হরিতলা রেলসেতু অপারেশন (মাধবপুর, হবিগঞ্জ)
হরিতলা রেলসেতু অপারেশন (মাধবপুর, হবিগঞ্জ) পরিচালিত হয় ১৫ই জুন। এতে ১৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়।
মাধবপুর থানার উত্তর সীমায় বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া- সিলেট সেকশনের একটি স্টেশনের নাম শাহজীবাজার রেল স্টেশন। স্টেশনটি তৎকালীন এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ গ্যাস পাওয়ার স্টেশন শাহজীবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সঙ্গেই অবস্থিত। এর প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত হবিগঞ্জ গ্যাসফিল্ড। রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত শাহজীবাজার থেকে শাহপুর পর্যন্ত এই এলাকাটি ১১ নং বাঘাসুরা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। সেখান দিয়েই তৎকালীন লোকাল বোর্ডের অধীন জগদীশপুর-শায়েস্তাগঞ্জ সড়ক ও রেল লাইন সমান্তরালে প্রবাহিত।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক জগদীশপুর থেকে রঘুনন্দন পাহাড়ের মধ্য দিয়ে চুনারুঘাট হয়ে শায়েস্তাগঞ্জের ওপর দিয়ে সিলেট চলে গেছে। এ রাস্তায় মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাকবাহিনী তাদের সৈন্য ও যুদ্ধসামগ্রী পরিবহণের জন্য রেলপথকে অধিক গুরুত্ব দিতে থাকে। তাই এ রেলপথকে নিরাপদ রাখার জন্য তারা মরিয়া হয়ে ওঠে। মুক্তিবাহিনী যাতে কোনোমতেই রেলপথে ধ্বংসলীলা চালাতে না পারে সে-জন্য সমস্ত রেলপথে রাজাকার বাহিনীকে সার্বক্ষণিক পাহারায় নিয়োগ করা হয়। স্থানীয় জনগণকেও বাধ্য করা হয় রেললাইন পাহারার কাজে।
এমনি প্রেক্ষাপটে মুক্তিবাহিনী শাহজীবাজারের দক্ষিণ দিকবর্তী হরিতলার পূর্বে অবস্থিত একটি রেল সেতুতে আক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৫ই জুন লে. হেলাল মোরশেদের নেতৃত্বে এ আক্রমণ পরিচালিত হয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সৈয়দ মিয়া, রফিকুল ইসলাম, সুলতান মিয়াসহ আরো বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। হবিগঞ্জ গ্যাসফিল্ডের নিকটবর্তী হরিতলা গ্রামের পূর্বপাশের সেতুতে বিস্ফোরণ ঘটানোর উদ্দেশ্যে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে শক্তিশালী মাইন পুঁতে রাখা হয়। সকাল সাতটার দিকে দূর থেকে শোনা যায় ট্রেনের আগমন শব্দ। মুক্তিযোদ্ধারা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আক্রমণের সঠিক সময়টির অপেক্ষায় থাকেন। যে-মুহূর্তে পাকিস্তানি সেনাবাহী ট্রেনটি সেতু অতিক্রম করছে ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটানো হয় বিস্ফোরণ। সঙ্গে-সঙ্গে ট্রেনটি উড়ে রেললাইনের পাশে গিয়ে পড়ে। বিধ্বস্ত এই ট্রেনের ভেতরকার সেনাদের আর্তচিৎকার শোনা যাচ্ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদ পেয়ে শাহজীবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রস্থ ক্যাম্প থেকে পাকসেনারা এসে তাদের উদ্ধার কাজে লেগে যায়। এ অপারেশনে ১৫০ জন পাকসেনা নিহত হয় বলে মুক্তিফৌজ সদর দফতর থেকে জানানো হয়। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড