বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের কবি ও রাজনীতিবিদ হাবিব জালিব
হাবিব জালিব (১৯২৮-১৯৯৩) পাকিস্তানের কবি ও রাজনীতিবিদ। তিনি হাবিব আহমাদ নামেও পরিচিত। তিনি ১৯২৮ সালের ২৪শে মার্চ অবিভক্ত ভারতের (বর্তমান পাকিস্তান) পাঞ্জাব প্রদেশের
হোশিয়ারপুর জেলার মিয়ানি আফগানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দিল্লির অ্যাংলো আরবি বিদ্যালয় ও করাচির জ্যাকব লাইনস বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। ভারত উপমহাদেশ বিভক্তির পর তিনি পাকিস্তানে গমন করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি কবিতা চর্চা শুরু করেন।
হাবিব জালিব করাচির দৈনিক ইমরোজ পত্রিকার প্রুফরিডার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রগতিশীল লেখক হিসেবে তিনি তাঁর লেখনী শক্তি ও কবিতা পাঠ দ্বারা উৎসাহী পাঠকদের হৃদয়ে দ্রুত জায়গা করে নেন। তিনি সহজ ভাষায় কবিতা লিখতেন এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত সাধারণ বিষয়াদি উল্লেখ করতেন। তিনি প্রগতিশীল লেখক আন্দোলনের সদস্য ও মার্কসবাদী-লেনিনবাদী মতাদর্শী ছিলেন। তিনি সর্বদা সামরিক আইন, কর্তৃত্ববাদ ও নিপীড়নের বিরোধিতা করেন। এ মতাদর্শের কারণে জীবনে তাঁকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে এবং অধিকাংশ সময় কারাভোগ করতে হয়েছে। তিনি পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিপি) সদস্য ছিলেন। পাকিস্তানে সিপিপি নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর যখন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) অধীনে সিপিপি কাজ করছিল, তখন তিনি ন্যাপে যোগদান করেন। প্রগতিশীল লেখক হিসেবে তিনি জেনারেল আইয়ুব খান ও জিয়াউল হকের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে লিখেছিলেন। তিনি বেশ কয়েকটি পুস্তক রচনা করেন। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিশান-ই- ইমতিয়াজ (২০০৯) খেতাবে ভূষিত হন। তিনি ১৯৯৩ সালের ১২ই মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে হাবিব জালিব ছিলেন পাকিস্তানের ন্যাপের নেতা। বিভিন্ন ফোরামে গণহত্যার বিরুদ্ধে তিনি বক্তব্য প্রদান করেন এবং কবিতা রচনা করেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মতামত প্রকাশ করার জন্য তাঁকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু তিনি তাঁর সত্যনিষ্ঠ কার্যসম্পাদনে অটল ছিলেন। একজন পাকিস্তানি হয়ে সে- দেশে অবস্থান করেও তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনার তিনি দৃঢ় সমর্থক ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক হাবিব জালিব-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয় (২৪ মার্চ ২০১৩)। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড