You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.30 | হালিমনগর গণহত্যা (পত্নীতলা, নওগাঁ) - সংগ্রামের নোটবুক

হালিমনগর গণহত্যা (পত্নীতলা, নওগাঁ)

হালিমনগর গণহত্যা (পত্নীতলা, নওগাঁ) সংঘটিত হয় ৩০শে নভেম্বর। এদিন এখানে ৪০ জন নিরীহ আদিবাসী ও ধানকাটা শ্রমিককে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করে।
৩০শে নভেম্বর পশ্চাৎপদ জনপদ নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার নির্মইল ইউপির হালিমনগর গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার ও আলবদর- বাহিনীর সদস্যরা এলাকার কয়েকজন নিরীহ আদিবাসী ও দূর এলাকা থেকে আগত কিছু ধানকাটা শ্রমিক মিলে মোট ৪০ জনকে ধরে এনে এখানে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। এখানে একই গণকবরে তাদের মাটিচাপা দেয়া হয়। হালিমনগর ও পার্শ্ববর্তী হলাকান্দর, পাইকবান্দা, উত্তর রামপুর ইত্যাদি গ্রামে কোনো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। এ এলাকার প্রভাবশালীদের প্ৰায় সকলেই ছিল স্বাধীনতাবিরোধী। ফলে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা অত্র এলাকায় এলে প্রভাবশালী কারো কাছ থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পেতেন না। এমতাবস্থায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের থাকার জায়গা ও খাবার দিয়ে এবং অন্যান্য উপায়ে সহযোগিতা করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করে বলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর এলাকার স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর মনছুর রহমান, ইয়াছিন আলী, এরফান, পাইকবান্দা গ্রামের আইমা আলী, উত্তর রামপুর গ্রামের ইসমাইল, জালাল প্রমুখের তীব্র ক্রোধ ছিল। তারা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সুযোগ বুঝে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের এসব সদস্য সৈয়দপুর, পাইকবান্দা, হলাকান্দরসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ৪০ জন নিরীহ মানুষকে ধরে হালিমনগর গ্রামের অদূরে এক নির্জন স্থানে নিয়ে আসে। পরে সেখানে তাদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। ব্রাশফায়ারে যাদের মৃত্যু হয়নি নরপিচাশরা তাদের হাঁসুয়া, কুড়াল, কোদাল ইত্যাদি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
আক্রান্ত মানুষের গগনবিদারী আর্তনাদে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। পরে ঘাতকরা হলাকান্দর গ্রামের কয়েকজন সাধারণ মানুষকে দিয়ে জোরপূর্বক গর্ত খুঁড়িয়ে লাশগুলোকে মাটিচাপা দেয়। যাদের দিয়ে গণকবর দিয়েছিল তাদের মধ্যে সাইফুল ও আয়নাল আজো বেঁচে আছেন। তারা নির্মম গণহত্যা এবং হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের অপকর্মের সাক্ষী।
যে ৪০ জন নিরীহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করে লাশ মাটিচাপা দেয়া হয়, তাদের মধ্যে ১৯ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- রবি কান্ত বর্মণ, বারনাট সরেন, বুধু হেমব্রম, সুফল মুর্মু, বয়লা হাঁসদা, সরকার মুর্মু, মুন্সি টুডু, জোনা টুডু, টুডু মুর্মু, মাঙ্গাত মাঝি সরেন, ভুতু সরেন, মাথলা মুর্মু, বুধুরাই টুডু, যাদু মুর্মু, খাড়া সরেন, মুসাই সরেন, চুডুকা টুডু, সুকাল হেমব্রম ও পাগান সরেন। [বুলবুল চৌধুরী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড