হরিণাগোপাল-বাগবাটী গণহত্যা (সিরাজগঞ্জ সদর)
হরিণাগোপাল-বাগবাটী গণহত্যা (সিরাজগঞ্জ সদর) সংঘটিত হয় ৩১শে মে। এতে দুই গ্রামে সেদিন দুই শতাধিক মানুষ নিহত ও ২৫ জন নারী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। নিহতদের মধ্যে ৩৭ জনের পরিচয় জানা গেছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যার পাশাপাশি হরিণাগোপাল ও বাগবাটী গ্রামে ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে।
সিরাজগঞ্জ শহর পাকিস্তানিদের দখলে চলে গেলে শহরের মানুষ বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নেয়। সদর উপজেলার হরিণাগোপাল, বাগবাটী, মালিগাতি, সুবর্ণগাতি প্রভৃতি গ্রাম নিরাপদ ভেবে অনেকে এসব গ্রামে আশ্রয় নেয়। সিরাজগঞ্জ থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে হরিণাগোপাল ও বাগবাটী গ্রাম। গ্রামদুটি বাগবাটী ইউনিয়নের অন্তর্গত।
৩১শে মে রাজাকারদের সাহায্যে পাকসেনারা এসব গ্রামে হানা দেয় এবং নির্বিচারে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। এ হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন পেশার দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়। সেদিন ২৫ জন নারী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। নারীদের বাঁচাতে গিয়ে হানাদার বাহিনীর বুলেটের আঘাতে ৩ জন গৃহকর্তা প্রাণ হারান। নিহতদের অনেকে ছিলেন সিরাজগঞ্জ শহর থেকে এসে আশ্রয় নেয়া মানুষ। দালালদের সহযোগিতায় পাকবাহিনী ভোর ৫টায় হরিণাগোপাল ও বাগবাটী গ্রামে আসে। তারপর তারা তিনটি দলে ভাগ হয়ে গ্রামদুটিতে হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণ চালায়।
হরিণাগোপাল গ্রামে নিহত ব্যক্তিরা হলেন- ভানু দত্ত (পিতা ডা. ননী দত্ত), সানু দত্ত (পিতা ডা. ননী দত্ত), শ্যামা দত্ত (পিতা কালিপদ দত্ত), হরিপদ দত্ত (পিতা কালিপদ দত্ত), জ্ঞানেন্দ্র নাথ দেব (পিতা কান্দুনাথ দেব), ক্ষুদিরাম রায় (পিতা মধু রায়), ভোলানাথ রায়, সমরনাথ রায় (পিতা ভোলানাথ রায়), রতন চক্রবর্তী (পিতা যতীন চক্রবর্তী), কানাই লাল দাস (পিতা পুণ্য লাল দাস), কালিপদ দত্ত (পিতা প্রহ্লাদ চন্দ্র দত্ত), তারাপদ দত্ত (পিতা ঈশান চন্দ্ৰ দত্ত), রবীন্দ্রনাথ দত্ত (পিতা দেবনাথ দত্ত), বাচ্চু দত্ত (পিতা রবীন্দ্রনাথ দত্ত), গেদা হাওলাদার (পিতা ত্রৈলোক্য হাওলাদার), সদানন্দ সরকার (পিতা তারক সরকার), সুবল চন্দ্র হাওলাদার, মহাদেব দাস, মহাদেব দত্ত ও রবি দত্ত (পিতা ডা. ননী দত্ত) প্রমুখ। বাগবাটী গ্রামের নিহতরা হলেন— সুনীল কুমার ঠাকুর (পিতা তিনঘরি ঠাকুর), নরেন চন্দ্র তাম্বুলী (পিতা যোগেশ চন্দ্র তাম্বুলী), গুঠুরাম তাম্বুলী (পিতা গইয়া রাম তাম্বুলী), ছুটুরাম পাল (পিতা মানিক চন্দ্ৰ পাল), মন্টু চন্দ্র পাল (পিতা হারান চন্দ্র পাল), হারান চন্দ্র পাল (পিতা হরিনাথ চন্দ্র পাল), মজিবর রহমান (পিতা খোদা বখস), আয়নাল হক (পিতা খোদা বখস), ফনিন্দ্রনাথ কাওয়ালী (পিতা হরিবন্ধু কাওয়ালী), যুধিষ্ঠির পাল, চেঙ্গু পাল, পুষ্পরাম হাওলাদার, গৌর কর্মকার, মহাদেব সাহা, হোন্ডি খাঁ (পিতা রমজান আলী খাঁ), মাঙ্গন খাঁ (পিতা হোসেন আলী খাঁ) ও যোগেশ চন্দ্র শীল (পিতা অনাথবন্ধু শীল) প্রমুখ। [মাহফুজা হিলালী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড