You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর বিক্রম হাবিবুর রহমান - সংগ্রামের নোটবুক

বীর বিক্রম হাবিবুর রহমান

হাবিবুর রহমান, বীর বিক্রম (১৯৩৪-১৯৯৮) বীর মুক্তিযোদ্ধা, কাদেরিয়া বাহিনীর কোম্পানী কমান্ডার, -জাহাজমারা যুদ্ধএ নেতৃত্ব দানকারী, ‘জাহাজমারা হাবিব নামে খ্যাত’। তিনি ১৯৩৪ সালের ১৮ই অক্টোবর টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার সাধুর গলগণ্ডা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মওলানা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন এবং মাতার নাম বেগম সৈয়দুন্নেসা।
১৯৫৩ সালে হাবিবুর রহমান ঘাটাইল পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি পাকিস্তান আর্মিতে যোগদান করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি কুমিল্লা, যশোর, জয়দেবপুর, পেশোয়ার ও লাহোর ক্যান্টনমেন্টে চাকরি করেন। পরবর্তীতে তিনি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে ইনস্ট্রাক্টরের পদ লাভ করেন। একাত্তরের মার্চে তিনি ঐ পদে কর্মরত ছিলেন। মার্চের প্রথম দুই সপ্তাহে তিনি প্রায় এক হাজার ছাত্র-যুবককে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেন এবং তাদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করেন। ঝিনাইদহ ও খেজুরিয়ায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধযুদ্ধে তিনি নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধের মধ্যে অল্প সময়ের জন্য তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। পরবর্তীতে তিনি টাঙ্গাইল আসেন এবং কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগদান করে কোম্পানির দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
একাত্তরে টাঙ্গাইলে যতগুলো যুদ্ধ হয়েছে তার মধ্যে ১১ই আগস্টের ভূঞাপুর থানার জাহাজমারা যুদ্ধ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ-যুদ্ধে পাকবাহিনী পর্যুদস্ত হয় এবং তাদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। যুদ্ধের পরিচালক ছিলেন কাদেরিয়া বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার হাবিবুর রহমান। তিনি ১১ই আগস্ট টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর থানার সিরাজকান্দির নিকটবর্তী ধলেশ্বরী নদীতে পাকহানাদার বাহিনীর ৭টি জাহাজের মধ্যে সমরাস্ত্রবাহী দুটি জাহাজ আক্রমণ করে দখল করেন। জাহাজ দুটি হলো এস ইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল সি-৩ ও এস টি রাজন। নারায়ণগঞ্জ থেকে উত্তরবঙ্গে অস্ত্র সরবরাহের জন্য পাকিস্তানি বাহিনী এগুলোতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে আসছিল। পূর্ব থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা গোপনসূত্রে খবর পান তাই তাঁরা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন। এই জাহাজদ্বয়ে ২১ কোটি টাকার অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিল। স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতায় সেই অস্ত্রভাণ্ডার থেকে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধারা নামিয়ে নেন। এর মধ্যে ছিল কামান, মর্টার, এলএমজি, স্ট্যান্ডগান, রাইফেল ও গোলাবারুদ। সিরাজকান্দির জাহাজমারা যুদ্ধ শুধু টাঙ্গাইলই নয়, গোটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। এ ঘটনার পর থেকে হাবিবুর রহমান ‘জাহাজমারা হাবিব’ নামে পরিচিতি লাভ করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ৬ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম ফরিদা ইয়াসমিন। ১৯৯৮ সালের ২৭শে ডিসেম্বর এ বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন। [মামুন তরফদার]
তথ্যসূত্র: কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, স্বাধীনতা ‘৭১, অনন্যা ১৯৯৭; তপন কুমার দে, মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইল, জাগৃতি প্রকাশনী ১৯৯৬; মামুন তরফদার, সিরাজকান্দির জাহাজ ধ্বংসের ইতিহাস, গতিধারা প্রকাশনী ২০১০; মো. হাবিব উল্লাহ্ বাহার, টাঙ্গাইল জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, গতিধারা ২০০৯; কমান্ডার হাবিবুর রহমান, বীর বিক্রমের বড় ছেলে মো. মোস্তাফিজুর রহমান লালন-এর সাক্ষাৎকার, ৫ই অক্টোবর ২০১৫

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড