You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.13 | হাসনাবাদ যুদ্ধ (লাকসাম, কুমিল্লা) - সংগ্রামের নোটবুক

হাসনাবাদ যুদ্ধ (লাকসাম, কুমিল্লা)

হাসনাবাদ যুদ্ধ (লাকসাম, কুমিল্লা) সংঘটিত হয় ১৩ই সেপ্টেম্বর সোমবার। এতে ৮-১০ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত এবং ১৪-১৫ জন আহত হয়। লাকসাম (বর্তমান মনোহরগঞ্জ) উপজেলার হাসনাবাদ বাজারের উত্তরে চৌমুহনী নামক স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘটিত এ সম্মুখ যুদ্ধ ‘হাসনাবাদ যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার বি এম কলিমউল্লাহ ভূঁইয়া, সুবেদার জহিরুল হক পাঠান, ৩নং এফএফ থানা কমান্ডার আবুল বাশার, বিএলএফ কমান্ডার সায়েদুল ইসলাম এবং বিএলএফ-এর টু-আই-সি এ টি এম আলমগীরের যৌথ নেতৃত্বে এ-যুদ্ধ পরিচালিত হয়। যুদ্ধের কিছুদিন পূর্বে চিতোষী খেয়াঘাট এলাকায় পাকিস্তানি সৈন্যরা ক্যাম্প স্থাপন করে। পাকবাহিনী যে-কোনো সময় হাসনাবাদ আক্রমণ করতে পারে এটা বুঝতে পেরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মোস্তফা কামাল খান ও আবুল কাশেমসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাসনাবাদ চৌধুরী বাড়িতে অবস্থান নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগই ছিলেন বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য। হাসনাবাদে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান করার সংবাদ চিতোষী ক্যাম্পে অবস্থানরত পাকিস্তানি সৈন্যরা জানতে পারে। ১৩ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সৈন্য নিয়ে চিতোষী ক্যাম্প থেকে হাসনাবাদের উদ্দেশে রওনা দেয়। এর আগের রাতে জহিরুল হক পাঠান সকল প্লাটুন কমান্ডারদের নিয়ে যুদ্ধের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাঁরা হাসনাবাদ বাজারের ডান ও বাম উভয় দিকে প্রায় দেড় মাইল এলাকা জুড়ে ডিফেন্সের ব্যবস্থা করেন। ডিফেন্স এলাকা থেকে লোকজনের আসা-যাওয়ার ব্যাপারে কড়া নিরাপত্তা আরোপ করা হয়৷ ইতোমধ্যে সকাল ৯টার দিকে পাকসেনাদের আসার খবর হাসনাবাদে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট পৌছে। বি এম কলিমউল্লাহ ও জহিরুল হক পাঠানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত হন। তাঁরা আশিয়াদারী গ্রাম, হাসনাবাদ চৌধুরী বাড়ি ও জমিদার বাড়িতে এলএমজি স্থাপন করে পজিশন নেন। পাকবাহিনী তাদের স্থানীয় দোসর রাজাকার- বাহিনীর সদস্যসহ ১৪- ১৫টি নৌকা নিয়ে গুলি করতে-করতে অগ্রসর হতে থাকে। তারা পানচাইল পুলের নিকট পৌছামাত্র তিনদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিতে আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়। অতর্কিত আক্রমণে পাকবাহিনী দিশেহারা হয়ে ১০-১৫ মিনিট কোনো সুবিধা করতে পারেনি এরপর লক্ষ্যহীনভাবে তারা মেশিনগান থেকে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ শুরু করে। ২ ঘণ্টার অধিক সময়ব্যাপী যুদ্ধ চলে। হাসনাবাদ যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ৮-১০ সৈন্য নিহত এবং ১৪-১৫ জন আহত হয়। পাকবাহিনীর ভারী ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের অবস্থান প্রত্যাহার করে হিরাপুর, রাদ্দবপুর, নয়নপুর ও কমলপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে পানিআলা গ্রামের নিকট নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেন। এ-যুদ্ধে লাকসাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, চিতোষী, লক্ষ্মণপুর, চাঁদপুর, হাসনাবাদ, আমতলী, শাহরাস্তি ও হাজীগঞ্জসহ নিকটবর্তী এলাকার বহু মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্য কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা হলেন- হাবিলদার গোলাম মাওলা, নায়েক জহির, নায়েক সুবেদার আবদুস সাত্তার হারেস, সুবেদার আবদুর রব, নায়েক ছিদ্দিক ও হাবিলদার রশিদ। [ইমন সালাউদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড