বীর প্রতীক হারেছ উদ্দিন সরকার
হারেছ উদ্দিন সরকার, বীর প্রতীক (১৯৪৭-২০০৪) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৭ সালের ১লা মে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার বলদিবাথান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সিরাজ উদ্দিন সরকার, মাতার নাম আলিমন নেছা।
হারেছ উদ্দিন সরকার ছাত্রাবস্থায় —ছাত্রলীগ-এর রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি রংপুর জেলা ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা ছিলেন। এ-সময় তিনি ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভুত্থ্যান এবং ১৯৭০ মার্চের ভাষণ এর পর সালের নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের পর তিনি আসন্ন মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
হারেছ উদ্দিন সরকার ২৮শে মার্চ তীর-ধনুক নিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ-এর উদ্যোক্তাদের অন্যতম ছিলেন। এ-সময় আশপাশের কয়েকটি প্রতিরোধযুদ্ধে তিনি অংশ নেন। পরবর্তী সময়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি ভারতে চলে যান এবং সাহেবগঞ্জে ২৮ দিনের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ৬নং সেক্টরের পাটগ্রাম সাব- সেক্টরের কমান্ডার ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের অধীনে কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন অপারেশন এবং সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে তিস্তা রেল ব্রিজ ধ্বংস উল্লেখযোগ্য। হাতিবান্ধা উপজেলার বড়খাতায় তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত রেল ব্রিজটি সীমান্ত এলাকার যোগাযোগ রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ কারণে ব্রিজটি রক্ষার জন্য হানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকররা সব সময় সসস্ত্র পাহারায় নিয়োজিত থাকত। অন্যদিকে পাকবাহিনীর যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটাতে এ রেল ব্রিজটি ধ্বংস করা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনিবার্য হয়ে পড়ে। ইতঃপূর্বে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকবার এ ব্রিজটি ধ্বংস করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। এরপর তিস্তা রেল ব্রিজ ধ্বংসের দায়িত্ব নেন সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান ও কোম্পানি কমান্ডার হারেছ উদ্দিন সরকার। তাঁরা ১২ই আগস্ট রাতে ব্রিজের কাছে চলে যান এবং প্রয়োজনীয় এক্সপ্লোসিভ সেট করে ব্রিজটি ধ্বংস করে দেন। এ অপারেশনে ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান ও হারেছ উদ্দিন সরকার ছাড়াও নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, আফজাল হোসেন, শওকত আলীসহ ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার হারেছ উদ্দিন সরকার-কে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর হারেছ উদ্দিন সরকার রংপুর শহরের গণেশপুরে বসবাস শুরু করেন এবং স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তাঁর স্ত্রীর নাম হাবিবা ফেরদৌসী। হারেছ উদ্দিন সরকার ২ পুত্র এবং ৩ কন্যা সন্তানের জনক। তিনি ২০০৪ সালের ২রা এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড