This is a temporary post for collecting data. Not for posting and not for publishing. Saved only as readable for the editors. Not clickable and not downloadable.
তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি-১৯৫২ ৪র্থ খন্ড
সিমিন হোসেন রিমি
-শ্রীপুরে ফিরে আসা
১ জানুয়ারি, ১৯৫২, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ছয়টায় উঠেছি। কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে দেখা হলাে। সকাল সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে এগারােটা পর্যন্ত একটি দল গঠনের ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কথা বললাম। আমরা গণআজাদী লীগ পুনরুজ্জীবনের পক্ষে; তবে লীগ শব্দের পরিবর্তে পার্টি শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে। দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লাম। বিকেলে ক্লাবের ব্যাডমিন্টন প্রতিযােগিতায় আহমদ আলী মণ্ডল ও ফরেস্টার মােসলেম উদ্দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত খেলায় আমি রেফারির দায়িত্ব পালন করলাম। মণ্ডল খেলায় জয়ী হলাে। রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত মজিদ সাহেব, মালেক সাহেব প্রমুখের সঙ্গে ক্লাবে বসে দাবা খেললাম। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : ঠাণ্ডা পরিবেশ।
২.১.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টায় স্কুলে গেলাম। প্রধান শিক্ষক ও প্রসন্ন বাবু ছিলেন না। নাম ডাকার পর ছুটি দেওয়া হলাে। খেলাফত নেতা মকবুল মৌলবি ক্লাবে আমার সঙ্গে বিকেল ৪টায় দেখা করলেন এবং আমাকে ১১ জানুয়ারি নােয়াকান্দিতে অনুষ্ঠিতব্য একটি সভায় যােগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। আমি তার আমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম। প্রধান শিক্ষক মফিজউদ্দীন ক্লাবে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি ৫ জানুয়ারি উত্তরখামেরে অনুষ্ঠিতব্য একটি সভায় যােগ দেওয়ার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন। আমি আমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্টেশন রুমে বসে তিনি আমার সঙ্গে কথা বললেন। রাতের খাবার শেষে রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। রাত পৌনে ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতােই। ৩,১.৫২ সকাল ৭টায় উঠলাম। সকাল ১১টায় স্কুলে গেলাম। প্রধান শিক্ষক বলাই বাবু ও প্রসন্ন বাবু অনুপস্থিত ছিলেন। নাম ডাকার পর ছুটি দেওয়া হলাে। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মালেক সাহেবের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন প্রতিযােগিতায় খেলে আমি জিতলাম। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। আজ রাতে শিক্ষক মােজাফফর হােসেন সাহেব এলেন। আবহাওয়া : আগের মতােই। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুর ডাকঘরের ক্লার্ক মইনুদ্দিন সাহেব মানিকগঞ্জ সাব-ডিভিসনের লাসরা ডাকঘরের সাবপােস্ট মাস্টার পদে যােগ দিতে রওনা হয়ে গেলেন। তিনি ছিলেন আমার একজন ভালাে বন্ধু এবং শ্রীপুর ক্লাবের একজন উদ্যমী সদস্য।
৪.১.৫২ সকাল ৭টায় উঠেছি। আহমদ, মজিদ, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, ফরেস্টার মােসলেম উদ্দিন প্রমুখের সঙ্গে সারাদিন পাশা ও ব্যাডমিন্টন খেলে কাটালাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ক্লাবেই ছিলাম। রাত সাড়ে ৮টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতােই। বেলা ২টা ১৫ মিনিটের ট্রেনে ভাওয়াল সিডব্লিউ এস্টেটের ম্যানেজার ও পুলিশ ইন্সপেক্টর ‘বি’ শ্রীপুর এসেছেন। এখানে অবস্থানরত ডিএফও-র সঙ্গে যৌথ অনুসন্ধানের জন্য। তাদের অনুসন্ধানের বিষয় ছিল ভাওয়ালের বনাঞ্চলের ঘটনাবলি ও বন কর্মচারী, বিশেষ করে আর ও এ করিমের বিষয়ে। ৫.১.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। দুপুর ২টায় সাহাবুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে সাইকেলে উত্তর আমেরের উদ্দেশে রওনা হলাম। পথে বড়হরে হাকিম মিয়ার। বাড়িতে কয়েক মিনিটের জন্য থামলাম। বাড়িতে শুধু ইউসুফ আলী মামা ছিলেন। বিকেল ৪টার দিকে এইচ ই স্কুলের সামনে আয়ােজিত সভায় উপস্থিত হলাম। সভায় সভাপতিত্ব করেন এসডিও (উত্তর) এ সাত্তার। আমি সভায় পৌছে দেখি আহসান মিয়া বক্তৃতা করছেন। তারপর রশিদ মিয়া কয়েক মিনিটের জন্য বক্তৃতা করলেন। আসর নামাজের পর আমি আধ ঘন্টা ধরে বক্তব্য রাখলাম। আমি যখন। লবণ সংকট নিয়ে কথা বলছিলাম তখন কাপাসিয়া থানার ওসি আমাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তার পরও আমি আমার যুক্তি তুলে ধরতে লাগলাম। এসডিও তাকে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করার জন্য বললেন। এসডিওর বক্তৃতার মধ্য দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সভা শেষ হয়। সভার আয়ােজন ভালােই ছিল। মাইক ছিল ঠিকঠাক। সভার বিরতির সময় রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রের বদরউদ্দীন শ্রোতাদের গান শােনালেন। সভায় তিন হাজার। বা তার চেয়ে বেশি মানুষের উপস্থিতি ছিল। সভা শেষে মফিজউদ্দীন সাহেবের বাড়িতে এসডিও আমার সঙ্গে বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে প্রায় এক ঘন্টা কথা বললেন। তারপর তিনি আরজু মিয়ার বাড়িতে গেলেন। সেখানে তিনি উঠেছেন। ডা, হােসেন আলী, আহসান মিয়া, শাহাজউদ্দিন, আড়ালের সরকার, ময়মনসিংহের একজন হাকিম ও অন্যদের সঙ্গে মফিজউদ্দীন মাস্টার সাহেবের বাড়িতে রাতের খাবার খেলাম। রাত ১১টায় সরকার ও শাহাবুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে রমিজউদ্দীনের বাড়িতে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতােই। ৬.১.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠলাম। মফিজউদ্দীন সাহেবের বাড়িতে নাস্তা খেলাম। তারপর রমিজউদ্দীনের বাড়িতেও নাস্তা খেলাম। সকাল ৮টায় এসডিও (উত্তর)-এর সঙ্গে দেখা হলাে। প্রায় ঘন্টাখানেক টুকিটাকি বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বললাম। তিনি আমাদেরকে বললেন, গত বছর কীভাবে তার আইএ পাস ছেলেকে দুর্বল ও কম বয়সের মনগড়া অজুহাতে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যােগদানের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করা হয়েছে। কথাবার্তার পর সকাল ৯টায় তিনি হাতির পিঠে চড়ে কাপাসিয়ার উদ্দেশে রওনা হলেন। আর আমি সাহাবুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। বড়হরে আমরা ১৫ মিনিটের জন্য থামলাম। হাকিম মিয়া বাড়িতেই ছিলেন। শ্রীপুরে পৌছলাম বেলা সাড়ে ১১টায় । দুপুর ২টা পর্যন্ত ক্লাস নিলাম। বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেললাম। ঘরে ফিরলাম সন্ধ্যা ৬টায়। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ৭.১.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেল ৩টায় ভাংনাহাটি মাদ্রাসার সামনে আয়ােজিত জনসভায় যােগ দিলাম। পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি মওলানা আবদুল আজিজ সভাপতিত্ব করলেন। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আমি বক্তৃতা করলাম। এরপর দিগধার মওলানা ওয়ারিস আলী এবং আদিয়াবাদের মওলানা হারিসুল হক বক্তব্য রাখলেন। সভাপতির ভাষণের পর রাত সাড়ে ৯টায় সভা শেষ হলাে। সভায় প্রায় দেড় হাজার লােক উপস্থিত ছিলেন। আমি আমার বক্তৃতায় সমালােচনামুখর ছিলাম; শাসনতন্ত্র প্রণয়ন, বিশেষ করে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নে বর্তমান মন্ত্রিসভার ব্যর্থতার জন্য। মাদ্রাসা শিক্ষাকে ব্যবহার করা হয় একমাত্র অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষিত মােল্লাদের সন্তুষ্ট রাখতে। মওলানা আজিজ অধিকতর ক্ষোভের সঙ্গে সরকারের, বিশেষত কেন্দ্রীয় সরকারের সমালােচনা করলেন। এমনকি তিনি এও মন্তব্য করলেন যে, লিয়াকত আলী খানকে তার অপকর্মের জন্য আল্লাহই সরিয়ে দিয়েছেন। যারা নিজেদের সংশােধন করবে না তারাও যেন একই পরিণতি ভােগ করে; সে জন্য তিনি নিজে প্রার্থনা করেছেন। মওলানা আজিজ ও অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে আমার ছাত্র মান্নানের। বাড়িতে রাতের খাবার খেলাম। রাত সাড়ে ১১টায় বাসায় ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১২টায়। আবহাওয়া : রাতের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় ঠাণ্ডা কিছুটা কম। ৮.১.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। প্রধান শিক্ষক আমাকে সকাল সাড়ে ৮টায় স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলেন চিঠি লিখে দেওয়ার জন্য। সদর সাবডিভিশনের ইন্টার স্কুল ক্রীড়া প্রতিযােগিতার ব্যাপারে আমি তার জন্য কয়েকটি চিঠি লিখে দিলাম। বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেললাম। রাত ৯টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম । এফ এইচ এম হল থেকে নূরুল হক এসেছে; হল নির্বাচনী বিষয়ে আমাকে নেওয়ার জন্য। সে রাত ৮টা ৩৯ মিনিটের ট্রেনে পৌঁছেছে। রাতে সে আমার সঙ্গে থাকল। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : আকাশ মেঘমুক্ত ও ঠাণ্ডা।
৯.১.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। ফাতেহা ইয়াজদাহামের জন্য আজ স্কুল বন্ধ। নূরুল হক সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে চলে গেল। শরাফতের দোকানে নূরুল। হক, প্রধান শিক্ষক ও আকরামতউল্লাহকে চা খাওয়ালাম। দুপুর ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দাবা খেললাম। সাইকেলে করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলাম। রাতে আড়ালের জামাই ও দিগধার ভাইসাহেব আমাদের বাড়িতে এলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ১০.১.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। হাকিম মিয়া সকাল ৮টায় এল। নাস্তার পর চলে গেল। সকালে আবদুল খান, ওয়ারিস আলী, কাগুর বাপ প্রমুখ আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। সকাল ১১টায় সাইকেলে নােয়াকান্দির উদ্দেশে রওনা হলাম। দুপুর দেড়টায় সেখানে পৌছলাম। দুপুরের খাবার খেলাম সেক্রেটারির বাড়িতে। এইচ ই স্কুলের সামনে বিকেলে ৪টায় সভা শুরু হলাে। মওলানা জালালউদ্দিন। সভাপতিত্ব করলেন। মাগরিবের আগে বক্তৃতা করলেন প্রধান শিক্ষক ও আখতারউদ্দিন ফকির। বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সােয়া ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টির কারণে সভা বিঘ্নিত হলাে। আমি বক্তব্য রাখলাম পৌনে ৭টা থেকে রাত ৮টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত । এরপর মওলানা এ হামিদ হােসেনপুরী রাত ১০টা পর্যন্ত বক্তৃতা করলেন। তিনি আমার খসড়া করা কয়েকটি প্রস্তাব সভাপতি বরাবর উত্থাপন করলেন এবং এগুলাে গৃহীত হলাে। সভার সমাপ্তি ঘটল রাত ১১টায়। উপস্থিতির সংখ্যা ছিল প্রায় দুই হাজার। মওলানা হামিদ, জালালউদ্দিন প্রমুখের সঙ্গে সেক্রেটারির বাড়িতে রাতের খাবার খেলাম। খাওয়ার পর মওলানা হামিদ ও আমি ছাড়া সকলেই চলে গেলেন। রাত দেড়টায় বিছানায় গেলাম।
আবহাওয়া : দুপুরের পর থেকে আকাশে ঘন মেঘ জমতে লাগল এবং বিকেল সােয়া ৫টায় বৃষ্টি শুরু হলাে। ৫টা ৪০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত প্রবল বর্ষণ হলাে। ৭টার দিকে আকাশ পুরােপুরি পরিষ্কার হয়ে গেল। দেখা দিল মৃদু দীপ্তির চাদ।
১১.১.৫২ ভাের ৫টায় উঠলাম। খিরাটির কুদুস পণ্ডিত আগামী ২২ জানুয়ারি তার এলাকায় অনুষ্ঠিতব্য একটি সভায় যােগ দেওয়ার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন। আমি তাকে কথা দিলাম না। সকাল ১০টায় বের হলাম। আমার ছাত্র এ মজিদ বাজার পর্যন্ত আমার সঙ্গে হেঁটে এল। খাল পার হওয়ার সময় সে আমার সাইকেল উঁচু করে ধরে পার হতে সাহায্য করল। দুপুর ১টার দিকে বাড়ি পৌছলাম। সন্ধ্যায় আড়ালের হেলাল মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে নদীর পাড় ধরে হাঁটলাম। দিনের শেষভাগে বেশি খাওয়া হয়েছে। তাই রাতে আর খেলাম না। রাত ৮টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বিকেলে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়েছিল। তবে রাতের আকাশ পরিষ্কার এবং তীব্র শীত। বিশেষ করে শীতকালের বৃষ্টির পর এমন শীত স্বাভাবিক। ১২.১.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সকাল ১০টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে সরাসরি শ্রীপুর পৌছেছি। বিকেলে ব্যাডমিন্টন প্রতিযােগিতা ছিল। আমি রেফারির দায়িত্ব পালন করলাম। প্রতিযােগিতার বিরতির সময় গিয়াস ভাইসাহেব আমাকে দিয়ে একটি মানি অর্ডার ফর্ম লিখিয়ে নিলেন। তিনি আসুকে টাকা পাঠাবেন। এর আগে ফটিক ভাইসাহেব আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। সন্ধ্যা ৭টা। পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম।
রাত সাড়ে ৮টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। ১৩.১.৫২ সকাল ৬টায় উঠলাম। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সকালে শামসুদ্দিন মণ্ডলের ভর্তির জন্য আরমানিটোলা গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক কাজী অম্বর আলীর কাছে একটি চিঠি লিখলাম। চিঠি শামসুদ্দিনকে দিলাম। বিকেল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ব্যাডমিন্টন ও দাবা খেললাম। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতােই। ১৪.১.৫২। ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। পৌষ সংক্রান্তির জন্য আজ স্কুল বন্ধ। সকালে হামিদ আমাকে এক গ্লাস খেজুরের রস এবং ফরেস্টার মােসলেম উদ্দিন দিয়েছেন এক গ্লাস দুধ। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দাবা খেললাম। অলি আহমদ উপস্থিত হলে তার সঙ্গে বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খেললাম। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ফরেস্টার মােসলেম। উদ্দিনের সঙ্গে ক্লাবে খেললাম। রাত সাড়ে ১০টা থেকে মধ্য রাত ১২টা পর্যন্ত আমার। ঘরে হামিদের সঙ্গে দাবা খেললাম। এরপর সরাসরি বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতােই। বেলা দেড়টায় কালু মােড়লের ওখানে টুকু মিয়া দুপুরের খাবার খেয়েছেন। দুপুরে আমি যখন স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে খেলছিলাম তখন হাইলজোরের আনসার আলী ও মমতাজ আলী আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা আমাকে খানের দোকানে চা খাওয়ালেন। তারা আমাকে অনুরােধ করলেন আমি যেন তাদের মামলার শুনানির দিন ঢাকায় যাই।
২০
১৫.১.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। আন্তঃস্কুল বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযােগিতার ব্যাপারে এই অঞ্চলের স্কুলসমূহের সেক্রেটারি বরাবর প্রধান শিক্ষকের জন্য কয়েকটি চিঠি লিখে দিলাম। বিকেলে ফটিক ভাইসাহেব আমার রুমে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি আমার কাছ থেকে বন্দুকের লাইসেন্সের জন্য দুটি দরখাস্ত লিখে নিলেন। একই সময় গিয়াস ভাইসাহেব আসুর কাছে পাঠানাে মানি অর্ডারের রশিদ নিয়ে গেলেন। পরে গােসিঙ্গা কাচারির বেলায়েত হােসেনের সঙ্গে দেখা করলাম। আমার জন্য চারশা চর জমির নকশা এনে দেওয়ার জন্য তাকে একটি নােট দিলাম। তিনি এনে দিবেন বলে কথা দিলেন। সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতােই। ১৬.১.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেললাম। ক্লাবে ছিলাম সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। এসআই নূরুল হক ও অন্যান্যের দুর্নীতির অভিযােগ তদন্তে সকালে ডিএসপি এবং ডিএবি এখানে এসেছেন। রাতে তারা ডিবি বাংলােয় থেকে গেলেন। জানা যায়, আবুল হােসেনের নেতৃত্বে ভাংনাহাটির জনগণ অভিযােগ উত্থাপনকারী।
১৭.১.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। স্কুলে ছিলাম সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। সকাল ৯টায় হাসান মােড়ল আমাকে তার গােডাউনে ডেকে পাঠালেন এবং আমার ওপর স্কুলের দায়িত্ব অর্পণ করলেন। যেহেতু প্রধান শিক্ষক ১৬ জানুয়ারি থেকে ১৫ দিনের জন্য ছুটির আবেদন করেছেন। বেলা আড়াইটায় শ্রীপুর ডাকঘরে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুললাম। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায় । আবহাওয়া : আগের মতােই। ১৮.১.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও আমি স্কুলের কাগজপত্রের জন্য প্রধান শিক্ষকের বাড়ি গেলাম। এই কাগজপত্র অডিট করা হবে। কিন্তু তিনি হিসাবপত্র হালনাগাদ করার জন্য আগামী রােববার পর্যন্ত সময় চাইলেন। আমরা ফিরে এলাম। বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর পৌনে ৩টা পর্যন্ত দাবা খেললাম। বেলা ৩টায় স্কুল অফিসে ম্যানেজিং কমিটির সভায় যােগ দিলাম । এম ই স্কুলের বিষয় অন্যান্য কিছু বিষয়ের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। আমি আমাদের বেতনের জন্য প্রধান শিক্ষককে অভিযুক্ত করলাম। তিনি টাকার অভাবের অজুহাত দাঁড় করালেন। কিন্তু আমি উন্মােচন করলাম টাকা তার হাতে ছিল। তিনিও স্বীকার করতে বাধ্য হলেন যে, পরীক্ষার্থী। ছাত্রদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ৩১৫ টাকা ওই সময় তার কাছে ছিল। বিকেল সােয়া ৫টায় সভা শেষ হলাে। সভায় উপস্থিত ছিলেন কালু মােড়ল, ডা, আহসানউদ্দিন, প্রধান শিক্ষক, মৌলবি ইয়াকুব আলী, এম হােসেন খান এবং আজিজ মােড়ল। কালু মােড়ল সভাপতিত্ব করেন। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম
।
বিছানায় গেলাম রাত ৯টায় । আবহাওয়া : আগের মতােই। ১১০ নং মামলার সুরাহা করতে আজ এসডিও (উত্তর)-এর এখানে আসার কথা ছিল; কিন্তু তিনি আসেননি। ১৯.১.৫২ ভাের সােয়া ৫টায় উঠেছি। সকাল ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেলে শরাফতের দোকানে বলাই বাবু, লতিফপুরের হােসেন মাস্টার, আকরামতউল্লাহ, এসআই অলি আহমদ এবং ভাংনাহাটির নায়েবকে চা পান করালাম। বিকেল ৫টায় হাইলজোড়ের এক রােগী নিয়ে ডা. আহসানউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করলাম এবং তার জন্য ব্যবস্থাপত্র নিলাম। সন্ধ্যা ৭টায় প্রধান মৌলবি তার দোকানে আমাকে চা খাওয়ালেন। এরপর আমি। ফিরে এলাম। রাত ৯টায় জাহানদারকে পাঠিয়ে প্রধান শিক্ষক আমাকে স্কুল পাঠাগারে ডেকে নিলেন। রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত কথা বললেন। তিনি মূলত কাজী সাহেবের বিরুদ্ধে তার ২৩ জানুয়ারির মামলার ব্যাপার নিয়েই কথা বললেন। কিন্তু অডিটের জন্য আমাকে কাগজপত্র দেওয়ার ব্যাপারে কোনাে কথা বললেন না। এরপর স্টেশনে এলাম। সেখানে সাপ্লাই ইন্সপেক্টর, কালু মােড়ল এবং এ এস এম পরেশ চক্রবর্তীর দেখা পেলাম। রাত ১১টায় সাপ্লাই ইন্সপেক্টরের ট্রেন ঢাকার। উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া পর্যন্ত প্রধানত তার সঙ্গেই কথা বললাম। তারপর সরাসরি বাসস্থানে ফিরে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতােই। আমার কাছে শীত কম বলে মনে হচ্ছে। ২০.১.৫২ সকাল পৌনে ৬টায় উঠলাম। সকাল ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। আজ শুধুমাত্র বলাই বাবু ও আমি উপস্থিত ছিলাম।
দুপুর সাড়ে ১২টায় স্কুলে মৌলবির বিকল্লজন এসে পৌছলেন। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে সঙ্গে নিয়ে স্টেশনে পৌছলাম। অডিটের জন্য কাগজপত্র প্রদানে প্রধান শিক্ষকের দ্বিধাদ্বন্দ্বের কঠোর সমালােচনা করলেন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর। ইয়াকুব আলী মৌলবিকে সঙ্গে নিয়ে প্রধান শিক্ষক এই সময় ট্রেনে ময়মনসিংহের উদ্দেশে চলে গেলেন। সকাল ৯টায় হাকিম মিয়া আমার সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি আমাকে জানালেন, আসিরুদ্দিন মােল্লা তার বন জামাত আলীর কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। বেলা ১টায় দেওনার সাইদ আলী আমার কাছে এল। আদালতে তার ভাড়া সংক্রান্ত মামলায় ডিক্রি হলেও, ভাড়া পরিশােধে তার সমস্যার কথা আলােচনা করে সে বাড়ি ফিরে। গেল। বিকেলে ভলিবল খেললাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ক্লাব থেকে ফিরলাম। টুকু মিয়ার ভৃত্য ও নান্না মিয়ার ছেলে রাতে এখানে থেকে গেল। ঘুমাতে গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই।
২১.১.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। শিক্ষক মােজাফফর হােসেন আমার সঙ্গে দুপুরের খাবার খেলেন। সদর সাব-ডিভিশনাল ক্রীড়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সাভার এইচ ই স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক তার ছাত্রদের নিয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। তারা সর্বশেষ সার্কুলারটি পাননি। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আড়ালের উদ্দেশে সাইকেলে রওনা হলাম। পথে লতিফপুরে নিগুয়ারির আজিজ মিয়ার সঙ্গে দেখা হলাে। তার কাছ থেকে তরগাঁওয়ের ব্যাপারে জানলাম। রানীগঞ্জের কাছে বিপরীত দিক থেকে আসা কাপাসিয়ার সামাদের দেখা পেলাম। সে আমার সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য আলাপ করল। ঠিক সূর্যাস্তের মুহূর্তে রানীগঞ্জ খেয়াঘাটে পৌছলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আড়াল বাজারে পৌঁছলাম। আজ ছিল হাটের দিন। হেলালউদ্দিন ও তালুইসাহেবকে হাটে পেলাম। হাটের লােকজনের সঙ্গে সরকার বাড়িতে পৌছলাম।। রাত ৯টায় শুয়ে পড়লাম। আবহাওয়া : দিনের তৃতীয় ভাগে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। সন্ধ্যা থেকে মেঘ পুরােপুরি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। ২২.১.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সম্মানিয়ার পিইউবি হাবিবুর রহমান, সদুর বাপ, জহুর মিয়া ও আরাে অনেকে সকালে আমার সঙ্গে দেখা করতে এল। জহুর মিয়া ছাড়া আর সবাই আমার সঙ্গে। নাস্তা খেল। আমাদের সবার খাওয়া শেষে জহুর মিয়া একা নাস্তা করলেন। দুপুরের খাবার শেষে বেলা ৩টার দিকে খিরাটির উদ্দেশে রওনা হলাম। মমতাজ মিয়ার পাঠানাে একটি ছেলে আমাকে পথ দেখিয়ে নিল। রওনা হওয়ার আগে আউয়ালের বাপ আমার সঙ্গে দেখা করল। সভা শুরু হলাে বিকেল সাড়ে ৪টায়। আড়ালের জহুর মিয়া সভাপতিত্ব করলেন। আমি বক্তৃতা করলাম বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত; মাঝে মাগরিব নামাজের একটি বিরতি দিয়ে। আমি মূলত তুলে ধরি স্থানীয় সমস্যাগুলাে। যেমন, যােগাযােগের জন্য সড়ক পথের অভাব। অথবা পলিমাটি জমে নদী নাব্যতা হারানাের ফলে কৃষি ফসল বিক্রি করার জন্য যােগাযােগের যে সুবিধা পাওয়া প্রয়ােজন, সেই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না ইত্যাদি। আকতার উদ্দিন ফকির রেশম শিল্প নিয়ে ১০ মিনিট বক্তৃতা করলেন। মওলানা আবদুল হামিদ হােসেনপুরী সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বক্তৃতা করলেন। সভার সমাপ্তি ঘটল সাড়ে ৯টায় । উপস্থিতির সংখ্যা ছিল প্রায় হাজার খানেক। সভার উদ্দেশ্য : জুনিয়র মাদ্রাসার উন্নতিকরণ । কুদ্স পণ্ডিতের বাড়িতে আমি, জহুর মিয়া, মওলানা বুলবুলি, মীর জহুর আলী রাতে থেকে গেলাম। ঘুমাতে গেলাম মধ্য রাত ১২টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই।
২৫
২৩.১.৫২
ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। নাস্তা খেয়ে সকাল পৌনে ৯টায় শ্রীপুরের উদ্দেশে সাইকেলে করে রওনা হলাম। বুলবুলি আমার সঙ্গে কাপাসিয়া পর্যন্ত এলেন। সেখান থেকে তিনি সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে রাজেন্দ্রপুরের উদ্দেশে চলে গেলেন। আমি প্রধান শিক্ষকের (আহসান মিয়া) ওখানে ৫ মিনিটের জন্য থামলাম। কালি মােহন বাবু, শাহাজউদ্দিন প্রমুখের সঙ্গে দেখা হলাে। বাজারে পেলাম সামাদ, আকতারউদ্দিন, তরগাঁওয়ের আজিজকে এবং তারপর কাচারির কাছে জব্বার মিয়া, বসির প্রমুখকে। দুপুর ১২টায় শ্রীপুরে। পৌছলাম। স্কুলে ছিলাম বেলা ২টা পর্যন্ত। স্কুলে আমার সঙ্গে রেঞ্জার আসিরউদ্দিন দেখা করে কিছু সময়ের জন্য কথা বললেন। তিনি আজ বেলা ১২টা ১৪ মিনিটের ট্রেনে এখানে এসে পৌঁছেছেন। ডা. আহসানউদ্দিন আমার ঘরে বসে স্কুল সম্পর্কিত বিষয়ে আমার সঙ্গে বেলা ৩টা পর্যন্ত প্রায় আধ ঘন্টা আলােচনা করলেন। সন্ধ্যায় কালু মােড়ল ও বলাই বাবুর উপস্থিতিতে মান্নান আমাদেরকে জানায়, সে তার বকেয়া পুরােপুরি শােধ করেছে। অথচ ম্যানেজিং কমিটির সভায় প্রধান শিক্ষক প্রথমেই এই টাকার কথা অস্বীকার করেছিলেন। ৬টায় ফিরে এলাম। শুয়ে পড়লাম সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ২৪.১.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বেলা ৩টায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। গােসিঙ্গা হাটে থামলাম। শ্রীপুর এইচ ই স্কুল সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে নিয়ামত সরকারের সঙ্গে আলাপ করলাম। তাকে। অনুরােধ করলাম ছাত্রদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে। এ ব্যাপারে তিনি ইতােপূর্বে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
সন্ধ্যার পর আক্কাস আলী বন বিভাগের সঙ্গে তার মামলা বিষয়ে আমার সঙ্গে দেখা করেন। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : কম শীত। ২৫.১.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল ১০টায় আবদুল খানের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। ওয়ারিস আলী, তুফানিয়া ও টুকা সেখানেই ছিল। তুফানিয়া আমার সঙ্গে আমাদের বাড়িতে এল। সে তার ও আমাদের চরের (খাল) বিরােধপূর্ণ সীমানা নিয়ে কথা বলল। আমি তাকে প্রকৃত অবস্থা ব্যাখ্যা করলাম। রজব আলী ও নজু মােড়ল আলােচনায় উপস্থিত ছিলেন। উত্তরপাড়া মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করলাম। মফিজউদ্দীনকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের উত্তরের বন দেখে ফিরে এলাম। দুপুরে করিহাতার এক মিস্ত্রী আমাদের বাড়িতে এসেছিল আমাদের ঘর নির্মাণের ব্যাপারে আলাপ করতে। আজ মাটির দেয়াল নির্মাণকারীরা কাজ করেছে। বিকেল সাড়ে ৪টায় হাইলজোড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আয়ােজিত জনসভায় যােগ দিয়েছি। মাগরিবের নামাজের জন্য সংক্ষিপ্ত বিরতি দিয়ে আমি বক্তৃতা করি বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত উপস্থিত লােকজনের কাছ থেকে প্রশ্রুিতি পাওয়া গেল ৩৭৭ টাকা পাওয়ার। হাইলজোড়, বড়হর, বালাকুনা, দেওনা প্রভৃতি গ্রামের প্রায় ৩০০ জন উপস্থিত ছিল। প্রথামিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলাে। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামাত আলী, এ হাকিম মােল্লা, ইসাব আলী, বালাকুনার জাহার উদ্দিন, আবদুল মােড়ল, তরগাঁওয়ের মুসলিম ফকির, ওয়ারিস আলী, রজব আলী প্রমুখ। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাড়িতে ফিরে এসেছি।
খাবার খেয়ে সােজা বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : ঠাণ্ডা কম। ২৬.১.৫২-ঢাকা ও ফিরে আসাভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। শ্রীপুর পৌছলাম সকাল সাড়ে ১০টায়। হাইলজোড়ের আনসার আলী আমার ঘর থেকে তার খরম নিয়ে গেল। বেলা ১২টা ১৪ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। বেলা ২টায় পৌছে সােজা আদালতে গেলাম। দেখা হলাে কুদরত আলী, মােহাম্মদ আলী, হামিদ। মােক্তার, মমতাজ মােক্তার প্রমুখের সঙ্গে। সাদির মােক্তার আমাকে নাস্তা করাল। আক্কাছ আলীর নামে বন বিভাগের মামলা এসডিও (উত্তর)-এর কাছে ফেরত পাঠানাে হলাে। কারণ আজ এবং আগেও পিডব্লিউএস হাজির হয়নি। সাহেব আলী বেপারি আদালতে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি আমাকে অনুরােধ করলেন আজ বিকেলে তার বাড়িতে ভালুকার আবেদুল্লাহ সরকারের সঙ্গে। দেখা করার জন্য। আমি বিকেল ৫টায় তাই করলাম। পরে আমি জানতে পারি আবেদুল্লাহ সরকার আমাকে দেখতে চেয়েছিলেন বিয়ে সংক্রান্ত কারণে। আমি যখন সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলাম তখন ফকির মান্নান নেমে গেলেন। খিরাটির মজিদ, শামসু, লুলু, ওয়ারিস আলী প্রমুখ ওখানে উপস্থিত ছিল। ওই বাড়ির আঙ্গিনায়। মুজিব মােক্তার ও ললুর সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেললাম। খেলায় আমার সঙ্গী ছিল সদরঘাটে মুচির দোকান থেকে আমার জুতা সংগ্রহ করলাম ও স্টেশনে এলাম। সন্ধ্যা ৬টা ৪৯ মিনিটের ট্রেনে উঠলাম এবং শ্রীপুর ফিরে এলাম। ওয়ারিস আলী ও আক্কাস আলী একই ট্রেনে করে এসে শ্রীপুর নেমে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাে। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই।
২৭.১.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। স্কুলে ছিলাম সকাল ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। বিকেলে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দাবা খেললাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আমার রুমে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই।
২৮.১.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। স্কুলে ছিলাম সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত । নাইম উকিলের কাছে ৩ টাকার মানি অর্ডার ও একটি কার্ড পাঠালাম সাঈদ আলীর জন্য এ/ডিসহ একটি রেজিস্টার্ড চিঠি পাঠালাম ঢাকা সার্কেল ‘ডি’র ইনকাম ট্যাক্স অফিসারের কাছে। পােস্ট অফিস থেকে পাস বুক নিলাম। আজ সকালে আমার কাছ থেকে কিছু পরামর্শ ও কাগজপত্র নিয়ে আক্কাস আলী ঢাকায় গেল। আজ দুপুরে প্রধান শিক্ষক এখানে এসে পৌঁছেছেন এবং আমার সঙ্গে স্কুলে দেখা করলেন। স্কুল শেষে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দাবা খেললাম। তিনি আমাকে দিনে আপ্যায়ন করলেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডা, আহসানউদ্দিন ওখানে এলেন। তিনি স্কুল ও প্রধান শিক্ষক সম্পর্কিত বিষয়ে প্রায় এক ঘন্টা আলােচনা করলেন। এরপর আমরা সবাই উঠে পড়লাম ও আমাদের নিজ নিজ আবাসে চলে গেলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : অপেক্ষাকৃত কম ঠাণ্ডা।
২৯.১.৫২ সকাল ৬টায় উঠলাম। স্কুলে ছিলাম সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। বেলা আড়াইটায় মাওনার উদ্দেশে সাইকেলে রওনা হলাম। পথের পাশে একটি বাড়িতে মওলানা এ আজিজের সঙ্গে দেখা হলাে এবং ১৫ মিনিটের মতাে তার সঙ্গে কথা বললাম। বাড়িটি থেকে সভাস্থল এক মাইল দূরে। আসর নামাজের পর মাওনা মাদ্রাসার সামনে সভা শুরু হলাে। মওলানা আজিজ সভাপতিত্ব করলেন। আমি বিকেল ৫টা থেকে পৌনে ৬টা পর্যন্ত বক্তৃতা করলাম। শিক্ষানীতি ও সরকারের সমাজবিরােধী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আমি ছিলাম সমালােচনামুখর। মাগরিবের সময় হয়ে এলে আমি সেখান থেকে বিদায় নিলাম এবং সন্ধ্যা ৭টায় শ্রীপুর পৌছলাম। সভায় প্রায় ৬/৭ শ’ লােক যােগ দিয়েছিল। রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ক্লাবে এএসআই অলি আহমদ প্রমুখের সঙ্গে ছিলাম। এরই মধ্যে বাঘিয়ার বাবু আমাকে জানাল যে, করিহাতার আস্কর পণ্ডিতের সঙ্গে আড়ালের তালুইসাহেব আজকে আমাদের বাড়িতে এসেছেন এবং আমার জন্য অপেক্ষা করেছেন। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতােই। মনে হচ্ছে বাতাসে জলীয় বাষ্প রয়েছে। ৩০.১.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। স্কুলে ছিলাম সকাল ১১টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। মামদির বাড়ির মুনু সকাল সাড়ে ৯টায় তার অসুস্থ ভাই ফেগুকে নিয়ে আমার কাছে হাজির হলাে। তার মুত্রনালীতে সমস্যা ছিল এবং তা তরল তৈরি করতে পারছিল । তাকে ডা. আহসানউদ্দিনের কাছে নিয়ে গেলাম এবং তিনি চিকিৎসা দিলেন। মুনুর হাতে আফসু, দুফতু ও শাহিদার জন্য বই পাঠালাম। বিকেলে আহমদ ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেললাম। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ক্লাবে থেকে তারপর ঘরে ফিরলাম।
৩০
বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ৩১.১.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। স্বরসতী পূজা উপলক্ষে আজ স্কুল বন্ধ। সকাল ৯টায় আহমদ ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে আমি যখন স্টেশনে তখন আড়ালের খন্দকার আমাকে জানাল, গত রাতে হাফিজ বেপারির বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। সে বেপারি ও সাহেব আলীর জন্য ঢাকায় যাচ্ছে। দুপুর ১টার দিকে বাড়িতে পৌছলাম। গােসল ও খাবার খেয়ে সাইকেলে করে হাফিজ বেপারির বাড়িতে গেলাম। আইয়ুব আলীর কাছ থেকে ডাকাতির ব্যাপারে শুনলাম ও প্রমাণ দেখলাম। আইয়ুব আলীকে মারাত্মকভাবে প্রহার করা হয়েছে। আমি উপস্থিত থাকার সময়ই হাফিজ বেপারি ও সাহেব আলী ঢাকা থেকে ফিরে এল সন্ধ্যায়। কাপাসিয়া থানার ওসি এবং সেকেন্ড এসআই আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিল। মওলানা ওয়ারিস আলী, আবিদ বেপারি, বালুর বাপ, সাদির ভূইয়া, আরজু মিয়া, জামাত আলী, ফরেস্টার আজিমউদ্দিন, মােসলেম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মাগরিবের পর আরজু মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে বের হলাম। দিগধায় থামলাম। আরজু মিয়া তার বাড়িতে চলে গেল। ঘুমাতে গেলাম রাত ৯টায় । আবহাওয়া : আগের মতােই। নাজিমউদ্দীন ও নুরুল আমিন আজ সকালে সিরাজগঞ্জ লীগ সম্মেলনে যােগ দেওয়ার পথে কাওরাইদে চা পান করেছেন। এটা ছিল তাদের সরকারি কর্মসূচি এবং তাদের সুবিধার জন্য এখানে ট্রেন থামিয়ে রাখা হয়েছিল। বি. দ্র. বরিশালের শর্শিনার পীর মওলানা নাসেরউদ্দিন ৩১ জানুয়ারি ১৯৫২ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
– শুক্রবার –
১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। নাস্তা খাওয়ার পর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আড়ালের উদ্দেশে সাইকেলে দিগধা। ছাড়লাম। মাদুলির মধ্য দিয়ে পৌছলাম দুপুর ১২টার দিকে। আমার গােসল ও দুপুরের খাবারের পর সেখানে মফিজউদ্দীন মাস্টার সাহেব রমিজউদ্দীনকে সঙ্গে নিয়ে পৌছলেন। মির্জানগর জুনিয়র মাদ্রাসার সামনে সভায় যােগ দিলাম। মওলানা আজিজ সভাপতিত্ব করলেন। আসর নামাজের পর বিকেল সাড়ে ৪টায় সভা শুরু হলাে। মাগরিব নামাজের আগে মফিজউদ্দীন সাহেব, চরমনােহরদীর আবদুল হাকিম, হেলাল উদ্দিন ও জুনিয়র মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক বক্তৃতা করলেন। আমি বক্তব্য রাখলাম সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিট থেকে ৭টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। আমি তুলে ধরলাম যােগাযােগের মতাে স্থানীয় সমস্যাগুলাে। সমালােচনা করলাম শিক্ষানীতি ও সরকারের অন্যান্য কর্মকাণ্ডের, যা জনগণের জন্য দুর্ভোগ বয়ে এনেছে। কথা বললাম ইরান, মিসর ও কাশ্মীর প্রসঙ্গে এবং কয়েকটি প্রস্তাব উত্থাপন করলাম, যার সব কটিই পাস হয়ে গেল। সভাপতির ভাষণের পর রাত ৯টায় সভার সমাপ্তি ঘটল। মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য। একটি কমিটি গঠিত হলাে। সভায় লােকজনের উপস্থিতি ছিল প্রায় ৩ হাজার।
এরপর আড়ালে ফিরে এলাম। মফিজ সাহেব, রমিজউদ্দীন প্রমুখ আড়ালে আমার সঙ্গে রয়ে গেলেন। ঘুমােত গেলাম রাত সাড়ে ১১টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। দুপুরে সূর্য বসন্তকালের প্রকৃতি ধারণ করেছিল। ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। নাস্তা সেরে সকাল পৌনে ৯টায় শ্রীপুরের উদ্দেশে আড়াল ছাড়লাম। রানিগঞ্জ হয়ে শ্রীপুর গেলাম। রানিগঞ্জের মাঝি আমার কাছ থেকে খেয়া পারের জন্য কোনাে টাকা নিল না । কাপাসিয়ায় পৌছলাম সকাল ১০টায়। সেখানে সাইকেলের বাম প্যাডেল মেরামত করালাম। বাজারে অন্যান্যের মধ্যে শহিদ মােক্তারকে পাওয়া গেল। বেলা সাড়ে ১১টায় শ্রীপুর পৌছলাম। জয়দেবপুরে জোনাল স্পাের্টসের চূড়ান্ত প্রতিযােগিতায় অংশ নিতে ছেলেদের নিয়ে দুপুর ১২টা ১৪ মিনিটের ট্রেনে উঠলাম। এইচ হক ও রিয়াজউদ্দিনের বাড়িতে গােসল সারলাম। দুপুরে কোনাে খাবার খাওয়া হলাে না। বেলা ২টায় খেলা শুরু হলাে। ৬ ছেলের মধ্যে জাহান্দার ও শফি দুটি ইভেন্টে প্রথম স্থান অধিকার করল। ফয়জুদ্দিন ও জাহাদ আলী প্রত্যেকে এক ইভেন্টে স্থান পেল। ভাওয়ালের ম্যানেজার পুরস্কার প্রদান করলেন বিকেল ৫টায়। প্রতিযােগিতায় যােগ দিয়েছিল শুধুমাত্র শ্রীপুর, জয়দেবপুর ও উত্তরখামের স্কুল। অনুষ্ঠান শেষে জয়দেবপুরের প্রধান শিক্ষক তার কক্ষে আমাদের চা দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। আমাদের সঙ্গে নােয়াব আলী ছিলেন। রাত ৮টা ৩৯ মিনিটের ফিরতি ট্রেনে ছেলেদের নিয়ে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। কুদরতউল্লাহ ভূঁইয়া, কবির প্রমুখ একই ট্রেন থেকে শ্রীপুরে নামল। বাজারে প্রধান শিক্ষক প্রসঙ্গে কালু মােড়লের সঙ্গে আহমদ কথা বলল। কালু মােড়ল তাকে বললেন প্রধান শিক্ষককে তখনই হাজির করার জন্য। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই।
সকাল ৬টায় উঠেছি। স্কুলে ছিলাম সকাল ১১টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে পাশা খেললাম। এএসআই অলি আহমদ এবং পরে আহমদ আমাদের সঙ্গে যােগ দিল। ঘরে ফিরলাম সন্ধ্যা ৭টায়। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৮টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। অপেক্ষাকৃত কম ঠাণ্ডা। দিনের মধ্যভাগ থেকে আকাশ হালকা মেঘের আবরণে ঢাকা। রাতেও মেঘমুক্ত হল না। ৪.২.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। স্কুলে ছিলাম সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। সকাল ৮টায় হাসান মােড়লের সঙ্গে তার গােডাউনে দেখা করলাম। অডিটের জন্য তিনি আমাদেরকে কাগজপত্র দিতে প্রধান শিক্ষককে নতুন নির্দেশনা পাঠালেন। আহমদ, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও আমি স্কুলে গেলাম সকাল ৯টায়। প্রথমবারের মতাে অডিট শুরু হলাে এবং একটানা তা চলল বেলা ২টা পর্যন্ত। তারপর গােসল ও খাবার খেতে ঘরে ফিরলাম। অডিট দ্বিতীয় পর্যায়ে চলে বেলা সােয়া ৩টা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত। এরপর আমরা ঘরে ফিরলাম। অডিটের শুরুতে ডা, আহসানউদ্দিন কিছু সময়ের জন্য উপস্থিত ছিলেন। রাতে আমাকে কোনাে খাবার দেওয়া হলাে না। অভুক্তই রইলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : সমস্ত দিন ও রাত আকাশ মেঘাচ্ছনই থাকল। ঠাণ্ডা অপেক্ষাকৃত কম।
৩৫
ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সকাল ৮টায় অডিটের কাজ শুরু করলাম । আজ সকালে আমাদের ১৯৫০ সালের ফি রিসিপ্ট বই পরীক্ষা করে দেখার কথা ছিল। কিন্তু প্রধান শিক্ষক বইটির কিছু পাতা ছিড়ে রেখেছেন। এ নিয়ে শােরগােল উঠল। হাসান মােড়ল, সালেহ আহমদ মােড়ল, আজিজ মােড়ল, মজিদ মােড়ল, ননি ডাক্তার, এ এস এম হাকিম এবং এলাকার স্থানীয় অন্যান্য অনেক লােক স্কুল অফিসে জড়াে হলাে এবং তারা প্রত্যক্ষ করল প্রধান শিক্ষকের দুরভিসন্ধিপূর্ণ প্রচেষ্টা। দুপুর ১২টা ১৪ মিনিটের ট্রেনে রাজেন্দ্রপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। আমার সঙ্গে এলেন আহমদ ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টর। ওখানে হাসান মােড়লের বাসায় আহমদকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম। কাজিমুদ্দিন পিইউবিকে তার বাড়ি থেকে নিয়ে আহমদ, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, হেলথ অ্যাসিসট্যান্ট করম আলী ও প্রফুল্লসহ ফাওগাঁও এম ই স্কুলে পৌছলাম। সভা শুরু হলাে বিকেল ৪টায়। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর সভাপতিত্ব করলেন। আহমদ বক্তৃতা করল মাত্র ৫ মিনিটের জন্য। এরপর আমি বিকেল ৫টা পর্যন্ত বক্তৃতা করলাম। নগদ উঠল ৮৭ টাকা। আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেল। আমার পর আর কেউ বক্তব্য রাখলেন না। সভায় উপস্থিত ছিল প্রায় ৩-৪ শ’ জন। আজ ছিল হাটের দিন। স্কুলের উন্নয়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলাে। এম ই স্কুলের সেক্রেটারির বাসায় আমার সঙ্গে থাকা গােটা দল রাতের খাবার খেল। সেক্রেটারি ছিলেন একজন বয়স্ক ও সহজ সরল মানুষ। রাজেন্দ্রপুর স্টেশনে কাপাসিয়ার রশিদ মিয়ার সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য আলাপ করলাম। রাত ৮টা ৩৯ মিনিটের ফিরতি ট্রেনে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। আকাশে মেঘ নেই।
৬,২.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠলাম। স্কুলে ছিলাম সকাল ১১টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। সন্ধ্যায় প্রধান শিক্ষক আমাকে স্কুল অফিসে ডাকলেন এবং রক্ষা পেতে আমার কাছে আত্মসমর্পণ করলেন। আমি তাকে বললাম মােড়লদের সঙ্গে কথা বলার জন্য এবং তিনি স্কুলের যে ক্ষতি করেছেন তা পূরণ করে দিতে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। বি. দ্র. ষষ্ঠ জর্জ আজ সকালে স্যানড্রিংহামে মৃত্যুবরণ করেন।
৭.২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর কারণে আজ স্কুল বন্ধ। সকাল ৯টায় কালু মােড়ল, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও আমি স্কুলের অফিসে গেলাম। কালু মােড়ল প্রধান শিক্ষককে বললেন ২ হাজার টাকা পরিশােধ ও দায়িত্ব হস্তান্তর করার জন্য। বেলা ১১টায় তারা চলে গেলেন। বলাই আমাকে অনুরােধ করল বিষয়টির মীমাংসা করার জন্য। আমি ফিরে এলাম বেলা দেড়টায়। বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দাবা খেললাম এবং তারপর ব্যাডমিন্টন খেললাম সন্ধ্যা পর্যন্ত। পাক লাইব্রেরিতে ছিলাম সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। হাসান মিয়া ও সাইদ আলী পণ্ডিত সাহেব আমাকে এক গ্লাস দুধ দিলেন। বই নিয়ে আমি ফিরে এলাম। শুয়ে পড়লাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই।
৮.২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টায় হাসান মােড়ল, কালু মােড়ল, আহমদ, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও আমি স্কুল অফিসে গেলাম। আজ আমাকে স্কুলের দায়িত্ব দেয়া হলাে। মকসুদউদ্দিন বিশ্বাসের কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়ে আমি কাজ শুরু করলাম এবং বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চালিয়ে গেলাম। জুমার নামাজে অংশ নিলাম। ফিরে এলাম বেলা ২টায়। আবার স্কুলে গেলাম বেলা ৩টায়। কাজ করলাম বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। ব্যাডমিন্টন খেললাম সন্ধ্যা পর্যন্ত। ক্লাবে ছিলাম সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। , বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। শুধুমাত্র সকালে ও রাতের একটি অংশে সামান্য শীত।
৯.২.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ১১টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বেলা ৩টায় সৈয়দপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম আমার জন্য মফিজউদ্দীন সাহেবের পাঠানাে ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়ে। বাড়িতে ১৫ মিনিটের জন্য থামলাম ও যাত্রা অব্যাহত রাখলাম। দিগধা হয়ে সেখানে পৌছলাম সূর্যাস্তের সময়। মফিজউদ্দীন সাহেব কাপাসিয়া হাট থেকে ফিরলেন রাত ৯টায়। হাট থেকে ফিরে আমার সঙ্গে তিনি রাতের খাবার খেলেন। তিনি আমাকে বললেন, সাদির মােক্তার আড়ালের তালুইসাহেবকে জানিয়েছেন, শুধুমাত্র পরবর্তী অ্যাসেমব্লি নির্বাচন থেকে আমাকে দূরে রাখতে ফকির মান্নান আমাকে অচিরেই যে কোনাে মামলায় জড়াতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। গত শুক্রবার আড়ালে অনুষ্ঠিত সভায় তালুইসাহেবের কাছ থেকে মফিজউদ্দীন সাহেব এ খবর পান। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কথা বললাম। তারপর বিছানায় গেলাম। আবদুল হাইয়ের বাবা পাশের চৌকিতে ঘুমালেন। আবহাওয়া : আগের মতােই।
১০.২.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। চা খাবার পর সকাল সাড়ে ৭টায় শ্রীপুরের উদ্দেশে সৈয়দপুর ছাড়লাম। বাড়িতে প্রায় ঘন্টাখানেকের জন্য থামলাম ও নাস্তা খেলাম। দেখতে পেলাম কারিগররা আমাদের ঘরের মাটির দেয়াল তৈরি করতে কাজ করছে। আবদুল খান ও কাগুর বাপ উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে শ্রীপুর পৌছলাম। স্কুলে ছিলাম সকাল ১১টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। সকাল ১১টায় হাসান মােড়ল স্কুল অফিসে বসে জনাব ফজলুল করিম বিএসসি (অনার্স) কে নিয়ােগ দিলেন। তিনি শিগগিরই স্কুলে যােগ দেবেন। আমি তাকে সব ক্লাসে পরিচয় করিয়ে দিলাম। আহমদ ও মজিদ সাহেব আমার সঙ্গে ছিলেন। সন্ধ্যায় এফ করিমের সঙ্গে দাবা খেললাম। ক্লাবে ছিলাম সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। তারপর ঘরে ফিরে এলাম। সকাল পৌনে নয়টার দিকে জেলা ক্রীড়ার বিজ্ঞপ্তি নিয়ে জয়দেবপুর থেকে হামিদুল হক এসেছিলেন। বিজ্ঞপ্তিটি দিয়ে তিনি চলে গেলেন। রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ডা. আহসানউদ্দিন ও কালু মােড়ল আমার কক্ষে প্রধান শিক্ষক সম্পর্কিত বিষয়াবলি নিয়ে কথা বললেন। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : পশ্চিম দিক থেকে বাতাস বইছিল। বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যা থেকে আকাশ পুরােপুরি মেঘাচ্ছন্ন হয়ে রইল। এবং সারারাত একই অবস্থা বজায় থাকল। ফলে পূর্ণিমা হলেও মেঘের কারণে চাঁদের আলাে নিষ্প্রভ ঠেকল। আজ রাতে খুবই সামান্য শীত। ১১.২.৫২ সকাল ৬টায় উঠলাম। স্কুলে ছিলাম সকাল ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত। মজিদ সাহেব ও এফ করিম সাহেব সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলেন। তাদেরকে স্টেশনে বিদায় জানালাম।
বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মালেক সাহেবের সঙ্গে পাশা খেললাম। ক্লাবে রাত ৮টা পর্যন্ত থেকে ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে। শীতকালের ঠাণ্ডা বাস্তবে উধাও হয়ে যাচ্ছে। ১২.২.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। স্কুলে ছিলাম সকাল ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত। রায়েদের আয়েত আলী শেখকে বাজারে পেলাম। আয়েত আলী বললেন, তিনি। কাজী অফিসে এসেছেন তার মেয়ের কাবিননামা সম্পাদন করতে। বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের বাড়িতে পাশা খেলে ঘরে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। সকালে ঠাণ্ডা ছিল। ১৩.২,৫২ -ঢাকাভাের সাড়ে ৫টায় উঠলাম। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে জাহান্দারকে সঙ্গে নিয়ে জেলা ক্রীড়া ফাইনালে যােগ দিতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। ঢাকা স্টেশনে পৌছে সােজা কে এল জুবলি স্কুলে গেলাম । তবে ক্রীড়া কর্তৃপক্ষের কাউকে সেখানে খুঁজে পেলাম না। রায় সাহেব বাজারে ইসলামিয়া রেস্তোরায় আমরা দুজন নাস্তা করলাম। সকাল সাড়ে ১১টায় জাহান্দারকে বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে পাঠালাম। এর আগে হাফিজ বেপারির বাড়ি গেলাম। সেখানে জাহান্দার গােসল সেরে নিল। আইয়ুব আলী, হাসান ও শামসু তখন বাড়িতে ছিল।
৪০
এসডিও (উত্তর)-এর আদালতে সাদির মােক্তারের সঙ্গে দেখা করলাম। এমএলএ মান্নান সাহেব তার নির্বাচনের পথ পরিষ্কার করতে আমাকে যে কোনাে ফৌজদারি মামলায় জড়াতে মতলব আঁটছেন—এমন কথার সত্যতা সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলাম। সাদির মােক্তার এর সত্যতা স্বীকার করলেন। আমি এটা জহির ভাইকে জানালাম। দুপুর ১টায় কামরুদ্দীন সাহেব, ডিএম জহিরউদ্দীন, জমিরউদ্দীন, কফিলউদ্দীন চৌধুরী ও অন্যান্য অনেক আইনজীবীর সঙ্গে দেখা হলাে। শুধু দেখা হলাে না আতাউর রহমান খান সাহেবের সঙ্গে। দুপুর ২টায় জহিরউদ্দীনের সহায়তায় প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট এ কে বিশ্বাসের সামনে আমার নামের ইংরেজি বানান শুদ্ধ করে। সংশােধন করলাম- Tajuddin Ahmad. বিকেল সাড়ে ৪টায় এফ এইচ এম হল হয়ে রেঞ্জ ইন্সপেক্টরের অফিসে গেলাম। সরকারি গ্রান্ট-ইন-এইড কেরানি অনুপস্থিত ছিল। ওখান থেকে গেলাম বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে। সেখানে ফজলুর রহমান ভূঁইয়া সাহেব, কাপাসিয়ার সাহাজুদ্দিন, চর সিন্দুরের মহিউদ্দিন খান প্রমুখের সঙ্গে দেখা হলাে। জাহান্দারের জন্য ফজলুর রহমান ভূঁইয়ার কাছ থেকে টাকা নিলাম। এফএইচএম হলে ফিরে এলাম। রাতে এন/২তে ভিপি এস আলম ও মমিনের সঙ্গে থাকলাম। তারা আমাকে রাতের খাবার দিল। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই।
১৪.২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল ৯টায় ৯ নম্বর বাদামতলিতে গেলাম। সদু মিয়ার সঙ্গে দেখা করলাম। তার সঙ্গে খাবার খেয়ে সকাল ১০টার দিকে আমি চলে এলাম। তিনি তার অফিসের উদ্দেশে বের হলেন। ইসলামপুরে মেট্রো ওয়াচ কোম্পানি থেকে আমাদের স্কুলের ঘড়িটি নিলাম। সকাল ১১টায় যােগীনগর গেলাম। সেখানে জিনিসপত্রগুলাে রাখলাম। ভাবী ও তার ভাই বাড়িতে ছিলেন।
কেমব্রিজ ফার্মেসিতে ডা, করিমের সঙ্গে দেখা করলাম। এরপর দুজনেই বাসে উঠলাম। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেমে গেলাম। তিনি আজিমপুরের উদ্দেশে গেলেন। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সােয়া তিনটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। পাকিস্তান অবজারভারের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ সভায় যােগ দেই বেলা দেড়টায়। নুরুল আলম সভাপতিত্ব করল। মতিন, বাহাউদ্দীন ও অন্যান্যরা বক্তৃতা করল। অলি আহাদের সঙ্গে ওখানে দেখা হলাে। মিস্টার আয়ারের স্বাক্ষর করা পরীক্ষা ফরম তুলে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে জমা দিলাম হল অফিসে তৃতীয় কেরানির কাছে। বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে ফিরে এলাম। রেঞ্জ স্পাের্টস ফাইনাল। ঢাকা রেঞ্জের সেকেন্ড ইন্সপেক্টর জনাব এ রহমানের সঙ্গে কথা বললাম। ওখানে দেখা হলাে ওয়াসেক, নােয়াখালীর ইসমাইল, তফিকুল ইসলাম, কাশেম প্রমুখের। সঙ্গে। সন্ধ্যা ৬টায় স্পাের্টস শেষ হলাে। জনসন রােডে রয়েল স্টেশনারি থেকে। নােট বুক কিনলাম। রাত ৮টায় যােগীনগর এলাম। দোতলায় বসে খাবার খেলাম। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ভাবীর সঙ্গে কথা বললাম। ওই সময় তােয়াহা সাহেব ফিরলেন। এরপর অলি আহাদ এল। রাতে অলি আহাদের সঙ্গে থাকলাম। ঘুমাতে গেলাম রাত সাড়ে ১১টায়। আবহাওয়া : সত্যিকার অর্থে কোনাে শীত নেই। বি. দ্র. ১৪.২.৫২ থেকে পূর্ববঙ্গ সরকার নিরাপত্তা আইনে পাকিস্তান অবজারভারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অভিযােগ ‘লুক্কায়িত ফ্যাসিবাদ’ নামে ১২.২.৫২ তারিখের সম্পাদকীয়। ১৫.২.৫২ -শ্রীপুরভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। শ্রীপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লাম ভাের ৫টা ৫ মিনিটের ট্রেনে। শ্রীপুর পৌছে নরমপুরের সােবহান সরকারকে পেলাম। তার সঙ্গে হাসান মিয়ার খরচে চা পান। করলাম। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দাবা খেললাম। সন্ধ্যায় আবার দাবা খেললাম ফরেস্টার মােসলেম উদ্দিনের সঙ্গে।
রাত ৯টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। ফরেস্টার মােসলেম উদ্দিন অকার্যকর প্রশাসন এবং ভাওয়াল বনের পেটান নিয়ে বর্তমান বিশৃঙ্খলা বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলল। এটা মুখােমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ভাওয়াল বন ও আসিরউদ্দিন এবং করিম ও আসিরউদ্দিনকে। রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কালু মােড়ল তার বিয়ের ব্যাপার নিয়ে আমার ঘরে বসে আমার সঙ্গে আলাপ করলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ১৬.২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। দুপুরের খাবার খেয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় আবার স্কুল অফিসে গেলাম। আকরামতউল্লাহ, সােনাকারের খালেক, ফরেস্টার মােসলেম উদ্দিন প্রমুখ সেখানে এসেছিলেন। আকরামতউল্লাহর হাতে আমি আফসু-দফতুর জন্য ব্যাকরণ বই পাঠালাম। বিকেল সাড়ে ৫টায় স্কুল থেকে ফিরে এলাম। স্কুলের অফিসে যাওয়ার সময় হাটে আমাদের বাড়ির ভৃত্য সেকেন্দারকে পেয়েছিলাম। রেঞ্জার করিম সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমাকে ডিবি বাংলােতে নিয়ে গেলেন। তিনি আমাকে কিছু নথিপত্র দেখিয়ে বললেন, কীভাবে ভাওয়াল এস্টেটের বনাঞ্চলের ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। আর এতে যােগসাজশ ছিল বন বিভাগ ও ভাওয়াল। এস্টেটের উঁচু ও নিচু পদমর্যাদার একদল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তিনি আরাে বললেন, এসব দুর্নীতি তুলে ধরার কারণে ডিএফওসহ তার বিভাগ কর্তৃক তিনি কীভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন (প্রকৃতপক্ষে তার কথার শেষ অংশ সত্য। নয়-টিএ)। ভাংনাহাটির আবুল হােসেন আমাদেরকে আলাপ করতে দেখেছেন। মােয়াজ্জেম খানের দোকানে আজাদ পত্রিকা পড়লাম। তিনি আমাকে চা পান করতে দিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফিরে এলাম।
পাবুরের একজন মুসাফির ও অন্য আরাে দুইজন রাতে বাড়ির ভেতরে ঘুমাল এবং অন্য আরাে দু’জন বারান্দায় ঘুমাল। বিছানায় গেলাম মধ্যরাত ১২টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ১৭.২.৫২ সকাল পৌনে ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মুজিব সাহেব, ফরেস্টার করিম, এএসআই অলি আহমদ প্রমুখসহ স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের অফিসে ছিলাম। এরপর রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। পানের দোকানে কালু মােড়লের সঙ্গে আধ ঘন্টা রইলাম। ম্যানেজিং কমিটির সভা ডাকার বিষয়ে কথা বললাম। তিনি মুহূর্তেই সাড়া দিলেন, পরবর্তী রােববার ২৪ তারিখের জন্য। ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। দিনের শেষার্ধে পশ্চিমের বাতাস বইছিল। বি. দ্র. : মধ্যবয়সী একজন লােক অচেতন অবস্থায় ক্লাবের সামনে পড়ে ছিল। হামিদ ও মালা তাকে সরিয়ে পােস্ট অফিসের বারান্দায় নিয়ে গিয়েছিল আশ্রয়ের জন্য। কিন্তু ১০ মিনিট পরেই সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে সে মারা গেল। এটা ছিল না খেয়ে থাকার একটি পরিষ্কার ঘটনা। কারণ ম্যালেরিয়া, কালা জ্বর বা অন্য কোনাে রােগের লক্ষণ দেখা যায়নি। মালিক, এস এম কোরেশি এবং অন্যান্য অনেকে এটা দেখেছে। ১৮.২.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠলাম। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। নতুন প্রধান শিক্ষক জনাব ফজলুল করিম বিএসসি (অনার্স) আজকে যােগ দিলেন। আজ সকালে মজিদ সাহেব ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলেন।
বেলা সাড়ে ১২টায় মকসুদউদ্দিন বিশ্বাস স্কুলে এলেন। তার সঙ্গে পরামর্শ করে ম্যানেজিং কমিটির সভা ডাকলাম ২৪ ফেব্রুয়ারি, রােববার। বিকেল সাড়ে ৪টায় আবদুল খানের কাছে পিইউবি সিংহস্রীর গবাদিপশুর রােগ সম্পর্কিত রিপাের্টটি পাঠালাম। এটি সায়েন্স ভিলা ঢাকা সদর (উত্তর) ভেটেরিনরি সার্জন জয়েনউদ্দিন আহমদকে দিতে হবে। বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ক্লাবে অলি আহমদ, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর এবং ঢাকার এআরপি অফিসারের সঙ্গে পাশা খেললাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : বসন্তকালের আবহাওয়া। পাখিদের কিচিরমিচির। দিনের শেষভাগে পশ্চিমের প্রবল বাতাস ধুলাের আবরণ তৈরি করল। ১৯.২.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। খাবার খেয়ে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের কাছ থেকে বলাই বাবুর জন্য কুইনাইন নিয়ে। স্কুলে গেলাম। ফজলুর সহায়তায় বলাই বাবুর মাথায় পানি ঢাললাম। তারপর ফিরে এলাম। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত স্যানিটারি অফিসের সামনে এফ করিমের সঙ্গে দাবা খেললাম এবং ঘরে ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৮টায়। আবহাওয়া : পশ্চিমের বাতাস আর বইছে না। বসন্তের পূর্ণ ছোঁয়া। ২০.২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। স্কুলের ছেলেদেরকে আজ কলেরার টিকা দেয়া হয়েছে।
৪৫
দুপুরের খাবার খাওয়ার পর বিকেলে শরাফতের দোকানে বসলাম। দোকানে মৌলবির সঙ্গে কথা বললাম আধ ঘন্টার মতাে। স্কুলে বলাই বাবুকে দেখলাম। জ্বর তাকে নিষ্কৃতি দিচ্ছে না। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ক্লাবে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে পাশা খেললাম। তারপর ঘরে ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৮টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। রাতের শেষভাগে আকাশে খণ্ড খণ্ড মেঘ দেখা গেল। ২১.২.৫২ -ঢাকাভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকালে আমি যখন পুকুরে গােসল করতে গিয়েছিলাম তখন রফিক আমার বিছানার বালিশের নিচ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। নাশ মিয়া, জয়তুনের বাপ প্রমুখের সহায়তায় ১৪৭ টাকা আট আনার মতাে তার কাছ থেকে উদ্ধার করা গেল। এই ঝামেলার কারণে আমি সকালের ট্রেন ধরতে পারলাম না। বেলা ১২টা ১৪ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। একই কামরায় আমার সহযাত্রী ছিলেন এফ করিম ও ডা. আহসানউদ্দিন। রাজেন্দ্রপুর থেকে উঠলেন হাসান মােড়ল। স্কুল সম্পর্কিত বিষয়াবলি, তার দায়িত্ব ও ২৪.২.৫২ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য ম্যানেজিং কমিটির সভা নিয়ে আমি তার সঙ্গে কথাবার্তা বললাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ট্রেন থামতেই আমি এবং এফ করিম সেখানে নেমে গেলাম। পুরাে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিশাল জনসমাবেশ। মেডিকেল কলেজ ও অ্যাসেমরি হলের কাছে এইমাত্র পুলিশের টিয়ার গ্যাস ছােড়ার বিষয়ে লােকজন বলাবলি করছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রায় ২০ মিনিটের মতাে থেমে ডিপিআই অফিসে গেলাম। মুসলিম এডুকেশন ফান্ডের গ্রান্ট-ইন-এইডস সম্পর্কিত সহকারীর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে জানালেন এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি স্মারক পাঠিয়ে দেবেন। বেলা ৩টার দিকে আমি ওখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম। ইডেন ভবনের দ্বিতীয় গেটের কাছে আকবর আলী বেপারির সঙ্গে রেনুকে পেলাম। তিনি আমাকে বললেন, তারক সাহার বাড়ি ও বরমি বাজারের দোকানটি তিনি কিনে নেবেন। এটি কিনতে টাকার জন্য তিনি জমি বিক্রি করবেন। তার সঙ্গে কথা বলে বাসে উঠলাম এবং বেলা সাড়ে ৩টায় এসডিও (উত্তর)-এর আদালতে উপস্থিত হলাম। এসডিওর সঙ্গে তার খাস কামরায় দেখা করলাম বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে। আমাদের স্কুল ও ২৪.২.৫২ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য ম্যানেজিং কমিটির সভা নিয়ে তার সঙ্গে আলােচনা করলাম। প্রধান শিক্ষকের বিষয়াবলি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনাটি কীভাবে সুরাহা করা যায় সে ব্যাপারে আমার পরামর্শের সঙ্গে তিনি একমত হলেন। তিনি আমাকে ৩.৩.৫২ তারিখে ম্যানেজিং কমিটির একটি সভা আয়ােজন করার। জন্য বললেন। তখন তিনি শ্রীপুর থাকবেন। এরই মধ্যে তিনি আমার অনুরােধে শ্রীপুরের উদ্বাস্তু মিস্ত্রিদের ত্রাণের আবেদন অনুমােদন করলেন। তার চেম্বার ছাড়লাম বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে। আদালতের রেস্তোরায় সিআইবির অ্যাসিস্ট্যান্ট মহিউদ্দিন ও আমাকে সাদির মােক্তার নাস্তা খাওয়ালেন। বিকেল পাঁচটার দিকে আদালত ছেড়ে এলাম। কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম এবং দেরি না করে তার সঙ্গে ৯৪ নবাবপুর এএমএল অফিসে এলাম। মিনিট পাঁচেকের জন্য সেখানে থেমে কেমব্রিজ ফার্মেসিতে গেলাম। জহির ভাই এস এম জহিরউদ্দীন ও আমাদের চা। দিলেন। ডা, করিম ও আমি মেডিকেল কলেজে গেলাম। পুলিশের গুলিতে আহত ও নিহতদের মৃতদেহ দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। ডা, করিম চলে গেলেন। আমি মেডিকেল কলেজ হােস্টেলে ইতস্তত ঘােরাফেরা করে রাত ১১টায়। যােগীনগরে ফিরে গেলাম। রাতের খাবারের পর ভাবীর সঙ্গে কথা বললাম রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। বিছানায় গেলাম রাত ১টায়। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। অপেক্ষাকৃত কম ঠাণ্ডা। বি. দ্র. আজ দুপুরে খেতে পারিনি। গভীর রাত সাড়ে ৩টায় পুলিশ বাহিনী আমাদের বাড়ি ঘেরাও করল এবং যুবলীগের অফিসে তল্লাশি চালাল। তারা ক্ষতিকর বা অবৈধ কিছু খুঁজে পেল না। যুবলীগের অফিস লাগােয়া আমার শােবার ঘর, তাই আমি ঘর থেকে সরে পড়ায় তারা আমার উপস্থিতি টের পায়নি।
ভাের ৪টায় তারা চলে গেল। এরপর আর ঘুমাইনি। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট চলছে। গতকাল থেকে এক মাসের জন্য সিআর, পিসি, ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আজ বিকেলে অ্যাসেমব্লি বসেছে। ধর্মঘট পালনকারী ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে অ্যাসেমব্লি হাউসের কাছে জড়াে হয়; যাতে তাদের কষ্ঠ অধিবেশনে উপস্থিত এমএলএরা শুনতে পান। প্রথমে শুরু হলাে গ্রেফতার করা। এরপর কাঁদানে গ্যাস ছােড়া হলাে। তারপর গুলি চালানাে হলাে মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে। গুলিতে চারজন ঘটনাস্থলেই নিহত হলাে। আহত হলাে ৩০ জন। জানা যায় ৬২ জনকে জেলে পােরা হয়েছে। আরাে শােনা যায় পুলিশ কয়েকটি মৃতদেহ সরিয়ে ফেলেছে। বেসরকারি সূত্রের দাবি, মৃতের সংখ্যা ১০ থেকে ১১ জন : ২২.২.৫২ গভীর রাত সাড়ে ৩টায় উঠেছি। সকাল ৬টার দিকে মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে গেলাম। অলি আহাদকে গত রাতের তল্লাশি অভিযান সম্পর্কে অবিহিত করলাম। তাঁর সাইকেলে যােগীনগরে ফিরে এলাম। নাস্তা খাওয়ার পর বার লাইব্রেরিতে গেলাম। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সেখানে ছিলাম। সাইকেলে করে জনতা ও পুলিশি তৎপরতার বিভিন্ন দৃশ্যাবলি ঘুরে দেখলাম। যােগীনগরে ফিরলাম বেলা ১টায়। দুপুরের খাবার খেয়ে বিকেল সাড়ে ৩টায় আবার বাইরে বের হলাম। মূল সড়ক ধরে এগােলাম। মেডিকেল কলেজ ব্যারাকে ছিলাম বিকেল থেকে সন্ধ্যা সােয়া ৭টা পর্যন্ত। এফ এইচ এম হলের অ্যাসেমব্লি হলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সােয়া ৮টা পর্যন্ত হল ছাত্রদের একটি সভায় সভাপতিত্ব করলাম। অলি আহাদের সাইকেলের পেছনে চড়ে মেডিকেল কলেজের ব্যারাকে গেলাম। আমি যােগীনগরে ফিরলাম রাত সােয়া ৯টার দিকে। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : বেলা ১টা থেকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। সারারাত একই রকম থাকল। সন্ধ্যা থেকে রাতের শেষ ভাগ পর্যন্ত ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়েছে।
বি. দ্র. সকাল ১০টার দিকে জনসন রােডে মর্নিং নিউজ অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এটি পুরােপুরি ভস্মীভূত হয়ে গেছে। আজ স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকল। হাইকোর্ট, মানসী সিনেমা হল ও ডিস্ট্রিক্ট কোটের। আশপাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৫ জন নিহত হবার খবর পাওয়া গেল। বেসরকারি সূত্র অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ১২, আহত বহু।। আজ রাতেও পুলিশ আমাদের বাড়িতে অভিযান চালাল। প্রতিটি কক্ষ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তল্লাশি করল। আমি তাদের নজর থেকে পালাতে সক্ষম হই (গভীর রাত সাড়ে ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত)। এরপর আর ঘুমলাম না। সকাল পর্যন্ত ভাবীর সঙ্গে কথা বললাম। তার দুঃখ শােকে প্রবােধ দিলাম।
২৩.২.৫২ -শ্রীপুরগভীর রাত সাড়ে ৩টায় উঠেছি। নাস্তার পর সকাল সাড়ে ৮টায় বের হলাম। কেমব্রিজ ফার্মেসি থেকে ডা. করিমের সাইকেল নিয়ে মেডিকেল কলেজ ব্যারাকের উদ্দেশে রওনা হলাম। লিফলেট নিলাম। লিফলেট বিতরণ করলাম স্টেশন, নারিন্দা, সদরঘাট, পাটুয়াটুলি থেকে নবাব গেট পর্যন্ত। তারপর মেডিকেল কলেজ হােস্টেলে ফিরে এলাম। বেলা আড়াইটার দিকে যােগীনগরে পৌছলাম। দুপুরের খাবার খেয়ে বেলা ৩টায় ভাবীর সঙ্গে বসলাম। তিনি অলি আহাদ এবং এই বাড়ি সংলগ্ন পূর্ব দিকের বাড়ির এক মহিলার ব্যাপারে আলাপ করলেন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। সন্ধ্যা ৬টা ৪৯ মিনিটের ট্রেনে ঢাকা ছাড়লাম ও শ্রীপুরে ফিরে এলাম। হাসান মােড়ল প্রমুখকে বাজারে পেলাম এবং তাদের কাছ থেকে জানলাম ২১ ফেব্রুয়ারিতে আহমদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। শীত অনুভূত হলাে। আকাশ পরিষ্কার। বি. দ্র. : নাজিরাবাজার লেভেল ক্রসিংয়ে ঢাকার জনতার ওপর লাঠিচার্জ। তিনজন আহত। বিচ্ছিন্নভাবে গ্রেফতারের ঘটনা ছাড়া আর কোনাে ঘটনা বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট অব্যাহত। ২১.২.৫২ তারিখ থেকে নগরীতে কোনাে যানবাহন চোখে পড়ছে না, এমনকি একটি সাইকেল পর্যন্ত না। ট্রেন যােগাযােগ বন্ধ ছিল বেলা ১টা পর্যন্ত। ২৪.২.৫২ -ঢাকাসকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৭টায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দেখা করলাম। সেখানে নাস্তা খেলাম। তার কাছে ১৩০ টাকা গচ্ছিত রাখলাম। স্যানিটারি অফিসের সামনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জড়াে হওয়া কয়েক শ’ লােকের সমাবেশে বক্তৃতা করলাম আধ ঘন্টা ধরে। আসন্ন অনিবার্য আন্দোলনের ব্যাপারে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেল। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। ট্রেন থামল মেডিকেল কলেজের পশ্চিম গেটের কাছে। সেখানেই নেমে পড়লাম। মেডিকেল কলেজ ব্যারাকে কিছু সময় থেকে যােগীনগরে এলাম বেলা সােয়া ১২টায়। আবার মেডিকেল কলেজ হােস্টেলে এলাম এবং সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত থাকলাম। সেন্ট্রাল কমিটি অব অ্যাকশন এবং সিভিল লিবার্টিস কো-অর্ডিনেটিং কমিটির যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হলাে। সভা চলল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। যথাক্রমে এ আর খান, কে আহমদ, আবুল হাশিম, এম জি হাফিজ, জহিরউদ্দীন, মােশতাক, শামসুল হক, কে জি, গােলাম মাহবুব, খয়রাত হােসেন, অলি আহমদ খান, আনােয়ারা খাতুন, কুষ্টিয়ার শামসুদ্দিন, অলি আহাদ, তােয়াহা, গােলাম মওলা এবং আরাে অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সভায় ২৫.২.৫২ তারিখে সাধারণ ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলাে এবং তা সমর্থন ও অনুমােদন পেল। সন্ধ্যা সােয়া ৭টায় যােগীনগরে ফিরলাম। ডা. এম এ করিমের সঙ্গে তার ফার্মেসিতে দেখা করে খাবার খেয়ে ৭টা ৫০ মিনিটে ওখান থেকে বের হলাম। রাতে সিরাজের বাড়িতে থাকলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৮টায়।
৫০
গােসল করতে পারিনি। দুপুরের খাবারও খেতে পারিনি। বেলা ৩টায় মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসের আলী আসগর আমাকে নাস্তা দিয়েছিল। আবহাওয়া : ২৩,২.৫২ তারিখ থেকে শীতের মাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় বসন্তের উত্তাপের হঠাৎ উপস্থিতি বিঘ্নিত হলাে। শীত বিদায় নেওয়ার আগে এটাই হয়তাে শেষ কামড়। বি. দ্র. : আজকে গ্রেফতারের কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া আর কোনাে ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট পালিত হলাে। শুধু অল্পসংখ্যক রিকশা, সাইকেল ও প্রাইভেট গাড়ি চলাচল করছে। বাস চলাচল পুরােপুরি বন্ধ। নবাবপুর ও ইসলামপুরে অবাঙালি মালিকানাধীন দোকানগুলাে আংশিক খােলা ছিল। সামরিক ও সশস্ত্রবাহিনী পুরাে মাত্রায় টহল দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। আজ রাত ৮টা থেকে আগামীকাল ভাের পাঁচটা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। ২৫.২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। যােগীনগরে নাস্তা করলাম। বের হলাম সকাল সাড়ে ৮টায়। মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে গেলাম। বার লাইব্রেরিতে গেলাম সকাল ১১টায়। কামরুদ্দীন আহমদের কাছ থেকে খবরাখবর নিলাম। এ আর খান, জহির, জমির প্রমুখ সেখানে উপস্থিত ছিলেন (আতাউর রহমান খান প্রমুখের গ্রেফতার হওয়ার গুজবের কথা শােনা গিয়েছিল)। বেলা ১২টার দিকে মেডিকেল কলেজ হােস্টেলে ফিরে এলাম। বেলা সাড়ে ১২টায় যােগীনগর এলাম। গােসল করে ও দুপুরের খাবার খেয়ে বেলা ২টায় মেডিকেল কলেজ হােস্টেলের উদ্দেশে বের হলাম। সেন্ট্রাল কমিটি অব অ্যাকশন ও সিভিল লিবার্টিস কো-অর্ডিনেটিং কমিটির যৌথ সভা হলাে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। আতাউর রহমান খান সভাপতিত্ব করলেন। কে আহমদ, এস হক, মােশতাক, এস এ রহিম, এম এস হক ও র্যালির কে এম হাই, এমএলএ শামসুদ্দিন এবং আরাে অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সিদ্ধান্তসমূহ (১) ২৬.২.৫২ তারিখ থেকে সাধারণ ধর্মঘট প্রত্যাহার। (২) নূরুল আমিনের কাছে ৯ দফা দাবির আল্টিমেটাম।
(৩) ৫ মার্চ শহীদ দিবসে সাধারণ ধর্মঘট। (৪) ছাত্রদের ধর্মঘট অব্যাহত রাখা। শ্রীপুর থেকে ১৫ টাকা নিয়ে ইসলাম আহমদ এলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় লিফলেটসহ আমি তাকে স্টেশনে পৌছে দিলাম। যােগীনগরে এলাম সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। রাতের খাবার খেয়ে ঠাটারি বাজার এলাম। রাত সাড়ে ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : শান্ত প্রকৃতি, তবে চিমটি কাটা শীত। আকাশ পরিষ্কার। বি. দ্র. : সাধারণ ধর্মঘট। রেল চলাচল ও সচিবালয়ে যােগদান ছাড়া প্রতিটি স্তরেই। নজিরবিহীন সফলতা। মিছিল করার কোনাে নির্দেশনা না থাকলেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা হয়েছে। ঢাকার প্রধান সড়ক প্রায় ১০ হাজার লােকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। বিকেলে জনতা এস এম হলের সামনে। সমবেত হয়। বাবুপুরা পুরাতন পােস্ট অফিসের কাছে সাত জনের গ্রেফতার হবার খবর পাওয়া গেল। ১৪৪ ধারা মানার বিষয়টি কেউ। আমলে আনল না। সামরিক ও সশস্ত্র বাহিনী ১৪৪ ধারা বলবৎ করতে হতাশাপূর্ণভাবে ব্যর্থ হলাে। প্রতিটি সড়কে হাজার হাজার মানুষের ঢেউ দেখা গেল। নগরী চলে এল জনগণের আয়ত্তে। তবে কোথাও কোনাে উচ্ছলতা ছিল না, ছিল শুধু নুরুল আমিন সরকারের বিরুদ্ধে ক্রোধের। প্রকাশ। গত রাতে আবুল হাশিম ও খয়রাত হােসেন, আবদুর রশিদ তর্কবাগিশ, মনােরঞ্জন ধর, গােবিন্দ লাল ব্যানার্জি এমএলএ গ্রেফতার হয়েছেন। নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী আজ বেলা সাড়ে ৩টায় অ্যাসেমব্লি বসার কথা থাকলেও, নাটকীয়ভাবে গভর্নর অধিবেশন স্থগিত করলেন। ভােরে ঠিক সূর্য ওঠার মুহূর্তে সামরিক বাহিনী এফ এইচ এম হলে ঢুকে পড়ে এবং বল প্রয়ােগ করে হল থেকে মাইক কেড়ে নেয়। একই ধরনের। ঘটনা ঘটে জগন্নাথ কলেজ ছাত্রাবাসেও। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সামরিক বাহিনী এস এম হলে ঢুকে পড়ে এবং চেষ্টা করে তাদের মাইক কেড়ে নিতে। প্রভােস্টের মধ্যস্থতায় তারা। দুই ঘন্টা পর হলের বাইরে বেরিয়ে আসে এই শর্তে যে, মাইকের বিষয়টি প্রভােস্ট দেখবেন এবং এটি চালানাে যাবে না। পরবর্তী নির্দেশ না। দেওয়া পর্যন্ত রাত ১০টা থেকে ভাের ৫টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকল। ২৬.২.৫২। সকাল ৬টায় উঠেছি। যােগীনগরে নাস্তা খেলাম। সকাল ৮টায় সেখান থেকে বেরিয়ে মেডিকেল কলেজ হােস্টেলে গেলাম। বেলা সাড়ে ১২টায় বেরুয়ার মনিরুল হককে সঙ্গে নিয়ে বার লাইব্রেরিতে গেলাম। মনিরুল হক ও অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরােয়ানা জারিতে ফকির মান্নানের দুরভিসন্ধির ব্যাপারে কামরুদ্দীন আহমদ, গােলাম সামদানি প্রমুখের সঙ্গে দেখা করে কথা বললাম। সামদানি সাহেব খবর দিলেন, ফকির মান্নান নিজ বাড়ি থেকে অন্য কোথাও আত্মগােপন করে আছেন। সাদির মােক্তারের সঙ্গে দেখা করলাম। তাকে ফকিরের মন্দ কাজের ব্যাপারে অবহিত করলাম। বেলা ২টায় যােগীনগর ফিরে এলাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় চাঁদপুরের সিরাজকে সঙ্গে নিয়ে মেডিকেল কলেজ হােস্টেলে গেলাম। ঠিক সেই সময় সলিমুল্লাহ হল ঘেরাও করে অভিযান চালানাে হলাে। রাত সাড়ে ৮টায় যােগীনগরে ফিরে এলাম। রাতের খাবার খেয়ে রাত সাড়ে ৯টায় ঠাটারি বাজারে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতােই। বি. দ্র. : সেন্ট্রাল কমিটি অব অ্যাকশন ও সিভিল লিবার্টিস কো-অর্ডিনেটিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ থেকে শহরের সর্বত্র স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলাে। লাগাতার ৫ দিন ধর্মঘট চলার পর রিকশাওয়ালাদের মতাে দরিদ্র জনগণ তাদের বিরাম দেওয়ার জন্য আমাদের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করল। আজ বিকেলে সলিমুল্লাহ হলে ঘেরাও দিয়ে অভিযান চলানাে হয়। হাউস টিউটর ড. মফিজউদ্দীন ও ২৩ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশি অ্যাকশনের পুরাে সময় উপাচার্য ও প্রভােস্টকে হলের কাছে। আটক রাখা হয়। মেডিকেল হােস্টেলে অভিযান চালানাে হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। পুলিশের গুলিতে নিহত রফিকুর রহমানের স্মৃতির উদ্দেশে নির্মিত স্তম্ভ সকাল সাড়ে ৯টায় এ কে শামসুদ্দিনের উপস্থিতিতে উদ্বোধন করেন। তার পিতা শফিকুর রহমান।
পুলিশ স্তম্ভটি ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয় এবং একটি একটি করে ইট খুলে ফেলে। কোনাে তল্লাশি চালানাে হলাে না। কাউকে গ্রেফতার করা হলাে না। সন্ধ্যা সােয়া ৭টায় পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়। অধ্যাপক মােজাফফর আহমদ চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, ড. পিসি চক্রবর্তী এবং জগন্নাথ কলেজের অজিত গুহকে গতরাতে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। টের পাওয়া যাচ্ছে খুবই জোরেশােরে গ্রেফতার অভিযান চলবে। জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের মিথ্যা কাহিনী। প্রচার করা হচ্ছে। এবং কোনাে কারণ ছাড়াই এ বিষয়ে হিন্দুদেরকে টেনে আনা হচ্ছে। ২৭.২,৫২ ভাের সাড়ে ৬টায় উঠেছি। যােগীনগরে নাস্তা করলাম। সকাল ৮টায় বের হলাম। মেডিকেল কলেজ হােস্টেলে যাওয়ার পথে মওলানা জব্বার, আমিরুল ইসলাম, হেড ক্লার্ক রাকিবউদ্দিন প্রমুখের সঙ্গে এফ এইচ এম হলে দেখা করলাম। সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মেডিকেল হােস্টেলে ছিলাম। সকাল পৌনে ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বার লাইব্রেরিতে ছিলাম। আতাউরর হমান খানের খসড়া করা একটি বিবৃতি নিলাম। আন্দোলনের সঙ্গে ধ্বংসাত্মক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের যােগসূত্র স্থাপনে সরকারের জঘন্য প্রচেষ্টার মুখােশ উন্মােচন করার উদ্দেশ্যেই এ বিবৃতি। কামরুদ্দীন আহমদ, জহির, জমির ও অন্যদের সেখানে পেয়েছি। জেলে দেখা করার জন্য আবুল হাশিমের ছেলে উমর একটি দরখাস্ত নিল। এটি লিখে দিয়েছেন কামরুদ্দীন আহমদ। বেলা আড়াইটায় যােগীনগর পৌছলাম। দুপুরের খাবার খেয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় বের হলাম। সােজা গেলাম মেডিকেল কলেজ হােস্টেলে। আমাদের সেন্ট্রাল কমিটির মূল কর্মী ও সদস্যরা গতকালের অভিযানের পর অন্যত্র সরে পড়েছে। সূর্যাস্তের পর অলি আহাদ আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি আমার তৈরি করা বিবৃতিটিতে স্বাক্ষর করলে তা প্রকাশ করার জন্য সব সংবাদ মাধ্যমে পাঠানাে হলাে। তারপরে সে তার নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে চলে গেল। রাত সাড়ে ৯টায় ডাক্তারের ওখানে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : রাতের আকাশ পুরাে মেঘাচ্ছন্ন। সকালের দিকে ঘন কুয়াশার আবরণ। রাতে অপেক্ষাকৃত কম ঠাণ্ডা। বি. দ্র. : পূর্বে দেওয়া জামিন বাতিল করে হামিদুল হক চৌধুরী এবং পাকিস্তান অবজারভারের সম্পাদক এ সালমাকে আজ কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
২৮.২.৫২ সকাল ৮টায় উঠেছি। যােগীনগরে নাস্তা করলাম। পৌনে ৯টায় বের হয়ে সােজা গেলাম মেডিকেল কলেজ হােস্টেলে। এস আই জাহিদিকে সঙ্গে নিয়ে এস এম হলে গেলাম এবং অ্যাসেমব্লি হলের সভায় যােগ দিলাম। সভাপতিত্ব করল আসাদ। আনােয়ার, মকসুদ বিশ্বাস, জিনু, মুখলেসুর রহমান এবং আরাে অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সরকারের অপপ্রচারের মুখােশ খুলে দেওয়ার ব্যাপারে আমার দেওয়া প্রস্তাব গৃহীত হলাে। মেডিকেল কলেজ হােস্টেলে ফিরলাম সাড়ে ১১টায়। তখন কামরুদ্দীন আহমদ চলে গেলেন। বেলা সাড়ে ১২টায় যােগীনগর চলে এলাম। দুপুরের খাবার খেয়ে বেলা আড়াইটায় বার লাইব্রেরির উদ্দেশে বের হলাম। আমাদের ৯ দফা দাবির ব্যাপারে সাখাওয়াত হােসেনের মাধ্যমে মন্ত্রী আফজালের পাঠানাে আপস ফর্মুলা নিয়ে কামরুদ্দীন আহমদ, জমির, জহির ও আমি আলােচনা করলাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় বের হলাম। সােজা গেলাম মেডিকেল কলেজ হােস্টেলে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অলি আহাদ ১৫/৬ এ আমার সঙ্গে দেখা করল। সে চলে গেল। রাত ৮টায়। আমি সােজা যযাগীনগর ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : শীত কমেছে, আকাশ পরিষ্কার।
৫৫
২৯.২.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠেছি। যােগীনগরে নাস্তা করলাম। পৌনে ১০টায় বের হলাম মেডিকেল কলেজ হােস্টেলের উদ্দেশে। সেখানে মতিন, এস আই জাহিদি এবং সাদিককে পেলাম। বার লাইব্রেরিতে গেলাম। কামরুদ্দীন আহমদ, জমির প্রমুখের সঙ্গে দেখা করলাম। মেডিকেল কলেজ হােস্টেলের উদ্দেশে বের হলাম বেলা সাড়ে ১২টায়। সেখানে গিয়ে দেখি পুলিশ বাহিনী হােস্টেল ঘেরাও দিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। সব কক্ষেই তন্ন তন্ন করে তল্লাশি চালানাে হলাে। ভৃত্যদের ও এক ছাত্রকে গ্রেফতার করা হলাে। কিছুই পাওয়া যায়নি। মতিন অন্যত্র চলে গেছে। জাহিদি ও সাদিক পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছে। বেলা দেড়টায় যােগীনগর ফিরে এলাম। তােয়াহা সাহেব কিংবা অলি আহাদের তথ্য পাবার আশায় দুপুরের খাবার খাওয়ার পর আর বাইরে বের হলাম না। কিন্তু কোনাে কিছুই আমার কাছে পৌছল না। রাত সাড়ে ৮টায় চলে এলাম ডাক্তারের ওখানে। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : ঠাণ্ডা নেই। গায়ে কিছু না দিয়েই রাত কাটিয়ে দিলাম। যদিও একটি জানালা খােলা ছিল। বি. দ্র. সকালে বরকত আমাকে বলল, গত রাতে অলি আহাদ গ্রেফতার হয়েছে। সারাদিন ও রাত উদ্বেগের মধ্যে কাটালাম। খবরের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি কোনােটিই পেলাম না। কোনাে বার্তা নেই। ফলে অধিক উদ্বেগ। ১. ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগ থেকে পাটের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে নেমে গেছে। গুণ ভেদে প্রতি মণ পাটের গড় মূল্য সর্বোচ্চ ৪০ টাকা ও সর্বনিম্ন ২৮ টাকা থেকে নেমে হয়েছে মণ প্রতি সর্বোচ্চ ২৫ টাকা। গত বছর এই দিনে যে কোনাে ধরনের পাটের মূল্য ছিল মণ প্রতি ৫০ টাকা। গ্রামের বাজারগুলােতে সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা দরেও বিক্রি হয়েছে। এ বছর চাষীরা তাদের নিজস্বমতাে ও সরকারের প্রচারণার কারণে উচ্চ মূল্য পাবার আশায় জরুরি প্রয়ােজন সত্ত্বেও নিজেদের হাতে পাট ধরে রাখে। কৃষকের উচ্চ মূল্য পাবার যে আশা ছিল, তা হৃদয়হীন কারবারীরা এখন উপভােগ করছে। কারবারীদের ষড়যন্ত্র এবং সরকারের চিন্তাভাবনা, পরিকল্পনাহীন মেকি সস্তা পরামর্শের কাছে চাষীদের নতি স্বীকার করতে হয়েছে। জনগণ বিশেষত কৃষিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলাে। এই দুটি শ্রেণীর মােট জমা পাটের ৯০ শতাংশই ব্যবসায়ীরা হাতে ধরে রেখেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও এই ভাগবাটোয়ারায় আছে। মৌসুমের শুরুতে এরাই উচ্চ দরে প্রতি মণ পাট ৩০/৩৫ টাকায় কিনেছে। পাটের এই দরপতন জাতীয় অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রেই একেবারে আঘাত হেনেছে। সবার মনেই পুরাে হতাশাবােধ বিরাজ করছে। পরিস্থিতি যদি না পাল্টায় তাহলে কৃষি শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়বে নিশ্চতভাবেই। দেশীয় পণ্যের দামে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে সে তুলনায় বিদেশীপণ্যের দাম আগের মতােই আছে।
২. যথেষ্ট অদ্ভুতভাবে ধানের মূল্য উঁচু আছে, যেমনটা পাটের উচ্চমূল্যের সময় ছিল। প্রতি মণ ধান গড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। এ বছর ধানের উৎপাদন ভালাে। গত বছরের মােট উৎপাদনের চেয়ে বেশি। লােকজন শঙ্কিত হয়ে উঠছে অর্থনৈতিক মন্দার ক্ষতিকর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের দিক থেকে কোনাে উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। কিংবা বিষয়টি নিয়ে তারা আদৌ মাথা ঘামাচ্ছে কি না তারও কোনাে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। শুধু বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে কয়েকজন এমএলএ সরকারের পাটনীতির বিরুদ্ধে মায়া কান্নার সুর তুলেছেন।
– শ্রীপুর –
১মার্চ, শনিবার সকাল ৬টায় উঠেছি। যােগীনগরে নাস্তা সেরে সকাল সাড়ে ৮টায় বের হলাম। সকাল সাড়ে ৯টায় কামরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে দেখা করলাম। ঠিক সে সময় দুজন ছাত্র কামরুদ্দীন আহমদের হাতে তােয়াহা সাহেবের লেখা একটি চিরকুট দিল। সকাল সােয়া ১০টায় বেরিয়ে পড়লাম। রায়সাহেব বাজারে কাপাসিয়ার রশিদ মিয়ার সঙ্গে দেখা করলাম। তার সঙ্গে বেলা ১১টা পর্যন্ত কথা বললাম। এরপর সােজা যােগীনগর ফিরে এসে সঙ্গে সঙ্গেই আমার জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। নবাবপুরে কিছু কেনাকাটা করলাম। বেলা ১২টা ১৮ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। পাবুরের নেওয়াজ আলী আমার সঙ্গে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত ছিলেন। আমি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন এবং সরকারের জঘন্য ভূমিকা নিয়ে কথা বললাম। একজন হাবিলদারের নেতৃত্বে সশস্ত্র পুলিশের একটি দল আমার কথা মনােযােগ দিয়ে শুনল। আমার ধারণা, সহানুভূতির খাতিরে হাবিলদার আমাকে এক গ্লাস খেজুরের রস সাধলেন। রাজেন্দ্রপুর থেকে কয়েকজন অভিযুক্তসহ এএসআই অলি আহমদ ট্রেনে উঠলেন। ট্রেনের কামরায় তখন আরাে ছিলেন ওসি এবং এসআই এন হক। বেলা সােয়া ২টায় শ্রীপুর পৌছলাম। হাবিলদার আমাকে বিদায় জানালেন।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ডা. আহসানউদ্দিন, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও অন্যান্য আরাে অনেকের সঙ্গে আন্দোলন নিয়ে আলােচনা করলাম। রাত ১০টা পর্যন্ত ইসমাইল খানের দোকানে কালু মােড়লের সঙ্গে ছিলাম। সেখানে। এম বিশ্বাসকে ডেকে আনা হয়েছিল। এম বিশ্বাস স্কুলের সহায়তা বাবদ প্রাপ্ত অর্থের ব্যাপারে কালু মােড়লকে কিছু মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া। তথ্যের কিছুই প্রমাণিত হলাে না। সােজা ঘরে ফিরলাম এবং খাবার খেয়ে সােজা বিছানায়। আবহাওয়া : হালকা শীত। রাতে গায়ে কিছু দেওয়ার প্রয়ােজন হলাে। ২.৩.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। ছেলেরা উপস্থিত হয়নি। ১৯৫০-৫১ সালের হিসাবপত্র অডিটের জন্য প্রস্তুত করতে এম বিশ্বাসকে খাতা দিলাম। দর্জির দোকান থেকে পায়জামা, অন্তর্বাস ও প্যান্ট নিলাম। তারপর বেলা ১২টার দিকে আমার রুমে ফিরে এলাম। বেলা ১টার দিকে নিগুয়ারির আজিজ মিয়া এলেন। তিনি দুপুরের খাবার খেলেন এবং তরগাঁওয়ের উদ্দেশে বের হলেন বেলা ৩টার দিকে। বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মােবারক ভূঁইয়ার দোকানে ছিলাম। অডিটের কাজ করার জন্য এম বিশ্বাসকে সেখানে দিস্তা কাগজ দিলাম। কথা বললাম সাম্প্রতিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে মুসলিম লীগ সরকারের কার্যক্রম এবং পাশাপাশি গত সাড়ে ৪ বছরের সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে। এম ভূঁইয়া, এএসআই অলি আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে এফ করিম ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দাবা খেললাম। তারপর ঘরে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : রাতে আকাশে মেঘ জমল। বাতাস বইতে লাগল রাতের শেষভাগে। শেষ রাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত আছে।
বি. দ্র. সকাল ৮টার দিকে হাকিম মিয়া আমাকে জানাল যে, এস আহমেদ মােড়ল বুলবুলের সঙ্গে নাস মিয়ার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি আমার সম্মতির ওপর জোর দিয়েছেন। ৩,৩.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। এম বিশ্বাসের বাড়িতে ছিলাম সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। এফ করিম পরে সেখানে আসেন। অডিট স্টেটমেন্টের জন্য ফরম তৈরি করলাম। বিশ্বাস আমাদের মুড়ি খেতে দিলেন। দুপুরের খাবারের পর বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে আবার স্কুলের অফিসে গেলাম এবং বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অফিসের কাজ করলাম। বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত ঢাকা থেকে আসা এক অবাঙালি ভদ্রলােকের সঙ্গে ক্লাবে পাশা খেললাম। তারপর ঘরে ফিরলাম। রাত ৯টার দিকে ঢাকায় যাওয়ার পথে ওয়ারিস আলীকে সঙ্গে নিয়ে আক্কাস আলী। আমার রুমে এসে আমার সঙ্গে দেখা করল। আক্কাস আলীর মামলা সংক্রান্ত ব্যাপারেই তাদের এই ঢাকায় যাওয়া। রাত সাড়ে ৯টার ফিরতি ট্রেনে তারা উঠে পড়লেন। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : মধ্য দুপুর পর্যন্ত দিনটি মেঘাচ্ছন্ন থাকল। বিকেল থেকে মেঘ সরে যেতে লাগল। রাতে আকাশ পুরােপুরি পরিষ্কার। ভালাে শীত পড়েছে। সাধারণভাবে তাপমাত্রা কম। ৪.৩.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। হাসান মােড়ল, কালু মােড়ল, এম বিশ্বাস ও আমি ইসমাইল খানের দোকানে সকাল ৮টার দিকে বসলাম এবং অডিটের বিষয়ে আলােচনা করলাম। এ ছাড়াও আগামীকাল ঢাকা যাওয়ার ও অন্যান্য খরচ হিসেবে এম বিশ্বাসকে দেওয়ার জন্য টাকা যােগাড়ের ব্যাপারেও কথা বললাম। হাসান মােড়ল আগামীকাল সকালে ৭০ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কালু মােড়ল স্কুলে গিয়েছিলেন, তখন এম বিশ্বাস ও আমি সেখানে ছিলাম। তিনি চলে যান বেলা ১১টায়। সাড়ে ১১টায় রইসুদ্দিন ভূঁইয়া আমার সঙ্গে স্কুলে দেখা করলেন। দুপুরে খাবার খেয়ে বেলা ৩টায় আবার স্কুলের অফিসে গেলাম। এফ করিম ওখানে। আমার সঙ্গে যােগ দিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত আমরা ফি আদায়ের একটি হিসাব তৈরি করতে কাজ করলাম। ৮টার দিকে ঘরে ফিরলাম। রাতের খাবার খেয়ে রাত পৌনে ৯টায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। তার সঙ্গে ভাষা আন্দোলন ও দেশের অন্যান্য সমস্যা নিয়ে সরকারের মনােভাব সম্পর্কে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত কথা বলে ফিরে এলাম। স্কুলের জন্য আমি যে টাকা খরচ করেছি তা টুকে রাখলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১২টায়। আবহাওয়া : পরিষ্কার আকাশ। আগের মতােই ঠাণ্ডা পরিবেশ। সকাল ৬টায় উঠেছি। স্কুলে ছিলাম সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। আজ ছেলেরা স্কুলে যােগ দেয়নি। আজ সকাল ৮টা ১৪ মিনিটের ট্রেনে প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক এম বিশ্বাসের ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল এবং আমি সব কিছু প্রস্তুত করেছিলাম। শেষ মুহূর্তে তিনি রওনা হওয়া থেকে বিরত রইলেন। ক্লাবে বেলা ২টা পর্যন্ত ঘাগােটিয়ার আকতারউদ্দিন ফকিরের সঙ্গে কুটির শিল্প নিয়ে প্রায় ঘন্টা দুয়েক আলাপ করলাম। এরপর তিনি চলে গেলেন এবং আমি আমার কক্ষে ফিরলাম। সূর্যাস্তের পর বলাই বাবু ও এ আলীকে সঙ্গে নিয়ে এম বিশ্বাসের বাড়িতে গেলাম। সেখান থেকে ক্লাবে গেলাম সন্ধ্যা ৭টায়। এএসআই অলি আহমদের সম্মানে আয়ােজিত বিদায় সংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করলাম। আজ রাতেই তিনি বদলি হয়ে কেরানীগঞ্জ থানায় যাচ্ছেন। ইদ্রিস কোরেশি, এস এম উষা বাবু, এফ করিম, প্রধান শিক্ষক ও এ মালেক বক্তব্য রাখলেন।
সবাইকে চা দিয়ে আপ্যায়ন করালেন ডাক্তার। আমার বক্তৃতার পর অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটল রাত ৮টার দিকে। রাত প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দাবা খেললাম। তারপর ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। দুপুর ১টায় টুকু মিয়া ও দুলা মিয়া আরাে দুইজন লােককে সঙ্গে নিয়ে কালু। মােড়লের বাড়িতে এসেছিলেন। টুকু মিয়ার মেয়ের সঙ্গে কালু মােড়লের বিয়ে নিয়ে আলাপ করতে। কালু মােড়লের আসার প্রত্যাশায় রাতে তারা আমার রুমে থেকে গেলেন। কিন্তু তার দেখা পাওয়া গেল না। ৬.৩.৫২ -ঢাকাভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। স্কুলে ছিলাম সকাল ১০টা থেকে বেলা সােয়া ১২টা পর্যন্ত। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে এম বিশ্বাসকে ১৯৫০-১৯৫১ সালের অডিট হিসাবপত্র সগ্রহ করতে ঢাকায় পাঠানাে হলাে। শামসুদ্দিন তার সঙ্গে গেলেন। বেলা ১২টা ১৪ মিনিটের ট্রেনে আমিও ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। ঢাকা স্টেশন পর্যন্ত একই কামরায় রইসউদ্দিন ভূঁইয়া আমাকে সঙ্গ দিলেন। দুপুর সােয়া ২টায় পৌঁছলাম। সােজা যােগীনগর গেলাম। ওখানে খাবার খেলাম। ভাবীকে ৫০ টাকা দিলাম। মেসার্স। মির্জা এম হােসেন অ্যান্ড কোম্পানিতে গেলাম দুপুর সাড়ে ৩টায়। তবে সেখানে কাউকে পেলাম না। বিকেল ৪টায় গেলাম জিন্দাবাহার। বিকেলে ৫টা পর্যন্ত কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর তার সঙ্গে রিকশায় রমনা রেস্ট। হাউস পর্যন্ত গেলাম। সেখানে তিনি একটি শ্রমিক সভায় যােগ দিলেন এবং আমি । যােগীনগর ফিরে এলাম। রাতের খাবারের পর রাত ১১টায় ভাবীর দুইজন আত্মীয়কে নিয়ে ডা. করিমের বাসায় এলাম এবং সেখানে রাতে থেকে গেলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১১টায়। আবহাওয়া : আজকে ঠাণ্ডা নেই। শুধুমাত্র সকালের দিকে মৃদু শীত অনুভূত হলাে।
৭.৩.৫২ -শ্রীপুরভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টায় বের হলাম। সােজা গেলাম মির্জা অ্যান্ড কোম্পানিতে। সেখানে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে পেলাম। পরে এম বিশ্বাসকে। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আমাকে নাস্তা খাওয়ালেন। এম বিশ্বাস আমাদের সঙ্গে দিল্লি রেস্তোরাঁয় ছিলেন।। সকাল ১০টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কথা বললাম। তারপর তাদের ছেড়ে আমি বার লাইব্রেরিতে গেলাম। এ আর খান, অলি আহমদ খান এমএলএ, জমির প্রমুখের সঙ্গে কথা বললাম। সকাল সাড়ে ১১টায় বের হয়ে কেমব্রিজ ফার্মেসি হয়ে যােগীনগরে ফিরলাম। কোর্টে চালাকচরের শামসুল ইসলামের সঙ্গে দেখা হলাে। শামসুল ইসলাম জানালেন, তিনি সাব ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছেন এবং শাহবাগে প্রশিক্ষণরত আছেন। বেলা সাড়ে ৩টায় বের হলাম। আতাউর রহমান খানের ওখানে গেলাম বিকেল ৪টায়। নাসির, এস এ রহিম, জমির প্রমুখ ওখানে এলেন প্রয়াত বরকতের পক্ষে একটি মামলা রুজু করার ব্যাপারে পরামর্শ করতে। প্রগ্রেসিভ রাইটার্স অ্যাসােসিয়েশনের ইউসুফ হাসান সেই সময় সেখানে এলেন। তিনি আমাদের বললেন, গত রাতে নারায়ণগঞ্জে তার নিজ বাড়ি থেকে তিনি গ্রেফতার হন মিথ্যা একটি অভিযােগে। তাকে অভিযুক্ত করা হয় পূর্ববঙ্গের। কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। তবে সকালে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় তার বিরুদ্ধে আইবির সুনির্দিষ্ট রিপাের্ট না থাকায়। হাইলজোরের ইউসুফ আলী ও মােমতাজ আলী ওখানে এসেছিলেন। তাদের মামলা আগামীকাল আদালতে উঠবে। আমি সন্ধ্যা ৬টায় বেরিয়ে এলাম। ৪৭ ঠাটারি বাজারে গেলাম ও ৫ মিনিট কথা বলে স্টেশনে এলাম। রাত ৯টায় শ্রীপুর ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। রাতের শেষভাগে আকাশ ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে
গেল।
৮,৩.৫২ ঘুম থেকে উঠলাম ভাের সাড়ে ৫টায়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সােয়া ১১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। ক্লাসের সময়টাতে কোনাে শিক্ষক উপস্থিত না হওয়ায় ছাত্রদের ছুটি দেওয়া হলাে। স্কুলের কাজ, সরকারি অনুদান প্রভৃতির জন্য হাসান আলী মােড়লকে আনতে বেলা ১২টা ১৪ মিনিটের ট্রেনে রাজেন্দ্রপুর গেলাম। কিন্তু তাকে খুঁজে পেলাম না। নারায়ণগঞ্জ স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুতির কারণে বেলা ২টা ১৭ মিনিটে শ্রীপুর পৌছানাের ট্রেনটি ৪ ঘন্টা দেরি করল। শ্রীপুর পৌছলাম সন্ধ্যা ৬টার দিকে। কালু মণ্ডল একই ট্রেনে ফিরলেন। এফ করিমও ফিরলেন। টুকু মিয়া আমার সঙ্গে রাতের খাবার খেলেন। এরপর তিনি গফরগাঁওয়ের উদ্দেশে ট্রেনে রওনা হলেন। দুপুরে খাবার খেতে পারিনি, গােসলও করা হয়নি। রায়পুর রেল স্টেশনে গফুর ও সেকেন্দার আমাকে ডাবের পানি দিয়েছিল। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : শীতবিহীন সন্ধ্যা। মধ্য রাতের দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে প্রবল ঝড় উঠল। পরে হলাে হাল্কা বৃষ্টি যা আলতােভাবে মাটি ভিজিয়ে দিল। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে ঝড় চলল। ঝড় লােকজনের ঘরবাড়ি ও গাছপালা প্রভৃতির ক্ষতি করল। রাতের শেষ প্রহরে শীত অনুভূত হলাে। ৯.৩.৫২ ঘুম থেকে উঠলাম সকাল ৬টায়। স্কুলের অফিসে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। কালু মােড়ল, হাসান। মােড়ল প্রমুখের সঙ্গে অফিসের কাজ করলাম। আবার বিকেল ৩টায় স্কুলে গেলাম। স্কুলের পর অফিসে কাজ করলাম বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। আবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এফ করিম, কালু মােড়ল হাসান মােড়লের সঙ্গে স্কুলের অফিসে ছিলাম। এম বিশ্বাসের সঙ্গে নগদ হিসাবের খতিয়ান
৬৫
টানলাম। ১৯৫১ সালের পরীক্ষায় ২৩৫ টাকা তসরুফের বিষয়টি ধরা পড়ল। প্রধান তসরুফকারীও চিহ্নিত হলাে। রাত ১১টার দিকে আমি আমার ঘরে ফিরলাম। এম বিশ্বাস ও বলাই বাবুকে এক সঙ্গে স্কুলের মাঠে হাঁটা অবস্থায় রেখে এফ করিম তার নিজের ঘরের উদ্দেশে চলে গেলেন। সন্ধ্যায় আবুল হােসেন ও আক্কাস আলী মৌলবির উপস্থিতিতে এম বিশ্বাস আমাকে ডেকে পাঠালেন। কিন্তু আমাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলা হলাে না। কালু মােড়লের বাড়িতে আমার সঙ্গে টুকু মিয়া ও দুলা মিয়া দুপুরের খাবার খেলেন। বিকেলে নান্না মিয়া এসে তার বিয়ের ব্যাপারে আলাপ করলেন। তারপর চলে গেলেন। আমার রুমে বসে স্কুলের কাজ করলাম রাত সােয়া ১টা পর্যন্ত। তারপর বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন ও রাত আকাশ অনুজ্জ্বল ও ছায়াময়। সূর্য বরাবর আড়ালে রয়ে গেল। রাতে সামান্য ঠাণ্ড। ১০.৩.৫২ -ঢাকা যাওয়া এবং ফিরে আসাসকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। ফরেস্টার মােসলেম উদ্দিন, ইজ্জত আলী সরকার প্রমুখ একই কামরায় আমার সঙ্গী হলেন। সােজা গেলাম ঢাকা রেঞ্জের ইন্সপেক্টর অব স্কুলের দফতরে। কেরানিদের দিয়ে। কোনাে কিছু করাতে পারলাম না। দুপুর ১২টার দিকে কোর্টে এলাম। আতাউর রহমান খান, জমির প্রমুখের সঙ্গে দেখা করলাম। এর আগে ডা. করিমের সঙ্গে তার ফার্মেসিতে দেখা করেছি। তাদের কাছ থেকে জানলাম ৭.৩.৫২ (শুক্রবার) রাতে তােয়াহা সাহেব, অলি আহাদ, মতিন এবং অন্যান্যরা গ্রেফতার হয়েছেন। কোটে উপস্থিত কামরুদ্দীন সাহেব, এ টি মুস্তাফা প্রমুখের সঙ্গে দেখা করলাম। বেলা দেড়টায় জনাব এফ রহমান ভূইয়ার সঙ্গে তার অফিসে দেখা করলাম। পৌনে ৩টায় আবার ইন্সপেক্টর অব স্কুলের অফিসে গেলাম। জনাব এ রহমানের সঙ্গে দেখা করলাম। তাকে শ্রীপুর এইচ ই স্কুলের অবস্থা সম্পর্কে জানালাম। বিকেল ৫টার দিকে অফিস থেকে বের হলাম। বিকেল সাড়ে ৫টায় কামরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে দেখা করলাম। মেট্রো থেকে ঘড়ি নিলাম ও স্টেশনে এলাম। সন্ধ্যা ৬টা ৪৯ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুর ফিরে গেলাম। রন্তু, আসিরউদ্দিন আমার সঙ্গী হলেন। রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বৃষ্টিস্নাত দিন রাত। সমস্ত দিন রাত থেমে থেমে বৃষ্টি। শুধুমাত্র গুড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। নিষ্প্রভ পরিবেশ। মৃদু ও সহনীয় ঠাণ্ডা। বি. দ্র. রেঞ্জ ইন্সপেক্টরের অফিসে পেয়েছিলাম মওলানা এ আজিজ, ওয়ারিস আলী, মতিন মিয়া প্রমুখকে। দুপুরের খাবার খাওয়া ও গােসল হয়নি। শুধু নাস্তার ওপর ছিলাম। ১১.৩.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। দোলযাত্রার কারণে স্কুল আজ বন্ধ। সকাল প্রায় ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এফ করিমের সঙ্গে স্কুলের অফিসে কাগজপত্র দেখলাম। সকালে হাসান মােড়ল ও কালু মােড়লকে সরকারি অনুদান বিল পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার কথা জানালাম। দৃশ্যত তারা কোনাে মনােযােগ দেখালেন না। বাড়ি থেকে আফসারউদ্দীন এসেছিল। আমার সঙ্গে খাবার খেয়ে দুপুর দেড়টার দিকে সে চলে গেল। বাড়ির জন্য আমি ৬০ টাকা দিলাম। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বিশ্বাসের পাঠাগারে আক্কাস আলী মৌলবি ও আবুল হােসেনের সঙ্গে কথা বললাম। তারপর ঘরে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আহমদ আলী মণ্ডল আজ কারাগার থেকে মুক্ত হলেন এবং আমার সঙ্গে রাত ৯টার দিকে দেখা করলেন। দেওনার সাইদ আলী আজ রাতে আমার সঙ্গে থাকল। রাত ৮টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বিকেল থেকে আকাশের মেঘ কাটতে শুরু করল। রাতের আকাশ পরিষ্কার। ভালাে ঠাণ্ডা।
-ঢাকা ও ফিরে আসাসকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে উঠলাম ঢাকার উদ্দেশে। সােজা গেলাম রেঞ্জ ইন্সপেক্টরের অফিসে। কিছুই করা গেল না। ডা. করিমের সঙ্গে তার দোকানে দেখা করলাম। তারপর ভাবীর সাথে তার বাসায় দেখা করলাম। শ্রীপুরের উদ্দেশে বেলা ১২টা ১৮ মিনিটের ট্রেনে উঠলাম ও ফিরে এলাম। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে স্কুলের রেকর্ডপত্র ও হিসাবের বইগুলাে নিয়ে বাঘিয়ার উদ্দেশে রওনা হলাম। আখতার উদ্দিন মাস্টারের বাড়িতে পৌছলাম সন্ধ্যায়। খাবার খেলাম ও রাতে সেখানে থাকলাম। গিয়াস ভাইসাহেব আমার সঙ্গে ওখানে দেখা করলেন। রাত আড়াইটা পর্যন্ত আকতার মাস্টারকে নিয়ে কাজ করলাম। তারপর বিছানায় গেলাম।। আবহাওয়া : পরিষ্কার দিন। রাতের বেলা গায়ে চিমটি কাটা শীত।
১৩.৩.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। মফিজউদ্দীন সাহেবের জন্য একটি চিরকুট লিখলাম। নাস্তা সেরে সকাল সাড়ে ৮টায় আকতার মাস্টারকে সঙ্গে নিয়ে সাইকেলে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। পৌছলাম সকাল সােয়া ১০টায়। স্কুলের কাগজপত্র নিয়ে সারাদিন আমার ঘরে বসে কাজ করলাম। দুপুরের খাবার পাঠাল আহমদ। এফ করিম বিকেলে আমাদের সাহায্য করলেন। রাত ৮টার পর আবার কাগজপত্র নিয়ে বসলাম এবং রাত ১২টার দিকে উঠলাম। তারপর বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতােই। রাতে তীব্র শীত । বিশেষ করে ভােরের দিকে। বি. দ্র. স্কুল কমিটির কাছ থেকে কোনাে সহযােগিতা পেলাম না। সেক্রেটারিকে খুঁজে পাওয়া গেল না। জয়দেবপুর থেকে স্ট্যাম্প আনা হলাে। সেক্রেটারি ও কমিটি কোনাে রকম আগ্রহ দেখাল না।
১৪.৩.৫২ -ঢাকা
সকাল ৬টায় উঠেছি। বেলা ১২টা পর্যন্ত স্কুলের কাগজপত্র নিয়ে আমার ঘরে আমি ও আকতারউদ্দিন মাস্টার কাজ করলাম। কাওরাইদ থেকে ঢাকার উদ্দেশে মেইল ট্রেনে উঠলাম সন্ধ্যা ৬টা ২১ মিনিটে। আমরা কাওরাইদ গিয়েছিলাম সােয়া ২টার আপ ট্রেনে। প্রথম শ্রেণীর ওয়েটিং রুমে এ এস এম শফিউদ্দিন আমাদেরকে নাস্তা দিলেন। আমার অনুরােধে আকতার মাস্টার আমার সঙ্গী হলেন। ঢাকায় পৌছলাম রাত ৯টায়। টঙ্গীতে আপ ট্রেনে হাসান মােড়লের সঙ্গে দেখা হলাে। তাকে অনুরােধ করলাম। পরের দিন অবশ্যই সম্মতির দলিলটি সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় আসার জন্য। ৫১ বংশালে থামলাম। কবির, হাকিম মিয়া প্রমুখ ওখানে ছিল। রাত প্রায় ১২টা। পর্যন্ত সিঅ্যান্ডডি ফরম পূরণে আকতার মাস্টার ও আমি কাজ করলাম। তারপর বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সমস্ত দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে ছিল। একবারও সূর্য দেখা যায়নি। রাতে ঠাণ্ডা কম। ১৫.৩.৫২
-শ্রীপুরভাের সাড়ে ৫টায় উঠলাম। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কাগজপত্র তৈরি করার কাজ শেষ করলাম। আকতার মাস্টারকে সঙ্গে নিয়ে স্টেশনে গেলাম। হাসান মােড়লের সঙ্গে দেখা করলাম। স্টেশন রােডে (পূর্ব) একটি রেস্তোরায় বসে ফরমে তার স্বাক্ষর নিলাম। তিনি আমাদের নাস্তা খাওয়ালেন। সকাল ১১টার দিক থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা কোর্টে (এসডিও উত্তরের এজলাস) ছিলাম। খাবার খেলাম গ্রীন হােটেলে। আবার দুপুর দেড়টার দিকে রেঞ্জ ইন্সপেক্টরের অফিসে গেলাম। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। অপেক্ষা করে চলে এলাম। কিছুই করা গেল না। আগামী সােমবার আবার আসতে হবে। সেকেন্ড ইন্সপেক্টর জনাব এ রহমান অফিসে ছিলেন না। এফ রহমান। ভূঁইয়াকে অফিসে পেলাম।
সন্ধ্যা সােয়া ৬টায় ডা. করিমের সঙ্গে তাঁর ফার্মেসিতে দেখা করলাম। জুবিলি স্কুলের সেক্রেটারি বরাবর সে আমার আবেদনপত্র জমা দেয়নি। সন্ধ্যা ৬টা ৪৯ মিনিটের ট্রেনে উঠলাম। এবার শ্রীপুর ফিরে এলাম। আমাদের সঙ্গে আকতার মাস্টারের ছেলে এল। রাতে তারা আমার ঘরে থাকল। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : উজ্জ্বল দিন। রাতে শীতের মৃদু কম্পন।
১৬.৩.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। ইয়াকুব আলী মৌলবি ও আক্কাস আলী মৌলবিকে সঙ্গে নিয়ে বিকেলে এফ করিমের সঙ্গে দেখা করতে রেঞ্জ অফিসে গেলাম। তিনি ঘুম থেকে উঠেননি। রেঞ্জার আসিরউদ্দিন অফিসে ছিলেন। আমরা কিছুক্ষণের জন্য তার কাছে বসলাম। তারপর চলে গেলাম। সন্ধ্যায় ইসমাইল খানের দোকানে বসলাম। দেশের সমস্যার বিপরীতে মুসলিম লীগ সরকারের ভূমিকা নিয়ে কথা বললাম। কালু মােড়ল, আজিজ মােড়ল, মজিদ মােড়ল, সুবিদ আলী এবং আরাে অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে নাস মিয়ার সঙ্গে দাবা খেললাম। তারপর ঘরে ফিরে গেলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : সারাদিনই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বিরতি দিয়ে দিয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, বিশেষ করে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে। রাতে আকাশ কম-বেশি পরিষ্কার হয়ে গেল। শীত অনুভূত হয়েছে। ১৭.৩.৫২ -ঢাকাভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। স্কুলের অফিসে সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রায় ঘন্টাখানেক এফ করিমকে নিয়ে বসলাম। তাকে ৩০ টাকা দিলাম এবং টিসি বিষয়ক কিছু জিনিস বুঝিয়ে দিলাম।
৭০
সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে রওনা হয়ে ঢাকা পৌছলাম সকাল ১০টা ১০ মিনিটে। স্টেশনে টাঙ্গারবান্দের শামসুল হকের সঙ্গে দেখা করলাম। সােজা গেলাম ইন্সপেক্টর অব স্কুল অফিসে। সেকেন্ড ইন্সপেক্টর জনাব এ রহমানের সঙ্গে দেখা। করলাম। তিনি হেড ক্লার্ককে আমার বিষয়টি দেখার জন্য বললেন। বেলা ১১টায় ওখান থেকে বের হয়ে এলাম। সােজা চলে গেলাম আশরাফ আলীর বাড়ি। তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বেলা ১২টায় যােগীনগর এলাম। গােসল ও খাবার খেয়ে বেলা ৩টায় সেগুনবাগে আশরাফ আলীর বাড়িতে আবার গেলাম। গ্রান্ট-ইন-এইডের সম্মতি দলিলে তার স্বাক্ষর নিলাম। এজিইবির সুলতান আহমদকে পেলাম। আমি তাকে রেস্তোরায় চা খাওয়ালাম। ইফাজের সঙ্গে দেখা করা গেল না। বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে ইন্সপেক্টর অব স্কুল অফিসে গেলাম। ডিএ বিল অনুমােদিত হয়েছে। আমাকে তা দেওয়া হলাে । গ্রান্টইন-এইডের মেমমা প্রস্তুত হলাে। সন্ধ্যা ৬টায় বের হলাম। ফজলুল হক মুসলিম হল (এফ এইচ এম এইচ)-এর ভিপি শামসুল আলমের ভাইকে ওই হলের বাইরের গেটে পেলাম। সে নিশ্চিত করল শামসুল আলমের গ্রেফতার হওয়ার খবর। নােয়াখালী জেলার রামগতি থানায় নিজ গ্রামে শামসুল আলম ১২.০৩.৫২ তারিখে গ্রেফতার হন আইনের পিএস ধারায় । এই খবরটি প্রথম দিয়েছিল সুলতান। সন্ধ্যায় আগা সাদেক রােডে এসডিও উত্তরের বাসায় গেলাম। তিনি বাসায় ছিলেন না। ইনসাফ পত্রিকার সম্পাদক মহিউদ্দিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। তাকে শামসুল আলমের গ্রেফতার হওয়ার খবরটি দিলাম। তিনি রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত আমার সঙ্গে একটি পত্রিকা চালু করার সম্ভাবনা নিয়ে আলােচনা করলেন। নাসির ওখানে আমার সঙ্গে দেখা করল। শহীদ বরকতের জন্য একটি মামলা দাঁড় করাতে সে রহিম মােক্তারকে খুঁজছিল। ডা, করিমের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে কিছুক্ষণের জন্য দেখা করে যােগীনগর ফিরলাম রাত ৯টায়। সে আমাকে জানাল, আমার আবেদনপত্রটি সে জুবিলি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা দিয়েছে। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : পরিষ্কার আকাশ। রাতে সহনীয় শীত।
১৮,৩.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল ৯টায় এসডিও উত্তরের বাসায় গেলাম। মেমাে ইস্যু হওয়ার আগে তিনি। সম্মতি দলিলে স্বাক্ষর করতে অসম্মত হলেন। সকাল সাড়ে ৯টায় সেখান থেকে। বের হলাম। আমার পরে ওখানে মমতাজ মােক্তার ও আরাে একজন লােক। গেলেন। সােজা এজি ইস্ট বেঙ্গল অফিসে গেলাম। বেলা পৌনে বারােটায় ডিএ বিল জমা দিলাম। ইফাজকে পেলাম। তাকে বিলের নম্বরটি দিলাম। ইন্সপেক্টর অব স্কুল অফিসে গেলাম এবং ওখান থেকে যােগীনগর ফিরলাম পৌনে ১টায়। বিকেল ৪টায় আবার ইন্সপেক্টর অব স্কুল অফিসে গেলাম। এবং সাড়ে ৫টা নাগাদ গ্রান্ট-ইন-এইডের মেমাে পেলাম। কেরানি, চৌধুরী প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে সদরঘাট গেলাম। মােজা কিনলাম। ওখানে থেওগরবন্দের সামসুল হককে পেলাম। সদরঘাটে একটি দোতলা টিনশেড রেস্তোরায় তিনি আমাকে নাস্তা করালেন। সন্ধ্যা ৭টায় ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউটে তাকে ছেড়ে এলাম। ফার্মেসিতে ডা, করিমের সঙ্গে দেখা করলাম। রাত ৮টার দিকে যােগীনগর ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। কম ঠাণ্ডা। ১৯.৩,৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। ঘর থেকে বের হলাম সকাল ৮টায়। কাশেমের ব্যাপারে আলুর বাজারে ওয়াহিদের সঙ্গে দেখা করলাম। সেখান থেকে সােজা এসডিও উত্তরের বাসায় গেলাম। তার স্বাক্ষর নিলাম। জালালের সঙ্গে তার বাড়িতে কিছুক্ষণের জন্য দেখা করলাম। সকাল সাড়ে ৯টায় ওখান থেকে বের হলাম। সােজা গেলাম ইন্সপেক্টর অব স্কুল অফিসে। বেলা ১২টায় পাস হওয়া গ্রান্ট-ইনএইড বিল পেলাম। বেলা সাড়ে ১২টায় এজিইবি অফিসে বিলটা জমা দিলাম। ইন্সপেক্টরের অফিসে কাপাসিয়ার বারেক মােল্লাকে পেলাম। এজিইবি অফিসে।
ইফাজের সঙ্গে দেখা করলাম। সালিমাবাদ রেস্তোরায় তাকে চা খাওয়ালাম। তার। সঙ্গে দুপুর পৌনে ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত কথা বললাম। যােগীনগরে ফিরলাম বেলা আড়াইটায়। বাকির সঙ্গে তাদের বাড়িতে দেখা করলাম। বিকেল সাড়ে ৩টায় নিজস্ব কার্যালয়ে যুবলীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা শুরু হলাে। জনাব মাহমুদ আলী। সভাপতিত্ব করলেন। সাধারণ আলােচনা। সাম্প্রতিক রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলন থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর পর্যালােচনা। আওয়ামী লীগের ভূমিকা ও অবস্থানের বিষয়ে যুবলীগের সম্পর্ক। বিভিন্ন জেলায় যুবলীগের কার্যক্রম এবং ভূমিকা পালন। রাত ৮টায় সভা শেষ হলাে। দেওয়ান মাহবুব আলী, খাজা আহমদ, নুরুল হুদা, ইমাদুল্লাহ, আনােয়ার হােসেন, এ আর সিদ্দিকী, সুলতান, এম জে জাহিদি উপস্থিত ছিলেন। তােয়াহা সাহেবের ছােট ভাই তাহের আজ এসেছে। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ২০,৩.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টায় যুবলীগের ওয়ার্কিং কমিটির মুলতবি সভা শুরু হলাে। জনাব মাহমুদ আলী সভাপতিত্ব করলেন। অনুপস্থিত ছিলেন নুরুল হুদা। বাড়তি যােগ দেন এ বি এম মূসা। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আলােচনা চলল। তারপর সবাই চলে। গেলেন। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত জনাব মাহমুদ আলী, দেওয়ান এম আলী, ইমাদুল্লাহ। এবং আমি প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করলাম। তারপর উঠে পড়লাম। আবার বিকেল সাড়ে ৪টায় মিলিত হলাম। কাজ চলল রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। এরপর আজকের মতাে উঠলাম। রাতের খাবার শেষে ভাবী, তাহের প্রমুখের সঙ্গে কথা বললাম। বিছানায় গেলাম রাত ১টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। বি. দ্র. ঠাণ্ডায় ভুগছি। এ মৌসুমে প্রথমবার ক্যালসিয়াম ইনজেকশন নেওয়ার পর স্বাস্থ্যের অবনতি তীব্রভাবে অনুভব করছি।
সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টায় যুবলীগের ওয়ার্কিং কমিটির মুলতবি সভা শুরু হলাে। এর কার্যক্রমের সমাপ্তি টানা হয় বেলা সাড়ে ১১টায়। মাহমুদ আলী, জাহিদি, ইমাদুল্লাহ প্রমুখ দুপুর আড়াইটায় যুবলীগ অফিস থেকে চলে গেলেন এবং আবার তারা ফিরে এসে সূর্যাস্তের পর গেলেন। রাত ৮টায় ইনসাফ পত্রিকার মহিউদ্দিন আমার কাছে এলেন। একটি দৈনিক পত্রিকা শুরু করা নিয়ে আলােচনা করলেন। আধ ঘন্টা পর তিনি চলে গেলেন। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতােই। বি. দ্র. ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় আমি ঘর থেকে বাইরে বেরােতে পারছিলাম । ভাের থেকে শেষ বিকেল পর্যন্ত ৬ বার টয়লেটে গিয়েছি। দুপুর ও রাতে খেলাম না। বিকেলে ডাবের পানি ও রাতে বার্লি খেলাম। খুব দুর্বল লাগছে। ২২.৩.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৯টায় বের হলাম। সােয়া ১০টা পর্যন্ত ডা, করিমের সঙ্গে তার ফার্মেসিতে ছিলাম। নবাবপুর রেল ক্রসিংয়ে আলী আজগরকে পেলাম। সকাল পৌনে ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এজিইবি অফিসে ছিলাম। আমার বিলগুলাে তৈরি হয়নি। যােগীনগর ফিরে এলাম বেলা ১২টায়। বিকেল ৪টায় বাইরে বের হলাম। ডস থেকে শ্রীপুর ক্লাবের গ্রুপ ছবি তুললাম। এটি বাঁধাই করালাম। বিকেল সাড়ে ৫টায় যােগীনগর ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। বি. দ্র. সিলনের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডি এস সেনানায়েক ২২.৩.৫২ তারিখে মারা গেলেন। তিনি ২১.৩.৫২ তারিখে ঘােড়া থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৮।
২৩.৩.৫২
-শ্রীপুরসকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। বেলা ১২টা ১৮মিনিটের ট্রেনে রওনা হলাম এবং শ্রীপুর পৌছলাম দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে। ঢাকা থেকে বই নিয়ে এলাম। বেলা ৩টার দিকে আমার কাছে দেওয়ান সাইদ আলী এলেন। আমি তাকে ঢাকায় গিয়ে তার উকিলের সঙ্গে দেখা করতে পরামর্শ দিলাম। বিকেল ৫টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ভলিবল খেলা দেখলাম। ক্লাবে হামিদের সঙ্গে পাশা খেললাম রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। ইসমাইল খানের দোকানে টুকু মিয়া ও জাহেদ আলী মুহুরিকে দেখলাম । রাত সাড়ে ৮টায় ঘরে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া ; রাতে সামান্য শীত। রাত সাড়ে ৮টার দিক থেকে প্রায় মধ্য রাত পর্যন্ত ধুলিঝড়। এবং মধ্য রাত পর্যন্ত আকাশে হালকা মেঘ ভেসে বেড়াল। তারপর পরিষ্কার আকাশ। ২৪,৩,৫২ -বাড়িসকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেল ৪টায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। পথে ডা, আহসানউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হলাে। তিনি শ্রীপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। চৌকিদার বাড়ির কাছে আড়ালের তালুইসাহেব, রমিজউদ্দীন ও দুলার বাপের দেখা পেলাম। তারা গােসিঙ্গায় আজিজের বাড়ি যাচ্ছিলেন; গােসিঙ্গা ইউনিয়ন বোের্ড নির্বাচনের সূত্রে। সূর্যাস্তের সময় বাড়ি পৌছলাম। খেয়াঘাট থেকে ওয়ারিস আলী আমার সঙ্গে এসেছে। সে আমাকে আমার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে চলে গেল।
৭৫
রাত ৮টার দিকে আমাদের একচালা একটি চালাঘরে আগুন ধরে পুড়ে ছাই হয়ে। গেল। ওখানে মিস্ত্রিরা থাকত। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী তাদের অবহেলা । কুপি থেকে। আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মাচার কিছু কাঠের তক্তা বাঁচাতে আমি সহায়তা করি। আমি উদ্যোগ নেওয়ার আগে সবাই হতবাক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায় । আবহাওয়া : সূর্যাস্তের পর থেকে আকাশে মেঘ জমতে লাগল। রাত ৯টায় ঝড়াে। বাতাসের পর এক পশলা ভালাে বৃষ্টি হয়ে গেল। বাকি রাত আকাশ পরিষ্কার।
২৫.৩.৫২ -শ্রীপুরসকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৯টায় আবদুল খানের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। জাহাদের ছেলে মজিদ, কাগুর বাপ, সােবহান প্রমুখ উপস্থিত ছিল। প্রায় আধঘন্টা পর বাড়ি ফিরলাম। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ি থেকে বের হলাম। গােসিঙ্গার আকতার মাস্টারকে পেলাম; তিনি আমাকে খোজ করছিলেন। উনি আমার সঙ্গে শ্রীপুর পর্যন্ত এলেন। তিনি আমাকে জানালেন, মফিজউদ্দীন সাহেব চান আগামী শুক্রবার আমি যেন বরামায় উপস্থিত থাকি। আমি তাকে কথা দিলাম। সােজা এলাম ফরাজি বাড়ির সামনে গােসিঙ্গা ইউনিয়ন বাের্ড নির্বাচন কেন্দ্রে। দেশের বর্তমান অবস্থাতে আমাদের নেতাদের ভূমিকা নিয়ে লােকজনের সঙ্গে কথা । বললাম। নির্বাচনের ফলাফল ঘােষিত হলাে বিকেল সাড়ে ৩টায়। আজিজ, তাহের আলী, নিয়ামত সরকার জিতে গেলেন। আকবর আলী বেপারি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং সর্বনিম্ন ভােট প্রাপ্তির রেকর্ড নিয়ে গােহারা হলেন। গােসিঙ্গা ও লতিফপুর কেন্দ্রে যথাক্রমে রুস্তম আলী আকন্দ, শাহেদ আলী সরকার, সামেদ আলী এবং বুধাই বেপারি, আসমত মােল্লা ও সাহেব মােল্লা জিতেছেন বলে খবর পাওয়া গেল। সন্ধ্যায় সালেহ আহমদ মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীপুর পৌছলাম। ফরাজি বাড়ির নির্বাচন কেন্দ্রে সামছুদ্দিন সরকার, রমিজউদ্দিন, সালেহ আহমদ মণ্ডল, আবদুল খান, ওয়ারিস আলী, আক্কাস আলী, কাগুর বাপ, শেষের দিকে হাকিম মামা এবং আরাে অনেক পরিচিত লােক উপস্থিত ছিলেন। আকবর আলীর হয়ে কাজ করেন বাখর আলী, নায়েব আলী সরকার, সাবেদ আলী দফাদার, কোটের টেকের মাজেদ, ভুলেশ্বরের আমির, জব্বার গাড়িয়াল, আশরাফ আলী মৌলবি, নবু চৌকিদার প্রমুখ। সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্লাবে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে পাশা খেললাম। তারপর আমার ঘরে ফিরলাম। রাত সাড়ে ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : রাতের আকাশ পরিষ্কার। তবে দিনের বেলা ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন, বিশেষ করে শেষ বিকেল পর্যন্ত। গত রাতের বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা
কিছুটা কম। রাতে বেশ শীত অনুভূত হলাে। বি. দ্র. জীবনে প্রথমবারের মতাে আমি ইউনিয়ন বাের্ড নির্বাচন প্রত্যক্ষ করলাম।
২৬.৩.৫২ -ঢাকাসকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে রওনা হয়ে ঢাকায় পৌছলাম সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে। ট্রেন থেকে নেমে এজিইবির চেক গ্রহণের স্বীকারােক্তিপত্রে হাসান মােড়লের স্বাক্ষর নিলাম। ট্রেনে তরগাঁওয়ের শফিউদ্দিন ও কাপাসিয়ার মমতাজউদ্দিনকে পেয়েছিলাম। শ্রীপুরে আড়ালের তালুইসাহেবকে পেয়েছিলাম, তিনি জয়দেবপুরে যাচ্ছিলেন। স্টেশন থেকে সােজা ইস্ট বেঙ্গল এজি অফিসে গেলাম। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ডিএর চেক পেলাম। কেমব্রিজ ফার্মেসিতে এলাম ও ডা, করিমের সঙ্গে পৌনে ২টা পর্যন্ত আলাপ করলাম। ডা, করিমের বাড়িতে গােসল করলাম। বাকি ও তার মা দৃশ্যত আমার প্রতি কোনাে আগ্রহ দেখাল না। দুপুরে খাওয়া হলাে না। ওখান থেকে চলে এলাম। বিকেল সাড়ে ৩টায় যােগীনগর গেলাম। ওখানে আমার ব্যাগ রেখে সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে পড়লাম। আমি যখন যােগীনগরের বাসায় ঢুকছিলাম তখন ভাবী বাইরে। বের হচ্ছিলেন। এর পরও তিনি আমি খেয়েছি কিনা খোঁজ নিলেন।
এরপর সােজা গেলাম বার লাইব্রেরিতে। পেলাম কামরুদ্দীন আহমদ, কফিলউদ্দীন চৌধুরী, আতাউর রহমান খান, জমির, সােবহান সাহেব প্রমুখকে। কফিলউদ্দীন চৌধুরী আমাকে এক কাপ চা খাওয়ালেন। বার লাইব্রেরিতে আহমদ মাস্টারকে খুঁজে পাওয়া গেল। সাড়ে ৫টায় বের হয়ে কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে সােজা গেলাম জিন্দাবাহার। রাত ৯টা পর্যন্ত আলাপ করে বের হলাম। তিনি আমাকে তার সভাপতির ভাষণ পড়ে শুনালেন। ভাষণটি তিনি দেবেন শ্রমিক ফেডারেশনের বার্ষিক সভায়। কামরুদ্দীন সাহেব আমাকে বললেন, পার্লামেন্টে বিরােধী দলে কাজ করার জন্য তিনি ট্রেড ইউনিয়ন থেকে পদত্যাগ করবেন। টিপারের সিরাজ ও রহিম মােক্তার ওখানে উপস্থিত ছিলেন। সিরাজের সঙ্গে রিকশায় যােগীনগর ফিরলাম। রাতের খাবার খেলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। অপেক্ষাকৃত কম ঠাণ্ডা । ২৭.৩.৫২ -শ্রীপুরভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৯টায় মাহমুদ আলী সাহেব, দেওয়ান এম আলী, ইমাদুল্লাহ ও সুলতান যুবলীগ অফিসে এলেন। আমরা আলােচনা করলাম আওয়ামী লীগের নিষ্প্রভ। ভূমিকার বাইরে খুব জরুরিভাবে একটি দক্ষ রাজনৈতিক বিরােধী দলের প্রয়ােজন। মাহমুদ আলী সাহেব আমার বক্তব্যের সাথে একমত হলেন। জানালেন তিনি সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন। সকাল পৌনে ১১টায় এজি অফিসে গেলাম । গ্রান্ট-ইন-এইডের চেক পেলাম বেলা দেড়টায়। ওখানে মওলানা ওয়ারিস আলী, কাপাসিয়ার মমতাজ, জয়দেবপুরের প্রধান শিক্ষক প্রমুখের সঙ্গে দেখা হলাে। দুপুর আড়াইটায় যােগীনগর ফিরে এলাম। গােসল করে খাবার খেলাম। সন্ধ্যা ৬টা ৪৯ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। হাসান মােড়ল আমার সঙ্গে রায়পুর পর্যন্ত এলেন। কামরায় ছিলেন ফজলুল হক মুসলিম হলের আনিসুর রহমান। তিনি ময়মনসিংহে যাচ্ছিলেন। সেখানে তিনি প্রভাষকের দায়িত্বে নিয়ােজিত আছেন। শ্রীপুর পৌছলাম রাত ৯টায় বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : মেঘাচ্ছন্ন রাত। মধ্য রাতের দিকে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়ল। বৃষ্টি। নেই, কিন্তু মেঘময়তা রয়েই গেল। ঠাণ্ডা নেই। ২৮.৩.৫২ -বাড়িঘুম থেকে উঠলাম সকাল ৬টায়। সকালে প্রফুল্লর কাছে গিয়ে বসন্তের টিকা নিলাম। সকাল সােয়া ৮টার দিকে সাইকেলে চড়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম এবং সােজা বাড়িতে গিয়ে পৌছলাম। আমি পৌছানাের পর মফিজউদ্দীন সাহেব ও আকতার মাস্টার সাহেব আমাদের বাড়িতে এলেন। বেপারি বাড়ি মসজিদে তাদের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করলাম। তারা আমাদের বাড়িতে দুপুরের খাবার খেলেন এবং বিকেল ৪টার দিকে চলে গেলেন। শাহাজুদ্দিনের বিয়ের প্রস্তাবের ব্যাপারে আমি মফিজউদ্দীন সাহেবের মতামত জানতে চাইলাম। তিনি প্রস্তাবের অনুকূলে মতামত দিলেন। আমি আকতার মাস্টারকে এ ব্যাপারে সিরাজের সঙ্গে যােগাযােগ করতে বললাম। মফিজউদ্দীন সাহেবকে দেওনা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আমি ফিরে এলাম তুফানিয়ার বাড়িতে। সে বাড়িতে ছিল না। কালবাড়িতে থামলাম। ওখানে শফিউদ্দিন দফাদার ভােটারদের নাম সংগ্রহ করছিলেন। সেখানে আবদুল খান উপস্থিত ছিলেন। এই সময় ঢাকা থেকে বাড়িতে যাওয়ার পথে আইয়ুব আলী আমাদের পাশ দিয়ে গেলেন। সূর্যাস্তের সময় বাড়িতে ফিরে এলাম। আবদুল খান আমার সঙ্গে এল। তিনি রাত ৯টা পর্যন্ত সমিতি ও অন্যান্য ব্যাপারে কথা বললেন এবং তারপর চলে গেলেন। কাগুর বাপ। আমাদের কারিগরদের সাথে রাতের খাবার খেলেন, তবে আবদুল খান খাবার খাননি। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : যেন এখনই বৃষ্টি পড়বে আকাশের এমন লক্ষণ। বিশেষ করে সন্ধ্যায় অনেকবারই এই লক্ষণ দেখা গেল। শীত উধাও হয়ে গিয়েছে। মৃদু বাতাসের ফলে আরাম ব্যাহত না হয়ে স্বস্তি হচ্ছে।
শ্রীপুরভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বেলা সােয়া ১টায় মওলানা এ আহমেদ হােসেনপুরী এবং আহমদকে সঙ্গে নিয়ে গাজীপুরের মাওনা ইউনিয়নের উদ্দেশে রওনা হই। হাতিতে চড়ে আমরা যাচ্ছিলাম এবং আমাদের পথ দেখিয়ে নিচ্ছিল আমজাদ হােসেন ও অন্য আরেকজন ছাত্র। বিকেল ৪টায় মাওনায় পৌছলাম। সেক্রেটারির বাড়িতে দুপুরের খাবার খেলাম। বিকেল ৫টায় সভায় যােগ দিলাম। মাওনা মাদ্রাসার সেক্রেটারি সভাপতিত্ব করলেন। আহমদ বিকেল ৫টা থেকে ৫টা ২০ মিনিট পর্যন্ত বক্তৃতা করলেন। মাগরিবের নামাজের জন্য সংক্ষিপ্ত বিরতি দিয়ে আমি ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিট পর্যন্ত বক্তব্য রাখলাম। এরপর হােসেনপুরী বক্তৃতা করলেন রাত সােয়া ৯টা। পর্যন্ত। তারপর সভার সমাপ্তি ঘটল। লােকজনের উপস্থিতি ছিল প্রায় ৫ শ’ । আয়ােজন ভালাে। সেক্রেটারির বাড়িতে রাতের খাবার খেলাম। রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত ঘুমালাম। এরপর হােসেনপুরী ও আহমদকে সঙ্গে নিয়ে হাতির পিঠে চড়ে শ্রীপুর পৌছলাম ভাের ৫টায়। ঘুম হলাে না। আবহাওয়া : সারাদিন ও মধ্য রাত পর্যন্ত আকাশ পরিষ্কার। বেশ ভালাে বাতাস বইছে। বিশেষ করে সূর্যাস্তের পর থেকে। ৩০.৩.৫২ গভীর রাত ২টায় উঠেছি। গাজীপুর থেকে হাতিতে চড়ে আমরা শ্রীপুর পৌছলাম ভাের ৫টায়। মওলানা হােসেনপুরীকে নাস্তা দিয়ে আপ্যায়ন করলাম। তিনি সকাল ৭টা ১২ মিনিটের আপ ট্রেনে পিয়ারপুরের উদ্দেশে চলে গেলেন। হাতির দুই মাহুতকে নাস্তা দিলাম। সকাল সাড়ে ৭টায় তারা চলে গেল। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে
৮০
রাত ৮টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে তার রুমে দাবা খেললাম। এরপর ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : সূর্যাস্তের পর প্রবল ঝড়সহ ঘন্টাখানেক মুষলধারে বৃষ্টি হলাে। মৌসুমের মধ্যে সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত। চারদিকে পানি জমে গেল। মনে হলাে বৃষ্টিপাত অনেক এলাকা জুড়ে হয়েছে। এই বৃষ্টিপাত সমস্ত ধরনের বীজ বপনের জন্য উপযুক্ত।
৩১.৩.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সংক্ষিপ্ত বিরতি দিয়ে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত স্কুলে রইলাম। বিরতিতে দুপুরের খাবার খেলাম। মৌলবি সাহেবের সঙ্গে ম্যাট্রিক পরীক্ষার্থীদেরকে সকালের ট্রেনে ময়মনসিংহের উদ্দেশে পাঠালাম এবং ক্লাসের পর অফিসের অন্যান্য কাজ শেষ করলাম। কোরামের অভাবে বিনা বেতনে পড়াশােনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হলাে না। এফ করিম ও বিসি শীল ছাড়া শুধুমাত্র নিয়ামত সরকার হাজির হয়েছিলেন। ক্লাবে এফ করিমের সঙ্গে পাশা খেললাম সূর্যাস্ত থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত। তারপর বাসস্থানে ফেরার জন্য বের হলাম। সাহেব আলী বেপারির লেখা একটি চিঠি নিয়ে এল করম আলী। চিঠিতে বেপারি সাহেব অনুরােধ করেছেন আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য। করম আলী ও বারু ঢাকায় যাচ্ছে বিয়ের বিরােধ নিয়ে মামদির পরিবারের বিরুদ্ধে একটি মামলা করতে। আমি মমতাজ মােক্তারকে চিরকুট লিখে দিলাম তাদেরকে সুপরামর্শ দেওয়ার জন্য। তারা রাত সাড়ে ৯টার দিকে চলে গেল। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : সারাদিনই আকাশ অনুজ্জ্বল। রাতের আকাশ পুরাে মেঘাচ্ছন্ন। তাপমাত্রা সহনীয় ঠাণ্ডা ও আরামদায়ক। বি. দ্র. ১। সরকার পাটের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ ২৮ টাকা থেকে। সর্বনিম্ন ১৮/৮ টাকা। এর মধ্যে মান ভেদে পাটের ১৩টি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা ঘােষিত হয়েছিল মার্চের মাঝামাঝি এবং বােঝা যাচ্ছে পাটের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতা সঙ্গে সঙ্গে অর্ধেকে এসে দাড়িয়েছে। নারায়ণগঞ্জে পাটের মূল্যের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষণীয়, যদিও মফস্বলে পাটের চাহিদার উল্লেখযোেগ্য বৃদ্ধি নেই। এ প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, দরপতন সত্ত্বেও লােকজন পাট বিক্রি করতে দ্রুত অগ্রসর হয়নি। এই বিষয়টি ব্যবসায়ীদের পরিকল্পনাকে হতাশ করেছে। মার্চের প্রথম পক্ষকালে পাটের দাম কমে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ২০/২২ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১২৫ টাকা। বর্তমানে মফস্বল এলাকায় পাটের মূল্যবৃদ্ধি হয়ে সর্বোচ্চ মূল্য ২৪/২৫ টাকা এবং নিম্নে ১৬/১৭ টাকা দাড়িয়েছে। ২। ধান প্রতি মণ ১৩ টাকা থেকে ১৫ টাকায় স্থির রয়েছে। ৩। সময়মতাে বৃষ্টি হওয়ায় আউশ ফলনের জন্য ভালাে হবে। ৪। এ বছর অনেক বেশি পরিমাণে জলবসন্ত দেখা দিয়েছে। ফেব্রুয়ারি মার্চে কলেরা এর চাইতে কম মাত্রায় ছিল। বৃষ্টি এ সব রােগ দূর হতে সাহায্য করবে।
– বাড়ি – ১ এপ্রিল, মঙ্গলবার ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। এরপর আবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে। আমি বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও রফি আমার অগােচরে আমার সাইকেল নিয়ে গেছে। এ কারণে স্কুল শেষে আমি বাড়ির উদ্দেশে রওনা হতে পারলাম না। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর তার সাইকেল আমাকে দিলেন এবং আমি সূর্যাস্তের সময় রওনা হলাম। মােল্লা বাড়ির কাছে রফির সঙ্গে দেখা হলাে। সে তখন মৈশন থেকে ফিরছে। চানু প্রমুখ তার সঙ্গে ছিল। আমি তাকে তার অসাধুতার জন্য তিরস্কার করলাম। আমি রফির কাছে থেকে আমার সাইকেল নিলাম এবং স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সাইকেলটি তার কাছে পৌছে দেয়ার জন্য তাকে দিলাম । সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাড়িতে পৌছলাম। পৌছেই আবদুল খানের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। সেখানে উপস্থিত ছিলেন করম আলী, আজিজ খান, টান চৌড়াপাড়ার হাসু মিয়া, সােবহান প্রমুখ। আমার পেীছানাের পর সাহেব আলী বেপারিকে আমার আসার খবর জানানাের কথা ছিল। কিন্তু তিনি আসতে পারলেন । ১৫-২০ মিনিট পর আমি আমাদের বাড়িতে ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : পুরাে দিন মেঘাচ্ছন্ন। সূর্যাস্তের পর মেঘ আরাে ঘন নিবিড় হয়ে উঠল। রাত সাড়ে ৮টার দিক থেকে আধ ঘন্টা ধরে বাতাসসহ ভালাে এক পশলা বৃষ্টি হলাে। রাতের শেষ ভাগে আকাশ পরিষ্কার।
বিল থেকে মাছ ধরল। পূর্ব ও উত্তরের বন ঘুরে বাড়ি ফিরলাম। ঢাকা যাওয়ার পথে তােফাজ্জলের বাবা ও খন্দকার বাড়ির জামাই বিকেলে আমাদের বাড়িতে এলেন। রাতে ওয়ারিস আলী, বারু, কাগুর বাপ ও টুক্কা খান আমার কাছে। এলেন। গ্রাম্য রাজনীতিতে আবদুল খানের অদ্ভুত ভূমিকা নিয়ে তারা কথা বললেন। আমি আমার বকেয়া পরিশােধের শর্তে হাজি বাড়ি ফিরিয়ে দিতে সম্মতি দিলাম । যার পরিমাণ ৩৭৮ টাকা। রাত ১১টায় চাদ অস্ত যাওয়ার পর তারা চলে গেলেন। বিছানায় গেলাম রাত সােয়া ১১টায়। আবহাওয়া : সারাদিন আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন হয়ে রইল। রাতের শেষার্ধে আকাশ পুরাে পরিষ্কার হয়ে গেল। সহনীয় পরিবেশ। ৩,৪,৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। কাগুর বাপ ও আবদুল খান সকালে আমাদের বাড়িতে এসে আমার সঙ্গে দেখা করেছিল। শ্রীপুরের উদ্দেশে সাইকেলে রওনা হলাম। সকাল সাড়ে ৮টায় শ্রীপুর পৌছলাম । কাগুর বাপ আমার সঙ্গে চৌকিদার বাড়ি পর্যন্ত এলেন এবং আমাকে বললেন, তিনি হাজিবাড়ি ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য ২০০ টাকা সংগ্রহ করেছেন। আমি তাকে বললাম, ৩৭৮ টাকার ভেতরে ১০-২০ টাকা কম দেওয়ার জন্য। এর চেয়ে বেশি যেন কম না হয় । খেয়াঘাটে আশরাফ আলী মৌলবি ও জাহের আলীর ছেলে মজিদকে পেলাম। করম আলীর দায়ের করা মামলার বিরুদ্ধে করণীয় নিয়ে আশরাফ আলী মৌলবি আমার পরামর্শ চাইলেন। চিনির বিয়ে সংক্রান্ত ব্যাপারে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। আমি যা জানি তাকে তা বললাম এবং আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পরামর্শ দিলাম। ক্লাবে ফরেস্টার করিমের সঙ্গে সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দাবা খেললাম। তারপর ফিরলাম। রাত ১০টায় উদ্বাস্তু মিস্ত্রির অনুরােধে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের কাছে গেলাম। তাকে অনুরােধ করলাম মিস্ত্রিকে আরাে কিছু টাকা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। তিনি সাথে সাথেই রাজি হলেন। প্রায় ১৫ মিনিট পর ঘরে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায় আবহাওয়া : আকাশ পরিষ্কার। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। দুলা মিয়া, দুলার বাপ, শাহ সাহেব প্রমুখ কালু মােড়লের বাড়িতে। তারা কালু মােড়লের স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন। টুকু মিয়ার মেয়ে কালু মােড়লের স্ত্রী । ৪.৪.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৬টায় সাইকেলে রওনা হয়ে সােজা গেলাম আকতার মাস্টারের বাড়ি। ওখানে নাস্তা খেলাম। তারপর আকতার মাস্টারকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীপুরে পেীছলাম বেলা ১১টার দিকে। দুপুরের খাবারের পর ফরেস্টার করিম ও আকতার মাস্টারকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে বসলাম জমা-খরচের হিসাব দেখতে। সন্ধ্যায় আহমদ আমাদের সঙ্গে যােগ দিল। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কাজ করলাম। তারপর ঘরে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। ৫.৪.৫২ ভাের ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সকাল ৮টার দিকে আকতার মাস্টার উত্তর আমেরের উদ্দেশে রওনা হলেন। বেলা প্রায় সাড়ে ৩টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইসমাইলের দোকানে কালু মােড়লের সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা
৮৫
নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে আলাপ করলাম। নানু মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ক্লাবে সূর্যাস্ত থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ফরেস্টার করিমের সঙ্গে দাবা খেললাম। আহমদ, মালেক সাহেব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ক্লাব থেকে বের হয়ে আহমেদ, দুলা মিয়া ও দুলার বাপকে সঙ্গে নিয়ে কালু মােড়লের পুরনাে বাড়িতে গেলাম। মৈশনের মেহমানদের সঙ্গে ওখানে রাতের খাবার খেলাম। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসস্থানে ফিরে ঘুমাতে গেলাম। আবহাওয়া : মধ্য দুপুর পর্যন্ত আকাশ পরিষ্কার। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হালকা এক পশলা বৃষ্টি। চাঁদের আলােয় উজ্জ্বল রাত। ৬,৪.৫২ -বাড়ি ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সাড়ে ৮টায় সাইকেলে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে সােজা বাড়ি গিয়ে পৌছলাম। বেলা আড়াইটায় তরগাঁও থেকে মেহমানরা পৌছলেন। তখন স্থানীয় লােকজনের প্রথম ব্যাচ খাবারে বসেছে। সূর্যাস্তের সময় খাবার খাওয়া শেষ হলাে। মাগরিবের পর আমরা বিয়ের মজলিশে বসলাম এবং বিয়ের কার্যক্রম শেষ হলাে রাত ৯টায়। মুন্সি মফিজউদ্দীন অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দিলেন। বিয়ের মজলিশে উপস্থিত ছিলেন মফিজউদ্দীন মুন্সি, সাবু খান, রফি, খন্দকার আবেদ আলী, নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, চিনির বাপ-চাচা, রমিজার নানা, জব্বার, বারু, টুক্কা, আজিজ প্রমুখ। দুপুরের খাবারের সময় উল্লিখিতদের বাইরে আরাে উপস্থিত ছিলেন- ইসমত আলী, তুফানিয়া, আবদুল খান, আহমদ, নায়েব আলী, মােহাম্মদ, আসু, মান্নাফ, কাগুর বাপ, করম আলী, দিগধার তালুইসাহেব, দুলা এবং আরাে অনেকে। জামাই এবং ৩/৪ জন ছাড়া আর সবাই রাতে চলে গেলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১২টায়। আবহাওয়া : স্বাভাবিক। দিন ও রাতের আকাশ পরিষ্কার। তাপমাত্রা বেশি।
৭.৪.৫২
-ঢাকা যাওয়া ও ফিরে আসাভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বাড়ি থেকে বেশ সকালেই শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। আক্কাস আলীর মামলার জন্য সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। মালেক সাহেব আমার সঙ্গে গেলেন। সােজা আদালতে গেলাম। হাফিজ বেপারির বাড়িতে গােসল করলাম। বেলা ১২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এসডিও (উত্তর)-এর আদালতে ছিলাম। তাহের আলী ও হাফিজউদ্দিন গার্ড বিরক্তকর সাক্ষি। ৬/৫/৫২ তারিখ পর্যন্ত মামলা মুলতবি হলাে। এডিএম-এর আদালতের কাছে তরগাঁওয়ের শফিউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হলাে। ইসলামিয়া রেস্তোরায় আক্কাস আলীর সঙ্গে খাবার খেলাম। ওখানে আমাদের হলের। আবদুল হাকিমের সঙ্গে দেখা হলাে। তারপর হাফিজ বেপারির বাড়িতে এলাম। সেখানে থেকে গেলাম স্টেশনে। আমাদের হলের মজিদের সঙ্গে নবাবপুরে দেখা হলাে। সন্ধ্যা ৬টা ২৬ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুর ফিরলাম। মালেক সাহেবও আমার সঙ্গে এলেন। একই কামরায় আরাে ছিলেন; কাপাসিয়ার সামাদ, আমাদের হলের আবদুল হক প্রমুখ। ঘুমাতে গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। আইয়ুব আলী, হাফিজ বেপারি প্রমুখ তাদের বাজার মামলার (৩৯৫) কারণে ঢাকায় ছিলেন। ৮.৪.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। আমার কাছে আকতার মাস্টার এসেছিলেন। তিনি বেলা ২টার ট্রেনে ঢাকায় যাওয়ার পথে আমাদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেলেন। ডাকবাংলােয় দুপুর পৌনে ২টার দিকে ১৫ মিনিটের জন্য। দুর্নীতি দমন বিভাগের একজন ইন্সপেক্টর ভাওয়াল ফরেস্ট পেটানের বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বললেন। আমি তাকে জানালাম, এটি ফরেস্টের কর্মকর্তা
কর্মচারী এবং ভাওয়াল এস্টেটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ষড়যন্ত্রের ফল। আমি নিজে ঝুঁকি নিয়ে তাকে সহায়তা করতে আমার অক্ষমতার কথা বুঝিয়ে বললাম। তিনি বেলা ২টার ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলেন। দাড়িয়াবাঁধা প্রতিযােগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য বেলা সােয়া ২টার ট্রেনে বলাই বাবু এবং আমাদের ছাত্রদের নিয়ে সাতখামাইরের উদ্দেশে রওনা হলাম। অন্য পক্ষ অনুপস্থিত থাকায় আমরা অনায়াসেই জয়ী হলাম। বিকেল ৫টার দিকে ফিরে এলাম। সূর্যাস্ত থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্লাবে ফরেস্টার করিমের সঙ্গে পাশা খেললাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। নান্না মিয়া রাতে এখানে থাকলেন। আবহাওয়া : দিন ও রাত পরিষ্কার। সূর্যের প্রখর আলাে । গ্রীষ্মের পূর্ণ গরম। ৯.৪.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। দুপুর ১টায় বের হলাম। দুপুরের খাবারের পর বেলা ৩টার দিকে ফরেস্টার করিমকে নিয়ে আমার ঘরে পাশা খেলতে বসলাম। তারপর সন্ধ্যায় ক্লাবে গিয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত খেলে ঘরে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ১০.৪.৫২ -বাড়িঘুম থেকে উঠলাম ভাের ৫টায় ।। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেল ৪টার দিকে সাইকেলে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম ও সােজা বাড়ি গিয়ে পৌছলাম।। শ্রীনগর থানার হাসহারার জনৈক নামিকে আমাদের বাড়িতে পেলাম। সে আমাদের বাড়িতে জ্যোতিন্দ্র ও অন্যদের সঙ্গে কাজ করেছিল। তাদের মধ্যে টাকা নিয়ে বিরােধ বাধে। প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে হাসহারার পিইউবির উদ্দেশ্যে লেখা আমার একটি চিঠি নামিকে দিলাম। তারা রাতে আমাদের বাড়িতে রইল।
আমাদের বাড়িতে তালেবউদ্দিন মিয়াকেও পেলাম। আমাদের বৈঠকখানার সামনে আবদুল খান, দেলু, সােবহান, দেওনার কুদু প্রমুখ বসে গল্প করছিল। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায় । আবহাওয়া : প্রখর সূর্যালােক ও উত্তপ্ত চারপাশ। পূর্ণিমার আলােয় উজ্জ্বল রাত। দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রবল বাতাস জ্বালাদায়ক উত্তাপ থেকে আমাদের রক্ষা করল। ১১.৪,৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকালের দিকটায় ঠাকুরাবিলের চারধারে হাঁটলাম। সকাল ১০টার দিকে হাকিম মিয়া আমাদের বাড়িতে এল। আমি তাকে বাঘিয়া বনের জন্য তার সমস্যার কথা বললাম। তাকে বন বিভাগের কর্মীদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিলাম। সে বেলা ১১টার দিকে চলে গেল। দু’জন চৌকিদার নিয়ে মােতালেব এসেছিল। আমাদের ইউনিয়ন ট্যাক্স হিসেবে ১২ টাকা নিয়ে ১৫ মিনিট পর (বেলা ১২টায়) সে চলে গেল। বিকেলে সাইকেলে দিগধায় গেলাম। শহিদকে দেখলাম সে প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছে। আধা ঘন্টা পরে ওখান থেকে বের হয়ে দিগধা জুনিয়র হাই মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভায় যােগ দিলাম। মওলানা ওয়ারিস আলী, আইয়ুব আলী, হাকিম মিয়া, মহরউদ্দিন মৌলবি, গফুর মৌলবি, মাদ্রাসার হেড মৌলবি এবং আরাে কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। মাদ্রাসা ভবনের নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলাে। সূর্যাস্তের সময় রওনা হলাম ও সােজা বাড়ি পৌছলাম। কাগুর বাপ, আকুর বাপ ও গেসু রাতে আমার কাছে এল। তারা আজ রাতেই আমার কাছ থেকে হাজি বাড়ির দলিল ফিরিয়ে নিয়ে গেল। তারা নগদ ৩০৫ টাকা পরিশােধ করল। পরে আরাে ২০ টাকা পরিশােধ করবে। এই সময় আবদুল খান, চেরাগ আলী মােড়ল, ভুলেশ্বরের মেওয়ার বাপ, আমাদের বাড়ির কারিগররা উপস্থিত ছিল। শুধু অনুপস্থিত ছিল মফিজউদ্দীন ও আমাদের ভূত্যরা। আমি তাদেরকে ৫৩ টাকা ছাড় দিলাম। তারা রাত সাড়ে ৯টার দিকে চলে গেল। আজ সকালে খন্দকার বাড়ির জামাই রমিজা খাতুনকে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেল। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়।আবহাওয়া : দিন ও রাত পরিষ্কার। বিরতিহীনভাবে বাতাস বয়ে চলার কারণে প্রখর তাপের মাত্রা কিছুটা সহনীয়।
১২.৪,৫২ -ঢাকা ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বাড়ি থেকে শ্রীপুর পৌছলাম সকাল সাড়ে ৬টায়। গােসিঙ্গা থেকে হাকিম মিয়া আমার সঙ্গে এল, সে ঢাকায় যাচ্ছে। ইমাদুল্লাহর কাছ থেকে একটি চিঠি পেলাম। সে আমাকে এই চিঠি পাওয়া মাত্র ঢাকায় যাওয়ার জন্য অনুরােধ করেছে। আমাকে জনাব মাহমুদ আলীর বিশেষ প্রয়ােজন। আমি সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। বেলা ২টার ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। যােগীনগরে এসে উঠলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ রহমান, সিদ্দিকী, এ খায়েরের সঙ্গে সােয়ারিঘাট গেলাম। রাষ্ট্রভাষা কমিটির মিটিং অনুষ্ঠিত হলাে। কামরুদ্দীন আহমদ, কফিলউদ্দীন চৌধুরী, আতাউর রহমান খান, এস এ রহমান, নাইমুদ্দিন, দেওয়ান মাহবুব আলী, মাহমুদ আলী, জমির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ২৭.৪.৫২ তারিখে ঢাকায় সম্মেলন আয়ােজনের সিদ্ধান্ত হলাে। রাত সাড়ে ১০টায় ওখান থেকে বের হলাম। জমিরকে সঙ্গে নিয়ে রিকশায় যােগীনগর পৌছলাম। জনাব হাবিবুর রহমান নিচ তলায় ঘুমানাের কারণে আমি ঘুমালাম দোতলার বারান্দায়। রাত সাড়ে ১২টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতােই। অপেক্ষাকৃত কম বাতাস।
১৩.৪,৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সারাদিন বাড়িতেই কাটল। বেলা প্রায় ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বেশ কয়েক কপি বিজ্ঞপ্তি টাইপ করলাম। দেওয়ান এম আলী, জলিল, মাহমুদ আলী, সুলতান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
৯০
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মাহমুদ আলী সাহেবের সঙ্গে জনাব আতাউর রহমান খানের ওখানে গেলাম। রাত ১০টা পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কথা হলাে; মূলত একটি ঐক্যবদ্ধ বিরােধীপক্ষ গঠন নিয়ে। যােগীনগরে ফেরার পথে আমরা জনাব কামরুদ্দীন সাহেবকে তার বাসায় খোঁজ করেছিলাম। কিন্তু তিনি বাড়িতে ছিলেন না। রাত ১১টায় ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১২টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। বাতাস নেই । বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনাব মাহমুদ আলী ওপরের তলায় বসে আমার সঙ্গে কথা বললেন। তিনি সুনির্দিষ্ট কর্মসূচিকেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে কথা বললেন। ভূমি জাতীয়করণের প্রশ্নটি ব্যাপকভাবে আলােচিত হলাে। জীবনমান উন্নয়নে জনগণকে শিল্পমুখী করে তােলা জরুরি। ভাবী আমাদেরকে চা দিলেন।
১৪.৪.৫২ -শ্রীপুর ও বাড়িঘুম থেকে উঠেছি গভীর রাত সাড়ে ৩টায়। ভাের ৫টা ৫ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লাম। রাজেন্দ্রপুর থেকে হাসান মােড়ল ট্রেনে উঠলেন। আমি তাকে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন ও এম বিশ্বাসের বিষয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কিছুটা সময় দেওয়ার জন্য বললাম। তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন। সকাল ৯টার দিকে বাড়ি পৌছলাম। ফরেস্টার মােসলেম উদ্দিন গােসিঙ্গা কাচারি পর্যন্ত আমার সঙ্গে এলেন। ওখানেই তিনি থামলেন। সারা পথেই তিনি সাম্প্রতিক ভাওয়াল ফরেস্ট পেটান কেলেঙ্কারি বিষয়ে নিজেদেরকে জড়িয়ে কথা বললেন। সন্ধ্যায় কাগুর বাপ আমাকে হাজিবাড়ি নিয়ে গেল। আমরা যখন গাছ বাছাই করছিলাম সেই সময় মােহাম্মদদের বাড়িতে মারপিটের সােরগােল শুনলাম। আমরা ওখানে গিয়ে দেখতে পেলাম মােহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং কাপাসিয়ার পুলিশ (ওসি ও সেকেন্ড এসআইসহ) তাকে থানায় নিয়ে যাচ্ছে। দরদরিয়া বাজারে বাঘিয়ার কালি খানের সঙ্গে সর্বশেষ মারামারির জন্য মােহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবদুল খান ওখানে দাড়িয়ে ছিলেন। ওখান থেকে বাড়ি ফিরলাম।
সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আবদুল খানের বাড়িতে ছিলাম। রাত সাড়ে ৯টায় শুয়ে পড়েছিলাম এবং এক ঘন্টার বেশি হবে না ঘুমিয়েছি, এমন সময় আবদুল খান, জব্বার, তাহির আলী, ওয়ারিস আলী, কাগুর বাপ, হবের বাপ প্রমুখ আমাকে ডেকে তুলল। তারা করম আলীর বিয়ে সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে আবদুল খান ও ওয়ারিস আলীর ভূমিকা নিয়ে কথা বলল। মােরগডাকা ভাের পর্যন্ত কথাবার্তা চললেও আবদুল খান ও ওয়রিস আলীর বিরােধ দূর হলাে না। কোনাে সুফল ছাড়াই শুধুমাত্র আলােচনা হলাে। আমাদের গ্রামে সমিতি কীভাবে বাধাবিপত্তি কাটিয়ে এগিয়ে চলেছে সেই নজিরগুলাে তুলে ধরা হলাে। আবদুল খান সমিতির সঙ্গে থাকতে অনিচ্ছুক। উভয় পক্ষের আলােচনা থেকে এটা উন্মােচিত হলাে যে, গ্রামে বর্তমান বিরােধপূর্ণ পরিবেশের পেছনে ওয়ারিস আলীর কৌশলী ভূমিকা। সবচেয়ে বেশি। সাহেব আলী বেপারির বাড়ি থেকে সােবহান ও আলিমুদ্দিন এল। সাহেব আলীর আসার কথা ছিল এবং তিনি তাদের দুজনকে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত অযথাই বসিয়ে রাখলেন। রাত শেষে তিনি তাদেরকে চলে যেতে বললেন। সবাই চলে যাওয়ার পর উঠোনে ঘন্টাখানেক ঘুমালাম। তারপর উঠে পড়লাম। আবহাওয়া : সারাদিন ও রাত প্রচণ্ড গরম। বর্তমান সময়ে বৃষ্টির জরুরি প্রয়ােজন, তবে তার কোনাে লক্ষণ নেই। ১৫.৪.৫২ ভাের ৫টায় উঠলাম। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেলে শরাফতের দোকানে আজিজ সরকারকে চা খাওয়ালাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে তার বাড়ির সামনের উঠানে পাশা খেললাম। তারপর ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই।
১৬.৪.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে দুপুর ১০টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেলে আবদুল করিম শিকদার নামে ঢাকার একজন ডিআইবি ইন্সপেক্টর (২১ আওলাদ হােসেন রােড, অশােক লেন) আমার সঙ্গে বাজারে দেখা করলেন। তিনি আমার বাড়ির ঠিকানা ও বাবার নাম লিখে নিলেন। তিনি বললেন, তিনি এখানে এসেছেন রাষ্ট্রভাষা। আন্দোলনের যােগসূত্রে। কাপাসিয়ার উদ্দেশে তিনি চলে গেলেন। রাত প্রায় ৯টা। পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও আমি তার বাড়িতে স্কুলের হিসাবপত্র পরীক্ষা করে দেখলাম। তারপর ঘরে ফিরলাম। আবহাওয়া : দিনে প্রচণ্ড গরম। শেষ বিকেলে আকাশ মেঘে ঢেকে গেল। সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলল ধুলিঝড়। সূর্যাস্তের পর আধ ঘন্টা ভালাে বৃষ্টি হলাে। রাতে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। তাপমাত্রা আরামদায়ক।
১৭.৪.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। তারপর আবার ১১টা পর্যন্ত স্কুলে। শাহিদা ওষুধের দোকানে এসেছিল। সকাল সাড়ে ৮টায় আমি তার জন্য ওষুধ নিয়ে। তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। বেলা ৩টায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলের হিসাবপত্রসহ বসলাম। রাত ৮টা পর্যন্ত হিসাবপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঘরে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : উত্তপ্ত পরিবেশ। দিন ও রাত পরিষ্কার। গত রাতে বৃষ্টির কারণে
দিনের প্রথমভাগে সহনীয় তাপমাত্রা।
১৮.৪.৫২ -বাড়িভাের ৫টায় উঠেছি। বেলা ১২টার দিকে সাইকেলে করে বাড়িতে পৌছলাম। বিকেলে ঠাকুরা বিলে গেলাম। আবদুল খান আমার সঙ্গে ছিল। বােরাে খেতে আসুর সঙ্গে দেখা হলাে। কালবাড়িতে সাইদ আলী তার ভাড়া বিভাজন মামলার কাগজপত্র নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। ২২ দিন অনুপস্থিত থাকার পর তিনি বাড়ি ফিরেছেন। আড়ালের জামাই ওখানে আমার সঙ্গে যােগ দিলেন। বােরাে খেতের চারধারের হাঁটলাম এবং সূর্যাস্তের পর বাড়ি ফিরলাম। দিগধার ভাইসাহেব ও বরিশালের একজন কবিরাজ সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে এলেন এবং রাতে থাকলেন। তারা মৈশন মিয়াবাড়ি গিয়েছিলেন। রাতে আমি বাড়ির সবার কাছে এ তথ্য উন্মােচন করলাম যে, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে আমাকে হয়তাে গ্রেফতার করা হতে পারে। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : প্রখর সূর্যালােক। মধ্যরাতের দিকে ভালাে বৃষ্টি হলাে। দিনের প্রথম ভাগে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছিল। ১৯.৪.৫২ -শ্রীপুরভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ১০টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। রাতে ও সকালে বৃষ্টির কারণে রাস্তা চলাচলের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়ায় সময়মতাে আসতে পারলাম না। হাজিরা খাতা হালনাগাদ করতে একাই কাজ করলাম; সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এবং আবার বেলা আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। সন্ধ্যা ৬টার দিকে নিয়ামত সরকার ৫ মিনিটের জন্য আমার সঙ্গে স্কুলে দেখা করলেন। গুরুত্বপূর্ণ কোনাে বিষয়ে আলাপ হলাে না। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : রাতে হালকা ঠাণ্ডা। দিনের প্রথমভাগের পর আকাশ কমবেশি পরিষ্কার। রাতের আকাশ পরিষ্কার।
২০.৪.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত স্কুল ম্যানেজিং কমিটির ভােটার তালিকা প্রস্তুত করলাম। বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে ছিলাম। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের বাড়িতে আমাদের সঙ্গে এএসআই, এস এম কোরেশি, ফরেস্টার মােসলেম উদ্দিন সুর্যাস্ত পর্যন্ত গল্প করলেন। বাকি সময়টা ক্লাবে পাশা খেলে কাটালাম। বেরারচালার চাদ মিয়া ও আহমদ পালােয়ান ঢাকায় যাওয়ার পথে আমার সঙ্গে ক্লাবে দেখা করলেন। রাত সাড়ে ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : শেষ বিকেলে বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে লাগল। টুকরাে টুকরাে মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। এ ছাড়া আকাশ পরিষ্কার। রাতে হালকা ঠাণ্ডা। ২১.৪.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সকাল ৯টায় সেক্রেটারি স্কুলে এলেন। ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে সকাল ১১টা পর্যন্ত তার। সঙ্গে আলােচনা করলাম। তারপর নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে বের হলাম। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে সঙ্গে নিয়ে বেলা ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তার বাড়িতে স্কুলের হিসাবপত্র পরীক্ষা করলাম। রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে তার সঙ্গে পাশা খেললাম। তারপর ঘরে ফিরলাম। সন্ধ্যায় ইদ্রিস গার্ডের মামলার বিষয়ে রজব আলী ও ওয়াসি মােল্লার বড় ছেলে আমার কাছে এসেছিল। কথা হলাে ওয়াসি মােল্লার বড় ছেলের আদালতে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা নিয়ে। ২০/২৫ মিনিট পর তারা চলে গেল। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : বিকেল থেকে আকাশ মেঘে ঢেকে ছিল। সূর্যাস্তের পর এক ঘন্টা ধরে বেশ ভাল বৃষ্টি হলাে। রাতে মুষলধারে বৃষ্টি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি চলছে।
৯৫
২২.৪.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। স্কুলবর্ষণমুখর দিন। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভােটার তালিকা প্রস্তুত করলাম। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সহায়তায় দুপুর ১টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত খেটেখুটে একটি হিসাবপত্র তৈরি করলাম। যেখানে ১৯৫০ সালে এম বিশ্বাসের তহবিল তসরুফের বিষয়টি উঠে। এসেছে। এরপর ঘরে ফিরলাম। রাত সাড়ে ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সকাল ৮টা পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ভেসে বেড়ানাে মেঘে আকাশ অন্ধকারময়। সূর্যাস্তের পর হালকা বৃষ্টি হলাে। তারপর আবার রাত ৯টা থেকে প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে ঝড়াে বাতাসের সঙ্গে হালকা বৃষ্টি। বৃষ্টি। অব্যাহত থাকায় পরিবেশ ঠাণ্ডা। ২৩.৪.৫২ -শ্রীপুরভাের ৫টায় উঠেছি। শবে মেরাজের কারণে স্কুল বন্ধ। সকাল সাড়ে ৮টায় আকতার মাস্টার সাহেব এলেন। তাকে নিয়ে বেলা ১টা পর্যন্ত স্কুল অফিসে বসে বার্ষিক রিপাের্ট প্রস্তুত করলাম। তারপর ফিরে এলাম। বেলা ২টার ট্রেনে মাস্টার সাহেব ময়মনসিংহের উদ্দেশে চলে গেলেন। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের ওখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্কুলের কাগজপত্র পরীক্ষা করলাম। ক্লাবে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে রাত ৮টা পর্যন্ত পাশা খেললাম। গিয়াসউদ্দিন মৌলবি ও আমরাইদের আরেকজন রাত ৯টায় এলেন। আমি তাদেরকে রাতের জন্য ইসমাইল খানের হােটলে থাকার ব্যবস্থা করলাম। রাত ১০টা দিকে টুকু মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে মৈশন থেকে শাহাবুদ্দিন তার নতুন মাকে নিয়ে এল। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন-রাত বর্ষণমুখর পরিবেশ। রাতে ভারি বৃষ্টিপাত। পরিবেশ ঠাণ্ডা।
২৪.৪.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। পরে বেলা ১১টা পর্যন্ত স্কুলে কাজ করলাম এবং আবার দুপুর ১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত । ক্লাবে রাত প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে পাশা খেললাম। রাত পৌনে ১০টার দিকে ফরেস্টার মােসলেম উদ্দিন চৌধুরী ও হাবিব গার্ড আমার ঘরে এসেছিলেন। তারা আমাকে বললেন, আজ থেকে তাদের দুজনসহ শালনার হাফিজউদ্দিনকে রেঞ্জার আসিরউদ্দিনের সুপারিশে ডিএফও সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছেন। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : দিনের প্রথম ভাগে বর্ষাত পরিবেশ। সকালের অংশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বিকেলে পরিষ্কার আকাশ, রাতেও পরিষ্কার। ঠাণ্ডা পরিবেশ। ২৫.৪,৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সােয়া ৮টায় আকতার মাস্টার সাহেব ময়মনসিংহ থেকে এলেন। তাকে নিয়ে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা এবং আবার ৩টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত স্কুলে বসে স্কুলের জমা-খরচের হিসাব প্রস্তুত করলাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলেন। রাত ৮টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে ক্লাবে দাবা খেললাম। স্কুলের জমাখরচের হিসাব লিখলাম রাত ৯টা থেকে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত। বিছানায় গেলাম রাত ১২টায়। আবহাওয়া : প্রবল বৃষ্টিপাতসহ সকালে ঝড় হলাে এক ঘন্টা ধরে। অন্ধকারাচ্ছন্ন
আকাশ। ঠাণ্ডা পরিবেশ।
২৬.৪.৫২ -ঢাকা ও ফিরে আসাভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। সােজা গেলাম মৌলবি বাজারের হাবিব ব্যাংকে। সকাল সােয়া ১১টার মধ্যে ১২০০ টাকার একটি চেক ভাঙালাম। তারপর আদালতে এলাম। বার লাইব্রেরিতে কোরবান আলী, কফিলউদ্দীন চৌধুরী, নাইম প্রমুখকে পেলাম। আদালতে দেখা হলাে আবুল হায়াত চৌধুরী, মমতাজ মােক্তার, কুদরত আলী, সাতখামাইরের আশরাফ আলী, কাজী সাহেব, এম বিশ্বাস, সাদির ও আরাে অনেকের সঙ্গে। বেলা আড়াইটায় এসডিও (এন)-এর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি সিডি হােমের সুপারিনটেনডেন্টকে দায়িত্ব দিলেন নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের ভূমিকা পালন করার জন্য। আল আমীন প্রেসে গেলাম। আফতাবউদ্দিন ভূইয়ার সঙ্গে দেখা করলাম। ছাপানাের জন্য তাকে প্রশ্নপত্রগুলাে দিলাম। সদরঘাটে কিছু কেনাকাটা করলাম। শ্রীপুর ফিরে এলাম সন্ধ্যা ৬টা ২৬ মিনিটের ট্রেনে চড়ে। রায়সাহেব। বাজারে একটি রিকশায় শেখ মুজিবকে দেখলাম। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : রাতের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে সকাল পর্যন্ত মৌসুমের সবচেয়ে
ভারি বৃষ্টিপাত হলাে। মাঠে প্রচুর পানি জমে গেছে। বৃষ্টি চলছে। ২৭.৪.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। স্কুলবর্ষণমুখর দিন। কোনাে ছাত্রই হাজির হয়নি। সকালের দিকে ইয়াকুব আলী মৌলবি সাহেব, আবুল হােসেন ও আমি শরাফতের দোকানে বসে ছিলাম। সেখানে চা খেলাম। আমি একটি ছাতা কিনলাম। তারপর ফিরে এলাম। বিকেলে স্কুল অফিসে গেলাম। সূর্যাস্তের পর মকসুদ বিশ্বাস আমার সঙ্গে প্রায় ঘন্টাখানেক আলাপ করলেন। তাকে শরাফতের দোকানে আমার খরচে চা খাওয়ালাম।
রাত পৌনে ৮টায় রেঞ্জ অফিসে গেলাম। রেঞ্জার আসিরুদ্দিন আমাকে বললেন, তার পূর্বসূরিরা বন বিভাগের কত গুরুতর ক্ষতিসাধন করেছেন। আমি রাত ১০টায় ওখান থেকে বের হলাম। গারারুর আবদুল হামিদ বনরক্ষী হতে আগ্রহী। আসিরুদ্দিনের কাছে আমি তার বিষয়টি উপস্থাপন করলাম। বিছানায় গেলাম সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : রাত ৮টা পর্যন্ত অবিরাম বৃষ্টি। বিকেলে আকাশ কম-বেশি পরিষ্কার ছিল। রাতের শেষভাগে আবার মুষলধারে বৃষ্টি। বর্ষণ অব্যাহত থাকল দিনের প্রথমভাগ পর্যন্ত।
২৮.৪.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। মজিদ সাহেব স্কুলে এসেছিলেন। আমি তার পাওনা পরিশােধ করলাম। একইভাবে মৌলবি সাহেব ও বি সি শীলের পাওনাও হাল নাগাদ করলাম। মজিদ সাহেব সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে চলে গেলেন। বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত স্কুলের অফিসে কাজ করলাম। আমার পােস্টাল একাউন্টে ৪০০ টাকা জমা করলাম। রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দাবা খেললাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশ। তবে সন্ধ্যা ৬টার পর আর বৃষ্টি নেই। রাতের
শেষভাগে মুষলধারে বৃষ্টি। বর্ষণ অব্যাহত। ঠাণ্ডা পরিবেশ। ২৯.৪.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বৃষ্টির কারণে ছাত্রদের কেউ হাজির হলাে না। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত অফিসে কাজ করলাম।
বাজার করার সময় ইউনুসের কাছে গেলাম এবং আমার সাইকেল মেরামত করালাম। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে ক্লাবে দাবা খেললাম। তারপর বাসস্থানে ফিরলাম রাত ৮টায়। আনসারের অ্যাডজুটেন্ড ও সহকারি অ্যাডজুটেন্ড আমাদের ক্লাবে এসেছিলেন। তারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : বৃষ্টিস্নাত পরিবেশ। রাতের প্রথম ভাগে আকাশ পুরােপুরি পরিষ্কার। তারপর আকাশ আবার মেঘে মেঘে ছেয়ে গেছে। সন্ধ্যায় ও রাতের শেষ ভাগে কয়েক ফোটা বৃষ্টি ছাড়া আর বৃষ্টি হয়নি। ৩০.৪.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। এস এম হল থেকে আহমদ এক ভদ্রলােককে তার সঙ্গে নিয়ে এসেছে শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে। তারা। বেলা ২টার ট্রেনে এসেছে। আমি ওই ভদ্রলােকের সঙ্গে স্কুলের অবস্থা নিয়ে আলাপ করলাম। আমি সন্ধ্যায় রেঞ্জার আসিরুদ্দিনের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। তাকে হামিদের দরখাস্তের ব্যাপারে স্মরণ করিয়ে দিলাম। দৃশ্যত তিনি তাকে গ্রহণ করতে ইছুক নন। রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। মাহবুবুর রহমানের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করলাম। রাত সাড়ে ৯টায় তাকে স্টেশনে বিদায় দিলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দিনের বেলায় আকাশ কম-বেশি পরিষ্কার। রাত সাড়ে ৯টা থেকে
১০টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হলাে। ঠাণ্ডা পরিবেশ।
১০০
১ মে, বৃহস্পতিবার ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সকালের ট্রেনে এসডিও (উত্তর) এখানে এসেছেন; একটি বিএল মামলার বিচার কার্যক্রমে। বেলা সাড়ে ১১টায় ডিবি বাংলােয় আমি তার সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি স্কুলের ব্যাপারাদি নিয়ে কথাবার্তা বললেন এবং আমাকে আমাদের অডিট রিপাের্ট জমা দিতে বললেন। ডিবি বাংলােয় দুপুরের খাবার খেলাম। রেঞ্জার আসিরুদ্দিন আমার সঙ্গে একই ব্যাচে খেলেন। আমি অডিট রিপাের্টের একটি খসড়া তৈরি করলাম এবং ডাক্তার ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের স্বাক্ষর নিয়ে এসডিও (উত্তর)-এর কাছে জমা দিলাম। মমতাজ, সাদির ও আসগর উকিলকে নাস্তা ও রাতের খাবার খাওয়ালাম। রাত সাড়ে ৯টার ট্রেনে তারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলেন। এসডিও স্টেশন থেকে ফিরে এলেন। রাত সাড়ে ১০টা বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দিনের বেলা আকাশ কম বেশি পরিষ্কার। ঠিক সন্ধ্যায় প্রবল ঝড়ের সঙ্গে প্রায় আধ ঘন্টা ধরে ভারি বৃষ্টি। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বৃষ্টি থামল। ঠাণ্ডা পরিবেশ। রাতের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন।
২.৫.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টায় এসডিও (উত্তর) কে স্টেশনে বিদায় জানালাম। সকাল ৮টার। দিকে আসমত আকন্দ আমাকে ডালপুরি ও সােবহান দোকানি আমাকে চা ও বিস্কুট দিয়েছিলেন। দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত স্কুলের অফিসে কাজ করলাম। রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দাবা খেললাম। তারপর ঘরে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : বৃষ্টিশূন্য দিন। তবে আকাশে মেঘ ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর প্রায়।
আধ ঘন্টা ধরে মুষলধারে বৃষ্টি হলাে। রাতের বাকি সময় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও কোনাে বৃষ্টি হয়নি। গত রাতের তুলনায় আজ রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বেশি। ৩.৫.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। অফিসে বলাই বাবুকে সঙ্গে নিয়ে জমা-খরচের হিসাবের নিষ্পত্তি করলাম। সাইদ আলী পণ্ডিতের সহায়তায় বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এফ করিমের কাছে থাকা টাকার পরিমাণ খুঁজে বের করলাম। বাজারের সময় আমার সঙ্গে জবু ও কুদুস এবং মামদির বাড়ির টুকু দেখা করল। স্কুলে আক্কাস আলী এবং তারপর ইদ্রিস গার্ড তাদের নিজ নিজ মামলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করল। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের ওখানে বেলা সাড়ে ৩টায় পেপে ও লিচু খেলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : দিনের বেলাটা বৃষ্টিশূন্য। রাত ৯টার পর কিছু সময়ের জন্য ঝড় ও হালকা বৃষ্টি হলাে। ঠাণ্ডা। তাপমাত্রা কম। পুরাে আকাশে মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে।
৪.৫.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বেলা ১১টায় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলাে। কোনাে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলাে না। ইজ্জত আলী, তাহের আলী, কালু মণ্ডল, হাসান মণ্ডল, নিয়ামত সরকার, কলিমউদ্দিন, আবুল হােসেন খান ও ডা, আহসানউদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন। দুপুর ১টায় স্কুলের অফিস থেকে বের হলাম। বিকেলে শরাফতের দোকানের সামনে ধনাই বেপারি আমার সঙ্গে এম বিশ্বাসের বিষয় নিয়ে কথা বললেন। সন্ধ্যায় আমি সিডি হােমের সুপারিনটেনডেন্ট জনাব জাইদির কাছে নির্বাচনের রিপাের্টের একটি খসড়া হস্তান্তর করলাম। রাত ৯টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দাবা খেললাম। বাঘিয়ার রুস্তম আমার সঙ্গে রাতের খাবার খেল। সে ঢাকা থেকে এসেছে এবং রাতে থাকল সিরাজের সঙ্গে। ক্লাবে ইদ্রিস আলী গার্ড তার মামলার ব্যাপারে আমার সঙ্গে দেখা করল। দুপুর ৩টায় ওয়াসিরউদ্দিন মােল্লার অসুস্থতা নিয়ে আমি ডা. আহসানউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায় । আবহাওয়া : দিনের বেলাটা সূর্যের আলােতে উজ্জ্বল। রাত ১০টার পর এক পশলা বৃষ্টি হলাে। রাতের শেষ ভাগে বৃষ্টি ধরে এল। সহনীয় ঠাণ্ডা পরিবেশ। ৫.৫.৫২ ভােরে সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। দুপুর আড়াইটায় স্কুলের অফিসে গেলাম। দুপুর ৩টার দিকে এম বিশ্বাস সেখানে এলেন। আমি তাকে স্কুলের হিসাবপত্র বুঝিয়ে দিতে বললাম। তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন আগামী শনিবার এ ব্যাপারে বসবেন। রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে মালেক সাহেবের সঙ্গে পাশা খেললাম। ময়মনসিংহ থেকে। ফিরে বেরাইদার চালার আফতাবউদ্দিন আমার সঙ্গে দেখা করল।
ডা, এ আহমদের কাছ থেকে এসসি ও ৫ টাকা নিয়ে আমি ওয়াসি মােল্লার ছেলেকে সকালের ট্রেনে ঢাকায় পাঠালাম। তাকে মমতাজ মােক্তারকে লেখা একটি চিঠি। দিলাম। স্কুল থেকে ফিরে পুকুরে কাপড় কাচলাম। বিছানায় ঘুমাতে গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : পরিষ্কার দিন। প্রখর রােদ। রাত ১১টার পর মুষলধারে বৃষ্টি হলাে। ৬.৫.৫২ -ঢাকাভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। ভা, আহসানউদ্দিন, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ঢাকা স্টেশন পর্যন্ত আমার সঙ্গে এলেন। আক্কাস আলী ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে তার মামলা সংক্রান্ত ব্যাপারে ঢাকা গেছেন। রাজেন্দ্রপুরে এসডিও (উত্তর)-এর সঙ্গে দেখা হলাে, তিনি তখন কাওরাইদ যাচ্ছিলেন। তিনি আমাদেরকে বললেন, এম বিশ্বাসের মামলাটি তিনি ডিএবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। সকাল ১১টায় হাবিব ব্যাংকে ১২০ টাকার চেক জমা করলাম এবং ১০০ টাকা নগদ উঠালাম। তারপর সােজা কোটে এলাম। বিল মামলার তদন্ত করতে এসডিও (উত্তর) কাওরাইদ যাওয়ার কারণে আক্কাস আলীর মামলা মুলতবি হয়ে গেল। বার লাইব্রেরিতে কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে বললেন, যুবলীগ কর্মীদের সঙ্গে তার মতপার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছে। আতাউর রহমান খান, জমির, কফিলউদ্দীন চৌধুরী, রহিম মােক্তার প্রমুখ আমাদের সঙ্গে সেক্রেটারির রুমে উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ৩টায় ডিএসপি সােবহান ও ডিএবির ডিএসপির সঙ্গে তাদের রুমে দেখা করলাম। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কথা বললাম। সেলিমউদ্দিন নামে একজন এসআইকে এম বিশ্বাসের মামলার দায়িত্ব এসডিও (উত্তর) বুঝিয়ে দিয়েছেন। এসআই সেলিমউদ্দিন আমাকে জানালেন, তিনি ১১.৫.৫২ তারিখ শ্রীপুর আসবেন। এরপর সােজা গেলাম আল আমিন প্রেসে। প্রশ্নপত্রগুলাে তৈরি ছিল না। আমি প্রুফ রিডিংয়ে সহায়তা করলাম। রাতে আফতাবউদ্দিনের সঙ্গে খেলাম ও তার বিছানায় ভাগাভাগি করে থাকলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১২টায়। আবহাওয়া : প্রখর রােদ ও উত্তপ্ত পরিবেশ। রাতের আকাশ পরিষ্কার এবং গরম।
৭.৫.৫২ ভাের ৪টায় উঠেছি। বেলা ১১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সাড়ে ১০টায় পরীক্ষা শুরু হলাে। প্রশ্নপত্র ইত্যাদি নিয়ে শ্রীপুর ফিরলাম ভাের ৫টা ৫ মিনিটের ট্রেনে। দুপুর ২টার ট্রেনে জয়দেবপুর গেলাম। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করলাম। গত ৫.৫.৫২ তারিখে শ্রীপুর ও কুর্মিটোলার মধ্যে জোনাল ফাইনাল ফুটবল খেলায় সংঘটিত ঘটনার ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বললাম। ওখানে কুর্মিটোলার তিনজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। আমরা সবাই বিভিন্ন বিষয়ে ৬টা পর্যন্ত কথা বললাম। প্রধান শিক্ষক আমাদের চা ও নাস্তা সহযােগে আপ্যায়ন করালেন। ফাইনাল খেলা। অনুষ্ঠিত হয়েছিল জয়দেবপুর ও কুর্মিটোলার মধ্যে এবং জয়ী হয় জয়দেবপুর। চৌরাপাড়ার নবার পালােয়ানের সহায়তায় কুর্মিটোলার তিনজন শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাওয়াল রাজের বাস্তুভিটার পুরাে অংশ ঘুরে দেখলাম। এরপর আমরা আলাদাভাবে যে যার গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হলাম। সন্ধ্যার পর হামিদুল হক আমাকে তার ঘরে নাস্তা দিলেন। স্টেশনে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য প্রথম শ্রেণীর বিশ্রামাগার খুলে দিয়ে রিয়াজউদ্দিন আমাকে বড় ধরনের সহায়তা করলেন। রাত ৮টার ট্রেনে শ্রীপুর ফিরলাম। জয়দেবপুরে রাখাল বাবু, গােসিঙ্গার নায়েব, গােসিঙ্গা ঘাটের মাঝি প্রমুখের সঙ্গে দেখা হলাে। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : সকালে শ্রীপুরে হালকা বৃষ্টি হলেও ঢাকার দিকে কোনাে বৃষ্টি হয়নি। বিকেল বেলা ছায়াময় ছিল। সন্ধ্যায় খুবই সামান্য বৃষ্টি হলাে। রাতে ঠাণ্ডা পরিবেশ। ৮.৫.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সূর্যাস্ত থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে পাশা খেললাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : দুপুর ২টার দিকে হঠাৎ করেই আকাশ ঘন কালাে মেঘে ছেয়ে গেল। বিকেল পৌনে ৫টা থেকে ঘন্টাখানেক মুষলধারে বৃষ্টি হলাে। ঠাণ্ডা পরিবেশ।
১০৫
৯.৫.৫২
বাড়িভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম সকাল ৭টায়। ডা. আহসানউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করলাম। তাকে ৫ টাকা দিলাম ওয়াসিমউদ্দিন মােল্লাকে দেওয়ার জন্য। পায়ে হেঁটে সােজা বাড়ি পৌছলাম। পায়ে জুতাে ছাড়াই হেঁটে এলাম। খন্দকার বাড়ির জামাই আমাদের বাড়িতে ছিল। বেপারি বাড়ি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করলাম। গিয়াস ভাইসাহেব ও বেলায়েত আলী মাস্টার সাহেব সন্ধ্যায় আমাদের বাড়ি এলেন; হােসেন আলী খানের ছেলের সঙ্গে বুলবুলের বিয়ের ব্যাপারে আলাপ করতে। রাতে তারা থাকলেন। মিস্ত্রিরা আমাদের বাড়িতে কাজ করছিল। রাতে ওয়াসি মােল্লার বড় ছেলে এসেছিল। সে ইদ্রিসের মামলার ব্যাপারে আলাপ করে। চলে গেল। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : বৃষ্টিহীন দিন ও রাত। গরম আবহাওয়া। ১০.৫.৫২ ভোের ৫টায় উঠেছি। শবেবরাত উপলক্ষে ছুটির দিন। বেলা ১১টার দিকে গিয়াস ভাইসাহেব ও বেলায়েত আলী মাস্টার চলে গেলেন। মধ্য দুপুরে হাকিম মিয়া এলেন। তিনি আমার সঙ্গে দুপুরে খেলেন। বিকেলে তিনি আমার সঙ্গে আমাদের বলধা ফরেস্টে গেলেন। তারপর বাঘিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা হলেন। আমি নদীর পাড়ে গেলাম ও আমাদের পাটখেতের চারধারে ঘুরে বেড়ালাম। সূর্যাস্তের সময় বাড়ি ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : দিন ও রাত বৃষ্টিহীন। দিনের বেলায় সূর্যের আলাে। রাতের বেলায় আকাশে চাঁদ।
১১.৫.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। স্কুলে শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক হাজিরা দিলাম। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্কুলের অফিসে কাজ করলাম। সকাল সাড়ে ৭টায় বাড়ি থেকে শ্রীপুর পৌছলাম। শ্রীপুর পৌছে ডিএবি পুলিশের এসআই সেলিমউদ্দিনকে পেলাম। তিনি হাসান মােড়ল, কালু মােড়ল, মজিদ মােড়ল, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর বেলাল প্রমুখের বাড়িতে তল্লাশি করেছেন। এম বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের বাড়িতে বসে এসআই আমাদের জমা করা কাগজপত্রসমূহ নিলেন। দুপুর ২টার ট্রেনে তিনি চলে গেলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিক থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্যানিটারি অফিসের সামনে বৃত্তাকার বাঁধানাে দেয়ালের ওপরে বসে আবগারি ইন্সপেক্টর ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে আলাপ করলাম। তারপর ঘরে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : সকাল সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় এক ঘন্টা ধরে মুষলধারে বৃষ্টি হলাে। রাতে হালকা বৃষ্টি হলাে। আকাশ পরিষ্কার হলাে না। রাতে ঠাণ্ডা। দুপুর আড়াইটায় এ জব্বার ওভারসিয়ার ও সিংহশ্রীর আরেকজন লােক আমার কাছে এলেন। বিকেল সােয়া ৪টায় তারা চলে গেলেন। শেষের জন পাসপাের্টের জন্য প্রয়ােজনীয় ডিআইবি রিপাের্ট পেতে আমার সহায়তা কামনা করলেন। আমার কাছে হাইলজোর থেকে দুজন লােক এলেন পরামর্শের জন্য। ভূইয়াদের কাছ থেকে তাদের ফরেস্টের পেটান নেয়া উচিত হবে কি না, তারা তা জানতে চাইলেন। তারাও একই সময়ে চলে গেলেন। ১২.৫.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেল ৪টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত স্যানিটারি অফিসে স্কুলের ১৯৪৯ সালের হিসাবপত্র পরীক্ষা করে দেখলাম। রাত ৮টা পর্যন্ত দাবা খেলে ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায় ।
আবহাওয়া : দিন ও রাত বৃষ্টিহীন। উষ্ণ পরিবেশ। সারাক্ষণই আকাশ প্রায় পুরােপুরি পরিষ্কার। বদলি হয়ে এসআই নুরুল হক আজ সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুর। ছাড়লেন। ১৩.৫.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। বেলা সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে সঙ্গে নিয়ে তার অফিসে বসে স্কুলের হিসাবপত্রগুলাে পরীক্ষা করলাম সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মফিজউদ্দীন বাড়ি থেকে এল। আকবর আলীর কাছ থেকে চরের জমি কেনার ব্যাপারে আমি তাকে চুপচাপ থাকতে বললাম। কারণ যদি আবদুল খান তার দর জানিয়ে দেয়। ২০ মিনিট পর সে চলে গেল। ম্যানেজিং। কমিটির নির্বাচিত সকল সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে স্কুল অফিসে ছিলাম দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ইন্সপেক্টর অব স্কুলের দফতর থেকে নিয়মকানুনের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না আসা পর্যন্ত অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচন মুলতবি রাখা হলাে। হাসান মােড়ল, ইজ্জত আলী সরকার, ইয়াকুব আলী মৌলবি সাহেব প্রমুখকে নিয়ে ডাকঘরে এলাম। পােস্ট মাস্টারের কাছে গিয়ে রিজার্ভ ফাণ্ড ও শিক্ষকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের প্রকৃত অবস্থা নির্ধারণ করলাম। এম বিশ্বাস প্রভিডেন্ট ফান্ড প্রায় নিঃশেষ করে ফেলেছেন। ফান্ডে জমা রয়েছে মাত্র ২৬৭ টাকা। রাত ৮টায় ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : সন্ধ্যায় ও রাত ৮টার পর মােটামুটি ভারি বৃষ্টিপাত হলাে। ঠাণ্ডা পরিবেশ।
১৪.৫.৫২
-ঢাকাভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। মৌলবি ইয়াকুব আলী সঙ্গে এলেন। সােজা গেলাম ইন্সপেক্টর অব স্কুলের অফিসে। ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন ও স্কুলের অন্যান্য বিষয়; যেমন প্রভিডেন্ট ফান্ডের হিসাব ও এম বিশ্বাসের বিষয় নিয়ে আলাপ করলাম। দুপুর ১২টায় বের হলাম। কোর্টে গেলাম। এসডিও (উত্তর) কে পেলাম না। তিনি অসুস্থ। মুক্তার আমাদের নাস্তা করালেন। দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বার লাইব্রেরির সেক্রেটারির কক্ষে আতাউর রহমান খান, কামরুদ্দীন আহমদ ও জমিরের সঙ্গে আলাপ করলাম। তারপর বের হলাম।। ইয়াকুব আলী মৌলবি সাহেবের জন্য ইকবাল ওয়াচ কোম্পানি থেকে ওয়েস্ট ইন্ড ওয়াচ কিনলাম ৬৯ টাকা দিয়ে। সদরঘাটে কিছু টুকিটাকি কেনাকাটা করে স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হলাম। সন্ধ্যায় ডা, করিমকে তার ফার্মেসিতে ৫০ টাকা দিলাম ভাবীকে দেওয়ার জন্য। আজ সদরঘাটে জলিল, মুজিব, ইমাদুল্লাহ এবং উকিল মােমিনের সঙ্গে বার লাইব্রেরির সামনে, কোতােয়ালির ওসি জনাব ইসরাইলের সঙ্গে স্টেশন রােড ও নবাবপুর ক্রসিংয়ে, ধামরাইয়ের কাদিরের সঙ্গে স্টেশন রােডে এবং এসআই সেলিমের সঙ্গে আদালতে স্বল্প সময়ের জন্য দেখা হলাে। সন্ধ্যা ৬টা ২৬ মিনিটের ট্রেনে রওনা হয়ে শ্রীপুর ফিরলাম। ট্রেনের কামরায় আমার সঙ্গে ছিলেন ছিলেন জব্বার ওভারসিয়ার ও কালুর দুই জামাই। রাত ৯টায় শরাফতের কাছ থেকে একটি ইদুর ধরার কল নিলাম এবং সেটি স্কুলের অফিসে স্থাপন করলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : বৃষ্টিহীন দিন এবং রাতে আকাশ প্রায় পুরােপুরি পরিষ্কার। রাতের
বেলায় অপেক্ষাকৃত কম ঠাণ্ডা। ১৫.৫.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেলে প্রথম বসলাম আবগারি ইন্সপেক্টরের অফিসে। বিবিধ বিষয় নিয়ে আলাপ করলাম স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, আবগারি ইন্সপেক্টর ইয়াকুব আলী মৌলবি এবং উষা মাস্টারের সঙ্গে। সন্ধ্যায় বসলাম স্যানিটারি অফিসে। রাত ৮টা পর্যন্ত স্কুলের হিসাবপত্র পরীক্ষা করলাম। তারপর ঘরে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : বৃষ্টিহীন দিন ও রাত। বাতাসে জলীয় বাষ্প। উষ্ণ পরিবেশ। আকাশ একেক সময় মেঘে মেঘে ছেয়ে যাচ্ছে। আবার মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসছে নীল আকাশ।
১৬.৫.৫২ -ঢাকাভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টা ১২ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। যােগীনগরে উঠলাম। যুবলীগ অফিসে ইমাদুল্লাহ, সুলতান, জলিল প্রমুখকে পেলাম। পৌনে ১২টার দিকে ডা. করিমের সঙ্গে তাঁর ফার্মেসিতে দেখা করলাম। ঠাটারি বাজারে বসে তার সঙ্গে আমার পারিবারিক বিষয় নিয়ে আলাপ করলাম বেলা ১টা পর্যন্ত। তারপর যােগীনগর ফিরে এলাম। দুপুরে খাবারের পর বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভাবীর কথা শুনলাম। তারপর বাইরে বের হলাম। বিকেল ৫টায় কামরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে দেখা করলাম। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তার সঙ্গে কথা বললাম। প্রথমে কথা হলাে নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে। তারপর আমি আলাপ করলাম ফরেস্টার অসিমউদ্দিনের বিরুদ্ধে মানহানির একটি মামলা চালু করা প্রসঙ্গে। রাত ১০টায় যােগীনগরে ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১২টায়। আবহাওয়া : পুরাে দিন প্রখর রােদ। রাতে পরিষ্কার আকাশ, ঘাম ঝরানাে গরম, বিশেষ করে রাতে।
১১০
১৭.৫.৫২
-শ্রীপুরভাের ৫টায় উঠেছি। নাস্তা সেরে সকাল ৯টায় বাইরে বের হলাম। সােজা গেলাম কেমব্রিজ ফার্মেসিতে। দুপুর সাড়ে ১২টায় ডা. করিমের সঙ্গে তাঁর নিজস্ব কাজে মৌলবি বাজারে (হাবিব ব্যাংক) গেলাম। ইসলামপুরে কয়েকটি ঘড়ির দোকানে ঘুরে বার লাইব্রেরিতে এলাম। কামরুদ্দীন আহমদ, জমির, কফিলউদ্দীন চৌধুরী, শেখ মুজিব ও এস এ রহিমকে পেলাম । মানহানির মামলা চালু করার প্রশ্নটি তুললাম। চৌধুরী সাহেবও ফিরােজের জন্য একই কাজ করতেন। দুপুর ২টার দিকে যােগীনগর ফিরলাম। দুপুরের খাবারের পর ভাবীর সঙ্গে মাধুরী চ্যাটার্জির বাড়িতে গেলাম। ভাবীকে পড়ানাের জন্য একজন প্রাইভেট টিউটরের বিষয়টি নিষ্পত্তি করলাম। তিনি আগামীকাল থেকে পড়াতে সম্মত হলেন। নবাবপুর থেকে কাপড় কিনে সন্ধ্যা ৬টায় স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হলাম। শ্রীপুর ফিরলাম সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটের ট্রেনে। সেখানে পৌছানাের পরই স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আমাকে বললেন, কালু মণ্ডলের বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য। হয়তাে পুলিশ তল্লাশি চালাতে পারে। ডিএবির একজন ইন্সপেক্টর এবং একজন কনস্টবল রাতে আমার ঘরে রইলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : প্রখর সূর্যালােক। রাতে আকাশ পরিষ্কার এবং অসহনীয় গরম। ভাের রাতে সহনীয় তাপমাত্রা। ১৮.৫.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। ডিএবির লােকজন ভােরবেলা গােসিঙ্গার দিকে রওনা হয়ে গেলেন। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত স্কুলের অফিসে কাজ করলাম। প্রসন্ন বাবুকে সঙ্গে নিয়ে তার বেতন বাবদ টাকার হিসাব তৈরি করলাম। তিনি গত রাতে এসেছেন। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে সঙ্গে নিয়ে তার বাড়িতে বসে স্কুলের
হিসাবপত্রসমূহ পরীক্ষা করলাম বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। তার সঙ্গে পাশা খেললাম রাত ৮টা পর্যন্ত। সেখানে ওসি ও সেকেন্ড অফিসার আমাদের সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য কথা বললেন। প্রসন্ন বাবুকে তার ডিএ এবং নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের বেতন পরিশােধ করা হলাে। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের কাছে থেকে একটি হারিকেন নিয়ে প্রসন্ন বাবুকে তার লজিং বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ১৯.৫.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টায় আড়ালের হেলাল মিয়া আমার কাছে এসেছিল। সকাল ৯টায় আমি তার সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম এবং সােজা বাড়ি গিয়ে পৌছলাম। আমাদের রওনা হওয়ার সময় দেখতে পেলাম স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও তার কর্মীরা শরাফতের কাছে থেকে ঘিয়ের নমুনা সগ্রহ করছেন। খামেরের সিরাজ শাহাজউদ্দিনের সঙ্গে বুলবুলের বিয়ের কথাবার্তার সূত্রে আমাদের বাড়িতে ছিলেন। তিনি গতকাল এসেছেন এবং আজকের রাতেও রইলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই।
২০.৫.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। নাস্তা সেরে সকাল ৭টার দিকে সিরাজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলেন। রাতে আড়ালের জামাইয়ের সঙ্গে আমি কালবাড়ি গেলাম হারা যােগালদের জন্য দেওয়া খাবারের আয়ােজনে যােগ দিতে। রাত ২টার দিকে ফিরলাম। ফিরে দেখলাম দিগধার ভাইসাহেবের সঙ্গে তারুল (হারিসের বাড়ি) থেকে আসা একজন লােক ও দুটি বালক আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা আমাকে জানাল
যে, শ্রীপুরের রেঞ্জারের নেতৃত্বে বনকর্মীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে গতকাল মধ্য দুপুরে হারিসের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। প্রায় ঘন্টাখানেক পর তারা চলে গেল। আমি আগামীকাল সকালে তাদের সঙ্গে দিগধায় দেখা করার প্রতিশ্রুতি দিলাম। আবহাওয়া : আগের মতােই। গরম বেড়েছে। খাবার শেষে মুর্শিদি গান শুনলাম এবং এতে আমি নীতিবােধের আনন্দ খুঁজে পেলাম। গান পরিবেশন করলেন বরহরের আমিজউদ্দিন নামের এক লােক ও লৌহজংয়ের এক কাঠ কয়লার বেপারি। এ ধরনের গান এবারই আমি প্রথম অনলাম। ২১.৫.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সাইকেলে করে বাড়ি থেকে রওনা হলাম। সকাল পৌনে ১০টায় মওলানা ওয়ারিস আলীর বাড়িতে পৌছলাম। তারপর গেলাম মাদ্রাসায়। জামাই আমার সঙ্গে ওখানে যােগ দিলেন। রমিজউদ্দীনের বাড়িতে দুপুরের খাবার খেলাম। রমিজউদ্দীন ভিখারীদের জন্য খাবারের আয়ােজন করেছেন। তার বাড়িতে আমার সঙ্গে আরাে খেলেন মওলানা, জামাই প্রমুখ এবং আমাদের গ্রামের সােবহান। খাবার শেষে জামাই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলেন। শেষ বিকেলে মওলানাকে সঙ্গে নিয়ে মফিজউদ্দীন মাস্টার সাহেবের বাড়িতে পেীছলাম। রাতে হারিস আমাদের সঙ্গে দেখা করল। মাস্টার সাহেবের বাড়িতে আমাদের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে আমাদের পরামর্শে সে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাে। তারপর সবাই চলে গেলেন। রাতটা আমি ওখানেই কাটালাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১১টায়। আবহাওয়া : খুবই গরম আবহাওয়া। রাতের প্রথমভাগে মেঘ জমলেও বৃষ্টি হওয়ার আগেই তা সরে গেল।
২২.৫.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। মাস্টার সাহেবের সঙ্গে নাস্তা সেরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উত্তর খামের এইচ ই স্কুলে গেলাম। আকতার মাস্টার, আইনুদ্দিন, আবদুল হাই ও অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। স্কুলের অ্যাসেমব্লি হলে সমবেত ছাত্রদের উদ্দেশে আমি প্রায় আধ ঘন্টা ধরে বক্তৃতা করলাম। গ্রীষ্মকালীন ইত্যাদি কারণে স্কুল আজ বন্ধ। ৫,৭.৫২ তারিখে পুনরায় স্কুল খুলবে। মফিজউদ্দীন সাহেব আমাকে জানালেন, বুলবুলের সঙ্গে শাহাজউদ্দিনের বিয়ে প্রসঙ্গে সিরাজ তার সঙ্গে আলাপ করেছে। আমি তাকে অনুরােধ করলাম আমাকে তাদের বাড়ির পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেওয়ার জন্য। তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন ২/৩ দিনের মধ্যে তিনি তা দেবেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দেওনায় মৌলবি বাড়ি এলাম। সেখানে দুপুরের খাবার খেলাম। পড়ন্ত বিকেলে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। হাফিজ বেপারির বাড়ি হয়ে ধলাগড়া খাল বরাবর দিয়ে হেঁটে সূর্যাস্তের সময় বাড়ি পৌছলাম। বৃষ্টির কারণে কাদা এড়াতে হালট দিয়ে এবং জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পথ চললাম। রাতে কোনাে খাবার খেলাম না। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : মধ্য দুপুর পর্যন্ত প্রখর রােদ। মাঝ দুপুরে আকাশ মেঘে ছেয়ে গেল।
দুপুর ১টা থেকে প্রায় এক ঘন্টা ধরে মুষলধারায় বৃষ্টি হলাে। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হলাে হালকা বৃষ্টি। অবশিষ্ট রাত বৃষ্টিশূন্য।
২৩.৫.৫২ -শ্রীপুরসকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। সকালে সাইদ আলী এসেছিলেন। আমি তার জন্য বলধার ম্যানেজার বরাবর একটি দরখাস্ত লিখে দিলাম। তিনি চলে গেলেন। সারাদিনই বাড়িতে ছিলাম। রাতে খাবার খেলাম না। রাত ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দুপুরের পর প্রায় আধ ঘন্টা বেশ ভালাে বৃষ্টি হলাে। কম গরম।
পরিষ্কার রাত।
২৪.৫.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। নাস্তার পর নদীর পাড়ে গেলাম। সমস্ত পাট খেত ঘুরে দুপুরে বাড়ি ফিরলাম। দিনের বাকি সময় বাড়িতেই রইলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : আকাশ একেবারে পরিষ্কার। প্রখর সূর্যের আলাে। দিনে মাত্রাতিরিক্ত গরম। রাত বাতাসের কারণে সহনীয়। দিগধার ভাইসাহেব শ্রীপুর যাওয়ার পথে দুপুরে আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি তিন জন লােকসহ গবাদি পশুর হাটে যাচ্ছিলেন। ২৫.৫.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। দুপুরে তারুলের হারিস এসেছিল। সে আমাকে রেঞ্জার আসিরুদ্দিন এবং তার কর্মীদের বিরুদ্ধে তার দায়ের করা মামলার খসড়া দেখাল। সন্ধ্যায় হাজি বাড়িতে গেলাম। সেখানে সেকান্দার এবং আফসু একটি কাঁঠাল গাছকে শিকড়সহ মাটি থেকে তুলছিল। রাত নেমে এলে বাড়িতে ফিরে এলাম। তােফাজ্জলের বাবা এসেছিলেন। তিনি সন্ধ্যায় চলে গেছেন। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : সারাদিন প্রচণ্ড রােদ। পরিষ্কার রাত। রাতে গরম বাতাস বইছিল। আজ দিগধা থেকে সেকান্দার এবং বারু মহিষের গাড়িতে টিন (দুই বান্ডেল) নিয়ে এসেছে। ২৬.৫.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। রমজানের প্রথম দিন। সারাদিন বাড়িতে। কাঁঠাল গাছ কাটা হয়েছে এবং আজ সন্ধ্যায় হাজি বাড়ি থেকে তা আনা হয়েছে।
১১৫
বিছানায় গেলাম রাত ৯টায় । আবহাওয়া : খুব সকালে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হলাে। তারপর থেকে দিনের বাকি
সময় ও রাত পরিষ্কার। গরম পরিবেশ। রাতে বাতাসের কারণে গরমের তীব্রতা কম। ২৭.৫.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সাইকেলে শ্রীপুরে উদ্দেশে রওনা হয়ে পৌছলাম সকাল সাড়ে ৬টায়। স্টেশনের কাছে আকবর বেপারির সঙ্গে দেখা হলাে। বেপারি বললেন তিনি ঢাকায় যাচ্ছেন। দুই এক দিনের মধ্যেই দরদরিয়ায় তিনি আমার সঙ্গে দেখা করবেন। সকাল প্রায় সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্যানিটারি অফিসে জনাব মালেক সাহেবের সঙ্গে বসে স্কুলের ১৯৪৯ সালের হিসাবপত্র পরীক্ষা করে শেষ করলাম। পিএসবি হিসাব থেকে ৩০০ টাকা তুললাম। ওখান থেকে বের হওয়ার সময় আহমদকে পেলাম। তাকে অনুরােধ করলাম এই ছুটির সময় একজন শিক্ষক খুঁজে নিতে। সূর্যাস্তের সময় ঘরে ফিরলাম। শ্রীপুরে মহিউদ্দিন খলিফা, আজিজ মিয়া, মজিদ মােড়ল, হাসান মােড়ল, ইজ্জত আলী সরকার প্রমুখের সঙ্গে দেখা হলাে। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : দুপুরে শ্রীপুরে হালকা এক পশলা বৃষ্টি হলাে। শ্রীপুর থেকে দূরে কোথাও বৃষ্টি হয়েছে এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ২৮.৫.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। বিকেলে আবদুল খানের সঙ্গে দেখা করলাম। সে তখন তার বাড়ির সামনের জমিতে পাটের বীজ রােপন করছিল। রজব আলী সেখানে উপস্থিত ছিল। রজব আলীর মেয়ের সঙ্গে নাবু মােড়লের বিয়ের বিষয়েই শুধু কথা হলাে। আমি আধ ঘন্টা পর ফিরে এলাম। মফিজউদ্দীন এবং আফসারউদ্দীন টিন কিনতে বরমি গিয়েছিল, কিন্তু টিন পায়নি।
বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দুপুরের পর মাঝারি ধরনের ভালাে বৃষ্টি হলাে। দিনের শেষ ভাগ
এবং রাতে বৃষ্টি নেই এবং আকাশ পরিষ্কার। সহনীয় পরিবেশ। ২৯.৫.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। খুব সকাল থেকে ১০টা পর্যন্ত চাই দিয়ে আমাদের বিলে মাছ ধরলাম। তারপর থেকে সারাদিন ঘরেই রইলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দিনের প্রথম ভাগে কিছু সময়ের জন্য গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। অবশিষ্ট দিন বৃষ্টিশূন্য। কিন্তু আকাশ পরিষ্কার নয়। রাতে আকাশ আংশিকভাবে মেঘলা। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ৩০.৫.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। আজ দুপুরে বাগেরহাটের চেরাগ আলী একজন বেপারিকে সঙ্গে নিয়ে এসে ৩১৫ টাকা দিয়ে তিন ঝাড় বাঁশ (বরাক) কিনলেন। নাবু মােড়লের সঙ্গে রজব আলীর মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে আলাপ করার জন্য সন্ধ্যায় কালবাড়ি গেলাম। বর পক্ষে এসেছেন নসি, চেরাগ আলী, জাফর আলী, আয়েত আলী ও চৈতার বাপ। আবদুল খান ও আমি প্রতিনিধিত্ব করছিলাম এ পক্ষের। কালবাড়িতে ইফতার সেরে ফিরে এলাম। কটেরটেকের আবদুল জব্বার আমাদের বাড়িতে রাতের খাবার খেলেন। তারপর চলে গেলেন। আজ রাতে আফসু চাই দিয়ে অনেক বেলে মাছ ধরেছে। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : মধ্য দুপুরে প্রায় এক ঘন্টা ধরে হালকা বৃষ্টিপাত। অবশিষ্ট দিন বৃষ্টিশূন্য। রাতে আকাশ মেঘলা ও রাতের শেষ প্রহরে কয়েক মিনিটের জন্য গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত। হালকা বাতাস ও গরম আবহাওয়া।
৩১.৫.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সারাদিন বাড়িতে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিস্ত্রিদের কাজ তদারকি করলাম। সন্ধ্যায় আড়াল থেকে ছেলেরা এল। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : সন্ধ্যায় প্রায় আধ ঘন্টা মুষলধারে বৃষ্টি হলাে। তারপর আরাে আধ
ঘন্টার মত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি চলল। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। সারারাত বাতাস বইতে থাকল।
১ জুন, রবিবার ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। আফসুকে সঙ্গে নিয়ে খুব সকাল থেকে দুপুর প্রায় ১টা পর্যন্ত বিলে মাছ ধরলাম। দিগধার তালুইসাহেব ও দেওনার ভাইসাহেব এসেছিলেন। তারা বেলা ৩টার দিকে চলে গেলেন। ভাইসাহেব দুলার বিয়ে নিয়ে আলাপ করলেন। আমি ছেলেটির বয়স বিবেচনা করে তাকে অন্য কিছু ভাবার পরামর্শ দিলাম। হাইলজোরের আসনার আলী এলেন। আমি তাকে প্রতিশ্রুতি দিলাম, আগামী বৃহস্পতিবার তার সঙ্গে আমি ঢাকায় যাব। তিনি বিকেল ৪টার দিকে চলে গেলেন। রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সকাল ১১টা পর্যন্ত বর্ষণমুখর পরিবেশ। বাকি দিন কম-বেশি
পরিষ্কার। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভারী বৃষ্টিপাত। বাকি রাত বৃষ্টিশূন্য। রাতে গরম নেই। ২.৬.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সারাদিন বাড়িতেই ছিলাম। মিস্ত্রিদের কাজ তদারকি করলাম। সন্ধ্যায় এক ফাঁকে দেখলাম আবদুল খানের বাড়ির পশ্চিম দিক সংলগ্ন আমাদের জমিতে বারু, কটেরটেকের তাহের আলী, মন্তা শাহু, আজিমউদ্দিন প্রমুখ চারা রােপন করছে।
রাত ১০টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বৃষ্টি নেই। সহনীয় তাপমাত্রা। ৩,৬.৫২ -ঢাকাভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। একই কামরায় হাসান মােড়ল ও কুদরত আমার সঙ্গে ঢাকা পর্যন্ত এলেন। সরাসরি এসডিও (উত্তর)-এর আদালতে গেলাম। এসডিও উপস্থিত থাকলেও আক্কাস আলীর মামলা মুলতবি হয়ে গেল। বেলা ১২টা ১৮ মিনিটের ট্রেনে আক্কাস আলী বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলেন। আমি আদালত থেকে বের হলাম বিকেল ৪টায় এবং সাদিরের সঙ্গে তার মালিটোলার বাসায় গেলাম। তরগাঁও পিইউবির শফিউদ্দিন ও শাহাজউদ্দিনকে সেখানে পেলাম। বিকেল ৫টায় কেমব্রিজ ফার্মেসিতে গেলাম। ডা. করিমের সঙ্গে কাশেম আলীর রােগ নিয়ে কথা বললাম। মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য ডাক্তার তাকে একটি চিঠি লিখে দিলেন। সাদিরের বাসায় ডা, করিম, শফি, আমি ও সাদির ইফতার করলাম। ডা, করিম চলে গেলেন। আমি রাতে মালিটোলায় রয়ে গেলাম। শাহাজউদ্দিনের বিয়ে নিয়ে তারা আলাপ করলেন। আজকে গােসল করা হলাে না। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : উষ্ণ আবহাওয়া। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত মুষলধা
বৃষ্টি হলাে। রাতে বৃষ্টি হয়নি এবং আকাশ কম-বেশি পরিষ্কার। ৪.৬.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৯টায় মালিটোলা থেকে বের হয়ে সােজা গেলাম যােগীনগর। সকাল ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ঘুমালাম। তারপর গােসল সেরে বেলা সাড়ে ৩টায় বের হলাম। সাইকেল চালিয়ে সােজা গেলাম বার লাইব্রেরিতে। সেখানে
১২০
আতাউর রহমান খান, কফিলউদ্দীন চৌধুরী, জহিরউদ্দীন প্রমুখের দেখা পেলাম। বিকেল ৫টায় কামরুদ্দীন আহমদকে সঙ্গে নিয়ে জিন্দাবাহার এলাম । সূর্যাস্তের সময় ডা. করিম, সিরাজ ও জমির সেখানে এলেন। কামরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে ইফতার ও রাতের খাবার খেলাম এবং রাত সাড়ে ৯টায় যােগীনগরের উদ্দেশে রওনা হয়ে সরাসরি ফিরে এলাম। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দিন ও রাতের সারাবেলা আকাশ পরিষ্কার। রাতে হালকা বাতাসের সঙ্গে উষ্ণ পরিবেশ। ৫.৬.৫২ ভােরে সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সকাল ১১টায় বের হলাম। সােজা গেলাম বার লাইব্রেরিতে। সেখানে আনসার আলী ও মমতাজ আলীকে পেলাম এবং তাদেরকে তাদের মামলার নথিপত্র দিলাম। মােমেন, জহিরউদ্দীন, জহির, কফিলউদ্দীন চৌধুরী, কামরুদ্দীন আহমদ, আতাউর রহমান খান প্রমুখের সঙ্গে দেখা করলাম। শামসুদ্দিন সরকার বার লাইব্রেরিতে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত লাইব্রেরিতে ছিলাম। এখানে একটি সভা অনুষ্ঠিত হলাে। রেজা-ই-করিম সাহেব সভাপতিত্ব করলেন। সভায় পৌরসভা এবং ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের মনােনয়ন পদ্ধতি অবলুপ্ত করার প্রস্তাব গৃহীত হলাে। বিকেল ৪টায় আনসার আলী ও মমতাজ আলীর সঙ্গে সােয়ারিঘাটে গেলাম। তাদের মামলা নিয়ে আতাউর রহমান খানের সঙ্গে আলাপ করলাম সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। তারপর বের হলাম। কেমব্রিজ ফার্মেসিতে এলাম। জহির, ইমাদুল্লাহ ও ডা, করিমের সঙ্গে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কথা বলে যােগীনগর ফিরলাম। রােজা রাখা হলাে না। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বিকেল পর্যন্ত প্রখর রােদ। সন্ধ্যা ৭টা থেকে আধ ঘন্টা ধরে ভালাে বৃষ্টি হলাে। তারপর রাত ১০টা পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। রাতে আর বৃষ্টি হয়নি, গরম পরিবেশ।
৬.৬,৫২ -শ্রীপুরভাের ৪টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টায় সাইকেল নিয়ে বাইরে বের হলাম। নবাবপুরে টিটু মিয়াকে পেলাম এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে কথা বলতে বলতে আরমানিটোলা পার্ক পর্যন্ত গেলাম। কথা বললাম নতুন রাজনৈতিক দলের ব্যাপারে এবং কামরুদ্দীন সাহেবের ভূমিকা নিয়ে। আরমানিটোলা পার্ক থেকে আমি একা চলে এলাম। জিন্দাবাহার গেলাম। কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে সকাল ৯টা পর্যন্ত বুলবুলের বিয়েসহ আমার পরিবারের ব্যাপারাদি নিয়ে কথা বললাম। সকাল ১০টায় যােগীনগরে ফেরার পথে আদালতে সাদির, শাহাজ ও ডিবির এসআই সেলিম উদ্দিনের সঙ্গে কথা বললাম। যােগীনগরে খেয়ে স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হলাম। দুপুর ২টায় শ্রীপুর পেীছলাম। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের ওখানে নাশতা করলাম। সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে ক্লাবে দাবা খেললাম। তারপর ফিরলাম। রাতে কালু মােড়লের ওখানে থাকলাম। রাত ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সূর্যের আলােতে উজ্জ্বল দিনের শুরু এবং শেষও হলাে একইভাবে।
আকাশে চাঁদ। পরিষ্কার ব্রত। গরম আবহাওয়া। ৭.৬.৫২ -বাড়িভাের ৪টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে তার অফিসে শ্রীপুর এইচ ই স্কুলের ১৯৫১ সালের হিসাবপত্র পরীক্ষা করলাম। দুপুরের খাবার খেলাম স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে। তারপর আবার হিসাবপত্র নিয়ে বসলাম। দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে ১৯৫১ সালের হিসাবপত্র দেখা শেষ হলাে। নির্মল বাবুর জন্য চাকরির নিয়োেগপত্র লিখলাম। পত্রটি আহমদকে দিলাম তার বাবার স্বাক্ষরের জন্য। তারপর এটি নির্মল বাবুকে যত দ্রুত সম্ভব কলকাতায় পৌছে দেওয়ার জন্য বললাম।
হামিদকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলের অফিসে গেলাম। দেখলাম প্রধান আলমিরাটিতে উইপােকা বাসা বেঁধেছে। আমি বই ও কাগজপত্র ঠিক করে রাখলাম। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। মাঝ পথে সূর্য অস্ত গেল। বাড়ি পৌছলাম সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে। টাঙ্গাইলে বলাই বাবুর কাছে আজ সন্ধ্যায় একটি কার্ড পাঠিয়েছি। রাত ১১টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : প্রচণ্ড গরম, বিশেষ করে রাতের প্রথম দিকে। পরিষ্কার রাত। তাপমাত্রা খুবই বেশি। রাতের শেষভাগ থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিল। ৮.৬.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। দুপুরের আগে নদীর পাড়ের পাটখেতের চারদিকে ঘুরে বেড়ালাম। প্রায় এক ঘন্টা পর ফিরে এলাম। লােহাদির দুজন বৃদ্ধ লােক জমিজমার কাগজপত্র নিয়ে আমার কাছে এলেন। এই জমি নিয়ে বিরােধ আছে এবং এ কারণেই মামলাও হয়েছে। এর আগে হাইলজোরের আনসার আলী এসেছিলেন। এরপর দেওনার সাঈদ আলী। আনসার আলী আমাকে ৫ টাকা দিলেন; ইতােপূর্বে একদিন ঢাকা যাওয়ার ভাড়া ও অন্যান্য খরচ হিসেবে। ওইদিন আমি ঢাকা গিয়েছিলাম তাদের মামলা সূত্রে আতাউর রহমান খান সাহেবের সঙ্গে কথা বলার জন্য। বিকেলে তােফাজ্জলের বাবা এসেছিলেন এবং পরে চলে গেলেন। বাঘিয়ায় আমার বােনের সদ্যোজাত পুত্র সন্তানের জন্ম উপলক্ষে আজ ষষ্ঠ দিন রাতে আনন্দ উৎসব পালিত হলাে। রাত সাড়ে ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সকালে ভালাে এক পশলা বৃষ্টি হলাে। অবশিষ্ট দিন রৌদ্রোজ্জ্বল ও
পরিষ্কার। রাতের আকাশ পরিষ্কার। গরমের তীব্রতা আজ অপেক্ষাকৃত কম।
৯,৬,৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। ঢাকায় যাওয়ার পথে আইয়ুব আলী আমাদের বাড়ি এলেন। আমি তাকে ওয়ারিস আলীর বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। ওয়ারিস, তার বাবা ও সেরুর সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য বসে বাড়ি ফিরলাম। সন্ধ্যায় হাকিম মিয়া এলেন। আমাকে অনুরােধ করলেন ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের করা মামলায় তার পক্ষে জামিনদার হতে এবং বৃহস্পতিবার ঢাকা যাওয়ার জন্য। রাতের খাবার খেয়ে তিনি বাঘিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা হলেন। দিনের প্রথমভাগে হারা মুনিরা আমাদের বিলের জমিতে ১৮টি লাঙ্গল দিয়ে চাষ করল এবং রাতে খাবার খেল। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : দিন ও রাতে আকাশ পরিষ্কার। সহনীয় গরম পরিবেশ। ১০.৬.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সারাদিন বাড়িতেই ছিলাম। ঢাকায় যাওয়ার পথে সকাল ১০টার দিকে হাইলজোরের আনসার আলী আমার সঙ্গে দেখা করলেন। তাহের আলীর বাড়িতে ইফতার ও রাতের খাবার খেলাম। কোরান খতম উপলক্ষে তারা খাবারের আয়ােজন করেছে। আড়ালের খন্দকার, আবদুল খান, জব্বার, মন্নাফ, নাজু মােড়ল প্রমুখ এই খাবারের আয়ােজনে অংশ নিলেন। এরপরে আক্কা, বারু, কটেরটেকের তাহের আলী, টুক্কা খান, নাজামুদ্দি, জব্বার গাড়িয়াল প্রমুখ সেখানে এলেন। রাত ১১টার দিকে বাড়িতে ফিরে সােজা গেলাম বিছানায় । সন্ধ্যায় আয়েত আলী ও রজব আলী নাবুর বিয়ের বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। আবহাওয়া : আগের মতােই। মেঘ ঘনীভূত হলেও বৃষ্টি হলাে না। সহনীয় উত্তাপ।
১১.৬,৫২
-ঢাকাভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সকাল ৬টার দিকে শ্রীপুরের উদ্দেশে সাইকেলে রওনা হলাম। পথের মাঝের অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। সকাল সাড়ে ৭টায় পৌছলাম। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর নতুন অডিট রিপাের্ট তৈরি করেননি। আমি তাকে বললাম এটি তৈরি করে আগামীকাল ঢাকায় আমার কাছে পাঠানাের জন্য। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে। ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বার লাইব্রেরিতে ছিলাম। সেখানে জহির, জমির, মােমেন, কফিলউদ্দীন চৌধুরী, কামরুদ্দীন আহমদ প্রমুখকে পেলাম। আতাউর রহমান খানকে পেলাম না। কাপাসিয়ার রশিদ ও আহমদ পালােয়ান বার লাইব্রেরিতে আমার সঙ্গে আসন্ন। অ্যাসেমব্লি নির্বাচনে রশিদের প্রার্থিতা নিয়ে ঘন্টাখানেক আলাপ করলেন। হাইলজোরের আনসার আলীর মামলার শুনানি মুলতবি হয়ে গেল। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে যােগীনগরে এলাম। গােসল করলাম। রাতে ওখানেই থাকলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : গরম পরিবেশ। বৃষ্টি নেই। ১২.৬.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টায় বের হলাম। কোর্টে যাওয়ার পথে মহিউদ্দিন সাহেবের সঙ্গে তার বাড়িতে ১৫ মিনিটের জন্য দেখা করলাম। কোর্টে সালেহ আহমদ মােড়ল ও আজিজ সরকারকে পেলাম। মালেক সাহেবের দেওয়া অডিট রিপাের্টটি আজিজ সরকার আমাকে দিলেন। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের দায়ের করা মামলায় আমি এই দুজনের পক্ষে এসডিও (উত্তর)-এর আদালতে জামিনদার হলাম। বেলা প্রায় সাড়ে ১২টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বার লাইব্রেরি হলে কামরুদ্দীন। সাহেব, কফিলউদ্দীন চৌধুরী ও অন্যান্যদের সঙ্গে ছিলাম। আফসারউদ্দিন ভূইয়া ও আফতাবউদ্দিন ভূইয়া সেখানে আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন। বিকেল ৫টায় যােগীনগরে ফিরলাম। ওখানে আসার পথে দেখা হলাে শ্রীপুরের উষা। রায়ের সঙ্গে। বিকেল সাড়ে ৫টায় যুবলীগ অফিসে যুবলীগের ওয়ার্কিং কমিটির
১২৫
সভায় যােগ দেই। আমি সহ ১১ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করলেন মােতাহার সাহেব। সভা শেষ হলাে রাত ৯টায়। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায় । আবহাওয়া : প্রচণ্ড গরম। মেঘের কোনাে চিহ্ন নেই। ১৩.৬.৫২ -বাড়িভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৭টায় মহিউদ্দিন সাহেবের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। সেখানে আধ ঘন্টা ছিলাম। সকাল ৮টায় সাইকেলে করে কোর্টে গেলাম। ডিএবির এসআই সেলিমউদ্দিনের কাছে আমাদের অডিট রিপাের্ট হস্তান্তর করলাম। ডিএসপি সােবহনি সাহেব আমার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেন। আমাদের মামলার পর আজ প্রথমবারের মতাে আমার সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াবদুল্লাহ সাহেবের সামনাসামনি। দেখা হলাে। এটা ঘটল এসডিও (উত্তর)-এর অফিসের সামনে। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের দায়ের করা মামলায় হাকিম, শহিদ ও অন্য আরেকজনের পক্ষে জামিনদার হলাম। উত্তর আমেরের দুলার বাপ ও সালেহ আহমদ মােড়লকে ওখানে পেলাম। কামরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে দেখা করলাম। সকাল ১১টায় যােগীনগর ফিরে এলাম। ডা. করিমের সঙ্গে তার ফার্মেসিতে দেখা করলাম। অ্যান্টি টাইফয়েড ইনজেকশন নিয়ে স্টেশনে এলাম। বেলা ১২টা ১৮ মিনিটের ট্রেন ধরে শ্রীপুর পৌছলাম। আবুল হােসেন খান আমাকে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের কাছে নিয়ে গেলেন। এম বিশ্বাসের মামলায় একটি আপােসরফায় পৌছানাের ব্যাপারে আলাপ করলেন। আমি তাকে বললাম এসডিও (উত্তর)-এর সঙ্গে দেখা করার জন্য। কারণ তিনিই এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ। আমার বাসস্থান থেকে আমার চারটি কাপ নিয়ে সাইকেলে বাড়ি ফিরলাম বিকেল সাড়ে ৫টায়। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়।
আবহাওয়া : প্রখর রােদের কারণে দিনের বেলায় প্রচণ্ড গরম। রাতে অসহনীয় উষ্ণ তাপমাত্রা। বাতাস নেই। প্রায় ভাের পর্যন্ত এক ফোটা ঘুমাতে পারলাম না। ১৪.৬.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। সারাদিন বাড়িতেই রইলাম এবং মিস্ত্রিদের কাজ তদারকি করলাম। কটেরটেকের আবদুল জব্বার সন্ধ্যায় এলেন ও ইফতারের পরে চলে গেলেন। উত্তরপাড়ার যােগাল আমাদের বিলে ধানের চারা রােপণ করল। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : বেলা ১টা পর্যন্ত প্রখর রােদের কারণে অসহনীয় গরম। দিনের শেষভাগে হঠাৎ করেই মেঘ পুঞ্জীভূত হলাে এবং প্রবল বাতাসসহ মুষলধারে বৃষ্টি নেমে এল। রাতে বৃষ্টি হলাে না। গত কয়েকদিনের প্রচণ্ড দাবদাহের পর পরিবেশ ঠাণ্ডা হয়ে এল। ১৫.৬.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সারাদিন বাড়িতেই রইলাম। আজ সকালে মিস্ত্রিরা বাড়ির মূল কাজটি শেষ করল। হাইলজোরের জামাই বিকেলে আমার সঙ্গে দেখা করলেন তার বদলির বিষয় নিয়ে। তিনি মাওনায় প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি চান লক্ষ্যা নদীর এ পাশের যে কোনাে স্কুলে বদলি হতে। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : দিন ও রাতে আকাশ পরিষ্কার। উষ্ণ পরিবেশ।
১৬.৬.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। বিকেলে ওয়ারিস আলী এল। তার সঙ্গে হেঁটে বেপারি বাড়ি, হাজী বাড়ি, ছােট চর, ফটিরটেকে মামদির বাড়ি, চৌকিদার বাড়ির ধান ও পাট খেতগুলাের অবস্থা দেখলাম। এরপর ওয়ারিস আলী বাড়ির উদ্দেশে চলে গেলেন। বৃষ্টির কারণে আমি আবদুল খানের বাড়িতে আটকে গেলাম। বাগার বাপ মৌলবি সেখানে ছিলেন। তাদের সঙ্গে ইফতার ও রাতের খাবার খেলাম এবং তারপর ঘরে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। রাত পুরােপুরি বৃষ্টিময়। বিরতি দিয়ে দিয়ে হালকা, মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হলাে। সন্ধ্যা থেকে ঠাণ্ডা পরিবেশ। ১৭.৬.৫২ ভাের সাড়ে ৬টায় উঠেছি। সারাদিন বাড়িতেই রইলাম। বলতে গেলে তেমন কিছুই করা হলাে না। বাগার বাপ মৌলবি সকালে এলেন এবং কবরস্থান জিয়ারত ও দোয়া করলেন। তার ভুলেশ্বর (গফুরের বাড়ি) যাওয়ার পথে আমি তাকে বুধের ডারা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : সারাদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলাে মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে। তবে পড়ন্ত বিকেলে কোনাে বৃষ্টি ছিল না। রাতেও বৃষ্টি হয়নি। ঠাণ্ডা ও স্বস্তিদায়ক পরিবেশ।
১৮.৬.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। দুপুরে নদীর পাড়ের পাট খেতগুলাের চারদিকে ঘুরে বেড়ালাম। হাজীবাড়ি ঘাটে থামলাম। আনসুর সঙ্গে কথা বললাম। সে গােসল করছিল। বাড়িতে ফিরলাম বেলা ২টার দিকে। সন্ধ্যায় আড়ালের হেলাল মিয়া এলেন। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : আকাশ মেঘে ঢাকা। সন্ধ্যার পর কয়েক ফোটা বৃষ্টি পড়ল। সহনীয়
তাপমাত্রা। দিনের বেলায় মেঘের আড়াল থেকে মাঝে মাঝে সূর্যকিরণ দেখা গেছে। ১৯.৬.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৯টায় সাহেব আলী বেপারি এলেন। তিনি আমাদের বাড়ি নির্মাণে নিয়ােজিত মিস্ত্রিদের নির্মাণ কাজের খুঁটিনাটি ঘুরে ঘুরে দেখলেন। কাজের ব্যাপারে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। বিশেষ করে জানালা নির্মাণে তিনি হিসাব করলেন মিস্ত্রিদের ২১৬ টাকা দিতে হবে। দীর্ঘ সময় তিনি আমার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করলেন। বেলা ৩টার দিকে তিনি চলে গেলেন। সন্ধ্যায় মিস্ত্রিরা আমাদের বাড়ি থেকে চলে গেল। তােফাজ্জলের বাবা এলেন বিকেলে এবং সন্ধ্যায় চলে গেলেন। কালবাড়ির আহসানির বাড়িতে মিলাদ মাহফিলে অংশ নিলাম। সেখানেই ইফতার ও রাতের খাবার খেলাম। হেলাল মিয়া আমার সঙ্গে ছিলেন। মৌলবি আশরাফ আলী, নাজু মােড়ল, নবু, নবালি বেপারি, নবা, টান-চৌরাপাড়ার মােহাম্মদ, হােসেন কাল, লস্কর বেপারি (সুবার বাপ) ও অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। বাড়ি ফিরলাম রাত সাড়ে ১১টায় । তারপর বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দিনের মধ্য ভাগে বৃষ্টি হলাে এবং রাত ৮টার দিকেও সামান্য একটু বৃষ্টি হলাে। অবশিষ্ট রাত পরিষ্কার। সহনীয় তাপমাত্রা।
২০.৬.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। ১১ বছর পূর্ণ হলাে। আজ একেবারে সেই শুক্রবার। সন্ধ্যায় আবদুল খানের বাড়ি গেলাম। তার সঙ্গে প্রায় ঘন্টা খানেক কথা বললাম। তিনি জ্বরে ভুগছেন। মিস্ত্রিরা তার গরুরগাড়ির চাকা ঠিক করছে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফিরলাম । ঘাগােটিয়ার এক মুসাফির রাতে আমাদের বাড়িতে রইলেন। আফসু দুটি কালাে জাম ও একটি কামিনী ফুলের চারা নিয়ে এল। এগুলাে রােপণ করলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দিন ও রাতে আকাশ পরিষ্কার। তাপমাত্রা কম-বেশি সহনীয়। আজকে থেকে সর্দি-ঠাণ্ডা লেগে গেল। ২১,৬.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। আমাদের কয়েকজন ভূত্য এবং মফিজউদ্দীন ও আফসুকে সঙ্গে নিয়ে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নতুন বাড়ির দোতলায় ও চালে, কাঠের তক্তাগুলাে তুলে রাখলাম। দুপুর ৩টার দিকে আক্কাস আলী এলেন। ঘন্টাখানেক পর চলে গেলেন। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : দিন ও রাতে আকাশ পরিষ্কার। পরিবেশ কিছুটা গরম হলেও তেমন অসহনীয় নয়। ২২.৬.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। বেলা ১১টায় ইন্সপেক্টর অব স্কুলস-এর কেরানি, যার বাড়ি আড়ালে, তাকে সঙ্গে নিয়ে মফিজউদ্দীন সাহেব, খলিফা ও অন্য আরাে একজন লােক এলেন এবং আমাকে গােসিঙ্গা ঘাটে নিয়ে গেলেন। তবে মালিক না থাকায় খুঁটি কেনা হলাে না। খন্দকার সাহেবও উপস্থিত ছিলেন।
১৩০
এরপর মফিজউদ্দীন সাহেবসহ সবাই আমাদের বাড়িতে এলেন এবং দুপুর ২টা পর্যন্ত কথাবার্তা বলে চলে গেলেন। আমাদের বলধা ফরেস্ট পর্যন্ত আমি তাদের এগিয়ে দিলাম। এরপর আমি তুফানিয়ার দেওনার বাড়িতে গেলাম এবং বিকেল প্রায় ৪টা পর্যন্ত বিশ্রাম নিলাম। সেখানে আমার সঙ্গে শুধু তার ভৃত্য সুরুজ আলী ছিল। তারপর তুফানিয়া তার দরদরিয়ায় বাড়ি থেকে এসে আমার সঙ্গে যােগ দেয়। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে বাড়ি ফিরলাম। রাতে আমাদের বাড়িতে আড়ম্বর ছাড়া মিলাদ হলাে। বাঘিয়ার মফিজউদ্দীন মুন্সি মিলাদ পড়ালেন। শুধু নজু মামাকে আমন্ত্রণ জানানাে হয়েছিল। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : উষ্ণ পরিবেশ, বিশেষ করে রাতে। দুপুরে ও রাতের শেষভাগে হালকা বৃষ্টি হলাে। বাতাসে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি।
২৩.৬.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত দশম শ্রেণীর ইংরেজি ১ম পত্রের পরীক্ষার খাতা দেখলাম। যেই মাত্র আমি এসব কাজ শেষ করছি তখনই আবু মােড়ল এলেন। বেলা প্রায় ২টা পর্যন্ত তিনি তার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলাপ করলেন। প্রথমবারের মতাে আমি আমাদের নতুন বাড়ির দোতালায় রাত কাটালাম। আমার সঙ্গে ছিল আফসু ও হাই। আমার আগে আমাদের কেউ ওখানে ঘুমায়নি। রাত ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দিনের প্রথমভাগে হালকা বৃষ্টি হলাে। অবশিষ্ট দিন ও রাত বৃষ্টিশূন্য। আকাশে হালকা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। উষ্ণ পরিবেশ। বাতাসে জলীয়বাষ্প অনুভূত হলাে।
২৪.৬.৫২
-মঙ্গলবার ভাের ৫টায় উঠেছি। ঈদ-উল-ফিতর ঠাকুরা বিলে আমাদের সচরাচর ব্যবহৃত মাঠে অনুষ্ঠিত নামাজে যােগ দিলাম। আশরাফ আলী মৌলবি ইমামতি করলেন। নামাজের পর আবু মােড়লের বাড়ি গেলাম তার ষাঁড় গরুটি দেখতে, যেটি জবাই করা হবে। তুফানিয়া, নবার পালান ও চৌরাপাড়ার আরাে একজন লােকের সঙ্গে ওখানে দুপুরের খাবার খেলাম। বেলা ২টার দিকে গরুটি জবাই দেয়া হলাে। ওখানে আবদুল মােড়ল, আয়েত আলী, সফরউদ্দিন দফাদার, চেরাগ আলী মােড়ল প্রমুখ ছাড়াও অনেক লােক জড়াে হয়েছিল। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাড়ির ফিরলাম। বিছানায় ঘুমাতে গেলা রাত ১০টায়। আবহাওয়া : বেলা ১২টার দিকে এক পশলা বৃষ্টি হলাে। আরেক পশলা বৃষ্টি হলাে মধ্যরাতের দিকে। তবে মাটি ভিজল না। উষ্ণ পরিবেশ। আকাশ পুরােপুরি পরিষ্কার নয়। ২৫.৬.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকালে আমার কাছে উমেদ আলী ফকির এলেন। ভাওয়াল এস্টেট বনাম তার মামলার কাগজপত্র আমি সকাল ১০টা পর্যন্ত পড়ে দেখলাম। তারপর তিনি চলে গেলেন। রমজান খান এলেন আমাদের নতুন বাড়ি দেখতে। আবদুল খানের বাড়িতে গেলাম। করম আলীকে পেলাম না। গত সন্ধ্যায় তিনি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমাকে তার নৌকায় করে তরগাঁওয়ে নিয়ে যাবেন। আবদুল খানের বাড়ি থেকে আমার সঙ্গে রজব আলী এলেন। তিনি দুপুর প্রায় ১টা পর্যন্ত আমাদের কবরস্থানের কাছে মাটির ঘরে বসে কথা বললেন। তিনি বললেন, আবদুল খান নিজের স্বার্থে অথবা মাতব্বরি করার জন্য লােকজনের সঙ্গে কী। ধরনের আচরণ করে থাকেন। এরপর তিনি চলে গেলেন।
-তরগাওবেলা ৩টার দিকে তরগাঁও ফকির বাড়ির উদ্দেশে পায়ে হেঁটে রওনা হলাম। পথে বাঘিয়া এফ পি স্কুলের ক্ষিরােদের সঙ্গে কথা হলাে ‘কোহিনূর মাঠে’। মাগরিবের পর ফকির বাড়িতে পৌছলাম। রাতে ওখানে থাকলাম। জালাল বাড়িতে ছিল না। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : সকালে হালকা এক পশলা বৃষ্টি হলাে। অবশিষ্ট দিন ও রাতে বৃষ্টি হয়নি। তবে আবহাওয়া জলীয় বাষ্প মুক্ত নয়। সমস্ত দিন ও রাতে আকাশে হালকা মেঘ ভেসে বেড়াল। উষ্ণ পরিবেশ। রাতে বাতাস ছিল। ২৬.৬.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। রফির শ্বশুর আমার সঙ্গে দুপুরে খেলেন। আমি মিসরির বাপকে ডাকতে পাঠালাম। তিনি কথা দিলেও এলেন না। রফির শ্বশুরের সঙ্গে কথা বললাম রফির জন্য তার দাদির কাছে থেকে জমি নেওয়ার ব্যাপারে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। রফির শ্বশুর তার বাড়ি পর্যন্ত সঙ্গে এলেন। আকতার মাস্টারকে তার বাড়ির কাছে পেলাম। তার সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য আলাপ করলাম। বাড়িতে পৌছলাম রাত ৮টার দিকে। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : সকাল থেকে শুরু করে সারাদিন বিরতি দিয়ে দিয়ে হালকা বৃষ্টি হলাে। সূর্যাস্তের সময় মাঝারি বৃষ্টিপাত হওয়ার পর রাতে আর বৃষ্টি হলাে না। রাতে খুব জোরে দক্ষিণের হাওয়া বইতে থাকায় পরিবেশ কিছুটা ঠাণ্ডা।
২৭.৬.৫২
-ঢাকাভাের ৫টায় উঠেছি। পায়ে হেঁটে শ্রীপুরে পৌছলাম; ঠিক স্টেশনে ট্রেন আসার মুহূর্তে। ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে। টঙ্গীর আশরাফ আমার সঙ্গে ঢাকা পর্যন্ত এল। সে আসছিল ময়মনসিংহ থেকে। সকাল সাড়ে ১০টায় পৌছলাম। সােজা গেলাম যােগীনগরে। অফিসে ইমাদুল্লাহকে পেলাম। সে বলল আজ সকালেই সে বাইরে থেকে এসেছে। ভাবী জানালেন, তার ভাই আবুল খায়ের গত রােববার বাড়িতে গেছে। সমস্ত দিন ঘরেই কাটালাম। সন্ধ্যায় যুবলীগের অফিসে গেলাম। ইমাদুল্লাহ, সুলতান প্রমুখের সঙ্গে দেখা হলাে। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত মাঝারি বৃষ্টিপাত এবং বিকেলে হালকা বৃষ্টি হলাে। রাতে আকাশ পরিষ্কার। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ২৮.৬,৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৯টায় কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে দেখা করলাম। কথা বললাম তােয়াহা সাহেবের মুক্তির বিষয়ে। তিনি না থাকায় তার পরিবারের ওপর যে সমস্যা হচ্ছে, সে আলােকে কথা হলাে। এ ছাড়াও বেলা ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করে যােগনীনগর ফেরার জন্য উঠে পড়লাম। বিকেল ৫টায় বের হলাম। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কেমব্রিজ ফার্মেসিতে ছিলাম। তারপর ফিরে এলাম। জহির ভাই, এস এম জহিরউদ্দীন, ডা. করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় কিছুক্ষণের জন্য আওয়ামী লীগ অফিসে গেলাম। পেলাম খদ্দর ও অন্যদের। অপেক্ষা করলাম না। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়।
আবহাওয়া : আকাশ মেঘলা। তবে হালকা বৃষ্টি হলাে সন্ধ্যায়। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও রাতে কোনাে বৃষ্টি হলাে না।
২৯.৬.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টায় গেলাম কেমব্রিজ ফার্মেসিতে। জহির, ডা. করিম প্রমুখের সঙ্গে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আলাপ করলাম। তারপর ফিরে এলাম। ডা, করিম তােয়াহা ভাবীকে তার বাড়িতে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য নিতে এলেন। কিন্তু তিনি গেলেন না। আমি ডা. করিমের বাসায় বেলা ২টায় দুপুরের খাবার খেলাম। বের হলাম বেলা ২টা ১৫ মিনিটে। সদরঘাটে গেলাম এবং মশারির দামের খোঁজখবর নিলাম। সেখানে দলিলউদ্দিন ডিএসপির ছেলে মােশাররফকে পেলাম। বেলা সােয়া ৩টায় কামরুদ্দীন সাহেবের কাছে গেলাম। তার সঙ্গে কথা বললাম রাত সােয়া ১০টা। পর্যন্ত। ওখান থেকে উঠে যােগীনগরে গেলাম। ব্রিটিশ লেবার পার্টির সংবিধান পড়লাম। তােয়াহা সাহেবের মুক্তির ব্যাপারে একটি দরখাস্তের খসড়া করলাম এবং আমার একটি ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের প্রসঙ্গে আলাপ করার জন্য কফিলউদ্দীন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করার সময় ঠিক করে নিলাম আগামীকাল সকালে। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : মধ্য দুপুরে কয়েক ঘন্টার বিরতি ছাড়া প্রায় সমস্ত দিন হালকা বৃষ্টি। হলাে। সন্ধ্যায় মাঝারি বৃষ্টিপাত। আকাশ রাতে মেঘাচ্ছন্ন হলেও বৃষ্টিশূন্য। বাতাসে জলীয় বাষ্পের কারণে পরিবেশ উষ্ণ। ৩০.৬.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টায় বাইরে বের হলাম। সােজা গেলাম কামরুদ্দীন সাহেবের কাছে। একই সময় সেখানে এলেন এপিপি আফসারউদ্দিন, আরাে দু’জন লােক ও মান্নান খলিফা। সকাল সাড়ে ১০টায় তারা চলে গেলেন। ওখান থেকে সােজা গেলাম
১৩৫
কফিলউদ্দীন চৌধুরী সাহেবের কাছে। কথা বললাম বেলা ২টা পর্যন্ত। সেখানে। আসাদুল্লাহ সাহেব এসেছিলেন তার মেয়ের সঙ্গে আফতাবউদ্দিন ভূঁইয়ার বিয়ে উপলক্ষে একটি মধ্যাহ্ন ভােজের আয়ােজনের ব্যাপারে আলাপ করতে। সবাই চলে যাওয়ার পর কফিলউদ্দীন চৌধুরী সাহেব ডিবি চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে আমাকে শহিদ মােক্তারের সঙ্গে দেখা করতে বললেন। বেলা আড়াইটার দিকে যােগীনগরে ফিরে এলাম। বিকেল ৫টায় ভাবীকে নিয়ে জেলগেটে গেলাম তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে দেখা করার জন্য। ভাবীর সঙ্গে কথা শেষে যখন তিনি কারাগারের ভেতরে ফিরে যাচ্ছিলেন। তখন আমিও তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে কয়েক মিনিটের জন্য কথা বললাম। ফিরে এলাম সন্ধ্যা সােয়া ৬টার দিকে। গতকাল আবুল হােসেন সাহেবকে সিলেট কারাগার থেকে ঢাকা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : অল্প অল্প বিরতি দিয়ে সারাদিনই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। রাতে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও কোনাে বৃষ্টি হলাে না। গরমসহ গুমােট পরিবেশ।
১ জুলাই, মঙ্গলবার ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সারাদিন ঘরেই ছিলাম। তােয়াহা সাহেবের মুক্তির আবেদন জানিয়ে একটি দরখাস্ত টাইপ করলাম। সেই সঙ্গে অলি আহাদের ছাত্র জীবনসহ রাজনৈতিক জীবনের প্রত্যয়নপত্র টাইপ করলাম। এ কাজগুলাে করলাম সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা। পর্যন্ত। বিকেলে ইউসুফ হাসানকে সঙ্গে নিয়ে দেওয়ান মাহবুব আলী অফিসে (যুবলীগ অফিস) এলেন। তারা ২১.৬.৫২ তারিখে জামালপুরে এ রহমান সিদ্দিকীর গ্রেপ্তার হওয়ার কথা বর্ণনা করলেন। এরপর তারা চলে গেলেন। রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ভাবীকে সান্ত্বনা দিয়ে তার সঙ্গে কথা বললাম। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : মধ্য দুপুরে হালকা এক পশলা বৃষ্টি হলাে। অবশিষ্ট দিন আংশিকভাবে পরিষ্কার। রাতের আকাশ পরিষ্কার। তবে বাতাসে। জলীয়বাষ্প থাকায় ঘাম ঝরানাে গরম অনুভূত হলাে।
২.৭.৫২
-বাড়িভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের ডিআইজি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত দুটি দরখাস্ত সকাল ১০টায় ওয়ারী ডাকঘরে রেজিস্ট্রি করে ওখানেই ডাকে দিলাম। বেলা ১২টায় ডা, করিম আমার সঙ্গে স্টেশন পর্যন্ত এলেন। আমি তাকে অনুরােধ করলাম তােয়াহা ভাবীকে কিছু টাকা দেওয়ার জন্য। তিনি ৫০ টাকা দিতে সম্মত হলেন। বেলা ১২টা ১৮ মিনিটের ট্রেনে ঢাকা ছাড়লাম। তরগাঁওয়ের শফিউদ্দিন জয়দেবপুর পর্যন্ত আমার সঙ্গে এলেন। শ্রীপুর পৌছলাম বেলা পৌনে ৩টায়। স্টেশনে রাজেন্দ্রপুর থেকে আসা আহমদ, হাকিম মিয়া, এস আহমদ মােড়ল প্রমুখকে পেলাম । রাজেন্দ্রপুরে ফরেস্টের নিলাম হয়েছে। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের ওখানে আহমদের সঙ্গে সেমাই খেলাম। বিকেল সাড়ে ৫টায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম এবং সােজা বাড়িতে গিয়ে পৌছলাম। আজ দুপুরে গােসল করতে পারিনি এবং খাওয়াও হয়নি। আমি যখন ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলাম তখন ওয়ারিস আলী আমার সঙ্গে আমাদের বাড়ি পর্যন্ত এলেন। ফরেস্টের নিলামের ব্যাপারে আলাপ করে তিনি চলে গেলেন। আমি তাকে বলেছি ফরেস্ট কেনাকে কেন্দ্র করে আইয়ুব আলী ও হাকিম যেন বিরােধে জড়িয়ে না পড়ে এবং তা তাদেরকে বলে দেওয়ার জন্য। দুলার মা আমাদের বাড়িতে এসেছেন সােমবার (৩০-৬-৫২)। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দিনের শুরুতে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। আবার দিনের শেষ ভাগে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত হালকা বৃষ্টি হলাে। রাতে বৃষ্টি না হলেও আকাশ পরিষ্কার ছিল না। পরিমিত তাপমাত্রা । ৩.৭.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। শ্রীপুর যাওয়ার পথে বাঘিয়ার ইজ্জত আলী আমাদের বাড়িতে নাস্তা করলেন। তিনি ফরেস্টের বার্ষিক নিলামে অংশ নিতে মফিজউদ্দীনকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীপুর যাচ্ছিলেন।
গত সন্ধ্যায় রমজান আলীর মাথায় নায়েব আলী গুরুতর আঘাত করেছে—এ ঘটনায় কী করা উচিত সে ব্যাপারে পরামর্শ নিতে আমােদ আলী আমাদের বাড়িতে হােসেন মৃধা ও পরে সবেদ আলী দফাদারকে নিয়ে এল। আমরা শাহাদ আলীর বাড়ি গেলাম ও আঘাতের মাত্রা দেখলাম এবং নায়েবের বাবা ও নায়েব আলীকে ডেকে পাঠালাম। নায়েবের বাবা এলেন ও ক্ষমা চাইলেন। আমরা নায়েবের বাবাকে বললাম, আকবর আলী বেপারির উপস্থিতিতে রাতের মধ্যে বিষয়টিকে নিষ্পত্তি করে নিতে, অন্যথায় আমােদ আলীর স্বাধীনতা রয়েছে থানায় যাওয়ার। বাড়িতে ফিরলাম বেলা ৩টায়। শ্রীপুর ফরেস্টের নিলাম থেকে ফেরার পথে শহিদ ও ইয়াকুব আলী শিকদারের বড় ছেলে আমাদের বাড়িতে দুপুরের খাবার খেল এবং সন্ধ্যায় চলে গেল। এরা দুজন এবং এদের আগে হােসেন মৃধা ও সবেদ আলী দফাদার, সােবহান আমাদের নতুন বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখলেন। আজ বিকেলে তােফাজ্জলের মা বাড়িতে গেলেন। সদ্যোজাত সন্তানসহ জামাই তাকে নিয়ে গেল। বিছানায় গেলাম ৯টায়। আবহাওয়া : দিনে বৃষ্টি নেই। রাতে বিরতি দিয়ে দিয়ে হালকা বৃষ্টি হলাে। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ৪.৭.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। আমাদের উত্তরের বন ঘুরে ঘুরে দেখলাম। আকুর বাপের বাড়িতে থামলাম। তাকে নিয়ে আমাদের চরের জমিগুলােতে ঘুরলাম। মৌলবি আশরাফ আলীর সঙ্গে আবদুল খানের আচরণ নিয়ে কথা বললাম। ফিরলাম বেলা ১২টায়। দেওনার সাইদ আলীকে আমাদের বাড়িতে পেলাম। তিনি দুপুরে খাবার খেলেন তারপর চলে গেলেন। উত্তরপাড়া মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করলাম। বিকেল ৫টার দিকে কেওয়ার বাপের বাড়িতে এক সালিশে যােগ দিলাম। দীর্ঘ আলােচনার পর কেওয়ার বাপের মেয়েকে সােবহানের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া এবং সােবহানের কাছ থেকে পালিয়ে গেলে সে যেন অন্য কোথাও আশ্রয় না পায় সে ব্যাপারে আমার পরামর্শ গৃহীত হলাে। আবদুল খান, শাহেদ আলী দফাদার, নায়েব আলী সরকার, জব্বার,
আকুর বাপ, জবু, জব্বার গাড়িয়াল, আহমদ, বরু, ওয়ারিস আলী এবং আরাে অনেকে সালিশে উপস্থিত ছিলেন। বাড়িতে ফিরলাম রাত ১০টায়। আমাদের উপস্থিতিতে সােবহান তার স্ত্রীকে ঘরে তুলে নিল। আমি বাড়িতে ফিরেই গেলাম কালবাড়ি। সেখানে হাইলজোরের লােকজনের সঙ্গে রাতের খাবার খেলাম। তারা হাইলজোর থেকে এসেছেন রজব আলীর মেয়ে ফজির বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। তারপর বাড়িতে ফিরে বিছানায় গেলাম রাত ১টায়। আবহাওয়া : সকাল ১০টার দিকে হালকা বৃষ্টি। অবশিষ্ট দিন পরিষ্কার। রাতের প্রথম ভাগে মুষলধারায় বৃষ্টি। ৫.৭.৫২ -শ্রীপুরভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। আজ স্কুল খুলল। শ্রীপুর পৌছলাম সকাল সাড়ে ৭টায়। স্কুলে বলাই বাবু, মৌলবি সাহেব, সাইদ আলী পন্ডিত ও হামিদ এসেছেন। বেলা ২টায় স্কুল ছুটি হলাে । বেলা ২টার ট্রেনে নির্মল বাবু ও বিএসসি শিক্ষক এলেন। নির্মল বাবুকে আমি চা খাওয়ালাম ও স্কুল ঘুরিয়ে দেখালাম। রাতে থাকার জন্য তিনি বলাই বাবুর সঙ্গে গেলেন। বিএসসি শিক্ষক গেলেন আহমদের সঙ্গে। সন্ধ্যা ৭টায় ক্লাবের মিটিংয়ে যােগ দিলাম। ওসি সভাপতিত্ব করলেন। কালু মােড়ল, সেকেন্ড এসআই, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, ডা. আহসানউদ্দিন, এএসআই এ গনি, সবেদ আলী, আবুল হােসেন, আহমদ ও আরাে অনেকে সভায় যােগ দেন। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে প্রস্তাবিত বালিকা বিদ্যালয়ের জন্য একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হলাে। আগামীকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সভা মুলতবি করা হলাে। এদিকে ক্লাবের সদস্যপদ প্রাপ্তির যােগ্যতা নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক চলল। কালু মােড়লের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এএসআই ও কনস্টেবলরা চান সবার জন্য সদস্যপ্রাপ্তি, অন্যদিকে দুজন এসআই জোরালােভাবে এর বিরােধিতা করেন এবং তাদের মতামতই বলবৎ থাকল।
স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে রাতে খেলাম। ফিরলাম রাত ১১টায়। তারপর বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দিনের প্রথম ভাগ থেকে শুরু হয়ে বেলা ১টা পর্যন্ত মাঝে মধ্যে বিরতিসহ হালকা বৃষ্টি। অবশিষ্ট দিন ও রাত বৃষ্টিশূন্য থাকলেও আকাশ পুরােপুরি পরিষ্কার ছিল না। সহনীয় পরিবেশ। ৬.৭.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকালে প্রাক্তন রেঞ্জার এ করিম আমার কাছে এলেন। তিনি অনুরােধ করলেন তার সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে তাকে সহায়তা করার জন্য। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে তিনি চলে গেলেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। নির্মল বাবু স্কুলে এলেন। আমি তাকে বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্রদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। আনসারের ডেপুটি ডিরেক্টর তার অধীনস্থ একজনকে নিয়ে কালু মােড়লের বাড়িতে দুপুরের খাবার খেলেন। সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দাবা খেললাম। ক্লাবের মুলতবি হওয়া সভা পুনরায় শুরু হলাে রাত সাড়ে ৮টায়। ওসি সভাপতিত্ব করলেন। রাত সাড়ে ৯টায় সভা শেষ হলাে। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আজ শুধু সূর্যাস্তের সময় হালকা এক পশলা বৃষ্টি হলাে। সহনীয় পরিবেশ। ৭.৭.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সােয়া ৩টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে পাশা খেললাম। তারপর ঘরে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : সকাল ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বিরতিসহ বৃষ্টি হলাে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি। বাতাসের কারণে নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ।
৮.৭.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত স্কুল। অফিসে কাজ করলাম। তারপর ক্লাবে এলাম। মালেক সাহেবের সঙ্গে দাবা খেললাম রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এরপর বাসায় ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : সারাদিন প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম। সারাদিন রাতে কোনাে বৃষ্টি নেই। তবে আকাশ আংশিক মেঘলা। বাতাসের কারণে রাতে ঠাণ্ডা ।। ৯,৭.৫২ ঘুম থেকে উঠেছি ভাের ৫টায়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে ক্লাস নিলাম। স্কুল অফিসে কাজ করলাম সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। রাত ৯টা পর্যন্ত ক্লাবে মালেক সাহেবের সঙ্গে পাশা খেললাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১১টায়। আবহাওয়া : পড়ন্ত বিকেলে হালকা বৃষ্টি হলাে। দিনের বেলা গরম। বাতাসের
কারণে রাত আরামদায়ক। দিনে ও রাতে আকাশ মেঘলা। ১০.৭.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত স্কুলে ক্লাস নিলাম। স্কুল অফিসে কাজ করলাম সকাল ৭টা থেকে ৮টা এবং বেলা সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। সকাল ৯টায় ইসমাইল খানের দোকানে বসে গােসিঙ্গা ও শ্রীপুরের ফরেস্টারের সঙ্গে কথা বললাম। আমাদের সঙ্গে আরাে ছিলেন কালু মােড়ল, সামাদ খান, সাত্তার খান প্রমুখ। শ্রীপুর-রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের বিশৃঙ্খলার কারণকে ঘিরে মুলত কথা হলাে। আমার মতে অর্থের প্রতি ডিএফওর লােভ লালসাই বিশৃঙ্খলার কারণ। আলাপ শেষে উঠলাম সকাল ১০টায়। সন্ধ্যার পর থেকে ক্লাবে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে পাশা খেললাম রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। রাতে প্রসন্ন বাবু এলেন। তিনি আমার ঘরে ঘুমালেন। আবহাওয়া : বেলা সাড়ে ১২টার দিক থেকে বেলা দেড়টা ও আবার মধ্য রাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হলাে। আকাশ সারাক্ষণ মেঘলা। রাত আরামদায়ক। বাতাস বইছে। বৃষ্টি চলছে।
১১.৭.৫২ ভাের ৭টায় উঠেছি। বাজারে প্রসন্ন বাবুকে চা খাওয়ালাম। সকাল সাড়ে ৭টায় স্কুলে গেলাম। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কাজ করলাম। তারপর ফিরলাম। সালেহ আহমদ মােড়ল ওখানে এসেছিলেন। তিনি আমাকে দিয়ে একটি পিটিশন লিখিয়ে নিলেন। বেলা সাড়ে ৩টায় আবার স্কুলে গেলাম। এলএফ গার্ড আবুল হােসেন আমার ওখানে এলেন। ফরেস্টার পদে তার পদোন্নতির জন্য আমাকে দিয়ে একটি দরখাস্ত লিখিয়ে নিলেন। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মালেক সাহেবের সঙ্গে পাশা খেললাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : সকাল প্রায় সাড়ে ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি। বেলা
দেড়টা পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এরপর বৃষ্টি না এলেও পুরােপুরি বৃষ্টিময় পরিবেশ। পরিমিত তাপমাত্রা। বাতাস বইছে।
১২.৭.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত স্কুলের আসবাবপত্র মেরামত কাজে মিস্ত্রিদের সঙ্গে কাজ করলাম। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত অফিসে ছিলাম। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়।
আবহাওয়া : মেঘ ও জলীয় বাষ্পের কারণে বিষন্ন ও গুমােট পরিবেশ। সূর্যাস্তের সময় ও রাতের শেষ ভাগ থেকে শুরু হয়ে সকাল পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি। রাতে ঠাণ্ডা বাতাস বহমান। ১৩.৭.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। এ ছাড়াও সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত স্কুলে থেকে মিস্ত্রিদের কাজ তদারকি করলাম । রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে রইলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : সারাদিন মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। বিকেলে ও সন্ধ্যায় বৃষ্টি হলাে। রাতে বৃষ্টি হয়নি। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। আজ দিন এবং রাতে বাতাস ছিলনা। আমার বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও আজ দুপুরে আমাকে খাবার দেওয়া হলাে । সন্ধ্যায় ভৃত্যদের আমি তিরস্কার করলাম আজকের কারণে এবং এখানে আমার অবস্থানের পুরােটা সময় ধরে তাদের এমন আচরণের জন্য। ১৪.৭.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সকাল পৌনে ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত স্কুলে মিস্ত্রিদের সঙ্গে রইলাম। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। ওসি সাহেব উপস্থিত ছিলেন। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে পেলাম না। গত সন্ধ্যায়ও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : সারাদিন ও রাত বৃষ্টিভেজা মেঘলা আবহাওয়া। দিনের বেলা কয়েকবার বৃষ্টি হলাে। রাতে বৃষ্টি হলাে না। ঠাণ্ডা পরিবেশ। বাতাস নেই।
১৫.৭.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলের ক্লাসে। এছাড়াও স্কুলে মিস্ত্রিদের সঙ্গে রইলাম সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে স্কুল থেকে ফেরার পর কাদার জন্য আর বাইরে বের হলাম না। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : মেঘলা আবহাওয়া। সন্ধ্যার আগে কয়েকবার বৃষ্টি হলাে। রাত | বৃষ্টিশূন্য। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। কোনাে বাতাস নেই। বি. দ্র. সকাল সাড়ে ১০টায় আবদুল খান এবং বেলা ৩টায় ওয়ারিস আলী ও টুকু একই বিষয় নিয়ে আমার কাছে এল। আর তা হচ্ছে—টুকুর সঙ্গে বিরােধপূর্ণ চরের পাট কেটে নিয়ে গেছে আবদুল খান। আমি তাদেরকে ফিরে গিয়ে এই বিষয়টি গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে বললাম। তাদের একজন চলে গেল বিকেল ৪টায় এবং বাকিরা গেল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। ১৬.৭.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। স্কুল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। স্কুলের অফিসে কাজ করলাম সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত । ক্লাবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মালেক সাহেবের সঙ্গে দাবা খেললাম। তারপর ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। দিনে বৃষ্টি হয়নি। রাত সাড়ে ১১টার দিক থেকে
শুরু হয়ে সকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত। পরিমিত তাপমাত্রা। আকাশ কালাে থেকে অধিক কালাে মেঘে ছাওয়া।
১৪৫
১৭.৭.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত স্কুলে। স্কুল অফিসে কাজ করলাম সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে নাস্তা করলাম আম, কাঁঠাল ও ডিম দিয়ে। রাত ৯টা পর্যন্ত মালেক সাহেবের সঙ্গে ক্লাবে পাশা খেললাম । বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : পড়ন্ত বিকেলে বৃষ্টি হলাে। রাতে বৃষ্টি হলাে না। আবহাওয়ার কোনাে উন্নতি হয়নি। পরিমিত তাপমাত্রা। ১৮.৭.৫২ ডাের ৫টায় উঠেছি। স্কুলের অফিসে সকাল সাড়ে ৫টা থেকে বেলা সােয়া ১২টা এবং বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাজ করলাম। শরাফতের দোকানে আবুল হােসেন খান ও সালেহ আহমদ মণ্ডল আমার সঙ্গে দেড় ঘন্টা ধরে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কথা বললেন। সালেহ আহমদ মণ্ডল মূলত আলাপ করলেন আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য গােসিঙ্গা ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচন নিয়ে। ক্লাবে মালেক সাহেবের সঙ্গে রাত ৯টা পর্যন্ত দাবা খেললাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দিনের প্রথম ভাগ বৃষ্টিস্নাত । তবে দীর্ঘ সময় পর মধ্য দুপুরে সূর্যের
দেখা মিলল। রাতে আকাশ পুরােপুরি পরিষ্কার, তারা ঝিকমিক করছে। পরিমিত তাপমাত্রা।
১৯.৭.৫২
-ঢাকাভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত স্কুলে। স্কুল অফিসে কাজ করলাম সকাল ৭টা থেকে। বেলা ২টার ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। যােগীনগর পৌছলাম বিকেল সাড়ে ৪টায়। ভাবীকে খুবই বেদনাহত অবস্থায় পেলাম। আমার উপস্থিতিতেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন। আমার মনে হলাে এর কারণ হতে পারে এখানে তার চরম একাকিত্ব। আত্মীয়স্বজনদের দিক থেকে তার স্নেহ-মায়ার প্রয়ােজন। গাজির ভাই ইমাদুল্লাহ এবং ভাবীর ভাই আবুল খায়েরের শ্যালকের সঙ্গে চা পান করলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সােজা গেলাম কামরুদ্দীন সাহেবের কাছে। নতুন রাজনৈতিক সংগঠন ও আসিরুদ্দিনের বিরুদ্ধে আমার মানহানি মামলা দায়ের করা নিয়ে আলাপ করলাম। রাত ৮টা পর্যন্ত আলাপ চলল। যােগীনগরে ফিরে রাত পৌনে ৯টায় সভায় যােগ দিলাম। মাহমুদ আলী সাহেব সভাপতিত্ব করলেন। সভার সমাপ্তি ঘটল রাত ১০টায়। মাহমুদ আলী সাহেব আমার সঙ্গে তােয়াহা সাহেবের বাড়িতে এলেন; কামরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে সমঝােতায় উপনীত হওয়ার ব্যাপারে। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তিনি কথা বললেন। আমি জোর দিলাম এ মুহূর্তে কামরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে কথা বলার ওপর। বিছানায় গেলাম রাত দেড়টায়। আবহাওয়া : দিনের বেলাটা রৌদ্রোজ্জ্বল। রাত ৮টা থেকে আকাশে মেঘ জমতে লাগল। গভীর রাত ৩টায় বৃষ্টি নেমে এল। দিনের বেলায় গরম ছিল। ২০.৭.৫২ -শ্রীপুর ও বাড়িভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত স্কুলে। শ্রীপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লাম ভাের ৫টা ৫ মিনিটের ট্রেনে। তারুলের ওয়াহাব আলী আমার সঙ্গী হলেন
রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত। তিনি আলাপ করলেন তাদের সঙ্গে ফরেস্টারের বিষয়াবলি নিয়ে। বেলা সাড়ে ১২টায় ওয়ারিস আলীর কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে সােজা বাড়িতে পৌছলাম। বামন দীঘির কাছে টুকুর সঙ্গে দেখা হলাে। সে আমার কাছে আসছিল। খেয়া ঘাটে আবদুল খানকে পেলাম। রাতে আমাদের বাড়িতে টুকু ও আবদুল খানের মধ্যে বিরােধ নিষ্পত্তির সালিশে সাহেব আলী বেপারি আসেননি। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : সকাল প্রায় ৭টা পর্যন্ত বৃষ্টি হলাে। অবশিষ্ট দিন ও রাত বৃষ্টিশূন্য। তবে আকাশ পুরােপুরি পরিষ্কার নয়। সহনীয় তাপমাত্রা। বি. দ্র. ১৯.৭.৫২ তারিখে শ্রীপুরে গােসিঙ্গার ইউনিয়ন পরিষদের সভাপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন আলী আকন্দ। এ ছাড়াও মান্না পিইউবি নির্বাচিত হয়েছেন। ২১.৭.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকালে আবদুল খান, কেওয়ার বাপ ও আক্কাস আলী আমার সঙ্গে একের পর এক দেখা করলেন। শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম সকাল ৮টায় ও পৌছলাম সকাল ১০টায়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। আমাকে দুপুরের খাবার দেওয়া হলাে না। স্কুলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সােয়া ৭টা পর্যন্ত রেলওয়ের পয়েন্টসম্যানদের জন্য একটি দরখাস্ত লিখলাম। ক্লাবে মালেক সাহেবের সঙ্গে দাবা খেললাম রাত ৯টা পর্যন্ত । বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : পড়ন্ত বিকেল ও রাতে হালকা বৃষ্টি। সহনীয় তাপমাত্রা। দিনের প্রথম
অর্ধভাগ রৌদ্রজ্জ্বল।
২২.৭.৫২ -ঢাকা ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে আক্কাস আলী ও সাঈদ এইচ হাসানকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। রাজেন্দ্রপুর থেকে হাসান মােড়ল ট্রেনে উঠলেন। তিনি আমার সঙ্গে ঢাকা পর্যন্ত এলেন। আমি তাকে ৩১.৭.৫২ তারিখের আগে স্কুলে আসার জন্য বললাম। কারণ ওই সময় আমি স্কুলে ছেড়ে যাব। সকাল পৌনে ১১টায় সরাসরি আদালতে গেলাম। রেঞ্জার আসিরুদ্দিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে আক্কাস আলীর মামলা ২৬.৮.৫২ তারিখ পর্যন্ত মুলতবি হয়ে গেল। ইমাদুল্লাহর বিরুদ্ধে একটি মামলার সূত্রে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আলী হােসেনের আদালতে যােগ দিলাম। ইমাদুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোেগ; বরিশাল আদালতে কাজ করার পাশাপাশি একই সময়ে ঢাকায় আইনের ক্লাসে যােগ দেওয়া। সকাল ১১টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হলাে। দ্বিতীয় শুনানি অনুষ্ঠিত হলাে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় শুনানিতে জেরা করলেন কামরুদ্দীন আহমদ। সাক্ষিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে বাকের, বি এ সিদ্দিকী, ইউ সি সরকার ও বি কে দে। এরা সবাই আইনের অধ্যাপক। বেলা ৩টায় সাঈদ আলীর জন্য বলধা ম্যানেজারের অফিসে গেলাম। বিকেল ৪টা পর্যন্ত তার বিষয়টি দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারীর কাছে তুলে ধরলাম। আবার গেলাম সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে; ৬৪/৩ তাহেরবাগ লেনে কেরানির বাড়িতে। সেখানে বিষয়টির সঠিক সুরাহা হলাে। সন্ধ্যা সােয়া ৬টায় সাঈদ আলীকে স্টেশনে পাঠালাম। আক্কাস আলীও চলে গেল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে দেখা করলাম। তিনি আমাকে জানালেন যে ডেমােক্র্যাটিক পার্টি প্রসঙ্গে আমাদের উচিত ওয়েট অ্যান্ড সি বা অপেক্ষা করার নীতি অনুসরণ করা। তিনি আগামীকাল সকালে এ মনােভাব নিয়েই মােহাম্মদ আলী সাহেবের সঙ্গে কথা বলবেন। রাত ৮টার দিকে ওখান থেকে বের হলাম। ডা, করিমের সঙ্গে তার ফার্মেসিতে দেখা করে যােগীনগর ফিরলাম রাত ৯টায়। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়।
আজ গােসল করা হলাে না। দুপুরে খাওয়াও হয়নি। আবহাওয়া : দিনের তৃতীয় ভাগে এক পশলা বৃষ্টি হলাে। আকাশ পরিষ্কার নয়।
দিনের বেলা গরম। তবে রাতে সহনীয় তাপমাত্রা। ২৩.৭.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ১১টায় ইমাদুল্লাহর মামলায় যােগ দিলাম। কামরুদ্দীন আহমদ দুই জন সাক্ষিকে জেরা করলেন। তারা হলেন ইকবাল হলের রেস্তোরাঁ দেখভালকারী। বেলা ২টায় যােগীনগর ফিরলাম। কেমব্রিজ ফার্মেসিতে গেলাম বিকেল ৫টায়। ডা. করিমকে নিয়ে আমার জন্য শার্টের কাপড় ইত্যাদি কিনলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মৌলবি বাজারে নওবেলাল অফিসে গেলাম। ৩ মাসের পত্রিকার জন্য ফয়জুদ্দিনের নামে ২ টাকা জমা করলাম। মােহাম্মদ আলী সাহেবকে পেলাম না। হায়দার সাহেবের সঙ্গে তার দোকানে দেখা করলাম। যােগীনগর ফিরলাম রাত সাড়ে ৮টায়। তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে ভাবীর সাক্ষাৎকার ছিল বিকেল ৪টায়। ভাবীকে তার বাবা নিয়ে যান। ডা, করিমের পরামর্শে তারই কাছে গ্র্যাজুয়েট স্কুলের সেক্রেটারি বরাবর চাকরির জন্য আমি একটি দরখাস্ত রেখে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১১টায়। রাত ৯টায় বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : বিকেল ও রাতে বিরতি দিয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ২৪.৭.৫২ -শ্রীপুরভাের ৪টায় উঠেছি। শ্রীপুর ফিরলাম ভাের ৫টা ৫ মিনিটের ট্রেনে। রাজেন্দ্রপুর থেকে আমার সঙ্গে এলেন হাসান মােড়ল। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত স্কুলে। সকাল ১০টায় আমি হাসান মােড়লকে স্কুলে নিয়ে গেলাম। তাকে স্কুলের সমস্যার ব্যাপারে
১৫০
জানালাম এবং জরুরি ভিত্তিতে এগুলাের সমাধানের প্রয়ােজনীয়তার কথা বললাম। বেলা দেড়টায় তিনি চলে গেলেন। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মালেক সাহেবের আমন্ত্রণে তার সঙ্গে দুপুরে খেলাম। মুরগির মাংসের ঝােল ও পােলাও রান্না করা হয়েছিল। বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মালেক সাহেবের সঙ্গে ক্লাবে দাবা খেললাম। তারপর আমার বাসস্থানে ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : পরিবেশ বৃষ্টিস্নাত । দিনের প্রথম ভাগ ও রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সহনীয় তাপমাত্রা। বি. দ্র. ২১.৭.৫২ তারিখে ম্যাট্রিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। প্রায় ২৭০০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাসের হার ৫১ শতাংশ।
২৫.৭.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। স্কুলের অফিসে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ১১টা এবং আবার বেলা সাড়ে ৩টা। থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাজ করলাম।। ক্লাবে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দাবা খেললাম রাত ৯টা পর্যন্ত। ঢাকার বশিরুল্লাহ, ওসি প্রমুখ তখন উপস্থিত ছিলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : সারাদিন ও রাত নিষ্প্রভ। বৃষ্টিস্নাত পরিবেশ। দিনের বেলা বিরতি দিয়ে দিয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। রাত ১০টার দিক থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ২৬.৭.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে। আজ সকালে মকসুদ বিশ্বাস আমার কাছ থেকে তার ডিএ নিলেন। আবার রাত পৌনে ৮টায় তিনি আমার সঙ্গে দেখা করে রাত ৯টা পর্যন্ত তার মামলা নিয়ে আলাপ করলেন। আমি আমার
অক্ষমতা প্রকাশ করলাম। ওই সময় বাের্ডিং হাউসে কাশিম, জাহান্দার, ওয়াজুদ্দিন ও চাদ মিয়া উপস্থিত ছিলেন। বাহকের মাধ্যমে আকতার মাস্টার সাহেব ও মফিজউদ্দীন সাহেবের কাছে দুটি চিঠি পাঠালাম। স্কুলের হিসাব-নিকাশে আমাকে সহায়তা করার জন্য আকতার। মাস্টারকে সােমবারের মধ্যে শ্রীপুর আসতে লিখলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দিনের শেষ ভাগের আগে বিরতিসহ হালকা বৃষ্টি হলাে। রাত বৃষ্টিশূন্য। আকাশ মেঘলা। সহনীয় তাপমাত্রা। ২৭.৭.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্কুলে। ম্যানেজিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হলাে বিকেল ৩টায়। কালু মােড়ল সভাপতিত্ব করলেন। সভা শেষ হলাে সন্ধ্যা ৭টায়। রাত ৮টার দিকে ইসমাইল খানের দোকানে হাকিম মিয়া আমার সঙ্গে দেখা করলেন। আজ রাতে তিনি ঢাকা যাচ্ছেন। রাত ৯টায় আমার বাসস্থলে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : বেলা ২টার দিকে ও রাত ৯টার পর অল্প সময়ের জন্য হালকা বৃষ্টি হলাে। সারাদিন ও রাতে আকাশ মেঘলা। পরিমিত তাপমাত্রা।
২৮.৭.৫২ উঠেছি ভাের ৫টায়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত স্কুলে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে তার রুমে ছিলাম। সেখানে গােসিঙ্গার। ফরেস্টারও উপস্থিত ছিলেন। বিবিধ বিষয়ে মজার মজার গল্প করলাম। সকালে হাসান মােড়ল স্কুলে এলেন এবং পিএমএইচও ঢাকা বরাবর লিখিত একটি দরখাস্তে স্বাক্ষর করলেন। প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকার জন্য শিক্ষক হামিদুল হক সকাল ৭টার ট্রেনে এলেন। তিনি সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে চলে গেলেন।
বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ইন্সপেক্টরের সঙ্গে পাশা খেললাম। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : হালকা বৃষ্টি ছাড়া দিনের বেলায় কোন বৃষ্টি হলাে না। বাতাস জলীয় বাপ। আকাশ মেঘলা। পরিমিত তাপমাত্রা। ২৯.৭.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্কুলে। বেলা ২টার ট্রেন থেকে নেমে কাজী নুরুজ্জামান আমার সঙ্গে দেখা করলেন। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের অফিসে নুরুজ্জামানের সঙ্গে তার মামলা নিয়ে কথা বললাম। সন্ধ্যা ৬টায় আমজাদ হােসেন খবর দিলেন আকতার মাস্টার সাহেব আজ সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে উপস্থিত থাকবেন। এই খবর পেয়ে আমি স্কুলের হিসাবপত্রগুলাে নিয়ে রশিদকে সঙ্গে করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। রাত সাড়ে ৯টায় বাড়িতে পৌছলাম। আকতার সাহেবের সঙ্গে উত্তর খামের এইচ ই স্কুলের মীর এসেছেন। বিকেল ৪টার দিকে নামা বড়হরের চাঁদের বাপ আমার সঙ্গে শ্রীপুরে দেখা করেছিলেন হাফিজ বেপারি বিরুদ্ধে তার মামলা নিয়ে। সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এম বিশ্বাস তার মামলার ব্যাপারে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। বিছানায় গেলাম রাত ১টায়। আবহাওয়া : আকাশ মেঘলা। দিনের বেলায় কোনাে বৃষ্টি হলাে না। সহনীয়
তাপমাত্রা। ৩০.৭.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। দুপুরের খাবারের সময়টুকু ছাড়া সারাদিন কাজ করলাম। উত্তর খামের এইচ ই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাস্তা করে চলে গেলেন। নাস্তার পর আমি রশিদকে শ্রীপুর পাঠালাম। আমার ফেলে আসা কাগজপত্র নিয়ে সে ফিরে এল বেলা ২টায়। সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের ধলা থেকে তালিবউদ্দিন মিয়া এলেন।। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়।
আবহাওয়া : বৃষ্টির দেখা নেই। আকাশ কম-বেশি পরিষ্কার এবং সূর্যকিরণ কোনাে বিঘ্ন ছাড়াই আলাে ছড়াল। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ৩১.৭.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সারাক্ষণ কাজ করলাম। দুপুরের আগে রমিজার নানা ও দিগধার ভাইসাহেব এলেন। তারা দুপুরে খেয়ে বিকেল ৩টার দিকে চলে। গেলেন। একই সময়ে আকতার মাস্টার সাহেবও চলে গেলেন। আমি দিগধার ভাইসাহেবের কাছে প্রথমবারের মতাে প্রকাশ করলাম, রমিজার মাকে নিয়ে আমি কী সমস্যার মধ্যে আছি। বিকেলে আফসু দফতু এল। আজ রাতে আমি রমিজার মাকে তার নিজের ছেলেমেয়েদের মনে দাদির বিরুদ্ধে বিরূপ মনােভাব সৃষ্টির মন্দ স্বভাবের জন্য রাগ করলাম। তালেব মিয়া শুনলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : শেষ বিকেলের আগ পর্যন্ত সারাদিন উজ্জ্বল রােদ। সূর্যাস্তের সময় হালকা এক পশলা বৃষ্টি। চাদ ও তারায় ভরা রাতে পরিষ্কার আকাশ। আরামদায়ক পরিবেশ। বি. দ্র. : ১. প্রায় এক সপ্তাহ ধরে মা ম্যালেরিয়ায় ভুগছেন। তার ওষুধ না খাওয়ার স্বাভাবিক প্রবণতা তিনি বহাল রেখেছেন। ২। মফিজউদ্দীন ও বুলবুল ম্যালেরিয়ায় ভুগেছে। এখন উপশমের পথে। ৩। শফির মাও ম্যালেরিয়ায় ভুগেছেন এবং এখন তিনি পুরােপুরি সুস্থ। এ মাসে পৃথিবীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলাে, মিসরে জেনারেল নকিবের নির্দেশে বাদশাহ ফারুকের নিজের সাত মাস বয়সী ছেলের কাছে সিংহাসন ত্যাগ। ২৬.৭.৫২ তারিখে জেনারেল নকিব রাজ প্রাসাদ দখল ও মিসরের প্রশাসন নিজের হাতে তুলে নেন। সেদিনই সন্ধ্যায় বাদশাহ দেশত্যাগ করেন। জেনারেল নকিব নিজে দেশের রাজনীতিতে কোনাে ভূমিকা না রেখে আলী মেহের পাশাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়ােগ করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
১ আগস্ট, শুক্রবার ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল বেলা সাইদ আলী এল এবং আমাকে তার চাকরির ব্যাপারে প্রয়ােজনীয় তথ্যাদি দিল। নবু মােড়ল আমার সঙ্গে পাটের লাইসেন্সের ব্যাপারে দেখা করলেন। পুকুরের পাশের জমিতে মই দেওয়ার পর মাছ ধরলাম। সকাল ১১টার দিকে আবদুল খানের বাড়ির চারপাশের জমিগুলাে ঘুরে দেখে ফেরার পথে তার সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে পিইউবি নায়েব আলী সরকার প্রমুখের উপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে আয়ােজিত সালিশের ব্যাপারে কথা বললেন। ঘন্টাখানেক পর আমি বাড়িতে ফিরলাম। আমি রওনা দেওয়ার মুহূর্তে তালিবউদ্দিন মিয়ার সঙ্গে কথা হলাে। সে আমাকে তার বাবার মানসিক অবস্থা ও মনােভাবের ব্যাপারে জানাল। বিকেল ৪টার দিকে আমি শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। তালগুলাে ও কাগজপত্র দিয়ে রশিদকে আগেই পাঠানাে হয়েছে। অর্ধেক পথ যাওয়ার পর গােসিঙ্গার ফরেস্টার ও এলাহি গার্ডকে পেলাম। তারা শ্রীপুর থেকে আসছিলেন। ফরেস্টার আসিমউদ্দিনের বিরুদ্ধে আমার মামলা দায়েরের কথাটি তারা তুললেন। আমি স্বীকার করলাম। সন্ধ্যা ৭টার দিকে শ্রীপুর পৌছলাম। ঢাকা যাওয়ার জন্য হাবিব প্রস্তুত ছিলেন। আমি তাকে কাশেম সাহেবকে নিয়ে আসতে বললাম। ডিস্ট্রিক্ট বাের্ড চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে এস আহমদ মণ্ডলের সঙ্গে আলাপ করে রাত ৮টা ২০ মিনিটে বাজার থেকে আমার বাসস্থানে ফিরলাম।
১৫৫
সামাদ খান বাজারে আমাকে হালিম খানের লেখা একটি চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি আমাকে অনুরােধ করেছেন তার বিরুদ্ধে লঞ্চ ম্যানেজারের দায়ের করা মামলাটি দেখার জন্য। আমি তাকে কথা দিলাম এ ব্যাপারে ওসির সঙ্গে দেখা। করার। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দিনের বেলা কোনাে বৃষ্টি হয়নি। রাতের শুরুতে আকাশে আধাে আধাে মেঘ। পরে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন এবং রাতের শেষ ভাগে খুবই হালকা বৃষ্টি। বাতাসে জলীয়বাষ্প থাকলেও ততটা গরম নয়।
২.৮.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। স্কুল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। আবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত স্কুলের অফিসে ছিলাম। রাত ১০টা পর্যন্ত ক্লাবে রইলাম। ক্লাবে জয়দেবপুরের এক হিন্দু ভদ্রলােক আমাদেরকে অনুকরণের অভিনয় করে দেখালেন। প্রস্তাবিত বালিকা বিদ্যালয় নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হলাে। সকালে ফরেস্টার আজিমুদ্দিন আমাদের বাড়িতে হােসেন খানের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। আমার সঙ্গে আলাপ করলেন। সকালে ঢাকায় যাওয়ার ট্রেন আসার আগ পর্যন্ত রেঞ্জার আসিমউদ্দিন আমার সঙ্গে কথা বললেন। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : বিকেল ও সন্ধ্যায় সামান্য বৃষ্টি হলাে। সহনীয় তাপমাত্রা। রাতের আকাশ মেঘলা। ৩,৮.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। স্কুলের অফিসে সকাল ৬টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা এবং বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত কাজ করলাম।
সকাল পৌনে ৯টায় থানায় গেলাম। এম বিশ্বাস আমার সঙ্গে গেলেন। ওসি, সেকেন্ড এসআই, এস আহমদ মন্ডল, মালেক সাহেব উপস্থিত ছিলেন। পরে এলেন কালু মন্ডল। বালিকা বিদ্যালয়ের স্থান বাছাইয়ের জন্য আমি ও রেঞ্জার থানার আশপাশের জমি ঘুরে দেখলাম। ডিস্ট্রিক্ট বাের্ড বাংলােয় বসলাম এবং সেখানে চা খেলাম। সকাল ১১টার দিকে সেখান থেকে উঠলাম। ইসমাইল খানের দোকানের সামনে হাসান মন্ডলের সঙ্গে দেখা হলাে। আমি তখন এস আহমদ মন্ডলের সঙ্গে সেখানে বসে ছিলাম। হাসান মন্ডল সেই সময় রাজেন্দ্রপুর যাচ্ছিলেন। বেলা ১টা পর্যন্ত আলাপ করে আমার ঘরে ফিরলাম। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : বৃষ্টি হয়নি। দিনের বেলা আকাশ আংশিক পরিষ্কার। চাদের আলােয় আরামদায়ক রাত। আকাশে টুকরাে মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। নমনীয় তাপমাত্রা। ৪,৮,৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সকাল ৬টা থেকে এবং আবার বিকেল পৌনে ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত স্কুলের অফিসে কাজ করলাম। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। রাত ৯টা থেকে আমার ঘরের সামনে বসে হেলাল, নূর মােহাম্মদ ও মহা মুর্শিদি গান গাইলেন। সুবেদ আলী, শাহাবুদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ঘুম এসে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত আমি থাকতে পারলাম না। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দিনের বেলা আকাশ পরিষ্কার। রাতে বৃষ্টির লক্ষণ দেখা দিলেও কোনাে বৃষ্টি হলাে না। সহনীয় তাপমাত্রা।
৫.৮.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। স্কুলের অফিসে কাজ করলাম সকাল ৬টা থেকে এবং আবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত। ক্লাবে মালেক সাহেবের সঙ্গে রাত ৯টা পর্যন্ত দাবা খেললাম এবং তারপর ফিরলাম। হাটের সময় আমার কাছে গিয়াসউদ্দিন এসেছিলেন ফজির বিয়ের সূত্রে আমাকে তাদের বাড়ি নেওয়ার জন্য। আমি যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। বিছানায় ঘুমাতে গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : বৃষ্টিশূন্য। বাতাস জলীয়বাষ্পপূর্ণ। আকাশ পুরােপুরি পরিষ্কার। নাতিশীতােষ্ণ পরিবেশ। ৬.৮.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। স্কুলের অফিসে সকাল ৬টা থেকে এবং আবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাজ করলাম। ক্লাবে মালেক সাহেবের সঙ্গে দাবা খেললাম রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। সন্ধ্যা ৬টায় স্কুল অফিসে সাত্তার খান আমার সঙ্গে দেখা করে বললেন যে, হালিম খান। আগামীকাল শ্রীপুর আসবেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মজিদ মােড়ল ও কো-অপারেটিভ সােসাইটির শফিউদ্দীন স্কুলে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। শফিউদ্দীন মামলা নিয়ে আলাপ করলেন। শরাফতের দোকানে সকাল ১০টার দিকে আমি তাদের চা খাওয়ালাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : বেলা ১১টার দিকে ১৬-২০ মিনিট ধরে হালকা এক পশলা বৃষ্টি
হলাে। এরপর আর কোনাে বৃষ্টি এল না। দিনের বেলা আকাশ কমবেশি পরিষ্কার। রাতে আকাশ পরিষ্কার। গরম অনুভূত হলাে।
৭.৮.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সন্ধ্যা ৬টা থেকে এবং আবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্কুলের অফিসে কাজ করলাম। ক্লাবে মালেক সাহেবের সঙ্গে দাবা খেললাম রাত ৯টা পর্যন্ত। রাত সাড়ে ৮টায় সাহেব আলী বেপারি ঢাকা যাওয়ার পথে আমার সঙ্গে ক্লাবে দেখা করলেন। বেলা ২টায় ঢাকা যাওয়ার পথে আসুও আমার সঙ্গে দেখা করেছে। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : প্রচণ্ড শুকনাে আবহাওয়া। প্রায় মধ্য রাত পর্যন্ত উত্তাপ। এরপর
সকাল পর্যন্ত ঠাণ্ডা অনুভূত হলাে। ৮৮.৫২ -নিশুয়ারিভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৭টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত স্কুলে কাজ করলাম। বেলা ২টার ট্রেনে সাত্তার। খানকে সঙ্গে নিয়ে নিগুয়ারির উদ্দেশে রওনা হলাম। কাওরাইদ থেকে নৌকায় নিগুয়ারি পৌছলাম বিকেল ৫টায় । কাওরাইদ থেকে নিগুয়ারি যাওয়ার পথে নৌকায় আমাদের সঙ্গে পাতলাশির এক এএসআই ছিলেন। রইস ভাইসাহেবের বাড়ি পৌছানাের পর নাস্তা ও ভাত খেলাম । কুদরত লঞ্চের ম্যানেজার (বিরেন)-এর সঙ্গে হালিম খানের বিরােধের একটি সুরাহা হলাে। গফরগাঁওয়ের ওসি, খাজি বেপারি, গােলন্দাজ, ফজলুর রহমান, রাম ভাওয়ালি, নগেন্দ্র রায় বিএ এবং আরাে অনেক লােক উপস্থিত ছিলেন। গফরগাঁওয়ের ওসি ও আরাে কিছু লােক সন্ধ্যায় চলে। গেলেন। অবশিষ্টরা খাবার খেলেন এবং গেলেন রাত ১১টার দিকে। হালিম খান ও বীরেন তাদের দায়ের করা অভিযােগ উঠিয়ে নিতে নিজ নিজ থানা বরাবর প্রত্যাহার পত্র লিখলেন। আমি আজিজ মিয়ার বাড়িতে সন্ধ্যায় রাবেয়াকে এবং রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুকসুরের মা ও আমুর মাকে দেখলাম। ঢাকা। ডিএবির সাবেক এসআই ইউনুস এবং অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ট্রেনে দেখা হয়েছিল। কাওরাইদে তারা আমাকে চা খাওয়ালেন।
বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১২টায়। আবহাওয়া : বেলা আড়াইটার দিকে হালকা এক পশলা বৃষ্টি হলাে। অবশিষ্ট দিন।
ও রাত পরিষ্কার। গরম পরিবেশ। ৯,৮.৫২ -শ্রীপুরভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। ভাের ৫টায় সাত্তার খানকে সঙ্গে নিয়ে নৌকাযােগে রওনা হলাম। ডাউন ট্রেন। আসার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে কাওরাইদ পৌছলাম এবং শ্রীপুরে ফিরলাম । সকাল সাড়ে ১০টা থেকে থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেলে শরাফতের দোকানে রুস্তম আলী আকন্দের সঙ্গে চা খেলাম। বদরুদ্দিন আহমেদের বাবা, ওসি সাহেব ওখানে আমাদের সঙ্গে বসে ঘন্টাখানেক আলাপ করলেন। এরপর সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ওখানেই বসে ওসির সঙ্গে কথা বললাম। স্বাধীনতা দিবসের জন্য চাঁদা তােলার বিষয়টি তিনি উপলব্ধি করলেন। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ক্লাবে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দাবা খেললাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : বেলা ৩টার দিকে ১০/১৫ মিনিট ধরে এক পশলা বৃষ্টি হলাে। রাতের আকাশ পরিষ্কার। গরম কম। ১০.৮.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা পৌনে ১টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। স্কুলের অফিসে সকাল ৭টা থেকে। সকাল সােয়া ১০টায় শ্রীপুর সার্কেলের এসআই অব স্কুলস হজরত আলী মিয়া আমাদের অফিসে এলেন। তিনি আলােচনা করলেন মূলত সরকারের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। তিনি প্রাইমারি স্কিমের সমালােচনাও করলেন। বেলা পৌনে ১টা থেকে প্রায় পৌনে ২টা পর্যন্ত প্রাইমারি স্কুল পরিদর্শন করে বেলা ২টা ট্রেনে তিনি চলে গেলেন। রেল স্টেশনে আমি তাকে বিদায় জানালাম। ট্রেনে
১৬০
ইমরান আলী তালুকদারকে দেখা গেল। কাপাসিয়ার ইয়াসিনকে সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় আমি ইজ্জত আলী সরকারের বাড়িতে পৌছলাম। ওখানে রাতে রইলাম। জীবনে প্রথমবারের মতাে আমি ওই এলাকায় গিয়েছি। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১১টায়। আবহাওয়া : সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এক পশলা বৃষ্টি হলাে। রাতের শেষ ভাগে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি। বাতাসে জলীয়বাষ্প। সহনীয়, উষ্ণ তাপমাত্রা। ১১.৮.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। ইয়াসিন রাজেন্দ্রপুর হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাে এবং আমি শ্রীপুরের উদ্দেশে বের হয়ে পৌছলাম সকাল ৮টায়। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মালেক সাহেবের সঙ্গে তার কোয়ার্টারে থাকলাম। তার সঙ্গে নাশতা করলাম। ক্লাবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দাবা খেললাম ও তারপর বাসস্থানে ফিরলাম। ক্লাবে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইজ্জত আলী সরকার আমার সঙ্গে কিছুক্ষণের জন্য দেখা করলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : বৃষ্টিশূন্য। সহনীয় তাপমাত্রা। রাতে নমনীয় উষ্ণতা।
১২.৮.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। সকাল সােয়া ৬টা থেকে স্কুলের অফিসে। হাসান মােড়লের স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য গ্রান্ট ইন এইডের দরখাস্ত ও অন্যান্য কাগজ রাজেন্দ্রপুর পাঠালাম। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের ওখানে গেলাম। সেখানে এসআই জেড হক ও কোরেশি উপস্থিত
ছিলেন। আমরা সবাই তার বাড়িতে পিঠা খেলাম । বিকেল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দাবা খেললাম। তারপর ঘরে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দিন ও রাতে আকাশ প্রায় পুরােপুরি পরিষ্কার। সহনীয় তাপমাত্রা। রাতে বৃষ্টি নামার মতাে পরিবেশ সৃষ্টি হলেও বৃষ্টি হলাে না। ১৩.৮.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বিকেলে তােরণ প্রভৃতি নির্মাণ দেখলাম এবং বাজার, ক্লব প্রভৃতি স্থানে ঘুরলাম। সন্ধ্যায় ডাকঘরের সামনে বসে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দাবা খেললাম। রাত ৮টার দিকে বাসায় ফিরলাম। আমাদের বাসস্থানের সামনে একটি তােরণ নির্মাণে রফিকে সহায়তা করলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দিন ও রাতে আকাশ পরিষ্কার। রাতে বাতাসে জলীয়বাষ্প অনুভূত থাকায় পরিবেশ উষ্ণ। ১৪.৮.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টায় থানার সামনে পতাকা উত্তোলনে যােগ দিলাম। কারি মমতাজউদ্দিন পবিত্র কোরআন থেকে প্লাঠ করলেন এবং আলহাজ্ব সালেহ আহমদ মন্ডল পতাকা উত্তোলন করলেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আনসার ও কনস্টেবলদের প্যারেড শুরু হলাে। ওসি এবং সেকেন্ড অফিসার ঘােড়ায় চড়ে শােভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিলেন। বাজার ইত্যাদি স্থানে মার্চ পাস্ট করে তারা গেলেন শ্রীপুর কাছারি পর্যন্ত। সকাল ১০টার দিকে শােভাযাত্রা শেষ হলাে। ক্রীড়া প্রতিযােগিতার জন্য আহমদ, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, এ রশিদ তালুকদার, রুকুনুদ্দিন সাহেব ও আমি থানার মাঠটি প্রস্তুত করলাম।
বেলা ১২টা ১০ মিনিটে খেলা শুরু হয়। বিকেল ৪টায় এর সমাপ্তি ঘটল। প্রথম খেলাটি হলাে ৮৮০ গজ দৌড় ও সবশেষে সাঁতার। আর মধ্যবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত হলাে হাইজাম্প, প্রতিবন্ধক দৌড়, মােরগ লড়াই, সঁচ দৌড়, জিলাপি দৌড় ইত্যাদি। খেলা। সকাল ১০টা থেকে ১১টায় দরিদ্রদের মধ্যে আড়াই মণ চাল বিতরণ করা হলাে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এইচ ই এবং অফিসার দলের মধ্যে ফুটবল প্রতিযােগিতা অনুষ্ঠিত হলাে। ১-০ গােলে জিতে গেল এইচ ই। মাগরিবের নামাজের পর থানা চত্বরে জনসমাবেশ শুরু হলাে। সভায় আমি সভাপতিত্ব করলাম। সভার শুরুতে ক্রীড়া প্রতিযােগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হলাে এবং বক্তৃতা করলেন ওসি, আহমদ, ডা. আহসানউদ্দিন ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টর। সভাপতির ভাষণ শেষে আমি রাত ৯টার দিকে সভার সমাপ্তি টানলাম। সভা শেষে ছেলেদের বিস্কুট দেওয়া হলাে। রাত সাড়ে ৯টায় কোরেশি সাহেব ওসি, সেকেন্ড এসআই, মালেক সাহেব, রেঞ্জার, ভেটেরিনরি ডাক্তার ও আমাকে তার রাতযাপন স্থানে চা খাওয়ালেন। তারপর আমরা আমাদের নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। আফসু দফতু অনুষ্ঠানে যােগ দিয়েছিল। তারা আমার সঙ্গে রাতে থাকল। সােবন তাদের সঙ্গে এসেছে। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : দিনে মেঘের আড়ালে সূর্য বারবার ঢাকা পড়েছে। উষ্ণ পরিবেশ।
রাতে আকাশ পরিষ্কার ও রাতের শেষ ভাগে পরিমিত তাপমাত্রা । ১৫.৮.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৭টায় বের হলাম। হাকিম মিয়া, আহমদ, কোরেশি, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও আমি আজ রাতে ভােজ আয়ােজনের প্রস্তাব করলাম। সকাল ৯টার দিকে আমরা। সবাই থানায় গেলাম। ওসি এবং সেকেন্ড অফিসার এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন। আমরা জুমার নামাজের আগেই রেঞ্জার, ভেটেরিনরি ডাক্তার প্রমুখকে দাওয়াত করে বাড়ি ফিরলাম।
বিকেলে একটি খাসি জবাই করা হলাে। ফরেস্ট অফিসে মবা, করিম প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে সুবেদ আলী রান্না করল। সন্ধ্যার মধ্যেই আমরা সবাই সেখানে সমবেত হলাম। রাত ১১টার দিকে খাবার পরিবেশনের আগ পর্যন্ত ইনডাের গেমসে অংশ নিলাম। মধ্য রাত ১২টার দিকে ফিরলাম। ফিরেই বিছানায় গেলাম । আবহাওয়া : দিনের তৃতীয় ভাগে ও রাত ৯টার দিকে এক পশলা বৃষ্টি হলাে।
আকাশ মেঘলা, বিশেষ করে রাতে। দীর্ঘ খরার পর আবার বৃষ্টি নামবে বলে মনে হচ্ছে। ১৬.৮.৫২ -ঢাকাভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। সঙ্গী হলেন মালেক সাহেব, হাকিম মিয়া, ফরেস্টার আবদুল লতিফ প্রমুখ। রাজেন্দ্রপুরে আমরা ইন্টার ক্লাস কম্পার্টমেন্টে স্থান দাবি করলে গার্ড আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলেন। স্টেশনের অভিযােগ বইতে আমরা তার দুর্ব্যবহারের কথা লিখলাম। আমরা ডিটিএস-এর অফিসেও গেলাম, কিন্তু তিনি ছিলেন না। সেখানে আমরা ঢাকার তদারকি স্টেশন মাস্টারের কাছে লিখিত অভিযােগ দায়ের করলাম। আহমদকে সঙ্গে নিয়ে বেলা ১২টায় এস এম হলে গেলাম। স্কুলের নথিপত্রে এফ করিমের স্বাক্ষর নিলাম। মজিদ সাহেবের সঙ্গে দেখা হলাে। দেখা হলাে কাশেম সাহেবের সঙ্গেও। বেলা সােয়া ১টায় যােগীনগর গেলাম। গােসল করলাম এবং দুপুরের খাবার খেলাম। বিকেল ৫টায় বের হলাম। সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ডা, করিমকে তার ফার্মেসিতে পাওয়া গেল না। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কামরুদ্দীন সাহেবের কাছে গেলাম। তাঁর সঙ্গে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত ওপরের তলায় বসে কথা বললাম। রাত সাড়ে ৯টার দিকে যােগীনগরে ফিরে এলাম। রাত সাড়ে ১০টায় ছাদে ঘুমাতে গেলাম।
আবহাওয়া : বাতাসে জলীয়বাষ্প, দিনের বেলা আকাশে মেঘ ভেসে বেড়াল। সকালে কয়েক ফোটা বৃষ্টি ঝরে পড়ল। রাতে আকাশ পরিষ্কার। নমনীয় পরিবেশ। বি. দ্র. স্যার আবদুর রহিম (৮৫) করাচিতে ১৫.৮.৫২ তারিখে মৃত্যুবরণ করেছেন
(১৬.৮.৫২ তারিখের স্টেটসম্যান পত্রিকা)। ১৭.৮.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। নাশতা খাওয়ার পর সকাল সাড়ে ৮টায় বের হলাম। সকাল ৯টায় সােয়ারিঘাটে আতাউর রহমান খানের ওখানে গেলাম। তারপর আমার নথিপত্র নিয়ে জিন্দাবাহরি এলাম। কামরুদ্দীন সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে সকাল ১০টার দিকে গেলাম। কফিলউদ্দীন চৌধুরী সাহেবের কাছে। চৌধুরী সাহেব ইতােমধ্যে ফিরােজ মিয়ার মামলার খসড়া তৈরি করতে শুরু করছেন। আমরা বেলা ২টা পর্যন্ত সেখানে আলাপ করলাম। এরপর জিন্দাবাহারে কামরুদ্দীন আহমদ সাহেবকে পৌছে দিয়ে আমি যােগীনগর ফিরলাম বেলা পৌনে ৩টার দিকে। সন্ধ্যায় ডা, করিমের সঙ্গে তাঁর ফার্মেসিতে দেখা করলাম। রাত প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তার সঙ্গে আমার মামলাটি চালু করার ব্যাপারে কথা বললাম। তারপর ফিরে এলাম। বিছানায় ঘুমাতে গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : সারাদিন ও রাতে বৃষ্টি হবে বলে মনে হলাে। কিন্তু সকাল সাড়ে ৯টায় হালকা বৃষ্টি ও রাত সাড়ে ১০টার দিকে কয়েক মিনিটের জন্য হালকার চেয়ে একটু বেশি বৃষ্টি হলাে। রাতে নমনীয় তাপমাত্রা। ১৮.৮.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টায় বের হলাম। পথে আজিজ আহমদের সঙ্গে দশ মিনিটের জন্য তার বাড়িতে দেখা করলাম। কফিলউদ্দীন চৌধুরীর ওখানে গেলাম সকাল সাড়ে ৯টায়। কামরুদ্দীন আহমদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১১টা পর্যন্ত ফিরােজ
১৬৫
ও আমি আমাদের নিজ নিজ মামলার বিষয় নিয়ে আলাপ করলাম। তারপর বেরিয়ে পড়লাম। বেলা ১২টায় যােগীনগরে ফিরে এলাম। একটি অনুষ্ঠানে যােগ দিতে ভাবী তার মেয়ে চিনুকে সঙ্গে নিয়ে তেজগাঁওয়ে গেলেন। এরপর বেলা সাড়ে ৩টায় কামরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে দেখা করলাম। রাত ১০টা পর্যন্ত আমাদের মামলার আরজির খসড়া প্রস্তুত করলাম। ওখান থেকে বের । হয়ে সােজা বাসায় ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১২টায়। আবহাওয়া : ঠিক সন্ধ্যায় ও রাত সাড়ে ১১টার দিকে হালকা বৃষ্টি হলাে। বাতাসে। জলীয়বাষ্প। উষ্ণ পরিবেশ। ১৯.৮.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল পৌনে ৯টায় কামরুদ্দীন আহমদের ওখানে গেলাম। আদালতের একটি। মামলা নিয়ে তিনি ব্যস্ত থাকায় আমার কাগজপত্র নিয়ে বসা গেল না। সকাল ১০টার দিকে ফিরলাম। বিকেল সাড়ে ৫টায় বের হলাম। সােজা কামরুদ্দীন আহমদের কাছে গেলাম। আমার মামলার আরজির খসড়া শেষ করলাম রাত ১০টায়। ডা. করিম ওখানে। এলেন। তার সঙ্গে রিকশায় রাত সাড়ে ১০টায় ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১১টায়। আবহাওয়া : বাতাসে জলীয়বাষ্প অনুভূত হলাে। উষ্ণ পরিবেশ। রাত সহনীয়। তাপমাত্রা। | বি. দ্র. আমি কামরুদ্দীন আহমেদের বাড়িতে পৌছামাত্র ওয়ারিস আলী আমার সঙ্গে দেখা করলেন। আসিমউদ্দিনের ব্যাপারে আমাদের কী করা উচিত সে। ব্যাপারে তিনি তথ্য নিতে এসেছেন।
২০.৮.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সারাদিন ঘরে থেকে আমার মামলার আরজির খসড়াটি ঠিকঠাক করলাম। সন্ধ্যা ৬টায় জিন্দাবাহারে উদ্দেশে বের হলাম। রাত সােয়া ৮টার দিকে কামরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে গেলাম কফিলউদ্দীন চৌধুরী সাহেবের ওখানে। রাত পৌনে ১০টা। পর্যন্ত আমার মামলার আরজি নিয়ে আলাপ করলাম। তারপর সােজা ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : দিনের বেলা আকাশ কম-বেশি পরিষ্কার। মধ্য রাত থেকে আকাশ মেঘলা হয়ে এল। রাতে কিছুক্ষণের জন্য গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলাে। সহনীয় পরিবেশ। বাতাসে জলীয়বাষ্প। ২১.৮.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ১০টার দিকে গাজিউল হক এলেন। পূর্ব পাকিস্তান শিল্পী সংসদ আজ কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা হবে; ২২.৮.৫২ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য পূর্ব পাকিস্তান সাংস্কৃতিক সম্মেলনে যােগ দিতে। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত আমার মামলার আরজি টাইপ করলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বের হলাম। কেমব্রিজ ফার্মেসিতে ডা. করিমের সঙ্গে দেখা করলাম। ৪,১০০ টাকার দাবির ব্যাপারে তার মতামত নিলাম। সন্ধ্যা ৭টায় কামরুদ্দীন আহমদের কাছে গেলাম। এসআই নূরুল হক ওখানে এলেন; তার সিঙ্গাইর দীঘি ডাকাতি মামলার ব্যাপারে আলাপ করতে। সেটি এখন দায়রা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। রাত সাড়ে ৮টায় কামরুদ্দীন আহমদকে সঙ্গে নিয়ে কফিলউদ্দীন চৌধুরীর বাড়ির উদ্দেশে বের হলাম। আমার আরজি চূড়ান্ত করলাম। কাদির সরদার সেখানে এলেন এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে চৌধুরী সাহেব আইজিপির কাছে গেলেন। আমরা বের হলাম রাত ১০টায়। জিন্দাবাহারে কামরুদ্দীন আহমদকে পৌঁছে দিয়ে আমি হেঁটে রাত সাড়ে ১০টায় ফিরলাম।
বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : দিনের প্রথম ভাগে বিরতিসহ হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলাে। রাতেও
দুবার হালকা বৃষ্টি হলাে। সহনীয় গরম পরিবেশ। ২২.৮.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৯টায় কারকুন বাড়ি লেনে হাসানের সঙ্গে দেখা করলাম। আধ ঘন্টার মতাে কথা হলাে। সকাল সাড়ে ১০টার দিক থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আদালতে ছিলাম। প্রথম সাব জজ আদালতে সিঙ্গাইর দীঘি মামলায় ডা, আহসানউদ্দিন, ডা. ননি প্রমুখকে পেলাম। এসআই সেলিমের সঙ্গে তার অফিসে দেখা করলাম। তিনি আমাকে জানালেন তিনি নিজে ও তার স্ত্রী অসুস্থ থাকায় এম বিশ্বাসের মামলার ব্যাপারে তিনি কোনাে পদক্ষেপ নিতে পারেননি। মােক্তার বার লাইব্রেরিতে সাদির আমাকে চা খাওয়াল। বেলা ১টায় ফিরলাম। বিকেল ৪টায় কামরুদ্দীন সাহেবের কাছে গেলাম। সন্ধ্যা সােয়া ৬টায় তার ওখান থেকে বের হলাম। মুকুল সিনেমা হলের সামনে ফরেস্টার মােসলেম উদ্দিনকে পেলাম। তার সঙ্গে রমনা হাউস পর্যন্ত গেলাম। সিএসপি কফিলউদ্দিন মাহমুদ ওখানে এগিয়ে এসে আমার সঙ্গে কথা বললেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : দিনে আকাশ প্রায় পুরােপুরি পরিষ্কার। রাতে বিছানায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত রাতের আকাশ পরিষ্কার। রাতের শেষ ভাগে মাঝারি ধরনের ভালাে এক পশলা বৃষ্টি হলাে। বাতাসে জলীয় বাষ্প। ২৩.৮,৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টায় বের হলাম। মামলার আরজির খসড়াটি বার লাইব্রেরিতে হেম বাবুকে দিলাম। তারপর হেঁটে ৩ তােপখানা রােডে গেলাম সকাল সাড়ে ৮টায়। ডা, করিম আমাকে ৩৩৫ টাকা দিলেন। নাশতা সেরে সেখান থেকে সকাল ৯টায় বের হলাম। এরপর যােগীনগর ফিরে এলাম।
সকাল পৌনে ১১টায় আদালতে গেলাম। কোর্ট ফির স্ট্যাম্প পেলাম না । প্রথম সাব-জজ আদালতে সিঙ্গাইর দীঘি দায়রা মামলায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে মােমেনকে সহায়তা করলাম বেলা দেড়টা পর্যন্ত। বিকেল সাড়ে ৫টার দিক থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ডা, করিমের সঙ্গে তাঁর ফার্মেসিতে ছিলাম। সেখানে ফজলুল হক মুসলিম হলের মােমেন, সফর আলী, ওহাব প্রমুখকে পেলাম। নবাবপুর রােডে দেখা হলাে শেখ মুজিব, মানিক প্রমুখের সঙ্গে। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : দিনের দ্বিতীয় ভাগ, তৃতীয় ভাগ ও রাতে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি হলাে। বাতাসে জলীয় বাষ্প। উষ্ণ পরিবেশ। ২৪.৮.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৯টায় কামরুদ্দীন আহমদ সাহেবের ওখানে গেলাম। বেলা ১২টা পর্যন্ত অপ্রয়ােজনীয় বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে আলাপ করলাম এবং তারপর বের হয়ে যােগীনগর ফিরে এলাম। পুরো বিকেল যুবলীগ অফিসে রইলাম। বাইরে বের হলাম না। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : দিনের বেলায় আকাশ কম-বেশি পরিষ্কার। বিকেলে একেবার হালকা এক পশলা বৃষ্টি এবং রাতের শেষ অর্ধভাগে মাঝারি বৃষ্টি হলাে। সহনীয় উষ্ণ পরিবেশ। ২৫.৮.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৭টায় কামরুদ্দীন আহমদের ওখানে গেলাম। মফিজউদ্দীনের জন্য ক্ষতিপূরণের মামলার আরজির খসড়া প্রস্তুত করলাম। সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে এলাম। তবে কোর্ট ফি না দিতে পারায় আমার মামলা রুজু করতে পারলাম না। ট্রেজারি ইস্যুকৃত চালান গৃহীত না হওয়ায় কোর্ট ফি জমা দিতে পারলাম । যােগীনগর ফিরলাম বেলা ২টায়।
দিনের অবশিষ্ট সময় বাসায় রইলাম। ইমাদুল্লাহ অফিসে এলেন সন্ধ্যায়। মফিজউদ্দীনের মামলার আরজির খসড়া টাইপ করলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দিনের দ্বিতীয় ভাগ ও তৃতীয় ভাগে হালকা বৃষ্টি এবং রাত ১০টার পর
মাঝারি বৃষ্টি হলাে। রাতে বৃষ্টিস্নাত পরিবেশ ও বৃষ্টি ঝরায় তা অব্যাহত থাকল। | বি. দ্র. ২৩.৮.৫২ তারিখে পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক মুসলিম লীগের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভাপতি এন আনিস। সাধারণ সম্পাদক ফকির আবদুল মান্নান। সহ সভাপতি ঢাকার নবাব। ট্রেজারার এস এ সেলিম। যুগ্ম সম্পাদক শাহ আজিজুর রহমান ও দেওয়ান মঈনুদ্দিন। প্রচার সম্পাদক এ সাবির।।
২৬.৮.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টার দিকে সাদির মােক্তারের কাছে গেলাম। আমি তার কাছে টাকা চাইতে পারলাম না। যেহেতু তিনি নিজেই আমার কাছে তার দুরবস্থার কথা তুলে ধরলেন। চা খেয়ে সেখান থেকে বের হলাম। সকাল সাড়ে ৯টায় কামরুদ্দীন আহমদের ওখানে গেলাম। তার সঙ্গে দেখা হলাে না। সকাল ১১টায় আদালতে গেলাম । শামসুদ্দিন কেরানির মাধ্যমে স্টেট ব্যাংকে কোর্ট ফি জমা দিলাম। ওয়ারিস আলী সেখানে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। আক্কাস আলী এসডিও (উত্তর)-এর আদালতে এলেন তার মামলার ব্যাপারে। এসডিও (উত্তর) মামলাটি খারিজ করে দিলেন। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য কেউ উপস্থিত ছিল না। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বেলা আড়াইটার মধ্যে দুপুরের খাবার ইত্যাদি সেরে আবার আদালতে এলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বার লাইব্রেরিতে থাকলাম। এ সময় মামলার আরজির খসড়া টাইপিস্টকে দিয়ে টাইপ করিয়ে ঠিক করলাম। হাফিজ বেপারির বাড়িতে শামসু ও ওয়ারিস আলী; দুজনের কাছ থেকে ৫ টাকা করে নিলাম। ডা. করিমের সঙ্গে তাঁর ফার্মেসিতে দেখা করলাম। তারপর রাত ৯টায় ফিরলাম। আদালতে হামিদ ভূইয়া, কাদির ভূঁইয়া, নান্না মিয়া, মফিজ মাস্টার সাহেব, তরগাঁওয়ের শফি, শামসুল খান, সাহেদ আলী প্রমুখের সঙ্গে দেখা হলাে। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়।
১৭০
আবহাওয়া : দিনের প্রথম ভাগে হালকা বৃষ্টি হলাে। বেলা ৩টা থেকে প্রবল বৃষ্টি এবং তা অব্যাহত থাকল পরদিন সকাল পর্যন্ত। মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া। চলছে। ২৭.৮.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সকাল পৌনে ১১টায় আদালতে গেলাম। মফিজউদ্দীন বাড়ি থেকে এসেছে। মামলার আরজি ও ওকালতনামায় স্বাক্ষর করে বেলা ১২টা ১৮ মিনিটের ট্রেনে সে চলে গেল। পুরােটা দিন আদালতে রইলাম। কিন্তু আমার মামলা দায়ের করতে পারলাম না। কারণ, ট্রেজারি থেকে ইস্যু করা কোর্ট ফিতে ভুল ছিল। বিকেল ৫টায় এটি সংশােধন করলাম। কিন্তু তখন আদালতের সময় শেষ হয়ে গিয়েছে। ডা, করিমের সঙ্গে তার ফার্মেসিতে দেখা করে রাত ৮টায় যােগীনগর ফিরলাম। আদালতে শেখ মুজিব, কালু মন্ডল ও আরাে অনেকের সঙ্গে দেখা হলাে। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : বৃষ্টি অব্যাহত থাকল সকাল ১০টা পর্যন্ত। এরপর দিনে ও রাতে কোনাে বৃষ্টি হলাে না। উষ্ণ পরিবেশ, গােসল করতে পারিনি এবং দুপুরে খাওয়াও হয়নি। রাতে নিজাম আমার সঙ্গে খেল। ২৮,৭,৫২ -শ্রীপুরসকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে গেলাম। মামলার আরজিতে আদালতের এখতিয়ার উদ্ধৃত করার ক্ষেত্রে ভুল হওয়ায় দেরি হলাে। বেলা দেড়টা থেকে বেলা আড়াইটার মধ্যে ৬ষ্ঠ মুন্সেফ ও প্রথম সাব জজের আদালতে মামলাগুলাে রুজু করলাম। বেলা সাড়ে ৩টায় যােগীনগর ফিরলাম। বার লাইব্রেরিতে শহিদ সাহেব আমাকে জানালেন, দফতু ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। ডা. নুরুল হুদা বার লাইব্রেরিতে আমাকে ডেকে আলাপ করলেন। সকাল ৮টায় মাহমুদ আলী সাহেব যােগীনগরে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি সকাল ১০টায় আমার সঙ্গেই উঠলেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মালেক সাহেব আমার সঙ্গে দেখা করলেন; ঢাকা পৌরসভায় তার নিয়ােগের
যােগসূত্রে। তিনি আমাকে ঢাকা স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। সন্ধ্যা ৬টা ২৬ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম এবং রাতে পৌছলাম । হাসান মাস্টার ট্রেনের একই কামরায় ছিলেন। রাতের খাবার খেলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : মধ্য দুপুরে আধ ঘন্টা ধরে মাঝারি বৃষ্টিপাত। অবশিষ্ট দিন ও রাত বৃষ্টিশূন্য। রাতের আকাশ পুরােপুরি পরিষ্কার নয়। ২৯,৮.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টায় পােস্ট অফিসে গেলাম এবং ১০০ টাকা উঠালাম। সকাল প্রায় ১০টা পর্যন্ত স্কুলের অফিসে বলাই বাবুর সঙ্গে। এরপর দর্জির কাছ থেকে পায়জামা নিলাম ও চুল কাটালাম। বিকেল ৫টায় স্কুলের মাঠে গেলাম। বরমি ও এস এম হলের মধ্যে খেলা হলাে। এস এম হল ২-০তে জিতে গেল। আমি গােল বিচারকের দায়িত্ব পালন করলাম। রেফারি ছিলেন সুবােধ। ফজলুল হক মুসলিম হলের আহমদ, কুদরত, শওকত, হাফিজ আহমদ প্রমুখ। খেলায় অংশ নিল। মজিদ সাহেব সঙ্গে এসেছেন। হাসান মােড়ল ঢাকার সব খেলােয়াড় ও আমাকে তার গােডাউনে রসগােল্লা ও চা। দিয়ে আপ্যায়ন করালেন। রাত সাড়ে ৯টার ট্রেনে হলের উদ্দেশে ঢাকার টিম রওনা হলাে। আমি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ইসমাইল খানের দোকানের সামনে থামলাম। রাত ১০টা। পর্যন্ত বিবিধ বিষয়ে সেখানে আলাপ করলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায় । আবহাওয়া : দিনের শুরু উজ্জ্বল আলােয়। আকাশ পুরােপুরি পরিষ্কার এবং কোনাে বিঘ্ন ছাড়াই সূর্যের আলােতে আলােকিত উজ্জ্বল দিন। রাতেও আকাশ পরিষ্কার। সহনীয় তাপমাত্রা, আরামদায়ক পরিবেশ।
৩০,৮.৫২
-ঢাকা ও ফিরে আসাভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। ঢাকা স্টেশন পর্যন্ত। আমার সঙ্গে এলেন সাবেক ইন্সপেক্টর রুকুনুদ্দিন, এস আহমদ মন্ডল ও বরমির ফকির মান্নান। সকাল সাড়ে ১১টায় ডা, করিমকে ৪০ টাকা, মমতাজ মােক্তারকে ১৫ টাকা, শামসুকে ৫ টাকা ফিরিয়ে দিলাম। শামসুদ্দিন কেরানির কাছ থেকে প্রথম সাব জজের আদালতে আমার মামলাগুলাের নম্বর নিলাম। বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২৬ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুর রওনা হওয়া পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে রইলাম। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত সদরঘাটে কেনাকাটা করলাম। মালেক সাহেব আমাকে নাস্তা খাওয়ালেন ও পরে সদরঘাটে ডাব খাওয়ালেন। জনসন রােডে ইসলামিয়া রেস্তোরায় আমি তাকে দুপুরে খাওয়ালাম। যােগীনগর যাওয়ার জন্য সময় বের করতে পারলাম না। আদালতে জমির, জহির প্রমুখের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কিন্তু কামরুদ্দীন আহমদ প্রমুখের সঙ্গে দেখা হয়নি। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে সঙ্গে নিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য প্রথম মুন্সেফ সি এফ করিমের ওখানে গেলাম। তিনি বদলি হয়ে যাচ্ছেন। রাত সােয়া ৮টায় শ্রীপুর পৌছলাম। ফজলুল হক মুসলিম হলের সালাম ময়মনসিংহে যাওয়ার পথে আমার সঙ্গে একই ট্রেনে ছিলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১টায়। আবহাওয়া : সূর্যের আলােতে পরিষ্কার দিন। উষ্ণ পরিবেশ। সূর্যাস্তের পর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠল এবং গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলাে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিক থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আকাশ মেঘাচ্ছন্নই রইল।
৩১.৮.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা দিতে আমি খুব সকালে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু স্যুটকেসে হাত দিয়ে বুঝতে পারলাম সেটির তালা ভাঙা এবং কেউ আমার টুপি। নিয়েছে। আমি খুবই মর্মাহত হলাম । কালু মােড়লের ছেলে রফি ছাড়া কেউ এ কাজ করেনি। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অহমদকে সঙ্গে নিয়ে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের বাড়িতে রইলাম। বেলা ৩টায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। দুলু, আবদুল মােড়ল, কুশদির শামসুদ্দিন খান ট্রেন থেকে নেমেই আমার সঙ্গে রওনা দিয়ে একেবারে শেষ পর্যন্ত আমার সঙ্গে এলেন। ৪টার দিকে বাড়ি পৌছলাম। রাতে আক্কাস আলী ও পরে ওয়ারিস আলী আমার সঙ্গে দেখা করলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১টায়। আবহাওয়া : সকাল বেলাটা উজ্জ্বল। উষ্ণ পরিবেশ। বাতাসে জলীয়বাষ্প। রাতে খুবই হালকা বৃষ্টি। বি. দ্র. : ১। প্রতি মণ পাটের মূল্য ৬ টাকা থেকে ১০-১২ টাকার মধ্যে ওঠানামা
করছে। ২। ধানের মূল্য প্রতি মণ ১৪ থেকে ১৫ টাকা এবং প্রতি মণ চালের মূল্য ২৫ থেকে ২৬ টাকা। ঢাকায় ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সুপার সম্মেলনে সরকারের তুলে ধরা নীতি কোনােভাবেই পাটের দরে পরিবর্তন আনতে পারল । অত্যধিক আগাম বৃষ্টি আউশ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি এবং ভাদ্রের প্রথম ভাগে কার্যত ধরা জমিতে চারা রােপণ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। ইতােমধ্যে রােপিত চারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামনে বিষন্ন দিন অপেক্ষা করছে।
১ সেপ্টেম্বর, সােমবার ঈদুল আজহা ভাের ৫টায় উঠেছি। নাস্তার পর ঈদের জামাতে গেলাম। আমাদের উপস্থিতির পর সকাল ১০টার দিকে নামাজ অনুষ্ঠিত হলাে। বেলা ১টার দিকে কোরবানির মাঠে গেলাম। ২৪টি গরু, ১টি মহিষ ও ১টি ছাগল কোরবানি দেওয়া হয়েছে। কাজ শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সবাই মাঠ ত্যাগ করল। আৰু মােড়ল তার জীবনে প্রথমবারের মতাে সমস্ত লােকজনের সঙ্গে কোরবানির মাঠে হাজির ছিলেন। আবদুল খান, সবেদ আলী দফাদার, জব্বার ও আমি আক্কাস আলীর সঙ্গে তার বাবার বাড়িতে গেলাম। আক্কাস আলী ও তার বাবার মধ্যে চলা বিরােধের নিষ্পত্তি করার জন্য। আমার জীবনে এবারই প্রথম আমি এই বাড়িতে এসেছি। এমনকি এ পাড়াতে আমি কখনাে হাঁটতে হাঁটতেও আসিনি। তবে শুধুমাত্র একবার চৌরাপাড়ার মেহের আলী ও অন্যান্য লােকজনের সঙ্গে এসেছিলাম। সেদিন বাঘকে তাড়া করা হয়েছিল। ওইদিন বৃষ্টির কারণে বাঘ হুট করে মাজির বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাড়িতে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দিন ও রাতে প্রচণ্ড গরম। বিকেলে হালকা বৃষ্টি হলাে। আকাশ আংশিক মেঘলা। বাতাসে জলীয় বাষ্প। সকালে নজু মামা, বরু প্রমুখ এবং জামাতের পর খেয়া ঘাটের মাঝি, ওয়ারিস আলী প্রমুখ।
১৭৫
খাবার খেল। রাতে বৈঠকখানায় আমাদের ভৃত্য সেকেন্দার ও সােবহানসহ আমরা সবাই এক সঙ্গে বসে খাবার খেলাম।
২.৯.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। সকালে তুফানিয়া, রজব আলী, বারু, ওয়ারিস আলী, মন্নাফ প্রমুখ এলেন। গােসিঙ্গার আসমত এবং ওয়ারিস আলী ও মন্নাফ আমার সঙ্গে নাস্তা করলেন। তারপর তারা চলে গেলেন। কটেরটেকের তাহের আলী, হাইলজোরের মমতাজ আলী, বরু প্রমুখ আমাদের বাড়িতে দুপুরে খেলেন। সন্ধ্যায় বক্তারবাড়ির ধানখেতে বসলাম। ওখানে হাফি ঘাসের ওপর দিয়ে মই দিচ্ছিল। আহমদ বেপারি সেখানে আমার সঙ্গে যােগ দিলেন এবং ঘন্টাখানেক কথা বললেন। রাত ৮টার দিকে ওয়ারিস আলী, জব্বার আলী, আমির ও সাহারকে সঙ্গে নিয়ে তুফানিয়ার বাড়িতে গেলাম। সেখানে খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরলাম রাত ১১টার দিকে। তারপর বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সারাক্ষণ গরম পরিবেশ। সরাদিন ও রাতে বৃষ্টির কোনাে চিহ্ন দেখা গেল না। ৩৯.৫২ ভাের ৬টায় উঠেছি। সকাল ৯টার দিকে হাকিম মিয়া এলেন। তিনি আমার সঙ্গে নাস্তা করলেন। আমি তাকে ফরেস্টার অসিমউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার বিষয়টি বললাম। তিনি মামলার ঝক্কি-ঝামেলায় যেতে রাজি নন। সকাল ১১টার দিকে তিনি চলে গেলেন। হারা জোগাল আমাদের জমিতে চারা রােপণ করল। কটেরটেকের জব্বার ও তার লােকেরা এল না। তবে গফুর আলী এল। আজ দুপুরে আমাদের ভৃত্য ইয়াকুব আলী রুটি ও মহিষের রান্না করা মাংস নিয়ে আড়ালে গেল।
বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : পুরােপুরি শুকনাে আবহাওয়া। আকাশে কোনাে মেঘ নেই। গরম। পরিবেশ।
৪.৯,৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকালে আবদুল খানের বাড়িতে গেলাম। তার সঙ্গে বর্তমান রাজনীতি নিয়ে আলাপ করলাম। নাস্তা খেলাম এবং সকাল ১০টার দিকে বেরিয়ে এলাম। চৌকিদার বাড়ি ঘুরে ওয়ারিস আলীর বাড়ি পর্যন্ত গেলাম। তবে ওয়ারিস বাড়িতে ছিল না। আক্কাস আলী আমার সঙ্গে দেখা করে জানাল কটেরটেকের জব্বার আকবর আলীর দলে যােগ দিতে যাচ্ছে। বাড়িতে ফিরে দেওনার সাইদ আলীকে পেলাম। তাকে তার ভাড়া ৬১৩ টাকা, এমও রিসিট নং ৪১৮ শ্রীপুর, তারিখ ০২.০৮.৫২-এর মাধ্যমে দিলাম। তারপর তিনি চলে গেলেন। বিকেলে আমার কাছে সবেদ আলী দফাদার এলেন। তিনি গ্রামের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে কথা বললেন। বিশেষ করে আশরাফ আলী মৌলবি ও আবদুল খান প্রসঙ্গে। এর কিছুক্ষণ পর কটেরটেকের কুদুস, হাইলজোরের আনসার আলী ও আবদুল খান এসে আমাদের সঙ্গে বসলেন। সন্ধ্যায় সবাই চলে গেলেন। রাতে এলেন জব্বার, জাহের আলী মাঝি, আক্কাস আলী, ওয়ারিস আলী, আবদুল খান ও গফুর আলী। তারা গ্রামের বর্তমান ঘটনাবলি নিয়ে আলাপ। করলেন। এই প্রসঙ্গে তারা আবদুল খানের সঙ্গে টুকুর চরের জমি নিয়ে বিরােধ, জুম্মা মসজিদের নির্মাণ এবং লােকজনের মধ্যে চলা নানা গুঞ্জন নিয়েও কথা বললেন। রাতের শেষভাগে তারা চলে গেলেন। আমি তাদেরকে করম আলী ও মৌলবি আশরাফ আলী প্রমুখের মধ্যে আপােসরফায় পৌছাতে কাজ করার জন্য বললাম। বিছানায় গেলাম রাত ২টায়। আবহাওয়া : বিকেলে হালকা এক পশলা বৃষ্টি। সন্ধ্যায় মাঝারি বৃষ্টিপাত। ভোের। রাত থেকে ভালাে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
৫.৯.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। বেপারি বাড়ি মসজিদে জুমার নামাজে অংশ নিলাম । ওয়ারিস আলীর বাড়িতে দুপুরে খেলাম। ওয়ারিস আলীর চেষ্টা সত্ত্বেও দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য আবদুল খানকে খুঁজে পাওয়া গেল না। খাবারের পর বাড়িতে এলাম। বড়হরের মিয়ারউদ্দিনকে আমি ডেকে পাঠিয়েছিলাম; তিনি এলেন বিকেলে। আমি তাকে রমিজার মায়ের আচরণের ব্যাপারে জানালাম এবং তাকে অনুরােধ করলাম বিষয়টির সুরাহা করার জন্য। তিনি রমিজার মাকে তার ব্যবহারের জন্য কড়াভাবে সতর্ক করলেন এবং তাকে বললেন, আমাদের বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার জন্য; যদি সে একেই সর্বোত্তম মনে করে। সন্ধ্যায় হাকিম মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে জাফর মােড়লের বাড়িতে একটি সভায় যােগ দিলাম। সাহাবিদ্যারকোটে একটি প্রাইমারি স্কুল চালু করা প্রসঙ্গে এই সভা ডাকা হয়েছে। সবেদ আলী দফাদার, চৌরাপাড়ার মজিদ, আলীমের ছেলে, ওয়ারিস আলী ও অন্য আরাে ১০ জন লােক উপস্থিত ছিলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ি ফিরলাম। আমসু ও আমি আবদুল খানের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। মৌলবি ও অন্যদের বিরুদ্ধে করম আলীর মামলার ব্যাপারে আমি তাদের পরামর্শ দিলাম। আমি আমসু ও ওয়ারিস আলীকে আরাে বললাম, মৌলবি প্রমুখকে বর্তমানে তারা যেভাবে সহায়তা করছে সেভাবে সহায়তা না করার জন্য। আমি তাদেরকে এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করলাম। তারা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিলেন; আমার কথা মেনে চলার। সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে হেলাল মিয়া, দিগধার ভাইসাহেব এসেছেন। এই দুজন, হাকিম মিয়া ও আমি একসঙ্গে রাতের খাবার খেলাম। বিছানায় গেলাত রাত ১০টার দিকে। আবহাওয়া : সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি হলাে। বেশ ভালাে বৃষ্টি। ধান চাষের জন্য
জমি প্রস্তুত হলাে। মধ্য দুপুরে বিরতিসহ খুব অল্প সময়ের জন্য হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছাড়া অবশিষ্ট দিন বৃষ্টিশূন্য। রাতের প্রথম ভাগে আকাশ পরিষ্কার। রাতের শেষভাগে মুষলধারে বৃষ্টি হলাে এবং ভাের প্রায় সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কম মাত্রায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকল।
৬.৯.৫২
-ঢাকাভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সকালে হাকিম মিয়াকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলাম। সকাল ৮টা ২২ মিনিটের ঢাকায় যাওয়ার ট্রেন পেলাম। আদালতে যাওয়ার পথে কেমব্রিজ ফার্মেসিতে ডা, করিমের কাছে আমার শেরওয়ানি ধােয়ার জন্য রেখে সােজা গেলাম আদালতে। আমার সঙ্গে ট্রেনের একই কামরায় ফরেস্টার জেড হক, ইদ্রিস গার্ড প্রমুখ এসেছেন। আমি কলা কিনেছিলাম এবং আমরা সবাই সেটা খেয়েছি। বিকেল ৫টা পর্যন্ত এসডিও উত্তরের আদালতে ছিলাম। হাকিম মিয়ার মামলা সিদ্দিক সাহেবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমি ওখানে সকলের জন্য নতুন জামানতনামার আবেদন জানালাম। ফরেস্টার ফনী বাবু আমাকে ও হাকিম মিয়াকে মিষ্টি খাওয়ালেন। আমরা মুসলিম লীগের রাজনৈতিক ধারা, বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ভবিষ্যৎ ও এর বিপরীতে অন্যান্য প্রদেশ, বিশেষ করে পূর্ব বাংলা এবং টঙ্গীর আবদুল হাকিমের সঙ্গে ফজলুর রহমান সাহেবের সম্ভাব্য ভূমিকা ও অবস্থানের ব্যাপারে কথা বললাম। বিকেল ৫টায় আদালত চত্বরে জয়দেবপুরের নবাব আলীকে পেলাম। তার সঙ্গে বিকেল ৫টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত নিজ নিজ স্কুল ও নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আলাপ করলাম। সন্ধ্যা সােয়া ৬টায় ৩০/১ পাতলা খান লেনে ইজ্জত আলী। সরকারের বাড়িতে গেলাম। সেখানে গােসল করলাম। আমি আর বাইরে গেলাম।
ওখানেই হাকিম মিয়া, মফিজউদ্দীন সিকদার, নারায়ণপুরের এ গনি ও ইজ্জত আলীর ছেলে শরাফতের সঙ্গে রাতে থেকে গেলাম। রাতে খাবার খেলাম না। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৮টায়। আবহাওয়া : উষ্ণ পরিবেশ। কোনাে বৃষ্টি নেই।
৭.৯.৫২
-শ্রীপুরগভীর রাত ৩টায় উঠেছি। হাকিম মিয়া ও মফিজউদ্দীন সিকদারকে সঙ্গে নিয়ে ভাের ৫টা ৫ মিনিটের ট্রেনে। শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। ঈদের ছুটির পর আজ থেকে স্কুল পুনরায় খুলেছে। সারাদিন আমাকে কোনাে খাবার দেওয়া হলাে না। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। রাত ৯টায় হাকিম মিয়া আমাকে এস আহমদ মন্ডলের বাড়িতে নিয়ে গেল। রাত ১০টার দিকে হাকিম, এস আহমদ, নিয়ামতের বাবা ও অন্য আরেক জনকে নিয়ে রাতের খাবার খেলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : উষ্ণ ও শুষ্ক।
সকাল ৭টায় উঠেছি। সালেহ আহমদ মন্ডলের বাড়িতে হাকিম মিয়ার সঙ্গে নাস্তা সেরে সকাল সাড়ে ৯টায় আমার আবাসস্থল কালু মন্ডলের বাড়িতে ফিরলাম। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম। বাের্ডিং হাউসে রাতের খাবার খেয়ে রাত সাড়ে ৯টায় ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : গরম এবং শুকনাে পরিবেশ।
আজ থেকে বাের্ডিং হাউসে আমার খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
১৮০
সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত স্কুলে ছিলাম । বেলা দেড়টায় স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হলাে। স্কুলের অফিসে রইলাম বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সন্ধ্যায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, প্রাক্তন ইন্সপেক্টর, পােস্ট মাস্টার, স্টেশন মাস্টার, শুষ্ক ও আবগারি বিভাগের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট এ আর তালুকদারকে সঙ্গে নিয়ে রেলওয়ে প্লাটফর্মে হাঁটাহাঁটি করলাম প্রায় ৭টা পর্যন্ত। এরপর সবাইকে নিয়ে ক্লাবে রইলাম রাত ৮টা পর্যন্ত। পােস্ট মাস্টার কালীপদ ও এ আর তালুকদার গান পরিবেশন করে আমাদের নির্মল আনন্দ দিলেন। বাের্ডিং হাউসে রাতের খাবার খেয়ে ফিরলাম রাত সাড়ে ৮টার দিকে। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : পরিষ্কার দিন। সমস্ত দিন ও রাতে ঘাম ঝরানাে গরম। আজ বছরের উষ্ণতম দিনগুলাের একটি। রাত ৮টার দিক থেকে আকাশে বিদ্যুতের চমক। রাতের শেষভাগে ভারী বৃষ্টিপাত। মাঠ-ঘাট ডুবে গিয়েছে। বৃষ্টি চলছে। ১০.৯.৫২ ভাের সাড়ে ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত স্কুলে। বাের্ড সেক্রেটারির জবাব দিতে অফিসে রইলাম বিকেল ৫টা পর্যন্ত। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে রইলাম। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে পাশা খেললাম। রাতের খাবার খেয়ে ফিরলাম রাত ৯টার দিকে। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হলাে এবং আবার সূর্যাস্তের পর থেকে বৃষ্টি পড়ছে। সারাদিন আকাশ মেঘলা। ঝড়াে বাতাসের সঙ্গে রাত আবির্ভূত হলাে বিষন্ন মূর্তি নিয়ে। রাতে ঠাণ্ডা পরিবেশ। বৃষ্টি পড়ছে।
১১.৯.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। কায়েদে আযমের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্কুল বন্ধ। সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ১০টা এবং আবার বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা সােয়া ৬টা পর্যন্ত স্কুলের অফিসে বসে দ্বিতীয় টার্মিনাল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করলাম। বেলা ১১টার দিকে ইসমাইল খানের দোকানে বসে এখন সিডি হােমে থাকা এক শরণার্থীর জন্য একটি দরখাস্ত লিখলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। কায়েদে আযমের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথমে ক্লাবে একটি সভা অনুষ্ঠিত হলাে। এরপর প্রস্তাবিত বালিকা বিদ্যালয় নিয়ে আলােচনা হলাে। তারপর দাবা খেললাম। সেকেন্ড এসআই, রেঞ্জার, ভেটেরিনরি ডাক্তার, ফরেস্টার জেড হক, উষা, সুবােধ। ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। বাের্ডিং হাউসে রাতের খাবার খেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : আকাশ এখনাে মেঘলা। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। তবে সকালের আগ
পর্যন্ত কোনাে বৃষ্টি হলাে না। সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলাে। নমনীয় পরিবেশ। ১২.৯.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত হাসান মন্ডলের সঙ্গে তার গােডাউনে বসে কথা বললাম। তিনি আমাকে চা খাওয়ালেন। আমি তাকে বললাম এম ই স্কুলের হিসাবপত্র চুকিয়ে দেওয়ার জন্য। তিনি আমাকে কথা দিলেন আগামী সােমবার বা মঙ্গলবার আমার সঙ্গে বসবেন। বেলা ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত স্কুলের অফিসে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গােসিঙ্গা ও মুলাইদের মধ্যে অনুষ্ঠিত ফুটবল প্রতিযােগিতা দেখলাম। খেলা ড্র হলাে। সন্ধ্যা ৭টায় রেলওয়ে স্টেশনের সামনে ওসি সাহেব, সেকেন্ড অফিসার, তিন স্টেশন মাস্টার, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, আবগারি ইন্সপেক্টর, ডা. আহসানউদ্দিন প্রমুখ আমাকে রসগােল্লা খাওয়ালেন।
সন্ধ্যা সােয়া ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। নাটকের জন্য পরীক্ষামূলক কুশীলব বাছাই করা হলাে। রাতের খাবার খেলাম এবং ফিরলাম রাত ১০টার দিকে। হাইলজোরের আনসার আলী দুপুর ১২টার দিকে একটি মেডিকেল সার্টিফিকেটের জন্য আমার কাছে এসেছিলেন। কিন্তু আমি ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে তাকে সহায়তা করতে অস্বীকার করলাম। তিনি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চলে গেলেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সিডি হােমের শরণার্থী সবদর আলীকে ডিএম এসডিও (উত্তর) এবং ত্রাণমন্ত্রীর ঠিকানা লিখে দিলাম। তারপর বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এবং অল্প সময়ের জন্য সকাল ১০টার দিকে। মাঝারি এক পশলা বৃষ্টি হলাে। এরপর কোনাে বৃষ্টি হলাে না। আকাশ পুরােপুরি পরিষ্কার, নমনীয় পরিবেশ।
১৩.৯.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত স্কুলে। স্কুল অফিসে একবার ছিলাম সকাল সাড়ে ৬টা থেকে এবং পরে দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। সকাল সাড়ে ১০টায় ডিএবির এসআই সেলিম স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের অফিসে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। আমি তাকে স্বাক্ষর জাল সংক্রান্ত নুরুজ্জামান সাহেবের দুটি চিঠি দিলাম। তিনি আমাকে জানালেন, বিশ্বাসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এ মাসের ১৫ তারিখে আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শানাের। অন্যথায় তাকে গ্রেফতার করা হবে। এ ছাড়াও ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট ৩-৪ দিনের মধ্যেই আসছেন মামলাটি তদারকি করার জন্য। তিনি বিশ্বাসকে স্টেশনে ডেকে পাঠালেন। দুপুর ২টার ট্রেনে তিনি। চলে গেলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায় । আবহাওয়া : দিনের বেলা আকাশ কম-বেশি পরিষ্কার। রাতে পুরােপুরি পরিষ্কার ।
রাতে অসহনীয় গরম। ভাের হওয়ার আগ পর্যন্ত তাপদাহ অব্যাহত থাকল।
১৪,৯.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্কুলে। আজ থেকে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা শুরু হলাে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। অসিমউদ্দিনের ওপর সমন জারি করতে এক সমন জারিকারী এসেছিলেন। আমি তাকে বাের্ডিং হাউসে খাবার খাওয়ালাম ও সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : মধ্য দুপুরে প্রবল বৃষ্টিপাত হলাে। অবশিষ্ট দিন ও রাতে আকাশ কম বেশি পরিষ্কার। দিনে ও রাতে প্রচণ্ড গরম।
১৫.৯.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। স্কুলে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সমন জারিকারী আবদুল আজিজ ভূইয়াকে (নম্বর ১৯) সকাল ৮টা ১৪ মিনিটের ট্রেনে রাজেন্দ্রপুর পাঠানাে হলাে। গাজীপুরের আফসারউদ্দীন মাস্টার ও দেওয়ান বিসুকে সাক্ষি করা হলাে। নসু এবং শাহেদ আলী সরকারের ছেলে আরশাদ আলীকে অনুরােধ জানানাে হলাে সহায়তা করার জন্য। বিকেল সাড়ে ৫টার দিক থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে পাশা খেললাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : আকাশ পরিষ্কার। দিন ও রাতে প্রচন্ড গরম। ১. ধান ও চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি মণ ধান ১৬ টাকা। প্রতি মণ চাল ২৮ থেকে ৩০ টাকা। | ২. পাট বাজারের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা আবার পড়ে গেল। প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১২ টাকায়। লােকজন ১৯৫০ সালের আতঙ্কের কথা স্মরণ করছে। দুই মণ পাট বিক্রি করেও গড়ে এক মণ ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
১৬.৯.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। স্কুলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। আবার স্কুলের অফিসে রাত সাড়ে ৯টা থেকে সােয়া ১১টা পর্যন্ত। ক্লাবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ৭টার আপ ট্রেন আসার সময় স্টেশনে উপস্থিত হয়ে হাসান মন্ডলকে ধরলাম। তিনি রাজেন্দ্রপুরে গিয়েছিলেন; তার বাড়িতে গত রাতে চুরির একটি এজাহার দায়ের করতে। ফিরলাম সকাল ১০টায়। এরই মধ্যে সেকেন্ড এসআই মােরালি পালের বাড়িতে ময়দা সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করলেন। আজ সকালে মােরালি পালের ছেলে। বলাইকে কালু মন্ডল গ্রেপ্তার করেছেন। মন্ডলদের সবাই ছাড়াও ধনাই বেপারি ও অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এসবের সমাপ্তির পর আমি হাসান মন্ডলকে বেলা ১২টায়। স্কুলে নিয়ে গেলাম এবং তার সঙ্গে আধ ঘন্টা ধরে কাজ করলাম। তারপর তিনি। চলে গেলেন। ওষুধ নেওয়ার পর দফতু সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমার সঙ্গে ইসমাইল খানের। দোকানের সামনে দেখা করল এবং তারপর চলে গেল। সন্ধ্যায় গােসিঙ্গা ও মুলাইদের মধ্যে ফুটবল প্রতিযােগিতা অনুষ্ঠিত হলাে। শেষ মুহূর্তে গােসিঙ্গা ১-০ গােলে জিতে গেল। বেলা আড়াইটার দিকে করম আলী অল্প সময়ের জন্য আমার সঙ্গে দেখা করলেন। তার মামলার বিষয়ে আমি ঢাকা যেতে। অপারগতা প্রকাশ করলাম। হাকিম মিয়া আজ সন্ধ্যায় দেখা করেছেন। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১১টায়। আবহাওয়া : বিকেলে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল, কিন্তু রাতে পরিষ্কার হয়ে গেল। গরম পরিবেশ, বিশেষ করে সন্ধ্যায়। তবে রাত ১১টার পর পরিবেশ নমনীয় হয়ে এল। ১৭.৯.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্কুলে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। কালীপদ দে এলেন। তার সঙ্গে কালু মন্ডলের কার্যক্রম নিয়ে কথা বললাম। কালীপদ চলে যাওয়ার পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বলাই বাবু এসে উপস্থিত।
১৮৫
হলেন। ঢাকায় যাওয়ার পথে বেলা সাড়ে ১২টায় ইজ্জত আলী সরকার আমার সঙ্গে অফিসে দেখা করলেন। আমি তাকে বললাম এ বছর তার ছেলের পরীক্ষা দেওয়া উচিত হবে না; তারপরও তিনি তার ছেলেকে পরীক্ষা দেওয়ানাের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলেন। বেলা দেড়টায় তিনি চলে গেলেন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। আহমদ এসেছে। শরৎকাল উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ । বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সময়টুকু ছাড়া আজকে গরমের প্রচণ্ডতা অপেক্ষাকৃত কম। বেলা ১টার দিকে খুবই স্বল্প সময়ের জন্য নামমাত্র বৃষ্টি হলাে। অবশিষ্ট সময়ে আকাশ কম-বেশি পরিষ্কার। ১৮,৯.৫২ -ঢাকাভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। আজই ঢাকা যাওয়ার জন্য লাল মিয়ার মাধ্যমে হাকিম মিয়ার কাছ থেকে একটি চিঠি পেলাম। সকাল ৮টা ১৪ মিনিটের ট্রেনে রওনা হলাম। সালেহ আহমদ তার সঙ্গে রিকশায় আমাকে আদালতে নিয়ে গেলেন। সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত সিএসপি সিদ্দিকীর আদালতে ছিলাম। যে ধারার অধীনে সমন জারি করা হয়েছিল তা যথাযথ না হওয়ায় হাকিম মিয়ার মামলা এসডিও (উত্তর)-এর আদালতে ফেরত পাঠানাে হলাে। অসিমউদ্দিন, আসিরুদ্দিন, ফনী ধর, ইদ্রিস গার্ড ও ময়েজউদ্দিন গার্ড উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা ৭টায় তাদের সবার সঙ্গে প্যারামাউন্টে লাচ্ছি খেলাম। তারপর আমরা যে যার মতাে চলে গেলাম। সাদিরের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করলাম; হাকিমের মামলাটি এসডিও (উত্তর)-এর আদালতে ফেরত পাঠানাের জন্য কী করা উচিত তা নির্ধারণ করার জন্য। তিনি আমাকে পরামর্শ দিলেন নতুন করে সমন জারি পর্যন্ত অপেক্ষা করার। রাতে ইজ্জত আলী সরকারের বাসায় রইলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দিনের প্রথম ভাগে হালকা বৃষ্টি। অবশিষ্ট দিন ও রাতে বৃষ্টি হয়নি। সহনীয় উষ্ণ পরিবেশ। ১৯.৯.৫২
শ্রীপুরগভীর রাত ৩টায় উঠেছি। শহিদ ও মফিজউদ্দীন সিকদারকে সঙ্গে নিয়ে ভাের ৫টা ৫ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুর ফিরে এলাম। শ্রীপুর পেীছে তারা তাদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের ওখানে ছিলাম। ওখানেই গােসল সেরে দুপুরের খাবার খেলাম। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ওখানে আফসু এল। আমাদের সঙ্গে সে পিঠা খেল। আফসু আমাকে জানাল আগামীকাল রামনাথ রায়ের বন ভূমিসহ বিক্রি হবে। আমি তাকে নির্দেশনা দিলাম। মফিজউদ্দীনকে বলার জন্য যে, সে যেন আমাদের বলধা বনের লাগােয়া এবং দরদরিয়া বাজারের উত্তরের লাগােয়া বন কিনে রাখে। বিকেল ৫টার দিকে আফসু চলে গেল। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। হাকিম মিয়া ঢাকা থেকে ফিরলেন। তিনি পৌছেই রাত সাড়ে ৮টায় আমার সঙ্গে স্টেশনে দেখা করলেন। তার পিটিশনের ব্যাপারে ডিএফওর প্রধান কেরানির কাছ থেকে তিনি কোনাে খোঁজ বের করতে পারেননি। সেকেন্ড এসআই-এর ভৃত্য শুকুর স্টেশনের কাছের জলাধারে একটি রুই মাছ ধরেছে। স্টেশন মাস্টার ইদ্রিস তখুনি সেটি সরিয়ে নিলেন। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : সারাদিনই মেঘলা পরিবেশ। দিনের মধ্যভাগে মাঝারি বৃষ্টিপাত। রাতে আকাশ পরিষ্কার। নমনীয় পরিবেশ। ২০.৯.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। মহররম মাসের ১ম দিন উপলক্ষে স্কুল বন্ধ। সকাল ৭টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পড়াশােনা করলাম। রেলের এক পয়েন্টসম্যান রামানি আমার কাছে এল। সে বর্ণনা করল, কীভাবে স্টেশন মাস্টার। ইদ্রিসের অনুরােধে সরদার ও তার দলের অন্যান্যরা তাকে মিথ্যা অভিযােগে।
হয়রানি করছে। সে আমাকে অনুরােধ করল একটি দরখাস্ত লিখে দেওয়ার জন্য। সকাল সাড়ে ১০টায় সে চলে গেল। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্কুলের অফিসে ছিলাম। সেখানে নবার পালান ও আকরমতউল্লাহ আমার সঙ্গে দেখা করলেন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পােস্ট অফিসে। কালিপদ দের কর্মকাল বৃদ্ধির জন্য একটি দরখাস্ত লিখলাম। বাড়ির উদ্দেশে রওনা হওয়ার পথে বিকেল। সাড়ে ৫টার দিকে হাকিম মিয়া আমার সঙ্গে দেখা করলেন। বাের্ডিং হাউসে রাতের খাবার খেয়ে বাসস্থানে ফিরলাম রাত ১০টায়। তারপর বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : দিনের বেলা আকাশ মােটামুটি পরিষ্কার। কোনাে বৃষ্টি নেই। রােদ ঝলমলে দিন। প্রায় মধ্য রাত থেকে আকাশ মেঘলা হলেও বৃষ্টি নেই। নমনীয় পরিবেশ। ২১.৯.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্কুলে। সকাল ৯টায় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভা শুরু হলাে। শেষ হলাে বেলা ১টায়। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত স্কুল। অফিসে। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : বিকেল ৫টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলাে। অল্প অল্প বিরতি দিয়ে বৃষ্টি। অব্যাহত থাকল রাত ১০টা পর্যন্ত। এর মাঝে সন্ধ্যায় ছিল প্রবল বর্ষণ। পরিবেশ ঠান্ডা ও বাতাসসহ বিষন্ন। এ অবস্থা অব্যাহত। ২২.৯.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্কুলে। তার আগে স্কুল অফিসে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ছিলাম। স্কুলের পর আবার রাত ১০টা পর্যন্ত ছিলাম। অডিটের জন্য হিসাবপত্র তৈরি করায় সাইদ আলী পন্ডিত সাহেব এই গােটা সময় আমাকে
সহায়তা করলেন। দুপুরে ও রাতে তিনি আমার সঙ্গে খেলেন। রাত সাড়ে ১০টায় আমরা স্কুল থেকে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : সংক্ষিপ্ত বিরতি দিয়ে সারাদিনই প্রবল বৃষ্টিপাত। অথবা বলা যায় বর্ষণকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে পরিণত করার বিঘ্ন ছাড়া, সকাল ৯টা। থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অঝাের ধারা ঝরতে থাকল। এরপর আর বৃষ্টি হলাে না। পরিবেশ খুবই বিষন্ন। আজ সারাদিনের বৃষ্টির সময়টুকু ছিল ভালাে ঝড়াে বাতাসসহ প্রতিকূল আবহাওয়া। অবশিষ্ট রাতে আকাম কম-বেশি পরিষ্কার। ঠাণ্ডা পরিবেশ। ২৩.৮.৫২ -ঢাকাভাের ৫টায় উঠেছি। শরৎকাল উপলক্ষে আজ থেকে স্কুল বন্ধ। ৭.১০.৫২ তারিখে পুনরায় স্কুল খুলবে। সকাল ৮টা ১৪ মিনিটের ট্রেনে পণ্ডিতসাহেবকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। সকাল পৌনে ১১টার দিকে মির্জা এম হােসেন অ্যান্ড কোম্পানির অডিট অফিসে পৌছলাম। রাজেন্দ্রপুরে হাসান মন্ডল হিসাবপত্রসমূহ অনুমােদন করলেন। হাইলজোরের আনসার আলী ও মমতাজ আলী একই ট্রেনে ঢাকা এলেন। তারা অডিট অফিসে আমার পৌছানাে পর্যন্ত আমার জিনিসপত্র ধরায় আমাকে সহায়তা করলেন। সকাল সাড়ে ১১টায় অডিট কার্যক্রম শুরু হলাে এবং মােটামুটিভাবে শেষ হলাে বিকেল সাড়ে ৫টায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র অডিট সহকারী ছিলেন। তিনি তার এম কমের ১ম বর্ষের ক্লাস আমার সঙ্গে করেছেন আমার অনার্স তৃতীয় বর্ষের ক্লাসে। বেলা ১টার দিকে সাইদ আলী পণ্ডিত সাহেব আমার সঙ্গে অডিট অফিসে যােগ দিলেন। তিনি প্রথমে নারিন্দায় গিয়েছিলেন তার ওষুধের জন্য। সন্ধ্যা ৬টা ২৬ মিনিটের ট্রেনে তিনি শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলেন। আমি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এস এম হলে গেলাম। সেখানেই ১৭১ নম্বর রুমে মজিদ সাহেবের সঙ্গে রাতে থেকে গেলাম।রাতে এফ করিম সাহেব আমার সঙ্গে বসলেন এবং তার সময়ের হিসাবপত্রগুলাে হালনাগাদ করে তা অনুমােদন করলেন। আজকে গােসল করা হলাে না। পলাশি ব্যারাক (পূর্ব)-এর কাছে একটি রেস্তোরায় মজিদ সাহেব আমাকে রাতের খাবার খাওয়ালেন। ফরেস্টার মােসলেম উদ্দিন চৌধুরীও আমাদের সঙ্গে ছিলেন এবং তিনি রাতে একই রুমে রইলেন। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : দিনের শেষ ভাগের প্রথম অংশে প্রায় এক ঘন্টা ধরে মাঝারি ধরনের ভালাে বৃষ্টি হলাে। তারপর আর বৃষ্টি হয়নি। রাতে আকাশ মােটামুটি পরিষ্কার। নমনীয় পরিবেশ। ২৪.৯.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকালে পলাশি ব্যারাক (পশ্চিম)-এ একটি রেস্তোরায় শামসুল হক, মজিদ সাহেব, ফরেস্টার মােসলেম উদ্দিন চৌধুরী ও আমি নাস্তা করলাম। সকাল ১১টায় শামসুল হকের ওখানে গােসল করলাম। ৪২ নং রুমে আহমদের সঙ্গে দেখা করলাম। কিবরিয়াও সেই রুমে থাকে। হাসান মন্ডল ওখানে এলেন এবং বেলা ১টায় চলে গেলেন। বেলা দেড়টার দিকে মেডিকেল কলেজ হােস্টেলের কাছে একটি রেস্তোরায় কিবরিয়া আমাকে দুপুরের খাবার খাওয়াল। খাবারের পর আমি আদালতের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম। বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আদালতে রইলাম। সেখানে কাপাসিয়ার রশিদ, তরগাঁওয়ের শফিউদ্দীন, কুদরত আলী, আহমদ মাস্টার, মমতাজ, রেঞ্জার আসিরুদ্দিন প্রমুখকে পেলাম। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে এসডিও (উত্তর)-এর সঙ্গে দেখা করলাম। শ্রীপুর এইচ ই স্কুলের ব্যাপারে তিনি খোঁজখবর নিলেন। আমি তাকে এম বিশ্বাসের মামলার ব্যাপারে জানালাম। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করলেন, মামলার বর্তমান অবস্থা জানতে তিনি আগামীকাল এসআই সেলিমকে ডেকে পাঠাবেন। লােহাগাছের নিয়ামত আদালত চত্বরের কাছে একটি রেস্তোরায় আমার সঙ্গে বসলেন এবং ঘন্টাখানেক ধরে বেলা প্রায় সাড়ে ৩টা পর্যন্ত আলাপ করলেন। তিনি আমাকে এস আহমদ
১৯০
মন্ডলের মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনার কথা বললেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী এর জন্য দায়ী হাবিব। বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তারুলের ওয়াহাব আলী ও হারিস আমাকে তাদের বিরুদ্ধে করা বন বিভাগের মামলার নথিপত্র দেখালেন। লিবার্টি সিনেমা হল পর্যন্ত হেঁটে গেলাম। তারপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাসে করে এস এম হলে ফিরে এলাম। কাশেম সাহেবের সঙ্গে তার রুমে (৯৯) দেখা করলাম। তার সঙ্গে ঘন্টাখানেক আলাপ করলাম রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। তিনি ১৪ অক্টোবর ‘৫২ তারিখের পরে শ্রীপুর যেতে পারেন। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : বিকেল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে এক পশলা বৃষ্টি হলাে। দিনে ও রাতে আকাশ কম-বেশি পরিষ্কার। নমনীয় পরিবেশ। ২৫.৯.৫২ -শ্রীপুরভাের ৫টায় উঠেছি। আহমদের সঙ্গে তার রুমে দেখা করলাম। সে আমাকে নাস্তা খাওয়াল। সকাল ৯টায় হল থেকে বের হলাম। সােজা গেলাম কেমব্রিজ ফার্মেসিতে। ডা, করিম। আমাকে জানাল যুবলীগের ষান্মাসিক কাউন্সিল সভা অচিরেই অনুষ্ঠিত হতে পারে । আওয়ামী মুসলিম লীগ অফিসের সামনে ওয়াদুদকে পেলাম। তিনি আমাকে জানালেন আতাউর রহমান খান, শেখ মুজিব, মানিক মিয়া, ইউসুফ হাসান ও ‘যুগের দাবীর ইলিয়াস পিকিং শান্তি সম্মেলনে যােগ দিতে আজ সকাল সাড়ে ৯টার বিমানে রওনা হয়েছেন। ওদের অফিসে ওয়াদুদের সঙ্গে আমাদের (যুব লীগের) সঙ্গে আওয়ামী মুসলিম লীগের অবস্থানগত পার্থক্য নিয়ে আলাপ করলাম। সাংগঠনিক বিষয়ের পাশাপাশি মৌলিক নীতিগত দিক থেকে পার্থক্য আলাপে উঠে এল। উদাহরণস্বরূপ, মুসলিম লীগের সঙ্গে পাল্লা দিতে তাদের সাম্প্রদায়িক অবস্থান এবং অর্থনীতির মূল ভিত্তির ব্যাপারে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি। আফসু ও দফতুর জন্য হানিফ অ্যান্ড সন্স থেকে শার্টের কাপড় কিনলাম।
বেলা ১২টা ১৮ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুর পৌছলাম। তরগাঁওয়ের মােসলেমউদ্দিন ফকিরের হাতে শার্টের কাপড় পাঠিয়ে দিলাম। বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : সূর্যাস্তের পর আধ ঘন্টা ধরে প্রবল বৃষ্টিপাত । রাতে আকাশ মেঘলা। নমনীয় পরিবেশ। ২৬,৯,৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৯টার দিকে আমার কাছে সালেহ আহমদ মন্ডল এলেন। তিনি বললেন, তাকে কয়েকটি দরখাস্ত লিখে দিতে হবে। আমি তার ওপর খুব বিরক্ত হলাম। কারণ তিনি যখন তখন, সময়ে অসময়ে, আমাকে কিছু করতে বলেন এবং তারপর ঘুমিয়ে পড়েন। বেলা ১২টার দিকে বেরিয়ে পড়লাম। দুপুরের খাবার খাওয়ার পর বেলা আড়াইটার দিকে স্টেশন মাস্টার ইদ্রিস সাহেবের সঙ্গে বসলাম। তার সঙ্গে। ঘন্টাখানেক কথা বললাম। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে পাশা খেললাম। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ফরেস্ট টিম ও গােসিঙ্গা টিমের মধ্যে সেমিফাইনাল খেলাটি দেখতে পারলাম না। হালিম খানের ছেলে গেন্দু এসেছে ফরেস্ট টিমের পক্ষে খেলার জন্য। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : সারাদিন উজ্জ্বল সূর্যের আলাে। বিকেলে হঠাৎ করেই আকাশ মেঘে ছেয়ে গেল এবং বিকেল ৫টা থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত হলাে দেড় ঘন্টা ধরে। রাতে তারায় ভরা পরিষ্কার আকাশ।
২৮.৯.৫২
-বাড়িসকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের ওখানে গেলাম। ঘন্টাখানেক পর জেড হক ও সেকেন্ড অফিসার আমাদের সঙ্গে যােগ দিলেন। এক গােয়ালা স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের কাছে ঘি বিক্রি করেছিল ওজনে কম দিয়ে। আমরা তাকে ধরলাম। তার কাছ থেকে বাটখারাগুলাে রেখে বিদায় করে দেয়া হলাে। আমরা তিন জন স্টেশনে গেলাম। সহকারী স্টেশন মাস্টার হাকিম মিয়ার কাছ থেকে অভিযােগনামাটি নিয়ে তা দেখলাম। মৎস্য বিষয়ে এ অভিযােগনামাটি তৈরি করেছেন। স্টেশন মাস্টার ইদ্রিস। ওখানে চা খেলাম। ফিরলাম বেলা ১২টায়। বেলা ৩টার দিকে সাইকেলে বাড়ি আসতে আমি তৈরি ছিলাম। এই সময় ওয়ারিস আলী ও আইয়ুব আলীর সঙ্গে দেখা হলাে। বিকেল সাড়ে ৪টায় সাইকেল ছেড়ে তাদের সঙ্গে। পায়ে হেঁটে রওনা হলাম। তারা গিয়েছিল ফরেস্ট অফিসে। গােসিঙ্গা পৌছলাম সূর্যাস্তের পর। বাজারে আসমত, আনসার, আরশাদ আলী, রুস্তম আলী আকন্দের। সঙ্গে দেখা হলাে। ফকিরঘাটের মােসলেম খন্দকার আমাদের চা খাওয়ালেন। রাত ৮টার দিকে বাড়িতে পৌছলাম। আইয়ুব আলী বাড়ি গেল কুদুর সঙ্গে। আমরা যখন বাড়ি ফিরছিলাম তখন হকিম মিয়াকে পথে পেলাম। তিনি শ্রীপুর যাচ্ছিলেন। রেঞ্জার আসিরুদ্দিনের বিয়ে সংক্রান্ত ব্যাপারে শ্রীপুরে একদল লােক এসেছেন। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : রৌদ্রলােকিত দিন। রাতে আকাশ পরিষ্কার। নমনীয় পরিবেশ। ২৯.৯,৫২ -বেলাসীভাের ৫টায় উঠেছি। সকালে ওয়ারিস আলী, তার কিছুক্ষণ পরে কাগুর বাপ এলেন। ওয়ারিস আলী আমাকে জানলেন কুলু বাড়ির কাছে আমাদের জমিতে তারা ব্যক্তি মালিকানা ধরনের একটি স্কুল গড়ে তুলতে চান। আলাপ সেরে তারা সকাল ৯টার দিকে চলে গেলেন।
সকাল ১০টার দিকে রজব আলী ও আক্কা এলেন। আক্কা ঘন্টাখানেক কথা বলে। চলে গেলেন। বেলা ১টার দিকে রজব আলীকে সঙ্গে নিয়ে বেলাসীর উদ্দেশে রওনা হলাম। পথে হাইলজোরে ওয়াসি মােল্লার সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। বিকেল ৪টায় বেলাসীতে পৌছলাম। বিকেল ৫টার দিকে এফ প্রাইমারি স্কুলের পাশের ঈদগাহে সভা অনুষ্ঠিত হলাে । শেখেরগাঁওয়ের মওলানা জালাল উদ্দিন সভাপতিত্ব করলেন। মৌলবি জাহিরুল হক, দিঘধা মাদ্রাসার জনাব আশরাফ আলী, হাফিজপুরের মীর কুদরত উল্লাহ বক্তৃতা করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আমি বক্তব্য রাখার জন্য উঠে দাঁড়ালাম এবং শেষ করলাম রাত ৮টায় । আমি বর্তমান বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বললাম। রাত ১০টায় মওলানা জালাল উদ্দিন তার সমাপ্তি বক্তৃতার মাধ্যমে সভা শেষ করলেন। সভায় লােকসমাবেশ বেশ সন্তোষজনক। প্রায় এক হাজার। যদিও সভার ঠিক শুরুতে বৃষ্টি হুমকি সৃষ্টি করেছিল। সভাস্থলের কাছাকাছি জাবেদ আলী মুন্সির বাড়িতে অতিথিদের সবাই একসঙ্গে রাতের খাবার খেলাম। রাত দেড়টায় রজব আলীকে নিয়ে আমি রওনা হলাম এবং জহিরউদ্দিন সরকারের বাড়িতে রাতে থাকলাম। বিছানায় গেলাম রাত আড়াইটায়। আবহাওয়া : সারাদিন প্রখর রােদ থাকলেও বিকেলবেলায় হালকা বৃষ্টি হলাে কয়েক মিনিটের জন্য। অবশিষ্ট সময় বেশ ভালাে। চাঁদের আলােয় পরিষ্কার রাত। শেষ রাত পর্যন্ত গরম অনুভূত হলাে। ৩০.৯.৫২ সকাল ৭টায় উঠেছি। সকাল ৯টায় বেলাসীর জুনিয়র মাদ্রাসা পরিদর্শনে গেলাম। হিসাবপত্র রাখার পদ্ধতি ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখলাম। সংশ্লিষ্ট উপস্থিত কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিলাম কীভাবে অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া উচিত। জহিরউদ্দিন সরকারের বাড়িতে ফিরে এলাম বেলা ১টায়। সেখানে গােসল করে দুপুরের খাবার খেলাম। বেলা ৩টার দিকে বের হলাম। জহিরউদ্দিনের ছেলে আফতাবউদ্দিন আমাকে বলাকুনার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত এগিয়ে দিল। আফতাবউদ্দিন কিশােরগঞ্জ কলেজের আইকমের ছাত্র।
১৯৫
হাইলজোরে ফজির স্বামীর বাড়িতে কিছু সময়ের জন্য থামলাম। তারা আমাকে শরবত দিলেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওয়াসি মােল্লার বাড়িতে পৌছলাম। সেখানে পেীছে জানলাম সভায় যােগ দিতে তারা ইতােমধ্যেই বেরিয়ে পড়েছেন। গত রাত প্রায় নিঘুম থাকায় এবং আমার পায়ের আঙুলে ব্যথার ফলে আমি খুবই অস্বস্তিবােধ করছিলাম। এ কারণে আমি সভায় যােগ দিলাম না। রাতে প্রায় সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকলাম। রাতের খাবার খেলাম শিবপুরের মৌলবি ও ফরিদপুরের খন্দকারের সঙ্গে। ওখানে জড়াে হওয়া পাড়ার লােকজনের সঙ্গে আলাপ করলাম মধ্য রাত পর্যন্ত এবং তারপর বিছানায় গেলাম আবহাওয়া : প্রখর রােদ। বিকেলে আকাশে মেঘ জমা হলেও শেষ পর্যন্ত কোনাে বৃষ্টি হয়নি। চাঁদের আলােয় উজ্জ্বল রাত। মধ্য রাত পর্যন্ত উষ্ণ পরিবেশ।
১ অক্টোবর, বুধবার ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সকাল ৭টার দিকে রজব আলীকে সঙ্গে নিয়ে হাইলজোর ছাড়লাম। সেখান থেকে সােজা বাড়ি ফিরলাম। বাড়ি ফিরেই আড়ালের তালুইসাহেবকে পেলাম। তিনি আজ সকালে আমার ঠিক আগেই এসেছেন। তিনি থেকে গেলেন। আমি মধ্য দুপুরে মাঝেরটেকে গেলাম। সেখানে আমাদের ভৃত্যরা জঙ্গল পরিষ্কার করছিল প্রায় তিন ঘন্টা ধরে। সন্ধ্যায় হাজি বাড়ি ও বেপারি বাড়ির চারপাশে হেঁটে সূর্যাস্তের সময় বাড়িতে ফিরলাম। হাজি বাড়িতে নসুকে পেলাম। ঢাকায় যাওয়ার পথে সকাল ১০টার দিকে হারিস ও শাহদাত আলী পণ্ডিত আমার। সঙ্গে দেখা করলেন। তারা ঢাকায় যাচ্ছেন রেঞ্জারের বিরুদ্ধে তাদের মামলা প্রভৃতি বিষয়ে আলাপ করার উদ্দেশে। তারা ২০ মিনিটের মতাে ছিলেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হাকিম ভাইসাহেব শ্রীপুর ডিসপেনসারিতে যাওয়ার পথে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। দুলার চিকিৎসার ব্যাপারে তিনি যাচ্ছিলেন। দুলা ডিসপেনসারিতে গেছে দফতুকে সঙ্গে নিয়ে। আবহাওয়া : প্রখর রােদ এবং পরিষ্কার আকাশ। চাঁদের আলােয় ভরা উজ্জ্বল।
রাত। সহনীয় উষ্ণ পরিবেশ।
২.১০,৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৭টার দিকে আড়ালের তালুইসাহেব বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলেন। তিনি আমাদের যেমনটা বললেন; তার আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে কুশদি থেকে আসা বুলবুলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলাপ করা। আমি রাজি হলাম না। কারণ তিনি আমাকে ছেলেটির স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সন্তুষ্ট করতে পারলেন না। সকাল ৮টার দিকে জব্বার। ও কাগুর বাপ এলেন। তারা মজিদের বিরুদ্ধে জব্বারের মামলা নিয়ে সকাল প্রায় ১১টা পর্যন্ত কথা বললেন। এরপর তারা চলে গেলেন। সন্ধ্যায় গেলাম মাঝেরটেকে। সেখানে সােবহান, সেকেন্দার প্রমুখ কাজ করছিল। আক্কা ও নবু রাতে এসে কথা বলে চলে গেল। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ৩.১০.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ১০ থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত মাঝেরটেকে ছিলাম। বিকেল ৪টার দিকে আমার কাছে কটেরটেকের তাহের আলী এলেন। তিনি বললেন জব্বার, নায়েব আলী ও মান্নাফ প্রমুখ তার সঙ্গে ঝগড়া করেছে এবং তাকে হুমকি দিয়েছে হামলা করার। এ সময় বরু ও ওয়ারিস আলী আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে গেল। রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিগুয়ারির মান্নাফ ভাইসাহেব আমাদের বাড়িতে এলেন। আমি ফরিয়ারটেকের নদীর ঘাটে গেলাম। সেখান থেকে মুর্শিদ মিয়া, তার মা ও স্ত্রী, জামশেদ মিয়া ও ভৃত্যদের বাড়িতে নিয়ে এলাম। তারা চার ঘন্টার মতাে। থাকলেন এবং খাবার খেয়ে রওনা হলেন। তারা বাঘিয়ায় দুলুর মাকে দেখে এসেছেন। দুলুর মায়ের অবস্থা গুরুতর।। বিছানায় গেলাম রাত ২টায়। আবহাওয়া : সকালে এক পশলা বৃষ্টি হলাে। আকাশে যতটা তর্জন-গর্জন ছিল, ঠিক ততটা বর্ষণ হলাে না। অবশিষ্ট দিন আকাশ পরিষ্কার। পূর্ণ চাঁদের দীপ্তিতে রাত ছিল অপূর্ব রজনীর একটি।
৪.১০,৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। খুব সকালে আবদুল খান আমার সঙ্গে দেখা করলেন। সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। মূলত গ্রামের রাজনীতি নিয়ে আলাপ হলাে। ভাের বেলায় তােফাজ্জলের বাবা। এলেন বাঘিয়ার দুলুর মায়ের মৃত্যু সংবাদ নিয়ে। তিনি গত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বের হলাম। খেয়াঘাটে ঘাগােটিয়ার এক লােককে পেলাম। তিনি আমার সঙ্গে শ্রীপুর পর্যন্ত এলেন। ওষুধের দোকানের কম্পাউন্ডার আকতারুজ্জামান সাহেব তার আত্মীয়। আমাদের হেঁটে চলার পুরােটা সময় তার সঙ্গে স্থানীয় বিষয়াদি নিয়ে আলাপ হলাে। কুশদির এনায়েতউল্লাহ মুন্সির পরিবারের ব্যাপারে তার কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেল। তিনি নিজের পরিচয় দিলেন ঘাগােটিয়ার আব্বাস আলী মাঝির ভাগ্নে হিসেবে। শ্রীপুর পৌছলাম বেলা ১টায়। বেলা ২টা পর্যন্ত সালেহ আহমদ মন্ডল স্কুলের লাইব্রেরিতে আমার সঙ্গে আলাপ করলেন। তিনি আমাকে চাপ দিলেন আসন্ন অ্যাসেমব্লি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অঙ্গীকার করতে। এর পেছনে হয়তাে কোনাে উদ্দেশ্য রয়েছে। দুপুরে খাওয়া হলাে না। বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে তার বাড়িতে ছিলাম। সেখানে ফরেস্টার মােসলেম উদ্দিন আমাদের সঙ্গে যােগ দিলেন। রাত প্রায় ৮টা। পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : সূর্য ওঠার পর পরই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল এবং বৃষ্টি শুরু হলাে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে তা অব্যাহত থাকল বেলা দেড়টা পর্যন্ত। দিন ও রাতের অবশিষ্ট সময়ে আকাশ পুরােপুরি পরিষ্কার। নমনীয় পরিবেশ।
৫.১০.৫২ ভােরে সাড়ে ৫টায় উঠেছি। কালবাড়ির আইস আলী আমাকে নিয়ে ডিসপেনসারিতে গেল সকাল ৯টায়। ডা. আহসানউদ্দিন তার বােনের ক্ষত পরীক্ষা করে দেখলেন। তিনি পরামর্শ দিলেন অপারেশনের। সেই সময় গােসিঙ্গার রজব আলী নামে এক ব্যক্তির জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে কালু মন্ডল ও সুবেদ আলী ডিসপেনসারিতে ছিলেন। অভিযােগ আছে আসমত ও তার সাঙ্গপাঙ্গোরা রজব আলীর ওপর হামলা করেছে। আমি ডিসপেনসারি ছেড়ে এলাম সকাল ১১টায়। আফসারউদ্দীন বাড়ি থেকে আমার কাছে এল। সে আমাকে জানাল, গত রাত থেকে বুলবুল মানসিক অস্থিরতায় ভুগছে। আমি তখনই তাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। তার আগে বাের্ডিং হাউসে খাবার খেলাম এবং শরণার্থী সরদার আলীর জন্য একটি দরখাস্ত লিখলাম। শ্রীপুর ছাড়লাম বেলা ১টায় । সােজা বাড়ি গিয়ে পেীছলাম। ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে সােবহান সরকার আরেকজন লােককে সঙ্গে নিয়ে বিকেলে আমাদের বাড়িতে এলেন। নাস্তা খেয়ে সূর্যাস্তের সময় তারা চলে গেলেন এবং আগামী শুক্রবার আসার কথা বলে গেলেন। হাইলজোরের ফালু ও মমতাজ আলী সন্ধ্যায় এলেন। রাত ৯টার দিকে তারা চলে গেলেন। আমি তাদের পরামর্শ দিলাম রায়ের কপি সংগ্রহ করার জন্য। এরপর এলেন আবদুল খান এবং তারপর এলেন গফুর আলী, বরু, জাহাদের ছেলে আমির ও চৌরাপাড়ার হাসুনিয়া কানা। হাসুনিয়া অভিযােগ করলেন তাকে জব্বারের ছেলে আমিরুদ্দিন পিটিয়েছে; সে চার সের চালের দাম দাবি করায়। আমি বরুকে বললাম আগামীকাল সকালে জব্বার অথবা তার অনুপস্থিতিতে তার। ভাইকে হাজির করার জন্য। তারা রাত ১০টায় চলে গেলেন। লৌহজং থানার আবদুল গনি ও এক মুসাফির রাতে আমাদের বাড়িতে থাকলেন। আবদুল গনির ছেলে মতিউর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : বেলা সাড়ে ১১টার দিক থেকে দুপুর প্রায় সােয়া ১২টা পর্যন্ত প্রবল
বৃষ্টিপাত হলাে। অবশিষ্ট দিন বৃষ্টিশূন্য। চন্দ্রালােকিত রাতের আকাশ সম্পূর্ণ পরিষ্কার। নমনীয় পরিবেশ।
২০০
৬.১০.৫২ সকাল পৌনে ৬টায় উঠেছি। জবু, কন্দুস এবং পরে আক্কাস আলী, ওয়ারিস আলী, আনসু প্রমুখ সকাল ৮টার দিকে এলেন। সকাল প্রায় ১০টা পর্যন্ত আমাদের নতুন বাড়িতে বসে জব্বারের কার্যকলাপ নিয়ে আলাপ করা হলাে। এরপর তারা চলে গেলেন। তারপর এলেন। আবদুল মােড়ল ও আবদুল খান; আবদুল মােড়লের কালবাড়ি জমির সাফকবলা নিয়ে। আমি আবদুল মােড়লের জমির দাগ নম্বরগুলাে লিখে রাখলাম। তারপর মােড়ল চলে গেলেন। বেলা ১১টার দিকে এল আসু। আবদুল খান ও আমি তাকে বললাম চৌরাপাড়ার হাসুনিয়া কানা ও আমিরুদ্দিনের ঝগড়াবিবাদ নিষ্পত্তি করার জন্য। সে ও বরু নিস্পত্তির জন্য আগামীকাল সকালে সময় নির্ধারণ করে চলে গেল। সকাল সাড়ে ১০টায় দিকে দিগধার ভাইসাহেব এলেন। তিনি দুপুরের খাবার খেলেন এবং বিকেল। ৫টার দিকে চলে গেলেন। কুশদির ছেলেটির স্বাস্থ্যের ব্যাপারে তিনি ইতিবাচক মন্তব্য করলেন না। এবং আমরা কোনাে সিদ্ধান্তে পৌঁছানাের আগে কোনো ভোজে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে শমসেরউদ্দিন সরকারের কার্যকলাপ অনুমােদন করলেন না। পাড়ার লােকজন দিনের বেলা এবং রাতে স্কুল ঘর নির্মাণে কাজ করল। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দিনের ও রাতের আকাশ পরিষ্কার। নমনীয় পরিবেশ। জাহান্দার এবং অন্যরা আমাকে মধ্য রাতের দিকে জাগিয়ে তুলল সাইকেলের বিষয়ে। আমি বিরক্ত হলাম এবং তাদেরকে চলে যেতে বললাম। বি. দ্র. বাঘিয়ার দুলুর মা ৩.১০.৫২ তারিখ দিবাগত রাতে মৃত্যুবরণ করেন। ৭.১০.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত স্কুলে। পূজা, মহররম ইত্যাদির পর আজ থেকে পুনরায় স্কুল শুরু হলাে। সকাল ৯টায় সাইকেলে শ্রীপুর গেলাম। বুলবুলের জন্য ওষুধ নিলাম এবং দফতুকে দিয়ে তা পাঠিয়ে দিলাম। আমি বেলা আড়াইটার দিকে ফিরে এলাম। শ্রীপুর
যাওয়ার সময় খেয়াঘাটে পেলাম হাকিম মিয়া, শহিদ ও ইয়াকুব আলী শিকদারকে। তারা কাচারি ঘর তৈরির একটি উপযুক্ত স্থান খুঁজছেন। খেয়া নৌকা থেকে কটেরটেকের মজিদ নেমে এলেন। তিনি আমাকে অনুরােধ করলেন, জব্বার ও তার মধ্যে চলা মামলায় আমি যেন কোনাে পক্ষাবলম্বন না করি। ফকিরের কাচারিতে আবদুল খান খন্দকারকে নিয়ে বসেছেন। ওয়ারিস। আলী, আনসু, সানফা, রহমান প্রমুখ বিকেলে স্কুল ঘর তৈরির কাজ করল। আজ সন্ধ্যায় দক্ষিণের খেতে মরিচ ও মুলার বীজ রােপণ করা হলাে। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : বেলা ২টা পর্যন্ত প্রখর রােদ। এরপর মেঘে মেঘে আকাশ ছেয়ে
গেল। রাতের শেষ ভাগে ঝড়াে বাতাসসহ বেশ এক পশলা বৃষ্টি হলাে। নমনীয় পরিবেশ। ৮.১০.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। অবিরাম বৃষ্টির কারণে সারাদিন ঘরেই রইলাম। ইসাব আলী মামা মধ্য দুপুরে এলেন এবং আমার সঙ্গে দুপুরের খাবার খেলেন। তিনি নাসু মিয়ার বিয়ের প্রস্তাবের কথা তুললেন। কিন্তু অতীত সম্পর্ক সাংঘর্ষিক হয়ে যায় বলে আমি এতে আপত্তি জানালাম। সন্ধ্যায় তিনি চলে গেলেন। শামসু পেপে নিয়ে এলেন। তার সঙ্গে ছিলেন দিগধার সমিরউদ্দিন। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : কোনাে বিরতি ছাড়াই সারাদিন বৃষ্টি। বিষন্ন পরিবেশ কোনাে বাতাস নেই। বৃষ্টিও প্রবল নয়। সন্ধ্যায় একবার থামলেও রাতে আবার বৃষ্টি শুরু হলাে। ঠাণ্ডা পরিবেশ। ৯.১০.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত স্কুলে। সকাল ৯টায় ডিসপেনসারিতে
গেলাম। বুলবুল ও দফতুর জন্য ওষুধ নিলাম। স্কুল অফিসে সালেহ আহমদ মন্ডল আমাকে ধরলেন। তার জন্য ডিএফও বরাবর একটি দরখাস্ত লিখে দিলাম। মাওনার সভাপতি আমাকে গফুরের দোকানে চা খাওয়ালেন। গফুরের দোকানে আমার নামে লেখা বকেয়া ৪ টাকা পরিশােধ করলাম। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আমাকে দুপুর খাওয়ালেন। বিকেলে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে গােসিঙ্গা পর্যন্ত হেঁটে গেলাম। ফকিরের কাচারি ঘরে জামাত আলী, কেরাত আলী ও আবদুল মােড়লকে পেলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : সারাদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। সারাদিন ও রাত বৃষ্টিস্নাত পরিবেশ। অল্প সময়ের বিরতি দিয়ে সারাদিন-রাত বৃষ্টি। বিকেল সাড়ে ৩টার থেকে ৫টা পর্যন্ত প্রবল বৃষ্টিপাত। ঠাণ্ডা পরিবেশ ।
১০,১০,৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সারাদিন ঘরেই কাটালাম। মধ্য দুপুরে আনসু, ওয়ারিস আলী, করম আলী প্রমুখ এলেন। বিকেল ৫টায় গেলাম কেওয়ার বাপের বাড়িতে। সােবহানকে নিয়ে সালিশে বসলাম। আবদুল খান, ওয়ারিস আলী, করম আলী, সােবহান, গেরাম আলী, জাফর আলী প্রমুখ যােগ দিলেন। আকবর আলী দরদরিয়ার বাড়িতে থাকলেও এলেন না। যদিও তিনি আজ দুপুরে সালিশে অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সালিশে কিছুই হলাে না। আমরা সূর্যাস্তের সময় ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : সারাদিন বিষন্ন পরিবেশ। এক টানা বৃষ্টি। সন্ধ্যা পর্যন্ত কার্যত কোনাে
বিরতি না দিয়ে কখনাে কখনাে প্রবল আকারে বর্ষণ। রাত বৃষ্টিশূন্য। মধ্য রাতের পর আকাশ আংশিক পরিষ্কার এবং ভেসে বেড়ানাে। মেঘের মাঝ থেকে উকি দিচ্ছিল চাদ ও তারা। ঠাণ্ডা পরিবেশ।
১১.১০.৫২
-শ্রীপুরভাের ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে। বিকেলে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে বাজারে গেলাম। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর কেনাকাটা করলেন। কেনাকাটা শেষে তার বাসায় ফিরলাম। ওখানে সিএস ইন্সপেক্টর, ফরেস্টার জেড হক, ফরেস্টার মােসলেম চৌধুরী প্রমুখসহ জাম্বুরা খেলাম। রাত ৯টা পর্যন্ত ক্লাবে পাশা খেললাম। বেলা ১১টার দিকে রেঞ্জার করিম আমার সঙ্গে স্কুলে দেখা করেছিলেন। তিনি । আমাকে অনুরােধ করলেন, ডিএফওর সামনে তার পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য। তার মামলার সূত্রেই বিকেলে ডিএফও এখানে এসেছেন। শামসুর হাতে ওষুধ পাঠিয়ে দিলাম। সে বাড়ি থেকে এসেছিল। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহওয়া । সারাদিন এবং রাতে কোনাে বৃষ্টি হয়নি। রাতে আকাশ মেঘলা।
দিনের বেলা সূর্য উকি দিয়েছিল। নমনীয় পরিবেশ। ১২.১০.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে। বেলা ১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত একজন জাদুকর আমাদের স্কুলের ছেলেদের তার খেলা দেখালেন। ১৩.১০,৫২ তারিখে একটি জনসভায় যােগ দেওয়ার আমন্ত্রণপত্র নিয়ে বেলাসীর দুটি ছেলে আমার কাছে এল। আমি সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম না। বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। সেখানে পত্রিকা পড়লাম। স্টেশনে রাত ৯টা পর্যন্ত কাওরাইদের হাসমতের সঙ্গে স্কুল নিয়ে আলাপ করলাম। খাবার খেয়ে ঘরে ফিরলাম রাত সাড়ে ৯টায়। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : সারাদিন ও রাতে নিষ্প্রভ পরিবেশ। দিনের বেলা সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কয়েকবার বৃষ্টি হলাে। নমনীয় ঠাণ্ডা পরিবেশ।
১৩.১০.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে। আজ সকাল থেকে পড়া শুরু করলাম—সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত । বিকেলে মফিজউদ্দীন সিকদার, তার চাচাত ভাই ও হাকিম মিয়া আমার সঙ্গে দেখা করলেন ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে তাদের মামলার বিষয়ে। আমি কোনাে সুনির্দিষ্ট মত দিলাম না। আমি তাদের পরামর্শ দিলাম যুক্তিসম্মতভাবে বিষয়টির সুরাহা করার। তারা চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : বৃষ্টি নেই। দিনের বেলা আকাশ আংশিক পরিষ্কার। রাতে, বিশেষ
করে রাতের শেষভাগে আকাশ পুরােপুরি পরিষ্কার। কুয়াশা জমে ছিল, সূর্যের আগমনে তা উধাও হয়ে গেল। সহনীয় ঠাণ্ডা পরিবেশ। ১৪.১০.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। পড়াশােনা করলাম সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে। বাড়ি থেকে দফতু এল। আমি ডিসপেনসারিতে গেলাম সকাল সাড়ে ৯টায়। তাকে ওষুধ দিলাম। তারপর সে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে গেল। বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে ঘরে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অল্প সময়ের জন্য বৃষ্টি হলাে। অবশিষ্ট
দিন বৃষ্টিশূন্য। রাতে আকাশ পরিষ্কার। নমনীয় পরিবেশ।
২০৫
১৫.১০.৫২
-ঢাকা ভাের ৫টায় উঠেছি। পড়াশােনা সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত স্কুলে। আমি যখন সকালে স্কুলের উদ্দেশে রওনা হচ্ছিলাম তখন পেলাইদের হাসান আলী মোেড়ল নামে এক ব্যক্তি আমার কাছে এলেন। তিনি বললেন স্বাক্ষর না মেলায় তিনি তার ডাকঘরের সঞ্চয়ী হিসাব থেকে টাকা তুলতে পারছেন না। আমি বেলা ২টায় পােস্ট মাস্টারের সঙ্গে দেখা করলাম এবং হাসান আলী মােড়লের জামিনদার হয়ে তার জন্য ৫০০ টাকা উঠানাের ব্যবস্থা করলাম। হারিস ও শাহাদত আলী পণ্ডিতকে সঙ্গে নিয়ে বেলা ২টার ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। পৌছেই সােজা গেলাম বংশালে ফজলু মােক্তারের বাড়িতে। তিনি আদালত থেকে ফিরলেন সন্ধ্যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফজলু ও আমরা সবাই গেলাম মােমেন উকিলের বাসায়। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত হারিসের মামলা নিয়ে আলােচনা করলাম। রাতে আমি ফজলু মােক্তারের সঙ্গে তার বাড়িতে রইলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : দিনে ও রাতে আকাশ পরিষ্কার। নমনীয় পরিবেশ।
১৬.১০.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ফজলুর সঙ্গে তার চেম্বারে বসলাম । হারিসের মামলার অভিযােগের জবাব প্রস্তুত করলাম। ফজলুর বাড়িতে গােসল ও তার সঙ্গে নাস্তা সেরে তাকে সঙ্গে নিয়ে সকাল সােয়া ১০টায় আদালতে গেলাম। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বার লাইব্রেরিতে রইলাম। কামরুদ্দীন সাহেব, কোরবান আলী, কফিলউদ্দীন চৌধুরী সাহেব, মােমেন, জহির, জাহেরুদ্দিন সাহেব প্রমুখের সঙ্গে কথা বললাম। কামরুদ্দীন সাহেব ও কোরবান আলী আলােচনা করলেন ইউনাইটেড পার্টি নিয়ে। বেলা ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট খালেক সাহেবের
আদালতে ছিলাম। রেঞ্জার আসিরুদ্দিন, ফরেস্টার সেকেন্দার আলী ও অন্যান্য গার্ডদের পেলাম। ফরেস্ট মামলার পরিবর্তে দাঙ্গা-হাঙ্গামার পুলিশি মামলা আদালতে তােলা হলাে। সাক্ষিদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার পর বেলা আড়াইটায় আদালত মুলতবি হলাে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ফজলুর বাড়িতে গেলাম। আমার ব্যাগ নিয়ে সােজা গেলাম কেমব্রিজ ফার্মেসিতে। ডা. করিম বললেন, ক্রেতার অনুকূলে তিনি তার ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দিচ্ছেন এবং নবাবপুর রােডে একটি নতুন দোকান নিচ্ছেন। আমি তার সঙ্গে একমত হলাম। করিমের মেজ ভায়রা, করিম, আমি এবং একজন ডাক্তার নবাবপুরের কাছে বাজারের ক্রসিংয়ে এক বাড়িতে মাজেদ সরকারের সঙ্গে দেখা করলাম। দোকানের মালিক একজন হিন্দু ভদ্রলােক। তার উপস্থিতি ও সম্মতিতে দোকানের ভাড়ার নিষ্পত্তি করলাম। সেখানে চা ও মিষ্টি খেয়ে ফার্মেসিতে ফিরলাম। করিম আমাকে ঠাটারি বাজারে তার বাড়িতে নিয়ে গেল। তারপর গেলাম তােপখানা রােডে। রাতের খাবার খেয়ে ওখানেই রয়ে গেলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : সারাদিন ও রাতে আকাশ পরিষ্কার। দিনের বেলা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত একটু গরম। এরপর নমনীয় পরিবেশ। ১. ১১.১০.৫২ তারিখে পাকিস্তান মুসলিম লীগের কাউন্সিল মিটিং ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলাে। খাজা নাজিমুদ্দিন সভাপতি পদে পুননির্বাচিত হলেন। | ২. পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক মুসলিম লীগের বিশেষ অধিবেশন ১২.১০.৫২ তারিখে পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত হলাে। সংবাদপত্রে প্রকাশ খাজা নাজিমুদ্দিন ও নুরুল আমিনকে শ্রোতারা চিৎকার-চেচামেচি করে থামিয়ে দিয়েছে (আজাদ, ১৩.১০.৫২, ঢাকা)। পাটের দর প্রতি মণ ৭ টাকা থেকে ৯ টাকার মধ্যে। বাজারের কোনাে উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। | ৪, ধান প্রতি মণ ১৬ থেকে ১৭ টাকা এবং চাল প্রতি মণ ২৬ থেকে ২৮ টাকা।
১৭.১০.৫২ সকাল সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল পৌনে ৮টায় ভাবীর সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। সকাল সােয়া ১০টা পর্যন্ত ওখানেই রইলাম । সকাল পৌনে ১১টায় পাটুয়াটুলি গেলাম এবং স্কুলের জন্য কিছু কেনাকাটা করলাম। এরপর ঠাটারি বাজার ফিরে এলাম। খাবার খেয়ে বেলা ১২টায় স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হলাম। শ্রীপুর ফিরলাম বেলা ১২টা ১৮ মিনিটের ট্রেনে। একই কামরায় আমার সঙ্গে এলেন কালু মণ্ডল ও মজিদ মণ্ডল। ট্রেনে জালালকে পেয়েছিলাম। সে একই ট্রেনেই কাওরাইদ যাচ্ছিল। সন্ধ্যা পর্যন্ত নবম শ্রেণীর কাগজপত্র পরীক্ষা করলাম। বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আকাশ পরিষ্কার। প্রখর রােদ। দিনের বেলায় গরম। রাত ১০টার পর তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে নেমে এল। ১৮.১০.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকালে জয়দেবপুর যাওয়ার পথে কটেরটেকের কুদুস আমার সঙ্গে দেখা করলেন। সাবু ও সাহুর পক্ষে কটেরটেকের আক্কাস আলীর সাফকবলা তৈরি করার জন্য কুদুস জয়দেবপুর যাচ্ছিলেন। বাড়ি থেকে দফতু এল। সকাল ১১টায় ওষুধসহ ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ক্লাবেই ছিলাম । বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই।
১৯.১০.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত স্কুলে। স্কুল অফিসে রইলাম বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। ওসি এবং স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে সঙ্গে নিয়ে ফরেস্ট অফিস, ভেটেরিনরি হাসপাতাল, স্টেশন মাস্টার প্রমুখের কাছে গেলাম ক্লাবের সদস্য চাদার জন্য। ফরেস্টার এ লতিফ আমাদের চা খাওয়ালেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। খাবার খাওয়ার পর জাহান্দার, আমজাদ প্রমুখের সঙ্গে শাহাবুদ্দিন ও মােড়ল বাড়ির কার্যকলাপ নিয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত কথা বলে ঘরে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত সােয়া ১০টায়। আবহাওয়া : প্রখর রােদ। সারাদিন ও রাতে পরিষ্কার আকাশ। রাতের প্রথম ভাগ পর্যন্ত গরম। অবশিষ্ট রাত ঠাণ্ডা, বিশেষ করে রাতের শেষভাগে কথার প্রয়ােজন হয়ে পড়ে।
২০.১০.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত স্কুলে। ঢাকায় যাওয়ার পথে ইজ্জত আলী সরকার স্কুলে এলেন। আমি তাকে ম্যানেজিং কমিটির অনুমােদনের কাগজের বিষয়ে বললাম। এ ছাড়াও সেক্রেটারি নির্বাচন নিয়েও কথা বললাম। তিনি বেলা ২টায় চলে গেলেন। জেলা বাের্ড বাংলােতে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে বসে দাবা খেললাম; বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। এরপর ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য কোর্ট প্রস্তুত করলাম। আবগারি ইন্সপেক্টর তার বাড়ির সামনে ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্ট তৈরি করার ব্যাপারে আপত্তি তুললেন। বােঝা গেল। এএসআই এ গনি, পােস্ট মাস্টার প্রমুখ আগে থেকেই এ বিষয়টি জানতেন এবং তারা তার পক্ষে কথা বললেন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। রাতে খাবারের পর আমজাদকে ঢাকা পাঠালাম রফিকের জন্য। রাত ৯টা পর্যন্ত আমি স্টেশন কক্ষে স্টেশন মাস্টার। ইদ্রিসের সঙ্গে বসলাম। এরপর ঘরে ফিরলাম।
বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। আগাম শীতের পূর্ণ ছোঁয়া । ২১.১০.৫২ ভাের সাড়ে ৪টায় উঠেছি। সকাল ১১টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত স্কুলে। সকালে হাসান মন্ডল আমার সঙ্গে দেখা করলেন। আমরা তার গােডাউনে বসলাম এবং শ্রীপুর এইচ ই স্কুলের সেক্রেটারি নির্বাচন নিয়ে কথা বললাম। আমরা দুজনে থানায় গেলাম। ওসি তার কাছ থেকে ক্লাবের মাসিক চাঁদা চাইলেন। তিনি সকাল ৮টায় চলে গেলেন। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও পরে আবগারি ইন্সপেক্টর থানায় এলেন। ওসি এবং আমরা সবাই আবগারি ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টরে বাড়ির সামনে ব্যাডমিন্টন কোর্টের বিরােধমূলক স্থানটিতে হাজির হলাম। ভেটেরিনরি সার্জন, মজিদ মন্ডল ও আজিজ মন্ডল এবং আমরা সবাই আবগারি ইন্সপেক্টরকে অনুরােধ করলাম খেলার মাঠটির জন্য। কিন্তু তিনি নাছােরবান্দা। এ কারণে আমিও ক্ষুব্ধ হলাম। মজিদ মন্ডল ও আজিজ মন্ডল রসগােল্লা নিয়ে এলেন ওসি, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও আমার জন্য। আমরা তা স্যানিটারি অফিসে নিয়ে গেলাম। তারপর চলে এলাম। আমি সােজা স্কুলে গেলাম। করম আলী তার মামলার জন্য টাকা ধার করতে এল। আমি টাকা ধার দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলাম। তাকে চা খাওয়ালাম। বরমি গেলাম বেলা ২টার ট্রেনে। সঙ্গে গেল নিজামউদ্দিন, ফরেস্টার মােসলেম চৌধুরী ও ছাত্ররা । খেলা শুরু হলাে বিকেল সােয়া ৪টায়। ১-০ গােলে আমরা খেলায় জিতে গেলাম এবং শিন্ড পেলাম। এফ এ মান্নান ছিলেন রেফারি ও ডা, কামরুদ্দিন ছিলেন সভাপতি। নয়ানগর টিম প্রতিবাদ জানালেও তা প্রত্যাখ্যাত হয়। ব্যান্ড পাটির সঙ্গে তাল। মিলিয়ে আমরা হেঁটে শ্রীপুর পৌছলাম রাত পৌনে ৯টায়। রফিক আমার সঙ্গে রইল। অন্য খেলােয়াড়রাও রাতে একটি রুমে থাকল। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই।
২১০
২২.১০.৫২
-ঢাকা ও ফিরে আসাভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টার ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। রেঞ্জার আসিরুদ্দিন, ফরেস্টার মােসলেম চৌধুরী ও আলিমুদ্দিন, আকবর, আলী, আশরাফ আলী মৌলবি, করম আলী, আবদুল মোেড়ল, বরু প্রমুখ তাদের নিজ নিজ মামলায় আদালতে হাজির হতে ঢাকার উদ্দেশে একই ট্রেনে উঠেছেন। ঢাকা স্টেশনে পেলাম ডা. গিয়াসউদ্দিন ও রমিজউদ্দীনকে। বেলা সাড়ে ১১টায় ৬ষ্ঠ মুন্সেফ আদালতে মফিজউদ্দীনের জন্য হাজিরা নথিভুক্ত করলাম। বিরােধী পক্ষ সময় প্রার্থনা করল। ২২.১১.৫২ তারিখ সময় নির্ধারণ হলাে। বার লাইব্রেরির সেক্রেটারির রুমে কফিলউদ্দীন চৌধুরী সাহেব, আতাউর রহমান খান সাহেব, কামরুদ্দীন আহমদ সাহেব ও আমি দুপুরের খাবার খেলাম। কফিলউদ্দীন চৌধুরী সাহেব ও আতাউর রহমান খান সাহেব আমাদের খাওয়ালেন। আতাউর রহমান খান সাহেবের কাছ থেকে নতুন চীনের কথা শুনলাম। বিকেল ৪টায় বার লাইব্রেরি থেকে বের হলাম। ডা, করিমের সঙ্গে তার ফার্মেসিতে দেখা করলাম এবং ১১৯ নবাবপুর রােডে আমাদের প্রস্তাবিত কিশাের মেডিকেল হলের প্ল্যানিং কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করলাম। বাকি ও নুরুল ইসলাম সেখানে ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টা ২৬ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। স্টেশন মাস্টার ইদ্রিস সাহেব সঙ্গে এলেন। আমাকে শ্রীপুর স্টেশনে আকবর আলী ও আশরাফ আলী মৌলবি বললেন করম আলীর মামলা আজ বাতিল হয়ে গেছে। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে এক পশলা বৃষ্টি হলাে। রাতে আকাশ পরিষ্কার। আবহাওয়া আগের মতােই। বৃষ্টি ছিল মাঝারি ধরনের। এই বৃষ্টির আগে ছিল গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি।
২৩.১০.৫২
-ঢাকা ও ফিরে আসাভাের ৫টায় উঠেছি। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের বাসায় নাস্তা খেলাম। সকাল ৮টার ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। সােজা আদালতে গেলাম। সকাল সাড়ে ১০টায় প্রথম সাব জজের আদালতে হাজিরা নথিভুক্ত করলাম। ইসলামপুরের অ্যামপ্যাথি থেকে ক্লাবের জন্য মােহন সিরিজের ছয়টি বই কিনলাম। বেলা ১২টায় বার লাইব্রেরিতে কফিলউদ্দীন চৌধুরী সাহেব, আতাউর রহমান খান, কামরুদ্দীন আহমদ সাহেব প্রমুখের সঙ্গে দেখা করে স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হলাম। বেলা ১২টা ১৮ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুর ফিরলাম। ট্রেনে থেকে নেমে সিডি হােমের সুপারিনটেনডেন্ট শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে কথা বললাম। তারপর জেলা বাের্ড বাংলােয় রিলিফ অফিসারের সঙ্গে প্রায় আধা ঘন্টা কথা বললাম। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে তার বাসার সামনে বসে কথা বললাম। সন্ধ্যায় আমাদের সঙ্গে যােগ দিলেন পােস্ট মাস্টার। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : খুবই উষ্ণ দিন। সূর্যের প্রখর তাপ। রাত আসার পর পরিবেশ একটু একটু করে ঠাণ্ডা হয়ে এল। রাতে আরামদায়ক পরিবেশ। ২৪.১০.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৯টার দিকে আমার কাছে বলাই বাবু এলেন। শ্রীপুরে শিল্ড প্রতিযােগিতার ফাইনাল খেলায় উপস্থিত থাকতে ডিএফওকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলাই বাবুর জন্য আমি একটি চিঠি লিখে দিলাম। তার অনুরােধে আমি আগামীকাল এসডিও (উত্তর)-এর কাছে যেতে সম্মত হলাম; তাকে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করার জন্য অনুরােধ জানাতে। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দশম শ্রেণীর ইংরেজি প্রথম পত্রের খাতা দেখলাম। শুধু খাবার খাওয়া ও গােসলের সময়টিতে বিরতি দিলাম।
সন্ধ্যা থেকে রাত ৭টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ক্লাবেই রইলাম। রাত প্রায় সাড়ে ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কম্পাউন্ডারের সঙ্গে ইসমাইল খানের দোকানে বসে মণ্ডলদের নিয়ে, বিশেষ করে কালু মণ্ডলকে নিয়ে কথা বললাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আকাশ পরিষ্কার। সারাদিনই উত্তর-পশ্চিমের বাতাস এবং প্রখর রােদ থাকলেও পরিবেশ আরামদায়ক।
২৫.১০.৫২ -ঢাকা ও ফিরে আসাভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টার ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। পরিদর্শক জব্বার সাহেব একই কামরায় ঢাকা পর্যন্ত আমার সঙ্গী হলেন। তারপর জেলা বাের্ড অফিস পর্যন্তও গেলেন। সারাপথ তিনি সিংহস্রী এইচ ই স্কুল ও জেলা বাের্ডের কাজকর্মের ব্যাপারে তার সঙ্গে মােড়লদের আচরণ নিয়ে কথা বললেন। সকাল ১০টায় এসডিওর আদালতে গেলাম। এসডিও (উত্তর) এলেন বেলা সােয়া ১১টায় । আমি তার সঙ্গে দেখা করলাম এবং আমন্ত্রণ জানালাম ২৬ অক্টোবর রােববার ১৯৫২ তারিখে মণ্ডল ব্রাদার্স শিল্ড প্রতিযােগিতার ফাইনাল খেলায় সভাপতিত্ব করার জন্য। আমাদের অনুরােধ রক্ষায় তিনি তার অপরাগতা প্রকাশ করলেন। আমি বেলা সাড়ে ১১টায় তার ওখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম। এরপর ডিএবি অফিসে গেলাম এবং জানতে পারলাম এসআই সেলিমউদ্দিনের স্ত্রী মারা গেছেন এবং তিনি ছুটিতে আছেন। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের জন্য ফলমুল ইত্যাদি কিনলাম। শ্রীপুর ফিরলাম বেলা ১২টা ১৮ মিনিটের ট্রেনে। বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত স্কুলে রইলাম এবং আগামী কালকের ফাইনাল খেলার আমন্ত্রণপত্র লিখলাম। সন্ধ্যায় গােসিঙ্গার নায়েব বেলায়েত হােসেন আমাকে গফুরের দোকানে চা খাওয়ালেন। ওসির সঙ্গে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ব্যাডমিন্টন খেললাম। ছেলেদের সঙ্গে থানা, আবগারি অফিস, ফরেস্ট অফিস ইত্যাদি স্থানে গেলাম এবং বরমি শিন্ডের জন্য চাঁদা আদায় করলাম। বমি শিল্ডে স্কুল টিম জয়ী হয়েছে।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে খাবার খেয়ে ফিরলাম ও বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : সারাদিন বাধাহীন রােদ। তবে কিছু বাতাস থাকায় তেমন একটা গরম অনুভূত হলাে না। রাতে আকাশ পরিষ্কার। পরিবেশ ঠাণ্ডা, বিশেষ করে শেষ রাতে কথার প্রয়ােজন হলাে এবং শীতের ঝাকুনি লাগল। ২৬.১০.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত স্কুলে। আস্কর পণ্ডিত ও নিগুয়ারির কাদের আমাদের স্কুল অফিসে এসে বসে ছিলেন। বেলা ৩টায় আমি তাদের জাম্বুরা দিয়ে আপ্যায়ন করলাম। আজ বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে মণ্ডল ব্রাদার্স শিল্ডের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হলাে আনসার ও ফরেস্ট টিমের মধ্যে। খেলা হলাে বেশ উন্নত ধরনের। ফরেস্ট টিম ১০ গােলে জিতে গেল। জয়দেবপুরের নােয়াব আলী রেফারির ভূমিকা পালন করলেন। এবং ঢাকার ডিএফও সভাপতিত্ব করলেন। সন্ধ্যা ৭টার ফরেস্ট বাংলােতে ডিএফওর সঙ্গে ওসি, সেকেন্ড অফিসার ও আমি নৈশভােজে যােগ দিলাম। আমরা সরকারের নীতি নিয়ে রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত কথা বললাম। ডিএফও সরকারের নীতির সমালােচনায় অংশ নিলেন। বিশেষ করে শিক্ষা প্রসঙ্গে। রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে আমরা তিনজন আনসার ক্লাবে ধনাই বেপারির আয়ােজিত ভােজে অংশ নিলাম। ডা. আহসানউদ্দিন, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ভেটেরিনরি সার্জন এ সালাম, এএসআই এ গনি, কালু মণ্ডল, সালেহ আহমদ মল, মজিদ মণ্ডল প্রমুখ অংশ নিলেন। ধনাই বেপারি উপস্থিত ছিলেন। আয়ােজন বেশ ভালাে ছিল। পােলাও, কালিয়া ও ডাল এবং দধি পরিবেশন করা হলাে। রাত ১০টার দিকে বাসস্থানে ফিরলাম এবং বিছানায় গেলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই।
২৭.১০.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত স্কুলে। খুব সকালে মফিজউদ্দীন আমার সঙ্গে দেখা করেছে। সে আমাকে ধালিয়ার হালিম খানের ছেলের বিয়ের প্রস্তাবের ব্যাপারে জানাল। আমি তাকে আগামী বৃহস্পতিবার গিয়াস ভাইসাহেবকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য বললাম। সে সকাল ৭টায় চলে গেল। মফিজউদ্দীন গতকাল এসেছে এবং গত রাতে ইসমত সরকারের বাড়িতে আইয়ুব আলী ও ওয়ারিস আলীর সঙ্গে ছিল। আইয়ুব আলীকে আমি ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের জন্য একটি আবেদনপত্র প্রস্তুত করে দিলাম। সকাল সাড়ে ৮টায় ওয়ারিস আলী এটি নিয়ে গেলেন। বিকেল ৪টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ব্যাডমিন্টন খেললাম মালেক সাহেব, উষা ও আহমদের সঙ্গে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আহমদকে সঙ্গে নিয়ে সাত্তার খানের বাড়িতে গেলাম। ওখানে গাছার পিইউবি সিরাজুল হক ও আরাে কয়েকজন লােক এসেছেন সাত্তার খানের মেয়ের বিয়ের প্রস্তাবের যােগসূত্রে। খাবার খেলাম রাত ১০টায়। রাত প্রায় সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আলাপ হলাে। ফেরার সময় কম্পাউন্ডার মােল্লা ও হাসান মণ্ডলের সরকারকে সঙ্গে নিয়ে ফিরলাম। সরকার রাতে আমার ঘরে রয়ে গেল। বিছানায় গেলাম রাত ১২টায়। আবহাওয়া : সারাদিন ও রাত আকাশ পরিষ্কার। দিনের বেলা গরম নেই। রাতে ঠাণ্ডা এবং বিছানায় যাওয়ার পর থেকেই কাঁথার প্রয়ােজন হলাে। ২৮.১০.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সােয়া ৩টা পর্যন্ত স্কুলে। গাছার সিরাজুল হক সাহেবকে বিদায় জানালাম। তিনি সকাল ৮টার ট্রেনে চলে গেলেন। ইসমাইল খানের দোকানে সামাদ খান ও সাত্তার খানের সঙ্গে আহমদের বিয়ে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বললাম সকাল ৯টা পর্যন্ত । বিকেলে সিডি হােমের নিলামে যােগ দিলাম। রিলিফ অফিসার, সুপারিনটেনডেন্ট
২১৫
জে এ জাইদি, সাত্তার খান প্রমুখ আমার সঙ্গে বসলেন। বিকেল ৫টায় উঠলাম। সন্ধ্যায় আহমদ, উষা ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেললাম। রাতের খাবার খাওয়ার সময় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে এক ভদ্রলােক হাবিব আহমদ নামে একটি ছেলেকে নিয়ে আমার কাছে হাজির হলেন। ছেলেটিকে আমাদের স্কুলে ভর্তি করার জন্য হাসান মণ্ডলের একটি চিঠি নিয়ে এসেছেন তিনি। তারা রাতে আমার ঘরেই ঘুমাল। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই।
২৯.১০.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে। স্কুলের পর শিক্ষকদের একটি বিবৃতি প্রস্তুত করলাম এবং এটি ইন্সপেক্টর অব স্কুলস-এর কাছে পাঠালাম। সকালে স্কুলে গিয়ে হাবিব আহমদকে ভর্তি করে নিলাম। সকাল ৮টায় স্টেশনে তাদের বিদায় জানালাম। ২৬.১০.৫২ তারিখ দিবাগত রাতে ফরেস্টার এ লতিফ ও স্টেশন মাস্টার কোরেশির মধ্যে বেধে যাওয়া ঝগড়া খতিয়ে দেখতে রেঞ্জার এবং তার পুরাে কর্মী বাহিনী স্টেশন কক্ষে এসেছেন। শিন্ড বিজয়ের ওই দিনে এ লতিফ ব্যান্ড পার্টি নিয়ে কোরেশির কোয়ার্টার গিয়েছিলেন। আমি ওখানে এই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করলাম ও আপসে বিষয়টির সুরাহা করলাম। এ লতিফ ও কোরেশির হাত মেলালেন। কোরেশি ডিটিএস বরাবর এই ফলাফলের কথা জানিয়ে একটি চিঠি লিখলেন যে, একটি আপসরফায় পৌছানাে গেছে। আমরা সবাই সকাল ৯টায়। উঠলাম। সূর্যাস্ত পর্যন্ত ডা, আহসানউদ্দিন, উষা এবং স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেললাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। খাবার খেলাম। রাত সাড়ে ৮টায় বাড়ি ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ৩০.১০.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত স্কুলে। বেলা পৌনে ৩টায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। শ্রীপুর থেকে আমাদের বাড়ির সােজা উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত রায়েদের মুসলেহউদ্দিন আমাকে সঙ্গ দিলেন। বাড়ি পৌছলাম বিকেল সাড়ে ৪টায়। গিয়াস ভাইসাহেব সন্ধ্যায় এলেন। রাতে তিনি রয়ে গেলেন। কটেরটেকের জব্বার ও জয়নার বাপ রাতে এলেন ও কথা বলে চলে গেলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : শ্রীপুরে অনুভূত ঠাণ্ডার সঙ্গে তুলনা করলে এখানে ঠাণ্ডা অনেকটাই কম। উজ্জ্বল রাত ও দিনের বেলায় আকাশ পরিষ্কার। প্রখর রােদ। ৩১.১০.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। গিয়াস ভাইসাহেবের সঙ্গে পিঠা ইত্যাদি দিয়ে নাস্তা খেলাম। ধলিয়ার হালিম খানের ছেলের সঙ্গে বুলবুলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলাপ করলাম। আমি তাকে বললাম ওই পক্ষের মতামতের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে এবং তারপর আমার সঙ্গে পরামর্শ করে একটি তারিখ ধার্য করতে। যাতে ডা, করিম ও তাকে সঙ্গে করে আমি ব্যক্তিগতভাবে সব কিছু দেখে আসতে পারি। গিয়াস ভাইসাহেব সকাল ১১টায় চলে গেলেন। সকালে দেওনার সহিদ আলী, তারপর ওয়ারিস আলী, আনসু, রজব আলী, কাগুর বাপ প্রমুখ এলেন। তাদের সঙ্গে নদীর পাড়ে গেলাম, যেখানে আকবর আলীর ছেলে প্রমুখ আমাদেরকে না জানিয়েই আমাদের খালের মাছ ঘের দিয়ে রেখেছে। ওখানে আরাে শুনতে পেলাম তারা তাদের অংশীদার মাজি ও শারুকেও ঠকিয়েছে। তাদেরকে ছাড়াই রাতের বেলা তারা চুপি চুপি মাছ ধরত। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওখানে থেকে ফিরলাম। বাড়ি এসে দেখলাম আবদুল খান বসে রয়েছেন। তিনি আমার সঙ্গে এমনভাবে কথা বললেন যেন মাছ ধরার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। বিকেলে আমি বেপারি বাড়ির কাছে আমাদের ধান খেতগুলাে দেখতে গেলাম।
সন্ধ্যায় আক্কা, জব্বার, ওয়ারিস আলী, আনসু, সাফি ও অন্যরা এল। তারা স্কুলের ব্যাপারে আলাপ করল। বিকেল ৪টায় হােসেন মৃধা আমাকে আগামী রােববার রায়েদে অনুষ্ঠিতব্য সভার বিষয়টি মনে করিয়ে দিলেন। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ১. ধান ও চালের মূল্য স্থির রয়েছে। গড়ে প্রতি মণ যথাক্রমে ১৬ টাকা ও ২৬ টাকা। ২. পাটের বাজারে মন্দা। বাজারে লক্ষণীয় কোনাে পরিবর্তন নেই। স্বাভাবিকভাবে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকা থেকে ১০ টাকা। এমনকি কখনাে কখনাে নেমে আসছে ৩ টাকা থেকে ৪ টাকায়। বগি পাট প্রতি মণ ১২ টাকা থেকে ১৩ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ৩. সাধারণভাবে মানুষের অবস্থা খুবই দুর্দশাপূর্ণ। টাকা দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। সাধারণ দ্রব্যমূল্য উচুতে এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাইরে। লােকজনের অবস্থা ১৯৪৩ সালের চেয়েও শােচনীয়। যদিও ১৯৪৩ সালের মতাে। সাধারণ মৃত্যু নেই, তবু মানুষের জীবনধারণের শক্তি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
১ নভেম্বর, শনিবার ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে। দিগধা থেকে সকাল সাড়ে ৬টায় আমার বােনের মেয়ে মল্লিকার মৃত্যু সংবাদ নিয়ে মেসবাহউদ্দিন এলেন। গত রাতে সে মৃত্যুবরণ করেছে। তার বয়স হয়েছিল ১ বছর ৭ মাস। সকাল সাড়ে ৯টায় সাইকেলে শ্রীপুর পৌছলাম। সন্ধ্যায় আহমদ, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও সুবােধ প্রমুখের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেললাম। রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ছিলাম। এসআই জেড হক সাহেব তার বিভাগীয় পরীক্ষার জন্য সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে আমার কাছ থেকে তথ্য টুকে নিলেন। রাতে টুকু মিয়া আমার ঘরে থাকলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। রাতে আকাশ আংশিক মেঘলা ছিল। শীত নেই। ২.১১.৫২ -রায়েদে সভাভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টায় রায়েদের সভায় যােগ দেওয়ার জন্য রওনা হলাম। শ্রীপুর
থেকে আমার সঙ্গে আমাদের বাড়ি পর্যন্ত কুদরত, জাহানদার, সুবােধ, কাশেম, আমজাদ, এলাহী, বাবর আলী প্রমুখ এল। তারা কাপাসিয়ার উত্তর খামের এইচ ই স্কুল খেলার মাঠে ফুটবল ফাইনাল খেলায় অংশ নিতে মৈশন যাচ্ছিল। আমি বাড়িতে গােসল করেই বেলা ১টায় আড়ালের হেলাল মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে রায়েদের উদ্দেশে রওনা হলাম। রায়েদে পেীছে ডা. মমতাজউদ্দিনের বাড়িতে খাবার খেলাম। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সভা শুরু হলাে। আমি সভাপতিত্ব করলাম। নাসিরউদ্দিন মৌলবি প্রথমে বক্তৃতা করলেন। তারপর লােহাদির মৌলবি বক্তৃতা করলেন সন্ধ্যা পর্যন্ত। মাগরিব নামাজের পর হেলাল মিয়া বক্তৃতা করলেন আধ ঘন্টা ধরে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আমি বক্তৃতা করলাম মূলত বর্তমান। সময়ের রাজনীতি ও মুসলিম লীগের এমএলএদের ভূমিকা নিয়ে। রায়েদ ও দরদরিয়ায় দুটি হাটের কারণে সভায় লােকজনের উপস্থিতি একেবারেই কম। মাত্র দেড় শ’ জনের মতাে। মধ্য রাত ১২টার দিকে বাড়ি ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১টায়। আবহাওয়া : ভাের হওয়ার পর থেকেই আকাশ মেঘলা হতে লাগল এবং তাের। ৫টায় আকাশ মেঘে মেঘে ছেয়ে গেল। ভাের সাড়ে ৫টায় ঝড়াে বাতাসসহ মুষলধারে বৃষ্টি হলাে প্রায় এক ঘন্টা ধরে। অবশিষ্ট দিন আকাশ পরিষ্কার। রাতের শেষ ভাগ পর্যন্ত আকাশ পরিষ্কার ও উজ্জ্বল। রাত। কিন্তু এর পরই আকাশ মেঘলা হয়ে উঠল ও ভারী বর্ষণ নেমে এল এবং তা সকালে এক ঘন্টা ধরে অব্যাহত থাকল। | বি. দ্র. এই বৃষ্টি ধান ও সরিষার খুব ক্ষতি করল। সবেমাত্র ধানের শীষ দোল খাচ্ছিল। এমন সময় ঝড়াে বাতাস এ সবকে একেবারে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিল। ৩.১১.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সারাদিন ঘরেই রইলাম। গােসল করা ও দুপুরে খাওয়া হলাে না অবহেলা এবং বিকেলে বৃষ্টির কারণে। আক্কাস আলী বিকেল ৪টার দিকে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত আলাপ করলেন মূলত তার বাবার সঙ্গে সম্পর্কিত
২২০
পারিবারিক বিষয় নিয়ে। তার বাবা আজ বিকেলে সালিশ ডেকেছেন। বারিসাবােরের পিইউবি সােবহান সরকার সন্ধ্যায় আমাদের বাড়ি এলেন এবং রাতে থাকলেন। রাতে আমি তার সঙ্গে খাবার খেলাম। সকালে মফিজউদ্দীন জয়দেবপুর গিয়েছিল রায়েদের চান্দু মিয়ার কাছ থেকে চরের জমি রেজিস্ট্রি করে নিতে। কিন্তু জমির সিএস নম্বরে ভুল থাকায় রাত ৯টার দিকে সে ফিরে এল। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : খুব সকালে ভালাে এক পশলা বৃষ্টি হলাে। দিনের মধ্য ভাগে আকাশ
আংশিক পরিষ্কার। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রবল বর্ষণ। রাতে আকাশ পরিষ্কার। নমনীয় ঠাণ্ডা পরিবেশ।
৪.১১.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সােবহান সরকারের সঙ্গে নাস্তা করলাম। তারপর তিনি বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলেন। আমি তার সঙ্গে জেলা বাের্ডের রাস্তা পর্যন্ত হেঁটে গেলাম। কিন্তু তিনি জেলা বাের্ডের রাস্তা পাশে আমাদের ধান খেতের প্রান্তসীমায় বসে কুশদির এনায়েতুল্লাহ মুন্সির ছেলে লাল মিয়ার ব্যাপারে আলাপ করতে লাগলেন। তারপর বেলা ১২টার দিকে চলে গেলেন। তিনি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিলেন ছেলেটির দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বাস্থ্যের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে আমাকে জানাবেন। ওয়ারিস আলী সেই সময় বসে ছিলেন খেতের পশ্চিম প্রান্তে। তিনি আমার সঙ্গে বাড়ি পর্যন্ত এলেন এবং স্কুলের ব্যাপারে কথা বললেন। বেলা সাড়ে ৩টায় শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম। ওয়ারিস আলীর বাড়ির কাছে মফিজউদ্দীনকে পেলাম। সে জয়দেবপুর থেকে আসছিল। মফিজউদ্দীন জানাল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়েছে। সূর্যাস্তের সময় শ্রীপুর পৌছলাম। রাত প্রায় সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ইসমাইল খানের দোকানের সামনে বসে সালেহ আহমদ মণ্ডলের সঙ্গে আলাপ করলাম। স্বল্প সময়ের জন্য ক্লাবে হাজির হলাম এবং ওসি, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর প্রমুখকে সেখানে পেলাম। খাবার খেলাম। আমার আবাসস্থলে ফিরলাম রাত সাড়ে ৯টার দিকে।
বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দিনের বেলা আকাশ পরিষ্কার। রৌদ্রোজ্জ্বল দিন। রাতে আকাশ
পরিষ্কার। ঠাণ্ডা পরিবেশ। হেলাল মিয়া পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন। আজির নৌকায় তিনি দুপুরে কাপাসিয়ার উদ্দেশে রওনা হলেন। ৫.১১.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে। স্কুলের অফিসে কাজ করলাম বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বেলা আড়াইটার দিকে আহমদকে সঙ্গে নিয়ে কাশেম সাহেব স্কুলে এসেছিলেন। রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, বলাই বাবু ও কাশেমের সঙ্গে। ব্যাডমিন্টন খেললাম। খেলার শেষে যাওয়ার পথে সেকেন্ড অফিসার জেড হকের সঙ্গে কালু মণ্ডলের অভ্যন্তরীণ অবস্থা নিয়ে কথা বললাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : দিনে ও রাতে আকাশ পরিষ্কার। ঠাণ্ডার মাত্রা বেড়েছে। ৬.১১.৫২ -ঢাকা ও ফিরে আসাভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হাসান মণ্ডল, আহমদ ও কাশেমকে নিয়ে স্কুলের অফিসে গেলাম । হাসান মণ্ডল কাশেমকে একটি নিয়ােগপত্র দিলেন। আমি তার কাছ থেকে হাবিব ব্যাংকের ২০০ টাকার একটি চেক গ্রহণ করলাম। সকাল ৮টার ট্রেনে আহমদ ও কাশেমকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। ট্রেনে আকবর আলী বেপারি আমার পাশে বসলেন এবং ঢাকা স্টেশন পর্যন্ত এলেন। আমি সােজা হাবিব ব্যাংকের মৌলবি বাজার শাখায় গেলাম। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ব্যাংকের প্রবেশমুখে দেখা হলাে নাইমুদ্দিনের সঙ্গে।
১ মৌলবি বাজারে মাহমুদ আলী সাহেবের সঙ্গে তার নওবেলাল অফিসে দেখা করলাম। সেখানে দেওয়ান মাহবুব আলী ও অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১২টা পর্যন্ত কথা বলে ওখান থেকে উঠলাম। সােজা এলাম বার লাইব্রেরিতে। সেখানে পেলাম আতাউর রহমান খান, কফিলউদ্দীন চৌধুরী সাহেব, জমির প্রমুখ ও কামরুদ্দীন সাহেবকে। কামরুদ্দীন সাহেব আমাকে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানীতে তার অভিজ্ঞতার একটি ফিরিস্তি দিলেন। আমি উঠলাম বেলা পৌনে ২টায়। অনুপস্থিত থাকায় এসডিও (উত্তর) কে পেলাম না। এসডিওর আদালতের সামনে সালেহ আহমদ মণ্ডল আমাকে ডাবের পানি খাওয়ালেন। সাদির ও কফিলউদ্দীন মােক্তার প্রমুখের সঙ্গে দেখা হলাে। বেলা আড়াইটায় চলে এলাম। বেলা ৩টায় বাকির সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। তার সঙ্গে ১১৯ নবাবপুর রােডে কিশাের মেডিকেলে এলাম এবং বেলা সাড়ে ৩টায় সেখান থেকে উঠলাম। পাটুয়াটুলিতে বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শাহিদার জন্য কাপড় ও জুতা কিনলাম। তারপর সােজা স্টেশনে এলাম। মানিক মিয়ার সঙ্গে বিকেল সাড়ে সাড়ে ৪টায় দেখা হলাে বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সার্ভিস জুতার দোকানে। সন্ধ্যা ৬টা ২৬ মিনিটের ট্রেনে শ্রীপুর পেীছলাম। গােসিঙ্গার আজিজ ঢাকায় আমার জন্য টিকেট কিনলেন। রাত ৯টার দিকে শরাফতের দোকানের বকেয়া টাকা পরিশােধ করলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। বি. দ্র. ৪.১১.৫২ তারিখ থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় আমি ঠাণ্ডায় ভুগছি। ৭.১১.৫২ -বাড়ি ও ফিরে আসাভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে সেমাই খেলাম। নবম শ্রেণীর ছাত্র ইসমাইলের কাছ থেকে সাইকেল নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। শাহিদার জন্য নেওয়া কাপড় ও জুতা দেখে মার নির্দয় মন্তব্য ও মুখাবয়বে আমি খুবই বেদনাহত হলাম। গােসল করলাম এবং দুপুরের খাবার খেয়ে
শ্রীপুর ফিরলাম বিকেল সাড়ে ৪টায়। বাড়ি ছাড়ার সময় আমি আফসুকে বললাম, সে নিজে যেন আগামীকাল সকালে রফির কাছে ২০ টাকা পৌছে দিয়ে আসে এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের স্কুল বকেয়া পরিশােধ করে। চলে আসার সময় আমাদের পশ্চিম হালটে সােনারুয়ার মনিরুদ্দিনকে পেলাম। তিনি ঢাকা থেকে ফিরছিলেন। এ ছাড়াও দেখলাম হালটের পাশে মরিচ খেতের আগাছা তুলছেন আবদুল খান, আজিজ খান এবং তিলকের ছেলে তাহের আলী। সন্ধ্যা সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্লাবে ব্যাডমিন্টন খেললাম; মালেক সাহেব ও পিএলএ কালিপদের সঙ্গে। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৮টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই।
৮.১১.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত স্কুলে। বেলা ২টা থেকে প্রায় সাড়ে ৩টা পর্যন্ত লেপের কভার, বালিশের কভার, ভােয়ালে ইত্যাদি ধুলাম। ডিএবির ডেপুটি এসপি সাইজুদ্দিন সাহেব বেলা ২টার ট্রেনে এসেছেন। তিনি এম বিশ্বাসের মামলা তদারকি করলেন। এসআই সেলিম উদ্দিন ও হাফিজউদ্দিন তার সঙ্গে এসেছেন। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হাসান মণ্ডল, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও আমি জেলা বাের্ড বাংলােয় স্কুলের রেকর্ডপত্র নিয়ে ডেপুটি এসপির সঙ্গে বসলাম। ডেপুটি এসপি এম বিশ্বাসকেও ডেকে পাঠালেন বিষয়গুলাে পরিষ্কার হওয়ার জন্য। তিনি একটি অসামঞ্জস্যেরও ব্যাখ্যা দিতে পারলেন না। শ্রীপুর পিইউবির ধনাই বেপারি এম বিশ্বাসের ৫০০ টাকা পরিশােধের ব্যাপারে আপােসরফায় পৌছতে মধ্যস্থতা করলেন। সামাদ খানের কেরােসিন মজুদে কিছুটা অসামঞ্জস্য পাওয়া গেল। সাত্তার খান ও সামাদ খান আমাকে অনুরােধ করলেন বিষয়টির ব্যাপারে এসআই সেলিমের সঙ্গে মধ্যস্থতা করার জন্য।
দুপুরে খাবারের পর আমি জেলা বাের্ড বাংলােয় এলাম । এম বিশ্বাসের মামলা নিয়ে কথা বলে ঘরে ফিরলাম রাত সাড়ে ৯টার দিকে। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। মধ্য দুপুর থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে এল। সূর্য
ঢেকে গেল। রাতেও আকাশ মেঘে ঢেকে রইল। ৯.১১.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টায় ডেপুটি এসপিকে স্টেশনে বিদায় জানালাম। ওসি, সেকেন্ড। এসআই, ডা. আহসানউদ্দিন ও ধনাই বেপারি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ট্রেন চলে যাওয়ার পর ধনাই বেপারি আমাদের সবাইকে বাজারে তার দোতলা বাড়িতে নিয়ে গেলেন এবং সকলকে ৪টি করে ক্ষীরমােহন দিলেন। সাত্তার খানও আমাদের সঙ্গে যােগ দিলেন। পুলিশের নামে জনগণের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহে কালু মণ্ডলের আচরণের ব্যাপারে আমি ওসিকে অবহিত করলাম। সেকেন্ড অফিসার এই বিষয়টি সমর্থন করলেন এবং মাত্র গতকালই এক বৃদ্ধ মহিলার ওপর দমন নিপীড়নের দৃষ্টান্ত তিনি তুলে ধরলেন। দমন নিপীড়নের সময় বিষয়টি ওসিকে অবহিত করা হয়েছিল। ওখান। থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় বের হলাম। আমি চুল ছাঁটালাম। তারপর গােসল সেরে বেলা ২টায় স্কুলে গেলাম। বলাই বাবুকে সঙ্গে নিয়ে বেলা আড়াইটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হিসাবপত্র হালনাগাদ করলাম এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে প্রসন্ন বাবু ও মৌলবি ইয়াকুব আলী উপস্থিত ছিলেন। ঘরে ফিরলাম রাত সাড়ে ৮টায়। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : সারাদিন ও রাত আকাশ ঘন মেঘে ছেয়ে থাকায় পরিবেশ বিষন্ন ও অন্ধকারময়। রাতের প্রথম ভাগে হালকা বৃষ্টি হলাে। দিনের বেলা থেকে বাতাস শীতের তীব্রতা আরাে বাড়িয়ে দিয়েছে।
২২৫
১০.১১.৫২
-বাড়ি-ফিরে আসা ও ঢাকাভাের ৪টায় উঠেছি। সকাল ৬টার দিকে ডা. আহসানউদ্দিনের কাছ থেকে সাইকেল নিলাম এবং সাইকেলে বাড়িতে গেলাম। শাহিদাকে বললাম বেলা ২টার ট্রেনে ঢাকায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে। তারপর নাস্তা খেলাম। বাড়িতে মাত্র এক ঘন্টার মতাে রইলাম। আবদুল খানের সঙ্গে চরের জমি সংক্রান্ত বিরােধ নিয়ে টুকু আমার কাছে এল। আমি তাকে বললাম একটি সালিশ ডেকে জমি মাপতে ও সীমানা নিষ্পত্তি করার জন্য। শ্রীপুর ফিরলাম সকাল ৯টায়। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বলাই বাবুকে সঙ্গে নিয়ে। হিসাবপত্র হালনাগাদ করলাম। তারপর দুপুরে বাের্ডিং হাউসে খেলাম। হােস্টেলের ছেলেরা আমাকে যে দুধ দেয় তা ভাগাভাগি করে নিলেন ইয়াকুব আলী। ছাত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমাকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানালেন বেলা পৌনে ১টায়। সে সময় আমি আমার আবেগ সামাল দিতে পারলাম না। ছেলেদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমার মনকে প্রবলভাবে ব্যর্থকাতর করে তুলল। প্রায় ১০ মিনিট আমি কোনাে শব্দই উচ্চারণ করতে পারলাম না। আমার কণ্ঠ পুরােপুরি রুদ্ধ হয়ে এল। এর আগে আমি কখনাে এভাবে আবেগাপ্লুত হইনি। ছেলেরা সবাই ফুপিয়ে কাঁদছিল; শিক্ষকরাও। অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র আবদুল বাতেন আমাকে ফুলের মালা পরিয়ে দিল। মালার সজীব ফুলগুলাে অচিরেই নির্জীব হয়ে যাবে, কিন্তু ছেলেদের ভালােবাসার স্মৃতি আমার হৃদয়ে চির সতেজ থাকবে। -ঢাকাসব ছাত্র ও শিক্ষক স্টেশনে ভিড় জমাল এবং আমাকে বিদায় জানাল। চলন্ত ট্রেন থেকে যতক্ষণ আমি তাদেরকে দেখতে পেলাম ততক্ষণই স্থির দৃষ্টিতে সে দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি ছেলেদের মুখের পানে আমার চোখ তুলে ধরতে পারলাম । এটা আমার জীবনের মর্মস্পর্শী একটি ঘটনা। আমি এটা লিখছি ১১,১১.৫২ তারিখে রাত ৩টায় । কিন্তু তার পরও তীব্র মর্মবেদনা থেকে মুক্ত হতে পারিনি এবং ঘটনাটির কারণে আমি চিন্তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলেছি। বাড়ি থেকে শাহিদাকে নিয়ে বাড়ির দুই ভৃত্য-সােবহান ও আকবর আলি শ্রীপুর এসেছে।
শ্রীপুরে ১ বছর ৩ মাস ৩ দিন থাকার পর বেলা ২টার ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে শ্রীপুর ছাড়লাম। হােসেন মাস্টার আমার সঙ্গী হলেন। শাহিদাকে নিয়ে আমি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ৪৭ ঠাটারি বাজারে এলাম। যােগীনগর গেলাম। সেখানে গনি চৌধুরীর স্ত্রীর কাছ থেকে জানতে পারলাম প্রায় ১৫ দিন আগে ভাবী তার বাবার বাড়িতে গেছেন। বিকেল ৫টার দিকে কিশাের মেডিকেল হলে গেলাম। ডা, করিম এলেন সন্ধ্যা ৬টার দিকে। ওখানে রাত সােয়া। ৯টা পর্যন্ত রইলাম। তারপর ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : দিনের দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ভাগে হালকা বৃষ্টি হলাে এবং মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হলাে রাত পৌনে ৯টায়। আকাশ পুরােপুরি মেঘে ঢাকা। পরিবেশ খুবই নিষ্প্রভ ও বিষন্ন। একই অবস্থা অব্যাহত থাকল। | ১। ১৯৪১ সালের জানুয়ারি থেকে বসবাস করা শহর ছেড়ে আমি শ্রীপুর যাই ৭.৮.৫১ তারিখে। ২। শ্রীপুর হাই স্কুলে একজন শিক্ষক হিসেবে যােগ দেই ৮৮.৫১ তারিখে। ৩। ডা, আহসানউদ্দিন, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর এ মালেকের সঙ্গে আমাকে অডিট কমিটির সদস্য পদে এসডিও (উত্তর) নিয়ােগ দেন ৩০.৯.৫১ তারিখে। ৪। তদন্তের ফল হিসেবে এম বিশ্বাসকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অপসারিত করা হয় ৮.২.৫২ তারিখে। ৫। জনাব এফ করিম বিএসসি (অনার্স) প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৮.২.৫২ থেকে ১০.৪.৫২ তারিখ পর্যন্ত। আমি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করি ১২.৪.৫২ থেকে ৩১.৭.৫২ তারিখ পর্যন্ত। তারপর পি কে দাস ১.৮.৫২ তারিখ থেকে। | ৭। শিক্ষকতা থেকে ইস্তফা দিয়ে আমি শ্রীপুর ছাড়লাম ১০.১১.৫২ তারিখে এবং ঢাকায় এলাম মূলত কিশাের মেডিকেল হলে যােগ দিতে। ৮। আমার সময় বি সি শীল, নিজামউদ্দিন, পি কে দাস, সাইদ আলী, ইয়াকুব আলী ছিলেন কর্মকর্তা। শামসুদ্দিন ছিলেন দফতরি।
১১.১১.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৭টায় শাহিদাকে সঙ্গে নিয়ে পাতলা খান লেনে ইজ্জত আলী সরকারের বাড়িতে গেলাম। ওখানে হােসেন মাস্টার, বশিরউদ্দিন পণ্ডিত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টায় বিসমিল্লাহ হােটেলে শাহিদাকে নাস্তা করালাম। গভর্নমেন্ট মুসলিম হাই স্কুলে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা শুরু হলাে সকাল ১১টায়। আজকের বিষয় বাংলা। পরীক্ষা শেষ হলাে বেলা ১টায় । প্রবল বৃষ্টির কারণে ওখানে এক ঘন্টার মতাে আটকে রইলাম এবং তারপর ফিরলাম। পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়াস ভাইসাহেব, কাপাসিয়ার ওসি, কাপাসিয়ার বশির, নারায়ণপুরের আসিরুদ্দিন মাস্টার ও আরাে অনেকের সঙ্গে দেখা হলাে। গােসল করতে পারলাম না। দুপুরের খাবার খেলাম বেলা ৩টার দিকে। বিকেল ৪টায় সাত্তার খান আমার সঙ্গে কথা বলতে এলেন তার কেরােসিন মামলার যােগসূত্রে। আমি তাকে প্রতিশ্রুতি দিলাম এই বিষয়ে আগামীকাল এসআই সেলিম উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করার। বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি চলে গেলেন। বিকেল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত করিম, বাকি প্রমুখের সঙ্গে কিশাের মেডিকেল হলে রইলাম। হােসেন মাস্টার রাতে আমার সঙ্গে থাকলেন। খাবারও খেলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : সারাক্ষণ নিষ্প্রভ ও অন্ধকারময় পরিবেশ। বিরতি দিয়ে বৃষ্টি হলাে সারাদিন ও রাতে। মধ্য দুপুরে ভারী বৃষ্টিপাত। ঠাণ্ডা পরিবেশ। ১২.১১.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৮টায় ঠাটারি বাজারে একটি রেস্তোরায় হােসেন মাস্টারের সঙ্গে নাস্তা করলাম। তারপর তিনি পাতলা খান লেনের উদ্দেশে চলে গেলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় শাহিদাকে সঙ্গে নিয়ে মুসলিম হাই স্কুলে গেলাম। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলাে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। মাঝে বেলা ১টা থেকে ২টা
পর্যন্ত বিরতি ছিল। পরীক্ষা হলাে গণিত, ভূগােল ও বিজ্ঞান বিষয়ে। এটাই ছিল শেষ পরীক্ষা। গিয়াস ভাইসাহেব আমাকে জানালেন, তিনি ধলিয়ায় হালিম খানের কাছে বুলবুলের বিয়ের ব্যাপারে চিঠি লিখেছেন এবং শিগগিরই তিনি নিজে সেখানে যাবেন। বেলা ১২টায় আদালতে গেলাম। এসআই সেলিমউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে এসডিও (উত্তর)-এর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি শ্রীপুর এইচ ইর ম্যানেজিং কমিটির পদাধিকারী কর্মকর্তাদের নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করলেন ২২.১১.৫২ বেলা ২টায়। আমরা এম বিশ্বাসের মামলা নিয়ে আলােচনা করলাম। এসডিও (উত্তর) বললেন, জয়দেবপুর ও কাওরাইদে তার সাম্প্রতিক সফরের সময় লােকমুখে তিনি আমার প্রশংসা শুনছেন। ৫ ও ৬ নভেম্বর তিনি সেখানে সফরে গিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, নীলখেত ব্যারাকের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত তার বাসায় আগামী শুক্রবার (২১.১১.৫২) তার সঙ্গে দেখা করার জন্য। তার ওখান থেকে উঠলাম বেলা পৌনে ১টায়। বড়হরের হাকিম মিয়া মুসলিম হাই স্কুলে আমার সঙ্গে দেখা করলেন এবং আগামীকাল তার ফরেস্ট মামলা বিষয়ে ৩টি জামানতনামায় আমার স্বাক্ষর নিলেন। ঠাটারি বাজার ফিরে এলাম বিকেল সাড়ে ৪টায়। বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কিশাের মেডিকেল হলে ছিলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : সূর্যের আলোের দেখা নেই। পুরােটা দিন অন্ধকার ও বিষন্ন। সারাদিন বিরতিসহ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। রাতের শেষ ভাগে চাদ ও তারায় ভরা পুরােপুরি পরিষ্কার আকাশ। এক খণ্ড মেঘও নেই। কিন্তু সূর্য ওঠার পর থেকে আবার মেঘমালা হাজির হতে লাগল।
১৩.১১.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। সকাল ৯টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কিশাের মেডিকেল হল দোকানে। মাঝে দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত গােসল এবং খাবারের বিরতি। সাত্তার খানকে সঙ্গে নিয়ে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর এলেন। তিনি এসেছিলেন সাত্তার খানের কেরােসিন মামলা প্রসঙ্গে কথা বলতে। তারা চলে গেলেন বেলা ১২টা ১৮
মিনিটের ট্রেনে। পরিদর্শক জব্বার মিয়া সকাল ১০টায় এবং আবার বিকেল সাড়ে ৫টায় আমার কাছে এলেন। তিনি আমাকে রাজি করাতে চেষ্টা করলেন সিংহস্রী এইচ ই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য। তার ক্রমাগত চাপের মুখে প্রার্থী হতে আমি একটি দরখাস্ত লিখলাম এবং জব্বার মিয়া সেটি তার সঙ্গে নিয়ে গেলেন। এসআই এস হজরত আলী মিয়া বিকেলে দোকানে বসলেন। সন্ধ্যার পর জালাল। ও গিয়াস ভাইসাহেব এলেন। ডা, করিমের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বুলবুলের বিয়ের ব্যাপারে ৩০.১১.৫২ তরিখে ধলিয়া যাওয়ার জন্য তারা দিন ঠিক করলেন। তারা চলে গেলেন রাত ৮টায়। সাত খামাইরের ইসরাফিল সরকার আমার সঙ্গে বসলেন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে। রাত ৯টা পর্যন্ত। তিনি সাত থামাইরের মামলা নং ৩০২ নিয়ে কথা বললেন। কথার মাঝে উঠে এল হাসান মল ও তার ভাইদের এবং শ্রীপুর থানার সেকেন্ড অফিসার জেড হকের ভূমিকা। সন্ধ্যায় স্টেশনে যাওয়ার পথে হাকিম মিয়া আমার সঙ্গে দেখা করলেন। আবহাওয়া : সকাল ৯টা পর্যন্ত আকাশে মেঘ ছেয়ে গেল এবং তারপর আবার একে একে সরেও গেল। মধ্য দুপুর থেকে শেষ পর্যন্ত রৌদ্রলােক। রাতে আকাশ পরিষ্কার। তাপমাত্রা খুব একটা কম নয়। চার দিন উচ্চমাত্রায় অস্বাভাবিকতার পর স্বাভাবিক আবহাওয়া ফিরে এল। ১৪.১১.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা দেড়টা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা। পর্যন্ত কিশাের মেডিকেল হল দোকানে। সকাল সাড়ে ১০টায় মৌলবী ইয়াকুব আলী আমার সঙ্গে ফার্মেসিতে দেখা করলেন। আগামী ২২.১১.৫২ তারিখে ম্যানেজিং কমিটির পদাধিকার কর্মকর্তাদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তারা এসডিও উত্তর-এর নির্দেশনার নােট ও আমার চিঠি পেয়েছেন। আমি তাকে চা খাওয়ালাম। তিনি বেলা সাড়ে ১১টায় চলে গেলেন। শাহিদাকে নিয়ে রূপমহল সিনেমা হলে বেলা সােয়া ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সিনেমা দেখলাম। রাণী ভবানি দেখানাে হলাে। ফিরলাম বিকেল সাড়ে ৫টায়।
২৩০
যােগীনগর গেলাম এবং যুবলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার শেষের দিকে দশ মিনিটের জন্য যােগ দিলাম। মাহবুব আলী সভাপতিত্ব করলেন। আজ সকালে ভাবী তার বাবার বাড়ি থেকে ফিরে এসেছেন। তার সঙ্গে সন্ধ্যা সােয়া ৬টা পর্যন্ত কথা। বলে উঠে পড়লাম। ঠাণ্ডা-কাশির কারণে খুব একটা স্বস্তিবােধ করছি না। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির । কারণে ঠাণ্ডার সংস্পর্শে আসায় শরীর অসুস্থ হয়েছে। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : নমনীয় ঠাণ্ডা পরিবেশ। আকাশ পরিষ্কার। বি. দ্র. আজ থেকে দুদিনব্যাপী নিজাম-ই-ইসলাম সম্মেলন শুরু হলাে; জমিয়াতে উলামা-ই-ইসলামের পৃষ্ঠপােষকতায়। নিজাম-ই-ইসলামের দাবির স্লোগান তুলে তারা বেশ বড় সমাবেশের আয়ােজন করেছে। ১৫.১১.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা এবং বেলা ২টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। ফার্মেসিতে। সন্ধ্যা ৬টায় জে বসাক অ্যান্ড সন্স থেকে হাকিম মিয়ার রাবার স্ট্যাম্প বুঝে নিলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : সারাদিন ও রাতে আকাশ পরিষ্কার। নমনীয় ঠাণ্ডা পরিবেশ।
১৬.১১.৫২ ভাের ৪টায় উঠেছি। ভাের ৫টার ট্রেনে শাহিদাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম। ঢাকা স্টেশনে কপালেশ্বরের আজিজ মাস্টার ও সিংহস্রীর মমতাজকে পেলাম। রংপুরের এসডিআই অব স্কুলস আবুল হাশেম একই কামরায় আমার সঙ্গী হলেন। সারা পথ আমি তার সঙ্গে শিক্ষা বিষয়ে সরকারের ভ্রান্ত পদক্ষেপগুলাের ব্যাপারে কথা বললাম।
শ্রীপুর এইচ স্কুল ভবনে জাহান্দারের রুমে বিশ্রাম নিলাম। মৌলবি ইয়াকুব আলী আমাদের রসগােল্লা ও চা দিয়ে আপ্যায়ন করালেন। বাড়ি পৌছলাম সকাল ১০টার দিকে। বিকেলে মেন্দির বাপের সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করলাম। তিনি দরদরিয়া বাজারের উদ্দেশে রওনা হলে আমি তার সঙ্গে বক্তার বাড়ি পর্যন্ত গেলাম। গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ে আলােচনা হলাে না। আমাদের বাড়ির চারপাশের মাঠগুলােতে হেঁটে বেড়ালাম সন্ধ্যা পর্যন্ত। ঠাকুরা বিল পর্যন্ত গেলাম এবং রজব আলী কালের পুরনাে ভিটা ধরে বাড়িতে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ১৭.১১.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। শ্রীপুর পৌছলাম সকাল সােয়া ৮টায়। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দেখা করলাম। আধ ঘন্টা দেরিতে আসা সকাল ৮টা ১৪ মিনিটের ট্রেনে রওনা হলাম। একই কামরায় ছিলেন উষা, কালিপদ, হােসেন খানের ছেলে আলাউদ্দিন প্রমুখ। সকাল ১১টা থেকে বেলা সােয়া ১টা এবং বেলা আড়াইটা থেকে রাত সােয়া ৯টা পর্যন্ত ফার্মেসিতে। সন্ধ্যায় সাত্তার খান আমার সঙ্গে দোকানে দেখা করলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ১৮.১১.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা এবং বেলা আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দোকানে। বেলা ১২টায় ২৬/১ মদন মােহন বসাক রােডের জলিল দোকানে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি পৌর নির্বাচন নিয়ে ২০ মিনিট ধরে আলাপ করলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়।
আবহাওয়া : বিকেলে আকাশ পুরােপুরি মেঘে ছেয়ে গেল । তবে রাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ পুরােপুরি পরিষ্কার হয়ে গেল। অপেক্ষাকৃত কম ঠাণ্ডা। বাতাসে মনে হচ্ছে জলীয় বাষ্প রয়েছে। ১৯.১১.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত পড়াশােনা করলাম। সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১২ পর্যন্ত এবং বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকানে ছিলাম। দুপুর ১২টার পর অ্যাবট ল্যাবরেটরির বিলের বিপরীতে হাবিব ব্যাংকে টাকা জমা করলাম । বেলা ১১টায় সাত্তার খান আমার সঙ্গে দোকানে দেখা করলেন। তিনি আমাকে চাপ দিলেন ডাক্তার জলিলের মেয়েকে বিয়ে করার জন্য। আজ রাত সাড়ে ৯টায় বাকি বাড়ি থেকে ফিরল। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : সারাদিন ও রাতে আকাশ পরিষ্কার। অপেক্ষাকৃত কম ঠাণ্ডা।
২০.১১.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দোকানে। ঠাণ্ডা মিয়া (মমা, হােসেন) সকাল সাড়ে ৯টায় দোকানে এসে বসলেন এবং আইন ডিগ্রির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তার মামলা নিয়ে আলােচনা করলেন। বেলা ১টায় ৩০ মিউনিসিপ্যাল রােডের রায় ভিলায় অবস্থিত কর অফিসে গেলাম ও ফিরে এলাম। আবার গেলাম বেলা ২টায়। ঢাকা ২-এর আয়কর কর্মকর্তা আমার। কথা শুনলেন বেলা পৌনে ৩টায়। তিনি আমাকে মামলা থেকে মুক্তি দিলেন এবং বললেন, যেহেতু আমি বর্তমানে কোনাে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই সেহেতু তিনি। আমার মামলাটি বাতিল করে দেবেন। বেলা ৩টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম।
কামরুদ্দীন আহমদ, আতাউর রহমান খান প্রমুখকে পেলাম না। এসডিও উত্তর-এর আদালতে আহমদ মাস্টারকে পেলাম, তবে এসডিও উত্তরকে পেলাম না। দোকানে ফিরলাম বিকেল ৪টায় । আরমানিটোলা ময়দানে গেলাম। সেখানে শহীদ সােহরাওয়ার্দী আজ সন্ধ্যায় একটি সভার আয়ােজন করেছেন। বিপুলসংখ্যক লােকজন সেখানে সমবেত হচ্ছিল। এন আমিনের ভাইপাে আজহারুল ইসলাম সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে দেখা করলেন এবং অনার্স পরীক্ষা নিয়ে আলাপ করলেন। বাকি ও তার এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বললাম রাত ১টা পর্যন্ত। তারপর বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতােই। ২১.১১.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। বিকেল ৪টা থেকে রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত দোকানে। সকাল সাড়ে ৯টায় গেলাম এসডিও (উত্তর)-এর আদালতে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এসডিওর সঙ্গে তার খাস কামরায় বসলাম। শ্রীপুর এইচ ই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির পদাধিকারী কর্মকর্তাদের নির্বাচন আগামীকাল অনুষ্ঠানে তিনি তার অক্ষমতা প্রকাশ করলেন এবং এর পরিবর্তে তিনি নির্বাচনের নতুন তারিখ নির্ধারণ করলেন ১৩.১২.৫২ সকাল ৮টা। শ্রীপুরের রেঞ্জার আসিরুদ্দিন সাহেবের মাধ্যমে বলাই বাবুকে এ খবর জানিয়ে একটি চিঠি লিখে দিলাম। আইয়ুব আলীর উপস্থিতিতে আমি রেঞ্জারের কাছে বলধা ফরেস্ট বিক্রির ব্যাপারে আমাদের আবেদনটি দেখালাম এবং তিনি দেখে বললেন সব ঠিক আছে। আমি রেলওয়ে স্টেশনে গেলাম এবং সেটি আইয়ুব আলীকে দিলাম। তাকে অনুরােধ করলাম এটি গােসিঙ্গার ফরেস্টার সেকান্দার আলীর কাছে জমা দেওয়ার জন্য। তিনি কথা দিলেন আমার অনুরােধ রক্ষা করবেন। স্টেশনে কালু মণ্ডলকে পেলাম। তাকে আগামী কালকের ম্যানেজিং কমিটির সভা স্থগিত হওয়ার ব্যাপারটি জানালাম। বাসায় ফিরলাম বেলা সাড়ে ১২টায়। কাপড় ধুয়ে খাবার খেলাম বেলা সাড়ে ৩টায়। এরপর দোকানে গেলাম।
বিছানায় গেলাম রাত ১২টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ২২.১১.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। তােয়াহা সাহেবের বড় ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারলাম কামরুদ্দীন আহমদ সাহেব বরিশালে গেছেন। আমি কফিলউদ্দীন চৌধুরীর বাসায় গেলাম সকাল সাড়ে ৯টায়। তিনি আমি যাওয়ার আগেই কমিশনারের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছেন। বার লাইব্রেরিতে গেলাম সকাল ১০টায়। চৌধুরী সাহেব এলেন সকাল সাড়ে ১০টায়। এবং প্রথম সাব জজ ও ষষ্ঠ মুন্সেফ আদালতে ব্যক্তিগতভাবে আমার পেশ করা হাজিরাগুলাে অনুমােদন করলেন। সকাল ১১টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত প্রথম সাবজজের আদালতে। কে নূরউদ্দিনের বিরুদ্ধে এইচ হক চৌধুরীর দায়ের করা মানহানি মামলার যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শুরু হলাে সাড়ে ১১টায়। ব্যারিস্টার হামদুর রহমান তার যুক্তি পেশ করছিলেন। আমার মামলাগুলােতে আসিমউদ্দিনের আইনজীবীরা সময় প্রার্থনা। করলেন। বেলা আড়াইটায় আদালত থেকে চলে আসায় আমি এ বিষয়ে রায় দেখে আসতে পারলাম না। বাসায় ফিরে এলাম। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আমাদের দোকানের সামনে রেঞ্জার আসিরুদ্দিনকে পেলাম এবং তিনি আমাকে জানালেন তিনি আমার চিঠিটা। শামসুদ্দিন দফতরিকে দিয়েছেন। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ২৩.১১.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা এবং বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাত সােয়া ৯টা পর্যন্ত দোকানে।
২৩৫
বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ২৪.১১.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। দোকানে কাটালাম সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১টা এবং বেলা আড়াইটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সাত্তার খান কয়েকদিন আগে আমার কাছ থেকে টিআর ফরম নিয়েছিলেন; ফরমটি তিনি নিজের কাছে রেখেছিলেন। তিনি এলেন সকাল ১০টার দিকে। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ২৫.১১.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সাইকেলে মালিবাগ গেলাম সকাল ৮টায়। কাশিমকে ভেতরেই পেলাম। তিনি আমাকে দুধ, বিস্কুট, মুড়ি ও অমলেট সহকারে নাস্তা দিলেন। তার কাছ থেকে অর্থনীতির ওপর ৭টি বই নিলাম। তিনি সেখানে ডা, এ রহিম এলএমএফ-এর সঙ্গে থাকেন। ডা. এ রহিম এখন সংক্ষিপ্ত এমবি কোর্সের ছাত্র। দোকানে ফিরলাম সকাল সাড়ে ৯টায়। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১টা এবং বেলা ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকানে ছিলাম। গিয়াস ভাইসাহেব ও জালাল ভাইসাহেব দোকানে এলেন সূর্যাস্তের সময়। তারা আগামীকাল আসবেন ডা, করিমের সঙ্গে আলাপ করে ধলিয়া যাওয়ার তারিখ চূড়ান্ত করতে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা চলে গেলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই।
২৬.১১.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা এবং বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানে। বেলা প্রায় ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ডা. মন্নান (এমবি) দোকানে আমার সঙ্গে আলাপ করলেন। সন্ধ্যায় হায়দার সাহেব এলেন আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন ও শরফুদ্দিন সাহেবের প্রার্থিতা নিয়ে আলাপ করতে। কথা দিলেও জালাল ও গিয়াস ভাইসাহেব এলেন না। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া থেকে ১২৫ টাকার চেক ভাঙাতে গেলে ব্যাংক সহকারী আমাদেরকে ভুল করে ১০০ টাকা বেশি দিয়ে দেন। তারা আমাকে বিষয়টি জানায় এবং আমি টাকা ফেরত দিয়ে দেই। ২৭.১১.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা দেড়টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দোকানে। সকাল ১০টার দিকে দেওয়ান মাহবুব আলী এলেন। তিনি আমার সঙ্গে আগামীকাল সকাল ৮টায় গাছার সিরাজুল হক সাহেবের দেখা করার সময় ঠিক করলেন। তারপর তিনি চলে গেলেন। বেলা ১১টায় গিয়াস ভাইসাহেব আমার সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি বললেন ধলিয়া যাওয়ার তারিখ বিলম্বিত করতে চেয়েছিল জালাল। বিষয়টি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য তার বাড়ি ফেরা আমি থামিয়ে দিলাম। হাকিম মিয়া ও গিয়াস ভাইসাহেব যখন বসে ছিলেন তখন তাদেরকে চা দিয়ে আপ্যায়ন করলাম। তারা চলে গেলেন বেলা সাড়ে ১২টায়। গিয়াস ভাইসাহেবকে সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতি দমন অফিসে গেলাম বিকেল সাড়ে ৪টায় এবং জালালের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি সম্মত হলেন আগামী রােববার নির্ধারিত তারিখ ঠিক রাখতে। বেশিক্ষণ অপেক্ষা না করেই আমরা ফিরে এলাম।
ঢাকার ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়ে গিয়াস ভাইসাহেব সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আমাদের দোকানে এলেন এবং রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত জালালের জন্য অপেক্ষা করলেন। কিন্তু জালালের দেখা মিলল না। গিয়াস ভাইসাহেবের সঙ্গে আমি জালালের বাসায় গেলাম। তার কথাবার্তা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেল প্রস্তাবটি ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে তার দূর বাসনা রয়েছে। রাত সাড়ে ৯টায় গিয়াস ভাইসাহেবের সঙ্গে ৪৭ ঠাটারি বাজারে আমার বাসস্থানে ফিরলাম। গিয়াস ভাইসাহেব বর্ণনা করলেন, কীভাবে জালাল তার দূরভিসন্ধিমূলক প্রচারণার মাধ্যমে ক্ষতি করছে। রাত ১২টা পর্যন্ত তার সঙ্গে আলাপ হলাে। শহিদ মােক্তার সাহেবের বাসার সামনে তার সঙ্গে সাহাবুদ্দিন ফকিরকে পেলাম। আমি তাকে জেলা বাের্ড ডিসপেনসারিতে কর্মচারী নিয়ােগ নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি জানালাম। এরপর বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতােই। তবে ঠান্ডা একটু বেশি।
২৮.১১.৫২ গভীর রাত সাড়ে ৩টায় উঠেছি। গিয়াস ভাইসাহেবকে রাত ৪টায় স্টেশনে পাঠালাম ভাের ৫টার ট্রেন ধরার জন্য। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ২টা এবং বেলা আড়াইটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকানে ছিলাম। ৪৭ ঠাটারি বাজার থেকে মালপত্র গুছিয়ে ১১৯ নবাবপুর রােডে। নিয়ে এলাম। ঠাটারি বাজার চূড়ান্তভাবে ছেড়ে এলাম। বাকি ও আমি রাতে নতুন। বাসস্থানে জিনিসপত্র গােছগাছ করলাম। দুপুরের খাওয়া হলাে না। কারণ রান্নার আয়ােজন ছিল না, আর রেস্তোরাঁয় বাওয়ারও সময় ছিল না। মালপত্র স্থানান্তরে ব্যস্ত থাকার কারণেই অভুক্ত থাকতে হলাে। রাতের খাবার খেলাম রেস্তোরায়। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। স্বাভাবিকভাবেই শীত একটু বেশি অনুভূত হলাে। তাছাড়া আরেকটি কারণ হচ্ছে চারদিকে কোনাে বাড়িঘর না থাকায় আমাদের বাসাটি পড়ে গেছে শীতের প্রকোপের মধ্যে।
২৯.১১.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। মেঝেতে গাদাগাদি করে জিনিসপত্র সাজাতে-গােছাতে ব্যস্ত থাকার কারণে দিনের প্রথম ভাগে দোকানে বসতে পারলাম না। বেলা ২টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দোকানে রইলাম। এরই মাঝে বিশ মিনিটের জন্য আমি আদালতে গেলাম এবং আমাদের মামলাগুলাের তারিখ নিলাম। জালাল ভাইসাহেব সন্ধ্যায় এলেন। চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলাে যে, আমাদের উচিত সকালের মেইল ট্রেন ধরা। কয়েক মিনিট পর তিনি চলে গেলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ৩০.১১.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল সােয়া ৭টায় ঢাকা স্টেশনে জালাল, ডা. করিম ও সােনা মিয়ার সঙ্গে যােগ দিলাম। সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে মেইল ট্রেনের দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরায় চড়ে রওনা হলাম। কাওরাইদে গিয়াস ভাইসাহেব আমাদের সঙ্গে যােগ দিলেন। গফরগাঁও স্টেশনে পৌছলাম সকাল সাড়ে ১০টায়। গফরগাঁও বাজারে একটি রেস্তোরায় নাস্তা করলাম। একই ট্রেনে যেতে দেখলাম উকিল মতিউর রহমান, এইএমএসএল-এর সুলতান হােসেন খান প্রমুখকে। ধলিয়ার উদ্দেশে হাতিতে চড়ে আমরা রওনা হলাম বেলা ১২টায় এবং পৌছলাম বেলা ২টায়। গােসল করলাম এবং খেলাম বেলা সাড়ে ৩টায়। সন্ধ্যায় ব্যাডমিন্টন খেললাম। দুপুরের খাবার খাওয়ার পর তালেবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা হলাে মুহূর্তের জন্য। তার সঙ্গে কোনাে কথা হলাে না। ভালুকার চাদ মিয়া আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন মাগরিবের নামাজের পর। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তিনি চলে গেলেন। হালিম খানের খাস কামরায় রাতের খাবার খেয়ে
আমরা অতিথি কক্ষে বসে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করলাম মধ্য রাত ১২টা পর্যন্ত। এরপর বিছানায় গেলাম। রাতে ভালাে ঘুম হলাে না। আবহাওয়া : ভরা পূর্ণিমা। আকাশ পরিষ্কার। ভালাে ঠাণ্ডা। মনে হচ্ছে ঠাণ্ডা বাড়ছে।
২৪০
১ ডিসেম্বর, সােমবার ভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৯টায় নাস্তা সেরে হাতিতে চড়ে শিকারে বের হলাম। দুটি হাতি নিয়ে শিকারের পিছু ধাওয়া করা হলাে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। দুটি বাগডাশা ও একটি সজারু মারা পড়ল। একটি শূকর পালিয়ে গেল। বিনা কারণে ৫ বার গুলি ছুড়ে জালাল হতাশাজনক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সব পণ্ড করে দিল। বিশেষ করে ধাওয়া করার বিষয়টি নিষ্ফল করে দিল। বেলা ৩টায় ফিরে এলাম। এরপর গােসল করলাম এবং খাবার খেলাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় হাতিতে চড়ে গফরগাঁও স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হলাম। পৌছলাম সন্ধ্যা ৭টায়। ডা. করিম ও জালাল ঢাকায় যাওয়ার টিকেট কিনল। গিয়াস ভাইসাহেব ও আমি শ্রীপুরের টিকেট নিলাম। আমরা শ্রীপুর নেমে গেলাম। শ্রীপুরে কালু মণ্ডল, ফরেস্টার এ লতিফ ও জেড হক, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, এএসআই এ গনি, ননি, ডা. সুবােধ প্রমুখকে পেলাম। তারা সবাই আমাকে প্রবলভাবে অনুরােধ করলেন রাতে থেকে যাওয়ার জন্য। রাত সাড়ে ৯টায় রওনা হয়ে বাড়ি পৌছলাম রাত সাড়ে ১১টায়। বাড়িতে পৌছে বাঘিয়ার মফিজউদ্দীন মুন্সিকে দেখতে পেলাম। গিয়াস ভাইসাহেবের সঙ্গে রাতের খাবার খেলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১২টায়।
আবহাওয়া : আগের মতােই। বি. দ্র. সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে নিগুয়ারির সেলিম খানের সঙ্গে হালিম খান, তার দুই
ছেলে ও জামাত ৬.১২.৫২ তারিখ শনিবার সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে আসবেন। অবস্থা দেখে মনে হলাে জালাল ঢাকার লােকজনের কানে বিষাক্ত বার্তা ঢালার চেষ্টা করেছিল। দৃশ্যত সােনা মিয়ার ক্ষেত্রে সে সফল হয়েছিল।
২.১২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। নাস্তা খাওয়ার পর গিয়াস ভাইসাহেব তার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলেন। বাঘিয়ার মফিজউদ্দীন মুন্সিও চলে গেলেন। সারাদিন বাড়িতেই কাটালাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। তীব্র শীত অনুভূত হলাে। ৩.১২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। আমাদের বাড়ির চারপাশ পরিচ্ছন্ন হওয়ার পরিবর্তে বেশি মাত্রায় নােংরা হয়ে যাওয়ায় আমি খুবই বিরক্ত হলাম। চারপাশের বেড়াও তৈরি করা হয়নি। শৌচাগারটিও পুননির্মাণ করা হয়নি। বিকেলে আমি রাগে ফেটে পড়লাম; যখন দেখলাম মফিজউদ্দীন এ ব্যাপারে সহযােগিতা করছে না এবং শুয়ে রয়েছে। পড়ন্ত। বিকেলে শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম এবং সন্ধ্যা ৬টায় পৌছলাম। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে তার শােবার ঘরে রাতের খাবার খেলাম। কিছু সময়ের জন্য ক্লাবে বসলাম। এর আগে শ্রীপুর পৌছে শরাফতের দোকানে বসেছিলাম। স্টেশনে গিয়ে ওসি বি আহমদকে পেলাম; তিনি ঢাকার ট্রেন থেকে তখন মাত্র নেমেছেন। রাত ৯টায় ঢাকার উদ্দেশে ফিরতি ট্রেনে রওনা হলাম।
ঢাকায় পৌছলাম রাত সােয়া ১১টায়। বাসায় পৌছে দেরি না করেই বিছানায় গেলাম। আবহাওয়া : আগের মতােই। বি. দ্র. মৌলানা আবদুল্লাহ আল বাকি দিনাজপুরে ৬২ বছর বয়সে ১.২২.৫২ তারিখ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি একজন প্রখ্যাত খেলাফত নেতা। তিনি মুসলিম লীগে যােগ দেন ১৯৪৪ সালে। ৪.১২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল ১০টায় কামরুদ্দীন সাহেবের ওখানে গেলাম। তাঁর কাছ থেকে তাঁর লেখা মফিজউদ্দীনের মামলার হাজিরাপত্ৰ নিলাম এবং সকাল সাড়ে ১০টায় ষষ্ঠ মুন্সেফ আদালতে সেটি জমা দিলাম। আসিমউদ্দিনের আইনজীবী সময় প্রার্থনা করলেন। আমি আদালত থেকে চলে এলাম বেলা সাড়ে ১২টায়। পাটুয়াটুলি থেকে টেবিলের জন্য কাপড় কিনলাম। হেসিয়ান ক্যানভাসের খোঁজে ইমামগঞ্জ পর্যন্ত গেলাম। কি তা পেলাম না। পর্দার কাপড় কিনলাম পাটুয়াটুলি থেকে এবং বেলা ৩টায় ১১৯ নবাবপুরে রােডে ফিরে এলাম। এসেই আবার বাইরে বেরিয়ে পড়লাম কাপ কেনার জন্য। কিন্তু সদরঘাট পর্যন্ত গিয়েও কিনতে পারলাম। কারণ বৃহস্পতিবার বিকেলে অধিকাংশ দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। সদরঘাটে কিছু টুকিটাকি জিনিস কেনার পর দেখা হলাে গাছার সিরাজুল হক এবং ঢাকার কমরেড ব্যাংকের সাবেক ক্যাশিয়ার রইসউদ্দিনের সঙ্গে। বাস থেকে নেমে নবাবপুর স্টেশন রােডে দেখা হলাে ওয়াহিদুল্লাহ সাহেবের (প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট) সঙ্গে। তার সঙ্গে ব্যক্তিগত ভালাে-মন্দের বিষয়ে আলাপ হলাে। সন্ধ্যা ৬টা ২৬ মিনিটের ট্রেনে ঢাকা ছাড়লাম । ঢাকা স্টেশনে ইজ্জত আলী সরকার, এস আহমদ মন্ডল, ডা. কামরুদ্দীন প্রমুখের সঙ্গে দেখা হলাে। ট্রেন দেরিতে ছাড়ায় শ্রীপুর পৌছলাম রাত সােয়া ৯টায়। সােজা বাড়িতে গেলাম । শ্রীপুর থেকে বাড়িতে আসার পথে আমার সঙ্গে সাদাত আলী পণ্ডিত ও অন্য আরাে ৬/৭ জন লােক এলেন চৌকিদার বাড়ি পর্যন্ত এবং গােসিঙ্গার সিকান্দার আলীর ভাই ও লতিফপুরের ফয়েজুদ্দিন মাস্টার এলেন গােসিঙ্গা বাজার পর্যন্ত।
সারাদিন গোসল ও খাওয়া হয়নি। মা আমার জন্য ভাত রান্না করলেন এবং প্রায়। ৩০ ঘন্টা পর আমি খেলাম। গত রাতে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে সর্বশেষ আমি খেয়েছিলাম। বিছানায় গেলাম রাত দেড়টায় আবহাওয়া : আগের মতােই।
৫.১২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। দরদরিয়া বাজারের দর্জিকে ডেকে পাঠালাম। তাকে বললাম কোনােরকম দেরি না করে এখনই পর্দা ও বালিশের কভার তৈরি করতে। নাস্তা খেয়ে দর্জি কাপড় নিয়ে চলে গেল সকাল সাড়ে ৯টায়। নতুন শৌচাগার নির্মাণে সারাদিন মিস্ত্রির (রজব আলীর জামাতা) কাজ তদারকি করলাম। রাত ৮টার দিকে কাজ বন্ধ হলাে। সন্ধ্যা থেকে এ সময় পর্যন্ত কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছিল হ্যাজাকের আলােয় ।। জবু ও কুদুস সকালে আমার সঙ্গে দেখা করল; জব্বারের সঙ্গে তাদের গােলমাল নিয়ে আলাপ করতে। তারা সকাল ৯টায় চলে গেল। এরপর এল জব্বার ও আসু। তারাও তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতির বর্ণনা দিল। তারা আমাকে জানাল যে, তাহের আলীর ভাই আক্কাস আলী বর্গাদার হিসেবে আসুর চাষ করা জমি থেকে ধান কেটে নিয়ে গেছে। এ জন্য তারা চায় থানায় অভিযােগ দায়ের করতে। আমি কোনাে পক্ষেই হস্তক্ষেপ করলাম না। আধ ঘন্টা পর তারা চলে গেল। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ৬.১১.৫২ -ঢাকা ও ফিরে আসাভাের ৫টায় উঠেছি। সাইকেলে শ্রীপুর পৌছলাম সকাল সাড়ে ৭টায়। শ্রীপুর এইচ ই স্কুলের নতুন প্রধান শিক্ষক আমাকে তার অফিসে চা খাওয়ালেন। বাের্ডিং হাউসে আমি আমার সাইকেল রেখে দিলাম ।
সকাল ৮টার ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরও ঢাকায় এলেন নাটক মঞ্চায়নে এসডিও (উত্তর)-এর অনুমােদন নিতে। পৌছেই নবাবপুর থেকে কিছু তৈজসপত্র কিনলাম এবং স্টেশনে গেলাম বেলা পৌনে ১২টায়। স্টেশনে পেলাম জালাল ও ধলিয়ার রশিদ মিয়াকে। রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত জালাল আমার সঙ্গী হলেন। শ্রীপুর পৌছলাম বেলা ২টায়। সেখানে পৌছে পেলাম কাওরাইদের আহমদ ফকির ও হাশমত, শ্রীপুরের ওসি ও সেকেন্ড অফিসার এবং স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে। তারা সবাই আমাকে থানায় নিয়ে গেলেন এবং অনুরােধ করলেন ক্লাব ও কালু মণ্ডলের মধ্যে সৃষ্ট বিরােধ নিষ্পত্তির জন্য। কালু মণ্ডল অপপ্রচার ও সম্ভব হলে শক্তি প্রয়ােগ করে নাটক মঞ্চায়ন ভণ্ডুল দিতে চান। কালু মণ্ডলকে থানায় ডেকে আনা হলাে। সবার চাপের কারণে তিনি নাটক মঞ্চায়নে সহযােগিতার ব্যাপারে সম্মত হলেন। সাতকানিয়ার ইসরাফিল ও সুবেদ আলীও এই সময় উপস্থিত ছিলেন। ওখান থেকে উঠলাম বেলা সাড়ে ৩টায়। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দুধ খেলাম। তৈজসপত্রগুলাে ট্রেন থেকে এগিয়ে নিতে আসা আমাদের বাড়ির ভৃত্যের হাতে পাঠিয়ে দিলাম। একটি আইর মাছ (সেকেন্ড অফিসারের সহায়তায়) ও চিনি কিনলাম। মাগরিবের পরে তাদের সঙ্গে নদী পার হয়ে বাড়িতে পৌছলাম। মেহমানদের নাস্তা দিলাম এবং রাত ১০টার দিকে তাদের রাতের খাবার খাওয়ালাম। ধলিয়া থেকে এসেছেন আবদুল হালিম খান, তার ছেলে লাল মিয়া, সালিমুদ্দিন খান। ও অন্য আরাে একজন লােক। আমরা বাড়িতে পৌছা মাত্রই বারিসাববারেরর সােবহান সরকারের লেখা একটি চিঠি নিয়ে একটি ছেলে হাজির হলাে। সে রাতে থেকে গেল। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : শীত আগের মতাে। একই অবস্থায় আছে।
৭.১২.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। আমরা ধলিয়ার অতিথিদের নাস্তা পরিবেশন করার পর গিয়াস ও দুলু এবং জালাল এল। এরপর অতিথিরা সবাই অন্দর মহলে গেলেন এবং দুপুরের আগেই বুলবুলকে
২৪৫
দেখলেন। কিছুক্ষণ পর জানালেন কনেকে দেখে তারা সন্তুষ্ট। দুপুরের খাবারের পর তারা বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা কাবিন-রেজিস্ট্রি করার তারিখ নির্ধারণ করলেন ১৫.১২.৫২ (সােমবার)। আমাদেরকে অনুরােধ করা হলাে ওই দিন বিয়ে রেজিস্ট্রি করার জন্য কাজি এনে রাখতে। দেনমােহর নির্ধারিত হলাে ৪ হাজার টাকা। সন্ধ্যায় তারা বাঘিয়ার উদ্দেশে রওনা হলেন। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ৮.১২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকালে আমাদের বাড়িতে আনসু, ওয়ারিস আলী, রজব আলী, জব্বার, সাবেদ আলী দফাদার প্রমুখ একত্রিত হলেন। সকাল ১১টা পর্যন্ত কথাবার্তা বললেন। সাধারণ গল্পগুজব ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনাে বিষয়ে আলাপ হলাে না। গােসল করতে পারলাম না, তবে দুপুরে খেলাম। আফসারউদ্দীনকে সঙ্গে নিয়ে সাইকেলে শ্রীপুর পৌছলাম বেলা দেড়টায়। তিন সের চিনি দিয়ে আফসারউদ্দীনকে সাইকেলে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। বেলা ২টার আপ ট্রেনে কাওরাইদ গেলাম। ওখান থেকে নুরু ও অন্য আরেকজনকে সঙ্গে নিয়ে সােনাবাে পৌছলাম। সােনাবাে কাওরাইদ থেকে ৪ মাইল পশ্চিমে। আমরা পায়ে হেঁটে সূর্যাস্তের পর ওখানে পৌছলাম। সভায় যােগ দিলাম। পৌছেই আমি বক্তব্য দিতে দাঁড়ালাম এবং ৪৫ মিনিট ধরে খাদ্য, আশ্রয় ও শিক্ষা প্রসঙ্গে বক্তৃতা করলাম। এরপর মওলানা আবদুল হামিদ হােসেনপুরী বক্তৃতা দিতে উঠলেন এবং বক্তব্য রাখলেন রাত ৯টা পর্যন্ত। তারপর একটি মাদ্রাসা নির্মাণে চাদা প্রদানকারীদের একটি তালিকা তৈরি করা হলাে রাত ১০টা পর্যন্ত। এরপর সভার সমাপ্তি ঘটল। সভায় জনসমাবেশ তেমন একটা সুখকর নয়। কারণ এলাকাটি প্রায় জনশূন্য ও ঝােপঝাড় জঙ্গলে পূর্ণ। মওলানা হােসেনপুরী, বর্মির ফকির মান্নান, নুরু মিয়া ও আমি রাতে কাওরাইদ ইউনিয়ন বাের্ডের কেরানি আহমেদ আলীর বাড়িতে থেকে গেলাম। সভাস্থলের পাশেই তার বাড়ি।
রাতে খেয়ে বিছানায় গেলাম ১২টায়। তবে রাত ২টার আগে ঘুমাতে পারলাম না। মান্নানের আলাপচারিতার কারণে। আসন্ন অ্যাসেমব্লি নির্বাচনে আমার অংশগ্রহণ নিয়ে মান্নান কথা বললেন রাত ২টা পর্যন্ত। আবহাওয়া : আগের মতােই। মধ্য ডিসেম্বরে যেমন শীত পড়ার কথা ঠিক তেমনই শীত। -ঢাকাভাের ৪টায় উঠেছি। সকাল ৬টায় চা খেয়ে কাওরাইদের উদ্দেশে রওনা হলাম। আমি ঢাকার উদ্দেশে। ট্রেনে উঠলাম। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ট্রেনে উঠলেন শ্রীপুর থেকে। ঢাকায় পৌছলাম সকাল সাড়ে ১০টায়। দিনের মধ্য ভাগে গােসল ও খাবার সেরে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দোকানে রইলাম। কাওরাইদে সাত্তার খান আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তিনি তার মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে ডাক্তার জলিলের কাছে দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে কথা বললেন। সন্ধ্যার পর ডা, করিম ঘন্টাখানেকের মতাে দোকানে ছিলেন। তিনি জানালেন যে আজ তার স্ত্রী একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। বিছানায় গেলাম রাত ১২টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ১০.১২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দোকানে। হাকিম মিয়া এলেন বেলা ১১টার দিকে। তিনি আমাকে অনুরােধ করলেন, ফরেস্টের সঙ্গে তার মামলার বিষয়ে আদালতে যাওয়ার জন্য। আমি বেলা আড়াইটায় আদালতে গেলাম। ষষ্ঠ মুন্সেফ আদালত থেকে আমাদের। মামলার তারিখ নিলাম । ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রইলাম বিকেল ৪টা পর্যন্ত। হাকিম
মিয়ার মামলাটি দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট মাজেদ সাহেবের আদালতে পাঠানাে হয়েছে। নতুন জামানতনামায় আমি তাদের পক্ষে জামিনদার হলাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় হাকিম মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে সাদিরের বাড়ি গেলাম। তরগাঁওয়ের মিয়ার বাপকে ওখানে পেলাম। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আমরা উঠলাম করিম সাহেবের ওখানে। আমি আমার বাসায় ফিরে এলাম। ধলিয়ায় বুলবুলের বিয়ের বিষয়ে আমি। জানিয়েছি। আমার খুব অসুস্থ লাগছে। লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটায় আমি মানসিকভাবে উদ্বিগ্নবােধ করছি। বিছানায় গেলাম রাত ৮টায় । আবহাওয়া : আগের মতােই। ১১.১২.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। ডা, করিম দোকানে এলেন সকাল ১০টায়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলাে আমাদের পড়ালেখার সুবিধার্থে দোকান কেবল বিকেলে খােলা রাখা হবে। কম্পাউন্ডারকে বলা হলাে শুধুমাত্র এক বেলা দোকানে আসার জন্য এবং অন্য কোথাও পার্টটাইম চাকরি খুঁজে নিতে। বেলা ১১টা থেকে বেলা ১২টার মধ্যে আমি হাবিব ব্যাংকে গেলাম। রােক্সানা ট্রেডার্সের নামে টাকা জমা করলাম এবং আর আর হাতে পেলাম। দোকান খুললাম বেলা ২টায়। বিকেলে মুকসুদউদ্দিন বিশ্বাস দোকানে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। আমাকে অনুরােধ করলেন তার ব্যাপারে এসডিও (উত্তর)-এর কাছে কথা বলতে। এরই মধ্যে সাত্তার খান আমাকে অনুরােধ করলেন তার হবু জামাইয়ের বাড়িঘর দেখতে আগামীকাল গাছা যাওয়ার জন্য। ঘন্টাখানেক বসে থাকার পর এম বিশ্বাস উঠলেন বিকেল সাড়ে ৫টায়। উকিল এস এম জহিরুদ্দীন, জমির ভাই প্রমুখ দোকানে এলেন বিকেল সাড়ে ৫টার। দিকে। তারা সারােয়ার চৌধুরীর পৌরসভা নির্বাচন করা নিয়ে কথা বললেন। এ সময় সারােয়ার চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।
আজ থেকে আমরা কেরােসিনের চুলায় রান্না শুরু করলাম। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই।
১২.১২.৫২ -গাছাভাের ৫টায় উঠেছি। সকাল ৭টা ২৫ মিনিটের মেইল ট্রেনে ঢাকা ছাড়লাম। টঙ্গীতে নেমে গেলাম। সাত্তার খানের জামাতা আমাকে নিতে এসেছিলেন। তিনি আমাকে খেতে দিলেন চা-মিষ্টি। সােমেদ খান তার দলবল নিয়ে ডাউন ট্রেনে টঙ্গীতে এসে আমার সঙ্গে যােগ দিলেন। তার দলে আছেন শরাফতের দোকানের আফতাব উদ্দীন ভূইয়া, শ্রীপুরের আলিমুদ্দিন পিএলএ, মহিউদ্দিন খলিফা, হাকিম মিয়া, সাত্তার খানের জামাতা প্রমুখ। ঢাকা মির্জাপুর রােড ধরে পায়ে হেঁটে গাছা পৌছলাম সকাল সাড়ে ১০টায়। সে বাড়িতে পৌছানােমাত্রই তারা আমাদের নাস্তা খেতে দিলেন। সিরাজুল হক সাহেবের বাড়ির পাশেই তাদের মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করলাম। এখানে আসার পর বেলা আড়াইটার দিকে দুপুরের খাবার খেলাম। ঢাকা থেকে সিরাজুল হক পিইউবিকে সঙ্গে নিয়ে ধিরাসরাম স্টেশন হয়ে আমরা শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম রাত ৮টার ট্রেনে। শ্রীপুরে পৌছানাের পর আমি সােমেদ খানের বাড়িতে রাতে রইলাম। রাতের খাবার দেওয়া হলাে না। যেখান থেকে সাত্তার খানের মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব এসেছে, সে ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত মতামত আমি এভাবে তুলে ধরছি : যােগাযােগ ব্যবস্থা ট্রেনে বেশ সন্তোষজনক এবং বাকি রাস্তা পাল্কিতে। ছেলেটি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং উজ্জ্বল বর্ণের সুঠামদেহী। শিষ্টাচার, নম্রতা ও দ্রতার সাধারণ বােধটি পুরাে এলাকার অজানা। এমনকি সিরাজুল হকের বাড়িটি সবদিক থেকে সম্পূর্ণ আধুনিক মনে হলেও তা দাঁড়িয়ে রয়েছে আসবাবপত্রবিহীন শােচনীয় অনাবৃত অবস্থায়। যা তার দন্তে কালিমা লেপে দিচ্ছে। সাধারণভাবে একটি বাড়ির একান্ত যে বিষয়গুলাে থাকে, তা রক্ষা করার বিষয়টি এখানে সবদিক থেকেই অনুপস্থিত।
স্থানীয় লােকজনদের সবাই অন্য এলাকা থেকে এসে এখানে বাড়িঘর করেছে। এদের অধিকাংশই এসেছে নারায়ণগঞ্জ মহকুমা থেকে। খাদ্যের ব্যাপারে লােকজন দৃশ্যত সুখে আছে। আমরা যে বাড়িতে দুপুরে খেলাম সেটি প্রকাশ করছিল। সম্পদের স্বল্পতার । যাই হােক, যেনতেন ভাবে রান্না হলেও তারা এমন খাবারের পদের জ্ঞান প্রদর্শন করলেন যা ভদ্রলােকের সমাজে পরিবেশন করা হয় । বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ১৩.১২.৫২ -শ্রীপুরসকাল সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকালে প্রাতঃক্রিয়া সেরে সােমেদ খানের বাড়ি ছাড়লাম। তিনি নাস্তা পরিবেশন করলেন না। হাসান মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে এসডিও (উত্তর)-এর সঙ্গে দেখা করলাম। সাত্তার সাহেব জেলা বাের্ড বাংলােয় ছিলেন। তিনি গতকাল এখানে এসেছেন বন্দুকের লাইসেন্স নবায়ন করাতে। সকাল ৮টার দিকে শ্রীপুর এইচ ই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাদের চা খাওয়ালেন। শ্রীপুর এইচ ই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির পদাধিকারী কর্মকর্তাদের নির্বাচন এসডিও (উত্তর)-এর সভাপতিত্বে শুরু হলাে সকাল ৯টায়। হাসান মল সর্বসম্মতভাবে সেক্রেটারি নির্বাচিত হলেন। ইজ্জত আলী সরকার ও কেওয়ার কলিমুদ্দিন অনুপস্থিত ছিলেন। সদস্যরা ছাড়া আরাে উপস্থিত ছিলেন ওসি, সেকেন্ড অফিসার, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, ধনাই বেপারি, এস আহমদ মণ্ডল, আজিজ মণ্ডল ও অন্যরা। এসডিওকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সবাই প্রস্তাবিত বালিকা বিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণে বের হলাম। স্থানটি মাপা হলাে এবং এ রহমান মাস্টার সীমানা নির্দেশ করে দিলেন। কালু মল ও আজিজ মণ্ডল মৌখিকভাবে জমি দান করার ঘােষণা দিলেন। কালু মণ্ডলের বাড়ির উত্তরের জমি থেকে ১ পাখি ৪ গণ্ডা এবং আজিজ মণ্ডলের ৭ গণ্ডা জমি দানের মৌখিক আশ্বাস পাওয়া গেল। এসডিও তার পরিদর্শন ডায়েরিতে দানের কথা লিপিবদ্ধ করে রাখলেন।
২৫০
এরপর আমরা শাহ সাহেবের পুকুরের পশ্চিম পাড় পরিদর্শনে গেলাম। একটি পাকা মসজিদ নির্মাণের স্থান নির্ধারণে আমার পরামর্শে মাপ নির্ধারণ করা হলাে ২৭ কিউবিটস। এ সময় এসডিও সাহেবও উপস্থিত ছিলেন। এরপর তিনি জেলা বাের্ড বাংলােয় ফিরে গেলেন। আমি অল্পক্ষণের জন্য এইচ ই স্কুলে গেলাম স্কুল ঘরের পুননির্মাণ কাজ পরিদর্শন করতে। গােসল করা হলাে না। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর এসডিওর জন্য দুপুরের খাবার পাঠালেন। আমি বেলা ২টায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে তার কোয়ার্টারে খেলাম। এসডিও মাওনা ইউনিয়নের বিএল মামলা শুরু করলেন। এই মামলায় ছিল তিন জন অভিযুক্ত। তারা অপরাধ স্বীকার করল। বিকেল ৫টায় আমি চলে আসার আগ পর্যন্ত এসডিও উত্তর ওই ব্যাপারেই ব্যস্ত রইলেন। ধনাই বেপারির বাসায় অল্পক্ষণের জন্য সিভিল সাপ্লাই ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দেখা করলাম। রাত ৮টার দিকে বাড়িতে ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : ঋতু অনুযায়ী মানানসই। শীত পড়েছে। আকাশ বেশ পরিষ্কার। ১৪.১২.৫২ -বাড়িসকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল থেকে ভূত্যদের কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে আমাদের বাড়ির চত্বর পরিষ্কার ও জিনিসপত্র গােছাতে। আমি নিজে কাজের তদারকি করছিলাম। গিয়াস ভাইসাহেব এলেন বেলা ১টায়। তাকে নিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম। মৈশন মিয়া বাড়িতে বিয়ের দাওয়াত খেয়ে ফেরার পথে আজিজ সরকার ও গার্ড তাহের আলী আমাদের বাড়িতে এলেন। মিয়া বাড়িতে নামা মিয়ার মেয়ের সঙ্গে কর্ণপুরের বােসাই পােদ্দারের ছেলের বিয়ে হয়েছে। আজিজ সরকার ও তাহের আলী আমাকে জানাল যে এস আহমদ মল তাদেরকে বলেছেন তার ছেলের সঙ্গে আমার বােনের বিয়ের প্রস্তাব দিতে। আমি তাদের বললাম আমাদের বাড়িতে আজ সন্ধ্যাতেই বিয়ে। উপলক্ষে লােকজন আসছেন। তারা চলে গেলেন। ধ্বলিয়া থেকে মেহমানদের প্রথম দলটি আমাদের বাড়িতে এসে পৌছল বিকেল সাড়ে ৪টায়। দলে ছিলেন হালিম
খান ও সেলিম খান। ধলিয়ার শেষ দল এসে পৌছল সন্ধ্যা ৭টায়। দুটি হাতি এল। জালাল, সাত্তার খান ও তার ছােট ছেলে, হালিম খানের বড় ও সেজো ছেলে, মুর্শিদ মিয়া, নিগুয়ারির গেন্ধু ও অন্যরাসহ সংখ্যায় ১৪ জন এবং ৩ জন মাহুত এসেছে ধলিয়া থেকে। দুলু, গিয়াস, তােফাজ্জলের বাবা, আড়ালের সরকার ও এক চৌকিদার এবং দিগধার তালুইসাহেব এসেছেন। মেহমানের সংখ্যা অপ্রত্যাশিত। আমরা ধরে রেখেছিলাম সব মিলিয়ে ১০/১২ জন মেহমান আসবেন। যাই হােক, আমরা রাতে বেশ ভালােভাবে অতিথিদের আপ্যায়ন করালাম। অনাড়ম্বর ভাবে ভাত-মাছ পরিবেশন করা হলাে। বিছানায় গেলাম রাত ১টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ১৫.১২.৫২ ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। নাস্তা তৈরিতে মাকে সাহায্য করলাম । সকাল ৭টায় বেশ ভালােভাবে নাস্তা পরিবেশন করা হলাে। সকাল ৬টার দিকে জালাল সাইকেলে করে শ্রীপুর গেল কাজি সাহেবকে আনতে। সে সকাল ৮টার মধ্যে ফিরে এল। কাজি তার কাগজপত্র শ্রীপুর এইচ ই স্কুলে আমার এক ছাত্র (গ্রাম উত্তর খামের) কাশেমের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। জাহান্দার ও আমজাদ তার সঙ্গে এসেছেন। বিয়ের অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন হলাে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে। বিয়ে পড়ালেন শমসেরউদ্দিন সরকার। আবদুল হাকিম উকিলের দায়িত্ব পালন করলেন এবং সলিমউদ্দীন খান ও আমি হলাম সাক্ষি। মােহরানা ধার্য করা হলাে ৪ হাজার টাকা এবং গহনা বাবদ বাদ দেওয়া হলাে ১ হাজার টাকা। মধ্যাহ্ন ভােজের আয়ােজন করা হলাে বেলা ১টায়। আইয়ুব আলী বেপারি ভােজে অংশ নিলেন। আমন্ত্রিত না হলেও জব্বার ও সােবহান আমাদের সঙ্গে দ্বিতীয় ব্যাচে খেতে বসল। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সবাই চলে গেলেন। আমি তাদেরকে গােসিঙ্গায় বিদায় জানালাম। হাকিম মিয়া, জব্বার ও সােবহান আমাদের সঙ্গে নদী পার হলাে। তারা ঠিক করলেন শ্রীপুরে সাত্তার খানের বাড়িতে যাত্রাবিরতি করবেন। হাতির তিন
মাহুতকে আমি ১০ টাকা দিলাম। সূর্যাস্তের সময় বাড়ি ফিরলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায় । আবহাওয়া : আগের মতােই। সন্ধ্যা ৬টার দিকে শ্রীপুর হয়ে ধলিয়া থেকে তালিবউদ্দিন মিয়া আমাদের বাড়িতে পৌছলেন। ১৬.১২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। দুপুরের আগে চরের জমিগুলাে দেখে এলাম। এক ‘মালি’ এল সকাল বেলায়। আমাদের মাটির দেয়ালের নতুন ঘরের কাজ সম্পন্ন করার কাজে সে নিয়ােজিত ছিল। বুধাই বেপারির বাড়ি থেকে আড়ালের সরকার তাকে পাঠিয়েছেন। আমি তাকে ২৫০ টাকা দিতে চাইলাম। সে ৩০০ টাকার নিচে নামতে রাজি নয়। আমরা উভয়ে আড়ালের সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজি হলাম এবং সিদ্ধান্ত হলাে আগামীকাল সকালে সে কাজে যােগ দেবে। বিকেলে খেয়াঘাটে গেলাম। আদম আলী সরকারকে পেলাম হাকিম মিয়ার সঙ্গে বসে থাকতে। আদম আলীকে নিয়ে নদী পার হলাম। গােসিঙ্গা কাচারির মােহারান আমাকে চা দিলেন। সাহেব আলী বেপারিকে পেলাম। তিনি ঢাকার উদ্দেশে শ্রীপুর রওনা হয়েছেন। হাকিম মিয়া নদী পার হলাে সন্ধ্যা ৬টায়। আমরা ফরেস্ট অফিসে গেলাম। রায়েদের দুজন লােকও ফরেস্ট অফিসে গেছেন এবং কিছু সময় পর তারা চলে গেলেন। ফরেস্টার সেকেন্দার আলী আমাদের চা খাওয়ালেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কথা বললেন। আমি আমার দরখাস্তের বিষয়ে জানতে চাইলাম। তিনি আমাকে জানালেন, তিনি সেটি রেঞ্জ অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন। রাত ৮টার দিকে হাকিম মিয়া ও তার ভৃত্য আমাকে বাড়ি পৌছে দিল। পথে আমি বুলবুলের বিয়ের ব্যাপারে তার মতামত আন্দাজ করার চেষ্টা করলাম। তিনি অনুমােদন দিলেন এবং আমার জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বললেন যে, এস আহমদ মণ্ডলকে না বলে আমি কোনাে ভুল করিনি। বাড়িতে পৌছে ওয়াসি মােল্লার বড় ছেলে, তাদের মাস্টার এবং রজব আলীকে
পেলাম। তারা আমার সঙ্গে পােলাও-মাংস দিয়ে রাতের খাবার খেলেন। তারা আমাকে একটি দরখাস্ত দেখাল; যেখানে তাদের ফরেস্ট বিক্রি করার অনুমতি প্রার্থনা করা হয়েছে। তারা রাত সাড়ে ৯টায় চলে গেলেন। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ১৭.১২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সারাদিন বাড়ির আশপাশেই রইলাম। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : শরীরে কাঁটা ধরা শীত। শীতের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে। ১৮.১২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকালে আমার কাছে সােবহান, জব্বার ও আবদুল খান এলেন। আকবর আলীর প্ররােচনায় রজব আলীর (কেওরার বাপ) দায়ের করা এজাহারের ব্যাপারে আধ ঘন্টা আলাপ করে তারা সকলে চলে গেলেন। সােহান আমাকে বলল যে, এ ব্যাপারে গত মঙ্গলবার সে কাপাসিয়া থানার ওসির সঙ্গে দেখা করেছে। সন্ধ্যায় ফরেস্টার সেকেন্দার আলী আমাদের বাড়ি এলেন। তিনি বসলেন না। আমি তার সঙ্গে খেয়াঘাট পর্যন্ত হেঁটে গেলাম এবং তারপর ফিরে এলাম। রাত ৮টার দিকে হাকিম মিয়া ও মফিজউদ্দীন শিকদার আমাকে তাদের খেয়াঘাটের কাছারি ঘরে নিয়ে গেলেন। সেখানে মিলাদ পড়ালেন মৌলবি আশরাফ আলী। নবার পালান উপস্থিত ছিল। মাঝি ও সেকেন্দারও উপস্থিত ছিল। আমাদের খাওয়া শেষ হলাে রাত সাড়ে ১১টায়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাহেব আলী বেপারি ঢাকা থেকে ওখানে এসে উপস্থিত হলেন। তার সঙ্গে এসেছেন কটেরটেকের মান্নান। তিনি ওখানে খেলেন। রাত সােয়া ১টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে উঠে। পড়লাম।
সাহেব আলী বেপারি আমার সঙ্গে আমাদের বাড়িতে এলেন এবং রাতে এখানেই থাকলেন। বিছানায় গেলাম রাত ২টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ১৯.১২.৫২ সকাল সাড়ে ৬টায় উঠেছি। সাহেব আলী বেপারি সকালে চলে গেলেন। তুফানিয়া আমাকে নদীর পাড়ে নিয়ে গেলেন; আমাদের ও তার খালের সীমানা বিরােধ নিষ্পত্তির জন্য। সেখানে পেীছে। চেরাগ আলী মােড়ল, জবু, কুদুস ও কাগুর বাপকে পেলাম। আমি তাদেরকে আস্থার সঙ্গে বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্য দায়িত্ব দিলাম। তারা সর্বসম্মতভাবে মফিজউদ্দীনের নির্ধারণ করা দুটি অনুমােদন এবং সমস্ত সীমানা রেখা চূড়ান্ত করলেন। এ রায়ে তুফানিয়া লাভবান হতে পারলেন না। এরপর আমি আকবর আলীর বাড়িতে গেলাম। সেখানে আক্কা ও আসি ধান মাড়াই করছিল। গফুর আলী বাপের সঙ্গে হাজি বাড়ির সামনে উপস্থিত ছিল। মসজিদের সামনে থামলাম। ওখানে মৌলবি আশরাফ আলী, আব্বাস, শাহার, শামছু প্রমুখ ‘গ্রাম সিরনি’ রান্না করছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে ফিরলাম। আড়াল থেকে আবদুল জব্বার এলেন সন্ধ্যায় এবং আমার সঙ্গে দেখা করলেন। কেওয়ার বাপ মামলা করেছে এমন গুজবের খবরে তিনি আজ সকালে ওখানে। গিয়েছিলেন। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ২০.১২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সন্ধ্যায় গােসিঙ্গা থেকে বাড়ি ফেরার পথে সৈয়দপুরের রমিজউদ্দিন আমার সঙ্গে দেখা করলেন। সকাল ১০টার দিকে গােসিঙ্গা যাওয়ার পথেও তাকে দেখেছিলাম।
২৫৫
জব্বার আমাকে বলেছিল আজ হেলাল মিয়া আসবেন। সারাদিন তার জন্য অপেক্ষা করলাম, কিন্তু অপেক্ষা বৃথা গেল। আনারকে নেওয়ার জন্য নিগুয়ারি থেকে লােক আসার কথা থাকলেও কেউ এল না। দুপুরে চৌকিদার বাড়ি গেলাম। সেখানে আমাদের ভৃত্যরা ধান কাটছিল। বিছানায় গেলাম রাত ৯টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। বি. দ্র. আমাদের কালাে গাভিটা আজ রাত ১০টার দিকে একটি ষাঁড় বাছুরের জন্ম দিয়েছে। ২১.১২.৫২ -ঢাকাসকাল ৬টায় উঠেছি। শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। গােসিঙ্গার মাঝি আমার সঙ্গে শ্রীপুর পর্যন্ত এল। সেও ঢাকা যাবে। বেলা সাড়ে ১২টায় শ্রীপুরের রেঞ্জার আসিরুদ্দিনের সঙ্গে তার অফিসে দেখা করলাম। ফরেস্টার জেড হক উপস্থিত ছিলেন। আমার দরখাস্ত খুঁজে দেখা হলাে। রেঞ্জার দ্রুতই আমার দরখাস্ত অনুমােদন করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। ফরেস্ট অফিস থেকে বের হলাম দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে। দুপুর ২টার ডাউন ট্রেনে উঠে ঢাকা স্টেশনে পৌছলাম বিকেল ৪টায়। সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ অফিসে শওকত আলী, মােশতাক প্রমুখের সঙ্গে দেখা হলাে। সম্প্রতি তারা আটকাবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে যােগীনগর গেলাম। ভাবীর সঙ্গে তার পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে আলাপ করলাম রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। তারপর ফিরে এলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১১টায়। আবহাওয়া : রাতে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় অপেক্ষাকৃত কম ঠাণ্ডা।
২২.১২.৫২। ভাের সাড়ে ৫টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে হাবিব ব্যাংকে গ্ল্যাক্সো ল্যাবের নামে টাকা জমা করলাম। কামরুদ্দীন আহমদকে তার বাসায় পেলাম না। আদালতে গেলাম সকাল সাড়ে ১০টায়। প্রথম সাব জজের আদালতে হাজিরা দিলাম। আমাকে শনাক্ত করলেন রাজ্জাক উকিল। কালু মণ্ডলের অনুরােধে লয়েডস ব্যাংকে গেলাম। নবাবপুরে হাবিব ব্যাংকে তার নামে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুললাম বেলা ১১টায় । জেলা জজের আদালতে সাত খামাইর হত্যা মামলার বিচার কার্য শুরু হয়েছে। আমি বেলা ১টা ১০ মিনিটে যােগ দিয়ে ২টা পর্যন্ত থেকে তারপর লাইব্রেরির সেক্রেটারির রুমে কামরুদ্দীন আহমদ ও কফিলউদ্দীন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করলাম। ফিরলাম বিকেল ৪টায়। ঢাকা স্টেশন থেকে গ্ল্যাক্সোর মাল ছাড়িয়ে নিয়ে বিকেল সাড়ে ৫টায় ফিরে এলাম। গােসল ও দুপুরে খাওয়া হলাে না। রাত সাড়ে ১০টায় শামসুল হক আমাকে এস এম হলে নিয়ে গেলেন। ওখানেই। থাকলাম। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১২টায়। আবহাওয়া : আকাশ পরিষ্কার। ভালাে শীত হলেও হাড় কাঁপানাে নয়।
২৩.১২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। শামসুল হক আমাকে এস এম হলের ক্যান্টিনে নাস্তা করালেন। আমি তাকে ৩১.১২.৫২ তারিখে গাজীপুরে যে সভা হবে, সেখানে আমার সঙ্গে যােগ দেওয়ার জন্য বললাম। তিনি সম্মত হলেন। ক্যান্টিনে কিবরিয়া, হাবিবুল্লাহ, চাঁদ মিয়া, মােখলেস প্রমুখের সঙ্গে দেখা হলাে। কিবরিয়া আমাকে এফ এইচ হল পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে নিজের গন্তব্যে চলে গেল। আমি হাউস টিউটর ডি বি করিমের সঙ্গে দেখা করলাম। তাকে অনুরােধ করলাম একটি সিট বরাদ্দের জন্য। তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন অনুরােধ রক্ষা করার। দেখা হলাে ওয়াহিদুজ্জামান, সিদ্দিকুল্লাহ, মনসুর প্রমুখের সঙ্গে। নবাবপুর ফিরলাম সকাল সাড়ে ৯টায়। সাইকেলে বার লাইব্রেরিতে গেলাম বেলা ২টায়। নাইমুদ্দিন আমার সঙ্গে আমাদের বাসস্থানের কাছ থেকে বার
লাইব্রেরি পর্যন্ত এলেন। তিনি হাইকোর্টে তার পেশা নিয়ে আলাপ করলেন। বার। লাইব্রেরির সেক্রেটারির রুমে কামরুদ্দীন আহমদ ও কফিলউদ্দীন চৌধুরী প্রমুখের সঙ্গে দেখা করলাম। ওখানে বংশালের শামসুল হুদা ছিলেন; ঢাকা পৌরসভার নির্বাচন সংক্রান্ত মামলার সূত্রে। কামরুদ্দীন সাহেব তাঁর লেখা একটি বিবৃতি আমাকে দেখালেন। বিপিসি রিপাের্টের ওপর লেখা বিবৃতিটি সংবাদ মাধ্যমে দেওয়ার কথা। বিকেল সাড়ে ৪টায় ওখান থেকে উঠলাম এবং নবাবপুরে ফিরে এলাম। ফজলুল হক মুসলিম হলের হেড ক্লার্ক রাকিবুদ্দিন ও ওয়াহিদুজ্জামান আমাকে সদরঘাট নিয়ে গেলেন। সন্ধ্যায় রাকিবুদ্দিন ওখানে কেনাকেটা করলেন। দোকানে ফিরে এলাম সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : শীত ততটা তীব্র নয়। বি. দ্র. আজ দৈনিক পত্রিকাগুলােতে মৌলিক নীতির ওপর আংশিক বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। আইন পরিষদে খাজা নাজিমুদ্দিন ২২.১২.৫২ তারিখে | বিপিসি রিপাের্ট উপস্থাপন করেন। ২৪.১২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। হাবিব ব্যাংক থেকে একটি আর আর ছাড় করলাম সকাল সােয়া ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে। সেখান থেকে সাত খামাইরের ইসরাফিল সরকার আমাকে নিয়ে গেলেন জেলা জজ আদালতে। সাত খামাইরের মামলার যুক্তিতর্ক শুনলাম বেলা ২টা পর্যন্ত। এ সময় আদালত ওই দিনের মতাে মুলতবি হয়ে গেল। কোট ইন্সপেক্টরের রুমের ঠিক পেছনে অবস্থিত একটি রেস্তোরাঁয় হাসান মল আমাকে নাস্তা খাওয়ালেন। নবাবপুর ফিরে এলাম বিকেল ৪টায়। স্টেশন থেকে মার্টিন অ্যান্ড হারিসের মাল খালাস করলাম বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে। যাওয়ার সময় দেখা হলাে শ্রীপুর এইচ ই স্কুলের মৌলবি ইয়াকুব আলী এবং ফরেস্টার আবদুল লতিফের সঙ্গে। আদালত থেকে ফেরার পথে নবাবপুর ব্রিজে দেখা হলাে রেঞ্জার আবদুল করিমের
সঙ্গে। তিনি আমাকে তার ভাড়া রিকশায় উঠিয়ে পৌছে দিলেন আমাদের দোকান পর্যন্ত। তিনি আমাকে জানালেন, তাকে রাজেন্দ্রপুরে যােগ দিতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দোকানে। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : নমনীয় ঠান্ডা। ২৫.১২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল ৯টার দিকে সালেহ আহমদ মল এলেন। সাত খামাইরের হত্যা মামলা নিয়ে আলাপ করে আধ ঘন্টা পর তিনি চলে গেলেন। সন্ধ্যায় মফিজউদ্দীন মাস্টার সাহেব আমার সঙ্গে দোকানে দেখা করলেন। তিনি আমাকে আওয়ামী লীগের অফিসের কাছে নিয়ে গেলেন। আমাদের নির্বাচনী এলাকার সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলাপ করলেন। আধ ঘন্টা পর মাগরিবের নামাজের সময় আমরা উঠলাম। আওয়ামী লীগ অফিসে বসে খবরের কাগজ পড়লাম রাত ৮টা পর্যন্ত। শওকত আমাকে দু’বার চা দিল। খুলনার দুজন ব্যক্তি সবুরের কার্যক্রম নিয়ে আলােচনা করছিল। মনে হলাে তারা আওয়ামী লীগের সমর্থক। দোকানে ফিরে এলাম। সকালে পথে রিকশা করে যাওয়ার সময় কামরুদ্দীন সাহেব বললেন আজ সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কারাগারে তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে তার দেখা করার কথা। বিছানায় গেলাম মধ্য রাত ১১টায়। আবহাওয়া : ঠাণ্ডা কিছুটা বেড়েছে। ২৬.১২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সকাল সাড়ে ৭টায় কামরুদ্দীন সাহেবের কাছে গেলাম। তার স্বাক্ষরিত আমার হাজিরা নিলাম এবং তার রিকশায় করে আদালতে গেলাম সকাল সাড়ে ৮টায়। সেখানে হাজিরা জমা দিলাম।
সাতখামাইরের ইসরাফিল আমাকে চা খাওয়ালেন। জেলা জজের আদালতে ছিলাম সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা পৌনে ১টা পর্যন্ত। সাতখামাইরের হত্যা মামলার সমাপ্তি ঘটল। এলাহীকে ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, গফুরকে ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড; যথাক্রমে ৩০৪ (১) এবং ৩২৬ ধারা অধীনে প্রদানের মাধ্যমে। এ ব্যাপারে জুরিগণ সর্বসম্মত অবস্থান নিলেন। আমাদের মামলার তারিখটি নিতে পারলাম না। ফিরলাম বেলা দেড়টায়। বিকেল সােয়া ৩টায় যােগীনগর গেলাম। তােয়াহা সাহেবের সঙ্গে দেখা করার জন্য ভাবী বেরিয়ে গেলেন দুপুর সাড়ে ৩টায়। বিকেল ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দোকানে। হাসান মণ্ডল ও পরে সালেহ আহমদ মন্ডল সন্ধ্যায় কিছুক্ষণের জন্য দোকানে এসে কথা বলেছেন। বিছানায় গেলাম রাত ১০টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ২৭.১২.৫২ ঘুম ভাঙল সকাল ৭টায়। আমাদের বাসস্থানে শৌচাগার ও রান্নাঘর তৈরির জন্য মিস্ত্রিরা সারাদিন কাজ করল। সন্ধ্যায় বলাই বাবু আমার সঙ্গে দোকানে দেখা করলেন। স্কুলের বিষয়াদি নিয়ে আলাপ করলেন। বিশেষ করে অনুদান হিসেবে পাওয়া সাহায্য নিয়ে। তিনি বললেন আগামী মঙ্গলবার তিনি আমার সঙ্গে দেখা করবেন ‘সি’ ও ‘ডি’ ফরম পূরণে আমার সহায়তা নিতে। গিয়াস ভাইসাহেব আমার সঙ্গে দেখা করলেন সন্ধ্যা ৭টায়। শিরিনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ঢাকা এসেছেন। শিরিন দিগধা মাদ্রাসার ছাত্রী হিসেবে জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। গিয়াস ভাইসাহেব বললেন এস আহমদ মণ্ডল তাকে বলেছেন আমার বােনের সঙ্গে এস আহমদ মণ্ডলের ছেলের বিয়ে দিতে না পারার কারণে তিনি মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। গিয়াস ভাইসাহেব উঠলেন রাত ৮টায়।
২৬০
বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ২৮.১২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। সারাদিন আমাদের বসবাসের ঘরের মেঝে মেরামতে মিস্ত্রিদের কাজ তদারকি করলাম। সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দোকানে। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ২৯.১২.৫২ সকাল ৬টায় উঠেছি। আমাদের বসতবাড়ির সামনের অংশ সমান করে ঠিক করার কাজ করলাম বেলা ২টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় সাইকেলে করে ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত গেলাম। আদালত বন্ধ থাকায় তখনই আওয়ামী লীগ অফিসে থামলাম। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ অফিসে খবরের কাগজ পড়লাম। অফিসে অন্যান্যের মধ্যে মানিক মিয়া উপস্থিত ছিলেন। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দোকানে। তালেবউদ্দিন মিয়া সন্ধ্যায় এলেন। তিনি আমাদের সঙ্গে রাতে খেলেন এবং রাতে রয়ে গেলেন। বিছানায় গেলাম রাত ১১টায়। আবহাওয়া : ভালাে ঠাণ্ডা। ৩০.১২.৫২ ভাের ৫টায় উঠেছি। সাইকেল নিয়ে সকাল ১০টায় বের হলাম। ষষ্ঠ মুন্সেফ আদালতের ডায়েরি থেকে
মামলা নং ২৬/৫২-এর তারিখ টুকে নিলাম। জেলা স্কুল বাের্ড অফিসে গেলাম সকাল সাড়ে ১০টায়। জেলা ফিজিক্যাল অর্গানাইজার এফ রহমান ভূঁইয়া সাহেবের সঙ্গে কিছুক্ষণ বসলাম। এরপর দেখা করলাম জেলা স্কুল বাের্ডের কেরানি সৈয়দ মাজহারুল হকের সঙ্গে। সি এফ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শিক্ষকের পদে তালিবুদ্দিন মিয়ার জন্য দরখাস্ত জমা করার উদ্দেশ্যেই তার সঙ্গে দেখা করা। দরখাস্ত জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ২০.১২.৫২। আমি আমার আবাসস্থলে ফিরে এলাম বেলা ১২টায়। ফেরার পথে দেখা হলাে শামসুর রহমান খান সিএসপি, মাসুদ ও চর মনােহরদীর আবদুল হাকিমের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ করলাম। একটি দরখাস্ত লিখলাম। ৪৩/১ যােগীনগরে বসে আমি নিজেই সেটি টাইপ করলাম। তালেবুদ্দিন মিয়ার স্বাক্ষর নিলাম এবং বেলা দেড়টায় গেলাম জেলা স্কুল বাের্ডের অফিসে। দরখাস্তটি সৈয়দ মাজহারুল হকের কাছে দিলাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেটি এসডিআইসহ জমা দিলেন। ফিরে এলাম বেলা ২টায়। বিকেল সাড়ে ৪টায় বলাই বাবু আমার সঙ্গে দেখা করলেন । তিনি আমার সহায়তায় সাইকেলের জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ, টায়ার, টিউব ইত্যাদি ও কাপড় কিনলেন। আমার কাছ থেকে তিনি ৪ টাকা ধার নিলেন। সন্ধ্যায় তিনি শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কামরুদ্দীন সাহেব, সাদির মােক্তার, মাওনার হামিদ মিয়া দোকানে এলেন। সাদির মােক্তার ও হামিদ মিয়া জানালেন তারা কাল সকাল ৫টার ট্রেনে গাজীপুরে গিয়ে সভায় যােগ দেবেন। বিছানায় গেলাম রাত সাড়ে ১১টায়। আবহাওয়া : আগের মতােই। ৩১.১২.৫২ -গাজীপুরভাের ৪টায় উঠেছি। সাদির মােক্তার ও হামিদ মিয়া আমার সঙ্গে যােগ দিলেন ভাের সাড়ে ৪টায়। মাইক পরিচালনাকারীও আমাদের সঙ্গে স্টেশনে যােগ দিলেন।
ভাের ৫টা ৫ মিনিটের ট্রেনে ঢাকা ছাড়লাম। সাহেব আলী বেপারি, আইয়ুব আলী, শামসু প্রমুখ একই কামরায় আমাদের সঙ্গী হলেন। সাহেব আলী বেপারি সিংহস্রী এইচ ই স্কুলে সভা আয়ােজনের ব্যাপারে কথা বললেন। অধ্যাপক দীন মােহাম্মদ আইয়ুব আলী প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে কুলগঙ্গা যাচ্ছিলেন বিয়ের উদ্দেশ্যে। শ্রীপুর পৌছলাম সকাল ৮টায়। শ্রীপুর স্টেশনে ট্রেন থামার আগেই বােকার মতাে লাফ দেওয়ার আমি ডান হাঁটুতে গুরুতর আঘাত পেলাম। ডা. আহসানউদ্দিন ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলেন এবং পায়জামার ভেঁড়া অংশটি আমি দর্জির দোকানে সারিয়ে নিলাম। মওলানা আবদুল হামিদ আমাদের সঙ্গে যােগ দিলেন সকাল ৮টা ১৪ মিনিটে। গফুরের দোকানে রেঞ্জার আসিরুদ্দিন, সাদির ও মওলানা হােসেনপুরী প্রমুখের সঙ্গে নাস্তা খেলাম। হাতিতে চড়ে গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা হলাম সকাল ৯টায়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গাজীপুর স্কুলের সেক্রেটারি আফসারউদ্দীন মাস্টারের বাড়িতে পৌছে গােসল ও খাবার খেয়ে নিলাম। সভা শুরু হলাে বিকেল ৪টায়। মাওনা মাদ্রাসার সেক্রেটারি মৌলবি নাজিমুদ্দিন সভাপতিত্ব করলেন। মাগরিবের আগে বক্তৃতা করলেন সিমলাপাড়ার ফরেস্টার, সাদির, ডা. ইয়াদ আলী, মােসলেম উদ্দিন প্রমুখ । নামাজের কয়েক মিনিট আগে আমি বক্তৃতা দিতে উঠলাম এবং মাগরিব নামাজের পর ঘন্টাখানেক ধরে সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত বক্তব্য রাখলাম। এরপর উঠে। দাড়ালেন মওলানা হােসেনপুরী এবং তিনি বক্তব্য রাখলেন রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এরপর তিনি টাকা উঠালেন এবং সভার সমাপ্তি ঘটল রাত ৯টা ১০ মিনিটে। প্রায় হাজারখানেক লােক জমায়েত হয়েছিল। মাইক ঠিকঠাক ছিল। এ এলাকায়। প্রথমবারের মতাে মাইক ব্যবহৃত হলাে। আফসারউদ্দীন সাহেবের বাড়িতে রাতে খেলাম এবং বিছানায় গেলাম মধ্য রাত ১২টায়। বলতে গেলে কোনাে ঘুম হলাে না। কারণ আমাদের মনে ছিল রাত থাকতেই রওনা হওয়ার বিষয়টি। আমরা গভীর রাত ৩টায় রওনা হলাম। আবহাওয়া : ভালাে ঠাণ্ডা ।
তাজউদ্দীন আহমদের সংক্ষিপ্ত জীবন-বৃত্তান্ত
তাজউদ্দীন আহমদের জন্ম ২৩ জুলাই ১৯২৫ সালে, ঢাকা থেকে সড়ক পথে ৮২ কিলােমিটার দূরবর্তী কাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রামে। তার বাবা মৌলভী মুহাম্মদ ইয়াসিন খান এবং মা মেহেরুন্নেসা খানম। তাঁরা ছিলেন চার ভাই ও ছয় বােন। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের সন্তান হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদের শিক্ষা জীবন শুরু হয় তার বাবার কাছে আরবি শিক্ষার মাধ্যমে। একই সময় তিনি ভর্তি হন বাড়ি থেকে দুই কিলােমিটার দূরবর্তী ভুলেশ্বর প্রাইমারি স্কুলে। প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন প্রথম হয়ে। এ জন্য স্কুল থেকে জীবনে প্রথম ১০ পয়সার মূল্যমানের পুরস্কারও লাভ করেন—দেড় পয়সার কালির দোয়াত এবং সাড়ে আট পয়সার একটি কলম। চতুর্থ শ্রেণীতে উঠে তিনি ভর্তি হন দরদরিয়া থেকে পাঁচ মাইল দূরের কাপাসিয়া মাইনর ইংরেজি (এম ই) স্কুলে। এই স্কুলে থাকার সময় তিনি দু’জন প্রবীণ বিপবী নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং তারা ওই স্কুলের শিক্ষকদের কাছে এই ছাত্রকে আরাে ভাল স্কুলে পাঠানাের সুপারিশ করেন। সেই সুবাদে তাঁকে কালিগঞ্জের সেন্ট নিকোলাস ইনস্টিটিউশনে ভর্তি করা হয়। এখানেও তার মেধা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং এই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পরামর্শে তিনি ভর্তি হন ঢাকার মুসলিম বয়েজ হাইস্কুলে। তারপর সেন্ট গ্রেগরীজ হাইস্কুলে। স্কুলে তাজউদ্দীন বরাবর প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। ষষ্ঠ শ্রেণীর এম ই। স্কলারশীপ পরীক্ষায় তিনি ঢাকা জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৪৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষাতে তিনি প্রথম বিভাগে দ্বাদশ স্থানের অধিকারী হন। ১৯৪৮
সালে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষাতে তিনি প্রথম বিভাগে চতুর্থ স্থান লাভ করেন। তাজউদ্দীন আহমদ পবিত্র কোরআন-এও হাফেজ ছিলেন। যা তিনি নিয়মিত লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার সান্নিধ্যে আয়ত্ত করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪২ সালে তিনি সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং নেন এবং স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় কয়েক মাস নিয়মিত পুরাতন ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় রাতের বেলায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। এই কাজের জন্য তিনি প্রতি রাতের জন্য সম্মানী পেতেন ৮ আনা। তিনি আজীবন বয়স্কাউট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদ স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতি তথা প্রগতিশীল আন্দোলন এবং সমাজসেবার সাথে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। এ কারণেই তার শিক্ষা। জীবন মাঝে মাঝেই ছেদ পড়েছে এবং নিয়মিত ছাত্র হিসেবে পরীক্ষা দেওয়া তার। ভাগ্যে বড় একটা জোটেনি। কিন্তু তবুও রাজনীতি ও শিক্ষা তাঁর হাতে হাত ধরে চলেছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়ার কারণে তাঁর এম এ পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে এমএলএ নির্বাচিত হয়েও তিনি আইন বিভাগের ছাত্র হিসেবে নিয়মিত ক্লাস করেছেন এবং পরবর্তীতে জেলে। বন্দি থাকা অবস্থায় পরীক্ষা দিয়ে তিনি আইন শাস্ত্রেও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলা ১৩৫০-এর দুর্ভিক্ষে অগণিত মানুষের খাদ্যাভাবে মৃত্যুবরণ তাজউদ্দীনের মনকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। দুর্ভিক্ষ পরবর্তী সময়ে তিনি উপলব্ধি করেন, খাদ্যাভাবে আর যাতে কেউ মারা না যায় এবং তার ব্যবস্থা করা প্রয়ােজন। এই চিন্তা থেকে তিনি গ্রামের লােকজনকে সংগঠিত করে স্থাপন করেন ধর্মগােলা’, যা ছিল গ্রাম পর্যায়ে অশ্রুত এক প্রতিষ্ঠান। ফসল ওঠার মওসুমে ধনীদের কাছ থেকে। খাদ্যশস্য এনে ওই গােলায় জমা করা হত, যাতে আপকালে ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেওয়া সম্ভব হয়। আর্তের সেবার তার কোনাে ক্লান্তি ছিল না। ১৯৫৪ সালে তিনি যখন এমএলএ তখন তার গ্রামের সাইফুদ্দীন দফাদারের পুত্র আবদুল আজিজ (১৫) বন্দুকের গুলিতে আহত হয়। জনৈক হাসান ও অন্যদের মাধ্যমে তাকে ঢাকায় তাজউদ্দীনের কাছে আনা হয়। তিনি অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই বালককে হাসপাতালে নেন। তার জন্য তিনি নিজে ১০ আউন্স রক্ত দেন। পরে ওই বালকের মৃত্যুর সংবাদ শুনে তাজউদ্দীন আহমদ উদভ্রান্তের মতাে হাসপাতালে যান এবং পােস্টমর্টেমের ব্যবস্থাদি করেন। এই মৃত্যু তাকে গভীরভাবে মর্মাহত করেছিল।
তাজউদ্দীন আহমদ নিজ প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠা ও সংস্কার করেন। সেখানে তিনি একাডেমিক শিক্ষা এবং বাইরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শিক্ষক ও ছাত্রদের সঙ্গে আলােচনাও করতেন। ছাত্রজীবন থেকেই বাংলার মানুষের মুক্তির রাজনীতির সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদের সম্পৃক্ততা ঘটে। ১৯৪৩ সাল থেকে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগেই এই পূর্ব-অঞ্চলের মানুষের মুক্তির পথানুসন্ধান শুরু করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলার নির্বাচিত হন। কাউন্সিলার হিসেবে তিনি ১৯৪৫ এবং ১৯৪৭ সালে দিল্লি কনভেনশনে যােগ দেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে দলীয় কর্মসূচি প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি সেই সময় অবিভক্ত ভারতের বিভিন্ন অংশে প্রচারাভিযান চালান। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর থেকে ভাষার অধিকার, অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সাম্প্রদায়িকতা বিরােধী যত আন্দোলন হয়েছে তাজউদ্দীন তার প্রতিটিতেই নিজ চিন্তা ও কর্মের সাক্ষর রাখেন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগ (বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) গঠিত হয়; তিনি ছিলেন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তাজউদ্দীন আহমদ সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ১৯৪৮ সাল থেকে ভাষার প্রশ্নে যে বিক্ষোভ ও প্রতিরােধ আন্দোলন গড়ে ওঠে তিনি ছিলেন তার সক্রিয় অংশী। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। তাজউদ্দীন ছিলেন এর মূল। উদ্যোক্তাদের অন্যতম। ১৯৫৩-৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে তরুণ তাজউদ্দীন সেই সময়ের পূর্বপাকিস্তান মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক ফকির আবদুল মান্নানকে বিপুল ভোেটর ব্যবধানে পরাজিত করে এমএলএ নির্বাচিত হন। নির্বাচনে তাজউদ্দীন আহমদ ১৯০৩৯ এবং ফকির আবদুল মান্নান ৫৯৭২ ভােট পান। ১৯৫৫ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে তাজউদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। এ সময় তিনি যুক্তরাজ্য সফর করেন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশ নেন এবং কারাবরণ করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।
এর পরের বছরগুলাে তাজউদ্দীন আহমদ এবং আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত। গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৬ সালে তিনি লাহােরে অনুষ্ঠিত বিরােধী দলীয় সম্মেলনে যােগদান করেন। এই সম্মেলনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তি সনদ ৬ দফা ঘােষণা করেন। উলেখযােগ্য, ৬ দফার অন্যতম রূপকার ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। আপন সাংগঠনিক দক্ষতা ও একনিষ্ঠতার গুণে ইতােমধ্যে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ সহযােগী হয়ে ওঠেন। এই বছরই তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ৬-দফার প্রচারাভিযানের সময় ১৯৬৬ সালের ৮ মে তিনি গ্রেফতার হন এবং গণ-অভ্যুত্থানের ফলে ১৯৬৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মুক্তিলাভ করেন। এরপর ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে এবং পূর্বপাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন। করে। তাজউদ্দীন আহমদ ওই নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর গণরায় অস্বীকার করে বাঙালিদের অধিকার অর্জনের দাবি নস্যাৎয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয় এবং ১ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আকস্মিকভাবে স্থগিত ঘােষণা করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয় অভূতপূর্ব অসহযোগ আন্দোলন। এই অসহযােগ আন্দোলনে সাংগঠনিক দিকসমূহ পরিচালনা ও জনগণের কর্তৃত্বের পরিপ্রকাশক নির্দেশাবলি প্রণয়নে তাজউদ্দীন আহমদ অতুলনীয় সাংগঠনিক দক্ষতা প্রর্দশন করেন। অসহযােগ আন্দোলন চলাকালেই পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের সঙ্গে ঢাকায় আঁওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আলােচনা শুরু হয়। ১৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই আলােচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন সহযােগী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ অতুলনীয় বুদ্ধিমতা ও দক্ষতার পরিচয় দেন। ২৪ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানের শাসনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য চূড়ান্ত বৈঠক হবার কথা ছিল। কিন্তু সে বৈঠক আর অনুষ্ঠিত হয়নি। বরং ২৫ মার্চ সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান এবং তার আলােচক ও সহযােগীরা কাউকে কিছু না জানিয়ে গােপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকেই ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে শান্তিপ্রিয় জনগণের উপর পরিচালনা করা হয় গণহত্যার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি। ইয়াহিয়ার নির্দেশে সামরিক বাহিনী শুরু করে গণহত্যাযজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। এমন বিশ্বাসঘাতকতার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে
বিরল।
বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নেতৃত্বে মূল দায়িত্ব অর্পিত হয় তাজউদ্দীন আহমদের ওপর। ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে তিনি সর্বসম্মতভাবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও ওই সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ স্থানীয় জনগণ এবং শত শত দেশী বিদেশী সাংবাদিক ও প্রচার মাধ্যম প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন। শুরু হয় বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক সশস্ত্র স্বাধীনতার যুদ্ধ। বাংলাদেশের ইতিহাসের ঐতিহাসিক এই সন্ধিক্ষণে তাজউদ্দীন আহমদের ভূমিকা ছিল। অবিস্মরণীয়। চরম প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সামরিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক বিষয়াদিসহ সকল দিক সংগঠিত করে তােলেন। তার সফল নেতৃত্বে বাংলাদেশ মাত্র নয় মাসেই মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। মুক্তিযুদ্ধকালে তার ত্যাগ, নিষ্ঠা, দক্ষতা ও স্বদেশপ্রেম সকলকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। মুক্তিযুদ্ধে সফল নেতৃত্ব দান তাজউদ্দীন আহমদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে নির্দ্বিধায় অভিহিত করা চলে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে মন্ত্রিসভা গঠিত হয় সেই মন্ত্রিসভায় অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রী হিসেবে আত্মনির্ভর বিকাশমান অর্থনীতি গড়ে তােলার জন্য তিনি বিশেষ সচেষ্ট ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি মন্ত্রিত্বের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ক্ষমতা দখলকারী ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একই দিন সকালে তাজউদ্দীন আহমদকে গৃহবন্দি করা হয় এবং পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় করাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বন্দি অবস্থায় ৩ নভেম্বর ১৯৭৫, কারাগারের সমস্ত নিয়ম ভঙ্গ করে বর্বরতার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদ এবং বাংলাদেশের তিন জাতীয় নেতা-সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে। যিনি ছিলেন এই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পুরােধা ব্যক্তিত্ব, যিনি আজীবন জনগণের কল্যাণ নিয়ে ভেবেছেন, যে মানুষটি বাঙালি জাতির জন্য সুখী। স্বাধীন জীবন গড়ার সংগ্রামে পরমভাবে নিবেদিত ছিলেন, সেই প্রচারবিমুখ, ত্যাগী
ও কৃতি দেশপ্রেমিক মানুষটিকে রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করল স্বাধীনতা বিরােধী ঘাতকের দল। মৃত্যু তাজউদ্দীন আহমদকে মহিমান্বিত করে। নতুন রূপে উদ্ভাসিত হন তিনি। তাঁর রেখে যাওয়া কর্ম-ভাবনা আলােকদ্যুতি ছড়ায় এ দেশের আকাশে বাতাসে। বাঙালি জাতি তথা বাঙালির মুক্তিসগ্রামের ইতিহাসে চির অক্ষয় হয়ে লেখা রয় তার অবদান।
২৭০