রাত সাড়ে ৯টায় চলে গেলেন। নাজু মােড়লও আমাদের সাথে ছিলেন। আবহাওয়া : সারারাত মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। রাতের শেষভাগে সামান্য কয়েক ফোটা বৃষ্টি ঝরে পড়ল। দিনের শুরু হয়েছে বিষন্নভাবে। ২৫ মার্চ ১৯৫০, শনিবার ঢাকার পথে। ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। মাস্টার সাহেব এবং হাকিম মিয়ার সঙ্গে গােসিঙ্গা বন অফিসে গেলাম এবং ১২টার দিকে এ.সি.এফ, হামিদ সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। ফরেস্টারের প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ নিয়ে তার সঙ্গে কথা হল। তাকে ডি,এফ,ও-র সঙ্গে রজব আলির কথার সূত্র ধরে কয়লার ব্যবসা এবং ডিটেনশন প্রসঙ্গে সমস্ত কিছু বিস্তারিতভাবে বললাম। দুপুর ২টার দিকে বাড়ি ফিরেছি। আব্দুল খানের বাড়িতে দুপুরের খাবার খেলাম। সেখানে আসকর চৌকিদারও ছিলেন। রঙ্গু মফিজউদ্দিনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল, এই প্রসঙ্গে কথা তােলা হল এবং এই নিয়ে কথা হল।
বাড়ি ফেরার পর মফিজউদ্দিনের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলাম। তার তির্যক মন্তব্য আমাকে রাগান্বিত করলে, জীবনে এই প্রথমবার তাকে কঠিন ভাষায় তিরস্কার করেছি। বিকেল সাড়ে ৫টায় হাকিম মিয়ার সঙ্গে শ্রীপুর গেলাম। রেল লাইনের কাছে আইয়ুব আলির সাথে আলাপরত রেঞ্জারকে দেখে হাসান মােড়ল, আহমেদ। এবং হাকিম মিয়া তার সাথে দেখা করল। আমি আমার বন থেকে গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলাম। বনের গাছ কাটার অনুমতি দিতে। অস্বীকৃতি জানিয়ে রেঞ্জারের লেখা একটি চিঠি পেলাম। রাত ৮টা ২০ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি। আইয়ুব আলি ঢাকা স্টেশন পর্যন্ত আমার সঙ্গে এলেন। রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকা পৌঁছেছি। রাত ১২টায় বিছানায়। আবহাওয়া : সমস্ত দিন মেঘাচ্ছন্ন ছিল। গুমােট পরিবেশ। ২৬ মার্চ ১৯৫০, রবিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। সকাল সাড়ে ৮টায় ফোল্ডার স্ট্রীটে গেলাম। পীর বকশ মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে আব্দুল হাকিম বিক্রমপুরীর সঙ্গে দেখা করে তাকে এ.সি.এফ.-এর তদন্তের কথা জানালাম। তিনি বি. এম. ইলিয়াসের জন্য একটি চিঠি লিখে দিলেন। ৫টায় পীর বকশ মিয়াকে নিয়ে কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। সেখান থেকে বি. এম. ইলিয়াস সাহেবের বাসায় গেলাম। কিন্তু তিনি অসুস্থ। থাকায় তার সঙ্গে দেখা হল না। সদরঘাটে চা খেলাম। সন্ধ্যায় ওয়ারিতে তােয়াহা সাহেব, অলি আহাদ এবং জলিলের সঙ্গে দেখা করলাম। রাত ৯টায় হলে ফিরেছি। রাত ১০টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও গুমােট পরিবেশ। বিকেলে বৃষ্টির লক্ষণ দেখা গেল। কয়েক ফোটা বৃষ্টি ঝরেও পড়ল। ২৭ মার্চ ১৯৫০, সােমবার সকাল ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৮টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। তােয়াহা সাহেব এবং অলি।
আহাদ একটু দেরিতেই এলেন। পীর বকশ মিয়া আসার পর কামরুদ্দিন সাহেব সি.এফ. (বন সংরক্ষক) কে উদ্দেশ্য করে আব্দুল হাকিম বিক্রমপুরীর জন্য একখানা চিঠির খসড়া তৈরি করে দিলে সেটা নিয়ে তারা চলে গেলেন। মুসলিম লীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি প্রভৃতি দলের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পার্টির অবস্থান কি হবে এই বিষয়ে আলােচনা করলাম। আমাদের অবস্থান অন্যান্য সমস্ত দল থেকে স্বতন্ত্র হবে। বন সংক্রান্ত বিবাদ নিয়ে আমার ঝামেলা সম্পর্কে কামরুদ্দিন সাহেবের আচরণে আমি মনে প্রচন্ড আঘাত পেলাম। আমার নেয়া পদক্ষেপের ফলে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে তিনি বিরক্ত বলেই মনে হচ্ছে। কামরুদ্দিন সাহেবের ওখান থেকে দুপুর ২টায় বের হয়েছি। ডাঃ করিমের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেলাম। সন্ধ্যায় তােয়াহা সাহেবের ওখানে গেলাম। ডাঃ করিমও আমাদের সঙ্গে যােগ দিলেন। বন সংক্রান্ত বিবাদ এবং আমার অবস্থান সম্পর্কে সমস্ত ঘটনা। বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করলাম। বিশেষতঃ অলি আহাদকে আমার পারিবারিক সমস্যার কথা বললাম। রাতের খাবার খেয়ে সাড়ে ১০টায় হলে ফিরলাম। রাত ১১টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও গুমােট আবহাওয়া। কখনাে কখনাে নিষ্প্রভ এবং মেঘাচ্ছন্ন।
২৮ মার্চ ১৯৫০, মঙ্গলবার ৮টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১টায় আলেমউদ্দিন বেপারি এসে আমাকে সামসুদ্দিনের বাসায় নিয়ে গেলেন। আব্দুল হাকিম বিক্রমপুরী সাহেব সি.এফ. কে দেয়ার জন্য একখানা চিঠি দিয়েছিলেন, কিন্তু পীর বকশ মিয়া এই বিষয়ের মধ্যে যেতে ইচ্ছুক নয়। তাই বেপারিরা সােয়া ৬টার ট্রেনে জরিমানা দেয়ার জন্য শ্রীপুরে রওনা হয়ে গেলেন। আমি বিকেল ৬টায় বের হয়ে তােয়াহা সাহেবের বাসায় গেলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওখানে থেকে সাড়ে ৭টায় হলে ফিরেছি। আমি রাতে হলে ফেরার সাথে সাথে আমার কাছে উত্তর আমেরের মফিজউদ্দিন এলেন। তিনি প্রধানত: সাবু ভাইসাহেবের বিয়ে নিয়ে কথা বললেন এবং সাড়ে ৮টায় চলে গেলেন। রাত ১০টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। রাতে হালকা শীত পড়েছে।
১০৯
২৯ মার্চ ১৯৫০, বুধবার পৌনে ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন হলে। ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঘুমালাম। রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শব্দ তৈরির খেলা:খেললাম। রাত সাড়ে ১২টায় বিছানায় । আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। বাতাসে ঠান্ডার ভাব আছে।
৩০ মার্চ ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করেছি। বিকেলে তােয়াহা সাহেব এবং জলিলের বাসায় গিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম, বিমান বন্দর থেকে হাশিম সাহেবের সঙ্গে তাদের ফেরার কথা। রফিক এবং মানিক মিয়ার সঙ্গে দেখা হল। তারা জানালেন যে, হাশিম সাহেব আসছেন না। সাড়ে ৮টায় হলে ফিরলাম। এর আগে ৫টার দিকে নওয়াবপুর রােডে সামসুদ্দিন খানের সঙ্গে দেখা। তার কাছে টাকা চাইলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন যে ১৫ দিনের মধ্যে টাকা শােধ করবেন। রাত ১০টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। নাতিশীতােষ্ণ। ৩১ মার্চ ১৯৫০, শুক্রবার ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ফিস্টের আয়ােজন তদারকিতে প্রায় সারাদিন হলের মধ্যেই কাটল। রাত সাড়ে ৮টায় খাবার পরিবেশন করা হল। শেষ দলে কর্মচারিদের খাবার পরিবেশনের পর ১০টায় রুমে ফিরেছি। সাড়ে ৭টায় তােয়াহা সাহেব হলে এসেছিলেন। সাড়ে ১০টায় বিছানায়। আবাহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১। এই মাসে পূর্ব বাংলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কোন খবর পাওয়া যায়নি। তবে হিন্দুরা পূর্ব-বাংলা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
২। পশ্চিম বাংলা এবং আসামের পরিস্থিতি এখনও শান্ত হয়নি। প্রতিদিনই প্রচুর শরণার্থী পূর্ব-বাংলায় প্রবেশ করছে। আগামী ২/৪/৫০ দুই বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে লিয়াকত আলি খান এবং জওহরলাল নেহেরু দিল্লীতে আলােচনায় বসবেন। ৪। দেশে তীব্র অর্থনৈতিক মন্দার সূচনা হয়েছে। বিশেষ করে ভূমি মালিক মধ্যবিত্ত শ্রেণী ক্ষগ্রিস্থ হয়েছে। শ্রমিক শ্রেণীর আয় হ্রাস পাওয়ায় তারা কিনতে পারছে না। বিদেশী সামগ্রী উচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম কম। মণ প্রতি ১৫ থেকে ১৭ টাকার মধ্যে। এভাবেই মুদ্রামান অবমূল্যায়ন না করার ফায়দা পুরােপুরি তােলা হচ্ছে।
১ এপ্রিল ১৯৫০, শনিবার সাড়ে ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বিকেল ৫টায় তােয়াহা সাহেবের বাসায় যাবার জন্য বের হলাম। ফাতেমা মহলের শামসুদ্দিন নাজির লাইব্রেরির জন্য বাড়ি খুঁজতে আমাদের সাথে যােগ দিল। সন্ধ্যা ৭টায় জলিলের বাসায় গেলাম, কিন্তু তাকে পাওয়া গেল না। রাত ৮টায় হলে ফিরেছি। র্যাংকিন স্ট্রীটে আজিজ আহমেদ সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। তাকে মােক্তারি। পরীক্ষার পরীক্ষকদের খুঁজে বের করতে অনুরােধ করলাম । রাত ১১টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক এবং নাতিশীতােষ্ণ।
২ এপ্রিল ১৯৫০, রবিবার সাড়ে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। আজ কোন ক্লাস হয়নি। বেলা আড়াইটায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। তিনি তখন ঘুমাচ্ছিলেন। ডাঃ করিমও বাইরে ছিলেন। তাই কারও সঙ্গে দেখা হল না। ৪টায় আবুল হুসেনের কাছে গেলাম। তিনি বাড়িতে ছিলেন। সাড়ে ৪টায় জলিলের সঙ্গে দেখা করলাম। সে আমাকে তার স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। জলিলের সঙ্গে বাড়ি খুঁজতে এদিক সেদিক ঘুরলাম, কিন্তু কোন বাড়িই সহজলভ্য মনে হল না। জলিলকে রেখে সাড়ে ৬টায় তােয়াহা সাহেবের বাসায় গেলাম। ডাঃ করিমও আমাদের সঙ্গে যােগ দিলেন। আবার জলিলের বাসায় গেলাম। রাত ৮টায় হলে ফিরেছি। রাত সাড়ে ৯টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ৩ এপ্রিল ১৯৫০, সােমবার সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। সাড়ে ৪টায় জালালউদ্দিন ফকিরের সঙ্গে অফিসে দেখা করে তার হাতে ডি.এফ.ও.-র রিপাের্ট দিলাম। সােয়া ৫টায় তােয়াহা সাহেবের বাসায় গেলাম। সেখানে এক কাপ চা খেয়ে ৬টার দিকে জলিলের বাসায় গেলাম, কিন্তু তাকে পাওয়া গেল না। নওয়াবপুর থেকে শাটের কাপড় কিনে কাপড়টা দেওয়ান বাজারে দর্জির। কাছে দিয়ে সন্ধ্যা ৭টার সময় হলে ফিরেছি। রাত ১১টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও বেশ মনােরম। বি. দ্র: ভারত পকিস্তানের সমস্যার সমাধান এবং বিশেষত শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে লিয়াকত আলি খান এবং পন্ডিত নেহেরু ২.৪.৫০ তারিখে দিল্লীতে মিলিত হয়েছিলেন। ৪ এপ্রিল ১৯৫০, মঙ্গলবার ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টায় হাকিম মিয়া এসেছিল তার বিয়ের দাওয়াত দিতে। ৫ এপ্রিল রাতে তার বিয়ের আনুষ্ঠানিক আয়ােজন। দুপুর সােয়া ১২টায় স্টেট ব্যাংকে গেলাম নােট ভাঙানাের জন্যে। গেটে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মি. সামাদের সঙ্গে দেখা হল। হাকিম মিয়া এবং হারিত সেখানে আমার সঙ্গে যােগ দিলেন। আড়াইটা পর্যন্ত সদরঘাট থেকে মিটফোর্ড রােড পর্যন্ত হাকিম মিয়ার জন্য কেনাকাটা করলাম। ৩টায় জলিলের বাসায় গিয়ে দেখলাম মি. আবুল হাশিম সাহেব সেখানে এসেছেন। স্বাধীনতার পর পূর্ব-বাংলায় এই তার প্রথম আসা। ডাঃ করিম, তােয়াহা সাহেব, কামরুদ্দিন সাহেব, রফিক, অলি আহাদ তার সঙ্গে দেখা করেছেন। তার কাছ থেকে পশ্চিম বাংলার পরিস্থিতি সম্পর্কে শুনলাম । জলিলের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে সাড়ে ১০টায় সেখান থেকে বের হয়েছি। রাত ১১টায় হলে ফিরেছি। রাত ১২টায় বিছানায়। আবহাওয়া স্বাভাবিক। পুরােমাত্রায় গ্রীষ্মের তাপদাহ শুরু হয়েছে। ৫ এপ্রিল ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৮টায় তােয়াহা সাহেবের বাসায় গেলাম। জ্যোতিষী আমার জীবন। সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করলেন। সাড়ে ১১টায় সেখান থেকে বের হয়েছি। তােয়াহা সাহেব বাসায় ছিলেন না। ডাঃ করিমের সঙ্গে দেখা করলাম। তার বাবা সেখানে ছিলেন। করিম এবং তার বাবার সঙ্গে দুপুরের খাবার খেলাম। তাদের বাসাটি খুব সুন্দর। দুপুর দেড়টার দিকে হলে ফিরেছি। সন্ধ্যা ৬টার ট্রেনে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম | হাবিবুর রহমান ছাড়া আর কেউই স্টেশন থেকে আমার সঙ্গে এল না। রাত সাড়ে ৮টায় মােড়ল বাড়ি পেীছলাম। বরযাত্রী আসতে দেরি করেছে। তারা এল রাত সাড়ে ১১টায়। রাত ৩টায় বাবার পরিবেশন করা হল। বলতে গেলে ঘুমহীন রাত। ভাের ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ঘুমিয়েছি। মান্নান, রুস্তম, সুবিদ, পিরু মিয়াসহ সব মিলে প্রায় ৩০ জন বরযাত্রী ছিলেন। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক সুন্দর রাত। ৬ এপ্রিল ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সাড়ে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৯টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়ার পরিকল্পনা বাতিল করতে হল। দুপুরে বিশাল ভােজের আয়ােজন করা হয়েছিল। আড়াইটার দিকে খাবার পরিবেশন করা হল। কনে সহ বরযাত্রীরা বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বাড়ির উদ্দেশে চলে গেল। আমি রাত ৯টার ট্রেনে মতি ও হাবিবের সঙ্গে ঢাকা ফিরেছি। রাত সােয়া ১১টায় হলে পৌঁছেছি। রাত ১২টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও ঝড়াে বাতাসসহ গরম আবহাওয়া। রাত কম বেশি আরামপ্রদ। ৭ এপ্রিল ১৯৫০, শুক্রবার সকাল ৯টায় ঘুম থেকে উঠেছি। প্রায় সারাদিন ঘুমিয়েই কাটিয়েছি—বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত। সাড়ে ৫টায় তােয়াহা সাহেবের কাছে গেলাম এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ফিরলাম। রাত সাড়ে ৮টায় তােয়াহা সাহেব এবং অলি আহাদের সঙ্গে জলিলের বাসায় গেলাম। কামরুদ্দিন সাহেবও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হাশিম সাহেব আগামীকাল বর্ধমানের উদ্দেশে রওনা হবেন। হাশিম সাহেবের কাছে থেকে রাত ১১টায় বিদায় নিলাম। হলে ফিরলাম রাত সাড়ে ১১টায়। রাত ১২টায় বিছানায়। আবহাওয়া স্বাভাবিক। উত্তপ্ত দিন, মনােরম রাত।
৮ এপ্রিল ১৯৫০, শনিবার ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৮টায় আজিজ আহমদের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আনসার সেখানে ছিলেন। আজিজ সাহেবকে মােক্তারি পরীক্ষার পরীক্ষকদের দেখার জন্য অনুরােধ করলাম। সাড়ে ৯টায় অধ্যক্ষ কে. পি. ব্যানার্জির বাসায় গেলাম এবং কলেজ পুনরায় খােলা ও আমার সার্টিফিকেটের প্রসঙ্গে কথা বললাম। তােয়াহা সাহেবের বাসায় গিয়ে সাইকেল ফেরত দিয়ে সাড়ে ১০টায় হলে ফিরলাম। দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয় অফিসে সহযােগি কন্ট্রোলারের সঙ্গে দেখা করলাম। উমরের দরখাস্ত জমা দিলাম। বেলা ৩টায় ফিরেছি। আমার কাছে দাও এবং মােসলেম ফকির এসেছিল। তারা বিকেল ৪টায় চলে গেল। ৫টায় তােয়াহা সাহেবের বাসায় গেলাম এবং অলি আহাদকে ফর্ম ইত্যাদি দিয়ে দিলাম। রাতের খাবার খেলাম। রাত ১১টায় হলে ফিরলাম।
১১৫
রাত ১২টায় বিছানায়। আবহাওয়ার খর রৌদ্র তাপ। মধ্য রাতের পর থেকে সুন্দর রাত। ৯ এপ্রিল ১৯৫০, রবিবার সাড়ে ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করেছি। বিকেল ৫টায় জালালের সঙ্গে দেখা করলাম এবং বন কর্মকর্তা বি. বি. চৌধুরীর কেসে উকিল নিয়ােগ সম্পর্কিত ব্যাপারে ডি.আই.জি, এ.সি.বি. কে উদ্দেশ্য করে লেখা একটি দরখাস্ত তাকে দিলাম। তােয়াহা সাহেব, তার স্ত্রী এবং অলি আহাদের সঙ্গে রূপমহল সিনেমা হলে প্রথম শােয়ে ‘শাপমুক্তি’ ছবিটি দেখলাম। রাত সাড়ে ৮টায় হলে ফিরেছি। রাত ১০টায় বিছানায় । আবহাওয়া স্বাভাবিক এবং আগের মতই। ১০ এপ্রিল ১৯৫০, সােমবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম। আজ থেকে এই সেশনের ক্লাস শেষ হল। পুরাে বিকেল রুমেই ছিলাম । রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কার্জন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট ইউনিয়ন পরিবেশিত নাটক “শেষ রক্ষা” দেখলাম। রাত ১টায় বিছানায়। আবহাওয়া ও গুমােট পরিবেশ। বিকেলে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ । ১১ এপ্রিল ১৯৫০, মঙ্গলবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম এবং মি, এ. এন. এম, মাহমুদের কাছে টিউটোরিয়ালের কাজ জমা দিলাম। খলিলুর রহমানের সাথে সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হলাম।
সন্ধ্যা ৬টায় তােয়াহা সাহেবের বাসায় গেলাম। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তােয়াহা সাহেবের বড় ভাই এবং অলি আহাদের সঙ্গে কথা বললাম। সােয়া ৯টায় হলে ফিরেছি। রাত ১২টায় বিছানায়। আবহাওয়া ঃ বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি। এ বছর আগেই বর্ষা শুরু হবে বলে আশা করা যায়। বিকেল থেকে ঝড়াে বাতাস, চলল রাত ১১টা পর্যন্ত। বাইরের আবহাওয়া দেখে মনে হচ্ছে কাছাকাছি কোথায় বৃষ্টি হয়েছে। ১২ এপ্রিল ১৯৫০, বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর সােয়া ২টা থেকে সােয়া ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় অফিসে বৃত্তির টাকা। তােলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু পারলাম না। বিকেল ৫টায় শহরের দিকে গিয়েছিলাম। সদরঘাট এবং ইসলামপুর থেকে কিছু কেনাকাটা করেছি। কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া গেল না। সন্ধ্যা ৭টায় হলে ফিরেছি। রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কার্জন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট ইউনিয়নের পরিবেশিত “ওথেলাে” নাটক দেখলাম। রাত ১২টায় বিছানায়। আবহাওয়া স্বাভাবিক। গুমােট ভাব।
১৩ এপ্রিল ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বলতে গেলে কিছু না করেই সারাদিন রুমের মধ্যেই কাটল। প্রায় সারাক্ষণই ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। রাত ১০টায় বিছানায়। আবহাওয়া : সকাল থেকেই আকাশে প্রচুর মেঘ জমেছে। সারাদিন বৃষ্টির ভাব ছিল। সন্ধ্যায় এক পশলা বৃষ্টি ঝরে পড়ল। মনে হচ্ছে কাছাকাছি এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। ১৪ এপ্রিল ১৯৫০, শুক্রবার পৌনে ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বাংলা নববর্ষ – ১৩৫৭। দুপুর ২টায় ডাঃ করিমের বাসায় গেলাম, কিন্তু সে তখন বাইরে ছিল। সেখান থেকে অলি আহাদের বাসায় গেলাম এবং বিকেল ৪টা পর্যন্ত সেখানে। ছিলাম। সাড়ে ৪টায় আবার ডাঃ করিমের বাসায় গিয়ে তার সাথে দেখা হল। সন্ধ্যা ৭টায় এখান থেকে বের হলাম। হলে ফেরার পথে আলি আজগরের সঙ্গে দেখা হল। রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এ. খায়েরের সঙ্গে তার রুমে কথা বললাম। রাত ১০টায় বিছানায়। আবহাওয়া স্বাভাবিক। গতকালের বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমে এসেছে। এই বৃষ্টি তাপমাত্রা ক্রমাগত বেড়ে চলাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।
গত বছর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন বৃষ্টি দিয়ে শুরু হয়েছিল এবং ক্রমাগত বৃষ্টির ফলে ভীষণভাবে ফসলের ক্ষতি হয়। ১৫ এপ্রিল ১৯৫০, শনিবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয় অফিসে গেলাম এবং বৃত্তির টাকা তুললাম। আড়াইটা থেকে ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কমনরুমে ছিলাম। বিকেল ৫টায় কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায় তার সাথে দেখা করলাম। তােয়াহা সাহেবের পারিবারিক বিষয়ে প্রায় সাড়ে ৬টা পর্যন্ত কথা হল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তােয়াহা সাহেবের বাসায় গেলাম। অলি আহাদ এবং তােয়াহা সাহেবসহ জলিলের সঙ্গে দেখা করলাম। তাকে উকিলের মাধ্যমে রিভােকেশান দলিল তৈরি করিয়ে নিতে অনুরােধ করা হল। তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে সােয়া ১১টায় হলে ফিরলাম। রাত ১২টায় বিছানায় । আবহাওয়া ও প্রায় সারাদিন মেঘাচ্ছন্ন। বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চমৎকার এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। শীতল পরিবেশ। বর্ষাচ্ছন্ন অবস্থা চলছে। ১৬ এপ্রিল ১৯৫০, রবিবার বাড়ির পথে। ভাের ৪টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৬টা ২০ মিনিটের ট্রেনে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। আব্দুল হাই। এবং বাবু ঢাকা স্টেশন থেকে আমার সঙ্গে এসেছে। ৮টা ২০ মিনিটে শ্রীপুর পৌছেছি । শ্রীপুরে সালেহ আহমেদ মােড়লের সঙ্গে তার নির্বাচন সংক্রান্ত কেস নিয়ে কথা বললাম। আব্দুল হাকিম শ্রীপুর থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে গােসিঙ্গায় আমাদের সঙ্গে যােগ দিলেন। বাবু আমাদের বাড়িতে এল। দুপুর ১২টার দিকে খেয়ে ২টার দিকে ওদের বাড়ির উদ্দেশে চলে গেল। গিয়াস ভাইসাহেব এবং আজিজ মিয়া এসেছিলেন। গিয়াস ভাইসাহেব আমাদের সঙ্গে দুপুরে খেয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে চলে গেলেন। মমিনও এসেছিল। আব্দুল খান, নাজু মােড়ল প্রমুখেরা একত্রিত হয়ে দাগুর কেসসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বললেন। বিকেলে ঠাকুরা বিলে গিয়েছিলাম। সূর্যাস্তের সময় ফিরেছি। রাতে রাজেন্দ্রপুর বনের হিসাবরক্ষকের সাথে কথা বললাম। কাজে অনিয়মের জন্য আজিজ মিয়াকে বকুনি দিলাম। আবহাওয়া : সারাদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল, বিশেষ করে দুপুর পর্যন্ত। রাতে বেশ ঠান্ডা। গত কয়েক দিন এখানে খুব বৃষ্টি হয়েছে। মাটি পুরােপুরি সিক্ত। ১৭ এপ্রিল ১৯৫০, সােমবার। সাড়ে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শের জন্য দু’জন লােক এসেছিল। এদের একজন ছন্দার বাপের আত্মীয়। ১১টার দিকে মনিরুদ্দিন এবং আব্দুল মােড়ল এসেছিলেন, তাদের সঙ্গে দুপুর প্রায় দেড়টা পর্যন্ত দাশুর কেসসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হল। তারপর তারা চলে গেছে। বিকেলে মাস্টারের সঙ্গে কথা হল। আবহাওয়া ও বাতাসে গুমােট ভাব, গরম নেই।
১৮ এপ্রিল ১৯৫০, মঙ্গলবার সাড়ে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৯টার দিকে গফুর আলি আমাকে আকবর আলি বেপারির কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি তার পারিবারিক বিষয় থেকে শুরু করে ফরেস্টারের বিষয়, ইউনিয়ন বাের্ডের রাজনীতি সহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে প্রায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত কথা বললেন। ইসব আলি মামা এবং হাকিম মিয়ার সঙ্গে দুপুরের খাবার খেলাম। বরহর বনের হিসাব-পত্র পরীক্ষা করে মিলিয়ে দেখলাম। তারা সন্ধ্যায় চলে গেলেন। হাজি বাড়ি ঘাটে হাঁটতে গিয়ে সামসুর সাথে দেখা। সে আনসারের সঙ্গে তাদের জমির দখল সংক্রান্ত বিবাদ প্রসঙ্গে কথা বলল। আবহাওয়া ও রােদ ঝলমলে সারাদিন। প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত প্রবল বাতাস, বাতাসে দখিনা জলীয় বাষ্প। ১৯ এপ্রিল ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ১০টার দিকে গােসিঙ্গা স্কুলে গেলাম। খেয়া ঘাটে দাগু এবং বাবুর সঙ্গে দেখা, ওরা জামিন পেয়েছে। বেলা প্রায় ১টা পর্যন্ত আকরামতউল্লাহ মাস্টারের সঙ্গে কথা বলে দেড়টার দিকে বাড়ি ফিরেছি। আব্দুল হাই, সারােয়ার ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে বিকেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। তার সঙ্গে বাকতার বাড়ি পর্যন্ত গেলাম। এরপর ঠাকুরা বিল, কাল বাড়ি, মাজহারটেকের আশেপাশে হেটে সূর্যাস্তের পর বাড়ি ফিরেছি। রাতে জাফর আলি মােড়ল এসেছিলেন। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। রৌদ্রালােকিত দিন। মধ্যরাত পর্যন্ত প্রবল বাতাস। চাষাবাদের জন্য ভাল আবহাওয়া । ২০ এপ্রিল ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আব্দুল খানের সঙ্গে বিভিন্ন পাঁচমিশালি প্রসঙ্গে কথা হল। আব্দুল খানের সঙ্গে পিঠা দিয়ে নাস্তা করেছি।
১২০
আমি যখন ফেরার জন্য উঠছি তখন আহমেদ, তাহির আলি এবং গফুর আলি সেখানে এলেন। দুপুরে দাগু এসেছিল। আমাদের বাড়িতে আহমেদ আলি মাস্টারের ৪জন বন্ধু এসেছিল। এই চার জনই ছাত্র। এদের একজন ইউসুফ মেডিকেল হলের। ওরা দুপুরে খেয়ে বিকেলে চলে গেল। বাঘিয়ার মফিজউদ্দিন মুনশী এসেছিলেন। দুপুরে আমাদের সঙ্গে খেয়ে চলে গেছেন। কাল বাড়িতে ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লার সঙ্গে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কথা হল। আবহাওয়া : সারাদিন এবং মধ্যরাত পর্যন্ত ঝড়ো বাতাস। চাষাবাদের জন্য অনুকূল আবহাওয়া চলছে। ২১ এপ্রিল ১৯৫০, শুক্রবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিনই বাড়ির আশেপাশেই ছিলাম। বিকেলে আমাদের বাড়িতে দরদরিয়ার প্রায় সবাই এবং টান চৌড়াপাড়ার দু’জন এসেছিলেন। প্রায় মধ্যরাত্রি পর্যন্ত সমিতির মজুত থেকে ধান বন্টন করা হল। অন্যান্যদের মধ্যে আব্দুল খান, রজব আলি, জব্বার, আব্বাস, আয়েত আলি, জাবর আলি, আক্কাস আলি এবং আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। আবহাওয়া : প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত বাতাস। বাতাসে জলীয় বাষ্প। বৃষ্টির আসন্ন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ২২ এপ্রিল ১৯৫০, শনিবার। সকাল ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুরে নদীর পাড়ে গেলাম এবং লস্কর বেপারির সঙ্গে তার চরে দেখা করলাম। আমাদের বেপারি বাড়ির জমিতে প্রায় দেড় ঘন্টা তার সঙ্গে কথা হল। শাহেদ আলির বাড়িতে আমসু, আব্বাস, শাহাদ আলি, পরে পাবু চৌকিদারের সঙ্গে আধ ঘন্টা কথা হল। বিকেলে উত্তরের বন, চৌকিদার বাড়ি, বাকতার বাড়ির আশেপাশে গেলাম । সূর্যাস্তের পর ফিরেছি। আবহাওয়া ও বাতাস আগের মতই । মেঘহীন আকাশ। তীব্র রােদ।
২৩ এপ্রিল ১৯৫০, রবিবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ১০টার দিকে হােসেন মৃধা এসেছিলেন। দুপুর পর্যন্ত কথা হল। হােসেন মৃধা দুপুরে খেয়ে বিকেলে গেলেন। সন্ধ্যায় দিগধার উদ্দেশে রওনা দিলাম। রাতটা সেখানে থাকলাম। খুব ভােরে আবু মােড়ল এসে আব্দুল খানের কাছে তার পাওনা টাকা পয়সা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বললেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে সরাসরি আব্দুল খানের কাছে গেলাম এবং তাকে আবু মােড়লের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য বললাম। আবহাওয়া : আগের মতই বাতাস। তীব্র রােদ ও গরম। প্রয়ােজনীয় বৃষ্টির অভাবে ফসলের ক্ষতি হবে। ২৪ এপ্রিল ১৯৫০, সােমবার ভাের ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। বিকেল প্রায় ৪টা পর্যন্ত বেপারি বাড়িতে ছিলাম। বিকেলে দেওনায় মৌলভী বাড়িতে গেলাম। রাতে এই বাড়িতেই ছিলাম। সন্ধ্যায় মৌলভী মােহরউদ্দিন দিগধা মাদ্রাসা এবং মাদ্রাসার আয় নিয়ে মওলানা সাহেবের আচরণ বিষয়ে কথা বললেন। আবহাওয়া ? সারাদিন এবং রাতের প্রথম প্রহর পর্যন্ত বেশ বাতাস। তারপর থেকে বাতাস বন্ধ। বাতাসে জলীয় বাষ্প অনুভব করা যায়। ২৫ এপ্রিল ১৯৫০, মঙ্গলবার ভাের ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকালের নাস্তার পর দুলার সঙ্গে দুপুরে বাড়িতে ফিরেছি। বিকেলে ঠাকুরা বিলে গেলাম। সেখানে আমসু, সামসু, সুবারবাপ বােরাে ধান কাটছিল। এর আগে জোহরের নামাজের সময় আবু মােড়ল এসেছিলেন। তিনি আব্দুল খানের কাছ থেকে ৯ টাকা ধার নিয়ে চলে গেলেন। আবহাওয়া ও তীব্র রৌদ্রকরােজ্জ্বল দিন। বাতাস অনেক পড়ে গেছে। বাতাসে জলীয় বাষ্প উপস্থিত।
২৬ এপ্রিল ১৯৫০, বুধবার ভাের ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে নদীর পাড়ে পাট খেতের আশেপাশে হাঁটলাম। প্রায় ঘন্টা দুয়েক হাজি বাড়িতে বসলাম। সেখানে সাবু, গেসু, কুকু প্রমুখেরা মিলে একটি কুঁড়ে ঘর তুলছিল। বিকেল বেলা গােসিঙ্গা স্কুলে গেলাম। গােসিঙ্গা এবং শ্রীপুর স্কুলের ছেলেদের মধ্যে দাড়িয়াবান্ধা প্রতিযােগিতা হল। খেলা অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়েছে। আকরামতউল্লাহ মাস্টার উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছি। আবহাওয়া ও প্রচন্ড সূর্যের তাপ। বাতাস কমে গেছে। আশু বৃষ্টির কোন লক্ষণ নেই। ২৭ এপ্রিল ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ভাের ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। টুকু সকালে দিগধা গিয়েছিল। বিকেলে মাছ ধরে সামসুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। হাটের সময় জাফর মােড়ল এসেছিলেন এবং আমার কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়েছেন। বিকেলে ঠাকুরা বিল হয়ে বলধা বনে গিয়েছিলাম। বাড়ি ফিরেছি রাতের শুরুতে। এর আগে জব্বার এসেছিল—আমাকে সিমেন্টের পারমিটের জন্য ঢাকা যাওয়ার অনুরােধ করতে। সে সময় কাগুর বাপ উপস্থিত ছিল। রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত মাস্টার সাহেবের সঙ্গে ধর্ম নিয়ে কথা হল। আবহাওয়া ও তীব্র রােদ। থেমে থেমে বাতাস বইছে। দিন এবং রাতের আকাশ পরিষ্কার। ২৮ এপ্রিল ১৯৫০, শুক্রবার ভাের ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুরে ইয়াসিন এবং সদুর বাপ এসেছিলেন তার ছেলের আর্মিতে যােগদানের বিষয়ে পরামর্শ নেয়ার জন্য। মােহাম্মদ তার কেসের ব্যাপারে কথা বলার জন্য দু’বার এসেছিল প্রথম দুপুরে, তারপর আবার বিকেলে।
বিকেলে খালেক ফকির এসেছিলেন। মাস্টার ও আমাকে সাথে নিয়ে তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরলেন। রাতে তিনি আমাদের অতিথি হলেন। আবহাওয়া ও বিকেলে আকাশ মেঘে ঢেকে গেল এবং সন্ধ্যায় বৃষ্টি শুরু হল। কিন্তু বাতাসের কারণে মেঘ সরে যাওয়ায় আর বৃষ্টি হল না। ২৯ এপ্রিল ১৯৫০, শনিবার। ভাের ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে আক্তার মাস্টার এবং গিয়াস এসেছিল। আক্তার মাস্টার গােসিঙ্গা ইসলামিক মাদ্রাসার ক্যাশ বইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। দুপুর ২টার দিকে থানার সেকেন্ড অফিসারের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমি এবং আব্দুল মােড়ল কাপাসিয়ার উদ্দেশে রওনা হলাম। পথে সরদার বাড়িতে থামলাম এবং নাস্তা করলাম। তারপর শফিউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে কাপাসিয়া গেলাম। রশিদ, আরিফ, সাবুর আলি ফকির, সুরেশ এবং আরও অনেকের সঙ্গে দেখা করলাম। সেকেন্ড অফিসার নাঈম মিয়ার সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে রাত আড়াইটার। দিকে তার নৌকায় বাড়িতে ফিরলাম। আবহাওয়া ও দুপুর পর্যন্ত তীব্র রােদ। বিকেলে আকাশে মেঘ জমল। বিকেল ৫টার দিকে হালকা এক পশলা বৃষ্টি ঝরে পড়ল। এরপর পরিষ্কার আকাশ। বাতাস আগের মতই। ৩০ এপ্রিল ১৯৫০, রবিবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে মােহাম্মদ এসেছিল। তার কেসের বিষয়ে সেকেন্ড অফিসার আমাকে যা বলেছেন তা তাকে জানালাম। দুপুরে গােসিঙ্গা এফ.পি. স্কুলের থার্ড পন্ডিত এলেন। তাকে তাদের বিয়ে। সংক্রান্ত কেসের ব্যাপারে সেকেন্ড অফিসারের বক্তব্য জানালাম। আবুকে সঙ্গে নিয়ে সাবুর আলি ফকির এলেন দুপুর বেলায়। তারা সাবু খানের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কথা বললেন এবং দুপুরে খাবার পর বিকেলে চলে গেলেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে গােসিঙ্গা ইসলামিক মাদ্রাসার মিটিংয়ে গেলাম। ২৬০ টাকা সংগ্রহের একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। অন্যান্যদের মধ্যে বন।
কর্মকর্তা এবং নায়েব উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যার পর নায়েব আমাকে চা দিয়ে আপ্যায়িত করলেন। রাত ৮টার দিকে বাড়ি ফিরেছি। আবহাওয়া ও সঁাত সেঁতে ভাব । মেঘাচ্ছন্ন আকাশ বিশেষ করে বিকেলের দিকে, মনে হচ্ছিল এখনই বৃষ্টি নামবে, কিন্তু এক ফোটাও বৃষ্টি হল না। বাতাস আগের মতই। এই মুহুর্তে সমস্ত এলাকায় ভাল ফসলের জন্য বৃষ্টির অতি প্রয়ােজন। বৃষ্টির অভাবে আমাদের এলাকার মত শুষ্ক এলাকার ফসল ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। যে সব জায়গায় বৃষ্টি অথবা খারাপ আবহাওয়া নেই। সেসব জায়গায় খুব সহজেই বােরাে ধান রােপন করা গেছে। তুলনামূলকভাবে উচু এলাকার ফসল শুকিয়ে মরে গেলেও অন্যান্য এলাকায় ফসল ভাল হয়েছে। সার্বিকভাবে গড়পড়তা ফসল ভালই। হয়েছে। চালের দাম কমে গিয়ে মণ প্রতি ৫ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। এবং শাইল। ও বােরাে ধান মাসের ৩য় সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি মণ ৮/৯ টাকা দরে। বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ৪র্থ সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকে দামের উর্ধগতি লক্ষ্য করা যায়। এই দাম প্রতি মণ ৭টাকা এবং ৮ ও ১০টাকা পর্যন্ত উঠেছে। মাসের ৩য় সপ্তাহ থেকে সরিষার বীজের দাম প্রতি মণ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হয়েছে।
১২৫
১ মে ১৯৫০, সােমবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুরে আসর আলির ছেলেকে সঙ্গে করে গােসিঙ্গার জহরউদ্দিন আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। দিগধার তালই সাহেব এবং হেড মাস্টার সাহেবের ভাই ঢাকা যাবার পথে আমাদের বাড়িতে দুপুরে খেয়ে গেলেন। বিকেলে গােসিঙ্গায় গেলাম। এখানে লতিফপুর দল এবং জুনিয়র মাদ্রাসা। দলের মধ্যে দাড়িয়াবান্ধা খেলার চূড়ান্ত প্রতিযােগিতা দেখলাম। জুনিয়র মাদ্রাসা দল খেলায় জিতেছে। আমি সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখলাম এবং পুরস্কার বিতরণ করলাম। সাড়ে ৭টার দিকে বাড়ি ফিরলাম। আবহাওয়া : বিকেলে সম্পূর্ণ আকাশ গভীর কালাে মেঘে ঢেকে গেল। দেখে মনে হল বৃষ্টি অবশ্যম্ভাবি। বাতাস কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল। কিন্তু বাতাস পুনরায় শুরু হওয়ায় আর বৃষ্টি হল না। তা সত্বেও আকাশ প্রায় সারারাতই ঘন মেঘে ঢেকে ছিল। ২ মে ১৯৫০, মঙ্গলবার সাড়ে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন বাড়িতেই। ঠাকুরা বিলের আশেপাশে বিকেলে ঘােরাফেরার সময় চেরাগ আলি মােড়লের সঙ্গে তাদের পুকুর পাড়ে দেখা হল। দুপুরে জাফর আলি মােড়ল আমাদের বাড়িতে আমার সাথে দেখা করতে এলেন। ওমেদ আলির জমি, যা এখন হরি মােহনের দখলে, সে প্রসঙ্গে কথা বললেন। বিকেলে বাড়ির আশেপাশেই ঘােরাঘুরি করলাম। সন্ধ্যায় রায়েদের হাসির বাপ এল। আবহাওয়া : বৃষ্টির কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যদিও বাতাস আর্দ্র। আকাশে কোন মেঘ জমল না। ৩ মে ১৯৫০, বুধবার ঢাকার পথে। ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের ট্রেনে এ, এ, পালােয়ানের সঙ্গে ঢাকার উদ্দেশে। রওনা হলাম। পুরাে বিকেল হলেই কাটল। সন্ধ্যায় ঠাঠারি বাজারে গেলাম। সেখানে ডাঃ করিম, জলিল, বদি, পারু ও অন্যান্যের সঙ্গে দেখা হল। র্যাংকিন স্ট্রীটে অলি আহাদ এবং সামসুদ্দিনের সঙ্গে দেখা হল। ডাঃ করিমের সঙ্গে রাতের খাবার খেলাম এবং রাত সাড়ে ১০টায় হলে ফিরলাম। আবহাওয়া ও রােদ আগের মত। বিকেলে আকাশে মেঘ জমল। হালকা এক। পশলা বৃষ্টি হল। বাতাস কম। ৪ মে ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় অফিসে ৮ম কিস্তির বকেয়া পরিশােধ করলাম। দুপুর সােয়া ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে মাহবুব এবং ওয়াদুদের সঙ্গে কথা বললাম। ওরা ঢাকা কলেজের ধর্মঘট বিষয়ে এবং টিউশন ফি বৃদ্ধি। প্রসঙ্গে আলােচনা করল। বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ডি.এস.পি, সােবহান সাহেবের অফিসে। তারপর কোর্টে ইদ্রিস আলি দেওয়ান, এস. এ. রব, নান্না মিয়া, গিয়াস প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। বিকেল সাড়ে ৫টায় বার লাইব্রেরি থেকে কামরুদ্দিন সাহেবের সাথে তার বাসায় গেলাম এবং রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত, কথা হল। রাত ১০টায় ডাঃ করিমের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম। রাত সাড়ে ১১টায় হলে ফিরলাম । আবহাওয়া ঃ বাতাস নেই। বিকেলে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হল এবং রাত ১০টা থেকে ১ ঘন্টা ভাল বৃষ্টি হল। ৫ মে ১৯৫০, শুক্রবার সাড়ে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টায় হাসনাতের ওখানে বসলাম। সেখানে হস্তরেখাবিদ বােসের। সঙ্গে আলােচনা করার জন্য মহিউদ্দিন, সামসুদ্দিন, বদিউদ্দিন প্রমুখেরা উপস্থিত ছিল। শেষ খাবার খেয়েছিলাম ৪০ ঘন্টা আগে, এরপর আজ দুপুর ২টায় তােয়াহা সাহেব এবং অলি আহাদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেলাম। দিনের বাকি সময় তােয়াহা সাহেব এবং করিমের সঙ্গে তাদের বাসায়। তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে রাত ১০টায় হলে গেলাম এবং রাতটা সেখানেই কাটালাম। আবহাওয়া : বাতাসে জলীয় বাষ্প অনুভব করা যায়। বৃষ্টি নেই, গরম পরিবেশ। ৬ মে ১৯৫০, শনিবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৭টায় হল ছেড়ে দিলাম এবং ডাঃ করিমের বাসায় গেলাম। এখন থেকে ঢাকায় অবস্থানকালে ডাঃ করিমের বাসাতেই থাকবাে। তােয়াহা সাহেবের বাসায় জলিল, করিম, বাকী এবং অলি আহাদের। উপস্থিতিতে হস্তরেখাবিদের পরামর্শ শুনলাম। হস্তরেখাবিদরা তাদের মুখে যা আসে তাই বলে। কোন বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান নেই। বিকেল সাড়ে ৪টায় কেনাকাটার জন্য পাটুয়াটুলি হয়ে চক পর্যন্ত গেলাম। কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। কিন্তু তাকে পেলাম না। তার সঙ্গে আরমানিটোলা মাঠে দেখা হল। সন্ধ্যায় জালালউদ্দিনের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম। সে নাজিরা বাজার। পর্যন্ত আমার সঙ্গে এল। রাত ৮টায় ডাঃ করিমের বাসায় ফিরলাম। আবহাওয়া : বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা অনেক বেড়েছে। রােদের জন্য।
আবহাওয়া উত্তপ্ত। দিন ও রাত সঁাত সেঁতে। ৭ মে ১৯৫০, রবিবার। ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৮টায় সিরাজ বেপারির সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়ে প্যারামাউন্ট রেস্তরা। পর্যন্ত গেলাম। তারপর নাজিরা বাজারে চুল কেটে দুপুর ১টায় ফিরেছি। বিকেল সাড়ে ৪টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত কথা বললাম। আমি যখন বন বিভাগ প্রসঙ্গে কথা বললাম, তখন তিনি। কোনরকম আগ্রহই দেখালেন না। মনে হল তিনি এই বিষয়টি বাদ দিতে চান। তাই এই প্রসঙ্গের উল্লেখ না করে কৌশলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে হলে গেলাম। হাকিম, আলম, রহমানের সঙ্গে দেখা হল। কিন্তু আজগরকে খুঁজে পেলাম না। রাত সাড়ে ১০টায় ঠাঠারি বাজারে ফিরলাম। আবহাওয়া ও বাতাস কম। গরম আবহাওয়া। বাতাসে আদ্রতা আছে। কিন্তু বৃষ্টির কোন লক্ষণ নেই। ৮ মে ১৯৫০, সসামবার বাড়ির পথে (নিগুয়ারি)। ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৬টা ২০ মিনিটের ট্রেনে ঢাকা থেকে নিগুয়ারির উদ্দেশে রওনা হলাম। কাওরাইদ থেকে ১০টার দিকে নিগুয়ারি পৌছালাম। বিকেলে হামিদ ভাইসাহেব, অনুর মা, রাবিয়া এবং আজিজ মিয়া ও তার মায়ের সঙ্গে দেখা। করলাম। রাতে এখানে আনােয়ারার দাদার বাড়িতে থাকলাম। আবহাওয়া ও সূর্যাস্তের সময় উত্তর-পশ্চিম কোণ থেকে হঠাৎ সরে আসা ঘন কালাে মেঘে সম্পূর্ণ আকাশ ঢেকে গেল। সন্ধ্যায় বৃষ্টি শুরু হয়ে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত চলল। লক্ষ চাষির দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চমৎকার এক পশলা বৃষ্টি। এই বৃষ্টি ফসলের জন্য খুব ভাল হবে এবং ফসলকে আসন্ন খরার হাত থেকে রক্ষা করবে। বি.দ্র. প্রেসিডেন্ট ট্রম্যানের আমন্ত্রণে মি. লিয়াকত আলি খান ৩ সপ্তাহের ভ্রমণে ৩/৫/৫০ তারিখ ইউ.এস.এ. পৌছেছেন। ৯ মে ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। নাস্তার পর অনুর মায়ের বাড়ি গেলাম। মুর্শিদ মিয়ার মা এবং পাঠান সাহেবের সঙ্গে তাদের বাড়িতে কথা বললাম। দুপুরে অনুর মায়ের বাড়িতে খেলাম। বিকেল বেলা মুর্শিদ মিয়ার সঙ্গে ত্রিমােহনী গেলাম এবং ফিরে এলাম সূর্যাস্তের সময় । মুর্শিদ মিয়া এবং পাঠান সাহেব সহ পাঠান বাড়িতে রাতে খাবার খেলাম। তারা করিমের বিয়ে প্রসঙ্গে কথা বললেন। আবহাওয়া ও বাতাসে আদ্রতার কারণে সারাদিন গরম। সূর্যাস্তের পর হঠাৎ প্রবল বেগে বাতাস শুরু হল এবং পরপরই বৃষ্টি, চলল প্রায় দেড় ঘন্টা। হালকা বৃষ্টি।
১০ মে ১৯৫০, বুধবার ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। ১১টায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। সীংহস্ৰীতে নদী পার হলাম। পথে। জামালউদ্দিন খানের সঙ্গে দেখা হল। তিনি বরমি বাজারে যাচ্ছিলেন। কুরিয়াদিতে জব্বার মিয়ার বাড়ি গেলাম । দুপুর ১টার দিকে তার সঙ্গে দেখা হল এবং সেখানে ১ ঘন্টার মত বিশ্রাম নিলাম। বিকেলে বাড়ি ফিরেছি। সন্ধ্যায় বেপারি বাড়ি গেলাম। সেখানে আব্বাস এবং পুকারবাপ কাঠ কাটছিল। আকবর আলি বেপারিও সেখানে ছিলেন। তিনি আব্দুল খানের কাছে তার জমি বিক্রি এবং এর ফলাফল বিষয়ে কথা বললেন। আবহাওয়া ও প্রচন্ড রােদের তাপ। পরিষ্কার আকাশ। উত্তপ্ত চারদিক। বাতাস ১১ মে ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুরে হাজি বাড়ি, নদীর পার হয়ে আমাদের পাট খেত পর্যন্ত গেলাম। ফেরার পথে আমার সাথে মােহাম্মদ দেখা করল। সে বলল, তার অনুপস্থিতিতে আমসু এবং অন্যান্যরা তার বাঁশ বাগান ক্ষতিগ্রস্থ করেছে এবং
১৩০
অলংকার ও টাকা নিয়ে গেছে। দুপুরের খাবার পর তফাজ্জলের বাবা তফাজ্জলকে নিয়ে চলে গেলেন। তিনি গতকাল আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। সমিরুদ্দিনও তার বাড়িতে চলে গেল। বিকেলে অলি মামুদ এলেন – জামাত আলির কাছে তার বন বিক্রির বিষয়ে। আলাপ করতে। আবহাওয়া ও প্রচন্ড রােদ। মেঘের কোন চিহ্নই নেই। উত্তপ্ত পরিবেশ। বাতাসও নেই।
১২ মে ১৯৫০, শুক্রবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। জুনিয়র মাদ্রাসার সভায় যােগ দিতে বিকেলে গােসিঙ্গা গেলাম। আমি সভায় সভাপতিত্ব করলাম। নায়েব ১৭/৫/৫০ তারিখে বন বিক্রির প্রমাণপত্র হিসেবে একটা নােটিশ দেখালে সেটাতে স্বাক্ষর করলাম। সূর্যাস্তের পর বাড়ি ফিরলাম। আবহাওয়া : বিকেল ৫টার দিকে হঠাৎ উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে মেঘ এসে রৌদ্রজ্জ্বল আকাশকে ঢেকে দিল এবং প্রায় ১ ঘন্টা ডাল এক পশলা বৃষ্টির পর। আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেল। ১৩ মে ১৯৫০, শনিবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুরের আগে ওয়ারেস আলির বাড়ি, নদীর পার, বড় চর হয়ে পুরাতন বেপারি বাড়ি গেলাম। আহমেদ, শফি, শাহেদ আলি প্রমুখের সঙ্গে কথা বলে মধ্যাহ্নে বাড়ি ফিরলাম। কাল বাড়িতে গিয়ে ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লার সাথে দেখা করলাম। ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লার সাথে কাল বাড়িতেই দুপুরের খাবার খেলাম। মাঝের টেক হয়ে বিকেলে বাড়ি ফিরেছি। আবহাওয়া ও প্রখর সূর্যালােকিত পুরাে দিন। পরিষ্কার আকাশ।
১৪ মে ১৯৫০, রবিবার ভাের ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন বাড়িতে ছিলাম । বিকেলে আজিজ খানের বাড়িতে গেলাম। তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত আকবর মিয়ার জমি বিক্রি প্রসঙ্গে কথা বললেন। মফিজউদ্দিন কাউকে কিছু না বলে দুপুরে বাড়ি থেকে চলে গেছে এবং রাতেও বাড়ি ফেরেনি। আবহাওয়া ও প্রখর সূর্যালােকিত দিন । রাতের প্রথম প্রহরে বৃষ্টি হবে বলে মনে হলেও পরে বৃষ্টি হয়নি। যদিও আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল এবং বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। বি.দ্র. আজ বাঘিয়ার দাগু মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে (১৪.৫.৫০)। সে একটি হিন্দু নির্যাতন মামলায় অভিযুক্ত ছিল এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়। কয়েকদিন আগে তাকে থানায় পেটানাে হয়েছিল। ১৫ মে ১৯৫০, সােমবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন বাড়ির আশেপাশেই রইলাম। সূর্যাস্তের পর আমাদের মাস্টারের পরিচিত ২জন লােক এল। তারা রাতে আমাদের বাড়িতে থাকল। মফিজউদ্দিন আজও ফেরেনি কিংবা কোন সংবাদও দেয়নি। আমার কাছেও তার কোন খবর পেীছেনি। আবহাওয়া ও রৌদ্রস্নাত উজ্জ্বল দিন। পরিষ্কার রাত। বৃষ্টির কোন লক্ষণ নেই। ১৬ মে ১৯৫০, মঙ্গলবার ভাের ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত আমস এবং মােহাম্মদের জমি পরিমাপে অংশ নিলাম । রজব আলি, আমসু, শফি, আসমত প্রমুখেরা উপস্থিত ছিল। সন্ধ্যায় ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লার ছেলে এবং তাদের মাস্টার গােসিঙ্গা বন অফিসে গিয়েছিল। ওরা গােসিঙ্গায় যাবার সময় এবং ফেরার পথে আমার। সঙ্গে দেখা করেছে। আবহাওয়া সারাদিন পরিষ্কার আকাশ। প্রখর রৌদ্র তাপ। প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত প্রচন্ড গরম। ১৭ মে ১৯৫০, বুধবার ভোের ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন বাড়ির আশেপাশেই ছিলাম। দুলা এসেছিল। বিকেলে চলে গেল। আফসু-দফতু আজ সন্ধ্যায় দিগধা গেল। আমাদের মাস্টারের চাচা আজ রাতে আমাদের বাড়িতে থাকলেন। মাস্টার আজ সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে ফিরেছেন। মফিজউদ্দিনের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে আজ বিকেলে আব্দুল গফুর আমাকে জানাল, গত মঙ্গলবার মফিজউদ্দিন বাঘিয়ায় ছিল। আবহাওয়া : রাতের প্রথম ভাগ পর্যন্ত গরম। রাতের শেষ ভাগে চমৎকার এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টি ফসলের জন্য খুব ভাল হবে। তবে যদি তা দীর্ঘ বর্ষা হয়। ১৮ মে ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ভাের ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। আব্দুল খানের বাংলােয় প্রায় ১ ঘন্টা ঘুমালাম। দুপুরে ফুফু আম্মা, বড় বুবু, আউয়াল, সিরাজ আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। – শফিউদ্দিন খানের বিয়ের প্রস্তাবের বিষয়ে কথা বলতে। তারা সন্ধ্যায় চলে গেলেন। রাতে জাফর মোেড়ল এলেন। আবহাওয়া : সকাল থেকেই আকাশ মেঘে ঢাকা। দুপুরে চমৎকার এক পশলা বৃষ্টি হল। পরে আর বৃষ্টি হয়নি। ১৯ মে ১৯৫০, শুক্রবার ভাের ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। মামদির বাড়িতে আশু এবং কালুর স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া মিটানাের সালিসে যােগ দিতে মামদির বাড়িতে গেলাম। নাজু মােড়ল, নবুর আলি চৌকিদার, আহমেদ, লুদাই, টুকু প্রমুখেরা উপস্থিত ছিল। প্রায় সূর্যাস্তের সময় সালিস থেকে ফিরেছি। সন্ধ্যায় গােসিঙ্গা স্কুলে গিয়েছিলাম এবং আকরামতউল্লাহ মাস্টারের সঙ্গে দেখা করলাম। হেড মাস্টার সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে তখনই বাড়ি ফিরলাম।
সন্ধ্যার পর মান্নাফ খান, আজিজ মিয়া, আরশাদ এসেছিল। আবহাওয়া ও দিনে এবং রাতে কোন বৃষ্টি হয়নি। প্রখর রােদ। পরিষ্কার রাত। ২০ মে ১৯৫০, শনিবার ভাের ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ১০টার দিকে সিরাজের বাবা এসেছিলেন। দুপুরে খেয়ে বিকেলে সবাই চলে গেল। নিগুয়ারির লােকেরা তরগাঁও গেলেন। মান্নাফ খানকে। বললাম তিনি যেন মুর্শিদ মিয়াকে আগামী বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার আমাদের বাড়ি আসার জন্য খবর দেন। বিকেলে হাজি বাড়ি ঘাটে গেলাম। সেখানে ইসব আলি মামা বেপারিদের জ্বালানি কাঠ পরিমাপ করছিলেন। সেখান থেকে পাট খেত, নদীর পারের ফিরলাম। আবহাওয়া ও সকাল থেকে প্রায় দুপুর পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হল। তারপর থেকে দিনের বাকি অংশে এবং রাতে আর বৃষ্টি হয়নি। ২১ মে ১৯৫০, রবিবার ঢাকার পথে। ভাের ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। দুপুর ১টা ১৭ মিনিটের ট্রেন পেলাম। জনাব আকরামতউল্লাহ স্টেশনে আমাদের সঙ্গে যােগ দিলেন। ট্রেন ২টা ২০ মিনিটে শ্রীপুর ছাড়ল। এ. হাকিম স্টেশনে এসেছিল। সন্ধ্যায় এবং রাত ৮টায় দু’বার সােবহান সাহেবের বাসায় গেলাম। কিন্তু তিনি বাসায় ছিলেন না। রাতে ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লার সাথে ডাঃ করিমের কোয়ার্টারে থাকলাম। বিকেলে কিছুক্ষণের জন্য এফ.এইচ,এম, হলে গেলাম এবং জালাল, হাফিজ আহমেদ, ফিরােজ, কাদেরের সঙ্গে দেখা করলাম। ঢাকায় রওনা হওয়ার মুহূর্তে আমাদের মাস্টারের কাছে শুনলাম যে, গতরাতে গােসিঙ্গা বন অফিসে বড় ধরনের ডাকাতি হয়েছে। এতে ফরেস্টার আহত হয়েছেন।
আবহাওয়া ও সারাদিন মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। সকাল থেকে বিরতি দিয়ে দিয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ঢাকায় আজ ভারি বর্ষণের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ২২ মে ১৯৫০, সােমবার ভাের ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৮টায় আকরামতউল্লাহ সাহেব এবং ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লাকে নিয়ে | ডি.এস.পি,র সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় গেলাম এবং তার সঙ্গে মামলার বিষয়ে আলােচনা করলাম। বেলা ১১টায় কোটে গেলাম। কেস ১২/৬/৫০ তারিখ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। বার লাইব্রেরিতে কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। দুপুর ১টার সময় এস.আই. এ. এইচ. চৌধুরী আমাদের চা দিয়ে আপ্যায়িত করলেন। দুপুর আড়াইটায় হাফিজ বেপারির বাসায় গিয়ে তার সাথে দেখা করলাম । মি, মজিদের সঙ্গে কথা বললাম। আব্দুল জব্বার সেখানে আমার সাথে দেখা করল। তিনি সিমেন্টের জন্য এসেছেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় সেখান থেকে বের হলাম। বিকেল ৫টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। সাড়ে ৬টায় তার সঙ্গে হাশিম সাহেবের সাথে দেখা করতে গেলাম। রাত সাড়ে ৯টায় ফিরলাম।। রাত সাড়ে ১১টায় তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে রাতের খাবার খেলাম। আবহাওয়া ও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সােয়া ৫টার দিকে প্রায় ১ ঘন্টার জন্য ভারি বর্ষণ হল। তারপর আর বৃষ্টি হয়নি। সঁাত সেঁতে আবহাওয়া চলছে। বি.দ্র. এফ. এইচ. এম. হলের হাউজ টিউটর মি. নােমানি (কাইয়ুম হযরত) ১৮/৫/৫০ তারিখে উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে পরলােকগমন করেছেন। ২৩ মে ১৯৫০, মঙ্গলবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। বাড়ি থেকে আহমেদ আলি মাস্টার সাহেব সকাল সাড়ে ৭টায় আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তিনি বললেন যে, রাজেন্দ্রপুরের রেঞ্জার শ্রীপুর থানার সেকেন্ড অফিসারকে নিয়ে এবং আকবর আলি বেপারি ও সাহেব আলি বেপারি আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন গােসিঙ্গার ডাকাতির সূত্র ধরে। তারা ওয়ারেস আলি এবং তার ভাইকে তাদের সঙ্গে নিয়ে গেছেন।
১৩৫
আহমেদ আলিকে সঙ্গে করে সােয়া ৮টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সাথে দেখা করলাম। দুপুর ১২টায় ৩০ টাকা সাথে দিয়ে আহমেদ আলিকে বার লাইব্রেরি থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম। এর আগে সাড়ে ১০টায় কমরেড ব্যাংক থেকে ৫০ টাকার চেক ভাঙ্গিয়েছি। হায়দারের দোকানে যাওয়ার পথে শওকত আলির সঙ্গে দেখা হল। বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে কোর্টে ছিলাম। এই সময়ের মধ্যে এস.আই. এ.এইচ. চৌধুরী, সি.এস.আই মােহাম্মদ ইসমাইল এবং কাপাশিয়ার সেকেন্ড অফিসার নান্না মিয়ার সঙ্গে দেখা হল। তােয়াহা সাহেবের বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে আড়াইটায় আমি এবং কামরুদ্দিন সাহেব তােয়াহা সাহেবের বাসায় গিয়েছিলাম। আধ ঘন্টা পরে আবার কোটে ফিরেছি। ডি, এন, রশিদের কাছে শুনলাম যে, সাহেব আলি বেপারি ঢাকায় এসেছেন এবং আমার ঠিকানা খুঁজছেন। সন্ধ্যা ৬টায় আমার বর্তমান বাসস্থানে ফিরলাম। আবহাওয়া ঃ বাতাসে ব্যাপক মাত্রায় জলীয় বাষ্প । আবহাওয়া ভীষণ গরম। রাতে আকাশ মেঘে ছেয়ে গেলেও কোন বৃষ্টি হয়নি। বিদ্র, আজ সকাল ৮টায় (২৩/৫/৫০) তােয়াহা সাহেবের বাবা তার যােগীনগরের বাসায় পরলােকগমন করেছেন। তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাঃ নােভাকের চিকিৎসাধীন ছিলেন। আর চিকিৎসা সম্ভব ছিল না বলে তাকে কিছুদিন আগে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। ২৪ মে ১৯৫০, বুধবার। সকাল ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি দুপুর দেড়টায় তােয়াহা সাহেবের বাসায় গেলাম। বেলা আড়াইটার সময় তারা সবাই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলেন। বেলা ৩টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। জহিরউদ্দিন সাহেব এফ.আই.আর. এ উল্লিখিত নামগুলি নােট করলেন, যেখানে অন্যান্যদের মধ্যে মফিজউদ্দিন, আব্দুল হাকিম এবং আমার নামও ছিল। বিকেল সাড়ে ৪টায় রহিম মােক্তার সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে এম,এল,এ, শামসুল হকের বাসায় নিয়ে গেলেন। হক সাহেব এবং তার স্ত্রী আমাদের আম খাওয়ালেন। ওখান থেকে সাড়ে ৫টায় বের হলাম । রহিম সাহেব শাখারি বাজার-কোর্ট হাউজ স্ট্রীট ক্রসিংয়ে একটি নতুন শুরু হওয়া রেস্তরায় নাস্তা করালেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ফিরেছি। আবহাওয়া ঃ সারাদিন প্রচন্ড গরম। সূর্যাস্তে পর এক পশলা বৃষ্টি হলেও পরিবেশ আগের মতই গুমােট। ২৫ মে ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ৩টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম এবং আধ ঘন্টা পরে বের হয়ে গেলাম । সাড়ে ৪টায় এফ.এইচ.এম. হলে গেলাম। এস, আলম, এ, আজিম, আর, আমিন, এ, হাকিম, মুস্তাফা প্রমুখের সঙ্গে দেখা করলাম। মঞ্জুরুল আহসান এবং মুস্তাফার সঙ্গে হাঁটার জন্য রমনার উত্তর অংশে গেলাম। সাড়ে ৭টায় হলে ফিরলাম এবং রাকিবের কাছে এম, হকের ঠিকানা। চাইলাম। রাত সাড়ে ৮টায় সরদার সাহেবের বাসায় গেলাম। কামরুদ্দিন সাহেব আমাদের কেসের ব্যাপারে সরদার সাহেবের সঙ্গে কথা বললেন। এই সময়। সালেহ আহমদ মােড়ল, হাকিম মিয়া প্রমুখেরা উপস্থিত ছিল। তাদের সাথে। আরমানিটোলা মাঠে রাত ১১টা পর্যন্ত কথা বলে সাড়ে ১১টায় ফিরলাম। আবহাওয়া ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের কারণে গরম আবহাওয়া। সারাদিন এবং রাতে আকাশে বিচ্ছিন্নভাবে মেঘ ভেসেছিল। বিচ্ছিন্নভাবে কোন আন্দোলন সম্ভব নয়। এতে ঘটনার পর ঘটনা। জড়িয়ে আন্দোলন নিস্তেজ হয়ে যায়। সমাজের কাঠামাে এবং ব্যবস্থার যে কোন নির্দিষ্ট অংশ থেকে অন্যায় নির্মূল করার চেষ্টা সমস্যাটিকে আরাে জটিলতার দিকে নিয়ে যায়। এতে সংস্কারকরা কয়েকজনের দ্বারা পরিকল্পিত ষড়ন্ত্রের শিকারে পরিণত হন। তাই একই সাথে জোরালাে আঘাত এবং আমূল পরিবর্তন এই অবস্থার সমাধান বলে মনে হয়। বি. দ্র. তলপেটে অপারেশনের জটিলতায় ২৫/৫/৫০ তারিখে লর্ড ওয়েভেল লন্ডনে পরলােকগমন করেছেন।
২৬ মে ১৯৫০, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন ঘরেই ছিলাম। অলি আহাদের সাথে দুপুর ২টায় একবার আধ ঘন্টার জন্য এবং রাত ৮টায় ১৫ মিনিটের জন্য দেখা করেছি। সকাল ১০টার সময় আহমেদ আলি মাস্টারের বড় ভাইকে সাথে নিয়ে। মফিজউদ্দিন ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। আবহাওয়া : বিকেল পর্যন্ত গুমােট আবহাওয়া। সাড়ে ৪টার দিকে আধ। ঘন্টার জন্য চমৎকার এক পশলা বৃষ্টি হল। তারপর থেকে পরিবেশ নাতিশীতােষ্ণ।
২৭ মে ১৯৫০, শনিবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৭টায় ডি.এস.পি, মি. সােবহানের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করে প্রায় আধ ঘন্টা কথা বললাম এবং তাকে গােসিঙ্গা ডাকাতি কেসের গুজব সম্পর্কে অবহিত করলাম। মি. সােবহান আমাকে জানালেন যে, তিনি ঘটনা সম্পর্কে জানেন এবং শ্রীপুরের আর.ডি. গতকাল তার সাথে অফিসে দেখা করেছেন। দুপরে আহমেদ আলি মাস্টার এলেন। এলাকার সবাই আমার খবর জানার জন্য উদ্বিগ্ন। সন্ধ্যায় নগেন আমার সাথে দেখা করল। আমি সাড়ে ৩টার দিকে এস, এম, হলে গেলাম। পথে ডি.এফ.ও. এবং এ.সি.এফ.কে পশ্চিম দিক থেকে রিক্সায় আসতে দেখলাম। আহমেদের রুমে তার সঙ্গে দেখা করলাম। সেখানে হাকিম মিয়াও ছিল। নাস্তা করে সাড়ে ৫টায় সেখান থেকে বের হয়ে ফিরে এসেছি। রমনা পােল্ট অফিসের এয়ার বক্সে তােয়াহা সাহেবের একটি চিঠি ছেড়েছি। আবহাওয়া ও বিকেলের শুরুতে হালকা এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিভেজা আবহাওয়া। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ।
বন কর্মচারিদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার পদক্ষেপের সমস্ত কিছু বিস্তারিত জানিয়েছি। কিন্তু এর প্রতি আন্তরিকভাবে কোন খেয়াল করা। হয়নি। আমি নিজেই এখন দুর্নীতির বিষাক্ত শিকার। এখন থেকে এই আন্দোলন হবে রক্ষণাত্মক। ২৮ মে ১৯৫০, রবিবার সকাল ৮টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। একবার খাবার জন্য এবং আর একবার অলি আহাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য বের হওয়া ছাড়া সারাদিনই ঘরে। আবহাওয়া : সারাদিন এবং রাত আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। দুপুরের পর বেশ। কয়েকবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। বিষন্ন এবং নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ২৯ মে ১৯৫০, সােমবার সকাল ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ৩টায় এস,এম, হলে গেলাম এবং আহমেদের রুমে ৬টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। কিন্তু আসার কথা থাকলেও হাকিম মিয়া সেখানে আসেনি। সন্ধ্যা সােয়া ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত পলাশি ব্যারাকের আশেপাশে ইতস্ততঃ ঘােরাঘুরি করলাম। কামরুদ্দিন সাহেবের খোজে তার বাসায় গেলাম। তাকে না পেয়ে সেখান থেকে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে তার খোঁজে আতাউর রহমান এবং সরদার সাহেবের বাসায় গেলাম। কিন্তু তাকে পেলাম না। রাত সাড়ে ১০টায় ফিরেছি। ডাঃ করিম তার বাবাকে নিয়ে বাড়ি থেকে ফিরেছেন। তার বাবা আমার সঙ্গে তার ছেলের মেলামেশার ব্যাপারে কিছু অপ্রিয় মন্তব্য করলেন। এসব মন্তব্য আমার সহ্য না হওয়ায় বেলা ১২টায় মফিজউদ্দিনের সঙ্গে তার বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছি। রাতে অলি আহাদের সাথে থাকলাম। আমার সঙ্গে করিমের বাবার ব্যবহারে আমি ভীষণভাবে মর্মাহত হয়েছি। বিশেষভাবে এই সময় যখন আমি শত্রুদের দ্বারা সমস্ত দিক দিয়ে কঠিন চাপের সম্মুখীন, অর্থাৎ দুর্নীতিগ্রস্ত বন কর্মচারি এবং তাদের সহযােগিদের দ্বারা। আবহাওয়ার সমস্ত দিন মেঘাচ্ছন্ন। দুপুর প্রায় ২টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। রাত এবং সমস্ত দিনভর বর্ষাক্রান্ত পরিবেশ। করিমের বাবা যখন গোঁড়া বিশ্বাস এবং ধর্মান্ধ কল্পনার জাল বুনছিলেন, সে সময় আমি তাকে এড়িয়ে গেলেই সব চাইতে ভাল হত। আমার এমন কোন ঘটনা মনে পরে না, যেখানে আমি আজকের মত প্রচন্ড আঘাত পেয়েছি এবং উত্তেজিত হয়েছি। ৩০ মে ১৯৫০, মঙ্গলবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৮টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম। তিনি আমাকে কাদের সরদারের কাছে নিয়ে গেলেন। সেখান থেকে ১০টায় বের হয়েছি। ফেরার পথে ৫১ বংশাল রােডে হাকিম মিয়ার সঙ্গে দেখা করলাম। ফিরেছি দুপুর ১২টায়। দিনের বাকি সময় বাসার মধ্যেই কাটল। আবহাওয়া : সারাদিন বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সকাল ৯টার দিকে কয়েক মিনিটের জন্য গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হল। বাতাসে জলীয় বল্প রয়েছে।
৩১ মে ১৯৫০, বুধবার সকাল সােয়া ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন ঘরের মধ্যে। আবহাওয়া : কখনও রােদ আবার কখনও মেঘ। বৃষ্টিহীন মেঘের জন্য পূর্ণিমার আলাে থেকে রাত বঞ্চিত হল। পরিবেশ তেমন গরম নয়।
১৪১
১ জুন ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৮টার দিকে সালেহ আহমেদ মােড়ল এলেন। তাকে জানালাম, দুর্নীতি দমন বিভাগ বিনােদ বাবুকে গ্রেফতারের পর থেকে বন কর্মচারিদের সাথে আমার সম্পর্ক কেমন চলছে এবং কিভাবে তারা সুপরিকল্পিতভাবে আমাকে হয়রানি করছে। তিনি সাড়ে ৯টায় চলে গেলেন। সারাদিন ঘরের মধ্যেই। কাটল। আবাহওয়া ঃ বাতাসে প্রচুর আর্দ্রতা । প্রচণ্ড গরম পরিবেশ, বিশেষ করে রাতে। আকাশে ভাসমান মেঘ।
২ জুন ১৯৫০, শুক্রবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন ঘরেই কাটল। আমাদের মামলার বিষয়ে কি করা হল সে সম্পর্কে কোন খবর পেলাম না। আবহাওয়া ও সারাদিন প্রচণ্ড গরম। সন্ধ্যায় প্রায় ১ ঘন্টা ভারি বৃষ্টি হল। রাত ঘন কালাে মেঘে অন্ধকার। বৃষ্টির কারণে নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ৩ জুন ১৯৫০, শনিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন ঘরেই কাটালা। আমাদের মামলার কি হল সে সম্পর্কে কোন তথ্য পাইনি। আবহাওয়া ঃ সব মিলিয়ে রৌদ্রজ্জ্বল দিন। চাঁদ ও তারায় ভরা পরিষ্কার রাত। বাতাসে আর্দ্রতার কারণে প্রচণ্ড গরম, বিশেষ করে রাতে। ৪ জুন ১৯৫০, রবিবার সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। সারাদিন বাসায় । সন্ধ্যা ৬টায় জলিল এলে রাত ৯টা পর্যন্ত তার সাথে কথা বললাম। শেষের দিকে ডাঃ করিমও যােগ দিলেন। আবহাওয়া ও সারাদিন নিষ্প্রভ। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। দিনের মধ্যভাগে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ৫ জুন ১৯৫০, সােমবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন ঘরে ।। আবহাওয়া : কমবেশি নাতিশীতােষ্ণ। পরিষ্কার আকাশ। ৬ জুন ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৭টায় সালেহ আহমেদ মােড়ল এলেন। তার সঙ্গে কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম এবং সেখানে এফ.আই.আর, এর কপি পড়লাম। কামরুদ্দিন সাহেবসহ কাদের সরদারের সঙ্গে দেখা করলাম। গত দীর্ঘ ১৭ দিনেও তারা কিছুই করেন নি। রাত সাড়ে ১১টায় ফিরলাম। আজ থেকে অলি আহাদের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আবহাওয়া ও পরিষ্কার আকাশ। দিনে এবং রাতে প্রচণ্ড গরম। ৭ জুন ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সালেহ আহমেদ মােড়ল সকালে এবং আবার বিকেল ৫টায় এলেন। আমি তাকে আমার সাথে বন কর্মচারিরা কিভাবে বিবাদ শুরু করল সেই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের টাইপ করা কপি দিলাম। আবহাওয়া ও উত্তপ্ত এবং গুমােট পরিবেশ। দিনের মধ্য ভাগে হালকা এক পশলা বৃষ্টি এবং বিকেলে ভাল বৃষ্টি হল, রাতে বৃষ্টি হয়নি। ৮ জুন ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন বাড়িতেই রইলাম। বিকেলে জলিল এল। তার সাথে ভারতের কমিউনিস্ট রাজনীতি এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে কথা বললাম। আবহাওয়া : দুপুর পর্যন্ত পরিষ্কার দিন। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে চলল প্রায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত, অবিরাম ধারায় । বিরতি দিয়ে দিয়ে সারা রাত বৃষ্টি হল। পরদিন সকাল থেকে বৃষ্টি বন্ধ। আবহাওয়া এখনও জলীয় বাষ্প মুক্ত নয়।
৯ জুন ১৯৫০, শুক্রবার। ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ১১টায় সালেহ আহমেদ মােড়ল এলেন। দুপুর ২টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। তিনি কুমিল্লা গেছেন। দুপুর আড়াইটার সময় সালেহ আহমেদ মােড়লকে সঙ্গে নিয়ে কফিলউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে তার চেম্বারে দেখা করলাম। সেখান থেকে ৬টায় বের হয়ে বাসায় ফিরে এলাম। বাড়ি থেকে আহমেদ আলি মাস্টার এসেছেন। সন্ধ্যায় তিনি আমার সঙ্গে দেখা করলেন এবং রাত ৯টা চলে গেলেন। আবহাওয়া ও বিকেল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টি ভেজা পরিবেশ। বাতাসে জলীয় বাষ্প। ১০ জুন ১৯৫০, শনিবার সকাল ৮টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন ঘরের ভেতরে। আবহাওয়া ও সারাদিন বর্ষাচ্ছন্ন পরিবেশ। সারাক্ষণই বিরতি দিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া স্বাভাবিকভাবেই ঠাণ্ডা। আকাশ সারাক্ষণই মেঘাচ্ছন্ন। ১১ জুন ১৯৫০, রবিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন ঘরেই কাটল। আবহাওয়া ও দিনের মধ্যভাগ পর্যন্ত বিরতি দিয়ে দিয়ে বৃষ্টি। সব মিলিয়ে অস্বস্তিকর আবহাওয়া। বিষন্ন পরিবেশ এবং আকাশ মেঘে ঢাকা। এক অদ্ভুত মহিলার নির্লজ্জ রূপ ? একজন মহিলার সবচেয়ে বড় অলংকার হল তার শিষ্টতা। তার এই তিন দিনের ব্যবহার সাধারণ মানুষের মনে নারী জাতি সম্পর্কে অশ্রদ্ধা আর ঘৃণার বীজ বােনার জন্য যথেষ্ট। বেচারা স্বামী প্রতিপদে বঞ্চনার শিকার হয়ে করুণার সামগ্রীতে পরিণত হয়েছে। যেহেতু সে তার স্ত্রী-র সমকক্ষ নয় তাই তার অন্য কোন পথ বেছে নেয়া উচিত ছিল। দু’সন্তানের মা এই মেয়েটির নিশ্চয়ই কোন মানসিক সমস্যা রয়েছে, নয়ত সে তার অতৃপ্তি আকাকে তার মাতৃত্বের উপরে স্থান দিত না। ১২ জুন ১৯৫০, সােমবার সকাল পৌনে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৯টায় ডাক্তারের বাসায় আকরামতউল্লাহ এবং ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লার সঙ্গে দেখা করলাম । ফরেক্টারের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিত করা হয়েছে বলে খবর পেলাম। এরপর সারাদিনই ঘরে। আবহাওয়া ঃ দুপুরে একবার বিরতি এবং রাত ছাড়া প্রায় সারাদিনই বৃষ্টি। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভারি বর্ষণ। পরিবেশ বর্ষা এবং আর্দ্র। ১৩ জুন ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন ঘরে। করিম এবং বরকত প্রমুখ ছাড়া আর কেউই আসেনি। আবহাওয়া ও দিনের প্রথম ভাগে এবং সারা বিকেল বৃষ্টি হয়েছে। রাতে কোন
১৪৫
বৃষ্টি হয়নি। ১৪ জুন ১৯৫০, বুধবার সকাল সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বিকেলে কামরুদ্দিন সাহেবের ওখানে গেলাম এবং তার সঙ্গে আমাদের মামলা, কুমিল্লায় পি.এন্ড.টি. কর্মচারিদের সম্মেলন, পূর্ব-বাংলার ক্যাবিনেট ইত্যাদি বিভিন্ন প্রসঙ্গে রাত ৯টা পর্যন্ত কথা বললাম। সাড়ে ৯টায় ফিরেছি। আবহাওয়া ও দিনের প্রথম এবং তৃতীয় অংশে কিঞ্চিৎ হালকা বৃষ্টি ছাড়া তেমন বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্প। ১৫ জুন ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ফজলুল হক মুসলিম হলে গেলাম। সাড়ে ৭টায় জালালের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম এবং আমাদের সমস্যার কথা বললাম। রাত ৮টার দিকে কফিলউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। তাকে জানালাম যে, ১৭. ৬. ৫০ শনিবার আমি ডি.আই.জির সঙ্গে দেখা করব। ডি.এস.পি, কি করেছে এই বিষয়ে তিনি কোন তথ্য নিলেন না। সােয়া ১০টায় ফিরে এলাম। আবহাওয়া : দুপুরে খুব হালকা এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আকাশ সারাদিনই মেঘাচ্ছন্ন। আবহাওয়া জলীয় বাষ্পে পূর্ণ।
১৬ জুন ১৯৫০, বক্রবার। সকাল সাড়ে ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন ঘরের মধ্যে। সন্ধ্যায় জলিল এবং করিম এল। রাত সাড়ে ৮টায় তারা চলে গেল। আবহাওয়া : সারাদিন বৃষ্টি। ঘন মেঘে সারা আকাশ ছেয়ে ছিল। সূর্যাস্তের সময় প্রায় ১ ঘন্টার জন্যে চমৎকার এক পশলা বৃষ্টি হল। বর্ষা ভাব রয়েই। গেছে। ১৭ জুন ১৯৫০, শনিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আজ রমজান মাসের প্রথম দিন । সােয়া ১১টায় ডিআইজি-র অফিসে গেলাম। ডি.আই.জি. সাহেব আজ অফিসে আসেন নি, জালালও এল না। দুপুর ১২টায় হল অফিসে গেলাম এবং প্রমােশন লিষ্টে আমার নাম দেখলাম । ফেরার পথে কমরেড ব্যাংক হয়ে ফিরলাম, কিন্তু ব্যাংক ১টার সময় বন্ধ হয়ে গেছে। আহমেদ আলি মাস্টার আজ বিকেলে বাড়ি থেকে এলেন। আগামীকাল সকালের ট্রেনে বাড়ি যাওয়ার জন্য তিনি রাতে আমাদের সঙ্গে থেকে। গেলেন। আবহাওয়া ঃ খুব অল্প বিরতি দিয়ে দিয়ে সকাল থেকেই অবচ্ছিন্ন ধারায় বৃষ্টি। সন্ধ্যায় ভীষণ বৃষ্টি এবং তা চলতেই থাকল। ১৮ জুন ১৯৫০, রবিবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিনই ঘরের মধ্যে। আহমেদ আলি মাস্টার আজ সকালে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলেন। বিকেলে। জলিল এল। আবহাওয়া ঃ সারাদিন অবচ্ছিন্ন ধারায় বৃষ্টি। বর্ষা পরিবেশ। আকাশ ঘন। মেঘে ঢাকা। কয়েকদিন ধরেই মুষলধারে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। এই ঋতুতে। এটাই সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এবং সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টিপাত। ১৯ জুন ১৯৫০, সসামবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টায় ডি.এস.পি,র সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম এবং তাকে গােসিঙ্গা ডাকাতি কেসের ব্যাপারে বিস্তারিত খুলে বললাম। তিনি আমাকে পরিদর্শকের সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দিলেন। সাড়ে ১০টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সাথে দেখা করলাম। পৌনে ১২টায়। কমরেড ব্যাংক থেকে ৫০ টাকার চেক ভাঙ্গিয়ে ফিরে এলাম। দুপুর সাড়ে ১২টায় হাজি সালেহ আহমেদ আমার সাথে দেখা করলেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। তার সাথে আলােচনা করে পিটিশনের একটা খসড়া তৈরি করলাম এবং রাত সাড়ে ১০টায় ফিরে এলাম। আবহাওয়া ও দীর্ঘ বিরতিতে থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হল। আজ বলতে গেলে বিকেল থেকে কোন বৃষ্টি নেই। কিন্তু মেঘলা আকাশ। ২০ জুন ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল সােয়া ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। নবম বর্ষপূর্তি হল। সকাল সাড়ে ৮টায় লিলি খান এলেন। সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত একটি বিবরণের (বিবৃতি) খসড়া তৈরি করলাম। সন্ধ্যায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। সেখানে সালেহ আহমেদ মােড়ল ছিলেন। পরে অলি আহাদও যােগ দিলেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আমাদের কেস এবং চলমান রাজনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলােচনা হল। ১২টায় ফিরলাম। আবহাওয়া ও দীর্ঘ দেড় সপ্তাহের ক্রমাগত বৃষ্টির পর আজ সূর্যের উজ্জ্বল আলাে দিয়ে দিনের শুরু এবং সারাদিনই রােদ ছিল। তবে, বেশ গরম আবহাওয়া। *ঢাকায় অবস্থানের বর্ষপূর্তি। ২১ জুন ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টায় ডিআইজির অফিসে গেলাম। বেলা ২টা ৪০ মিনিটে একটি দরখাস্তসহ তার সাথে দেখা করলাম। তিনি আমাকে ঢাকার এস.পি.-র সাথে দেখা করার পরামর্শ দিলেন। সেখানে মি. সোবহানের সাথে দেখা হল। বিকেল ৪টায় ফিরেছি। বিকেলে কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গিয়ে তাকে ডি.আই.জি, এবং তার অফিসের আচরণ সম্পর্কে জানালাম। তিনি আমাদের ব্যাপারে ঢাকা রেডিওর মি. সাদেকুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন। অলি আহাদ, সাদেক ও মুস্তাফা এলেন। তাদের সাথে নাগরিক স্বাধীনতা বা মৌলিক অধিকার বিষয়ে আন্দোলন গড়ে তােলার ব্যাপারে কথা হল। রাত ১১টায় ফিরলাম। আবহাওয়া ও রৌদ্রস্নাত দিন। দিনে ও রাতে প্রচণ্ড গরম। আবহাওয়া এখনও জলীয় বাষ্প মুক্ত নয়। ২২ জুন ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বিকেলে রুহুল আমিন, মুসা, লিলি খান, জাবেদা খাতুন এলেন এবং চা খেলেন। কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায় গেলাম, কিন্তু তাকে পেলাম না। সাড়ে ৮টায় থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করলাম। আবহাওয়া : সারাদিন আকাশে ভাসমান মেঘ ছিল। বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকলেও বৃষ্টির কোন লক্ষণ নেই। প্রচণ্ড গরম আবহাওয়া। ২৩ জুন ১৯৫০, শুক্রবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সােয়া ৮টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম এবং আই.জি.পি.কে দেয়ার জন্যে representation-এর একটা কপি হস্তান্তর করে ফিরে এলাম। সন্ধ্যা ৬টায় আবার কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায় গেলাম, তাকে না পেয়ে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সেখানে বসে থেকে ফিরে এলাম।। আবহাওয়া ও মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে। বিকেলে। এবং রাতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হল। ২৪ জুন ১৯৫০, শনিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৮টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। তিনি আমাকে কাদের সরদারের কাছে নিয়ে গেলেন। কিন্তু কাদের সরদার কোন আশ্বাস দিলেন না । ওখান থেকে ১১টায় বের হলাম। সাড়ে ১১টায় ফজলুল হক মুসলিম হলে গেলাম এবং নােটিশ বাের্ড দেখলাম। কারাে সঙ্গে দেখা হল না।
দুপুর ১২টায় ডিআইজি অফিসে গেলাম। সেখানে আকবর আলি বেপারির সিমেন্টের অপব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য তদন্তের জন্য ডি.আই.জি-র নির্দেশের কপি দেখলাম। দুপুর দেড়টায় ফিরলাম। আহমেদ আলি মাস্টার বেলা আড়াইটার সময় আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি সাড়ে ৪টায় চলে যাবার আগে তার সঙ্গে কথা বললাম। সিআইডি কর্তৃক আসন্ন তদন্তের বিষয়টি তাকে জানালাম। তার মাধ্যমে বাড়ি খরচের জন্যে ১০ টাকা পাঠালাম। আবহাওয়া ও গুমােট পরিবেশ। অল্প সময়ের জন্য সামান্য গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ সারাদিনই মেঘাচ্ছন্ন। ২৫ জুন ১৯৫০, রবিবার সকাল পৌনে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বিকেল ৫টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে অলি আহাদ সহ বের হলাম। আমাদের দলের কাজকর্ম নিয়ে কথা হল। ইফতারের পর আমার মামলার বিষয়ে আলােচনা করলাম। রাত সাড়ে ৯টায় ফিরেছি। আমি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে ডাঃ করিম এলেন এবং রাত ১১টায় চলে গেলেন। আবহাওয়া : সারাদিনই বৃষ্টি হল। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বাতাসে জলীয় বাষ্প আছে। আবহাওয়া গরম, আরামদায়ক নয। ২৬ জুন ১৯৫০, সােমবার পৌনে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। জলিল সকালে একজন হস্তরেখাবিদকে নিয়ে এল। এস.পি.-র সাথে দেখা করতে কোর্টে গেলাম, কিন্তু দেখা হয়নি। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সােবহান সাহেবের সাথে তার রুমে বসলাম। ডিএসপি-র সামনে পিটিশনসহ পিআই (দুই) বাহাউদ্দিন আমাকে দেখল। বার লাইব্রেরিতে মানিক মিয়া এবং আউয়ালের সঙ্গে বেলা ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত কথা বললাম। এখানে আতাউর রহমান সাহেব এবং কামরুদ্দিন সাহেব উপস্থিত ছিলেন। ৩টায় ফিরেছি। বার লাইব্রেরিতে সানারুয়ার মনিরুদ্দিন আমার সঙ্গে দেখা করল।
১৫০
আবহাওয়া ও গুমােট ভাব এবং মেঘের কারণে পরিবেশ উষ্ণ। বিকেলে গুঁড়ি শুড়ি বৃষ্টি। গরমের কারণে রাত ভীষণ অস্বস্তিকর।
২৭ জুন ১৯৫০, মঙ্গলবার। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ১০টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। বেলা দেড়টায় মফিজউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে কোর্টে গেলাম। বেলা ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে এস.ডি.ও. (এন)-এর কাছে আত্মসমর্পণ করে প্রত্যেকের জন্যে ১০০০/- টাকার বিনিময়ে জামিন পেলাম। আতাউর রহমান সাহেব জামিনের আবেদন উপস্থাপন করলেন। কোর্টে অনেক মানুষ আগ্রহসহ জড়াে হয়েছিল। সাড়ে ৫টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে তার বাসায় গেলাম। সাড়ে ৬টায় অলি আহাদ এল। সন্ধ্যা সােয়া ৭টায় সেখান থেকে বের হলাম। আবহাওয়া : উত্তপ্ত পরিবেশ। বাতাসে জলীয় বাষ্প (ভ্যাপসা ভাব)। দুপুর ১টা ২০ মিনিট থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টি। আকাশ মেঘ মুক্ত নয়, আর বাতাসও মুক্ত নয় জলীয় বাষ্প থেকে।
আরএমএস-এর ওসির পাশের বাড়ির দোতলা থেকে একজন ব্যক্তি, ফরেস্টার আসিরুদ্দিন এবং রেঞ্জার সারােয়ার সারাদিন এবং রাত আমাকে লক্ষ্য রাখছিল (২৭.৬.৫০)। ২৮ জুন ১৯৫০, বুধবার সকাল পৌনে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৯টায় জালালের সাথে তার বাসায় দেখা করলাম। বেলা পৌনে ৩টায় কোর্টে গেলাম, কিন্তু এসপি সারদা চলে যাওয়ায় তার সঙ্গে দেখা করতে পারলাম না। ব্যর লাইব্রেরি থেকে কামরুদ্দিন সাহেবের সাথে তার বাসায় গেলাম ৫টার সময়। সেখান থেকে সন্ধ্যা ৬টায় আবার জালালের বাসায়। কিন্তু এক ঘন্টা অপেক্ষা করেও তার সাথে দেখা হল না। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাসায় ফিরে। এলাম। আজ রাতে তােয়াহা সাহেব তার পরিবার নিয়ে ফিরেছেন। আবহাওয়া ও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। উষ্ণ পরিবেশ। জলীয় বাষ্প (আর্দ্র এবং ভ্যপসা ভাব)। বৃষ্টি নেই।
২৯ জুন ১৯৫০, বৃহস্পতিবার বাড়ির পথে ।। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৮টায় জালালের সাথে দেখা করলাম। অলি আহাদসহ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায় ছিলাম। সাড়ে ১০টায় ডিআইজি অফিসে গেলাম । ইন্সপেক্টর রওশন উদ্দিন সাহেবকে আমাদের কেস তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে শ্রীপুরে আছেন এবং আমাকে তার সাথে যােগাযােগের পরামর্শ দেয়া হল। সেখান থেকে দুপুর ১২টায় বের হলাম। ফেরার পথে সালেহ আহমেদ মােড়ল সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম এবং আমি এ পর্যন্ত কি করেছি সে সম্পর্কে তাকে জানালাম। দুপুর ১টা ২৩ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুর রওনা হলাম। শ্রীপুরে পৌছেই কালু মমাড়লের বাসায় গেলাম। গােসলের পর বিকেল বেলা কালু মােড়লের সাথে থানায় গেলাম। থানার সিআই মি, আমিরুদ্দিনকে আমাদের মামলা এবং বন কর্মচারিদের সঙ্গে আমার বিবাদের বিষয়টি বললাম। এসডিও (এন) এর স্লিপ দেখিয়ে কোর্টের কাছে আমাদের আত্মসমর্পণের বিষয়টি তাকে জানিয়ে দিলাম। সন্ধ্যায় থানা ত্যাগ করেছি। সালেহ আহমেদ মােড়ল সাহেবের সঙ্গে কালু মােড়লের বাড়িতে রাতের খাবার খেয়ে সালেহ আহমদ মােড়ল সাহেবের বাড়িতে গেলাম এবং সেখানে রাত কাটালাম। শ্রীপুরে পৌছেই মফিজউদ্দিনকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। আবহাওয়া ও মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। বিকেলে অল্প সময়ের জন্য গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হল। গুমােট পরিবেশ। ৩০ জুন ১৯৫০, শুক্রবার। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিনই হাজি সালেহ আহমেদ মােড়ল সাহেবের বাসায়। খারাপ আবহাওয়ার কারণে বাইরে বের হতে পারিনি। আবহাওয়া ও সূর্য সারাদিনই মেঘে ঢাকা। থেকে থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বাতাসে প্রচণ্ড জলীয় বাষ্প । ১ জুলাই ১৯৫০, শনিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৮টায় মােড়ল বাড়ি থেকে শ্রীপুর স্টেশনে গেলাম, সেখানে নিয়ামত সরকার, হেড মাস্টার এবং শ্রীপুর থানার সেকেণ্ড অফিসারের সাথে দেখা হল। সাড়ে ৯টায় বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার মুহূর্তে সাত্তার খান আমার সাথে দেখা করতে এলেন। আমি বাড়ি যাবার পথে শ্রীপুর বাজারগামী অনেকেই যেমন জব্বার, তুফানিয়া, আনজাত আলি, সলেমান প্রমুখেরা আমার সঙ্গে। কথা বলল। দুপুর ১২টার দিকে বাড়ি পৌছলাম। গােসিঙ্গার শাহাদ আলি সরকার বিকেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। আব্বাস, টুক্কা, আব্দুল খান প্রমুখেরাও এসেছিলেন। রাতে আমাদের মাস্টারের ভাই এবং আরও একজন আমাদের অতিথি হলেন। আবহাওয়া ও জলীয় বাষ্পের কারণে আবহাওয়া গরম। অল্প সময়ের জন্যে সামান্য গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হল। পুরাে সময়টা মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। ২ জুলাই ১৯৫০, রবিবার সকাল ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন বাড়িতেই কাটল। দুপুরের আগে দিনত আলি এবং তালিব আলি এল। তারা আমার সঙ্গে কথা বলার সময় জাফর মােড়ল উপস্থিত ছিলেন। এর আগে তাহের আলি গার্ড এবং অন্য আরেকজন গার্ডকে সঙ্গে নিয়ে গােসিঙ্গার ফরেন্টার আমার সাথে দেখা করতে আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি জানালেন, তিনি উত্তর প্রদেশের লােক (ইউ.পি.)। সন্ধ্যায় মজনুকে সঙ্গে করে আজিজ মিয়া আমাদের বাড়িতে এলেন এবং রাতে থাকলেন। তারা তরগাঁও থেকে এসেছেন। আবহাওয়া থেকে থেকে সারাদিন বৃষ্টি হল। জলীয় বাষ্পে পরিপূর্ণ আবহাওয়া এবং এর ফলে গরম। ৩ জুলাই ১৯৫০, সােমবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ১০টার দিকে ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লা আমার সাথে দেখা করলেন। সাড়ে ১০টার দিকে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। পথে নিয়ামত সরকার, দিনত আলি, আদম আলি, সলেমান প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। আ, হাকিম সরকার আমার সঙ্গে মােড়ল বাড়ি পর্যন্ত এলেন। সালেহ আহমেদ মােড়ল আজ ময়মনসিংহ থেকে ফিরেছেন। ইফতারের পর থানায় গেলাম। সেকেন্ড অফিসারের বাসায় তার ও তার সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা করলাম। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কথা বললাম এবং ফিরে এসে সালেহ আহমেদ মােড়লের বাড়িতে রাতে থাকলাম। আবহাওয়া ঃ মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। বাতাসে প্রচুর আদ্রতা। ঝির ঝির বৃষ্টিও হয়েছে কয়েকবার। উল্লেখ করার মত বৃষ্টি হয়নি। ৪ জুলাই ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ১০টার দিকে শ্রীপুর বাজারে নিয়ামত সরকারের দেখা পেলাম। নিয়ামত সরকারসহ হেড মাষ্টারের বাড়িতে হেড মাস্টারের সাথে প্রায় ২ ঘন্টা কথা বললাম। এখান থেকে দুপুর দেড়টার দিকে বের হলাম। বাড়ি যাবার পথে শাহাদ আলি সরকারের অনুরােধে ১০ মিনিটের মত থামলাম। বিকেল ৪টার দিকে বাড়ি পৌছলাম। আবহাওয়া : মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। জলীয় বাষ্প মাত্রায় বেশি, ফলে উত্তপ্ত আবহাওয়া।
৫ জুলাই ১৯৫০, বুধবার ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। বিকেলে আমার সাথে গােসিঙ্গার খালেক মাস্টার আমাদের বাড়িতে দেখা করলেন। জাফর মােড়লও এসেছিলেন। সন্ধ্যায় এ.সি.-র একজন সাব-ইন্সপেক্টর সঙ্গে একজন সিপাইসহ আমাদের বাড়িতে এলেন এবং রাতে থেকে গেলেন। টুকা রাতে রজব আলিকে নিয়ে এল, তাদের মধ্যকার বিবাদ মিটিয়ে দেবার জন্য, আমি তাদেরকে আগামীকাল সকালে আসতে বললাম। আবহাওয়া ও আকাশ মেঘে ঢাকা। বাতাসে ভীষণ রকম জলীয় বাষ্প। দিনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগে বিরতি দিয়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। ৬ জুলাই ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ঢাকার পথে। ভাের সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। এ.সি.র সাব-ইন্সপেক্টর খুব ভােরে উঠে মফিজউদ্দিন মুনশী এবং আব্দুল খানের সঙ্গে চলে গেলেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আয়েত আলি শেখ এলেন। দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা হলাম। পথে দিনত আলি, সাহেব আলি সরকার, আব্দুল খানের দেখা পেলাম। আর মফিজউদ্দিন মুনশী, আহমেদ আলি মাস্টার কর্ণপুর পর্যন্ত সাথে এলেন। বেলা ১টা ১৭ মিনিটের ট্রেনটা ধরতে পারলাম না। তাই কাওরাইদ যেয়ে ৭টা ৩০ মিনিটের মেইল ট্রেন ধরলাম। এ.সি.র, সাব-ইন্সপেক্টরও একই ট্রেনে এলেন। রাত ৯টায় ঢাকা পৌছলাম। কাওরাইদে একজন সাব-ইন্সপেক্টর মি, ইসমাইলের সাথে দেখা, তিনি জানালেন যে, মি. আর. আহমেদের সঙ্গে আমাদের মামলার তদন্তে তিনিও কাজ করছেন। রাতে ডাঃ করিমের বাসায় থাকলাম। আবহাওয়া ঃ সকাল থেকে দিনের তৃতীয় ভাগ পর্যন্ত থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি। বৃষ্টি। তারপর থেকে আর বৃষ্টি হয়নি। রাত প্রায় মেঘহীন এবং শীতল।
১৫৫
৭ জুলাই ১৯৫০, শুক্রবার ভাের সাড়ে ৪টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৮টায় মফিজউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায়। গেলাম। সেখান থেকে কোর্ট গেলাম। সকাল সাড়ে ১০ টায় এস.ডি.ও (এন)-এর এজলাসে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাদের জামিন বাতিল করে রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দিলেন। বুধাই বেপারির জামিন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু তাকে কোট হাজত থেকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। দুপুর ১টার। দিকে আমাদেরকে অন্যান্য সবার সঙ্গে ঢাকা সেন্ট্রাল জেল হাজতে নিয়ে যাওয়া হল। শ্রীপুরের রেঞ্জার জামিন নাকচের জন্য আবেদন করেছেন এবং পি,পি, এবং এস,পি, তা অনুমােদন করেছেন, যা আমি পরে জানতে পেরেছি। ডাঃ করিম এবং তােয়াহা সাহেব বেলা ২টায় দুপুরের খাবার পাঠিয়েছেন। আবহাওয়া ও রৌদ্র স্নাত সারাদিন। বৃষ্টি হয়নি। তবে বাতাসে জলীয় বাষ্প অনুভূত হয়। ৭.৭.৫০ তারিখ দুপুর ১টা থেকে ১১.৭.৫০ তারিখ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা সেন্ট্রাল জেল হাজতে। জেলের অভ্যন্তরে আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। জেল থেকে ছাড়া পাবার পর আমার স্মৃতি থেকে আমি এই সংক্ষিপ্ত নােট লিখছি। জেলের ভেতর আমি আমার অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করার সুযােগ পাইনি, কারণ আমার কাছে কোন কলম, কাগজ বা কালি ছিল না এবং এগুলি সংগ্রহ করে লেখার স্বাধীনতাও ছিল না। এরপর থেকে মূল ডায়েরীর প্রায় ৩ পৃষ্ঠা খালি। হয়ত তিনি এই পৃষ্ঠা ৩টি খালি রেখেছিলেন তার অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করার জন্য, কিন্তু যা আর তার হয়ে ওঠেনি।
১২ জুলাই ১৯৫০, বুধবার ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ১০টায় তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম এবং সেখান থেকে ১১টায় কোটে। জলিল, অলি আহাদ এবং করিম সঙ্গে ছিল। অতিরিক্ত সেশন জজের সামনে বেলা আড়াইটায় মি. আতাউর রহমান মফিজউদ্দিনের জামিনের আবেদন পেশ করলেন এবং শহরে অবল্পনের শর্তে তাকে জামিন দেয়া হল। বিকেল ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও জামিনের ওয়ারেন্ট পেলাম না। রেলওয়ে স্টেশনে আকরামতউল্লাহ এবং ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লার সঙ্গে দেখা করলাম। তারা বি. বি. চৌধুরীর মামলায় সাক্ষি দিতে এসেছেন। বি. বি. চৌধুরীর অনুপস্থিতির জন্য শুনানি স্থগিত করা হয়েছে। ডি.এস.পি, মি, সােবহানকে আমি এই খবরটি জানালাম। স্টেশনে অন্যান্যদের মধ্যে ভুলেশ্বরের হাসেম এবং ভাংনাহাটির আবুল হুসেনের সঙ্গে দেখা হল। বন। বিভাগ আবুল হুসেনের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছে সেই মামলায় এস, ডি, ও, (এন)-এর এজলাসে আবুল হুসেন হাজিরা দিয়েছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফিরেছি। এর আগে পৌনে ৪টায় ঢাকায় এসপির সঙ্গে দেখা করে আমাদের মামলা নিয়ে ৫ মিনিট কথা বললাম এবং ডিআইজি মি, এস, ইসমাইলের সুপারিশ করা একটি দরখাস্ত তার কাছে হস্তান্তর করলাম। আবহাওয়া ও ক্ষণে ক্ষণে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বাতাসে জলীয় বাষ্প। আকাশ এখনও নিষ্প্রভ। ১৩ জুলাই ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ৮টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ১১টায় করিম এবং অলি আহাদের সাথে কোর্টে গেলাম এবং আড়াইটায় জামিনের ওয়ারেন্ট নিয়ে ফিরলাম। কোর্টে সাব-ইন্সপেক্টর মি. ইসমাইল আমার সাথে দেখা করলেন। আমি তাকে আমাদের মামলার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধানের জন্য অনুরােধ করলাম এবং আমার ও বন বিভাগের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের বিষয়টি তাকে জানালাম। বিকেল ৪টায় ডি.আই.জি, অফিসে গেলাম এবং জালালের সাথে দেখা করলাম। সেখানে গিয়াস এবং আও উপস্থিত ছিল। তাদের সঙ্গে জালালের বাসা পর্যন্ত গেলাম। এখান থেকে ৬টার দিকে জেল গেটে গেলাম। সেখানে ডাঃ করিম এবং অলি আহাদ অপেক্ষা করছিল। মফিজউদ্দিন সাড়ে ৬টায় জেল থেকে বের হল। ওয়ারেস আলি ও অন্যান্যদের জন্য ৩টা আম পাঠালাম। আণ্ডর সঙ্গে বাবুবাজার গেলাম, সেখানে কফিলউদ্দিন, উজালির এম. এ. হামিদ এবং পরে আশুর বাবার সঙ্গে দেখা হল। সন্ধ্যায় ফিরলাম। ফেরার পথে বংশাল-নাজিরাবাজার ক্রসিংয়ে মহসিনের সঙ্গে দেখা হল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফিরেছি। আবহাওয়া সময়ে সময়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বাতাসে জলীয় বাষ্প ।
নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। ১৪ জুলাই ১৯৫০, শুক্রবার সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টায় ডি.আই.জি. অফিসে গেলাম। আশুও সেখানে গিয়েছিল। ইন্সপেক্টর মি, রওশন উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করলাম। সাড়ে ১০টায় আণ্ডর সঙ্গে বের হয়ে আমার বাসায় এলাম। দিনের বাকি সময়টুকু রুমেই কাটালাম। আবহাওয়া ও গুমােট পরিবেশ। থেমে থেমে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ১৫ জুলাই ১৯৫০, শনিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৭টায় দিনত আলিকে সঙ্গে নিয়ে আহমেদ আলি মাস্টার এলেন। তার সঙ্গে আমাদের পারিবারিক বিষয়ে প্রায় এক ঘন্টা কথা হল। আমাদের বাড়ির কাজের মানুষদেরকে কৃষিকাজে পরামর্শ দেয়ার জন্য তাকে অনুরােধ করলাম। বেলা সাড়ে ৩টায় সদরঘাট থেকে বাড়ির জন্য ৩টি শাড়ি কিনে সাড়ে ৪টায় ফিরেছি। আহমেদ আলি সােয়া ৫টায় শাড়িগুলাে নিয়ে গেলেন। সদরঘাট যাবার পথে নওয়াবপুর রােডে শালনার হাফিজউদ্দিন গার্ডের সঙ্গে। দেখা হল। দিনের বাকি সময় ঘরে কাটালাম। আবহাওয়া ও পরিবেশ উষ্ণ। বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প। রাতে বৃষ্টি হল। বি: দ্র: (১) মিস্টার হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী ১৩.৭.৫০ তারিখে প্লেনে করাচী থেকে ঢাকা এসেছেন। জানা গেছে, আওয়ামী মুসলিম লীগের কর্মীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য তিনি এসেছেন। জানা গেল, এটা তার রাজনৈতিক ভ্রমণ । আগামী ২৬.৭.৫০ তারিখে ফজলুল হক সাহেবের নির্বাচন সংক্রান্ত মামলাও তিনি। পরিচালনা করতে পারেন বলে শােনা গেল। (২) ১২.৭.৫০ তারিখ রাতে তেজগাঁও এবং কুর্মিটোলার মধ্যবর্তী। স্থানে একটি মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে।
১৬ জুলাই ১৯৫০, রবিবার পৌনে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আগামীকাল ঈদের দিনে পরিচিতদের দাওয়াত দেয়ার জন্য সন্ধ্যা ৭টায় তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে বাইরে গেলাম। রাত ৮টায় মিটফোর্ড হাসপাতালে সালেহা বেগমের সাথে দেখা করলাম এবং তাকে দাওয়াত দিলাম। কামরুদ্দিন সাহেবের ওখানেও গিয়েছিলাম রাতে, কিন্তু তিনি তখন বাইরে ছিলেন। তােয়াহা সাহেব তার জন্য একটা নােট রাখলেন। তারপর জলিলের বাসায় গেলাম। ডাঃ করিম সেখানে ছিলেন। তাদের সঙ্গে প্রায় রাত ১০টা পর্যন্ত কথা বলে ফিরে এলাম। এর আগে অলি আহাদ মি. সােহরাওয়ার্দীর লেখা চিঠি নিয়ে এসেছিল। তিনি আগামী ২০,৭.৫০ তারিখে তার কর্মী সম্মেলনে যােগদানের জন্য আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ১৮.৭.৫০ তারিখে এই বিষয় নিয়ে আমরা আলােচনায় বসব। আবহাওয়া : বাতাসে আর্দ্রতা ও গুমােট ভাবের কারণে (জলীয় বাষ্পের কারণে) অস্বস্তিকর পরিবেশ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ছাড়া তেমন বৃষ্টি নেই। আকাশ পরিষ্কার নয়। ১৭ জুলাই ১৯৫০, সােমবার সকাল সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ঈদউল ফিতর। সাড়ে ১১টায় তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে জলিলের বাসায় গেলাম। তারা বাসায় ছিল না, তাই তাদের অনুপস্থিতিতে বাসার কাজের লােক আমাদের নাস্তা দিয়ে আপ্যায়ন করল। নাস্তার পর ফিরলাম। ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করিনি। দুপুরে তােয়াহা সাহেবের বাসায় খাবার আয়ােজন হল। এই আয়ােজনে জলিল ও তার স্ত্রী, ডাঃ করিম এবং বরকত অংশ নিয়েছে। অলি আহাদ আসেনি। বেলা ৩টায় খাওয়া হল। সন্ধ্যায় প্রফেসর নাজমুল করিম এলেন। তিনি আমার সঙ্গে প্রায় সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পূর্ব-বাংলার বর্তমান অবস্থা এবং উন্নতির লক্ষ্যে পার্টি কর্মীদের কর্তব্য সম্পর্কে কথা বললেন। তারপর চলে গেলেন। রাত ৯টায় কামরুদ্দিন সাহেব তার খ্রীসহ এসেছিলেন এবং ১০মিনিটের মত থেকে চলে গেলেন।
আবহাওয়া ও আগের মতই অস্বস্তিকর এবং গুমােট আবহাওয়া। হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বাতাসে জলীয় বাষ্প আছে। ১৮ জুলাই ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। প্রায় ৭টার দিকে বাচ্চাদেরকে সাথে নিয়ে ওয়াজিউল্লাহ সাহেব এলেন। তিনি আমাদের সাথে নাস্তা করলেন এবং দুপুর ১২টার দিকে চলে গেলেন। তােয়াহা সাহেব আমাদের মামলার বিষয়টি ওয়াজিউল্লাহ সাহেবকে জানিয়েছিলেন। তিনি ডিআইজি মি. সােবহানের চলে যাবার আগে তার সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। বরকতের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেলাম। সারাদিন বাইরে বের হইনি। আবহাওয়া : আগের মত। ১৯ জুলাই ১৯৫০, বুধবার সকাল পৌনে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টায় দেওনার হাকিম ভাইসাহেব আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তিনি আমাদের জন্য একটি কাঁঠাল নিয়ে এসেছেন। তার কাছ থেকে বাড়ির খবর পেলাম। তিনি দুপুর ১টা ২৩ মিনিটের ট্রেনে বাড়ি চলে গেলেন। সাড়ে ৯টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। তার সঙ্গে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত কথা বললাম। প্রধান বিষয় ছিল – তােয়াহা সাহেব এবং জলিলের ব্যবসায়িক সম্পর্ক, অলি আহাদের জন্য ট্রেড ইউনিয়নের কাজকর্মের পরিকল্পনা, হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী সাহেব এবং পাকিস্তানের রাজনীতি। দুপুর ১টায় কামরুদ্দিন সাহেবকে লেখা সােহরাওয়াদী সাহেবের একখানা দাওয়াত-পত্র নিয়ে সেখানে ওয়াদুদ এসেছিল। বিকেল ৫টায় আমরা ডাঃ করিমের বাসায় বসলাম। কামরুদ্দিন সাহেব, জলিল, তােয়াহা সাহেব, অলি আহাদ, করিম এবং আমি সেখানে ছিলাম। আগামী ২০.৭.৫০ তারিখে সােহরাওয়ার্দী সাহেবের কর্মী সম্মেলনে যােগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হল। কামরুদ্দিন সাহেব প্রস্তাব করলেন, মিল এলাকাতে অল্প সময়ের মধ্যে কাজ করার জন্য অলি আহাদকে প্রস্তুত থাকতে হবে। সন্ধ্যা ৭টায় সেখান থেকে বের হলাম। সন্ধ্যায় কামরুদ্দিন সাহেবের করা পার্টি সংবিধানের প্রস্তাবনার খসড়া নিয়ে।
১৬০
অলি আহাদের সঙ্গে কথা বললাম। আবহাওয়া ও রৌদ্রস্নাত পুরাে দিন। সূর্যাস্তের পর থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন এবং আবহাওয়া গত দিনগুলাের মতই অস্বস্তিকর। ২০ জুলাই ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। এস,আই. মি. ইউনুসের সঙ্গে দেখা করার জন্য সকাল ৯টায় নওয়াবগঞ্জ গেলাম, কিন্তু তিনি বাসায় ছিলেন না। ইসলামপুরে চুল কাটিয়ে বেলা ১১টায় ফিরেছি। সন্ধ্যা ৬টায় অলি আহাদের সঙ্গে কামরুদ্দিন সাহেবের ওখানে গেলাম। টাঙ্গাইলের রশিদ সাহেব আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন। সাড়ে ৭টায় ডাঃ মানু সেখানে এলেন এবং রাত ১১টায় আমরা সেখান থেকে বের হওয়ার সময় পর্যন্ত তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। আলােচনার মূল বিষয় ছিল ডাঃ করিমের পারিবারিক অবস্থা এবং পরিবারের ভরণ পােষণের ক্ষেত্রে তার বর্তমান অসুবিধা, যা তার বাবা তার উপর তুলে দিয়েছেন। আবহাওয়া ও সকালে হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হল। তারপর সারাদিন আর বৃষ্টি হয়নি। ওমােট আবহাওয়া। রাতে আবার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়ার বিশেষত্ব এমন যে, গত কয়েকদিন ধরে বাতাসে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প (আর্দ্রতা) থাকা সত্বেও সে রকম বৃষ্টি হচ্ছে না। ২১ জুলাই ১৯৫০, শুক্রবার। ৮টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৯টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। ডি.আই.বি. ইন্সপেক্টর মদন মিয়া সেখানে গেলেন এবং ১১টা পর্যন্ত কথা বললেন। এরই মধ্যে টিটু মিয়া, মােহাম্মদ হােসেন এবং নূরুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে ওয়াসিরউদ্দিন সাহেব কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে এলেন। রাজেন্দ্রপুরের রেঞ্জার এবং ডি.এফ.ও,র অভিযােগের জবাবে ডি,আই,জি,কে দেয়ার জন্য একটি আবেদনের খসড়া তৈরি করলাম। দুপুর দেড়টায় ফিরেছি। সন্ধ্যা ৬টায় এস.আই. ইউনুসের সঙ্গে দেখা করার জন্য নওয়াবগঞ্জ গেলাম এবং আকবর আলি বেপারির সিমেন্টের মামলা নিয়ে তার সঙ্গে কথা বললাম। তিনি আমাকে মিষ্টি ও চা খাওয়ালেন। পৌনে ৭টায় সেখান থেকে বের হয়েছি।
সূর্যাস্তের সময় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। তিনি আতাউর রহমান সাহেবের কাছে গেছেন, তাই তাকে পাওয়া গেল না। মিটফোর্ড রােডে মমতাজউদ্দিন মােক্তারের সঙ্গে দেখা করলাম। রাত ১১টা পর্যন্ত কামরুদ্দিন সাহেবের চেম্বারে অপেক্ষা করে সাড়ে ১১টায় ফিরে এলাম। আবহাওয়া ও অস্বস্তিকর গুমােট পরিবেশ। সারাদিন এবং রাতে বিরতি দিয়ে দিয়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। ২২ জুলাই ১৯৫০, শনিবার সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টায় জেলা জজের কোর্টে গেলাম। মামলা আরও একদিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। ডি.আই.জি.কে লেখা আবেদনটি টাইপ করিয়ে দুপুর ২টায় ফিরেছি। রােজা এবং গ্রীষ্মের ছুটির পর আজ বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় খুলেছে। বেলা ৩টায় গােসিঙ্গার শাহাদ আলি সরকার আমার সঙ্গে দেখা করলেন এবং মামলার ব্যাপারে আমি কি করেছি সেটা জানতে চাইলেন। তিনি ৫টায় চলে গেলেন। আবহাওয়াঃ সারাদিন এবং বিশেষত রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হল। আকাশ পরিষ্কার নয়, গুমােট এবং অস্বস্তিকর। ২৩ জুলাই ১৯৫০, রবিবার সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৯টার দিকে আর.এম.এস.এর ওখানে গেলাম এবং ডি.আই.জি.কে লেখা একটা দরখাস্ত জমা দিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ড. হুদার কাছে আমাদের ক্লাসের রুটিন চাইলাম। তিনি বললেন, পুরানাে ৩য় বর্ষের ক্লাস রুটিন অনুসরণ করা হবে। ১০টায় হলে শিহাবউদ্দিন, এস, আলম, জালাল, অলি আহমেদ, আলি হুসেন প্রমুখের সঙ্গে দেখা করে সুতির কাছে একটি ছুটির দরখাস্ত দিয়ে বেলা ১১টায় ফিরলাম। দিনের বাকি সময়টুকু ঘরেই কাটল। রাত ৯টায় ডাঃ করিমের সঙ্গে দেখা করলাম এবং তােয়াহা সাহেবসহ কথা বলে রাত ১০টার দিকে ফিরলাম।
আবহাওয়া ও দিনের প্রথম এবং মধ্যভাগে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তারপর আর বৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া এখনও খারাপ। বাতাসে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প থাকলেও উল্লেখযােগ্য বৃষ্টি হয়নি। ভারি বর্ষণের অভাবে আমাদের এলাকা অনেকাংশেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই বৃষ্টি ভাল ফসলের জন্য অপরিহার্য। ২৪ জুলাই ১৯৫০, সােমবার সকাল সােয়া ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। এস.ডি.ও. (এন) এর এজলাসে হাজিরা দেয়ার জন্যে ১১টায় কোর্টে গেলাম। দুপুর ১২টায় ডি.আই.জি, অফিসে গেলাম। ডিআইজিকে লেখা আবেদনের কপি জালালকে দিলাম, যেখানে গােসিঙ্গা ডাকাতি মামলা সংক্রান্ত এস.আই. ও ডিএবি, শ্রীপুরের রেঞ্জার, ডি.এফ.ও.র দাখিলকৃত রিপাের্টের কপি পাবার আবেদন জানানাে হয়েছে। দুপুর পৌনে ২টায় ডিআইজি অফিস থেকে আবার কোর্টে গেলাম এবং শুনানির তারিখ নিলাম। উমেশ বর্মন নামে সিংহশ্রীর একজন হিন্দু ব্যক্তি ও তার ভায়রা আমার সঙ্গে পরিচিতি হলেন। উমেশ বর্মন সংখ্যালঘু বিষয়ক বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে সিংহশ্রী পিইউবি-র ভূমিকা সম্পর্কে খবর দিয়ে থাকেন। তিনি আমাকে রিপাের্টের কপি দেখালেন। গচা ইউনিয়নের সিরাজুল হকের দেখা পেলাম। বন বিভাগের সঙ্গে আমাদের মামলার ব্যাপারে সিরাজুল হকের আগ্রহ দেখে তার সঙ্গে আলাপ করলাম। সন্ধ্যা ৭টায় ফিরলাম। সন্ধ্যা ৭টায় আমি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে মফিজউদ্দিন মুনশী, টুক্কা এবং দিনত আলি দেখা করতে এলেন। আধ ঘন্টা পর তারা চলে গেলেন। আবহাওয়াঃ দিনে ও রাতে কোন বৃষ্টি হয়নি। আকাশ কম বেশি পরিষ্কার। কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্প (আর্দ্রতা) আছে। ২৫ জুলাই ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। প্রথম মফিজউদ্দিন মুনশী ও টুক্কা এবং পরে সালেহ আহেমদ এলেন, তাদের কাছ থেকে কোন গুরুত্বপূর্ণ খবর পাওয়া গেল না। তারা সবাই সাড়ে ১০টায় চলে গেলেন। বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। কোন ক্লাস হল না। হলে গিয়ে দুপুর। সাড়ে ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত আব্দুল হাকিমের সাথে কথা বললাম। সাড়ে ৩টায় ফিরলাম।
বিকেল ৫টায় ডিআইজি অফিসে গেলাম। সেখানে আশু ছিল। ফেরার পথে এ.এইচ, চৌধুরী, মি. সােবহান, আহসান উদ্দিন এবং পরে আবুল হুসেনের সঙ্গে দেখা হল। আবুল হুসেনের সঙ্গে তার কোয়ার্টার পর্যন্ত গেলাম এবং তারপর সাড়ে ৮টায় ফিরলাম। এর আগে নওয়াবপুরে তরগাঁওয়ের মেউরার বাবার সঙ্গে দেখা হলে তিনি জানালেন যে, রফিকের অবস্থা গুরুতর। আমি রফিককে ঢাকায় পাঠিয়ে দিতে বললাম। আবহাওয়া ও রৌদ্রম্নত দিন। রাত সাড়ে ৮টায় ২০মিনিটের জন্যে চমৎকার। এক পশলা বৃষ্টি হল। তারপর পরিষ্কার আকাশ। ২৬ জুলাই ১৯৫০, বুধবার। সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। কোন ক্লাস হয়নি। দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় অফিসে গেলাম। ১টায় বাসায় ফিরে এলাম। সন্ধ্যা ৬টায় বের হলাম। সাড়ে ৬টায় জালালের বাসায় তার সাথে দেখা করলাম। গিয়াস, আণ্ড এবং ক্ষীরােদ ঠিক সন্ধ্যার মুহুর্তে সেখানে এসেছিল। পাকিস্তান ময়দানে বসে প্রায় এক ঘন্টা কথা বললাম, তারপর নাজিরা বাজার- আলু বাজার ক্রসিংয়ে রাতে দাঁড়িয়ে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কথা বলে সেখান থেকে চলে এলাম। কামরুদ্দিন সাহেবের ওখানে গেলাম, কিন্তু তাকে পেলাম না। রাত সাড়ে ১০টায় ফিরে এলাম। আবহাওয়া ও সারাদিনে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। পুরাে রাত থেমে থেমে গুঁড়ি গুড়ি বৃষ্টি। আগের মত আবহাওয়া হলেও পরিবেশ ঠাণ্ডা। ২৭ জুলাই ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারা দিন ঘরের ভেতরে। সমস্ত বিকেল গােপাল হালদারের ‘একদা’ নামের বইটি পড়লাম। আবহাওয়া ও রাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এই বৃষ্টি থেমে থেমে সারা দিন রাত চলল। পরিবেশ আগের মতই।
২৮ জুলাই ১৯৫০, শুক্রবার। সােয়া ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা সােয়া ১১টায় ডি.আই.জি. অফিসে গেলাম। সেখানে ইন্সপেক্টর আর আহমদের দেখা পেলাম। তিনি আমাকে জানালেন যে, আগামী ২১ দিনের মধ্যে তিনি আমাদের এলাকায় যেতে পারেন। এস, এ. চৌধুরী, ডিবির সাব ইন্সপেক্টর এবং শ্রীপুরের রেঞ্জার ও ডিএফও-র দেয়া গােসিঙ্গা ডাকাতি মামলা সংক্রান্ত রিপাের্টের কপি পেলাম । দুপুর সাড়ে ১২টায় ফিরলাম। আমাদের কাজের ছেলে শফিকে সঙ্গে নিয়ে মফিজউদ্দিন মুনশী এলেন। তারা সন্ধ্যার ট্রেনে চলে গেলেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় কামরুদ্দিন সাহেবের ওখানে গেলাম। মুনিম এল, রাত ৮টা পর্যন্ত কথা বললাম। জি সালেহ আহমেদও আমাদের সাথে যােগ দিলেন। সাড়ে ৮টায় সবাই আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। রাত ১০টা পর্যন্ত তার সঙ্গে আমাদের মামলার ব্যাপারে কথা বলে জিন্দাবাহারে এলাম, সেখানে অলি আহাদের সঙ্গে দেখা হল। রাত ১২টা পর্যন্ত ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন নিয়ে কথা বললাম। বাসায় ফিরলাম রাত সােয়া ১২টায়। আবহাওয়া : মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প । মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, বিশেষ করে রাতে। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ।
২৯ জুলাই ১৯৫০, শনিবার সকাল ৭টায় উঠেছি। ১১টায় জেলা জজের কোর্টে হাজিরা দিলাম। ডিএমকে দেয়া ডিএফও-র জোরালাে চিঠির কারণে আজ আমাদের জামিন নিশ্চিত হল। এসডিও (এন)এর মাধ্যমে এই চিঠি জেলা জজের কাছে এসেছে। বেলা ২টা ৩০ মিনিট থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বার লাইব্রেরিতে। ৩টায় বার এসােসিয়েশনের সভা অনুষ্ঠিত হল, সেখানে সােহরাওয়াদী সাহেবের চলাফেরার উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরােপের নিন্দা জানান হল। মি, সােহরাওয়ার্দী আইন পেশার কারণে পূর্ব বাংলায় এসেছেন। সন্ধ্যা ৬টায় ফিরেছি। দুপুর দেড়টায় এস,ডি,ও (এন)-এর রুমের সামনে সালেহ আহমেদ মােড়ল এবং হামিদ মােক্তারের সঙ্গে কথা বলার সময় আকবর আলি বেপারি ও
১৬৫
নায়েব আলি সরকার হঠাৎ আমার সামনে এসে পড়লেন। রাত ৮টার দিকে গােসিসার শাহাদ আলি সরকার আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন এবং প্রায় ১ ঘন্টা মামলার বিষয়ে কথা বললেন। তারপর চলে গেলেন। আবহাওয়া ও দিনের দ্বিতীয় ভাগ থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত কোন বৃষ্টি হয়নি, কিন্তু বাতাসে প্রচুর আর্দ্রতা রয়েছে। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ৩০ জুলাই ১৯৫০, রবিবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠেছি। বিকেল ৫টায় সাইকেলে করে জালালউদ্দিন ফকিরের বাসায় গেলাম। আমাদের জামিনের নিশ্চয়তা, বি, বি. চৌধুরীর মামলা, আকবর বেপারির মামলা, রফিকের অসুস্থতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত কথা বললাম। ফটিক ভাইসাহেব উপস্থিত ছিলেন। এরপর নওয়াবপুর থেকে ২টা। লুঙ্গি কিনে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফিরেছি। রাত ৯টার দিকে ডাঃ করিম এল। আমি তাকে একটা লজিংয়ের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরােধ করলাম। সাড়ে ৮টায় জলিল এসেছিল অলি আহাদকে খুঁজতে, কিন্তু অলি আহাদ সেই সময় বাইরে ছিল। আবহাওয়া ও সকালে হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হল। তারপর সারাদিন এবং রাতে কোন বৃষ্টি হয়নি। পরিবেশ গুমােট এবং সে কারণেই গরম। বি. দ্র. ইউ.এস.এস,আর, ১. ৮. ৫০ তারিখ থেকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যােগ দিচ্ছে। কুওমিনটাং (তাইওয়ান) প্রতিনিধির পরিবর্তে রেড চায়নাকে (মূল চীন) নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে গ্রহণ করা প্রশ্নে গত ৭ মাস সে জাতিসংঘকে বয়কট করে এসেছে। ৩১ জুলাই ১৯৫০, সােমবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন বাসার মধ্যেই কাটল। দুপুর সাড়ে ১২টায় নিয়ামত সরকার আমার সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি জানালেন যে, একজন পুলিশ অফিসার গত শনিবার গােসিঙ্গা গিয়েছিলেন। এবং গত রােববার গােসিঙ্গা বন বিভাগ অফিসে ডাকাতি মামলার বিষয়ে। মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। নিয়ামত সরকার বেলা ১টার দিকে চলে গেলেন। আবহাওয়া ও থেমে থেমে সারাদিন এবং রাতে হালকা বৃষ্টি। আকাশ মেঘে। ঢাকা। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ খুব বেশি। আবহাওয়া উত্তপ্ত নয়, নাতিশীতােষ্ণ। (১) পৰ্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে পানি প্রবাহ না থাকায় ফসল বােনা যায়নি। অথচ ফসল বােনার উপযুক্ত মওসুম শ্রাবণ মাস দ্রুত চলে যাচ্ছে। এই অবস্থা। কৃষকদেরকে খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করেছে। (২) (ক) আপাতঃদৃশ্যে গত দুই মাস ধরে চলমান কোরীয় যুদ্ধের ফলে দ্রব্যমূল্যের উর্ধমুখী প্রবণতা, বিশেষ করে বিদেশী পণ্যের। কিন্তু এটা ঘটছে দেশের দেশপ্রেমহীন অসাধু ব্যবসায়ীদের মুনাফাবাজির মানসিকতার কারণে। তারা মনে করছে এই যুদ্ধ কোরিয়ার সীমান্তের বাইরে অন্য দেশেও ছড়িয়ে পরতে পারে – এই আশায় তারা এ ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। (খ) চাল এবং ধানের দাম যথাক্রমে ১০ টাকা থেকে ১৩ টাকা এবং ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকার মধ্যে ওঠা নামা করছে। (গ) পাটের দাম সর্বোচ্চ ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
১ আগস্ট ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ২টা ২০ মিনিট এবং ৩টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। বিরতিহীন বৃষ্টির জন্য রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে গেলাম। আর যখন ফিরলাম তখন সম্পূর্ণভাবে বৃষ্টিতে ভেজা। কে, জি, মুস্তাফা, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, এম. জেড. জাহেদি, অলি আহাদ, ফারুক, বাহাউদ্দিন, আনিস চৌধুরী, আলি কবীর এবং অন্যান্যরা মধুর দোকানে অপেক্ষা করছিল। আমি সবার শেষে এসেছি, কিন্তু তখনও এক গ্রুপ, কমনরুমে অপেক্ষা করছিল। আবহাওয়া ঃ সকাল থেকে কোন বিরতি ছাড়াই অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। বিকেলে সেটা জলপ্রবাহে পরিণত হল। এই বৃষ্টি কোন বিরতি ছাড়াই সারারাত চলল । আশা করা যায় পানি ভাল পরিমাণে বেড়ে যাবে। এই বৃষ্টি ধান চাষের জন্য ভাল হবে। ২ আগস্ট ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। অবিরাম বৃষ্টির কারণে সারাদিনই ঘরেই। রাত ৮টার দিকে ডাঃ করিম এলেন। আবহাওয়া ঃ গতকাল থেকে শুরু হয়ে প্রায় কোন বিরতি ছাড়াই আজ সারা। দিন রাত বৃষ্টি হল। আকাশ সারাক্ষণই মেঘে ঢাকা ছিল।
৩ আগস্ট ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টার ক্লাস করলাম । বৃষ্টির কারণে ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম । হল অফিসে যেয়ে বৃত্তি নবায়নের নােটিশ নিয়ে ফিরে এলাম। দিনের বাকি সময়টুকু ঘরেই কাটালাম। সন্ধ্যায় ১৫ মিনিটের জন্য জলিল এসেছিল। বৃত্তির নবায়নের জন্য একটা দরখাস্ত লিখলাম সন্ধ্যায়। আবহাওয়া ঃ অল্প বিরতি দিয়ে প্রায় সারা দিন রাত বৃষ্টি হল। আকাশ এখনও মেঘাচ্ছন্ন। ৪ আগস্ট ১৯৫০, শুক্রবার সকাল পৌনে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ১০টায় ডি.আই.জি.-র অফিসের উদ্দেশে বের হলাম এবং দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেখানে বসলাম। সেখানে এস,আই. মি. ইউনুসের সঙ্গে দেখা। সাড়ে ১২টায় হলে এসে এম. এ. লতিফ চৌধুরীর কাছ থেকে একটি সার্টিফিকেট নিয়ে বেলা দেড়টায় ফিরে এলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ডাঃ করিমের সাথে লক্ষ্মীবাজার গিয়ে সংসদীয় সচিব মি. এস, এ. রহমানের কাছ থেকে একটা সার্টিফিকেট নিলাম। বাণিজ্য একাডেমী কাছে একটা দোকানে চা খেলাম । আশু, কফিলউদ্দিন, বেলায়েত আলি মাস্টার প্রমুখের সাথে দেখা হল। রাত ৮টায় ডাঃ করিমের সাথে কেমব্রিজ ফার্মেসিতে গেলাম। জহিরুদ্দিন আমাদের চা খাওয়াল। রাত সাড়ে ৯টায় ফিরলাম। রাত ১১টায় ডাঃ করিম এবং তােয়াহা সাহেবের উপস্থিতিতে অলি আহাদের সাথে “সােয়ান” কালির মূল্য নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হল। আবহাওয়া : দুপুর থেকে বৃষ্টি কমেছে। সহনীয় বিরতিতে মাঝে মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ৫ আগস্ট ১৯৫০, শনিবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। এ. এন, মাহমুদ সাহেবের ঠিকানা খুঁজে বের করার জন্য সকাল ৭টায় বের হলাম। সাজিদ সাহেব এবং রাকিবের (ক্লার্ক) সাথে সাজিদ সাহেবের বাসায় দেখা হল, কিন্তু তারা আমাকে মাহমুদ সাহেবের বাসার ঠিকানা বলতে পারলেন না। ঢাকা হলে ওয়াহিদুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করলাম এবং তারপর বাবর আলির সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরি সহকারী মমতাজউদ্দিনের সঙ্গে কথা বললাম, তিনি আমাকে চা খাওয়ালেন। ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তার সঙ্গে ছিলাম। এ, এন, মাহমুদ সাহেবের বাসা থেকে ১১টার সময় তার সুপারিশ সংগ্রহ করে মি. আয়ারের বাসায় গেলাম এবং তার কাছ থেকেও দরখাস্ত নিয়ে সাড়ে ১১টায় হলের সেকেন্ড কেরানির কাছে বৃত্তি নবায়নের দরখাস্ত জমা দিলাম। বেলা ১২টায় এস.ডি.ও. (এন)-এর কোর্টে গেলাম । সাড়ে ১২টায় ডি.আই.জি. অফিসে গিয়ে জালালের সঙ্গে কথা বলে দুপুর ২টায় ফিরলাম। দুপুরের খাবার পর ৩টায় আবার কোর্টে গেলাম এবং হাজিরার পরবর্তী। তারিখ নিয়ে সাড়ে ৫টায় ফিরলাম। মি. বি. আহমদের কোর্টে ফরেস্টার মােসলেহউদ্দিনের সঙ্গে দেখা, তিনি একটি মামলায় সাক্ষি দিতে এসেছেন। সন্ধ্যা ৬টায় আহমেদ আলি মাস্টার দিনত আলিকে সাথে নিয়ে এলেন। তাদের সঙ্গে আমাদের বাড়ির প্রসঙ্গে আলােচনা হল। তারা জানালেন, কয়েকদিন আগে একজন পুলিশ অফিসার গােসিঙ্গা গিয়েছিলেন। রাত ৮টায় তারা চলে গেলেন। আবহাওয়া : ২-৩ বার হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। তারপর সূর্য উঠেছে এবং রাতের প্রথম অর্ধে আকাশে তারা ছিল। তাপমাত্রা বেড়েছে। বাতাসে আর্দ্রতা, পরিবেশও অস্বস্তিকর। ৬ আগস্ট ১৯৫০, রবিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সন্ধ্যা সােয়া ৬টায় বের হলাম। আহমেদ আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে কোম্পানিবাগ পর্যন্ত গেলাম। আহমেদ আমাকে বললেন যে, শ্রীপুরের রেঞ্জ অফিসার যখন তার এজেন্টের কাছ থেকে ঘুষ চাইবে তখন সে তার বিরুদ্ধে কেস করবে। নওয়াবপুর থেকে কিছু কাপড় কিনে রাত ৯টায় ফিরলাম। আবহাওয়া ও বৃষ্টি নেই। ভীষণ গরম, বিশেষ করে রাতে । জলীয় বাষ্প (আর্দ্রতা) সহ ভ্যাপসা আবহাওয়া।
১৭০
৭ আগস্ট ১৯৫০, সােমবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টায় আব্দুল হাকিম এসেছিল। বিকেল ৫টায় দু’জন একসাথে বের হলাম। সন্ধ্যা ৬টায় কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায় গেলাম, কিন্তু তাকে বাসায় পেলাম না। নদীর তীরে ইতস্ততঃ ঘুরে বেড়ালাম । সদরঘাটে হাকিম এবং মফিজের সঙ্গে দেখা। সন্ধ্যা ৭টায় ২০ মিনিটের জন্য জগন্নাথ কলেজে অনুষ্ঠিত রবীন্দ্র স্মৃতি বার্ষিকী অনুষ্ঠানে গেলাম। ড. শহীদুল্লাহর বক্তব্যের পর সেখান থেকে চলে এসেছি। বারান্দায় অধ্যাপক নূরুল হকের সঙ্গে কথা বলে রাত সাড়ে ৮টায় ফিরলাম। আবহাওয়া ও সারা দিন রাত বৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া গরম, তবে প্রচন্ড গরম নয়। পরিবেশ এখনও আর্দ্রতায় ভরা, ভ্যাপসা । ৬/৮/৫০ তারিখে আসামের মুখ্যমন্ত্রী জি, এন, বার্দালাই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে পরলােকগমন করেছেন। ৮ আগষ্ট ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ৩টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে। হাকিমের জামিন এবং সালেহ আহমেদ মােড়লের ভূমিকা নিয়ে কথা হল। সালেহ আহমেদ মােড়ল বার লাইব্রেরিতে আমার সঙ্গে দেখা করল। বার লাইব্রেরির কাছে ইউসুফ আলি মােল্লার সঙ্গেও দেখা হল। বিকেল ৫টায় ডি.আই.জি, অফিসে গেলাম। সন্ধ্যা ৬টায় জালালের সঙ্গে নাজিরাবাজার রেল ক্রসিং পর্যন্ত গেলাম। সন্ধ্যা ৭টায় ডাঃ করিমের বাসায় সামসুদ্দিনের সঙ্গে দেখা। সে আমাকে ঠাঠারি বাজার রােডে একটি রেস্তরাঁয় ডালের বড়া খাওয়াল। এর আগে সকালে মফিজউদ্দিন মুনশী এবং টুক্কা এসেছিল। ওরা ওয়ারেস আলির জামিনের ব্যাপারে কথা বলল। তারা সন্ধ্যার ট্রেনে বাড়ি ফিরে গেল। আবহাওয়াঃ রৌদ্রম্নত গরম দিন। রাত তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা। মধ্যরাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন । ৯ আগষ্ট ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম, কিন্তু কোন ক্লাস হল না। বেলা ৩টায় কোর্টে গেলাম। বার লাইব্রেরিতে সালেহ আহমেদ মােড়লের সঙ্গে দেখা। এ, এইচ. চৌধুরী এবং আশুর সঙ্গে কোর্ট চত্বরের রেস্তরায় চা খেলাম। বিকেল সােয়া ৫টায় কোর্ট ত্যাগ করলাম। সাড়ে ৬টা পর্যন্ত জালালের জন্য ইডেন বিল্ডিয়ের প্রথম গেট ক্রসিংয়ে অপেক্ষা করে সন্ধ্যা ৭টায় তার বাসায় গেলাম। সেখানেও তার দেখা পেলাম না। সাড়ে ৭টার দিকে কামরুদ্দিন সাহেবের ওখানে গেলাম, তিনি ছিলেন না। সালেহ আহমেদ মােড়ল সেখানে ছিলেন। পরে সেকান্দার মাস্টার ও ডাঃ মান্নান আমাদের সাথে যােগ দিলেন। শেষের ২ জন চলে যাবার পর রাত সাড়ে ৯টায় কামরুদ্দিন সাহেব বাইরে থেকে ফিরলেন। ১২টা পর্যন্ত এল.এম.এফ, ডাক্তারদের সংগঠন এবং তাদের দাবি প্রসঙ্গে কথা হল । রাত সাড়ে ১২টায় ফিরলাম। আবহাওয়া ঃ সকালে এবং বিকেলে এবং বিশেষ করে রাতের শেষ ভাগে বৃষ্টি হল। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। জলীয় বাষ্পের কারণে কিছুটা উষ্ণ পরিবেশ।
১০ আগস্ট ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। কোন ক্লাস হল না। ১টায় ফিরে এলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আহমদের খোঁজে এস.এম. হলে গেলাম, কিন্তু সে বাড়ি থেকে ফেরেনি। রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত কিবরিয়া এবং মােখলেসুর রহমান প্রমুখের সঙ্গে কথা বলে সরাসরি ফিরে এলাম। আবহাওয়া ও থেমে থেমে সারাদিন এবং রাতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। ভ্যাপসা আবহাওয়া চলছে। ১১ আগস্ট ১৯৫০, শুক্রবার সকাল পৌনে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৯টায় কোর্টে গেলাম । জেলা জজ কোর্টে বাঘিয়ার ক্ষীরােদের দেখা পেলাম। বার লাইব্রেরিতে আতাউর রহমান সাহেব আমাকে জানালেন যে, এস.ডি.ও. (এন) এর সঙ্গে হাকিমের জামিন সম্পর্কে আলােচনার সময় তিনি। আমার প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন। কামরুদ্দিন সাহেব আমাকে আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করে রবিবার সকালে সি.আই.ডি. ইন্সপেক্টরের। কাছে কিভাবে সাক্ষ্য দেব সে প্রসঙ্গে আলােচনা করতে বললেন। পৌনে ১২টায় বার লাইব্রেরি থেকে বের হলাম। রাস্তায় আহমদের সঙ্গে দেখা, সে রেল স্টেশন থেকে রিকশায় হলে ফিরছিল। সে জানাল যে, ভাঙনাহাটির আবুল হুসেন রবিবার ১১টা ২৫ মিনিটের ট্রেনে ঢাকায় পৌছে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে। জালালউদ্দিনের কোয়ার্টারে গেলাম এবং আর,ও,আর.-এর কেস, সি.আই.ডি, ইন্সপেক্টরের রিপাের্ট ইত্যাদি প্রসঙ্গে কথা বললাম। দুপুর দেড়টায় বাসায় ফিরলাম। বিকেলে ডাঃ করিমের সঙ্গে কেমব্রিজ ফার্মেসিতে গেলাম আমার জন্য চুলকানির ঔষধ কিনতে। সেখানে এক কাপ চা খেয়ে ৬টায় ফিরলাম। আবহাওয়া : সারা দিন রাত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সন্ধ্যায় চমৎকার এক পশলা বৃষ্টি হল। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ১২ আগস্ট ১৯৫০, শনিবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আজ টিউশন ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের প্রতীকি ধর্মঘট। তাই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাইনি। মফিজউদ্দিন মুনশী দু’বার আমার সাথে দেখা করলেন, একবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আর একবার রাত ৮টায় । তিনি বললেন, আমাদের মামলার তদন্ত একতরফা হতে চলেছে। দুপুর ৩টায় ডি.আই.জি. অফিসে যেয়ে জালালউদ্দিনকে সমস্ত কিছু জানালাম। সেখানে এ.সি.বি.-র সাব ইন্সপেক্টর ইউনুসের সঙ্গে দেখা। এখান। থেকে ৫টা ১০ মিনিটে বের হয়ে বাসায় ফিরে এলাম। আবহাওয়া ও মাঝে মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বিকাল থেকে কোন বৃষ্টি হয়নি, কিন্তু জলীয় বাষ্প আছে এবং আকাশ মেঘাচ্ছন্ন।
১৩ আগস্ট ১৯৫০, রবিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৮টায় কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায় গিয়ে তাকে নিয়ে ৯টায় আতাউর রহমান সাহেবের কাছে গেলাম। সেখানে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছিলাম । এস, এ, রহিম, টি. হােসেন, রফিক ও নাঈমউদ্দিন এবং আরও অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমার মামলার বিষয়ে পরামর্শ নিয়েছি। ফেরার সময় স্টেশন হয়ে। ১টায় ফিরেছি। রেল স্টেশনে মি, ইসমাইলের সঙ্গে দেখা হল। তিনি ১টা ২৩ মিনিটের ট্রেনে ময়মনসিংহ যাচ্ছেন। তিনি হাফিজ বেপারি, আব্বাস বেপারি, কোন এক আক্কাস অথবা আব্বাস আলি আকন অথবা শিকদারের সাথে বন। বিভাগের যােগসাজস রয়েছে বলে আমাকে ইঙ্গিত দিলেন। দিনের বাকি সময়টুকুতে আর বের হইনি। ভাঙ্গনাহাটির আবুল হুসেনের আসার কথা ছিল, কিন্তু তার দেখা পেলাম না। আবহাওয়া ও সন্ধ্যায় হালকা এক পশলা বৃষ্টি। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। দিনের মধ্য ভাগে এবং শেষ তৃতীয়াংশে সূর্যের আলাে। ১৪ আগস্ট ১৯৫০, সােমবার সকাল সােয়া ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। পাকিস্তান (স্বাধীনতা) দিবস। সন্ধ্যা ৬টায় শুধুমাত্র ঘুরবার জন্যই সাইকেলে করে বের হলাম। প্রথমে এফ,এইচ,এম, হলে, সেখান থেকে সাইকেল চালিয়ে ইচ্ছেমত পুরানা পল্টন, শান্তিনগর, মেডিকেল কলেজ গেট, রেসকোর্স ময়দানের মধ্য দিয়ে ঘুরলাম। কিছু সময়ের জন্য কার্জন হলে থামলাম। সেখানে বাহার সাহেবের সভাপতিত্বে বাংলা সাহিত্যের মুশায়রা হচ্ছিল। রাত ৯টার দিকে ফিরলাম। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের সাজসজ্জা আর সাধারণ জনগণের মধ্যে উদ্দিপনায় বেশ ঘাটতি দেখা গেল। মানুষের মধ্যে রােমাঞ্চের নামগন্ধও নেই । অনুষ্ঠানগুলিতে কর্মকর্তাদের প্রাধান্য সাধারণ জনগণের নিস্পৃহতার একটা কারণ হতে পারে। আবহাওয়া ও রৌদ্রস্নাত সারাদিন। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। রাতের আকাশ। মেঘাচ্ছন্ন।
১৭৫
১৫ আগস্ট ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৭টার দিকে আকরামতউল্লাহ মাস্টার সাহেব এসেছিলেন। ৯টার দিকে বরহরের চান মিয়া এলেন, তার ভাগনের চোখের চিকিৎসার ব্যাপারে আমার সাথে আলােচনা করতে। ওয়াসিউল্লাহ তােয়াহা সাহেবের কাছে এসেছিল। এফ.এইচ.এম. হলের বাকী। এবং আর, আমিন চৌধুরী এলেন। তারা প্রােভান্টের বিষয়ে, প্রধানতঃ স্বাধীনতা দিবসের ব্যাপারে তার আচরণ সম্পর্কে বলতে এসেছিলেন। সবাই চলে যাওয়ার পর দুপুর ১২টায় কোর্টে গেলাম। বিকেল ৪টায় হাকিম মিয়া এস,ডি,ও, (এন)-এর সামনে আত্মসমর্পণ করলেন এবং জামিন নেয়া হল। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় ডেপুটি এস.পি. মি, সােবহানের সঙ্গে দেখা করে তাকে বি, বি, চৌধুরীর অনুপস্থিতির কথা জানালাম। তিনি আমার সামনেই বিষয়টি দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে জানালে ব্যবস্থা নেয়া হল। তিনি আমাকে জানালেন যে, আদত আলি ছিলেন বি, বি. চৌধুরীর জামিনদার। সাড়ে ৬ টায় কোর্ট থেকে ফিরলাম। আহমেদ আলি মাস্টারের বড় ভাই হাকিম ভাইসাহেবের একখানা চিঠি এবং বাড়ি থেকে এক টিন মুড়ি এনে দিলেন। আবুল খান সাহেব রাত সাড়ে ৮টার দিকে এলেন প্রভােষ্টের বিষয়ে কথা বলতে। আবহাওয়া ও সেই সকাল থেকে অল্প বিরতিতে সারাদিন বৃষ্টি হল। জলীয় বাষ্প রয়েছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। ১৬ আগষ্ট ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম। গত রাতে ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি সকালে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হলেন। সকাল ৮টায় হলে গিয়ে ওয়াহিদের কাছ থেকে কপি নিলাম। আবুল খান সাহেব এবং রুহুল আমিন সকালে নাস্তা করালেন। পৌনে ৯টায় সেখান থেকে বের হলাম। সাড়ে ৯টায় ডাঃ করিমের সঙ্গে দেখা করার পর চান মিয়া এবং হাকিম মিয়ার সঙ্গে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলাম। সেখানে কুরিয়াদির আব্দুল জব্বারের সঙ্গে দেখা হল। পৌনে ১১টায় হাসপাতাল থেকে বের হলাম। বেলা ৩টা ২০ মিনিট থেকে ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ১০০ নম্বর কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি সমিতির সভায় উপস্থিত ছিলাম। অধ্যাপক সাদ আহমেদ পাকিস্তানের অর্থনীতি বিষয়ে একটি পেপার পড়লেন। বিকাল ৫টায় ডি.আই.জি, অফিসে গেলাম। ১৫ মিনিট পর বের হয়ে জালালের সঙ্গে তার বাসা পর্যন্ত গেলাম। পথে আবুল হায়াত চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হল। ৬টায় ফিরলাম। আবহাওয়া সারাদিন বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু সূর্যও ওঠেনি। বাতাসে আর্দ্রতা আছে।
১৭ আগস্ট ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১টায় ক্লাস করলাম, ১২টার ক্লাসটি হয়নি। সন্ধ্যা ৬টায় জালালের বাসায় গিয়ে ১৫ মিনিট কথা বললাম। জালাল ডি,এস,পি,র সঙ্গে দেখা করেছে। তিনি ডি.আই.জি.কে দেয়া আমার ব্যাখ্যার একটি কপি চেয়েছেন। সূর্যাস্তের সময় বাসায় ফিরলাম। আজ বিকেল ৪টায় প্রতিরােধ কমিটির উদ্যোগে টিউশন ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রিয়নাথ স্কুলে ছাত্রদের একটি সমাবেশ হয়েছে বলে শুনলাম। কিন্তু উপস্থিত থাকায় পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে কিছুই জানতে পারিনি। সকালে চান মিয়া তার ভাগনেকে নিয়ে এসেছিলেন এবং আমাদের সঙ্গে নাস্তা করেছেন। দুপুরে তার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হবার কথা। আবহাওয়া ও বিকেলে চমৎকার এক পশলা বৃষ্টি হল। আবহাওয়া বৃষ্টি আচ্ছন্ন। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। বিদ্র, গত ১৫ তারিখ রাত পৌনে ৯টায় কয়েক মুহূর্তের জন্য ভূমিকম্প হয়েছিল। তবে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ১৮ আগস্ট ১৯৫০, শুক্রবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৯টায় ডি.আই.জি, অফিসে গেলাম এবং ডিআইজিকে উদ্দেশ্য করে লেখা বিবরণের একটি কপি হস্তান্তর করে তখনই ফিরে এলাম। বিকেল ৩টার দিকে আব্দুল হাকিম ভাইসাহেব এক টিন মুড়ি এবং রান্না করা তাল নিয়ে এলেন। তিনি রাতে আমাদের সঙ্গে থেকে গেলেন। বুলবুলের সঙ্গে চান মিয়ার বিয়ে নিয়ে তিনি আমার সঙ্গে কথা বললেন। আমি আয়ােজনের সম্পূর্ণ বিষয়টি তার উপরেই ছেড়ে দিলাম। তিনি আমাদের আহমেদ আলি মাস্টারের কাছ থেকে একটি চিঠিও নিয়ে এসেছেন। সন্ধ্যা ৭টা থেকে পৌনে ৮টার মধ্যে হাকিম ভাইসাহেবের জন্য ওষুধ কিনতে কেমব্রিজ ফার্মেসিতে গেলাম। মফিজউদ্দিন মুনশী এবং টুক্কা রাতে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল। তারা। বাড়ি থেকে এসেছে এবং একটি মসজিদে উঠেছে। আবহাওয়া ও দিন ও রাতে বেশ কয়েকবার হালকা পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়ায় বৃষ্টির ভাব রয়ে গেছে। ১৯ আগস্ট ১৯৫০, শনিবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টায় ক্লাস করলাম। দুপুর ২টায় কোর্টে গেলাম। আমি সি,এস,আই, এর কাছে সি.আই.ডি, ইন্সপেক্টর আর, আহমদের পাঠানাে হাকিম মিয়ার জামিন বাতিল সংক্রান্ত
রিপাের্ট দেখলাম। এস.ডি.ও. (এন) উপস্থিত না থাকায় তার জামিনের কাজ স্থগিত রইল।। কোর্টে কাপাসিয়ার জব্বার মিয়া, ইসব আলি, জালাল, এ.এইচ. চৌধুরী, এম. ইউনুস, তরগাঁওয়ের শফিউদ্দিন, কালু মােড়ল এবং আরও অনেকের সঙ্গে দেখা হল। সন্ধ্যা ৬টার দিকে গচার সিরাজুল হকের সঙ্গে ওয়ারি স্ট্রীট হয়ে লােহার ব্রীজে গিয়েছিলাম ডি. বর্মনের সঙ্গে দেখা করতে, কিন্তু তিনি মফস্বলে ছিলেন। ওয়ারি স্ট্রীটে ফিরে এসে তার কাছে বন বিভাগের সঙ্গে বিবাদের সম্পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করলাম। রাত ৮টায় সেখান থেকে বের হয়ে সরাসরি জালালের বাসায় গেলাম। তার সঙ্গে প্রথমে বাসার ভেতরে ও পরে গেটে শাহাবুদ্দিনের উপস্থিতিতে প্রায় ২ ঘন্টা কথা বললাম। ১০টার দিকে চলে এলাম। আব্দুল হাকিম ভাইসাহেব সকালে চলে গেছেন। তুফানিয়া ও টুক্কা আমার সাথে সকালে দেখা করল। আবহাওয়া ও বিরতি দিয়ে দিয়ে সারাদিন বিশেষ করে বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টি হল। রাতে একদমই বৃষ্টি হয়নি। তবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। ২০ আগস্ট ১৯৫০, রবিবার সকাল ৬টা বেজে ২০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠেছি। ৯টায় হলে গেলাম। পৌনে ১০টায় ড. বি. করিমের সাথে তার অফিসে দেখা করলাম এবং সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কথা বললাম। তার কাছে আগস্ট পর্যন্ত আমার হলের পাওনা পরিশােধ করলাম। বেলা ১১টায় ক্লাস করলাম। দুপুর সােয়া ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় অফিসের পাওনা পরিশােধ করে ১টায় বাসায় ফিরেছি। সাড়ে ৫টায় তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম । তার সাথে অন্যান্য অনেক বিষয়ের মধ্যে আমাদের মামলা ও সিআইডি অফিসারের আচরণ নিয়ে কথা হল। তাকে অনুরােধ করলাম আতাউর রহমান সাহেবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলসহ ডি.আই.জি. ইসমাইল সাহেবের সঙ্গে দেখা করার জন্য। রাত ৮টার দিকে আর,এম,এস, ইউনিয়নের কয়েকজন কর্মী এলেন কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে ৩/৯/৫০ তারিখে তাদের বার্ষিক সমাবেশের বিষয়ে কথা বলতে। রাত ৯টায় বের হয়ে বাসায় ফিরে এলাম। খাবার ঘরে তােয়াহা সাহেবকে পরামর্শ দিলাম তার মূলধন পরিশােধ না করে। জলিল যেন ইটের ভাটা কেনার জন্য টাকা খরচ না করে সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে। আবহাওয়া ও বিরতি দিয়ে দিয়ে দিনে ও রাতে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। এখনও মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। ২১ আগস্ট ১৯৫০, সােমবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১টায় হাকিম মিয়া এলেন এবং তার সঙ্গে আগামীকাল দেখা করার জন্য অনুরােধ জানালেন। সন্ধ্যা ৬টায় বের হলাম। স্টেশনের কাছে কাপাসিয়ার আবুল হুসেনের সঙ্গে দেখা, তিনি বন বিভাগ প্রসঙ্গে কথা তুললেন। সেখানেই বর্তমান পি.এ.এস, ফজলুর রহমান আমাকে সম্ভাষণ জানালেন এবং কিছুক্ষণ কথা বললেন। আমি আবুল হুসেনের সাথে প্রায় এক ঘন্টা আটকে রইলাম, তারপর জালালের কাছে গেলাম, কিন্তু তাকে পেলাম না। সেখান থেকে প্রথমে হাকিম মিয়া এবং তারপর কামরুদ্দিন সাহেবের ওখানে গেলাম। কিন্তু কাউকেই পেলাম না। রাত সাড়ে ৮টায় বাসায় ফিরে এলাম। আবহাওয়া : গত রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে আজ বিকেল পর্যন্ত চলল। বর্ষাচ্ছন্ন পরিবেশ। ২২ আগস্ট ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১২টা, ১টা এবং ২টা ২০মিনিটের ক্লাসগুলাে করেছি। সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। ১০০ নম্বর কক্ষে অর্থনীতি বিভাগের একটি সভায় যােগ দিয়েছি। রামপুর প্রদেশের প্রাক্তন অর্থ মন্ত্রী ড, আর, আহমেদ “Problems of distribution of wealth in Islam” বিষয়ে প্রবন্ধ পাঠ করলেন। প্রবন্ধটি উচুমানের হয়নি। সকালে হলে গেলাম। ১০টায় ড, বি. করিমের কাছে এক সিট বিশিষ্ট রুম বরাদ্দের জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়ে সাড়ে ১০টায় বের হলাম। এর আগে হলের পুকুরে এফ.এইচ.এম. হলের সঙ্গে সেন্ট গ্রেগরির ওয়াটার পােলা খেলা দেখেছি। সকাল ৮টায় সালেহ আহমেদ মােড়লের বংশালের বাসায় তার সঙ্গে দেখা করলাম । হাকিম মিয়া এবং অন্যান্যরাও উপস্থিত ছিলেন। জালালকে না পেয়ে ওর বাসা থেকে ফেরার পথে স্টেশনে ফরেস্টার খিজিরউদ্দিনের সঙ্গে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দেখা করলাম। তিনি ব্রংকাইটিসের কারণে চাকরিতে তার সমস্যার কথা বললেন এবং মদন মােহন বসাক রােড পর্যন্ত আমার সঙ্গে এলেন। তিনি তাদের সমিতির কথাও। বললেন। রাত ৮টায় ফিরে এলাম। আবহাওয়া ও বিকেলে এবং মধ্যরাতের দিকে বৃষ্টি হল। রাতের প্রথম অর্ধ। চাঁদের আলােয় আলােকিত ছিল। বর্ষাচ্ছন্ন ঠান্ডা আবহাওয়া। ২৩ আগস্ট ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১২টা, ১টা ও ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম। দুপুর ২টায় হলে গেলাম এবং মুচিকে জুতা ঠিক করতে দিলাম । বেলা ৪টায় দুপুরের খাবার খেয়ে ৫টায় বের হলাম। সচিবালয়ের প্রথম গেটে জালালের সঙ্গে দেখা করলাম এবং তার সঙ্গে তার বাসা পর্যন্ত গেলাম। তাকে গােসিঙ্গার ঘটনার বিষয়ে বললাম এবং এই বিষয়ে মূল পয়েন্টগুলাে দিলাম। জালাল বলল যে, সে গত সােমবার ডি.এস.পি, ক্রাইমের সাথে কথা বলেছে । জালাল আমাকে চা এবং কেক খাওয়াল। রাত ৯টার দিকে ফিরে এলাম। আবহাওয়া ঃ সকালে এক পশলা বৃষ্টির পর আর বৃষ্টি হয়নি। রাত পরিষ্কার ।। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ২৪ আগস্ট ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম, কোন ক্লাস হয়নি। ১২টা ২০ মিনিটে কমরেড ব্যাংকে গিয়ে চেক ভাঙ্গালাম। দেড়টায় হলে গিয়ে এস, আলমের সঙ্গে কথা বললাম। সে আমাকে
১৮০
প্রভােস্টের মনােভাব সম্পর্কে জানাল। মুচির কাছ থেকে জুতা নিলাম। হল। অফিস থেকে এই সেশনের জন্য মূল লাইব্রেরি কার্ড এবং হল লাইব্রেরি কার্ড নিয়ে সাড়ে ৩টায় ফিরলাম। বিকেল ৪টায় কোর্টে গেলাম। সেখানে শাহাদ আলি, শামসুল খান, গিয়াস, মনিরুদ্দিন, হাকিম মিয়া প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। সন্ধ্যা ৬টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। ১০টা পর্যন্ত কথা হল। এই সময়ে লাইব্রেরি সহকারি মমতাজউদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। সাড়ে ১০টায় ফিরেছি। ফিরে এসে আখলাকুর রহমানকে পেলাম। আমরা দু’জন ও রফিক রাত প্রায় সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কথা বললাম, তারপর ওরা চলে গেল। আবহাওয়া ঃ বলতে গেলে সারাদিন এবং রাতে কোন বৃষ্টি হয়নি। সােয়া ৪টার দিকে মাত্র কয়েক ফোটা বৃষ্টি পড়েছে। রৌদ্রস্নাত দিন, চন্দ্রালােকিত রাত।
২৫ আগস্ট ১৯৫০, শুক্রবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৮টায় কোর্টে গেলাম । এসডি.ও. (এন) হাকিম মিয়ার জামিন মঞ্জুর করেছেন। কোটে অন্যান্যদের মধ্যে জব্বার মাস্টার সাহেব, কালু মােড়ল, গােসিঙ্গার নায়েব, সালেহ আহমেদ মােড়ল, কাওরাইদের হাসনাত, মঈনুদ্দিন। প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। দুপুর ১২টায় কোর্ট ত্যাগ করলাম। সাড়ে ১২টায় জালালের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম। সে ১টা ২৩ মিনিটের ট্রেন ধরবে বলে জানাল। বেলা ১টায় বাসায় ফিরলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আব্দুল আজিজ সরকার আমার সাথে দেখা করতে বাসায় এলেন এবং আকবর আলি বেপারির ভূমিকা নিয়ে তার সাথে প্রায় ১ ঘন্টা কথা হল। তিনি বললেন, আরওএস তাকে ডিএফও-র কাছে নিয়ে গিয়েছিল। এবং আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য (আরওএস) তাকে নির্দেশ দিয়েছে। আব্দুল আজিজ সরকার ফরেন্টার আলাউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে ইন্সপেক্টর রওশনউদ্দিনের সাথে কাওরাইদে এবং তার ঢাকার বাসায় দেখা করেছেন বলেও জানালেন। আবহাওয়া ও দিন শুরু হল চোখ ধাধান রােদ দিয়ে। কিন্তু সারাদিনই রােদছায়ার লুকোচুরি খেলা চলল। চাদের রূপালী আলােয় ভরা পরিষ্কার রাত। বৃষ্টিহীন সাদা মেঘ ইতস্ততঃ উড়ে বেড়াচ্ছে। দীর্ঘদিন পর আজকের দিনটি। বৃষ্টি মুক্ত। আবহাওয়া উষ্ণ। এই সময়ের রৌদ্রালােকিত দিনে এটাই স্বাভাবিক।
২৬ আগস্ট ১৯৫০, শনিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা এবং ২টা ২০মিনিটের ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম। সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। ৭২ নম্বর রুমে টিউশন ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে। আন্দোলন নিয়ে কিবরিয়ার সঙ্গে কথা বললাম। রেলওয়ে হাসপাতালের কাছে সি.পি.ডব্লিউ.ডি, বিল্ডিংয়ের সামনে আনওয়ারুল আযমের সাথে দেখা করার আশায় প্রায় এক ঘন্টা অপেক্ষা করলাম, কিন্তু তাকে পেলাম না। সােয়া ৬টায় ফিরছি। রাত ৯টায় দিকে আবুল খান এসেছিলেন। আজ রাত ৯টায় ভাবী তার ভাইয়ের সঙ্গে দেশের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। আবহাওয়া ও রৌদ্রম্নত দিন। রাত কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন এবং চাদকে আলােকিত হতে বাধাগ্রস্থ করেছে। এই দিনের স্বাভাবিক উষ্ণ আবহাওয়া। রাতের প্রথম ভাগে কয়েক ফোটা বৃষ্টি হয়েছে। বাতাসে জলীয় বাষ্প (আদ্রতা) রয়েছে। ২৭ আগস্ট ১৯৫০, রবিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। কোথাও না গিয়ে সারাদিন বাসাতেই কাটল। তােয়াহা সাহেব একখানা পুরাতন টাইপ রাইটার মেরামত করিয়েছেন। রাত সাড়ে ৮টায় নাঈমউদ্দিন সাহেব এসেছিলেন। আবহাওয়া ও দিন ও রাত পরিষ্কার। দিনের শেষে কয়েক ফোটা বৃষ্টি পড়েছে। পরিবেশ নাতিশীতােষ্ণ। ২৮ আগস্ট ১৯৫০, সােমবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টায় বের হলাম। ডাঃ করিমের বাসায় তার সাথে আধ ঘন্টার মত বসলাম। সােয়া ৯টায় জালালের কাছে গেলাম। সে জানাল, রবিবার বিকেলে সে গােসিঙ্গ গিয়েছিল এবং কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে। আহমেদ আলি মাস্টার সাহেব আমাদের বাড়িতে না থাকায় তার সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। জালাল আমাকে বিকেলে দেখা করার জন্য অনুরােধ জানাল। সাড়ে ১০টায় ফিরলাম । বিকেল ৪টায় হাওয়ার বাপ এল। সে বাড়ি থেকে এসেছে। সে জানাল যে, আকবর আলি বেপারি গ্রামের লােকজনদেরকে এমনকি আমাদের বাড়ির কাজের লােকদেরকেও মিথ্যা ভয় দেখিয়ে আতঙ্কগ্রস্থ করছে। সন্ধ্যা ৬টায় জালালের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। তার সঙ্গে নাস্তা করলাম এবং রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত কথা বলে ফিরে এলাম। সে আগামী শুক্রবার আবার গােসিঙ্গা যাচ্ছে। ঠিক হল আমি আগামীকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে। জালালের অফিসে যাব আকবর আলি বেপারির বিরুদ্ধে করা এফ.আই. এর রিপাের্ট দেখার জন্য। রাত সাড়ে ৯টায় আহমেদ আলি মাস্টার সাহেব আমার সাথে দেখা করলেন। তার সাথে প্রায় এক ঘন্টা কথা বললাম। আবহাওয়া ঃ বাতাসে জলীয় বাষ্প। বিকেলে কিছু সময়ের জন্য গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হল। রাতে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি যা পরে হালকা হল এবং চলতে থাকল। তেমন গরম নেই। ২৯ আগস্ট ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৮টায় আহমেদ আলি মাস্টার এলে তাকে জালালের বাসায় নিয়ে গেলাম এবং পরিচয় করিয়ে দিলাম। আগামী শুক্রবার জালালের যাওয়ার বিষয়ে কথা হল । ৯টায় সেখান থেকে বের হয়ে ফেরার পথে টুকু মিয়াকে পাকিস্তান ময়দানের পাশে ঘােরাঘুরি করতে দেখলাম। সাড়ে ১১টায় দুর্নীতি দমন অফিসে গেলাম এবং আকবর আলি বেপারির বিরুদ্ধে এফআইআর, এর খসড়া দেখলাম। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। বেলা ১২টা, ১টা, ২টা ২০ মিনিট এবং ৪টা ২০ মিনিটের ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে স্টেশনে আহমেদ আলি মাস্টারকে দেখলাম বাড়ির উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। রায়েদের সরাফত আমার সাথে খুব অন্তরঙ্গতা দেখিয়ে সাহেব আলি বেপারির বিরুদ্ধে বলার চেষ্টা করলে তাকে শক্ত কথা বলে চুপ করিয়ে দিলাম। ৬টায় ফিরেছি। আকবর আলি বেপারি এবং তার ছেলে আহমেদ গতকাল রাতে ঢাকায় এসেছিলেন, আজ তারা বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। ওয়াহেদ এবং খায়ের মিয়া রাতে দেখা করতে এলেন এবং তারপর চলে গেলেন।
আবহাওয়া ও বিরতি দিয়ে সকালে এবং রাতে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ। এখনও পরিষ্কার নয়। বাতাসে আর্দ্রতা। ৩০ আগস্ট ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১২টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করেছি। দুপুর ৩টায় হল এবং হল অফিসে গেলাম। সাড়ে ৩টায় ফিরে এলাম। সন্ধ্যা ৬টার দিকে গিয়াস ভাইসাহেব এসেছিলেন তফাজ্জলের বাবাকে সাথে নিয়ে। গিয়াস ভাইসাহেব আধ ঘন্টা থেকে চলে গেছেন। তফাজ্জলের বাবা। রাতে আমাদের সঙ্গে থেকে গেলেন। সানাউল্লাহ নূরী আগামী ১/৯/৫০ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য তার বিয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে আমাদের সাথে রাত ১২টা পর্যন্ত কথা বলল। আবহাওয়া ও দিনের প্রথম ভাগে, আবার বিকেলে এবং রাতে হালকা বৃষ্টি হল। শেষ রাত থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। ৩১ আগষ্ট ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১টায় ক্লাস করলাম। সকাল সাড়ে আটটার দিকে তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে তার টাকা সংক্রান্ত বিষয়ে জলিলের বাসায় গেলাম। সাড়ে ৯টায় ফিরলাম। তফাজ্জলের বাবা আজ ১টা ২৩ মিনিটের ট্রেনে বাড়িতে চলে গেলেন। বেলা ৩টায় কোর্টে গেলাম। সেখানে আশু, শাহাদ আলি, গিয়াস, শামসুল খান, সিংহশ্রীর হােসেন আলি খান প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। হােসেন আলি খান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষয়ে সিংহশ্রী ইউনিয়নের হিন্দুদের দায়ের করা আবেদনের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। সাড়ে ৫টায় জালাল কোর্টে এলে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য সদরঘাট পর্যন্ত গেলাম। সেখান থেকে। ৭টার দিকে ফিরলাম। রাত ৯টার দিকে হলে গেলাম এবং আমার রুমমেটদের সাথে দেখা করলাম। তাদেরকে বললাম আমি আগামীকাল থেকে হলে থাকছি। রাত সাড়ে ৯টায়। ফিরে এলাম। আবহাওয়া ও বৃষ্টিহীন দিন। দুপুরে সূর্য উঠল। রাতে সম্ভবত মধ্যরাতের পর। হালকা বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া ঠান্ডা।
১ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, শুক্রবার। ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৭টায় হলে গেলাম। আমার বিছানা পরিষ্কার করে জিনিসপত্র গুছিয়ে ঠিক করে রেখে, পৌনে ৯টায় যােগীনগরে ফিরে গেলাম। বেলা ১২টার দিকে হাকিম মিয়া এলেন, তিনি বাড়িতে গিয়েছিলেন বলে জানালেন। তিনি দেড়টার দিকে চলে গেলেন। ১৪/8/৫০ তারিখ আমার ক্লাস শেষ হবার পর আজ সকাল ৭টায় হলে উঠেছি। মনের অস্থির অবস্থার কারণে আজ বিকেলে অনুষ্ঠিত সানাউল্লাহ নূরীর বিয়েতে যাইনি। আবহাওয়া ঃ সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। দুপুরের মধ্যভাগে প্রচন্ড রােদ। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, শনিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা এবং দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করেছি। রাত পৌনে ৮টায় জালালের বাসায় গেলাম, কিন্তু তাকে না পেয়ে সােয়া ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে রাত সাড়ে ৯টায় হলে ফিরেছি। গত ৩/৪ দিন ধরে মানসিক শান্তি উবে গিয়েছে। মাথা ব্যথা । আজ বিকেলে এবং রাতে প্রচন্ড মাথা ব্যথা এবং স্নায়ুবিক দুর্বলতা অনুভব করছি। আবহাওয়া ও বিকেলে হালকা এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ এখনও সম্পূর্ণ পরিষ্কার হয়নি। চমৎকার নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া।
১৮৫
৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, রবিবার ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৭টায় জালালের বাসায় গেলাম। সে আজ সকালে আমাদের এলাকায় গিয়েছে। যাবার সময় জাদুঘরের কাছে শফিউদ্দিন মুনশী এগিয়ে এসে কথা। বললেন। প্রায় আধ ঘন্টা তার সঙ্গে কথা হল। সাড়ে ৭টায় তােয়াহা সাহেবের কাছে গেলাম। সাদেক সেখানে ছিল। নাস্তা করে তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে ১০টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। তার সাথে কাদের সরদারের বাসায় দেখা হল। সেখান থেকে পাটুয়াটুলিনওয়াবপুর হয়ে সম্পূর্ণ রাস্তা হেঁটে দুপুর সাড়ে ১২টায় স্টেশনে মফিজউদ্দিন। মুনশীর সঙ্গে দেখা করে হলে ফিরেছি। সারা বিকেল কোথাও যাইনি। আবহাওয়া স্বাভাবিক আবহাওয়া। রৌদ্রস্নাত সারাদিন। পরিষ্কার রাত। এই মাসের শুরু থেকে প্রতি দিন সকালে বাতাসে শীতের আমেজ।
৪ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, সােমবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রভােস্টের বিষয়ে অন্যান্য ৮ জন প্রতিনিধিত্বকারীসহ। উপাচার্যের বাসার উদ্দেশে রওনা হলাম। সােয়া ৪টায় উপাচার্যের সাথে কথা শুরু হয়ে তা শেষ হল সাড়ে ৫টায় । আমি প্রতিনিধিত্বকারীদের নেতৃত্ব দিলাম এবং উপাচার্যের সামনে সমস্ত কিছু বর্ণনা করলাম। মনে হল তিনি আমাদের যুক্তিতে প্রভাবিত হয়েছেন। তিনি বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য কিছু। সময় চাইলেন। ২ জন হাউজ টিউটর এবং ৩ জন সহকারী হাউজ টিউটর। উপস্থিত ছিলেন। সিদ্দিকুল্লাহ, বাবর আলি, মােশাররফ হােসেন, নুরুল ইসলাম, শফি, মােবারুদ্দিন প্রমুখ এই প্রতিনিধি দলে ছিল । ভি.সি.-র বাসা থেকে ফেরার পথে এফ, এইচ, এম, হল এবং মেডিকেল কলেজের মধ্যে অনুষ্ঠিত ফুটবল প্রতিযােগিতা দেখলাম (১-৩)। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক আকাশ । সুন্দর হালকা বাতাস। চমৎকার পরিবেশ। আকাশে খন্ড খন্ড ভাসমান মেঘ সত্বেও উজ্জ্বল দিন। ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, মঙ্গলবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টা, ১টা, ২টা ২০ মিনিট এবং ৪টা ২০ মিনিটের ক্লাস করেছি।
সকাল ৮টায় জালালের বাসায় গেলাম। সেখানে শাহেদ আলি ছিল, তাই কথা বলতে পারিনি। আব্দুল হাকিম যে বাসায় লজিং থাকেন সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললাম। ১০টায় ফেরার সময় গােসিঙ্গার জহিরুদ্দিনের সঙ্গে দেখা হল। বিকেলে ক্লাস থেকে বের হয়েই দেখি হাকিম মিয়া এবং শাহাদ আলি সরকার আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের কাছ থেকে শুনলাম যে, গতকাল কাপাসিয়া থানার সেকেন্ড অফিসার আমাদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আহমেদ আলি মাস্টারকে গ্রেফতার করেছেন। সন্ধ্যা ৬টায় জালালের বাসায় গেলাম। সন্ধ্যায় শাহাদ আলি সরকার এবং হাকিম মিয়া আবার সেখানে আমার সাথে দেখা করতে এলেন। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত জালালসহ আমরা সবাই পাকিস্তান ময়দানে বসে কথা বললাম। রাত ৯টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। দিন ও রাত পরিষ্কার । হালকা বাতাস সহ চমৎকার পরিবেশ। ৪/৯/৫০ তারিখ রাতে স্বপ্ন দেখলাম ঃ তিন জনের একটি দলের একজন তার অন্য ২ জন সঙ্গীর গলায় ছুরি চালিয়ে তারপর নিজের। গলায় ছুরি চালিয়েছে। তিনজনই মাটিতে পরে আছে। কেউ মরেনি, কিন্তু রক্তপাত হচ্ছে এবং তারা হাত-পা ছুড়ছে।
৬ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, বুধবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম। সকাল সাড়ে ৭টায় হাকিম মিয়া এসে জানিয়ে গেছেন যে, আহমেদ আলিকে। গতকাল রাতে ঢাকায় পাঠানাে হয়েছে। সাড়ে ৩টায় আমি কোর্টে গেলাম। তার জামিন মঞ্জুর হয়েছে এবং সন্ধ্যা ৬টায় সে ছাড়া পেয়েছে। এর আগে বার লাইব্রেরিতে কামরুদ্দিন সাহেবের সাথে দেখা করেছি এবং বিষয়টি তাকে জানিয়েছি। ইন্সপেক্টরদের রুম থেকে এস,আই, মমতাজউদ্দিন তাকে ডেকে নিয়ে কথা বললেন। সাড়ে ৭টার দিকে জালালের কাছে গেলাম। তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলাের খসড়া তৈরি করলাম। রাতে জালালের সাথে খেলাম। হলে ফিরেছি রাত ১১টায়। আবহাওয়া ও সকালে কয়েক ফোটা বৃষ্টি হল। তার পর থেকে সারাদিনই রােদ। পরিষ্কার রাত। বিকেল এবং রাত তুলনামূলকভাবে গরম। ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টা এবং ১টার ক্লাস করেছি। আড়াইটায় কোর্টে গেলাম। হাকিম মিয়া, আহমেদ, মফিজের সঙ্গে দেখা করলাম এবং আরও অনেকের দেখা পেলাম । সাড়ে ৫টায় কোর্ট থেকে বের হলাম। বংশাল ব্রীজে মাগরিব পর্যন্ত আহমেদের সঙ্গে কথা বললাম। ওয়াদুদ, আউয়াল, আব্দুল হাকিম বি,এস,সি, বি, জামান প্রমুখেরাও আমাদের সাথে যােগ দিলেন। কফিলউদ্দিন চৌধুরীর চেম্বারে কামরুদ্দিন সাহেবকে পেলাম। তিনি এই.পি, শিক্ষা কনফারেন্সের প্রসঙ্গ তুললেন এবং তার সঙ্গে অলি আহাদের আচরণ নিয়ে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত কথা বললেন। সােয়া ৮টায় জালালের কাছে গেলাম এবং তার সাথে আকবর বেপারির অসৎ কার্যকলাপ সম্পর্কে কথা হল। রাত ৯টায় ফিরেছি। রাত ১২টায় আব্দুল খান এবং টুক্কা (হাওয়ার বাপ) আমার কাছে এসে জানালেন, এস.আই. ইসমাইলের সহায়তায় আকবর আলি কিভাবে হয়রানি করছেন। তারা রাতে হলেই থেকে গেলেন। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। রৌদ্রালােকিত দিন। দিন ও রাত পরিষ্কার। গরম আবহাওয়া। বি.দ্র. ৭/৯/৫০ তারিখ সকালে পলাশি ব্যারাক লেভেল ক্রসিংয়ে ঢাকাগামী বাহাদুরাবাদ মেইল ট্রেন এবং পুলিসের লরির মধ্যে সংঘর্ষে ৪ জন। ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন এবং বাকিরা সবাই গুরুতর আহত। ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, শুক্রবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আব্দুল খান এবং টুক্কাকে সঙ্গে করে সােয়া ৭টায় জালালের বাসায় গেলাম। তাকে এস.আই. ইসমাইল এবং আকবর আলি বেপারির সমস্ত কার্যকলাপ জানালাম। সাড়ে ৮টায় তাদের সঙ্গে কোর্টে গেলাম। কোর্টে যাবার পথে বংশাল থেকে হাকিম মিয়াকে সাথে নিয়েছি। পৌনে ১১টায় কোর্ট থেকে বের হয়ে ১১টায় দুনীতি দমন অফিসে গেলাম। সেখানে এস.আই. ইউনুস ছিলেন। আকবর আলির কেসের ব্যাপারে তার গােসিঙ্গা যাওয়ার নির্দেশ চূড়ান্ত হয়েছে। ১২টায় হলে ফিরে দুপুরের খাবার খেলাম। পৌনে একটায় স্টেশনে গেলাম এবং এস.আই. ইউনুস আগামী রবিবার গােসিঙ্গা যাবেন, এই খবরটি আব্দুল খান এবং টুক্কাকে জানিয়ে দিলাম। জালালও আমার সঙ্গে ছিল। ওরা বেলা ১টা ২৩ মিনিটের ট্রেনে চলে। গেলেন। দুপুর ২টায় হলে ফিরেছি। সারা বিকেল হলেই কাটল। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। সূর্যালােকিত দিন। বেশ গরম। রাতে হালকা বৃষ্টি হয়েছে।
৯ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, শনিবার ডাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আজ শরণার্থীদের জন্য গভর্নরের রিলিফ দিবস। কোন ক্লাস হয়নি। ৯টার দিকে সিরাজের বাবা এবং সফু এলেন। তিনি বুলবুলের সঙ্গে চান। মিয়ার বিয়ের প্রসঙ্গে কথা বললেন। মিনিট বিশেক কথার পর তারা চলে গেলেন। বেলা ২টায় হাওয়ার বাপ এল, আকবর আলি বেপারি কিভাবে ফাঁদ পেতেছে। সেই বিষয়ে জানাতে। আমি তাকে আগামী রবিবার এস.আই. ইউনুস যখন। গােসিঙ্গায় থাকবেন তখন তার সাথে যোগাযােগের পরামর্শ দিলাম। বৃষ্টির। কারণে বেলা আড়াইটা থেকে প্রায় ১ঘন্টা স্টেশনে আটকে রইলাম। সাড়ে ৩টায় ডাঃ করিমের ওখানে এবং তারপর ৪টায় তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। কোন উল্লেখযােগ্য আলােচনা হয়নি। স্টেশনে গেলাম, সেখানে হাওয়ার বাপ এবং আব্দুল মােড়লের দেখা পেলাম । সেখানে জালালকেও পেলাম, সে আজ সন্ধ্যা ৬টার ট্রেনে বাড়ি যাচ্ছে। সাড়ে ৬টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া ঃ দিন এবং রাতের আবহাওয়া বেশ গরম। আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত হালকা এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির এই সময়টুকু ছাড়া দিন ও রাত পরিষ্কার। বিদ্র: গতরাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম মেইল।ভৈরবের কাছে লাইনচ্যুত হয়েছে। হতাহতের সংখ্যা বেশি বলেই মনে হয়। এই পথে আপাততঃ ট্রেন যােগাযােগ বন্ধ। ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, রবিবার। ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন রুমে। রাতে ৮টা থেকে ১০ পর্যন্ত কমনরুমে। আবহাওয়া স্বাভাবিক। দিন এবং রাতের আবহাওয়া গরম।
১১ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, সােমবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আজ কায়েদ-ই-আযম এর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। সকালে ১৫ মিনিটের জন্য হাকিম মিয়া এসেছিলেন। সারাদিনই রুমে। সাড়ে ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত কমনরুমে ছিলাম। আবহাওয়া ঃ সারা দিন এবং রাতের আবহাওয়া গরম। বাতাসে জলীয় বাষ্প। বিকেলে হালকা এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। শেষ রাতে আকাশে মেঘ জমেছে। ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, মঙ্গলবার ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১২টা, ১টা, ২টা ২০ মিনিট, ৩টা ৩০ মিনিট এবং ৪টা ২০মিনিটের ক্লাসগুলাে করেছি। সকালে মফিজউদ্দিন এসে জানাল যে, আকবর আলি বেপারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৮টায় জালালের সঙ্গে দেখা করলাম। তার কাছ থেকে শুনলাম এই বিষয়ে সে যা জানে। এ. হাকিম মােক্তারের চেম্বারে হাকিম মিয়ার দেখা পেলাম। জাহাদ আলিকে আকবর আলির গ্রেফতারের বিষয়টি বললাম। ১০টায় হলে ফিরেছি। ক্লাস শেষে ফেরার পর আমাদের কাজের ছেলে শফিকে পেলাম। সে বাড়ি থেকে এসেছে। সে রাতে মফিজের সঙ্গে থেকে গেল। সন্ধ্যা ৬টায় কোর্টে গেলাম। সেখানে আকরামতউল্লাহ, হাকিম মিয়া, ডাঃ করিম, আহমেদ আলি প্রমুখকে পেলাম। আকবর আলির জামিন মঞ্জুর হয়নি।
১৯০
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ১৪ কোর্ট হাউজ স্ট্রীটে মি. মফিজউদ্দিন আহমেদ বি.এ.র সঙ্গে দেখা করলাম। আফাজউদ্দিন মিয়া এবং আব্দুল হাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মফিজউদ্দিন সাহেবকে বললাম, কি ভাবে সাহেব আলি বেপারি ও আকবর আলি বেপারির সহযােগিতায় আমাদের বিরুদ্ধে। গােসিঙ্গার মামলাটি সাজানাে হয়েছে। রাত ৯টায় সেখান থেকে বের হয়ে পৌনে ১০টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া ঃ আজ সারাদিন বেশ গরম। রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত চমক্কার এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। রাত সম্পূর্ণ পরিষ্কার হয়নি। বাতাসে জলীয় বাষ্প রয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১২টা, ১টা, ও ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম। আরফান আলি মােড়ল এবং আহমেদ আলি সাড়ে ৭টায় এসে আমাকে জালালের কাছে নিয়ে গেলেন। আহমদ আলি জালালকে হয়রানির কথা এবং কিভাবে আজিজ ও অন্যান্যরা সম্ভবত (?) এস আই ইসমাইলের সহায়তায় ১০০ টাকা আদায় করেছে সেই বিষয়ে বললেন। চা খেয়ে সাড়ে ৯টায় সেখান থেকে বের হলাম। বিকেল ৪টায় কোর্টে গেলাম। সেখানে নাস, আদু, জাফর মােড়ল, শাহাদ। আলি সরকার, আনসার, শাহেদ আলি প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল। আনসার ও শাহেদ আলি আমাকে ডাঃ করিমের কাছে কেমব্রিজ ফার্মেসিতে নিয়ে গেল চিকিৎসার জন্য। তাদের সঙ্গে যােগীনগর গেলাম। কিন্তু তােয়াহা সাহেবকে পেলাম না। তারা সাড়ে ৮টায় চলে গেলে রাত ৯টায় হলে ফিরেছি। আনসার আমাকে জানাল যে, ওয়াহাব বেপারির গাছ কাটার ফলেই হাফিজ বেপারি এবং বন বিভাগের বিবাদের সূত্রপাত এবং শেষপর্যন্ত নিজেদের গা বাঁচানাের জন্য দুজনেই আমাকে সমস্যায় ফেলতে চেষ্টা করেছে। আমি আনসারকে এই বিষয়টি হাফিজ বেপারিকে জানাতে অনুরােধ করি। তার (আনসার) কথা অনুযায়ী ওয়াহাবের অনুরােধে আইয়ুব আলি ব্যাপারটি হাফিজ বেপারির অগােচরে রাখে। আমি উপরতলায় আসগরের রুমে ঘুমালাম, যেহেতু আসগর আমার রুমে রইল। আবহাওয়া ও নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। উত্তরে বাতাসসহ রাত ঠান্ডা। রাতের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হয়েছে।
১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টায় ক্লাস করেছি। পৌনে ৩টায় কোর্টে গেলাম। বার লাইব্রেরিতে কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। তার এবং টিটু মিয়ার সঙ্গে আয়কর বিভাগের পাঠানাে চিঠি নিয়ে কথা বললাম। টিটু মিয়া একটি দরখাস্তসহ আয়কর অফিসে যাবার জন্য পরামর্শ দিলেন। ৪টায় বার লাইব্রেরি থেকে বের হলাম। ৬টা পর্যন্ত সি.আর, কোর্টে। তারপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত আহমেদ আলির সঙ্গে নদীর পাড়ে হাঁটলাম এবং ৫১ বংশাল হয়ে রাত ৮টায় হলে ফিরলাম। সাড়ে ৮টায় আহমেদকে সঙ্গে করে আকরামতউল্লাহ মাস্টার এলেন। তারা আধ ঘন্টা ছিলেন। আবহাওয়া ঃ বাতাসসহ নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। তবে দিনটি খুব পরিষ্কার নয়। ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, শুক্রবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকালে আব্দুল খান আমার সঙ্গে দেখা করলেন। ৮টায় তার সঙ্গে বের হলাম। রেলওয়ে হাসপাতালের সামনে তালেব আলি এবং দিনত আলির সঙ্গে দেখা হল। সাড়ে ৮টায় জালালের সঙ্গে এ.সি. অফিস পর্যন্ত গেলাম। আকবর আলির জামিনের বিরােধিতা করে ইউনুস এস,ডি,ও, (এন) বরাবর নােট পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে বেলা পৌনে ১০টায় বের হয়ে পথে ডাঃ করিমের সঙ্গে দেখা করে সাড়ে ১০টায় কোর্টে গেলাম। আবার দুর্নীতি দমন অফিসে গেলাম। সেখানে এ. এইচ, চৌধুরী এবং ডি.এস.পি, সােবহান সাহেবকে দেখলাম। দুপুর সাড়ে ১২টায় হলে ফিরেছি। আবার সােয়া ১টায় বের হয়ে কমরেড ব্যাংকে গেলাম, কিন্তু সময় না থাকায় চেক ভাঙ্গাতে পারিনি। আড়াইটায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম, কিন্তু তাকে পেলাম না। যােগীনগর যেয়েও কাউকে পেলাম না। সাড়ে ৫টায় সদরঘাটে গেলাম, সেখানে আনওয়ারের সঙ্গে দেখা। সেখান থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মান্নান সাহেবের বাসায় গেলাম। কিন্তু আহমেদকে পেলাম না। আগামীকাল সকালের মধ্যে তাকে আমার সঙ্গে দেখা করতে মােহারিরকে বললাম। রাত ৮টায় বংশালে হাকিম মিয়ার সঙ্গে দেখা করে সােয়া ৮টায় জালালের
বাসায় গেলাম এবং আকবর আলিকে জামিন দেয়া হয়েছে এই খবরটি তাকে জানালাম। রাত ৯টায় হলে ফিরেছি। বেলা ১টায় বার লাইব্রেরিতে মােখলেসুর রহমানের কাছ থেকে শিক্ষা কনফারেন্সের খবর পেলাম। ইস্ট পাকিস্তান মুসলিম স্টুডেন্টস লীগের সদস্যরা। বিশেষত আবু হেনা মােহসিন এবং আহসানউল্লাহ সমাবেশে ঝামেলা করায় পরে সমাবেশ সন্ধ্যায় এফ,এইচ,এম, হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যা আমরা দেখেছি। সব জেলা থেকে আগত সদস্যরা চমৎকার বক্তব্য রেখেছেন বলে জানা গেছে। আজ শহরে কাশ্মীর দিবস পালন করা হয়েছে। সুযােগ সন্ধানীদের দ্বারা সম্ভাব্য গােলমাল এড়াতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ পুলিশ পিকেটার এবং পেট্টোল গার্ডের সুন্দর ব্যবস্থা ছিল। আবহাওয়া : দুপুরে এবং বিকেলে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া।
১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, শনিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টার ক্লাস করেছি। সকাল সাড়ে ৭টায় আব্দুল খান এবং আহমেদ আলি এসেছিলেন। তাদেরকে ওয়ারেস আলির জন্য জামিনের আবেদন করতে বললাম। সাড়ে ৯টায় কয়েক মিনিটের জন্য গিয়াস ভাইসাহেব এসেছিলেন। সাড়ে ১১টায় কমরেড ব্যাংকে গিয়ে চেক ভাঙ্গালাম। বেলা ১২টায় কোর্টে গেলাম। এস.আই. ইউনুস, নিয়ামত সরকার প্রমুখ। সেখানে ছিলেন। ওয়ারেস আলির জামিনের আবেদন তৈরি হয়নি। আবার দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। সাড়ে ৩টায় কোর্টে। সুলার প্রেসে নিয়ামত সরকারের সঙ্গে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কথা বললাম। শ্রীপুরের হেড মাস্টার সাহেব দেখা করতে বলেছিলেন, কিন্তু তাকে পেলাম না। জালালের সঙ্গে দেখা হল, সে সদরঘাট যাচ্ছিল। জালাল বলল এস.পি, ও ইন্সপেক্টর রওশন উদ্দিনের প্রমাণাদির মারকের ব্যাপারে সি.এস.কে জানিয়েছেন। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক, যদিও রােদ তেমন তীব্র নয়। রাতের প্রথম ভাগে প্রচন্ড গরম।
১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, রবিবার। ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা আড়াইটায় বের হলাম । হাকিম মিয়ার বাসায় গেলাম, পৌনে ৩টায় এবং পরে আবার সন্ধ্যা ৭টায়। কিন্তু তাকে পাইনি। কামরুদ্দিন সাহেবের সাথে দেখা করতে চেষ্টা করলাম, একবার ৫টায় আর একবার সাড়ে ৬টায়, কিন্তু দেখা হল না। বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে সদরঘাটে কিছু কেনাকাটা করেছি। সােয়া ৭টায় হলে ফিরলাম। এর আগে ৩টা থেকে পৌনে ৫টা পর্যন্ত নয়াবাজারের কাছে কাপাসিয়ার বশিরউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেছি। আহসানউল্লাহ্ হলে অনুষ্ঠিত বিতর্কে অংশগ্রহণ করলাম। বিতর্কের বিষয় 16 “Armed Intervention of U.N.O. in Korea is a step to World Peace”, বিতকে গতি ছিল না। ড. হালিম সভাপতিত্ব করলেন। সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠান শেষ হল। লােক সমাগম ভাল। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। গরম, বিশেষ করে রাতে। ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, সােমবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম । হাকিম মিয়া হল থেকে বংশাল পর্যন্ত আমার সাথে এল। কামরুদ্দিন সাহেবকে হােম বেইলের জন্য আবেদন করতে অনুরােধ করলাম এবং ইন্সপেক্টর রওশন উদ্দিনের প্রমাণাদির স্মারক পেশ করার বিষয়টিও তাকে জানালাম। সােয়া ৯টায় বের হলাম। কয়েক মিনিটের জন্য টিটু মিয়ার সঙ্গে তার চেম্বারে দেখা করলাম। ৯টা বেজে ৩৫ মিনিটে অলি আহাদের সঙ্গে যােগীনগরে দেখা করলাম। বরকতের কাছ থেকে ১০ টাকা নিয়ে বেলা ১০টায় হলে ফিরেছি। একবার সাড়ে ১১টায় এবং তারপর আড়াইটায় আয়কর অফিসে গিয়েছিলাম । দ্বিতীয়বার অফিসারকে পেলাম। তিনি আগামী ২৬/৯/৫০ তারিখ পর্যন্ত সময় দিলেন। সাড়ে ৩টায় বের হলাম। সেখানে সাহেব আলি বেপারিকে দেখলাম। বার লাইব্রেরিতে টিটু মিয়ার সঙ্গে দেখা করে কোর্টে গেলাম, সেখানে অন্যান্যদের মধ্যে গােসিঙ্গার নায়েবের সঙ্গে দেখা হল। দু’বার দুর্নীতি দমন অফিসে গেলাম, একবার দুপুর ১টায় আর একবার বিকেল ৪টায়। বিকেলে একজন সাক্ষিসহ আরফান আলি মােড়লকে একজন ইন্সপেক্টরের সামনে দেখলাম। এখান থেকে সাড়ে ৫টায় বের হলাম। এস,এস, প্রতিশ্রুতি দিলেন যে তিনি সকালেই ডি,আই,জির সঙ্গে দেখা করবেন। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে পৌনে ১টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বকেয়া পরিশােধ করলাম । সন্ধ্যা ৬টায় কোর্টে আহমেদ আলির সঙ্গে দেখা করলাম। সেখান থেকে কথা অনুযায়ী সাহেব আলি বেপারির বাসায় গেলাম। কিন্তু তাকে পেলাম না । সাড়ে ৭টায় আহমেদ আলিসহ হলে ফিরেছি। সে ৮টায় চলে গেল। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। দিন এবং রাতের প্রথম ভাগে প্রচন্ড গরম।
১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১২টা, ২টা ২০ মিনিট, ৩টা ২০ মিনিট এবং ৪টা ২০ মিনিটের ক্লাস। করেছি। জালালের জন্য বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সচিবালয়ের দক্ষিণ গেটের ক্রসিংয়ে অপেক্ষা করলাম এবং সেখান থেকে তার সঙ্গে সদরঘাট গেলাম। জালাল বলল, মি, এম, চৌধুরী ডি.আই.জির সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। এর আগে সচিবালয়ের কাছে শ্রীপুরের রেঞ্জার যেচে কথা বললেন। ৬টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। কিন্তু তাকে পাইনি। সন্ধ্যা ৭টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। বেশ গরশ। রৌদ্রস্নাত দিন। সহসা বৃষ্টির কোন। লক্ষণ নেই। ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, বুধবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম। সকাল ৭টায় জালালের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম। সেখান থেকে সাড়ে ৭টায় কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায় গেলাম। সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মামলার অবস্থা এবং আমাদের বাড়ি যাওয়ার বিষয়ে কথা বলে সাড়ে ১০টায় হলে ফিরেছি। বিকেল ৪টায় এ.সি.বি. অফিসে গেলাম । এস.এস. ওয়ান জালালের
১৯৫
উপস্থিতিতে ডি.আই.জি.কে আমাদের মামলার বিষয়ে বললেন। তার মন্তব্যে মনে হল তিনি বন বিভাগ দ্বারা প্রভাবিত। ৬টায় সেখান থেকে বের হয়ে জালালসহ সদরঘাট গেলাম। ইসলামপুরে হাকিম মিয়া ও আহমেদ এবং পরে সাবু ও কুদরত আলির সঙ্গে দেখা হল। সাড়ে ৭টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। রাত ৮টায় তার সাথে বকশিবাজারে মি, সােবহানের কাছে গেলাম। আমাদের আয়কর সংক্রান্ত ব্যাপারে তার সঙ্গে সােয়া ৯টা পর্যন্ত কথা বললাম। সাড়ে ৯টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া ঃ ২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ভারি বর্ষণ হল। তারপর আর বৃষ্টি হয়নি। বাতাসে জলীয় বাষ্প। ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎকালের ছুটি শুরু হল। সকাল ৮টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। তার সঙ্গে ৯টায় আতাউর রহমান সাহেবের বাসায় গিয়ে তাকে না পেয়ে তখনই ফিরে এসেছি। কামরুদ্দিন সাহেবের চেম্বারে সেকান্দার মাস্টার ছিলেন। ১০টা পর্যন্ত কথা। বলে আমি সাড়ে ১০টায় হলে ফিরেছি। এর আগে সকাল ৭টায় আব্দুল খান হলে এসেছিলেন। তাকে আহমদের সঙ্গে দেখা করে ওয়ারেস আলির জামিনের ব্যবস্থা করতে বলেছি। দুপুর ২টায় কোর্টে গেলাম। স্টেশন থেকে নাস মিয়া আমার সঙ্গে এলেন। কামরুদ্দিন সাহেবকে খুঁজে পেলাম না। মি. ওবায়দুল্লাহ সাহেব আলির জামিন এবং ওয়ারেস আলির শহর জামিন মঞ্জুর করেছেন। তবে সময় কম থাকায় আজ আর তাদের মুক্তি দেয়া হয়নি। এস.ডি.ও.-র কোর্টের সামনে আকবর আলি বেপারি যেচে আমার সঙ্গে কথা বললেন। সন্ধ্যা ৭টায় জালালের কাছে গেলাম। তার জন্য অপেক্ষা করলাম। সে রাত ৮টায় বাসায় ফিরল। মি, শাহাবুদ্দিন তার চেম্বারে আমাকে চা খাওয়ালেন। সাড়ে ৮টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া ও পরিবেশ আদ্র ও ভ্যাপসা। সাড়ে ৫টা থেকে সােয়া ৬টা পর্যন্ত চমৎকার এক পশলা বৃষ্টি হল। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বাতাসে জলীয় বাষ্প
(আর্দ্রতা।)
২২ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, শুক্রবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা সাড়ে ১১টায় জেল গেটে গেলাম। সােয়া ১২টায় ওয়ারেস আলি এবং সাহেব আলি জেলের বাইরে এলেন। ১টা ২৩ মিনিটের ট্রেনে আব্দুল খান বাড়ি চলে গেলেন। স্টেশন থেকে ওয়ারেস আলির সঙ্গে যােগীনগর হয়ে দুপুর ২টায় হাফিজ বেপারির বাসায় গেলাম। সামসু সেখানে ছিল। বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ বাসায় বিশ্রাম নিলাম। সাড়ে ৪টায় ওয়ারেস আলির জামিনের নির্দেশ সম্পর্কে জানতে কোর্ট পুলিশ অফিসে গেলাম। হাসমত ছিলেন না। সাদির মােক্তার ছিলেন। ওয়ারেস আলিকে পরে এস,আই. এর সাথে যােগাযােগ করতে পরামর্শ দিলাম। সাড়ে ৫টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। আমরা যখন কথা বলছি সেই সময় আতাউর রহমান সাহেব এলেন। তিনি কামরুদ্দিন সাহেবকে নিয়ে বের হলে আমি ডাঃ মান্নানের সঙ্গে মিটফোর্ড হাসপাতাল পর্যন্ত এলাম। ৮টার দিকে হলে ফিরেছি। ফেরার পথে মাহুতটুলিতে কবিরউদ্দিন এবং মাইনসিফের সঙ্গে দেখা হল। আবহাওয়া ও রাতের প্রথম ভাগ পর্যন্ত খুব গরম। বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে হালকা এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। পরিবেশ আদ্র ও ভ্যাপসা (জলীয় বাষ্প)। ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, শনিবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আজ ঈদ-উল-আযহা। সকাল ৯টায় তােয়াহা সাহেবের বাসায় গেলাম। অলি আহাদও সেখানে ছিল। কিন্তু মফিজউদ্দিনকে পেলাম না। ফেরার পথে ডাঃ করিমের সঙ্গে দেখা হল। ১২টায় হলে ফিরেছি। বেলা ১২টায় ঈদ উপলক্ষ্যে উন্নতমানের খাবার খেলাম । প্রভােস্ট ড. বি. করিম আমাদের সঙ্গে অংশ গিয়েছেন। বেলা ১টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ঘুমালাম। কোথাও যাইনি, হলের ভেতরেই ছিলাম।
রাত ৮টা থেকে ভাের রাত ৩টা পর্যন্ত এল.এম.এফ, ডাক্তারদের জন্য বাংলা বিবৃতির একটা খসড়া তৈরি করলাম। আবহাওয়া ও পরিষ্কার দিন। সব মিলিয়ে আবহাওয়া নাতিশীতােষ্ণ। ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, রবিবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ১২টায় বের হলাম। পৌনে ১টায় তােয়াহা সাহেবের কাছে গেলাম। কেমব্রিজ ফার্মেসি থেকে ডাঃ করিমও আমার সঙ্গে গেলেন। সােয়া ২টায় ফিরেছি। আড়াইটায় ডাঃ মান্নানের ওখানে যেয়ে বিবৃতির খসড়া কপি দিলাম। সেখানে খেয়ে সােয়া ৫টায় বের হলাম। কামরুদ্দিন সাহেবকে না পেয়ে সরাসরি হাফিজ বেপারির বাসায় গেলাম। হাওয়ার বাপের সাথে ওয়ারেস আলির মা এবং স্ত্রী সেখানে এসেছেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত কথা বললাম। সন্ধ্যা ৭টায় হলে ফিরেছি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ট্যাংক ঘাটে কফিলউদ্দিন মাহমুদ, খায়ের মিয়া এবং বাকীর সাথে তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে জলিলের ব্যবহার নিয়ে কথা বললাম। আবহাওয়া ও সারাদিন তীব্র রােদ। তবে খুব বেশি গরম নয়। দিন ও রাত পরিষ্কার। ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, সসামবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। এস. এ. রহিম এবং অন্যান্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সাড়ে ১০টায় হলে ফিরেছি। দুপুর দেড়টায় জালাল হলে এসে আমাদেরকে রাতে খাবারের দাওয়াত দিল। সে দাওয়াত দিয়েই চলে গেল। বেলা ৩টায় বের হলাম । কেমব্রিজ ফার্মেসিতে ডাঃ করিমের সঙ্গে ১৫ মিনিট কথা বলে পৌনে ৪টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। সেখানে তােয়াহা সাহেব, মােস্তাক, আতাউর রহমান সাহেব, কফিলউদ্দিন চৌধুরী সাহেবসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। কামরুদ্দিন সাহেব আগামীকাল সকাল ৮টার মধ্যে তার সঙ্গে দেখা করতে বললেন।
জব্বারকে আকবর আলি বেপারির সঙ্গে দেখলাম। সে এস.ডি.ও. (এন) এর কাছে আত্মসমর্পণের জন্য এসেছিল। এস.ডি.ও. (এন) না থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি। সাড়ে ৬টায় কোর্ট চত্বর থেকে বের হলাম। সন্ধ্যা ৭টার দিকে মফিজউদ্দিনের সঙ্গে জালালের বাসায় গেলাম। রাতের খাবার খেয়ে সাড়ে ৮টায় বের হলাম। অর্ধেক পথ আমার সঙ্গে এসে মফিজউদ্দিন তার নিজ গন্তব্যে চলে গেল। আবহাওয়া ও সূর্যের প্রখর তাপ। ভীষণ গরম, বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে। বাতাসে জলীয় বাষ্প। ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৭টায় বংশালে হাকিম মিয়ার কাছ থেকে হিসাবপত্রের খাতা নিয়ে কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। মােস্তাকও সেখানে ছিল। সেখান থেকে ৯টায় আতাউর রহমান সাহেবের কাছে। তিনি সাড়ে ১০টায় ডি.আই.জি. মি. ইসমাইলকে ফোন করলেন। ডি.আই.জি, বেলা ৩টায় তার অফিসে দেখা করতে বলেছেন। ১১টায় জিন্দাবাহারে ফিরলাম। আয়কর সংক্রান্ত ব্যাপারে মি. সাদেকের সঙ্গে দেখা করলাম। তার সঙ্গে ১২টায় আয়কর অফিসে গেলাম। সেখানে কাজিমউদ্দিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা হল। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আজিজ আহমেদ সাহেবও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বেলা পৌনে ১টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। আতাউর রহমান সাহেব এবং কামরুদ্দিন সাহেব মি. ইসমাইল সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু তাকে পাননি। গচার সিরাজুল হকের সঙ্গে দেখা হল। তার সঙ্গে প্রায় ১ ঘন্টা কথা বললাম। জিন্দাবাহার হয়ে ৬টায় হলে ফিরেছি। ফেরার পথে জালালের বাসায়ও গেলাম। কিন্তু তাকে পাইনি। সারাদিনে গােসল বা খাওয়া কিছুই হয়নি। রাত ৮টায় জিন্দাবাহার গেলাম। সাদেক সাহেব লাভ-ক্ষতির একটি হিসাব তৈরি করেছেন। কামরুদ্দিন সাহেব তাকে ২৫ টাকা দিলেন। সেখানে সেকান্দার মাস্টার সাহেব উপস্থিত ছিলেন। রাত সাড়ে ১২টায় হলে ফিরেছি। আবাহওয়া ও জলীয় বাষ্পের কারণে আদ্র ও গুমােট ভাব। দুপুরে হালকা বৃষ্টি। হয়েছে। প্রচন্ড গরম পরিবেশ।
২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, বুধবার সকাল পৌনে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। হাকিম মিয়া ও জালালের সঙ্গে পথে দেখা করে ৮টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। তােয়াহা সাহেবও আমাদের সঙ্গে যােগ দিলেন। সেখানে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ছিলাম। কামরুদ্দিন সাহেবের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে আমি টাকা না দিলে তিনি কিছুই করতে পারবেন না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তিনি আমাকে একবারও বলেননি কোথা থেকে শুরু করতে হবে এবং কি করতে হবে। ১১টায় ফিরলাম। আড়াইটায় ডাঃ করিমের সাথে তার বাসায় দেখা করলাম এবং কাজী আলতাফকে নিয়ে আসতে বললাম। বেলা ৩টায় আয়কর অফিসে গেলাম। হামিদ আহমেদ সাহেবকে। হিসাবপত্রের খাতা দেখালাম । ৪টায় সেখান থেকে বের হলাম । সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোর্টে ছিলাম। জব্বার আজ আত্মসমর্পণ করল। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কেমব্রিজ ফার্মেসিতে। জালাল এল, তার সঙ্গে তার বাসা পর্যন্ত গেলাম। সাড়ে ৭টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। পরিবেশ বেশ গরম, বিশেষ করে বিকেলে। রাত কম বেশি নাতিশীতােষ্ণ।
২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টায় ৫১ বংশালে গেলাম। পথে জালালকে তার বাসায় খোঁজ করে পেলাম না। হাজি সালেহ আহমদের দেখা করলাম। তাকে বিস্তারিতভাবে মামলার অবস্থা এবং কি করা যায় সে সম্পর্কে বললাম। সেখান থেকে আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গেও এই বিষয় নিয়ে দেখা করে ১১টায় হলে ফিরেছি। পৌনে ৩টায় বার লাইব্রেরিতে কামরুদ্দিন সাহেব এবং আতাউর রহমান সাহেবকে পেলাম, কিন্তু সালেহ আহমদের সঙ্গে দেখা হল না। তাকে সাড়ে ৪টায় এস.ডি.ও. কোর্টের সামনে পেলাম। জামাত আলি এবং কলিমউদ্দিন খলিফা সেখানে আমার সাথে দেখা করল। মমতাজউদ্দিন মােক্তার জানালেন যে, তিনি সিডির জন্য চেষ্টা করছেন। সাড়ে ৬টায় হলে ফিরেছি। রাত ৮টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। অলি আহাদ সেখানে ছিল। কামরুদ্দিন সাহেবের কাছ থেকে শুনলাম যে, সালেহ আহমেদ সাহেব
২০০
সন্ধ্যায় তাদের সঙ্গে কফিলউদ্দিন চৌধুরী সাহেবের বাসায় দেখা করেছেন এবং সন্ধ্যার পর কাদের সরদারের বাসায় গেছেন। তাই আমি আর আতাউর রহমান সাহেবের বাসায় গেলাম না। সাড়ে ১০টায় হলে ফিরে এসেছি। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। এই সময় অনুযায়ী গরম পরিবেশ। ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, শুক্রবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৭টায় আমাদের কাজের ছেলে শফিকে নিয়ে মফিজউদ্দিন এল। শফি বলল আনােয়ারা কফের সমস্যায় ভুগছে। ৮টায় রেলওয়ে হাসপাতালের সামনে জালালের সঙ্গে দেখা হলে তার হাতে ডি.আই.জি.কে লেখা একটা দরখাস্ত দিলাম। এই দরখাস্তে আমার ১২/১২৪৯ তারিখে দেয়া অভিযােগের একটি কপির জন্য আবেদন করা হয়েছে। সাড়ে ৮টায় ডাঃ করিমের বাসায় গেলাম। তার সঙ্গে সকালের নাস্তা করলাম । কেমব্রিজ ফার্মেসি থেকে আনােয়ারার জন্য ঔষধ কিনে শফির হাতে দিলাম। ১১টায় হলে ফিরলাম। আজিজ আহমেদ সাহেব ফার্মেসিতে ছিলেন । দিনের বাকি সময় হলেই কাটালাম। আবহাওয়া : রাত ১১টা পর্যন্ত প্রচণ্ড গরম। তারপর বাতাস এবং হালকা বৃষ্টির জন্য পরিবেশ ঠান্ডা হল। ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, শনিবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর সাড়ে ১২টায় কমরেড ব্যাংকে গেলাম। সেভিংস একাউন্টের চেক না পাওয়ায় টাকা পেলাম না। মেরামত এবং তেল দেয়ার জন্য আমার সাইকেলটা আতাউর রহমানের কাছে দিলাম। বেলা ১টা থকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত হায়দার এন্ড কোম্পানীতে হায়দার সাহেব এবং পরে শওকত ও বাদশা মিয়ার সঙ্গে কথা বললাম। সাড়ে ৩টায় বার লাইব্রেরিতে কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে রবিবার বিকেলে তার সঙ্গে রেজাই করিম সাহেবের সাথে দেখা করতে যাবার জন্য বললেন। ৫টা পর্যন্ত ক্রিমিনাল কোর্টের বারান্দায়। তরগাঁওয়ের শফিউদ্দিন, শহিদ মােক্তার, ফারহি মিয়া প্রমুখের সঙ্গে দেখা।
৭. হল। আহমেদের সঙ্গে নওয়াবপুরে কিছু কেনাকাটা করে সন্ধ্যা ৭টায় হলে ফিরেছি। পথে রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং থেকে আহমেদ আলি পিয়াজু কিনলেন। আবহাওয়া স্বাভাবিক। দিনের প্রথম ভাগে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বৃষ্টি হয়নি। খুব বেশি গরমও পড়েনি। (১) মৌলিক নীতি নির্ধারণী কমিটির উপস্থাপিত খসড়া সংবিধান ২৯.০৯.৫০ তারিখে প্রথমবারের মত প্রকাশিত হয়েছে। (২) পাটের দাম গত বছরের চাইতে ভাল নয়। চাষিরা সর্বোচ্চ (মণ প্রতি) ১৪ থেকে ২০ টাকা দাম পাচ্ছে। (৩) ধান এবং চালের দামে উর্ধমুখী প্রবণতা।
১ অক্টোবর ১৯৫০, রবিবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন রুমেই কাটল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে যাবার জন্য বের হলাম। যাবার পথে হাকিম মিয়ার বাসায় গেলাম, কিন্তু তিনি ছিলেন না। রাত ৮টা থেকে কামরুদ্দিন সাহেবের ফেরার জন্য অপেক্ষা করলাম। তিনি সাড়ে ৯টায় ফিরলেন। ইতােমধ্যে ডি.আই.বি. ইন্সপেক্টর আনওয়ারুদ্দিন আমাকে সম্ভাষণ জানিয়ে আলাপ করলেন । আগে থেকে স্থির হয়ে থাকা সত্বেও কামরুদ্দিন সাহেব মি, রেজাই করিমের কাছে যেতে ইচ্ছুক নন। খসড়া সংবিধান এবং ডিক্সন রিপাের্ট নিয়ে কথা হল । সাড়ে ১০টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া ঃ সকাল ও বিকেলে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। প্রায় সারাদিনই আকাশ মেঘে ঢাকা। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ২ অক্টোবর ১৯৫০, সােমবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১টায় কমরেড ব্যাংকে গেলাম। এবারও সেভিংস একাউন্টের চেক না পাওয়ায় ডিমান্ড নােটে ৫০ টাকা তুললাম। আড়াইটায় আতাউর রহমানের দোকান থেকে সারানাে সাইকেল নিলাম। সাইকেল নিতে দোকানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। বেলা ৩টায় কোর্টে গেলাম । নিয়ামতউল্লাহ সরকারের সঙ্গে ৫টার দিকে দেখা হল। গচার সিরাজুল হকের উপস্থিতিতে প্রায় আধ ঘন্টা কথা বললাম। ৬টায় হলে ফিরেছি। কথা অনুযায়ী সন্ধ্যা ৭টায় মমতাজ মােক্তারের বাসায় গেলাম। সাড়ে ৭টায় তিনি আমাকে পুলিশ অফিসে নিয়ে গেলেন। কিন্তু ক্লার্ককে পাওয়া গেল না। সাড়ে ৮টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। সােয়া ১০টা পর্যন্ত কথা হল। সেখানে হায়দার সাহেব এবং তার ভায়রা এসেছিলেন। সাড়ে ১০টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া স্বাভাবিক। প্রচন্ড রােদ। বিশেষ করে দিনের বেলা খুব গরম।
৩ অক্টোবর ১৯৫০, মঙ্গলবার পৌনে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ভাের বেলায় আব্দুল খান, রজব আলি এবং শাহাদ আলি এলেন। ৮টায় তাদেরকে নিয়ে ডাঃ করিমের কাছে গেলাম। শাহাদ আলির জন্য পেনিসিলিন ইঞ্জেকশনের ব্যবস্থা করে তাদেরকে কেমব্রিজ ফার্মেসিতে রেখে আমি সােয়া। ১০টায় বের হলাম। ফেরার পথে জালালের সঙ্গে দেখা করলাম এবং তার সঙ্গে এ.সি.বি, অফিস পর্যন্ত গেলাম। তার সঙ্গে মূলতঃ ইরফান আলি। মাস্টারের মামলা এবং সিংহশ্রীর বিট অফিসারের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য পদক্ষেপ বিষয়ে কথা বললাম। ১১টায় হলে ফিরেছি। দিনের বাকি সময় হলেই কাটালাম। আবহাওয়া ও ছায়াময় দিন। সন্ধ্যা ৬টায় প্রায় এক ঘন্টার জন্য এক পশলা ভারি বর্ষণ হল। রাতের আবহাওয়া নাতিশীতােষ্ণ। ৪ অক্টোবর ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টায় বাবু বাজারে গেলাম। সি.ডি.র ব্যাপারে মমতাজউদ্দিন। মােক্তারের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে পরে দেখা করতে বললেন। তার কাছ থেকে বের হয়ে সাড়ে ৯টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা। করলাম। সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তার সঙ্গে প্রধানত মৌলিক নীতি নির্ধারণী কমিটি উপস্থাপিত পাকিস্তানের খসড়া সংবিধান গ্রহণের বিরুদ্ধে এ্যাকশন কমিটি গঠনের বিষয়ে কথা হল। পৌনে ১১টায় হলে ফিরেছি।
সাড়ে ৫টায় কোর্টে গেলাম। ওয়ারেস আলি আমাকে মওলানা ওয়ারেস আলির কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি হাফিজ বেপারির বাসায় আছেন। মওলানার সঙ্গে প্রায় ১ ঘন্টা কথা হল। তিনি বুলবুলের সঙ্গে চান মিয়ার বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। আমি সম্মতি জানিয়ে এই বিষয়ে আমার পক্ষ থেকে কথা বলার জন্য তাকে অনুরােধ করলাম। সন্ধ্যা ৭টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। বিকেলে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। গরম পরিবেশ। ৫ অক্টোবর ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৭টায় শাহেদ আলি সরকার এবং দিনত আলির বাবা এলেন। তাদের সঙ্গে বংশাল গিয়ে সালেহ আহমেদ মােড়লের সঙ্গে দেখা করলাম। আমি তাদেরকে কি ভাবে আমাদের মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করতে হবে সেই কার্যধারা বিষয়ে বললাম। সাড়ে ১০টায় হলে ফিরেছি। পৌনে ১টায় কোর্টে গেলাম। এস.ডি.ও. সাহেব না আসায় ওসমানের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি করা হল। শ্রীপুরের এস.আই. নূরুল হকের সঙ্গে কথা বললাম। সেখানে কালু মােড়লের সঙ্গেও দেখা হল। আরশাদ আলি আমাকে চা খাওয়ালেন। সালেহ আহমেদ মােড়ল। এবং শাহেদ আলি সরকারের উপস্থিতিতে সি.ডি. বিষয়ে মমতাজউদ্দিন। মােক্তারের সাথে কথা বললাম। সচিবালয়ের প্রথম গেটে জালালের সঙ্গে দেখা করে এফ আই.আর, এর ব্যবস্থা করার জন্য বললাম। ডাঃ করিমের দেখা পেলাম, সে ডি.এস.এ, মাঠ থেকে ফিরছিল। সাড়ে ৬টায় হলে ফিরেছি। সাড়ে ৮টায় অ্যাসেমরি হলে একটি সভা অনুষ্ঠিত হল। মি. এ. জব্বার সভাপতিত্ব করলেন। প্রস্তাবিত খসড়া সংবিধানের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ করা হল। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। উজ্জ্বল ও রৌদ্রস্নাত দিন। পরিষ্কার রাত। শরতের আমেজ। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ৬ অক্টোবর ১৯৫০, শুক্রবার সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টায় কোর্টে গেলাম। ওসমান এস.ডি.ও. উত্তরের কাছে আত্মসমর্পণ
করে জামিনে ছাড়া পেল। মমতাজউদ্দিন মােক্তার ওসমানের পক্ষে ছিলেন। সাড়ে ১১টায় কোটি থেকে বের হয়েছি। ফেরার পথে রেলওয়ে হাসপাতালের কাছে কালুর সঙ্গে দেখা, সে আমাকে রমনা রেস্ট হাউজে নিয়ে চা খাওয়াল। পৌনে ১টায় হলে ফিরেছি। ৫টায় বের হয়ে আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম, কিন্তু তিনি ময়মনসিংহ গেছেন। ৬টার দিকে পাকিস্তান অবজারভার অফিসে গেলাম। নিউজ সেকশনে আমাদের প্রস্তাবনা জমা দিলাম। সাইকেল নিয়ে রমনা থেকে অ্যাসেমব্লি হল, আমাদের হলের চারপাশে ঘােরাঘুরি করে সূর্যাস্তের সময় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া স্বাভাবিক। দিন ও রাত বেশ পরিষ্কার। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। মধ্য রাত থেকে শীত অনুভূত হয়। ৭ অক্টোবর ১৯৫০, শনিবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টায় বংশাল গেলাম। মফিজউদ্দিন গতকাল বিকেল থেকে এখানে থাকতে শুরু করেছে। হাকিম মিয়ার সঙ্গে মােগলটুলিতে গেলাম এবং আতাউর রহমানের দোকানে তার সাইকেলটা ঠিক করতে দিলাম। জালালের বাসায় কয়েক মিনিটের জন্য কথা বলে ১০টায় হলে ফিরেছি। বিকেল ৫টায় বের হয়েছি। কোর্টে যাওয়ার পথে আসির আহমেদ সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। মমতাজউদ্দিন মােক্তারকে পেলাম না। নওয়াবপুরে কিছু কেনাকাটা করে সাড়ে ৬টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া স্বাভাবিক। দিন এবং রাত বেশ পরিষ্কার। শেষ রাতে ঠান্ডা। অনুভূত হয়। ৮ অক্টোবর ১৯৫০, রবিবার ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন হল থেকে বের হইনি । গুরুত্বপূর্ণ কিছুই করিনি। আবহাওয়া স্বাভাবিক। দিনে ও রাতে পরিষ্কার আকাশ। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ।
৯ অক্টোবর ১৯৫০, সােমবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বিকেল ৪টায় হল থেকে বের হলাম। রেলওয়ে হাসপাতালের কাছে আকবর আলি বেপারি এবং জব্বারের সঙ্গে দেখা হল। আকবর আলি বেপারি আমাকে বােঝানাের চেষ্টা করলেন যে, তিনি যা করেছেন তা আমার জন্যই করেছেন। সেখানে ১৫/২০ মিনিট কথা বলে চলে এসেছি। মি, আহমদউল্লাহ বি.এস.সি, বি.টি, এই জায়গাতেই আমাকে পাকড়াও করে আমার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ খবর করলেন। বিকেল ৫টার দিকে তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। আধ ঘন্টা পর সেখান থেকে বের হয়ে ৪৫/১ ভজহরি স্ট্রীটের বাড়িটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করলাম। সন্ধ্যার মুহূর্তে রহিম মােক্তারের সঙ্গে তার চেম্বারে দেখা করে সাড়ে ৬টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া স্বাভাবিক। দুপুর ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত প্রবল বেগে বাতাস। বাতাসে জলীয় বাষ্প অনুভূত হয়। ১০ অটোবর ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৮টায় গিয়াস ভাইসাহেব এলেন। সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিনাডুলির আব্দুল হাকিমের ভর্তির ব্যবস্থা করে সাড়ে ১২টায় হলে ফিরলাম। হলে ফিরে শাহাদ আলি সরকারকে পেলাম। আয়কর অফিসে জমা দেয়ার জন্য তার লাভ ক্ষতির হিসাব তৈরি করে দিলাম। তিনি দুপুর ২টায় চলে গেলেন। সাড়ে ৩টায় কোর্টে গেলাম। সাড়ে ৫টায় জালাল সেখানে আমার সঙ্গে দেখা করল। শাহাদ আলি সরকার, শামসুল খান, মমতাজউদ্দিন মােক্তার প্রমুখের সাথে দেখা হল। আজ দুনীতি সংক্রান্ত একটি মামলা থেকে শামসুল খানকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ইন্সপেক্টর রাজ্জাক আমাদের মামলার ব্যাপারে কথা বললেন। সাড়ে ৬টায় কোর্ট থেকে বের হয়ে হলে ফিরেছি। শামসুল হকের পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাপারে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শামসুল হক এবং ওয়াহেদ এসেছিল।
আবহাওয়া ও দিনের শেষ ভাগ থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। আবহাওয়া নাতিশীতােষ্ণ। ১১ অক্টোবর ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টায় কারকুন বাড়ি লেনে হাফিজ বেপারির বাসায় গেলাম। তার সঙ্গে দেখা না হওয়ায় সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে বের হলাম। তার ছেলে হাসান, লুলু, সামসু জানাল তিনি কনজারভেটরের বাসায় গেছেন। এই নিয়ে। তৃতীয়বার হাফিজ বেপারি আমাকে তার সাথে দেখা করতে বলেছেন, কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তাকে পাওয়া যায়নি। বেলা ১১টায় হলে ফিরেছি। শামসুল হক ১১টায় এবং পরে আবার বেলা ২টায় তার রেজাল্ট জানতে এসেছিল। সাড়ে ৫টায় তার সঙ্গে বের হয়ে তাজ রেস্তরায় গেলাম। সে আমাকে প্রচুর নাস্তায় আপ্যায়িত করল। ৭টায় হলে ফিরেছি। হলে যাবার সময় কেমব্রিজ ফার্মেসিতে জালাল, গিয়াস এবং ডাঃ করিমের সঙ্গে দেখা করলাম। আবহাওয়া : সারাদিন ও রাত আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বাতাসে জলীয় বাষ্প। আছে। সাড়ে ১২টায় আধ ঘন্টার জন্য চমক্কার এক পশলা বৃষ্টি হল। তারপর থেমে থেমে ৩টা পর্যন্ত চলল। পরিবেশ নাতিশীতােষ্ণ। ১২ অক্টোবর ১৯৫০, বৃহস্পতিবার। ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৮টায় শামসুল হক এলে তাকে আমার রুমে বসিয়ে রেখে সােয়া ৮টায় বের হলাম। প্রথমে জালালের সঙ্গে দেখা করলাম, গিয়াস সেখানে ছিল। সেখান থেকে পৌনে ৯টায় বের হয়ে ৯টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। তাকে না পেয়ে মমতাজউদ্দিন মােক্তারের চেম্বারে গেলাম। তার সাথে পৌনে ১১টা পর্যন্ত কথা বললাম। অলি আহাদও সেখানে এসেছিল। ১১টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে পাকিস্তান অবজারভারের অফিসে এ্যাকশন কমিটির মিটিংয়ে যােগ দিলাম। আতাউর রহমান সাহেব, তােয়াহা। সাহেব, রফিক, মানিক মিয়া, আব্দুস সালাম সাহেব প্রমুখেরা উপস্থিত ছিলেন। বিকেল ৪টায় যুক্ত ফ্রন্ট গঠনের ব্যাপারে মুসলিম লীগের সঙ্গে আলােচনা হল। যে কোন মূল্যেই হােক আগামীকাল মিটিংয়ে বসা হবে।
বেলা দেড়টায় বের হলাম। ফকির আব্দুল মান্নানের বাসায় আহমেদ আলি মাস্টারের সঙ্গে দেখা করলাম। সেখান থেকে ২টায় বের হয়ে সােয়া ২টায় হলে ফিরেছি। দুপুরে খাওয়া হয়নি। সাড়ে ৪টায় বের হয়ে কেমব্রিজ ফার্মেসিতে ডাঃ কেিমর সঙ্গে দেখা করলাম। এবং তাকে টাকা জোগাড় করার বিষয়ে বললাম । সাড়ে ৫টায় সেখান থেকে কোর্টে গেলাম। সেখানে নান্না মিয়া, শাহেদ আলি, শামসুল খান, জাহাদ আলি, কুদরত আলির সঙ্গে দেখা হল। কোর্ট থেকে সাড়ে ৫টায় বের হয়ে হলে ফিরে এসেছি। রাত ৮টায় ৫১ বংশালে গেলাম। কিন্তু বাসায় কেউ ছিল না। কামরুদ্দিন সাহেব এবং মমতাজ মােক্তারকেও পাইনি। সেখান থেকে সাদেকুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে তাকে আয়কর অফিস থেকে পাঠানাে ডিমান্ড নােটিশ দেখালাম। তিনি আমাকে কোন আপিল না করার উপদেশ দিলেন। সাড়ে ৮টায় বের হয়ে কারকুন বাড়ি লেনে হাফিজ বেপারির সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি কি বলেন শুনলাম । সাড়ে ৯টায় বের হয়ে হলে ফিরে এসেছি। আবহাওয়া স্বাভাবিক। বাতাসে জলীয় বাষ্প (আর্দ্রতা)। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ১৩ অক্টোবর ১৯৫০, শুক্রবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে যাবার পথে ৫১ বংশাল রােডে হাকিম মিয়ার সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি জানালেন যে, ওয়ারেস আলির বাড়িতে চুরি। হয়েছে এবং সােবহান এবং শুকুর আলির নাম উল্লেখ করে এজাহার দায়ের করা হয়েছে। ৯টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে কোর্টে গেলাম। এনায়েত চৌধুরীর সাথে। ডি.এ.বির অফিসে বসলাম। ইন্সপেক্টর এবং উপস্থিত অন্যান্যদের সঙ্গে আমার মামলা বিষয়ে কথা বললাম। এস,আই, হাফিজউদ্দিনও পরে আমাদের সাথে যােগ দিলেন। ১১টায় এখান থেকে বের হয়ে হলে ফিরে এলাম। দুপুর ২টা ২০ মিনিটে রফি এল। পৌনে ৩টায় তাকে বংশালে মফিজউদ্দিনের কাছে পৌছে দিয়ে আমি আরমানিটোলা ময়দানে গেলাম। আওয়ামী মুসলিম লীগ অফিস থেকে একটি পতাকা নিয়ে এলাম।
সাড়ে ৪টায় আতাউর রহমান সাহেবের সভাপতিত্বে মিটিং শুরু হল। হাফিজুর রহমান, কুষ্টিয়ার শামসুদ্দিন সাহেব, খয়রাত হােসেন এম,এল,এ., রফিক, ওয়াদুদ, শামসুল হুদা (সেন্ট্রাল ক্লাব) বক্তব্য রাখলেন। কামরুদ্দিন সাহেব প্রস্তাব উপস্থাপন করেন এবং তা গ্রহণ করা হয় । সােয়া ৬টায় সভা। শেষ হয়েছে। সভায় প্রধানত বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় ধরনের সমাবেশ হয়েছিল এবং এটিই ছিল প্রধান আকর্ষণ। কামরুদ্দিন সাহেব, আতাউর রহমান সাহেব, রফিক, মানিক মিয়া, তােয়াহা সাহেব প্রমুখের সঙ্গে সাখাওয়াত হােসেনের বৈঠকখানায় বসলাম এবং ৯টা। পর্যন্ত কথাবার্তার পর সবাই যার যার গন্তব্যে চলে গেলেন। আবহাওয়া স্বাভাবিক। আকাশে বৃষ্টিহীন টুকরাে টুকরাে ভাসমান মেঘ। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ।
১৪ অক্টোবর ১৯৫০, শনিবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৭টায় আব্দুল মােড়ল এসে জানালেন যে, আজিজ খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্ভবতঃ বন বিভাগের প্ররােচনায় এটা করা হয়েছে। তৎক্ষণাৎ তার সঙ্গে বের হলাম। তাকে বংশালে রেখে ৯টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করে তাকে বিষয়টি জানালাম। কিন্তু তিনি কিছুই বললেন না। সাড়ে ৯টায় সেখান থেকে বের হয়ে জালালের সঙ্গে দেখা করলাম। তারপর আতাউর রহমান সাহেবের কাছে গেলাম। সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সেখানে ছিলাম। আজিজ খানের গ্রেফতারের বিষয়টি জানিয়ে আমরা সবাই যাতে বাড়িতে যেতে পারি সেই বিষয়টি দেখার জন্য তাকে অনুরােধ করলাম। বাড়িতে না যেতে পারার ফলে এখানে এবং বাড়িতে আমার কি কি। সমস্যা হচ্ছে সেটাও তাকে জানালাম। ১১টায় সেখান থেকে বের হলাম। মমতাজ মােক্তারের বাসায় গেলাম এবং আজিজ খানের জামিনের পিটিশন। তৈরি করতে বললাম। সাড়ে ১১টায় বের হয়ে রেল স্টেশন হয়ে কোর্টে গেলাম। দেখলাম হামিদ মােক্তার সাহেব জামিনের ব্যবস্থা করছেন। দেড়টায় আবার মমতাজ মােক্তারের কাছে গেলাম। শামসু তার বি.এ. পাশ করার খবর দিল । তার সঙ্গে দুপুরের খাবার খেলাম। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পর মমতাজ মােক্তারের সঙ্গে সাদেকুর রহমানের চেম্বার পর্যন্ত একসঙ্গে যেয়ে আমি কোর্টে চলে এলাম। জামিনে আজিজ খানের মুক্তির পর তারা সবাই খাওয়া দাওয়া করলেন। আব্দুল খানকে আগামীকাল পাঠানাের জন্য আব্দুল মােড়লকে বলে ৪টায় কোর্ট থেকে বের হলাম। সাড়ে ৪টা থেকে সােয়া ৫টার মধ্যে তােয়াহা সাহেব ও ডাঃ করিমের সঙ্গে তাদের বাসায় দেখা করলাম। সচিবালয়ের কাছে জালালের জন্য অপেক্ষা করলাম, কিন্তু তাকে ধরতে পারলাম না। সাড়ে ৬টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। আমি আমার মামলার ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু তিনি আমাকে মুখ খােলার সুযোেগই দিলেন না। সেখানে সেকান্দার মাস্টারও উপস্থিত ছিলেন। রাত ৯টায় বের হলাম। আবহাওয়া ও তীব্র রােদ। একটু গরম পরিবেশ। ১৫ অক্টোবর ১৯৫০, রবিবার ৮টায় ঘুম থেকে উঠেছি।
সারাদিন রুমে। বাইরে যাইনি। কেউ আসেও নি আমার কাছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক। পরিষ্কার দিন ও রাত। রাতে একটু ঠান্ডা পড়ছে। ১৬ অক্টোবর ১৯৫০, সােমবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৬টায় আব্দুল খান এবং মজি, পরে আহারুদ্দিন এবং জাহার বাপ এল। সাড়ে ৬টায় তাদের সঙ্গে বের হলাম। একসঙ্গে নাজিরা বাজার রেলওয়ে ক্রসিং পর্যন্ত যাবার পর আমরা আলাদা হয়ে গেলাম। আমি জালালের সঙ্গে তার। বাসায় দেখা করলাম। সেখান থেকে বেরিয়ে ৫১ বংশাল থেকে আব্দুল খানকে সঙ্গে নিয়ে সাড়ে ৮টার দিকে কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। রেঞ্জার এবং ফরেস্টার আসিরুদ্দিন কিভাবে আব্দুল খানকে হয়রানি করছে। সেটা তাকে জানালাম। সােয়া ৯টায় সেখান থেকে বের হলাম। সাড়ে ৯টায় আতাউর রহমান সাহেবের কাছে গেলাম এবং তাকে আমাদের বাড়ি যাওয়ার বিষয়ে বললাম। তিনি আমাকে কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে বার লাইব্রেরিতে যেতে বললেন। সাড়ে ১০টায় বের হয়ে কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায় তার জন্য নোেট রেখে বংশালে আব্দুল খানের সঙ্গে সােয়া ১১টা পর্যন্ত কথা বলে সরাসরি হলে ফিরেছি। বেলা পৌনে ১টায় কামরুদ্দিন সাহেবের ওখানে, সেখান থেকে ১টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। দেড়টায় কামরুদ্দিন সাহেব এলেন। আতাউর রহমান সাহেবও উপস্থিত ছিলেন। নূরুল হুদা, রফিক, মানিক মিয়া প্রমুখেরা ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টিইউএফ) কার্যক্রমের জন্য কামরুদ্দিন সাহেবের বিরােধিতা করে কথা বললেন। আমাদের বাড়ি যাওয়ার জন্য আবেদন ২১ তারিখ আদালতে তােলা হবে। বিকেল ৪টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে পাকিস্তান অবজারভারের অফিসে গেলাম। অলি আহাদও সঙ্গে ছিলেন। রাত ৮টায় সেখান থেকে বের হয়ে পথে “ইনসাফ” পত্রিকার সম্পাদকের কাছে কামরুদ্দিন সাহেবের একটি বিবৃতি পৌছে দিলাম । সাড়ে ৮টায় জালালের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম। ফটিক ভাইসাহেবও সেখানে ছিলেন। তিনি বললেন, ইউনুস আমাদের মামলার দায়িত্ব নিয়েছে। রাত ৯টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া স্বাভাবিক। বাতাসে শীতের ছােয়া।
১৭ অক্টোবর ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। পড়ন্ত বিকেলে হল থেকে বের হলাম । পৌনে ৬টায় সাখাওয়াত হােসেন সাহেবের বাসায় সংবিধান কমিটির মিটিংয়ে অংশ নিলাম। আমি একটু দেরিতে পৌছেছি। সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মিটিং চলল। মিটিং আগামীকাল বিকেল ৪টায় আবার বসবে। সর্বজনাব আতাউর রহমান, আব্দুস সালাম, কামরুদ্দিন, সাখাওয়াত হােসেন, কফিলউদ্দিন চৌধুরী, শামসুর রহমান (জনসন), জহিরুল হক এবং অলি আহাদ উপস্থিত ছিলেন। সাড়ে ১০টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া স্বাভাবিক। পরিষ্কার আকাশ। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ।
২১৫
১৮ অক্টোবর ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সােয়া ৪টায় হল থেকে বের হয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ে মিটিং শুরু না হওয়ায় সাইকেল নিয়ে আরমানিটোলার আশেপাশে ইতস্ততঃ ঘােরাঘুরি করলাম। সাড়ে ৫টায় সংবিধান কমিটির মিটিং শুরু হল। সর্বজনাব আব্দুস সালাম, আতাউর রহমান, কামরুদ্দিন আহমদ, কাশেম উপস্থিত ছিলেন। অলি আহাদ একবার এসে চলে গেল। মিটিংয়ে রাষ্ট্র ও সরকারের গঠন নীতি তৈরি করা। হল। ৯টায় সেখান থেকে বের হয়ে হলে ফিরলাম। এর আগে দুপুর ১২টায় হাকিম মিয়া হলে আমার সাথে দেখা করেছেন। সাড়ে ৮টার দিকে মফিজউদ্দিন এসেছিল, সে আমাকে বাড়ি থেকে পাঠানাে ৮০ টাকা দিয়ে গেল। আবহাওয়া স্বাভাবিক এবং নীতিশীতােষ্ণ। ১৯ অক্টোবর ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৭টায় শাহেদ আলি সরকার তার ছেলেকে সাথে নিয়ে এলেন এবং আধ ঘন্টা থেকে চলে গেলেন। সাড়ে ১২টায় কোর্টে গেলাম। কিন্তু সি.এস.আই. হাসমত শনিবার কেস ট্রান্সফারের সময় আমাদেরকে যেতে বললেন। সেখান থেকে তখনই ফিরলাম। মমতাজ মােক্তারের বাসায় গেলাম, কিন্তু তিনি বাইরে ছিলেন। বেলা ১টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করে তাকে মামলার বর্তমান অবস্থা জানালাম। কামরুদ্দিন সাহেবের ডিকটেশন অনুযায়ী আবার নতুন করে সম্পূর্ণ খসড়া সংবিধান লিখে তৈরি করলাম। তারপর সন্ধ্যা ৬টায় দুজনে পাকিস্তান অবজারভারের অফিসে গেলাম। সাড়ে ৮টায় সেখান থেকে কাদের সরদারের বাসায় গেলাম, সেখানে আতাউর রহমান সাহেব, এ, হাই মিয়া, আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, আহসানউল্লাহ প্রমুখেরা উপস্থিত ছিলেন। রাত ৯টায় সেখান থেকে বের হয়ে হলে ফিরেছি। আবহাওয়া ও আকাশ সকাল থেকেই মেঘাচ্ছন্ন। বিকেল ৪টা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে এখনও চলছে।
২০ অক্টোবর ১৯৫০, শুক্রবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টায় আতাউর রহমান সাহেবের ওখানে গেলাম। তিনি এম.এল.এ. আব্দুল হাই সাহেবের সঙ্গে বাইরে থাকায় কথা বলতে পারিনি। কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম এবং সাখাওয়াত হোেসনে সাহেবের সঙ্গে তার বৈঠকখানায় বসলাম, কিন্তু কেউ এল না। ১১টায় সেখান থেকে বের হলাম। সােয়া ৮টায় এবং ১১টায় মমতাজ মােক্তারের বাসায় গেলাম, কিন্তু একবারও তাকে পেলাম না। সাড়ে ১১টার দিকে হলে ফিরেছি। খারাপ আবহাওয়ার কারণে দিনের বাকি সময়টা রুমের ভেতরেই কাটল। আবহাওয়া : সারা দিন রাত থেমে থেমে হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সারাদিন ম্লান এবং বিষন্ন আবহাওয়া। সম্পূর্ণ আকাশ মেঘে ঢাকা। ২১ অক্টোবর ১৯৫০, শনিবার পৌনে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সােয়া ৭টায় বংশাল গেলাম। সালেহ মােহাম্মদ মােড়লকে নিয়ে ৯টায় আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। তাকে আমাদের কেস ট্রান্সফারের বিষয়ে বললাম। সাড়ে ১০টায় জেলা জজকে লেখা আতাউর রহমান সাহেবের একটি দরখাস্ত সাথে নিয়ে বংশালে ফিরেছি। সাড়ে ১১টায় মমতাজ মােক্তার সাহেবের সঙ্গে দেখা করে আমাদের মামলার শুনানিতে অংশ নিতে বললাম। কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম, কিন্তু তাকে পেলাম না। দুপুর ১২টায় কোর্টে গেলাম। আমাদের মামলা মি. ওবায়দুল্লাহ’র কোর্টে ট্রান্সফার হয়েছে। আতাউর রহমান সাহেব সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কোর্টে অপেক্ষা করলেন। অবিরাম বৃষ্টির জন্য তিনি জেলা জজের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। মি, ওবায়দুল্লাহ সন্ধ্যা ৬টায় আমাদের মামলা তুললেন এবং জেলে অবস্থানরত আসমতসহ আমাদের সবার জামিন মঞ্জুর করলেন। সালেহ আহমেদ সাহ্বে টাকা পয়সার প্রসঙ্গ উপস্থাপন করলে ৮টা পর্যন্ত সে বিষয়ে আলােচনা হল। মঙ্গলবারের মধ্যে ২৫০ টাকা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়া হল।
রাত সাড়ে ৮টায় এস, হােসেনের বাসায় এ্যাকশন কমিটির মিটিংয়ে। অংশগ্রহণ করলাম। সভায় খসড়া মূলনীতি প্রসঙ্গে আলােচনা করা হল। সর্বজনাব এস. হােসেন, আব্দুস সালাম, অলি আহাদ, তােয়াহা সাহেব, আতাউর রহমান, মানিক মিয়া এবং রফিক উপস্থিত ছিলেন। ১১টায় মিটিং থেকে বের হয়ে সােয়া ১১টায় হলে ফিরেছি। আজ গােসল এবং দিন ও রাতে খাওয়া হয়নি। আবহাওয়া ও সারাদিন স্নান ও বিষন্ন পরিবেশ। সারাদিন খুব অল্প বিরতি দিয়ে দিয়ে অবিরাম বৃষ্টি। কখনাে কখনাে ভারি বর্ষণ। রাতের আকাশ পরিষ্কার নয়, যদিও মধ্যরাতের পর থেকে বৃষ্টির জোরালাে লক্ষণ নেই। ২২ অক্টোবর ১৯৫০, রবিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টায় ৫১ বংশালে গেলাম। বৃষ্টির জন্য সােয়া ৯টা পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করলাম। সাড়ে ৯টায় আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মূলনীতির খসড়া রীতিবদ্ধভাবে সাজানাের কাজে তাকে সহায়তা করলাম । তিনি ডি.জি. অফিসের ক্লার্কের কাছে আমার মাধ্যমে একটি স্লিপ পাঠালেন। ডি,জি, অফিস হয়ে হলে ফিরলাম। কিন্তু ক্লার্ককে পাইনি। দুপুরে খাবার পর সােয়া ২টায় হল থেকে বের হলাম। ডি,জি, অফিসে ক্লার্কের সঙ্গে দেখা করে আতাউর রহমান সাহেবের কাছে গেলাম। সেখান থেকে আবার ডি,জি, অফিসে গেলাম। এরই মধ্যে পাকিস্তান অবজারভারের আব্দুস সালামের সঙ্গে দেখা করলাম। আতাউর রহমান সাহেব সাড়ে ৩টায় ডি.জি, অফিস হয়ে বাসায় চলে গেলেন। বাসা থেকে তিনি আবার ডি,জি, অফিসে এলে আমি তার সঙ্গে সাড়ে ৪টায় তার বাসায় গেলাম। আগামীকাল আমাদের পিটিশনের শুনানি। এর মধ্যে একবার হাফিজ বেপারির বাসায় গিয়েছিলাম, সেখানে সামসুর সঙ্গে দেখা হল। সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সদরঘাটে ছিলাম, সেখান থেকে পাকিস্তান অবজারভারের অফিসে গিয়ে এ্যাকশন কমিটির বিবৃতির টাইপ করা কপি নিলাম। এর এক কপি ইনসাফ পত্রিকার মহিউদ্দিন সাহেবকে দিয়ে সাড়ে ৭টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া ও প্রায় সারাদিন বিষন্ন আবহাওয়া। বিকেল পর্যন্ত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হল। তারপর থেকে আকাশের বিষন্নতা কমতে থাকল।
২৩ অক্টোবর ১৯৫০, সােমবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৮টায় বংশাল গেলাম। শাহেদ আলি সরকার আসমতের জন্য কিছু করতে পারেনি। সাড়ে ৮টায় আতাউর রহমান সাহেবর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি এ্যাকশান কমিটির সভার জন্য বিবৃতির খসড়া তৈরি করলেন। সেটা নিয়ে সাড়ে ৯টায় বের হয়ে যােগীনগরে অলি আহাদের কাছে দিলাম। মমতাজ মােক্তারের ওখানে গেলাম, কিন্তু তাকে পেলাম না। সাড়ে ১১টায় হলে ফিরেছি। পৌনে ৩টায় আতাউর রহমান সাহেবের অফিসে দেখা করতে গেলাম। তিনি তার অফিস হয়ে সাড়ে ৩টায় অবকাশকালীন জজের কাছে গেলেন এবং অর্ডারের কপি সহ সাড়ে ৪টায় ফিরে এসে বাসায় চলে গেলেন। ডি.জি. অফিসের ক্লার্কের সাথে চা খেলাম। ৫টায় শওকত হােসেন সাহেবের বাসার সভায় যােগ দিলাম। সর্বজনাব তােয়াহা, অলি আহাদ, ইদ্রিস, আব্দুস সালাম, আতাউর রহমান, এইচ, রহমান উপস্থিত ছিলেন। সভায় খসড়া প্রস্তাব গ্রহণ করা হল। রাত ৯টায় সেখান থেকে বের হয়ে সাড়ে ৯টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া শুরু থেকেই দিনটি রৌদ্রম্নত এবং উজ্জ্বল। আকাশ প্রায় সম্পূর্ণ পরিষ্কার। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ২৪ অক্টোবর ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টায় ৫১ বংশালে গেলাম। সেখানে আব্দুল খালিফ ফকিরের সঙ্গে। দেখা হল। তিনি বললেন, বন কর্মচারিরা লােকজনকে তাদের নিজেদের বনের ঝােপঝাড় পরিষ্কার করতে দিচ্ছে না। তবে তাদেরকে ঘুষ দিলে আর কোন সমস্যা হয় না। এখান থেকে সাড়ে ৯টার দিকে বের হয়ে মােগলটুলিতে আতাউর রহমানের দোকানে সাইকেলের টায়ার পরিবর্তন করালাম। কমরেড ব্যাংক বন্ধ পেলাম। শুনলাম, দেউলিয়া হয়ে যাবার কারণে ব্যাংক লেন দেন বন্ধ রেখেছে। আমি মর্মাহত। শুধুমাত্র এ কারণে যে, গত দুই বছর ধরে আমার উপর দুর্ভাগ্যের পর দুর্ভাগ্য এসে পড়ছে। সাড়ে ১১টায় নওয়াবপুর গেলাম। ডাঃ করিমের কাছ থেকে ৪০-৪-০ নিয়ে আয়কর প্রদানের জন্য স্টেট ব্যাংকে গেলাম। বিভিন্ন সমস্যা, ঝামেলা এবং দৌড়াদৌড়ির পর ট্রেজারি অফিস থেকে চালান তৈরি হল। এই কাজে যতীন্দ্র আমাকে সহায়তা করলেন। দেড়টায় আয়কর অফিস বরাবর ১৬১-৪-০ টাকা জমা দেয়া হল। মমতাজউদ্দিন মােক্তারের সঙ্গে দেখা করলে তিনি আমাকে প্যারাডাইস রেস্তরায় বিরানি খাওয়ালেন। এই খাওয়া ছাড়া সারাদিনে খাওয়া বা গােসল হয়নি। আড়াইটায় আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম । বিকেল ৪টার দিকে আহমেদ আলি মাস্টারকে আরফান আলি মােড়ল এবং তার লােকজনসহ দুর্নীতি দমন অফিসে পাঠালাম। আসমতকে হাজত থেকে বের করে নিয়ে আসার জন্য ওয়ারেস আলি এবং সুদু খানকে পাঠিয়ে দিয়ে আমি মােগলটুলি গেলাম সাইকেলের টিউব সারানাের জন্য। সেখান থেকে ৬টার দিকে বংশাল গেলাম এবং পারিবারিক বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশ এবং উপদেশ দিয়ে মফিজউদ্দিনকে সন্ধ্যার ট্রেনে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। কমরেড ব্যাংকের আর, রহমানের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম। তিনি আমাকে আগামী শনিবার অথবা সােমবার তার সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দিলেন। ফেরার পথে জালালের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করে সাড়ে ৭টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। পরিষ্কার দিন ও রাত। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ ২৫ অক্টোবর ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১২টায় কোর্টে গেলাম। এফ.আই.আর, এবং সি.এস.এর কপির জন্য আবেদন করতে কুদরত আলি মিয়াকে ১ টাকা দিলাম। পুরাে সময়ে সেখানে মমতাজ মােক্তারের দেখা পেলাম না। সুলার প্রেসে আহমেদ আলি মাস্টারের সঙ্গে দেখা করলাম। সেখান থেকে ১টার দিকে হাফিজ বেপারির বাসায় গেলাম। সেখানে ওয়ারেস আলি ছিলেন। ডাঃ এ, রশিদ এগিয়ে এসে কথা বললেন। আড়াইটার দিকে আসমত হাজত থেকে ছাড়া পেয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। সাড়ে ৩টার দিকে কোর্ট চত্বরে জব্বারের সঙ্গে দেখা হল। জব্বার আমাকে
২২০
বলল যে, আকবর আলি বেপারি তাকে শ্রীপুরের রেঞ্জারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। রেঞ্জার আমাদেরকে মামলায় জড়ানাের জন্য তাকে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য বলেছেন। কোর্টে তরগাঁওয়ের শফিউদ্দিন এবং আকবর আলি বেপারির সঙ্গে দেখা হল। ৫১ বংশাল হয়ে ৬টার দিকে হলে ফিরেছি। আবহাওয়া : দুপুর ১টার দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হল, সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভারি বর্ষণ হল। সাড়ে ৫টায় বৃষ্টি সম্পূর্ণ থেমে গেল। আবহাওয়া নাতিশীতােষ্ণ। ২৬ অক্টোবর ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টার দিকে জালালের সঙ্গে দেখা করে তার কাছ থেকে ১০০ টাকা। নিলাম। ৯টার দিকে মমতাজ মােক্তারের সঙ্গে যশােধার বাসায় দেখা করে সিডির কপির জন্য তাকে ১০০ টাকা দিলাম। সাড়ে ৯টায় আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। তার সাথে বিশেষ করে মর্নিং নিউজ প্রসঙ্গে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কথা বললাম। সেখানে কাশেম সাহেবও উপস্থিত ছিলেন। ১১টায় আয়কর অফিসে গেলাম। অ্যাসেসমেন্ট আদেশের কপির জন্য হেড ক্লার্কের কাছে একটি দরখাস্ত জমা দিয়ে পৌনে ১২টায় হলে ফিরেছি। ৫টায় শওকত হােসেন সাহেবের বাসায় এ্যাকশন কমিটির মিটিংয়ে যােগ। দিলাম। সর্বজনাব আতাউর রহমান, এস, হােসেন, এ, কাশেম, ইদ্রিস, আব্দুস সালাম, মহিউদ্দিন, অলি আহাদ, তােয়াহা, মানিক মিয়া, ওয়াদুদ প্রমুখেরা উপস্থিত ছিলেন। কসাইটুলি হয়ে ৭টায় হলে ফিরেছি। সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আমাদের অ্যাসেমরি হলের সভায় যােগ দিলাম, এখানে মেস কমিটি এবং এ. বাকীর মধ্যকার বিবাদ মিমাংসা করা হল। আবহাওয়া : রাত ৮টার পর থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে ১০টা পর্যন্ত চলল। রাতের আকাশ মেঘা। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ।
২৭ অক্টোবর ১৯৫০, শুক্রবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৭টায় হল থেকে বের হয়ে হাকিম মিয়ার সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে
৩০ টাকা দিলেন। সালেহ আহমেদ মােড়ল আমাকে জানালেন যে, বন কর্মকর্তা আসিরুদ্দিন রেজাই করিম সাহেবকে নিয়ােগ দিয়েছেন। পৌনে। ৮টার দিকে বাবু বাজারে গেলাম, কিন্তু মমতাজ মােক্তারকে পেলাম না। সাড়ে ৮টায় কোর্টে গেলাম এবং সেখানে মমতাজ মােক্তার, মজিদ মােড়ল এবং আতাউর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা হল। তাদের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া পার্কে টেক্সি স্ট্যান্ড পর্যন্ত গেলাম এবং আসিরুদ্দিনের সঙ্গে রেজাই করিমের সম্পর্কের বিষয়ে জানালাম। সাড়ে ৯টায় হলে ফিরেছি। দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে ৫২/১ বংশালে মােড়ল বাড়ির হাবিবের সঙ্গে দেখা করে তাকে আজিজ মােড়ল যে আকবর আলির বন কিনছে সেই বিষয়টি জানালাম। বেলা ২টায় যশােধার বাসায় মমতাজ মােক্তারের সঙ্গে দেখা করে বিকেল। ৫টা পর্যন্ত সি.আই.এস, ক্লার্কের জন্য অপেক্ষা করলাম, কিন্তু তিনি আসেননি। সাড়ে ৫টায় ভিক্টোরিয়া পার্কে এ.ই.পি.এম.এস.এল, এর সভায় গেলাম। ভাল উপস্থিতি। বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অনেকেই ছিলেন। সেখানে আতাউর রহমান সাহেব, অলি আহাদ, মানিক মিয়া, শামসুল হক এম,এল,এ,, মােস্তাক প্রমুখের সঙ্গে দেখা হল । ৬টা ১০ মিনিটে হলে ফিরেছি। আবহাওয়া ও দিন ও রাত সম্পূর্ণ পরিষ্কার নয়। বিকেলে কয়েক ফোটা বৃষ্টিও পড়েছে। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ২৮ অক্টোবর ১৯৫০, শনিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৬টায় আব্দুল খান এবং আজিজ মিয়া এলেন। সি.পি.ডব্লিউ.ডি. অফিসের কাছে ৮টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কথা বললাম। ১১টায় বের হলাম। কমরেড ব্যাংকে গেলাম, কিন্তু ব্যাংক খােলেনি। পৌনে। ১২টায় কোর্টে গেলাম। বেলা ১টা ২০ মিনিটের ট্রেনে আব্দুল খান এবং আজিজ খানকে বাড়িতে পাঠালাম। শাহাদ আলি ডাঃ করিমের সঙ্গে দেখা করতে এলেন। সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চেরাগ আলি মােড়লের মামলার শুনানিতে। উপস্থিত ছিলাম । আকবর আলি, সুরত আলি, করম আলি, নাবু সাক্ষ্য দিলেও প্রতারণা মামলা বাতিল হয়ে গেল। সন্ধ্যা ৬টায় এস, হােসেন সাহেবের বাসায় এ্যাকশন কমিটির সভায় যােগ। দিলাম। সর্বজনাব আতাউর রহমান, এস, এ. রশিদ, অলি আহাদ, তােয়াহা, ঠান্ডা মিয়া, এইচ, রহমান উপস্থিত ছিলেন। ৭টায় হলের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। আজ হলে ফিন্ট ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় যােগ দিলাম। এখানে গানের আয়ােজনও ছিল। সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠান শেষ হল। আবহাওয়া ও নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। সূর্যাস্তের সময় দেখে মনে হল ভারি বর্ষণ হবে। কিন্তু কয়েক ফোটা বৃষ্টি ছাড়া আর কোন বৃষ্টি হয়নি। ২৯ অক্টোবর ১৯৫০, রবিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। পৌনে ১২টায় হল থেকে বের হলাম। সাড়ে ১২টার দিকে মমতাজ মােক্তারের বাসা থেকে তার সঙ্গে যশােধার বাসায় গেলাম। সি.আই.(বি)র। ক্লার্ক সেখানে ছিলেন। হায়দার এন্ড কোং থেকে কাগজপত্র নিলাম এবং দেড়টা থেকে কপি করতে শুরু করলাম। ১০/৬/৫০ তারিখ পর্যন্ত লিখে সন্ধ্যা ৭টায় থামলাম। সাড়ে ৭টায় হলে ফিরেছি। রাতের খাবার পর সাড়ে ৮টায় যশােধার বাসায় যেয়ে আমার অনুশীলনের খাতাগুলাে নিলাম। সেখান থেকে কামরুদ্দিন সাহেবের চেম্বারে গেলাম, কিন্তু তিনি তখন ছিলেন না। বংশালে গেলাম এবং হাজি সালেহ আহমেদ মােড়লের সাথে কথা বললাম। তাকে বললাম শাহাদ আলি সরকারকে বুঝিয়ে ঠিক করতে। ১০টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া : আকাশে ভাসমান মেঘের প্রাচুর্য। বিশেষ করে সূর্যাস্তের পর। থেকে। কিন্তু রাতে মাত্র কয়েক ফোটা বৃষ্টি পড়ল। বিকেলে গরম ছিল। ৩০ অক্টোবর ১৯৫০, সােমবার সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টায় হল থেকে বের হলাম। কমরেড ব্যাংকে গেলাম, কিন্তু ব্যাংক খােলেনি। সেখান থেকে সরাসরি কোর্টে গেলাম । হাকিম মিয়া এবং রুস্তমের সঙ্গে দেখা হল। শাহাদ আলি সরকারের সঙ্গেও দেখা হল। তিনি আরফান। আলির মামলার সাক্ষিদেরকে এসিবি অফিসে নিয়ে যাবার জন্য এসেছেন। তিনি তার কোটায় আমাকে মাত্র ৪০ টাকা দিলেন। ফরেস্টার আসিরুদ্দিনকে বেশ কয়েকবার ডি.এস.পি. (ক্রাইম) অফিসের সামনে ঘােরাঘুরি করতে দেখলাম। কাপাশিয়ার এস.আই. নান্না মিয়া একবার আমার সঙ্গে কোর্টে দেখা করলেন।
ডাঃ করিম ৩টার দিকে আমার জন্য কিছু টিফিন নিয়ে কোর্টে এসেছিল। | মমতাজ মােক্তারকে ৩০ টাকা এবং কুদরত আলিকে ৬ টাকা দিলাম। আয়কর অফিসে গেলাম, কিন্তু কপি তখনও তৈরি হয়নি। ৫টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে কোর্ট থেকে বের হয়ে তার বাসায় গেলাম। তাকে আমাদের মামলা এবং এ্যাকশন কমিটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করলাম। অলি আহাদ এবং কাশেম সাহেব সেখানে এলেন। সাড়ে ৬টায় ফিরে মমতাজ মােক্তারের কাছে গেলাম, কিন্তু সি.বি, ক্লার্ক আজও আসেন নি। সালেহ আহমেদ মােড়লের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি রেজাই করিমের কাছে যাচ্ছিলেন। সাড়ে ৭টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া : সারদিন এবং রাতেও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। ৫টা থেকে ৫টা ২০ মিনিটের মধ্যে হালকা বৃষ্টি হল। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ৩১ অক্টোবর ১৯৫০, মঙ্গলবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৭টায় বের হয়ে জালালের বাসায় গেলাম, কিন্তু তাকে পেলাম না। কমরেড ব্যাংকের রইসুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। কিন্তু তিনি আমাকে ব্যাংকের বিষয়ে কোন আশাব্যাঞ্জক খবর দিতে পারলেন না। সালেহ আহমেদ সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় রেজাই করিমের সঙ্গে দেখা করতে পারেন নি। এখানে রুস্তম, হাকিম মিয়া প্রমুখেরা উপস্থিত ছিলেন। সাড়ে ৮টায় সাতরওজায় আ, হাকিমের বাসায় গেলাম এবং সেখানে তার সঙ্গে নাস্তা খেলাম। তাকে আমার জন্য একটি লজিংয়ের কথা বললাম। তিনি ব্যবস্থা করবেন কথা দিলেন। সাড়ে ৯টায় হলে ফিরেছি। আজ বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে। বেলা ১২টা, ১টা এবং ৪টা ২০মিনিটের ক্লাস করলাম। দুপুর ১টা বেজে ৫০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মওলানা নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হল। এস. এম. আলি, ওয়াদুদ, মওলানা নূরুল ইসলাম প্রমুখেরা বক্তব্য রাখলেন। মাহবুব জামাল জাহেদি রেজুলেশন উপস্থাপন করলেন। সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হল। কমিটিতে আমাকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ৩টার দিকে সভা শেষ হল। সন্ধ্যায় মমতাজ মােক্তারের বাসায় গেলাম। সেখানে মফিজুল ইসলাম এবং শামসুল হক উপস্থিত ছিলেন। সাড়ে ৭টায় মমতাজ মােক্তারের সঙ্গে তার চেম্বারে দেখা করলাম। সি.আই.এস, ক্লার্ক আজও আসতে পারেন নি। রাত ৮টায় ফজলু এবং শামসুদের বাড়িতে দাওয়াতে অংশ নিলাম । ডাঃ এ, রশিদও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। রাত ৯টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া : বাতাসে জলীয় বাষ্প অনুভূত হচ্ছে। সে কারণে পরিবেশ নাতিশীতােষ্ণ। (১) এ মাসের শুরু থেকেই না, গত মাসের ২৮ তারিখ থেকে মৌলিক নীতি নির্ধারণী” কমিটির রিপাের্টের বিরুদ্ধে পুরাে দেশময় উত্তপ্ত
অসন্তোষ, এটি একটি বিশেষ দিক। (২) এ মাসের শেষ সপ্তাহে রেড চায়না তিব্বত আক্রমণ করেছে। (৩) এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কমরেড ব্যাংকের দেউলিয়া অবস্থা।
২২৫
১ নভেম্বর ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১২টা ও ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করেছি। সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে বকশিবাজার এলাকায় ওসমান গনি সাহেবের বাসা খুঁজতে গিয়ে ব্যর্থ হলাম। কমরেড ব্যাংকের সামনে যে ছাত্রটি ব্যাংকে টাকা জমা দান সম্পর্কিত নােটিশ বিলি করছিল তার কাছ থেকে একটা নােটিশের কাগজ নিয়ে সােয়া ৯টার দিকে হলে ফিরলাম। এস, হােসেনের বাসায় সন্ধ্যা ৭টায় এ্যাকশান কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলাম। সভায় সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্যের উপস্থিতি ছিল। সভায় উপস্থিত ছিলেন কফিলউদ্দিন চৌধুরী, কামরুদ্দিন আহমদ, আর রহমান, এস, হােসেন, অলি আহাদ, ইদ্রিস, মহিউদ্দিন, ওয়াদুদ, মানিক মিয়া, এম. জি হাফিজ, আজিজ আহমদ ও নারায়ণগঞ্জের এস, জোহা, এস, এ. রহিম, এন, ইসলাম প্রমুখ। সভাপতিমন্ডলী গঠন প্রশ্নে আতাউর রহমান সাহেবের উদ্ধত মনােভাবের কারণে এক অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হল। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে সভাপতিমন্ডলী গঠিত হলেও একজন ব্যক্তির জেদের কারণে তা বাদ দিতে হল। অলি আহাদ জ্বলন্ত ধাক্কা দিল তার পদত্যাগপত্র পেশের। মাধ্যমে। এই পদত্যাগপত্র পেশের সময় সে এমন কিছু কথা বলল যা হয়ত সে অসতর্কভাবে বলে ফেলেছে। রাত সাড়ে ১১টায় সভা শেষ হল। রাত ১২টায় হলে ফিরেছি। আবহাওয়া ও বাতাস আর্দ্র। দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ভাল বৃষ্টি হয়েছে। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ।
২ নভেম্বর ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। ১টার ক্লাস করেছি। বিকেল ৪টায় হল থেকে বের হয়েছি। পথে তাজ’ রেস্তরায় নাস্তা করে সাড়ে ৪টায় জিন্দাবাহারে গেলাম। কামরুদ্দিন সাহেব সাড়ে ৫টায় কোর্ট থেকে ফিরে এসে আবার নারায়ণগঞ্জের দিকে রওয়ানা দিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হলে ফেরার পথে জালালের সাথে দেখা করে ২০ মিনিটের। মত কথা বললাম। রাত ৯টায় হাকিম মিয়া এসে জানাল যে, শ্রীপুরের গিয়াসুদ্দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হাসপাতালে (ঢাকা মেডিকেল কলেজ) মারা গেছে। অলি আহাদ সভার একটা নােটিশ নিয়ে এল। হাকিম মিয়ার সাথে সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে ট্রেনে বুকিং দিলাম। নবাবপুর থেকে কফিন কিনলাম, রমনা পােল্ট অফিস থেকে একটা টেলিগ্রাম পাঠালাম। রাত সাড়ে ১১টায় মেডিকেল কলেজের ওয়ার্ড মাস্টারের সাথে কথা বলে জানলাম, যে কোন সময় মৃতদেহ নেয়া যেতে পারে। রাত ১২টায় হলে ফিরে এলাম। এর আগে সকাল ৮টায় মমতাজ মােক্তারের। সাথে দেখা করেছি। সেখানে জব্বার মিয়া, রুস্তম আলি আখন্দ, নিয়ামত সরকারের সাথে দেখা হয়েছে। কামরুদ্দিন সাহেবের সাথে সকাল ১১টা। পর্যন্ত থেকে হলে ফিরেছিলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক, নাতিশীতােষ্ণ। ৩ নভেম্বর ১৯৫০, শুক্রবার সােয়া ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ওয়ারেস আলি সকাল ৭টায় এসে তার বাড়ি যাবার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরােধ করে ৮টায় চলে গেল। বেলা সােয়া ১টায় বের হলাম। ২টায় কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায় গেলাম এবং আড়াইটা পর্যন্ত কথা বললাম। অলি আহাদও সেখানে ছিল। যশােধা মােক্তারের বাসায় গেলাম পৌনে ৩টায়। সি.আই.য়ের ক্লার্ক এল। বিকেল সাড়ে ৩টায়। আমি ঠিক তখনই লেখা শুরু করে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার। দিকে পুরাে শেষ করলাম। মমতাজ মােক্তারকে ১৪ টাকা দিলাম। জালালের সাথে দেখা করে সিডি দেখলাম । তার বাসায় আধা ঘন্টা ছিলাম।
তার কাছ থেকে দুটি আসল কপি নিয়ে রাত ৮টার দিকে হলে ফিরলাম। আবহাওয়া ঃ বাতাসে জলীয় বাষ্প। মেঘাচ্ছন্ন রাত। রাতের শেষ ভাগে সামান্য বৃষ্টি। জি.বি.এস, ২.১১.৫০ তারিখ সকাল ১১টা ২৯ মিনিটে (পি.এস.টি) (৪টা ৫৯ মিনিট জি.এম.টি.) ৯৪ বছর বয়সে মারা গেছেন। ৪ নভেম্বর ১৯৫০, শনিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ১১টা ও বেলা ১২টার ক্লাস করেছি। সকালে ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লা এলেন। বি. বি. চৌধুরীর মামলার শুনানি আজ থেকে আবার শুরু হবে। সকাল ৮টায় হল থেকে বের হয়ে ডিবি অফিসের কাছে ওয়ারেস আলির সাথে দেখা করলাম। তাকে ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লার বিলের ব্যবস্থা করার জন্য বললাম। সকাল পৌনে ৯টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। কামরুদ্দিন সাহেবের নির্দেশমত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সংবিধানের সংশােধনীগুলাে তালিকারে সাজালাম। তারপর হলে ফিরে সােজা ক্লাসে চলে গেলাম। দুপুর ২টায় কোর্টে গিয়ে ওয়ারেস আলি এবং ওয়াসিরউদ্দিনের কাছে শুনলাম যে, বি. বি. চৌধুরীর মামলার পরবর্তী তারিখ ৪ঠা ডিসেম্বর নির্ধারিত হয়েছে। গচা’র সিরাজুল হক এবং কাপাসিয়ার রসিদ মিয়ার সাথে দেখা হল। সংবিধান সম্পর্কিত সম্মেলনে উপস্থিত ছিলাম। বিকেল ৫টায় মূলনীতি এবং মৌলিক অধিকার বিষয়ে দ্বিতীয় পাঠ দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হল। সম্মেলন শেষ হল রাত সাড়ে ৯টায়। আগামীকাল সকাল ৯টা আবার শুরু হবে। এ. ইসলামকে সাথে নিয়ে হলে ফিরলাম। গােসল করতে পারিনি। সম্মেলনের সকালের অধিবেশন যােগ দেইনি। আবহাওয়া ও বাতাসে জলীয় বাষ্প। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। ৫ নভেম্বর ১৯৫০, রবিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল ৯টায় সংবিধান সম্পর্কিত সম্মেলনে যােগ দিলাম। পৌনে ১০টায় সভা শুরু হল। জনাব এ. কে. ফজলুল হক সকাল ১০টায় ভাষণ দেন। তিনি তার ১৫ মিনিটের বক্তব্যে কনসেমব্লির সদস্য হিসেবে সুকৌশলে নিজেকে দোষমুক্ত রাখার চেষ্টা করেন। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই অধিবেশন চলে। দুপুরের খাবারের জন্য বিকেল ৪টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করা হয়। তাজ রেস্তরায় দুপুরের খাবার খেয়ে হামিদ বেপারির বাসায় গেলাম । ওয়ারেস আলি তার জামিনের শর্তাবলী শিথিল করতে পারেন নি। লুলুর কাছে শুনলাম চান মিয়া অন্য জায়গায় বিয়ে করেছে। বিকেল ৪টায় দ্বিতীয় অধিবেশনে যােগ দিলাম। পৌনে ৫টায় অধিবেশন শুরু হল। সন্ধ্যা ৬টায় মূলনীতি এবং মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত দ্বিতীয় পাঠ শেষ হয়। এরপর ১ ঘন্টার বিতি। সভার এই সময়ে হলে এসে খেয়ে নিলাম এবং সােয়া ৭টায় পুনরায় সভায় যােগ দিলাম। সভার কাজ শুরু হল সাড়ে ৭টায়। সাড়ে ৮টার দিকে সভার তৃতীয় পাঠ শেষ হল। এ্যাকশন কমিটি বিলুপ্ত ঘােষণা করে নতুন আরেকটি কমিটি গঠন করা হল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সদস্যরা এ নিয়ে হৈ চৈ করতে লাগল। প্রস্তাব পাশের পর রাত ১২টায় সম্মেলন শেষ হল। রাত ১টায় হলে ফিরলাম। সম্মেলনে অনেক মানুষের উপস্থিতি ছিল এবং এদের অধিকাংশ ঢাকা শহরের বাসিন্দা হলেও অবশ্যই তারা বিভিন্ন জেলা থেকে আগত। প্রাণবন্ত ও ধারালাে আলােচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিশেষ করে শামসুল হক, রফিক এবং মানিক মিয়ার ভূমিকা প্রশংসনীয় ছিল না। ব্যক্তিগতভাবে হেরে গিয়ে তারা তাদের সহযােগিদের বােঝানাের চেষ্টা করেছিলেন যে, এই পরাজয় আওয়ামী লীগের। এতে নিঃসন্দেহে ভুল বােঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এবং জনাব আতাউর রহমানসহ আওয়ামী লীগ একদিকে অবস্থান নেয়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য সম্ভবতঃ রাতে এবং সকালে শীত অনুভূত হচ্ছিল। ৬ নভেম্বর ১৯৫০, সােমবার পৌনে ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। মমতাজ মােক্তারের চেম্বারে তার সাথে দেখা করলাম। তিনি আমাকে বিরানী দিয়ে আপ্যায়িত করলেন।
২৩০
৯টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। সেখানে সেকান্দার মাস্টার ও অন্যান্যরা এলেন। বেলা ১১টায় হলের দিকে রওয়ানা হলাম। পৌনে ৩টায় ইনকাম ট্যাক্স অফিসে গেলাম। হেডক্লার্ক বাইরে থাকায়। কাগজপত্র পেলাম না। ওখানে ডাঃ ইউ, কে, রায়কে দেখলাম। বেলা ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত কোর্টে ছিলাম। সাহেব আলি বেপারি, বড় বেপারি, উমেশ বর্মন, রুস্তম আলি, শামসুল খান, শফিউদ্দিন খান, নান্না মিয়া প্রমুখকে দেখলাম। আহমেদ আলি মাস্টার হোেম বেইল পেয়েছে। আসিমুদ্দিন ফকির এবং আকবর আলি বেপারিকে দেখলাম একসাথে পুলিশ অফিসের সামনে ঘােরাফেরা করছে। মনিরুদ্দিন জানাল, আকবর আলির বাড়িতে চুরি হওয়া সংক্রান্ত ব্যাপারে তারা ঢাকায় এসেছে। সন্ধ্যা ৭টায় হলে ফিরলাম। ফেরার পথে আজিজ আহমেদ এবং মতিন এ্যাকশন কমিটি সম্পর্কে কথা বলল। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক, শীত আসছে। ৭ নভেম্বর ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১২টা, ১টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করেছি। কোর্টে গেলাম বিকেল ৪টায়। শাহাদ আলি সরকার, শফিউদ্দিন পিইউবি, মমতাজ মােক্তার এবং অন্যান্য অনেককে দেখলাম। আমার সাথে এস,আই, জনাব ইসমাইল আমাদের মামলা নিয়ে কথা বললেন। ডেপুটি এস.পি, জনাব সােবহান আমাদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিলেন। ইন্সপেক্টর রওশনউদ্দিনকে এস.ডি.ও. (উত্তর) এর অফিস থেকে বের হতে দেখলাম। সন্ধ্যা ৬টায় কোর্ট থেকে বের হলাম। শাহাদ আলি সরকার আমাকে ১০ টাকা পরিশােধ করলেন। বংশালে এসে হাকিম মিয়াকে পেলাম না। জালালের সাথে দেখা করলাম। সে বলল, আকবর আলি বেপারির বিরুদ্ধে অল্প দিনের মধ্যেই এফ.আই.আর, পেশ করা হবে। স্টেশনে গেলাম এবং সেখানে শাহাদ আলি সরকারকে পেয়ে উকিলের সাথে আলােচনার জন্য তাকে শুক্রবার আসতে বললাম।
সন্ধ্যা ৭টায় হলে ফিরে এলাম। সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কমন রুমে ছিলাম। আবহাওয়া স্বাভাবিক আর শুষ্ক। শীত একদম চলে এসেছে। ৮ নভেম্বর ১৯৫০, বুধবার। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা, ১২টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে উপস্থিতি ছিলাম। সাড়ে ৭টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। সাড়ে ৮টায় কামরুদ্দিন সাহেবসহ আতাউর রহমান সাহেবের বাসায় গিয়ে তাকে সি. ডি. দেখালাম। তিনি এই বিষয়টি পরে তুলবেন। সাড়ে ১০টায় হলে ফিরলাম। ইনকাম ট্যাক্স অফিসে গেলাম বিকেল সাড়ে ৪টায়। ট্যাক্স নির্ধারণের আদেশনামার কপি টাইপ করালাম। আগামীকাল বুঝে নেব। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোর্টে ছিলাম। ২য় এস,আই, এন, হকের দাবীকৃত টাকার ব্যাপারে তালিব আলি আমার সঙ্গে দেখা করলেন। সি.এ.বি.-র সাব ইন্সপেক্টর জনাব ইউনুসের সাথে দেখা হল। তিনি জানালেন কিছু তদন্তের ব্যাপারে উনি আমাদের ওদিকে যাবেন । মােহাম্মদ আলি মিয়া আমাকে একটা কমলা দিল। ওয়ারেস আলির কাছে শুনলাম জব্বার আমাকে খুঁজছে এবং আমার খোঁজে সকালে হলেও গিয়েছিল। এখন কোর্টে খুঁজতে আসবে। কিন্তু আমি যখন কোর্টে গেলাম তখন আর তার চিহ্নও দেখা গেল না। আবহাওয়া ও শুষ্ক আবহাওয়া, হালকা শীত। ৯ নভেম্বর ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। দুপুর ১টায় কোর্টে গেলাম। মমতাজ মােক্তারকে অনুরােধ করলাম ওয়ারেস আলির পিটিশনের জন্য। কিন্তু তিনি কিছুই করলেন না। এরই মধ্যে ইনকাম ট্যাক্স অফিসে গিয়ে ট্যাক্স নির্ধারণের আদেশনামার কপি নিয়ে এলাম। আবার কোর্টে ফিরে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সেখানে থাকলাম। কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায় গেলাম সাড়ে ৪টায়। তিনি বাসায় ছিলেন না।
অলি আহাদও সেখানে গিয়েছিল। তাকে নিয়ে পাকিস্তান অবজারভার অফিস হয়ে এস, হােসেনের বাসায় গেলাম বিকেল সােয়া ৫টায়। কিন্তু কাউকেই পেলাম না। আব্দুল হাকিমের সঙ্গে তার লজিংয়ে দেখা করলাম। তিনি আমাকে যে লজিংয়ের কথা বলেছিলেন, সেটি অন্য কাউকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় হলে ফিরলাম। বাঘিয়ার শাহাদ আলি মিয়া আমাকে আড়াইটার দিকে এস.ডি.ও. (উত্তর) এর অফিসের সামনে দুটো রুটি দিয়ে আপ্যায়িত করেছেন। আবহাওয়া : স্বাভাবিক।
১০ নভেম্বর ১৯৫০, শুক্রবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৭টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। অলি আহাদকে পেলাম। এ্যাকশন কমিটিতে নতুন সদস্য নির্বাচন করা (নেয়া) এবং আওয়ামী লীগের ভূমিকা সম্পর্কে শুনলাম। সেখান থেকে সাড়ে ৮টায় বের হলাম। এর মধ্যে। সাদেকুর রহমান সাহেবকে আপিলের জন্য ট্যাক্স নির্ধারণী আদেশনামা হস্তান্তর করলাম। ৯টায় কোর্টে গেলাম । হাকিম মিয়ার সাথে কথা বলে সাড়ে ১১টায় হলে ফিরে এলাম। বিকেল ৪টায় জগন্নাথ কলেজে। কমরেড ব্যাংক বিষয়ক সভায় উপস্থিত ছিলাম। হাইকোর্টে মামলা করা হবে, এক টাকা চাঁদা দিলাম। সভা থেকে ৫টায় বের হয়ে ৬টায় হলে ফিরলাম। রেলওয়ে হাসপাতালের সামনে মফিজউদ্দিনের সাথে দেখা হল। সে জানাল, সােবহান, জব্বার, ফালু আজ রাতে আসবে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জনাব সাদেকুর রহমানের কাছে গিয়ে তাকে ৫ টাকা। এবং কাগজপত্র দিলাম। কামরুদ্দিন সাহেব এবং আতাউর রহমান সাহেবকে বাসায় পাওয়া গেল না। রাত সাড়ে ৮টার দিকে জালালের সাথে তার বাসায় দেখা করলাম। তার কাছ থেকে শুনলাম তালিব আলি প্রমুখেরা ধরবার জন্য ব্যবস্থা করেছে। ৯টায় হলে ফিরলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
১১ নভেম্বর ১৯৫০, শনিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা আর ১২টার ক্লাস করেছি। সকাল সাড়ে ৬টায় মফিজউদ্দিন এসে জানাল, সােবহানরা এসেছে। সাড়ে ৭টায় ৫১ বংশালে গেলাম। সেখানে ফালু, সােবহান, জব্বার এবং শাহাদ আলি সরকারের সাথে দেখা হল। হাবিব, হাকিম মিয়া, ওয়ারেস আলি পরে এল। প্রথম ৩ জন জানাল, কিভাবে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলার জন্য তাদেরকে বলা হয়েছে। ওদের ইচ্ছে অনুযায়ী ৯টার সময়। ওদেরকে কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে নিয়ে গেলাম – পরামর্শ করার জন্য। তারা বলল, আকবর আলি বেপারি তাদেরকে মিথ্যা কথা বলতে বলে দেয়া। সত্বেও তারা সত্য কথা বলবে। সি.আই.ডি, ইন্সপেক্টরকে বলার জন্য ওদের যা শেখানাে হয়েছিল তারা তা কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে বর্ণনা করল। সােয়া ১০টায় বের হয়ে আমি ১০টা ৫০ মিনিটে হলে ফিরে এলাম। তাজ রেস্তরাঁয় খেয়ে আড়াইটার দিকে কোর্টে গেলাম। কপিগুলাে নেয়ার জন্য। মমতাজ মােক্তারকে বললাম। বার লাইব্রেরিতে কামরুদ্দিন সাহের সাথে দেখা করলাম। হাকিম মিয়া, ওয়ারেস আলি এবং সােবহানকে দেখলাম। সাড়ে ৫টায় হলে ফিরে এলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক এবং শুষ্ক। ১২ নভেম্বর ১৯৫০, রবিবার ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। তােয়াহা সাহেবের বাসায় গেলাম। তাকে প্রভাষকের চাকরির জন্য এখনই। দরখাস্ত করতে বললাম এবং মুজাফফর আহমেদ চৌধুরীর সাথে আমার আলাপের কথা তাকে জানালাম। আধা ঘন্টা পর প্রায় সাড়ে ৩টার দিকে দু’জন এক সাথে বের হয়ে আরমানিটোলা ময়দানে এলাম। বিকাল ৫টায় প্রতিবাদ দিবসের মিটিং শুরু হল। সভাপতিত্ব করলেন এ্যাডভােকেট আফতাবউদ্দিন খান। বক্তারা। ছিলেনঃ মওলানা এ. জব্বার (এফ.এইচ.এ.), এস.এ. রহিম, আলি আহমেদ এম.এল.এ., খয়রাত হােসেন এম.এল.এ., ওয়াদুদ প্রমুখ। প্রায় ৫০০০ লােকের সমাগম হয়েছিল। সন্ধ্যা ৬টায় মিটিং শেষ হলে ৭টায় হলে ফিরলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
২৩৫
১৩ নভেম্বর ১৯৫০, সােমবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ৮টায় মমতাজ মােক্তারের চেম্বারে তার সাথে দেখা করলাম। এর আগে সাদেকুর রহমানের সাথে দেখা করেছি। তিনি বললেন, আপিল করবেন কি তা তিনি এখনও ঠিক করেনি। সকাল ৯টায় আতাউর রহমান সাহেবের সাথে দেখা করলাম। ওয়াদুদও সেখানে এল। আগামী ১৬ তারিখ ছাত্রদের প্রতিবাদ এবং ধর্মঘটের বিষয়ে। কথা হল। ১০টায় বের হয়ে বংশালে গেলাম। সালেহ আহমদ মােড়লকে পেলাম। তাকে বললাম সন্ধ্যায় সােয়ারি ঘাটে যেতে। সাড়ে ১১টায় হলে ফিরলাম। ৭টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। তার সাথে আতাউর রহমান সাহেবের ওখানে গেলাম সাড়ে ৮টায়। সালেহ আহমেদও সেখানে এল। আতাউর রহমান সাহেবকে পাওয়া গেল না। আমরা অপেক্ষা করলাম। তিনি সাড়ে ৯টায় ফিরলেন। ১১টা পর্যন্ত কথা হল এবং আগামীকাল সন্ধ্যায় আবার বসব। রাত সাড়ে ১১টায় হলে ফিরলাম । আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ঋতু পরিবর্তনের কারণে গত ৩ দিন ধরে ঠান্ডা এবং কাশিতে ভুগছি। ১৪ নভেম্বর ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১২টা এবং ১টার ক্লাস করেছি। সকাল ৮টায় জালালের সাথে তার বাসায় দেখা করলাম। আব্বাস শিকদারের ব্যাপারে সে ইতিবাচক কোন কিছু করেনি। সাড়ে ৮টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সাথে দেখা করে সােয়া ১০টা পর্যন্ত আমাদের মামলার বিষয়ে পরামর্শ করলাম। সাড়ে ১০টায় হলে ফিরলাম। কোর্টে ছিলাম বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। জামাত আলির সাথে দেখা হলে তিনি আকবর আলি এবং আসিরুদ্দিন সম্পর্কে কথা বললেন। আহমেদ আলি মাস্টার সেখানে উপস্থিত ছিল। ৪টার দিকে হলে ফিরলাম। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত কমন রুমে ছিলাম। পৌনে ৮টায় আতাউর রহমান সাহেবের ওখানে গেলাম। কামরুদ্দিন সাহেব। এবং হাজি সালেহ আহমেদও সেখানে এলেন। আতাউর রহমান সাহেবের সাথে মামলা নিয়ে আলােচনা হল সাড়ে ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। সাড়ে ১১টার দিকে হলে ফিরলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ১৫ নভেম্বর ১৯৫০, বুধবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ১১টার ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম। অন্য আর কোন ক্লাস হয়নি। মজিদ এবং আসগরের সাথে তাদের রুমে সকালের নাস্তা করেছি। ৮টার দিকে অলি আহাদ এল। আশরাফের দোকানে নাস্তা খাওয়াল। অলি আহাদের ভর্তি, এস.এম. হলের প্রভােস্ট এবং ইস্ট পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগে যােগদানের বিষয়ে কথা হল। সে পরামর্শ দিল। অলি আহাদকে লজিংয়ের জন্য ৯ লারমিনি স্ট্রীটে যােগাযােগ করতে বললাম। অলি আহাদ ৯টার দিকে চলে গেলে তােয়াহা সাহেব ওয়াহিদুজ্জামানকে সাথে নিয়ে হাজির হলেন। ১২টার পর থেকে সারাদিন হলে ছিলাম। সাড়ে ৬টায় মফিজউদ্দিন এবং জব্বার এল। সন্ধ্যা ৭টায় আতাউর রহমান সাহেবের ওখানে গেলাম। কামরুদ্দিন সাহেবও আমাদের সাথে যােগ দিলেন। ১১টা পর্যন্ত মামলার বিষয়ে প্রস্তুতি নিলাম। রাত সাড়ে ১১টায় হলে ফিরলাম। রাত ১২টায় মফিজউদ্দিন এবং ওয়ারেস আলি এসে আমাকে পরদিন সকালে বংশালে যেতে বলে গেল। আবহাওয়া : আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, তাই শীত কম। ১৬ নভেম্বর ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ছাত্রদের ধর্মঘট। মূলনীতি নির্ধারণী কমিটির রিপাের্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ডাের সাড়ে ৫টায় হাকিম এল, তার সাথে ৬টায় বংশাল গেলাম। সেখানে শাহাদ আলি সরকার, ওসমান, আসমত, রুস্তম আলি খান, ফালু, সােবহান, আজিজ প্রমুখের দেখা পেলাম। সকাল সাড়ে ৮টায় শাহাদ আলি সরকার, সালেহ আহমেল মােড়ল, হাকিম এবং অন্যান্যদের নিয়ে কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। পক্ষ সমর্থকারী উকিলের ফি ৩০০/- টাকা ঠিক হল। সেখান থেকে ১০টায় রওয়ানা দিয়ে সাড়ে ১০টায় হলে পৌছলাম । পথে শেভ করে নিয়েছি। খেয়ে নিলাম, গােসল হল না। বেলা সােয়া ১১টায় কোর্টে গেলাম । পুলিশসহ মামলার সমস্ত সাক্ষি এসেছে। মামলা তরফদারের কাছে ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছিল, তখন আতাউর রহমান সাহেব এবং কামরুদ্দিন সাহেব এটা থামালেন। মামলার পরবর্তী তারিখ। পড়ল ৫১ সালের জানুয়ারি মাসের ৪,৫,৬ তারিখে। গােসিঙ্গা এবং দরদরিয়া থেকে প্রচুর লােক এসেছিল। যেমন – নিয়ামুল সরকার, নায়েব, কুন্দুস, সুরুজ আলি প্রমুখ। সাড়ে ৫টায় হাকিম মিয়া ও আশুকে সাথে নিয়ে প্যারাডাইস রেস্তরাঁয় নাস্তা করলাম। হাফিজ বেপারির কাছ থেকে আশুর স্যুটকেস নিলাম, সেখানে সাহেব আলিও ছিল। সাড়ে ৬টায় হলে ফিরলাম। আবহাওয়া ও মেঘাচ্ছন্ন, নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ১৭ নভেম্বর ১৯৫০, শুক্রবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৮টায় কোর্টে গেলাম। সেখানে সালেহ আহমেদ মােড়ল, হাফিজ বেপারি, হাকিম মিয়া এবং ওয়ারেস আলির সাথে দেখা হল। তাদের জামিনের শর্তাবলী শিথিল করা হয়নি। আশু একটু পরে এল। এ. এফ. রহমান পিএএস আমার সঙ্গে এসডিও (এন) এর রুমের সামনে দেখা করলেন। তিনি বিচার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সালেহ আহমেদের জন্য একটা দরখাস্ত লিখলাম। তাকে ৫০/- টাকা দিলাম। হলে ফিরলাম সােয়া ১১টায়। দিনের বাকি সময় রুমেই কাটল। সাড়ে ৫টায় আমাদের হলের কাজী বশীরের নেতৃত্বে কয়েকজন বন কর্মকর্তা আমার সাথে দেখা করতে এলেন। তারা আমার সাহায্য চাইলেন এবং ১৯শে নভেম্বর তাদের মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। তারা সােয়া ৬টায় চলে গেলেন। আবহাওয়া : ১৬ তারিখ থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে বাড়তে বাড়তে চলল সারা দিন ও রাত। বিষন্ন এবং ম্লান পরিবেশ। নাতিশীতােষ্ণ আবহাওয়া। অবিরাম বৃষ্টি।
১৮ নভেম্বর ১৯৫০, শনিবার ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আজ বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি। খারাপ আবহাওয়ার কারণে সারাদিন রুমের মধ্যে। দুপুর ২টার দিকে বন কর্মকর্তারা আমার সাথে দেখা করলেন। এবং তাদের সমস্যার বিষয়ে কিছু তথ্য দিলেন। আধা ঘন্টা পর তারা চলে গেলেন। আবহাওয়া কোন রকম বিরতি ছাড়া সারা দিন রাত অবিরাম বৃষ্টি। বাতাস সহ স্নান এবং বিষন্ন পরিবেশ। বৃষ্টির গতি উত্তরােত্তর বেড়েই চলেছে। ১৯ নভেম্বর ১৯৫০, রবিবার সাড়ে ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। অধ্যাপক এরমানের সাথে নবাবপুর গেলাম এবং ১৪৭ টাকা ১২ আনায় তার। জন্য বিএসএ সাইকেল কেনা হল। তার সঙ্গে চা খেলাম। অধ্যাপক এমান চলে গেলেন। আমি কিছু কেনাকাটা করলাম। রাস্তায় তােয়াহা সাহেব এবং অলি আহাদের সাথে দেখা হল। অলি আহাদকে আমার লজিংয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। সে এখনও যােগাযােগ করেনি। তবে আজ করবে বলে জানাল। পথে কামরুদ্দিন সাহেবকে রিকসায় চড়ে আসতে দেখলাম। তিনি আবুল হাশিম সাহেবের বাসা থেকে ফিরছিলেন। দুপুর ২টায় হলে ফিরলাম। বিকেলে হলে জালালাবাদ সংঘের মিলাদ অনুষ্ঠিত হল। বিকাল সাড়ে ৩টায় ফ্লাইং ক্লাবে পূর্ব-পাকিস্তানের সাব অর্ডিনেট ফরেস্ট অফিসার্স এ্যাসেসিয়েশনের সভায় উপস্থিত ছিলাম। পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক আব্দুস সালাম মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করলেন। মিটিংটি ছিল প্রতিনিধিত্বমূলক, কিন্তু বন বিভাগ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করার বিষয়ে তারা সংকল্পবদ্ধ মনে হল না। শুরুতেই প্রস্তাব গৃহীত হয়ে যাওয়ায় আমাদের বক্তব্যের সুযােগ সীমিত হয়ে যায়। বন বিভাগের বাইরে মানিক মিয়া, রফিক এবং একজন রেলওয়ে কর্মচারি বক্তব্য রাখেন। আমি বিকেল ৫টা থেকে ২০ মিনিট বক্তব্য রাখলাম। মিটিং ৬টায় শেষ হল। অন্যান্যদের মধ্যে রেঞ্জার এ, করিম, সারােয়ার, ডি,এফ,ও, এস,এ, আলম এবং নতুন ডি.এফ.ও, উপস্থিত ছিলেন। বাকী এবং কাদরী আমার সঙ্গে গিয়েছিল, কিন্তু বেশিক্ষণ ছিল না। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হলে ফিরলাম। আবহাওয়া : সকাল ১১টা পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হল, দুই ঘন্টা বিরতি দিয়ে আবার চলল, তবে বৃষ্টির মাত্রা কমের দিকে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়েই রইল। পরিবেশ ম্লান। ২০ নভেম্বর ১৯৫০, সােমবার ৮টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ডাঃ করিমকে তার বাসা থেকে নিয়ে সাড়ে ৩টায় তােয়াহা সাহেবের বাসায় গেলাম। তােয়াহা সাহেব আমাদেরকে কামরুদ্দিন সাহেবের সাথে দেখা করতে বললেন। অলি আহাদ জানাল লজিং ইতােমধ্যে অন্য কাউকে দেয়া হয়ে গেছে। করিমকে সাথে নিয়ে সাড়ে ৪টায় কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায় গেলাম। কাউকেই পেলাম না। হাফিজুল্লাহ কটেজের ইসমাইল এবং আমিরুল্লাহ আমাদের মমতা রেস্তরাঁয় চা খাওয়ালেন। আমরা ৬টার দিকে কামরুদ্দিন সাহেবের সাথে বসলাম। তােয়াহা সাহেবও যােগ দিলেন। আলােচনা পর শীঘ্রই একটি সংগঠন গড়ে তােলার সিদ্ধান্ত নেয়া হল। তােয়াহা সাহেবের সাথে ১০টায় সেখান থেকে বের হলাম। নয়াবাজারের কাছে সালেহ আহমেদ মােড়লের সাথে দেখা হল। রাতে তােয়াহা সাহেবের সাথে খেয়ে সাড়ে ১১টায় হলে ফিরলাম। আবহাওয়া : সকাল ১০টায় সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মেঘ অল্প অল্প করে সরে গেল। বাকি দিন রৌদ্রালােকিত এবং পরিষ্কার রাত। ঠান্ডা পরিবেশ। ২১ নভেম্বর ১৯৫০, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টা, ১টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম। বিকেল সােয়া ৪টায় কোর্টে গেলাম। সেখানে শফিউদ্দিন পি.ইউ.বি., শহীদ মােক্তার, আতাউর রহমান সাহেব, সিরাজুল হকের সাথে দেখা হল। ওয়ারেস আলি আমাকে জানালেন যে, তাদের জামিনের শর্তের ব্যাপারে মমতাজ মােক্তার কোন কিছু করেনি। সিরাজুল হকের সাথে পৌনে ৫টায় কোর্ট থেকে বের হয়ে ওয়ারিতে তার বাসায় গেলাম। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত কথা হল, তাকে একটি রাজনৈতিক দল শুরু করার প্রয়ােজনীয়তা ব্যক্ত করলাম। সে রমনা রেস্ট হাউজ পর্যন্ত আমার সঙ্গে এল এবং একটি প্রকৃত ইসলামী রাষ্ট্রের ধরণ কি হওয়া উচিৎ সেই বিষয়ে কথা বলল।
২৪০
আমি পৌনে আটটায় হলে ফিরলাম। আবহাওয়া ও পুরাে সময় পরিষ্কার আকাশ। সারাদিন সূর্যালােকিত। পরিবেশ ঠান্ডা। বৃষ্টির পর আবহাওয়া স্বাভাবিকভাবেই ঠান্ডা থাকে। বিশেষ করে নভেম্বরের শেষ দিকে। ঠান্ডা এবং কাশিতে ভুগছি। কঠিন অবস্থা থেকে একটু যেনাে ভাল দিকে।
বি.দ্র. অবিরাম প্রবল বর্ষণ সাথে দমকা বাতাস। যা অভাবনীয় এবং কোনভাবেই কাংখিত নয়। এখন ধান কাটার সময়, এর ফলে ধানের ক্ষতি হচ্ছে। বৃষ্টিতে আগাম রবি শষ্যের ক্ষতি হয়েছে। আর বাতাস আখ গাছকে মাটিতে ফেলে দিয়েছে। এমন বৃষ্টি ছিল নজিরবিহীন। ২২ নভেম্বর ১৯৫০, বুধবার সােয়া ৭টায় ঘুম ভাঙ্গল। দুপুর ১২টা, ১টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। ৪টায় কোর্টে গেলাম। মমতাজ মােক্তার বলল যে, ওয়ারেস আলির জামিনের বিষয়টি বৃহস্পতিবার মুভ করাবে। শফিউদ্দিন পি.ইউ.বি., ডাঃ মােতাহার, মওলানা ওয়ারেস আলি প্রমুখের সাথে দেখা হল। মওলানা ওয়ারেস আলি জানালেন, চান মিয়া রশীদ মিয়ার বাড়িতে সিরাজ মিয়ার মেয়েকে বিয়ে করেছে। এস, এ. রহিমের সাথে নতুন দল করার ব্যাপারে কথা হল। জব্বারের সাথে বিকেল সােয়া ৫টায় কোর্ট ছাড়লাম। সে জানাল যে, আকবর আলি তার ঘাড়ে সমস্ত দোষ চাপিয়ে নিজে মুক্ত হতে চাইছে। আমি জব্বারকে জালালের কাছে নিয়ে গিয়ে তাকে বাঁচানাের ব্যবস্থা করতে বললাম। সে রাজি হল। জব্বার ডিসম্বরের ১ তারিখ রাতে ঢাকায় এসে এস, আই. ইউনুসের সাথে কথা বলতে রাজী হল। সাড়ে ৬টায় বের হলাম। জব্বার চলে গেলে আমি হলে ফিরলাম। আবহাওয়া ও পরিষ্কার আকাশ। পরিবেশ শুক। মাঝারি মাপের ঠান্ডা। ২৩ নভেম্বর ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ঘুম থেকে উঠেছি সােয়া ৭টায়। ১টায় ক্লাস করলাম। সােয়া ৪টায় বের হয়ে সাড়ে ৪টায় কোর্টে পৌছলাম। আজকেও ওয়ারেস আলির মামলার কাজ হয়নি। বিকাল ৫টার দিকে বার লাইব্রেরির সামনে আহমেদ আলি মাস্টারের সাথে দেখা হল। তিনি নবাবপুর মালিটোলা ক্রসিং পর্যন্ত আমার সঙ্গে এসে ফকির আব্দুল মান্নানের বাসায় চলে গেলেন। আমি উত্তর নবাবপুর থেকে কিছু কেনাকাটা করে কেমব্রিজ ফার্মেসিতে এলাম । জমির, তােয়াহা সাহেব, জহিরুদ্দিন সাহেব সেখানে এলেন। ওষুধ নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হলের উদ্দেশে বের হলাম। জহির আমাকে ও অন্যান্যদেরকে চা দিয়ে আপ্যায়িত করল। তােয়াহা সাহেব বললেন, তিনি। আজ রাতে নােয়াখালির উদ্দেশে রওয়ানা হচ্ছেন। সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কমনরুমে ছিলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক, শুষ্ক, ঠান্ডা। ২৪ নভেম্বর ১৯৫০, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ৩টায় বের হয়ে সরাসরি জালালের সাথে দেখা করলাম। তার সাথে সােয়া ৪টা পর্যন্ত আকবর আলির মামলা নিয়ে কথা বললাম। সাড়ে ৪টায় কামরুদ্দিন সাহেবের সাথে দেখা করলাম। পথে বাবুবাজারে কুদরত আলির সাথে দেখা করে ওয়ারেসের মামলার বিষয়ে কথা বললাম। কামরুদ্দিন সাহেবের ঘরে অলি আহাদ এবং ডাক্তার মান্নান ছিলেন। পরে জমিরুদ্দিন ও মুর্তাজা এল। সংগঠন শুরুর ব্যাপারে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কথা। হল। আমার উপস্থিত না থাকার সম্ভাবনার কথা ভেবে রবিবার পূর্ব নির্ধারিত সভা হয়নি। পৌনে আটটায় হলে ফিরলাম। ঠান্ডা ও কাশিতে ভুগছি। ওষুধ গ্রহণ করা সত্ত্বেও কমার কোন লক্ষণ নেই। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক, শুষ্ক ও ঠান্ডা। ২৫ নভেম্বর ১৯৫০, শনিবার বাড়ির পথে। ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা ও ১২টার ক্লাস করেছি। দুপুর ১টার ক্লাস করিনি। দুপুর ১টা ২০ মিনিটের ট্রেনে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দিলাম। হাকিম মিয়া
স্টেশন থেকে শ্রীপুর পর্যন্ত সঙ্গে এলেন। তিনি আমাকে একটা সাইকেল দিলেন। বিকেল ৫টার দিকে বাড়িতে পৌছলাম । শাহাদ আলি সরকার সন্ধ্যায় আব্দুল খানের বাড়িতে এসেছেন। তার সাথে প্রায় সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কথা হল । রাতে সেখানে খেয়ে শাহাদ আলি সরকার চলে গেলেন। আমি বাড়িতে ফিরলাম। কাশির কারণে সাংঘাতিক ভুগছি। সারারাত ঘুমাতে পারলাম না। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক, শুষ্ক, শীতল। ২৬ নভেম্বর ১৯৫০, রবিবার সাড়ে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠলাম। সকাল থেকেই অনেক মানুষ আমাকে দেখতে এল। তাদের মধ্যে আব্দুল খান, সাবু, জব্বার, মান্নাফ, সােবহান, সাহার, তুফানিয়া, ওয়ারেস আলি, জাবু, সুরুজ আলি, কুদ্স এবং আরাে অনেকে। দুপুরে নিয়ামত সরকার এল। সে দুপুরে আমার সাথে খেয়ে বিকেলে চলে গেল। দিগধা-র ভাইসাহেব এলেন। তিনি সন্ধ্যার দিকে চলে গেলেন। আমি তাকে মাটির দেয়ালের একটা বাড়ি তৈরির ব্যবস্থা করতে বললাম। রাতে নবার পালান, আম্বির বাপ, আব্দুল খান, খাজার বাপ এবং মান্নাফ এল। মান্নাফ জব্বারের মামলার বিষয়ে কথা বলল। আমি তাকে মামলার অবস্থা সম্পর্কে জানালাম এবং তাকে পাঠিয়ে দিতে বললাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ২৭ নভেম্বর ১৯৫০, সােমবার ঢাকার পথে। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১টায় টিউটোরিয়াল ক্লাস করলাম। সাড়ে ৭টায় সাইকেলে বাড়ি থেকে রওয়ানা দিয়ে সাড়ে ৮টায় শ্রীপুর। পৌছলাম। কালু মােড়ল, সালেহ আহমদ মােড়ল, সােমেদ খান এবং অন্যান্যদের সঙ্গে দেখা হল। সালেহ আহমদ মােড়ল জানালেন যে, সিএফ। আগামী মঙ্গলবার শ্রীপুর আসতে পারেন এবং তখন তিনি তাকে স্থানীয় বন। কর্মচারিদের দুর্নীতি সম্পর্কে জানাবেন।
আহামদসহ শ্রীপুর ষ্টেশন ত্যাগ করলাম সাড়ে ৯টার দিকে। দুপুর ১২টায় হলে পৌছলাম। আড়াইটায় কোর্টে গেলাম। আসমত মােল্লা, আহমেদ আলি মাস্টার, সিরাজুল হক প্রমুখকে পেলাম। সিরাজুল হক আমাকে বার লাইব্রেরিতে নিয়ে গেল। সেখানে আতাউর রহমান সাহেবের সাথে দেখা করলাম। তিনি জয়দেবপুরের একজন দারােগাকে খুঁজে বের করতে আমার সাহায্য চাইলেন। মােহাম্মদ আলির সহায়তায় দারােগাকে পাওয়া গেল। আব্দুল খান, আক্কাস আলি, আব্দুল মােড়ল এবং নবাব আলির বিরুদ্ধে। মামলা শুরু হল। আব্দুল আজিজ খানকে বাড়িতে পাঠালাম এই খবর দিয়ে যে, আব্দুল খান যেন হাফিজ বেপারি বা সালেহ আহমেদ মােড়লকে নিয়ে সিএফ এর সাথে দেখা করে। বুধাই বেপারি তার মামলার জন্য আতাউর রহমান সাহেবকে নিযুক্ত করতে আমাকে অনুরােধ জানাল। সন্ধ্যা ৬টার দিকে কোর্ট এলাকা ছেড়ে হলে ফিরলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
২৮ নভেম্বর ১৯৫০, মঙ্গলবার। ঘুম থেকে উঠেছি সাড়ে ৬টায়।। দুপুর ১২টা, ১টা, ২টা ২০ মিনিট এবং ৩টা ২০ মিনিটের ক্লাস করেছি। আব্দুল হাকিম হলে এল। আমি তার সাথে লজিংয়ের ব্যাপারে কথা বললাম। সন্ধ্যায় কামাল এবং আব্দুল হাকিমকে নিয়ে আগা সাদেক রােডে গেলাম। আব্দুল হাকিম চলে গেল তার লজিংয়ে। জালালের বাসায় গিয়ে তাকে পেলাম না। সন্ধ্যা সােয়া ৬টার দিকে হলে ফিরলাম। অলি আহাদকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পেলাম। তার কাছ থেকে জানলাম আগামী শুক্রবার প্রস্তাবিত মিটিং হবে। আবহাওয়া ও শুক এবং ঠান্ডা। ২৯ নভেম্বর ১৯৫০, বুধবার সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম।
দুপুর ১২টা, ১টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করলাম। বার লাইব্রেরি থেকে বিকেল ৪টায় কামরুদ্দিন সাহেবকে নিয়ে তার বাসায় গেলাম। সানাউল্লাহ নূরী, মুর্তাজা এবং ট্রেড ইউনিয়নের কাশেম উপস্থিত থাকায় নতুন দল গঠনের ব্যাপারে কোন কথা হল না। বুধাই বেপারির মামলা নিয়ে তার সাথে কথা বললাম এবং আতাউর রহমান সাহেবকে এই মামলায় যুক্ত করতে তাকে অনুরােধ জানালাম। সাড়ে ৬টার দিকে তার বাসা থেকে বের হলাম। পথে জালালের বাসায় খোজ নিয়ে তাকে পেলাম না। হলে ফিরলাম সন্ধ্যা ৭টার দিকে। আবহাওয়া ও আগের মতই। ৩০ নভেম্বর ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টা ও ১টার ক্লাস করেছি। হলে চমকার ফিস্টের আয়ােজন। সন্ধ্যায় বিদায়ী মেস কমিটির উদ্যোগে গান, ব্যাঙ্গাত্মক অভিনয় উপস্থাপনা, প্রভৃতি অনুষ্ঠানের পর বিশাল ফিট হল। বিকেল ৩টা থেকে প্রস্তুতি অনুষ্ঠানে অংশ নিলাম। অনুষ্ঠান শেষ হল রাত সাড়ে ১০টায়। সাড়ে ৬টায় অ্যাসেমব্লি হলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুর হয়। রেডিও’র কয়েকজন শিল্পী এতে অংশ নেন। হলে ধারণ ক্ষমতার চাইতেও বেশি মানুষ হয়েছিল। প্রভােস্ট এবং আবাসিক শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন। প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান। এটি শেষ হল সােয়া ৮টায়। রাত সাড়ে ৮টায় ফিস্ট শুরু হল। আয়ােজন ভাল ছিল। সবকিছুই ছিল প্রচুর। উপস্থিত ২০০ জনের প্রথম ব্যাচে জায়গা হল। এই ধরনের আয়ােজনে আজকের ফিস্টটি ছিল অসামান্য, এতে নতুনত্বের স্বাদ ছিল। এখানে খাবার ছিল, সেই সাথে অনুভব ছিল। সাড়ে ৯টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে জয়নালকে পাঠালাম। সে জানাল তাকে নিয়ােগ দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক।
২৪৫
১ ডিসেম্বর ১৯৫০, শুক্রবার ঘুম ভাঙ্গল সকাল ৬টায়। সারাদিন হলে ছিলাম। আমার কাছে কেউ আসেনি। আমিও বাইরে যাইনি। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ২ ডিসেম্বর ১৯৫০, শনিবার ৬টায় ঘুম থেকে জেগেছি। বেলা ১১টা এবং দুপুর ১২টার ক্লাস করেছি। সকাল ৭টায় আব্দুল জব্বার এলে ওকে নিয়ে সাথে সাথে বের হলাম । জালালকে পেলাম না। ওকে নিয়ে নবাবগঞ্জে এস,আই. জনাব ইউনুসের ওখানে গেলাম ৮টার দিকে। চা খেয়ে সেখান থেকে ৯টায় বের হলাম। ইউনুস জব্বারকে ১১টায় কোর্টে যেতে বললেন। আমি সাড়ে ৯টায় হলে ফিরে এলাম। সােয়া ১টায় আণ্ড এল। সে আড়াইটায় কোর্ট পর্যন্ত আমার সাথে এল। জব্বারকে পেলেও ইউনুসকে পেলাম না। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি হল না। আবুল হায়াত চৌধুরীকে বললাম বি বি. চৌধুরীর মামলার তারিখ ৪ তারিখে ফেলতে। সর্বজনাব আতাউর রহমান, কফিলউদ্দিন চৌধুরী প্রমুখের সাথে দেখা হল, কিন্তু কামরুদ্দিন সাহেব ছিলেন না। নিয়ামত সরকার, রুস্তম আলি খান, ইনু দফাদার প্রমুখকে দেখলাম। ডাঃ করিমকে বাসায় এবং চেম্বারে খুঁজলাম, পেলাম না। জব্বার বিকেলের ট্রেনে চলে গেল, আমি হলে ফিরে এলাম সাড়ে ৬টায়। গচার সিরাজুল হককে পেলাম নবাবপুর স্টেশন রােড ক্রসিংয়ে। কালু মিয়া, খাজা বেপারি প্রমুখকে কোর্টে দেখেছি। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ৩ ডিসেম্বর ১৯৫০, রবিবার ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর সাড়ে ১২টায় ডাঃ করিমের কাছে গেলাম। তিনি আমাকে একটা প্রেসক্রিপশন দিলেন। তাকে দুনীতি মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে জনাব জহিরুদ্দিন বি.এল.য়ের সাথে যােগাযােগ করতে অনুরােধ জানালাম। কেমব্রিজ ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে দেড়টার দিকে হলে ফিরলাম। বিকেল ৪টায় আরমানিটোলায় এস, হােসেনের বাসায় গেলাম। ডি.এফ.য়ের সি.সি.র মিটিং হল। সেখানে সর্বজনাব এস, হােসেন, এ রহমান, অলি আহাদ, অধ্যাপক কাশেম, কামরুদ্দিন, হাফিজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। খয়রাত হােসেন এম,এল,এ., অধ্যাপক কিউ. জামান এবং পরে আসলাম ও জহুর হােসেন চৌধুরী এলেন। ৭টায় মিটিং শেষ হল। কামরুদ্দিন সাহেবের ওখানে এলাম। সেখানে ডাঃ করিম আমাদের সাথে যােগ দিলেন। রাত ১০টা পর্যন্ত কথা হল, বিশেষ করে আমাদের মামলা বিষয়ে। ডাঃ করিম সহ জহিরুদ্দিন সাহেবের সাথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে দেখা করে বি, বি. চৌধুরীর মামলা সম্বন্ধে কথা বললাম। ডাঃ করিমের বাসায় তার সাথে রাতের খাবার খেয়ে ১২টায় হলে ফিরলাম । আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ৪ ডিসেম্বর ১৯৫০, সােমবার ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১টা এবং ২টা ২০ মিনিটের ক্লাস করেছি। ভােরে আমার কাছে ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লা, তার বড় ছেলে ও তাহির, নবার পালান, ইয়াসিন সরকার ও একটি ছেলে এল। শেষের ৩ জনকে কিছু নির্দেশ দিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালাম। এবং অন্যদেরকে নিয়ে ডাঃ করিমের কাছে গেলাম। ডাঃ করিমকে অনুরােধ করলাম এদেরকে জহিরুদ্দিন উকিলের কাছে নিয়ে যেতে। সাড়ে ৯টায় হলে ফিরে এলাম।সাড়ে ৩টায় কোর্টে গিয়ে বি. বি. চৌধুরীর মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এ. এইচ. চৌধুরী ছাড়া আর কাউকেই পেলাম না। তিনি জানালেন, মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ৩০শে ডিসেম্বর ধার্য করা হয়েছে। নারায়ণপুরের শামসুর সাথে দেখা হলে তার অনুরােধে এ. কাদির ভূঁইয়ার জন্য একটি দরখাস্তের খসড়া লিখে দিলাম। সে আমাকে নাস্তা খাওয়াল। সাড়ে ৫টায় হলে ফিরলাম। আবহাওয়া ও রাতে আকাশে মেঘ থাকায় পরিবেশ উষ্ণ। ৫ ডিসেম্বর ১৯৫০, মঙ্গলবার। ভাের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টা, ১টা, ২টা ২০ মিনিট এবং ৩টা ২০ মিনিটের ক্লাস করেছি। ভােরে কাগুর বাপ তার বােনের স্বামীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এল। আমি তাদেরকে একটা চিরকুট লিখে ডাঃ করিমের কাছে পাঠিয়ে দিলাম। সন্ধ্যায় কাগুর বাপ হলে এসে জানাল, তার ভগ্নিপতিকে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সকালে ওদের সাথে নবার পালান এসেছিল। কিন্তু আমি তার সাথে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাইনি। পুরাে সন্ধ্যা হল চত্বরে কাটালাম। সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত কমন রুমে ছিলাম। আবহাওয়া ও পরিষ্কার আবহাওয়া, তবে শীত কম। ৬ ডিসেম্বর ১৯৫০, বুধবার সকাল ৮টায় ঘুম থেকে উঠলাম। আখেরী চাহার সােম্বা উপলক্ষে ছুটি। আজ বিকেলে মফিজউদ্দিন বাড়ি থেকে এসে আমাকে ৭০০টাকা দিল। এই টাকা পাট বিক্রি করে পাওয়া গেছে। তাকে সাথে নিয়ে নবাবপুর রােড। গেলাম এবং প্রায় ৭টা পর্যন্ত বাড়ির জন্য কিছু কাপড় কিনলাম। ৫১ বংশালে হােসেন মােড়লের সাথে দেখা করে জালালের কাছে এলাম। তাকে ১০০টাকা ফিরিয়ে দিয়ে আকবর আলির বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে কথা বললাম। সাড়ে ৮টায় হলে ফিরলাম। রাতে মফিজউদ্দিন আমার সাথে হলে থাকল। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক এবং মাঝারি ঠান্ডা।
৭ ডিসেম্বর ১৯৫০, বৃহস্পতিবার ৮টায় ঘুম থেকে উঠেছি। দুপুর ১২টা ও ১টার ক্লাস করলাম। বাড়িতে যাবার জন্য ৬টার ট্রেন ধরতে মফিজউদ্দিনকে সাড়ে ৫টায় পাঠিয়ে দিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোথাও যাইনি। আজ আমার কাছে কেউ আসেনি। আবহাওয়া স্বাভাবিক। ৮ ডিসেম্বর ১৯৫০, শুক্রবার। সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সারাদিন হলে ছিলাম। আমার কাছে কেউ আসেনি। ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এন/৮ রুমে ফরিদ সাহেব, শামসুল ইসলাম ও কামালের সাথে কথা বললাম। আজ সন্ধ্যায় জীবনে প্রথম বারের মত টেনিস খেললাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। ৯ ডিসেম্বর ১৯৫০, শনিবার সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বেলা ১১টা ও ১২টার ক্লাস করেছি। সকালে কিছু ছাত্রের সাথে জনাব সাঈদের বাসায় গেলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বকেয়া এবং বড় দিনের ছুটির ব্যাপারে। সন্ধ্যা সােয়া ৭টায় মেস কমিটির সাথে বসার কথা ছিল, কিন্তু গিয়ে শুনলাম সময়টা কাল সকালে ফেলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া ছাড়া সারাদিন হলেই কাটালাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। শীত কম। ৮ তারিখ থেকে ঠান্ডা এবং কাশির সমস্যা অনেকখানি কম। প্রথম সপ্তাহে বিশেষ করে ২ তারিখ থেকে চরমভাবে ভুগেছি।
২৫০
২১ ডিসেম্বর ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সােয়া ৭টায় ঘুম থেকে জেগেছি। দুপুর ১২টা ও ১টার ক্লাস করেছি। বেলা ৩টায় কোর্টে গেলাম। কালু মােড়ল, হাফিজ বেপারিকে পেলাম। কালু মােড়লকে বললাম, আকবর আলির আচরণ বােঝার চেষ্টা করতে। আকবর আলি যেন যে কোন ধরনের সমস্যায় পড়েন তা দেখার জন্য হাফিজ বেপারি আমাকে অনুরােধ জানাল। আমি তাকে মুখের উপর জানিয়ে দিলাম, এটা আমার কাজ নয়। কালু মােড়ল জানাল, শ্রীপুরের রেঞ্জার সংরক্ষিত বনজ সম্পদ অবৈধভাবে বিক্রি করার জন্য বিনােদের কুড়াল ব্যবহার করেছে। সে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে খবর সংগ্রহ করবে। পেশকারের জন্য কুদরত আলি। আদেশনামার কপি সংগ্রহ করতে পারল না। সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ২য় সেশন জজের আদালতে একটা কেসের শুনানি শুনলাম। কামরুদ্দিন সাহেব কিংবা আতাউর রহমান সাহেব কাউকেই পেলাম না। নবাবপুর রেলওয়ে ক্রসিংয়ে জালালকে পেলাম, তার বাসা পর্যন্ত কথা বলতে বলতে গেলাম। হলে ফিরলাম সন্ধ্যা ৭টায়। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। শীত কম। ২২ ডিসেম্বর ১৯৫০, শুক্রবার সাড়ে ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আজ থেকে শীতকালিন ছুটি শুরু হল । বেলা ২টার দিকে ডাঃ করিমের বাসায় গেলাম । তারপর তােয়াহা সাহেবের বাসায়। তােয়াহা সাহেব এবং অলি আহাদসহ বিকেল ৪টার দিকে কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গেলাম। ডাঃ মান্নান এবং সফিউল্লাহ সেখানে ছিলেন। আগামী ২৪ তারিখে তাদের সম্মেলন এবং আহূত ধর্মঘট বিষয়ে। কথা বলতে তারা সেখানে এসেছিলেন। সাড়ে ৪টার দিকে তারা চলে গেলেন। তােয়াহা সাহেব হরিনাথ প্রেস’ কেনার ব্যাপারে কথা বললেন। তারা গেলেন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। আমি একটা নতুন সংগঠন শুরু করার ব্যাপারে কথা বললাম। আমার মামলা নিয়েও কথা হল। সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে সেখান থেকে বের হয়ে সরাসরি হলে ফিরে এলাম।
আবহাওয়া ঃ স্বাভাবিক। ৪/৫ দিন আগে যে রকম কনকনে শীত পড়তে শুরু। করেছিল, এখন তার প্রকোপ কম। আকাশ পরিষ্কার, কিন্তু শীত কম। ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫০, শনিবার , সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। বিকেল সােয়া ৪টায় বার লাইব্রেরিতে গিয়ে সর্বজনাব আতাউর রহমান, কফিলউদ্দিন চৌধুরী, কামরুদ্দিন আহমদ প্রমুখের সাথে দেখা হল। কালিয়াকৈর থানা থেকে আগত এক ব্যক্তি বন বিভাগের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তাকে সাহায্য করতে অনুরােধ জানাল। আমি পৌনে ৬টায় মিটফোর্ড হাসপাতালে কাগুর বাপের ভগ্নিপতিকে দেখতে গেলাম। সন্ধ্যা ৬টায় আতাউর রহমান সাহেবের বাসায় গেলাম। কালিয়াকৈরের সেই লােক সেখানে আমার সাথে যােগ দিল। বন কর্মচারিদের সঠিকভাবে কাজ করার ফলে সাধারণ মানুষের যে ভােগান্তি হয় সে ব্যাপারে আতাউর রহমান সাহেবের সাথে কথা বললাম। তিনি বন মন্ত্রীর কাছে প্রতিনিধি হিসেবে যাবার জন্য রাজি হলেন। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, মওলানা ভাসানীকে নিয়ে জানুয়ারির কোন এক দিন শ্রীপুরে একটি সম্মেলনের আয়ােজন করব। রাত ৯টায় বের হয়ে সরাসরি হলে চলে এলাম। আবহাওয়া স্বাভাবিক। আকাশ পরিষ্কার, তবে শীত কম। শেষ রাতের দিকে কুয়াশা পরে। ২৪ ডিসেম্বর ১৯৫০, রবিবার সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। কায়েদ-ই-আযমের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী মুসলিম লীগ আয়ােজিত আরমানিটোলা মাঠের বিশাল সমাবেশে উপস্থিত ছিলাম। মওলানা ভাসানী সভায় সভাপতিত্ব করলেন এবং পুরাে সময়টা বক্তৃতা দিলেন। সাড়ে ৩টার দিকে সভা শুরু হয়ে সাড়ে ৫টার দিকে শেষ হল। মওলানা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব বিষয়ে কথা বললেন। চমৎকারভাবে বিশ্লেষণ করলেন। কোরিয়ার পরিস্থিতি, সেখানে আমেরিকার কৌশল, পাকিস্তানের জন্য কোন কিছু অর্জন না করেই এমনকি কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের জন্য কোন শর্ত। আরােপ ছাড়াই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে জনাব লিয়াকত আলির।
যােগসাজসের কথা বললেন। কনসেমব্লি এবং জনাব লিয়াকত আলি সাহেবের বিরুদ্ধে তিনি অনাস্থা জ্ঞাপন করলেন। পাকিস্তানে সম্ভবতঃ এরকম ঘটনা এটাই প্রথম। প্রধানমন্ত্রী যখন সমর্থনের জন্য পূর্ব-বাংলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন তখন বাংলার মানুষ তার মুখের উপর তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল। সারা বছরের যে কোন জনসমাবেশ থেকে এই সমাবেশে উপস্থিতি। ছিল অনেক বেশি – প্রায় ২০/২৫ হাজার। জনসভা শেষ হবার পর সিরাজুল হক ব্যবসা শুরু করার ব্যাপারে আমার সাথে কথা বলল । সাড়ে ৬টায় হলে ফিরলাম। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক। গত কয়েকদিন থেকে আগাম বসন্তের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে আজকের দিনে।
২৫ ডিসেম্বর ১৯৫০, সােমবার সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সােয়া ৮টায় কামরুদ্দিন সাহেবের বাসায় গেলাম। শুনলাম, আতাউর। রহমান সাহেব জনাব লিয়াকত আলির কাছে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে যাবার ব্যাপারে ব্যস্ত থাকবেন। এখান থেকে ১০টায় বের হলাম। তােয়াহা সাহেবের বাসায় গিয়ে সবাইকে পেলাম। ডাঃ করিমের ওখানে গেলাম সাড়ে ১২টার দিকে। রােগীর বিষয়ে কথা বলে দুপুর ১টায় হলে ফিরলাম। সাড়ে ৩টায় কামরুদ্দিন সাহেবের কাছে গিয়ে জানলাম, সন্ধ্যায় আতাউর রহমান সাহেব আমাদের মামলা নিয়ে বসবেন। বিকেল ৫টায় পুরানা পল্টনে কায়েদ-ই-আযমের জন্মদিন পালন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। জনাব লিয়াকত আলি বক্তব্য রাখলেন। প্রায় ৫০ হাজার লােক উপস্থিত ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কামরুদ্দিন সাহেবের ওখানে গেলাম। তাকে নিয়ে আতাউর রহমান সাহেবের চেম্বারে গিয়ে সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। কিন্তু তিনি বাইরে থেকে ফেরেননি। তাই আমরা নিজ নিজ আবাসে ফিরে এলাম। আবহাওয়া স্বাভাবিক। আগের মতই। ২৬ ডিসেম্বর ১৯৫০, মঙ্গলবার সাড়ে ৭টায় ঘুম থেকে জেগেছি। কাগুর বাপ খুব সকালে এবং আর একবার সাড়ে ৩টার দিকে আমার সাথে দেখা করল। দ্বিতীয়বারে ডাঃ করিম আমার সাথে ছিল। তারা ৪টায় চলে গেল। সােয়া ৪টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। সেখানে আতাউর রহমান সাহেব, কামরুদ্দিন সাহেব ও অন্যান্য পরিচিত উকিলদের সাথে দেখা হল। শামসুল হক সাহেবের বাসায় মিলাদ, তিনি আমাদেরকে মিলাদে আমন্ত্রণ জানালেন। ৫টায় কামরুদ্দিন সাহেব, আতাউর রহমান সাহেব, জহিরুদ্দিন ও আমি মিলাদে গেলাম। মওলানা ভাসানী মিলাদ পড়ালেন। মানিক মিয়া, আউয়াল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মিলাদে ফিরনি দেয়া হল। সাড়ে ৬টায় আতাউর রহমান সাহেবের বাসায় এলাম। রাত ৮টায়। কামরুদ্দিন সাহেব যােগ দিলেন। রাত ১০টা পর্যন্ত আমাদের মামলা নিয়ে। আলােচনা হল। সােয়া ১০টায় সেখান থেকে বের হলাম।
নাজিরা বাজারের একটা রেস্তরায় রাতের খাবার খেয়ে হলে ফিরলাম রাত সােয়া ১১টায়। আবহাওয়া : আগের মত। জনাব লিয়াকত আলি পূর্ব-বাংলায় তার সফর শেষে আজ সকালে করাচীর উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন। ২৭ ডিসেম্বর ১৯৫০, বুধবার বাড়ির পথে। ভাের সাড়ে ৪টায় ঘুম থেকে উঠেছি। ট্রেন থেকে শ্রীপুরে নামলাম সকাল পৌনে ৮টায়। হাসেন মােড়ল, কালু মােড়ল এবং সালেহ আহমেদ মােড়লের সাথে দেখা হল। সালেহ আহমদ। মােড়লের সঙ্গে আজিজের বিষয়ে কথা বললাম। সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ির পথে রওয়ানা দিলাম। গােসিঙ্গার প্রায় দেড় মাইল পশ্চিমে আব্বাস শিকদারকে পেলাম। সে আমাকে ডেকে আমাদের মামলার বিষয়ে কথা বলতে লাগল। সেই সময় আশেপাশের বাড়ি থেকে ৩/৪ জন লােক জড়াে হল। এই সমস্ত লােকের উপস্থিতিতে সে জানাল, সে মিথ্যে কথা বলবে না। কিন্তু আমি তাকে কিছুই করতে বললাম না। দুপুর ১২টার দিকে বাড়িতে পৌছলাম। সন্ধ্যায় আব্দুল খানের বাসায় তার সাথে দেখা করলাম। শাহাদ আলি সরকার রাতে আমার সাথে দেখা করে মামলার বিষয়ে কথা বললেন। আবহাওয়া ও কিছুটা শীত। ২৮ ডিসেম্বর ১৯৫০, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠলাম। সকালের দিকে আব্দুল জব্বার, কুদুস এবং আকুর বাপ আমার সাথে দেখা করল। তারপর অন্যান্যদের মধ্যে রজব আলি, ওয়ারেস আলিরা এল এবং এক এক করে চলে গেল। দুপুর বেলা সােনায়ার মনিরউদ্দিন এবং আব্দুল হাকিম আর একজন লােকসহ এল। মনিরউদ্দিন নতুন বন আইনের ব্যাপারে কথা বলল। তারা সবাই দুপুরে খেয়ে চলে গেল। বিকেলে কাল বাড়িতে ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লার সাথে দেখা করতে গেলাম।
সফরউদ্দিন দফাদার সেখানে আমার সাথে দেখা করে জানাল যে, সে তার নিজের জমির জঙ্গল পরিষ্কার করেছে, সে কারণে শ্রীপুরের রেঞ্জার তার কাছ থেকে টাকা চেয়েছে। তারা সবাই চলে গেল। ঠাকুরা বিলের চারপাশে আমি ইতস্ততঃ ঘুরে বেড়ালাম। বাড়িতে ফিরলাম সন্ধ্যায়। রাতে ঘাঘুটিয়ার একজন পথিক বাড়িতে ছিল। আক্কাস আলি কিছু সময়ের জন্য আমার সাথে দেখা করে জানাল যে, তার নিজের জমি পরিষ্কার করার জন্য রেঞ্জার তার কাছে ৩০ টাকা দাবি করেছে। রাতে জব্বার, কন্দুস, জাবু, মান্নাফ, ফালু এবং আবকিয়ার সােবহান এল। রাতে খেয়ে তারা চলে গেল। আবহাওয়া ও স্বাভাবিক, বেশ শীত।
২৯ ডিসেম্বর ১৯৫০, শুক্রবার ঢাকার পথে। সকাল ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠলাম। বেলা ১১টার দিকে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। পথে আব্দুল খানের বাড়ির সামনে আব্দুল মােড়ল ও আব্দুল খানের মুখােমুখি হলাম। গােসিঙ্গায় শাহাদ আলি সরকার আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলল। শ্রীপুরের ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লা ও তার ছেলে এবং ইদ্রিস গার্ডের সাথে দেখা হল। বেলা সােয়া ৩টার দিকে ঢাকা পৌছলাম। আমার রুমে বিশ্রাম নিয়ে বিকেল ৪টার দিকে বের হলাম। নবাবপুরে ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লা ও তার ছেলেকে নাস্তায় আপ্যায়ন করলাম। তারপর তাদের সাথে সদরঘাটে গেলাম। সেখানে ডেপুটি এস.পি, জনাব সােবহানের সাথে দেখা হল। তার কথায় পরিষ্কার বােঝা গেল কেউ তাকে আমার সম্পর্কে ভুল ধারণা দিয়েছে। কাগুর বাপ জানাল, তারা অপারেশনের ঝুঁকি ন য়ায় তার রােগীকে আজ ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লা বাবু বাজারের উদ্দেশে চলে গেল। আমি জালালের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করে ডি.এস.পি, সম্পর্কে কথা বললাম। সাড়ে ৭টার দিকে হলে ফিরলাম। আবহাওয়া ও আগের মতই।
৩০ ডিসেম্বর ১৯৫০, শনিবার সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে ১১টায় কোর্টে গেলাম। দুপুর ১২টায় আকরামতউল্লাহ এল। বিনােদ। সম্পর্কে তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত তদন্তের তারিখ বাড়ানাে হল। পুরাে অফিস। সময় পর্যন্ত কোর্টে ছিলাম। বিকেল ৪টায় বার লাইব্রেরিতে আতাউর রহমান সাহেব এবং কামরুদ্দিন সাহেব ও অন্যান্যদের সাথে দেখা করলাম। ডি.এস.পি, জনাব সােবহানের সাথে কথা বললাম। তার কথাবার্তা গতকাল থেকে ভিন্ন। কুদরত আলির কাছ থেকে আদেশনামার কপি নিলাম। সাড়ে ৫টায় কোর্ট থেকে বের। হলাম। ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লা ও তার ছেলে কেনাকাটার জন্য আমাকে নিয়ে গেল। সদরঘাট থেকে নবাবপুরের মধ্য দিয়ে স্টেশন পর্যন্ত হেঁটে এলাম। তাদেরকে বিদায় জানিয়ে হলে ফিরে এলাম সন্ধ্যা ৭টায়। আবহাওয়া ও বিকেল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। শীত কম। ভােরে কুয়াশা। পড়ে। ৩১ ডিসেম্বর ১৯৫০, রবিবার সকাল ৭টায় উঠেছি। সােয়া ৮টায় আতাউর রহমান সাহেবের কাছে গেলাম। কামরুদ্দিন সাহেব। এলেন ৯টায়। ৪ ও ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ঢাকা কনভেনশনে গৃহীত খসড়া মূল। নীতিগুলাের উপর একটি ব্যাখ্যামূলক নােট তৈরি করলাম। শামসুর রহমান (জনসন) সহায়তা করলেন। দেড়টায় চলে এলাম। সরাসরি ডাঃ করিমের ওখানে গেলাম কিন্তু তাকে পেলাম না। তােয়াহা। সাহেবের বাসায় তােয়াহা সাহেব ও অলি আহাদের সাথে দেখা হল। আওয়ামী লীগ সম্পর্কে এবং এতে যােগদানের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলােচনা হল। বিকেল ৪টায় বের হলাম। পল্টনে সলিমাবাদ রেষ্টুরেন্টে খেয়ে ৫টায় হলে ফিরলাম। গােসল এবং দুপুরের খাওয়া হয়নি। আবহাওয়া শুষ্ক। সূর্যের আলাে থাকা সত্ত্বেও সারা দিন শীত বােধ হল। গত ক’দিন ধরে তুলনামূলকভাবে বেশি ঠান্ডা পড়েছে।
২৬২
ব্যক্তি পরিচয় ও নির্ঘন্ট
অনুর মা ।১২৩, ১২৪ অলি আহাদ। অলি আহাদ। জন্ম। ফেনী। রাজনীতিবিদ। ত্যাগী ও সংগ্রামী রাজনীতিবিদ। ভাষা আন্দোলনে তার অবদান স্মরণীয়। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তার ভূমিকা বিতর্কিত। ২২, ২৩, ৩১, ৩৭, ৩৯, ৫৬, ৫৮, ৯৫, ৯৬, ১০২, ১০৩, ১০৮, ১০৯, ১১০, ১১১, ১১২, ১২১, ১২২, ১৩২, ১৩৩, ১৩৪, ১৩৭, ১৪২, ১৪৪, ১৪৫, ১৪৬, ১৫০, ১৫১, ১৫৩, ১৫৪, ১৫৫, ১৫৬, ১৫৯, ১৬০, ১৬২, ১৬৩, ১৮২, ১৮৮, ১৯১, ১৯৪, ২০৪, ২০৮, ২০৯, ২১০, ২১২, ২১৩, ২১৫, ২১৬, ২২০, ২২২, ২২৮, ২৩১, ২৩৩, ২৩৪, ২৩৬, ২৩৮, ২৪২, ২৪৬, ২৪৭, ২৫০, ২৫৬ অলি মাহমুদ ১২৫
আইনউদ্দিন ৫২, ৮৩ আইজুদ্দিন মিয়া ৬৫ আইয়ুব আলি ৩০, ৪২, ৪৮, ৬৬, ৬৮, ৭৯, ৯২, ৯৩, ৯৪, ১০২ আউয়াল ২২, ৩৭, ৩৯, ১৮২, ২৫৩ আওলাদ ৭১ আকবর বেপারি ১১, ১৭, ২০, ১০০, ১১৪, ১২৪, ১২৯, ১৪৩, ১৫৫, ১৫৯, ১৬০, ১৭৫, ১৭৭, ১৮২, ১৮৩, ১৮৪, ১৮৫, ১৮৬, ১৮৭, ১৯০, ১৯২, ২০৩, ২১৫, ২১৬, ২২৬, ২২৯, ২৫, ২৩৬, ২৪৩, ২৪৮, ২৪৯, ২৫০ আকবর মিয়া ১২৬, ২৩০ আক্তার মাষ্টার ১১৮ আৰু ৯৩ আক্কাসের বাবা ১২ আক্কাসিয়া ২০, ২৫৫
আক্কাস আলি ১১৫, ১৬৮, ২৩৮। আকরামতউল্লাহ। গাজিপুরের শ্রীপুর থানার কর্ণপুর গ্রামে বাড়ি। গােসিঙ্গা প্রাইমারি স্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন। ৩৬, ৪৩, ৪৪, ৪৮, ৮৩, ৯৩, ৯৪, ১১৪, ১১৭, ১২৭, ১২৮, ১২৯, ১৩১, ১৫১, ১৬৯, ১৮৪, ১৮৬, ২৫৬ আৰু ১১, ২০ আকুর বাপ ২৫৪ আখলাক। আখলাকুর রহমান | অর্থনীতিবিদ ১৭৫ আজি আহমদ ১০৬, ১০৯, ১৯৩, ১৯৫, ২২০, ২২৬, ২৪৭ আজিজ মােড়ল। শ্রীপুরের গােসিঙ্গার বাড়ি ছিল। ২১৬ আজি মিয়া ১৪, ২৫, ৪০, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৫২, ৫৪, ৬৪, ৭৩, ৭৯, ৮৩, ১০১, ১১৩ আজিজ খান ১২, ৪৮, ১২৬, ২১৬, ২৩৮, ২৪৫, ২০৭, ২৩৬, ২৫৪ আজিম মিয়া ৫৮, ১৩১ আতাউর রহমান ও আতাউর রহমান খান ঃ ১৯০৭-১৯৯১। রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও লেখক। জন্ম বালিয়া, ধামরাই, ঢাকা। উদার গণতান্ত্রিক মতবাদের প্রতি আস্থাশীল। রাজনীতিবিদ। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘকাল সংগ্রাম পরিচালনা। ৫০ ও ৬০ এর দশকে বাঙ্গালিদের স্বাধীকার আন্দোলনের অন্যতম পুরােধা। স্বাধীনতার পর ১৯৮৪ সালে সামরিক সরকারের অধীনে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ। ৩২, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৯, ৭২, ১৩৪, ১৪৪, ১৪৫, ১৫০, ১৫৫, ১৫৯, ১৬৭, ১৬৮, ১৭২, ১৯০, ১৯১, ১৯২, ১৯৩, ১৯৪, ১৯৫, ১৯৮, ২০২, ২০৪, ২০৬, ২০৭, ২০৮, ২০৯,২১০, ২১১, ২১২, ২১৩, ২১৪, ২১৫, ২১৬, ২২০, ২২৪, ২২৭, ২২৮, ২৩০, ২৩১, ২৩২, ২৩৪, ২৩৮,২৩৯, ২৪১, ২৫০, ২৫১, ২৫৩, ২৫৬। আতাহার ৩৬। আদম আলি সরকার ১০০, ১৪৮ আদম আলি ১৬৯ আদু ১৮৫ আনওয়ারুল আষম ১৭৬ আনওয়ার উদ্দিন ১৯৮ আনজাত আলি ১৪৭ আনসার আলি ৩২, ৮৫, ১০৯, ১১৪, ১৮৫ আনােয়ারা। আনােয়ারা খাতুন। তাজউদ্দিন আহমদের বােনের মেয়ে। ১৯৫ আনিস চৌধুরী ১৬২ আফসু। আফসারউদ্দিন আহমদ খান । তাজউদ্দিন আহমদের ছােট ভাই। আইনজীবী। বর্তমান সংসদের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য। সাবেক প্রতি মন্ত্রী। ১৫, ১৬, ৪৩, ‘ ৪৮, ৪৯, ৫৪, ৬৪, ৯২, ৯৫, ১১৬, ১২৭। আফতাবউদ্দিন ৪৮, ২২৯ আফাজউদ্দিন মিয়া ১৮৫ আফসারউদ্দিন মৌলভী ৫৯
আবিদ বেপারি ৮০ আবুল হায়াত চৌধুরী ৪৭, ২৪৬ আবু সিদ্দিক ৩০ আবুল হুসেন ৫৮, ৫৯, ৬০, ৭০, ৭৩, ৯০, ১০৬, ১৫১, ১৫৮, ১৬৭, ১৬৮, ১৭৩ আব্দুস সালাম। ১৯১০-১৯৭৭। জন্ম ঃ ছাগলনাইয়া, ফেনী। সাংবাদিক। বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকার দীর্ঘকালীন সম্পাদক। ২০৪, ২০৯,২১০, ২১২, ২১৩, ২১৫, ২৩, ২৪৬ আম্মুল খান। দরদরিয়া গ্রামে বাড়ি । তাজউদ্দিন আহমদের প্রতিবেশি। ৯, ১১, ১২, ১৬, ৩১, ৪২, ৪৪, ৪৮, ৪৯, ৬২, ৬৪, ৬৬, ৬৮, ৭৮, ৭৯, ৮৩, ৯২, ৯৪, ৯৫, ১০১,১১৩, ১১৪, ১১৫, ১১৬, ১২৪, ১২৭, ১৪৭, ১৪৯, ১৭০, ১৭৬, ১৮২, ১৮৩, ১৮৬, ১৮৭, ১৯০, ১৯১, ১৯৯, ২০৭, ২০৮, ২১৬, ২৩৭, ২৩৮, ২৪৭, ২৪৮, ২৫৪, ২৫৫। আব্দুল মােড়ল/ আৰু মােড়ল ১১, ১৩, ১৭, ৩০, ৩২, ৯২, ১০১, ১১৩, ১১৬, ১১৮, ১৮৩, ২০৭, ২৩৮, ২৫৫ আব্দুল আউয়াল ১৩, ৭৭, ১২৭, ১৪৪ আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। ১৮৮৯-১৯৬৪ জন্ম ঃ হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ। রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। পাকিস্তান আমলে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ২১০ আল্লাহ, হাজি ৬৬ আব্দুল আলিফ ফকির ২১৩ আব্দুল হাকিম ভাই ১৪, ২৬ আব্দুল হাই (সৈয়দপুর) ১৪, ২০, ৮৩, ৯৬, ১১৩, ১১৪, ১৮৫ আব্দুল হাই, এম, এল, এ. গণ-পরিষদ সদস্য। ২১১ আব্দুল হামিদ ২০, ৬৫ আব্দুল হাকিম বিক্রমপুরী । ১৯৩৭ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত বঙ্গীয় ও পূর্ব-পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। ১৯৬৩ সালে জাতীয় পরিষদের সদস্য। ১০২, ১০৩, ১১৩, ২৪৯। আব্দুল মতিন মীর ২৪ আব্দুল আজিজ সরকার ১৭৫, ২৪৯ আব্দুল আজিজ ৩১, ৬৫, ১৭৫, ১৮৫ আব্দুল হালিম খান ৪৫, ৪৬। আব্দুল গফুর ৫৯, ১১৪, ১২৭ আব্দুল গণি সরকার ৯০ আব্দুল মজিদ মাস্টার ৭২ আব্দুল হাকিম মামা। আব্দুল হাকিম মােল্লা। সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। তাজউদ্দিন। আহমদের মামা। ৪২, ৫৩ আব্দুল হামিদ মােত্রা ২৪৯ আশরাফ ২৩১, ২৪৫ আশরাফ আলি মৌলভী ১৩, ১৪, ৬২
আত ৪৩, ৪৫, ৮৯, ৯০, ১২৭, ১৫১, ১৫২, ১৫৭, ১৫৮, ১৬৩, ১৬৬, ১৭৮, ২৩৮, ২৪১
আব্দুর রউফ মাস্টার ৪৩
আব্বাস আলি মাৰি ৩১
আব্বাস শিকদার ২৩০, ২৫৪
আব্বাস ১১৫, ১২৪, ১৪৭, ১৬৮ আব্বাস বেপারি ১৬৮ আমসু ১২৪, ১২৬ আমিরউদ্দিন ৩২, ১৪৬ আমির ৮৫ আখির বাপ ২৩৭ আমিহ ২৩৪ আর, আহমদ ১৪৯, ১৫৯, ১৭১ আর, আহমদ, ড, ১৭৩ আর, আমিন ১৩১, ১৪৩, ১৬৯ আর, বহমান ২১৪, ২২০ আরফান আলি মােড়ল ১৮৫, ১৮৯, ২১৪, ২১৭ আরশাদ ১২৮, ২০০ আরিফ ৪৪, ৪৯, ১১৮ আলাউদ্দিন ১৭৫ আলি আহমেদ ২২৯ আলম ২৭, ১২৩ আলি কবির ১৬২ আলি হুসেন ১৫৬ আলিমউদ্দিন ৪৩, ৯৭, ৯৯, ১০০, ১০৩ আলি মােল্লা ৬২ আসকর ৫৫, ১০১ আসগর ৪৩, ১১২, ১২৩, ১৮৫, ২৩১ আসলাম ২৪২ আসমত মােল্লা ২৩৮ আসমত ৬২, ৬৬, ১২৬, ২১১, ২১৩, ২১৪, ২৩১ আসর আলি মাস্টার ৮৩ আসাদুজ্জামান ৩০, ৩১, ৭১ আসির আহমেদ ২০২ আসিরউদ্দিন (ফরেষ্টার) ৭৯, ১২০, ২০৮, ২১৬, ২২৭, ২৩০
আসিরুদ্দিন মােল্লা ৮০ আহমদ ১৫, ১৬, ১৭, ৪৮, ৫৯, ৬১, ৬২, ৬৬, ১০১, ১০২, ১১৫, ১২৫, ১২৭, ১৩৩, ১৬৬, ১৬৭, ১৭৭, ১৮২, ১৮৬, ১৯০, ১৯৬, ২৩৭ আহমদউল্লাহ ২০৩। আহারুদ্দিন ১৩, ২০৮ আহসানউদ্দিন ১৫৮ আহসানউল্লাহ ৮৮, ১৮৭, ১৮৮, ২১০ আহমেদ আলি ১৯৬ আহমেদ মােড়ল ১৩৬ আহমেদ আলি মাস্টার। কাপাসিয়া থানার বারিষাব ইউনিয়নে বাড়ি । গােসিঙ্গা হাইস্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন। তাজউদ্দিন আহমদদের বাড়িতে থাকতেন। ১১৫, ১২৯, ১৩০, ১৩২, ১৩৩, ১৩৮, ১৪১, ১৪৪, ১৪৯, ১৫২, ১৬৪, ১৬৯, ১৭১, ১৭৬,১৭৭, ১৮১, ১৮৪, ১৮৫, ১৮৬, ১৮৭, ১৮, ২০৫, ২১৪, ২২৬, ২৩০, ২৩৬, ২৩৮, ২৪৫ আয়েত আলি শেখ ৯, ১১, ২৪, ১১৫, ১৪৯ আয়েশ আলি ১৫, ৮০ আয়নুদ্দিন ৪১ আয়ার ১৬৪ আড়ালের মাস্টার ২১
ওবায়দুল্লাহ ১৯০, ২১১ ওমেদ আলি ১২১ ওসমান গণি, ড. । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ৫৮,২২০ ওসমান ২০০, ২০২, ২৩১ ওয়াদুদ ৮৮, ১২১, ১৫৪, ১৮২, ২০৬, ২১৫, ২১৮, ২২০, ২২৯, ২৩০ ওয়াহিদুজ্জামান। পরে সরকারি চাকুরে। ১৬৪, ২৩১ ওয়ারেস আলি। দরদরিয়া গ্রামে বাড়ি। সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। পরে গ্রামের মাতাব্বর ছিলেন। ১০, ১৩, ২০, ৪৩, ৪৪, ৪৮, ৪৯, ৫৪, ৬২, ৬৪, ৬৬, ৬৮, ৭৮, ৭৯, ৮৫, ৯৪, ১২৮, ১২৯, ১৫১, ১৬৫, ১৮৭, ১৯০, ১৯১, ১৯২, ২০০, ২০৫, ২১৪, ২২২, ২২৩, ২২৪, ২২৭, ২২৯, ২৩১, ২৩২, ২৩৪, ২৩৫, ২৩৬, ২৩৭, ২৫৪ ওয়াসিরউদ্দিন ৩৬, ৩৭, ৪৪, ৮৭, ১১৫, ১২৫,১২৮, ১২৯, ১৩৯, ১৪৮, ১৫১, ১৫৫, ১৭০, ২২৩, ২৪২, ২৫৪, ২৫৫, ২৫৬ ওয়াই, এস, আহমদ ৪০ ওয়াজিউল্লাহ ৫৪, ১৫৪ ওয়ালিউল্লাহ ১৬৯ ওয়াসিমুদ্দিন ৭০ ওয়াহিদ ১৭০, ১৭৭
ওয়াহাব বেপারি ১৮৫
একরাম ১২ এ, ইসমাইল ১৫১, ১৬৮, ১৭২, ১৮৫, ১৯৩, ২২৬ এ, ইসলাম ২২৩ এ. এ. পালােয়ান ১২১ এ. খায়ের ১১২ এ, এইচ, চৌধুরী ৪৩, ৪৮, ৪৯, ৫৫, ৫৯, ৬০, ৭২, ৭৩, ১২৯, ১৩০, ১৫৮, ১৫৯, ১৬৬, ১৭২, ১৮৬, ২৪৩ এ. এফ. রহমান ২৩২ এ. রশিদ, ডাঃ ২১৯। এ. ওয়াদুদ পাটোয়ারী ৩৯ এ. কে. এম. মাহমুদ ৭৭, ১১০, ১৬৩, ১৬৪ এ. কাদির ভূঁইয়া ২৫, ২৪৩ এ. খালেক ২৬ এ, বার, মওলানা ২২৯ এ, জব্বার ২৭, ৪৯, ১১৫, ১১৭, ১২৯, ১৭০, ২০০, ২০৩, ২১৪, ২২৭, ২২৮, ২৩১, ২৩৫, ২৩৭, ২৪১, ২৪২, ২৫৪ এ, মজিদ মওলানা ৭৭, ৭৮ এ. হামিদ ৪৭, ৭১, ৯৬, ১০৬, ১২৩, ১৫১, এ. হাকিম মিয়া ২১০ এ. হাকিম ১২৮, ১৩০, ১৩১, ১৪৮, ১৫৭, ১৬৫, ১৮১, ১৮২, ১৮৪, ২০৩, ২১৮, ২২৮, ২৩৮, ২৫৪ এইচ. রহমান ২১৩, ২১৬ এনায়েত চৌধুরী ২০৫ এম, এম, ভট্টাচার্য ২৪ এম, এ, লতিফ চৌধুরী ১৬৩ এম, এম, আলি ২১৮ এম. জেড. জাহেদি ১৬২ এম, জি, হাফিজ ২২০ এস. আলম ১৩১, ১৫৬, ১৭০, ২৩৩ এস, ইসমাইল ১৫১, ১৬৮, ১৭২, ১৮২, ১৮৫, ১৯৩, ২২৬ এস, এন, রায়, ৬, ২৮ এস.এ. রব ১২১ এস, এ, রহমান ১৬৩, ১৪২ এস, চৌধুরী ১৮৯
এস, লােহা। সামসুজ্জোহা। নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক কর্মী। খান সাহেব ওসমান আলির। পুত্র। ২২০ এস, বকস ৫৭ এবমান, অধ্যাপক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ২৩৩ এরশাদ মিয়া ৮৭
ইউ. কে. রায়, ডাঃ ২২৬ মি, ইউনুস ১৫৫, ১৬৩, ১৬৭, ১৭২, ১৮৩, ১৮৬, ১৮৭, ২০৮, ২২৭, ২৪১, ২৪৬, ২৪৯ ইউসুফ আলি মােল্লা ১৬৫
জত আলি ১০৯ ইদ্রিস আলি ১৫, ৩৬, ১২১, ২১৩, ২১৫, ২২০, ২৫৫ ইনু দফাদার ২৪১ ইরফান আলি মাষ্টার ১৯৯ ইরমান আলি ৮৭
সৰ আলি মামা । ইসৰ আলি মােল্লা। ব্যবসায়ী। তাজউদ্দিন আহমদের মামা, ৫৩ ৭৯, ১১৪, ১২৮, ১৭২ ইয়াসিন ৩০, ৭৯, ৮৫, ১১৭ ইয়াসিন সরকার ২৪২ ইয়াদ আলি, ডাক্তার ৬৭, ৭১
উমেশ বর্মন ৪৭, ১৫৭, ২২৬
কবির উদ্দিন। কফিলউদ্দিন চৌধুরী ও কফিলউদ্দিন চৌধুরী। ১৮৯৯-১৯৭২। জন্মঃ মজিদপুর, দয়াহাট, | বিক্রমপুর। রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। উদার ও অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ৰীয় ব্যবস্থার প্রতি তার বিশ্বাস ছিল গভীর। গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতা ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী তার পুত্র। ৬৯, ৭০, ৭১, ১৩৮, ১৪০, ১৮২, ১৯৫, ১৯২, ২০৯, ২২০, ২৪১, ২৫১ কফিলউদ্দিন ঃ কাপাসিয়া থানায় বাড়ি । ৫৩, ৮৮, ৮৯, ১৫১, ১৬৩ কফিলউদ্দিন মাহমুদ। কফিলউদ্দিন মাহমুদ। পদস্থ সরকারী চাকুরে। বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর কয়েক বছর আগে অবসর গ্রহণ। বর্তমানে অবসর জীবন যাপন । ১৯২ করম আলি ১০, ২৪, ২১৬ করিম, ডাঃ / করিম । ডাঃ এস, এ, করিম। সেই সময় মিটফোর্ড হাসপাতালের হাউস, সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমে মুসলিম লীগের কর্মী। পরে ন্যাপের সক্রিয় নেতা। নবাবপুরের বিখ্যাত কিশাের মেডিকেল হলের’ সত্বাধিকারী । ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন। ২৩, ৩০,৩২,
৩৯, ৪৭, ৪৮, ৭২, ৮৫, ৮৯, ৯৫, ৯৬, ৯৭, ৯৯, ১০০, ১০৩, ১০৬, ১০৭, ১০৮, ১১২, ১২১, ১২২, ১২৮, ১৩৪, ১৩৭, ১৩৯, ১৪০, ১৪৪, ১৪৯, ১৫০, ১৫১, ১৫৩, ১৫৪, ১৫৫, ১৫৬, ১৬০, ১৬২, ১৬৩, ১৬৫, ১৬৭, ১৭০, ১৭২, ১৭৩, ১৭৬, ১৮৩, ১৮৪, ১৮৫, ১৮৬, ১৯১, ১৯২, ১৯৪, ১৯৫, ২০০, ২০৪, ২০৫, ২০৭, ২১৩, ২১৬, ২১৮, ২৩৪, ২৪২, ২৪৩, ২৪৬, ২৪৭, ২৪৯, ২৫০, ২৫৩, ২৫৬ করিম! ৪৪, ১২৪ কলিমউদ্দিন ১৯৪ কাওর বাপ ২০, ৪৮, ১১৭, ২৪৩, ২৪৬, ২৪৭, ২৪৯, ২৫৩, ২৫৫ কাজী মােতাহার । কাজী মােতাহার হােসেন । ১৮৯৭-১৯৮৯। পৈতৃক নিবাস বাগমারা, পাংশা, রাজবাড়ি। সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পৃষ্ঠপােষক। এবং বাঙ্গালি জাতিসত্ত্বা বিকাশের বলিষ্ঠ সমর্থক। স্বাধীনতার পর জাতীয় অধ্যাপক মর্যাদায় ভূষিত। ৭৭ কাজী আলতাফ ১৯৪ কাজিম উদ্দিন খলিফা ১৯৪ কাজি বশির ২৩২, ২৪৭ কাদরী ২৩৩। কাদের সরদার / সরদার সাহেব। কাদের সরদার। প্রথম পর্যায়ে মুসলিম লীগ সমর্থক। ৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের সমর্থনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং দাঙ্গা বিরােধী ভূমিকা পালন। লায়ন সিনেমার সত্ত্বাধিকারী। সাবেক সচিব, নাট্যকার এবং সমালােচক সাঈদ। আহমদের চাচা। ৬৯, ১৩১, ১৩৪, ১৩৭, ১৪৩, ১৮০ ১৯৫, ২১০ কাদের ১২৮ কাদির আলি ঃ ২৪৬ কামরুদ্দিনকামরুদ্দিন আহমদ কামরুদ্দিন আহমদ। ১৯১২-১৯৮২। জন্মঃ ষােলঘর, বিক্রমপুর, মুন্সিগঞ্জ। লেখক , রাজনীতি ও রাষ্ট্রদূত। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন আন্দোলনে নেপথ্যে ও প্রকাশ্যে দায়িত্ব পালন । বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন তাত্ত্বিক। তার রাজনীতি ও সমাজ সম্পর্কিত চিন্তাভাবনার বিশ্লেষণমূলক প্রশ্নগুলি বিশিষ্টতা অর্জন করেছিল। ২১, ২২, ২৩, ৩০, ৩৬, ৩৯, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬৯, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৮, ৮৫, ৮৯, ৯০, ৯৫, ৯৬, ৯৭, ১০০, ১০২, ১০৩, ১০৬, ১০৮, ১০৯, ১১১, ১১২, ১২১, ১২২, ১২৩, ১২৯, ১৩০, ১৩১, ১৩৪, ১৩৭, ১৩৮, ১৪০, ১৪১, ১৪২, ১৪৩, ১৪৪, ১৪৫, ১৪৬, ১৫০, ১৫৩, ১৫৪, ১৫৫, ১৫৬, ১৫৮, ১৫৯, ১৬৫, ১৬৬, ১৬৭, ১৬৮, ১৭২, ১৭৩, ১৭৫, ১৮০, ১৮১, ১৮২, ১৮৬, ১৮৮, ১৮৯, ১৯০, ১৯১, ১৯২, ১৯৩, ১৯৪, ১৯৫, ১৯৮, ১৯৯, ২০৪, ২০৫, ২০৬, ২০৭, ২০৮, ২০৯, ২১০, ২১১, ২১৭, ২১৮, ২২০, ২২২, ২২৩, ২২৬, ২২৭, ২২৮, ২২৯, ২৩০, ২৩১, ২৩২, ২৩৩, ২৩৪, ২৩৬, ২৩৮, ২৩৯, ২৪১, ২৪২, ২৪৬, ২৫০, ২৫১, ২৫৩. ২৫৬। কামাল ২৩৮, ২৪৪। কালু মােড়ল ৪ শ্রীপুর বাড়ি। ৫৪, ৬১, ৬৫, ৭১, ১৪৬, ১৭২, ১৭৫, ২০০, ২০২, ২৩৭, ২৫০, ২৫৪ কাশেম, অধ্যাপক / এ, কাশেম : প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম। ১৯২০-১৯৯১। জন।
270
ছেদন্দী, চট্টগ্রাম । ভাষা সৈনিক, শিক্ষাবিদ ও লেখক। ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর তমুদ্দন মজলিস নামে একটি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ। সমকালীন ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ও ইসলামি আদর্শ ও জীবন ব্যবস্থার উপর অনেক গ্রন্থের প্রণেতা। ২১০, ২১৫, ২৪২। কাশেম ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। ২৩৮ ফালায় বাপ ৮৩ কালু মিয়া ২৪২ কায়েদে আযম/কায়েদ-ই-আযমঃ কায়েদে আযম মােহাম্মদ আলি জিন্নাহ। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৪, ২৫১, ২৫৩ কিবরিয়া। পরিচয় জানা যায়নি। ৭৭, ১৬৬, ১৭৬ কোরবান আলি। ১৮ কুকু ১১৭ কুদরত আলি ৫৫, ২০৫, ২১৪, ২১৮, ২৩৬, ২৪৬, ২৫০, ২৫৬ কুদরতউল্লাহঃ ১০১ কিউ.আমান, অধ্যাপক ২৪২ কে. পি. ব্যানার্জি ১০৯ কে. জি. মাহবুব ৩৭ কে. ডি. মুস্তাফা। বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং কলাম লেখক। বর্তমানে দৈনিক মুক্তকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক। ১৬২
খন্দকার আৱ, হৰু ২৮ খলিলুর রহমান ১১০ খয়রাত হােসেন ২০৬, ২২৯, ২৪২ খাজা বেপারি ২৪২ খাজার বাপ ২৩৭। খালেক নেওয়াজ খান ৮৮ খালেক ফকির ১১৮ খালেক মাষ্টার ১৪৯ খায়ের মিয়া ১৭৭, ১৯২ খিজিরউদ্দিন ১৭৪ কীনােদ ১৫৮, ১৬৬
গফুর আলি ১১৫ গিয়াস চৌধুরী ১০, ১১ গিয়াস তাইসাহেব ৩৯, ৪০, ১১৩, ১৭৮, ১৮৭, ২০৩
গিয়াস উদ্দিন ৭৯, ১১৮, ১২১, ১৫১, ১৫৮, ১৭৫, ১৭৮, ২০৪, ২২২। গে-১১৭
চান মিয়া ১২, ১৬৯, ১৭০, ১৭১, ১৮৩, ২০০, ২২৪, ২৩৫। চেরাগ আলি মােড়ল ১৪, ১৬, ১৭, ৩০, ৭৮, ৭৯, ১২০, ২১৬
জওহরলাল নেহরু। ১৮৮৯-১৯৬৪। জন্ম ঃ এলাহাবাদ। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ১০৫ আবর আলি ১৩, ৭৯, ১২৫ জব্বার মিয়া ৩১, ৬৫, ১২৪, ১৪৭, ১৭২, ১৯২, ১৯৪, ২২২, ২২৯ অবার (ওভারসিয়ার) ৪৯ আবার মাষ্টার ১৭৫ জমির । জমিরউদ্দিন আহমদ। রাজনীতিক ও আইনজীবী। রাষ্ট্রদূত। ২৩৬ জলিল ও আব্দুল জলিল। পরে বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাবা সরকারী চাকুরে। তৎকালীন গবর্নর হাউসে (বর্তমান বঙ্গব) চাকুরীরত ছিলেন। রথখােলার স্টেপ-ইন বাড়িতে থাকতেন। ২৭, ৭৩, ১০০, ১০২, ১০৪, ১০৬, ১০৭, ১০৮, ১০৯, ১১২, ১২১, ১২২, ১৩৭, ১৩৮, ১৪০, ১৪১, ১৪৪, ১৫০, ১৫৩, ১৫৪, ১৬০, ১৬৩, ১৭৮, ১৯২, ২৪৭। জহির উদ্দিন। জহিরুদ্দীন। ১৯১৭-১৯৮০। জন্ম ঃ কলকাতা। পৈতৃক নিবাস হুগলি জেলার কুতুলপুর। রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। মুসলিম গার্ড বাহিনীর সালারে সুৰা । প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর কৌসুলি। আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য। কিন্তু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরােধিতা করে পাকিস্তানীদের সমর্থন প্রদান এবং ১৯৭৫ সালে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী খন্দকার মােশতাক কর্তৃক পাকিস্তানে রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রেরণ । ৯৯, ১২০, ১৩০, ১৬৩, ১৮১, ২৩৬, ২৪২, ২৫৩। জহিরুল হক ২০৯ জহর আলি ১৭ জহুরুল হক ৭৮ জহুর হােসেন চৌধুরী : জহুর হােসেন চৌধুরী : ১৯২২-১৯৮০। জন্ম চট্টগ্রাম, পৈতৃক নিবাস : রামনগর, ফেনী। সাংবাদিক ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় কিছুদিন চাকুরি করার পর ১৯৫১ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় যােগদান। ১৯৭১ সালে দৈনিক সংবাদ ত্যাগ। স্বাধীনতার পর দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় দরবারে জহুর’ নামে নিয়মিত কলাম লিখে বিপুল খ্যাতি লাভ। পাকিস্তান সরকারের গণবিরােধী চক্রান্ত ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন। ২৪২, ২৪৬ জয়নাল ২৩৯ জান মাহমুদ মােল্লা ৫৩ জাবেদা খাতুন ১৪৩ জাৰু ৯৩, ২৩৭, ২৫৫
জাফর আলি মােড়ল ১১৪, ১১৭, ১২০, ১২৭, ১৪৭, ১৪৯, ১৮৫ জাফর আলি ১৬ জাফর মুনশী ৮৯ জামাত আলি ৪৪, ১২৫, ১৯০, ২৩০ জামাল উদ্দিন ৫৮, ৬৫, ১২৪ জামাল মাষ্টার ৮৩। জালাল/জালাল উদ্দিন ফকির। কাপাসিয়া থানার তরগাঁও বাড়ি। তাজউদ্দিন আহমদের বড় বােনের দেবর এবং তার সহপাঠি। সরকারী চাকুরে। বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন। ২২, ২৩, ২৫, ২৬, ২৭, ৩২, ৩৩, ৩৫, ৩৭, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪৩, ৪৬, ৪৭, ৬০, ৭৩, ৯১, ১০৭, ১১০, ১২৮, ১৪০, ১৪১, ১৪৫, ১৪৬, ১৫১, ১৫৬, ১৫৭, ১৫৮, ১৬৪, ১৬৫, ১৬৬, ১৭০, ১৭২, ১৭৩, ১৭৪,১৭৫, ১৭৬, ১৭৭, ১৭৯, ১৮০, ১৮১, ১৮২, ১৮৩, ১৮৪, ১৮৫, ১৮৬, ১৮৭, ১৮৯, ১৯০, ১৯২, ১৯৩, ১৯৪, ১৯৫, ২০০, ২০২, ২০৩, ২০৪, ২০৭, ২০৮, ২১৪, ২১৫, ২১৮, ২২২, ২২৬, ২২৮, ২৩০, ২৩৫, ২৩৬, ২৩৮,২৩৯, ২৪১, ২৪৩, ২৪৭, ২৪৮, ২৪৯, ২৫০, ২৫৫। জাহার বাপ ২০৮ আহাদ আলি পন্ডিত ৩৬, ১৮৪, ২০৫ बाहना २ জি, এম, আনওয়ার ৩৯, ১৮৬ জি, এম, বার্পালাই ১৬৫
টুকা ১৩, ১৪৭, ১৪৯, ১৫৭, ১৬৫,১৭১, ১৭২, ১৮২, ১৮৩, ১৯২ টুকু ১৫, ১৬, ৫৪, ১২৭, ১৭৭, ২৪৬, । টিটু মিয়া ১৫৫, ১৮৬, ১৮৮। টি. হােসেন ১৬৮
ঠান্ডা মিয়া ২১৬
ডি, বর্মণ ১৭২
তফাজল। তাজউদ্দিন আহমদের বােনের ছেলে। ৯, ১১, ৪৪, ৭২, ১২৫ তফাজ্জলের বাবা। তাজউদ্দিন আহমদের ভগ্নিপতি। ৮৪, ১০১, ১২৫, ১৭৮ তমিজউদ্দিন ৯৪ তালিৰ আলি ১৪৭, ১৮১, ২২২৭, ২২৮, ২৪৯ তাহির ২৪২ তাহের আলি ১৩, ১২৫ তুফানিয়া ৭৮, ১৪৭, ১৭২, ২৩৭
তােয়াহা । মােহাম্মদ তােয়াহা ১৯২২-১৯৮৭। জনঃ কুশাখালি, লক্ষ্মীপুর । নােয়াখালি। রাজনীতিবিদ। নীতিনিষ্ট, ত্যাগী, সংগ্রামী ও সাম্রাজ্যবাদ বিরােধী, সমাজতন্ত্রবাদী রাজনীতিক। ভাষা আন্দোলনে তার অবদান স্মরণীয়। ২৩, ২৬, ২৮, ৩০, ৪৭, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৭০, ৭১, ৮৯, ৯৫, ৯৬, ৯৯, ১০০, ১০২, ১০৩, ১০৪, ১০৬, ১০৭, ১০৮, ১০৯, ১১০, ১১১, ১১২, ১২২, ১৩০, ১৩৩, ১৪৫, ১৫০, ১৫৩, ১৫৪, ১৫৬, ১৬৩, ১৬৯, ১৭২, ১৭৩, ১৭৬, ১৭৮, ১৮০, ১৮৩, ১৮৫, ১৯১, ১৯২, ১৯৪, ২০৩, ২০৪, ২০৬, ২০৭, ২১২, ২১৩, ২১৫, ২১৬, ২২৯, ২৩১, ২৩৩, ২৩৪, ২৩৬, ২৪৬, ২৪৭, ২৫০, ২৫৩, ২৫৬
দ । দলিলউদ্দিন আহমদ খান। জন্ম : ১৫ নভেম্বর ১৯৪০। তাজউদ্দিন আহমদের ভাইপাে । অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা (প্রকৌশলী)। ১৫, ১৬, ৪৩, ৪৮, ৪৯, ৫৪, ৬৪, ৯২, ১২৭। मरिकन रेमनाथ ७२ দী ২৭, ৭৯, ১০৯, ১১৩, ১১৪, ১১৫, ১২৬ দাস, ড. ৩০ দুলু ৩৯, ৪০, ৪৫, ৬৪ দিনত আলি ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৫২, ১৬৪, ১৮৬, ২০০ দেবে যাৰু ৮২
ধনাই বেপারি ৬৪
নগেন ১৩৩ নবাব আলি ২৩৮ নৰা ১২ নবুর আলি চৌকিদার ১২৭ নসর ২৬ নবায় পালান ৮০, ২৩৭, ২৪২, ২৪৩ নূরুজামান ১৫৫ নূরুল হক ২০০ নূরুল হক, অধ্যাপক ঃ ৭১, ১৬৫ নূরুল ইসলাম ১৮০, ২২০ নূরুল ইসলাম, মওলানা ২১৮ নাঈমউদ্দিন। নাঈমউদ্দিন আহমদ। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের নেতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পরে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। ১১৮,১৭৬ নাঈম মিয়া ১১৮ নাজমূল কৱিষ ৭৭, ১৫৩
মােড়ল ১০১, ১১৩, ১২৭
নান্না মিয়া ১২১, ১৩০, ২০৫, ২১৭, ২২৬ নাদু ৭১, ১৮৫ নাৰু ২১৬ নাসির ৮৪ নাস মিয়া ৯০ নাসিরুদ্দিন ৮৬, ২৪৭ নায়েব আলি সরকার ১৬০ নােভাক, ডাঃ ১৩০ নিয়ামত উল্লাহ ৮৪, ৯৫ নিয়ামত সরকার ১৪৭, ১৪৮, ১৬০, ১৬১, ১৮৭, ১৯৮, ২২২, ২৩৭ নিয়ামুল সরকার ২৩২ নােমানি সাহেব (হযরত কাইয়ুম) : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এফ, এইচ. এম. হলের হাউজ টিউটর দিলেন। ৩৬, ৩৭, ৩৯, ১২৯ নােয়ব আলি ৭০
পর্কিতের বাল ৪৬ পিরু মিয়া ১০৮, ১২১
ফকির আব্দুল মান্নান/ফকির এ মান্নান। কাপাসিয়ায় বাড়ি । তৎকালীন প্রাদেশিক মুসলিম। লীগের সাধারণ সম্পাদক। গণ-পরিষদ সদস্য। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তাজউদ্দিন আহমদের কাছে পরাজিত হন। ৪৭, ৫৯, ৬২, ৬৫, ২০৫, ২৩৬। ফজলুল হক/এ, কে, ফজলুল হক। এ. কে. ফজলুল হক। পৈতৃক নিবাস চাখার, বরিশাল। রানীতিবিদ ও আইনজীবী। শেরে বাংলা ও হক সাহেব সমধিক পরিচিত। অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী। পূর্ব-পাকিস্তানের এ্যাডভােকেট জেনারেল, স্বল্পকালনি মুখ্যমন্ত্রী, পরে গভর্নর। বাংলার দরিদ্র কৃষক সাধারণকে মহাজনী শােষণ থেকে মুক্ত করার ব্যাপারে তার অবদান অবিস্মরণীয়। ১৫২, ২২৪। ফজলুলু। হাজি বেপারির ছেলে। আইনজীবী। ১৪, ৪১, ৪৬, ৫৫, ৫৯, ৬০, ৬৯, ৭৩, ২০৪, ২১৯, ২২৪ ফজলুর রহমান/এফ. রহমান ২২, ৩০ ফজলুর রহমান ১৭৩ ফটিক ভাইসাহেব ৪৬, ১৬০, ২০৮ ফরিদ ২৪৪ ফারুখ ১৬২ ফালু ১৩, ২০, ৪০, ২২৮, ২২৯, ২৫৫ ফারহি মিয়া ১৯৫ ফিরােজ ১২৮
২৭৫
বকশ মিয়া ১০২, ১০৩ বলে এ তােমিক ৮০ বকর আলি বেপারি ১৩ বরকত ১৩৯, ১৫৩, ১৫৪, ১৮৮ বক ১৩ বড়ু বেপারি ২২৬ বদিউর ৫৯, ৬০, ৭১, ১২১ বদিউদ্দিন ১২২ বশিরউদ্দিন ১৮৮ বল্পত ভাই প্যাটেল। স্বাধীন ভারতের নেহেরুর মন্ত্রিসভায় প্রভাবশালী মন্ত্রী। জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে বৃটিশ বিরােধী আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা পালন । ২৪৮ বাকী ১২২, ১৬৯, ১৯২, ২৩৩ বাবর আলি ৫৮, ৬০, ১৬৪, ১৮০ বাবু ৮৯, ১১৩, ১১৪, ১১৫ বারেক মােল্লা ৪৩ বাহাউদ্দিন। বাহাউদ্দিন চৌধুরী। পরে সাংবাদিক ও সরকারী চাকুরে। বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন। ৮৬, ১৪৪, ১৬২ বাহার । হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী। ১৯০৬-১৯৬৬। রাজনীতিবিদ ও লেখক। খ্যাতনামা বাঙ্গালি । রাজনীতি, সাংবাদিকতা, খেলাধুলা ও সাহিত্য সর্বত্রই কৃতিত্বের পরিচয় প্রদান। ১৬৮ বুলবুলঃ বদরুনেছা খানম। তাজউদ্দিন আহমদের ছােট বােন। ২৮, ১৭১, ১৮৩, ২০০ বুধাই বেপারি ৬৫, ২৩৮, ২৩৯ বিনােদ বিহারী চৌধুরী/বি. বি. চৌধুরী ৩৬, ১১০, ১৩৬, ১৫১, ১৬০, ১৬৯, ২২৩, ২৪১, ২৪২, ২৪৩, ২০৬ বি, করিম, ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ৯৯, ১৭৩, ১৯১ বি, জামান ১৮২ বি, আহমদ ৩৬, ১৬৪ বি. এম. ইলিয়াস। ১৯৮৭। জন্ম ঃ পূর্ব বগুড়ার চন্দনাইশায়। ১৯৪১ সালের নির্বাচনে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য। পরে প্রাদেশিক আইন পরিষদের পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি। ঢাকার সিমসন রােডে তার বাসা ছিল। কথাসাহিত্যিক প্রয়াত আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের বাবা। ৯৯, ১০০, ১০২ বেলায়েত আলি মাস্টার ৪৬, ৮৯, ১৬৩ বােস ১১২ বােরহান ৬৫, ৬৭
ভাসানী ও মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। ১৮৮০-১৯৭৬। রাজনীতিবিদ। দেশের
নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের জন্য সংগ্রাম পরিচালনা। বাঙ্গালি জাতিসত্ত্বা বিকাশে তার অবদান স্মরণীয়। দেশের মানুষের কাছে তিনি মজলুম জননেতা হিসেবে পরিচিত। ৯৪, ২৫১, ২৫৩।
মঈনুদ্দিন ১৭৫ মঈনুদ্দীন, কবি । খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন। ১৯০১-১৯৮১। জন্ম ঃ চারিগ্রাম, মানিকগঞ্জ। সাহিত্যিক। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরােধিতা করে বিবৃতি প্রদান। ৯০ মওলানা ওয়ারেস আলি। কাপাসিয়ার তরগাঁও ইউনিয়নে বাড়ি। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট । প্রথমে মুসলিম লীগ সমর্থক। পরে আওয়ামী লীগের সংগে যুক্ত হন। বিশিষ্ট আলেম। ২০০, ২৩৫ মজিদ মােড়ল ২১৬ মজিরউদ্দিন ৮৫ মজিদ ১৫, ২০, ৩৩, ৬৪, ৭৯, ৮৪, ১২৯, ২০৮, ২৩১ মজনু ১৪৮ মতি ১০৯ মতিন ২২৬ মদন মিয়া ১৫৫ মনিরউদ্দিন ৬২, ১১৩, ১৪৪, ১৭৫, ২২১, ২৫৪ মনউদ্দিন খলিফা ৪০ মনসুর আলি ভিলপুরি ১০১ মরুল আহসান ১৩১ মফিজউদ্দিন। মফিজউদ্দিন আহমদ খান। তাজউদ্দিন আহমদের ছােট ভাই। ১৯৭৭ সালে মারা গেছেন । ১২, ১৩, ১৪, ১৭, ২৭, ২৮, ৩০, ৩৩, ৩৯, ৪২, ৪৪, ৬৪, ৬৯, ৭৯, ৯১, ৯২, ১০১, ১০২, ১২৬, ১২৭, ১৩০, ১৩২, ১৩৪, ১৪৫, ১৪৬, ১৫০, ১৫১, ১৬৫, ১৮২, ১৮৩, ১৮৪, ১৯১, ১৯৩, ১৯৫, ২০২, ২০৫, ২১০, ২১৪, ২২৮, ২২৯, ২৩১, ২৪৩, ২৪৪। মফিজউদ্দিন মুনশী ১১৫, ১৪৯, ১৫৭, ১৫৯, ১৬৫, ১৬৭, ১৭১, ১৮০ মফিজউদ্দিন মাষ্টার। কাপাসিয়া থানার উত্তর খামেরে বাড়ি । সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট। কাপাসিয়া এলাকার অনেক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। আমৃত্যু কাপাসিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ১৪, ২১, ৪৫, ৮০। মফিজউদ্দিন আহমেদ বি.এ. ১৮৫ মফিজুল ইসলাম ২১৯। মফিজ (উত্তর খামেরে) ৬৫, ১০৩ মমতাজউদ্দিন মােতায়/মমতাজ মােক্তার। মুসলিম লীগ সমর্থক। পরে কৃষক সমিতি করতেন। গাজিপুরের কাপাসিয়া থানার সিংহশ্রী বাড়ি । ৪৪, ৫৯, ৬২, ৬৭, ৭১, ৮৪, ১৫৬, ১৬৪, ১৭৫, ১৮১, ১৯৪, ১৯৯, ২০০, ২০২, ২০৩, ২০৪, ২০৫, ২০৭, ২১০, ২১১, ২১৩, ২১৪, ২১৫, ২১৬, ২১৭, ২১৮, ২১৯, ২২২, ২২৪, ২২৬, ২২৭, ২২৯, ২৩০, ২৩৪, ২৩৫, ২৪৬, ২৪৯। মরিয়ম। মরিয়ম খানম। তাজউদ্দিন আহমদের বােন। ৬৫ ময়না মুনশী । ৮৪
মহিউদ্দিন ১২২, ২১২, ২১৫, ২২০ মহর আলি ১৬ মহি ৭২ মাইনসিফ ১৯১ মান্নান খলিফা। কাপাসিয়ায় বাড়ি, রাজনৈতিক কর্মী ও ব্যবসায়ী। ৪৭ মান্নান, ডাঃ ৬১, ১৬৬, ১৯১, ১৯২, ২৩৬, ২৫০ মান্নাফ খান ১০, ১১, ২০, ১০১, ১২৮, ২৩৭, ২০৫ মাজহার আলি ৫৭, ৫৮, ৯৯, ১০০০ মানিক মিয়া । তফাজ্জল হােসেন মানিক মিয়া। ১৯১১-১৯৬৯। জন্ম : ডান্ডারিয়া, পিরােজপুর । সাংবাদিক ও সম্পাদক। মানিক মিয়া নামে সমধিক পরিচিত। হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক দর্শনের অনুসারী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সহকর্মী ও বন্ধু। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ৬০, ১০৪, ১৪৪, ২০৪, ২০৬, ২০৮, ২১২, ২১৫, ২১৬, ২২০, ২২৪, ২৩৩, ২৫৩। মানিক ৫৮ মালু, ডাঃ ১৫৫ মান্নান ৬৭, ১০৮, ১৮৬ মাহৰুৰ ৮৮, ১২১ মাহবুব জামাল জাহেদি ২১৮ মুকিত ৪০ মুজাফফর আহমদ চৌধুরী। ১৯২৩-১৯৭৮। জন্ম ও বীরামিহপুর, নােয়াখালি । শিক্ষাবিদ ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের তাত্ত্বিক। প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। স্বাধীনতা উত্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য। কিন্তু খার মােশতাকের মন্ত্রিসভায় শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ। ২২৯ মুজিবুর । শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু। ১৯২০-১৯৭৫। জন্ম ঃ টুঙ্গি পাড়া, গােপালগঞ্জ। পূর্ব-বাংলার স্বাধীকার আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা। বাঙ্গালি জাতিসত্ত্বা বিকাশের আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা পালন করায় এবং তার ভিত্তিতে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি । ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে খন্দকার মােশতাকের ষড়যন্ত্র সামরিক বাহিনীর একাংশের হাতে সপরিবারে নিহত । ৭১। মুর্তভা ২৩১, ২৩৮ মুনিম ১৫৯ মুর্শিদ মিয়া ১২৪, ১২৮ মুস্তাফা মুস্তাফা নূরুল ইসলাম ও মুস্তাফা নূরউল ইসলাম জন্ম ঃ ১ মে ১৯২৭, বগুড়া। শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী । শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক বহু প্রবন্ধের রচয়িতা। সাহিত্য পত্রিকা সুন্দরম’-এর সম্পাদক। ২১, ১৩১, ১৪২, ১৬২ মুসা ১৪৩ মেউরার বাবা ১৫৮
মেজবাহউদ্দিন ৩৩, ৩৭ মােক্তার সাহেব ৬২, ৬৭ মােখলেসুর রহমান ১৬৬, ১৮৭ মােতাহার ডাক্তার ৭২, ২৩৫ মােমিন (বাঘিয়া) ১৫, ১৮, ৪৩, ৮৯, ১১৩ মােমিনা ৭৯। মােস্তাক। খন্দকার মােশতাক আহমদ। ১৯৯৯-১৯৯৬। জন্ম ও দশপাড়া, দাউদকান্দি, কুমিল্লা। রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী। পরে অবৈধভাবে স্বল্পসময়ের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদ দখল। তার নির্দেশে জেলখানায় জাতীয় চার নেতা তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলি ও কামরুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেল হত্যা ও অন্যান্য অভিযােগে পরবর্তীতে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। হয়ে নিঃসঙ্গ অবস্থায় ঢাকার নিজ বাড়িতে বসবাস এবং মৃত্যু। ১৯২, ১৯৩, ২১৬ মােত্তফা (পােষ্ট মাষ্টার) ৪২ মােসলেম ফকির ১০৯। মােসলেমউদ্দিন ৪৫, ১৬৪ মােশাররফ ২৪, ১৮০ মােহারির ১৮৬ মােহউদ্দিন মােলভী ১১৬ মােহাম্মদ আলি মিয়া ২২৭, ২৩৮, ২৪৬, ২৪৭ মােহাম্মদ ২৭, ১১৭, ১১৮, ১২৪, ১২৬, ১৫৫ মােহসিন ৩১, ৩৩, ৫৭, ৯৬, ১৫১ মােহাম্মদ ইসমাইল ১৩০, ১৪৯, ১৩৪ মীর মােহাম্মদ ৮০ মীয় লায়েক আলি ৯৭ মীর্জা আমিনুল ইসলাম ৮৬
লঙ্কর বেপারি ৮০, ৮৫, ১১৫ ললিত বাৰু ৫৩ লালু ১৫, ১৬ লুদাই ১২৭ লুল হক ৭১ লিউ, অধ্যাপক ২৩, ২৪ লিয়াকত আলী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী । আততায়ীর হাতে নিহত । ৯৭, ১০৫, ১০৭, ১২৩, ২৫১, ২৫৩, ২৫৪ লিলি খান ও লিলি খান। ১৯৪৭-৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৪২, ১৪৩,
শওকত/শওকত আলি। শওকত আলি খান। ব্যারিস্টার। রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। ১৫, ৬, ১৩০, ১৯৫ শওকত হােসেন/এস, হােসেন : সেই সময় সার্বক্ষণিক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২১৩, ২১৫, ২২০, ২২৮, ২৪২ শফিউদ্দিন ৫৭, ১১৮, ১২৭, ১৭২, ১৯৫, ২১৫, ২২৬, ২৩৪, ২৩৫ শফিউদ্দিন মুনশী ১৮০ শরাফত ৬৪, ৭৯, ১৭৭ শহীদুল্লাহ ডঃ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। ১৮৮৫-১৯৬৯। জ্ঞান তাপস ও ভাষা বিজ্ঞানী। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দেশের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে না বাংলা হবে, এ বিতর্ক সৃষ্টি হলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে তিনি জোরালাে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তার এ ভূমিকার ফলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ প্রশস্থ হয়। ৭৭, ১৬৫ শহীদুল্লাহ ঃ শহীদুল্লাহ কায়সার। ১৯২৭-১৯৭১। জন্মঃ মজপুর, ফেনী। সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ভাষা আন্দোলনের বিশিষ্ট কর্মী। এদেশের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন। ৭১, ৮৬ শহীদ মােকার/ সহিদ মােক্তার : আব্দুস শহীদ মােক্তার। গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার বাজার হাওলা গ্রামে বাড়ি । সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন এবং পরে ডিঠি কাউন্সিলের সদস্য হয়েছিলেন। দৈনিক প্রথম আলাে পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমানের বাবা। ৫৯, ৭১, ৮৯, ১৯৫, ২৩৪ পাষু ৯৩ শামসু/সামসু। হাফিজ বেপারির ছেলে। ১৫, ৫৭, ১১৪, ১১৬, ১৯১, ২০৪, ২০৭, ২১২, ২১৯, ২৪৩ শামসুর রহমান (জনসন)। রাজনীতিক আতাউর রহমান খানের ভাই। আগরতলা ষড়যন্ত মামলার আসামী । সরকারী চাকুরে। স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রদূত। বর্তমানে অবসর জীবন যাপন। ২০৯, ২৫৬ শামসুল হক শামসুল হক। রাজনীতিবিদ। টাঙ্গাইল বাড়ি। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, ১৩০, ২১৬, ২১৯, ২২৪, ২৪৭, ২৫৩ শামসুল হক। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের এম.এল.এ,। পরে মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রদূত। ২০৩, ২০৪। শামসুল হুদা। শামসুল হুদা চৌধুরী। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অবহতি পর মুসলিম লীগের প্রভাবশালী ছাত্র নেতা । ভাষা আন্দোলনের বিরােধিতাকারী। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সামরিক শাসনামলে মন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের স্পীকার। ৬০, ৬১, ২০৬ শামসুল খান ১৭৫, ১৭৮, ২০৩, ২০৫, ২২৬ শামসুল ইসলাম ২৪৮ শামসুদ্দিন (বাগুই) ৪৮ শামসুদ্দিন (ফাতেমা মহল) ১০৬ শাহাদ ২৫ শাহাদ আলি সরকার ৪৯, ৫২, ৬৮, ১৪৭, ১৪৮, ১৫৬, ১৬০, ১৮১, ১৮৫, ২০০, ২০৩, ২১০, ২১৩, ২১৭, ২২৬, ২২৯, ২৩১, ২৩২, ২৩৭, ২৫৪, ২৫৫
২৮০
শাহাবুদ্দিন ৫৭, ৬১, ১৭২, ১৯০ শাহেদ আলি ৭৯, ১১৫, ১২৫, ১৭৫, ১৭৮, ১৮১, ১৯৯, ২০৫, ২১৬ শাহেদ আলি বেপারি ৮০, ৮২ শাহেদ আলি মিয়া ৯২, ২২৮ শির ২০ শিহাব উদ্দিন ১৫৬ শুকুর আলি ২০৫
সফরউদ্দিন ১৩, ২৫৫ সফিউল্লাহ ২৫ সফি ১৫, ১৬, ১৭, ৬২, ১২৫, ১২৬, ১৫৯, ১৮০, ১৮৪, ১৯৫ সফিরুদ্দিন দফাদার ৬৪ সধু ১৮৩ সবার ৯৪ সমির ১২ সমিরউদ্দিন ১২৫ সৱৰাতি ৪৩ সলেমাল ১৪৭, ১৪৮ সাঈদ ২৪৪, ২৪৫ সাত্তার খান ৪৬, ৯৪, ১৪৭ সাখাওয়াত হােসেন। সেই সময় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ঢাকার আরমানিটোলায় তার নিজের বাড়ি ছিল। পরে ঢাকা চেম্বার্স অব কমার্স-এর সভাপতি হয়েছিলেন। ২০৬, ২০৯, ২১১ সাজিদ ১৬৩ সাদ আহমদ, অধ্যাপক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ১৭০ সাদেকুর রহমান ১৪২, ২০৫, ২০৭, ২২৮, ২৩০ সাদেক ১৪২, ১৮০, ১৯৩ সাদির মােক্তার। সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ব্যবসা করতেন। ২৪, ৫৫, ৭১, ১৯১, ২৪৬ সানাউল্লাহ নূরী। সানাউল্লাহ নূরী। সাংবাদিক। স্বাধীনতার পর বিন্নি দৈনিক পত্রিকায় বিশেষতঃ সরকারী অথবা সরকার সমর্থক দৈনিক পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন। বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন। ১৭৮, ১৭৯, ২৩৮ সঞ্জীব রায় ১১৮ সাৰু (ভাইসাহেব)। শফিউদ্দিন আহমদ খান। কাপাসিয়ার তরগাও বাড়ি। ব্যবসায়ী ছিলেন। তাজউদ্দিন আহমদের আত্মীয়। ১০৩, ১১৭, ১১৮, ২৩৭ সাবেত আলি মৌলভী ২৮, ৩০
সামাদ খান ৪৬, ৫৪। সামাল, এম, এ, ৭০, ১০৭ সামসুদ্দিন খান ১০৪ সামসুদ্দিন ১০০, ১০৩, ১১৭, ১২১, ১২২, ১৬৫ সামসুদ্দিন (কুষ্টিয়া) ২০৬ সামসুদ্দিন ৯৯ সারােয়ার ১১৪ সারােয়ার (রেঞ্জার)। বন বিভাগের কর্মচারি ১৪৫, ২৩৩ সালেহ ২৫, ৫৪, ৬৮, ৯৭ সালেহ আহমদ সালেহ আহমেদ ১৪১, ১৫৯, ১৯৪, ২১১, ২১৭, ২৩০, ২৩১ সালেহ আহমদ মােড়ল। তাজউদ্দিন আহমদের মামা হাকিম মােল্লার শশুর। শ্রীপুরে বাড়ি। ব্যবসায়ী ছিলেন। ৬৮, ৭০, ৭১, ৯৪, ১০১, ১১৩, ১৩১, ১৩৭, ১৩৮, ১৪২, ১৪৬, ১৪৮, ১৫৭, ১৫৯, ১৬৫, ১৬৬, ১৭৪, ১৭৫, ২০০, ২১৬, ২১৮, ২৩০, ২৩২, ২৩৪, ২৩৭, ২৩৮, ২৫৪। সালেহ মােহাম্মদ মােড়ল। শ্রীপুর বাড়ি। ৫৯, ৬১, ৬৭, ৯৪, ২১১ সালেহা বেগম ১৫৩ সাহার ২৩৭। সাহে আলি ২৩২ সাহেব আলি বেপারি ২৭, ৪৪, ৬৬, ৬৯, ৮৩, ৯৬, ১২৯, ১৩০, ১৭৭, ১৮৫, ১৮৮, ১৮৯, ১৯১, ২২৬ সাহেব আলি সরকার ১৪৯ সাহে আলি দফাদার ৩১ সাহেবজাদা খুরশিদ ৫৮। সিদ্দিক আহমদ ২৪৫, ২৪৮, সিদ্দিক ৫৩, ৭১, সিদ্দিকুল্লাহ ১৮০ সি, এস, সেন। ভারতের পশ্চিম বাংলার সরকারী পদস্থ কর্মকর্তা। ৭৪ সিরাজুল হক ১৫৭, ১৭২, ১৯৩, ১৯৯, ২২৩, ২৪২ সিরাজুল হক। এ্যাডভােকেট সিরাজুল হক। আইনজীবী। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সরকার পক্ষের কৌঁসুলি। বিভিন্ন মামলা পরিচালনা করে খ্যাত। ২৩৪, ২৩৮। সিরাজের বাবা ৯, ১১, ৮২,১২৮, ১৮৩ সিরাজের মা ১২ সিরাজ ১৭, ৭১, ১২৭, ২৩৫ সিরাজ বেপারি ১২৩ সেকেন্দার মাস্টার ১৬৮, ১৯০, ১৯৩, ২০৭, ২২৬ সেকেন্দর ১২, ১৫, ১৭
সােহরাওয়ার্দী/হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী : হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী । ১৮৯২১৯৬৩। মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ। আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি চালুর ক্ষেত্রে তার ভূমিকা স্মরণীয়। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাজনীতিক। সুধী সমাজ কর্তৃক গণতন্ত্রের মানসপুত্র আখ্যায়িত । ১৫২, ১৫৩ ১৫৪, ১৫৯ মি, সােহান। পুলিশ বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তা। ৩৬, ৩৯, ৪৭, ৫৫, ৫৯, ৬০, ৭৩, ৮৬, ১২১, ১২৮, ১৩৩, ১৪২, ১৪৪, ১৫১, ১৫৪, ১৫৮, ১৬৯, ১৮৬, ১৯০, ২২৬, ২২৮, ২৫৫, ২৫৬ সােবহান ২০৫, ২২৯, ২৩২, ২৩৭, ২৫৫ সােমেদ খান ৮৫, ২৩৭ সুদ খান ২১৪ সুর বাপ ১১৬, ১১৭ সুবিদ ১১৮ সুরুজ আলি ২৩২, ২৩৭ সুব্রত ১৫৬
রইসউদ্দিন ২০, ২১৮ রওশন উদ্দিন ১৪৬, ১৫২, ১৭৫, ১৮৭, ১৮৮, ২২৬
৯, ১৫, ১৮, ৬২, ৮৫, ১০১ যকিব ১৩১, ১৬৩ সুফি ৯, ২০, ২০৫ রফিক ১৪, ৭১, ১০১, ১০৪, ১০৮, ১৫৮, ১৬০, ১৬৮, ১৭৫, ২০৪, ২০৬, ২০৮, ২১২, ২২৪, ২৩৩ রমজান মােড়ল ১১ রজব আলি ১৬, ৪৪, ৪৯, ৬৬, ৬৮, ৭৯, ৯২, ৯৫, ৯৬, ৯৭, ৯৯, ১০০, ১০১, ১১৫, ১২৬, ১৪৯, ১৯৯, ২৫৪ রশিদ মিয়া ২২৩, ২৩৫ রশিদ সাহেব ৪১, ৫৬, ৬৪, ১৫৫ রত্ন ১১ রহমান ১২৩ বহম আলি ১৬ রহিম মােক্তার ১৩০, ২০৩ রাজা মিয়া ৮৬ রাজ্জাক, ইন্সপেক্টর ২০৩ রায় চৌধুরী ৫৭ রাম কান্ত মণ্ডল ১৬
রাবিয়ার মা ১৯ রাবিয়া ১২৩ কম ৬৫, ৯৪, ১০৮, ২১৭, ২১৮, ২২৬, ২৪৬ রুস্তুম আলি খান ২৩১, ২৪২ রুম আলি আকন্দ ৪৪, ২২২ রুহুল আমিন ২১, ২২, ১৭০ রেজাই করিম ও মুসলিম লীগ নেতা। বিশিষ্ট আইনজীবী। ১৯৮, ২১৬, ২১৮ রেহান উদ্দিন ১০।
হযরত আলি। মুসলিম লীগ সমর্থক। সেই সময় সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ২৫, ৪১, ৪২, ৪৭, ৫৩, ৬১ হরি মােহন ১২, ১২১ হাকিম ২৩১, ২৩২ হাকিম (ভাইসাহেব)ঃ আব্দুল হাকিম । তাজউদ্দিন আহমদের ভগ্নিপতি । ২১, ১৫৪, ১৬৯, ১৭১, ১৭২। হাকিম মিয়া ৪৪, ৫৩, ৬২, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৮৪, ৯৩, ৯৪, ১০১, ১০২, ১০৭, ১১৪, ১২৩, ১৩১, ১৩৩, ১৩৪, ১৬৭, ১৬৯, ১৭০, ১৭৩, ১৭৪, ১৭৫, ১৭৯, ১৮১, ১৮২, ১৮৩, ১৮৪, ১৮৬, ১৮৮, ১৯০, ১৯৩, ১৯৪, ১৯৮, ২০২, ২০৫, ২১০, ২১৫, ২১৭, ২১৮, ২২২, ২২৬, ২২৮, ২২৯, ২৩২, ২৩৬। হাফিজ বেপারি । হাফিজউদ্দিন বেপারি, কাপাসিয়ার ভূলেশ্বর বাড়ি। জোতদার ১২, ২০, ৪৫, ৪৮, ৪৯, ৫৬, ৬৬, ৬৭, ৬৯, ৭০, ৮৩, ৮৪, ৯৩, ৯৪, ১২৯, ১৬৮, ১৮৫, ১৯১, ১৯২, ২০০, ২০৪, ২০৫, ২১২, ২১৪, ২৩৮, ২৫০ হাফিজ আহমেদ ১২৮ হাফিজুর রহমান ২০৬ হাফিজ ২৪২ হাফিজউদ্দিন ৩২, ৪৭, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৯৭, ৯৯, ১৫২, ২০৫ হাবিব মােড়ল ২১৬ হাবিবুর রহমান ১০৮ হাবিব ৬৭, ১০৯, ২২৯ হামিদুল হক চৌধুরী ঃ হামিদুল হক চৌধুরী । ১৯০১-১৯৯২ । জন্ম ঃ রামনগর, ফেনী। রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী । পাকিস্তান আমলে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিরােধিতা। ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভারএর প্রতিষ্ঠাতা। ২৪৬ হামিদ মােক্তার ৭০, ১৫৯, ২০৭, ২৪৬, ২৪ ৭ হামিদ আহমেদ ১৯৪ হামিদ বেপারি ২২৪ হামিদ চৌধুরী ৫৬
হাশিম। আবুল হাশিম। ১৯০৫-১৯৭৪। জন্মঃ কাশিয়াড়া, বর্ধমান । চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ এবং আইনজীবী। বঙ্গীয় বিধান সভার সদস্য। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক, রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য । ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখায় কারা নির্যাতন ভােগ। ১০৪, ১০৭, ১০৯, ১২৯, ২৩৩, ২৪৭ হাসমত ৪৩, ১৯১, ২১০ হাসেম মৃধা ৮০ হাসেম ১৫১ হাসান ৩০, ৫৭, ২০৪ হাসনাত ৪৭, ৫৫, ৫৬, ৭১, ১২২, ১৭৫ হাসান মােড়ল ৯২, ১০২, ২৫৪ হায়দার ৩২, ৫৫, ৫৭, ৯০, ১৩০, ১৯৫, ১৯৯ হালিম, ড. । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ২৩, ১৮৮ হাসির বাপ ১২১ হােসেন মােড়ল ১০১, ২৪৩ হােসেন মৃধা ১৬, ১৭, ৪৪, ৪৫, ১১৬ হল। নূরুল হুদা ডঃ এম, এন, হুদা। ১৯১৯-১৯৯১। জন্মঃ জাঙ্গালিয়া, টাঙ্গাইল। অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ। পরে মন্ত্রী ও বাংলাদেশের স্বল্পকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি। ১৫৬, ২০৮, ২৪৮ হমান ৩৩ হুসেন ১১, ৫৩, ২১২, ২১৬ হুসেন আলি খান। সিংহশ্রী ইউনিয়নে বাড়ি। সিংহশ্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ৬৫, ৮০, ৮১, ৮৫, ৮৭, ৮৯, ১৭৮
২৮৫