হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বধ্যভূমি ও গণকবর (ঈশ্বরদী, পাবনা)
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বধ্যভূমি ও গণকবর (ঈশ্বরদী, পাবনা) পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়, আবার অনেককে পদ্মায় ভাসিয়ে দেয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে পাক হানাদাররা তাদের দোসর বিহারি (অবাঙালি), রাজাকার- ও শান্তি বাহিনীর দালালদের সহযোগিতায় দিনের পর দিন নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছে। বিশেষ করে ঈশ্বরদী লোকো সেডে অবস্থানরত অবাঙালিরা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মানসে পাকসেনাদের প্ররোচিত করে ঈশ্বরদী, পাকশী, দাশুড়িয়া ও ঈশ্বরদীর আশপাশের অঞ্চল থেকে বহু নিরীহ মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে। পাকবাহিনী পাকশী পেপার মিলস অফিসার্স মেসের দ্বিতল ভবন ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচের পুলিশ ফাঁড়িতে ক্যাম্প স্থাপন করেছিল। পাকশী পেপার মিলস অফিসার্স মেসের বন্দিশালা থেকে পালিয়ে আসা দাশুড়িয়া গ্রামের ঘন্টু মালিথা তার স্মৃতিচারণে লেখককে বলেন, দোতলার একটি কক্ষে যখন তাকে আছড়ে ফেলা হয় তখন তিনি দেখেন তার মতো আরো ৭-৮ জন বন্দি একটি কক্ষে বসে আছে। তাদের সর্বশরীরে অত্যাচারের চিহ্ন দেখে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বন্দিদের মধ্যে রাজাপুর হাইস্কুলের একজন শিক্ষক ও দুজন ছাত্র ছিল। এ স্কুল শিক্ষক ঘন্টুকে বলেন, প্রতিরাতেই বন্দিদের নির্যাতন করে ভোরবেলা হার্ডিঞ্জ ব্রিজের বধ্যভূমিতে হত্যা করে পদ্মায় লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয়। অনেককে আবার হত্যা করে স্টেশনের নিকট ব্রিটিশ আমলে তৈরি একটি প্রশস্ত ইঁদারায় ফেলা হয়। এ স্কুল শিক্ষক ও ছাত্র দুজনকেও ভোরবেলা নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর ঘন্টু মালিথা হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচ থেকে পরপর তিনটি গুলির শব্দ শুনতে পান। এ ক্যাম্প থেকে বহু বন্দিকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করা হয়। পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পুলিশ ফাঁড়ি ক্যাম্পের পাঞ্জাবি সৈন্যরা ছিল আরো নৃশংস। তারা প্রতিদিন কাজের উদ্দেশ্যে আসা পাকশী ফেরিঘাটের শ্রমিকদের ধরে আনত এবং রেল লাইন ও গাইড ব্যাংকে ট্রেন্স খুঁড়িয়ে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত এসব শ্রমিকের বুকে মহা উল্লাসে গুলি চালাত।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচের বধ্যভূমিতে কোনো গণকবরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি, কারণ এখানে যাদের হত্যা করা হতো তাদের লাশ পদ্মায় ভাসিয়ে দেয়া হতো অথবা শেয়াল-শকুনের খাদ্য হতো। কিন্তু ট্রেন্স খোঁড়ার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাজের শেষে বিনা কারণে বেদম পিটিয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় গুলি করে যে ইঁদারায় ফেলা হতো, তার অস্তিত্ব এখনো বর্তমান। রেল স্টেশন থেকে পাকশী যাওয়ার পথে বাম পাশে জঙ্গলের ভেতর অবস্থিত ইঁদারাটিকে সম্প্রতি গণকবর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। [আবুল কালাম আজাদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড