বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সংগীত শিল্পী, গীতিকার ও চলচ্চিত্র প্রযোজক হেমন্ত কুমার মুখোপাধ্যায়
হেমন্ত কুমার মুখোপাধ্যায় (১৯২০-১৯৮৯) ভারতের সংগীত শিল্পী, গীতিকার, সংগীত পরিচালক ও চলচ্চিত্র প্রযোজক। তিনি ১৯২০ সালের ১৬ই জুন উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও সংগীতে মনোনিবেশ করার কারণে তিনি পড়াশোনা শেষ করতে পারেন নি। তাঁর প্রথম গান রেকর্ড করে অল ইন্ডিয়া রেডিও (১৯৩৫) ও গ্রামোফোন কোম্পানি
(১৯৩৭)। ১৯৪৪ সালে তিনি প্রথম বাংলা গান লেখেন, হিন্দি চলচ্চিত্রে গান করেন এবং কলম্বিয়া লেবেল তাঁর গাওয়া রবীন্দ্রসংগীতের ডিস্ক বের করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকীতে গ্রামোফোন কোম্পানি রবীন্দ্রসংগীতের যে রেকর্ড বের করে (১৯৬১), তার অধিকাংশ গানই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া এবং তা বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সংগীত পরিচালক হিসেবে তাঁর প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র অভিযাত্রী (১৯৪৭)। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি একজন জনপ্রিয় সংগীতকার হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে বোম্বেতেও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। পঞ্চাশের দশকের শেষদিকে তাঁর প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র নীল আকাশের নীচে (১৯৫৯) ভারত সরকারের প্রেসিডেন্ট’স গোল্ড মেডেল লাভ করে। তিনি বাংলা (১৩৮টি), হিন্দি (৫৫টি), ইংরেজি (১টি) ও অন্যান্য ভাষার একাধিক চলচ্চিত্রের সুরকার ছিলেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় সংগীতকার যিনি হলিউডের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন। শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক (১৯৫৬ নাগিন ) এবং সংগীত শিল্পী হিসেবে (১৯৭১ নিমন্ত্রণ ও ১৯৮৬ লালন ফকির) তিনি ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি প্রদান করে। ১৯৮৯ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন সংগীতানুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশীদের উজ্জীবিত করেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক হেমন্ত কুমার মুখোপাধ্যায়কে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ (মরণোত্তর) প্রদান করা হয় (১৫ই ডিসেম্বর ২০১২)। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড