You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.14 | হাসনাবাদ গণহত্যা (লাকসাম, কুমিল্লা) - সংগ্রামের নোটবুক

হাসনাবাদ গণহত্যা (লাকসাম, কুমিল্লা)

হাসনাবাদ গণহত্যা (লাকসাম, কুমিল্লা) সংঘটিত হয় ১৪ই সেপ্টেম্বর (হাসনাবাদ যুদ্ধের পরের দিন) মঙ্গলবার সকালে। পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী হাসনাবাদ বাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়, তা ‘হাসনাবাদ গণহত্যা’ নামে পরিচিত। এ গণহত্যায় ৩১ জন মানুষ নিহত হয়।
ঘটনার দিন পাকিস্তানি বাহিনী কোনো প্রকার প্রতিরোধ ছাড়া হাসনাবাদে প্রবেশ করে। তাদের একটি দল আসে চিতোষী ক্যাম্প থেকে, আরেকটি দল আসে পূর্বদিকের লক্ষ্মণপুর হয়ে। চিতোষী থেকে আসা দলটি হাসনাবাদ বাজারে ঢুকে দোকানপাটসহ আশপাশের সকল ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এরপর তারা আশপাশের গ্রামে ঢুকে নির্মম নির্যাতন ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায়। লক্ষ্মণপুর হয়ে আসা পাকসেনাদের দলটি মানরা ও আশিয়াদারী গ্রাম এবং নরপাইয়ার মালেক মিয়ার বাড়ি ও তালতলার বড়বাড়িতে ঢুকে গণহত্যা চালায়। তারা মানরার মুন্সীবাড়ি ও আশিয়াদারির ভূঁইয়াবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। পাকসেনারা আশিয়াদারি গ্রামের মুন্সীবাড়ির হাছান মিয়া (পিতা আবদুল আজিজ মুন্সী) নামে ১ জন এবং ব্যাপারী বাড়ির আবদুল আজিজ ও আবদুল হামিদ (পিতা আবদুর রব) নামে ২ জনকে হত্যা করে। মানরা গ্রামে ঢুকে তারা ঐ গ্রামের ১৩ জনকে হত্যা করে। মানরা মুন্সীবাড়িতে এক সঙ্গে ৯ জনকে হত্যা করে। তারা হলেন- ইউসুপ আলী মুন্সী (পিতা তিতা গাজী), কেরামত আলী মুন্সী (পিতা তিতা গাজী), রোশন আলী মুন্সী (পিতা তিতা গাজী), নোয়াব আলী, আরব আলী (পিতা নোয়াব আলী), সায়েদ আলী (পিতা নোয়াব আলী), তৈয়ব আলী (পিতা নোয়াব আলী), জিন্নত আলী মুন্সী (পিতা তিতা গাজী) ও মুসলিম মিয়া (পিতা দুদু মিয়া, সাতখরিয়া নিবাসী মানরা মুন্সীবাড়ির জামাতা)। মুন্সীবাড়িতে গণহত্যাকালে আহত অবস্থায় ৩ জন বেঁচে যান। তারা হলেন— হাজী নুরুল হক (পিতা রওশন আলী মুন্সী), একরামুল হক কালা মিয়া (পিতা রওশন আলী মুন্সী) ও মো. জহিরুল ইসলাম। একই দিন মানরা গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় পাকসেনারা ৪ জনকে হত্যা করে। তারা হলেন— ইউনুস মিয়া, চাঁন মিয়া, ইদ্রিস মিয়া ও কামালউদ্দিন। এছাড়া পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার শিকার হন হাসনাবাদ চৌধুরী বাড়ির ১ জন ও জমিদার বাড়ির ১ জন। এ গণহত্যায় পাকসেনাদের প্রধান সহযোগী ছিল সাতপুকুরিয়ার শান্তি কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শামসুল হক (পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত)। [ইমন সালাউদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড