You dont have javascript enabled! Please enable it!

হারং উদালিয়াপাড়া গণহত্যা (চান্দিনা, কুমিল্লা)

হারং উদালিয়াপাড়া গণহত্যা (চান্দিনা, কুমিল্লা) সংঘটিত হয় ১০ই ডিসেম্বর। এতে অর্ধশতাধিক নিরীহ মানুষ শহীদ হন।
কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার চান্দিনা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড হারং গ্রামের শেষাংশে উদালিয়াপাড়া। এ পাড়ার অধিকাংশ লোক ছিল ছাগল ব্যবসায়ী। একাত্তর সালে হারং উদালিয়াপাড়ায় একাধিকবার গণহত্যার ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানি বাহিনী চান্দিনা থানায় তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। তারা ৭ই এপ্রিল স্থানীয় রাজাকারদের ইন্ধনে ন্যাপ নেতা আবদুল জলিল ভূঁইয়া ও স্থানীয় লোকজনের বাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। তারপর রাজাকারদের সহায়তায় নেতৃস্থানীয় লোকদের থানা ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং ১০-১৫ জনকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয়। পরে চান্দিনা থানা সংলগ্ন খালের পাড়ে রাত ৯টায় আটককৃতদের জবাই করে হত্যা করে। এছাড়া হারং ও আশপাশের গ্রাম থেকে মেয়েদের ধরে নিয়ে যায় চান্দিনা থানায়। ৮ই ডিসেম্বর চান্দিনা থানা থেকে অনেক বিবস্ত্র নারীকে উদ্ধার করা হয়। ১০ই ডিসেম্বর হারং উদালিয়াপাড়ার মানুষ নানা স্থান থেকে গ্রামে ফিরতে থাকে। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর তাড়া খেয়ে চাঁদপুর থেকে রামগর হয়ে প্রায় ১৭০০ পাকিস্তানি সৈন্য হারং উদালিয়াপাড়ায় এসে অতর্কিতে গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। গণহত্যার শিকার হয় অর্ধশত নিরীহ মানুষ। এক নাগাড়ে দুদিন তাদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ চলে। এ-যুদ্ধে শহীদ হয় প্রায় ৪০ জন পাকিস্তানি সৈন্য। ১২ই ডিসেম্বর এলাকাবাসী, মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী চারদিক থেকে ঘেরাও করলে প্রায় ১৪০০ জন পাকিস্তানি সৈন্য উদালিয়া সংলগ্ন এতবারপুর হাইস্কুল মাঠে আত্মসমর্পণ করে। উদালিয়াপাড়ায় ক্ষত-বিক্ষত কিছু লাশ দাফন করা হয়, আর বেশির ভাগ লাশ মাটিচাপা দেয়া হয়। গণহত্যার শিকার অনেক পরিবার অন্যত্র চলে যাওয়ায় সকল শহীদের পরিচয় জানা যায়নি। এর মধ্যে যে ১১ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা হলেন— তোতা মিয়া (৭০), সোনা মিয়া (৬০), মানিকজান বিবি (৫০), সূর্য বিবি (১৬), রহিম (১৭), সোনা মিয়া (৫২), অবলা (৪৫), হোসেনের মা (৬৬), মজিদ (৫৭), সোনা মিয়া (৬২) ও এশা বিবি (৫৫)। [মামুন সিদ্দিকী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!