হিজলদি পাকক্যাম্প যুদ্ধ (কলারোয়া, সাতক্ষীরা)
হিজলদি পাকক্যাম্প যুদ্ধ (কলারোয়া, সাতক্ষীরা) সংঘটিত হয় ২৭শে আগস্ট। এ-যুদ্ধে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়, বাকিরা পালিয়ে যায় এবং তাদের ক্যাম্প মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে।
হিজলদি সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নে ভারতীয় সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম। সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানে ইপিআর-এর একটি ক্যাম্প ছিল। এ ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা পার্শ্ববর্তী এলাকায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত। তারা পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো থেকে মানুষ ধরে এনে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করত। এছাড়া স্থানীয়দের নিকট থেকে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য (আটা, মুরগি, গরু, ছাগল ইত্যাদি) জোর করে নিয়ে আসত।
আগস্ট মাসের প্রথম থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা হিজলদি ক্যাম্পকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন, কারণ এখান থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের উৎখাত করতে না পারলে এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তাই মুক্তিযোদ্ধারা হিজলদি ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। এ-যুদ্ধে অংশ নেন ইপিআর ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা। ইপিআর-এর নেতৃত্বে ছিলেন নায়েক গোফরান এবং গেরিলাদের নেতৃত্বে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন। হাকিমপুর থেকে এ সমন্বিত বাহিনী হিজলদি ক্যাম্প অপারেশনের জন্য যাত্রা শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে হিজলদির পার্শ্ববর্তী সুলতানপুর গ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং ক্যাম্পের উত্তর-পশ্চিম পাশের তালপুকুরের উঁচু পাড়ের আড়ালে অবস্থান নেন। আর একদল ক্যাম্পের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশের বিলের ভেতর অবস্থান নেন।
২৭শে আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের গোয়েন্দাদের কাছ থেকে খবর পান যে, হিজলদি ক্যাম্পের সৈন্যদের খাবার প্রায় শেষ। ইতোমধ্যে কলারোয়া থেকে তাদের জন্য পাঠানো খাদ্যের ট্রাক মুক্তিযোদ্ধারা আটকে দিয়েছেন। ফলে খাদ্যের চিন্তায় পাকবাহিনীর মনোযোগ যখন অন্য দিকে, ঠিক তখন মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পের ওপর গুলি বর্ষণ শুরু করেন। পাকবাহিনীও পাল্টা গুলি চালায়। কিন্তু পাকবাহিনী এ-যুদ্ধে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনি। তাই তারা জীবন বাঁচানোর জন্য কলারোয়ার দিকে পালিয়ে যায়। কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী ক্যাম্প দখল করে নেয়। এর ফলে হিজলদিসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার নিয়ন্ত্রণ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আসে। এরপর মুক্তিবাহিনী চন্দনপুর হাইস্কুলে একটি ক্যাম্প গড়ে তোলে। পরবর্তীতে এ ক্যাম্প থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা বাগআঁচড়া ও কলারোয়া এলাকার বেশ কয়েকটি আক্রমণ পরিচালনা করেন।
হিজলদি যুদ্ধে যে-সকল মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন- কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন (তুলসীডাঙ্গা), কমান্ডার আব্দুল গফফার (বহুড়া), এ জেড নজরুল ইসলাম (বোয়ালিয়া), মো. আব্দুল জব্বার শেখ (বৈদ্যপুর), শওকত আলী শেখ (বৈদ্যপুর), বিমল (ফকিরহাট, বাগেরহাট), আয়ুব আলী (বোয়ালিয়া) প্রমুখ। ইপিআর-এর পক্ষ থেকে ছিলেন— নায়েক গোফরান, হাবিলদার দুদু মিয়া, হাবিলদার “ইসমাইল, রফিকউদ্দীন প্রমুখ। [মাসুদুর রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড