হাদল গণহত্যা (ফরিদপুর, পাবনা)
হাদল গণহত্যা (ফরিদপুর, পাবনা) সংঘটিত হয় ২৪শে মে। এতে ৪ শতাধিক লোক শহীদ হন।
পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাদল গ্রাম অবস্থিত। ডেমরা গণহত্যার কয়েকদিন পর ২৪শে মে হাদল ইউনিয়নের হাদল এবং কালিকাপুর গ্রামে নিরস্ত্র ও নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর পাকবাহিনী পৈশাচিক হামলা চালায়। মুক্তিযুদ্ধকালে গ্রামটিতে কোনো সড়ক যোগাযোগ ছিল না। এ গ্রামটি ছিল হিন্দুপ্রধান, তবে অনেক মুসলমানও এখানে বাস করত। গ্রামদুটি ছিল সমৃদ্ধিশালী। নিম্নাঞ্চল হওয়ায় এখানে প্রচুর ফসল উৎপাদিত হতো। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে ২৫শে মার্চের পর অন্য এলাকা থেকে, বিশেষ করে পাবনা শহর ও ঈশ্বরদীসহ অনেক অঞ্চলের মানুষ এ গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের ধারণা ছিল যেহেতু রাস্তাঘাট নেই সেহেতু হানাদার বাহিনী এখানে আসবে না। সাধারণ মানুষের এ ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে দেয় হাদল গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার ফরিদপুর থানা শান্তি কমিটির নেতা মাওলানা আবুল হাসান হাদুলী। সে ঘাতক-দালাল রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে এখানে অনেক ‘মালাউন’ আছে এমনটি বলে পাকহানাদার বাহিনীকে পথ দেখিয়ে এ গ্রামে নিয়ে আসে। গ্রামটিতে আক্রমণ চালিয়ে তারা গণহত্যা, লুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগ করে। পাশাপশি এ দুটি গ্রামে সেদিন ৪ শতাধিক লোক শহীদ হন। তাদের সকলের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। যাদের পরিচয় জানা গেছে, তারা হলেন— প্রাণকৃষ্ণ সাহা (পাবনা সদর; শিক্ষক, আর এম একাডেমি, পাবনা), অশোক রায় (শালগারিয়া, পাবনা), কালীপদ সাহা (পিতা ললিত মোহন সাহা, দাশুরিয়া, ঈশ্বরদী, পাবনা), সুব্রত সাহা (ছাত্র, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা), সুবল সাহা (ছাত্র, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা), কদম কর্মকার (রাধানগর, পাবনা), গোবিন্দ সাহা (হাদল, ফরিদপুর), অনিল বশাক (পাবনা সদর), রাখাল বশাক (পাবনা সদর), নিত্যানন্দ সাহা (বড় ভাই অধ্যাপক কালীদাস সাহা, বাদাল, ফরিদপুর), হাদল গ্রামের বটকৃষ্ণ সাহা (পিতা হারান চন্দ্র সাহা), বিনয় কুমার সাহা, শ্রীপদ সাহা (পিতা শ্রীনাথ সাহা), বাদল সাহা (পিতা কানাই সাহা), সুবল চন্দ্র সাহা (পিতা তারাপদ সাহা), মধুসূদন সাহা পালক (পিতা বিপিন বিহারী সাহা), রাধু সাহা (পিতা অনন্ত সাহা), প্রিয় হালদার (পিতা তারক হালদার), পরেশ সাহা, কানা বাদলা সাহা, বিষ্ণু সাহা (পিতা কানা বাদলা সাহা), জয়দেব নরসুন্দর, নিমাই সরকার, কালিকাপুর গ্রামের ভোলানাথ সাহা (পিতা সীতানাথ সাহা), সীতানাথ সাহা, অমূল্য সরকার (পিতা টেংরা সরকার), বীণা রানী, মহামায়া সাহা (স্বামী প্রসান সাহা), গোবিন্দ সাহা, শশিবালা, অমরেশ হালদার (পিতা বনমালী হালদার), বাটু হালদার (পিতা বনমালী হালদার), বনমালী হালদার, উপেন সাহা (পিতা বেরজ সাহা), সুবোধ সাহা (পিতা উপেন সাহা), গীতা রানী সাহা (পিতা গৌর সাহা), কানাই হালদার (পিতা গোরা হালদার) প্রমুখ। [মো. আশরাফ আলী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড