This is a temporary post for collecting data. Not for posting and not for publishing. Saved only as readable for the editors. Not clickable and not downloadable.
৭১ এর যুদ্ধাপরাধীরা কে কোথায়
রিশাদ আহমেদ সম্পাদিত
যুদ্ধাপরাধের প্রসঙ্গকথা
স্বাধীনতাযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের শ্রদ্ধা অপরিসীম। ৩০ লক্ষ বাঙালি যারা শহীদ হয়েছেন স্বাধীনতা যুদ্ধে, তারা তখনকার ৭ কোটি জনতার কারাে না কারাে। পরমাত্নীয়, মা বাবা, ভাই বােন। বাংলাদেশের এমন কোন পরিবার, গ্রাম, পাড়া-মহল্লা পাওয়া যাবে না যেখানে দু’একজন মুক্তিযােদ্ধা নেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিশেষ সময়, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ২৫ তারিখ থেকে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত যা ঘটেছিল সে ইতিহাস সমগ্র বাঙালির জানা। এমনকি যারা ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে ধূম্রজাল বিস্তার করে সুবিধা আদায় করছে বা করার চেষ্টা করছে তারাও জানে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আমাদের আরও ব্যাপকতর পরিসরে গবেষণা করার প্রয়ােজন রয়েছে। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম অধ্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট গােষ্ঠীকে যে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা যায় – • পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী আর বাংলাদেশী সহযােগী যথা রাজাকার, আলবদর, আল-শামস – তারা ভিন্নভাবে ছিল মুখ্য ভূমিকায়।
আর জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী, পিডিপি, মুসলিম লীগ ও এদের অঙ্গ সংগঠন সমূহ ছিল সহযােগী ভূমিকায়। সময়ের সাথে সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরােধীরা তাদের সহযােগীদের সংগঠিত করে জন্ম দেয় রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস নামের দুর্ধর্ষ বাহিনী আর তাদের কর্মকান্ডের ফলশ্রুতিতে কোন কোন ক্ষেত্রে এই সহযােগীদের ভূমিকা হয়ে উঠে মুখ্য। যার বহিঃপ্রকাশ ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের বর্বর ও জঘন্যতম বুদ্ধিজীবী নিধন। ১৯৭১ সালের মানবতাবিরােধী কর্মকাণ্ডের জন্যে কোনভাবেই উপযুক্ত দু’দলের কোন দলের অপরাধকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। আর তাই স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ধর্মীয় লেবাসধারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসরদের, রাজাকার আলবদর আলশামস বাহিনী ও অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের এদেশের মানুষ বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। আজ স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর সময় এসেছে সেই আসামীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানাের । গত ২৯শে জানুয়ারি ২০০৯-এ জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ায় স্বাধীনতাযুদ্ধের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসররা দিশেহারা হয়ে নিজেদের পিঠ বাঁচানাের জন্য প্রলাপ বকতে শুরু করেছে।
এদের মধ্যে অন্যতম জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকার জন্য গােলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ, মােহাম্মদ কামরুজ্জামান, আবদুল জব্বার …এদের নাম ঘৃণার সাথে উচ্চারিত হতাে। তারাই তখন রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠন করে প্রকাশ্যে বাংলাদেশবিরােধী আন্দোলন করে পাকিস্তানি শাসক ও হায়েনাদের সহায়তা করে।
আমরা অনেকেই জানি কি ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ। হাজার হাজার নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল একটা সুসংগঠিত হানাদার সেনাবাহিনী, হত্যা করেছিল। ঘুমন্ত মানুষকে। যারা নিহত হয়েছিল তারা কোন যুদ্ধে লিপ্ত ছিল না। কিছু বুঝে উঠার আগেই পঞ্চাশ হাজার মানুষ মেরে ফেলে ঘাতকরা। এ প্রসঙ্গে একজন প্রত্যক্ষদর্শী প্রফেসর রফিকুল ইসলামের বর্ণনা শােনা যাক -“২৫শে মার্চের ঠিক মধ্যরাতের পর পাকিস্তানি আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলগুলি আর স্টাফ কোয়ার্টার আক্রমণ শুরু করে। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রধান মিলনকেন্দ্র ইকবাল হলের দিকে যায়। আর্মিদের বড় অংশটি। মধ্যরাতের পরপরই ইকবাল হল ভারী কামান ও মেশিনগানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। …. এরপর আর্মিরা নীলক্ষেতের বস্তিতে আগুন দেয় এবং মেশিনগানের গুলিতে ঠান্ডা মাথায় মানুষ হত্যা করতে থাকে। এ দৃশ্য ঢাকার সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়। আর্মি কনভয় যেদিক দিয়ে যায় সেদিকে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করতে করতে যায়। পরিকল্পিতভাবে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানায় ইপিআর (বর্তমান বিডিআর), পত্রিকা অফিস সমূহ আক্রমণ করা হয় এবং হত্যা করা হয় ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষকে। অপারেশন সার্চলাইট নামে এ হত্যালীলা গণহত্যাতে রূপান্তরিত হয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে যায়,যা চলে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। এ প্রসঙ্গে পাক আর্মির এক সদস্যের জবানবন্দী – “… we were told to kill the Hindus and Kafirs (non-believer in God). One day in June, we cordoned a village and were ordered to kill the Kafirs in that area. We found all the village women reciting from the Holy Quran, and the men holding special congregational prayers seeking God’s mercy. But they were unlucky. Our commanding officer ordered us not to waste any time. ” ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা প্রাপ্তি পর্যন্ত গণহত্যায় মােট তিরিশ লক্ষ বিভিন্ন বয়সী, বিভিন্ন ধর্মের ও বিভিন্ন পেশার মানুষ নিহত হয়। এক্ষেত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে বাংলাদেশী সহযােগীরা যারা রাজাকার নামে বিশেষভাবে পরিচিত। “অপারেশন সার্চ লাইট” নামে এ হত্যাযজ্ঞ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যে সমস্ত সামরিক কর্মকর্তা জড়িত ছিল, তারা হচ্ছে
১. জেনারেল ইয়াহিয়া খান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ২. জেনারেল টিক্কা খান, পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরে
গভর্নর।
মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান, সামরিক গােয়েন্দা প্রধান। ৪. লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল্লাহ নিয়াজী, পাক আর্মির পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান
মেজর জেনারেল মােহাম্মদ হােসেন আনসারী কর্নেল এম. ইয়াকুব মালিক
লে. কর্নেল শামস উল জামান ৮. মেজর মােহাম্মদ আবদুল্লাহ খান | ৯, মেজর খােরশেদ ওমর ১০. ক্যাপটেন আব্দুল ওয়াহিদ
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যখন আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে, তখন থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি কতিপয় রাজনীতিক, বিশেষ করে জুলফিকার আলী ভুট্টো তৎকালীন সামরিক সরকারের প্রধান জে. ইয়াহিয়া খানের যােগসাজশে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করার মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে দমনের ষড়যন্ত্র করে। এ প্রসঙ্গে মেজর রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম) বলেন – “এ গণহত্যার পরিকল্পনার খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয় তৈরী করেছিল পাকিস্তানি | উর্ধতন সামরিক অফিসাররা এবং ইয়াহিয়া তাতে সম্মতি দিয়ে ছিলেন”। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ বিশাল গণহত্যায় বাংলাদেশীদের একাংশ সক্রিয় সহায়তা করে, কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় দেখা যায়, যেমন ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার মতাে ঘৃণ্যতম কাজ এর উদাহরণ। প্রকৃতপক্ষে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর থেকেই বাঙালি জাতিসত্ত্বা ধ্বংসের চক্রান্ত করছিল পাকি শাসকগােষ্ঠি, যার চরম পরিণতি ১৯৭১ | এর গণহত্যা। ১৪ই ডিসেম্বর যদিও বাংলাদশ ছিল পকিস্তানি আর্মিদের দ্বারা অবরুদ্ধ, কিন্তু বাঙালিদের | বিজয়ের সূর্য পূর্বাকাশে আবীর ছড়াচ্ছিল, তখন কার্য আরােপিত ঢাকা শহরে বাঙালি কৃতি সন্তানরা যখন স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন, তখন রাতের আঁধার ভেদ করে বেরিয়ে এলাে একদল দানবরূপী ঘাতক। এদের জন্ম এদেশে, এরা একই বাংলা ভাষায় কথা বলে, কিন্তু এদের আনুগত্য বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রতি। হাত বেঁধে, চোখ বেঁধে নিয়ে গেল এরা বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। দুদিন পর ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলার জন্ম হল। স্বজনরা ছুটলাে তাদের হারানাে প্রিয়জনদের খুঁজতে,
পেলও তাদের। কাউকে চেনার উপায় নেই। কারাে চোখ উপড়ানাে, কারাে হৃদপিন্ড ছিড়ে বের করা। এ যেন এক বিভীষিকা, মানুষ হতবিহবল। বস্তুতপক্ষে ২৫শে মার্চের পর থেকেই জামায়াতে ইসলামী ও পাকিস্তানি আর্মির অনুগত অন্যান্য দল প্রগতিশীল ও বাঙালী জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত মানুষদের নির্মূল করার পরিকল্পনা করে, ১৪ই ডিসেম্বরের হত্যাকান্ড ছিল সে পরিকল্পনার অসমাপ্ত চূড়ান্ত অধ্যায়। দৃশ্যত রাজাকার বাহিনী তৈরী ও শান্তি কমিটি গঠন করা হয় মডারেট পাকিস্তানপন্থীদের সংগঠিত করে, যদিও এদের নেতৃত্ব ছিল চরম বাঙালি বিদ্বেষীদের হাতে। অন্যদিকে চরমপন্থীদের নিয়ে গঠিত হয় আল-বদর ও আল-শামস বাহিনী। এতে মূলত স্থান পায় জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ (অধুনা ইসলামী ছাত্র শিবির) ও যুব কর্মীরা। ঐ সময়ে এ দুটি বাহিনীকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের প্রায় সবাই এখন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা। এদের মধ্যে দু’জন স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের (২০০১-২০০৫) সাবেক মন্ত্রী। এসব রাজনেতিক দল ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কাছে চরমভাবে পরাজিত হলে, ২৫শে মার্চের পর আবার সংগঠিত হয়ে বাঙালিদের উপর প্রতিশােধ নিতে শুরু করে। শীর্ষস্থানীয় নেতা যেমন, আব্বাস আলী খান মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করে গণহত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সামরিক সরকারকে সহায়তা দিতে থাকে, অন্যদিকে মধ্যম সারির নেতারা শান্তি কমিটি গঠনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে আর্মিদের সহায়তায় হত্যা, ধর্ষণ ও ধ্বংসলীলাকে সারাদেশে বিস্তারে সক্রিয় সহায়তা করতে থাকে। অন্যদিকে দুর্ধর্ষ ও চরমপন্থীদের সমন্বয়ে গঠিত আল-বদর ও আল-শামস সামরিক গােয়েন্দা বাহিনীর সহায়তায় বাঙালি জাতির অগ্রবর্তী অংশকে নিশ্চিহ্ন করার মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে একটি পঙ্গু ও অথর্ব মানবগােষ্ঠীতে রূপান্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে নিয়ােজিত হয়। একাজে পাকিস্তান আর্মির উচ্চপদস্থ কর্তা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রমাণ মুক্তিযুদ্ধের দলিলে দেখা যায়। ২৫ মার্চ থেকে ১৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এ দুটি বাহিনী সমগ্র বাংলাদেশে মেধাবী ও স্বনামধন্য বাঙালিদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে তালিকা তৈরী করে এবং হত্যা করতে থাকে। | কিন্তু ডিসেম্বরের ২য় সপ্তাহে যখন পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়, তখন দ্রুত পরিকল্পনা বাস্ত বায়নের লক্ষ্যে ১৪ই ডিসেম্বরের নির্মম ঘটনা ঘটায়। নয় মাসব্যাপী এ নির্মম ও বর্বর হত্যাকান্ডে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মুনীর চৌধুরী, জি. সি | দেব, আনােয়ার পাশা, জ্যোতিৰ্ময় গুহ ঠাকুরতা, এস, এম রাশিদুল হাসান, ডাঃ ফজলে রাব্বী, ডাঃ আব্দুল আলীম, আলতাফ মাহমুদ, রণদা প্রসাদ সাহা, শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ। বিভিন্ন দলিল ও সাক্ষীদের বিবরণ থেকে এ নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে আলবদর বাহিনীর যে সমস্ত সক্রিয় সদস্যের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় তারা হচ্ছে
১. মতিউর রহমান নিজামী, সমগ্র পাকিস্তানের প্রধান, (সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমানে আমির,
জামায়াতে ইসলামী)। ২. আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ, পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান (সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমানে
সেক্রেটারি জেনারেল জামায়াতে ইসলামী) ৩. মীর কাশেম আলী, প্রধান চট্টগ্রাম, পরে ঢাকার ৩য় প্রধান (বর্তমানে ডাইরেক্টর
রাবেতা ই আলম ও সদস্য ইবনে সিনা ট্রাস্ট) ৪. মােহাম্মদ ইউনুছ, কমান্ডার-ইন-চিফ (বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের ডাইরেক্টর ও
জামায়াত সুরার সদস্য) ৫. মুহাম্মদ কাজিমউদ্দিন, প্রধান, বদর বাহিনী কেন্দ্রীয় প্রচার শাখা (বর্তমানে
সেক্রেটারি, জামায়াত ও এডিটর, সােনার বাংলা) ৬. আশরাফ হােসেন, বদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও ময়মনসিংহ জেলার প্রধান ৭. মােঃ শামসুল হক, ঢাকা শহর প্রধান (বর্তমানে সদস্য মজলিশে সুরা, জামায়াত) ৮. চৌধুরী মইনুদ্দিন, বুদ্ধিজীবী নিধন কর্মকান্ডের “অপারেশন ইনচার্জ” (বর্তমানে
লন্ডনে জামায়াতের সক্রিয় নেতা) ৯. আশরাফুজ্জামান খান, বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞের প্রধান জল্লাদ, বর্তমানে নিউইয়র্কে
বসবাসরত। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, পাকিস্তানি জেনারল রাও ফরমান আলী সমস্ত পরিকল্পনার নেপথ্যে থেকে পরিপূর্ণ লজিস্টিক ও ইন্টেলিজেন্স সহায়তা দিয়েছেন । ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সমগ্র ঘটনাবলীর দলিল ও প্রমাণাদি পর্যালােচনা করে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে পাকিস্তানি আর্মি ও দোসর রাজাকার – আলবদর চক্র নিম্নবর্ণিত যুদ্ধাপরাধে জড়িত: (১) পরিকল্পিত গণহত্যা, (২) বুদ্ধিজীবী হত্যা, (৩) নারী ধর্ষণ (৮) সংখ্যালঘু নিধন । এ বিষয়ে সাংবাদিক Anthony Mascarenhas এর বক্তব্য “The war against the Bengali population proceeded in classic gendercidal fashion; There is no doubt whatsoever about the targets of the genocide”: পাক আর্মি ও তাদের দোসরদের কার্যক্রম ও লক্ষ্য সম্পর্কিত Genocide watch – “Case Study: Genocide in Bangladesh, 1971” এর নিচের বক্তব্য এদের যুদ্ধাপরাধী হিসাবে প্রমাণের জন্যে যথেষ্ট বিবেচিত হবে :
(1) The Bengali militarymen of the East Bengal Regiment, the East Pakistan Rifles, police and paramilitary Ansars and Mujahids.(2) The Hindus – “We are only killing the men; the women and children go free. We are soldiers not cowards to kill them …” I was to hear in Comilla (site of a major military base] [Comments R.J. Rummel: “One would think that murdering an unarmed man was a heroic act.” (Death By Government, p. 323)) (3) The Awami Leaguers – all office bearers and volunteers down to the lowest link in the chain of command. (4) The students – college and university boys and some of the more militant girls. (5) Bengali intellectuals such as professors and teachers whenever damned by the army as “militant. .” (Anthony Mascarenhas, The Rape of Bangla Desh [Delhi: Vikas Publications, 1972(?)), pp. 116-17.) উক্ত রিপাের্টের অংশবিশেষ যাতে সুস্পষ্টভাবে অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়েছে তা নিচে দেওয়া হলাে: “For month after month in all the regions of East Pakistan the massacres went on,” writes Robert Payne. “They were not the small casual killings of young officers who wanted to demonstrate their efficiency, but organized massacres conducted by sophisticated staff officers, who knew exactly what they were doing. Muslim soldiers, sent out to kill Muslim peasants, went about their work mechanically and efficiently, until killing defenseless people became a habit like smoking cigarettes or drinking wine. … Not since Hitler invaded Russia had there been so vast a massacre.” (Payne, Massacre, p.29.) লক্ষ্যণীয় যে, এ ধরনের অপরাধ বিশ্বে নতুন নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান বাহিনী এবং জাপানী বাহিনী একই ধরনের অপরাধের জন্যে বিচারের সম্মুখিন হয়েছে এবং কৃতকর্মের জন্যে ক্ষমা চেয়েছে। এ বিষয়ে নুরেমবার্গ ট্রায়াল” ও সাম্প্রতিক হেগের “মিলােসেভিচ JUNE” 13012 fic facto “The Charter of The United Nations” 4. Wicca sfios “Principles of the Nuremberg Tribunal, 1950″ প্রচলিত যুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের সুস্পষ্ট যে সংজ্ঞা নির্দিষ্ট করা হয়েছিল তা হলাে: Crimes against peace: Planning, preparation, initiation or waging of a war of aggression or a war in violation of international treaties, agreements or assurances; Participation in a common plan or conspiracy for the accomplishment of any of the acts mentioned under (i).
War crimes: Violations of the laws or customs of war which include, but are not limited to, murder, illtreatment or deportation to slave-labor or for any other purpose of civilian population of or in occupied territory, murder or ill treatment of prisoners of war, of persons on the seas, killing of hostages, plunder of public or private property, wanton destruction of cities, towns, or villages, or devastation not justified by military necessity. Crimes against humanity: Murder, extermination, enslavement, deportation and other inhuman acts done against any civilian population, or persecutions on political, racial or religious grounds, when such acts are done or such persecutions are carried on in execution of or in connection with any crime against peace or any war crime. উপরের আলােচনায় এটা পরিষ্কার যে, পাক আর্মি ও তার দোসর রাজাকাররা ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডে যে অপরাধ করেছে তা সুস্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ (War crimes), মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ (Crimes against humanity) ও শান্তির বিরুদ্ধ। অপরাধ (Crimes against peace)। এবং এদের অপরাধ আন্তর্জাতিক আইনেও বিচারযােগ্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট নিহত হলেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর । রহমান আর ৩ নভেম্বর জেলে হত্যা করা হলাে জাতির চার স্তম্ভ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, মনসুর আলী ও কামরুজ্জামানকে। ক্ষমতায় আসীন হলাে কিছু মুখােশধারী রাজাকার, যাদের প্রধান কাজ ছিল মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে ধীরে ধীরে নষ্ট করা। আর বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেয়া। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান না করে ১৯৭৫ সালের নির্মম হত্যাকান্ড পর্যন্ত অপেক্ষা করে ছিল যে সমস্ত দেশ – যথা পাকিস্তান, সৌদী আরব, চীন, লিবিয়াসহ আরাে কতিপয় বিদেশী শক্তি ও পাকিস্তানি অনুগত। বাংলাদেশী জেনারেলদের যােগসাজশে এ চক্রান্ত হয়। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করে ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ, কু – পাল্টা কু, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার, ধর্মীয় গােড়ামী ইত্যাদি। আর এর সবই করা হয়েছে পাকিস্ত নি মতবাদ ও রাজাকারদের গ্রহণযােগ্য করার জন্যে। আর্মি জেনারেলদের বাংলাদেশের ক্ষমতা দখলের পর রাজাকার ও পাকিস্তানি পুনর্বাসনই ছিল তাদের প্রধান কাজ এবং দৃশ্যত: এটাই ছিল তাদের একমাত্র এসাইনমেন্ট। পাশাপাশি পাকিস্তানি আর্মিদের গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযােগে সক্রিয় সমর্থন । ও সহায়তাকারীদের ১৯৭৫ পরবর্তী সামরিক সরকারসমূহ পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন পদে।
নিযুক্তি দিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেছেন। তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য হচ্ছে : ১. আবদুর রহমান বিশ্বাস (জেঃ জিয়া কর্তৃক পুনর্বাসিত, রাষ্ট্রপতি পদপ্রাপ্ত) ২. শাহ আজিজুর রহমান (জেঃ জিয়া কর্তৃক পুনর্বাসিত, প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রাপ্ত) ৩. আবদুল আলীম (জেঃ জিয়া কর্তৃক পুনর্বাসিত, মন্ত্রী পদপ্রাপ্ত) ৪. মাওলানা আবদুল মান্নান (জেঃ জিয়া কর্তৃক পুনর্বাসিত, মন্ত্রী পদপ্রাপ্ত, পরবর্তীতে
জেঃ এরশাদ কর্তক গুরুত্বপূর্ণ পদে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরােধী দৈনিক প্রকাশে বিশেষ আনুকূল্য লাভ) গােলাম আজম (পাকিস্তানি পাসপাের্ট নিয়ে অবৈধ অবস্থানে জেঃ জিয়ার সহায়তা ও
জামায়াতে ইসলামীকে পুনর্গঠনে জেঃ এরশাদের সাহায্য) ধারাবাহিকভাবে ইতিহাসের উল্টো এ ধারাকে বহাল রাখার লক্ষ্যে ২০০১ সালেও জেঃ জিয়ার দল ও তার সুযােগ্য সহধর্মিনী আপােষহীন নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক আল-বদর বাহিনীর দুই শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদকে মন্ত্রী করা হয়েছে। এ ছাড়াও দীর্ঘ পঁচিশ বৎসর যাবৎ সমস্ত প্রচারমাধ্যমকে ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, পাঠ্যপুস্তকে বিকৃত ইতিহাস। সংযােজন, প্রগতিশীল ধারার বিকাশে বাধা দানের মাধ্যমে রাজাকারদের জন্যে একটি বিচরণ যােগ্য পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে। অন্যদিকে চক্রান্তের অংশ হিসাবে ঘুমপাড়ানীর গানের মতাে ক্রমাগত প্রচার করা হয়েছে – ভুলে যাও সে দিনগুলাের কথা, ত্রিশ বৎসর পর কি লাভ বিচার চেয়ে, রাজাকার ইস্যুতে দেশকে বিভক্ত না করে চল উন্নয়নে মন দেই ইত্যাদি ইত্যাদি।
মাঝে মাঝে ইচেছ হয় বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের এই সব তথাকথিত দেশপ্রেমীদের কাছে জানতে চাই, ত্রিশ বৎসরব্যাপী রাজাকার তােষণ নীতিতে দেশ কিভাবে লাভবান হয়েছে। দেশ লাভবান হয়নি শুধুমাত্র লাভবান হয়েছে স্বাধীনতাবিরােধী অন্ধকারের শক্তি। আটত্রিশ বছর বয়সী পরিণত যুবা এদেশে অনেক অন্যায় অত্যাচার হয়েছে, এই রাজাকার আলবদর তালেবানরা কিছুদিন আগেও আমাদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। বাংলাদেশ নামের একটি দেশের স্বাধীনতার হিংস্র-নৃশংসভাবে বিরােধিতাকারী জামায়াতকে মন্ত্রিসভার সদস্য করে লাখাে শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকা কুখ্যাত নিজামী ও মুজাহিদদের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ইতিহাসের কী রূপ মর্মান্তিক পরিণতি। এতকিছুর পরও স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর আজ স্বাধীনতাবিরােধী শক্তির নির্মম পরাজয়ে আমাদের বিবেকের দংশন থেকে মুক্তির সুযােগ এসেছে। এই সরকারের কাছে
অনুরােধ, আমরা এই প্রজন্মের যারা আছি স্বাধীনতাযুদ্ধে তিরিশ লক্ষ বাঙালি যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের মুক্ত করুন, আমরা যেন বলতে পারি একটু দেরীতে হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছি। বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডটি কখনও সভ্য মানুষের বসবাস উপযােগী করার জন্যে ঘাতক দালাল চক্রের বিচার। হতেই হবে, এবং হবেই। এটাই হচেছ ইতিহাসের বিধান। এ বিচার যত বিলম্বিত হবে, শহীদদের রক্তের কাছে আমাদের ঋণ বাড়তেই থাকবে। পরিশেষে মুনতাসীর মামুনের প্রাসঙ্গিক মন্তব্য তুলে ধরছি – “আজ ত্রিশ বৎসর পর আমরা দেখছি, ঘটনাবলী যেন একটি বৃত্ত পূর্ণ করার দিকে আমাদের নিয়ে যাচেছু। রাজাকারদের বিচারের দাবি উঠছে এবং তা করছে প্রধানত তারাই যারা রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নন। … স্বাধীনতার মুহূর্তে আমাদের মধ্যে যে চেতনার উন্মেষ হয়েছিল তা রক্ষার একটি উপায়ই আছে এবং তা হলাে প্রতিনিয়ত বলে। যাওয়া – যে একবার রাজাকার সে সব সময় রাজাকার।”
=====================
যুদ্ধাপরাধী : জামায়াতী প্রেসনোেট প্রলাপ
২০০৯ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী এ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বলেছে- “সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধ প্রসংগ নিয়ে দেশে ব্যাপক তােলপাড় হচেছ এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যায়িত করে একটি মহল অব্যাহতভাবে মিথ্যা প্রচারণা চালাচেছ। আইন, বাস্তবতা কোন কিছুর তােয়াক্কা না করে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালিয়ে চরিত্র হনন করার এখতিয়ার কারাে নেই। যুদ্ধাপরাধের স্পর্শকাতর বিষয়কে রাজনৈতিক প্রপাগান্ডার হাতিয়ারে পরিণত করে জামায়াতে ইসলামীর মতাে একটি গণতান্ত্রিক, নিয়মতান্ত্রিক ও গঠনমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাসী দলের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া হচেছ এবং জামায়াতে ইসলামীর ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চলছে। অথচ স্বাধীনতার স্থপতি, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ সরকারের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান নিজে যেখানে যুদ্ধাপরাধী প্রশ্নের ইতি ঘটিয়েছেন,এমনকি যেখানে কোলাবরেটর্স এ্যাক্ট বাতিল হয়ে গেছে, সেখানে অযৌক্তিকভাবে বিনা প্রমাণে। স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর জামায়াতে ইসলাম কে জড়িত করে নানারকম মিথ্যা কথা বলা হচেছ।” জামায়াতে ইসলামীর নিজামীরা বলছেন, ইসলাম একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। কিন্তু তাঁর গুরু মওলানা মওদুদী বলেছেন, “বর্তমান যুগে যতগুলাে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রণীত হয়েছে, এগুলাে ইসলামী আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।” (তরজমানুল কোরআন, ডিসেম্বর, ১৯৪৫) “জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য—এ মতাদর্শের আমি সমর্থক নই।” (সিয়াসী কাশমকাশ, তৃতীয় খন্ড) “এ জন্যই আমি বলি, যে সব পরিষদ কিংবা পার্লামেন্ট বর্তমান যুগের গণতান্ত্রিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত, সেসবের সদস্য হওয়া হারাম এবং তার জন্য ভােট দেয়াও হারাম।” (রাসায়েল ও মাসায়েল, প্রথম খন্ড, ৪৫ পৃষ্ঠা–মওদুদী) মওলানা নিজামীর কথা তার গুরুর কথার সম্পূর্ণ বিপরীত। নিজামী বলছেন ‘ইসলাম একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। তাঁর গুরু বলেছেন, বর্তমান যুগের সব কটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ইসলামী আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী’। তাঁর গুরু বলেছেন, বর্তমান যুগের গণতান্ত্রিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত পার্লামেন্টের সদস্য হওয়া, ভােট দেয়া হারাম। তাহলে পার্লামেন্টের সদস্য ও মন্ত্রী হয়ে, নির্বাচনে ভােট দিয়ে নিজামীরা কি হারাম কাজ করেছেন এবং করছেন? কোটা সঠিক আর কোন্টা বেঠিক তা দেশবাসীকে জানিয়ে দেয়ার দায়িত্ব মওদুদীর উত্তরসূরী হিসেবে জামায়াতের আমির মওলানা নিজামীর উপরই বর্তায়। এই দায়িত্ব নিজামী কোনভাবেই এড়াতে পারেন না।।
জামায়াতের বিবৃতিটি অনেক বড়। দৈনিক ইত্তেফাক এই বিবৃতির সম্পূর্ণ ভাষ্য ছেপেছে। এতে আরও বলা হয়েছে- “মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার পর, স্বাধীনতা-উত্তর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার তাই যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করার জন্য তদন্তের ব্যবস্থা করে। সে তদন্তের আওতায় ছিল পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহায়ক বাহিনীগুলাে। তদন্তের মাধ্যমেই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়। ১৯৭৩ সালের ১৭ই এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত হওয়া এবং তাদের বিচারের সিদ্ধান্তের কথা ঘােষণা করে। বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন বিজ্ঞপ্তি অনুসারে যে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা তৈরী হয় তারা সকলেই ছিল পাকিস্তানের উর্ধতন সেনা কর্মকর্তা। এই তালিকায় কোন বেসামরিক ব্যক্তি বা বাংলাদেশীর নাম ছিল না। এদের বিচারের জন্য বাংলাদেশের পার্লামেন্টে ১৯ জুলাই ১৯৭৩ একটি আইন পাস করা হয়। এই আইনটির নাম হচ্ছে International crimes (tribunal) Act 1973. এই আইন পাস করার আগে ১৫ই জুলাই সংবিধান সংশােধন করা হয়। কারণ এই আইনের অনেক বিধান সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের সাথে অসংগতিপূর্ণ। পরর্বতী এক বছরের বিভিন্ন সময় পাকিস্তান ও ভারত, বাংলাদেশ ও ভারত এবং বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মাঝে অব্যাহত আলােচনার ফল হিসাবে উপমহাদেশের শান্তি ও সমঝােতার স্বার্থে এবং পাকিস্তান সরকারের ভুল স্বীকার ও বাংলাদেশের জনগণের কাছে forgive and forget এর আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘােষণা করে। ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ-ভারত পাকিস্তানের মধ্যে চূড়ান্ত আলােচনা শেষে একটি চুক্তির মাধ্যমে চিহ্নিত ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত হয়। এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ কামাল হােসেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার শরণ সিং এবং পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আজিজ আহমেদ। এই চুক্তির ১৩, ১৪, ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত শর্তানুযায়ী যুদ্ধাপরাধের অভিযােগে তালিকাভুক্ত ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীকে ক্ষমা করে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানাে হয়। সুতরাং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিষয়টি মীমাংসা করা হয় এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ উদ্ভূত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুর ইতি ঘটে।” জামায়াতের মতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে স্বাক্ষরিত ‘৭৪ এর ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে যে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে বাংলাদেশ ক্ষমা করেছে তাদের ভেতর জামায়াতের কেউ ছিল না, তাই জামায়াতের কাউকে যুদ্ধাপরাধী বলা যাবে না। দালাল আইনে গ্রেফতারকৃতদের সাধারণ ক্ষমা ঘােষণা এবং বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে। জামায়াতে যে মন্তব্য করেছে তা অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক। যুদ্ধাপরাধীদের বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা এমনই একটি বিতর্কিত বিষয়। আমি রাজনৈতিক বা ইতিহাসবেত্তা নই।
আমার সাধারণ বিবেচনায় বলে- যে মহান নেতার আহবানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেযে বাঙালি। যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছে, স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে, যিনি এ দেশের মাটি ও মানুষের জন্য সপরিবারে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন সেই মহান ব্যক্তিত্ব কি করে স্বাধীনতাযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসে যুদ্ধাপরাধী ও এদেশীয় দোসরদের ক্ষমা করে দিলেন, নতুন প্রজন্মে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এ অসত্য অপবাদের বিষয়ে কিছু বলতে হলে একটু পিছনে যেতে হয়। বঙ্গবন্ধু দালালদের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি একটি অধ্যাদেশ জারি করেন। বিচারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সারাদেশে ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ‘৭৩ এর সাধারণ ক্ষমার পরও ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ৩৭,৪৭১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ ও বিচারকদের আইনগত নানা সুবিধা দেয়া সত্ত্বেও ১৯৭৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ২৮২৪টি মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়। তার মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড হয় মাত্র ৭৫২ জনের। অভিযােগ থেকে অব্যাহতি পায় ২০৯৬ জন। অবশিষ্টদের বিচারকাজ চলছিল। ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ দালাল আইনে আটক যারা খুন, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোেগ প্রভৃতি গুরুতর ও নির্দিষ্ট অপরাধের সাথে জড়িত ছিল না, তাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়। উক্ত ঘােষণায় পরিষ্কার বলা হয়, “এই আদেশবলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (হত্যা), ৩০৪ ধারা (হত্যার চেষ্টা), ৩৭৬ ধারা (ধর্ষণ), ৪৩৫ ধারা (অগ্নিসংযােগ কিংবা বিস্ফোরক দ্বারা অপকর্ম সাধন) এবং ৪৩৮ ধারা (জাহাজে অগ্নিসংযোগ অথবা বিস্ফোরক দ্বারা অপকর্ম সাধন) মােতাবেক অভিযুক্ত ও দণ্ডিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ১ নম্বর অনুচ্ছেদ মােতাবেক ক্ষমা প্রদর্শন প্রযােজ্য হবে না।” ওদিকে পাকিস্তানে ৪ লাখ বাঙালিকে আটকে রাখা হয়। তাদের ১ লাখ ৬০ হাজার ছিল। সরকারী কর্মচারী। ৩৩ হাজার ছিল সামরিক বাহিনীর সদস্য। তাদেরকে পরিবারবর্গ নিয়ে বন্দি শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য করা হয়। ইতােমধ্যে বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের পরিবারবর্গ তাদের লােকদের পাকিস্তান থেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য আন্দোলন শুরু করে। বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিনই আটক বাঙালিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে মিটিং-মিছিল ও সমাবেশ চলতে থাকে। এমনকি তারা অনশন শুরু করে। এসময় দেশে সুকৌশলে একটা ধারণা ছড়িয়ে দেয়া হয়, আসলে দালাল আইনটি হিন্দু ভারতের উস্কানিতেই করা হয়েছে।’ মওলানা ভাসানী, আতাউর রহমান খান, আবুল মনসুর আহমদ প্রমুখ রাজনীতিবিদ উক্ত পরিবেশের সদ্ব্যবহার করেন। আতাউর রহমান খান সে সময় এক বিবৃতিতে বলেন, “জাতি পূনর্গঠনের মতাে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সমাধা না করে সরকার সারা দেশে দালাল ও কল্পিত শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় রত আছেন। …”
বাংলাদেশ প্রশ্নে চীনের বৈরি ভূমিকার প্রেক্ষিতে দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পিকিংপন্থী দলগুলাে সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়। মওলানা ভাসানী তাদের নেতা সেজে ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা কায়েমের সুরে সুর মিলিয়ে ঘােষণা করেন, ‘আমি নতুন পতাকা উড়াবাে।’ শুধু তাই নয়, মওলানা সাহেব মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তিগুলােকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেন। এ সময় পাকিস্তান রেডিও থেকে মুসলিম বাংলার স্লোগান প্রচারিত হতাে। মওলানা সাহেব বিভিন্ন সভা-সমিতিতে হাত তুলে বলতেন, ‘যারা মুসলিম বাংলার পক্ষে কাজ করছে, আমি তাদের জন্য দোয়া করছি।’ মাঝখানে আবার তিনি হুকুমতে রাব্বানী কায়েমের শ্লোগান শুরু করেন। অপরদিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো ৯০ হাজার যুদ্ধবন্দীর মুক্তির জন্য ৪ লাখ বাঙালিকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এসব চাপ ও প্রতিকূল পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ দালাল আইনে আটক যারা খুন, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযােগ প্রভৃতি গুরুতর ও নির্দিষ্ট অপরাধের সাথে জড়িত ছিল না, তাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করেন। দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব ছিল না বলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাৎসী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের আলােকে ১৯৭৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রোইব্যুনালস) অ্যাক্ট প্রণয়ন করতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর এই ঘােষণায় কোন দোষী ব্যক্তিকেই ক্ষমা করা হয়নি। এই ঘােষণার পর ভাসানী ন্যাপের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ন্যাপ বহু আগে থেকেই নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তি দাবি করে আসছে। …” জাতীয় লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আরও আগেই দেশের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল।” আবুল মনসুর আহমদ দৈনিক ইত্তেফাকের ২ ডিসেম্বর ‘৭৩ সংখ্যায় লিখেছেন, “আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায় সরকার যখন একবার অনুকম্পার দরজা খুলিয়াছেন, যােল হাজারের মতাে বন্দীকে মাফ করিয়া দিয়াছেন, তখন বাকি সবার ক্ষেত্রে তেমনি উদারতা প্রদর্শন করুন।….” সংক্ষেপে সে সময় এই ছিল বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা ঘােষণা এবং তার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু সাধারণ দালাল, যাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোন অভিযােগ নেই, তাদের ক্ষমা করে দিলেও তাদেরকে রাজনৈতিক অধিকার প্রদান করেননি। সংবিধানের ১২ ও ৩৮ ধারার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। সংবিধানের ৬৬ নম্বর অনুচ্ছেদে দণ্ডিত ও মুক্তিপ্রাপ্ত দালালদেরকে সংসদ সদস্য হওয়ার অযােগ্য ঘােষণা করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সামরিক সরকার এক পর্যায়ে ক্ষমতা দখল করে। এই সরকার সামরিক ফরমানের মাধ্যমে ১৯৭২ সালের দালাল আইন বাতিল করে। ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশ কোলাবােরেটর্স অর্ডিন্যান্স নামে অভিহিত ফরমানে বলা হয়, “উক্ত আদেশটি বাতিল হওয়ায় কোন ট্রাইব্যুনাল, ম্যাজিষ্ট্রেট বা আদালত সমীপে এই আদেশ বাতিলের অব্যবহিত পূর্বে মূলতবি থাকা সমস্ত বিচারকার্য বা অন্যান্য মামলা এবং উক্ত আদেশ বলে কোন পুলিশ অফিসার বা অপর কোন কর্তৃপক্ষ দ্বারা বা সমীপে পরিচালিত সমস্ত তদন্ত কার্য বা অন্যান্য মামলা বাতিল হয়ে যাবে এবং সেগুলাে আর চালানাে হবে না।” সংবিধানের পঞ্চম সংশােধনীর মাধ্যমে উক্ত অধ্যাদেশ আইনে পরিণত হয়। ১৯৭২ সালের অধ্যাদেশের অধীনে যেসব ঘাতক-দালালের কারাদন্ড হয়েছিল কিংবা বিচার চলছিল, সামরিক সরকারের উক্ত অধ্যাদেশে তার অবসান হয়। লুণ্ঠন, অগ্নিসংযােগ, ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডে সাজাপ্রাপ্ত ও অভিযুক্ত রাজাকার, আলবদর ও অন্যান্য ঘাতক-দালালরা বেরিয়ে আসে কারাগার থেকে। ৪০ বছর সাজাপ্রাপ্ত আল বদর কমান্ডার আমিনুল হক, যাবজ্জীবন কয়েদী রাজাকার চিকন আলী প্রমুখ হাজার হাজার রাজাকার আলবদর সগর্বে বিচরণ করতে থাকে স্বাধীন বাংলার শহর-বন্দর ও গ্রাম-গঞ্জে। এমনকি এক পর্যায়ে দণ্ডপ্রাপ্তদের সাজাও মওকুফ করে দেয়া হয়। এছাড়া দেশে-বিদেশে যারা আত্মগােপন করেছিল তারাও জনসমক্ষে বেরিয়ে আসে। দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব ছিল না বলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাৎসী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের আলােকে ১৯৭৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রোইব্যুনালস) অ্যাক্ট প্রণয়ন করতে হয়েছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের এক পর্যায়ে জার্মানরা ফ্রান্স দখল করে। তারা সেখানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তােলার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ফ্রান্সের কিছু লােক জার্মানদেরকে সহযােগিতা করে। ফরাসিরা পুনরায় তাদের দেশ জার্মানীর দখলমুক্ত করার পর ওয়ার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ফরাসী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরম্ভ করে। এ সময় কিছু যুদ্ধাপরাধী পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। দীর্ঘ ৬৮ বছরেরও বেশি সময়কাল পর এখনাে কোন যুদ্ধাপরাধীর সন্ধান পাওয়া মাত্র ফ্রান্সে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে দাঁড় করানাে হয়। ফ্রান্সে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক অধিকার দেয়ার কথা কেউ কল্পনাও করে না।
====================
বুদ্ধিজীবী হত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও জামায়াত
আক্রমণ হচ্ছে আত্মরক্ষার সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা সম্পর্কে জামায়াতিরা এই কৌশল গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিক জানেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলােতে আলবদর, আল শামস ও রাজাকাররা তাদের প্রভু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নীলনকশা অনুযায়ী অবরুদ্ধ বাংলাদেশে অসংখ্য বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষিত বাঙালিকে হত্যা করেছে। কিন্তু গত ক’বছর থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আসলেই জামায়াতিরা বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে বলতে শুরু করেছে, আওয়ামী লীগ নাকি বুদ্ধিজীবীদের হত্যার সাথে জড়িত। যতটুকু মনে পড়ে, বিগত বিএনপি সরকারের আমলে পাকিস্তান আল বদর বাহিনীর প্রধান বর্তমানে জামায়াতের আমীর ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী সর্বপ্রথম এই উদ্ভট উক্তিটি করেন। তিনি সে সময় জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল ছিলেন। আজকের কাগজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি উক্ত মন্তব্য করেন। গত বছর জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এক আলােচনায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের সাথে। জামায়াতের জড়িত থাকার অভিযােগ অস্বীকার করেন। তিনি নিজামীর বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, “আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, ‘৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের সঙ্গে জামায়াতশিবির জড়িত নয়। স্বাধীনতার পর এই হত্যাকান্ডের ব্যাপারে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোেগ করা হয়। এই অপরাধে আওয়ামী লীগকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। আওয়ামী লীগই বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে জড়িত ছিল। যারা বাংলাদেশের সীমানায় বিশ্বাস করে না, তারাই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সীমানায় বিশ্বাস করে। ইসলামী চেতনায় বিশ্বাসী দল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে পারে।
। –” কি চমৎকার উক্তি, যারা বাংলাদেশের ভৌগােলিক সীমানায় বিশ্বাস করে না তারা নাকি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সীমানায় বিশ্বাস করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কারা বিশ্বাস করে না। যারা বা যে দল আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকায় এসে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তাঁরা? নাকি, যারা মুক্তিযুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযােগিতা
—————
15
করেছেন, শ্লোগান দিয়েছেন, পাকিস্তান না টিকলে এদেশে ইসলাম থাকবে না’ ; এমনকি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও রাওয়ালপিন্ডিতে বসে পাকিস্তানীদের সহযােগিতায় ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি করেছেন, মুসলিম দেশগুলাে চষে বেড়িয়েছেন তারা। এধরণের উক্তি পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কি বলা যায়। এবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ঢাকা মহানগর জামায়াত আয়ােজিত এক আলােচনা সভায় জামায়াতের সেক্রেটারী আলী আহসান মােঃ মুজাহিদ ভিন্ন সুরে কথা বললেও আরেক জামায়াতী আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন। মুজাহিদ সাহেব বলেছেন, “বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের ব্যাপারে ইসলামী দলগুলােকে অপবাদ দেয়ার কারণ অতিমাত্রায় বিদ্বেষী মনােভাব ও ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা। প্রকৃতপক্ষে এ হত্যাকান্ডের তদন্তই হয়নি। যাদের উপর দায়িত্ব ছিল তারা তদন্ত করেনি। তদন্তের সময়ও শেষ। কেননা, যথাসময়ে তদন্ত
হলে তা সুষ্ঠু হয় না। আর যে ঘটনা তদন্তই হয়নি সে ঘটনার জন্য কাউকে দায়ী করা সমীচীন নয়।” জামায়াত দয়ামায়াহীন একটি ফ্যাসিস্ট চক্র। জামায়াতের ষাট বছরেরও অধিক ইতিহাসে ফ্যাসিজমের অজস্র প্রমাণ রয়েছে। ইসলাম তাদের মুখােশ হলেও মহান শান্তির ধর্ম ইসলামের উদারতা, বিশালতা ও সহনশীলতার বিন্দুমাত্র চিহ্ন তাদের কার্যকলাপে পাওয়া যাবে না। পরমতসহিষ্ণুতা তাদের অভিধানে নেই। বিশেষ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে এবং বিগত ৩৮ বছরে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড তাই প্রমাণ করে। তাদের মুখে অন্যদের সম্পর্কে ‘অতিমাত্রায় বিদ্বেষী মনােভাব বাক্য ভুতের মুখে রাম নাম আওড়ানাের মত শােনায়। মুজাহিদ সাহেবের মতে তাদের সমালােচকরা নাকি ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ, উপমহাদেশের লাখাে আলেম-ওলামা জামায়াতিদেরকে বাতিল ফেরকা মনে করেন। এমনকি, তাদের জোট সরকারের অন্যতম শরিক শেখুল হাদিস মওলানা আজিজুল হক এবং মুফতি ফজলুল হক আমিনীও তাই মনে করেন। তিনি কি বলতে চান তারা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ? মুজাহিদ সাহেব আরাে বলেছেন, ‘বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের তদন্তের সময় নাকি শেষ হয়ে গেছে!’ অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে অপরাধী অপরাধ করে যাওয়ার সময় এমন কিছু আলামত রেখে যায় যার দ্বারা পরবর্তীতে তাকে শনাক্ত করা যায় বা যার দরুণ সে ধরা পড়ে। বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের তদন্ত ও বিচার সম্পর্কে মুজাহিদ সাহেবের উক্তি অনেকটা অনুরূপ। কারণ অপরাধীর বিচারের কোন সময় সীমা নির্ধারিত নেই। বিশেষ করে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কোন অপরাধী এখনাে ধরা পড়লে নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার হয়। একথা মুজাহিদ সাহেবের অজানা থাকার কথা নয়। এরপরও বুদ্ধিজীবী
হত্যাকান্ড সম্পর্কে নানা কথা বলে ধূম্রজাল সৃষ্টির অপচেষ্টা কি প্রমাণ করে, তা আর খুলে বলার প্রয়ােজন হয় না। উক্ত অনুষ্ঠানে মহানগর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, “স্বাধীনতার পর যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন তাঁরাই বুদ্ধিজীবী হত্যকান্ডের সাথে জড়িত।” আসলে জামায়াতিরা গােয়েবলসীয় স্টাইলে একটা মিথ্যাকে পরিকল্পিতভাবে প্রতি বছর পুনরাবৃত্তি করে চলেছে। তাদের এই বক্তব্যে একাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম বিস্মিত, এমনকি বিভ্রান্তও হতে পারে। কিন্তু যারা মুক্তিযোদ্ধা কিংবা যারা মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছেন, তারা কখনাে বিস্মিত হবেন না। বিভ্রান্ত হওয়ার তাে প্রশ্নই আসে না। কারণ তারা ১৯৭১ সালে জামায়াত ও তার অঙ্গ সংগঠন শিবিরের পূর্বসূরী ইসলামী ছাত্রসংঘ ওরফে বদর বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ নিজেরা প্রত্যক্ষ করেছেন । ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শেষদিকে বদর বাহিনী প্রথম গঠিত হয় জামালপুরে। জামায়াতের নেতা মােহাম্মদ কামরুজ্জামান ছিলেন বদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা। পরবর্তীতে এই সংগঠন সারাদেশে সম্প্রসারণ করা হয়। বদর বাহিনী সার্বিকভাবে জামায়াতের প্রাক্তন আমীর গােলাম আজমের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতাে। এর প্রকাশ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে সারা পাকিস্তান প্রধান ছিলেন জামায়াতের বর্তমান আমীর ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী। পূর্ব পাকিস্তান প্রধান ছিলেন জামায়াতের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ। প্রধান সংগঠক ছিলেন জামায়াত নেতা মােহাম্মদ কামরুজ্জামান। শিক্ষিত জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত বদর বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য ছিল সারাদেশে স্বাধীনতাকামীদের খুঁজে বের করা, হিন্দুদের বলপূর্বক মুসলমান বানানাে, সেমিনারসিম্পােজিয়াম ও প্রচারপত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বিরােধী প্রচার-প্রপাগান্ডা এবং প্রয়ােজনে মুক্তিযােদ্ধাদের সশস্ত্রভাবে মােকাবেলা করা। বুদ্ধিমত্তার সাথে ঠান্ডা মাথায় বদর বাহিনীর নৃশংসতা মুক্তিযুদ্ধের শেষ পাঁচটি মাসে জনমনে ভয়াবহ আতংকের সৃষ্টি করেছিল। জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামও সে সময় বদর বাহিনীকে উত্তেজিত করে। ১৪সেপ্টেম্বর ‘আলবদর’ শিরােনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংগ্রাম লিখেছে, “আলবদর একটি নাম! একটি বিস্ময়! আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা! যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী, আলবদর সেখানেই। যেখানেই দুষ্কৃতকারী, আলবদর সেখানেই। ভারতীয় | চর কিংবা দুষ্কৃতকারীদের কাছে আলবদর সাক্ষাৎ আজরাইল।”
ওদিকে বদর বাহিনীর প্রকাশ্য নেতারাও একযােগে তৎপর হয়ে ওঠে। ঢাকার আলিয়া | মাদ্রাসায় বদর বাহিনী ক্যাম্পের এক সমাবেশে বদর বাহিনী প্রধান মতিউর রহমান।
নিজামী ২৩ সেপ্টেম্বর বলেন, “যারা ইসলামকে ভালবাসে শুধুমাত্র তারাই পাকিস্তানকে ভালবাসে। এবারের উদঘাটিত এই সত্যটি যাতে আমাদের রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীরা ভুলে যেতে না পারে সেজন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।” ১৯৭১-এর ৭ নভেম্বর বদর দিবস পালন উপলক্ষে ইসলামী ছাত্রসংঘের উদ্যোগে ঢাকার বায়তুল মােকাররম প্রাঙ্গণে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করা হয়। পরদিন সংগ্রাম লিখেছে, “মিছিলকারী জিন্দাদিল তরুণরা ভারতীয় দালালদের খতম কর’, ‘হাতে লও মেশিনগান দখল কর হিন্দুস্তান’, ‘আমাদের রক্তে পাকিস্তান টিকবে’ প্রভৃতি শ্লোগানে রাজধানীর রাজপথ মুখরিত করে তােলে।” বদর দিবসের সাফল্যে উদ্দীপ্ত হয়ে বদর বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মতিউর রহমান নিজামী ১৪ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামে লিখেছেন,“—-সেদিন আর খুব দূরে নয় যেদিন আলবদরের তরুণ যুবকেরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হিন্দু বাহিনীকে (মুক্তিবাহিনীকে) পর্যদস্ত করে হিন্দুস্তানকে খতম করে সারা বিশ্বে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করবে।” বদর বাহিনীর অপর দুই নেতা আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ ও মীর কাশেম আলী ২৩ নভেম্বর এক বিবৃতিতে সৈনিক হিসেবে প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার জন্য সংগঠনের সদস্যদের প্রতি আহবান জানান। এসময় প্রকাশিত এক প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, ” শত্রু আশেপাশেই রয়েছে। তাই সতর্কতার সঙ্গে কাজ চালাতে হবে। মনে রাখবেন, আপনারা পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখার জন্যই কেবল যুদ্ধ করছেন না, এ যুদ্ধ ইসলামের। নমরুদের হাত থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য আমাদের আমীরের (গােলাম আজমের) নির্দেশ পালন করুন।” অবরুদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও মহকুমা শহরেই বদর বাহিনীর নিজস্ব ক্যাম্প ছিল। এসব ক্যাম্পে ধরে আনা স্বাধীনতাকামীদেরকে অব্যাহত নির্যাতনের মাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যা করা হতাে। মুক্তিযুদ্ধ অপ্রতিরােধ্য গতিতে বিজয়াভিমুখী হওয়ার সাথে সাথে এদের তৎপরতাও বাড়ছিল ভয়ংকরভাবে। শেষ দিনগুলােতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, লেখক, সাংবাদিক এবং সরকারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিম্ন পর্যায়ের চাকরিজীবী পর্যন্ত সামান্য শিক্ষিত বাঙালি বলতেই বদর বাহিনীর শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। অন্যভাবে বলা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সুপরিকল্পিতভাবে বাঙালিদের সমূলে বিনাশ করার ‘বিজ্ঞান সম্মত হত্যাকান্ড ছিল বদর বাহিনীর কর্মকান্ডের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক গভর্ণরের উপদেষ্টা জেনারেল রাও ফরমান আলীর নীলনকশা অনুযায়ী বদর
বাহিনী এই তৎপরতা চালিয়েছিল। বিশেষ করে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগের ক’টি দিনে ঢাকায় সংঘটিত হত্যাকান্ডের মর্মান্তিক ঘটনাগুলাে এর প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। স্বাধীনতার পর পর বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত শত শত প্রতিবদনে বদর বাহিনীর নৃশংসতার এক ভয়াবহ চিত্র রয়েছে। এই চিত্র হিটলারের গেস্টাপাে, ভিয়েতনামের মাইলাই কিংবা লেবাননে ফিলিস্তিনীদের সাবরা শাতিলা শিবিরের হত্যাযজ্ঞের চেয়েও হাজার গুণ ভয়াবহ। বদর বাহিনীর হাতে শুধু ঢাকার শত শত বুদ্ধিজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, অধ্যাপক ও শিল্পীই প্রাণ হারাননি, অবরুদ্ধ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বহু বিশিষ্ট নাগরিকও রেহাই পাননি। শুধু অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডাক্তার আবদুল আলীম, ডাক্তার ফজলে রাব্বী কিংবা সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হােসেন, শহিদুল্লাহ কায়সার ও নিজামুদ্দিনই আলবদর নামধারী নরঘাতকদের হত্যাযজ্ঞের শিকার হননি, স্বাধীনতাকামী অনেক আলেমও তাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। আওয়ামী ওলামা পার্টির সভাপতি মওলানা ওয়ালিউর রহমানও বদর বাহিনীর হাতে শাহাদতবরণ করেন। সম্প্রতি ‘ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “কমিটি সাম্প্রতিক সময়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার বিষয়টি তদন্তের অতি বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তদন্তের শুরুতেই ঘৃণ্য আলবদর বাহিনী ও জামায়াত নেতাদের সমন্বয়ে ঘাতক বাহিনী তৈরির ব্যাপারে সিআইএ, আইএসআই এবং নির্বাচিত কয়েকজন পাকিস্তানি জেনারেল ও। সামরিক অফিসারের একটি গােপন আঁতাতের প্রমাণ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।” ৩৮ বছর পর জামায়াতিরা যাই বলুন না কেন, এতাে সব তথ্য প্রমাণ থাকার পর কাউকে। বুঝিয়ে বলার প্রয়ােজন হয় না যে, বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারী ছিল কারা। তারা বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড আওয়ামী লীগের উপর চাপানাের চেষ্টা করছেন! তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়, দেশটা কি তখন আওয়ামী লীগ শাসন করতাে, না পাকিস্তানীরা? মুজাহিদ সাহেবরা কি ভুলে গেছেন, তাদের পাকিস্তানি বন্ধুরা মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে বাঙালিদের শায়েস্তা করার জন্য ঢাকা শহরের প্রতিটি থানার দায়িত্বে একজন করে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার নিয়ােগ করেছিল,সেই বিভীষিকাময় দিনগুলােতে ঢাকা শহরের এমন কোন পাড়া মহল্লা ছিল না যেখানে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর জোয়ান, রাজাকার আলবদররা প্রতি মুহূর্তে টহল দিত না। সে দিনগুলােতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী দূরের কথা অরাজনৈতিক সাধারণ লােকেরাও ঘর থেকে বড় একটা বের হওয়ার সাহস করতাে না। কারফিউর সময় কারাে পক্ষে ঘরের বের হওয়া ছিল কল্পনাতীত ব্যাপার। এরূপ অবস্থায় আওয়ামী লীগের লােকেরা এসে দলে দলে বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে
ফেললাে? মুজাহিদ সাহেবদের মতাে পাকিস্তানের নিশানবরদার ও ইসলাম পছন্দ ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের অগণিত ‘জিন্দাদিল রাজাকার আলবদর বাহিনী তাে ঢাকাতেই বহাল তবিয়তে ছিল। তারা অবাধে চলাফেরা করত। তারা এগিয়ে গিয়ে ঘাতক আওয়ামী লীগারদের হাত থেকে বুদ্ধিজীবীদের রক্ষা করল না কেন। তাছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারবর্গ ও আত্মীয়-স্বজনরা এখনাে বেঁচে আছেন। এমনকি, আলবদর ঘাতকদের হাত থেকে পালিয়ে আসা সৌভাগ্যবান লােকও এখনাে জীবিত আছেন। মুজাহিদ সাহেবরা কি তাদের নিকট গিয়ে জানার চেষ্টা করেছেন, বুদ্ধিজীবীদের কারা বাসা থেকে বের করে নিয়ে গিয়েছিল? সে সৎসাহস কি মুজাহিদ সাহেবদের আছে? যান না, একবার চেষ্টা করে দেখুন, তারা কি বলেন । আসলে এধরনের উদ্ভট প্রলাপে জামায়াতিরা অনুসরণ করছেন তাদের সবার গুরু মওলানা মওদুদীকে। বিগত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে গােটা বৃটিশ ভারতে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণ যখন কংগ্রেস কিংবা মুসলিম লীগের নেতৃত্বে ঔপনিবেশিক শক্তি বিরােধী আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছিল; এমনকি উপমহাদেশের আলেম সমাজও কংগ্রেস কিংবা মুসলিম লীগকে সমর্থন করছিলেন। সে সময় মওলানা মওদুদীর ভূমিকা ছিল ব্যতিক্রম। তিনি একদিকে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগকে গালিগালাজ করছিলেন; অপর দিকে বলছিলেন, বৃটিশরা ছ’হাজার মাইল দূর থেকে এসে এদেশ শাসন করছে; তার সাথে ইসলামের কোন সংঘাত নেই। প্রস্তাবিত পাকিস্তানকে তিনি লেংড়া পাকিস্তান ‘লুলা পাকিস্তান’ আরাে কতাে কি বলে উপহাস করেছেন। কিন্তু ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পরই পাঞ্জাবের পাঠানকোট থেকে তিনি দলবল নিয়ে পাকিস্তানের লাহােরে চলে যান। সেখানে তিনি তার পাকিস্তান বিরােধী ভূমিকার জন্য কঠোর সমালােচনার সম্মুখীন হন। এসব সমালােচনার জবাবে মওলানা মওদুদী যেসব কথা বলেছেন, সেগুলাে নিজামীমুজাহিদ সাহেবদের আলােচ্য প্রলাপের মতই হাস্যকর। এখানে দু’একটা উদ্ধৃতি উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। মওলানা মওদুদী বলেছেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় জামায়াতে ইসলামীর অংশগ্রহণ
করার কারণ এ ছিল না যে, জামায়াত মুসলমানদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়নি। বরং এর তিনটি কারণ ছিল। —– মুসলমানদের এমন একটি জামায়াত থাকা জরুরী ছিল, খােদা না করুন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে মুসলিম লীগ ব্যর্থ হলে সে জামায়াত যেন জাতিকে সাহায্য করতে পারে। একারণে এই সংরক্ষিত শক্তিকে সংগ্রাম থেকে আলাদা রাখার প্রয়ােজন ছিল। দ্বিতীয় কারণ হলাে, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরও অবশ্য কয়েক কোটি মুসলমানকে বৃটিশ ভারতের সে অংশে থাকতে হতাে যা পাকিস্তান
পরিকল্পনার মাধ্যমে হিন্দুদের কর্তৃত্বে চলে যাচ্ছিল। দেশ বিভাগের পর সেসব মুসলমানকে মুসলিম লীগ সাহায্য করতে পারত না। এজন্য একটি সুসংগঠিত দল প্রথম থেকে প্রস্তুত রাখার প্রয়ােজন ছিল। যাতে করে সে হিন্দু ভারতে কাজ করতে পারে। তৃতীয় কারণ হলাে, পাকিস্তানের জন্য যে দলটি (মুসলিম লীগ) কাজ করছিল,তার সব দৃষ্টি একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্যে নিবদ্ধ ছিল। নৈতিক ও ধর্মীয় দিক থেকে জাতিকে শক্তিশালী করার জন্য তার পক্ষে প্রচেষ্টা চালানাে সম্ভব ছিল।
। —–এরূপ পরিস্থিতিতে মুসলমানদের মধ্যে একটি সুসংগঠিত দল গঠনের প্রয়ােজন ছিল, যে দল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ রাষ্ট্রকে ধ্বংস থেকে রক্ষা এবং একে ইসলামের পথে পরিচালিত করার জন্য কাজ করতে পারে। এই দূরদর্শিতাপূর্ণ পরিকল্পনা কার্যকরি করা কি কোন পাপ কাজ?” (সিয়াসী কাশমকাশ, ৩য় খন্ড, ১৬০-১৬১ পৃষ্ঠা, মওদুদী) ভারত বিভাগের সময় ও পরে উভয় দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখা দিলে মওলানা মওদুদী ভারতের মুসলমানদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া দূরের কথা, উল্টো তিনি পাকিস্ত েিন বসে উভয় দেশের নেতৃবৃন্দের সমালােচনা আরম্ভ করেন। তিনি বলেন, “এ যুগে যারা এখানকার বিভিন্ন জাতির নেতা ও নেতৃত্ব করছে, তারা এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেতে পারে না। —-তারা যদি জেনে শুনে এই খেলা করে থাকে তবে তারা মানবতা ও নিজের জাতির শক্র। তাদের সঠিকস্থান নেতৃত্বের আসন নয়, আদালতের কাঠগড়া। সেখানে তাদের কার্যাবলীর হিসাব-নিকাশ হওয়া উচিত।” (তরজমানুল কোরআন, ১৯৪৮।) মওলানা মওদুদীর সে সময়ের এধরনের আরাে বহু উক্তি রয়েছে তার বই-পুস্তকে। সেই একই কায়দায়, একই পদ্ধতিতে বাংলাদেশেও জামায়াতিরা পবিত্র ধর্মের নামাবলী পরে আজগুবি সব কথাবার্তা বলছেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বের সমালােচনা করছেন, নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছেন। মুজাহিদ সাহেব বলেছেন, স্বাধীনতার পর বুদ্ধিজীবী হত্যার ব্যাপারে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে নাকি মিথ্যে অভিযােগ করা হয়েছে! বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে শিবিরকে জড়ানাের তথ্য তার নতুন আবিষ্কার। কারণ শিবিরের তাে তখন জন্মই হয়নি। অবশ্য শিবিরের পূর্বসূরী ইসলামী ছাত্র সংঘ ওরফে বদর বাহিনীর জড়িত থাকার তথ্য মুজাহিদ সাহেবরা স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরও অস্বীকার করতে পারেন না। তাই সংগ্রামের ভাষায় ‘জিন্দাদিল তরুণ, ‘সাক্ষাৎ আজরাইল’ বদর বাহিনীকে তিনি সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগই নাকি বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে জড়িত। এজন্য আওয়ামী লীগকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তা’হলে যখন আপনারা ক্ষমতায় ছিলেন আওয়ামী লীগকে
কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচারটা সেরে ফেলেন নাই কেন। তাতে আপনারা ইসলামী চেতনায় বিশ্বাসীরা একটা মিথ্যে অভিযােগ থেকে অব্যাহতি পেতেন। দেরী করেছেন কেন। কারণ হাওয়া প্রতিকুল দেখলে কবে আবার বিএনপিকে একলা ফেলে চলে আসতে হয়, তার কি কোন ঠিক-ঠিকানা আছে ? মুজাহিদ সাহেবকে বলছি, আপনারা পরম নয়, চরম ভাগ্যবান। ১৯৪১ সালে আপনাদের দলের প্রথম জন্ম। দ্বিতীয় জন্ম হয় পাকিস্তানে। তৃতীয় জন্ম হয় বাংলাদেশে। বৃটিশ ভারতীয় পার্লামেন্টে আপনাদের দলের কোন প্রতিনিধিত্ব ছিল না। তখন আপনাদের গুরু মওলানা মওদুদী পার্লামেন্ট সদস্য হওয়া হারাম বলতেন। পাকিস্তানকে এদেশে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রাণপণ সংগ্রাম করা সত্ত্বেও খােদ পাকিস্তানের জনসাধারণ কেন জানি আপনাদেরকে বিশ্বাস করে না। বিগত অর্ধ শতাব্দীরও অধিককাল সময়ে আপনারা পাকিস্ত নি জাতীয় পরিষদে একটি আসনও লাভ করতে পারেননি। গুরুর ফতােয়া অমান্য করে আপনারা বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে আটবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযােগ গ্রহণ করেছেন। একবার আইডিএল নামে, পরে স্বনামে। প্রত্যেকবারই আপনারা নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংসদে আসন লাভ করেছেন। গতবার তাে বিএনপি’র উপর সওয়ার। হয়ে মন্ত্রিসভারও দু’টো দফতর বাগিয়ে নিয়েছেন। বাংলাদেশে এমন রাজনৈতিক দলও আছে যারা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেও এখনাে সংসদে যাওয়ার সৌভাগ্য তাদের হয়নি। সুতরাং একটু রয়ে সয়ে কথা বললে ভাল হয় না?
যুদ্ধাপরাধ ও যুদ্ধাপরাধী : সেলুকাস, কি বিচিত্র এদেশ
আমরা যারা স্বাধীনতার অনেক পরে জন্মেছি তাদের কেউ যুদ্ধাপরাধ বা স্বাধীনতার সময় যুদ্ধাপরাধীদের ভূমিকা নিয়ে প্রত্যক্ষভাবে অবগত নই। আমরা যা জেনেছি তা আমাদের। বাবা-মা, আত্নীয় স্বজন বা মুক্তিযুদ্ধের অবিকৃত ইতিহাসভিত্তিক বই বা পত্র পত্রিকা থেকে। স্বাধীনতা সম্বন্ধে আগ্রহ বা কি কারণে জানি না প্রায় প্রতিটি বিজয় দিবসে আমি। স্মৃতিসৌধে যাই। বছরখানেক আগে ১৬ই ডিসেম্বর আমি স্মৃতিসৌধে গেছি, বিগত সরকারের মন্ত্রী মওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদও সেদিন বিএনপির মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলেন। তাদেরকে দেখামাত্র আমার অজান্তেই মনটা চলে গিয়েছিল আটত্রিশ বছর আগে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলাের ইতিহাসে। ‘৭১ সালে সারাদেশের আপামর জনতা মাতৃভূমির মুক্তির জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছিল। আর নিজামীরা রাজাকার আলবদর আলশামস বাহিনী গঠন করে পাকিস্তান রক্ষার জন্য। তথাকথিত জেহাদ করেন। হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযােগ, লুটতরাজ, কাফের নিধন প্রভৃতি জঘন্য কাজে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে তারা সহযােগিতা করেন। বদর বাহিনী প্রধান নিজামী ‘৭১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসায় বদর। বাহিনী ক্যাম্পের এক সমাবেশে বলেছিলেন, “যারা ইসলামকে ভালােবাসে শুধুমাত্র তারাই পাকিস্তানকে ভালােবাসে। এবারের উঘাটিত এই সত্যটি যাতে আমাদের রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীরা ভুলে যেতে না পারে সে জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।” নিজামীদের এই ‘সর্বাত্মক প্রচেষ্টা কি ছিল বুদ্ধিজীবিদের হত্যার মাধ্যমে তারা তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। বদর বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মওলানা নিজামী ৪ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামে লিখেছেন, “—- বদর যযাদ্ধাদের যেসব গুণাবলীর কথা আমরা আলোচনা করেছি, আলবদরের তরুণ মর্দে মুজাহিদদের মধ্যে ইনশাআল্লাহ সেসব গুণাবলী আমরা দেখতে পাব। —- সেদিন আর খুব দূরে নয়, যেদিন আলবদরের তরুণ যুবকেরা আমাদের সশস্ত্র (পাকিস্তানী বাহিনীর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হিন্দু বাহিনীকে (মুক্তি বাহিনীকে) পর্যুদস্ত করে হিন্দুস্তানকে খতম করে সারা বিশ্বে ইসলামের বিজয় পতাকা উডডীন করবে।” সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ছিলেন সেসময় প্রাদেশিক বদর বাহিনী প্রধান। দৈনিক পাকিস্তানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “ঐতিহাসিক বদর
দিবস পালনােপলক্ষে ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার বায়তুল মােকাররমে ইসলামী ছাত্র। সংঘের ( বর্তমানে ছাত্র শিবির) এক গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। তাতে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ চার দফা ঘােষণা প্রচার করেন। এই চার দফা ঘােষণা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে জনাব মুজাহিদ বলেন,—- “এগিয়ে চলুন। প্রয়ােজন হলে নয়াদিল্লী পর্যন্ত গিয়ে আমরা। বৃহত্তর পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করবাে”। সেদিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে এই দুই বদর বাহিনী নেতাকে মন্ত্রী হিসেবে দেখে শহীদ পরিবার ও মুক্তিযােদ্ধাদের মনে কিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, তা আর উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না।
আমাদের নতুন প্রজন্মের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এসব রাজাকার আলবদর স্বাধীন বাংলাদেশে বেঁচে থাকা ও রাজনীতি করার অধিকার পেলাে কি করে। সে অনেক কথা। সংক্ষেপে বলা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হওয়ার পর বাংলাদেশে সুকৌশলে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবােধ পরিহার করে পাকিস্তানি ধ্যানধারণা প্রবর্তন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারী মাসে সামরিক সরকার একটি অধ্যাদেশ ঘােষণা করেন। ১৯৭২ সালের অধ্যাদেশের অধীনে যেসব ঘাতকদালালের কারাদন্ড হয়েছিল কিংবা বিচার চলছিল, সামরিক সরকারের উক্ত অধ্যাদেশে তার অবসান হয়। লুণ্ঠন, অগ্নিসংযােগ, ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডে সাক্ষাপ্রাপ্ত ও অভিযুক্ত রাজাকার, আলবদর ও অন্যান্য ঘাতক-দালালরা বেরিয়ে আসে কারাগার থেকে। ৪০ বছর সাজাপ্রাপ্ত আলবদর কমান্ডার আমিনুল হক, যাবজ্জীবন কয়েদী রাজাকার চিকন আলী প্রমুখ হাজার হাজার রাজাকার আলবদর সগর্বে বিচরণ করতে থাকে স্বাধীন বাংলার শহরবন্দর ও গ্রাম-গঞ্জে। এছাড়া দেশে-বিদেশে যারা আত্মগােপন করেছিল তারাও জনসমক্ষে বেরিয়ে আসে। এসময় শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযােদ্ধাদের পিতামাতা, বিধবা স্ত্রী ও সন্ত। নিদের নিভৃতে অশ্রুপাত করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। কিন্তু এসব ঘটনার মূল নায়ক বর্তমান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সে সময়ের সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি মুক্তিযােদ্ধা জেনারেল জিয়াউর রহমান তাঁর সহযােদ্ধাদের রক্তদানের কথা একটিবারও স্মরণ করেননি। অন্য সব বিধি-বিধানের কথা বাদ দিলেও ঘাতক-দালালদের ছেড়ে দিলে শহীদ পরিবারগুলাের। মনে কি প্রতিক্রিয়া হবে, তিনি তা উপলব্ধি করার চেষ্টাও করেননি। শাহ আজিজ, আবদুল আলিমদের মতাে দালালদের স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় নিতেও তাঁর এতটুকু বাধেনি। তিনি সংবিধানে ৫ম সংশােধনীর মাধ্যমে রাজাকার আলবদরদের সব অপকর্ম সাংবিধানিকভাবে বৈধ করে নেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ক্ষেত্রেও একই কান্ড করেন। ১৯৭৬ সালের আগস্ট মাসে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘােষিত হয়। এই সুযােগে স্বাধীনতা বিরােধী দলগুলােও সামরিক সরকারের স্বীকৃতি নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি করা ও ক্ষমতার শেয়ার দখলের সুযােগ লাভ করে। বিগত নির্বাচনে রাজাকার আলবদর ও
তালেবানদের নিয়ে চারদলীয় জোট করার পিছনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়ার সে নীতিই কার্যকর ছিল। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন দখল করে রাজাকার আলবদর তালেবানদের ক্ষমতার শেয়ার দেয়ার পিছনে বিএনপি সে নীতিই অনুসরণ করেছে। রণাঙ্গণে পরাজিত শক্তিকে ক্ষমতার শেয়ার দেয়ার ঘটনা বা দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের এক পর্যায়ে জার্মানরা ফ্রান্স দখল করে। তারা সেখানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তােলার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ফ্রান্সের কিছু লােক জার্মানদেরকে সহযােগিতা করে। ফরাসিরা পুনরায় তাদের দেশ জার্মানীর দখলমুক্ত করার পর ওয়ার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ফরাসী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরম্ভ করে। এ সময় কিছু যুদ্ধাপরাধী পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। দীর্ঘ অর্ধশতকেরও বেশি সময়কাল পর এখনাে কোন যুদ্ধাপরাধীর সন্ধান পাওয়ামাত্র ফ্রান্সে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে দাঁড় করানাে হয়। ফ্রান্সে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক অধিকার দেয়ার কথা কেউ কল্পনাও করে না। কিন্তু বাংলাদেশে ঘাতক-দালালদের অবাধে রাজনীতি করার অধিকার দেয়া হয়েছে। আর এ কান্ডটি করেছিলেন মুক্তিযােদ্ধা জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি নিজের গদি নিষ্কন্টক করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে। দূরে রাখা, এমনকি নির্মূল করে দেয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ও জাতির এরূপ সর্বনাশটি করেন। সে যাক, এক্ষেত্রে আলােচনার মূল বিষয় হলাে, ইসলামে পরাজিত শক্তিকে, রাজনৈতিক অধিকার না দেয়া ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্পর্কে কি বলা হয়েছে তা দেখা। ইসলামের প্রাথমিক যুগে যুদ্ধবন্দী বা যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধের ধরণ অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হতাে। কাউকে হত্যা করা হতাে, কাউকে দাস-দাসী করা হতাে, আবার কাউকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হতাে। প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয় বদর যুদ্ধের বন্দীদের ব্যাপারে। তাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে মহানবী (সঃ) সাহাবাদের অভিমত জানতে চান। শীর্ষস্থানীয় সাহাবাদের মধ্যে হযরত আবু বকর (রাঃ) ছিলেন কোমল মনের মানুষ। তিনি বললেন, হে রাসুলুল্লাহ! যুদ্ধবন্দীদের সবাই আমরা মুহাজিরদের আত্মীয়স্বজন। তাদেরকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। তাতে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী গরীব মুসলমানরাও কিছু উপকৃত হবে। হযরত ওমর (রাঃ) মহানবীর। (সঃ) সামনে এগিয়ে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এসব যুদ্ধবন্দী আল্লাহর দুশমন। আপনাকে তারা মিথ্যে নবী বলেছে, মক্কা থেকে বের করে দিয়েছে, যুদ্ধের জন্য মদিনা পর্যন্ত ছুটে এসেছে, এসব লােক কুফরীর বুনিয়াদ এবং পথভ্রষ্টতার পতাকা। তাদের ধ্বংস করা হলে ইসলামের অগ্রগতি হবে। মুশরিকরা বরবাদ হবে। তাদের শিরচ্ছেদ করার ব্যাপারে আপনি কোনরূপ দ্বিধা করবেন না ।
————–
২৫
মােটকথা, হযরত আবুবকর ও হযরত ওমরের নেতৃত্বে সাহাবারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। অবশেষে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে মহানবীর (সঃ) বড় মেয়ে হযরত জয়নবের স্বামী আবুল আস ইবনে রবীও ছিল। তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল হযরত যয়নবকে মদিনায় আসার অনুমতি দেয়ার শর্তে। অবশ্য বিত্তহীন বন্দীদের মহানবী (সঃ) বিনা মুক্তিপণেই ছেড়ে দেন। কিন্তু আরাে কঠোর শাস্তি না দেয়ায় আল্লাহ তা’য়ালা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “দেশে সম্পূর্ণভাবে শক্র নিপাত না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয়; তােমরা কামনা কর পার্থিব সম্পদ এবং আল্লাহ চান পরলােকের কল্যাণ। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (৮ঃ ৫৭) যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে প্রথম দিকে এরূপ কঠোর ছিল ইসলামের বিধান। পরবর্তীকালে মুসলমানরা এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরােপের বিস্তীর্ণ এলাকায় সাম্রাজ্য বিস্তার করে। বিভিন্ন যুদ্ধে পরাজিত হাজারাে লােককে বন্দী করে রাখা, হত্যা করা কিংবা দাস-দাসী করে রাখা ছিল অসম্ভব ব্যাপার। তাই আনুগত্য প্রকাশের পর তাদেরকে জিম্মি হিসেবে গণ্য করা হতাে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদেরকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া হতাে। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে জিযিয়া কর নেয়া হতাে। তৎকালীন পরিবেশে তাদেরকে সামরিক বিভাগে নেয়া হতাে না। অপর কোন নীতি নির্ধারণী দায়িত্বও দেয়া হতাে না। আধুনিককালে মুসলিম রাষ্ট্রগুলােতে ইসলামের এই নীতির বড় একটা পরিবর্তন দেখা যায়
। পশ্চিম এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও ইউরােপের অংশ বিশেষে ৫২ লাখ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে ছিল তুর্কী খেলাফত। এই বিশাল সাম্রাজ্য ভেঙ্গে সৌদী আরবসহ ৪০টিরও বেশি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়েছে। এসব রাষ্ট্রের কোনটিতেই তুর্কী খেলাফতের সমর্থক কাউকেই রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে মতামত দেয়ার সুযােগ দেয়া হয়নি। ইরানের বর্তমান শাসকরা রেজা শাহ পাহলবীকে তাড়িয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তারা শাহের সমর্থকদের রাজনীতি করার সুযােগ দেয়া দূরের কথা, ক’জন জীবনে বেঁচে আছে বলা মুশকিল। সৌদী নাগরিক ভিন্ন মতাবলম্বী উসামা বিন লাদেনকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। আমাদের দেশের ঘাতক-দালাল রাজাকার আলবদর তালেবানদের পঁচাত্তর পরবর্তী সংবিধানে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে রাজনীতি করার অধিকার দেয়া হলেও তাদের নিকট এই সংবিধানের কোন মূল্য নেই। কারণ তাদের শ্লোগান হচ্ছে বাংলাদেশে তারা আল্লাহর আইন ও সৎ লােকের শাসন কায়েম করবে। আর আল্লাহর আইনের দৃষ্টিতে তাে তাদের বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকারই নেই। কারণ তারা বাংলাদেশ চায়নি। তারা চেয়েছিল পাকিস্তান টিকিয়ে রাখতে। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলােতে তাদের শ্লোগান ছিল পাকিস্তান না টিকলে এদেশে ইসলাম টিকবে না। স্বাধীন বাংলাদেশে
নিজামী-আমিনীরা পরাজিত শক্তি। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত। কোন ইসলামিক ও মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রে পরাজিতদেরকে রাজনৈতিক অধিকার দেয়া হয়নি। বাংলাদেশে আল্লাহর আইন কায়েম করার উদ্যোগ নেয়ার আগে তাদেরকে নিজেদের জীবনে আল্লাহর আইন কায়েম করতে হবে। প্রমাণ করতে হবে, ইসলামে। পরাজিত শক্তিকে রাজনৈতিক অধিকার দেয়া হয়েছে। নতুবা নিজামী আমিনী প্রমুখ আলবদর রাজাকার তালেবানদের সরকারে থাকা হবে ইসলামের নামে সম্পূর্ণ ইসলাম বিরােধী কাজ। পবিত্র কোরআনে পরিষ্কার ঘােষণা করা হয়েছে ? “তােমরা এমন কথা বলবে না যা তােমরা নিজেরা করাে না।’ কথায় আছে, চোরা না শােনে ধর্মের কাহিনী। নিজামিরা মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলােতে যেসব অপকর্ম করেছে, তার জন্য কখনাে তারা অনুশােচনাও প্রকাশ করেনি। ক’বছর আগেও তারা সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছে,’ আমরা ‘৭১ সালে যা করেছি, ঠিক করেছি।’ তাদের ওয়েব পেজে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যা লিখেছে, তা আরাে জঘন্য। তাদের ভাষায়, ‘৭১ সালে শেখ মুজিব কি করতে যাচ্ছিলেন আগে আমাদেরকে বলেননি। তবে তার ও তার দলের আচরণে মনে হচ্ছিল, তিনি পাকিস্তানের এই অংশ ভারতের হাতে তুলে দেবেন। এজন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের পক্ষে ছিলাম। ইদানিং এই মুখেই বলছে ৭১ এ কোন যুদ্ধাপরাধ হয়নি,কোন যুদ্ধাপরাধিই নেই। এভাবে তারা কৈফিয়তের নামে বঙ্গবন্ধু ও তার দল আওয়ামী লীগকে আমাদের নতুন প্রজন্ম ও বিদেশীদের নিকট স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রশ্নে অভিযুক্তের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। এই রাজাকার আলবদর তালেবানরা কিছুদিন আগেও আমাদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে ইতিহাসের কী মর্মান্তিক পরিণতি। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডারের সেই ঐতিহাসিক উক্তিটিই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। তিনি উপমহাদেশে এসে তার সেনাপতিকে বলেছিলেন, ‘সেলুকাস, কি বিচিত্র এদেশ!’
বুদ্ধিজীবী হত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও জামায়াত
জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এক আলােচনায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের সাথে জামায়াতের জড়িত থাকার অভিযােগ অস্বীকার করেছেন। উল্টো তিনি আওয়ামী লীগকে এজন্য দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই-৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের সঙ্গে জামায়াত-শিবির জড়িত নয়। স্বাধীনতার পর এই হত্যাকান্ডের ব্যাপারে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযােগ করা হয়। এই অপরাধে আওয়ামী লীগকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। আওয়ামী লীগই বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে জড়িত ছিল। যারা বাংলাদেশের সীমানায় বিশ্বাস করে না, তারাই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সীমানায় বিশ্বাস করে। ইসলামী চেতনায় বিশ্বাসী দল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে পারে না। — এই মুজাহিদই কিছুদিন আগে নির্বাচন কমিশনে বলছেন ৭১ এ কোন যুদ্ধাপরাধ হয়নি, কোন যুদ্ধাপরাধিই নেই দেশে। জনাব মুজাহিদের এই বক্তব্যে একাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম বিস্মিত, এমনকি বিভ্রান্তও হতে পারে। কিন্তু যারা মুক্তিযােদ্ধা কিংবা যারা মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছেন, তারা কখনাে বিস্মিত হবেন না। বিভ্রান্ত হওয়ার তাে প্রশ্নই আসে না। কারণ তারা ১৯৭১ সালে জামায়াত ও তার অঙ্গ সংগঠন শিবিরের পূর্বসূরী ইসলামী ছাত্র সংঘ ওরফে বদর বাহিনীর অত্যাচারনির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ নিজেরা প্রত্যক্ষ করেছেন। বদর বাহিনী এপ্রিল মাসের শেষ দিকে প্রথম গঠিত হয় জামালপুরে। জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান প্রচার সম্পাদক মােহাম্মদ কামরুজ্জামান ছিলেন বদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা। পরবর্তীতে এই সংগঠন সারাদেশে সম্প্রসারণ করা হয়। বদর বাহিনী সার্বিকভাবে জামায়াতের প্রাক্তন আমীর গােলাম আজমের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতাে। এর প্রকাশ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে সারা পাকিস্তান প্রধান ছিলেন জামায়াতের বর্তমান আমীর ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী। পূর্ব পাকিস্তান প্রধান ছিলেন জামায়াতের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ। প্রধান সংগঠক ছিলেন জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মােহাম্মদ কামরুজ্জামান। শিক্ষিত জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত বদর বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য ছিল সারাদেশে স্বাধীনতাকামীদের খুঁজে বের করা, হিন্দুদের বলপূর্বক মুসলমান বানানাে, সেমিনার-সিম্পােজিয়াম ও প্রচারপত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ। বিরােধী প্রচার-প্রপাগান্ডা এবং প্রয়ােজনে মুক্তিযােদ্ধাদের সশস্ত্রভাবে মােকাবেলা করা।
‘বুদ্ধিমত্তার সাথে ঠান্ডা মাথায় বদর বাহিনীর নৃশংসতা মুক্তিযুদ্ধের শেষ পাঁচটি মাসে জনমনে ভয়াবহ আতংকের সৃষ্টি করেছিল। জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামও সে সময় বদর বাহিনীকে উত্তেজিত করে। ১৪ সেপ্টেম্বর’ ৭১ ‘আলবদর’ শিরােনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংগ্রাম লিখেছে, “আলবদর একটি নাম! একটি বিস্ময়! আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা! যেখানে। তথাকথিত মুক্তিবাহিনী, আলবদর সেখানেই। যেখানেই দুষ্কৃতকারী, আলবদর সেখানেই। ভারতীয় চর কিংবা দুষ্কৃতকারীদের কাছে আলবদর সাক্ষাৎ আজরাইল।” ওদিকে বদর বাহিনীর প্রকাশ্য নেতারাও একযােগে তৎপর হয়ে ওঠেন। ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসায় বদর বাহিনী ক্যাম্পের এক সমাবেশে বদর বাহিনী প্রধান মতিউর রহমান নিজামী ২৩ সেপ্টেম্বর বলেন, “যারা ইসলামকে ভালবাসে শুধুমাত্র তারাই পাকিস্তানকে ভালবাসে। এবারের উদঘাটিত এই সত্যটি যাতে আমাদের রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীরা ভুলে যেতে না পারে সেজন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।” ১৯৭১-এর ৭ নভেম্বর বদর দিবস পালন উপলক্ষে ইসলামী ছাত্রসংঘের উদ্যোগে ঢাকার বায়তুল মােকাররম প্রাঙ্গণে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭১-এর ৮ নভেম্বর দৈনিক পাকিস্তানে এই সমাবেশ সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “সমাবেশে পূর্ব পাকিস্তান। ইসলামী ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক(আলবদর বাহিনী নেতা ও বর্তমানে বাংলাদেশে রাবেতার পরিচালক) মীর কাশেম আলী ‘বদর দিবসের শপথ’ হিসেবে তিনটি কর্মসূচী তুলে ধরেন। ক। ভারতের আক্রমণ রুখে দাঁড়াবাে। খ। দুষ্কৃতকারীদের খতম করবাে। গ। ইসলামী সমাজ কায়েম করবাে। “ইসলামী ছাত্র সংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সভাপতি ও বদর বাহিনীর প্রাদেশিক প্রধান আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ চার দফা ঘােষণা প্রচার করেন। চার দফা ঘােষণাকে বাস্তবায়িত করার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন,”–এই ঘােষণা বাস্তবায়িত করার জন্য শির উঁচু করে, বুকে কোরান নিয়ে মর্দে মুজাহিদের মত এগিয়ে চলুন। প্রয়ােজন হলে নয়াদিল্লী পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে আমরা বৃহত্তর পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করবাে।—“সমাবেশ শেষে মিছিলের উল্লেখযোগ্য শ্লোগানগুলাের মধ্যে ছিল আমাদের রক্তে পাকিস্তান টিকবে’, বীর মুজাহিদ অস্ত্র ধর, ভারতকে খতম কর’, ‘মুজাহিদ এগিয়ে চল, কলিকাতা দখল কর’ এবং ‘ভারতের চরদের খতম কর।’
১৯৭১-এর ৮ নভেম্বর সংখ্যায় দৈনিক সংগ্রাম লিখেছে, “মিছিলকারী জিন্দাদিল তরুণরা। ‘ভারতীয় দালালদের খতম কর’, ‘হাতে লও মেশিনগান দখল কর হিন্দুস্তান’, ‘আমাদের। রক্তে পাকিস্তান টিকবে’ প্রভৃতি শ্লোগানে রাজধানীর রাজপথ মুখরিত করে তােলে।” বদর দিবসের সাফল্যে উদ্দীপ্ত হয়ে বদর বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মতিউর রহমান নিজামী। ১৯৭১-এর ১৪ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামে লিখেছেন,”—-সেদিন আর খুব দূরে নয় যেদিন আলবদরের তরুণ যুবকেরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হিন্দু বাহিনীকে পর্যদস্ত করে হিন্দুস্তানকে খতম করে সারা বিশ্বে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন । করবে।” বদর বাহিনীর অপর দুই নেতা আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ ও মীর কাশেম আলী ১৯৭১-এর ২৩ নভেম্বর এক বিবৃতিতে সৈনিক হিসেবে প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার জন্য সংগঠনের সদস্যদের প্রতি আহবান জানান। এসময় প্রকাশিত এক প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, শত্রু আশেপাশেই রয়েছে। তাই সতর্কতার সঙ্গে কাজ চালাতে হবে। মনে। রাখবেন, আপনারা পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখার জন্যই কেবল যুদ্ধ করছেন না, এ যুদ্ধ ইসলামের। নমরুদদের হাত থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য আমাদের আমীরের (গােলাম আজমের) নির্দেশ পালন করুন।” অবরুদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও মহকুমা শহরেই বদর বাহিনীর নিজস্ব ক্যাম্প ছিল। এসব ক্যাম্পে ধরে আনা স্বাধীনতাকামীদেরকে অব্যাহত নির্যাতনের মাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যা করা হতাে। মুক্তিযুদ্ধ অপ্রতিরােধ্য গতিতে বিজয়াভিমুখী হওয়ার সাথে সাথে এদের তৎপরতাও বাড়ছিল ভয়ংকরভাবে। শেষ দিনগুলােতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, লেখক, সাংবাদিক এবং সরকারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিম্ন পর্যায়ের চাকরিজীবী পর্যন্ত সামান্য শিক্ষিত বাঙালি বলতেই বদর বাহিনীর শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। অন্যভাবে বলা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সুপরিকল্পিতভাবে বাঙালিদের সমূলে বিনাশ করার ‘বিজ্ঞান সম্মত হত্যাকান্ড ছিল বদর বাহিনীর কর্মকান্ডের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক গভর্ণরের উপদেষ্টা জেনারেল রাও ফরমান আলীর নীলনকশা অনুযায়ী বদর বাহিনী এই তৎপরতা চালিয়েছিল। বিশেষ করে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগের কটি দিনে ঢাকায় সংঘটিত হত্যাকান্ডের মর্মান্তিক ঘটনাগুলাে এর প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। স্বাধীনতার পরপর বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত শত শত প্রতিবদনে বদর বাহিনীর। নৃশংসতার ভয়াবহ চিত্র রয়েছে। এই চিত্র হিটলারের গেস্টাপাে, ভিয়েতনামের মাইলাই কিংবা লেবাননে ফিলিস্তিনীদের সাবরা শাতিলা শিবিরের হত্যাযজ্ঞের চেয়েও হাজার গুণ ভয়াবহ। বদর বাহিনীর হাতে শুধু ঢাকার শত শত বুদ্ধিজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,
৩০
সাংবাদিক, সাহিত্যিক, অধ্যাপক ও শিল্পীই প্রাণ হারাননি, অবরুদ্ধ বাংলাদেশের বিভিন্ন | স্থানে বহু বিশিষ্ট নাগরিকও রেহাই পাননি। শুধু অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডাক্তার আবদুল আলীম, ডাক্তার ফজলে রাব্বী কিংবা সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হােসেন, শহিদুল্লাহ কায়সার
ও নিজামুদ্দিনই আলবদর নামধারী নরঘাতকদের হত্যাযজ্ঞের শিকার হননি | স্বাধীনতাকামী অনেক আলেমও তাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। আওয়ামী ওলামা পার্টির সভাপতি মওলানা ওয়ালিউর রহমানও বদর বাহিনীর হাতে শাহাদত বরণ করেন। ৩৮ বছর পর মুজাহিদ সাহেব যাই বলুন না কেন, এতাে সব তথ্য প্রমাণ থাকার পর কাউকে বুঝিয়ে বলার প্রয়ােজন হয় না যে, বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারী ছিল কারা। তিনি | বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড আওয়ামী লীগের উপর চাপানাের চেষ্টা করেছেন। তাকে জিজ্ঞেস | করতে ইচ্ছে হয়, দেশটা কি তখন আওয়ামী লীগ শাসন করতাে, না পাকিস্তানীরা? মুজাহিদ সাহেবরা কি ভুলে গেছেন, তাদের পাকিস্তানি বন্ধুরা মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে বাঙালিদের শায়েস্তা করার জন্য ঢাকা শহরের প্রতিটি থানার দায়িত্বে একজন করে পাকিস্ত
নি ব্রিগেডিয়ার নিয়ােগ করেছিল? সেই বিভীষিকাময় দিনগুলােতে ঢাকা শহরের এমন | কোন পাড়া মহল্লা ছিল না যেখানে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর জোয়ান, রাজাকার
আলবদররা প্রতি মুহূর্তে টহল দিত না। সে দিনগুলােতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী দূরের কথা অরাজনৈতিক সাধারণ লােকেরাও ঘর থেকে বড় একটা বের হওয়ার সাহস করতাে।
। কারফিউর সময় কারাে পক্ষে ঘরের বের হওয়া ছিল কল্পনাতীত ব্যাপার। এরূপ অবস্থায় আওয়ামী লীগের লােকেরা এসে দলে দলে বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে ফেললাে? মুজাহিদ সাহেবদের মতাে পাকিস্তানের নিশানবরদার ও ইসলাম পছন্দ ব্যক্তিবর্গ ও তাদের অগণিত ‘
জিন্দাদিল রাজাকার আলবদর বাহিনী তাে ঢাকাতেই বহাল তবিয়তে ছিলেন। তারা অবাধে চলাফেরা করতেন। তারা এগিয়ে গিয়ে ঘাতক আওয়ামী লীগারদের হাত থেকে বুদ্ধিজীবীদের রক্ষা করলেন না কেন। তাছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবীদের | পরিবারবর্গ ও আত্মীয়-স্বজনরা এখনাে বেঁচে আছেন। মুজাহিদ সাহেবরা কি তাদের নিকট গিয়ে জানার চেষ্টা করেছেন, বুদ্ধিজীবীদের কারা বাসা থেকে বের করে নিয়ে গিয়েছিল?
সে সৎ সাহস কি মুজাহিদ সাহেবদের আছে? যান না, একবার চেষ্টা করে দেখুন, তারা | কি বলে।
ইসলামে যুদ্ধাপরাধী, পরাজিত শক্তির রাজনৈতিক অধিকার
আমরা যারা স্বাধীনতার অনেক পরে জন্মেছি তাদের কেউ যুদ্ধাপরাধ বা স্বাধীনতার সময় যুদ্ধাপরাধীদের ভূমিকা নিয়ে প্রত্যক্ষভাবে অবগত নই। আমরা যা জেনেছি তা আমাদেরও বাবা-মা, আত্নীয় স্বজন বা মুক্তিযুদ্ধের অবিকৃত ইতিহাসভিত্তিক বই বা পত্রপত্রিকা থেকে। স্বাধীনতা সম্বন্ধে আগ্রহ বা কি কারণে জানি না প্রায় প্রতি বিজয় দিবসে আমি স্মৃতিসৌধে যাই। বছরখানেক আগে ১৬ই ডিসেম্বর আমি স্মৃতিসৌধে গেছি, বিগত সরকারের মন্ত্রী মওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদও সেদিন বিএনপির মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলেন। তাদেরকে দেখা মাত্র আমার অজান্তেই মনটা চলে গিয়েছিল ৩৮ বছর আগে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলাের ইতিহাসে। ‘৭১ সালে সারাদেশের আপামর জনতা মাতৃভূমির মুক্তির জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছিল। আর নিজামীরা রাজাকার আলবদর আলশামস বাহিনী গঠন করে পাকিস্তান রক্ষার জন্য তথাকথিত জেহাদ করেন। হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযােগ, লুটতরাজ, কাফের নিধন প্রভৃতি জঘন্য কাজে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে তারা সহযোেগিতা করেন। বদর বাহিনী প্রধান নিজামী ‘৭১সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসায় বদর বাহিনী ক্যাম্পের এক সমাবেশে বলেছিলেন, “যারা ইসলামকে ভালােবাসে শুধুমাত্র তারাই পাকিস্তানকে ভালােবাসে। এবারের উঘাটিত এই সত্যটি যাতে আমাদের রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীরা ভুলে যেতে না পারে সে জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।” নিজামীদের এই ‘সর্বাত্মক প্রচেষ্টা’ কি ছিল বুদ্ধিজীবিদের হত্যার মাধ্যমে তারা তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। বদর বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মওলানা নিজামী ৪ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামে লিখেছেন,”—- বদর যযাদ্ধাদের যেসব গুণাবলীর কথা আমরা আলােচনা করেছি, আলবদরের তরুণ মর্দে। মুজাহিদদের মধ্যে ইনশাআল্লাহ সেসব গুণাবলী আমরা দেখতে পাব।—-সেদিন আর খুব দূরে নয়, যেদিন আলবদরের তরুণ যুবকেরা আমাদের সশস্ত্র (পাকিস্তানী বাহিনীর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হিন্দু বাহিনীকে (মুক্তি বাহিনীকে) পর্যদস্ত করে হিন্দুস্তানকে খতম করে সারা বিশ্বে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করবে।” সাবেক সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ছিলেন সে সময় প্রাদেশিক বদর বাহিনী প্রধান। দৈনিক পাকিস্তানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐতিহাসিক বদর দিবস পালনােপলক্ষে ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার বায়তুল মােকাররমে ইসলামী ছাত্র।
সংঘের (বর্তমানে ছাত্র শিবির) এক গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। তাতে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ চার দফা ঘােষণা প্রচার করেন। এই চার দফা ঘােষণা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে জনাব মুজাহিদ বলেন, —-“এগিয়ে চলুন। প্রয়ােজন হলে নয়াদিল্লী পর্যন্ত গিয়ে আমরা বৃহত্তর পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করবাে”। সেদিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে এই দুই বদর বাহিনী নেতাকে মন্ত্রী হিসেবে দেখে শহীদ পরিবার ও মুক্তিযােদ্ধাদের মনে কিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, তা আর উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। আমাদের নতুন প্রজন্মের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এসব রাজাকার আলবদর স্বাধীন বাংলাদেশে বেঁচে থাকা ও রাজনীতি করার অধিকার পেলাে কি করে। সে অনেক কথা। সংক্ষেপে বলা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হওয়ার পর বাংলাদেশে সুকৌশলে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবােধ পরিহার করে পাকিস্তানি ধ্যান-ধারনা প্রবর্তন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারী মাসে সামরিক সরকার একটি অধ্যাদেশ ঘােষণা করেন। ১৯৭২ সালের অধ্যাদেশের অধীনে যেসব ঘাতক-দালালের কারাদন্ড হয়েছিল কিংবা বিচার চলছিল, সামরিক সরকারের উক্ত অধ্যাদেশে তার অবসান হয়। লুণ্ঠন, অগ্নিসংযােগ, ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডে সাজাপ্রাপ্ত ও অভিযুক্ত রাজাকার, আলবদর ও অন্যান্য। ঘাতক-দালালরা বেরিয়ে আসে কারাগার থেকে। এছাড়া দেশে-বিদেশে যারা আত্মগােপন। করেছিল তারাও জনসমক্ষে বেরিয়ে আসে। এসময় শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযােদ্ধাদের। পিতামাতা, বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের নিভৃতে অশ্রুপাত করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না । কিন্তু এসব ঘটনার মূল নায়ক বর্তমান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সে সময়ের সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি মুক্তিযােদ্ধা জেনারেল জিয়াউর রহমান তার সহযােদ্ধাদের রক্তদানের কথা একটিবারও স্মরণ করেননি। অন্য সব বিধি-বিধানের কথা বাদ দিলেও ঘাতক-দালালদের। ছেড়ে দিলে শহীদ পরিবারগুলাের মনে কি প্রতিক্রিয়া হবে,তিনি তা উপলব্ধি করার চেষ্টাও করেননি। শাহ আজিজ, আবদুল আলিমদের মতাে দালালদের স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় নিতেও তার এতটুকু বাধেনি। তিনি সংবিধানে ৫ম সংশােধনীর মাধ্যমে। রাজাকার আল বদরদের সব অপকর্ম সাংবিধানিকভাবে বৈধ করে নেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ক্ষেত্রেও একই কান্ড করেন। ১৯৭৬ সালের আগস্ট মাসে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘঘাষিত হয়। এই সুযােগে স্বাধীনতা বিরােধী দলগুলােও সামরিক সরকারের স্বীকৃতি নিয়ে। বাংলাদেশে রাজনীতি করা ও ক্ষমতার শেয়ার দখলের সুযোেগ লাভ করে। বিগত নির্বাচনে রাজাকার আলবদর ও তালেবানদের নিয়ে চারদলীয় জোট করার পিছনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়ার সে নীতিই কর্যকর ছিল। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন দখল করে রাজাকার আলবদর তালেবানদের ক্ষমতার শেয়ার দেয়ার পিছনে বিএনপি সে নীতিই অনুসরণ করেছে। রণাঙ্গণে পরাজিত শক্তিকে ক্ষমতার শেয়ার দেয়ার ঘটনা বা দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে। নেই। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের এক পর্যায়ে জার্মানরা ফ্রান্স দখল করে। তারা সেখানে প্রশাসনিক।
ব্যবস্থা গড়ে তােলার উদ্যোগ গ্রহণ করে । ফ্রান্সের কিছু লােক জার্মানদেরকে সহযােগিতা করে। ফরাসিরা পুনরায় তাদের দেশ জার্মানীর দখলমুক্ত করার পর ওয়ার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ফরাসী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরম্ভ করে। এসময় কিছু যুদ্ধাপরাধী পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময়কাল পর এখনাে কোন যুদ্ধাপরাধীর সন্ধান পাওয়া মাত্র ফ্রান্সে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে দাঁড় করানাে হয়। ফ্রান্সে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক অধিকার দেয়ার কথা কেউ কল্পনাও করে না। কিন্তু বাংলাদেশে ঘাতক-দালালদের অবাধে রাজনীতি করার অধিকার দেয়া হয়েছে। আর এ কান্ডটি করেছিলেন মুক্তিযােদ্ধা জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি নিজের গদি নিষ্কন্টক করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে। দূরে রাখা, এমনকি নির্মূল করে দেয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ও জাতির এ সর্বনাশটি করেন। সে যাক, এক্ষেত্রে আলােচনার মূল বিষয় হলাে, ইসলামে পরাজিত শক্তিকে, রাজনৈতিক অধিকার না দেয়া ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্পর্কে কি বলা হয়েছে সেটা খতিয়ে দেখা। ইসলামের প্রাথমিক যুগে যুদ্ধ বন্দী বা যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধের ধরণ অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হতাে। কাউকে হত্যা করা হতাে, কাউকে দাস-দাসী করা হতাে, আবার কাউকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হতাে। প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয় বদর যুদ্ধের বন্দীদের ব্যাপারে। তাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে মহানবী (সঃ) সাহাবাদের অভিমত জানতে চান। শীর্ষস্থানীয় সাহাবাদের মধ্যে হযরত আবু বকর (রাঃ) ছিলেন। কোমল মনের মানুষ। তিনি বললেন, হে রাসুলুল্লাহ! যুদ্ধবন্দীদের সবাই আমরা মুহাজিরদের আত্মীয়-স্বজন। তাদেরকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। তাতে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী গরীব মুসলমানরাও কিছু উপকৃত হবে। হযরত ওমর (রাঃ) মহানবীর (সঃ) সামনে এগিয়ে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এসব যুদ্ধবন্দী আল্লাহর দুশমন। আপনাকে তারা মিথ্যে নবী বলেছে, মক্কা থেকে বের করে দিয়েছে, যুদ্ধের জন্য মদিনা পর্যন্ত ছুটে এসেছে, এসব লােক কুফরীর বুনিয়াদ এবং পথভ্রষ্টতার পতাকা। তাদের ধ্বংস করা হলে ইসলামের অগ্রগতি হবে। মুশরিকরা বরবাদ হবে। তাদের শিরচ্ছেদ করার ব্যাপারে আপনি কোনরূপ দ্বিধা করবেন না। মােটকথা, হযরত আবু বকর ও হযরত ওমরের নেতৃত্বে সাহাবারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। অবশেষে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে মহানবীর (সঃ) বড় মেয়ে হযরত জয়নবের স্বামী আবুল আস ইবনে রবীও ছিল। তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল হযরত জয়নবকে মদিনায় আসার অনুমতি দেয়ার শর্তে। অবশ্য বিত্তহীন বন্দীদের মহানবী (সঃ) বিনা মুক্তিপণেই ছেড়ে দেন। কিন্তু আরাে কঠোর শাস্তি
দেয়ায় আল্লাহ তা’য়ালা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “দেশে সম্পূর্ণভাবে শত্রু নিপাত না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোন নবীর জন্য সঙ্গত
নয়; তােমরা কামনা কর পার্থিব সম্পদ এবং আল্লাহ চান পরলােকের কল্যাণ। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (৮ঃ ৫৭) যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে প্রথম দিকে এরূপ কঠোর ছিল ইসলামের বিধান। পরবর্তীকালে মুসলমানরা এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরােপের বিস্তীর্ণ এলাকায় সাম্রাজ্য বিস্তার করে। বিভিন্ন যুদ্ধে পরাজিত হাজারাে লােককে বন্দী করে রাখা, হত্যা করা কিংবা দাস-দাসী করে রাখা ছিল অসম্ভব ব্যাপার। তাই আনুগত্য প্রকাশের পর তাদেরকে জিম্মি হিসেবে গণ্য করা। হতাে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদেরকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া হতাে। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে জিযিয়া কর নেয়া হতাে। তৎকালীন পরিবেশে তাদেরকে সামরিক বিভাগে নেয়া হতাে না। অপর কোন নীতি নির্ধারণী দায়িত্বও দেয়া হতাে না। আধুনিককালে মুসলিম রাষ্ট্রগুলােতে ইসলামের এই নীতির বড় একটা পরিবর্তন দেখা যায়
। পশ্চিম এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও ইউরােপের ৫২ লাখ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে ছিল। তুর্কী খেলাফত। এই বিশাল সাম্রাজ্য ভেঙ্গে সৌদী আরবসহ ৪০টিরও বেশি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়েছে। এসব রাষ্ট্রের কোনটিতেই তুর্কী খেলাফতের সমর্থক কাউকেই রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে মতামত দেয়ার সুযােগ দেয়া হয়নি। ইরানের বর্তমান শাসকরা রেজা শাহ পাহলবীকে তাড়িয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তারা শাহের সমর্থকদের রাজনীতি করার সুযােগ দেয়া দূরের কথা, ক’জন জীবনে বেঁচে আছে তাও বলা মুশকিল। সৌদী নাগরিক ভিন্ন মতাবলম্বী উসামা বিন লাদেনকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তার নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। আমাদের দেশের ঘাতক-দালাল রাজাকার আলবদর তালেবানদের পঁচাত্তর পরবর্তী সংবিধানে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে রাজনীতি করার অধিকার দেয়া হলেও তাদের নিকট এই সংবিধানের কোন মূল্য নেই। কারণ তাদের শ্লোগান হচ্ছে বাংলাদেশে তারা আল্লাহর আইন ও সৎ লােকের শাসন কায়েম করবে। আর আল্লাহর আইনের দৃষ্টিতে তাে তাদের বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকারই নেই। কারণ তারা বাংলাদেশ চায়নি। তারা চেয়েছিল পাকিস্তান টিকিয়ে রাখতে। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলােতে তদের শ্লোগান ছিল পাকিস্তান না টিকলে এদেশে ইসলাম টিকবে না। স্বাধীন বাংলাদেশে নিজামী-আমিনীরা পরাজিত শক্তি। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত কোন ইসলামিক ও মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রে পরাজিতদেরকে রাজনৈতিক অধিকার দেয়া হয়নি। বাংলাদেশে আল্লাহর আইন কায়েম করার উদ্যোগ নেয়ার আগে তাদেরকে নিজেদের জীবনে আল্লাহর আইন কায়েম করতে হবে। প্রমাণ করতে হবে, ইসলামে পরাজিত শক্তিকে রাজনৈতিক অধিকার দেয়া হয়েছে। নতুবা নিজামী আমিনী প্রমুখ আলবদর রাজাকার তালেবানদের সরকারে থাকা হবে ইসলামের নামে সম্পূর্ণ ইসলাম
৩৫
বিরােধী কাজ। পবিত্র কোরআনে পরিষ্কার ঘােষণা করা হয়েছে তােমরা এমন কথা বলবে না যা তােমরা নিজেরা করাে না।’ কথায় আছে, চোরা না শােনে ধর্মের কাহিনী। নিজামিরা মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলােতে যেসব। অপকর্ম করেছে, তার জন্য কখনাে তারা অনুশােচনাও প্রকাশ করেনি। ক’বছর আগেও তারা সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছে, আমরা ‘৭১ সালে যা করেছি, ঠিক করেছি।’ তাদের ওয়েব পেজে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যা লিখেছে, তা আরাে জঘন্য। তাদের ভাষায়, ‘৭১ সালে শেখ মুজিব কি করতে যাচিছলেন আগে আমাদেরকে বলেননি। তবে তার ও তার দলের আচরণে মনে হচ্ছিল, তিনি পাকিস্তানের এই অংশ ভারতের হাতে তুলে দেবেন। এজন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের পক্ষে ছিলাম।’ ইদানিং এই মুখেই বলছে ৭১ এ কোন যুদ্ধাপরাধ হয়নি, দেশে কোন যুদ্ধাপরাধিই নেই। এভাবে তারা কৈফিয়তের নামে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দল আওয়ামী লীগকে আমাদের নতুন প্রজন্ম ও বিদেশীদের নিকট স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রশ্নে অভিযুক্তের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। এই রাজাকার আলবদর তালেবানরা কিছুদিন আগেও আমাদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে ইতিহাসের কিরূপ মর্মান্তিক পরিণতি। আজকে স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ যখন যুদ্ধাপরাধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলছে স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন ধর্মীয় লেবাসধারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসর, রাজাকার আলবদর আলশামস বাহিনী ও অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের এ দেশের মানুষ বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়াছে। স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর সেই আসামীদের কাঠগড়ায় বিচারের কাঠগড়ায় করানাের প্রক্রিয়া হয়েছে এবং গত ২৯শে জানুয়ারি ০৯ জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ায় স্বাধীনতাযুদ্ধের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসরেরা দিশেহারা হয়ে গেছে। আজ সেই যুদ্ধাপরাধীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানাের সময় এসেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসংগে আইন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদেরই বিচার করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমর্থনে গঠিত সরকারকে দেওয়া এক সংবর্ধনায় পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর তকালীন আমির গােলাম আযম বলেছিলেন, ‘দুকৃতকারীদের (মুক্তিযােদ্ধা) ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে যেসব পাকিস্তানি প্রাণ হারিয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লােকই জামায়াতে ইসলামীর সাথে জড়িত। …পাকিস্তান যদি না থাকে তাহলে জামায়াত কর্মীরা দুনিয়াতে বেঁচে থাকার কোনাে সার্থকতা আছে বলে মনে করে না।’ ২৬ সেপ্টেম্বর। জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় এ সংবাদ ছাপা হয়। অন্যদিকে জামায়াতের বর্তমান আমীর ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী ১৯৭১ সালের ১৪
নভেম্বর দৈনিক সংগ্রাম-এ ‘বদর দিবস, পাকিস্তান ও আলবদর’ শিরােনামে একটি উপসম্পাদকীয়তে লেখেন, ‘আমাদের পরম সৌভাগ্যই বলতে হবে পাক সেনার সহযােগিতায় এ দেশের ইসলামপ্রিয় তরুণ সমাজ বদর যুদ্ধের স্মৃতিকে সামনে রেখে আলবদর বাহিনী। গঠন করেছে। জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে ই জামায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরােধিতা করে। দলের সে সময়কার ও বর্তমানের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রায় সবাই মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষে কাজ করেছেন। স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরও জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভূমিকার জন্য আজও দুঃখ প্রকাশ করেনি, বরং সবসময়ই তাদের সেই ভূমিকার পক্ষে প্রকাশ্যে যুক্তি দাঁড় করানাের চেষ্টা করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল প্রথম আলােকে বলেছেন, ‘যতক্ষণ একটি দেশ আছে,একজন দেশপ্রেমিকের কাজ হচ্ছে সে দেশের পক্ষে কথা বলা।’ পরে এই বক্তব্য ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ বা পশ্চিম অংশ আলাদা হয়ে যেতে চাইলে আপনার দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের অখন্ডতার পক্ষে কথা বলা। কিন্তু যদি দেশটি ভাগ হয়ে যায়, তাহলে আপনি যে অংশে থাকবেন, সে অংশের পক্ষে কথা বলবেন। একজন সুনাগরিক হিসেবে এটাই আপনার দায়িত্ব।’ গত ২৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলােচনার পর জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে কোনাে স্বাধীনতাবিরােধী নেই, ছিলও না। এটা বানােয়াট ও কল্পনাপ্রসূত।’ বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা: বর্তমানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ১৫ সদস্যের মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধেই স্বাধীনতা বিরােধিতার প্রমাণ আছে। তাঁরা হলেন আমীর মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ, জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির (সহসভাপতি) আবুল কালাম মােহাম্মদ ইউসুফ, নায়েবে আমির মকবুল আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মােল্লা ও এ টি এম আজহারুল ইসলাম এবং চার শীর্ষস্থানীয় নেতা মুহাম্মদ সুবহান, দেলাওয়ার হােসাইন সাঈদী, আবু নাসের মােহাম্মদ আবদুজ জাহেদ ও মীর কাসেম আলী (নয়া দিগন্ত-এর পরিচালনা বাের্ডের চেয়ারম্যান)। কেন্দ্রীয় কমিটির আরও দুই সদস্য নাজির আহমদ ও রফিউদ্দিন আহমদ নিজ এলাকায় স্বাধীনতাবিরােধী বলে পরিচিত। কমিটির অন্য দুই সদস্যের মধ্যে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যে ছিলেন, আর রফিকুল ইসলাম খান ছিলেন সে সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক।
যুদ্ধাপরাধের অভিযােগপত্র
১৯৯৩ সালের স্বাধীনতা দিবসে নির্মূল কমিটির আহ্বানে আহূত এক র্যালীতে ঘােষণা করা হয় স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর এদেশীয় চিহ্নিত দোসরদের বিচার কার্যক্রম নিয়ে। স্বাধীনতার পক্ষের সমস্ত শক্তি একত্রিত হয়ে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এদেশীয় চিহ্নিত দোসরদের জনতার সামনে মুখােশ উন্মােচনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। এদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার সময়ে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ, অগ্নিসংযােগ, বুদ্বিজীবী হত্যা, ধর্ষণ এ সমস্ত মানবতাবিরােধীদের চিহ্নিত করা হয়। এ পর্যায়ে আমরা নেতৃস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের মুখােশ উন্মােচন করবাে। বর্তমানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির চিহ্নিত অপরাধীদের সাথে ঘাতক ও দালাল নির্মূল কমিটির চিহ্নিত অপরাধীদেরও কর্মকান্ডের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হবে। এ পর্যায়ে ১৯৯২ সালের ২৬শে মার্চ গণ-আদালতে গােলাম আযমের বিরুদ্ধে ডঃ আনিসুজ্জামানের উত্থাপিত অভিযোেগপত্র দিয়ে শুরু হলাে……
গােলাম আযমের বিরূদ্ধে ডঃ আনিসুজ্জামান
উত্থাপিত অভিযােগপত্র
মাননীয় আদালত, আমি, মরহুম ডা: এ টি এম মােয়াজ্জেমের পুত্র এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অভিযোেগ উত্থাপন করছি। আমি অভিযােগ করছি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের পক্ষে; আমি অভিযোেগ করছি পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে লাঞ্ছিত মায়েদের পক্ষে; আমি অভিযােগ করছি হানাদার বাহিনী দ্বারা ধর্ষিত বােনদের পক্ষে; আমি অভিযােগ করছি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দোসর আলবদর কর্তৃক নিহত বুদ্ধিজীবীদের পক্ষে; আমি অভিযােগ করছি শক্রর হাতে প্রাণদানকারী পিতামাতার অসহায় এতিম সন্তানদের পক্ষে; আমি অভিযােগ করছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিকদের পক্ষে।
আমি অভিযােগ আনছি মরহুম মওলানা গােলাম কবিরের পুত্র গােলাম আযমের বিরুদ্ধে ইনি একজন পাকিস্তানি নাগরিক, তবে বহুদিন ধরে বেআইনিভাবে বসবাস করে আসছেন ঢাকার রমনা থানার মগবাজার এলাকার ১১৯ নম্বর কাজী অফিস লেনে। ইনি সেই গােলাম আযম-যিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রতিটি অন্যায়, বেআইনি, অমানবিক ও নিষ্ঠুর কাজ প্রকাশ্যে সমর্থন করেছিলেন; যিনি মুক্তিযােদ্ধাদের দেশদ্রোহী বলে আখ্যা দিয়ে তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়েছিলেন; যিনি আল বদর বাহিনী গড়ে তুলে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করার প্ররােচনা দিয়েছিলেন। গােলাম আযমের প্ররােচনায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আছেন আমার শিক্ষক মুনীর চৌধুরী, মােফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সন্তোষ কুমার ভট্টাচার্য ও সিরাজুদ্দীন হােসেন, আমার অগ্রজপ্রতিম শহীদুস্লা কায়সার, আমার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আহমদ, আমার সহকর্মী আবুল খায়ের, আনােয়ার পাশা, রাশীদুল হাসান ও মােহাম্মদ মাের্তজা, আমার ছাত্র আ ন ম গােলাম মােস্তফা ও সৈয়দ নজমুল হক-যাঁদের মৃত্যুতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত, শােকাহত ও ব্যথাতুর। গােলাম আযমের বিরুদ্ধে আমার বিশেষ অভিযােগঃ তিনি সর্বদা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছেন এবং এখনাে করছেন; বিশেষ করে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৮ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সশরীরে উপস্থিত থেকে, বক্তৃতা ও আলােচনার মাধ্যমে, স্মারকলিপি ও বিবৃতির দ্বারা, মুদ্রিত ও প্রকাশিত প্রচারপত্র ও প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে এবং সাংগঠনিক উদ্যোগ গ্রহণ করে নিজে এবং অপরের দ্বারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে দুর্বল ও সহায়হীন, বিচ্ছিন্ন ও বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করেছেন। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে এতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমার অভিযােগের সমর্থনে গােলাম আযমের কিছু কার্যকলাপের পরিচয় এখানে তুলে ধরছি। [১] ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হলে গােলাম আযম পাকিস্তানে বসে মাহমুদ আলী ও খাজা খয়েরউদ্দীনের মতাে দেশদ্রোহীর সঙ্গে মিলিত হয়ে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি নামে একটি সংগঠনের সূচনা করেন এবং বিভিন্ন দেশে পূর্ব পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তােলার আয়ােজন করেন। তিনি এই উদ্দেশ্যে দীর্ঘকাল পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর বলে নিজের পরিচয় দিতেন। [২] ১৯৭২ সালে গােলাম আযম লন্ডনে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটিগঠন করেন এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র উচ্ছেদ করে আবার এই ভূখণ্ডকে পাকিস্তানের অংশে পরিণত করার
ষড়যন্ত্র করেন। ১৯৭৩-এ ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত ফেডারেশন অফ স্টুডেন্টস ইসলামিক সােসাইটিজের বার্ষিক সম্মেলনে এবং লেসটারে অনুষ্ঠিত ইউ কে ইসলামিক কমিশনের বার্ষিক সভায় তিনি বাংলাদেশবিরােধী বক্তৃতা দেন। ১৯৭৪-এ মাহমুদ আলীসহ কয়েকজন পাকিস্তানিকে নিয়ে তিনি পূর্ব লন্ডনে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটির এক বৈঠক করেন। বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে দেখে এই সভায় স্থির হয় যে, তাঁরা এখন থেকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নিয়ে একটি কনফেডারেশন গঠনের আন্দোলন করবেন। এই সভায় গােলাম আযম ঝুঁকি নিয়ে হলেও বাংলাদেশে ফিরে অভ্যন্তর থেকে কাজ চালানাের প্রয়ােজনীয়তা ব্যক্ত করেন। ১৯৭৭-এ লন্ডনের হােলি ট্রিনিটি চার্চ কলেজে অনুষ্ঠিত একটি সভায় তিনি এ কথারই পুনরাবৃত্তি করেন এবং সেই উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য পাকিস্তানি পাসপাের্ট ও বাংলাদেশি ভিসা নিয়ে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে আগমন করেন। [৩] ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে গােলাম আযম রিয়াদে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামি যুব। সম্মেলনে যােগদান করেন এবং পূর্ব পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকল মুসলিম রাষ্ট্রের সাহায্য প্রার্থনা করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত তিনি সাতবার সউদি বাদশাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ার আহ্বান জানান এবং কখনাে তিনি বাদশাহকে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করতে ও কখনাে বাংলাদেশকে আর্থিক বা বৈষয়িক সাহায্য না দিতে অনুরােধ করেন। ১৯৭৪ সালে রাবেতায়ে আলমে ইসলামির উদ্যোগে মক্কায় অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এবং ১৯৭৭ সালে কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত একটি সভায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বক্তৃতা করেন। [৪] অনুরূপভাবে গােলাম আযম ১৯৭৩ সালে বেনগাজিতে অনুষ্ঠিত ইসলামি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিদের কাছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য লবিং করেন। একই বছরে ত্রিপলিতে অনুষ্ঠিত ইসলামি যুব সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে হানিকর বক্তব্য উপস্থাপন করেন। [৫] ১৯৭৩ সালে গােলাম আযম মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত মুসলিম স্টুডেন্টস অ্যাসােসিয়েশন অফ আমেরিকা অ্যান্ড কানাডার বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানভুক্ত করার জন্য সবাইকে কাজ করতে আহ্বান জানান। [৬] ১৯৭৭ সালে গােলাম আযম ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ইসলামিক ফেডারেশন অফ স্টুডেন্টস অরগানাইজেশনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশবিরােধী বক্তৃতা করেন।
৪০
মাননীয় আদালত, আমি গােলাম আযমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশবিরােধী ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযােগ উত্থাপন করছি। ইনি সেই গােলাম আযম-যাঁকে ফেরার ঘােষণা করে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিজ এলাকার মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির হতে নির্দেশ দেন; ১৯৭৩ সালের ১৮ই এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনবলে বাংলাদেশ সরকার যাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করে দেন; যিনি পাকিস্তানি পাসপাের্ট ও তিন মাসের ভিসা নিয়ে ১৯৭৮ সালের ১১ই জুলাই বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যিনি বেআইনিভাবে এ দেশে রয়ে যান; ১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৭৯ ও ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করেও যিনি নাগরিকত্ব ফেরত পাননি; বাংলাদেশ সরকার যাঁকে ১৯৮৮ সালের ২০শে এপ্রিলের মধ্যে দেশত্যাগের নির্দেশ দিলেও যিনি বাংলাদেশে থেকে যান; যাঁর নাগরিকত্ব ফেরত দেওয়ার ইচ্ছা বাংলাদেশ সরকারের নেই বলে ১৯৮৮ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিকবার জাতীয় সংসদে ঘােষণা করেছেন; সেই গােলাম আযমের উপযুক্ত শাস্তি বিধানের জন্য এই গণ-আদালতের কাছে আমি সুনির্দিষ্ট অভিযােগ উত্থাপন করলাম।
মতিউর রহমান নিজামী
(মইত্যা রাজাকার)
মতিউর রহমান নিজামী (মইত্যা রাজাকার) সাং- গ্রাম-মন্মথপুর, পাে-সােনাতলা, থানাসাথিয়া, জেলা- পাবনা। বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমীর আর জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের সাবেক নেতা। ১৯৭১ সালে এই জামায়াত নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরুদ্ধে তার যাবতীয় কর্মতৎপরতা পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন। তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিহত ও মুক্তিযােদ্ধাদের নির্মূল করার জন্য আলবদর ও আলশামস বাহিনী গটিত হয় যারা পাকিস্তান রক্ষার জন্য তথাকথিত জেহাদ করেন। ধর্ষণ, অগ্নিসংযােগ, লুটতরাজ, কাফের নিধন প্রভৃতি জঘন্য কাজে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে তারা সহযােগিতা করেন। মতিউর রহমান নিজামী আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। এই আলবদর বাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানি বাহিনীতে সহযােগী হিসেবে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধরত বাঙালি জনগােষ্ঠিকে পাকিস্তানি তথা ইসলামী জীবনদর্শনে বিশ্বাসী জনগােষ্ঠিতে রূপান্তরিত করা। আলবদর নেতারা বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করেন এবং তাদের নির্দেশে ডিসেম্বর মাসে ঢাকাসহ সারাদেশে শতশত বরেণ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়। নিজামীর নেতৃত্বে পরিচালিত আলবদর বাহিনীর হাতে বুদ্ধিজীবী হত্যার ভয়াবহ বিবরণ দেশে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বদর দিবসের সাফল্যে উদ্দীপ্ত হয়ে বদর বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মতিউর রহমান নিজামী ১৯৭১এর ৪ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে লিখেছেন, “আমাদের পরম সৌভাগ্যই বলতে হবে, পাক বাহিনীর সহযােগিতায় এদেশের ইসলামপ্রিয় তরুণ সমাজ বদর যুদ্ধের স্মৃতিকে সামনে রেখে আলবদর বাহিনী গঠন করেছে। —- বদর যােদ্ধাদের যেসব গুণাবলীর কথা আমরা আলােচনা করেছি, আলবদরের তরুণ মর্দে মুজাহিদদের মধ্যে ইনশাআল্লাহ সে সব গুণাবলী আমরা দেখতে পাব। ==== সেদিন আর খুব দূরে নয়, যেদিন আলবদরের তরুণ যুবকেরা আমাদের সশস্ত্র (পাকিস্তানী) বাহিনীর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হিন্দু বাহিনীকে (মুক্তিবাহিনীকে) পর্যদস্ত করে হিন্দুস্তানকে খতম করে সারা বিশ্বে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করবে।” শান্তি কমিটি গঠনের পর ১২ই এপ্রিল ১৯৭১ ঢাকায় প্রথম ঢাকঢােল পিটিয়ে মিছিল বের করা হয়। এ মিছিলে নেতৃত্ব দেন গােলাম আজম, খান এ সবুর, মতিউর রহমান নিজামী। মিছিল শেষে গােলাম আজমের নেতৃত্বে। পাকিস্তান রক্ষার জন্য মােনাজাত করা হয়। পাকিস্তানের বিরূদ্ধে যারা যুদ্ধ করছে তাদের
ধ্বংস করার আহ্বান সংবলিত নিজামীর ভাষণ ও বিবৃতির বহু বিবরণ একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামে ছাপা হয়েছে। বদর বাহিনী প্রধান নিজামী ‘৭১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসায় বদর বাহিনী ক্যাম্পের এক সমাবেশে বলেছিলেন, “যারা ইসলামকে ভালােবাসে শুধুমাত্র তারাই পাকিস্তানকে ভালােবাসে। এবারের উঘাটিত এই সত্যটি যাতে আমাদের রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীরা ভুলে যেতে না পারে সে জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।” নিজামীদের এই ‘সর্বাত্মক প্রচেষ্টা কি ছিল বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে তারা তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামও সে সময় বদর বাহিনীকে উত্তেজিত করে। ১৪ সেপ্টেম্বর ‘৭১ ‘আলবদর’ শিরােনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংগ্রাম লিখেছে, “আলবদর একটি নাম! একটি বিস্ময়! আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা! যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী, আলবদর সেখানেই। যেখানেই দুষ্কৃতকারী, আলবদর সেখানেই। ভারতীয় চর কিংবা দুষ্কৃতকারীদের কাছে আলবদর সাক্ষাৎ আজরাইল।” ওদিকে বদর বাহিনীর প্রকাশ্য নেতারাও একযােগে তৎপর হয়ে ওঠেন। ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসায় বদর বাহিনী ক্যাম্পের এক সমাবেশে বদর বাহিনী প্রধান মতিউর রহমান। নিজামী ২৩ সেপ্টেম্বর বলেন, “যারা ইসলামকে ভালবাসে শুধুমাত্র তারাই পাকিস্তানকে ভালবাসে। এবারের উদঘাটিত এই সত্যটি যাতে আমাদের রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীরা ভুলে যেতে না পারে সেজন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।” ১৯৭১-এর ৭ নভেম্বর বদর দিবস পালন উপলক্ষে ইসলামী ছাত্রসংঘের উদ্যোগে ঢাকার বায়তুল মােকাররম প্রাঙ্গণে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭১-এর ৮ নবেম্বর দৈনিক পাকিস্তানে সমাবেশ সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “সমাবেশে পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক (আলবদর বাহিনী নেতা ও বর্তমানে বাংলাদেশে রাবেতার পরিচালক) মীর কাশেম আলী বদর দিবসের শপথ’ হিসেবে তিনটি কর্মসূচী তুলে ধরেন। ‘ক, ভারতের আক্রমণ রুখে দাঁড়াবাে। খ, দুষ্কৃতকারীদের খতম করবাে। গ, ইসলামী সমাজ কায়েম করবাে”। যশাের রাজাকার সদর দফতরে সমবেত রাজাকারদের উদ্দেশ্য করে নিজামী বলেন, “জাতির এই সংকটজনক মুহুর্তে প্রত্যেক রাজাকারের উচিত ইমানদারির সাথে তাদের উপর অর্পিত এ জাতীয় কর্তব্য পালন করা এবং ঐ সকল ব্যক্তিকে খতম করতে হবে। যারা সশস্ত্র অবস্থায় পাকিস্তান ও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে।”
মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে তার এলাকাবাসী হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযােগ, লুটতরাজ, নির্যাতন প্রভৃতি জঘন্য কাজের অভিযােগ এনেছেন। পাবনা জেলার বেড়া থানার বৃশালিকা গ্রামের আমিনুল ইসলাম ডাবলু গণতন্ত্র কমিশনকে জানিয়েছেন, তার পিতা মােঃ সােহরাব আলীকে একাত্তরে নিজামীর নির্দেশেই হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরও জানান যে, নিজামীর নির্দেশেই তাদের এলাকার প্রফুল্ল, পিতানয়না প্রামাণিক এবং ষষ্ঠী প্রামাণিক পিতা- প্রফুল্ল প্রামাণিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষীও আছে বলে তারা জানান। | ১৯৭১-এ সাত নম্বর সেক্টরের মুক্তিযােদ্ধা আব্দুল কুদ্সকে পাবনার আলবদররা ধরে নিয়ে গেলে তিনি প্রায় দু’সপ্তাহ আলবদর ক্যাম্পে অবস্থান করেন। ক্যাম্পে অবস্থানের সময়। তিনি সেখানে আলবদর কর্তৃক মুক্তিযােদ্ধাদের হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযােগ, লুটতরাজ, নির্যাতন প্রভৃতি জঘন্য কাজের পরিকল্পনা প্রত্যক্ষ করেন। এই পরিকল্পনায় মতিউর রহমান নিজামী নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে তিনি জানান। ২৬শে নভেম্বর সাত্তার রাজাকারের সহযােগিতায় ধূলাউড়ি গ্রামে পাকিস্তানি সেনারা ৩০জন মুক্তিযােদ্ধাকে হত্যা করে। মতিউর রহমান নিজামীর পরিকল্পনা ও নির্দেশ অনুযায়ী সাত্তার রাজাকার তার আলবদর বাহিনীর একটি সমাবেশ এবং গােপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন। বৈঠকে | মতিউর রহমান নিজামীও উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিহত এবং মুক্তিযােদ্ধাদের সমূলে ধ্বংস করার নির্দেশে দেন বলে কুদ্স জানান। তিনি আরাে জানান। নিজামী বৈঠকে মুক্তিযোেদ্ধাদের হত্যা ঘাঁটি ধ্বংস ও আওয়ামী লীগারদের শেষ করার নির্দেশ দেন। বৈঠকের পরের দিন রাজাকার বাহিনী বশালিকা গ্রাম ঘিরে ফেলে গুলি চালায়, লুটতরাজ ও বাড়িঘরে অগ্নি সংযােগ করে। তিনি আরাে জানান যে, নিজামীর। নির্দেশে রাজাকার সাত্তার পাক বাহিনীকে সাথে করে এনে বটেশ্বরকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়, নগরবাড়ি ক্যাম্পে টর্চার করে এবং কাশিনাথপুরে নিয়ে এসে হত্যা করে। নিজামীর বিরুদ্ধে প্রায় অনুরূপ অভিযােগ এনেছেন সাথিয়া থানার মিয়াপুর গ্রামের মােঃ শাহজাহান আলী (পিতা-জামাল উদ্দীন), যুদ্ধের সময় রাজাকারদের হাতে ধরা পড়লে কয়েকজন আটক মুক্তিযােদ্ধার সাথে তার গলায় ছুরি চালানাে হয়। অন্যদের জবাই করা হলেও তিনি ঘটনাচক্রে বেঁচে যান। গলায় কাটা দাগ নিয়ে এখন পঙ্গু জীবন যাপন করছেন। তার সহযােদ্ধা দারা, চাদ, মুসলেম, শাহজাহান, আখতার এদের বেয়ােনেট দিয়ে খুঁচিয়ে, জবাই করে হত্যা করা হয়। ঐদিন প্রায় ১০/১২ জন মুক্তিযােদ্ধাকে জবাই করে মারা হয়েছিল। মুক্তিযােদ্ধা কবিরকে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে জীবন্ত জ্বালিয়ে মারা হয়। এই হত্যাকান্ডগুলাের নীলনকশা মতিউর রহমান নিজামী নিজে রচনা করেন বলে মুক্তিযােদ্ধা শাহজাহান জানান।
আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ
সম্প্রতি পাওয়া পূর্ব পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গােপন রিপাের্টে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতা ও কর্মীদর ভূমিকার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিভাগ ১৯৭১ সালে এই প্রদেশের তৎকালীন পরিস্থিতি নিয়ে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানকে মাসে দুইবার গােপন প্রতিবেদন পাঠাত। প্রতিবেদনটির। অফিসিয়াল নাম ছিল “ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোের্ট অন দি সিচুয়েসন অব ইষ্ট পাকিস্তান”। এই প্রতিবেদনে পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের তৎকালীন সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী, ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান সভাপতি আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ, সংঘের রংপুরের নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম কিভাবে তখন পাকিস্তান রক্ষার কাজে ব্যস্ত ছিলেন, মুক্তিযােদ্ধাদের শায়েস্তা করতে ব্যস্ত ও তৎপর ছিলেন তার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া। হয়েছে। বর্তমানে এই তিনজন যথাক্রমে জামায়াতে ইসলামীর আমীর, সেক্রেটারি জেনারেল ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদের স্বাধীনতাবিরােধী ভূমিকা তকালীন কিছু পত্রপত্রিকা দেখলেই বােঝা যায়। ১। ফরিদপুরে ইসলামী ছাত্রসংঘ আযযাজিত এক সভায় ১৯৭১ সালের ১৫ই।
সেপ্টেম্বর আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ তার অনুসারী বাহিনীকে ভারতকে শায়েস্তা করার জন্য আসাম দখল করার কথা বলে।
২। অন্য এক রিপাের্টে দেখা যায় মুজাহিদ ১৫ই অক্টোবর কাওসার নিয়াজী, ভুট্টো ও মুফতি মােহাম্মদকে তিরস্কার করে বলেন-আলবদর, আলশামস বাহিনী ভারতীয় চর, দুষ্কৃতকারীদের হাত থেকে দেশরক্ষার কাজে নিবেদিত । কিন্তু বর্তমানে কিছু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে দেখা যাচেছ এই দেশপ্রেমিক বাহিনীকে তিরস্কার করছেন। তিনি তৎকালীন সরকারকে এই ধরনের আচরণ করা থেকে এইসব নেতৃবৃন্দকে (কাওসার নিয়াজী, ভুট্রো ও মুফতি মােহাম্মদকে) বিরত থাকার উপদেশ দেন, পাশাপাশি ছাত্রসংঘের সদস্যদের বিদ্যালয়ে ফিরে গিয়ে পাক বাহিনীকে স্বাভাবিক!! পরিস্থিতি বজায় রাখতে সাহায্য করতে বলেন।
৩। বদর দিবস উপলক্ষ্যে ২৫শে অক্টোবর মুজাহিদ বদরের যুদ্ধে যে নৈতিক বল ও আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মুসলমানেরা কাফেরদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল সেই ।
৪৫
একই আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের মােকাবেলা করার জন্য। দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
৪।বদর দিবস উপলক্ষে বিকালে বায়তুল মােকাররম প্রাঙ্গণে আয়ােজিত এক সমাবেশে এই আহ্বান জানানাে হয়। এতে আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ বলেন যে, পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘ পৃথিবীতে হিন্দুস্তানের কোন মানচিত্র স্বীকার করে না, ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর কাফেলা দিল্লিতে উপনিত না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রসংঘের একটি কর্মীও বিশ্রাম গ্রহণ করবে না। প্রসঙ্গক্রমে মুজাহিদ ঘােষণা করেন যে, এখন থেকে দেশের কোন পাঠাগার, পুস্তক বিক্রয়কেন্দ্র বা দোকানে পাকিস্তানের আদর্শবিরােধী কোন পুস্তক রাখা চলবে না। কোন স্থান, গ্রন্থাগার ও বিক্রয়কেন্দ্রে পাকিস্তানের আদর্শ ও সংহতি বিরােধী পুস্তক দেখা গেলে তা ভস্মীভূত করা হবে। মুজাহিদ এক সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন যে, বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু লােক এখনও পাকিস্তানের আদর্শবিরােধী কাজ করছে, জনগণকে তাদের সম্বন্ধে সচেতন থাকতে বলা হচ্ছে। ইহুদীদের কবল থেকে বাইতুল মােকাদ্দাসসহ দখলকৃত এলাকা পুনরুদ্বারে সমগ্র মুসলিম জাহানের প্রতি আহ্বান জানান। (দৈনিক আজাদ, ৮ নভেম্বর, ১৯৭১)।
৫। বদর বাহিনীর অপর দুই নেতা আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ ও মীর কাশেম আলী ২৩ নভেম্বর এক বিবৃতিতে সৈনিক হিসেবে প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার জন্য সংগঠনের সদস্যদের প্রতি আহবান জানান। এসময় প্রকাশিত এক প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, “শত্রু” আশেপাশেই রয়েছে। তাই সতর্কতার সঙ্গে কাজ চালাতে হবে। মনে রাখবেন, আপনারা পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখার জন্যই কেবল যুদ্ধ। করছেন না, এ যুদ্ধ ইসলামের। নমরুদদের হাত থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য আমাদের আমীরের (গােলাম আজমের) নির্দেশ পালন করুন।
৬। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুজাহিদ ঢাকার নয়াপল্টন, ফকিরাপুল এই এলাকাগুলােতে বেশি থাকতেন। ১৮১, গরম পানির গলি, ফকিরাপুলের রাজাকার ফিরােজ মিঞার বাড়ি ছিল মুজাহিদের মূল ঘাটি। জাতীয় পার্টি নেতা আব্দুস সালাম, সাংবাদিক গােলাম গাউস, মুক্তিযােদ্ধা ও কলামিষ্ট মাহবুব কামাল এর প্রত্যক্ষদর্শী। জনাব গাউস বলেন, রাজাকার ফিরােজ মিঞার বাড়ি তথা মুজাহিদের ঘাঁটি ছিল। রাজাকার আলবদর রিক্রুটিং তথা সাধারণ মানুষের নির্যাতন কেন্দ্র। জনাব গাউস বলেন ফকিরাপুল এলাকায় মুজাহিদ বাড়ি ভাড়া করে থাকত, এলাকায় সে। ইসলামী মতাদর্শের নেতা হিসেবে পরিচিত ছিল। ‘৭১ এর আগে সে সাধারণ
ছাত্রদের তার দলে টানার চেষ্টা করত। মার্চ ৭১ এর পর সেই মুজাহিদের সদর্প প্রত্যাবর্তন ঘটে। তার নির্দেশে ৩০০ রাজাকারের এক সুগঠিত বাহিনীর সৃষ্টি হয়। ফিরােজ মিঞাকে এই রাজাকার বাহিনীর দলনায়ক নির্ধারণ করেন মুজাহিদ। সর্বোপরি মুজাহিদ এই বাহিনীর জন্য অস্ত্র ও রসদের ব্যবস্থা করতাে। যুদ্ধের মধ্যবর্তী সময় এই বাহিনী সুগঠিত হলে মুজাহিদ এই রাজাকারদের নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাঙালি নিধন অপারেশনে ব্রতী হন। এভাবেই মুজাহিদের বিষাক্ত নখড় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সন্তানদের উপর পড়ে, রক্তাক্ত করে।
৭। ৪ঠা ডিসেম্বর, এইদিন শুরু হয় বুদ্ধিজীবী অপহরণের জন্য আল বদরের নানা কর্মকান্ড। আল বদরেরা এ উপলক্ষে কয়েকটি পথসভাও করে। এ সমস্ত সভায় ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বুদ্বিজীবীদের হুশিয়ার করে বিভিন্ন বক্তব্য রাখেন এক যুক্ত বিবৃতিতে ছাত্র সংঘের সভাপতি আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ এবং সাধারণ সম্পাদক মীর কাশেম আলী বলেন-হিন্দুস্তানকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে এসে হিন্দুস্তান নিজেই ধ্বংস হয়ে যাবে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন রণাঙ্গণে সাম্রাজ্যবাদী হিন্দুস্তানের হামলাকে সাফল্যজনকভাবে প্রতিহত করার জন্য আমরা মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার সাথে সাথে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকেও জানাচ্ছি আন্তরিক অভিনন্দন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের গতকালের বেতার ভাষণকে অভিনন্দন জানিয়ে আমরাও ঘােষণা করছি যে এদেশের ছাত্রজনতা ৬৫ সালের মতন এবারও ইস্পাত কঠিন শপথ নিয়ে পাকিস্তান বাহিনীকে সহযােগিতা করে যাবে।
মওলানা দেলােয়ার হােসেন সাঈদী
(দিইল্লা দেলােয়ার)
মওলানা দেলােয়ার হােসেন সাঈদী মাঠে ময়দানে যে ভাষায় বক্তৃতা করেন, জাতীয় সংসদেও প্রায় একই ভাষায় কথা বলেন। কোন কোন ক্ষেত্রে আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার কিংবা কথা বলার জন্য তাকে বিপাকে পড়তে হয়। একবার লন্ডনে সিলেটের প্রবাসীদের মেয়েদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করার জন্য তাকে ক্ষমা চাইতে হয়। আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) বলেছেন, “কেউ যদি কাউকে কাফের বলে, সে যদি কাফের না। হয়, তাহলে যে বলেছে তার উপর শব্দটি প্রত্যাবর্তিত হয়।” অষ্টম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনেও সাঈদী তার স্বভাবের পুনরাবৃত্তি করেন। ১৬ সেপ্টেম্বর রাতের আলােচনায় আওয়ামী লীগ নেতা প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মােঃ নাসিম জামায়াতে ইসলামী ও সাঈদীর কথা উল্লেখ করে তাদের মুক্তিযুদ্ধ বিরােধী ভূমিকার প্রতি ইঙ্গিত করেন। পরদিন ব্যক্তিগত কৈফিয়ত দেয়ার জন্য ফ্লোর নিয়ে সাঈদী তার দল সম্পর্কে কিছু না বলে তিনি রাজাকার ছিলেন না দাবি করে বলেন, একাত্তরের কোন কাজকর্মের সাথে আমি জড়িত ছিলাম না। ‘৭৩-এর আগে কোন দলের সঙ্গেও জড়িত ছিলাম না। তার ব্যাপারে মুখ সামলে কথা বলার হুঙ্কার দিয়ে তিনি প্রয়ােজনে মানহানির মামলা করার ভয় দেখান। এরপর একই বিধিতে ফ্লোর নিয়ে জনাব মােঃ নাসিম কথা বলা শুরু করতে না করতে তাঁর মাইক বন্ধ করে স্পিকার শিল্পমন্ত্রী এমকে আনােয়ারকে মাইক দেন। জনাব নাসিমসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ প্রতিবাদ। করার পরও মাইক না পেয়ে ওয়াকআউট করেন। (জনকণ্ঠ ঃ ১৮/৯/০২) সাঈদীর রাজাকারী সম্পর্কে নতুন করে অনুসন্ধান করার প্রয়ােজন নেই। বিভিন্ন সময়ে তার সম্পর্কে যেসব প্রতিবেদন বেরিয়েছে, সেগুলাে পুনরাবৃত্তি করলেই দেশবাসী, বিশেষ করে আমাদের নতুন প্রজন্ম দেখতে পাবে, বর্তমানে বিএনপির কাঁধে ভর করে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সাঈদী যতাে বড় গলায়ই হুঙ্কার দিন না কেন, মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলােতে তার ভূমিকা কী রূপ জঘন্য ছিল। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের রিপাের্টে বলা হয়েছে ৪ “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই জামায়াত নেতা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে সহযােগিতা করার জন্য তার নিজ এলাকায় আলবদর, আলশামস এবং রাজাকার বাহিনী গঠন ও সহযােগিতা করেন। ১৯৭১ সালে তিনি সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন না, তবে তথাকথিত মওলানা হিসেবে তিনি তার স্বাধীনতা বিরােধী তৎপরতা পরিচালনা করেছেন। তার এলাকায় হানাদারদের সহযােগী বাহিনী গঠন করে প্রত্যক্ষ এবং পরােক্ষভাবে লুটতরাজ, নির্যাতন, অগ্নিসংযােগ, হত্যা
ইত্যাদি তৎপরতা পরিচালনা করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযােগ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি তার এলাকায় অপর চারজন সহযােগী নিয়ে পাঁচ তহবিল’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তােলেন, যাদের প্রধান কাজ ছিল মুক্তিযােদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী বাঙালি হিন্দুদের বাড়িঘর জোরপূর্বক দখল করা এবং তাদের সম্পত্তি লুণ্ঠন করা। লুণ্ঠনকৃত এসমস্ত সম্পদকে দেলােয়ার হােসেন সাঈদী ‘গনিমতের মাল’ আখ্যায়িত করে নিজে ভােগ করতেন এবং পাড়ের হাট বন্দরে এসব বিক্রি করে ব্যবসা পরিচালনা করতেন “পাড়ের হাট ইউনিয়নের মুক্তিযােদ্ধা কমান্ডের মিজান একাত্তরে সাঈদীর তৎপরতার কথা উল্লেখ করে জানিয়েছেন—দেলােয়ার হােসেন সাঈদী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযােগিতায় লিপ্ত ছিলেন। তিনি ধর্মের দোহাই দিয়ে পাড়ের হাট বন্দরের হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি লুট করেছেন ও নিজ মাথায় বহন করেছেন এবং মদন নামে এক হিন্দু ব্যবসায়ীর বাজারের দোকানঘর ভেঙ্গে তার নিজ বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন। দেলােয়ার হােসেন সাঈদী বাজারের বিভিন্ন মনােহারী ও মুদি দোকান লুট করে লঞ্চঘাটে দোকান দিয়েছিলেন। দেলােয়ার হােসেন সাঈদীর অপকর্ম ও দেশদ্রোহিতার কথা এলাকার হাজার হাজার হিন্দু মুসলিম আজও ভুলতে পারেনি।’ (মাসিক নিপুণ, আগস্ট, ১৯৮৭)। “পিরােজপুরের এডভােকেট আবদুর রাজ্জাক খান গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন, সাঈদী যুদ্ধের সময় পাড়ের হাট বন্দরের বিপদ সাহার বাড়ি জোরপূর্বক দখল করেন এবং তখন তিনি এ বাড়িতেই থাকতেন। তিনি সেখানে অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা করতেন। এলাকার মুক্তিযোেদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের তালিকা প্রস্তুত করে। পাক সেনাদের কাছে সরবরাহ করতেন সাঈদী। এডভােকেট রাজ্জাক আরাে জানিয়েছেন–সাঈদী পিরােজপুরে পাকিস্তানি সেনাদের ভােগের জন্য বলপূর্বক মেয়েদের ধরে এনে তাদের ক্যাম্পে পাঠাতেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযােগিতায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সাঈদী পাড়েরহাট বন্দরটি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন এলাকা থেকে জোরপূর্বক তরুণদের ধরে আনতেন এবং আলবদর বাহিনীতে ভর্তি হতে বাধ্য করতেন। কেউ এর বিরােধিতা বা আপত্তি করলে তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হতাে। “ গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা পিরােজপুরের এডভভাকেট আলী হায়দার খানও সাঈদীর বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিযােগ এনেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সাঈদীর সহযােগিতায় তাঁদের এলাকার হিমাংশু বাবুর ভাই ও আত্মীয়স্বজনকে হত্যা করা হয়েছে। পিরােজপুরের মেধাবী ছাত্র গণপতি হালদারকেও সাঈদী ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তৎকালীন মহকুমা এসডিপিও ফয়জুর রহমান আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত এসডিও আবদুর রাজ্জাক এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান, স্কুল হেডমাস্টার আবদুল গাফফার মিয়া, সমাজসেবী শামসুল হক ফরাজী, অতুল কর্মকার প্রমুখ সরকারী কর্মকর্তা। ও বুদ্ধিজীবীদের সাঈদীর প্রত্যক্ষ সহযােগিতায় হত্যা করা হয় বলে তিনি জানিয়েছেন।
মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে তথ্য সরবরাহকারী ভগীরথীকে তার নির্দেশেই মােটরসাইকেলের পেছনে বেঁধে পাঁচ মাইল পথ টেনে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাপ্টেন আজিজের সঙ্গে তার সুসম্পর্কের কারণে সাঈদী তাকে নারী ‘সাপ্লাই দিতেন বলে জানিয়েছেন আলী হায়দার খান। পাড়েরহাট ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মােঃ আলাউদ্দিন খান জানিয়েছেন, সাঈদীর পরামর্শ, পরিকল্পনা এবং প্রণীত তালিকা অনুযায়ী এলাকার বুদ্ধিজীবী ও ছাত্রদের পাইকারি হারে নিধন করা হয়। পাড়েরহাটের আনােয়ার হােসেন, আবু মিয়া, নুরুল ইসলাম খান, বেনীমাধব সাহা, বিপদ সাহা, মদন সাহা প্রমুখের বসতবাড়ি, গদিঘর, সম্পত্তি এই দেলােয়ার হােসেন সাঈদী লুট করে নেন বলে তিনি গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন। “ইন্দুরকানী থানার পাড়েরহাট বন্দরের আনােয়ার উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সাঈদী এবং তার সহযােগীরা পিরােজপুরের নিখিল পালের বাড়ি তুলে এনে পাড়ের হাট জামে মসজিদের গনিমতের মাল হিসেবে ব্যবহার করে। মদন বাবুর বাড়ি উঠিয়ে নিয়ে সাঈদী তার শ্বশুর বাড়িতে স্থাপন করেন। “বেনীমাধব সাহা জানান, সাঈদী এবং তার সহযােগীরা তদানীন্তন ইপিআর সুবেদার আবদুল আজিজ, পাড়েরহাট বন্দরের কৃষ্ণকান্ত সাহা, বাণীকান্ত সিকদার, তরণীকান্ত সিকদার এবং আরাে অনেককে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছেন। হরি সাধু এবং বিপদ সাহার মেয়ের উপর নির্যাতন চালিয়েছেন। বিখ্যাত তালুকদার বাড়ি লুটতরাজ করেছেন। ঐ বাড়ি থেকে ২০/২৫ জন মহিলাকে ধরে এনে পাক সেনাদের ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিয়েছেন। জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক, নাট্যকার হুমায়ুন আহমেদের পিতা ফয়জুর রহমান আহমেদের হত্যাকান্ডের সঙ্গেও দেলােয়ার হােসেন সাঈদী জড়িত ছিলেন বলে শহীদের কন্যা সুফিয়া হায়দার এবং জামায়াতা আলী হায়দার অভিযােগ করেছেন। তারা জানান, দেলােয়ার হােসেন সাঈদীর সহযােগিতায় ফয়জুর রহমান আহমেদকে পাকিস্তানি সৈন্যরা হত্যা করে এবং হত্যার পরদিন সাঈদীর বাহিনী পিরােজপুরে ফয়জুর রহমান আহমেদের বাড়ি সম্পূর্ণ লুট করে নিয়ে যায়। “একাত্তরের ঘাতক দালাল জামায়াত নেতা সাঈদী বিভিন্ন ওয়াজ তফসিরের নামে এখন বাঙালি জাতিসত্তা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রবিরােধী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।” বেগম সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় গণতদন্ত কমিশন উপরিউক্ত ঘটনাগুলাে তাঁদের সংক্ষিপ্ত ভাষ্যে উল্লেখ করেছেন। এরপর ২০০১ সালের ৫ মার্চ দৈনিক জনকণ্ঠে “সেই রাজাকার’ কলামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। রাজাকার, আলবদর ও স্বাধীনতা বিরােধীদের সম্পর্কে লেখা প্রতিবেদনগুলাের ‘সেই রাজাকার’ শিরােনামে একটি সংকলন ২০০১ সালের জুলাই মাসে জনকণ্ঠ প্রকাশনী থেকে বের করা হয়। দু’একটা।
৫০
বিষয় ও ভাষার বিভিন্নতা ছাড়া জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন এবং সেই রাজাকার কলামের প্রতিবেদন প্রায় একই ধরনের। তাই সীমিত স্পেসের কারণে সেই রাজাকার’ প্রতিবেদনটি এখানে হুবহু উল্লেখ করা হলাে না। সাঈদী সেদিন জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আমি একাত্তরের কোন কাজকর্মের সাথে জড়িত ছিলাম না।’ শােনা যায়, তিনি বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে পবিত্র কোরআনের আয়াত আবৃত্তি করে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নানা অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন। সাধারণ শ্রোতারা মনে করে এসব কথা, কোরআনের কথা। এক্ষেত্রেও তিনি বাকচাতুর্যের আশ্রয় নিয়েছেন। একাত্তরে হত্যা, অগ্নিসংযােগ লুটপাট, নারী ধর্ষণ প্রভৃতি কাজকর্ম ছিল না, এসব ছিল জঘন্য অপকর্ম। কিন্তু অপকর্ম করেননি, এরূপ দাবি তাে তিনি করেননি। আর অপকর্ম করেছেন কিনা, উপযুক্ত ঘটনাবলীই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। জাতীয় সংসদে তার বক্তব্যের আরেকটা ব্যাখ্যা হতে পারে। তিনি হয়তাে মনে মনে ভেবেছেন, একাত্তরে পিরােজপুরের পাড়েরহাট এলাকায় হত্যা, লুটতরাজ ইত্যাদি যে করেছে, সে “দিইল্লা রাজাকার’ হিসেবে পরিচিত ছিল। তিনি তাে আল্লামা, “তাফসীরকারমওলানা দেলােয়ার হােসেন সাঈদী। সুতরাং এসব উপাধিতে পরিচিত সাঈদী তাে আর একাত্তরে উল্লিখিত মানবতা বিরােধী অপকর্মগুলাে করেননি। এক্ষেত্রে “সেই রাজাকার’ প্রতিবেদনের একটা অংশ উল্লেখ করা যেতে পারে। “স্বাধীনতা যুদ্ধই পিরােজপুরের সউদখালি গ্রামের ইউসুফ আলী সিকদারের পুত্র দেলােয়ার হােসেন ওরফে দিইরার ভাগ্যকে বদলে দিয়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগে এই দিইল্লা ছিল পাড়েরহাটের বাদুরা গ্রামের ইউনুস মুন্সীর ‘ঘরজামাই’। শ্বশুরালয়ে থাকা দিইল্লা ছিল বেকার। একটি মুদি দোকানে বসে আড্ডা মারতাে। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে দিইল্লা। রাজাকার বাহিনীতে নাম লেখায়। মুক্তিযোেদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ব্যক্তি ও পরিবার এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতায় সে এতাে ভয়ংকর ছিল যে, অচিরেই হানাদারদের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠে। তাকে তিনশ’ সদস্যের এক রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্ব দেয়া হয়। —এসময় সে রাজাকার ও শান্তি কমিটির নেতা মওলানা দানেশ মােল্লা, মােহলেম মওলানা ও সেকান্দার সিকদারের নৈকট্য লাভ করে। পরবর্তীতে পিরােজপুর মহকুমার রাজাকার প্রধান মাণিক খন্দকার তাকে আলবদর বাহিনী গঠনের দায়িত্ব দেয়। “দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যশাের কালেক্টরেটের জনৈক রশিদ মিয়ার বাসায় আত্মগােপন করেছিল। এরপর গােপনে একবার পাড়েরহাটে এলেও ভয়ে জনসমক্ষে বের হতে পারেনি। তারপর দেশত্যাগে সে বাধ্য হয়। ১৯৮৫ সালে ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত ১৪ বছর সে কোথায় ছিল তা কেউ বলতে পারে না। তারপর থেকে সাঈদী মওলানা হিসেবে পরিচিতি পায় এবং ধর্মসভা ও ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা দিতে শুরু করে।—–ওমাজের ক্যাসেটের মাধ্যমে তালেবান স্টাইলে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে সাঈদী। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী লাদেনের ‘ভাবশিষ্য’ বলে সাম্প্রতিককালে তার পরিচয় ক্রমশ ব্যাপক হয়ে উঠছে।”
উপযুক্ত তথ্য পরিবেশিত হওয়ার পর কারাে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, একাত্তরের দিইল্লা রাজাকারই বর্তমানে জামায়াত নেতা জাতীয় সংসদ সদস্য ‘আল্লামা তাফসীরকার মওলানা দেলােয়ার হােসেন সাঈদী। একাত্তরের ঘাতক দালাল রাজাকার। আলবদরদের অনেকে প্রায় বলে থাকে, আমি রাজাকার আলবদর কিংবা ঘাতক ছিলাম।
। তারা চ্যালেঞ্জও করতে দ্বিধা করে না। দেলােয়ার হােসেন সাঈদীও একবার চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলেন, তাকে রাজাকার প্রমাণ করতে পারলে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন। এই ঘােষণার পর পিরােজপুরের মুক্তিযােদ্ধা বয়েজ উদ্দিন পশারী ও পাড়েরহাট ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আমজেদ হােসেন গাজি সাঈদীর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। কিন্তু সাঈদী তার ঘােষণা থেকে সরে যান, তিনি তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেননি। ঘাতক দালালদের কেউ কেউ সদম্ভে বলে থাকে, আমার বিরুদ্ধে মামলা হলাে না কেন। ১৯৯৭ সালে দেলােয়ার হােসেন সাঈদীও সগর্বে বলেছিলেন, —আমি মানুষ মেরে থাকলে আমার বিরুদ্ধে কোন মামলা হলাে না কেন? তার এই উক্তির প্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ১৪ বছর তিনি কোথায় এবং কেন আত্মগােপন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি যদি কোন অপকর্ম নাই করে থাকেন, তাহলে দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিলেন কেন। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারী দালাল আইন জারির পর থেকে ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৩৭,৪৭১ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা। হয়। আজ যারা তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলাে না কেন বলে আস্ফালন করছে, তারা যে উল্লিখিত মামলাগুলাের মধ্যে ছিল না, তার কি কোন প্রমাণ আছে? বস্তুত স্বাধীনতার পর ঘাতক দালালদের অনেকে দেশে বিদেশে আত্মগােপন করে। নির্যাতিতরা ধরে নিয়েছে, সংশ্লিষ্ট ঘাতক মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলােতে কোথাও মারা গেছে। নতুবা কোথাও না কোথাও তাদের সন্ধান পাওয়া যেতাে। সত্যি কথা বলতে কি, পঁচাত্তরে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরই পালিয়ে থাকা ঘাতক দালাল রাজাকার আলবদররা দলে দলে আত্মপ্রকাশ করে। আগে যাদের গ্রেফতার করা হয়, যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, এমনকি বিচারে যাদের শাস্তি হয় তাদেরও জেলখানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালের পর মামলা করার যে পরিবেশ ছিল না, একথা সবারই জানা। তাছাড়া শাহরিয়ার কবির মুক্তিযােদ্ধা ও শহীদ পরিবারের যে তথ্য চিত্র তুলে ধরেছেন, তাতে দেখা যায়, সেখানে (পিরােজপুরে) এক প্রৌঢ়া অঞরুদ্ধ কষ্ঠে অভিযােগ করেছেন, তাঁর স্বামীকে হত্যা করেছে সাঈদী এবং হত্যার বিচার চেয়েও তিনি তা পাননি। কারণ, এখন সাঈদীর যােগাযােগ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে।” এসব তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায়, পবিত্র জাতীয় সংসদে সাঈদীর আস্ফালন সত্যের অপলাপ বই কিছু নয়।
আব্বাস আলী খান
আব্বাস আলী খান জামায়াতে ইসলামীর দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় নেতা, গােলাম আজমকে জামায়াতের আমীর ঘােষণার পূর্ব পর্যন্ত আব্বাস আলী খান ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের শীর্ষব্যক্তি এবং সমগ্র পাকিস্তানের সহকারী প্রধান। ১৯৭১ সালে আব্বাস আলী খানের ভূমিকা ছিল আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিরােধী। আব্বাস আলী খান সমগ্র পাকিস্তানের সহকারী প্রধান থাকাকালে আলবদর, আলশামস, রাজাকার, জামায়াত ও স্বাধীনতা বিরােধী শক্তির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা মিলিশিয়া বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন। এই তিনটি বাহিনী গড়ে তােলার মূল কারণ ছিলাে বাংলার মাটিতে পাক হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ সফল করার সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করা। এই বাহিনীগুলাের মূল কাজ ছিলাে যুদ্ধক্ষেত্রে পাক হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করা, মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান সম্পর্কে পাক হানাদার বাহিনীকে অবহিত করানাে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষশক্তিকে নির্মূল করার পাশাপাশি হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযােগ করে বাংলার মানুষকে পদানত করে রাখা। আমাদের দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী হত্যায় এদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। আব্বাস আলী খান বিভিন্ন সভা সমিতি ও আলােচনা সভায় আলবদর, আলশামস, রাজাকার বাহিনী ও জামায়াত কর্মীদেরকে পাক বাহিনীর সমর্থনে মুক্তিবাহিনীর বিপক্ষে অবস্থান নিতে উৎসাহিত করেছেন। শান্তি কমিটি গঠনেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সারা বাংলাদেশের জামায়াত ও স্বাধীনতা বিরােধী শক্তিকে একত্রিত করে সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি থানায় শান্তি কমিটি গঠনের মাধ্যমে বাঙালী, বাঙালি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা চালান। এই সব রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীকে অন্তবর্তীকালীন ট্রেনিং ও অস্ত্র দিয়ে বাঙালি নিধনে নামিয়ে দেয়া হয়। আব্বাস আলী খান ১৯৭১ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেয়া আসনে প্রহসনের নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে এম এ মালেকের পুতুল মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রী পদে। অধিষ্ঠিত হন। গােলাম আজম এই মন্ত্রিসভার প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন “আমি আশা করি এই মন্ত্রিসভা, শান্তি কমিটির চেয়ে আরও শক্তিশালী হবে। শান্তি কমিটি এ পর্যন্ত যা করতে পারেনি এই মন্ত্রিসভার সদস্যরা এর চেয়েও কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন।” (১৯৭১ এর রাজাকার আল বদরের ভাষ্য, শহিদুজ্জামান রােশান, পৃ-৪৫)। একই বইয়ের ৪৭ পৃষ্ঠায় আছে, গােলাম আজম ঢাকার ইম্পেরিয়াল হােটেলে আয়ােজিত এক সভায় বলেন, “জামায়াতে ইসলামী মনে করে ইসলাম আর পাকিস্তান অঙ্গাঙ্গিভাবে
জড়িত। পাকিস্তান না টিকলে এদেশে ইসলাম থাকবে না, জামায়াতের সদস্যরা পাকিস্তান
থাকলে বেঁচে থাকা অর্থহীন মনে করে। এ জন্যই জামায়াতে ইসলামী শান্তি কমিটি, আলবদর, আলশামস, রাজাকার গঠন করে পাকিস্তান রক্ষার জন্য মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবােধের সৃষ্টি করেছে। এজন্যই জামায়াতে ইসলামী তাদের দুজন নেতৃস্থানীয়কে মন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত করেছে। ” ২৫শে নভেম্বর ‘৭১ আব্বাস আলী খান বলেছে “আমার কোন সন্দেহ নেই যে ভারতীয় সেনাবাহিনী দেশীয় মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় ধীরে ধীরে পূর্ব পাকিস্তানকে গ্রাস করে নিচ্ছে। এ জন্য দেশের সব সচেতন নাগরিকের উচিৎ আমাদের সৈন্যদের (পাক হানাদার) সহযােগিতার মাধ্যমে দেশের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা। “একই বক্তব্যে তিনি জনসাধারণকে বলেছেন “বাঙালি জাতীয়তাবাদী ও মুক্তিসেনাদের যারা পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত তাদের সমূলে নিধন করার জন্য শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর সাহায্যে এগিয়ে আসুন।” বুদ্বিজীবী হত্যার মাত্র চারদিন আগে ১০ই ডিসেম্বর আব্বাস আলী খান এক ভাষণে বলেছেন “বদর যুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জন সৈন্য ১০০০ কোরাইশদের পরাজিত করে বিজয়। ছিনিয়ে এনেছে, আজ ১৩ কোটি জনতা (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে) এই পবিত্র ভূমি উদ্ধারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের শত্রুরা যারা এক কল্পনার বাংলাদেশের কথা বলছে, আপনাদের এই শত্রুদের সম্বন্ধে সতর্ক থাকতে হবে, সুযােগ পাওয়া মাত্র এদের বিষদাঁত ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে হবে। এজন্য রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীতে যােগ দিয়ে নিজেকে দেশের জন্য উৎসর্গ করুন।” গভর্নর এম এ মালেক স্বাধীনতা যুদ্ধ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য কিছু উপ-কমিটি গঠন করেন। আব্বাস আলী খান ছিলেন। তথ্য বিষয়ক উপ-কমিটির প্রধান, এর সাথে ছিল এ এস এম সােলায়মান। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরও আব্বাস আলী খান বাংলাদেশের বিরুদ্ধাচারন করে, ১৯৮০ সালে এক প্রেস বিজ্জপ্তিতে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার ও জামায়াতে ইসলামীর কৃতকর্মের জন্য ভুল স্বীকার না করে দৃপ্তকণ্ঠে বলে ছিলেন ১৯৭১ এ যা করেছি ঠিক করেছি।
আবদুল আলীম
স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরােধিতা করা ও মুক্তিযােদ্ধাসহ মুক্তিকামী মানুষদের হত্যার অভিযােগে অভিযুক্ত আরেকজন যুদ্ধাপরাধী হচ্ছেন আবদুল আলীম। স্বাধীনতা ও বিজয় অর্জনের ৩৮ বছর পর এলাকায় এই যুদ্ধাপরাধী রাজাকারের বিচারের দাবী উঠেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যে আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে জয়পুরহাট থানায় দালাল আইনে মামলা দায়ের করা হয় যার নম্বর ১১/৩৮ তারিখ ২৬/০৩/৭২। এ মামলা দায়ের করেন জয়পুরহাট থানার তৎকালীন সাব-ইন্সপেক্টর ফনীভূষণ। তার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরােধিতা করার অভিযােগও সে সময় সরকারী তদন্তে প্রমাণিত হয়। এই আব্দুল আলীম জয়পুরহাট-১ (সদর ও পাঁচবিবি) আসন থেকে বিএনপি টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এটাই জাতির দুভাগ্য। এর আগে মুক্তিযােদ্ধা জিয়াউর রহমান তার শাসন আমলে (১৯৭৭-১৯৮১) তাকে রেলমন্ত্রী করেছিলেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল আলীম ছিলেন কথিত শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান। হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসর হয়ে তিনি তৈরী করেছিলেন স্থানীয় রাজাকার। বাহিনী। এই আলীম পাকি সেনা ও রাজাকারদের দিয়ে হত্যা করিয়েছে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযােদ্ধাদের। মুক্তিযুদ্ধের সময় জয়পুরহাট শহরের ১৮ কিলােমিটার পশ্চিম-উত্তর সীমান্ত দিয়ে মুক্তিযােদ্ধারা আসা যাওয়া করতাে। ট্রেনিং নেওয়া বা বিভিন্ন স্থান থেকে শরণার্থীরা এই পথ দিয়েই ভারতে যেত। রাজাকাররা ওঁৎ পেতে থেকে এদের হত্যা করত পাখি শিকার করার মত। এলাকার মুক্তিযযাদ্ধারা জানিয়েছেন আব্দুল আলীমের পরামর্শে ও নির্দেশে পাক হানাদার ও রাজাকার বাহিনী কাদিরপুর ও পানপাড়া গ্রামে ৩শ ৬১ জনকে হত্যা করেছে। ওই পথেরই পাগল দেওয়ান গ্রামে মাজারের পাশ। থেকে প্রায় আধা কিলােমিটার এলাকা জুড়ে গ্রায় দশ হাজারেরও বেশি মানুষের লাশ। গাদাগাদি করে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। এই বধ্যভূমিটি ১৫/১৬ বছর আগে আবিষ্কৃত হয়েছে। এই বধ্যভূমির অনেককে হত্যা করা হয় আব্দুল আলীমের নির্দেশে। জয়পুরহাটে পিস কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তার কৃতকর্মের কিছু নিদর্শন দেয়া হলােঃ ১। ‘৭১ এর ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায় বইয়ের ৩৮-৩৯ পৃষ্ঠায় আব্দুল আলীম
সম্বন্ধে বলা হয়েছে। আব্দুল আলীম নিজে জয়পুরহাটের সাধারণ মানুষকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে মেরেছেন। এছাড়া বেয়ােনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মানুষ মারার অভিযােগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে।
২। একই বইয়ের একটি ছবিতে দেখা যায় আব্দুল আলীম পাক বাহিনীর জনৈক
মেজর আফজালের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের সামনে শ্রেণীবদ্ধভাবে বসে আছে পাক বাহিনীর ধরে আনা মুক্তিযােদ্ধা আর সাধারণ মানুষ, এদের চোখ ও হাত পিঠের উপর বাঁধা। এই সব মুক্তিযােদ্ধাদের আলীম গং শহর অভিমুখে মার্চ করায় ও পরে গুলি করে মেরে ফেলে। জয়পুরহাটবাসী ডঃ কাজী নজরুল ইসলাম, পিতা- ডঃ আবুল কাশেম এর ভাষ্য: ২৪শে জুলাই ১৯৭১, আব্দুল আলীমের নির্দেশে রাজাকার আলবদর বাহিনী তার বাবা আবুল কাশেমকে ধরে নিয়ে যায়। সারারাত নির্যাতন করার পর তারা ডঃ আবুল কাশেমকে শান্তি কমিটির কাছে নিয়ে যায়। আব্দুল আলীমের নির্দেশে ডঃ কাশেমকে স্থানীয় পুলিশের কাছে সােপর্দ করে। সেখান থেকে আলীম গং ডঃ কাশেমকে কাঞ্চনপুরস্থ আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ২৬শে জুলাই আব্দুল আলীমের নির্দেশে ডঃ কাশেমকে গুলি করে মারা হয়। পরে তার গলিত লাশ পার্শ্ববর্তী আখ খেত থেকে উদ্ধার করা হয়। আব্দুল আলীমের নির্দেশে যে ডঃ কাশেমকে হত্যা করা হয়। ব্যাম্বাে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মােল্লা শামসুল হক সহ অনেক গ্রামবাসী।
এর প্রত্যক্ষদর্শী। ৪। ব্যাম্বাে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক যিনি আব্দুল আলীমের অনেক
কৃতকর্মের প্রত্যক্ষদর্শী, তিনি বলেন, তাদের ইউনিয়নে ছােট একটি অপারেশনের পর রাজাকার বাহিনী জনৈক মুক্তিযােদ্ধা ফজলুকে ধরে ফেলে। পরে তাকে C & B Colony তে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে একটি ট্রাকের উপর দাঁড়িয়ে আব্দুল আলীম উপস্থিত এলাকাবাসীকে বলেন “আমি অনেকবার ফজলুর বাবাকে বলেছি। তুমি তােমার বিপথে (মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া ছেলেকে ফিরিয়ে আনন, ফজলুর বাবা আমার কথা শােনেনি, তাই আজকে ফজলুর শাস্তি হবে, শাস্তি মৃত্যুদন্ড। সে আরাে বলে আপনাদের আশেপাশে যদি জয় বাংলার লােক পান তাদেরও একই শাস্তি দেবেন।” পরে মুক্তিযােদ্ধা ফজলুকে আব্দুল আলীমের বাসায় নিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের পর মেরে ফেলা হয়। ব্যাম্বাে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুল হক আরাে বলেন, ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে আলীম স্থানীয় গারােয়াল সম্প্রদায়ের ২৬ জনকে ধরে এনে তার বাসায় ৩ দিন রাখে। এরপর তাদের কাঞ্চনপুরে নিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়। আব্দুল। আলীমের বাসা ছিল রাজাকার রিক্রুটিং ক্যাম্প। রাজাকার সংগ্রহ ছিল আব্দুল আলীমের আরেক প্রধান দায়িত্ব।
৬। শামসুল হক আরাে বলেন ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে আব্দুল আলীম ও
জামায়াতের আব্বাস আলী খানের নির্দেশে পাক হানাদারেরা কড়াইকাদিপুর ঘিরে ফেলে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৬৫ জন নারী পুরুষকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে
গুলি করে মেরে ফেলে। ৭। আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে হত্যা, অত্যাচার ছাড়াও ধর্ষণের অভিযােগ করে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক বলেন আব্দুল আলীম পাক বাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ এগুলাে জায়েজ করার চেষ্টা করতেন। তিনি বলতেন যুদ্ধের সময় এগুলাে একটু আধটু হয়, এটা দোষের কিছু না। দেশের স্বার্থে আমাদের এগুলাে
মেনে নিতেই হবে। ৮। জয়পুরহাট কলেজের সহকারী অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন আব্দুল আলীম ও
তার সহযােগিরা ২৫/২৬ জন মুক্তিযােদ্ধাকে ধরে ট্রাকে করে সারা শহর প্রদর্শনের পর জয়পুরহাট কলেজের মাঠে এনে উপস্থিত ছাত্রদের বলেন “মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য এই ২৬ জনের শাস্তি মৃত্যুদন্ড- তােমাদের মধ্যে কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধে যাও তাহলে তােমাদেরও একই পরিণতি হবে।” মুক্তিযোেদ্ধা ইদ্রিস আলী অন্যান্য মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে ৫ই ডিসেম্বর পিস কমিটির কার্যালয় দখল করেন। সেখানে বিভিন্ন কাগজপত্রের সাথে আব্দুল আলীমের স্বাক্ষর সম্বলিত এলাকার বুদ্ধিজীবীদের লিস্ট উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ৪ঠা ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত শান্তি কমিটির মিটিং এ আলােচিত বিষয় সুচি- উদ্ধার করা হয় যা আব্দুল আলীমের স্বাক্ষর সম্বলিত।
মওলানা আবদুস সােবাহান
মওলানা আব্দুস সােবাহান, পিতাঃ নইমুদ্দিন, পাথার, পাবনা। জামায়াতে ইসলামীর পাবনা জেলার কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য, ১৯৯১ সালে পাবনা সদর থেকে নির্বাচিত সংসদ। সদস্য, তৎকালীন জাতীয় সংসদের জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের সহকারী নেতা। ১৯৭১ সালে মওলানা আব্দুস সােবাহান পাবনা জেলার জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। পাশাপাশি পাবনা জেলা শান্তি কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। অনর্গল উর্দু বলতে পারার কারণে তিনি পাকিস্তান সেনা বাহিনীরও প্রসন্নতা লাভ করেন এবং পাকিস্তানি বাহিনী ও স্থানীয় রাজাকার আল বদর বাহিনী পরিচালনায় নীতিনির্ধারকের ভূমিকা নেন। ২৫শে মার্চ ১৯৭১ সালে ঢাকার মত পাবনায়ও পাক বাহিনী হিংস্রভাবে নিরীহ জনসাধারণের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। তবে পাবনার প্রেক্ষাপট ছিল ঢাকা থেকে একটু ভিন্ন একজন প্রত্যক্ষদর্শী বৃদ্ধ মহিলা বলেন পাবনা শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় বাড়ি বাড়ি খুঁজে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। তার ভাষ্য মতে ২৬শে মার্চ একাট লরি স্থানীয় রায়ের বাজারে আসে। এতে আনুমানিক ১০০ জনের মত মানুষ পিঠে হাত বাঁধা অবস্থায় পড়ে ছিল। তাদের সবাই ছিল রক্তাক্ত, নির্যাতিত। ওই ট্রাকে তিনজন পাক সেনার সাথে মওলানা আব্দুস সােবাহানও ছিল। তারই তত্ত্বাবধানে এসব ব্যক্তিকে রাখা হয়েছিল। এদের মধ্যে ছিল স্থানীয় ব্যবসায়ী সায়েদ তালুকদার, এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ হারুন, দন্ত চিকিৎসক অমলেন্দু দাকশী, আওয়ামী লীগের নেতা আমিনুদ্দিন প্রমুখ। বিভিন্ন স্থান থেকে তুলে আনা এসব বীর বাঙালিকে ২৯শে মার্চ মেরে ফেলা হয়। তিনি আরাে বলেন ২৭শে মার্চ তিনি অমলেন্দু দাকশীর বাসায় যান, তার স্ত্রী বলেন মওলানা সােবাহানের নির্দেশেই তার লােকেরা অমলেন্দু দাকশীকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধকালীন মওলানা সােবাহানের হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট প্রসংগে একটি গবেষণা প্রবন্ধে। পাবনা জজ কোর্টের এ্যাডভােকেট এবং প্রাক্তন পাবলিক প্রসিকিউটর আলহাজ গােলাম হাসনায়েন বলেছেন, মওলানা আব্দুস সােবাহান আওয়ামী লীগের নেতা আমিনুদ্দিনের বাসা পাক বাহিনীকে চিনিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আরাে বলেন পাবনার আল বদর, আল শামস, শান্তি বাহিনীর যত সদস্য তার সবই মওলানা আব্দুস সােবাহানের সংগ্রহ এবং তার নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধা নিধন চলেছে এই এলাকায়। দৈনিক ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি আনােয়ারুল হক (শালগাড়িয়া, পাবনা) এবং এ্যডভােকেট শফিকুল ইসলাম শিবলী বলেন
মওলানা আব্দুস সােবাহান পাবনা জেলা স্কুলের প্রধান মওলানা ও স্কাউট কর্মী। কসিমউদ্দিনকে হত্যার ব্যাপারে পাকিস্তানি সৈন্যদের প্ররােচিত করে এবং পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে। মওলানা আব্দুস সােবাহান মুক্তিযােদ্ধা ও সংগীত শিল্পী সাধনকেও পাকিস্তানি সৈন্যদের দিয়ে হত্যা করান। একথা বলেন সাধনের মা সুফিয়া বেগম। সুফিয়া বেগম আরাে বলেন সাধনের সাথে আরেক মুক্তিযােদ্ধা গেদামনি ধরা পড়লেও সে পাক বাহিনীর হাত থেকে ছাড়া পায়। কিন্তু সাধনকে মওলানা আব্দুস সােবাহান বাঁচতে দেয়নি। অবসর প্রাপ্ত অধ্যক্ষ মােঃ আবদুল গনি (কালা চাঁদপাড়া, পাবনা) জানান, ১৭ই এপ্রিল দুপুরে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা কুচিয়াপাড়া ও শাখারীপাড়ায় মওলানা আব্দুস সােবাহান পাক আর্মিদের সঙ্গে নিয়ে অপারেশন চালায়। ঐদিন ওখানে সুধীর চন্দ্র চৌধুরী, অশােক কুমার সাহা, গােপাল চন্দ্র চৌধুরীসহ আট ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। এ সময় তারা ২০/২৫টি ঘর পােড়ায় এবং একই সঙ্গে লুটতরাজ ও নারী নির্যাতনও করেছিল, অধ্যক্ষ আবদুল গনি আরাে বলেন, “মে মাসে পাবনার ডােমরাতে মওলানা সােবাহান, ইসহাক মওলানা টেগার সহ কয়েকজনের একটি শক্তিশালী দল পাকিস্তানি আর্মির সহায়তায় ব্যাপক গণহত্যা, চালিয়েছে। সেখানে ঐ দিন কমপক্ষে সহস্রাধিক মানুষ হত্যা ঘরবাড়ি পুড়িয়ে, সম্পদ লুণ্ঠন ও নারী ধর্ষণের উৎসব শেষে এক বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত করে”। পাবনার দ্বিতীয় বৃহত্তম হত্যাকান্ডটি হয় সুজানগর থানায় । মে মাসের প্রথম দিকে একদিন ভােরে সাতবাড়িয়া-মানিকহাট ইউনিয়নে হত্যা করা হয় ৪শ জনকে। মুজিব বাহিনীর কমান্ডার ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বিশু বলেন, সুজানগর অপারেশনের আগের দিন মওলানা সােবাহানের পাথড়তলার বাসায় মিটিং করেছিল। পাবনায় যে কোন এলাকায় অপারেশনের আগে পাকবাহিনী ও এদের এদেশীয় দোসরদের সমন্বয়সহ গােটা আপারেশনের পরিকল্পনা তৈরী হতাে মওলানা সােবাহানের কূটবুদ্ধিতে
এ এস এম সােলায়মান
এ এস এম সােলায়মান, পিতা ও মােঃ জয়নব আলী, গ্রামঃ বৈদ্ধের বাজার, পােষ্টঃ বৈদ্ধের বাজার, থানাঃ সােনারগাঁও, জেলাঃ নারায়ণগঞ্জ। বর্তমানেঃ ২০/১, পল্লবী, থানাঃ পল্লবী, জেলা: ঢাকা, তিনি বর্তমানে কৃষক শ্রমিক পার্টির সভাপতি। সােলায়মান মালেক মন্ত্রী সভার শ্রম, সমাজকল্যাণ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন । ৮ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সমস্ত । জেলার সমন্বয়ক হিসেবে জেলা প্রশাসক ও পুলিশদের একসভায় তিনি দেশের আইন শৃঙ্খলা ও শান্তি রক্ষার বিশেষ নির্দেশ দেন। এসময় দুষ্কৃতকারীদের (মুক্তিযােদ্ধা) হাত থেকে দেশরক্ষার কথাও বলা হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম থেকেই এ এস এম সােলায়মান স্বাধীনতা বিরােধী সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ৮ই এপ্রিল ১৯৭১ পাক বাহিনীর উদ্দেশ্যে এক বক্তৃতায় তিনি, “দেশের আইন ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় সমাজ ও দেশবিরােধীদের সমূলে নিধনের আহ্বান জানান। * ৭ই মে শান্তি কমিটি আয়ােজিত এক সভায় তিনি অনুরূপ বক্তব্য দেন। ১৫ই নভেম্বর করাচীতে সাংবাদিকদের বলেন, “রাজাকাররা প্রশংসনীয় কাজ করছে, তাদের জাতীয় বীর ঘােষণা করা হউক।” (জেনােসাইড, ‘৭১, মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্র, ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭)। সােনারগাঁওবাসী এ এস এম সােলায়মানের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযােগ ও বিভিন্ন নির্যাতনের অভিযােগ এনেছেন। আমীনপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সভাপতি মােঃ তায়েবুর রহমান এ এস এম সােলায়মান ও রাজাকার বাহিনীর সােনারগাঁও থানার ১১টি ইউনিয়নের কর্মতৎপরতার প্রত্যক্ষদর্শী। এ এস এম সােলায়মান সােনারগাঁও থানার ১১টি ইউনিয়নের সভাপতি নির্ধারণ করেন যারা স্থানীয় শান্তি কমিটিরও সভাপতি। এরা হলেন১। রাজা মৌলভী, আমিনপুর । ২। শামসুল হক খান, পিরােজপুর। ৩। আলাউদ্দিন, বৈদ্যেরবাজার । ৪। গফুর সরকার, সামান্দি। ৫। আব্দুল মান্নাফ ভূইয়া, জামপুর। ৬। হেসেন খান, কাঁচপুর। ৭। বাকের আলী, সাথীপুর । ৮। নাসিরউদ্দিন, নােয়াগা।
৯। আব্দুর রব মিল্কী, বারােদি।। ১০। রফিকুল ইসলাম, মােগরাপাড়া ১১। এম এ জহির, শম্ভুপুরা ইউনিয়ন। এদের মধ্যে এ এস এম সােলায়মান পিস কমিটির সভাপতি, এম এ জহির সভাপতি ও সােলায়মানের অবর্তমানে তার ভাই আলাউদ্দিন ও মহিউদ্দিন মােল্লা শান্তি কমিটির ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করতাে। তায়েবুর রহমান আরাে জানান, জমির আলী কেরানী সােলায়মানের এক সহযােগী, বিভা সাহা নামের একটি মেয়েকে পাক বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। সারারাত নির্যাতনের পর বিভা সাহা অপ্রকৃতিস্থ ও সঙ্কটজনক অবস্থায় ভারতে পালিয়ে যায়। জমির আলী কেরানী স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় বৈদ্যের বাজারের নরেন্দ্র পাটেলের বাড়ি আক্রমণ করে, তায়েবুর রহমান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঐ বাড়ি থেকে ৫টি মেয়ে উদ্বার করে পার্শ্ববর্তী গ্রামে পাঠিয়ে দেন। তায়েবুর রহমান আরাে জানান ২৪শে মে সােলায়মান -এর বাহিনী মুক্তিযােদ্ধাদের একটি গােপন মিটিং -এ আক্রমণ করে তাদের হত্যা করে। তায়েবুর রহমান জানান জমির ও আলাউদ্দিন সােলায়মানের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতাে, বিভিন্ন জায়গা থেকে মেয়ে ধরে। নিয়ে ক্যাম্পে পাঠাত। এই বাহিনী সামান্দি, কোম্পানীগঞ্জ, সাথীপুর ও পিরােজপুরের শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযােগ করে। হরিয়াগােপিনী গ্রামের মােসাম্মৎ আজীমন নাহার বলেন তার স্বামী সিদ্দিক মিয়াকে ১৪ই ডিসেম্বর সােলায়মানের সরাসরি নির্দেশে তার সাঙ্গপাঙ্গরা হত্যা করে। হাতকোপা গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী সুমন জানান সােলায়মানের সহযােগী টেকা শামসুর নির্দেশে পাক বাহিনী যুবতী মেয়েদের খোঁজে তাদের বাড়ি আক্রমণ করে। কিন্তু বাড়ির মেয়েরা। পার্শ্ববর্তী পাটকলে লুকিয়ে জীবন রক্ষা করে। বাসানদরদী গ্রামের মুক্তিযােদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন নদীবন্দর হিসেবে নারায়ণগঞ্জ সুপরিচিত। সােলায়মান বাহিনী স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম থেকে এই এলাকা দিয়ে আসা যাওয়া করা পণ্যবাহী ট্রাক, জাহাজ লুট করতাে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এ ব্যাপারে সামান্দি মুক্তিযােদ্ধা ক্যাম্পে অনেক অভিযােগ করেছে। তািন আরাে জানান, সােলায়মান বাহিনী সব সময় হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলােতে যেমন সাহাপুর, বানিনাথপুর, জয়রামপুর, ভাত্তাপুর, বাড়িরগুবহান্গা, বাগমুচা, পানামনগর, বৈদ্যের বাজার, রামগঞ্জ, পঞ্চবটিতে হিন্দু মেয়েদের খোঁজে অভিযান চালাত। এই মেয়েদের ধরে নিয়ে পাক হানাদারদের মনােরঞ্জন করা হতাে।
মওলানা এ কেএম ইউসুফ
মওলানা এ কে এম ইউসুফ, গ্রামঃ রাজৈর, থানাঃ রণখােলা, জেলাঃ বাগেরহাট। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরােধিতা করেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তার এই কর্মতৎপরতার অংশ হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য হন। ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনা জেলায় ভূতের বাড়ি। আনসার ক্যাম্পে ৯৬জন জামায়াত ক্যাডার সদস্য নিয়ে তিনিই প্রথম রাজাকার বাহিনী। প্রতিষ্ঠা করেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই মওলানা এ কে এম ইউসুফ খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি পাক হানাদার বাহিনীর পক্ষে ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে কর্মতৎপরতা চালান। নেতৃস্থানীয় । ছিলেন বলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ করে বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়া এবং স্বাধীনতার পক্ষের মানুষদের হত্যা, তাদের বাড়িঘর লুটপাট, পুড়িয়ে দেয়া, নারী নির্যাতন প্রভৃতি দুষ্কর্মে তার সহযােগীদের নির্দেশনা দিয়ে কাজ করানােই ছিল তার মূল দায়িত্ব। আর একাজ করতে গিয়ে পাক সেনাবাহিনীকে সহযােগিতা করেছেন, তাদের। সহযােগিতাও নিয়েছেন বিস্তর । মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মওলানা এ কে এম ইউসুফ মুক্তিযুদ্ধের বিরােধিতা করে যে বক্তৃতা বিবৃতি প্রদান করেছেন তা তৎকালীন বিভিন্ন সংবাদপত্রে ও গ্রন্থে পাওয়া যায়। ১০ই অক্টেবর ‘৭১ খুলনার জনসভায় ভাষণদানকালে শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, “প্রত্যন্ত অঞ্চল সফর করে জনগণকে ভারতের সহায়তায় তথাকথিত প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অসারতা বােঝাতে হবে । বিচ্ছিন্নতাবাদী, দুষ্কৃতকারী এবং নকশালীরা দেশের এই অংশে বিপর্যয় ঘটাতে তৎপর রয়েছে। আপনাদের তাদের সমূলে। উৎখাত করতে হবে।” ২৬শে অক্টোবর ‘৭১ সিলেটের জনসভায় মওলানা ইউসুফ বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ আমাদের কিছু সংখ্যক তরুণ ভারতীয় মিথ্যা প্ররােচণায় ওপার গিয়েছে এবং ভারতীয় চরদের যােগসাজশে আমাদের ভূখন্ডে ঘৃণ্য নাশকতামূলক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব নাশকতামূলক কার্যকলাপ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে আমাদের ভুখন্ড থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ সমূলে উৎখাত করতে আপনারা গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ুন। মিত্রবাহিনীকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে মওলানা ইউসুফ বলেন আমাদের উপর। যদি কোন যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয় তাহলে বীর সেনাবাহিনী ও বীর রাজাকার অবশ্যই তার পাল্টা আঘাত করবে। ১২ই নভেম্বর ‘৭১ সাতক্ষীরায় রাজাকার শিবির পরিদর্শনকালে মওলানা ইউসুফ রাজাকারদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভারতীয় চর ও অনুপ্রবেশকারীদের নির্মূল করার
কাজে সাতক্ষীরার রাজাকাররা মূল্যবান ভূমিকা পালন করছে বলে উল্লেখ করে তিনি আশ্বাস দেন যে, রাজাকারদের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। ২৮শে নভেম্বর ১৯৭১ করাচীতে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে একেএম ইউসুফ বলেন, রাজাকাররা আমাদের বীর সেনাবাহিনীর সাথে কাধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতীয় হামলার মােকাবেলা করছেন। তিনি দুষ্কৃতকারীদের দমনের জন্য রাজাকারদের হাতে আরও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দেয়ার জন্য দাবি জানান। তিনি বলেন বর্তমানে রাজাকার আল বদর আল শামস বাহিনীর সংখ্যা এক লাখে দাঁড়িযেছে। এছাড়া মুজাহিদিন বাহিনী তাে রয়েছেই। ওরা আমাদের সেনাবাহিনীর সহায়তায় সীমান্ত রক্ষার কাজে নিয়ােজিত আছে। দুস্কৃতকারীদের দমনে তারা বিশেষ সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে তাই দুষ্কৃতকারীদের কার্যকলাপে ভাটা পড়েছে। মওলানা একেএম ইউসুফের কর্মকান্ডের ব্যাপারে খুলনার শহীদ শেখ আব্দুর রাজ্জাকের মা ঘুলজান বিবি জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় আষাঢ় মাসে একদিন খুলনার রাজাকার খালেক মেম্বার তার ছেলে শেখ আব্দুর রাজ্জাককে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিতে বলে। কিন্তু খালেক মেম্বারের এই প্রস্তাব শেখ আব্দুর রাজ্জাক প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর শ্রাবণ মাসের ১১ তারিখে এই খালেক মেম্বার ও আদম আলী পুনরায় তাদের বাড়ি যায় এবং তার ছেলে শেখ আব্দুর রাজ্জাককে বাড়ি থেকে ডেকে বাইরে নিয়ে যায়। সেদিন। সন্ধ্যাতেই ঘুলজান বিবি জানতে পারেন তার ছেলেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছ। তাই তিনি তার ছেলেকে ছাড়িয়ে আনার সুপারিশ করার জন্য রাজাকার বাহিনীর কাছে অনুরােধ করেন। সে সময় খালেক মেম্বারের সাথে মওলানা ইউসুফও দাঁড়িয়েছিলেন। এবং তিনিই জানান যে শেখ আব্দুর রাজ্জাককে ছাড়ার ব্যাপারে কোন সুপারিশ চলবে না। ঘুলজান বিবি তার ছেলেকে আর খুঁজে পাননি। তবে লােকজনের মুখে শুনেছেন তার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু লাশের সন্ধান মেলেনি। খুলনায় রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা মওলানা ইউসুফের সহযােগী খালেক মেম্বার ও আদম আলীর মত এমনি অনেক রাজাকার মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু মুক্তিযােদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নারী, পুরুষকে হত্যা করেছে, নারীকে ধর্ষণ করেছে। মওলানা ইউসুফের নির্দেশেই তার অনুসারী রাজাকার বাহিনী এই নৃশংস তৎপরতা চালাতাে-এসব তথ্য খুলনার অধিবাসীরা দিলেও স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরও অনেকে প্রাণভয়ে নাম প্রকাশ করতে ভয় পায়। এমন অনেক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন মওলানা ইউসুফ রাজাকার বাহিনী। প্রতিষ্ঠার পর মোেড়লগঞ্জ থানা সহ নিজ এলাকা থেকে বহু লােক ধরে এনে রাজাকার বাহিনীতে যােগ দিতে বাধ্য করেছিলেন।
থােকন রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচরণকারী পাক বাহিনীর বর্বরতার অন্যতম দোসর ছিলেন তৎকালীন মুসলিম লীগের শীর্ষনেতা ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরী। ১৯৬২ সালের ১৪ই জুলাই পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেন ফজলুল কাদের চৌধুরী । ‘৬২ সালের মন্ত্রীত্বে পাকিস্তানীদের প্রতি কৃতজ্ঞ ফকা চৌধুরী এবং তার সন্তান সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৭১ এ আবির্ভূত হন রাজাকার হিসেবে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ফকা চৌধুরী এবং তার পরিবারবর্গ চট্টগ্রাম জুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালায়। তাদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন মুক্তিযােদ্ধা, বুদ্ধিজীবীসহ সাধারণ মানুষ। বেশিরভাগ নিহত হন রাউজানে। মুক্তিযােদ্ধা ডঃ মাহফুজুর রহমান তার বাঙালীর জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম’ গ্রন্থের ৪৬৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, রাউজানে ফজলুল কাদের চৌধুরীর বাহিনী ব্যাপক হারে হিন্দুদের ঘরবাড়ি পোড়ায়। নূতন সিংহসহ অসংখ্য লােককে হত্যা করে। রাউজানের শহীদদের মধ্যে অন্যতম হলেন আবদুল মান্নান, পঙ্কজ বড়ুয়া, জাফর আলম চৌধুরী, বিকাশ বড়ুয়া, শামসুল আলম, মুসা খান, শফিকুল আলম, রুহুল আমিন, সুবেদার আবুল কাশেম, সুবেদার নুরুল আমিন, সুবেদার আবুল বশর, এজাহার মিয়া প্রমুখ । বিগলিতদন্তে হায়েনার হাসি হেসে ঘাড় বাঁকিয়ে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ওরফে খােকন রাজাকার তার পিতা মরহুম ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীকে পাকিস্তানের পক্ষের উল্লেখ করলেও নিজেকে দাবী করেছেন সেফ একজন উত্তরাধিকার হিসেবে। প্রকারান্তরে তার কথার অর্থ দাঁড়ায় তার পিতা স্বাধীনতা বিরােধী হলেও তিনি নন। কিন্তু ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার প্রকাশ্য ভূমিকার কথা স্মরণ করলে এখনও শিউরে উঠে প্রত্যক্ষদর্শীরা । ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী তার ডাক নাম খােকন নামে সমধিক পরিচিত ছিল। এই খােকন নাম শুনলেই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ত। চট্টগ্রামের মুক্তিযােদ্ধাদের মতে, নগরী এবং রাউজানে সাকা চৌধুরী ১৯৭১ সালে রাজাকার আল বদর আল শামস বাহিনী গঠিত করেন। নিজে অংশগ্রহণ করেন কিলার হিসেবে। তিনি এখন বিএনপি দলীয় সাংসদ। স্বাধীনতার পরপর সাকা চৌধুরী লন্ডন
পালিয়ে যান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবরণের পর দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটলে তিনি খন্দকার মােশতাকের কৃপায় বাংলাদেশে ফিরে আসেন। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে চট্টগ্রামে অগ্নিসংযােগ, বুদ্ধিজীবী হত্যা ও লুটপাটের অভিযােগে অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। সেই সময় তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা দায়ের করা হয়। তার প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে এসব মামলার ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান, দানবীর, বুদ্বিজীবী, কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নূতন চন্দ্র সিংহ, নগর আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মােজাফফর আহমদ, ব্যবসায়ী ফজলুল হক সওদাগর, মুক্তিযােদ্ধা ওমর ফারুক, ছাত্র দয়াল হরি বিশ্বাস প্রমুখকে হত্যার বিষয়েও তার বিরুদ্ধে অভিযােগ রয়েছে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী তাদের গুডস হিলের বাসায় মরহুম ডঃ সানাউল্লাহর একমাত্র ছেলেসহ চট্টগ্রামের কয়েকশ ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে অত্যাচার করে। “শুডস হিল স্বাধীনতার সপক্ষের মানুষের নির্যাতন কেন্দ্রে পরিণত হয়। মার্চ থেকে আত্মসমর্পনের আগ পর্যন্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীদের বাসায় পাক বাহিনীর এক প্লাটুন সৈন্য মােতায়েন থাকত। (সূত্রঃ দৈনিক বাংলা, ৮ জানুয়ারী ১৯৭২)। ১৯৭১ সালে বুদ্বিজীবী নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যা বেশ আলােড়ন সৃষ্টি করে। যুদ্ধ শুরু হলে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্যসহ ৪৭ জন অধ্যাপক পরিবার পরিজন নিয়ে। নূতন চন্দ্র সিংহের রাউজানস্থ কুন্ডেশ্বরী ভবনে আশ্রয় গ্রহণ করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হাটহাজারী হতে রাউজানের দিকে অভিযান শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তাদের পিরবারবর্গ ভারতীয় সীমান্তের উদ্দেশ্যে কুন্ডেশ্বরী ভবন ত্যাগের প্রস্তুতি নেন এ সময় তারা নূতন চন্দ্র সিংহকে তাদের সাথে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার অনুরােধ করেন। কিন্তু তিনি তার প্রিয় প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় তিনি একা হয়ে যান। রাউজানের নূতন চন্দ্র সিংহের ঔষধালয়, দোতলা বাড়ি এখনও আগের জায়গাতেই আছে, নেই কেবল সেই বর্ষিয়ান মানুষটি, যিনি ওই এলাকায় নির্মাণ করিছেলন বালিকা বিদ্যালয়, কলেজসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এ সময় ১৯৭১ সালের ১৩ এপিল ৪টি আমাৰ্ড ট্রাক ও দুটি জীপে করে একদল পাক হানাদারকে পথ প্রদর্শন করে কুন্ডেশ্বরী ভবনে নিয়ে যায় সাকা। নৃতন চন্দ্র সিংহ তার স্বভাবসুলভ অমায়িক ব্যবহার দিয়ে পাক সেনাবাহিনীকে অভ্যর্থনা জানান। তিনি কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়, স্কুল কলেজের বিস্তারিত বিবরণ দেন। নূতন চন্দ্র সিংহের কথাবার্তায় সন্তুষ্ট হয়ে পাকিস্ত নি বেলুচ ক্যাপ্টেন তার সঙ্গীসেনাদের ফিরে যাবার নির্দেশ দেয়। নূতন চন্দ্র সিংহ
মন্দিরে প্রবেশ করে প্রার্থনারত হন। এ সময় বেলুচ ক্যাপ্টেনকে পরামর্শ দেয়া হয় নূতন চন্দ্র সিংহকে মেরে ফেলার জন্য কিন্তু তিনি ইতস্তত করেন। তারপরের কাহিনী তার ছেলে প্রফুল্ল রজ্ঞন সিংহের মুখেই শােনা যাক। বাবার হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলায় প্রচারিত সাক্ষাতকারে বলেন, প্রথমে দুইজন এসেছিল, ওরা বাবার সাথে আলাপ-টালাপ করে চলে গেল কিন্তু মারে নাই। পরে নাকি সালাউদ্দিন (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী) আরেকটা দল নিয়ে আসে। ওরা ছিল পাঞ্জাবী, সালাউদ্দিন বলেছিল, না এটা তার বাবার আদেশ, এখানেই (নূতন চন্দ্র সিংহের) সবকিছু হয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীসহ অন্যরা এসেছিল, অতএব নূতন চন্দ্র সিংহকে মারতে হবে, তখন নূতন চন্দ্র সিংহকে টেনে হিচড়ে মন্দির থেকে বের করে এনে ওই প্রাঙ্গণে ব্রাশফায়ার করা হয়। ব্রাশফায়ারের পরও নাকি প্রাণ ছিল। তখন। সালাউদ্দিন নাকি তার নিজের পিস্তল থেকে গুলি করে হত্যা করে। একই দিনে রাউজানের জগম্মল্লপাড়ায় একসঙ্গে গুলি করে মারা হয় ৩৭ জনকে। এপ্রিল মাসেই রাউজানের উনসত্তর পাড়ায় একটি পুকুরের পাশে একসঙ্গে গুলি করে মারা হয় অন্তত ৭০ জন নারী পুরুষ ও শিশুকে। তাদের লাশ মাটি চাপা দেওয়া হয় পুকুরের পাশেই। এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শী একজন এটিএন বাংলাকে বলেন, “পাকিস্ত েিনর বড় নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী থাকাতে ভেবেছিলাম আমরা বেঁচে যাব। সেখানে রাউজানেই সবচেয়ে বেশী গণহত্যা হয়েছে।” তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, “আজ এখানে কথা বলছি-এ খবর পেলে তারা আবার অত্যাচার করতে আসবে। কারণ তাদের এজেন্টরা এখানেই আছে। তারাই এখানে মেম্বার চেয়ারম্যান হয়। এলাকার যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন উনিও জড়িত ছিলেন। ‘৭২ সালের জানুয়ারি মাসে নূতন চন্দ্র সিংহের পুত্র সত্য রঞ্জন সিংহ পিতৃহত্যার বিরুদ্ধে ফকা চৌধুরী ও সাকা চৌধুরীকে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং ৪১(১)৭২ ধারা ৩০২/১২০/১৯৮ বিপিসি)। একইদিন ১৩ই এপ্রিল ‘৭১ নিজের বাড়ির সামনে অবস্থিত হিন্দু পাড়ায় সাকা চৌধুরী অভিযান চালান। চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসের কলেজে পড়ুয়া ছেলে দয়াল হরি বিশ্বাসকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে পরে হত্যা করা হয় । ‘৭১ এর ১৭ই এপ্রিল সাকা চৌধুরী ২০ বালুচ রেজিমেন্টের এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে রাউজান যাওয়ার সময় হালদা নদীর উপর স্থাপিত সত্তারঘাট ব্রীজ এলাকা হতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মুজ্জাফফর আহমেদকে অপহরণ করে নিয়ে, পরে হত্যা করে তার লাশ গুম করে ফেলা হয়। ‘৭১ এর জুলাই মাসের শেষের দিকে একদিন সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের বিশিষ্ট কাগজ ব্যবসায়ী রাউজানের
বিনাজুড়ি ইউনিয়নের লেলেঙ্গারা গ্রামের সম্রান্ত পরিবারের সন্তান আলহাজ্ব ফজলুল হক সওদাগরকে তার জেল রােডস্থ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে গুডস হিলে নির্যাতন। চালানাে হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাকা চৌধুরীকে আসামী করে রাউজান থানায় মামলা হয়। ফজলুল হক সাকা চৌধুরীর জল্লাদখানায় ১ মাস বন্দী ছিলেন বলে এক সময় উল্লেখ করেন।
এভাবে থােকন রাজাকারের বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য অভিযােগ। চট্টগ্রামের রাউজান, রাংগুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি থানায় তার বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা হয়। তবে তিনি কোন মামলায়ই এ পর্যন্ত গ্রেফতার হননি বা আদালতে হাজিরা দেননি। বিএনপি সরকারের আমলেই তার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে এক ডজনেরও বেশি মামলা। এর মধ্যে রাউজান থানায় দায়ের করা মামলা সমূহ হচ্ছে ২৩-২-৯১ ধারা ১৪৭ ১৪৮ ১৪৯ ৪২৭/ ৪৩৫ ও ৩০২ দন্ডবিধি, মামলা নং ৭(৯)৯১ ধারা ১৪৩ ৪৩৫/৪২৭ ও ৩০৭ দন্ডবিধি মামলা নং ২২(৩-৩-৯১) ধারা ৩৬৪/ ৩২৩ ১১৪ দন্ডবিধি। এসব মামলা সমূহের প্রাথমিক অভিযােগ প্রমাণিত হওয়ায় চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে যার নম্বর ৬৪ তাং ৮-৬-৯১ চার্জশীট ৮৮(৩১-৭-৯১)। এত কুকীর্তি সত্ত্বেও তিনি এরশাদ সরকারের আমলে হয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী, হয়েছেন পূর্তমন্ত্রী। এখন বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য।
ঘাতক কামরুজ্জামান ,
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশে হত্যা লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞের অন্যতম পরিকল্পনা বাস্ত বায়নকারী ঘাতক কামরুজ্জামান বর্তমানে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। কামরুজ্জামান যুদ্ধের আগে মাল ফেরি করে বিক্রি করতাে, ফেরিওয়ালা ছিল। ঘাতক কামরুজ্জামান প্রথম বদর বাহিনী গঠন করে বৃহত্তর ময়মনসিংহের শেরপুর অঞ্চলে। তখন শেরপুরে অবস্থানরত পাকি মেজর রিয়াজের তৈরি এই ঘাতক কামরুজ্জামানের সশস্ত্র বদররাই এলাকায় নির্বিচারে গণহত্যা, অগ্নিসংযােগ, লুটপাট, ধর্ষণ চালিয়েছিল। এরা বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকার নিরীহ মুক্তিকামী মানুষকে ধরে এনে শেরপুরের বধ্যভূমিগুলােতে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। ঘাতক কামরুজ্জামান ছিল বৃহত্তর ময়মনসিংহের ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা। পাকি হানাদার বাহিনীর সহায়ক এদেশীয় এক উৎকৃষ্ট ঘাতক হিসাবে কামরুজ্জামানই সেদিন এ দায়িত্ব নিয়েছিল। দেশে হাতে গােণা ১০ কুখ্যাত নরঘাতকের মধ্যে এই কামরুজ্জামান একজন। কামরুজ্জামান শেরপুরে তার সহচর হিসাবে আরও কয়েকজন কুখ্যাত ঘাতককে বেছে নিয়েছিল। এরা হলাে কামরান (মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই অবস্থা বুঝে পাকিস্তান পালিয়ে যায়), জয়নাল আবেদীন (প্রথমে দৈনিক মিল্লাত, বর্তমানে সাপ্তাহিক সােনার বাংলার বার্তা সম্পাদক), সুজা তালুকদার, হযরত আলী (বর্তমানে কাজী), আব্দুল বাকের (বর্তমানে স্বঘােষিত পীর), হবিবর রহমান (হবি হাজী), সুরুজ্জামান (ঝিনাইগাতী মালিঝিকান্দা উচ্চ | বিদ্যালয়ের মৌলভী শিক্ষক)। অবশ্য এরা ছাড়াও বদর বাহিনীতে আরাে বহু সদস্য ছিল। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াল দিনগুলাের দিকে তাকালেই শেরপুরবাসীর মনে পড়ে এই ঘাতক দলটির কথা। শেরপুর শহরের নয়ানী বাজারস্থ সুরেন্দ্র মােহন সাহার দ্বিতল ভবনটিতে কুখ্যাত বদর বাহিনী ক্যাম্প গড়ে তােলে, যার ওপর তলায় বসত ঘাতক কামরুজ্জামান সহচরদের নিয়ে আর নিচতলা করা হয়েছিল নির্যাতনের অন্ধকার গরখানা। জামালপুরে | স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী হিসেবে আলবদর গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জামায়াত নেতৃত্ব বুঝতে পারে যে, ইসলামী ছাত্রসংঘকে সশস্ত্র করে মুক্তিযুদ্ধবিরােধী তৎপরতা চালানাে ছাড়াও বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য বিশেষ স্কোয়াড হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। প্রথমতঃ | পরীক্ষামূলকভাবে সারা ময়মনসিংহ জেলার ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীদের আলবদর। | বাহিনীতে সংগঠিত করে সশস্ত্র ট্রেনিং দেয়া হয়। এই সাংগঠনিক কার্যক্রমের মুলে, | পরিচালক ছিলেন কামরুজ্জামান। ঘাতক কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে ময়মনসিংহ জেলার।
সমস্ত ইসলামী ছাত্রসংঘ কর্মীকে আলবদর বাহিনীর অন্তর্ভূক্ত করা হয়। শেরপুরের এক শহীদের পিতা ফজলুল হক জানিয়েছেন, তার বেয়াই এর বাড়ি থেকে তার ছেলে শহীদ বদিউজ্জামানকে ঘাতক কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে ১১ জনের একটি দল ধরে নিয়ে যায় । তারপর আহমদনগর পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর বদিউজ্জামানের বড় ভাই হাসানুজ্জামান বাদী হয়ে নলিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ১৮ জন আসামীর অন্যতম ছিলেন ঘাতক কামরুজ্জামান। মামলাটির নম্বর ২(৫)৭২, জি আর নং-২৫০(২)৭২। শেরপুর জেলার শহীদ গােলাম মােস্তফার চাচাত ভাই শাহজাহান তালুকদার জানিয়েছেন ১৯৭১ সালের ২৪শে আগস্ট আলবদররা গােলাম মােস্তফাকে শেরপুর শহরের সড়ক থেকে ধরে বলপূর্বক তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেই ক্যাম্পে গােলাম মােস্তফাকে নিয়ে আলবদররা তার গায়ের মাংস ও রগ কেটে, হাত বেঁধে হাটিয়ে নিয়ে যায় শেরী ব্রীজের নিচে। সেখানে তারা গুলি করে হত্যা করে। গােলাম মােস্তফাকে। ঘাতক কামরুজ্জামানের প্রত্যক্ষ নির্দেশে এই হত্যাকান্ডটি ঘটেছিল। শহীদ গােলাম মােস্তফার হত্যাকান্ড যে ঘাতক কামরুজ্জামানের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল তার প্রত্যক্ষদর্শী শেরপুরে আরাে অনেকেই আছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি শহীদ সন্তান তাপস সাহা জানিয়েছেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘাতক কামরুজ্জামান ও তার সহযােগীরা শেরপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আলবদর ক্যাম্পে। নারী-পুরুষকে ধরে তাদের উপর অত্যাচার চালাত। আলবদররা চাবুক দিয়ে পেটাত তাদের। ঘাতক কামরুজ্জামানের বাহিনী শেরপুর পৌরসভার সাবেক কমিশনার মজিদকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল টর্চার ক্যাম্পে। দিনরাত অত্যাচারের পর তাকে অন্ধকার কুয়ায়। আটকে রাখা হয়। ১৯৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি এক দুপুরে শেরপুর কলেজের তৎকালীন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ আব্দুল হান্নানকে নিয়ে খালি গায়ে মাথা ন্যাড়া করে, গায়ে মুখে চুনকালি মাখিয়ে, গলায় জুতার মালা পড়িয়ে প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় চাবুক দিয়ে পেটাতে পেটাতে ঘাতক কামরুজ্জামান ও তার সহযােগীরা শেরপুর শহর প্রদক্ষিণ করায়। শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জিয়াউল হক জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের ২২শে আগস্ট বিকাল ৫টায় কামাড়ি চরে তার নিজের বাড়ি থেকে গাজীর খামারে যাওয়ার সময় ৩ সশস্ত্র আলবদর তাকে তাদের টর্চার ক্যাম্পে নিয়ে যায় । তারা জিয়াউল হককে দু’ দিন টর্চার ক্যাম্পে অন্ধকার কূপে আটকে রাখে। এই দু’ দিনে তিনি ওখানে ঘাতক কামরুজ্জামান ও তার সহযােগিদের দেখেন। এরপর তাকে শেরপুর ছেড়ে চলে যাওয়ার শর্তে ছেড়ে দেয়া হয়। অন্যথায় হত্যার হুমকি দেয়া হয়। শেরপুরের জাতীয় পার্টির নেতা মুক্তিযােদ্ধা এমদাদুল হক হীরা জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকেই ঘাতক কামরুজ্জামানের সহায়তায় পাক বাহিনী তার
বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল। সেখানে তারা ৫টি বাঙ্কার করেছিল। তার বাড়ির লিচু গাছের নিচে এনে মানুষ হত্যা করতাে। অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী, বর্তমানে নকরার হাজী আল মামুদ কলেজের শিক্ষক মুসফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি তিনআনি বাজারস্থ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলাে লুট করা হয়েছিল ঘাতক কামরুজ্জামানের নির্দেশ ও উপস্থিতিতে। শেরপুরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, রাজাকার আলবদর কর্তৃক নিরীহ লােকজনকে ধরে আনা এবং তাদের লাশ বহন করার জন্য ব্যবহৃত ট্রাকগুলাের একজন ড্রাইভার জানিয়েছেন ঘাতক কামরুজ্জামান নকলার মুক্তিযােদ্ধা হন্তার বাড়ি পােড়ানাের জন্য পাকিস্তানি বাহিনীকে রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যায়। তখন হন্তার বাড়ি থেকে ঘাতক কামরুজ্জামান ও তার সহযােগিরা একমণ চালও লুট করে। এছাড়াও ঘাতক কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে আলবদররা সাধারণ মানুষের গরু ছাগল ধরে নিয়ে আসত এবং পরিত্যক্ত সম্পত্তিসহ অন্যান্য জমি সম্পত্তি জোর করে দখল করে নিত বলে জানিয়েছেন ঐ ট্রাক ড্রাইভার।
৭০
মওলানা মান্নান
একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের অন্যতম এক নায়কের নাম মওলানা মান্নান। মৃত মওলানা মান্নান মুক্তিযুদ্ধবিরােধী দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার মালিক। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ। চলাকালে পাক হানাদার বাহিনীর এক প্রধান সহযােগী এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে জড়িত থেকেও স্বাধীনতার মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে মওলানা মান্নান ক্ষমতার বৃত্তে এসে যান। পঁচাত্তর পরবর্তী দু’টি সরকারেরই তিনি মন্ত্রী হন এবং মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়তে মুদার্রেসিন এর সভাপতি হন। জতীয় গণতদন্ত কমিশনের রিপাের্টে মওলানা মান্নান সম্বন্ধে বলা হয়, একাত্তরে তিনি পাক হানাদার বাহিনীর একজন প্রধান সহযােগী ছিলেন। বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে তিনি জড়িত এনং বুদ্ধিজীবী ডাঃ আলীম চৌধুরীকে তিনিই পল্টনের বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন। চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার দেবীপুর গ্রামের মওলানা মান্নানের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরােধী কর্মতৎপরতা ঢাকা থেকে ফরিদগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। একাত্তরে তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযােগী সংগঠন শান্তি ও কল্যাণ কাউন্সিলের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন। মওলানা মান্নান পাক বাহিনীর গণহত্যাকে সমর্থন জানিয়ে কয়েকটি বিবৃতিও দেন, ১৯৭১ সালের ২৭শে এপ্রিল বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়। সেই বিবৃতিতে মওলানা মান্নান বলেন, “সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমূলে উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রেমিক জনগণ। আজ জিহাদের জোশে আগাইয়া আসিয়াছে”। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর পূর্ব পাকিস্তান মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মওলানা মান্নান মাদ্রাসা শিক্ষকদের নিয়ে জেনারেল নিয়াজীর সাথে সাক্ষাত করেছিলেন। জেনারেল নিয়াজীকে এক কপি কোরান শরীফ উপহার দিয়ে মওলানা মান্নান বলেছিলেন, “পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও ইসলামের গৌরব বৃদ্ধির জন্য আমরা সেনাবাহিনীকে সহযােগিতা করতে প্রস্তুত।” নিয়াজীর সঙ্গে এই বৈঠকের পর মাদ্রাসা। শিক্ষক ছাত্রদের রাজাকার আলবদর আল শামস বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে সামরিক ট্রেনিং দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ আলীম চৌধুরী হত্যার পিছনে মওলানা মান্নানের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। একাত্তরে মওলানা মান্নান থাকতেন আলীম চৌধুরীর বাসার নিচতলায়। আলীম চৌধুরীর স্ত্রী শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী ও ছােট ভাই আব্দুল হাফিজ চৌধুরী জানান একাত্তরের ১৪ই ডিসেম্বর আলবদররা তাদের বাসায় আসে। এর আগে তারা প্রায় ৪৫ মিনিট মওলানা মান্নানের বাসায় ছিল। সেখান থেকে এসে তারা ডঃ আলীমকে ধরে নিয়ে
যায়। ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে আব্দুল হাফিজ চৌধুরী রমনা থানায় এ ব্যাপারে এফ আই। আর করেন। তারা আজিমপুরের একটি বাসা থেকে পলাতক মওলানা মান্নানকে ধরে পল্টনে নিয়ে যান। সেখানে মওলানা মান্নান স্বীকার করেছিলেন তার সরাসরি ছাত্র এমন তিনজন আলবদরই ডাঃ আলীম চৌধুরীকে ধরে নিয়ে গেছে। মওলানা মান্নানের সাথে বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম নায়ক বিগেডিয়ার কাশেম ও ক্যাপ্টেন কাইয়ূম এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ডাঃ আলীম চৌধুরী হত্যার মাসখানেক আগে ঈদের দিন রাত আড়াইটায় এ দুজন পাকসেনা অফিসার মওলানা মান্নানের বাসায় দাওয়াত খেতে এসেছিলেন। একাত্তরের ডিসেম্বরে “সেই তিন শয়তান কোথায়” শিরােনামে সংবাদপত্রে একটি রিপাের্ট প্রকাশিত হয়। একাত্তরে ফরিদগঞ্জে খলিলুর রহমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মওলানা মান্নান কর্তৃক সংগঠিত রাজাকার বাহিনী এলাকায় হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোেগ, লুটতরাজসহ নিরীহ মানুষের উপর নির্মম নির্যাতন চালায়। ফরিদগঞ্জ তৎকালীন থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক মাষ্টার, সংগ্রাম পরিষদের সদস্য আব্দুল জব্বার পাটোয়ারী এবং মওলানা আবদুল আউয়াল এসব ঘটনা জানান। লিখিত সাক্ষ্যে তারা জানান, মওলানা মান্নান ফরিদগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মজিদ পাটোয়ারী, হায়দার বক্স পাটোয়ারী, আহমদ উল্লাহ খান, ইসহাক খান, সুলতান খান, আমিন উল্লাহ খান, প্রাইমারী শিক্ষক নিবারণ চন্দ্র দাস, হরেন চন্দ্র দাস, আনসার আবদুর রব, আব্দুল মতিন সাউত, সেকান্দার ভূঁইয়া, আঃ সাত্তার ভূইয়া, উপেন্দ্র চন্দ্র কর্মকার, যজ্ঞেস্বর ভৌমিক, মইনুদ্দিন খান, আঃ অদুদ খান, হাবিব উল্লাহ, এসহাক মীর, আক্কাস মিয়া, আবু তাহের, আয়াত উল্লা, হাশিম খান, হরে কৃষ্ণ দাস, নগেন্দ্র চন্দ্র কবিরাজ, গােবিন্দ চন্দ্র দাস সহ ফরিদগঞ্জের অসংখ্য বাঙালিকে হত্যা করেছে। প্রত্যাশী গ্রামের হাসমতি বেগম ও আরফতি বেগমকে তাদের নিজ বাড়িতে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ফরিদগঞ্জের কেরােয়া গ্রামের মহীদ হায়দার বক্স পাটোয়ারীর ছেলে আব্দুল কাদের পাটোয়ারী জানান, মৌলিক গণতন্ত্রের সময় মেম্বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে তার বাবার সঙ্গে মওলানা মান্নানের বিরােধের সূত্রপাত। একাত্তরে মওলানা মান্নানের রাজাকার বাহিনী তাকে খুঁজতে এসে না পেয়ে তার বাবা হায়দার বক্স পাটোয়ারী, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে ধরে নিয়ে যায়। স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ে ছাড়া পেলেও তার বাবা ছাড়া পাননি। তিনদিন নির্মম নির্যাতনের পর। হায়দার বক্স পাটোয়ারীকে খুন করা হয় মওলানা মান্নানের নির্দেশেই। একাত্তরের ২৭শে ডিসেম্বর মওলানা মান্নানকে রমনা থানায় সােপর্দ করা হয়। ১৯৭২ সালের ৭ই মে দৈনিক আজাদ পত্রিকা মওলানা মান্নানের ছবি ছেপে নিচে “এই নরপিশাচকে ধরিয়ে দিন” শিরােনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
কমান্ডার আয়েনউদ্দিন
বৃহত্তর রাজশাহীর তথাকথিত শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, আলবদর বাহিনীর কমান্ডার আয়েনউদ্দিন একজন কুখ্যাত রাজাকার। আরব-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদ ব্যবহার করে তিনি বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক বনে যান। ঢাকা ও রাজশাহী শহরে গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি-গাড়ি। একাত্তরে এই রক্তপিপাসু নরঘাতক তার রাজশাহীর বাড়ির সামনে নিজ হাতে গুলি করে দুজন মুক্তিযােদ্ধাকে হত্যা করে। শুধু তাই নয়, একাত্তরে বৃহত্তর রাজশাহীতে মুক্তিযােদ্ধা, বুদ্ধিজীবীসহ নির্বিচারে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, লুণ্ঠন প্রভৃতি কাজের নেপথ্য কাহিনীর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে জড়িত পাকি জেনারেলদের খেদমতগার আয়েনউদ্দিন -এর নাম। তার নৃশংসতার কাহিনী রাজশাহীর মানুষ আজও ভুলতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, মুক্তিযােদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের কাছে রাজাকার কমান্ডার আয়েনউদ্দিন সম্বন্ধে জানতে চাইলে তারা বলেন, একাত্তরে এই নরঘাতক ও তার সহযােগীরা মুক্তিযুদ্ধকালীন নয় মাসে শত শত মানুষ খুন ও জবাই করেছে। একাত্তরে। বৃহত্তর রাজশাহীর এই শীর্ষ খুনী স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে দীর্ঘদিন মুসলিম লীগের রাজনীতির কলকাঠি নেড়ে সর্বশেষ ‘৯৬ সালের নির্বাচনে রাজশাহী-৪ (কুষ্টিয়া- দুর্গাপুর) আসন থেকে জাতীয় পার্টির হয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু প্রতিবারই এখানকার জনসাধারণ গণধিকৃত এই রাজাকারকে ভােট না দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পাকিপন্থী আয়েনউদ্দিন অতিরিক্ত পাকিস্তান প্রীতির কারণে দিশেহারা হয়ে পড়ে এবং এই অঞ্চলে মুসলিম লীগের সভাপতি থাকার সুবাদে ‘৭১ এর এপ্রিল মাসে নিজ উদ্যোগে গঠন করেন জেলা শান্তি কমিটি। এরপর নিজেই এর চেয়ারম্যান হয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠন করেন। ২৫শে মার্চ পাকবাহিনী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং শহরে প্রবেশ করলেও মুক্তিযােদ্ধা, পুলিশ, ইপিআর বাহিনীর প্রতিরােধে তেমন সুবিধা করতে উঠতে পারেনি। ১৩ই এপ্রিল শেষ বিকেল নাগাদ ঢাকা থেকে হানাদার বাহিনীর বড় একটি বহর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলে মুক্তিযােদ্ধা, পুলিশ, ইপিআর বাহিনী পিছু হটে নতুন অবস্থান গ্রহণ করে। আর পাক হানাদার বাহিনীর বিরাট বহর আসার পরপরই শান্তিবাহিনীর চেয়ারম্যান আয়েনউদ্দিন বেপরােয়া হয়ে উঠে। শুরু করে, তার নৃশংসতা। পাকি ক্যাপ্টেন। ইলিয়াসের সাথে আয়েনউদ্দিন সখ্যতা গড়ে তােলেন। এই পাকি সেনা কর্মকর্তার।
সহায়তায় রাজশাহী হােমিও কলেজের মাঠে শান্তি কমিটি ও আলবদর বাহিনীর সদস্যদের সশস্ত্র ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে গড়ে তােলে শান্তি বাহিনী ও আলবদর বাহিনী। বিভিন্ন বাহিনী ও কমিটির সমন্বিত হেডকোয়ার্টার ছিল শহরের রানীবাজারস্থ মুসলিম সাহেবের দ্বিতল বাড়ি। এখানে বহু মুক্তিযােদ্ধা, বুদ্ধিজীবী এবং নিরীহ বাঙালি নারী পুরুষকে ধরে এনে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করেছে রাজাকার বাহিনী। আয়েন উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত রাজাকার বাহিনী সমগ রাজশাহীতে খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযােগসহ নৃশংস তান্ডব শুরু করে। রাজাকার আয়েনউদ্দিনের নির্দেশে তার অন্যতম সহযােগী তানাের থানা আলবদর কমান্ডার সামসুদ্দিন, ইউসুফ মিয়া (রাজশাহী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান), তৈয়ব খান, আফজি মােজার, তানােরের জমিদার ললিত মােহন মৈত্র এর বাড়িতে অসংখ্য নারী, শিশু ও মুক্তিকামী বাঙালিকে পাশবিক নির্যাতনের পর হাত-পা কেটে, চোখ উপরে ফেলে নৃশংসভাবে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর এখান থেকে ১২৮ জনের লাশ উদ্বার করা হয়। রাজাকার আয়েনউদ্দিন ‘৭১ এর ১৪ই নভেম্বর ১৪ জন মুক্তিযােদ্ধাকে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। পাক বাহিনীর সকল কর্মকান্ড রাজাকার আয়েনউদ্দিনের নির্দেশেই পরিচালিত হতাে। রাজাকার কমান্ডার আয়েনউদ্দিনের নির্দেশে বৃহত্তর রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে যে সব রাজাকার নির্বিচারে গণহত্যা চালায় তারা হলােঃ জসিমউদ্দিন আহমদ, জিয়াউল আলম, মােসলেম চেয়ারম্যান (হরিয়ান ইউপি), কোরবান মােল্লা, কাশেম সর্দার, আলীমুদ্দিন, মােঃ গনি, মােঃ খলিল শেখ, মােঃ ফজল মিয়া, মােঃ মােজাহার, মােঃ সাত্তার, এহসান আলী, হামিদ আলী, করিম হােসেন, মােঃ কালাম ও সালাম, কাশেম আলী, মােঃ মান্নান, মােঃ ইদ্রিস, মােঃ সাইফুল্লাহ (রেডিও পাকিস্তানের রিজিওনাল ডিরেক্টর), গােলাম রব্বানী, এএইচএম কামাল, আনােয়ার হােসেন, জমিরুল হক চৌধুরী। এদের সকলের বাড়িই রাজশাহী জেলায়। এছাড়া মমতাজ উদ্দিন আহমদ ও ডঃ ইরতিজা (শিবগঞ্জ, চাপাইনবাবগঞ্জ) আফাজউদ্দিন ও আঃ সাত্তার খান চৌধুরী (নাটোর), মীর মৌলভী ওবায়দুল্লাহ (বানচাল), মীর তায়েব আলী (চাপাইনবাবগঞ্জ শহর), ফরাজ উদ্দিন মােল্লা। (শেখ পাড়া নওগাঁ) মুন্তাজ আলী ও মােসলেম মােল্লা (নাচোল চাঁপাইনবাবগঞ্জ)। এরা নিজ নিজ এলাকায় দন্ডমুন্ডের কর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়ে নির্বিঘ্নে গণহত্যা চালায়। রাজশাহী শহরের অদূরে রূপচাদ মন্ডল ‘৭১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সামসুজ্জোহা হলের পিছনে খোঁড়া গণকবর থেকে উঠে আসেন অনেকটা ভাগ্যের জোরে। জুন মাসে পাক বাহিনী জোহা হল সংলগ্ন বধ্যভূমিতে বহু বাঙালির সাথে তাকেও
ব্রাশফায়ার করে মাটিচাপা দিয়েছিল। অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যাওয়া রূপচাদ মন্ডল বহু কষ্ট করে উঠে আসেন। তিনি জানান, ওই সময় তাকে তার শ্যামপুরস্থ নগরপাড়ার বাড়ি থেকে ধরে কাটাখালি ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে যায় রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিল রাজাকার মােসলেম চেয়ারম্যান, কোরবান মােল্লা, কাশেম মাষ্টার ও আলীমুদ্দিন। কিছুক্ষণ পর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আয়েনউদ্দিন এসে তাকে সহ আরও কয়েকজনকে মুক্তি বাহিনীর লােক বলে চিহ্নিত করে। রাত ৮টার দিকে শান্তি কমিটির লােকজন তাদের বেদম মারপিটের পর আনুমানিক রাত ১০টায় পাক বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। পাক বাহিনী তাকে সহ অন্যদের জোহা হলে এনে অমানুষিক নির্যাতনের পর ব্রাশফায়ার করে গণকবরে মাটিচাপা দেয়। রাজাকার আয়েনউদ্দিন তার রক্তের তৃষা মেটাতে কত মানুষ হত্যা করেছে এবং করিয়েছে তার কোন হিসাব নেই। রাজশাহী মহানগরীতেই স্বাধীনতার পর আবিষ্কৃত হয় অন্তত ২০টি গণকবর। রাজশাহী। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আবিষ্কৃত হয় আরও ১৫টি গণকবর।
৭৫
মীর কাশেম আলী
মীর কাশেম আলী পিতাঃ তৈয়ব আলী গ্রামঃ চালা থানাঃ হরিরামপুর জেলাঃ মানিকগঞ্জ। পিডব্লিউডির সাধারণ কর্মচারী তৈয়ব আলীর চার পুত্রের মধ্যে মীর কাশেম আলী দ্বিতীয়। ডাক নাম পিয়ারু, তবে সবাই জানে মিন্টু নামে। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে পিতার চাকরির সুবাদে চট্টগ্রাম থেকে পড়াশােনার জীবন শুরু। চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র থাকার সময় জড়িয়ে পড়ে মওদুদীর মৌলবাদী রাজনীতিতে। জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের চট্টগ্রাম জেলার দায়িত্ব পায় স্বাধীনতার আগে। এই সময় শুরু হয় মহান। স্বাধীনতাযুদ্ধ ১৯৭১। পাকিস্তানি শাসকরা যখন নিরীহ বাঙালির উপর আক্রমন শুরু করে তখন মওদুদীবাদীরা তাদের পক্ষ নেয়। সামরিক শাসক টিক্কা খান আনসার বাহিনী বিলুপ্ত করে জারি করে রাজাকার অর্ডিন্যান্স ১৯৭১। এই অর্ডিন্যান্স জারির পর জামায়াতে ইসলামী তাদের ছাত্র সংঘের জেলার নেতাদের স্ব স্ব জেলার রাজাকার বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করে। সেই সুবাদে মীর কাশেম আলী চট্টগ্রাম জেলার প্রধান হয়। সে ওই এলাকার যুবকদের সংগঠিত করে গড়ে তােলে এক বাহিনী। তার অনুগত বাহিনী মহান স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচরন শুরু করে। তারা পাকিস্তানীদের ইচ্ছানুসারে শুরু করে বাঙালি নিধন। হত্যা, অগ্নিসংযােগ, ধর্ষণের সাথে সাথে কেড়ে নেয় মানুষের সর্বস্ব । মীর কাশেম আলী ছিল এসব কিছুর নাটের গুরু । চট্টগ্রাম জেলার স্বাধীনতা বিরােধী সমস্ত কর্মকান্ড চলে তার নির্দেশে। প্রকাশ্যে জনসভা করে মীর কাশেম আলী কর্মীদের সংগঠিত করে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছড়াতে থাকে বিষবাষ্প। ১৯৭১ এর ২ আগস্ট চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউটে তার নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরােধী সমাবেশের আয়ােজন করা হয়। ইসলামী ছাত্র সংঘের এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করে মীর কাশেম আলী। সভাপতির ভাষণে সে বলে, গ্রামে গঞ্জে প্রত্যেকটি এলাকায় খুঁজে খুঁজে পাকিস্তান বিরােধীদের শেষ চিহ্নটি মুছে ফেলতে হবে। তার স্বাধীনতা বিরােধী তৎপরতার সময় ছাত্রসংঘের নতুন প্রাদেশিক পরিষদ গঠিত হয়। মীর কাশেম আলী হয় তার সম্পাদক। ছাত্র সংঘের নেতারা শুরু থেকেই বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। নভেম্বরের প্রথম থেকেই আলবদর নেতারা প্রকাশ্যে তার হুঁশিয়ারি দেয়। এজন্য ৭ই নভেম্বর ঘটা করে পালন করা হয় বদর দিবস। এ দিনে বায়তুল মােকাররমে ছাত্রসংঘের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মীর কাশেম আলী এতে বলে, পাকিস্তানীরা কোন অবস্থাতেই হিন্দুদের গােলামী করতে পারে না। আমরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি অক্ষুন্ন রাখবাে। এরপর
২৩ নভেম্বর ইয়াহিয়া খান দেশব্যাপী জরুরী অবস্থা জারি করে। এ ঘােষণার পর মীর কাশেম সংবাদপত্রে একটি বিবৃতি দেয়। ২৪শে নভেম্বর ‘৭১ এটি ছাপা হয়। তাতে সৈনিক হিসাবে প্রস্তুত থাকার জন্য দেশপ্রেমিকদের আহ্বান জানানাে হয়। ৪ ডিসেম্বর ইয়াহিয়া কারফিউ জারির পর আরেক বিবৃতিতে মীর কাশেম আলী বলেন, “হিন্দুস্তানকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই পাকিস্তান ভাঙতে এলে হিন্দুস্থান নিজেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। দেশপ্রেমিক সকলে তাদের বিরুদ্ধে মরণ আঘাত হানুন।” এই সমাবেশের পর শুরু হয় বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা। এদিকে মীর কাশেম আলীর নির্দেশে চট্টগ্রাম টেলিগ্রাফ অফিস লাগােয়া হােটেল ডালিম পরিণত হয় রাজাকার বাহিনীর বন্দী শিবিরে। ওই এলাকার বহু লােককে ধরে এনে নির্মমভাবে খুন করা হয়। পানির বদলে অনেকের মুখে তুলে দেয়া হয় প্রস্রাব। ১৭ই ডিসেম্বর সেখান থেকে সাড়ে তিনশ লােককে উদ্ধার করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পুরাে নীল নক্সা করেছিল এই ঘাতক। পরিকল্পনা মতাে তারা একের পর এক বুদ্ধিজীবী হত্যা করতে থাকে। এদের হাতে খুন হয় দেশের খ্যাতনামা সব কবি শিল্পী সাহিত্যিক সাংবাদিক।
কাদের মােল্লা
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ঢাকার মিরপুরের স্থানীয় বাঙালিদের কাছে আব্দুল কাদের মােল্লা কসাই হিসেবে পরিচিত ছিল।তখন ঢাকার এই অংশে মূলত বিহারী মুসলিমরা বসবাস করত। এরা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘাের বিরােধী পাশাপাশি পাক হানাদার বাহিনী ও এদের দেশীয় দোসরদের সহায়ক। স্বাধীনতার পর এই এলাকায় রাজাকার, আলবদর, আলশামস এবং তাদের দেশীয় ও সহযােগীদোসরদের বর্বতার সাক্ষী শিয়ালবাড়ী বধ্যভূমি আবিষ্কৃত হয়। স্থানীয় জনসাধারণের জানায় আব্দুল কাদের মােল্লা ও তার সঙ্গীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় শিয়ালবাড়ী, রূপনগর এলাকা থেকে হাজারাে মুক্তিকামী বাঙালিকে হত্যা করেছে। এখানে অতি উৎসাহী আব্দুল কাদের মােল্লা পাক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরুর বহু আগেই তার বাহিনীরকে। হত্যা নির্যাতন শুরু করে। ৬ই মার্চ ১৯৭১ মীরপুরের ৬ সম্বর সেকশনে সিরামিক ইন্ডাষ্ট্রিজুরি গেটে আহূত স্থানীয় বাঙালিদের এক সভায় জয় বাংলা শ্লোগান দেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শী এম শহীদুর রহমান। জানান, এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কসাই বলে খ্যাত আব্দুল কাদের মােল্লা ও তার সহযােগীরা। খােলা তলােয়ার, রামদা, কৃপণ ইত্যাদি নিয়ে ওই জনসভার নিরীহ বাঙালিদের উপর হিংস্র হায়েনার মতাে ঝাপিয়ে পড়ে। ক্ষত বিক্ষত করে অনেককে। মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের বাসিন্দা এম ফিরােজ আলী জানান তার ১৮ বছর বয়স্ক ভাই পল্লব টুনটুনির মৃত্যুর জন্য আব্দুল কাদের মােল্লা দায়ী। পল্পব ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ অনুসারী। এটাই চক্ষুশূল হয় আব্দুল কাদের মােল্লা ও তার দোসর রাজাকার বাহিনীর কাছে। ২৯ শে মার্চ আব্দুল কাদের মােল্লা ও তার দোসররা পল্লবকে ঢাকার অন্য এলাকা থেকে ধরে মীরপুরে নিয়ে আসে। তার হাত পা বেঁধে টেনে হিচড়ে মীরপুরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে আনা নেওয়া করে। ক্ষতবিক্ষত পল্লবকে তারপর স্থানীয় একটি ঈদগাহ মাঠের একটি গাছের সাথে বেঁধে রাখে। পরে ওইদিনই আব্দুল কাদের মােল্লার সহযােগীরা পল্লবের আঙ্গুল কেটে নেয়। এর প্রায় এক সপ্তাহ পর ৫ ই এপ্রিল আব্দুল কাদের মােল্লা তার সাঙ্গপাঙ্গদের পপ্লবকে গুলি করে মেরে ফেলার আদেশ দেয়।এভাবে তার লাশ আরাে দুইদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়।
এই বর্বরতার মাধ্যমে আব্দুল কাদের মােল্লা জানিয়ে দেয় যারা বঙ্গবন্ধু বা স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলবে তাদের এই পরিণতি হবে বলে ফিরােজ আলী জানান। আব্দুল কাদের মােল্লার কৃতকর্মের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী এম শহীদুর রহমান চৌধুরী জানান, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের প্রথিতযশা মহিলা কবি মেহেরুন্নেছাকে কাদের মােল্লা ও তার সহযােগীরা নির্মমভাবে হত্যা করে। এই বীভৎস দৃশ্য দেখে সিরাজ নামের ওই বাড়ির একজন সদস্য মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরও তার অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। মিরপুরবাসী আরাে অভিযােগ করেন মনিপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া এলাকায় আব্দুল কাদের মােল্লা ও তাদের সহযােগী ও রাজাকাররা হাজারাে বাঙালিকে নির্যাতন নিপীড়ন হত্যা করে মিরপুরের বিভিন্ন জায়গায় মাটি চাপা দিয়েছে।
এ বি এম খালেক মজুমদার
এবিএম খালেক মজুমদার, পিতাঃ আব্দুল মজিদ মজুমদার, গ্রামঃ দোহাইা, থানাঃ হাজীগঞ্জ, জেলাঃ কুমিল্লা। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় খালেক মজুমদার ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরীর দপ্তর সম্পাদক। খালেক মজুমদার এখন প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত নেই। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি নিজ হাতে মানুষ হত্যা করেছেন। এছাড়াও বদর বাহিনীর কমান্ডার হয়ে তার পাকি ভাইদের যেখানে যেভাবে প্রয়ােজন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যাতে ব্যাপক সংখ্যায় বাঙালি মারা যায়। বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথেও তিনি জড়িত। ১৪ই ডিসেম্বর বিকালে খালেক মজুমদার ও তার সহযােগীরা প্রখ্যাত সাংবাদিক দৈনিক সংবাদের যুগ্ন সম্পাদক শহীদুল্লা কায়সারের ২৯, কয়েতটুলীর বাসা থেকে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। শহীদুল্লা কায়সারের স্ত্রী সাইফুন্নাহার ওরফে পান্না কায়সার, শহীদুল্লা কায়সারের ছােট বােনের জামাই নাসির আহমেদ, ছােট ভাই জাকারিয়া হাবিব, তার স্ত্রী নীলা জাকারিয়া এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। শহীদুল্লা কায়সার আর ফিরে আসেননি এবং তার মৃতদেহ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের কারণে অনেক আত্মীয় স্বজন এসে কয়েতটুলির এই বাসায় আশ্রয় নেয়। ১৪ই ডিসেম্বর বিকেলে অন্ধকারে নিমজ্জিত ঢাকা শহরে জাকারিয়া হাবিব ও অন্যরা রেডিওতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শােনার চেষ্টা করছিলেন। এই সময় হঠাৎ দরজায় করাঘাত। তখন শহীদুল্লাহ কায়সার চা পান করছিলেন। অন্যরা ভয় পেয়ে নিচতলার ড্রইং রুমে এসে হাজির হয়। ঘাতকরা দরজা খুলতে দেরি দেখে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে আসে। প্রথমে তারা শহীদুল্লাহ কায়সারের ছােটভাই ওবায়দুল্লাকে রাইফেলেন বাট দিয়ে আঘাত করে। তারপর মুখােশধারীরা দোতলায় শহীদুল্লাহ কায়সারের বেডরুমের দিকে যায়। তাকে পেয়ে ঘাতকরা উল্লসিত। হয়ে উঠে শহীদুল্লাহ কায়সার তাদের এখানে আসার কারণ জানতে চান। এসময় ঘাতকরা তাকে চুল, শার্ট ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাইলে পরিবারের সদস্যরা ঘাতকদের বাধা দেয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে পান্না কায়সারের বােন শাহানা বেগম এক ঘাতকের মুখোশ খুলে ফেলেন। সবার সামনে উন্মুক্ত হয় খালেক মজুমদারের মুখ । তখন ঘাতক খালেক মজুমদার শাহানা বেগমকে লাথি মেরে শহীদুল্লাহ কায়সার ও জাকারিয়া হাবিবকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। পরিবারের সবার প্রবল প্রতিরােধের মুখে তারা জাকারিয়া
৮০
হাবিবকে ফেলে রেখে শহীদুল্লাহ কায়সারকে নিয়ে অপেক্ষমান জীপে উঠে। এখানে উল্লেখ্য খালেক মজুমদারও একই এলাকার বাসিন্দা। সে থাকত ৪৭, আগামসি লেনএ। কয়েতটুলি মসজিদের ইমাম আশাফুল্লা, যিনিএখন বনানী কবরস্তানে কর্মরত, জানান ১৪ই ডিসেম্বর বিকালে খালেক মজুমদার ইমাম সাহেবের কাছে শহীদুল্লাহ কায়সারের অবস্থান সম্বন্ধে জানতে চান, কখন তাকে বাসায় পাওয়া যায় ইত্যাদি। ইমাম সাহেব কিছুই বলতে পারেননি, তিনি বুঝতেও পারেননি খালেক মজুমদার হত্যার উদ্দেশ্যে শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজছে। উনি আরাে জানান ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি দেখতে পান শহীদুল্লাহ কায়সারকে কিছু লােক জোর করে একটি জীপে করে নিয়ে যাচ্ছে আর শহীদুল্লাহ কায়সার এদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছেন। এই ঘটনার কথা ইমাম আশাফুল্লা ১৭ই ডিসেম্বর জাকারিয়া হাবিব এবং নাসির আহমেদকে জানান। ১৪ই ডিসেম্বর রাতে নাসির আহমেদ কোতােয়ালী থানায় একটি অভিযোেগ দায়ের করেন। কিন্তু যুদ্ধচলাকালীন ওই সময় পুলিশ প্রশাসন তেমন সুবিধা করতে পারেনি। নাসির আহমেদ ২ নম্বর সেক্টরের কিছু মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে খালেক মজুমদার এর খোঁজ করেন। অবশেষে তাকে মালিবাগে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ধরা হয়। অভিযােগের প্রেক্ষিতে বিচারে প্রমাণিত হয় খালেক মজুমদার শহীদুল্লাহ কায়সারকে নির্যাতন ও হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ করেছিল। এই অপরাধে মাননীয় আদালত ১৭ই জুলাই’৭২ খালেক মজুমদারের ৭ বছরের জেল ও ১০,০০০ টাকা জরিমানা করে যেহেতু খালেক মজুমদারের সুনির্দিষ্ট অভিযােগের জন্য শাস্তি হয় তাই বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমায় সে মুক্তি পায়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সামরিক সরকার এক পর্যায়ে ক্ষমতা দখল করে। এই সরকার সামরিক ফরমানের মাধ্যমে ১৯৭২সালের দালাল আইন বাতিল করেন। ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশ কোলাবােরেটর্স অর্ডিন্যান্স নামে অভিহিত ফরমানে বলা হয়, “উক্ত আদেশটি বাতিল হওয়ায় কোন ট্রাইব্যুনাল, ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালত সমীপে এই আদেশ বাতিলের অব্যবহিত পূর্বে মূলতবি থাকা সমস্ত বিচারকার্য বা অন্যান্য মামলা এবং উক্ত আদেশ বলে কোন পুলিশ অফিসার বা অপর কোন কর্তৃপক্ষ দ্বারা বা সমীপে পরিচালিত সমস্ত তদন্তকার্য বা অন্যান্য মামলা বাতিল হয়ে যাবে এবং সেগুলাে আর চালানাে হবে।
।”সংবিধানের পঞ্চম সংশােধনীর মাধ্যমে উক্ত অধ্যাদেশ আইনে পরিণত হয়। ১৯৭২ সালের অধ্যাদেশের অধীনে যেসব ঘাতক-দালালের কারাদন্ড হয়েছিল কিংবা বিচার চলছিল, সামরিক সরকারের উক্ত অধ্যাদেশে তার অবসান হয়। লুণ্ঠন, অগ্নিসংযােগ, ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডে সাজাপ্রাপ্ত ও অভিযুক্ত রাজাকার, আলবদর ও অন্যান্য ঘাতক-দালালরা।
বেরিয়ে আসে কারাগার থেকে। ২৯শে এপ্রিল ১৯৭৬ সালে মুক্তিযােদ্ধা জিয়াউর রহমানের সময় হাইকোর্টে আপীল করে বেরিয়ে আসে খালেক মজুমদার ।। খালেক মজুমদার স্বাধীনতার চৌদ্দ বছর পর তার নিজের লেখা বই “শেকল পড়ার দিনগুলোতে “মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকা নিয়ে বিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছেন। সে তার বইতে আরাে জানিয়েছে অন্যান্য যুদ্ধাপরাধী যেমন মতিউর রহমান নিজামীকে সে চিনত। তার সাথে পরিচয় ছিল বুদ্ধিজীবী হত্যার রূপকার চৌধুরী মইনুদ্দিনের সাথে খালেক মজুমদার লিখেছে “যখন ৭ কোটি বাঙালি বিজয় উৎসব করছে, তখন জামায়াতের আমীর। আমাকে জামায়াতের অফিসে ডেকে নিয়ে বিজয়ের কথা বলে, আমি আমার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত ছিলাম, আমি স্থির থাকতে পারছিলাম না। আমাদের ভাগ্যাকাশের উজ্জ্বল। তারাটি হঠাৎ করে বিলীন হয়ে গেল।” (শিকল পড়ার দিনগুলি,পৃঃ১০)।
ডঃ সায়েদ সাজ্জাদ হােসেন
প্রফেসর সায়েদ সাজ্জাদ হােসেন মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথমদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। তারপর মে মাসে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত করা হয়। সাজ্জাদ হােসেন মূলত বাংলাদেশ বিরােধী, মুক্তিবাহিনী ও মুক্তিযুদ্ধবিরােধী প্রচার প্রচারণা, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তৎকালীন বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক বােঝানাের অপচেষ্টায় রত ছিলেন। সেই সাথে তার সহকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থান পাকবাহিনীকে জানিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যায় সহযােগিতা করেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত এক সংবাদে বলা, যুদ্ধচলাকালে সায়েদ সাজ্জাদ হােসেন বাংলাদেশের যুদ্ধবিরােধী প্রচারণা করার জণ্য যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ ভ্রমন করেন। ওই সময় লন্ডন টাইম লেখা একটি চিঠিতে সায়েদ সাজ্জাদ হােসেন লেখেন, বাংলাদেশে যা হচ্ছে বলা হচ্ছে তা ঠিক না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ শে মার্চের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দায়ী নয়, ওখানে ছাত্র-শিক্ষক পরস্পর বিরােধী সংঘর্ষে মারা গেছে। যখন এখানে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক, তার সহকর্মীদের মারা হচ্ছে তখন সায়েদ সাজ্জাদ হােসেন পা চাটছেন পাকিস্তানের, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর। সায়েদ সাজ্জাদ হােসেনের স্বাক্ষরযুক্ত একটি চিঠি ১০ জানুয়ারী ১৯৭২ দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত হয়, এটা সায়েদ সাজ্জাদ হােসেনের পাকিস্তান প্রীতির একটি উদাহরণ। সেখানে লেখা আছে লন্ডন অবস্থানকালে পাকিস্তানি দূতাবাস থেকে তাকে ভাতা প্রদান করা হবে, তা নিম্নরূপ: ১। 50% DA ২৪শেজুন থেকে ১ লা জুলাই পর্যন্ত দৈনিক ২৫.২৫ পাউন্ড ২। নগদ ১৫০ পাউন্ড ৩। হােটেল বিল পরে পরিশােধ করা হবে। বাংলাদেশে,পাকিস্তানের মুসলিম রাষ্ট্র ভাঙ্গার জন্য ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে ১৭ই মে ৫৫জন পাকিস্তানপন্থী বুদ্বিজীবীর যে যুক্তবিবৃতি প্রকাশিত হয়েছিল সেখানে সায়েদ সাজ্জাদ হােসেনের স্বাক্ষর ছিল অন্যতম। এই বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের কর্মীদের উচ্ছশৃঙ্খল বলে অভিযুক্ত করে বলা হয়, এরাই দায়ী স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত করার জন্য। আমরা তাদের আকাথা দেখে হতাশ। হয়েছি, আমরা কখনই চাইনি পাকিস্তান ভেঙ্গে যাক, আমরা এক পাকিস্তানের পক্ষেই আছি,এখন যা হচ্ছে এটা কখনই আমাদের কাম্য নয়।
চরমােনাইর পীর মওলানা এস এম ফজলুল করিম
মওলানা এস এম ফজলুল করিম বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে চরমােনাইয়ে একটি আবাসিক। মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাক হানাদারদের অত্যাচার ও নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য শত শত বাঙালি মেয়ে ওই মাদ্রাসায় আশ্রয় নেয়। তারা মনে করেছিল মাদ্রাসা একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আর মওলানা এসএম ফজলুল করিম। একজন ধার্মিক লােক, তার আশ্রয়ে পাক হানাদার বাহিনী মেয়েদের উপর চড়াও হবে না। মওলানা সাহেব তাদের রক্ষা করবেন। চরমােনাইর পীর ফতােয়া দিয়েছিলেন এইসব আশ্রয়হীনা ভীত মেয়েরা হচ্ছে গণিমতের মাল-পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর এদের ভােগ করা জায়েজ আছে। নৃশংসভাবে অত্যাচারিত এইসব মেয়েদের মৃতদেহ পার্শ্ববর্তী নদীতে ফেলে দেয়া হতাে বা মাদ্রাসার পেছনে গণকবরে পুঁতে ফেলা হতাে। এই মওলানা নিজ হাতে অনেক মুক্তিযােদ্ধা ও হিন্দুকে জবাই করে নদীতে ফেলে হিয়েছে। এদের মৃতদেহ যাতে ভেসে না। উঠে সেজন্য মৃতদেহের পেট কেটে ভাসিয়ে দেয়া হতাে।
মইনউদ্দিন চৌধুরী
মইনউদ্দিন চৌধুরী ছিল আলবদর আল শামস বাহিনীর প্রধান ঘাতক। বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী। মইনউদ্দিন চৌধুরী ও তার সহযােগীরা সারা টাকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে রায়ের বাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমিতে এনে হত্যা করে। মইনউদ্দিন চৌধুরী কোরবানীর পশু জবাই করার মতাে করে নিজ হাতে মানুষ হত্যা করতাে। আর হত্যা নিশ্চিত করতাে তার সাঙ্গপাঙ্গরা গুলি করে। তারই এক রাজাকার সঙ্গীর ভাষ্যমতে সে মইনউদ্দিন চৌধুরীকে বিজয়ের পর মুহূর্তে আলবদর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে টাকা ও হত্যার সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে যেতে দেখেছে। এই ঘৃণ্য ঘাতক এখন যুক্তরাজ্যের নাগরিক, লন্ডন থেকে প্রকাশিত জামায়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক দাওয়াত এর বিশেষ সম্পাদক। এই ঘৃণ্য ঘাতক প্রায়শই বাংলাদেশ ভ্রমণ করে।
আশরাফুজ্জামান খান
আশরাফুজ্জামান খান ছিল আলবদর ও আল শামস বাহিনীর অন্যতম প্রধান ঘাতক ও আলবদর বাহিনীর অন্যতম প্রধান। পাশাপাশি সে ছিল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। আশরাফুজ্জামান খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন শিক্ষককে সরাসরি হত্যায় অভিযুক্ত। জনৈক মফিজউদ্দিন যিনি এই সাতজন হতভাগ্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মিরপুর বধ্যভূমিতে বহনকারী গাড়ির চালক বলেছেন, তিনি ঘাতক আশরাফুজ্জামানকে নিজ হাতে এই হতভাগ্য শিক্ষকদের গুলি করে হত্যা করতে দেখেছেন। স্বাধীনতার পর তার ৩৫০, নাখালপাড়াস্থ বাসস্থান থেকে উদ্ধার করা ডায়রির দুটি পাতা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন শিক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বাসার ঠিকানা ও অন্যান্য বিবরণ পাওয়া যায়। এই বিশ জনের আটজনকে ১৪ই ডিসেম্বর থেকে পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে আছেন, মুনীর চৌধুরী (বাংলা বিভাগ),ডঃ আবুল খায়ের(ইতিহাস বিভাগ), গিয়াসউদ্দিন আহমেদ(ইতিহাস বিভাগ), রাশিদুল হাসান। (ইংরেজী বিভাগ), ডঃ ফজলুল মহী (আইইআর), ডাঃ মুরতজা (স্বাস্থ্য কর্মকর্তা)। মফিজউদ্দিন আরাে বলেন এই বরেণ্য শিক্ষকদের রায়ের বাজার ও মিরপুরের শিয়ালবাড়ী বধ্যভূমিতে ফেলা হয়। এই তালিকায় আরাে যাদের নাম ছিল তারা হচ্ছেন, ডঃ ওয়াকিল আহমেদ (বাংলা বিভাগ), ডঃ নীলিমা ইব্রাহিম (বাংলা বিভাগ), ডঃ লতিফ (আইইআর), ডঃ নুরুজ্জামান (ভূগােল বিভাগ), কে এম সাদউদ্দিন (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ), এএমএম শহীদুল্লা (গণিত বিভাগ), ডঃ সিরাজুল ইসলাম (ইসলামের ইতিহাস বিভাগ), ডঃ। আকতার আহমেদ (শিক্ষা বিভাগ), জহিরুল হক (সাইকোলজি বিভাগ), আহসানুল হক। (ইংরেজী বিভাগ), সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (ইংরেজী বিভাগ), কবীর চৌধুরী (ইংরেজী বিভাগ)। এছাড়াও আরাে অনেক শীর্ষস্থানীয় বাঙালিদের নাম লেখা ছিল যাদের অনেকেই বদর বাহিনীর হাতে নিহত হন। ডায়রির অন্য পাতাতে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন পাকিস্তানপন্থী শিক্ষকের নাম। এছাড়াও ছিল বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী মইনউদ্দিন চৌধুরী ও ঢাকা আলবদরের প্রধান শওকত ইমরানের নাম। আরেকটি ছােট কাগজে পাকিস্তান জুট বাের্ডের আব্দুল খালেকের নাম লেখা ছিল। ৯ই ডিসেম্বর ৭১ আলবদর বাহিনী আব্দুল খালেককে তার অফিস থেকে অপহরণ করে। তার
জীবনের বিনিময়ে ১০০০০ টাকা দাবি করা হয়। মিসেস খালেক ৪৫০ টাকা দেন এবং বাকি টাকা দেয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার পরও আব্দুল খালেককে আর ফিরে পাননি। এই আশরাফুজ্জামান আরাে কিছু সাংবাদিক অপহরণের সাথেও জড়িত, এদের মধ্যে আছেন দৈনিক পূর্বদেশ এর সাহিত্য সম্পাদক গােলাম মােস্তফা। আশরাফুজ্জামান খান স্বাধীনতার পর পাকিস্তান রেডিওতে যােগ দেন। সম্প্রতি তিনি নিউইয়র্কের কুইন্সস্থ ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা (আইসিএনএ) শাখার প্রধান হিসেবে যােগদান করেন।
গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরােধী অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ অথবা পরােক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক
নেতৃবৃন্দের তালিকা
যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযােগ এবং প্রমাণ রয়েছে তারা হল-( কেন্দ্রীয় তালিকা)
১.সৈয়দ খাজা খয়েরুদ্দিন
২. এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম
৩, অধ্যাপক গােলাম আযম
৪.মাহমুদ আলী আব্দুল জব্বার খদ্দর
৫.মওলানা সিদ্দিক আহমদ
৬. আবুল কাশেম
৮, মােহন মিয়া |
মওলানা সৈয়দ মােহাম্মদ মাসুম
আব্দুল মতিন।
১১. অধ্যাপক গােলাম সারােয়ার
পীর মােহসেন উদ্দিন
১৩. এএসএম সােলায়মান
এ. কে রফিকুল হােসেন
১৫. নুরুজ্জামান।
১৬. আতাউল হক খান
১৭. তােয়াহা বিন হাবিব
১৮. মেজর (অব:) আফসার উদ্দিন
১৯, দেওয়ান ওয়ারাসাত আলী এবং
২০.. হাকিম ইরতেজাউর রহমান খান
২১. আব্বাস আলী খান,
২২. জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মতিউর রহমান নিজামী, পিতা- খন্দকার লুর রহমান, গ্রাম-মন্মথপুর, পাে: বেড়া, সােনাতলা, থানা -সাঁথিয়া, পাবনা মােঃ কামরুজ্জামান, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল।
২৪. আব্দুল আলীম, যুদ্ধের সময় জয়পুরহাট শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিল। ২৫. মােহাম্মদ আয়েন উদ-দীন, পিতা-মৃত মাে: মইনুদ্দিন, গ্রাম+পােস্ট-শ্যামপুর,
থানা-মহিতারা, রাজশাহী ২৬. দেলােয়ার হােসেন সাঈদী, গ্রাম-সউতখালী, থানা-পিরােজপুর, পিরােজপুর
জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শুরার সদস্য ২৭. মওলানা আবদুল মান্নান, চাঁদপুর। ২৮. আনােয়ার জাহিদ, ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিষ্ট পার্টি ও ভাসানী ন্যাপের
অন্যতম নেতা, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দালাল ছিল। আবদুল কাদের মােল্লা, জামায়াতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক এ এস এম সােলায়মান, পিতা-মােঃ জোনাব আলী, গ্রাম-বৈদ্যের বাজার, পােঃ বৈদ্যের বাজার, থানা-সােনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ ফজলুল কাদের চৌধুরী-থানা-রাউজান, চট্টগ্রাম। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, পিতা- মৃত ফজলুল কাদের চৌধুরী, থানা-রাউজান, চট্টগ্রাম
মওলানা আব্দুস সােবহান, পিতা-মৃত নঈমুদ্দিন, মহল্লা-পাথরতলা, পাবনা ৩৪. মওলানা এ কে এম ইউসুফ, গ্রাম-রাজৈর, থানা- স্মরণখােলা, জেলা-বাগেরহাট ৩৫. আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি এবং আলবদর
বাহিনীর ঢাকা মহানগরীর প্রধান। ৩৬. এ বি এম খালেক মজুমদার, পিতা-আবদুল মজিদ মজুমদার, গ্রাম-দোহাড্ডা,
থানা-হাজিগঞ্জ, কুমিল্লা
এ
রাজাকার হাইকমান্ড
১. এ. এস, এম, জহুরুল হক, ডাইরেক্টর ২. মফিজ উদ্দিন ভূইয়া, এসিসটেন্ট ডাইরেক্টর ৩. এম, আই. মির্ধা, তমষা-ই-খিদমত, এসিসটেন্ট ডাইরেক্টর
এম. এ. হাসনাত, এসিসটেন্ট ডাইরেক্টর, সেন্ট্রাল রেঞ্জ। ফরিদ আহাম্মদ, ঢাকা শহর এডজুটেন্ট (বর্তমানে সৌদি আরবে বসবাসরত) মােহাম্মদ ইউনুছ, কমান্ডার ইন চিফ (বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের ডাইরেক্টর ও জামায়াত সুরার সদস্য) মীর কাসেম আলী, চট্টগ্রাম কমিটির প্রধান (নায়েব – ই – আমীর, মহানগর কমিটি)।
আল-বদর হাই কমান্ড
১. মতিউর রহমান নিজামী, সমগ্র পকিস্তানের প্রধান, (সাবেক মন্ত্রী ও আমীর,
জামায়াতে ইসলামী)। আলী আহসান মােহাম্মদ মুজাহিদ, পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান (সাবেক মন্ত্রী ও সেক্রেটারী জেনারেল জামায়াতে ইসলামী )। মীর কাশেম আলী, প্রধান চট্টগ্রাম, পরে ঢাকার ৩য় প্রধান (বর্তমানে ডাইরেক্টর
রাবেতা ই আলম ও সদস্য ইবনে সিনা ট্রাষ্ট)। | ৪.. মােহাম্মদ ইউনুছ, কমান্ডার ইন চিফ (বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের ডাইরেক্টর ও
জামায়াত সুরার সদস্য)। মােহাম্মদ কাজিমউদ্দিন, প্রধান, বদর বাহিনী কেন্দ্রীয় প্রচার (বর্তমানে সেক্রেটারী, জামায়াত ও এডিটর, সােনার বাংলা)। আসরাফ হােসেন, বদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও ময়মনসিংহ জেলার প্রধান। মােঃ শামসুল হক, ঢাকা শহরের প্রধান (বর্তমানে সদস্য মজলিশে সুরা,
জামায়াত)। ৮, মােস্তফা শওকত ইমাম।
আশরাফুজ্জামান খান, বুদ্ধিজীবী নিধন যজ্ঞের প্রধান জল্লাদ, বর্তমানে নিউইয়র্কে
বসবাসরত। ১০. এ. এস. এম. রুহুল কুদ্স, (বর্তমানে জামায়াতের মজলিশে শুরার সদস্য)। ১১. সরদার আব্দুস সালাম, প্রধান ঢাকা জেলা। ১২. খুররম মুরাদ, জামায়াতের আন্তর্জাতিক সমন্বয়কারী, লন্ডন।
আব্দুল বারী, জেলা প্রধান, জামালপুর। ১৪. আব্দুল হাই ফারুকী, জেলা প্রধান, রাজশাহী। ১৫. আব্দুল জাহের মােঃ নাসির, জেলা প্রধান, চট্টগ্রাম (পরবর্তীতে সৌদী দূতের
একান্ত কর্মকর্তা। ১৬. মতিউর রহমান খান, জেলা প্রধান, খুলনা (বর্তমানে সৌদি আরবে কর্মরত)। | ১৭, চৌধুরী মইনুদ্দিন, বুদ্ধিজীবী নিধন কর্মকান্ডের “অপারেশন ইনচার্জ (বর্তমানে
লন্ডনে জামায়াতের সক্রিয় নেতা)। ১৮. নূর মুহাম্মদ মল্লিক, ঢাকা শহরের নেতা। ১৯. এ কে মুহাম্মদ আলী, ঢাকা শহরের নেতা।
৯০
বিভাগওয়ারি তালিকা
ঢাকা বিভাগ
ময়মনসিংহ
রিয়াজ উদ্দিন-জামায়াত নেতা, ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ।
জামালপুর মওলানা আব্দুল বারী, সাং-গােবিন্দপুর, থানা-সরিষাবাড়ি, জামালপুর, জামায়াত নেতা।
শেরপুর
আনােয়ার হােসাইন অম্ভ, শেরপুর টাউন, শেরপুর । ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা।
নেত্রকোনা মওলানা ফজলুল করিম, সাং-বিসিউড়া, থানা-নেত্রকোনা সদর, নেত্রকোনা। জামায়াত নেতা।
নােয়াখালী জেলা ফজলে আজিম-জামায়াতে ইসলামীর নেতা। অধ্যাপক মহিউদ্দীন- জামায়াতে ইসলামীর নেতা।
মাগুরা জেলা রিজু-ইসলামী ছাত্রসংঘ কবির -ইসলামী ছাত্রসংঘ দালাল: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আসামী: ড. মতিয়ুর রহমান ড. ওয়াসিম ড. শরীফ আহমেদ সিদ্দিক প্যাটেল
নীলফামারী জেলা কাইয়ুম মুন্সী -জামায়াতে ইসলামীর নেতা মওলানা আবদুল কাইয়ুম-জামায়াতে ইসলামীর নেতা মতিন হাশমী -জামায়াতে ইসলামীর নেতা
অন্যান্য
১. মওলানা মােহাম্মদ উল্লাহ, (হাফেজ্জী হুজুর) সভাপতি, খেলাফত আন্দোলন, গ্রাম
সােহাগপুর, থানা-বেলকুচি, পাবনা
২.আখতার ফারুক, সম্পাদক, খেলাফত আন্দোলন, দৈনিক সংগ্রাম
৩. মওলানা মুফতী দীন মােহম্মদ খান, সম্পাদক জামিয়া ফোরকানীয়া
৪.মওলানা সিদ্দিক আহমদ, সভাপতি, জামেয়াতুল ওলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম।
৫. মওলানা মােস্তফা আল মাদানী, সহ- সভাপতি, জামেয়াতুল ওলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম।
৬. মওলানা আশরাফ আলী, সাধারণ সম্পাদক, জামেয়াতুল ওলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম মওলানা ইসহাক, কর্মকর্তা নেজামে ইসলাম মওলানা মােহাম্মদ ইউসুফ, অধ্য কাসেমুল উলুম মাদ্রাসা পটিয়া, চট্টগ্রাম মওলানা আজিজুর রহমান, সম্পাদক, হিজবুল্লা, শর্সিনা, বরিশাল
আব্দুল কাদের মােল্লা, সদস্য, ইসলামী ছাত্র সংঘ ১১. নুরুল ইসলাম, সভাপতি, ইসলামী ছাত্র সংঘ, পূর্ব পাকিস্তান
সৈয়দ শাহ জামাল চৌধুরী, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ, ঢাকা অধ্যাপক ওসমান রমজ, আমীর, জামায়াতে ইসলামী, চট্টগ্রাম শাখা
শফিকুল্লা, সম্পাদক, শ্রম ও সমাজ কল্যাণ, জামায়াতে ইসলামী ১৫. মওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহীম, সহ-সভাপতি, জামায়াতে ইসলামী, ১৬. অধ্যাপক গােলাম আজম, আমীর জামায়াতে ইসলামী, গ্রাম-বীরগাঁও, থানা
নবীনগর, কুমিল্লা ১৭. মােস্তফা শওকত ইমরান, সাধারণ সম্পাদক, ইসলামী ছাত্রসংঘ, ঢাকা শহর, ১৮. আ. ম. রুহুল কুদ্স, কেন্দ্রীয় কর্মকর্তা, জামায়াতে ইসলামী, গ্রাম-জায়গীরমহল,
থানা-পাইকপাড়া, খুলনা, মাহবুবুর রহমান গুরহা, সদস্য, জামায়াতে ইসলামী
এনামুল হক মঞ্জু, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ, চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ২১.. আবু নাসের, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ, চট্টগ্রাম জেলা ২২. আজহারুল ইসলাম, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ, রাজশাহী জেলা
সরদার আব্দুস সালাম, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ, ঢাকা জেলা
২৪. মীর আবুল কাসেম, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ, পূর্ব পাকিস্তান
২৫. আব্দুল বারী, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ, জামালপুর জেলা
২৬. মতিউর রহমান খান, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ, খুলনা জেলা
মােহাম্মদ ইউসুফ, সেক্রেটারি জেনারেল, ইসলামী ছাত্রসংঘ। মাহমুদ আলী, সহ-সভাপতি, পাকিস্তান ডেমােক্রেটিক পার্টি, সুনামগঞ্জ ফরিদ আহমেদ, সহ-সভাপতি, পাকিস্তান ডেমােক্রেটিক পার্টি। মওলানা আব্দুল জব্বার, সহ-সভাপতি, পাকিস্তান ডেমােক্রেটিক পার্টি, গ্রাম-গনক, থানা-সােনাগাজী, ফেনী। নুরুল আমিন, সহ-সভাপতি, পাকিস্তান ডেমােক্রেটিক পার্টি, গ্রাম-বাহাদুরপুর, থানা নান্দাইল, ময়মনসিংহ
আবু জাফর মােহাম্মদ সালেহ, পীর শর্সিনা, গ্রাম-শর্সিনা, বরিশাল ৩৩. ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হােসেন, উপাচার্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জোহরা মঞ্জিল,
নাজিম উদ্দিন রােড, ঢাকা। ৩৪. ড. আব্দুল বারী, উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৩৫. মশিয়ুর রহমান (যাদু মিয়া), রংপুর। ৩৬. ড. মােস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৩৭. ড. হাসান জামান, অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৩৮. ড. মােহর আলী, রিডার, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৩৯, হাফেজ মকবুল আহমেদ, চট্টগ্রাম ৪০. চৌধুরী মঈন উদ্দিন, চট্টগ্রাম ৪১. আশরাফুজ্জামান খান- চট্টগ্রাম ৪২. ড. হাবিবুল্লা, অধ্যাপক, শিক্ষা গবেষণা ইন্সটিটিউটিস, ঢাকা ‘৪৩, মওলানা নূর আহমেদ, সম্পাদক, দাওতুল হক ৪৪.. মওলানা আব্দুল মান্নান, সভাপতি, মােদারেসিন, গ্রাম-কেরােয়া, থানা-ফরিদগঞ্জ,
চাঁদপুর ৪৫. এটিএম মতিন, গ্রাম-আশ্বিনপুর, থানা-মতলব, কুমিল্লা
ঢাকা বিভাগ
ময়মনসিংহ ১. মাে: আব্দুল হান্নান, গ্রাম-নতুন বাজার, ময়মনসিংহ- মুসলিম লীগ নেতা ছিল,
বর্তমানে জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত আছেন। আমান উল্লাহ চৌধুরী, গ্রাম-ধামইর, থানা-ভালুকা, ময়মনসিংহ-মুসলীম লীগ। নেতা ছিল। মৃত আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, (চাঁন মিয়া) থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ। মুসলীম লীগের প্রভাবশালী নেতা। মফিজ উদ্দিন চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির সভাপতি- থানা-গফরগাঁও, জেলাময়মনসিংহ (মুসলীম লীগ)। আব্দুল জলিল মিয়া-মুসলিম লীগ নেতা, সাবেক এমপি, থানা হালুয়াঘাট,
ময়মনসিংহ (মুসলীম লীগ) | আব্দুল জলিল মিয়া-মুসলিম লীগ, ফুলপুর
রাজশাহী বিভাগ
রাজশাহী জেলা আয়েন উদ্দীন- মুসলিম লীগের সদস্য
লালমনিরহাট জেলা মহসিন ডাক্তার মুসলিম লীগ শহীদ আলী- মুসলিম লীগ। মােশারফ মাস্টার মুসলিম লীগ
চট্টগ্রাম বিভাগ
চট্টগ্রাম জেলা ফজলুল কাদের চৌধুরী-মুসলিম লীগ। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী-মুসলীম লীগ ওহিদুল আলম মুসলীম লীগ আলী আহম্মদ টিকে মুসলীম লীগ
নােয়াখালী জেলা
অপরাধী: মুনীর-শান্তি কমিটির সেক্রেটারি ফজলে আজিম-জামায়াতে ইসলামীর নেতা অধ্যাপক মহিউদ্দীন- জামায়াতে ইসলামীর নেতা
অন্যান্য
১. ফজলুল কাদের চৌধুরী, সভাপতি, মুসলিম লীগ, গুড সাহেবের পাহাড়, চট্টগ্রাম, ২. এ এনএম ইউসুফ, সাধারণ সম্পাদক মুসলিম লীগ, গ্রাম-দাদপাড়া, থানা
কুলাউড়া, সিলেট শামছুল হুদা, সভাপতি, মুসলিম লীগ- ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, গুডস হিল, রহমতগঞ্জ, চট্টগ্রাম কে, জি, করিম, সাধারণ সম্পাদক, মুসলিম ছাত্র লীগ। আতাউল হক খান, সাধারণ যুগ্ম সম্পাদক, প্রাদেশিক মুসলিম লীগ
এ কে এম মুজিবুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক, মুসলিম লীগ ৮, সাদ আহমেদ, সভাপতি কুষ্টিয়া জেলা, মুসলিম লীগ।
আবুল কাশেম, সাধারণ সম্পাদক, মুসলিম লীগ, উলিপুর, কুড়িগ্রাম এডভােকেট মজিবর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য, মুসলিম লীগ (কাইয়ুম), কুমিল্লা আব্দুল আলীম, কর্মকর্তা মুসলিম লীগ, গ্রাম, থানা+ জয়পুরহাট
নূরুল আনােয়ার, কর্মকর্তা, মুসলিম লীগ, চট্টগ্রাম, ১৩. ইউসুফ আলী চৌধুরী, সদস্য, মুসলিম লীগ।
সূত্র: একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরােধী অপরাধ ও গণহত্যা সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের তালিকা- তা, এম এ হাসান, আহ্বায়ক, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি,টুথ কমিশন ফর জেনােনাসাইড ইন বাংলাদেশ। ফোন: ৮৯১৪৫০৬, ফ্যাক্স: ৮৯১৩৮১৯, মাে: ০১৮১৭০০৭৯২১
৯৫
রাজাকারদের তালিকা
ঢাকা বিভাগ ঢাকা জেলা
১. রাজাকার আকবর- শাঁখারী বাজার, ঢাকা
২.রাজাকার তােতা মিয়া- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩. রাজাকার ঈমান আলী- রায়েরবাজার, ঢাকা
৪. রাজাকার হেদায়েত উল্লাহ (মৃত)- রায়েরবাজার, ঢাকা
গাজীপুর জেলা
১. রাজাকার আলাউদ্দীন-গ্রাম-মুদাফা, থানা-টঙ্গী, গাজীপুর
রাজাকার আওয়াল- জয়দেবপুর, গাজীপুর রাজাকার এমপি নওয়াব আলী- জয়দেবপুর, গাজীপুর রাজাকার হাকিম উদ্দীন- মাধববাড়ি, জয়দেবপুর, গাজীপুর রাজাকার মজিব- মাধববাড়ি, জয়দেবপুর, গাজীপুর রাজাকার মনু- মাধববাড়ি, জয়দেবপুর, গাজীপুর
টাঙ্গাইল জেলা
১. রাজাকার আনিস-ছাব্বিশা, ভূয়াপুর, টাঙ্গাইল
রাজাকার সাজু-কালামাঝি, মধুপুর, টাঙ্গাইল রাজাকার মওলানা লুৎফর- কালামাঝি, মধুপুর, টাঙ্গাইল রাজাকার শাজাহান- কালামাঝি, মধুপুর, টাঙ্গাইল রাজাকার রশীদ- কালামাঝি, মধুপুর, টাঙ্গাইল রাজাকার সামাদ- কালামাঝি, মধুপুর, টাঙ্গাইল রাজাকার দুদু মিয়া- কালামাঝি, মধুপুর, টাঙ্গাইল। রাজাকার মনসুর- মধুপুর, টাঙ্গাইল রাজাকার আকবর (মৃত)- মধুপুর, টাঙ্গাইল রাজাকার মাহেবুল- মির্জাপুর, টাঙ্গাইল
রাজাকার মওলানা ওয়াদুদ- মির্জাপুর, টাঙ্গাইল ১২.। রাজাকার মকবুল হােসেন-ছাব্বিশা, ভূয়াপুর, টাঙ্গাইল ১৩. রাজাকার রফিকুছাব্বিশা, ভূয়াপুর, টাঙ্গাইল ১৪. মওলানা আশরাফ আলী-ছাব্বিশা, ভূয়াপুর, টাঙ্গাইল
ময়মনসিংহ জেলা ও ময়মনসিংহ সদর
১. মরহুম ভূলামিয়া- হেজবুল্লাহ রােড,ট্রাকপট্টি, ময়মনসিংহ
২. রাজাকার মুন্সেফ মিয়া।
৩. রাজাকার তৈয়ব।
৪. রাজাকার চেয়ারম্যান জোবেদ ফকির।
৫. রাজাকার আমির খান।
৬. রাজাকার রজব আলী ফকির।
৭. রাজাকার আবু বকর।
৮. রাজাকার আবু বকর সিদ্দিক।
৯. রাজাকার আবুল চেয়ারম্যান
১০. রাজাকার শুকুর।
১১. রাজাকার কফিল উদ্দিন
১২. রাজাকার আব্দুল হান্নান
১৩. রাজাকার আহম্মদ আলী
১৪, রাজাকার আমছর উদ্দিন
১৫. রাজাকার আরমান
১৬.. রাজাকার বংগা।
১৭. রাজাকার খলিল
১৮, রাজাকার আজিম উদ্দিন
নান্দাইল
১. রাজাকার আব্দুল গফুর- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
২. রাজাকার আঃ মতিন ভূঁইয়া- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ রাজাকার জসিমউদ্দিন ভূঁইয়া- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ রাজাকার শাহেদ আলী- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ রাজাকার আবদুল কুদ্স- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
রাজাকার আবদুল মন্নাফ- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ ৭. রাজাকার খােরশেদ খান- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
রাজাকার ইসমাইল হােসেন- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
রাজাকার সিদ্দিক- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ। ১০. রাজাকার হাফিজুদ্দিন- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
রাজাকার খলিলুর রহমান- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
ফুলপুর থানা
১. রাজাকার আবুল চেয়ারম্যান, সাং-বাশাটি, ১ নং ছনধরা ইউনিয়ন, থানা-ফুলপুর,
জেলা-ময়মনসিংহ রাজাকার শুকুর, সাং-বাশাটি, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ।
রাজাকার কফিল উদ্দিন, সাং- ছনধরা, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ৪.. রাজাকার আরমান, সাং ছনধরা, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ
রাজাকার বংগা, সাং ছনধরা, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ। রাজাকার খলিল, সাং-ছনধরা, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ রাজাকার আব্দুল হান্নান, সাং ছনধরা, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ
রাজাকার আহম্মদ আলী, সাং-লাউয়ারী, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ৯. রাজাকার আমছর উদ্দিন, সাং ছনধর, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ১০. রাজাকার আজিম উদ্দিন, সাং লাউয়ারী, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ১১. রাজাকার একেএম শামসুল হুদা, গােদারিয়া স্পেশাল রাজাকার কমান্ডার ১২. রাজাকার একেএম রফিকুল হুদা, মুন মিয়া, মৃত, গােদারিয়া
রাজাকার জবেদ ফকির, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ১৪. রাজাকার আঃ রশিদ, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ১৫. রাজাকার আঃ আজিজ, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ
রাজাকার আঃ আজিজ সরকার রূপসী, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ১৭.. রাজাকার হারেজ আলী পুলিশ ফুলপুর থানা, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ১৮, রাজাকার আবু বক্কর, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ। ১৯. রাজাকার আ: মােতালেব, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ
রাজাকার আনসার মােতালেব, কাকনী, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ রাজাকার আফতাব আলী চেয়ারম্যান মৃত, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ রাজাকার মৃত আইয়ুব আলী, গ্রাম-বাঁশটি, দালাল আইনে মৃত্যদন্ডপ্রাপ্ত অপরাধী, থানা-ফুলপুর রাজাকার মওলানা এরশাদ উল্লাহ, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ।
রাজাকার মওলানা আবুল কাশেম বালিয়া, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ২৫. রাজাকার আবুল কাশেম কাতুলী, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ। ২৬, রাজাকার ওমর আলী খাঁ, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ২৭. রাজাকার অধ্যাপক রফিক উদ্দিন, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ২৮, রাজাকার মওলানা দৌলত আলী মৃত, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ
২৯, রাজাকার কুখ্যাত বশিরউদ্দীন ওরফে (বশির মেকার) বালিয়া, থানা-ফুলপুর,
জেলা-ময়মনসিংহ ৩০, রাজাকার মােঃ হারুন অর রশিদ, স্বাস্থ্য সহকারী পরিদর্শক, থানা-ফুলপুর, জেলা
ময়মনসিংহ ৩১. রাজাকার গােলাম মুর্তজা, বালিয়াগুথানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ৩২. রাজাকার এটিএম মােস্তফা, বালিয়া, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ
রাজাকার আঃ মােতালেব, আমুয়াকান্দা, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ৩৪, | রাজাকার মৃত আফরােজ, আমুয়াকান্দা, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ৩৫. রাজাকার আঃ কুদ্স, আমুয়াকান্দা, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ৩৬. রাজাকার মমিন উদ্দিন তালুকদার, নলদিঘী, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ৩৭. রাজাকার একেএম রফিকুল হুদা, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ৩৮, রাজাকার মুনমিয়া, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ৩৯. রাজাকার জৈমত চেয়ারম্যান, চরপাড়া, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ৪০. রাজাকার হাফিজ উদ্দিন চরপাড়া, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ৪১. রাজাকার হাফিজ উদ্দিন বিএসসি গােদারিয়া, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ৪২. রাজাকার আজম আলী চেয়ারম্যান, ইমাদপুর, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ৪৩, রাজাকার জোনাব আলী চেয়ারম্যান, রাইমগঞ্জ, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ ৪৪. রাজাকার শাসছুল হক ওরফে হক চেয়ারম্যান, চরশাশাঘাট, থানা-ফুলপুর, জেলা
ময়মনসিংহ ৪৫. রাজাকার চেয়ারম্যান জোবেদ ফকির- ফুলপুর থানা, ময়মনসিংহ ৪৬, রাজাকার আমির খান- ফুলপুর থানা, ময়মনসিংহ ৪৭. রাজাকার রজব আলী ফকির, ফুলপুর থানা, ময়মনসিংহ ৪৮, রাজাকার আবু বকর সিদ্দিক- ফুলপুর থানা, ময়মনসিংহ। ৪৯, রাজাকার মুন্সেফ মিয়া- ফুলপুর থানা, ময়মনসিংহ। ৫০. রাজাকার তৈয়ব- ফুলপুর থানা, ময়মনসিংহ। ৫১. রাজাকার আঃ আজিজ, থানা-ফুলপুর, জেলা-ময়মনসিংহ
হালুয়াঘাট থানা
রাজাকার মাে: শামছুল ইসলাম (শামসু খলিফা), থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ রাজাকার তাজী মামুদ, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ। রাজাকার মােঃ মােফাজ্জল হােসেন খাঁ, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ রাজাকার মােঃ আব্দুল কাশেম সিকদার, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ রাজাকার মােঃ রুহুল আমিন, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
৬. রাজাকার হযরত আলী, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
৭. রাজাকার সাইফুর ইসলাম (ভেন্ডার ও দলিল লেখক), থানা-হালুয়াঘাট,
ময়মনসিংহ। ৮. রাজাকার আমীর আলী, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
রাজাকার সুলতান খা, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ ১০. রাজাকার মােঃ আবুল কাশেম সিকদার, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ ১১. রাজাকার কমান্ডার আজিজুল ইসলাম, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
রাজাকার আব্দুল হাই, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ ১৩. রাজাকার-মওলানা দৌলত আলী, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
রাজাকার-মওলানা গিয়াস উদ্দিন, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ রাজাকার-বসির মেকার, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ।
রাজাকার-রজব আলী ফকির, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ ১৭. রাজাকার-আলী হােসেন, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ ১৮, রাজাকার-মােঃ হরমুজ আলী, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
রাজাকার-মােঃ মােফাজ্জল হােসেন খাঁ, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ ২০. রাজাকার-রমজান আলী, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ ২১. রাজাকার-আকরাম হােসেন, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ।
রাজাকার-সুলতান খাঁ সাং-উত্তর খয়ড়াকুড়ি, থানা-হালুয়াঘাট ২৩, রাজাকার-মােসলেম খলিফা সাং- উত্তর খয়রাকুড়ি, থানা-হালুয়াঘাট ২৪, রাজাকার-মােঃ আবুল কাশেম সিকদার, সাং-বালিপাড়া, থানা-হালুয়াঘাট,
ময়মনসিংহ ২৫, রাজাকার-মােঃ আজিজুল ইসলাম, সাং-কতলমারি, পােঃ-গাজীরভিটা, থানা
হালুয়াঘাট রাজাকার-মােঃ হরমুজ আলী, পিতা- মৃত গেন্দু শেখ, সাং-লামুক্তা, পােঃগাজিরভিটা
রাজাকার-রিয়াজ উদ্দিন (মৃত), সাং-মনিড়া, পােঃ + থানা-হালুয়াঘাট ২৮, রাজাকার-দেওয়ান, পােঃ + থানা-হালুয়াঘাট ২৯, রাজাকার-আলী, পােঃ + থানা-হালুয়াঘাট ৩০, রাজাকার-আবু, পােঃ + থানা-হালুয়াঘাট ৩১, রাজাকার-সাইফুল ইসলাম ভেন্ডার (মৃত) সাং-সুমনিয়াপাড়া, থানা-হালুয়াঘাট। | ৩২. রাজাকার-আঃ হেকিম (মৃত) সাং-মনিকুড়া, থানা-হালুয়াঘাট। ৩৩. রাজাকার-নুরুল ইসলাম (নুরু) সাং-তেলিখালী, থানা-হালুয়াঘাট ।
১০০
৩৪. রাজাকার-আঃ মতিন, পিতা মৃত আরফান আলী মুন্সী, সাং-ইসলামপুর, থানা
হালুয়াঘাট। রাজাকার-রমজান আলী, পিতা মৃত ওয়াহেদ আলী, সাং-ইসলামপুর, থানা
হালুয়াঘাট। ৩৬.. রাজাকার-আকরাম হােসেন, পিতা মৃত-মফিজউদ্দিন মুন্সী, সাং-ইসলামপুর, থানা
হালুয়াঘাট। ৩৭. রাজাকার-আব্দুল বারেক (মৃত), পিতা- চান্দু মিয়া, সাং-ইসলামপুর, থানা
হালুয়াঘাট। ৩৮. রাজাকার-হেদায়েত উল্লাহ, সাং-ইসলামপুর, থানা-হালুয়াঘাট। ৩৯, রাজাকার-মােঃ আব্দুল হাই, সাং-ভূবনকুড়া, থানা-হালুয়াঘাট ৪০. রাজাকার-সৈয়দ মহাজী, সাং-দারিণগুয়া, থানা-হালুয়াঘাট। ৪১. রাজাকার-মােঃ শামছুল ইসলাম খলিফা, সাং-বীরগুছিনা পােঃ ধারাবাজার, থানা।
হালুয়াঘাট। ৪২.. রাজাকার-তােজীমাসুদ, পিতা-জয়দরগট, সাং-মাঝিয়ালী, পােঃ-ধারাবাজার, থানা
হালুয়াঘাট। ৪৩, রাজাকার-মীর হােসেন, পিতা (মৃত), ফেলি শেখ, সাং-মাঝিয়ালী, পােঃ
ধারাবাজার, রাজাকার-মােঃ মােফাজ্জল হােসেন খাঁ, পিতা-আরমান আলী খাঁ, সাং-মাঝিয়ালী,
থানা-হালুয়াঘাট। ৪৫. রাজাকার-আমজাদ আলী, পিতা-তাসির উদ্দিন, সাং-ধারা, পােঃ-ধারাবাজার,
থানা-হালুয়াঘাট।
রাজাকার-হারেজ আলী, পিতা-হাসেন আলী, সাং-ধারা, থানা-হালুয়াঘাট। ৪৭, রাজাকার-আরেজ আলী, পিতা-কিওতা শেখ, সাং-ধারা, থানা-হালুয়াঘাট । ৪৮, রাজাকার-সামছু (মৃত), পিতা-জারু শেখ, সাং-ধারা, থানা-হালুয়াঘাট। ৪৯, রাজাকার-শরাফ উদ্দিন, পিতা-ফটিক খাঁ, সাং-মাঝিয়ালী, পােঃ-ধারা বাজার,
থানা-হালুয়াঘাট। ৫০. রাজাকার-আরমান, পিতা-লহরখাঁ, সাং-মাঝিয়ালী, থানা-হালুয়াঘাট।
রাজাকার-আমির, সাং-সংরা, পােঃ-বাঘাইতলা, থানা-হালুয়াঘাট। রাজাকার-আজমত আলী, পিতা-তাসিরউদ্দিন, সাং-ধারা বাজার,
রাজাকার-হারেজ আলী, পিতা-হাসেন আলী, সাং-ধারা, ৫৪. রাজাকার-মারেজ আলী, পিতা-কিওতা শেখ, সাং-ধারা, ৫৫. রাজাকার-সামছু, মৃত পিতা- জারু শেখ, সাং-ধারা,
,
৫৬. রাজাকার-আব্দুর রউফ (ঠান্ডু ড্রাইভার) পিতা-মৃত কনে পিরন, সাং-দরিনগুয়া,
পােঃ ধারাবাজার ।। ৫৭.
রাজাকার- মােঃ আব্দুল বারেক, পিতা-হাজী মােঃ খালেক, সাং-কয়রাহাটি
(লালারপাড়) আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকার সময় সভাপতি ছিল। | ৫৮. রাজাকার-মােঃ আজিজুল ইসলাম, সাং-কাতলমারী, পােঃ-গাজীরভিটা, থানা
হালুয়ঘাট।
গফরগাঁও থানা ১. রাজাকার মাে: বাবুল হােসেন, পিতা-মৃত মফিজ উদ্দিন, গ্রাম-চরমছলন্দ, থানা
গফরগাঁও, | ২. রাজাকার মাে: শাহজাহান, পিতা-মৃত হজরত আলী, গ্রাম-সালটিয়া, থানা
গফরগাঁও, ৩. রাজাকার মাে: নূরুল হক খান, গ্রাম-পাতলাশী, থানা-গফরগাঁও, জেলা
ময়মনসিংহ। রাজাকার মৃত বাকু মেম্বার, পিতা-ছমির উদ্দিন, গ্রাম-পাতলাশী, থানা-গফরগাঁও, জেলা-ময়মনসিংহ। রাজাকার আব্দুল মজিদ, পিতা-মৃত আমীর উদ্দিন, গ্রাম-নিগুয়ারী, থানা-গফরগাঁও, রাজাকার মৃত আব্দুল হেলিম মন্ডল, গ্রাম-কললী, থানা গফরগাঁও, জেলাময়মনসিংহ। রাজাকার আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল, গ্রাম-কলনী, থানা-গফরগাঁও, জেলা-ময়মনসিংহ। রাজাকার মৃত ওয়াহেদ আলী প্রধান, গাম-অললী, থানা-গফরগাঁও, জেলাময়মনসিংহ। রাজাকার মৃত আব্দুল হেলিম খান, গ্রাম-চাকুয়া, থানা-গফরগাঁও, জেলাময়মনসিংহ। রাজাকার মৃত তাজুল ইসলাম, গ্রাম-অললী, থানা-গফরগাঁও, জেলা-ময়মনসিংহ। রাজাকার মৃত আব্দুস সামাদ মাস্টার, সাং- অললী, শিক্ষক, থানা-গফরগাঁও,
জেলা-ময়মনসিংহ। ১২. রাজাকার মৃত সিরাজ উদ্দিন আকন্দ, পিতা-আব্দুল বারেক আকন্দ, গ্রাম
পাতলাশী, থানা-গফরগাঁও। ১৩, রাজাকার আবুল কালাম, গ্রাম-সাদুয়া, থানা-গফরগাঁও, জেলা-ময়মনসিংহ। ১৪. রাজাকার মওলানা আব্দুল জব্বার, গ্রাম-চাকুয়া, থানা-গফরগাঁও, জেলা
ময়মনসিংহ।
মুক্তাগাছা থানা
১. রাজাকার-মৌলভী মনিরুজ্জামান, আর কে উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক।
রাজাকার-সুরুজ, গ্রাম-পাড়াটংগী, থানা-মুক্তাগাছা, জেলা-ময়মনসিংহ। রাজাকার-চাঁনু, গ্রাম-পাড়াটংগী, থানা-মুক্তাগাছা, জেলা-ময়মনসিংহ রাজাকার-এ এম ইজহারুল হক মাস্টার, আর কে উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক রাজাকার-ক্বারী আব্দুল কাদের, গ্রাম-দামপাড়া রাজাকার-মানিক চৌধুরী, গ্রাম-মানকোন রাজাকার-মাে: আনছার উদ্দিন মাস্টার, পিতা- বাসু ফকির, গ্রাম-নন্দীবাড়ি রাজাকার-হেলাল উদ্দিন, পিতা-মৃত জালাল উদ্দিন, গ্রাম-কুমারসাতা রাজাকার-আজিজুল হক, পিতা-মৃত আব্দুল জব্বার, গ্রাম-কুমারসাতা।
রাজাকার-দানেশ আলী, গ্রাম-ঘােষবাড়ি। ১১. রাজাকার ডা. শামসুল আলম (আক্কেল আলী), গ্রাম-গােয়ারী, থানা-মুক্তাগাছা,
জেলা-ময়মনসিংহ ১২. রাজাকার-আব্দুস সাত্তার, গ্রাম-সােনারগাঁ, থানা-মুক্তাগাছা, জেলা-ময়মনসিংহ।
রাজাকার-আলতাফ আলী (আলতা) গ্রাম-বেজবাড়ি, থানা-মুক্তাগাছা, জেলাময়মনসিংহ। রাজাকার-মৃত আব্দুল হাই মৌলভী, গ্রাম-মহিষতারা, থানা-মুক্তাগাছা, জেলাময়মনসিংহ। রাজাকার- মৃত আবেদ আলী, গ্রাম-মহিষতারা, থানা-মুক্তাগাছা, জেলাময়মনসিংহ। রাজাকার- জুলু, পিতা-মৃত আব্দুস সাত্তার, গ্রাম-লিচুতলা, থানা-মুক্তাগাছা, জেলা
ময়মনসিংহ। ১৭. রাজাকার- মােঃ আবুল বাশার (বাসায়েত), গাম-লিচুতলা, থানা-মুক্তাগাছা, জেলা
ময়মনসিংহ
রাজাকার- আবু হানিফা, গ্রাম-মহিষতারা, থানা-মুক্তাগাছা, জেলা-ময়মনসিংহ ১৯, রাজাকার – মােঃ চাঁন মিয়া, গাম-তারটি, থানা-মুক্তাগাছা, জেলা-ময়মনসিংহ
ফুলবাড়িয়া থানা
১. রাজাকারের চীফ কমান্ডার- হাজী আজমত হােসেন, থানা-ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ ২. রাজাকার- মৃত আব্দুস সাত্তার মাস্টার, গ্রাম-চাঁদপুর, থানা-ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ ৩. রাজাকার- মৃত হাসেন আলী, গ্রাম-জোরবাড়িয়া, থানা-ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ ৪. রাজাকার- মৃত নৈমদ্দিন, গ্রাম-ফুলবাড়িয়া, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ
৫. রাজাকার- মােঃ কলিম উদ্দিন, গ্রাম- ফুলবাড়িয়া, থানা- ফুলবাড়িয়া, জেলা ময়মনসিংহ
৬. রাজাকার- মােঃ কলিম উদ্দিন, গ্রাম- ফুলবাড়িয়া, থানা- ফুলবাড়িয়া, জেলাময়মনসিংহ রাজাকার- মৃত আফসার উদ্দিন, গ্রাম-ফুলবাড়িয়া, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা
ময়মনসিংহ ৮, রাজাকার- নৈমুদ্দিন, গ্রাম-ভালুকা, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ
রাজাকার- মােঃ নুরুল ইসলাম, পিতা-নৈমুদ্দিন, গ্রাম-ভালুকা, থানা-ফুলবাড়িয়া, | ১০. রাজাকার- মােঃ হাবিবুর রহমান (হবি) গ্রাম-ভালুকা, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা
ময়মনসিংহ। ১১. রাজাকার- মােঃ কলিম উদ্দিন, গ্রাম-কোশমাইল, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা
ময়মনসিংহ ১২. রাজাকার- মৃত নুরুল আমিন, গ্রাম-কোশমাইল, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা
ময়মনসিংহ ১৩, রাজাকার- হাজী আজমত হােসেন, গ্রাম-পলাশিহাটা, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা
ময়মনসিংহ। ১৪. রাজাকার- মৃত হাতেম আলী, গ্রাম-নাওগাঁও, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ
রাজাকার- ডা. আবুল হােসেন, গ্রাম-ফুলবাড়িয়া, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা
ময়মনসিংহ ১৬. রাজাকার- মৃত কাসুমিয়া, গ্রাম-নাওগাঁও, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ ১৭.. রাজাকার- চান্দু মিয়া, গ্রাম-নাওগাঁও, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ। ১৮.. রাজাকার- আব্দুল খালেক, গ্রাম-নাওগাঁও, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ ১৯, রাজাকার- মােঃ শহিদুল্লাহ মন্ডল, গ্রাম-নাওগাঁও, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা
ময়মনসিংহ। ২০. রাজাকার- মােঃ আব্দুস কুদ্স, গ্রাম-নাওগাঁও, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ ২১. রাজাকার- সিরাজ আলী, গ্রাম-বাদিহাটি, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ। ২২. রাজাকার-চান্দু, পিতা-হাজী ইমান আলী, গ্রাম-নামাশী, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা
ময়মনসিংহ রাজাকার- মৃত আ: হাই, গ্রাম-নিশ্চিতপুর, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ রাজাকার- মােঃ আঃ খালেক, গ্রাম-নিশ্চিতপুর, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা
ময়মনসিংহ ২৫. রাজাকার- মৃত শাহান আলী, গ্রাম-নিশ্চিতপুর, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা
ময়মনসিংহ
২৬. রাজাকার- হাজা ডাকাত (আজাহার), গ্রাম-নিশ্চিতপুর, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা
ময়মনসিংহ ২৭. রাজাকার- আ: সালাম, গ্রাম-নিশ্চিতপুর, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ ২৮. রাজাকার- নুরু ডাকাত, গ্রাম-নিশ্চিতপুর, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ ২৯. রাজাকার- মওলানা আব্দুস সামাদ, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ। ৩০. রাজাকার- মােঃ আব্দুস সামাদ, গ্রাম-দণিপাড়া, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা
ময়মনসিংহ | ৩১. রাজাকার- মােঃ আশরাফ আলী, গ্রাম-দক্ষিণপাড়া, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা
ময়মনসিংহ। রাজাকার- মােঃ মালেক মুন্সী, গ্রাম-নাওগাঁও, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ রাজাকার- মােবারক আলী মগা গ্রাম- নাওগাঁও, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলাময়মনসিংহ
রাজাকার- মােহাম্মদ আলী, গ্রাম- বাদিহাটি, থানা- ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ | ৩৫. রাজাকার- আহাদ উল্লাহ, পিতা-কামিনী মন্ডল, গ্রাম-নাওগাঁও, থানা-ফুলবাড়িয়া,
জেলা- ময়মনসিংহ রাজাকার- সৈয়ত উদ্দিন ড্রাইভার, গ্রাম-ফুলবাড়িয়া, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলাময়মনসিংহ।
৩৪,
ভালুকা থানা ১. রাজাকার মৃত আতিক উল্লাহ চৌধুরী (ধনু মিয়া), গ্রাম-ধামইর, থানা-ভালুকা,
ময়মনসিংহ রাজাকার মৃত বেলা খা, গ্রাম- মেদুয়ারী, থানা-ভালুকা রাজাকার মােঃ মােস্তাফিজুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান, সাং-খারুয়ারী, থানা
ভালুকা, ৪. রাজাকার মােঃ আব্দুল হামিদ কারী, গ্রাম-সাতেংগা, থানা-ভালুকা, জেলা
ময়মনসিংহ রাজাকার আবুল হাশেম, থানা-ভালুকা, ময়মনসিংহ। ভালুকা থানা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক রাজাকার হেলাল উদ্দিন মন্ডল, পিতা-মােজাম্মেল হক, থানা-ভালুকা, জেলা
ময়মনসিংহ | ৭. রাজাকার শামসুল হক ফকির, পিতা-মেহের আলী ফকির, গ্রাম-খারুয়ারী, থানা
ভালুকা | ৮. রাজাকার থােকন মেম্বার, গ্রাম-ভালুকা, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ
১০৫
৯. রাজাকার মােঃ নজরুল ইসলাম মাস্টার (কানকাটা), থানা-ভালুকা, জেলা
ময়মনসিংহ। ১০, রাজাকার মৃত আব্দুল মান্নান (কানকাটা), থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ১১. রাজাকার মাে: আব্দুল মজিদ শেখ (কানকাটা), থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ১২. রাজাকার আব্দুল লতিফ (কানকাটা), গ্রাম-কাঠালী, থানা-ভালুকা, জেলা
ময়মনসিংহ। রাজাকার আব্দুস শহিদ মাস্টার, পিতা-জরিফ খা, গ্রাম-কাঠালী, থানা-ভালুকা,
জেলা-ময়মনসিংহ ১৪. রাজাকার মৃত শহর আলী মাস্টার, গ্রাম-কাঠালী, থানা-ভালুকা, জেলা
ময়মনসিংহ। ১৫. রাজাকার মাঈনউদ্দিন (সাংবাদিক), গ্রাম-সাতেংগা, থানা-ভালুকা, জেলা
ময়মনসিংহ। ১৬, রাজাকার আব্দুল হাই, পিতা-ময়না, গ্রাম+থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ। ১৭. রাজাকার আবুল হাশিম, পিতা-ময়না, গ্রাম+থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ১৮, রাজাকার মৃত আজমত আলী, গ্রাম-বান্দাবর, গ্রাম-কাঠালী, থানা-ভালুকা, জেলা
ময়মনসিংহ ১৯, রাজাকার মৃত হামিদুল্লাহ, গ্রাম-আউলিয়াচানা, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ২০. রাজাকার মৃত ছুমে, গ্রাম- ডাকাতিয়া, গ্রাম-কাঠালী, থানা-ভালুকা, জেলা
ময়মনসিংহ।
রাজাকার শাদউল্লাহ, গ্রাম- আউলিয়া চালা, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ২২. রাজাকার মওলানা মােহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, গ্রাম-ক্ষুরধর, থানা-ভালুকা, জেলা
ময়মনসিংহ রাজাকার আবুল হােসেন, গ্রাম-ক্ষুরধর, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ
রাজাকার দুলা মল্লিক, গ্রাম-গয়ারী, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ২৫. রাজাকার মফিজ উদ্দিন (চেয়ারম্যান), গ্রাম-ভালুকা, থানা-ভালুকা, জেলা
ময়মনসিংহ ২৬. রাজাকার মৃত তাহের আলী (চেয়ারম্যান), থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ২৭. রাজাকার মৃত কলিমুল্লাহ মাস্টার, গ্রাম-পাঁচগাঁও, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ২৮, রাজাকার মৃত সিদ্দিক মাস্টার, গ্রাম-পাঁচগাঁও, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ২৯. রাজাকার ছাবেদ আলী ফকির, গাম কাতলাবাড়ি, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ৩০. রাজাকার শাহ নাজিম, গ্রাম-মিরকা, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ৩১. রাজাকার গােলাপ, পিতা-মৃত আব্দুর রশিদ, গ্রাম-থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ৩২. রাজাকার আব্দুল আউয়াল, গাম-খারুয়ারী, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ
৩৩, রাজাকার আব্দুর রাজ্জাক, পিতা-মৃত আব্দুর রহিম, গ্রাম-খারুয়ারী, থানা-ভালুকা, ৩৪.. রাজাকার বাদশা, গ্রাম-মল্লিকবাড়ি, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ৩৫. রাজাকার মৃত হােসেন আলী মুন্সী, গ্রাম- মল্লিকবাড়ি, থানা-ভালুকা, জেলা
ময়মনসিংহ ৩৬. রাজাকার মােসাম্মৎ মরিয়ম আক্তার, স্বামী মৃত তাহের আলী, গ্রাম+থানা-ভালুকা,
জেলা-ময়মনসিংহ। ৩৭. রাজাকার মৃত হেকমত, গ্রাম-মল্লিক বাড়ি, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ৩৮, রাজাকার আব্দুল, গ্রাম-মল্লিকবাড়ি, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ। ৩৯. রাজাকার আহমদ আলী পাগল, গ্রাম-মল্লিকবাড়ি, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ। ৪০. রাজাকার মৃত হাফিজ উদ্দিন, গ্রাম-মল্লিকবাড়ি, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ৪১. রাজাকার আবু ছায়েদ (কানকাটা), গ্রাম-বাশি, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ৪২.. রাজাকার মৃত আজমত দফাদার (কানকাটা), গ্রাম- ধানছইর, থানা-ভালুকা,
জেলা-ময়মনসিংহ।
রাজাকার কালু (কানকাটা) গ্রাম-মিদুয়ারী, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ ৪৪. ত্রিশাল থানা
মােহাম্মদ ফজলুল হক খান, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ। ৪৬, মৃত ওয়াজেদ আলী, গ্রাম-ত্রিশাল চরপাড়া, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ। ৪৭. মৃত ভােলা মিয়া, গ্রাম-কুমারিয়া, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ ৪৮. মৃত আব্দুল মােতালেব, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ ৪৯, হুরমত আলী, গ্রাম-চিকনা, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ ৫০, চাঁন মিয়া, গ্রাম-ত্রিশাল বাজার, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ ৫১. উসমান আলী, গ্রাম-ত্রিশাল বাজার, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ ৫২. মােঃ আদিল সরকার (চেয়ারম্যান), থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ,বর্তমানে
বিএনপি নেতা। মােহাম্মদ আনিছুর রহমান (মানিক), গ্রাম-মান্দাটিয়া, থানা-ত্রিশাল, জেলা
ময়মনসিংহ। ৫৪. । আব্দুর রাজ্জাক, গ্রাম-কোনাবাড়ি, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ ৫৫. আলতাফ আলী, গ্রাম-ত্রিশাল নামাপাড়া, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ ৫৬, হাজী আব্দুল হাই, গ্রাম-ত্রিশাল উজান পাড়া, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ। ৫৭. । আব্দুল মােতালেব, পিতা-মৃত হাতেম আলী মুন্সী, গ্রাম-ত্রিশাল নামাপাড়া, থানা
ত্রিশাল, ৫৮. আব্দুল ওয়াহাব, পিতা-মৃত আঃ সামাদ সরকার, গ্রাম-ত্রিশাল, থানা-ত্রিশাল,
জেলা-ময়মনসিংহ
৫৯. হাসমত আলী, পিতা-মৃত ফজর আলী, গ্রাম-ত্রিশাল চরপাড়া, থানা-ত্রিশাল,
জেলা-ময়মনসিংহ ইয়াকুব আলী, পিতা-মৃত রজব আলী, গ্রাম-ত্রিশাল চরপাড়া, থানা-ত্রিশাল, জেলা
ময়মনসিংহ ৬১. আব্দুর রশিদ, পিতা-মৃত রুস্তম আলী, গ্রাম- ত্রিশাল চরপাড়া, থানা-ত্রিশাল,
জেলা-ময়মনসিংহ।
মৃত নওয়াব আলী সরকার, গ্রাম-দূর্গাপুর, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ ৬৩. মােহাম্মদ আনসার আলী, গ্রাম-পােড়াবাড়ি, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ।
শেরপুর জেলা ঃ শেরপুর সদর
রাজাকার-শাহজাহান চৌধুরী, সাং- রাঙসা, শেরপুর টাউন, শেরপুর রাজাকার-মােজাম্মেল চৌধুরী, মৃত, সাং- রাঙসা, শেরপুর টাউন, শেরপুর রাজাকার- প্রফেসর আব্দুস সাত্তার, মৃত, শেরপুর সরকারী কলেজ, শেরপুর রাজাকার- মতিউর রহমান (মতি চেয়ারম্যান), সাং-নয়াআনী বাজার, শেরপুর টাউন, শেরপুর রাজাকার- সামেদুল হক, মৃত, সাং- নারায়ণপুর, শেরপুর টাউন, শেরপুর রাজাকার- জয়নাল আবেদীন মুক্তার, মৃত, সাং- খরমপুর, শেরপুর টাউন, শেরপুর। রাজাকার-কামাল টাইপিস্ট, পিতা- জয়নাল আবেদীন, সাং খরমপুর, শেরপর টাউন, শেরপুর। .. রাজাকার-এডভােকেট শামসুল হুদা, সাং খরমপুর, শেরপুর টাউন, শেরপুর। রাজাকার-আলী আজম মাস্টার, সাং- খরমপুর, শেরপুর টাউন, শেরপুর । রাজাকার- এডভােকেট আমিনুল ইসলাম, সাং- খরমপুর, শেরপুর টাউন, শেরপুর। রাজাকার- সৈয়দ আহম্মদ চেয়ারম্যান, সাং-চাপাতলী, শেরপুর টাউন, শেরপুর । রাজাকার- মিলিটারী নাসির উদ্দিন, মৃত, সাং- খরমপুর, শেরপুর টাউন, শেরপুর
রাজাকার- সালফেট মজিবর, মৃত, সাং- খরমপুর, শেরপুর টাউন, শেরপুর ১৪. রাজাকার-জিয়ারত আলী খান, সাং-সুযদী, থানা+জেলা- শেরপুর
| রাজাকার- মকবুল হােসেন, নবীনগর, শেরপুর টাউন, শেরপুর রাজাকার- আঃ হামিদ চেয়ারম্যান, মৃত, সাং-বাজিতখিলা, শেরপুর টাউন, শেরপুর রাজাকার-সাখাওয়াত হােসেন, মৃত, পিতা- আফছার উদ্দিন, সাং-রঘুনাথপুর,
শেরপুর ১৮, রাজাকার-মােঃ আবুল হােসেন সরকার, সাং- নামা হাওড়া, থানা+জেলা-শেরপুর
১৯, রাজাকার-জমশেদ আলী মেম্বার, সাং-হাওড়া ভােটপাড়া, থানা+ জেলা-শেরপুর ২০. রাজাকার-এসহাক আলী, সাং- সাপয়ারী, থানা+জেলা-শেরপুর । ২১. রাজাকার-জোনাব আলী, মৃত, সাং-তারাকান্দী, থানা+জেলা-শেরপুর । ২২. রাজাকার-শুকুর মাসুদ, মৃত, সাং-তারাকান্দী, থানা+জেলা-শেরপুর । ২৩. রাজাকার-মহেজউদ্দিন মেম্বার, সাং-তারাকান্দী, থানা+জেলা-শেরপুর ২৪. রাজাকার-মােবারক হােসেন, সাং + ইউনিয়ন-গাজীর খামার, থানা+জেলা
শেরপুর ২৫. রাজাকার-মহেজউদ্দিন মাস্টার, সাং- গাজীরভিটা, থানা+জেলা-শেরপুর। ২৬. রাজাকার-মােঃ ইয়াদ আলী খাঁন, গ্রাম- সূর্যদী, থানা-শেরপুর সদর, শেরপুর ২৭. রাজাকার-মােঃ জোনাব আলী,গ্রাম- তারাকান্দি, থানা-শেরপুর সদর, শেরপুর ২৮, রাজাকার-মােঃ আবুল কাশেম, গ্রাম- আলিনাপাড়া, থানা-শেরপুর সদর, শেরপুর ২৯, রাজাকার-মােঃ সােহাবাজ আলী,গ্রাম- আলিনাপাড়া, থানা-শেরপুর সদর, শেরপুর ৩০, রাজাকার-মােঃ জয়নাল মিয়া, গ্রাম- চরসাপমারী, থানা-শেরপুর সদর, শেরপুর ৩১. রাজাকার-মােঃ ইসহাক, গ্রাম- সাপমারী, থানা-শেরপুর সদর, শেরপুর। ৩২. রাজাকার-মােঃ সাখাওয়াত হােসেন, গ্রাম- রঘুনাথপুর, থানা+ জেলা-শেরপুর
৪.
নালিতাবাড়ি থানা | ১. রাজাকার-মােঃ আঃ রহমান হাজী, পিতা- হাছেন আলী, গ্রাম-গগাবিন্দনগর, থানা
নালিতাবাড়ি রাজাকার-আকরামুজ্জামান, পিতা- হাছেন আলী, গ্রাম-গগাবিন্দনগর, থানানালিতাবাড়ি, শেরপুর রাজাকার-আঃ মালেক, পিতা- কাশেম আলী, গ্রাম-গােবিন্দনগর, থানানালিতাবাড়ি, শেরপুর রাজাকার-আঃ হান্নান, পিতা- কাশেম আলী, গ্রাম-গগাবিন্দনগর, থানানালিতাবাড়ি, শেরপুর রাজাকার-আঃ হাই, পিতা- কাশেম আলী, গ্রাম-গােবিন্দনগর, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর রাজাকার-আঃ বারিক, পিতা- কাশেম আলী, গ্রাম-গােবিন্দনগর, থানানালিতাবাড়ি, শেরপুর। রাজাকার-আওয়াল, পিতা- কাশেম আলী, গ্রাম-গােবিন্দনগর, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর রাজাকার-হাবিবউল্লাহ, পিতা- হাজী শামছুদ্দিন (সুফী), গ্রাম-গােবিন্দনগর, থানানালিতাবাড়ি
৯. রাজাকার-মােতালেব, পিতা- হাজী শামছুদ্দিন (সুফী), গ্রাম-গােবিন্দনগর, থানা
নালিতাবাড়ি ১০. রাজাকার-আবদুল্লাহ, পিতা- হাজী শামছুদ্দিন (সুফী), গ্রাম-গােবিন্দনগর, থানা
নালিতাবাড়ি রাজাকার-আসাদুল্লাহ, পিতা- কাশেম আলী, গ্রাম-গােবিন্দনগর, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১২. রাজাকার-আঃ রাজ্জাক, পিতা-মেহের আলী, গ্রাম-গােবিন্দনগর, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১৩. রাজাকার-আঃ রেজ্জাক, পিতা- আঃ কাদির, গ্রাম-গােবিন্দনগর, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১৪, রাজাকার -সিরাজ, পিতা- খলিলুর রহমান, গ্রাম-গােবিন্দনগর, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর রাজাকার-ইদ্রিস আলী, পিতা-ছৈয়দ আলী, গ্রাম-গােবিন্দনগর, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ১৬, রাজাকার-রিয়াজ উদ্দিন, পিতা- খলিলুর রহমান, গ্রাম-গােবিন্দনগর, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর রাজাকার-মান্নান, পিতা- নজর আলী, গ্রাম-গগাবিন্দনগর, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ১৮. | রাজাকার-আফছার আলী, পিতা- আতাবুদ্দিন, গ্রাম-গােবিন্দনগর, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর রাজাকার-রহিম, গ্রাম-গগাবিন্দনগর, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর রাজাকার-রশিদ, গ্রাম-গগাবিন্দনগর, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর রাজাকার-নুর মােহাম্মদ, পিতা-আঃ হাকিম ডাক্তার, গ্রাম-ছিটপাড়া, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর ২২. রাজাকার-জামানউদ্দিন, পিতা- আঃ হাকিম ডাক্তার, গ্রাম-ছিটপাড়া, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর রাজাকার-হুছেন আলী, পিতা- আইনুদ্দিন মুন্সী, গ্রাম-ছিটপাড়া, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর রাজাকার-জৈনদ্দিন (জ), পিতা- তরু ফকির, গ্রাম-ছিটপাড়া, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর রাজাকার-রহিম, পিতা- হামির উদ্দিন, গ্রাম-ছিটপাড়া, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর রাজাকার-জমির উদ্দিন, পিতা- আবুল হুসেন, গ্রাম-ছিটপাড়া থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর
.
১১০
২৭, রাজাকার-ছাত্তার, গ্রাম-ছিটপাড়া, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ২৮. রাজাকার-রজব আলী, গ্রাম-ছিটপাড়া, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ২৯, রাজাকার-ফজু, গ্রাম-ছিটপাড়া, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৩০, রাজাকার-চাঁন মিয়া, গ্রাম-নামাছিটপাড়া থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৩১. রাজাকার-মান্নান, পিতা- আবেদ আলী, গ্রাম-নামাছিটপাড়া থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর। রাজাকার-ছালাম, পিতা- শরাফত, গ্রাম- মােগানিয়া, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর রাজাকার-কাদির, পিতা-ছৈয়দ আলী, গ্রাম- মােগানিয়া, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৩৪.. রাজাকার-দুদু, পিতা- শামছুদ্দিন ডাক্তার, গ্রাম- মােগানিয়া, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৩৫. রাজাকার-আজাদ, পিতা- ছাবেদ আলী, গ্রাম- মােগানিয়া, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর।
রাজাকার-রশিদ, গ্রাম- মােগানিয়া, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৩৭. রাজাকার-আক্কাছ আলী চেয়ারম্যান, পিতা- ছাবেদ আলী, গ্রাম- মােগানিয়া, থানা
নালিতাবাড়ি ৩৮. রাজাকার-ইছব আলী মুন্সী, পিতা-জৈধর আলী, গ্রাম- মােগানিয়া, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর ।
রাজাকার-আঃ আজিজ, পিতা- মহর, গ্রাম- কাপাশিয়া, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৪০. রাজাকার-আকবর আলী, পিতা- আর মামুদ, গ্রাম- বনপাড়া, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৪১. রাজাকার-খায়রুল (খলিলুর), পিতা- মহর আলী, গ্রাম- কাপাশিয়া, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর । ৪২. রাজাকার-আব্দুল গফুর, পিতা- রহমত উল্লা, গ্রাম- কাপাশিয়া, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৪৩. রাজাকার-শামছুদ্দিন, পিতা- ওছিমুদ্দিন, গ্রাম- কাপাশিয়া, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৪৪. রাজাকার-আবুল বাশার, পিতা- আঃ আজিজ, গ্রাম- কাপাশিয়া, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর। ৪৫. রাজাকার-শামুছদ্দিন, পিতা- নছিমুদ্দিন, গ্রাম- কাপাশিয়া, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর। ৪৬. রাজাকার-পাঞ্জর আলী, পিতা- কাশেম আলী, গ্রাম- বাথুরারকান্দা, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর।
৪৭. রাজাকার-মালেক, পিতা- ডিবু শেখ, গ্রাম- বাথুরারকান্দা, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৪৮. রাজাকার-মােফাজ্জল ভেন্ডার, পিতা- সিরাজুল হক, গ্রাম- বাইটকামারী, থানা
নালিতাবাড়ি ৪৯. রাজাকার-জুলহাস উদ্দিন, পিতা-মােহাম্মদ আলী, গ্রাম- বাইটকামারী, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর | ৫০. রাজাকার-লতিফ, পিতা- বছির উদ্দিন, গ্রাম- বাইটকামারী, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৫১.. রাজাকার-আঃ রহমান, গ্রাম- কোন্নগর, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৫২. রাজাকার-হাশমত আলী, গ্রাম- কোন্নগর, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর
রাজাকার-আনছারুল হক, পিতা- মুনছুর আলী, গ্রাম- কোন্নগর, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৫৪, রাজাকার-আমীর আলী, পিতা- আহম্মদ আলী, গ্রাম- রানীগাঁও, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৫৫. রাজাকার-মনির, পিতা- জিন্নত আলী, গ্রাম- রানীগাঁও, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৫৬. রাজাকার-বাতেন, পিতা- জিন্নত আলী, গ্রাম- রানীগাঁও, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৫৭.। রাজাকার-আঃ রহিম, পিতা- আহম্মদ, গ্রাম- রানীগাঁও, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৫৮. রাজাকার-আবু বকর, পিতা- আহম্মদ আলী, গ্রাম- রানীগাঁও, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৫৯. রাজাকার-আবু সাইদ, পিতা- আইনুদ্দিন, গ্রাম- রানীগাঁও, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর রাজাকার-রইছুদ্দিন বাইন্না, পিতা- আউনুদ্দিন, গ্রাম- কালিনগর, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর। ৬১. রাজাকার-আঃ লতিফ, পিতা- আউদ্দিন, গ্রাম- কালিনগর, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৬২. | রাজাকার-জামাল উদ্দিন, গ্রাম- কালিনগর, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর
রাজাকার-মােফাজ্জল হােসেন, গ্রাম- কালিনগর, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর । রাজাকার-ছােবনি (দুদু), পিতা- মহর হাজী, গ্রাম- কালিনগর, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৬৫. রাজাকার-হুসেন আলী, পিতা- ছফুর উদ্দিন, গ্রাম- কালিনগর, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর
৬৬. রাজাকার-আকিতুল্লা, পিতা- হাছেন আলী, গ্রাম- কালিনগর, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর রাজাকার-হাছেন আলী (কোচা), পিতা- সাহেব আলী, গ্রাম- কালিনগর, থানানালিতাবাড়ি, শেরপুর রাজাকার-হুরমুজ আলী, পিতা- নছর দেওয়ানী, গ্রাম- বাঘবেড় আখড়াপাড়া, থানা-নালিতাবাড়ি। রাজাকার-অহেদ আলী, পিতা- রহমত আলী, গ্রাম- শিমুলতলা, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৭০. রাজাকার-মােহাম্মদ উল্লা, পিতা- আতর আলী মুন্সী, গ্রাম- শিমুলতলা, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর। রাজাকার-নবী হুসেন, পিতা- জামাল উদ্দিন, গ্রাম- শিমুলতলা, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৭২. রাজাকার-কালু, পিতা- মকবুল মেম্বার, গ্রাম- খালডাঙা, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর। রাজাকার-কাজিমদ্দিন, গ্রাম- খালডাঙা, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর । রাজাকার-আমজাত, পিতা- কফিল উদ্দিন, গ্রাম- চকপাড়া, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৭৫. রাজাকার-নুরা, গ্রাম- চকপাড়া, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৭৬, রাজাকার-রফিজউদ্দিন দেওয়ান, পিতা- লালু মৃধা, গ্রাম- নালিতাবাড়ি বাজার,
থানা-নালিতাবাড়ি ৭৭. রাজাকার-আজগর আলী খান, পিতা-জোনাব আলী খান, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর রাজাকার-লিয়াকত, পিতা- ছয়ফল, গ্রাম- নালিতাবাড়ি বাজার, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৭৯. রাজাকার-শামছুল হক, গ্রাম- গেরাপচা, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৮০, রাজাকার-আব্দুল করিম, পিতা- অশাফ হাজী, গ্রাম- গেরাপচা, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর রাজাকার-দিল মামুদ, পিতা- উমেদ আলী, গ্রাম- ছালুয়াতলা, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর রাজাকার-হাছেন আলী, পিতা- বদন শেখ, গ্রাম- সােহাগপুর, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৮৩. রাজাকার-ততাফাজ্জল, পিতা-কোরবান আলী, গ্রাম- চকপাড়া, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর
৮৪. রাজাকার-আঃ কাদির, পিতা- শরাফত আলী, গ্রাম- কেন্দুয়াপাড়া, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৮৫. রাজাকার-গােলাম মােস্তফা, পিতা- রাইসউদ্দিন তালুকদার, গ্রাম- সােহাগপুর,
থানা-নালিতাবাড়ি। রাজাকার-আঃ রহিম, পিতা- রিয়াজত আলী, গ্রাম- বারুয়াজানি, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর। ৮৭, রাজাকার-আঃ খালেক মাস্টার, পিতা- আহমদ আলী, গ্রাম- ঘাকপাড়া, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর । ৮৮, রাজাকার-আমজাদ আলী, গ্রাম- খাইলারা, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৮৯, রাজাকার-মকবুল হােসেন, পিতা- ছামাদ আলী, গ্রাম- বেনুপাড়া, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৯০. রাজাকার-আঃ কুদ্ছ, পিতা- কুদ্রত আলী, গ্রাম- বনকুড়া, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৯১. রাজাকার-রকিব, গ্রাম- বনকুড়া, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৯২. রাজাকার-কুদত আলী, গ্রাম- বনকুড়া, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৯৩, রাজাকার-ওসমান গণি, পিতা- তনিসেখ, গ্রাম- নন্নীউত্তর, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৯৪. রাজাকার-ওলি মামুদ, পিতা- কমরউদ্দিন, গ্রাম- নিশ্চন্তপুর, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর
রাজাকার-বিশু মিয়া, গ্রাম- বারমারী, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৯৬. রাজাকার-সুরুজ চৌকিদার, গ্রাম- বারমারী, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ৯৭.. রাজাকার-আঃ কাদির, পিতা- আঃ গফুর, গ্রাম- রাজনগর, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ৯৮, রাজাকার-হায়দর আলী, পিতা- নুর আলী, গ্রাম- চাঁদগাঁও, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর রাজাকার-আলেপ উদ্দিন, পিতা- রইছ উদ্দিন, গ্রাম- রাজনগর, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ১০০. রাজাকার-মকবুল হুসেন, পিতা- কাশেম আলী, গ্রাম- হাতীপাগার, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১০১. রাজাকার-কালু, পিতা- ছফুর সরকার, গ্রাম- বইগাইচাপুর, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর রাজাকার-ইসলাম, পিতা- ছফুর সরকার, গ্রাম- বইগাইচাপুর, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর
১০৩. রাজাকার-ছফর উদ্দিন, পিতা- ওষন শেখ, গ্রাম- কেন্দুয়া পাড়া, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১০৪. রাজাকার-ততাফাজ্জাল, পিতা- শরাফত আলী, গ্রাম- নয়ারিল, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ১০৫. রাজাকার-কাইয়ুম, পিতা-মােতালেব মেম্বার, গ্রাম- চাঁদগাঁও, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ১০৬. রাজাকার-নজরুল ইসলাম, পিতা- রুস্তম আলী, গ্রাম- চাঁদগাঁও, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১০৭. রাজাকার-মহির উদ্দিন, পিতা- কাছুম শেখ, গ্রাম- কেন্দুয়াপাড়া, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১০৮, রাজাকার-নারা, পিতা- ইরাহিম, গ্রাম- গুজাবুড়া, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১০৯, রাজাকার-নুর মােহাম্মদ, গ্রাম- কিল্লাপাড়া, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর। ১১০. রাজাকার-আলী, পিতা- লিলু, গ্রাম- বইগাচাপুর, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১১১. রাজাকার-ইনাতুল্লাহ, গ্রাম- বইগাচাপুর, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর। ১১২. রাজাকার-হাশেম, পিতা- ইমাম, গ্রাম- বইগাচাপুর, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১১৩, রাজাকার-আবুল কালাম আজাদ, পিতা- শামছুদ্দিন, গ্রাম- বইগাচাপুর, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১১৪. রাজাকার-আবুল ফজল (আংগুর), পিতা-মােবারক উল্লাহ, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ১১৫, রাজাকার-মােহাম্মদ হুসেন, পিতা- আমানুল্লাহ হাজী, গ্রাম- তারাগঞ্জ বাজার,
থানা-নালিতাবাড়ি ১১৬. রাজাকার-সিরাজ, পিতা- আমানুল্লাহ হাজী, গ্রাম- তারাগঞ্জ বাজার, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর। ১১৭. রাজাকার-জোয়াদ আলী, গ্রাম- নন্নী নয়াপাড়া, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর | ১১৮, রাজাকার-মন্তাজ আলী, পিতা- জয়নুদ্দিন, গ্রাম- নন্নী নয়াপাড়া, থানা-নালিতাবাড়ি,
১১৯, রাজাকার-সােহরাব, গ্রাম- বারমারী, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১২০. রাজাকার-আঃ হক, গ্রাম- নন্নী উত্তর, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১২১. রাজাকার-জিয়ার উদ্দিন, গ্রাম- বন্দধারা, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১২২. রাজাকার-আহম্মদ আলী, পিতা- শহর আলী, গ্রাম- গুজাকুড়া, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ১২৩. রাজাকার-জয়নাল আবেদীন, পিতা- আইনুদ্দিন, গ্রাম- কয়ারপাড়া, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর
১১৫
১২৪, রাজাকার-আঃ খালেক, পিতা- নইমুদ্দিন, গ্রাম- কয়ারপাড়া, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ১২৫. রাজাকার-ময়জ উদ্দিন, গ্রাম- কয়ারপাড়া, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১২৬, রাজাকার-কুদত আলী, পিতা-ছৈয়দ আলী, গ্রাম- গুজাকুড়া, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ১২৭. রাজাকার-হাবিলউদ্দিন, পিতা- নবাব আলী, গ্রাম- বাশকান্দা, থানা-নালিতাবাড়ি,
শেরপুর ১২৮, রাজাকার-ছােহরাব আলী, পিতা- আহম্মদ আলী, গ্রাম- বাশকান্দা, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর : ১২৯, রাজাকার-গারাে, পিতা- বসু, গ্রাম- বাশকান্দা, থানা-নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১৩০, রাজাকার-ময়জ উদ্দিন (৪ভাই), পিতা- মিরাজ আলী, গ্রাম- মরিচপুরান, থানা
নালিতাবাড়ি ১৩১. রাজাকার-আঃ আজিজ, পিতা- আয়েন উদ্দিন, গ্রাম- ভােগাইরপাড়, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর । ১৩২. রাজাকার-হজরত আলী, পিতা- ছবি শেখ, গ্রাম- ভােগাইরপাড়, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর ১৩৩, রাজাকার-সুরুজ আলী, পিতা- হজরত আলী, গ্রাম- ভােগাইরপাড়, থানা
নালিতাবাড়ি, শেরপুর । ১৩৪. রাজাকার-হাজী আব্দুর রহমান, সাং-নালিতাবাড়ি বাজার ১৩৫. রাজাকার- আজগর আলী খান, সাং-নালিতাবাড়ি । ১৩৬, রাজাকার-শহীদ নাজমুল আহসান, পিতা-মৃত সেকান্দার আলী ১৩৭. রাজাকার-মৃত আহসান আলী, সাং-বরােয়াজানী। ১৩৮, রাজাকার-আলী হােসেন, পিতা-আব্দুল মােতালেব
জামালপুর জেলা ঃ জামালপুর সদর ১. রাজাকার-নন্দ -সাং-বনপাড়া, জামালপুর শহর, জামালপুর । ২. রাজাকার-ইউসুফ মাস্টার, সিংহেরজানি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ,
রাজাকার প্রফেসর আব্দুল গণি, সাং-ইকবালপুর, জামালপুর শহর, জামালপুর রাজাকার প্রফেসর আব্দুর রব, শিক্ষক, আশেক মাহমুদ কলেজ, জামালপুর রাজাকার-মৃত অধ্যাপক আ: আজিজ, শিক্ষক, আশেক মাহমুদ কলেজ, জামালপুর রাজাকার-মৃত আমেজউদ্দিন চেয়ারম্যান, সাং-ফুলবাড়িয়া স্টেশন রােড, জামালপুর। রাজাকার-চান মিয়া, সাং-চাকারীপাড়া, জামালপুর শহর
৮, রাজাকার-সুলেমান, সাং-কাটারীপাড়া, জামালপুর
রাজাকার-মৃত হানু মৌলভি, সাং-পলিশা, জামালপুর, পৌরসভা জামালপুর। ১০. রাজাকার-নূরুল হক মাস্টার, পিতা ময়েজ উদ্দিন মন্ডল, সাং-জঙ্গলপাড়া, পাে:
বেলটিয়া, জামালপুর ১১. রাজাকার-কাজী আব্দুল রহিম, সাং-বেলটিয়া, জামালপুর পৌরসভা, জামালপুর
নেত্রকোনা জেলার নেত্রকোনা সদর
১. প্রভাবশালী দালাল-মওলানা মঞ্জুরুল হক ২. রাজাকার-খােরশেদ আলী চৌধুরী ৩. প্রভাবশালী দালাল-মওলানা ফজলুল করিম
রাজাকার-মওলানা ফজলুল করিম, থানা-নেত্রকোনা। | রাজাকার-মওলানা আব্দুল খালেক মাস্টার, সাং-কুনিয়া, থানা-নেত্রকোনা,
রাজাকার- ডাঃ আব্দুর রেজ্জাক, সাং-সুতারপুর, থানা-নেত্রকোনা রাজাকার-খােরশেদ আলী চৌধুরী, সাং-সােনাজুর, নেত্রকোনা। রাজাকার-মৃত নুরুল আমিন মাস্টার, থানা-নেত্রকোনা সদর।
রাজাকার-ফারুখ আহমেদ, থানা-নেত্রকোনা সদর। ১০. রাজাকার-রিয়াজ উদ্দিন চেয়ারম্যান, সাং-বালি, থানা-নেত্রকোনা সদর। ১১. রাজাকার-আমীর আলী খান পাঠান, থানা-নেত্রকোনা সদর। ১২. রাজাকার-নােয়ব আলী আকন্দ, থানা-নেত্রকোনা সদর। ১৩, রাজাকার-নাবালক মিয়া, সাং-মদনপুর, থানা নেত্রকোনা সদর ১৪. রাজাকার-মৃত অছিম উদ্দিন শেখ, সাং-আরামবাগ, থানা-নেত্রকোনা সদর। ১৫.. রাজাকার-শেখ নজমুল হােসেন, নেত্রকোনা শহর, থানা-নেত্রকোনা। ১৬. রাজাকার-মৃত মওলা মিয়া, সাং-অজহর রােড, থানা-নেত্রকোনা। ১৭. রাজাকার-আঞ্জু মৌলনা
আটপাড়া থানা ১. রাজাকার-মওলানা মঞ্জুরুল হক, সাং-বুগাপাড়া, থানা-আটপাড়া,
রাজাকার-মৃত আব্দুল হাকিম তালুকদার, মৌলা মিয়া, সাং-ঘাগরা, থানাআটপাড়া, রাজাকার-নানু মিয়া, সাং-গােয়াতলা, থানা আটপাড়া।। রাজাকার-নাজমুল শেখ, সাং-ইকর আটিয়া, থানা-আটপাড়া।। রাজাকার-ওবায়েদুল হক তাহের, সাং-বুগাপাড়া, থানা-আটপাড়া রাজাকার-নানু মিয়া, সাং-গােয়াতলা, থানা-আটপাড়া
৭. রাজাকার-হাবিবুর রহমান ভূইয়া, সাং-সুনুই, থানা-আটপাড়া
বারহাতী থানা
রাজাকার- মুসলেম, থানা-বারহাট্টা রাজাকার- তােতা, থানা-বারহাট্টা রাজাকার- বাদশা, থানা-বারহাট্টা, রাজাকার- আব্দুর রেজ্জাক, গ্রাম-আলােকদিয়া, থানা-বারহাট্টা। রাজাকার- দুদু মিয়া, গ্রাম-আলােকদিয়া, থানা-বারহাট্টা। রাজাকার- মৃত আফতাব উদ্দিন, সাং-ছালিপুর, থানা-বারহাট্টা। রাজাকার- দুদু মিয়া, সাং-আলােকদিয়া, থানা-বারহাট্টা। রাজাকার- আব্বাস আলী খান, সাং-কৈলাটী, থানা-বারহাট্টা।
রাজাকার- চৌধুরী দারােগা, সাং-কৈলাটী, থানা-বারহাট্টা। ১০. রাজাকার- আব্দুল মালেক মাস্টার, সাং-কৈলাটী, থানা-বারহাট্টা। ১১. রাজাকার- জাহেদ ইমাম, সাং-চন্দ্রপুর, থানা-বারহাট্টা
কলমাকান্দা থানা
রাজাকার- মােফাজ্জল হােসেন খান, সাং-ছত্ৰংপুর, থানা-কলমাকান্দা। রাজাকার- সুরুজ মিয়া, সাং-বড়কাটন, থানা-কলমাকান্দা, রাজাকার- শামছুল হুদা পাঠান, সাং- রংছাতি, থানা-কলমাকান্দা
রাজাকার- শামছুল হুদা, সাং-রহিমপুর, থানা-কলমাকান্দা। শীর্ষস্থানীয় দালাল। রাজাকার- আব্দুল আলী, সাং-বিমারা, থানা-কলমাকান্দা। রাজাকার- মৃত আব্দুল খালেক, সাং-চৈতা, থানা-কলমাকান্দা।
রাজাকার আব্দুল জলিল, সাং-চিকারপুড়ি, থানা-কলমাকান্দা ৮. রাজাকার- মৃত আব্দুল আলী, সাং-বিশারা, থানা-কলমাকান্দা
পূর্বধলা থানা ১. রাজাকার- বশির আকন্দ, থানা-পূর্বধলা। ২. রাজাকার- শরাফ উদ্দিন, থানা-পূর্বধলা ।
রাজাকার আব্দুল মান্নান কুলু, থানা-পূর্বধলা । রাজাকার- মওলানা ফজলুল হক, সাং- খলিশাপুর, থানা-পূর্বধলা। রাজাকার- মওলানা আহম্মদ আলী, সাং-দামপাড়া, থানা-পূর্বধলা । রাজাকার- আদম আলী মীর, সাং-হােগলা, থানা-পূর্বধলা।
কেন্দুয়া থানা
রাজাকার-আঙু, থানা-কেন্দুয়া। রাজাকার-চমক আলী, সাং-হারুলিয়া, থানা-কেন্দুয়া, রাজাকার-মতিউর রহমান, সাং-মাসকা, থানা-কেন্দুয়া। রাজাকার-হেড মাস্টার সাদেক মিয়া, থানা-কেন্দুয়া। রাজাকার-মৃত কালা মিয়া চেয়ারম্যান, সাং-পিজাহাতী, ইউনিয়ন-মসকা, থানাকেন্দুয়া। রাজাকার-মৃত নুরু মাস্টার, সাং-কাওরাড, থানা-কেন্দুয়া রাজাকার-মৃত বাদল মিয়া, সাং-কান্দিউড়া, থানা-কেন্দুয়া। রাজাকার-মােঃ জয়নাল মিয়া, পিতা-চিনির বাপ, সাং-কান্দিউড়া, থানা-কেন্দুয়া।
রাজাকার-আব্দুল ওয়াদুদ খান, সাং-কলমআটি, থানা-কেন্দুয়া। ১০, রাজাকার-মৃত জং বাহাদুর দফাদার, সাং-না, থানা-কেন্দুয়া।
মােহনগঞ্জ থানা
১. রাজাকার-আব্দুল খালেক, গ্রাম-পানুর, থানা-মােহনগঞ্জ।
রাজাকার-লাল হােসেন, গ্রাম-দেওখান, থানা-মােহনগঞ্জ। রাজাকার-মৃত সােনামদী খাঁ, সাং-বাহাম, থানা-মােহনগঞ্জ। রাজাকার-আব্দুল আজিজ নায়েব, সাং-মাশী, থানা-মােহনগঞ্জ। রাজাকার-সুরুজ আলী খান পাঠান, থানা-মােহনগঞ্জ। রাজাকার-আব্দুল হাই (কারি মিয়া) সাং-মাখান, থানা-মােহনগঞ্জ। রাজাকার-মাহতাব উদ্দিন, থানা-মােহনগঞ্জ। রাজাকার-ইব্রাহিম, সাং-দেওখান, থানা-মােহনগঞ্জ। রাজাকার-মৃত হাবিবুর রহমান সম্রাট, সাং-বড়কাশিয়া, থানা-মােহনগঞ্জ। রাজাকার-মৃত আব্দুল খালেক, সাং-বড়কাশিয়া, থানা-মােহনগঞ্জ। রাজাকার-মৃত চাঁন মিয়া, সাং-মাযান, থানা-মােহনগঞ্জ রাজাকার-মৃত করিম নেওয়াজ খাঁ, সাং-পানুর। থানা-মােহনগঞ্জ। রাজাকার-চুন্ন মিয়া, সাং-বড়কাশিয়া, থানা-মােহনগঞ্জ।
রাজাকার-নজরুল শেখ, থানা-মােহনগঞ্জ। ১৫. রাজাকার-নজরুল ইসলাম, সাং-মানশী, থানা-মােহনগঞ্জ। ১৬. রাজাকার-রবিউল্লাহ, সাং-মাশী, থানা-মােহনগঞ্জ।
রাজাকার-গােলাম রব্বানী খান পাঠান, সাং-বড়কাশিয়া, থানা-মােহনগঞ্জ। ১৮, রাজাকার-ছদু মিয়া, সাং-বড়কাশিয়া, থানা-মােহনগঞ্জ। ১৯, রাজাকার-আব্দুস সাত্তার, সাং-ঘড়শী, থানা-মােহনগঞ্জ।
২০. রাজাকার-আশরাফ আলী চৌধুরী, সাং-ঘড়মশী, থানা-মােহনগঞ্জ ২১. রাজাকার-মৃত আব্দুর রেজ্জাক, সাং-আলােকদিয়া, থানা-বারহাট্টা। ২২. রাজাকার-মৃত গিয়াস উদ্দিন, সাং-বড়কাশিয়া, থানা-মােহনগঞ্জ। ২৩. রাজাকার-মৃত চুনু মিয়া, সাং- বড়কাশিয়া, থানা-মােহনগঞ্জ। ২৪. রাজাকার-মাহতাব উদ্দিন আহম্মদ, সাং বড়কাশিয়া, থানা-মােহনগঞ্জ।
রাজাকার-আমজাদ মিয়া, সাং- বড়কাশিয়া, থানা-মােহনগঞ্জ। ২৬. রাজাকার-হােয়াব উদ্দিন চেয়ারম্যান, সাং-মাহসুদপুর, থানা-মােহনগঞ্জ।
দুর্গাপুর থানা
১. রাজাকার-কিতাব আলী তালুকদার, গ্রাম-গুজিরকোনা, থানা-দুর্গাপুর। ২. রাজাকার-মৃত আলকাছ আলী মন্ডল, সাং-গুজিরকোনা, থানা-দুর্গাপুর।
রাজাকার-আমছর মেম্বর, সাং-জাগীরপাড়া, থানা-দুর্গাপুর। রাজাকার-মােক্তার মহিউদ্দিন মৃধা, থানা-দুর্গাপুর। রাজাকার-আব্দুল খালেক, থানা-দুর্গাপুর। রাজাকার-ইদ্রিস মিয়া, থানা-দুর্গাপুর।
রাজাকার-পিনু ভূইয়া, থানা-দুর্গাপুর। ৮. রাজাকার-মৃত শামছু মেম্বার, সাং-পুরাকান্দুলিয়া, থানা-দুর্গাপুন। ৯, রাজাকার-মৃত প্রতিক আলী, চেয়ারম্যান, থানা-দুর্গাপুর। ১০. রাজাকার-আব্দুর রশিদ, সাং-পুরাবান্দুলিয়া, থানা-দুর্গাপুর।
| রাজাকার-মওলানা আহসন আলী, সাং-খালিশপুর, থানা-দুর্গাপুর। ১২. রাজাকার-আহম্মদ তালুকদার, জারিয়া, দুর্গাপুর
রাজাকার-কোবাদুজ্জামান খান হেলু মিয়া, জারিয়া, দুর্গাপুর। ১৪. রাজাকার-পিনু ভূইয়া, থানা-দুর্গাপুর। ১৫. রাজাকার-রুনু ভূইয়া, সাং-ঝানজাইল, থানা-দুর্গাপুর। ১৬.. রাজাকার-মহীউদ্দিন মৃধা, সাং-দুর্গাপুর বাজার, থানা-দুর্গাপুর । ১৭. রাজাকার-ইদ্রিস চেয়ারম্যান, থানা-দুর্গাপুর।
মদন থানা
১. রাজাকার-আব্দুল জব্বার, সাং-চানগাঁও, থানা-মদন।
রাজাকার-আব্দুল মালেক, সাং-মদন, থানা-মদন। ৩. রাজাকার-আব্দুল বারেক, সাং-মদন, থানা-মদন। ৪. রাজাকার-মােঃ আব্দুল মােতালেব, সাং-বালাই, থানা-মদন। ৫. রাজাকার-সামসুল হুদা, থানা-মদন।
১২০
৬. রাজাকার-মােঃ আব্দুস সােবহান, থানা-মদন।
৭. রাজাকার-হেদায়েত উল্লাহ বিএসসি ওরফে আঙু মওলানা, সাং-কুলশী, থানা
মদন।
কিশােরগঞ্জ
১. রাজাকার আব্দুল মােনায়েম খান, গাম-হুমাইপুর, থানা বাজিতপুর, জেলা
কিশােরগঞ্জ |
২. রাজাকার-মওলানা আতাহার আলী, সাং ঘােঙাদিয়া, জেলা-সিলেট।
৩. রাজাকার-মওলানা আতাউর রহমান খান, পিতা- মওলানা আহম্মদ আলী খান, কিশােরগঞ্জ সদর। বর্তমানে বিএনপির সাথে জড়িত রাজাকার-মুসা বাজিতপুর রাজাকার-প্রফেসর মাহতাবউদ্দিন (গুরুদয়াল কলেজ) যশােদল, কিশােরগঞ্জ সদর রাজাকার-আবুল হাশিম, পিতা মফিজ হাজি, গ্রাম-চিকনীরচর, কিশােরগঞ্জ সদর
রাজাকার-মৃত দুলাল, গ্রাম করিয়াই, কিশােরগঞ্জ সদর। | ৮, রাজাকার-শামসুদ্দিন, পিতা মৃত মধুর বাপ, গ্রাম বাশহাটি, কিশােরগঞ্জ সদর
রাজাকার-জালাল পিতা মৃত আঃ সােবহান,গ্রাম না, কিশােরগঞ্জ সদর ১০, রাজাকার-আঃ হােসেন গ্রাম-নদা, কিশােরগঞ্জ,
রাজাকার-মফিজ উদ্দিন, গ্রাম-শশালাকিয়া, কিশােরগঞ্জ সদর ১২. রাজাকার-মৃত আঃ মান্নান, পিতা-হাজি মাহমুদ নবী, সাং- কালিকাবাড়ি, থানা
কিশােরগঞ্জ সদর রাজাকার-মওলানা আব্দুল হামিদ (সাবেক মাদ্রাসা সুপার) গ্রাম-নােয়াহাট, থানা
কিশােরগঞ্জ সদর। ১৪. রাজাকার-মওলানা আব্দুল খালেক, গ্রাম- কাজীরগাঁও, কিশােরগঞ্জ সদর ১৫. রাজাকার-মওলানা মােনতাজ উদ্দিন, গ্রাম-কাজীরগাঁও। কিশােরগঞ্জ সদর ১৬. রাজাকার-মওলানা আদম আলী, গ্রাম-কাজীরগাঁও, কিশােরগঞ্জ সদর ১৭. রাজাকার-মওলানা ইউসুফ আলী, গ্রাম-চৌদ্দশত, কিশােরগঞ্জ সদর ১৮. রাজাকার-মওলানা ইয়াহিয়া, গ্রাম-টুটিয়ারচর, কিশােরগঞ্জ সদর ১৯. রাজাকার-মৃত মওলানা সিরাজউদ্দিন, গ্রাম-চৌদ্দশত কিশােরগঞ্জ সদর, ২০. রাজাকার-গিয়াস উদ্দিন, গ্রাম-কলাপাড়া, কিশােরগঞ্জ সদর ২১. রাজাকার-রুস্তম আলী, পিতা-মেদর, গ্রাম-ঘাঘট, কিশােরগঞ্জ সদর ২২. রাজাকার-মওলানা আব্দুল মান্নান, গ্রাম-ঘাের, করিমগঞ্জ ২৩. রাজাকার-আরকান, গ্রাম-শশালাকিয়া, কিশােরগঞ্জ সদর
২৪, রাজাকার-লােকমান মৌলভী, সাবেক চেয়ারম্যান, গুনধর ইউনিয়ন, বর্তমানে
ঘরমপট্টি, কিশােরগঞ্জ ২৫. রাজাকার-মুগল মিয়া, গ্রাম-মহিন্দর, কিশােরগঞ্জ সদর
রাজাকার-মৃত আক্কাছ আলী, গ্রাম-মহিন্দর, কিশােরগঞ্জ সদর ২৭. রাজাকার-কাছু, গ্রাম-মহিন্দ, কিশােরগঞ্জ সদর ২৮. রাজাকার-মৃত আঃ মালেক, পিতা আসক আলী, গ্রাম-কলাপাড়া, কিশােরগঞ্জ সদর ২৯, রাজাকার-জুড়াে মিয়া, গ্রাম কাসুরারচর, কিশােরগঞ্জ সদর ৩০. রাজাকার-নুরুল ইসলাম, গ্রাম-মহিন্দর, কিশােরগঞ্জ সদর ৩১. রাজাকার-মৃত আঃ জব্বার মেম্বার, গ্রাম- মেলাবাজার, কিশােরগঞ্জ সদর ৩২. রাজাকার-মাহতাব ড্রাইভার, গ্রাম-শশালাকিয়া, কিশােরগঞ্জ সদর ৩৩, রাজাকার-আঃ রহমান, পিতা-মৃত আমীর হােসেন, গাম-বিরধামপাড়া, কিশােরগঞ্জ
সদর ৩৪. রাজাকার-ইমান হােসেন, গ্রাম-মধুনগর, কিশােরগঞ্জ সদর ৩৫. রাজাকার ওমর আলী। ৩৬, রাজাকার ওমেদ আলী।
গাজীপুর জেলা
১. রাজাকার-আলাউদ্দীন
রাজাকার-আহাদ আলী রাজাকার-আওয়াল রাজাকার-নওয়াব আলী রাজাকার-হাকিম উদ্দিন রাজাকার-মজিদ রাজাকার-মনু।
ফরিদপুর জেলা
১. রাজাকার ডা, কাজী ইমদাদুল হক-গ্রাম-হামিদি, থানা-ভাংগা, ফরিদপুর
রাজাকার-আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকার-আলাউদ্দিন রাজাকার আফজাল উদ্দিন রাজাকার ময়েজ উদ্দিন উকিল রাজাকার মুসা বিন শমসের রাজাকার খিদির খাঁ
৮. রাজাকার নান্ন
৯. রাজাকার বদু
১০. রাজাকার বিনয়
১১. রাজাকার চন্দ
১২. রাজাকার কানা হাসি
১৩. রাজাকার খােকন- নগরকান্দা, ফরিদপুর
মাদারীপুর জেলা
১. রাজাকার খলিল জমাদার
২. রাজাকার বাবুল।
৩. রাজাকার নান্ন
৪. রাজাকার শাহেদ আলী
৫. রাজাকার মওলানা খলিলুর রহমান
৬. রাজাকার নানু এ্যাডভােকেট
৭. রাজাকার পায়ু
৮. রাজাকার আব্দুল খালেক
৯. রাজাকার আব্দুল হামিদ খন্দকার
১০. রাজাকার হায়দার মােল্লা
১১. রাজাকার মােজাফফর বক্স মােল্লা
১২. রাজাকার মাদার বক্স মােল্লা।
১৩. রাজাকার আবু তালেব।
১৪. রাজাকার শাহেদ আলী
শরীয়তপুর জেলা
১. রাজাকার জয়নাল ভূঁইয়া
গােপালগঞ্জ জেলা ২. রাজাকার ওহিদুজ্জামান, টুঙ্গীপাড়া, গােপালগঞ্জ ৩, রাজাকার কাফু মিয়া- টুঙ্গীপাড়া, গােপালগঞ্জ ৪. রাজাকার লালা মিয়া- টুঙ্গীপাড়া, গােপালগঞ্জ ৫. রাজাকার রতন মিয়া- টুঙ্গীপাড়া, গােপালগঞ্জ ৬. রাজাকার হেমায়েত- টুঙ্গীপাড়া, গােপালগঞ্জ ৭. রাজাকার মনি মিয়া- টুঙ্গীপাড়া, গােপালগঞ্জ
৮, রাজাকার আরজ- টুঙ্গীপাড়া, গােপালগঞ্জ
রাজশাহী বিভাগ রাজশাহী জেলা
১. রাজাকার আফাজউদ্দিন
২. রাজাকার মােজাফর মাস্টার
৩. রাজাকার জবির মেম্বার
৪. রাজাকার কাদের মাস্টার
৫. রাজাকার শামসুজ্জামান বন্দু
৬. রাজাকার আব্দুল আলীম এম.পি
৭. রাজাকার আব্দুল মতিন
৮. রাজাকার রাজ্জাক
৯. রাজাকার আলতাফ
১০. রাজাকার রইস
১১. রাজাকার মতিন
১২. রাজাকার মজিবর রহমান
১৩. রাজাকার জলিল
পাবনা জেলা
১, রাজাকার আসাদ ২. রাজাকার আসলাম। ৩. রাজাকার আমু
সিরাজগঞ্জ জেলা
রাজাকার আজিজুর রহমান চেয়ারম্যান-বিয়াড়া চর, সিরাজগঞ্জ রাজাকার আব্দুল হানিফ-বিয়াড়া চর, সিরাজগঞ্জ রাজাকার নূরু-বিয়াড়া চর, সিরাজগঞ্জ রাজাকার তমিজ- বাগবাটি, সিরাজগঞ্জ রাজাকার মনু মুন্সি-বাগবাটি, সিরাজগঞ্জ রাজাকার তফিজ ভূঁইয়া
বগুড়া জেলা ১. রাজাকার খােরশেদ তালুকদার
২. রাজাকার গণি ডাক্তার
৩. রাজাকার মজিবর ডাক্তার
৪. রাজাকার আনিসুর রহমান
৫. রাজাকার গােলাম হােসেন
৬. রাজাকার মন্টু
৭. রাজাকার জুলফিকার
৮. রাজাকার মােহাম্মদ আলী
৯. রাজাকার মতিউর রহমান
১০. রাজাকার জাবেদ আলী
১১. রাজাকার ওসমান মওলানা
১২. রাজাকার আজিজ
১৩. রাজাকার জয়নাল
নওগাঁ জেলা
১. রাজাকার লাহা প্রামাণিক
২. রাজাকার আহাদ উল্লাহ
৩. রাজাকার আহমদ উল্লাহ।
নাটোর জেলা
১. রাজাকার মজিবর রহমান।
২. রাজাকার আনােয়ারুল।
৩. রাজাকার জলিল।
৪. রাজাকার সহকারি কৃষি কেমিস্ট জামিল সিদ্দিকী
রাজাকার ফোরম্যান হাজি আসগর আলী ৬. রাজাকার সহকারি প্রকৌশলী আনসারী
কুড়িগ্রাম জেলা ১. রাজাকার শাহাবুদ্দিন
দিনাজপুর জেলা ১. রাজাকার মির্জা রুহুল আমিন
রাজাকার নুরুল হক চৌধুরী রাজাকার মওলানা তমিজউদ্দীন
১২৫
৪. রাজাকার ওমর আলী
৫. রাজাকার ডা. ইসমাইল৬. রাজাকার আলী। ৭.. রাজাকার খবিরুদ্দীন ৮. রাজাকার জালাল উকিল
৯. রাজাকার শামসুল মাস্টার ১০.. রাজাকার ইদ্রিস আলী। ১১.. রাজাকার পজির মেম্বার ১২.। রাজাকার আকবর মেম্বার ১৩. রাজাকার মােঃ রউফ মিয়া ১৪. রাজাকার আঃ বারেক।
রাজাকার ধদা মাহালিয়া ১৬, রাজাকার মুক্তারউদ্দিন ১৭. রাজাকার মােবারক ডাক্তার। ১৮, রাজাকার মােফাজ্জল হােসেন ১৯. রাজাকার মমতাজুল হক চৌধুরী। ২০, রাজাকার মতিয়ার রহমান। ২১, রাজাকার আঃ রহিম ২২.। রাজাকার বাজার মহাজন ২৩. রাজাকার আজিজুল হক ২৪. রাজাকার কসর আলী ২৫. রাজাকার মিজানুর রহমান ২৬. রাজাকার হাকিম বিশ্বাস ২৭. রাজাকার আঃ রহমান। ২৮, রাজাকার ইব্রাহিম মুন্সি ২৯. রাজাকার আবু মুসা মন্ডল
ঠাকুরগাঁও জেলা ১. রাজাকার তাজু
রাজাকার ফজলুর চেয়ারম্যান
রাজাকার হেকিম উদ্দীন ৪. রাজাকার আব্দুর রহিম চেয়ারম্যান
লালমনিরহাট জেলা
১. রাজাকার মহসিন ডাক্তার
২. রাজাকার শহীদ আলী৩. রাজাকার মােশারফ মাস্টার
৪.রাজাকার হাফিজ কমরুদ্দীন ৫. রাজাকার আলাউদ্দীন।
রাজাকার আজগর মহাজন ৭. রাজাকার সাত্তার মহাজন
খুলনা বিভাগ
মাগুরা জেলা
১.। রাজাকার করিম, দক্ষিণ নিশ্চন্তপুর, মাগুরা
রাজাকার আলী সরকার- কলেজ পাড়া, মাগুরা রাজাকার সরওয়ার- কলেজ পাড়া, মাগুরা রাজাকার নওশের মুন্সি- কলেজ পাড়া, মাগুরা রাজাকার তৈয়ব মুন্সি কলেজ পাড়া, মাগুরা রাজাকার আবু সালাম- কলেজ পাড়া, মাগুরা রাজাকার আমিনুল রাশেদ- কলেজ পাড়া, মাগুরা
রাজাকার রিজু গ্রাম- হাজিপুর, মাগুরা ৯, রাজাকার লতিফ গ্রাম- হাজিপুর, মাগুরা।
রাজাকার আউয়াল-গাম- হাজিপুর, মাগুরা ১১. রাজাকার ওবায়দুর রহমান গ্রাম- হাজিপুর, মাগুরা ১২. রাজাকার মাহবুব মওলানা-গ্রাম- হাজিপুর, মাগুরা ১৩. রাজাকার ইউসুফ মিয়া-গ্রাম- হাজিপুর, মাগুরা ১৪. রাজাকার আইয়ুব মিয়া- গ্রাম- হাজিপুর, মাগুরা ১৫. রাজাকার পীর ওবায়দুল্লাহ-মাগুরা ১৬. রাজাকার মাহবুবুর রহমান-মাগুরা ১৭. রাজাকার আইয়ুব চৌধুরী-মাগুরা ১৮, রাজাকার মওলানা শামসুল হক-মাগুরা ১৯, রাজাকার আবু বক্কর শেখ-শালিখা, মাগুরা ২০.। রাজাকার শের আলী-শালিখা, মাগুরা ২১. রাজাকার লাল মিয়া-শালিখা, মাগুরা
ঝিনাইদহ জেলা
১. রাজাকার কমান্ডার নওশের আলী ২. রাজাকার ডেপুটি কমান্ডার নজরুল ইসলাম জোয়ার্দার ৩. রাজাকার সায়েম মােল্লা
মেহেরপুর জেলা
১. রাজাকার মতিন উকিল ২. রাজাকার মেহের উকিল ৩. রাজাকার সাফদার মাস্টার
যশাের জেলা ১. রাজাকার আমজাদ মােল্লা- বাঘারপাড়া, যশাের, ২. রাজাকার কায়েম আলী- বাঘারপাড়া, যশাের, ৩. রাজাকার ডা. গাফফর-উপশহর, যশাের
বাগেরহাট জেলা ১. রাজাকার রজব আলী ফকির, বাগেরহাট সদর ২. রাজাকার আকিজ উদ্দীন, আড়িখালি, বাগেরহাট ৩. রাজাকার সিরাজ মাস্টার, গােটাপাড়া, বাগেরহাট
রাজাকার নুরুল ইসলাম-গােটাপাড়া, বাগেরহাট রাজাকার শাহজাহান-গােটাপাড়া, বাগেরহাট রাজাকার আব্দুল লতিফ তালুকদার, মােড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট রাজাকার কাসেম মেম্বার রাজাকার মজিদ কসাই রাজাকার ড. মােসলেম উদ্দীন
বরিশাল বিভাগ
বরিশাল জেলা ১. রাজাকার নিলু কারিকর- আগৈলঝাড়া, বরিশাল
পটুয়াখালী জেলা ২. রাজাকার মশু মিয়া
৩. রাজাকার মহিউদ্দিন
৪. রাজাকার আলাউদ্দীন সিকদার
পিরােজপুর জেলা
১.। রাজাকার মানিক খন্দকার ২. রাজাকার আশরাফ আলী শিকদার ৩. রাজাকার হারুন
রাজাকার হামিদ জমাদার রাজাকার মােসলেম খাঁ রাজাকার হামিদ মজুমদার রাজাকার শুকুর মৃধা রাজাকার সরদার সুলতান মাহমুদ
রাজাকার ইসমাইল হােসেন | রাজাকার এ্যাডভােকেট আজিজ মল্লিক ১১. রাজাকার সালেহ আহমেদ ১২. রাজাকার ব্যারিস্টার আখতারউদ্দিন ১৩, রাজাকার মান্নান ১৪. রাজাকার আশাব আলী শিকদার ১৫. রাজাকার আজিজুল হক মােক্তার ১৬. রাজাকার দেলােয়ার হােসেন সাঈদী ১৭. রাজাকার শর্ষিনার পীর আবু জাফর মােহাম্মদ সালেহ ১৮. রাজাকার মওলানা আব্দুর রহীম
বরগুনা জেলা
১. রাজাকার দুলাল মেম্বার
রাজাকার ইমামুদ্দিন রাজাকার শামসু আজাহার মির্জা রাজাকার ইমামুদ্দিন রাজাকার চানমিয়া রাজাকার শামসু রাজাকার নুরুদ্দিন খলিফা রাজাকার ইমামুদ্দিন
১০. রাজাকার শামসু ১১. রাজাকার খলিলুর রহমান ১২. রাজাকার আব্দুল হক
ঝালকাঠি জেলা
১. রাজাকার মােতাহার গােমস্তা ২. রাজাকার ওয়াজেদ গােমস্তা
রাজাকার ওসি সেকান্দার ৪. রাজাকার সিআই শাহ আলম
সিলেট বিভাগ মৌলভীবাজার জেলা ১. রাজাকার মােঃ ইদ্রিস ২. রাজাকার হাজি আরিফ ৩. রাজাকার চেয়ারম্যান আসাদ গাজী
সিলেট জেলা ‘১, রাজাকার ওয়াহিদ উল্লাহ
রাজাকার সরাফত উল্লাহ ৩. রাজাকার আবদুস সালাম
রাজাকার আব্দুল আহাদ চৌধুরী ৫. রাজাকার দালাল ইউনুস মিয়া
সুনামগঞ্জ জেলা
১. রাজাকার ফকির চেয়ারম্যান
রাজাকার ফারুত চৌধুরী রাজাকার রেজা মিয়া রাজাকার আনােয়ার মিয়া রাজাকার আঃ সাত্তার। রাজাকার আঃ গণি রাজাকার রফিক রাজাকার নাসিম
১৩০
৯. রাজাকার লিডার আহমদ আলী খান
১০. রাজাকার মুসলিম উল্লাহ
১১. রাজাকার আবদুল ওয়াতির
১২. রাজাকার আব্দুর রাজ্জাক, জগন্নাথপুর রাজাকার ইয়াহিয়া, জগন্নাথপুর
.
চৗগ্রাম বিভাগ
নােয়াখালী জেলা
১. রাজাকার- ফজলে আজিম
রাজাকার আব্দুর রব ৩. রাজাকার দরবেশ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ১. রাজাকার ফরিদুল্লাহ ঠাকুর
সূত্র : একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরােধী অপরাধ ও গণহত্যা সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের তালিকা ডা. এম এ হাসান আহ্বায়ক, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিটুথ কমিশন ফর জেনােসাইড ইন বাংলাদেশ। ফোন: ৮৯১৪৫০৬, ফ্যাক্স: ৮৯১৩৮১৯, মাে: ০১৮১৭০০৭৯২১
শান্তি কমিটির সদস্য
১৫ এপ্রিল ১৯৭১ ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ যাবত শান্তি কমিটি নামে পরিচিত শান্তি কমিটির নাম পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি রাখা হয়েছে বলে ১৫ এপ্রিল ১৯৭১ এপিপি পরিবেশিত খবরে বলা হয়। (সূত্র: ১৬ এপ্রিল ১৯৭১, সংগ্রাম) এর ২১ সদস্যের কার্যকরী কমিটিতে যারা ছিল তারা হল
১. সৈয়দ খাজা খয়েরুদ্দিন
২. এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম
৩. অধ্যাপক গােলাম আযম|
৪. মাহমুদ আলী।
আব্দুল জব্বার খদ্দর মওলানা সিদ্দিক আহমদ আবুল কাশেম মােহন মিয়া
মওলানা সৈয়দ মােহাম্মদ মাসুম ১০.. আব্দুল মতিন ১১.। অধ্যাপক গােলাম সারােয়ার ১২. ব্যারিস্টার আফতাব উদ্দিন ১৩, পীর মােহসেন উদ্দিন ১৪. | এএসএম সােলায়মান ১৫.. এ. কে রফিকুল হােসেন ১৬, নুরুজ্জামান ১৭, আতাউল হক খান ১৮. তােরাহা বিন হাবিব ১৯.. মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) আফসার উদ্দিন ২০. দেওয়ান ওয়ারাসাত আলী এবং ২১. হাকিম ইরতেজাউর রহমান খান
শান্তি কমিটির সাব-কমিটিঃ শান্তি কমিটি গঠন করার জন্য অধ্যাপক গােলাম আযম, মাহমুদ আলী, আবদুল জব্বার খদ্দর ও আবুল কাসেমকে দায়িত্ব প্রদান করা হয় ।
কমিটি হাবিবুল হকের পরিবর্তে মাহবুবুজ্জামানকে লালবাগ এলাকার একজন সংযোেগ অফিসার হিসেবে নিয়ােগ দেয়। তাছাড়া কমিটি ৩৭৫, উত্তর শাহজাহানপুরের ফজলুল হক, ১৫১, দক্ষিণ কমলাপুরের শাহ মইজুদ্দিন ও ২২৫ মালীবাগের আব্দুল হাইকে রমনা থানার এবং ২৩ সেন্ট্রাল রােডের মসিহল ইসলাম ও আব্দুল খালেককে লালবাগ থানার সংযােগ অফিসার নিয়ােগ করে। কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কার্যকরী কমিটির দৈনন্দিন কার্যনির্বাহের জন্য নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়। এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক গােলাম আযম, এ জে, খদ্দর, এ এস এম সােলায়মান, আব্দুল মতিন ও এস এস কে খয়েরুদ্দিন।
শান্তি কমিটির সমর্থক ও থিঙ্ক ট্যাংক
বিচারপতি এ কে এম বাকের, মওলানা সাইয়েদ মুস্তফা মাহমুদ আল মাদানী, মওলানা মুহম্মদ আবদুর রহীম, পীর মােহসেন উদ্দীন, অধ্যাপক গােলাম আযম, এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম, ড. হাসান জামান, ড: কাজী দীন মুহাম্মদ, ড. মফিজুল্লাহ কবীর, ড. মােহর আলী, ড. হাবিবুল্লাহ, অধ্যক্ষ জালালুদ্দিন, ড. মুস্তাফিজুর রহমান, ব্যারিষ্টার আখতার উদ্দীন, ব্যারিষ্টার কোরবান আলী, অধ্যাপক আবদুল গফুর, মওলানা ওবায়দুল্লাহ, মওলানা মােস্তাসির আহমদ রহমানী, অধ্যক্ষ এ আর ফাতেমী, অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খান, এডভােকেট এ. টি. সাদী, মেজর আফসার উদ্দীন, মওলানা সাইয়েদ মুহাম্মদ মাসুদ এবং ডা. গােলাম মােয়াজ্জেম ।
ঢাকা বিভাগ
ঢাকা জেলা ১. শেখ ঈমান আলী-শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান- রায়েরবাজার, ঢাকা। ২. এবিএম খালেক মজুমদার -শান্তি কমিটির সদস্য, ঢাকা শহর
আশরাফুজ্জামান -শান্তি কমিটির সদস্য, ঢাকা। শফিউদ্দিন আহমেদ-শান্তি কমিটির আহ্বায়ক, নবাবগঞ্জ, ঢাকা নূরুল ইসলাম চৌধুরী-পিডিপি নেতা, নবাবগঞ্জ, ঢাকা সিরাজ মাস্টার-শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক, নবাবগঞ্জ, ঢাকা আলবদর হেদায়েত উল্লাহ-শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, নবাবগঞ্জ, ঢাকা মওলানা আহমদ উল্লাহ-শান্তি কমিটির সদস্য, নবাবগঞ্জ, ঢাকা আতাউদ্দীন, শান্তি কমিটির সদস্য, নবাবগঞ্জ, ঢাকা ইসলাম খান- শান্তি কমিটির সদস্য, নবাবগঞ্জ, ঢাকা
১১. হেদায়েত উল্লাহ- শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, রায়েরবাজার, ঢাকা।
ময়মনসিংহ জেলাঃ ময়মনসিংহ সদর
১. এডভােকেট শামছুদ্দিন আহমদ, গ্রাম-বাঘমারা, সদস্য, জেলা শান্তি কমিটি, থানা
গফরগাঁও। মৃত গিয়াস উদ্দিন মাস্টার, শান্তি কমিটির সদস্য, গ্রাম-বেলদিয়া, থানা-গফরগাঁও মােঃ ফজলুর রহমান সুলতান, শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-গফরগাঁও
মৃত মফিজ উদ্দিন চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-গফরগাঁও ৫. মৃত মওলানা আব্দুল বাতেন, শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-গফরগাঁও
নান্দাইল থানা ১. কাজী তমাদক আলী – শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ ২. এ এফ এম ইসহাক – শান্তি কমিটির সহ-সভাপতি, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ
আব্দুল গনি ভূঁইয়া – শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ। ডা. আবদুল খালেক – শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ আরিফ উদ্দিন আকন্দ – শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ ইরাহিম মাস্টার (ভাটিসাভার) – শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ মােবারক আলী – শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ। মােয়াজ্জেম হােসেন সরকার -শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ ইয়াজদর সরকার – শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ। আলী আকবর ভূঁইয়া – শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ মমতাজউদ্দিন ভূঁইয়া – শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ নিলুর বাপ – শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ
আব্দুল্লাহ খান – শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ ১৪. হাসান আলী ফকির – শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ ১৫. মােসলেমউদ্দিন – শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ ১৬, আব্দুল হামিদ কোম্পানি – শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ ১৭. কুতুবউদ্দিন খান – শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ ১৮. মহব্বত আলী – শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- নান্দাইল, ময়মনসিংহ
হালুয়াঘাট থানা
১. হযরত আলী-শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
মােঃ শামছুল ইসলাম (শামসু খলিফা)- শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ তাজী মামুদ -শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ। মােঃ মােফাজ্জল হােসেন খাঁ-শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ মােঃ আব্দুল কাশেম সিকদার-শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ মােঃ আঃ জলিল- শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ হযরত আলী চেয়ারম্যান -শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ মােঃ আজিজুল ইসলাম শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
মােঃ হরমুজ আলী -শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ ১০. ডা, কোবাদুজ্জামান -শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
আব্দুল মান্নান মিয়া (দুদু মিয়া) -শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট,
ময়মনসিংহ। ১২. মােঃ রুহুল আমিন (চেয়ারম্যান) -শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট,
ময়মনসিংহ ১৩. মওলানা জাফর আহমদ-শান্তি কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, থানা-হালুয়াঘাট,
ময়মনসিংহ ১৪.. বাহার উদ্দিন মেম্বার (মৃত), সাং-কয়রাহাটি- শান্তি কমিটির সদস্য, থানা
হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ কুবাদুজ্জামান মেম্বার (মৃত), সাং-তেগুরিয়া- শান্তি কমিটির সদস্য, থানাহালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ হাজী এবাদ আলী (মৃত), সাং-মাঝিয়ালী- শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ। ইউসুফ উদ্দিন সরকার (মৃত), সাং মাঝিয়ালী- শান্তি কমিটির সদস্য, থানাহালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ। কছিম উদ্দিন মেম্বার (মৃত), সাং-আছরল পাড়া- শান্তি কমিটির সদস্য, থানাহালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ। সৈয়দ গােলাম মর্তুজা (তুলা চেয়ারম্যান)- শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ গ্রাম্য ডা. কোবাদুজ্জামান, সাং-বীরগুছিনা -শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ মনহাজী মৃত, সাং-দরিনসুয়া -শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
১৩৫
২২. মীর হােসেন, পিতা- মৃত কেলিশেখ, সাং-মাঝিয়ালী, শান্তি কমিটির সদস্য, থানা
হালুয়াঘাট। ২৩. মৃত হােসেন আলী মাতব্বর (চেয়ারম্যান)- শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট,
ময়মনসিংহ। ২৪. হযরত আলী চেয়ারম্যান -শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
রিয়াজউদ্দিন মৃত, সাং-মনিকুড়া- শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট,
ময়মনসিংহ। ২৬. আঃ মনি -শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ ২৭. রমজান আলী -শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ ২৮. আকরাম হােসেন -শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ ২৯. আঃ বারেক মৃত, সাং-ইসলামপুর, শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-হালুয়াঘাট,
ময়মনসিংহ
মুক্তাগাছা থানা
১. কেরামত আলী তালুকদার (মৃত.), সভাপতি, থানা শান্তি কমিটি ও সাবেক এমপি,
থানা-মুক্তাগাছা। ২. আব্বাস আলী (মৃত.), তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান ও পৌর শান্তি কমিটির
সভাপতি, থানা-মুক্তাগাছা ফয়জুর রহমান (মৃত.), চেয়ারম্যান দাওগাঁও ইউনিয়ন শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-মুক্তাগাছা আব্দুর রাজ্জাক (মৃত.), চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ ডালিম চেয়ারম্যান (ডালিম মৌলভী) (মৃত.), শান্তি কমিটির সভাপতি, থানামুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ। খন্দকার নুরুল ইসলাম (তােতা মৌলভী) (মৃত.), শান্তি কমিটির সভাপতি, থানামুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ। সুরুজ্জামান চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ। শামছুল হক চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ আব্দুল হামিদ মৌলভী (মৃত.), চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা
মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ ১০. আব্দুর রাজ্জাক (মৃত.), চেয়ারম্যান ঘােগা ইউনিয়ন শান্তি কমিটির সভাপতি ছিল। ১১. শেখ আব্দুল হাকিম চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-মুক্তাগাছা,
ময়মনসিংহ
ফুলপুর থানা
১. চেয়ারম্যান জোবেদ ফকির- শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, থানা- ফুলপুর,
ময়মনসিংহ আমির খান- শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- ফুলপুর, ময়মনসিংহ। রজব আলী ফকির- শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- ফুলপুর, ময়মনসিংহ আবু বকর সিদ্দিক, শান্তি কমিটির সদস্য, থানা- ফুলপুর, ময়মনসিংহ মওলানা ফয়জুর রহমান, সভাপতি, জেলা শান্তি কমিটি, থানা-ফুলপুর,
ময়মনসিংহ। | ৬. আবুল জলিল খান (মৃত), সম্পাদক ফুলপুর, শান্তি কমিটি, থানা-ফুলপুর,
ময়মনসিংহ ময়ছয়উদ্দিন তালুকদার (মৃত), সম্পাদক পুটিয়া, শান্তি কমিটি, থানা-ফুলপুর, ময়মনসিংহ
ভালুকা থানা
মােজাম্মেল হক মেম্বার, মৃত – শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক, থানা-ভালুকা, ময়মনসিংহ আঃ গণি মেম্বার- শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ভালুকা, ময়মনসিংহ
আব্দুল ওয়াহাব খান- শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ভালুকা, ময়মনসিংহ ৪. মৌলভী তােরাব আলী- শান্তি কমিটির অন্যতম সদস্য, থানা-ভালুকা, ময়মনসিংহ ৫. আফাক উদ্দিন বেপারী (চেয়ারম্যান)- শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-ভালুকা,
ময়মনসিংহ মমাঃ নাসির উদ্দিন (চেয়ারম্যান) – শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-ভালুকা, ময়মনসিংহ
ফুলবাড়িয়া থানা | ১. মােঃ আব্দুস সামাদ মাস্টার (টিক্কা খান)-শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ফুলবাড়িয়া,
জেলা-ময়মনসিংহ।
ডা, আবুল হােসেন-শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ। | ৩. ডা. গােলামুর রহমান, মৃত, শান্তি কমিটির সদস্য, গ্রাম-ফুলবাড়িয়া, থানা
ফুলবাড়িয়া মৌলভী আব্দুল কুদ্স, মৃত, শান্তি কমিটির সদস্য, গ্রাম-ফুলবাড়িয়া, থানাফুলবাড়িয়া মােঃ আঃ সালাম মাস্টার, শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ।
৬. চৌদার, শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ।৭. শাহাবউদ্দিন, মৃত, গ্রাম-বাশদী, শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ। মােকসেদ আলী সরকার, মৃত, শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ সফর আলী সরকার (সফর চেয়ারম্যান), মৃত, শান্তি কমিটির সদস্য, থানাফুলবাড়িয়া। আজিজুল হক (হক সাব), মৃত, শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ফুলবাড়িয়া,
ময়মনসিংহ। ১১. সাবেদ আলী আকন্দ চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, থানা-ফুলবাড়িয়া,
ময়মনসিংহ। ১২. মৃত ইয়াকুব আলী চেয়ারম্যান শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ
শেরপুর জেলা ১. মােঃ ইয়াদ আলী খান-শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক, থানা+ জেলা- শেরপুর ।
এডভােকেট হাবিবুর রহমান, (মৃত), শান্তি কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, শেরপুর । টাউন, শেরপুর গােলাম হক চেয়ারম্যান, মৃত, শান্তি কমিটির সভাপতি, সাং- আন্ধারিয়া, থানা+
জেলা- শেরপুর, ৪. মােঃ ইয়াদ আলী খান, শান্তি কমিটি, সাং- সূৰ্য্যদী, থানা+ জেলা- শেরপুর
জামালপুর জেলা ১. মক্তব কবিরাজ, মৃত, সাং-মেডিকেল রােড, সভাপতি, শান্তি কমিটি, জামালপুর।
শহর, জামালপুর। ২. ডা. মােঃ আব্দুস সামাদ খান, সাধারণ সম্পাদক শান্তি কমিটি, সাং-বকুলতলা,
জামালপুর ৩. মােবারক হােসেন ইসলামপুর থানার শান্তি কমিটির আহবায়ক ছিল।
নেত্রকোনা জেলা ১. শেখ নজমুল হােসেন-শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক
আবুল হােসেন চেয়ারম্যান-শান্তি কমিটির সদস্য
ইব্রাহিম চেয়ারম্যান- শান্তি কমিটির সদস্য। ৪. বদরুল-শান্তি কমিটির সদস্য।
৫. মাহতাবউদ্দিন-শান্তি কমিটির সদস্য
ছােয়াব উদ্দিন চেয়ারম্যান- শান্তি কমিটির সদস্য ৭. এ কে ফজলুল হক, মৃত, সাং-দেওপুর, নেত্রকোনা শহর, শান্তি কমিটির
চেয়ারম্যান আব্দুল হেকিম চেয়ারম্যান, সাং-বামুনগাঁও, থানা-বারহাট্টা। শান্তি কমিটির অন্যতম নেতা
ইব্রাহিম চেয়ারম্যান, থানা-পূর্বধলা, শান্তি কমিটির অন্যতম সংগঠক ১০. খােকা, মৃত, সাং-ছিলামপুর, থানা-কেন্দুয়া, শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ১১. আঙু, সাং-ঘগড়া, থানা-কেন্দুয়া, বদরুল, সাং কান্দিউড়া, থানা-কেন্দুয়া, শান্তি
কমিটির সদস্য
মৃত আবুল হােসেন শেখ, থানা-মােহনগঞ্জ, শান্তি কমিটির নেতা। ১৩. মাহতাবউদ্দিন, সাং-বড়কাশিয়া, থানা-মােহনগঞ্জ, মােহনগঞ্জ থানা শান্তি কমিটির
দেওয়ান মসনিয়া চৌধুরী, মৃত, সাং-ফতেপুর থানা-মদন, সে মদন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান
কিশােরগঞ্জ জেলা
১. লােকমান মৌলভী-শান্তি কমিটির সভাপতি, কিশােরগঞ্জ সদর
মওলানা আতাউর রহমান খান- ইসলামী পাটির সাধারণ সম্পাদক, কিশােরগঞ্জ সদর। আব্দুর রহমান সরকার-শান্তি কমিটির সভাপতি, কিশােরগঞ্জ সদর মওলানা মুসলেহউদ্দিন- শান্তি কমিটির সভাপতি, কিশােরগঞ্জ সদর আব্দুল আওয়াল খান- শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক, যশােদল, কিশােরগঞ্জ সদর মেনু চেয়ারম্যান- শান্তি কমিটির অন্যতম নেতা, গ্রাম-চিকনীরচর, কিশােরগঞ্জ সদর। মাহতাব উদ্দিন চেয়ারম্যান- শান্তি কমিটির সভাপতি, গ্রাম-কলাপাড়া, কিশােরগঞ্জ সদর
৮. আব্দুর রহমান সরকার- শান্তি কমিটির সভাপতি, গ্রাম-যশােদল, কিশােরগঞ্জ সদর
গাজীপুর জেলা
১. মজিদ সরকার-শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান
ফরিদপুর জেলা
২. ডা: কাজী ইমদাদুল হক -শান্তি কমিটির সদস্য ৩. আজিরুদ্দীন খান -শান্তি কমিটির সদস্য ৪. আনিস কাজী -শান্তি কমিটির সদস্য। ৫. আদিল উদ্দীন হাওলাদার -শান্তি কমিটির সদস্য
মাদারীপুর জেলা ১. হামিদ খােন্দকার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান
আব্দুর রহমান হাওলাদার -শান্তি কমিটির সভাপতি মহিউদ্দীন -শান্তি কমিটির সহ-সভাপতি
আব্দুল হামিদ খােন্দকার শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক ৫. মওলানা খলিলুর রহমান -শান্তি কমিটির সদস্য
গােপালগঞ্জ ১. আঃ রব মােল্লা- শান্তি কমিটির সদস্য
টাঙ্গাইল জেলা
মওলানা লুৎফর -শান্তি কমিটির সদস্য ৩, মওলানা আশরাফ আলী-শান্তি কমিটির সদস্য ৪. মওলানা ওয়াদুদ -শান্তি কমিটির সদস্য
রাজশাহী বিভাগ
রাজশাহী জেলা ১. আয়েন উদ্দীন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ২. মােসলেম উদ্দিন-শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান
পাবনা জেলা ১. রহিম বক-শান্তি কমিটির সদস্য ২. খােদা বক্স খান -শান্তি কমিটির সদস্য
মওলানা নাসির উদ্দিন -শান্তি কমিটির সদস্য ৪. ইসমাইল হােসেন -শান্তি কমিটির সদস্য।
আব্দুস সামাদ মহলদার -শান্তি কমিটির সদস্য
১৪০
গাইবান্ধা জেলা
১. আজিজুর রহমান খন্দকার-শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান
নীলফামারী জেলা ১. কাইয়ুম মুন্সী-শান্তি কমিটির সদস্য
ঠাকুরগাঁও জেলা ১. মােঃ গােলাম রসুল -শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক
খুলনা বিভাগ
মাগুড়া জেলা ১. রিজু-শান্তি কমিটির সদস্য ২. কবির -শান্তি কমিটির সদস্য
ঝিনাইদহ জেলা ১. তােবারক -শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ২. হাবিবুর রহমান জোয়ার্দার -শান্তি কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ৩. মজনু -শান্তি কমিটির সেক্রেটারি ৪. হােসেন মােল্লা -শান্তি কমিটির সদস্য
বরিশাল বিভাগ
পটুয়াখালী জেলা ১. আলাউদ্দিন সিকদার- শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ২. মােতাহার খন্দকার- শান্তি কমিটির সদস্য।
পিরােজপুর জেলা ১. সাত্তার মিয়া-শান্তি কমিটির সেক্রেটারি
সিলেট বিভাগ
মৌলভীবাজার জেলা ১. বিএবিটি আব্দুল বারী -শান্তি কমিটির সদস্য।
চট্টগ্রাম বিভাগ নােয়াখালী জেলা ১. মুনীর-শান্তি কমিটির সেক্রেটারি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ১. মােঘল মিয়া-শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান
সূত্র: একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরােধী অপরাধ ও গণহত্যা সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের তালিকা ডা. এম এ হাসান। আহ্বায়ক, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিটুথ কমিশন ফর জেনােসাইড ইন বাংলাদেশ। ফোন: ৮৯১৪৫০৬, ফ্যাক্স: ৮৯১৩৮১৯, মাে: ০১৮১৭০০৭৯২১
আলবদর বাহিনীর তালিকা
ঢাকা বিভাগ
টাঙ্গাইল জেলা:
১. আনিস- আল-বদর ময়মনসিংহ জেলা: ১. আশরাফুজ্জামান- আলবদর বাহিনীর প্রধান ২. মােঃ নুরুল ইসলাম-আল-বদর প্রধান।
ক্বারী আব্দুল কাদের- আল-বদর কমান্ডার মাে: আবুল বাশার (বাসায়েত)- আলবদর সুরুজ আলবদর কমান্ডার জুলু -আলবদর
জি. এম. এনামুল হক-আলবদর ৮. মওলানা জুবায়েদ আলী, আলবদর
কাজী মউদ্দিন- আলবদর ১০. মা: ফয়জুল বারী- আলবদর
মাকসুদ,আলবদরের জেলা ডেপুটি কমান্ডার ১২. মওলানা আব্দুস সামাদ- আলবদর ১৩. মা: আব্দুস সামাদ- আলবদর ১৪. আ: কুদুস মহুরী- আলবদর ১৫. মা: আশরাফ আলী- আলবদর ১৬. মওলানা এরশাদ উল্লাহ- আলবদর ১৭. মওলানা আবুল কাশেম বালিয়া- আলবদর ১৮. মওলানা দৌলত আলী- আলবদর ১৯. মওলানা গিয়াস উদ্দিন- আলবদর ২০. আশরাফ হােসেন- ইসলামী ছাত্রসংঘ, ময়মনসিংহ ২১. শামছুল হক- সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ, ঢাকা ফুলবাড়িয়া থানা। ১. জি. এম. এনামুল হক- আলবদর ২. মওলানা জুবায়েদ আলী- আলবদর
কাজী মহিউদ্দিন- আলবদর মাে: ফয়জুল বারী- আলবদর মাকসুদ- আলবদর জেলা ডেপুটি কমান্ডার
৬.মওলানা আব্দুস সামাদ- আলবদর ৭. মাে: আব্দুস সামাদ- আলবদর ৮. আ: কুদুস মহুরী- আলবদর ৯. মাে: আশরাফ আলী- আলবদর
শেরপুর জেলা
১. মােঃ কামরুজ্জামান- আলবদর বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব কমান্ড ২. জয়নাল – আলবদর বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ৩. শাহজাহান চৌধুরী- আলবদর বাহিনীর অন্যতম রূপকার
আনােয়ার হােসাইন – আলবদর বাহিনীর কর্ণধার ৫. কামরান, আলবদর বাহিনীর অন্যতম রূপকার
শেরপুর সদর
১. জয়নাল- রাজাকার, শেরপুর টাউন, শেরপুর
মােঃ কামরুজ্জামান, পিতা-ইনসান আলী, গ্রাম-কুমরি মুদিপাড়া, পােঃ + ইউনিয়ন- বাজিতখিলা, থানা+ জেলা- শেরপুর
এ মান্নান, পিতা-মৃত মহিউদ্দীন মন্ডল, কাচারী পাড়া, জামালপুর ৪. হারুন উর রশিদ শেলি, পিতা-মৃত জসীমউদ্দিন, কাচারী পাড়া, জামালপুর
আব্দুল বারী, পিতা-আব্দুর রহমান মজুরী, বগাবাইদ, জামালপুর সৈয়দ আশরাফ হােসেন, পিতা- মৃত সৈয়দ বিতাল মিয়া, মিয়াপাড়া, তবলপুর,
জামালপুর ৭. প্রফেসর শরীফ আহমেদ, পিতা-মৃত জাফর আহমেদ, কাচারী পাড়া
জামালপুর। ১. মুক্তা, পিতা-মৃত জোবেদ আলী, কাচারী পাড়া, জামালপুর ২. হাসেম, পিতা-মৃত আব্দুল লতিফ, কাচারী পাড়া, জামালপুর। ৩. মােতাহার আলী, গ্রাম-ফুলকাচা, মেলানদহ, জামালপুর
ফুলবাড়িয়া থানা ১. মওলানা জুবাদেয়দ আলী, আলবদর, গ্রাম-জোরবাড়িয়া, থানা-ফুলবাড়িয়া,
ময়মনসিংহ জি, এম, এনামুল হক, আলবদর, গ্রাম-জোরবাড়িয়া রিয়াজ উদ্দিন, আলবদর, গ্রাম-ভালুকা, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ
৪. কাজী মহিউদ্দিন, আলবদর, গ্রাম-চৌদার, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ।৫. মাে: ফয়জুল বারী, আলবদর, গ্রাম-ফুলবাড়িয়া, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলাময়মনসিংহ। মাকসুদ, পিতা- মৃত মাহমুদ আলী, আলবদর, গ্রাম-বইলজান, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ। আ: কুদুস মুহুরী, আলবদর, গ্রাম-দণিপাড়া, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ গফরগাঁও থানা মওলানা রিয়াজউদ্দিন, মৃত, আলবদর, গ্রাম-অললী, থানা-গফরগাঁও, জেলাময়মনসিংহ
জামালপুর জেলা
১. মা: আশরাফ হােসাইন-আলবদর বাহিনীর চিফ অফ কমান্ড বা আলবদর প্রধান
আব্দুর সাত্তার (নুরুল), আলবদর, পিতা- ময়েজ মন্ডল, সাং-জঙ্গলপাড়া, থানাজামালপুর সদর। আব্দুল কাদের, আলবদর, পিতা-মফিজউদ্দিন, সাং-জঙ্গল পাড়া, থানা-জামালপুর সদর।
| নেত্রকোনা জেলা ১. হদায়েত উল্লাহ-আলবদর প্রধান ২. হুমায়ুন কবীর, আলবদর, নেত্রকোনা
সামসুল হুদা-আল মােজাহিদ প্রধান
কিশােরগঞ্জ জেলা।
১. মওলানা আব্দুল হামিদ (সাবেক মাদ্রাসা সুপার), আলবদর | ২. মওলানা আব্দুল খালেক, আলবদর | ৩. মওলানা আতাউর রহমান খান- ইসলামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ৪.
আব্দুল হাসিম, আলবদর
সূত্র: একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরােধী অপরাধ ও গণহত্যা সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের তালিকা, ডা. এম এ হাসান, আহ্বায়ক, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি টুথ কমিশন ফর জেনােসাইড ইন বাংলাদেশ ফোন: ৮৯১৪৫০৬, ফ্যাক্স: ৮৯১৩৮১৯, মাে: ০১৮১৭০০৭৯২১
১৪৫
বিহারি যুদ্ধাপরাধীদের নামের তালিকা
ঢাকা বিভাগ
ঢাকা জেলা
১. সাইদুর রহমান- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা। ২. আহমেদ- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা।
জানু- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা চুয়া- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা মহররম – পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা ভকসা মাছওয়ালা- মিরপুর, ঢাকা বদরু-মিরপুর, ঢাকা রফিক- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা। সালাউদ্দিন- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা বেনারসী- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা
মাহমুদ আলী- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা। ১২.। হিরু-পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা
রাব্বী- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা। ১৪.। জিলানী- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা ১৫. আক্তার গুন্ডা- মিরপুর, ঢাকা। ১৬. নাদির গুন্ডা- মিরপুর, ঢাকা।
আজিজ- মিরপুর, ঢাকা। ১৮.। ওয়ালী খান- মিরপুর, ঢাকা। ১৯. । মােহররম-মিরপুর, ঢাকা ২০. শাহজাদা-মিরপুর, ঢাকা ২১. কাইয়ুম গুন্ডা- মিরপুর, ঢাকা। ২২. আফতাব হােসেন-জল্লাদখানা, মিরপুর, ঢাকা।
আব্বাস-সেনপাড়া পর্বতা, শিয়ালবাড়ি, মিরপুর, ঢাকা ২৪. আমজেদ মেম্বার-সেনপাড়া পর্বতা, শিয়ালবাড়ি, মিরপুর, ঢাকা ২৫. দিলা খান- জল্লাদখানা, মিরপুর, ঢাকা। ২৬.. মেহের আলী খান- জল্লাদখানা, মিরপুর, ঢাকা। ২৭. মজিদ বােম্বার- মিরপুর, ঢাকা।
২৮. কালু- মিরপুর, ঢাকা ২৯. গনি- মিরপুর, ঢাকা। ৩০. মুজাহিদ- মিরপুর, ঢাকা ৩১. কিয়াম- মিরপুর, ঢাকা ৩২. সাইদুল- মিরপুর, ঢাকা ৩৩. জলিল- মিরপুর, ঢাকা ৩৪. শাহজাদা মিরপুর, ঢাকা ৩৫. মাজহার- মিরপুর, ঢাকা ৩৬. জাবেদ- মিরপুর, ঢাকা ৩৭. হানিফ- মিরপুর, ঢাকা ৩৮. আনসারী-মিরপুর, ঢাকা ৩৯. আকবর- মিরপুর, ঢাকা ৪০. ইকবাল- মিরপুর, ঢাকা ৪১. মাস্তানা- মিরপুর, ঢাকা ৪২. কাঘা- মিরপুর, ঢাকা ৪৩. হাকু- মিরপুর, ঢাকা ৪৪. ছেদি- মিরপুর, ঢাকা ৪৫. আশরাফ- মিরপুর, ঢাকা ৪৬. আলী আহাম্মদ- মিরপুর, ঢাকা ৪৭. মঞ্জু মাস্তানা- মিরপুর, ঢাকা
রাজবাড়ি জেলা
১. আব্দুর রব মাস্টার ২. সৈয়দ কামার
হাসান উল্লাহ জাহান উল্লাহ আলাউদ্দিন
ময়মনসিংহ
১. নূর মােহাম্মদ, গ্রাম-আমুয়াকান্দা, পােস্ট-ফুলপুর, ময়মনসিংহ
আনােয়ার- থানা-ফুলপুর, ময়মনসিংহ ঈদ মাসুদ – থানা-ফুলপুর, ময়মনসিংহ আঃ জব্বার ফুলপুর বাসস্ট্যান্ড- থানা-ফুলপুর, ময়মনসিংহ
জামালপুর
১. আতাব, সাং-ফুলবাড়িয়া রেলগেইটপাড়া, জামালপুর শহর, জামালপুর
নেত্রকোনা ১. মদিনা, থানা-মােহনগঞ্জ
রাজশাহী বিভাগ
রাজশাহী জেলা ২. তৈয়ব আলী (অবাঙালি স্টেননা) ৩. মুজাফফর। ৪. দ্বীন মােহাম্মদ
নাটোর জেলা ১. সাদেক ২. দালাল মাসাদ্দি ৩. হাফেজ আব্দুর রহমান-নাটোর
গাইবান্ধা জেলা ১. বিহারি- গােলাম
নীলফামারী জেলা ১. নিসার আহমেদ
সালারু গুন্ডা
ইদ্রিস ডাকাত ৪. মহিউদ্দিন গুড়া
লালমনিরহাট ১. মহাজন
ঠাকুরগাঁও জেলা
১. মােহাম্মদ আলী
খুলনা বিভাগ
যশাের জেলা ১. ভুট্টা- চাঁচড়া, রায়পাড়া, যশাের
২. কানা রশীদ- চাঁচড়া, রায়পাড়া, যশাের I ৩. মােস্তাফা- চাঁচড়া, রায়পাড়া, যশাের
৪. ওয়াসিয়া- চাঁচড়া, রায়পাড়া, যশোের | ৫. আবুল- চাঁচড়া, রায়পাড়া, যশাের।
সিলেট বিভাগ
মৌলভীবাজার জেলা
১. সর্দার খান
চগ্রাম বিভাগ
১. নেতা আইয়ুব খান
সূত্র: একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরােধী অপরাধ ও গণহত্যা সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের তালিকা ডা. এম এ হাসান। আহ্বায়ক, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিটুথ কমিশন ফর জেনােসাইড ইন বাংলাদেশ ফোন: ৮৯১৪৫০৬, ফ্যাক্স: ৮৯১৩৮১৯, মােবাঃ ০১৮১৭০০৭৯২১
১৪৯