হরিণাকুণ্ডু প্রতিরোধযুদ্ধ (হরিণাকুণ্ডু, ঝিনাইদহ)
হরিণাকুণ্ডু প্রতিরোধযুদ্ধ (হরিণাকুণ্ডু, ঝিনাইদহ) সংঘটিত হয় ৩১শে মার্চ রাতে। এর আগে ২৫শে মার্চ দুশতাধিক পাকসেনা যশোর সেনানিবাস থেকে ঝিনাইদহ হয়ে কুষ্টিয়া শহরে প্রবেশ করে এবং সেখানে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালিয়ে স্থানীয় মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। কুষ্টিয়া শহর থেকে তারা যাতে আর যশোর সেনানিবাসে ফিরতে না পারে, সেজন্য আনসার ইন্সপেক্টর গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে ২০ জন সশস্ত্র আনসার সদস্য কুমার নদের ওপর অবস্থিত গাড়াগঞ্জ ব্রিজের কাছে রাস্তার দুপাশে বাংকারে অবস্থান নেন। তাঁরা ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে পাকা রাস্তা কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেন। রাস্তার কাটা অংশে বাঁশের চাটাই বিছিয়ে তার ওপর আলকাতরা ঢেলে দেয়া হয়। এর ফলে কাটা অংশও স্বাভাবিক রাস্তা বলে মনে হয়। পাকবাহিনীকে ফাঁদে ফেলার এই কৌশল অবলম্বন করে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
৩১শে মার্চ রাতে পাকসেনারা দুটি জিপ ও দুটি টিভজ গাড়িতে করে ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এবং ঘটনাস্থলে আসা মাত্র দুটি গাড়িই ফাঁদে পড়ে যায়। তৎক্ষণাৎ পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর আক্রমণ চালান। এতে ঘটনাস্থলেই পাকবাহিনীর মেজর শোয়েবসহ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব বাকি সৈন্যরা পায়ে হেঁটে যশোর ক্যান্টনমেন্টের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পথ ভুল করে তারা গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ে। তাদের দুজন পার্শ্ববর্তী শৈলকুপা উপজেলার মালমারি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদের ওপর নির্মিত সাঁকো পার হয়ে হরিণাকুণ্ড উপজেলার চরপাড়া গ্রামে ঢুকে পড়ে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার-হাজার লোক রামদা, ভেলা, টেটা, হাসো, কাস্তে, লাঠি, বল্লম, তীর-ধনু ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে-দিতে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া খেয়ে পাকসেনাদ্বয় সোনারদাড়ি গ্রামের দিকে যেতে থাকে। ধাওয়াকারী জনগণের মধ্যে একজন ছিলেন কওসার আলী (পিতা জমির উদ্দিন বিশ্বাস, চর আড়ুয়াকান্দি)। অসীম সাহসী এ বাঙালি পাকসেনাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে- ছুড়তে এগিয়ে যেতে থাকেন। হঠাৎ পাকসেনাদের ছোড়া একটি গুলি তাঁর গায়ে লাগে এবং তিনি ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। এটিই ছিল হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাধারণ জনতার পাকসেনাদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধযুদ্ধ। [জামাল উদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড