হেলাল পার্ক বধ্যভূমি (গাইবান্ধা সদর)
হেলাল পার্ক বধ্যভূমি (গাইবান্ধা সদর) গাইবান্ধা সদর উপজেলার ডাকবাংলো রোড থেকে ৩৫০ মিটার দক্ষিণে অবস্থিত। পাককিস্তানি হানাদার বাহিনী এ বধ্যভূমিতে ৫ শতাধিক মানুষকে হত্যা করে।
১৯৫৬ সালে গাইবান্ধা মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা গঠিত হলে মহকুমা প্রশাসক হেলাল উদ্দিন চৌধুরী এর সভাপতি হন। তাঁর নামানুসারে সংস্থার মাঠটি হেলাল পার্ক নামে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে এটি গাইবান্ধা জেলা ক্রীড়া সংস্থার স্টেডিয়াম এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বাংলাদেশ গণপরিষদের প্রথম স্পিকার শাহ আব্দুল হামিদের নামে এর নাম দেয়া হয়েছে শাহ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়াম। স্টেডিয়াম এবং তার দক্ষিণে শাহ কফিল উদ্দিনের গুদাম হিসেবে পরিচিত বাড়িটি মিলে ছিল হেলাল পার্ক বধ্যভূমি।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৭ই এপ্রিল গাইবান্ধা শহরে অনুপ্রবেশ করে হেলাল পার্কে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। ৫ই ডিসেম্বর গভীর রাতে পালিয়ে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটি ছিল হানাদারদের মহকুমা সদর দপ্তর এবং মূল নির্যাতনকেন্দ্র। ১৭ই এপ্রিল থেকে ৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বধ্যভূমিতে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
এ বধ্যভূমিতে ৫ শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। এখানে অনেক নারী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। সমগ্র মহকুমার বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে এনে নির্যাতন শেষে তাদের হত্যা করা হয়। এখানে নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে, তারা হলেন— ননী গোপাল সাহা (পিতা মনমোহন সাহা; স্টেশন রোড, গাইবান্ধা সদর), পরেশ নাথ প্রসাদ (পিতা দ্বীপলাল প্রসাদ; থানা পাড়া, গাইবান্ধা সদর), কেদার নাথ প্রসাদ (পিতা রামহরণ প্রসাদ; থানা পাড়া, গাইবান্ধা সদর), বিজয় কুমার রায় (পিতা শ্রীশচন্দ্র রায়; ডেভিড কোং পাড়া, গাইবান্ধা সদর), প্রকাশ চক্রবর্তী (পিতা প্রমদাকান্ত চক্রবর্তী; কালীবাড়ি পাড়া, গাইবান্ধা সদর), জগৎ চন্দ্র কর্মকার (পিতা হারান চন্দ্র কর্মকার; স্টেশন রোড, গাইবান্ধা সদর), শ্যামাচরণ সাহা (পিতা চাঁদমোহন সাহা; স্টেশন রোড, গাইবান্ধা সদর), মহিম যোগী (গোবিন্দপুর, লক্ষ্মীপুর, গাইবান্ধা সদর), গৌর চন্দ্র কর্মকার (গোবিন্দপুর, লক্ষ্মীপুর, গাইবান্ধা সদর), মাখন লাল কর্মকার (গোবিন্দপুর, লক্ষ্মীপুর, গাইবান্ধা সদর), নজরুল ইসলাম (পিতা নেজাম উদ্দিন; মুন্সীপাড়া, গাইবান্ধা পৌরসভা), বিমল চন্দ্র দাস (পিতা শ্যামাচরণ দাস; উলিয়া বোয়ালী, গাইবান্ধা সদর), সুরেন সরদার (ভাটপাড়া, রামচন্দ্রপুর, গাইবান্ধা সদর), আব্দুল হাই (রামচন্দ্রপুর, গাইবান্ধা সদর), রওশন আলম রেজা (পিতা ছেফায়েত উদ্দিন; খামার বোয়ালী, গাইবান্ধা সদর), বিনোদ বিহারী দে (পিতা মহিম চন্দ্ৰ দে; খামার বোয়ালী, গাইবান্ধা সদর), ননী গোপাল দেব (পিতা মহির চন্দ্র দেব; খামার বোয়ালী, গাইবান্ধা সদর), অমরেশ চন্দ্র দেব (পিতা নরেশ চন্দ্র দেব; খামার বোয়ালী, গাইবান্ধা সদর), অমর লাল চাকী (পিতা অনন্ত লাল চাকী; খামার বোয়ালী, গাইবান্ধা সদর), বিজন বিহারী দত্ত (পিতা ব্রজবিহারী দত্ত; বাসুদেবপুর, বরিশাল পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা), রাখাল চক্রবর্তী (পিতা শ্যামচরণ চক্রবর্তী; বাসুদেবপুর, বরিশাল পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা), নিতাই দত্ত, হরলাল দত্ত (বাসুদেবপুর, বরিশাল পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা), ভুবন চন্দ্র (বাসুদেবপুর, বরিশাল পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা), ক্ষিতীশ চন্দ্ৰ (পিতা খোকারাম; বাসুদেবপুর, বরিশাল পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা), সদু (পিতা সমরেশ মিস্ত্রি; বোনারপাড়া, সাঘাটা, গাইবান্ধা), যোগেন্দ্র নাথ সরকার (পিতা উপাসুরাম সরকার; তারাপুর সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা) এবং আব্দুল গফুর সরদার (পিতা মোনাই বেপারী; বামনজল, দহবন্দ সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা)। হত্যাযজ্ঞ ও পাশবিকতায় কুখ্যাত পাকসেনাদের মধ্যে ছিল লে. কর্নেল সাঈদ, লে. কর্নেল আজিজ, মেজর মেহমুদ, মেজর তাহসিন মির্জা, মেজর আফজাল, মেজর শের খান, ক্যাপ্টেন খোককর প্রমুখ। [জহুরুল কাইয়ুম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড