বীর প্রতীক হারুন-উর রশীদ
হারুন-উর রশীদ, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৫) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার গাজীরচর ইউনিয়নের ঘাঘুটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাজিতপুর শহর থেকে ১ মাইল দক্ষিণে এ গ্রামের অবস্থান। তাঁর পিতার নাম সুলতান ভূঁইয়া এবং মাতার নাম উম্মে চান। তিনি বাজিতপুর পাইলট টাউন হাই স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ছাত্রজীবন থেকে হারুন-উর রশীদ রাজনীতি-সচেতন ছিলেন। টাঙ্গাইলে গুড়াই টেক্সটাইল মিলে চাকরির মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। এখানে যোগদান করে তিনি শ্রমিক ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে তিনি সামরিক শাসনের ১৬ ধারায় গ্রেফতার হয়ে ৯ মাস কারারুদ্ধ থাকেন।
১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা গণহত্যা শুরু করলে হারুন-উর রশীদ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি ভারতের মেঘালয়ের ইকো ওয়ান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল বাগচীর অধীনে তিনি প্রশিক্ষণ নেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং মেজর খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তমএর নেতৃত্বাধীন ‘কে’ ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। ক্যাপ্টেন এজাজ আহমেদ চৌধুরী তাঁর সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। পাকবাহিনী ও রাজাকার দের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, ছয়সূতী, সরারচর, নরসিংদীর হাঁটুভাঙ্গা, বেলাবো প্রভৃতি স্থানে সংঘটিত যুদ্ধে হারুন-উর রশীদ বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। অক্টোবর মাসে সরারচর রেলস্টেশন অপারেশন এবং নভেম্বর মাসে সংঘটিত বেলাবোর ফরিদপুরস্থ পাকিস্তানি হানাদারদের ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করেন। উভয় স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে পাকসেনারা পরাজিত হয়। এসব যুদ্ধে হারুন- উর রশীদ বিশেষ সাহসিকতা প্রদর্শন করেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার হারুন-উর রশীদকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ৪০৮, খেতাবের সনদ নম্বর ১৫৮)।
মুক্তিযুদ্ধের পর হারুন-উর রশীদ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত হন। এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি ভূমিকা রাখেন। পরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ ইস্ট বেঙ্গলে সিপাহি পদে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় ১৯৭৬ সালে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ বছরের শেষের দিকে তিনি সার্জেন্ট পদে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন চাকরি করার পর ২০০৭ সালে বিমান বাহিনী থেকে তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। অবসর জীবনে তিনি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। তিনি ব্যক্তি জীবনে ১ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম হীরাজিল চৌধুরী। বর্তমানে তিনি ঢাকার দক্ষিণ খানে বসবাস করছেন। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড