হরিশপুর ট্রাজেডি (হরিণাকুণ্ডু, ঝিনাইদহ)
হরিশপুর ট্রাজেডি (হরিণাকুণ্ডু, ঝিনাইদহ) সংঘটিত হয় ১২ই মে। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার অন্তর্গত এ গ্রামটিতে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠনসহ এমন কোনো অপরাধ ছিল না যা করেনি। তাদের সেই অত্যাচার বন্ধের লক্ষ্যে কমান্ডার আনোয়ার হোসেন ও সেনাসদস্য মিজানুর রহমান কুসুমের নেতৃত্বে লে. মুস্তাফিজুর রহমান (বানপুর জিটু কোম্পানির প্রধান), আতিয়ার রহমান, ইদ্রিস আলী, জামাল হোসেন, ইউসুফ, মজিদ আলী ও মুসাসহ ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল এ গ্রামে অবস্থান নেয়। এরপর থেকে তাঁরা মাঝে-মধ্যেই রাজাকারদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালাতেন। এ বিষয়টি স্থানীয় রাজাকার ও মুসলিম লীগ-এর কর্মীরা ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গার পাকবাহিনীকে অবহিত করে। ১২ই মে সকাল ১০:৩০টার দিকে তারা সম্মিলিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ চালান। কিন্তু তাঁদের হাতে ভারী অস্ত্র না থাকায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা যুদ্ধের পর তাঁরা হরিশপুরের উত্তর দিকে অবস্থিত জোড়াদহ গ্রামে ঢুকে পড়েন। পাকবাহিনীও তাদের অনুসরণ করে গুলি ছুঁড়তে থাকে। এতে জোড়াদহ গ্রামের আহমেদ আলী ও আব্দুল কাদের ওরফে শুকুর আলী নামে দুজন গ্রামবাসী শহীদ হন এবং ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। তাঁদের চোখ বেঁধে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়। এতে পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এটি হরিশপুর ট্রাজেডি নামে খ্যাত। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- জোড়াদহের মো. আতিয়ার রহমান এবং হরিশপুরের আবুল হোসেন, লিয়াকত আলী, কুসুম আলী ও আব্দুল বারেক। মিজানুর রহমান কুসুম, কমান্ডার আনোয়ার হোসেন, আব্দুল লতিফ এবং মোয়াজ্জেম হোসেন নাটকীয়ভাবে প্রাণে বেঁচে যান। [জামাল উদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড