You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর বিক্রম হায়দার আলী

হায়দার আলী, বীর বিক্রম (জন্ম ১৯৪২) নায়েক সুবেদার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪২ সালের ৩রা মার্চ ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার আটআনি বাজারের পাড়াটঙ্গী মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জাবেদ আলী ফকির এবং মাতার নাম হাজেরা খাতুন। ৬ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে হায়দার আলী ৪র্থ। তিনি ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন।
হায়দার আলী ১৯৬৪ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর ইপিআর-এ দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা বিওপিতে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর দেশকে শত্রুমুক্ত করার প্রত্যয়ে ২৮শে মার্চ তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিরোধযুদ্ধের পর তিনি ভারতে যান। সেখানে তিনি দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত হন।
ভারত থেকে ফিরে হায়দার আলী মেজর কে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম পরিচালিত ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মতিনের নির্দেশনায় বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ, এম্বুশ ও গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন। ১৩ই আগস্ট পাকিস্তানি সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের তেলিয়াপাড়া চা-বাগান ক্যাম্পে আক্রমণ চালায়। হায়দার আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর এ আকস্মিক আক্রমণের পাল্টা জবাব দেন। ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি এড়ানোর জন্য অধিনায়কের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেন। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধা মোবারক আলী (বরিশাল) হায়দার আলীর সামনেই গুলিবিদ্ধ হন। এ-যুদ্ধে ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং তেলিয়াপাড়া চা-বাগান হানাদার বাহিনী দখল করে।
যে-কোনো মূল্যে তেলিয়াপাড়া ক্যাম্প পুনর্দখলের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা শক্তি সঞ্চয় করেন। ১৪ই আগস্ট হায়দার আলী ও তাঁর সহযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন মতিনের নেতৃত্বে হানাদারদের দখলকৃত তেলিয়াপাড়া ক্যাম্পের ওপর আক্রমণ চালান। হানাদার বাহিনীও পাল্টা আক্রমণ চালায়। একটি টিলার ওপর তাদের মেশিনগান পোস্ট ছিল। হায়দার আলী মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে পাহাড়ি নালার মধ্য দিয়ে ক্রলিং করে এগিয়ে গিয়ে হানাদারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাদের মেশিনগান পোস্টে দুটি গ্রেনেড চার্জ করেন। প্রচণ্ড বিস্ফোরণের সঙ্গে সেখান থেকে গুলি আসা বন্ধ হয়ে যায়। শুধু আর্তনাদের শব্দ শোনা গেলে হায়দার আলী কাছে গিয়ে দেখেন ৪ জন পাকিস্তানি সৈন্য আহত অবস্থায় পড়ে আছে এলএমজি-র ব্রাশফায়ারে তিনি তাদের হত্যা করেন। মেশিনগান পোস্ট ধ্বংস হওয়ায় পাকিস্তানি বাহিনীর অন্য সদস্যরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। যুদ্ধে ১টি মেশিনগান, ২টি স্টেনগান ও ১টি পিস্তল মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে নায়েক সুবেদার হায়দার আলীর অসামান্য সাহস ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে তিনি বিডিআর-এর চাকরিতে বহাল হন এবং ১৯৯০ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম উম্মে কুলসুম। এ দম্পতি ১ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক- জননী। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!