You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক হাসান উদ্দিন আহমেদ - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক হাসান উদ্দিন আহমেদ

হাসান উদ্দিন আহমেদ, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯২৬) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯২৬ সালে ঢাকা জেলার দোহার থানার কুসুমহাটি ইউনিয়নের চর কুশাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দোহার থানা শহর থেকে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে এ গ্রাম। হাসান উদ্দিন আহমেদের পিতার নাম মেহের উদ্দিন আহমেদ এবং মাতার নাম মঙ্গলজান বিবি। তিনি নবাবগঞ্জের বান্দুরা হলিক্রস স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাস করেন। ছাত্রাবস্থা থেকে তিনি সাহসী ও রাজনীতি সচেতন ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর আহ্বানে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং আজীবন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।
হাসান উদ্দিন আহমেদ কর্মজীবনের শুরুতে পাকিস্তান পুলিশে চাকরি করেন। পরে তিনি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এ যোগ দেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তিনি যশোরে কর্মরত ছিলেন। যশোরের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মার্চের প্রথম দিকেই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু করেন। ২৫শে মার্চ ঢাকায় পাকবাহিনী গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ইপিআর-এর অন্য বাঙালি সদস্যদের নিয়ে যশোরে সংঘটিত বিভিন্ন প্রতিরোধযুদ্ধে তিনি অংশ নেন। এপ্রিল মাসে তাঁরা সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে অবস্থান নিলে পাকবাহিনী তাঁদের ওপর আক্রমণ করে। এ আক্রমণ প্রতিরোধে হাসান উদ্দিন আহমেদ বিশেষ সাহসিকতা ও যুদ্ধকৌশল প্রদর্শন করেন। এ সীমান্তে তাঁরা মে মাসে আবার পাকবাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হন। তখনো হাসান উদ্দিন আহমেদ বীরত্বের পরিচয় দেন। ভোমরার পতন হলে তিনি ভারতে যান এবং সেখানে ‘জেড’ ফোর্সের ১ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হন। এ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ছিলেন মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী, বীর বিক্রম। এ রেজিমেন্টের সৈনিক হিসেবে তিনি বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নেন। সিলেট জেলার ধলই বিওপি আক্রমণ ও কানাইঘাট যুদ্ধে হাসান উদ্দিন আহমেদের বীরত্বপূর্ণ লড়াই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক হাসান উদ্দিন আহমেদকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতার পর হাসান উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশে রাইফেলস (বিডিআর, বর্তমান বিজিবি)-এ যোগদান করেন। দীর্ঘদিন তিনি ঢাকার পিলখানা ও চট্টগ্রাম সেক্টরে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি বিডিআর-এর সুবেদার মেজর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালের ৭ই জানুয়ারি তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ৩ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম রওশন আরা বেগম। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড