হরিনগর গণহত্যা (শ্যামনগর, সাতক্ষীরা)
হরিনগর গণহত্যা (শ্যামনগর, সাতক্ষীরা) সংঘটিত হয় ৯ই সেপ্টেম্বর। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর বাজারে স্থানীয় রাজাকার- ও পাকবাহিনী এ গণহত্যা ঘটায়।
হরিনগর গ্রামের চুনকুড়ি নদী দিয়ে পাকবাহিনীর গানবোটগুলো বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করত। ৪ঠা সেপ্টেম্বর ভারতীয় ভূখণ্ডের শমশেরনগর ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা এ-রকম একটি গানবোটকে চ্যালেঞ্জ করলে পাকসেনারা গুলি চালায়। মুক্তিযোদ্ধারাও দুদিক থেকে তাদের আক্রমণ করেন – শমশেরনগরের দিক থেকে এক গ্রুপ এবং হরিনগরের দিক থেকে নবাব্দী বাহিনী। এতে পাকবাহিনীর গানবোটটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফিরে যায়।
৪ঠা সেপ্টেম্বরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পাকবাহিনী ৯ই সেপ্টেম্বর স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় হরিনগর এলাকায় এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায় এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। রাজাকারদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী তারা মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন আস্তানা ও বাড়িঘরে আগুন দেয়। এতে গোটা হরিনগর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এ-সময় তারা হরিনগর বাজারে গোলাবর্ষণ করে এবং বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে ধরে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। তাদের হাতে অনেকে আহত হয়।
গণহত্যায় শহীদদের মধ্যে ২৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন— খগেন্দ্রনাথ মণ্ডল (পিতা কালীবর মণ্ডল), নীলাম্বর মণ্ডল (পিতা ভুবন মণ্ডল), জিতেন্দ্ৰ মণ্ডল (পিতা নিমাই মণ্ডল), অজিত মণ্ডল (পিতা নিমাই মণ্ডল), সুরেন্দ্র নাথ মণ্ডল (পিতা বাবুল মণ্ডল), খগেন্দ্র মণ্ডল (পিতা নীলাম্বর মণ্ডল), রামেশ্বর মণ্ডল (পিতা তারক মণ্ডল), কালীপদ মণ্ডল (পিতা ফকির চাঁদ মণ্ডল), কার্তিক মণ্ডল (পিতা অভয় চরণ মণ্ডল), হরেন্দ্র নাথ মণ্ডল (পিতা পঞ্চরাম মণ্ডল), মহাদেব মণ্ডল (পিতা হলধর মণ্ডল), ডা. বিহারী মণ্ডল (পিতা তারক মণ্ডল), অধীর মণ্ডল (পিতা চন্দ্র কান্ত মণ্ডল), দাউদ গাজী (পিতা হাতেম গাজী), হাতেম গাজী (পিতা আয়েনুদ্দীন), বিপিন মণ্ডল (পিতা জলধর মণ্ডল), বিপিন পাঠান, অধর মণ্ডল (পিতা নটবর মণ্ডল), মহাদেব মণ্ডল (পিতা প্রতাপ মণ্ডল), আদম গাজী (পিতা হচেন গাজী), মহাদেব মণ্ডল (পিতা আদুরাম মণ্ডল), আব্দুল বারী সানা (পিতা কাদের সানা), সৈয়দ গাজী (পিতা দুর্লভ গাজী), ধীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস (পিতা নিমচাঁদ বিশ্বাস), অধীর মণ্ডল (পিতা কালীবর মণ্ডল), উপেন চাঁদ মণ্ডল, কৃষ্ণপদ গাইন (পিতা রাখাল গাইন, মুন্সীগঞ্জ) এবং অধীর মণ্ডল (পিতা ভীম মণ্ডল, মুন্সীগঞ্জ)।
আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা ছিল গুরুতর। তারা হলেন— গিরিন মণ্ডল (পিতা যজ্ঞেশ্বর মণ্ডল), বাবুরাম মণ্ডল (পিতা যজ্ঞেশ্বর মণ্ডল), মনোরঞ্জন মণ্ডল (পিতা বিপিন মণ্ডল), বৈষ্ণব মণ্ডল (পিতা নিমাই মণ্ডল) এবং সূর্যকান্ত মণ্ডল (পিতা রাজ্যেশ্বর মণ্ডল, মুন্সীগঞ্জ)। নিহত ও আহতদের স্মরণে একটি নামফলক নির্মাণ করা হয়েছে। [মিজানুর রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড