হাজী মোহাম্মদ আলীর বাড়ি রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (চট্টগ্রাম মহানগর)
হাজী মোহাম্মদ আলীর বাড়ি রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (চট্টগ্রাম মহানগর) পরিচালিত হয় অক্টোবর মাসের শেষের দিকে। চট্টগ্রাম শহরের রামপুরা এলাকার স্বাধীনতাবিরোধী প্রভাবশালী এক ব্যক্তি ছিল হাজী মোহাম্মদ আলী। সে ছিল চট্টগ্রাম জেলা শান্তি কমিটির সভাপতি নবী চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তার বাড়ির নিকটেই ছিল রাজাকার ক্যাম্প। এ ক্যাম্পে ৩০-৪০ জনের মতো রাজাকার অবস্থান করত। তারা এলাকার লোকজনের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাত। সাধারণ মানুষজনদের মারধর, লুটপাট, নারীনির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে এলাকায় এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। রাজাকারদের শক্তির উৎস ছিল নবী চৌধুরী স্বয়ং। রাজাকার ক্যাম্পের অদূরেই ছিল শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মৌলভী সৈয়দ আহমদের বেইজ এলাকা। রাজাকার ক্যাম্পের কারণে চলাফেরায় মুক্তিযোদ্ধারা নানা সমস্যায় পড়েন। হাজী মোহাম্মদ আলী ও নবী চৌধুরী নিকটবর্তী মিলিশিয়া ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে গোপন তথ্য পাঠাত। তাই রাজাকার ক্যাম্পটিতে অপারেশন করা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। এ অপারেশনের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল গঠন করে ঐ দলকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। গ্রুপগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন ডা. মাহবুব, আবদুল্লাহ আল হারুন ও ডা. আহমেদ আমিন। অক্টোবরের শেষদিকে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অপারেশনে যাওয়ার পথে মুক্তিযোদ্ধারা পাহাড়তলী থেকে দেওয়ানহাট গমনরত একদল পুলিশের মুখোমুখি হন। উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। হাজী মোহাম্মদ আলীর বাড়ির রাজাকার ক্যাম্পের রাজাকার ও মিলিশিয়ারাও মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ-সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি দল দেওয়ানহাটে এসে পজিশন নিয়ে এগুতে থাকে। ইতোমধ্যে দুজন মুক্তিযোদ্ধা পেট্রোল পাম্পে আগুন লাগিয়ে দেন। পাকহানাদাররা তাদের কাছাকাছি এলে মুক্তিযোদ্ধারা ধানক্ষেতে লাফিয়ে পড়েন। প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজাকার, পুলিশ ও মিলিশিয়া বাহিনীর যুদ্ধ চলে। এ অপারেশনে আরো অংশ নেন তুষার কান্তি চৌধুরী, অমল দাশ, ডা. মুলকুতর রহমান, কামরুল, মণি, রঞ্জিত, জসিম প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা। [জামাল উদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড