বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমাজসেবী হাবুল ব্যানার্জী
হাবুল ব্যানার্জী (মৃত্যু ২০০৬) ভারতের সমাজসেবী। তাঁর প্রকৃত নাম নরেশ চন্দ্র ব্যানার্জী। তিনি পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত দিগম্বরীতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাবুল ব্যানার্জী ১৯৪৬ সালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সোনামুড়ায় বসবাস শুরু করেন। অল্পবয়সেই হাবুল ব্যানার্জী কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। সোনামুড়ায় বিপুল পরিমাণ জমি ক্রয় করে সেখানে লিচু, কাজুবাদাম ও অন্যান্য ফলমূলের আবাদ করে নিজের ভাগ্য বদলাতে সচেষ্ট হন তিনি। তাঁর বাগানের লিচু ও আনারস যথাক্রমে হাবুল লিচু ও হাবুল আনারস নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। ২০০৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পরোপকারী হাবুল ব্যানার্জী সোনামুড়ায় তাঁর ৪০ একরের বিশাল লিচু বাগানটি প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রদান করেন। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়মিত চিকিৎসা প্রদান করা হতো। চিকিৎসক ও সেবিকারা স্বেচ্ছায় দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রোপচারসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে সুস্থ করে তুলতেন এবং মুক্তিযোদ্ধারা সুস্থ হয়ে পুনরায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন। হাবুল ব্যানার্জী নিজেও এ হাসপাতালে নিয়মিত ওষুধ ও খাদ্য সরবরাহ করতেন। তিনি হাসপাতালে রোগীদের সেবার জন্য খাবার ও ওষুধ সরবরাহ কাজে তাঁর নিজস্ব ট্রাকগুলো ব্যবহার করতে দিতেন। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনি এ হাসপাতালটিকে মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন। তাছাড়া তিনি শরণার্থীদের মধ্যে নিয়মিত খাদ্য, বস্ত্র ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র বিতরণ করতেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৫ই ডিসেম্বর ২০১২ হাবুল ব্যানার্জী-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড